পটল চাষে সফলতা পাবেন যেভাবে

পটল চাষে সফলতা নিয়ে আজকের আলোচনা। পটল একটি জনপ্রিয় উচ্চমূল্য সবজি। পটল খরিপ মৌসুমের সবজি হলেও বর্তমানে সারা বছর ধরেই পাওয়া যায়। গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে বাজারে যখন অন্যান্য সবজি কম পাওয়া যায় তখন পটল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের জলবায়ু ও আবহাওয়া পটল চাষের উপযোগী। দেশের সকল এলাকাতেই পটল চাষ করা সম্ভব।

পটল

 

পটল চাষে সফলতা পাবেন যেভাবে

যেভাবে পটল চাষে শতভাগ সফলতা পাওয়া যাবে:

পটলের জাত নির্বাচন:

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট পটলের দুটি জাত আবিষ্কার করেছে। জাত দুটো উচ্চ ফলনশীল ও রোগবালাই সহ্য করতে পারে সেগুলো হলো ‘বারি পটল-১’ ও ‘বারি পটল-২’। হেক্টরপ্রতি ফলন ৩০ থেকে ৩৮ টন।

বারি পটল-১:
  • আকার: ফল ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি লম্বা, বেড় প্রায় ১.৫ ইঞ্চি।
  • ওজন : প্রায় ৫৫ গ্রাম।
  • ফলন: প্রতি গাছে সর্বোচ্চ ২৪০টি ফল ধরে, যার মোট ওজন প্রায় ১০ কেজি। একর প্রতি ফলন: ১২১৪৫ কেজি বা প্রতি শতাংশে ১২০ কেজি।

 

পটল

 

 

বারি পটল-২:
  • আকার: ফল ৩.৫ থেকে ৪ ইঞ্চি লম্বা, বেড় ১.৫ থেকে ১.৭৫ ইঞ্চি।
  • ওজন: প্রায় ৫০ গ্রাম।
  • ফল: প্রতি গাছে সর্বোচ্চ ৩৮০ টি ফল ধরে, যার মোট ওজন ১৪ কেজি।
  • একর প্রতি ফলন: ১৫,৩৮৫ কেজি বা প্রতি শতাংশে ১৫০ কেজি।

 

পটলের বংশবিস্তার:

এটি কাণ্ড এবং টিউবারের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। শাখা কলমের ক্ষেত্রে পরিপক্ব কাণ্ড ব্যবহার করা হয়। এদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কাণ্ড মরে গেলেও শিকড় জীবিত থাকে। ফলে এই শিকড় থেকেই আবার গাছ জন্মে। রোপণের আগে পটোলের শিকড় গজিয়ে নিলে বেশি ভালো হয়।

 

পটল

 

পটল চাষের জন্য জলবায়ু ও মাটি:

উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ু পটল চাষের জন্য বেশি তাপমাত্রা ও সূর্যালোকের প্রয়োজন। বন্যামুক্ত ও পানি জমে না এমন বেলে দো-আঁশ বা দো-আঁশ মাটি পটল চাষের জন্য ভাল। নদীর তীরে পলিযুক্ত মাটিতেও পটল চাষ করা যায়।

পটল রোপণের সময়:

অক্টোবর থেকে নভেম্বর অথবা ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পটোল রোপণের উপযুক্ত সময়। পটোল চাষের কথা চিন্তা করলে অক্টোবর মাসের আগেই জমি তৈরি করতে হবে। মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা না থাকলে শাখা কলম শুকিয়ে মারা যায়।

পটল চাষের জন্য  জমি তৈরি ও চারা রোপণ:

প্রথমে মাটি ভালো করে চাষ দিয়ে প্রস্তুত করে নেওয়া উচিত। জমিকে ৪-৫টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা ও সমান করে নিতে হবে। বেড পদ্ধতিতে পটল চাষ করলে ফলন ভালো হয় এবং বর্ষাকালে ক্ষেত নষ্ট হয় না। সাধারণত একটি বেড ১.০-১.৫ মিটার চওড়া হয়। বেডের মাঝামাঝি এক মিটার থেকে দেড় মিটার বা দু’হাত থেকে তিন হাত পর পর মাদায় চারা রোপণ করতে হয়।

এক বেড থেকে আর এক বেডের মাঝে ৭৫ সেমি. নালা রাখতে হবে। মাদা বা পিট তৈরি মাদা বা পিটের আকার- দৈর্ঘ্য- ৫০ সেমি. প্রস্থ- ৫০ সেমি. গভীরতা- ৪০ সেমি. নালা- ৭৫ সেমি. মাদা থেকে মাদার দূরত্ব-১.০-১.৫ মিটার মাদায় গাছের দূরত্ব-৭.০-১০.০ সেমি. গভীরতা-৫০ সেমি. মোথার সংখ্যা ১০,০০০/হেক্টর স্ত্রী গাছপ্রতি ১০টি স্ত্রী গাছের জন্য ১টি পুরুষ গাছ সুষ্ঠু পরাগায়নের ক্ষেত্রে ১০% পুরুষ জাতের গাছ লাগানো উচিত এবং এসব গাছ ক্ষেতের সব অংশে সমানভাবে ছড়িয়ে লাগানো উচিত।

গোবর বা আবর্জনা সার ভালোভাবে পচানো দরকার। পটল দীর্ঘমেয়াদি সবজি ফসল, এ জন্য মে মাস থেকে ফসল সংগ্রহের পর প্রতি মাসে হেক্টরপ্রতি ১৮ কেজি ইউরিয়া, ২৫ কেজি টিএসপি এবং ১৪ কেজি এমপি সার উপরি প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এতে ফলন বেশি হবে।

পটল চাষে সার প্রয়োগ:

মাদাপ্রতি ১.০ কেজি গোবর সার, ২৫০ গ্রাম খৈল, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৭০ গ্রাম টিএসপি, ১৩০ গ্রাম এমওপি, ২০ গ্রাম বোরন সার এবং ১৫০ গ্রাম জিপসাম সার রোপণের সময় প্রয়োগ করা হয়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ফুল ধরা কমে গেলে সে ক্ষেত্রে মাদাপ্রতি ৫০০ গ্রাম গোবর সার, ৭০ গ্রাম ইউরিয়া, ৯০ গ্রাম টিএসপি, ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করলে ফলন অনেক বেড়ে যায়।

পটল চাষে ফসল সংগ্রহ:

কচি অবস্থায় সকাল অথবা বিকালে পটল সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত জাতভেদে ফুল ফোটার ১০-১২ দিনের মধ্যে পটল সংগ্রহের উপযোগী হয়।

এ ছাড়া পটলের পোকামাকড় রোগ ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিতে হবে।

 

By একাডেমিক ডেস্ক, কৃষি গুরুকুল

কৃষি গুরুকুলের একাডেমিক ডেস্ক

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version