কৃষি শিক্ষা ১ম পত্র সূচিপত্র। এই বিষয়টি “বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়” এর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের একটি বিষয় যার কোড ১৮৮৯। এদেশের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ তাদের জীবন ও জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। শুধু মানুষ নয়, সমস্ত গবাদি পশুর খাদ্য আসে কৃষি থেকে। জাতীয় আয়ের প্রায় ১৬ ভাগ আসে কৃষি থেকে। দেশের বৃহত্তর শিল্পগুলোও কৃষির উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। ফসল, গবাদি পশু, পোল্টি্র, মৎস্য ও বনরাজি ইত্যাদি ক্ষেত্র নিয়ে বি¯ৃÍত বাংলাদেশের কৃষি।
কৃষি তথ্য ও সেবা প্রদানের জন্য বিভিন্ন স্থানীয় প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, এনজিও এবং বিভিন্ন কৃষি উপকরন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
এছাড়াও কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস হিসেবে অভিজ্ঞ কৃষক/কৃষানী, কৃষক সভা, উঠোন বৈঠক এবং কৃষক বিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জাতীয় জীবনে সামাজিক পরিবর্তন ও সর্ববিধ উন্নতির মূলে কৃষি উন্নয়নের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আমাদের কৃষির সার্বিক সমস্যা সমাধান করে সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এ ইউনিটে বাংলাদেশের কৃষির ক্ষেত্রসমূহ, সামাজিক বনায়ন, কৃষি’ তথ্য সেবা প্রাপ্তিতে কৃষক, বিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট, ই—কৃষি ইন্টারনেট, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি’ তথ্য সার্ভিস ও কৃষি সম্প্রসারণ, এনজিও ও কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]
কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ সূচিপত্র । এই পাঠটি “বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়” এর “কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুল” এর “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” কোর্স যার কোড ১২০১।
কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ
কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ – বাউবি বিএই ১২০১ – বই PDF ডাউনলোড
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই এদেশের সমস্ত কর্মকান্ড ও উন্নয়ন কৃষিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি কৃষি উন্নয়নের সংগে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে এদেশে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও উত্তরাঞ্চল থেকে আগত নদ—নদীর ঢলে কোন কোন বছর বন্যা দেখা দেয়। বর্ষাকালে প্রতি বছর নদ—নদী বিধৌত অঞ্চলে প্রচুর পলি পরে। ফলে নদ—নদী বিধৌত অঞ্চলের মাটি স্বভাবতঃই বেশি উর্বর। বাংলাদেশের জলবায়ু সমভাবাপন্ন।
প্রায় সারা বছরই কোন না কোন ফসল জন্মে। বছরের কোন সময় কী ধরণের ফসল জন্মাবে তা জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানের উপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে ফসল উৎপাদনের জন্য জমি চাষ, বীজ বপন বা চারা রোপণ, নিড়ানী দেয়া, সেচ প্রয়োগ, আপদনাশক ছিটানো থেকে শুরু করে ফসল কর্তন, মাড়াই, প্রক্রিয়াজাতকরণ, ইত্যাদি কাজগুলোকে আবহাওয়া প্রভাবান্বিত করে। আবহাওয়ার তারতম্যের ভিত্তিতে ফসল উৎপাদন খরিপ—১, খরিপ—২ ও রবি — এই তিন মৌসুমে বিভক্ত করা হয়। খরিপ মৌসুমের সব ফসলই বৃষ্টি নির্ভর। রবি মৌসুমে সেচ প্রয়োগের মাধ্যমে বোরো ধান ও গমের আবাদ করা হয়।
কৃষি পরিচিতি:
ইউনিট — ১ বাংলাদেশের কৃষি: ভূমি, জলবায়ু ও ফসল উৎপাদন
বাংলাদেশের কৃষি পরিবেশ অঞ্চলসমূহের পরিচিতি – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশ” বিভাগের ১ নং ইউনিটের ১.৬ নং পাঠ।
বাংলাদেশের কৃষি পরিবেশ অঞ্চলসমূহের পরিচিতি
বিজ্ঞানসম্মত কৃষি ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য কৃষি পরিবেশ অঞ্চল সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান থাকা বাঞ্ছণীয়। তাই এ পাঠে বাংলাদেশের কৃষি পরিবেশ অঞ্চলসমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। সংযোজিত মানচিত্রে বাংলাদেশের ৩০টি কৃষি পরিবেশ অঞ্চলের অবস্থান দেখানো হয়েছে।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ১ :
পুরাতন হিমালয় পাদভূমি পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাও জেলার অধিকাংশ স্থান এবং দিনাজপুর জেলার উত্তর পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে এ এলাকা গঠিত। এখানকার অধিকাংশ ভূমি উঁচু (৫৮%) বা মাঝারি উঁচু (৩৪%), বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ ৭ ভাগ। মাটি বেলে—দোআঁশ থেকে দোআঁশ। জৈব পদার্থ কম, pH মান ৪.৫ থেকে ৫.৫। রবি মৌসুমে সবজি, গোলআলু, গম, বোরোধান, আখ প্রধান ফসল। খরিপ — ১ মৌসুমে আউশ ধান ও পাট এবং খরিপ — ২ মৌসুমে রোপা আমনের চাষ হয়।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ২ :
সক্রিয় তিস্তা প্লাবন ভূমি নিলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর বিধৌত তীরবতীর্ সরু এলাকা নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। এ অঞ্চল মাঝারি উঁচু (৭২%) ধরনের ভূমি নিয়ে গঠিত। মাটি বেলে—দোআঁশ থেকে দোআঁশ। pH মান ৬.০ থেকে ৬.৫ পর্যন্ত। রবি মৌসুম অনাবাদি। খরিপ — ১ মৌসুমে বোনা আউশ এবং খরিপ — ২ মৌসুমে আমন প্রধান ফসল।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ৩ :
তিস্তা সর্পিল প্লাবন ভূমি বৃহত্তর রংপুর জেলার অধিকাংশ স্থান, পঞ্চগড়ের পূর্বাঞ্চল, দিনাজপুর, বগুড়ার উত্তরাঞ্চল এবং জয়পুরহাট, নওঁগা ও রাজশাহী জেলার অংশবিশেষ নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। অধিকাংশ ভূমি মাঝারি উঁচু (৫১%) থেকে উঁচু (৩৫%)। মাটি সাধারণত দোআঁশ। জৈব পদার্থের পরিমাণ কম। pH মান ৫.৪ থোক ৬.৫ পর্যন্ত । রবি মৌসুমে মূলত ডালজাতীয় ফসলের আবাদ হয়। খরিপ — ১ মৌসুমে বোনা আউশ এবং খরিপ — ২ মৌসুম অনাবাদি থাকে।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ৪ :
করতোয়া বাঙ্গালী প্লাবনভূমি বগুড়ার প র্বাঞ্চলের অর্ধাংশ এবং সিরাজগঞ্জ জেলার অধিকাংশ স্থান এ অঞ্চলের অš ভূর্ক্ত। ভূমি প্রধানত মাঝারি উঁচু (৪৪%) এবং উঁচু (২৩%) ধরনের। বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ ১৪ ভাগ। মাটির গঠন পলি—দোআঁশ থেকে পলি গঠিত কাঁদা—দোআঁশ। pH মান ৫.৪ থেকে ৫.৭ পর্যš । রবি মৌসুমে প্রধান ফসল মাসকলাই ও মশুর। খরিপ — ১ মৌসুমে বোনা আউশ এবং খরিপ — ২ মৌসুমে রোপা আমন।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ৫ :
নিম্ন আত্রাই বেসিন এ অঞ্চলের অধিকাংশ স্থান নওগাঁ ও নাটোর জেলায় অবস্থিত। কিছুটা ক্ষুদ্র অংশ রাজশাহী, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলা পর্যš বি¯ ৃত। এখানকার ভূমি ম লত মাঝারি নিম্ন ধরনের (৮৬%)। বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ শতকরা ৪ ভাগ। মাটি কর্দমাক্ত। জৈব উপাদানের পরিমাণ মধ্যম। pH মান ৪.৮ থেকে ৬.০ পর্যন্ত। রবি মৌসুম অনাবাদি। খরিপ — ১ মৌসুমে বোনা আমন উৎপন্ন হয় এবং খরিপ —
২ অনাবাদি থাকে।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ৬ :
নিম্নপূর্ণভবা প্লাবন ভূমি নওগাঁ জেলার পশ্চিম প্রােš র অংশবিশেষ এবং নবাবগঞ্জ জেলার সর্ব উত্তর প্রােš র অংশবিশেষ নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। অধিকাংশ স্থানই নিম্নাঞ্চল (৬০%) এবং কিছু এলাকা মাঝারি নিম্নাঞ্চল (১০%) ধরনের। বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ শতকরা ৩০ ভাগ। মাটি কর্দমাক্ত ও জৈব উপাদানের পরিমাণ মধ্যম ধরনের। pH মান ৪.৫। রবি মৌসুমে বোরোধানের চাষ হয়ে থাকে। খরিপ মৌসুমে জমি পতিত থাকে।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ৭ :
সক্রিয় ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা প্লাবন ভূমি কুড়িগ্রাম জেলার প র্বাঞ্চল, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ এবং পাবনা জেলা, শেরপুরের পশ্চিমাঞ্চল, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ জেলা নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। এছাড়া ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এবং চাঁদপুর জেলাসম হের অংশবিশেষ এ অঞ্চলের অš র্ভ ক্ত। মাঝারি উঁচু জমির পরিমাণ ৩৭ শতাংশ, মাঝারি নিচু জমি ২০ শতাংশ এবং বসতবাড়ি ও জলাভ মি ৩০ শতাংশ। মাটির বুনট ম লত বেলে/পলিমাটি সমৃদ্ধ। pH মান ৭.৫ থেকে ৭.৯। মাঝারি উঁচু জমিতে রবি মৌসুম অনাবাদি অথবা গম, আলু, চীনা বাদাম, খরিপ — ১ মৌসুমে পাট ও বোনা আউশ এবং খরিপ — ২ সময়ে রোপা আমনের চাষ অথবা পতিত থাকে।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ৮ :
নতুন ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা প্লাবন ভূমি শেরপুর, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলাসম হের পশ্চিমাঞ্চল, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলাসম হের অংশবিশেষ এবং পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ সংলগ্ন ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার অংশবিশেষ নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। ভূমি মাঝারি উঁচু (৪২%), উঁচু (১৮%) এবং মাঝারি নিচু (১৯%) ধরনের। বাড়ি ও জলাশয় ১২ ভাগ। মাটি দোআঁশ। pH মান ৫.৫ থেকে ৬.৮। রবি মৌসুমে উঁচু জমি পতিত থাকে, কিন্তু মাঝারি উঁচু ধরনের জমিতে গোল আলু, সরিষা, মাসকালাই ও আমের চাষ হয়। খরিপ — ১ মৌসুমে উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে বোনা/রোপা আউশ এবং পাটের
চাষ হয। খরিপ — ২ মৌসুমে নিচু জমি পতিত এবং মাঝারি ও উঁচু জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ৯ :
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র প্লাবন ভূমিশেরপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলাসম হের বি¯ ীর্ণ অঞ্চল এবং ঢাকা ও গাজীপুর জেলার কিয়দংশ নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। এখানকার ভূমি উঁচু (২৮%), মাঝারি উঁচু (৩৫%), মাঝারি নিচু (২০%) এবং নিচু (৭%) ধরনের। বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ শতকরা ১০ ভাগ। মাটি পলি—দোআঁশ, জৈব পদার্থ কম । pH মান ৪.৫ থেকে ৪.৯ পর্যš । উঁচু ও মাঝারী উঁচু জমিতে রবি মৌসুমে গম, সরিষা ও ডালজাতীয় শস্য চাষ হয়। খরিপ — ১ মৌসুমে আউশ ও কিছু পাটের চাষ হয় এবং খরিপ — ২ মৌসুমে রোপা আমনের চাষ হয়।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ১০ :
সক্রিয় গঙ্গা প্লাবন ভূমি নবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার গঙ্গা বিধৌত অঞ্চল থেকে বরিশাল ও লক্ষীপুর জেলার মেঘনা পর্যš এ এলাকা বি¯ ৃত। শতকরা ৩৩ ভাগ মাঝারি উঁচুভূমি এবং ১৮ ভাগ মাঝারি নিচু ভ মি নিয়ে এ এলাকা গঠিত। বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ ৩৩ ভাগ। মাটি দোআঁশ, জৈব পদার্থ কম, pH মান ৬.৯ থেকে ৭.৯। প্রধান উৎপন্ন ফসল রবি মৌসুমে খেসারি, মাসকলাই, সরিষা ও বোরো। খরিপ — ১ মৌসুমে আউশ, পাট, এবং খরিপ — ২ মৌসুম অনাবাদি থাকে।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ১১ :
উচ্চ গঙ্গা প্লাবন ভূমি নবাবগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনার দক্ষিণাংশ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর এবং খুলনা ও সাতক্ষীরার উত্তরাঞ্চল, এবং নওগাঁ ও নড়াইল জেলার সামান্য এলাকা এ অঞ্চলের অন্ত র্ভূক্ত। এখানে শতকরা ৪৩ ভাগ উঁচুভূমি, ৩২ ভাগ মাঝারি উঁচুভূমি, ১১ ভাগ বসতবাড়ি ও জলাভূমি এবং বাকি নিম্নভূমি। মাটি পলি—দোআঁশ, জৈব পদার্থ কম, pH মান ৬.১ থেকে ৭.৯। রবি মৌসুমে প্রধানত ডালজাতীয় ফসল, গম, সরিষা, গোল আলু, আম ইত্যাদি ভাল জন্মে। খরিপ — ১ মৌসুমে বোনা ধান ও পাট এবং খরিপ — ২ মৌসুমে রোপা আমনের চাষ হয়।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ১২ :
নিম্ন গঙ্গা প্লাবন ভূমি নাটোর, পাবনা, গোয়ালন্দ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর, কুষ্টিয়া, মাগুরা ও নড়াইল জেলার প বার্ংশ, খুলনা ও বাগেরহাটের উত্তর—প র্বাংশ, বরিশালের উত্তরাংশ, এবং মানিকগঞ্জ, ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জের দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে এ এলাকা গঠিত। এখানে শতকরা ১৩ ভাগ উঁচুভূুমি, ২৯ ভাগ মাঝারি উঁচুভূমি, ৩১ ভাগ মাঝারি নিম্নভূমি, ১৪ ভাগ নিম্নভূমি এবং বাকিটা বসতবাড়ি ও জলাভূমি। মাটি পলি—দোআঁশ থেকে কাদা—দোআঁশ। জৈব পদার্থ মধ্যম, pH মান ৬.২ থেকে ৭.৭ পর্যন্ত। রবি মৌসুমে প্রধানত ডালজাতীয় শস্য এবং সরিষার আবাদ হয়। খরিপ — ১ মৌসুমে বোনা আউশ ও পাট, আউশ + আমন এবং খরিপ — ২ মৌসুমে রোপা আমন, বোনা আমন অথবা পতিত থাকে।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ১৩ :
গঙ্গা জোয়ার প্লাবন ভূমি বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা এবং সুন্দরবনসহ বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলা নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। এখানকার অধিকাংশ ভূমি (৭৮%) মাঝারি উঁচু ধরনের। বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ ১৮ ভাগ। মাটি দো—আঁশ, জৈব পদার্থ মধ্যম। pH মান ৬.৫ থেকে ৭.০ পর্যন্ত । রবি মৌসুমের প্রধান ফসল মাস ও মুগকলাই। খরিপ — ১ মৌসুমে আউশ এবং খরিপ — ২ মৌসুমে রোপা আমনের চাষ হয়।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ১৪ :
গোপালগঞ্জ খুলনা জলাভূমি মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, যশোর, বাগেরহাট ও খুলনা জেলার বিক্ষিপ্ত নিম্নাঞ্চল নিয়ে এ এলাকা গঠিত। এ এলাকার অধিকাংশ ভূমি মাঝারি নিচু (৪১%) থেকে নিচু (২৮%) ধরনের। মাটি কর্দমাক্ত ও দোআঁশ ধরনের। pH মান ৬.৫ থেকে ৭.০ পর্যন্ত । রবি মৌসুমে প্রধানত গম, সরিষা ও ছোলা জাতীয় ফসল ভাল জন্মে। খরিপ — ১ মৌসুমে অধিকাংশ এলাকা অনাবাদি অথবা আউশ জন্মে। খরিপ — ২ মৌসুমে রোপা আমন প্রধান ফসল।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ১৫ :
আরিয়াল বিল মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকা জেলার বিলাঞ্চল নিয়ে এ এলাকা গঠিত। এখানকার অধিকাংশ ভূমিই (৭৩%) নিচু। বাকিটা মাঝারি উঁচু ধরনের। বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ শতকরা ১৪ ভাগ। মাটি কাদাময়, জৈব পদার্থ মধ্যম এবং pH মান ৫.৪। রবি মৌসুমে বোরো ও কিছু ডালজাতীয় ফসল জন্মে। কিন্তু খরিপ — ১ ও ২ অনাবাদি থাকে।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ১৬ :
মধ্য মেঘনা প্লাবন ভূমি কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিলা, চাঁদপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলাসম হের অংশবিশেষ নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। এখানকার অধিকাংশ ভূমি মাঝারি নিম্ন (২৯%) এবং নিম্ন (২৫%) ধরনের। বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ শতকরা ২৭ ভাগ। মাটি দোআঁশ, জৈব পদার্থ কম, pH মান ৪.৯ থেকে ৫.৫ পর্যন্ত। রবি মৌসুমের প্রধান ফসল বোরো, সরিষা ও ডালজাতীয় শস্য। খরিপ — ১ মৌসুমে আউশ, আউশ + আমন এবং খরিপ — ২ পতিত থাকে।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ১৭ :
নিম্ন মেঘনা প্লাবন ভূমি চাঁদপুর, লক্ষীপুর ও নোয়াখালী জেলা নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। এ এলাকায় তিন ধরনের ভূমি রয়েছে: উঁচু (১৪%), মাঝারি উঁচু (২৮%) এবং মাঝারি নিচু (৩১%)। বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ শতকরা ২৭ ভাগ। মাটি পলি—দোআঁশ, জৈব পদার্থ মধ্যম, pH মান ৫.০ থেকে ৬.০। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে রবি মৌসুমে সরিষা, পিয়াজ, মরিচ ইত্যাদি ফসল জন্মে অথবা অনাবাদি থাকে। মাঝারি নিচু জমিতে বোরো, গম, সরিষা ইত্যাদি প্রধান ফসল। খরিপ — ১ মৌসুমে প্রায় সব ধরনের জমিতে আউশ (বোনা/রোপা) এবং খরিপ — ২ মৌসুমে রোপা আমন প্রধান ফসল।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ১৮ :
নূতন মেঘনা মোহনা প্লাবন ভূমি চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও বরগুনা এ অঞ্চলের অš র্ভ ক্ত। ভূমি মাঝারি উঁচু (৪৫%) ধরনের। বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ ৪৮ ভাগ। মাটি পলি—দোআঁশ, জৈব পদার্থ মধ্যম, pH মান ৬.১ থেকে ৬.৮ পর্যন্ত । রবি মৌসুমে খেসারি, সরিষা, ও বোরো প্রধান ফসল। খরিপ — ১ মৌসুমে প্রায়ই অনাবাদি অথবা সেচের মাধ্যমে বোরো চাষ হয়। খরিপ— ২ মৌসুমে সর্বত্র রোপা আমন হয়ে থাকে।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ১৯ :
পুরাতন মেঘনা মোহনা প্লাবন ভূমি কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিলা, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল জেলা নিয়ে এ এলাকা গঠিত। মাটি মাঝারি উঁচু (২৪%), মাঝারি নিচু (৩৩%) এবং নিচু (২১%) ধরনের। বসতবাড়ী ও জলাভূমির পরিমাণ ১৭ ভাগ। মাটি পলি—দোআঁশ, দোআঁশ ও কাদাময়। জৈবপদার্থ মধ্যম, pH মান ৫.০ থেকে ৬.৫ পর্যš । রবি মৌসুমে বোরো, সরিষা প্রধান ফসল। খরিপ — ১ মৌসুমে, আউশ, পাট এবং খরিপ — ২ মৌসুমে রোপা বা বোনা আমন প্রধান ফসল।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ২০ :
পূর্ব সুরমা কুশিয়ারা প্লাবন ভূমি সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা নিয়ে অঞ্চল গঠিত। এখানে রয়েছে মাঝারি উঁচু জমি (২৫%), মাঝারি নিচু জমি (২০%) এবং নিচু জমি (৩৬%)। বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ ১৪ ভাগ। মাটি পলি—দোআঁশ ও কাদাময়, জৈব পদার্থ মধ্যম, pH মান ৪.৭ থেকে ৬.৯ পর্যš । রবি মৌসুমে বোরো অথবা অনাবাদি। খরিপ — ১ মৌসুমে আউশ, আউশ + আমন অথবা অনাবাদি এবং খরিপ — ২ মৌসুমে রোপা আমন অথবা অনাবাদি।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ২১ :
সিলেট বেসিন সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ এবং বি. বাড়িয়ার বৃহত্তর এলাকা নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। এখানকার অধিকাংশ ভূমিই নিচু (৪৩%) বাকিটা মাঝারি নিচু (১৯%) এবং অতি নিচু (২৩%)। বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ ১১ ভাগ। মাটি দোআঁশ থেকে এটেল, জৈব পদার্থ উচ্চ, pH মান ৪.৭ থেকে ৪.৯ পর্যš । রবি মৌসুমে প্রধান ফসল বোরো ধান। খরিপ — ১ মৌসুমে বোনা আমন অথবা অনাবাদি। খরিপ — ২ মৌসুমে রোপা আমন অথবা অনাবাদি।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ২২ :
উত্তর ও পূর্ব পাদভূমি শেরপুর, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, বি.বাড়িয়া ও কুমিলা জেলা নিয়ে এ এলাকা গঠিত। এখানে রয়েছে প্রধানত উঁচু জমি (৩৩%), মাঝারি উঁচু জমি (৩১%) এবং মাঝারি নিচু জমি (২৩%)। বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ ১০ ভাগ। মাটি বেলে—দোআঁশ, দোআঁশ এবং পলি— দোআঁশ। জৈব পদার্থ মধ্যম, pH মান ৪.৫ থেকে ৫.৮। রবি মৌসুমে ম লা, মাসকালাই, সরিষা ও বোরো অথবা অনাবাদি। খরিপ — ১ মৌসুমে আউশ (বোনা/রোপা), বোনা আমন অথবা অনাবাদি এবং খরিপ — ২ মৌসুমে রোপা আমন/অনাবাদি।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ২৩ :
চট্টগ্রাম উপকূল সমতল ভূমি ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার উপকূল সংলগ্ন এলাকা নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। এখানকার ভূমি প্রধানত মাঝারি উঁচু (৪৩%), উঁচু (১৭%) এবং মাঝারি নিচু (১৩%)। বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ ২৭ ভাগ। মাটি পলি—দোআঁশ, জৈব পদার্থ কম এবং pH মান ৫.৬। রবি মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের সবজি, খরিপ — ১ মৌসুমে বোনা/রোপা আউশ এবং খরিপ — ২ মৌসুমে রোপা আমন।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ২৪ :
সেণ্টমার্টিন্স কোরাল দ্বীপ সেণ্টমার্টিন্স কোরাল দ্বীপ নিয়ে এ এলাকা গঠিত। এখানকার ভূমি মাঝারি উঁচু (৬৩%) থেকে উঁচু (৩৩%) ধরনের। বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ ২ ভাগ। মাটি বেলে থেকে বেলে—দোআঁশ, জৈব পদার্থ কম, pH মান ৭.০ থেকে ৭.৫। রবি মৌসুমে প্রধান ফসল মশলা, পিঁয়াজ, রসুন/অনাবাদি। খরিপ — ১ মৌসুম অনাবাদি এবং খরিপ — ২ মৌসুম অনাবাদি/রোপা আমন।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ২৫ :
সমতল বরেন্দ্র অঞ্চল দিনাজপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ এবং নাটোর জেলা নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। ভূমি ম লত মাঝারি উঁচু (৫৫%) থেকে উঁচু (৩০%)। বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ ৯ ভাগ। মাটি দোআঁশ, জৈব পদার্থ কম, pH মান ৫.০ থেকে ৫.৭। রবি মৌসুমে অনাবাদি/আম, গোল আলু, পিয়াজ, গম, সরিষা। খরিপ — ১ মৌসুম অনাবাদি/আউশ (বোনা/রোপা) এবং খরিপ — ২
মৌসুমে রোপা আমন।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ২৬ :
উচ্চ বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহী, নবাবগঞ্জ ও নওগাঁ এলাকা নিয়ে গঠিত। ম লত উচ্চ ভূমি (৯৩%)। বসতবাড়ি ও জলাশয়ের পরিমাণ ৬ ভাগ। মাটি দোআঁশ, জৈব পদার্থ কম, pH মান ৪.৮ থেকে ৫.৯। রবি মৌসুমে অনাবাদি/বোরো, আখ, গম, ডালজাতীয় ফসল। খরিপ — ১ মৌসুমে ম লত অনাবাদি অথবা বোনা আউশ এবং খরিপ — ২ মৌসুমে রোপা আমন।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ২৭ :
উত্তর—পূর্ব বরেন্দ্র অঞ্চল দিনাজপুর, রংপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, বগুড়া এলাকা নিয়ে গঠিত। ভূমি প্রধানত মাঝারি উঁচু (৫৬%) থেকে উঁচু। (৩৬%) বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ ৭ ভাগ। মাটি দোআঁশ, জৈব পদার্থ কম, pH মান ৪.৮ থেকে ৫.৬। রবি মৌসুমে বোরো, সরিষা, মাসকালাই, সবজি, আখ। খরিপ — ১ মৌসুমে আউশ, মে¯ া পাট এবং খরিপ — ২ মৌসুমে রোপা আমন/অনাবাদি।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ২৮ :
মধুপুর গড় অঞ্চল ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ এবং কিশোরগঞ্জ জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত। ভূমি প্রধানত উঁচু (৫৩%) ও মাঝারি উঁচু (১৮%), মাটি দোআঁশ, জৈব পদার্থ কম, pH মান ৪.৮ থেকে ৫.৫। রবি মৌসুমে সরিষা, গম, আখ, বোরো। খরিপ — ১ মৌসুমে আউশ (রোপা/বোনা)/অনাবাদি এবং খরিপ — ২ মৌসুমে রোপা আমন/অনাবাদি।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ২৯ :
উত্তর পূর্ব পাহাড়ী অঞ্চল প্রধানত খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার জেলার পাহাড়ি অঞ্চল এবং শেরপুর, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, বি.বাড়িয়া, কুমিলা ও ফেনী জেলার টিলাসমৃদ্ধ অঞ্চল। প্রধানত উঁচুভূমি (৯২%)। বসতবাড়ি ও জলাভূমির পরিমাণ ৫ ভাগ। মাটি দোআঁশ, জৈব পদার্থ কম, pH মান ৪.৮ থেকে ৫.৫। রবি মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের সবজি, মিষ্টি আলু, আখ ইত্যাদি চাষ হয়। খরিপ — ১
মৌসুমে সবজি, আউশ অথবা অনাবাদি এবং খরিপ — ২ মৌসুমে রোপা আমনের চাষ হয়।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল — ৩০ :
আখাউরা সোপান বি.বাড়িয়া এবং হবিগঞ্জের ক্ষুদ্র এলাকা নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। ভূমি প্রধানত উঁচু (৫৫%) এবং মাঝারি উঁচু (১১%)। বসতবাড়ি ও জলাভুমির পরিমাণ ৬ ভাগ। মাটি দোআঁশ, জৈব পদার্থ কম, pH মান ৫.৫ থেকে ৬.৫। রবি মৌসুমের প্রধান ফসল আম, কলা, গম, সরিষা। খরিপ — ১ মৌসুমে রোপা আউশ, পাট, হলুদ এবং খরিপ — ২ মৌসুমে রোপা আমন অথবা অনাবাদি।
বাংলাদেশের পরিবেশ নীতি ও পরিবেশগত অবস্থা – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশ” বিভাগের ১ নং ইউনিটের ১.৫ নং পাঠ।
বাংলাদেশের পরিবেশ নীতি ও পরিবেশগত অবস্থা
পরিবেশ নীতির প্রেক্ষিত আজ বিশ্বজুড়ে পরিবেশ অবক্ষয়ের নিদর্শনসমূহ সুস্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। গোটা মানব জাতিকে আসন্ন বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য তাই বিশ্বব্যাপী চলছে বিরামহীন প্রচেষ্টা। মানব সচেতনতা জাগিয়ে তোলার জন্য প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এছাড়া তথ্যের আদান—প্রদান ও ভবিষ্যত কর্মপদ্ধতি নির্ধারণের জন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বহু সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম।
বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয়ের এ ক্রান্তি লগ্নে বাংলাদেশের অবস্থা আরও করুণ। এখানে দেখা দিচ্ছে উপর্যুপরি বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দেশের উত্তরাঞ্চলে মরুময়তার প্রাথমিক লক্ষণাদি ইতোমধ্যেই অনুভূত হচ্ছে। নদ—নদীর নিম্নাংশে লবণাক্ততার প্রকোপ বাড়ছে। ভূমিক্ষয়, বনাঞ্চলের দ্রুত অবক্ষয়, জলবায়ু ও আবহাওয়ার অস্থিরতাসহ অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যাও বিদ্যমান রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় দেশের পরিবেশ দূষণ ও অবক্ষয় সংক্রান্ত সমস্যাদি চিহ্নিত করে ১৯৯২ সনে পরিবেশ নীতি প্রণয়ন করেছেন।
পরিবেশ নীতির উদ্দেশ্যসমূহ:
পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা।
দেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ছোবল থেকে মুক্ত রাখা।
সব ধরনের দুষণ ও অবক্ষয়মূলক কর্মকান্ড শনাক্তকরণ ও নিয়ন্ত্রণ।
সর্বস্তরে পরিবেশসম্মত উন্নয়ন পদ্ধতি অনুসরণ করা।
সকল জাতীয় সম্পদের লাগসই, দীর্ঘমেয়াদী এবং পরিবেশসম্মত ব্যবহার নিশ্চিত করা।
পরিবেশসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সঙ্গে যথাসম্ভব সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকা।
পরিবেশ নীতিমালা
বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কতৃর্ক ১৯৯২ সনে প্রণীত পরিবেশ নীতি সংক্ষিপ্ত আকারে নিম্নে প্রদত্ত হলো :
বনজ সম্পদের বিকল্প উদ্ভাবন ও তা ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান। বন্য প্রাণী ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ এবং এতদসংক্রান্ত গবেষণা ও জ্ঞান বিস্তারে সহায়তা প্রদান।
১। কৃষি নীতি :
কৃষি উন্নয়নের সকল প্রচেষ্টা ও প্রযুক্তি পরিবেশসম্মতভাবে করণ। কৃষি সম্পদের ভিত্তি সংরক্ষণ ও দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। মানুষ ও প্রাণীর উপর ক্ষতিকর প্রভাব রাখে এমন সব কৃষি উপকরণের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা। পরিবেশ অনুকূল প্রাকৃতিক তন্তু যেমন: পাট ও পাটজাত দ্রব্যাদির ব্যবহার উৎসাহিতকরণ।
২। শিল্পসংক্রান্ত নীতি :
পরিবেশ দূষণ করে এমন পণ্য উৎপাদনকারী শিল্পস্থাপন নিষিদ্ধকরণ, স্থাপিত শিল্পসমূহ পর্যায়ক্রমে বন্ধকরণ এবং এ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান কত্তর্ৃক উৎপাদিত পণ্যের পরিবেশ সম্মত বিকল্প পণ্য উদ্ভাবন। প্রচলনের মাধ্যমে ঐ সকল পণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণ। পরিবেশসম্মত লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম জোরদারকরণ।
৩। স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত নীতি :
সকল ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কর্মকান্ড প্রতিরোধ করা। স্বাস্থ্য শিক্ষায় পরিবেশ বিষয়ক কারিকুলাম অন্তভূর্ক্তকরণ। শহর ও গ্রামাঞ্চলে সকলের জন্য পরিবেশসম্মত আবাস ও কর্মস্থলের ব্যবস্থাকরণ।
৪। জ্বালানি নীতি :
পরিবেশ দ ষণকারী জ্বালানিসম হের ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণ। কম ক্ষতিকারক ও বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার উৎসাহিতকরণ। জ্বালানি সাশ্রয়কারী উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণকরণ। মজুত ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংরক্ষণ এবং এতদসংক্রান্ত নতুন প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে পরিবেশগত প্রভাব নিশ্চিতকরণ।
৫। পানি সম্পদ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ :
পানি সম্পদ উন্নয়ন ও সেচ ব্যবস্থাপনায় পরিবেশসম্মত ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। পানি সম্পদ উন্নয়নে ইতোমধ্যে গৃহীত ব্যবস্থার ত্রুটি দুরীকরণ এবং সকল জলাশয়কে দূষণমুক্ত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ। ভূ—গর্ভস্থ ও ভূ—উপরিস্থ পানির ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞানভিত্তিক, টেকসই ও পরিবেশ সম্মতকরণ।
৬। ভূমি ব্যবস্থাপনা :
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা গ্রহণ। ভূমির ক্ষয়রোধ, উর্বরতা সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি, ভূমি পুনরূদ্ধার ও বিভিন্ন ইকোসিস্টেমের সঙ্গে সংঙ্গতিপূর্ণ ভূমি ব্যবস্থাপনা জোরদারকরণ। জমির লবণাক্ততা ও ক্ষারীয় প্রভাব রোধকরণ।
৭। বনজ সম্পদ সংক্রান্ত নীতি :
পরিবেশের ভারসাম্য ও আর্থসামাজিক প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে বন ও বৃক্ষাদি সংরক্ষণ এবং নতুন করে বনায়ন। বনজ সম্পদের বিকল্প উদ্ভাবন ও তা ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান। বন্য প্রাণী ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ এবং এতদসংক্রান্ত গবেষণা ও জ্ঞান বিস্তারে সহায়তা প্রদান।
৮। মৎস্য ও পশুসম্পদ :
মৎস্য সম্পদ উন্নয়নকল্পে জলাভূমির সংস্কার ও সংকোচন রোধকরণ। মৎস্য ও পশুসম্পদের উন্নয়ন কর্মসূচীতে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ও অন্যান্য ইকোসিস্টেম যাতেহুমকির সম্মুখীন না হয় তা নিশ্চিতকরণ। মৎস্য সম্পদের জন্য ক্ষতিকারক পানি উন্নয়ন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ প্রকল্পসমূহের পূর্নমূল্যায়ন এবং মাছ চাষের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ।
৯। খাদ্য নীতি :
খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বণ্টন ব্যবস্থা স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্মতভাবে নিশ্চিতকরণ। বিনষ্ট খাদ্য পরিবেশসম্মতভাবে নিষ্পত্তিকরণ এবং স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ খাদ্যদ্রব্যাদি আমদানি নিষিদ্ধকরণ।
১০। উপকূলীয় ও সামুদ্রিক পরিবেশ :
উপকূলীয় ও সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের পরিবেশসম্মত সংরক্ষণ ও উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ এবং এতদ উপলক্ষে গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণ। উপকূলীয় ও সামুদ্রিক এলাকায় সব ধরনের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক দূষণমূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধকরণ। সংশিষ্ট এলাকায় মৃত মাছের পরিমাণ সহনশীল মাত্রায় রাখার ব্যবস্থাকরণ।
১১। যোগাযোগ ও পরিবহন :
স্থল, রেল, বিমান ও নৌপথ পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ। অভ্যন্তরীণ নৌ—বন্দর ও ডকইয়ার্ডসমূহ কর্তৃক পানি ও স্থল ভাগের দূষণকার্য নিয়ন্ত্রণকরণ।
১২। গৃহ ও নগরায়ন :
গৃহ ও নগরায়নের সকল পরিকল্পনা ও গবেষনায় পরিবেশগত চিন্তা সম্পৃক্তকরণ। শহর ও গ্রামাঞ্চলের আবাসিক এলাকায় পর্যায়ক্রমে পরিবেশসম্মত সুযোগসুবিধাদি সম্প্রসারণ এবং নিয়ন্ত্রণ। নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনে জলাশয়ের উপর গুরুত্ব প্রদান।
১৩। জনসংখ্যা সংক্রান্ত নীতি :
জনশক্তির সমন্বিত, সুপরিকল্পিত ও পরিবেশসম্মত ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। উন্নয়নমূলক কাজে মহিলাদের সম্পৃক্তকরণ এবং বেকার জনশক্তি ব্যবহার উৎসাহিতকরণ।
১৪। শিক্ষা ও গণ—সচেতনতা :
দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নিরক্ষরতা দূর করে শিক্ষিতের হার দ্রূত বৃদ্ধিকরণ। পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের ব্যাপারে ব্যাপক গণ—সচেতনতা সৃষ্টিকরণ। প্রাতিষ্ঠানিক ও অ—প্রাতিষ্ঠানিক সকল শিক্ষা কার্যক্রমে পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয় অন্তভূর্ক্তকরণ।সরকারী, বেসরকারী ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মকর্তা, কর্মচারি ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে পরিবেশসংক্রান্ত বিষয় অন্তভূক্তর্করণ।
১৫। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা :
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতির আওতায় উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে পরিবেশ দষণ তদারক ও নিয়ূ ন্ত্রণের ব্যবস্থা আরোপকরণ। জাতীয় সম্পদের লাগসই, দীর্ঘস্থায়ী এবং পরিবেশসম্মত ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষে প্রয়োজনীয় গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন উৎসাহিতকরণ।
বাংলাদেশের পরিবেশগত অবস্থা কোন দেশের পরিবেশগত অবস্থা নির্ভর করে তার ভৌগলিক অবস্থান, আবহাওয়ার তারতম্য, বনজসম্পদের পরিমাণ, মাটির প্রকৃতি, আর্থ—সামাজিক অবস্থান, জনসংখ্যা, শিক্ষার হার, শিল্পের অগ্রসরতা ইত্যাদির উপর। তবে বাংলাদেশের পরিবেশ অবক্ষয়ের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে :
১। জনসংখ্যার আধিক্য:
প্রায় এক লক্ষ চুয়ালিশ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান। এর জনসংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১২ কোটি এবং বাৎসরিক বৃদ্ধির হার ২.১ ভাগ। সীমিত জায়গায় বিপুল জনগোষ্ঠীর অবস্থান, তাদের দারিদ্র ও অশিক্ষা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের পরিবেশের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
২। ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
বাংলাদেশ পদ্মা, মেঘনা, যমুনা প্রভৃতি নদী বিধৌত পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব—দ্বীপ দেশ। উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে সীমিত পাহাড়িয়া উচ্চভূমি বাদে পুরো দেশটাই এক বিশাল সমভূমি। দেশের মাঝ দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করায় এ দেশ ক্রান্তীয় অঞ্চলভুক্ত। তবে সাগর সান্নিধ্য হওয়ায় এবং মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এখানে শীত ও গ্রীষ্মের তীব্রতা প্রকট নয়। মানব সৃষ্ট কারণ ছাড়াও বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য বাংলাদেশের পরিবেশ আর যেসব কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা হচ্ছে :
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অধিকাংশ ঘ ূর্ণিঝড়ই বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে। বাংলাদেশে বিশেষ ধরনের মোচাকৃতির উপকূল রেখা থাকার কারণেই এমনটি হয়ে থাকে।
(ক) ঘূর্ণিঝড় :
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড়ই বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে। বাংলাদেশে বিশেষ ধরনের মোচাকৃতির উপকূল রেখা থাকার কারণেই এমনটি হয়ে থাকে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের কারণে প্রচুর প্রাণহানি ও সম্পদের অবক্ষয় ঘটে। আবাদি জমিতে লোনা পানি ঢুকে উর্বরতা বিনষ্ট করে, ফলে স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়।
(খ) বন্যা :
পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ ছোট বড় বহু নদী বাংলাদেশের উপর দিয়ে বহমান। প্রায় সবগুলি নদীরই উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের বাইরে। বর্ষা মৌসুমে এসব নদী প্রচুর পানি ও পলি বহন করে মাঠ ঘাট ছাপিয়ে তুলে। এর সাথে যোগ হয় মৌসুমী বৃষ্টিপাত। ফলে সমভূমিতে দেখা দেয় বন্যা। মৌসুমভেদে বন্যার প্রকোপ খুবই তীব্রতর হয়। ফলে ভেসে যায় মাঠ, ঘাট, শহর, বন্দর, এবং গ্রাম—জনপদ। বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ঘটে মাঠ ফসলের এবং বাড়ি ঘরের। প্রাণহানি ঘটে মানুষ, গবাদিপশু ও অন্যান্য প্রাণীর। দূষিত হয়ে পড়ে পানিসহ পরিবেশের অন্যান্য উপাদান। ফলে প্রাদুর্ভাব ঘটে কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয়সহ প্রাণঘাতী বহু রোগের।
(গ) কালবৈশাখী ও টর্নেডো :
প্রতিবছরই চৈত্র—বৈশাখ মাসে রদ্ররোষে আঘাত হানে ূ কালবৈশাখী। মৌসুমী—পূর্ব ঋতুর এমন ঝড়োবাতাস প্রধানত উত্তর পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়। এই ঝড়ের সর্বোচ্চ বেগ ৬০ থেকে ১৩০ কি. মি. এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এই ঝড়ের সাথে প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং কখনো কখনো বজ্রসহ শিলা বৃষ্টিপাত ঘটে। কালবৈশাখীর বজ্র—মেঘ কখনো কখনো শক্তি সঞ্চয় করে মারাত্বক আকার ধারণ করে এবং হাতির শুঁড়ের আকৃতি সদৃশ মেঘ ভূমির দিকে নেমে আসে।
এর নাম টর্নেডো। স্বল্প সময়ের মধ্যে কোন স্থানের বায়ুর চাপ দ্রুত কমে ২৫ মিলিবারের নিচে নেমে আসলে ভয়াবহ টর্নেডোর আশঙ্কা থাকে। টর্নেডোর শুঁড়ের আওতায় থাকে প্রচন্ড ঘূর্ণি। যে এলাকার উপর দিয়ে এ ঝড় প্রবাহিত হয় সেখানে ঘরবাড়ি, গাছ—পালা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। প্রাণ হারায় অসংখ্য প্রাণী। অনেক সময় মাঠের ফসল পর্যন্ত জ্বলে পুড়ে যায়।
৩। জ্বালানি ও বনসম্পদ
দ্রূত গতিতে বাড়ছে বাংলাদেশের জনসংখ্যা। এই জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজন বাসস্থান, আসবাবপত্র, জ্বালানি ইত্যাদি উপকরণ। আর এসবের সিংহ ভাগই আসছে বনসম্পদ থেকে। ফলে দেশের সীমিত বনসম্পদের উপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ প্রায় ৬ শতাংশ। সুতরাং বন উজাড়িকরণের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে । ভূমি ক্ষয় ত্বরান্বিত হচ্ছে, নদীর ভাঙ্গন ও বৃদ্ধি পাচ্ছে । প্রভাব পড়ছে আবহাওয়ার উপর বাড়ছে ঝড় জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা। আবাসস্থল সংকুচিত হওয়ায় বিপন্নের মুখোমুখি বহু বন্যপ্রাণী।
৪। অপরিকল্পিত নগরায়ন
দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১২ ভাগ শহরাঞ্চলে বাস করে। বৃহৎ শহরগুলির মধ্যে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা ৬০ লক্ষের উপরে এবং আগামী ২০০০ সালের মধ্যে হয়ত ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১২ ভাগ শহরাঞ্চলে বাস করে। বৃহৎ শহরগুলির মধ্যে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা ৬০ লক্ষের উপরে এবং আগামী ২০০০ সালের মধ্যে হয়ত ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। অন্যান্য বড় শহরগুলির জনসংখ্যাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
এই বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য যে নাগরিক সুযোগ সুবিধার প্রয়োজন ছোট বড় কোন শহরেই তা পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেনি। শহরগুলিতে রয়েছে আয়তনের তুলনায় অধিক জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত আবাস গৃহ, সংকীর্ণ রাস্তা—ঘাট, ত্রুটিপূর্ণ পয়:প্রণালী ও ময়লা নিষ্কাশন ব্যবস্থা, যত্রতত্র বস্তি এলাকা এবং আরও বহুবিধ সমস্যা। ফলে শহরের বাসিন্দারা প্রায়ই শ্বাসযন্ত্রের রোগ, যক্ষ্মা, কৃমি, ডাইরিয়া, আমাশয়, হেপাটাইটিস, এবং টাইফয়েডের মতো অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও দুষিত পানি সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
৫। অপরিকল্পিত শিল্পায়ন
বাংলাদেশ শিল্পোন্নত দেশ নয়। তথাপি ছোট বড় বেশ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান এখানে রয়েছে এবং নতুনভাবে গড়ে উঠছে। ভারী শিল্পের মধ্যে রয়েছে পাট, বস্ত্র, চিনি, কাগজ, সিমেণ্ট, সার এবং জাহাজ নির্মাণ। মাঝারী ও ক্ষুদ্র শিল্পের মধ্যে চামড়া, খাদ্য, তামাক, গার্মেণ্টস, ডিস্টিলারি শিল্পের নাম উলেখযোগ্য। অধিকাংশ শিল্প কারখানাগুলোর অবস্থান শিল্প এলাকার বাইরে, যেমন নদ—নদীর ধারে অথবা কোন আবাসিক এলাকায়। এসকল শিল্প কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য পরিশোধনের কোন্ ব্যবস্থা নেই। ফলে তা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ।
পরিবেশ সম্পর্কিত ধারণা- নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশের উপাদান” বিষয়ের ইউনিট ১ এর ১.১ নং পাঠ।
পরিবেশ সম্পর্কিত ধারণা
পরিবেশের ধারণা পরিবেশ কথাটি বহুলভাবে ব্যবহৃত, যেমনঃ সামাজিক পরিবেশ, সাংস্কৃতিক পরিবেশ, শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ, রাজনৈতিক পরিবেশ ইত্যাদি আরও অনেক পরিবেশ। তবে পরিবেশ বিজ্ঞান জীব বিজ্ঞানেরই একটি অপেক্ষাকৃত নতুন ও আধুনিকতম সংকলন যেখানে জীবের সাথে তার পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিজ্ঞানের যে শাখা জীবের পারিপার্শি¦কতার সাথে জীবকূলের প্রতিটি পারস্পরিক ক্রিয়া—বিক্রিয়া নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করে তাই পরিবেশ বিজ্ঞান।
পরিবেশের সাথে প্রাণীজগতের সম্পর্ক নিয়ে আলোচিত বিদ্যাকে ইকোলজি বলা হয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিবেশ বিজ্ঞানী পরিবেশের নানাবিধ সংজ্ঞা দিয়েছেন। যার উৎপত্তি ও বিস্তৃতি ব্যাপক বিধায় স্বল্প পরিসরে আলোচনা সম্ভব নয়। তবে বহুল প্রচলিত ও সমাদৃত কয়েকটি সংজ্ঞা এখানে দেওয়া গেল।
পরিবেশ বিজ্ঞানের সংজ্ঞা :
(১) জৈব ও অজৈব পরিবেশের সাথে প্রাণীর অনাবিল সম্পর্ককেই পরিবেশ বিজ্ঞান বলে, হেকেল, ১৮৬৯।
(২) পরিবেশের সাথে জীবের সম্পর্ক নিয়ে যে বিজ্ঞান অনুসন্ধান চালায় তাই পরিবেশ বিজ্ঞান। এটি জ্ঞানের এমন একটি দর্শন যেখানে জীবজগতকে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার আলোকে ব্যাখ্যা করা হয় উডবারি, ১৯৫৫।
(৩) জীবক লের প্রাচুর্য ও বিস্তার সম্পর্কিত সুনিদিষ্ট গবেষণাই পরিবেশ বিজ্ঞান এন্ড্রিয়ার্থা, ১৯৬১।
(৪) পরিবেশ বিজ্ঞান হচ্ছে পরিবেশের আন্তঃক্রিয়াদির অধ্যয়ন যা জীবের বিস্তার, উৎপাদন প্রাচুর্য ও অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করে এবং মঙ্গল সাধন করে পেট্রিডিস, ১৯৬৮।
(৫) প্রকৃতির গঠন ও কার্যাবলী সম্পর্কে অধ্যয়নই হচ্ছে পরিবেশ বিজ্ঞান ওডাম, ১৯৭১।
(৬) জীবের প্রাচুর্য ও বণ্টন নির্ণয়কারী আন্তঃক্রিয়াদির বিজ্ঞানভিত্তিক পর্যালোচনাই হচ্ছে পরিবেশ বিজ্ঞান ক্রেব, ১৯৭২।
উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলোর সার সংক্ষেপ করলে যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে, আমাদের চার পাশে যা কিছু আছে এবং যা কিছুই আমাদের জীবনধারাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে তাই আমাদের পরিবেশ।
পরিবেশের উপাদান :
সাধারণভাবে পরিবেশ বলতে জীবের পারিপার্শ্বিক অবস্থাকেই বুঝায়। তবে পরিবেশ আসলে একটি জটিল পদ্ধতি যা বহুবিধ উপাদানের সমষ্টি নিয়ে গঠিত। বাহ্যিক যে সকল বস্তু বা উপাদান জীবকে ঘিরে রেখেছে এবং যা জীবকে তার বিকাশ ও বিস্তারে প্রভাবিত করে তাই পরিবেশের উপাদান। এই উপাদানগুলো সজীব ও জড় উভয়বিধই হতে পারে। পরিবেশের মৌলিক উপাদানসমূহকে পরবতীর্ পৃষ্ঠায় ছকে দেখানো হলো।
পরিবেশের উপাদানসমূহের আন্তঃক্রিয়া:
প্রাকৃতিক পরিবেশে বিশেষ কোন একক উপাদানের চেয়ে উপাদানসমুহের সমষ্টিগত প্রভাব জীবের উপর বেশি অবদান রাখে। এর কারণ এই যে, উপাদানগুলো পরস্পরের সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। পরিবেশের কোন একটি উপাদানের তারতম্য ঘটলে অন্য উপাদানের ক্রিয়াকান্ডও তাদ্বারা প্রভাবিত হয়। পরিবেশ বিজ্ঞানের ভাষায় যা ঐড়ষড়পড়বহড়ঃরপ প্রভাব বলে খ্যাত। যেমনঃ সূর্যালোকের প্রখরতা বাড়লে উদ্ভিদের প্রস্বেদন হার বৃদ্ধি পায়। প্রস্বেদন হার বাড়লে বিপাকীয় কাজ প্রভাবিত হয় ইত্যাদি।
বিভিন্ন পরিবেশ বিজ্ঞানী পরিবেশের উপাদানগত শ্রেণিবিন্যাস বিভিন্নভাবে দিয়ে থাকলেও অধিকাংশের মতে চারটি ভাগের উপরই প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে।
১। জলবায়ুগত উপাদান
(ক) আলো :
এ পৃথিবীতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জীবনকে কার্যকর রাখার জন্য সকল শক্তির উৎস সৌর শক্তি। সবুজ উদ্ভিদ পত্রস্থ ক্লোরোফিলের সাহায্যে যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আলোকশক্তি শোষণ করে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করে এবং শর্করাজাতীয় খাদ্য উৎপাদন করে তাকে সালোক—সংশ্লেষণ বলে।
সালোক—সংশ্লেষণ বিবর্জিত উদ্ভিদের অস্তিত্ব যেমন কল্পনা করা যায় না, তেমনি উদ্ভিদ ছাড়া অন্য প্রাণীর জীবন ধারণও প্রায় অসম্ভব। আর এসবই হচ্ছে আলোক শক্তির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। সালোক—সংশেষণ ছাড়াও উদ্ভিদের গঠন, আকৃতি, পত্রবিন্যাস, পাতার পুরুত্ব, ক্লোরোফিলের পরিমাণ, প্রস্বেদন, পুষ্পায়ন এবং আরও বহুবিধ জৈবিক কার্যাবলী আলো দ্বারা সংঘটিত বা প্রভাবিত হয়। পৃথিবীতে পতিত আলোক রশ্মির তীব্রতা ও স্থায়ীত্ব, ঋতুভেদ, অক্ষাংশ, ভূমির ঢাল ও দিক, বায়ুমন্ডলের স্বচ্ছতা, আর্দ্রতা, কুয়াশা, মেঘ ইত্যাদি উপকরণ দ্বারা প্রভাবিত হয়।
যে সকল উদ্ভিদ তীব্র আলোতে ভাল জন্মে (যেমনঃ ধান, পাট, গম, আম, তূলা ইত্যাদি) তাদেরকে আলো পছন্দকারি উদ্ভিদ বা হেলিওফাইট বলে। আবার যে সকল উদ্ভিদ ছায়াযুক্ত স্থানে জন্মানো পছন্দ করে (যেমনঃ ফার্ণ, পান, বনের নিম্নস্তরের লতাগুল্ম ইত্যাদি) তাদেরকে ছায়া পছন্দকারি উদ্ভিদ বা সাইওফাইটস বলে।
(খ) তাপমাত্রা :
উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশে তাপমাত্রা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সকল বিপাকীয় কার্যক্রম, যেমনঃ সালোক—সংশ্লেষণ, শ্বসন, পরিশোষণ, অঙ্কুরোদগম, প্রস্বেদন, অভিস্রবন ইত্যাদি পরিবেশীয় তাপমাত্রা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাপমাত্রা কম বা বেশি হলে বিপাকীয় কার্যাবলীর উপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বেঁচে থাকার জন্য সকল উদ্ভিদের একটি সর্বোচ্চ শ্বসণ , পরিমিত ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রয়েছে, যাকে কার্ডিনাল তাপমাত্রা বলা হয়। কোন আবাসস্থলে উদ্ভিদের বিস্তৃতি তার কার্ডিনাল তাপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
যেমনঃ ধান গাছের অভিযোজন সর্বোচ্চ ৪০০ সে. এবং সর্বনিম্ন ৫০ সে. তাপমাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ কিন্তু পরিমিত বা অনুকূল তাপমাত্রা ২০—৩০০ সে. এর মধ্যে। তাই উদ্ভিদের ভৌগলিক বিস্তৃতি তাপমাত্রার উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। তাপমাত্রার তারতম্যের উপর নির্ভর করে উদ্ভিদসম হকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় ঃ
(১) মেগাথার্ম — যে সকল উদ্ভিদ অতি উচ্চ তাপমাত্রা সম্পন্ন অঞ্চলে জন্মায়।
(২) মেসোথার্ম — এরা মূলত উষ্ণ প্রধান অঞ্চলের উদ্ভিদ। তবে বাৎসরিক ঋতুভেদে অপেক্ষাকৃত কম উষ্ণতাও সহ্য করতে পারে।
(৩) মাইক্রোথার্ম — এরা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের উদ্ভিদ বলে বছরের বেশির ভাগ সময়ই অপেক্ষাকৃত কম উষ্ণতা সহ্য করতে পারে।
(৪) হেকিস্টোথার্ম — এরা মেরু অঞ্চলের উদ্ভিদ, সারা বছর নিম্ন তাপমাত্রা সহনশীল।
অনুশীলন ঃ আলো ও তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে উদ্ভিদের শ্রেণিবিন্যাস করুন। আপনার পরিচিত উদ্ভিদগুলোকে উল্লিখিত শ্রেণিবিন্যাসে বিভক্ত করুন।
বায়ুতে অবস্থিত ঈঙ২ গ্যাস উদ্ভিদের সালোক—সংশ্লেষণের জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। তবে এর মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া ঘটানোর জন্য
দায়ী।
(গ) বায়ু :
বায়ু প্রবাহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিস্তৃতি প্রভাবিত করে। অনেক উদ্ভিদের বীজ একস্থান হতে অন্যস্থানে বায়ু দ্বারা স্থানান্তরিত হয়ে উদ্ভিদের বংশ বিস্তার ঘটায়। বহু উদ্ভিদের পরাগায়ণ বায়ুর মাধ্যমে হয়ে থাকে। মৃদু বায়ুতে উদ্ভিদের প্রস্বেদন হার কম। কিন্তু প্রবল বায়ুতে তা বৃদ্ধি পেয়ে উদ্ভিদের পানির চাহিদা বাড়িয়ে তোলে। প্রবল বায়ু দ্বারা সংঘটিত জটিলতার মধ্যে রয়েছে উদ্ভিদের আকৃতিগত বিকৃতি, ভেঙ্গে পড়া, ঘর্ষণজনিত ক্ষতিসাধন, ভূমিক্ষয় ইত্যাদি। এ ছাড়া বহু রোগের জীবাণু বায়ুবাহিত হয়ে উদ্ভিদ ও প্রাণীর রোগের কারণ ঘটায়। বায়ুতে অবস্থিত ঈঙ২ গ্যাস উদ্ভিদের সালোক—সংশ্লেষণের জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। তবে এর মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া ঘটানোর জন্য দায়ী।
(ঘ) বায়ুর আর্দ্রতা :
বায়ুর জলীয় আর্দ্রতাকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা হিসেবে প্রকাশ করা হয়। কোন বায়ুতে অবস্থিত জলীয়—বাষ্পের বর্তমান অবস্থা এবং একই বায়ু সম্পৃক্ত হলে কতটুকু জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা রাখে তার অনুপাতকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে। আপেক্ষিক আর্দ্রতা শতকরা হিসেবে প্রকাশ করা হয়। বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা কম—বেশির সাথে আপেক্ষিক আর্দ্রতাও কম—বেশি হয়। উষ্ণতা বাড়লে আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে। আবার উষ্ণতা কমলে আপেক্ষিক আপেক্ষিক আর্দ্রতা উদ্ভিদের প্রস্বেদন হার নিয়ন্ত্রণ করে বলে কোন্ অঞ্চলে কী ধরনের উদ্ভিদ জন্মাবে তা সে অঞ্চলের আপেক্ষিক আর্দ্রতার ওপর বহুলাংশে ি নর্ভরশীল।
আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়। আপেক্ষিক আর্দ্রতা উদ্ভিদের প্রস্বেদন হার নিয়ন্ত্রণ করে বলে কোন্ অঞ্চলে কী ধরনের উদ্ভিদ জন্মাবে তা সে অঞ্চলের আপেক্ষিক আর্দ্রতার উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। অনেক উদ্ভিদ আছে যারা শুষ্ক আবহাওয়ায় সংবেদনশীল কিন্তু আর্দ্র আবহাওয়ায় সহজেই জন্মাতে পারে। এদেরকে হাইগ্রোফাইটস বলে। যেমনঃ রাস্না, ঢেঁকিশাক ইত্যাদি।
(ঙ) বৃষ্টিপাত ও পানি :
উদ্ভিদ জীবনে পানির গুরুত্ব অপরিসীম। উদ্ভিদের শারীরবৃত্তীয় যাবতীয় কার্যক্রম পানির মাধ্যমেই সংঘটিত হয়। পানি সালোক—সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার অন্যতম উপাদান। পানির অবর্তমানে উদ্ভিদের খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া চলতে পারে না। আর খাদ্য উৎপাদন ছাড়া উদ্ভিদের বেঁচে থাকার কথাই ভাবা যায় না। একারণেই পরিবেশীয় অন্যান্য উপাদান অপেক্ষা ভূপৃষ্ঠে উদ্ভিদ বিস্তারের ক্ষেত্রে পানির তাৎপর্য অনেক বেশি।
কোন স্থানে উদ্ভিদের ধরন, ি বকাশ, বিস্তৃতি, ইত্যাদি নির্ভর করে সে অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও পানির প্রাপ্যতার ওপর। কোন স্থানে উদ্ভিদের ধরন, বিকাশ, বিস্তৃতি, ইত্যাদি নির্ভর করে সে অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও পানির প্রাপ্যতার উপর। আবার কোন এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্ভর করে অনেকটা উক্ত এলাকা সাগরের কতটা নিকটবর্তী, সাগর থেকে ভূমির দিকে প্রবাহিত বায়ুর গতিধারা, বায়ুতে জলীয় বাষ্পের প্রাচুর্যতা, অক্ষাংশ ইত্যাদির উপর। নিরক্ষীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সর্বাধিক, পক্ষান্তরে মেরুঅঞ্চলের বৃষ্টিপাত সর্বনিম্ন।
উদ্ভিদ বাসস্থানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও পানির প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে উদ্ভিদকে চারটি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় :
(১) জলজ উদ্ভিদ :
যে সকল উদ্ভিদ জলজ পরিবেশে আংশিক বা সব সময় জীবিকা নির্বাহ করে তাদেরকে জলজ উদ্ভিদ বলে। এরা নিমজ্জিত বা ভাসমান, মুক্ত বা নোঙ্গরাবদ্ধ হতে পারে, যেমনঃ কচুরীপানা, হাইড্রিলা, শেওলা, শাপলা ইত্যাদি। উভচর উদ্ভিদও জলজ উদ্ভিদের গোত্রেই পড়ে, যেমনঃ কলমী শাক এদের মূলকান্ড সুগঠিত নয়। অভিস্রবন চাপও খুব কম।
(২) সাধারণ উদ্ভিদ :
যে সকল উদ্ভিদ মাটিতে পরিমিত পানি থাকা অবস্থায় জন্মে তাদেরকে সাধারণ উদ্ভিদ বলে। এদের জীবন ধারণের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত ও নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর প্রয়োজন। এদের জন্য জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা কোনটাই সহনীয় নয়, যেমনঃ গম, সরিষা, আম, জাম, কাঁঠাল ইত্যাদি। এদের মূল, কান্ড, শাখা—প্রশাখা সুগঠিত। অভিযোজন চাপ স্বাভাবিক।
(৩) মরুজ উদ্ভিদ :
যে সকল উদ্ভিদ শুষ্ক মাটিতে অথবা খুব কম বৃষ্টিপাত সম্পন্ন অঞ্চলে জন্মে তাদেরকে মরুজ উদ্ভিদ বলে। কম বৃষ্টিপাতসম্পন্ন এলাকায় জন্মে বলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এদের পাতা, কান্ড, মূল, অভ্যন্তরীণ ও শারীরবৃত্তীয় ক্ষেত্রে প্রচুর রূপান্তর হয়ে থাকে। এদের উদাহরণ হচ্ছে — ফণিমনসা, ক্যাকটাস, করবি, খেজুর, ঝাউ, ঘৃত কুমারী ইত্যাদি।জোয়ার ভাটা বিধৌত সমুদ্রতীরবর্তী এ ধরনের উদ্ভিদকে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ বলে, যেমনঃ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে সুন্দরবনের সুন্দরী, গড়ান, গেওয়া, গোলপাতা ইত্যাদি।
(৪) লোনা মাটির উদ্ভিদ :
যে সকল উদ্ভিদ লবণাক্ত পানি বা মাটিতে জন্মে তাদেরকে লোনা মাটির উদ্ভিদ বলে। এ সকল উদ্ভিদের পাতা প্রায়ই রসালো এবং ভূগর্ভস্থ মল ূ থেকে মাটির উপরে খাড়াভাবে শ্বাস—মূল দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জরায়ুজ—অঙ্কুরোদগম ঘটে এবং উচ্চ অভিস্রবন চাপ বিদ্যমান। জোয়ার ভাটা বিধৌত সমুদ্র তীরবর্তী এ ধরনের উদ্ভিদকে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ বলে, যেমনঃ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে সুন্দরবনের সুন্দরী, গড়ান, গেওয়া, গোলপাতা ইত্যাদি।
২। মৃত্তিকাগত উপাদান
পরিবেশের মৃত্তিকাগত উপাদানের মধ্যে রয়েছে মাটির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলী। মাটির গঠন, বুনট ইত্যাদি ভৌত গুণাবলী এবং মাটির অম্লত্ব, ক্ষারত্ব, লবণাক্ততা, খাদ্য উপাদান ইত্যাদি রাসায়নিক উপাদান দ্বারা উদ্ভিদের বর্ধন, বিকাশ ও বিস্তৃতি বহুলভাবে প্রভাবিত। মাটির পানি ধারণক্ষমতা তার ভৌত গুণাবলীর উপর নির্ভরশীল। অপরপক্ষে উদ্ভিদের খাদ্য সরবরাহের পরিমাণ মাটির রাসায়নিক গুণাবলীর উপর নির্ভরশীল। তাই সব মাটিতেই সব
উদ্ভিদ ভাল জন্মে না যেমনঃ ভারি মাটি ধান চাষের জন্য উপযোগী, অপর দিকে হালকা দো— অঁাশ মাটি আখ, গম, সরিষা, ইত্যাদি চাষের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত।
৩। স্থান সংক্রান্ত উপাদান
স্থান সংক্রান্ত উপাদানের মধ্যে রয়েছে
(ক) ভূমির উচ্চতা ও বন্ধুরতা
(খ) অক্ষাংশ এবং
(গ) ভূমির ঢাল ও দিক।
(ক) ভূমির উচ্চতা ও বন্ধুরতা ঃ সাগর—পৃষ্ঠ থেকে ভূমি কত উচ্চতায় অবস্থিত অথবা ভূমির উপরিভাগের বন্ধুরতার ধরন উদ্ভিদ জীবনকে প্রভাবিত করে। কারণ এ দ্বারা আলো ও পানির প্রাপ্যতা এবং স্থানীয় জলবায়ু বহুলাংশে নির্ভরশীল।
(খ) অক্ষাংশ ঃ অক্ষাংশের অবস্থান, স্থানীয় জলবায়ু, তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, আলোর পরিমাণ ইত্যাদি আবহাওয়াগত উপাদানের নির্দেশক এবং এসবকিছু দ্বারাই উদ্ভিদ ও প্রাণী বিস্তার প্রভাবিত হয়। পৃথিবীর নিম্ন অক্ষাংশের মরু অঞ্চল উচ্চ তাপ ও পানির অভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বসবাসের অনুপযোগী। আবার উচ্চ অক্ষাংশের মেরু অঞ্চল তীব্র শীত ও বরফজনিত কারণে বসবাসের অনুপযোগী।
(গ) ভূমির ঢাল ও দিক ঃ ভূমির ঢাল ও দিকের প্রভাব উদ্ভিদ ও প্রাণীর উপর বেশি অনুভূত হয় মধ্য ও উচ্চ অক্ষাংশে। নিম্ন অক্ষাংশে এর তেমন কোন প্রভাব পরিলক্ষিত হয় না। কারণ সূর্য সারা বৎসরই এখানে লম্বভাবে কিরণ দিয়ে থাকে। ভূমির ঢালের মাত্রাও এখানে গুরুত্বপর্ণ, কারণ ু ঢালের পরিমাণ বেশি খাড়া হলে পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে তা উদ্ভিদ জন্মানোর জন্য অনুকল নয়।
জৈবিক উপাদান
জীবকূলের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের প্রভাবকেই জৈবিক কারণ বলে। পরিবেশীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সকল প্রাণীই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। সবুজ উদ্ভিদ খাদ্য প্রস্তুত প্রক্রিয়ায় বায়ুর যে ঈঙ২ গ্রহণ করে তা প্রাণীর শ্বসনজাত। পক্ষান্তরে প্রাণী নিঃশ্বাসের সাথে যে ঙ২ গ্রহণ করে তা উদ্ভিদের সালোক—সংশেষণ প্রক্রিয়ার উপজাত। প্রকৃতিতে উদ্ভিদ কর্তৃক ব্যবহৃত নাইট্রোজেনঘটিত খাদ্য ব্যাকটেরিয়া ও নীলাভ—সবুজ শৈবাল দ্বারা মাটিতে ধারণকৃত। তাছাড়া জীবকূলের মধ্যে রয়েছে সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা, মিথোজীবীতা, পরজীবীতা, পরাশ্রয়ীতা, ইত্যাদির মতো আরও অনেক ক্রিয়া কর্ম যা জীব সম্পর্কীয় উপাদানেরই অংশবিশেষ।
বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় কৃষি পণ্যের উৎপাদনের পরিমাণ – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশের উপাদান” বিষয়ের ইউনিট ৩ এর ৩.৫ নং পাঠ।
বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় কৃষি পণ্যের উৎপাদনের পরিমাণ
বাংলাদেশে কৃষি পণ্যের উৎপাদন প্রয়োজনের তুলনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কম। পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের হার বাড়ানো প্রয়োজন। আর সেজন্য প্রয়োজন উন্নত প্রযুক্তি ও সময় মত কৃষকের নিকট লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর।
কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি যোগ হতে থাকলে কম সময়ে স্বল্প পরিসর আবাদী জমিতে অধিক ফসল ফলিয়ে অধিক পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের হার বাড়ানো প্রয়োজন। আর সেজন্য প্রয়োজন উন্নত প্রযুক্তি ও সময় মত কৃষকের নিকট লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর। উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষ ও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে বিগত কয়েক বৎসরে অধিকাংশ ফসলেরই উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির দিক বিবেচনায় আনলে কৃষি পণ্যের উৎপাদন সে তুলনায় বাড়েনি, তাই এ ঘাটতি পূরণের জন্য অধিকাংশ কৃষি পণ্যই আমাদের বিদেশ হতে আমাদানি করতে হয়।
প্রয়োজনের তুলনায় আমরা কী পরিমাণ কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন করি এবং কতটুকু ঘাটতি বা উদ্বৃত্ত্ব তার পরিসংখ্যান নিম্নে (ছক — ১) দেয়া হলো:
ছক — ১ ঃ কৃষি পণ্যের প্রয়োজন, উৎপাদন ও ঘাটতি বা উদ্বৃত্ত্বের পরিমাণ (১৯৯২—৯৩) [‘০০০’ কেজি]
উপরের ছক হতে দেখা যায় বাংলাদেশে ধান উৎপন্ন হয় ১৮৩.৪১ লক্ষ টন এবং প্রয়োজন ১৮৩.৭১ লক্ষ টন। এ হিসেবে ঘাটতির পরিমাণ ৩০ হাজার টন। তবে খাদ্য হিসেবে ধানের (চাল) পরিবর্তে আমরা বেশি করে গম আমদানি করে থাকি। দেশে বর্তমানে ১১.৭৬ লক্ষ টন গম উৎপন্ন হয় এবং বিদেশ হতে আমদানি করা হয় ১০.৩৩ লক্ষ টন যা মোট প্রয়োজনের ৪৭ শতাংশ। দেশে গমের মোট প্রয়োজন ২২.০৯ লক্ষ টন। দেশে চিনির প্রয়োজন প্রায় ৮.২৪ লক্ষ টন এবং উৎপন্ন হয় প্রায় ৭.৫১ লক্ষ টন। প্রয়োজনীয় বাকী ৭৩ হাজার টন চিনি বিদেশ হতে আমদানি করে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে হয় অর্থাৎ চাহিদার প্রায় ৮১ শতাংশ চিনি আমরা উৎপন্ন করি।
দেশে ডালের উৎপাদন ৫.১৯ লক্ষ টন অথচ আমাদের প্রয়োজন ৫.৭৬ লক্ষ টন। বর্তমানে দেশে ডালের ঘাটতি ৫৭ হাজার টন। এ ঘাটতি মোট প্রয়োজনের ১০ শতাংশ। তৈল বীজ হতে আমরা যে তৈল পাই (তৈল বীজে ৩৩% তৈল ধরে হিসেবে করা হয়েছে) এর পরিমাণ প্রায় ১.৫৩ লক্ষ টন। কিন্তু আমাদের প্রয়োজন এর চেয়ে অনেক বেশি অর্থাৎ প্রায় ৪.১২ লক্ষ টন।
তৈলের ঘাটতি ২.৫৯ লক্ষ টন যা আমরা বিদেশ হতে আমদানি করে থাকি এবং এর পরিমাণ প্রয়োজনের প্রায় ৬৩ শতাংশ। আমাদের প্রয়োজনীয় কৃষি পণ্যের মধ্যে তৈলের ঘাটতিই সবচেয়ে বেশি। মশলা, গোল আলু, শাকসব্জি ইত্যাদির প্রয়োজন যথাক্রমে ৩.১২, ১৩.৮৫ এবং ১২.৬২ লক্ষ টন এবং আমাদের দেশে এদের উৎপাদনের পরিমাণ যথাক্রমে ৩.০২, ১৩.৮৪ এবং ১১.৯৮ লক্ষ টন। যে সকল কৃষি পণ্য উৎপাদনে ঘাটতি আছে সেগুলো আমদানি করে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে হয়। প্রয়োজনের তুলনায় বিভিন্ন কৃষি পণ্যের ঘাটতির পরিমাণ শতকরা ০.০৫৬২.৯৮ ভাগ।
আমাদের সব কৃষি পণ্যেরই যে উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে তা নয় বরং কোন কোন পণ্য আমরা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি উৎপন্ন করে থাকি। এ ক্ষেত্রে চা, পাট এবং তামাকের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে । চায়ের বাৎসরিক উৎপাদন ৫০.৮ হাজার টন। এ উৎপাদন থেকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে আমরা ২৯.৬২ হজার টন বিদেশে রপ্তানি করে থাকি যা মোট উৎপাদনের ৫৮.৩ শতাংশ। দেশে পাটের মোট উৎপাদন প্রায় ৯.১৮ লক্ষ টন এবং এখান হতে প্রায় ৪.৩৩ টন বিদেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে এবং এটা মোট উৎপাদনের ৪৭.১৭ শতাংশ। বর্তমানে দেশে প্রয়োজনের চেয়ে ১ হাজার টন বেশি তামাক উৎপন্ন হয়।
তামাকের মোট উৎপাদন ৩৬.০০ হাজার টন এবং প্রয়োজন ৩৪.৯২ হাজার টন। উৎপাদিত অতিরিক্ত এক হাজার টন তামাক আমরা বিদেশে রপ্তানি করে থাকি যা মোট উৎপাদনের তিন শতাংশ। উৎপাদিত কৃষি পণ্যের মধ্যে শতকরা হিসেবে চা—ই আমরা বেশি রপ্তানি করে থাকি। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে চা, পাট ও তামাকের ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত্বের পরিমাণ যথাক্রমে ৫৮.৩, ৪৭.২ এবং ৩ শতাংশ ।
বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানিযোগ্য কৃষি পণ্যের তালিকা ও পরিমাণ – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশের উপাদান” বিষয়ের ইউনিট ৩ এর ৩.৫ নং পাঠ।
বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানিযোগ্য কৃষি পণ্যের তালিকা ও পরিমাণ
আমদানিকৃত পণ্য বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের মাটি ও জলবায়ু ফসল উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কিন্তু অত্যধিক জনসংখ্যার চাপে দেশ আজ ভারাক্রান্ত এবং যে খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয় তা এ বাড়তি
জনসংখ্যার জন্য যথেষ্ট নয়। তাই প্রতি বছরই আমাদের বিদেশ হতে খাদ্য আমদানি করে এ ঘাটতি পুরণ করতে হয়। শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও বেশ কিছু পণ্য বিদেশ হতে আমদানি করতে হয়। বস্ত্র শিল্পের জন্য প্রতি বছরই আমাদের তুলা আমদানি করতে হয়। শিশুখাদ্য হিসেবে বিদেশ হতে প্রচুর পরিমাণে গুঁড়া দুধ আমদানি করতে হয়। প্রধান প্রধান কৃষি পণ্য যেগুলো বিদেশ হতে আমদানি করতে হয় তার খতিয়ান নিম্নে (ছক — ১) দেয়া হলো:
ছক — ১ ঃ আমাদানিকৃত প্রধান প্রধান কৃষি পণ্যের তালিকা।
রপ্তানিযোগ্য কৃষি পণ্য
আমরা যে শুধু কৃষি পণ্য বিদেশ হতে আমদানি করি তা নয়, কিছু কিছু পণ্য আমরা বিদেশে রপ্তানিও করে থাকি। এক সময় একচেটিয়া পাট রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম এক নম্বরে ছিল। বর্তমানেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সিংহভাগ আসে পাট ও চা রপ্তানি খাত হতে। তাছাড়া আমরা শুকনা ও হিমায়িত মাছ, চামড়া, তামাক ও তামাক জাত দ্রব্য ইত্যাদি বিদেশে রপ্তানি করে থাকি। প্রধান প্রধান কৃষি পণ্য যেগুলো আমাদের দেশ হতে বিদেশে রপ্তানি করা হয় তাদের নাম ও পরিমাণ নিম্নে (ছক — ২) দেয়া হলো:
ছক — ২ ঃ পরিমাণসহ রপ্তানিযোগ্য প্রধান প্রধান পণ্যের তালিকা।
উপরিউক্ত রপ্তানি পণ্য তালিকার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে কিছু কিছু রপ্তানি পণ্য যেমন হিমায়িত মাছ, চা, চামড়া ইত্যাদির রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। পাট ও পাটজাত দ্রব্য সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করলেও এর রপ্তানির পরিমাণ ১৯৯২—৯৩ সনে কমে গেছে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়িয়ে এবং উন্নত মানের পাট ও পাটজাত সামগ্রীর রপ্তানি বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে এ ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।
রপ্তানি আয়ের বেশ একটা ভাল অংশ আসে চামড়া থেকে যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। চায়ের উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে এবং সে সঙ্গে বাড়ছে এর রপ্তানির পরিমাণ এবং দেশের রপ্তানি আয়। হিমায়িত ও শুকনা মাছ রপ্তানির পরিমাণও ক্রমান¦য়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বর্তমানে আমদানির পরিমাণ রপ্তানির তুলনায় বেশি। জাতীয় আয়ের বিরাট অংশ ব্যয় হয় খাদ্য আমদানির জন্য। যে বছর দেশে বন্যা, খরা, বা অন্য কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ আঘাত হানে সে বছরই খাদ্যশস্য ফলনের উপর এদের বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফলে ফলন কমে যায় এবং তখনই বিদেশ হতে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়। কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষিকেই প্রধান্য দিতে হবে বেশি। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে পারলেই দেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।
সারমর্ম
বাংলাদেশে কৃষি পণ্যের আমদানির পরিমাণ রপ্তানির তুলনায় বেশি। আমাদানিকৃত প্রধান প্রধান কৃষি পণ্য হলো গম, চাল, চিনি, গুঁড়াদুধ, সয়াবিন তৈল, পাম্প ওয়েল, বিভিন্ন ধরনের মশলা, ডাল, ফল এবং ঔষধ ও প্রসাধনী শিল্পের কাঁচামাল। সবচেয়ে বেশি আমদানি করতে হয় গম, চাল ও ভোজ্য তেল। বাংলাদেশ হতে যে সব পন্য বিদেশে রপ্তানি হয় সেগুলোর মধ্যে উলেখযোগ্য হলো হিমায়িত ও শুকনো মাছ, চা, চামড়া, পাট ও পাটজাত দ্রব্য ইত্যাদি। সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে।
বাংলাদেশের খাদ্যের বর্তমান অবস্থা – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশের উপাদান” বিষয়ের ইউনিট ৩ এর ৩.৩ নং পাঠ।
বাংলাদেশের খাদ্যের বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি উন্নয়নে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, জমির খহুবিখন্ডতা, প্রশস্ত রাস্তা ঘাটের অভাব এবং কৃষকের সকল ধরনের উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতির ক্রয় ক্ষমতা না থাকায় এদেশে পূর্ণ যান্ত্রিকীকরণ সম্ভব নাও হতে পারে। যে সকল কৃষি যন্ত্রপাতি আমাদের আবহাওয়ায় মানানসই এবং ফসল উৎপাদনে একান্তই প্রয়োজন সেগুলো দিয়ে বর্তমানে যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ শুরু হয়েছে। সেই সাথে হাঁস—মুরগি, গবাদিপশু ও মৎস্য খামারে তাদের উন্নতির জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতিও ব্যবহার হচ্ছে।
বাংলাদেশে খরিপ মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে। ফলে এসময় বন্যায় অনেক ক্ষয়—ক্ষতি হয়। শীতকালে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পানির অভাবে রবি ফসলের আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না। বন্যা নিয়ন্ত্রন ও সেচ প্রদানের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প রয়েছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পুর্ণ নয়। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ যা উৎপন্ন হয় তা নিজেদের প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। বিভিন্ন খাদ্যশস্য, দুধ ইত্যাদি আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় কৃষি পণ্যের উৎপাদনের পরিমাণ কম তাই অধিকাংশ পণ্যই আংশিক আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের মানুষের প্রধান পেশা হলো কৃষি যেখানে মোট শ্রমশক্তির ৬৮.৫% নিয়োজিত।
দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের প্রায় ৩৫% আসে কৃষজাত দ্রব্য থেকে। এদেশের জমি উর্বর হলেও কৃষক দরিদ্র। নতুন নতুন প্রযুক্তি, উন্নত বীজ ও কৃষি উপকরণ ব্যবহারে পশ্চাদপদ থাকায় প্রতি একক জমিতে উৎপাদন সন্তুোষজনক নয়। ধান, গম, পাট, আখ, তামাক, চা, তৈলবীজ, ডাল, শস্য এবং আলু এদেশের প্রধান ফসল। বিভিন্ন ধরনের শাকসব্জি এবং মশলা জাতীয় ফসলের চাষও এদেশে হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে কী পরিমাণ খাদ্য শস্য উৎপন্ন হয় তা নিম্নে (ছক — ১) দেয়া হলো:
উপরোক্ত ছক হতে দেখা যায় যে ধান, গম, ডাল ফসল, মশলা জাতীয় শস্য, গোল আলু এবং শাকসব্জির ফলন ১৯৯১—৯২ সনের তুলনায় ১৯৯৩—৯৪ সনে বেড়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশ মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ। নিকট অতীতেও এখানকার অভ্যন্তরীণ জলাশয় মাছে ভরপুর ছিল। দেশের মৎসজীবি সম্প্রাদায় অভ্যন্তরীণ প্লাবন ভূমিতে মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করত। প্রাকৃতিক ও মানুষের সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ ও সেখানে উৎপাদিত মৎস্য সম্পদ গত তিন দশকে মারাত্বক হ্রাস পেযেছে।
সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণ এবং বর্তমানে উপকূলীয় অঞ্চলে চিংড়ি চাষ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অভ্যন্তরীন মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন হ্রাস পেলেও সামুদ্রিক মৎস্য ও উপকূলীয় অঞ্চলে চিংড়ি চাষের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন জলজ সম্পদ হতে প্রাপ্ত মৎস্য সম্পদের উৎপাদন ধরা হয়েছে প্রায় ১২ লক্ষ মেট্রিক টন যা নিম্নের ছকে (ছক — ২) দেখানো হলো:
মাংস, দুধ ও ডিমের উৎপাদন দেশে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে (ছক — ৩ দ্রষ্টব্য)। ১৯৯১—৯২ সনে যেখানে মাংস ও দুধের উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ৩৭,৬,০০০ ও ৯,৫৪,০০০ মেট্রিক টন, ১৯৯৪—৯৫ সনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৫,০৪,৭০২ ও ১৪,১১,৯৫৯ মেট্রিক টনে। ডিমের উৎপাদনও এসময়ে ১,৫৭৭ মিলিয়ন হতে বেড়ে ২,৫৩০ মিলিয়ন হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাক্তিগত প্রচেষ্টা ও সরকারী পৃষ্টপোষকতায় গবাদিপশু ও হাঁস—মুরগির খামার প্রতিষ্ঠাই সম্ভবত এই উৎপাদন বৃদ্ধির কারণ।
মাঠ ফসল, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু ও মৎস্য খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশের উপাদান” বিষয়ের ইউনিট ৩ এর ৩.২ নং পাঠ।
মাঠ ফসল, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু ও মৎস্য খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি
আমাদের দেশে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির নাম নিম্নে দেয়া হলো ঃ
১। চাষের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি —
* দেশী লাঙ্গল
* মোল্ডবোর্ড লাঙ্গল
* পাওয়ার টিলার
* ট্রাক্টর প্লাউ * ডিস্ক প্লাউ
* হ্যারো
* রোটোভেটর
* গরুর কাঁধে বাঁধার জন্য জোয়াল
* কোদাল (কোন কোন ক্ষেত্রে )
২. জমি সমান করার যন্ত্রপাতি —
* মই
* রোলার
* হ্যারো
* মুগুর (ঢিলা ভাঙ্গার জন্য)
৩। বীজ বপনের যন্ত্রপাতি —
* সিড ড্রিল
* ফারোয়ার
৪। আঁচড়া দেয়ার যন্ত্রপাতি —
* হ্যান্ড র্যাক বা গার্ডেন র্যাক
* ফিল্ড র্যাক বা বিদা বা অঁাচড়া
৫। নিড়ানী দেয়ার যন্ত্রপাতি —
* নিড়ি বা খুরপি
* জাপানিজ রাইস উইডার
* হ্যান্ড হো বা হুইল হো
৬। সেচ যন্ত্রপাতি —
* সেউতি
* দোন
* ঝাঝড়া
* টিউবওয়েল
* ট্রেডেল পাম্প
* পাওয়ার পাম্প
* অগভীর নলকূপ
* গভীর নলকূপ
৭। আপদনাশক ব্যবহারের যন্ত্রপাতি —
* নেপসেক স্প্রেয়ার
* পাওয়ার স্প্রেয়ার
* সিড ড্রেসার
* এরোপ্লেন
৮। কর্তন, মাড়াই, ঝাড়াই ইত্যাদি যন্ত্রপাতি
* কাস্তে * চালনি
* কোদাল * ডালি
* পেডেল থ্রেসার * ঝাটা
* ঘানি * গ্রেইন কালেক্টর
* ইক্ষু মাড়াই কল * কর্ণ সেলার
* কুলা
হাঁস—মুরগির খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি হাঁস—মুরগির খামারে যে সব প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ব্যবহৃত হয় সেগুলো হলো ঃ
* মুরগিকে খাবার দেয়ার জন্য খাবার পাত্র * থামোর্মিটার
* পানির পাত্র * কাঁকর ও ঝিনুকের খোসা রাখার পাত্র
* ডিম পাড়ার বা* * স্প্রেয়ার
* ওজন করার ব্যালেন্স * হারিকেন বাতি
* ডিম গ্রেডিং এর যন্ত্র * ওজন মাপার যন্ত্র
* মুরগি স্থানান্তরের খাঁচা * কোদাল
* ডিম রাখার পাত্র * খুরপি
* খাদ্য মিশানোর যন্ত্র * বালতি
* হাইগ্রোমিটার * ঠেঁাট কাটার যন্ত্র।
খামারে ডিম ফুটানোর যন্ত্রপাতি
* ইনকিউবেটর
* জেনারেটর
* ড্রাই বাল্ব ওয়েট বাল্ব থার্মোমিটার
ব্রয়লার খামারের যন্ত্রপাতি
* ব্রুডার বা তাপায়নের যন্ত্র
* চিকগার্ড
* ডিম পরীক্ষার বাতি
* ডিম মাপার ব্যালেন্স
* টেবিল
গবাদি পশুর খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি
গবাদি পশুর খামারে নিম্নলিখিত যন্ত্রপাতি থাকা আবশ্যক ঃ
* রাবার রিং * রেজার গরু বা ঘোড়াকে নাল বা জুতা পরানোর যন্ত্রপাতি
* বাসপ্
* হাতুরি
* ড্রইং নাইফ
* চিমটা * টোইং নাইফ
* বাকার
মৎস্য খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি
* জেনারেটর
* অ*িজেন মিটার
* পি. এইচ. মিটার
* এয়ারেটর
মাছের কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি
* ইনজেকশনের সিরিঞ্জ এবং নিড্ল
* প্লাষ্টিকের গামলা মৎস্য প্রজনন হ্যাচারিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি
* ৩ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপযুক্ত অগভীর নলকুপ
* ইলেকট্রিক পাম্প — ২২০ ভোল্ট, ১.৫ অশ্ব শক্তি, ১৫ মিটার উচ্চতায় ১২০ লিটার পানি তুলতে সক্ষম।
* অ*িজেন টাওয়ার মাছ ধরার যন্ত্রপাতি
* বেহুন্দি জাল
* বড়শি
* ভাসান জাল
* ফিডিং ট্রে
* স্প্রে মেশিন
* রিফ্রেক্ট্রোমিটার
* এ*েল পাম্প
* হোমোজিনাইজার
* সেন্ট্রিফিউজ
* ইনকিউবেশন বোতল
* পানির ট্যাঙ্ক বা জলাধার
* পানির চৌবাচা
* হাপা
* ঝাকি জাল * ঠেলা জাল
* চাই
* শিব জাল বা ধর্ম জাল।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সেচ প্রকল্প:
গঙ্গা – কপোতাক্ষ প্রকল্প :
কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারার কাছে পদ্মা নদী থেকে পানি তুলে খালের সাহায্যে বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনা জেলাসমূহের ব্যাপক অঞ্চলে সেচ দেয়ার উদ্দেশ্যে গঙ্গাকপোতাক্ষ প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য পানি সেচ হলেও বন্যা নিয়ন্ত্রণণ ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নেও বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারার কাছে পদ্মা নদী থেকে পানি তুলে খালের সাহায্যে বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনা জেলাসমূহের ব্যাপক অঞ্চলে সেচ দেয়ার উদ্দেশ্যে এ প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে ৮৪ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্য উৎপন্ন হবে।
এ প্রকল্পটি তিনটি ইউনিটে বিভক্ত। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে পদ্মাতীরে ভেড়ামারার কাছে একটি পাম্প ষ্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। এই পাম্প গুলো পরিচালনার জন্য ৮২০০ কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। এ প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য পানি সেচ হলেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নেও বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
কর্ণফুলী বহুমুখী প্রকল্প :
কর্ণফুলী বহুমুখী প্রকল্প প্রধানত বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প হলেও এর সাহায্যে কর্ণফুলী নদীর নিম্নাঞ্চলের বন্যা নিয়ন্ত্রণ, প্রায় ৬৫০ি কলোমিটার নৌচলাচলের সুব্যবস্থা এবং ৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া যায়। এটি একটি বহুমুখী প্রকল্প। এটি প্রধানত বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প হলেও এর সাহায্যে কর্ণফুলী নদীর নিম্নাঞ্চলের বন্যা নিয়ন্ত্রণ, প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার নৌচলাচলের সুব্যবস্থা এবং ৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া যায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীর উপর ৪৬.৬ মিটার উঁচু, ৬৬০ মিটার দীর্ঘ এবং ২৪০ মিটার চওড়া একটি বাঁধ দিয়ে এ প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে। এ কৃত্রিম হ্রদের পানির সাহায্যে রাঙ্গুনিয়া অঞ্চলে বছরে বর্তমানে দু’টি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। এ হ্রদ থেকে বর্তমানে প্রতি বছর ৫ হাজার টনেরও বেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে।
উত্তরবঙ্গ গভীর নলকূপ প্রকল্প:
এ প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের উত্তরাঞ্চলে চারটি বৃহত্তর জেলা — রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া ও দিনাজপুরে ৩৬০ টি গভীর নলকূপ এবং ৭৬০ টি পাওয়ার পাম্পের সাহায্যে মহানন্দা ও বড়াল নদীর পানি দিয়ে ১ লক্ষ হেক্টর জমিতে পানির সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ অঞ্চলে বাৎসরিক বৃষ্টিপাত কম এবং শীতকালে নদীতে পানি খুব কম পরিমাণে থাকে। তাই এ এলাকায় সেচের জন্য গভীর নলকূপ এবং পাওয়ার পাম্পই বেশি কার্যকরী। এছাড়াও ১০,৫০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বিশিষ্ট একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও চাষের জমিতে পানি সরবরাহের উপযোগী নালা, প্রধান নালা থেকে ফিল্ড নালা এবং প্লট নালাও এ প্রকল্পের অন্তভূর্ক্ত।
চাঁদপুর সেচ প্রকল্প
এটি কুমিলা—চট্টগ্রাম বহুমুখী প্রকল্পের অংশ বিশেষ। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য চাঁদপুর এলাকার কৃষকদের দীর্ঘদিনের অসুবিধাসম হের অবসান ঘটানো এবং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি সাধন। চাঁদপুর প্রকল্প উত্তর দক্ষিণে দু’ভাগে বিভক্ত। উত্তরাংশে রয়েছে ফরিদগঞ্জ, রায়পুর থানা, রামপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার অংশবিশেষ। এ বহুমুখী প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বন্যা নিরোধ বাঁধ নিমার্ণ এবং বহু সংখ্যক পাম্পিং ষ্টেশন। এ পাম্পিং ষ্টেশনের কাজ প্রয়োজনের সময় জমিতে সেচ প্রদান করা এবং বর্ষার সময় অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করা। এ প্রকল্পের অধিনে জমির পরিমাণ প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টর।
উপকূলীয় বাঁধ পুনর্বাসন প্রকল্প
এটি একটি বহুমুখী প্রকল্প। বন্যা প্রতিরোধের জন্য এখানে উপক ল বরাবর ৩৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। úুইস গেইটের মাধ্যমে এখানে পানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ১৯৬৮ সনে এ প্রকল্প চালু হয় এবং ৪৭,০০০ হেক্টর জমি পুনরুদ্ধার করে সেচ প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসল উৎপন্ন করা হয়।
গোমতী প্রকল্প
গোমতী নদীর বন্যার ফলে দীর্ঘদিন ধরে প্রতি বছর নদী তীরবর্তী অঞ্চল সমূহের মানুষের জীবন ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছিল। এ অবস্থা নিরসনকল্পে প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে লর্ড কর্ণওয়ালিসের সময় গোমতীর তীরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এ বাঁধ প্রথম দিকে প্রায়ই ভেঙ্গে যায় ফলে গোমতী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এটি একদিকে বন্যা নিরোধ এবং অন্যদিকে সেচ প্রকল্প হিসেবে কাজ করে। এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে প্রায় ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা যাবে।
ঢাকা—নারায়ণগঞ্জ—ডেমরা সেচ প্রকল্প
এ প্রকল্প ঢাকা শহরের দক্ষিণ—পূর্বে অবস্থিত। এ প্রকল্প এলাকার পূর্বে শীতলক্ষ্যা নদী, দক্ষিণে নারায়ণগঞ্জ শহর, পশ্চিমে বুড়িগঙ্গা নদী এবং উত্তরে ধোলাইখাল। এ প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৬ হাজার হেক্টর চাষাবাদের উপযোগী। এ উদ্দেশ্যে প্রতি সেকেন্ডে ১২৮ ঘনফুট পানি তোলার ক্ষমতা বিশিষ্ট ৪টি পাম্প বসানো এবং ১১ কিলোমিটার লম্বা সেচ খালের উপর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তিস্তা বাঁধ প্রকল্প এ প্রকল্প অনুযায়ী রংপুর জেলার গাদামারী নামক স্থানে তিস্তা নদীতে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
এ প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর ও বগুড়া জেলার প্রায় সাত লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা যাবে। এতে কতকগুলো úুইস গেইট দিয়ে পানির উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সেচের প্রয়োজন হলে úুইস গেইট বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।
এই পানি তখন নালা দিয়ে জমিতে গিয়ে পড়ে। ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিরোধ বাঁধ প্রকল্প রংপুর,বগুড়া ও পাবনা জেলার এক বিস্তির্ণ অঞ্চল প্রায় প্রতি বছরই তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙ্গনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থা নিরসনকল্পে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিরোধ বাঁধ পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই বাঁধের ফলে প্রায় ২ লক্ষ হেক্টর জমি বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাবে।
এই বাঁধের বিভিন্ন স্থানে পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য আটটি রেগুলেটর বসানো হয়েছে।
বরিশাল সেচ প্রকল্প
জমিতে সেচ দিয়ে ফসল উৎপাদনের জন্যই এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে ১৯৮০ সন হতে ৫৬,৬৬০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯৮৫ সন হতে আরও ৪৮,৫৬০ হেক্টর জমিতে এ প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়।
বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের গুরুত্ব – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশের উপাদান” বিষয়ের ইউনিট ৩ এর ৩.১ নং পাঠ।
বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের গুরুত্ব
কৃষি উন্নয়নে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের অবদান অনস্বীকার্য। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। সেসব দেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ শুধু শ্রম শক্তির লাঘবই করেনি বরং ফসলের উৎপাদন খরচ কমিয়ে তার ফলন ও গুনাগুণ বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। অল্প শ্রম, অল্প সময়, অল্প ব্যয় ও অধিক দক্ষতার সাথে খামারে কাজ করতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সে তুলনায় বাংলাদেশ এখনও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় রয়ে গেছে।
অল্প শ্রম, অল্প সময়, অল্প ব্যয় ও অধিক দক্ষতার সাথে খামারে কাজ করতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জনসংখ্যার ক্রম বৃদ্ধির ফলে ফসলের জমির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে। এই ক্রমবর্ধমান বাড়তি মুখের খাবার যোগান দিতে সীমিত জমিতে প্রচলিত শস্য চাষ রীতি পরিবর্তন করে উৎপাদন বর্ধক শস্য চাষ রীতি অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে হলে কৃষি যান্ত্রিকীকরণসহ উন্নত চাষাবাদ প্রণালী অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
১৯২৮ সন হতে এ উপমহাদেশে আংশিক খামার যান্ত্রিকীকরণের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। ১৯২৮ সনের “রাজকীয় কৃষি কমিশন”, ১৯৪৫ সনের “দুর্ভিক্ষ অনুসন্ধানী কমিশন”, ১৯৫১ সনের “পাকিস্তান কৃষি অনুসন্ধানী কমিটি”, ১৯৬০ সনের “খাদ্য ও কৃষি কমিশন” এবং পরবর্তীতে স্বাধীনতা উত্তরকালে “খামার যান্ত্রিকীকরণ কমিটি” দেশে ভূমি কর্ষণ, সেচ ও শস্য সংরক্ষণ এ তিন বিষয়ে বিশেষভাবে যান্ত্রিকীকরণের সুপারিশ করে।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণ কী?
কৃষিক্ষেত্রে বর্ধিত হারে ফসল উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ প্রভৃতি কাজে যন্ত্র শক্তির ব্যবহারকে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বলে। কৃষিক্ষেত্রে বর্ধিত হারে ফসল উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ প্রভৃতি কাজে যন্ত্রশক্তির ব্যবহারকে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বলে। এক্ষেত্রে যন্ত্রশক্তি বলতে মেশিন এবং ইঞ্জিন উভয়কে বোঝায়। যান্ত্রিকীকরণ দু’ধরনের হতে পারে পর্ণ এবং আংশিক। কৃষি ক্ষেত্রে সমুদয় কার্যাদি যখন যূ ন্ত্রশক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয় তখন তাকে পূর্ণ যান্ত্রিকীকরণ বলা হয়। পক্ষান্তরে ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ কতকগুলো কাজ যন্ত্রের সাহায্যে সম্পন্ন করলে তাকে আংশিক কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বলে। বাংলাদেশের আবহাওয়া, কৃষকের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সরকারের সক্রিয় সহযোগিতায় বর্তমানে এখানে আংশিক কৃষি যান্ত্রিকীকরণ শুরু হয়েছে।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণের গুরুত্ব
কৃষি যান্ত্রিকীকরণের গুরুত্ব অপরিসীম। সুবিধা, অসুবিধা এবং আর্থ সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে দেশে কোন কোন ক্ষেত্রে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব আছে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
বীজ উৎপাদন খামারের জন্য
বীজ কৃষির অন্যতম প্রধান উপকরণ। উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় বিবিধ কারণে বীজের মান কমে যেতে পারে। এসব কাজ সাফল্যজনকভাবে কৃষি যন্ত্রপাতির সাহায্যে বিভিন্ন বীজ বর্ধন খামারে অনায়াসে করা যেতে পারে।
কৃষি গবেষণাগারের জন্য
বিভিন্ন কৃষি গবেষণাগার এবং কৃষি শিক্ষার বিদ্যাপিঠে অবশ্যই বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতির সরবরাহ ও ব্যবহার থাকতে হবে। কৃষি উন্নয়নে চাই উপযুক্ত প্রযুক্তি। এসব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের এবং কৃষি শিক্ষায় ছাত্রদের শিক্ষিত করে তুলতে গবেষণাগার ও বিদ্যাপিঠে কৃষি যন্ত্রপাতির সরবরাহ অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
কৃষক পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য যন্ত্রপাতি :
কৃষক পর্যায়ে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার সম্ভব:
ক. জমি চাষ
বাংলাদেশে বছরে তিনবার জমি চাষের ব্যস্ত সময় লক্ষ্য করা যায় ।
* মার্চের প্রথম সপ্তাহ হতে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ।
* জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ হতে আগষ্টের তৃতীয় সপ্তাহ।
* নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ হতে মধ্য জানুয়ারী পর্যন্ত ।
দেশে বর্তমানে চাষের বলদের অভাব শতকরা ৪০ ভাগ এবং বছরের ব্যস্ত সময়ে এ অভাব দাঁড়ায় ৭০ ভাগে। দেশে বর্তমানে চাষের বলদের অভাব শতকরা ৪০ ভাগ এবং উপরোক্ত ব্যস্ত সময়ে এ অভাব দাঁড়ায় ৭০ ভাগে। গরুর ভাল জাত, খাদ্য ও চিকিৎসার অভাব, চারণভূমির অভাব এবং বিভিন্ন সময়ের বন্যায় গবাদি পশুর মৃত্যুর ফলে কৃষিক্ষেত্রে পশুশক্তির অভাব বেড়েই চলছে। তাছাড়া যে সকল কৃষকের চাষের বলদ আছে তারা দু’ফসলের মধ্যবর্তী এত কম সময়ে তড়িঘড়ি করে সঠিকভাবে জমি চাষ করতে পারেনা। ফলে ফসলের ফলনও ভাল হয়না। এসব কারণে দেশে পাওয়ার টিলারের চাহিদা বেড়েই চলছে।
পাওয়ার টিলার ব্যবহারের ফলে ব্যস্ত সময়ে জমি চাষ করতে কোন অসুবিধা হচ্ছেনা বরং অল্প সময়ে কৃষক বেশি গভীরতায় জমি চাষ করে বেশি ফলন পাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন বীজ বর্ধন খামার ও গবেষণা ইনষ্টিটিউটে এবং কিছু সংখ্যক ধনী কৃষক তাদের খামারে বিভিন্নঅশ্বশক্তির ট্রাক্টর প্লাউ ব্যবহার করছে এবং দিন দিন এদের ব্যবহার বেড়েই চলেছে।
খ. বীজ বপন
বীজ বপন করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট হতে বীজ বপন যন্ত্র আবিষ্কার করা হয়েছে যা গবেষণাগারে, বীজ বর্ধন খামারে এবং কৃষকের মাঠে ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি কৃষকেরা এখন বীজ বপন যন্ত্র সরবরাহের জন্য আবেদন জানাচ্ছে।
গ.আগাছা দমন
আগাছা দমনের বিভিন্ন নিড়ানী যন্ত্র যেমন জাপানী ধান নিড়ানীযন্ত্র কৃষকেরা এখন নিজেদের ফসলী জমিতে ব্যাপক হারে ব্যবহার করছে। হ্যাম্পর্যাক, গার্ডেন র্যাক ইত্যাদিও আজকাল আগাছা দমনের জন্য কিচেন গার্ডেনে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ঘ. সেচ প্রয়োগ
কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রসার লাভ করেছে বিভিন্ন সেচ যন্ত্রপাতি। ফসলের পানির চাহিদা মেটাতে দেশীয় সেচ পদ্ধতি অতিরিক্ত ফসল ফলানোর জন্য যথেষ্ট নয়। তাই যান্ত্রিক পদ্ধতিতে সেচ প্রয়োগ আজ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রসার লাভ করেছে বিভিন্ন সেচ যন্ত্রপাতি। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে খাল, বিল, নদী এবং ভূ—গর্ভ হতে পানি তুলে ফসলের জমিতে দেয়া হচ্ছে এবং সেচের আওতায় দিন দিন ফসলী জমির পরিমাণ বাড়ছে।
বিভিন্ন সেচ যন্ত্রপাতি যা এদেশে ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলো হলো নলকূপ, ট্রেডেল পাম্প, পাওয়ার পাম্প, অগভীর নলকূপ এবং গভীর নলকূপ, ইত্যাদি। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর বা অগভীর নলকূপ তাদের নির্ধারিত সেচের আওতাভূক্ত জমিতে সেচ দিতে পারছেনা।
এ ক্ষেত্রে পাওয়ার পাম্প দক্ষতার সাথে নদী বা বিল হতে জমিতে সেচ দিতে পারে। সেচের আওতায় জমির পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকেরা বেশি পরিমাণ জমিতে ধান চাষ করছে। ফলে রবি মৌসুমে অন্যান্য ফসল বিশেষ করে ডাল ও মশলা জাতীয় ফসলের জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এতে যদিও ফসলের নিবিড়তা বাড়ছে কিন্তু অন্য ফসলের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে যার ফলে এসব ফসল বিদেশ থেকে আমদানি করে চাহিদা মিটাতে হচ্ছে ।
দেশের খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে হলে বেশি পরিমাণে জমি সেচের আওতায় আনতে হবে। আর তাই সেচ যন্ত্রপাতির চাহিদা এদেশে বাড়তেই থাকবে। ফসল উৎপাদনে সেচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। অতএব কৃষি যান্ত্রিকীকরণের এ উপকরণটি বিশেষ করে ফসল উৎপাদনে সেচ যন্ত্রপাতির গুরূত্ব অপরিসীম।
ঙ. ফসল সংরক্ষণ
আগাছা, রোগ ও পোকা—মাকড়ের আক্রমণ হতে জমির ফসল রক্ষার জন্য হস্ত চালিত ও শক্তিচালিত বিভিন্ন স্প্রেয়ার ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশে এদের ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। বর্তমানে এসব যন্ত্রপাতি আমাদের দেশেই তৈরি হচ্ছে। উঁচু গাছে ঔষধ দেবার জন্য উচ্চ চাপের স্প্রেয়ার তৈরি করা হয়েছে যা দেশের উত্তরাঞ্চলের আম বাগানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিভাগ বিস্তীর্ণ এলাকায় কীটনাশক বা আপদনাশক প্রয়োগের জন্য ছোট ছোট উড়োজাহাজ ব্যবহার করে থাকে।
চ. মাড়াই ও প্রক্রিয়াকরণ
আউশ ও বোরো ধান কাটার পর বৃষ্টি হলে অনেক সময় মাড়াই কাজের বিঘ্ন ঘটে। পদচালিত মাড়াই যন্ত্র (চধফফষব ঃযৎবংযবৎ) এক্ষেত্রে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ মাড়াই যন্ত্র তৈরি হচ্ছে। যেখানে আগে গরু দিয়ে মাড়াই কাজ করা হতো, গরু কমে যাওয়ায় এসব কাজ এখন পদচালিত মাড়াই যন্ত্রের সাহায্যে করা হয়। শুধু তাই নয়, গম মাড়াই যন্ত্রের উদ্ভাবনের চেষ্টাও দেশে চল্ছে। ধান, সরিষা ও মশলা যেগুলো ঢেঁকি কিংবা ঘানির সাহায্যে ভাঙ্গানো হতো এখন এসব কাজ মেশিনের সাহায্যে করা হচ্ছে এবং বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে এখন এসব মিল চালু হয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে কৃষি কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের সম্ভাব্য বেকারত্ব।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণের বড় সুবিধা এই যে অল্প সময়ে, কম শ্রমিক দিয়ে, দক্ষতার সাথে, কম খরচে অধিক ফসল ফলানো সম্ভব। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে কৃষি কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের সম্ভাব্য বেকারত্ব। দেশের অর্ধেকেরও বেশি শ্রমিক কৃষি শিল্পে নিয়োজিত। দেশে কৃষি ক্ষেত্রে পূর্ণ যান্ত্রিকীকরণ হলে অধিকাংশ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলদেশে আংশিক যান্ত্রিকীকরণই শ্রেয়। দেশের পরিবেশের কথা বিবেচনা করে দেশীয় প্রযুক্তি দিয়ে উদ্ভাবিত যন্ত্রপাতি কৃষি ক্ষেত্রে বেশি লাগসই হবে বলে বিবেচিত। তাই কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
শুধু তাই নয় এসব যন্ত্রপাতির খুচরা যন্ত্রাংশ যেন সহজেই হাতের কাছে পাওয়া যায় সে ব্যাপারেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তাই দেশে খুচরা যন্ত্রাংশ উৎপাদনের কারখানা করতে হবে নতুবা যেসব কৃষি যš পাতি বিদেশ হতে আমদানি করা হয় তাদের খুচরা যন্ত্রাংশও যেন কৃষক সব সময় হাতের কাছে পায় সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।
কৃষি, কৃষি শিক্ষা, কৃষি প্রশিক্ষণ, কৃষি শিল্প, কৃষি গবেষণা