কৃষি শিক্ষা ১ম পত্র সূচিপত্র। এই বিষয়টি “বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়” এর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের একটি বিষয় যার কোড ১৮৮৯। এদেশের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ তাদের জীবন ও জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। শুধু মানুষ নয়, সমস্ত গবাদি পশুর খাদ্য আসে কৃষি থেকে। জাতীয় আয়ের প্রায় ১৬ ভাগ আসে কৃষি থেকে। দেশের বৃহত্তর শিল্পগুলোও কৃষির উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। ফসল, গবাদি পশু, পোল্টি্র, মৎস্য ও বনরাজি ইত্যাদি ক্ষেত্র নিয়ে বি¯ৃÍত বাংলাদেশের কৃষি।
কৃষি তথ্য ও সেবা প্রদানের জন্য বিভিন্ন স্থানীয় প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, এনজিও এবং বিভিন্ন কৃষি উপকরন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
এছাড়াও কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস হিসেবে অভিজ্ঞ কৃষক/কৃষানী, কৃষক সভা, উঠোন বৈঠক এবং কৃষক বিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জাতীয় জীবনে সামাজিক পরিবর্তন ও সর্ববিধ উন্নতির মূলে কৃষি উন্নয়নের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আমাদের কৃষির সার্বিক সমস্যা সমাধান করে সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এ ইউনিটে বাংলাদেশের কৃষির ক্ষেত্রসমূহ, সামাজিক বনায়ন, কৃষি’ তথ্য সেবা প্রাপ্তিতে কৃষক, বিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট, ই—কৃষি ইন্টারনেট, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি’ তথ্য সার্ভিস ও কৃষি সম্প্রসারণ, এনজিও ও কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]
বীজ ও বীজ প্রযুক্তি সূচিপত্র। এই পাঠটি “বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়” এর “কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুল” এর “বীজ ও বীজ প্রযুক্তি সূচিপত্র” কোর্স যার কোড ১১০২।
ফসল উৎপাদনে বীজ একটি মৌলিক উপকরণ। কারণ বীজ কেবল ফলন বৃদ্ধিই নয় ফসলের মান উন্নয়ন, কীট-পতঙ্গ ও রোগ প্রতিরোপ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নিদিষ্ট ভূ-প্রাকৃতিক অবম্ছায় জন্মানোর উপযোগীতা নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া ফসল উৎপাদনের তানুকুল হওয়া সেও এখানে প্রপান খাদ্যশস্য যেমনপান, গম, গোল আলু মিষ্টি আলু তৈল ও ডাল বীজের হেক্টর অপ্রতুলতা এবং কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির অভাব। হেক্টরপ্রতি ফলন বৃদ্ধি এবং চাহিদা মোতাবেক উৎপাদন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভালো বীজ ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।
আর ভালো বীজ বাংলাদেশে বর্তমানে কমবেশি ৭০টি ফসলের চাষ হচ্ছে এবং এসব ফসল চাষ করার জন্য বছরে প্রায় ৭ লক্ষ টন বীজের প্রয়োজন হয় যার মূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। ৭০টি ফসলের মধ্য রেবল ধান, গম, পাট, আলু কিছু সবজি, ডাল ও তৈলবীজ সরকারী ব্যবস্হাপনায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ সূচিপত্র । এই পাঠটি “বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়” এর “কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুল” এর “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” কোর্স যার কোড ১২০১।
কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ
কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ – বাউবি বিএই ১২০১ – বই PDF ডাউনলোড
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই এদেশের সমস্ত কর্মকান্ড ও উন্নয়ন কৃষিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি কৃষি উন্নয়নের সংগে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে এদেশে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও উত্তরাঞ্চল থেকে আগত নদ—নদীর ঢলে কোন কোন বছর বন্যা দেখা দেয়। বর্ষাকালে প্রতি বছর নদ—নদী বিধৌত অঞ্চলে প্রচুর পলি পরে। ফলে নদ—নদী বিধৌত অঞ্চলের মাটি স্বভাবতঃই বেশি উর্বর। বাংলাদেশের জলবায়ু সমভাবাপন্ন।
প্রায় সারা বছরই কোন না কোন ফসল জন্মে। বছরের কোন সময় কী ধরণের ফসল জন্মাবে তা জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানের উপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে ফসল উৎপাদনের জন্য জমি চাষ, বীজ বপন বা চারা রোপণ, নিড়ানী দেয়া, সেচ প্রয়োগ, আপদনাশক ছিটানো থেকে শুরু করে ফসল কর্তন, মাড়াই, প্রক্রিয়াজাতকরণ, ইত্যাদি কাজগুলোকে আবহাওয়া প্রভাবান্বিত করে। আবহাওয়ার তারতম্যের ভিত্তিতে ফসল উৎপাদন খরিপ—১, খরিপ—২ ও রবি — এই তিন মৌসুমে বিভক্ত করা হয়। খরিপ মৌসুমের সব ফসলই বৃষ্টি নির্ভর। রবি মৌসুমে সেচ প্রয়োগের মাধ্যমে বোরো ধান ও গমের আবাদ করা হয়।
কৃষি পরিচিতি:
ইউনিট — ১ বাংলাদেশের কৃষি: ভূমি, জলবায়ু ও ফসল উৎপাদন
বায়োগ্যাস ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা – পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের, পরিবেশ বিভাগের ৩ নং ইউনিটের পাঠ ৩.৫ নং পাঠের অংশ।
বায়োগ্যাস কী?
গোবর ও অন্যান্য পচনশীল জৈব পদার্থ বায়ুর অনুপস্থিতিতে জৈব বিজারণের ফলে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে যে সকল প্রাণী জাবর কাটে (যেমনঃ গো—মহিষ, ছাগল) তাদের অন্ত্রে এবং অক্সিজেন বিবর্জিত ইকোলজীক্যাল এলাকা যেমনঃ জলাবদ্ধ ভূমি, সঁ্যাতসঁ্যাতে ভেজা জায়গা, ময়লাযুক্ত পানির আধার প্রভৃতি স্থান থেকেও মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। এই গ্যাস রংবিহীন এবং খুব সহজেই দাহ্য। জৈব উৎস থেকে উৎপন্ন বলে এই গ্যাসকে বায়োগ্যাস বলা হয়।
বায়োগ্যাস ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
বায়োগ্যাসের ব্যবহার ও সুবিধা
১। বায়োগ্যাস জ্বালানি হিসেবে সব ধরনের রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। ব্যবহারের ফলে হাড়ি—পাতিল, বাড়ি—ঘর ও কাপড়—চোপড়ে ময়লা পড়ে না।
২। এই গ্যাস দিয়ে রাতে ম্যান্টল জ্বেলে হ্যাজাক লাইটের মতো আলো পাওয়া যায়। কেরোসিনের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজেও বায়োগ্যাস ব্যবহৃত হয়।
৩। রসায়নাগারে কোলগ্যাস, এ্যারোজেন গ্যাস বা পেট্রোল গ্যাসের বিকল্প হিসেবে কম খরচে এই গ্যাস ব্যবহারযোগ্য।
৪। গোবর ও অন্যান্য পচনশীল জৈব পদার্থ থেকে বায়োগ্যাস উপরি হিসেবে পাওয়া যায়। এর পরে úারী হিসেবে যা অবশিষ্ট থাকে তা খুবই উন্নতমানের জৈব সার। জৈব—দহন প্রক্রিয়ার কারণে সকল আগাছার বীজ অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে এই সার ব্যবহারে জমিতে আগাছার পরিমাণও হ্রাস পায়।
৫। বায়ুরোধী অবস্থায় পচন ক্রিয়া স¤žন্ন হয় বলে কোন দুর্গন্ধ ছড়ায় না এবং মশামাছির উপদ্রবও গোবর ও অন্যান্য পচনশীল জৈব পদার্থ থেকে বায়োগ্যাস উপরি হিসেবে পাওয়া যায়। এর পরে úারী হিসেবে যা অবশিষ্ট থাকে তা খুবই উন্নতমানের জৈব সার। থাকে না।
৬। এই গ্যাস পারিবারিক পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখে। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় বলে উদ্ভিদ জ্বালানির উপর চাপ কমে যায়।
৭। একটি বায়োগ্যাস প্লাণ্ট স্বল্প পরিসর স্থানে এমনকি জনবহুল এলাকাতেও তৈরি করা সম্ভব। এর প্রস্তুত প্রণালী ও রক্ষণাবেক্ষণ সহজ এবং খরচও কম।
বায়োগ্যাস প্লান্ট নির্মাণ কৌশল
একটি বায়োগ্যাস প্লাণ্টের প্রধান অংশ হচ্ছে ডাইজেস্টার বা ফারমেণ্টেশন ট্যাঙ্ক এবং গ্যাস হোল্ডার। এর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে ইনলেট ট্যাঙ্ক বা খাদকনালী , নিগর্মন নালী ও আউটলেট কূপ এবং গ্যাস সরবরাহ লাইন। একটি বায়োগ্যাস প্ল্যাণ্টের বিভিন্ন অংশের আকার আকৃতি নির্ভর করে গ্যাসের চাহিদা, ব্যবহৃত কাঁচামালের পরিমাণ, ধরণ ইত্যাদির উপর।
এখানে ৪—৫ টি গরু/মহিষ আছে এমন বাড়ীতে ৬/৭ জন পারিবারিক সদস্যের জ্বালানি চাহিদা মেটানো উপযোগী একটি বায়োগ্যাস প্ল্যাণ্টের বর্ণনা দেয়া হলো। প্রথমে ৮ ফিট গভীর ও ৭ ফিট ব্যাসের একটি কূপ খনন করতে হবে। খননকৃত কূপের তলায় ৩ আর.সি.সি ঢালাই দিতে হবে।
এই ঢালাইয়ের উপরে ৬ ফুট অভ্যন্তরীণ ব্যাস ও ৮ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ৫ ইঞ্চি ইটের গাঁথুনী দিয়ে একটি গোলাকার নিশ্ছিদ্র কূপ তৈরি করতে হবে। দেয়ালের ৫ ফুট উচ্চতায় ভেতরে ও বাইরে ৩ ইঞ্চি ইটের একটি বর্ধিত গাঁথুনী চতুর্দিকে দিতে হবে। খালি অবস্থায় গ্যাস হোল্ডারটি এর উপরে অবস্থান করবে। বর্ধিত গাঁথুনীর ঠিক নিচ দিয়ে ৪—৬ ফুট ব্যাসের ৮—১০ ফুট লম্বা একটি আর.সি.সি পাইপ এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে এর নিম্নাংশ কূপের প্রায় মাঝামাঝি স্থানে তলদেশ থেকে ১ ফুট উপরে অবস্থান করে। অপর অংশ ২২২ মাপের ইটের তৈরি ইনলেট বা ফিডিং ট্যাঙ্কের সাথে সংযুক্ত থাকবে।
ডাইজেস্টারের উপরের দিকে দেয়ালের গায়ে সুবিধা মতো স্থানে একটি ছিদ্র করে তার সাথে ৪— ৬ ব্যাসের ৩— ৪ দীর্ঘ একটি আর.সি.সি পাইপ জুড়ে দিয়ে নির্গমন কূপের সাথে সংযুক্ত করে দিতে হবে। এই পথেই গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে যাবার পর úারী (পানি মিশ্রিত গোবর) ডাইজেস্টারের বাইরে চলে আসবে। ডাইজেস্টারের তলায় ঠিক কেন্দ্র বিন্দুতে ১ ১ ১ ঢালাই এর মাধ্যমে ৮ ফুট লম্বা ২ ব্যাসের একটি রড খাড়া ভাবে বসাতে হবে। এই রডের উপরেই গ্যাস হোল্ডার বসানো থাকে।
গ্যাস হোল্ডার
গ্যাস হোল্ডারের ব্যাস অবশ্যই ডাইজেস্টারের ব্যাস অপেক্ষা সামান্য (প্রায় ৩) কম হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় এটি সহজে ডাইজেস্টারের কূপের ভেতরে ঘুরানো বা উঠানামা করানো যাবে না। প্রায় ১০০ ঘন ফুট গ্যাস ধারণক্ষম একটি ডাইজেস্টারের জন্য ৩ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি বাসের (৩.৫— ২ নং চিত্র অনুযায়ী) একটি গ্যাস হোল্ডার প্রয়োজন। এটি ১৬ থেকে ২৪ গজী এম, এস সিট ওয়েল্ডিং করে তৈরি করা যায়। গ্যাস হোল্ডারের অভ্যন্তরে আড়াআড়িভাবে দু’টো রড এমনভাবে লাগাতে হবে যাতে গ্যাস হোল্ডারটি সহজে উপরে নিচে উঠা নামা করতে পারে এবং চারদিকে ঘুরতে পারে। গ্যাস হোল্ডারের এক মুখ খোলা এবং অপর মুখ বন্ধ থাকবে।
বন্ধ মুখের কেন্দ্রস্থল থেকে খোলা মুখের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত লম্বা একটি জি,আই পাইপ সোজাভাবে আড়াআড়ি রডের সাথে ওয়েল্ডিং করে লাগাতে হবে। ডাইজেস্টারের কেন্দ্রে অবস্থিত রডটি জি, আই পাইপের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে গ্যাস হোল্ডারটি ডাইজেস্টারের উপরে স্থাপন করতে হবে। গ্যাস হোল্ডারের উপরে ভালভ্সহ ১ ইঞ্চি ব্যাসের একটি গ্যাস ট্যাপের সংযোজন দিতে হবে। এই সংযোগস্থল থেকে জি,আই পাইপের সাহায্যে ব্যবহারস্থলে গ্যাস সরবরাহ করা হয়।
বায়োগ্যাস প্ল্যাণ্ট চালুকরণ নির্মাণ শেষে এ ধরনের গ্যাস প্ল্যাণ্ট প্রথম চালু করার জন্য ৪০/৫০ মণ গোবর প্রয়োজন। গোবর ও পানি ১:১ অনুপাতে মিশিয়ে úারী (গোবরের দ্রবণ) তৈরি করে ফিডিং ট্যাঙ্কের মধ্যে ঢেলে দিলেই তা দ্রুত ডাইজেস্টারে পৌঁছবে। ফিডিং এর সময় গ্যাস হোল্ডার বায়ু শূন্য করার জন্য গ্যাস লাইন খোলা রাখতে হয়। ডাইজেস্টার ট্যাঙ্ক ভর্তি হবার পর হুইল কর্ক বন্ধ করে গ্যাস লাইনের সংযোগ দিতে হয়।
কয়েক দিনের মধ্যেই গ্যাস জমা হয়ে গ্যাস হোল্ডার উপরের দিকে উঠে যাবে। প্রথম দিকে গ্যাস হোল্ডারে কিছু কার্বন ডাই—অক্সাইড জমা হবার কারণে তা নাও জ্বলতে পারে। সে ক্ষেত্রে গ্যাস হোল্ডারে জমাকৃত সম্পূর্ণ গ্যাস বের করে দিতে হবে। প্রথমেই úারীর সাথে কিছু পরিমাণ লাইম বা চুন (ঈধঙ) মিশিয়ে দিলে বায়োগ্যাস উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়ার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং কার্বন—ডাইঅক্সাইড উৎপাদন হ্রাস পায়। নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য প্রতিদিন ৪/৫ বালতি গোবর ও সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ফিডার চ্যানেলের মাধ্যমে ডাইজেস্টারে প্রবেশ করাতে হবে।
এখানে উলেখযোগ্য যে, টংবফ ঁঢ় ংষঁৎৎু বা ঊভভষঁবহঃ গ্যাস উৎপাদনের পর যা বের হয়ে আসে তা অত্যন্ত উন্নত মানের জৈব সার হিসেবে মাটিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ সারে ১.৫৮% নাইট্রোজেন, ১.২% ফসফেট (চ২ঙ৫) এবং ০.৭% পটাশ (ক২ঙ) থাকে।
সতর্কতা
১। ডাইজেস্টারে যাতে বৃষ্টির পানি না ঢুকে তার জন্য ফিডিং ট্যাঙ্ক ডাইজেস্টার থেকে সামান্য উপরে থাকা বাঞ্ছনীয়। প্রয়োজনে উপরে শেড তৈরি করা যেতে পারে।
২। ডাইজেস্টারে গোবর—পানি প্রবেশকালে অন্য কোন আবর্জনা যাতে না ঢুকে তা লক্ষ রাখতে হবে।
৩। গ্যাস হোল্ডারটি মাঝে মধ্যে কেন্দ্রীয় পাইপের চারদিকে ঘুরিয়ে দিলে উপরে গোবর ও পানির মিশ্রণ শক্ত হতে পারবে না।
৪। কোন কারণে ইনলেট বা আউটলেট পাইপ বন্ধ হয়ে গেলে সোজা সরু কাঠি দিয়ে তা ছাড়িয়ে দিতে হবে।
৫। কোন সময় গ্যাস লাইনে পানি জমলে পানি জমাস্থান খুলে পানি বের করে দিতে হবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
ব্যবহার শেষে বস্তুর পরিত্যাক্ত যে কোন্ অংশের নামই বর্জ্য বা আবর্জনা। অন্যকথায়, পূণঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া কোন্ বস্তু তার ব্যবহার যোগ্যতা হারিয়ে ফেল্লে তাকেই বর্জ্য বলে। বর্জ্য িবভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমনঃ কঠিন বর্জ্য ও ক্ষতিকারক বর্জ্য।ব্যবহার শেষে বস্তুর পরিত্যাক্ত যে কোন অংশের নামই বর্জ্য বা আবর্জনা। অন্যকথায়, পূণঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া কোন বস্তু তার ব্যবহার যোগ্যতা হারিয়ে ফেললে তাকেই বর্জ্য বলে। বর্জ্য বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমনঃ কঠিন বর্জ্য ( ও ক্ষতিকারক বর্জ্য ।
১। কঠিন বর্জ্য ( ঃ কঠিন বর্জ্য বলতে বোঝায় বাড়ী ঘর থেকে ফেলে দেয়া অপ্রত্যাশিত বস্তু, রাস্তার ঝাড়ু দেয়া আবর্জনা, ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প প্রতিষ্ঠান, কৃষি খামার প্রভৃতি স্থান হতে মানব কার্য কলাপ সৃষ্ট অনাকাঙ্খিত বস্তুসমহকে। শহরাঞ্চলে এসব বর্জ্য ূ এবং গ্রামাঞ্চলে আবর্জনা হিসেবে পরিচিত। এসবের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের উপাদান রয়েছে, যেমনঃ ধুলা, খাদ্যজাত উচ্ছিষ্ট, কাগজ, ধাতব উপাদান, প্লাষ্টিক, রাবার কাঁচ, পরিত্যক্ত কাপড়, বাগানের আবর্জনা, নির্মাণ সামগ্রীর ফেলে দেয়া অংশ, প্যাকিং সামগ্রী, শিল্পজাত বর্জ্য, ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ইত্যাদি। এ ছাড়া রয়েছে আরও বহুবিধ দহনযোগ্য ও অদহনযোগ্য সামগ্রী এবং তেজষ্ক্রিয়া পদার্থ। বহু ধরনের খামারজাত উচ্ছিষ্টও কঠিন বর্জ্য শ্রেণিভুক্ত, যেমনঃ গোবর ও গৃহপালিত পশু—পাখির বিষ্ঠা, খড়কুটা, শস্যের পরিত্যাক্ত অংশ ইত্যাদি।
বাংলাদেশে মাথাপ্রতি বর্জ্য সংগ্রহের পরিমাণ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। যেমনঃ ঢাকায় মাথাপ্রতি প্রতিদিনের গড় যেখানে মাত্র ০.২২ কেজি সেখানে কলকাতায় ০.৫১ কেজি এবং নিউইর্য়কে ১.৮ কেজি। নগর বর্জে্যর বৈশিষ্ট্য নগরের অধিকাংশ কঠিন বর্জ্যই গৃহ, শিল্প ও বাণিজ্যিক উৎস থেকে সৃষ্ট। প্রতিদিন জনপ্রতি কী পরিমাণ কঠিন বর্জ্য সংগৃহীত হবে তা নগরের আয়তন, এবং ঋতুর উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশে মাথাপ্রতি বর্জ্য সংগ্রহের পরিমাণ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।
যেমনঃ ঢাকায় মাথাপ্রতি প্রতিদিনের গড় যেখানে মাত্র ০.২২ কেজি সেখানে কলকাতায় ০.৫১ কেজি এবং নিউইর্য়কে ১.৮ কেজি। ঢাকায় এত কম হওয়ার প্রধান কারণ হয়ত সেখানকারচ্ছ’র্বল সংগ্রহ ব্যবস্থা। নগরের প্রধান প্রধান বর্জ্য সমূহের তালিকায় রয়েছে ফেলে দেয়া খাদ্য, বাজার এলাকার উচ্ছিষ্ট, পাতা, ঘাস, কাগজ, প্লাষ্টিক সামগ্রী, ধাতব পদার্থ, ক্যান, কাঁচ, বোতল, ইটের টুকরা, বস্ত্রাংশ, ভগ্নস্তুপ, ময়লা,
ছাই, কাঠ, চামড়া ও রাবারজাত দ্রবাদি।
২। ক্ষতিকারক বর্জ্য ঃ কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম থেকেই ক্ষতিকারক বা বিষাক্ত উপাদান সৃষ্টি হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব উপাদানে শতকরা ৭৫ ভাগের ওপরে থাকে রাসায়নিক দ্রব্য। উৎপন্ন হবার পর থেকেই এ সকল উপাদান দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সৃষ্টি করে। এটি যেমনঃ উন্নত বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য, তেমনি অনুন্নত বিশ্বের জন্যও প্রযোজ্য। এসকল রাসায়নিক দ্রব্যাদি বায়ু, পানি এবং আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে প্রবেশের সুযোগ করে নেয়। এক তথ্য বিবরণীতে প্রকাশ ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিদিন ৪৯,০০০ কি.গ্রা. শিল্পজাত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতেও প্রতিদিন ৪৫,০০০ কি.গ্রা. শিল্পজাত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।
এসকল বর্জে্যর কারণে বুড়িগঙ্গা ও কর্ণফুলী নদীর পানিতে দস্তা, ক্রোমিয়াম, ক্যাডিয়াম ও আরসেনিকের মতো ভারি ধাতুর মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে নদী ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় মাছের চারণ ও প্রজনন ক্ষেত্র বিনষ্ট হচ্ছে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কৌশল
আবর্জনা বা জঞ্জাল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মানুষের সামনে যে তিনটি পথ খোলা রয়েছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে তুলে ধরা হলো।
(১) উন্মুক্তস্থানে, নদী, হ্রদ, সাগর বা অন্য কোন জলাশয়ে অশোধিত অবস্থায় নিক্ষেপন করা। এ প্রক্রিয়ার মূল দর্শন, “দূষণের সমাধান হচ্ছে হালকাকরণ” (“ঞযব ংড়ষঁঃরড়হ ঃড় ঢ়ড়ষষঁঃরড়হ রং ফরষঁঃরড়হ”)। বিশ্বের সর্বত্র এটিই বহুল প্রচলিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপায় হিসেবে বিবেচিত। যে কারণে নগর ও শিল্প কারখানাগুলো সাধারণত জলপথের তীর ধরে গড়ে উঠেছে।
(২) বিশেষভাবে নির্বাচিত স্থানে জঞ্জাল স্তুপীকৃতকরণ এবং প্রায় প্রাকৃতিক উপায়ে বিয়োজন ঘটিয়ে পূনঃব্যবহারযোগ্য সম্পদ সৃষ্টিকরণ। স্বাভাবিক প্রাকৃতিক দূষণ পরিহারকারী এটিই সহজতম পদ্ধতি। এর মাধ্যমে অধিক পরিমাণে বর্জ্য মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতি তেমন হুমকি সৃষ্টি না করেই পরিশোধন করা সম্ভব।
(৩) যান্ত্রিক—রাসায়নিক পদ্ধতি (ঈযবসড়—সবপযধহরপধষ ঢ়ৎড়পবংং) অনুসরণ করে পূনঃব্যবহারযোগ্য সম্পদ সৃষ্টিকরণ। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে যান্ত্রিক উপায়ে রাসায়নিক শোধন দ্বারা বর্জ্য পরিশোধন করে পূনঃব্যবহার উপযোগী করা হয়। এই পদ্ধতি দূষণ নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী। কিন্তু ব্যয়বহুল পদ্ধতি বিধায় কিছু কিছু উন্নত দেশ ছাড়া সর্বত্র প্রচলিত নয়।
বাংলাদেশে যেসব বর্জে্যর কিছুটা বাজার চাহিদা রয়েছে সেগুলো তিন পর্যায়ে সংগ্রহ বা উদ্ধার করা হয়ে থাকে। প্রথম পর্যায়ে উদ্ধারের সাথে জড়িত থাকেন বাড়ীর গৃহিণীরা। তারা কাগজ, বোতল, কনটেইনার, পুরাতন কাপড়, জুতা ইত্যাদি দ্রব্যাদি (যাদের ভাল বাজার চাহিদা রয়েছে) বাছাই করেন এবং হকারদের নিকট বিক্রয় করেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে বস্তি এলাকার দরিদ্র শিশুরা যারা ‘টোকাই’ নামে পরিচিত। এরা ভাঁঙ্গা কাঁচ, ক্যান, কার্ডবোর্ড, ফেলে দেয়া কাগজ, ছিন্ন বস্ত্র, প্লাষ্টিক সামগ্রী, ধাতব পাত্র, ও ফেলে দেয়া অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করে। তৃতীয় পর্যায়েও রয়েছে দ্ররিদ্র শ্রেণির টোকাইরা। তারা পৌরসভার গাড়ী থেকে চূড়ান্ত নিগর্মন স্থানে বর্জ্য ফেলার সময় তা থেকে বাছাইকৃত বর্জ্য সংগ্রহ করে।
বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থা পুণঃব্যবহার উপযোগীকরণের পর্যায়গুলো চিত্র ৩.৫—৩ এর মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। হকার, টোকাই এবং আবর্জনা ফেলার স্থান থেকে সংগ্রহকারীদের মাধ্যমে সংগৃহীত দ্রব্যাদি পুরাতন দ্রব্য বিক্রয়কারীদের দোকানে পৌঁছে। তারা সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে, ধৌতকরণ, বাছাইকরণ প্রক্রিয়া শেষে ডিলারদের নিকট সরবরাহ করে। পুরাতন সামগ্রীর ডিলারগণ যথাযথ পৃথকীকরণের পর সরাসরি ব্যবহারকারীদের নিকট বিক্রয় করে। আর বিক্রয় অযোগ্য দ্রবাদি পণঃব্যবহারযোগ্যকরণ ু কারখানায় (জবসড়ষফরহম ভধপঃড়ৎরবং) প্রেরণ করে। সেখান থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণের পর পুণরায় তা বাজারে ফিরে আসে।
চূড়ান্ত বিসর্জন ও বিকল্প ব্যবস্থা
বাজারমূল্য আছে এমন সব বর্জ্য সামগ্রী অসাংগঠনিক পন্থায় পুণরুদ্ধার করা হয়। আর বিয়োজকযোগ্য জৈবিক উপাদানসমূহ খোলা অবস্থায় নগরের অপেক্ষাকৃত নিচুস্থানে স্তুপাকারে ফেলে দেয়া হয়। আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে এসব দ্রব্য দ্রুত পঁচনের ফলে তৎসংলগ্ন এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে এবং অসস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি করে। বৃষ্টির পানি ময়লার স্তুপের ভিতরে প্রবেশ করে পরিবেশ দুষণক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তুলে। এদের প্রচুর দূষণ ক্ষমতাযুক্ত চুয়ানি ভূমি ও ভূগর্ভস্থ পানিকে দূষিত করে। কম খরচে পরিবেশ দূষণমুক্ত জৈবপদার্থ বিসর্জনের উপায় হচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যান্ডফিল (ঝধহরঃধৎু ষধহফ ভরষষ) পদ্ধতি।
এই পদ্ধতিতে উচ্চ দূষক পদার্থ সংগ্রহের নিরাপদ ব্যবস্থা রাখা হয় এবং মিথেন গ্যাস সংগ্রহ করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যার বর্ণনা এ পাঠের প্রথমাংশে দেয়া হয়েছে। বাছাইকৃত জৈব বর্জ্য কমপোষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জৈবসারে রূপান্তরিত করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় পরিমিত পানি ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীবের সাহায্যে জৈব উপাদানসমূহের দ্রুত পচন ঘটিয়ে তা জৈব সারে পরিণত করা হয়।
পানি সরবরাহের পরিমাণ জৈব বর্জে্যর ধরণের উপর নির্ভরশীল এবং এটি স্ববাত অবস্থায় সম্পন্ন করা হয়। যান্ত্রিক উপায়ে স্ববাত গার্বেজ কমপোষ্ট প্রক্রিয়া বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশেই অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক বলে বিবেচিত হয়নি। অবশ্য বাছাইকৃত কিছু কিছু জৈব বর্জ্য ভারত ও চীনে উদ্ভাবিত অবাত কম্পোষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সারে পরিণত করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অনুসৃতঃ পদ্ধতি চিত্র নং ৩.৫ — ৩ এর সাহায্যে দেখানো হয়েছে।
পৌর এলাকার অনিধনযোগ্য বর্জ্য নিচু এলাকা ভরাটের কাজে ব্যবহার করে পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব।
ওজোনস্তরের ক্ষয় ও জীব জগতে এর প্রভাব – পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের, পরিবেশ বিভাগের ৩ নং ইউনিটের পাঠ ৩.৪ নং পাঠের অংশ।
অক্সিজেনের তিন পরমাণু নিয়ে গঠিত একটি রূপভেদের নাম ওজোন (ঙ৩)। বিজ্ঞানের ভাষায় যা অলোপিক মডিফিকেশন নামে পরিচিত। সূর্যের ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘে্যর অতি বেগুনি রশ্মি অক্সিজেন অণুকে ভেঙ্গে ফেলার ক্ষমতা রাখে। সাধারণভাবে সূর্যের ২৪০ হস এর চেয়ে ক্ষুদ্র তরঙ্গবিশিষ্ট অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে অক্সিজেন অণুর সালোক—বিযুক্তি ঘটে। এভাবে বেড়িয়ে আসা মুক্তঅক্সিজেন পরমাণু অক্সিজেন অণুর সাথে মিলিত হয়ে ওজোন তৈরি করে।
ওজোনস্তরের ক্ষয় ও জীব জগতে এর প্রভাব
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের প্রায় সর্বত্রই কম বেশি ওজোন পাওয়া যায়। তবে ভূ—পৃষ্ঠের ২৫ কি.মি. উর্ধ্বে এর ঘনত্ব সর্বাধিক ১৫ ি প.পি.এম.। বায়ুমন্ডলে ওজোনের ব্যাপ্তি পৃথিবীর বায়ুমন্ডল কতগুলি প্রধান স্তর নিয়ে গঠিত। এগুলো হচ্ছেঃ ট্রপোস্ফিয়ার, ট্রপোপোজ, স্ট্রাটোস্ফিয়ার, আয়ানোস্ফিয়ার ইত্যাদি। বায়ুমন্ডলের সব চেয়ে নিচের স্তরটির বিস্তৃতি ভূ—পৃষ্ট থেকে প্রায় ১১ কি.মি. পর্যন্ত এবং এটির নামই ট্রপোস্ফিয়ার। মেঘ, বায়ুপ্রবাহ, ঝড় প্রভৃতি এ স্তরেই সংঘঠিত হয়। ট্রপোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমাকে ট্রপেপোজ বলে। সাধারণভাবে ট্রপোপজের উপরে ধুলা—বালি ও জলীয় বাষ্প থাকে না। এ স্তরের গভীরতা খুবই কম। এর উপরে রয়েছে স্ট্রাটোস্ফিয়ার, যার বিস্তৃতি ভূ—পৃষ্ট থেকে প্রায় ৫০—৬০ কি. মি. পর্যন্ত।
এই স্ট্রাটোস্ফিয়ারের মধ্যেই ভূ—পৃষ্ঠের ২০ থেকে ৩০ কি.মি. উর্ধ্বে সন্নিবেশিত আছে ওজোন গ্যাসের একটি পাতলা স্তর যা ওজোনোস্ফিয়ার নামেও পরিচিত। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের প্রায় সর্বত্রই কম বেশি ওজোন পাওয়া যায়। তবে ভূ—পৃষ্ঠের ২৫ কি.মি. উর্ধ্বে এর ঘনত্ব সর্বাধিক ১৫ পি.পি.এম.।
ওজোনস্তর ক্ষয়ের প্রতিকৃতি
মূলত মানুষের ক্রিয়া কর্মের ফলেই বর্তমানে ওজোনস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে বলে প্রকাশ। বায়ুমন্ডলে ওজোনস্তরের ক্ষয় প্রথম ধরা পড়ে ১৯৮৩ সালে যখন বৃটিশ এ্যান্টার্কটিকা সার্ভে নামে এক দল বৃটিশ গবেষক এ্যান্টার্কটিকার বায়ুমন্ডলে ওজোনস্তরে একটি বিরাট গহ্বর দেখতে পান। তখন এ গর্তের পরিমাপ ছিল ৪০ শতাংশ। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ শতাংশে। স্থানের পরিমাপে এটি প্রায় যুক্তরাষ্ট্রের সমপরিমাণ বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন। ১৯৭৮ সালে পরিচালিত পুনটা এরিনাস অভিযানের (চিলির দক্ষিঞ্চালীয় একটি শহর পুনটা এরিনাস) তথ্য থেকেও কুমেরুর আকাশে ওজোনস্তরের গহ্বর সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়।
এই অভিযানে আরও প্রমাণ পাওয়া যায় যে, সামগ্রীকভাবে গত ১৮ বছরে ওজোন স্তরের ২—৩ শতাংশ বিলীন হয়ে গেছে। শুধু কুমেরু অঞ্চলের আকাশেই নয় পৃথিবীর বহু জনবহুল অঞ্চলের আকাশেও ওজোনস্তর ওজন কমতে শুরু করেছে। তবে তার মাত্রা কুমেরু অঞ্চলে যত নাটকীয় ভাবে ঘটেছে তেমনটি নয়।
কোন কোন বিজ্ঞানীর মতে কুমেরুর আকাশে সৃষ্ট ওজোনস্তরের গহ্বর সম্পূর্ণ ওজোন ঘাটতি জনিত কারণে নয়। বরং অনেকটা বায়ুস্তরের বিন্যাস জনিত ত্রুটির কারণে হয়ে থাকতে পারে। নিম্বাস আবহাওয়া উপগ্রহ থেকে লক্ষ করা গেছে বছরের কোন সময়ে কুমেরুর ওজোনসর হালকা হয়ে যায় Í আবার অন্য সময় তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। অধিকাংশ ওজোন তৈরি হয় গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের বায়ুতে। গ্রীষ্ম মন্ডল থেকে মেরু অঞ্চলে বায়ু প্রবাহের স্বাভাবিক গতি পথে অনেক সময় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ফলে কুমেরুতে ওজোন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম পৌঁছে। আর সে কারণেই মেরু অঞ্চলে বায়ুতে ওজোন ঘাটতি হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।
ওজোনস্তর সম্পর্কে অধিক তথ্য আহরণের উদ্দেশ্যে ১৯৮৯ সনে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, বৃটেন, ফ্রান্স, জার্মানী ও জাপানের বিজ্ঞানীরা এক যৌথ অভিযান পরিচালনা করেন উত্তর মেরুতে। তাদের তথ্যে জানা যায় জমাট নাইট্রিক এসিডের মেঘ উত্তর মেরুর ওজোনস্তর খেয়ে হালকা করে ফেলছে। ওজোনস্তর ক্ষয়ের কারণ প্রথম বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয় ১৯৬০ সালে ি রফ্রিজারেটরের শীতলীকরণের কাজে। পরে অবশ্য এ ধরনের গ্যাস এয়ারকুলার, স্প্রে—ক্যান, প্লাষ্টিক ফোমের উপাদান, মাইক্রোইলেকট্রিক সার্কিট পরিষ্কার করার দ্রবণ ইত্যাদি বহুবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সর্য থেকে আগত অতি বেগুনি রশ্মির মারাÍক ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পৃথিবীর জীবকুলকে রক্ষা করার জন্য যে ওজোনস্তর ছাকনীর মতো ব্যবহৃত হয় তা আজ মানুষের ক্রিয়া কর্মের ফলেই হালকা বা ধ্বংস প্রাপ্ত হতে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে ওজোনস্তর ক্ষয় সাধনে মুখ্য ভুমিকা রাখছে মানব সৃষ্ট ক্লোরোফ্লোরো কার্বন নামক শিল্পজাত গ্যাস, যার কোন প্রাকৃতিক উৎস নেই। ১৯২৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল মটর্স কোম্পানীর বিজ্ঞানীগণ ঈঋঈং গ্যাস উদ্ভাবন করেন।
তবে প্রথম বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয় ১৯৬০ সালে রিফ্রিজারেটরের শীতলীকরণের কাজে। পরে অবশ্য এ ধরনের গ্যাস এয়ারকুলার, স্প্রে—ক্যান, প্লাষ্টিক ফোমের উপাদান, মাইক্রোইলেকট্রিক সার্কিট পরিষ্কার করার দ্রবণ ইত্যাদি বহুবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই গ্যাস বিষবিহীন, নিষ্ক্রিয়, সহজে অন্য কোন্ পদার্থের সাথে বিক্রিয়া ঘটায় না এবং নিচু তাপমাত্রায় বাষ্পীভুত হয়। অধিকাংশ ঈঋঈং বানানো সহজ এবং দামেও সস্তা।
ওজোন ধ্বংসকারী উৎপাদন ১৯৬০ সালের পর থেকে শতকরা ৩০ ভাগ হারে বাড়ছে। ব্যবহারের উৎস থেকে ঈঋঈং গ্যাস বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করলে তা দীর্ঘ দিন অক্ষত অবস্থায় থাকে। বায়ুমন্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার থেকে ঈঋঈং পরিচালন পদ্ধতিতে প্রবাহিত হয়ে ষ্ট্রাটোস্ফিয়ারে পৌঁছে প্রতিক্রিয়া শুরু করতে সময় লাগে অন্ততঃ একযুগ। কিন্তু সেখানে পৌছামাত্র সেখানকার প্রবল সমান্তরাল বায়ুপ্রবাহের সংস্পর্শে এসে দ্রুত বিস্তৃতি লাভ করে এবং অতি বেগুনি রশ্মির বিক্রিয়ার কারণে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে দূষকে পরিণত হয়। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবে ঈঋঈংভেঙ্গে মুক্ত ক্লোরিন পরমাণু বেড় হয়ে আসে। বিযুক্ত ক্লোরিন পরমাণ তিন পরমাণ বিশিষ্ট ওজোন ভেঙ্গে উৎপন্ন করে ক্লোরিন মনোক্সাইড ও অক্সিজেন।
পরমুহুর্তেই ক্লোরিন মনোক্সাইড আবার মুক্ত অক্সিজেন পরমাণর সাথে যুক্ত হয়ে অক্সিজেন গ্যাস ও মুক্ত ক্লোরিন পরমাণ উৎপন্ন করে। এভাবে একটি ক্লোরিন পরমাণু ক্রমাগত চেইন বিক্রিয়ার মাধ্যমে ১,০০০০০ অণ অক্সিজেনকে ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম। ফলে দ্রুত ক্ষয় হচ্ছে ওজোনস্তর।
সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে ওজোনস্তর ক্ষয়ের পিছনে শুধু যে ঈঋঈং দায়ী তা নয়। ক্লোরিনযুক্ত অন্যান্য গ্যাস যেমনঃ কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, মিথাইল ক্লোরোফরম ইত্যাদিও ওজোনস্তরের ক্ষয় সাধন করছে। শস্য ক্ষেত্রে ব্যবহৃত নাইট্রোজেনঘটিত সার থেকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় এবং সৌরশক্তির প্রভাবে নাইট্রাস অক্সাইড উৎপন্ন হয়। এই গ্যাস ষ্ট্রাটোস্ফিয়ারে পৌছলে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে নাইট্রোজেনের রেডিক্যালে পরিণত হয়। নাইট্রোজেনের এই রেডিক্যাল ওজোনকে আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে। মুক্ত ক্লোরিন পরমাণর চেয়ে নাইট্রোজেন রেডিক্যালের ওজোন বিধ্বংসী ক্ষমতা ৬ গুণ কম। তবে বায়ুমন্ডলে নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ বছরে ০.২৫ ভাগ হারে বাড়ছে এবং এর কর্মক্ষমতা সম্ভবত ১৫০ বছর পর্যন্ত বজায় থাকে। মানব সৃষ্ট কারণের পাশাপাশি সৌর—কলঙ্কের কারণেও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ ওজোন ধ্বংসকারী নাইট্রোজেন রেডিক্যাল সৃষ্টি হয় বলে ধারণা করা হয়।
জীব জগতে ওজোনস্তরের প্রভাব স্ট্রাটোস্ফিয়ারের তাপ কাঠামো সংরক্ষণে ওজোনস্তরের ভুমিকা অপরিসীম।সূর্য হতে আগত অতিবেগুনীরশ্মির (টষঃৎধারড়ষবঃ ৎধু) শতকরা ৯৯ ভাগই ওজোনস্তর শোষণ করে রাখে। বাকি মাত্র ১ ভাগ এসে পৌঁছে ধরাপৃষ্ঠে। এ রশ্মি মানুষের চোখে ধরা পড়ে না। অথচ তা মানুষ ও উদ্ভিদসহ সকল প্রাণীকূলের জন্যই চরম ক্ষতিকর। ওজোনস্তর সুর্যের এই ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মিকে ছাকনীর মতো শুষে নিয়ে পরিচ্ছন্ন সর্যের আলো পৃথিবীকে উপহার দিেু চ্ছ। অতি বেগুনি রশ্মি শুষে নেয়ার কারণে এ স্তরের তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি(প্রায় ১৭০ ফাঃ)। আর এর বিনিময়েই ধরা—পৃষ্ঠ রক্ষা পাচ্ছে অতি উত্তাপের কবল থেকে।
ওজোন নামের গ্যাসের এ বলয় ডিমের খোসার মতো লক্ষ কোটি বছর ধরে রক্ষা করে আসছে পৃথিবীর জীবকুলকে। ওজোনস্তরের ক্ষয় বা এর ঘনত্ব হালকা হওয়া জনিত কারণে স্ট্রাটোস্ফিয়ার ও ভূপৃষ্ঠের মধ্যে তাপের ভারসাম্য বিনষ্ট হবে। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি শোষণ করে ষ্ট্রাটোস্ফিয়ার এখন যে তাপমাত্রা ধারণ করে আছে ওজোনস্তরের অভাবে তা সরাসরি ট্রপোস্ফিয়ার বা ভূ—পৃষ্ঠে এসে সেখানকার তাপের মাত্রা বাড়িয়ে তুলবে।
ওজোনস্তর বিনষ্ট হলে সূর্য থেকে আগত মহাজাগতিক অতি বেগুনি রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে এসে প্রাণী ও উদ্ভিদ কুলের জন্য মারাত্বক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। এতে প্রাণীদেহে ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির সৃষ্টি হবে। অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে মানুষের গায়ের চামড়ার পীতাভ রং ধারণ, চামড়ায় ভাজ পড়া, চোখে ছানি পড়াসহ নানা ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি হবে। বাড়বে হার্পিস ও হেপাটাইটিস রোগের প্রভাব।
তাছাড়া এর প্রভাবে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও লোপ পাবে বহুলাংশে। অতি বেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে এলে মানুষের চামড়ায় স্কুয়ামাস ও ম্যালানোমা নামে দু’ধরনের ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। আমেরিকার পরিবেশ সংরক্ষণ এজেন্সির (ঊচঅ) তথ্যানুসান্ধনীদের মতে ১% ওজোন স্তরের ক্ষয় ত্বকে ৫% বেশি স্কুয়ামাস ক্যান্সার এবং ২% অধিক ম্যালানোমা ক্যান্সার সৃষ্টি করবে। ম্যালানোমা ক্যান্সার একটি জটিল রোগ, যা থেকে আরোগ্য লাভ করা প্রায় অসম্ভব।
তথ্যে আরও প্রকাশ কৃষ্ণাঙ্গদের চেয়ে শ্বেতাঙ্গরাই এর দ্বারা বেশি আক্রান্ত হবে। জনবহুল এলাকায় ওজোনস্তর ক্ষয়—প্রাপ্ত হলে তার পরিণতি হবে আরও ভয়ঙ্কর। ওজোনস্তর ক্ষয়ের আরেকটি ক্ষতিকর দিক আছে। তা হচেছ ওজোনস্তর ট্রপোস্ফিয়ারের উপরে একটি ছাতার মতো থেকে পৃথিবীকে অতি বেগুনি হাত থেকে রক্ষা করছে। কোন কারণে এটি হালকা বা কোথাও কোন ছিদ্র হলে সুর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ভূ—পৃষ্ঠে পৌঁছে বায়ুমন্ডলের নিম্নস্তরের সমস্ত অক্সিজেনকে ওজোন গ্যাসে পরিণত করতে পারে। এতে করে বিষাক্ত ওজোন গ্যাসের আধিক্যে জীবজগত মারাত্বক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।
কৃষিতে প্রভাব
ওজোন¯ র ক্ষয়জনিত কারণে পৃথিবীর জলবায়ু ও কৃষির উপরও বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে। অতীতে ওজোনকে উদ্ভিদ বৃদ্ধির সহায়ক নিয়ামক হিসাবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বর্তমানে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত যে এটি আসলে পরিবেশ ও উদ্ভিদের জন্য মারাÍক ক্ষতিকর। ওজোনস্তর ক্ষয়জনিত কারণে অতিবেগুরি রশ্মির প্রভাবে উদ্ভিদ কোষ বিকৃত হওয়া, ধান, সোয়াবিন, বাঁধাকপি, স্কোয়াশ ইত্যাদি বহু ফসলের সালোকসংশ্লেষণ মাত্রা হ্রাস পাবার ফলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। পর্যাপ্ত পানি পাওয়া সত্বেও লতাগুল্ম ও চারা গাছে প্রাণের উদ্বেলতা থাকবে না। মাছের উৎপাদন, মাছের প্রজননসহ সকল ধরনের সামুদ্রিক প্রাণীও এ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ওজোনস্ত র ক্ষয় রোধে করণীয় বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে ওজোন ধ্বংসকারী প্রধান গ্যাস ঈঋঈং উৎপাদিত হলেও এর ব্যাপক ব্যবহার সর্বত্র। তাই ওজোনস্তরের ক্ষয়রোধে উন্নত বিশ্বকেই এগিয়ে আসতে হবে। যেহেতু ঈঋঈং দীর্ঘ কাল বায়ুমন্ডলে অক্ষত অবস্থায় অবস্থান করে ওজোনস্তর কে ধ্বংস করে, সেহেতু এখনই এর উৎপাদন বন্ধ করা উচিত। কিন্তু বাণিজ্যিক কারণেই এ মুহুর্তে তা সম্ভব নয়। তাই বায়ুমন্ডলে যত কম ঈঋঈং নির্গত হয় সে দিকে সকলকেই সজাগ থাকতে হবে। ফ্রিজ, এয়ারকুলার, ইত্যাদি যন্ত্রপাতি (যেখানে ঈঋঈং ব্যবহৃত হয়) মেরামত/রিচার্জিং এর সময় ঈঋঈং যেন নির্গত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। সম্ভব হলে পূনঃ ব্যবহারের প্রচেষ্টা নিতে হবে। এছাড়া এসব ঈঋঈং উৎপাদনকারী দ্রব্যাদির বিকল্প তৈরি করতে হবে।
গ্রীন হাউজ ইফেক্ট – পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের, পরিবেশ বিভাগের ৩ নং ইউনিটের পাঠ ৩.১ নং পাঠের অংশ। গ্রীন হাউজের ধারণা গ্রীন হাউজ একটি ইংরেজি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ সবুজ ঘর। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি কাঁচ দিয়ে তৈরি ঘর বিশেষ যেখানে অনুকূল তাপমাত্রা সৃষ্টি করে বা ধরে রেখে সবুজ গাছপালা গ্রীন হাউজ একটি ইংরেজি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ সবুজ ঘর। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি কাঁচ দিয়ে তৈরি ঘর যেখানে অনুকূল তাপমাত্রা সৃষ্টি করে বা ধরে রেখে সবুজ গাছপালা জন্মানো হয়। জন্মানো হয়।
গ্রীন হাউজ ইফেক্ট
সাধারণত শীতপ্রধান দেশে এবং ইদানিং তেল সমৃদ্ধ মরুময় দেশগুলোতেও এ ধরনের কাঁচের ঘর তৈরি করে তার ভেতরে টমেটো, শশা, বাঁধাকপি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের মূলত উদ্যানজাতীয় সবজি ও ফলমূল জন্মানো হয়। এখানে সূর্যের দৃশ্যমান আলোকরশ্মি গ্রীন হাউজের কাঁচের প্রাচীর ভেদ করে অতি সহজেই ভেতরে প্রবেশ করতে পারে, কিন্তু বিকরিত আলোকরশ্মি কাঁচ ভেদ করে বাইরে আসতে বাধা প্রাপ্ত হয়। ফলে কিছুটা তাপ ভেতরে আটকে যায় যা কাঁচের ঘরকে উত্তপ্ত করে উদ্ভিদ জন্মানোর জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।
এখানে দৃশ্যমান সৌরশক্তি ক্ষুদ্রতরঙ্গাকারে (৪০০—৭৬০ হস) কাঁচের দেয়াল দিয়ে খুব সহজেই ভেতরে প্রবেশ করে এবং সেখানে রক্ষিত উদ্ভিদ ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিফলনের পর এই সৌরশক্তির একটি অংশ কাঁচের দেয়াল ভেদ করে বায়ুমন্ডলে বিকিরিত হয় এবং আরেকটি অংশ, যা মূলত অদৃশ্যমান অতি—লাল বিকিরণ , কাঁচের দেয়ালে বাধাগ্রস্থ হয়ে কাঁচের ঘরের মধ্যে থেকে যায়। ফলে ভেতরের তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রা অপেক্ষা বেশ কিছুটা বৃদ্ধি পায়। আর এটাই হচ্ছে প্রকৃত গ্রীন হাউজ।
গ্রীন হাউজ প্রভাব
গ্রীন হাউজ প্রভাব কথাটি বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রার সাথে সম্পর্কযুক্ত। পৃথিবীতে সকল তাপ ও শক্তির উৎস সূর্য। সূর্য থেকে আগত আলোক রশ্মি বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্য নিয়ে গঠিত। এর সকল তরঙ্গ দৈর্ঘ্যই দৃশ্যমান নয়। সূর্যের দৃশ্যমান আলোক তরঙ্গের দৈর্ঘ্য ৪০০—৭৬০ হস। আবার আলোক রশ্মির সবটুকুই বর্তমানে কার্বন ডাই—অক্সাইডসহ কিছু গ্যাস বায়ুমন্ডলে বৃদ্ধি পাবার ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন। ফলে কাঁচের ঘরের প্রক্রিয়ার মতো পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ার আশঙ্কা দেখা ি দয়েছে। আর এটির নামই হচ্ছে বর্তমান সময়ে বহুল আলোচিত ‘গ্রীন হাউজ প্রভাব’ বা ‘গ্রীন হাউজ ইফেক্ট’। জীবের কাজে লাগে না।
অতিরিক্ত অংশ ভূপৃষ্ঠ থেকে অবলোহিত তরঙ্গ রশ্মি (ওহভৎধৎবফ ৎধফরধঃরড়হ) হিসেবে, যার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৭৬০ হস এর উর্ধ্বে, বিকিরণের মাধ্যমে বায়ুমন্ডলের বাহিরে চলে যায়। কিন্তু বায়ুমন্ডলে এমন কিছু গ্যাস রয়েছে যা সূর্যের দৃশ্যমান আলোক রশ্মিকে পৃথিবীতে আসতে কোন বাধা দেয় না। কিন্তু এরা ভুপৃষ্ঠ থেকে বিকিরণকালে অবলোহিত রশ্মি শোষণ করার ক্ষমতা রাখে। ফলে ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপের সবটুকু মহাশূন্যে চলে যাবার পরিবর্তে কিছুটা অংশ পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে থেকেই যায়। এভাবে কতটুকু তাপ পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে থেকে যাবে তা অবশ্য নির্ভর করে অবলোহিত রশ্মি শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন কী পরিমাণ গ্যাস বায়ুমন্ডলে বিদ্যমান আছে তার ওপরে। সুতরাং বায়ুমন্ডলে এ ধরনের গ্যাসের আধিক্য যত বেশি হবে তার তাপ শোষণ ক্ষমতাও তত বাড়বে।
অর্থাৎ এ সকল গ্যাস গ্রীন হাউজের কাঁচের বেষ্টনীর মতো কাজ করে বায়ু মন্ডলের তাপ বৃদ্ধি করে। বর্তমানে কার্বন ডাই—অক্সাইডসহ কিছু কিছু গ্যাস বায়ুমন্ডলে বৃদ্ধি পাবার ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন। ফলে কাঁচের ঘরের প্রক্রিয়ার মতো পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর এটির নামই হচ্ছে বর্তমান সময়ে বহুল আলোচিত ‘গ্রীন হাউজ প্রভাব’ বা ‘গ্রীন হাউজ ইফেক্ট’।
গ্রীন হাউজ ইফেক্টের উৎপত্তি শক্তি, রাসায়নিক ক্রিয়া—বিক্রিয়া ও ভৌত অবস্থাদির একটি জটিল সমীকরণের মাধ্যমে উৎপত্তি হয়েছে পৃথিবীর জলবায়ু। শুক্র গ্রহের উত্তাপ এত অধিক যে, সেখানে একজন মানুষ পৌঁছামাত্র তার শরীরের রক্ত ফুটতে আরম্ভ করবে। পক্ষান্তরে মঙ্গল গ্রহের উত্তাপ হিমাঙ্কের এতই নিচে যে, সেখানে পৌছার সাথে সাথে একজন মানুষ প্রচন্ড ঠান্ডায় জমাট বেঁধে মৃত্যুবরণ করবে। এ দু’টো গ্রহে তাপমাত্রা বিভিন্নতা হবার মূল কারণ গ্রহ দু’টোর বায়বীয় উপাদানে বিরাট রাসায়নিক ভিন্নতা। পৃথিবী, মঙ্গল ও শুক্র এ তিনটি গ্রহেই প্রচুর সৌর শক্তির উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু বিকিরণের মাধ্যমে যে পরিমাণ তাপ শক্তি মহাশূন্যে ফিরে যায় তা নির্ভর করে গ্রহগুলোর বায়ুমন্ডলের গ্যাসীয় উপাদানের উপর ।
গ্রীন হাউজের ভেতরে যে প্রক্রিয়ায় কাঁচের ঢাকনা দিয়ে তাপ আবদ্ধ হয়ে যায়, সেই একই প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই—অক্সাইড ও মিথেনের মতো কিছু কিছু গ্যাস বায়ুমন্ডলের নিম্নাংশের তাপ শোষণ করে উত্তাপ বৃদ্ধি করে। শুক্র গ্রহের বিদগ্ধ উত্তাপের কারণ মুলত সেখানকার CO2 সমৃদ্ধ বায়ুমন্ডল, যা অনিয়ন্ত্রিত গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া ঘটায়। অপরপক্ষে, মঙ্গল গ্রহে CO2 ও অন্যান্য গ্রীন হাউজ গ্যাসের পরিমাণ এতই কম যে, তা হিমাঙ্কের উপরে তাপমাত্রা ধরে রাখতে সমর্থ নয়। পক্ষান্তরে, পৃথিবীর রয়েছে নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ বায়ুমন্ডল যেখানে CO2 এর পরিমাণ শতকরা প্রায় ০.০৩ ভাগ, যা বিগত কয়েক লক্ষ বৎসরেও তেমন বৃদ্ধি পায়নি।
মানব সৃষ্ট কার্যাবলী দিয়ে পৃথিবীর জটিল ভারসাম্যতা বিঘ্নিত হতে পারে এমন ধারণা প্রথম প্রকাশ করেন সুইডিশ রসায়নবিদ সেভানতে অরহেনিয়াস ১৮৯৬ সালে। কয়লা, তেল, গ্যাস ইত্যাদি জীবাশ্ম অরহেনিয়াস মত প্রকাশ করেন যে, দ্রুত শিল্প বিপ্লবের জন্য অধিক কয়লা পোড়ানো হলে CO2 গ্যাসের মাত্রা বেড়ে যাবে এবং তা ধীর গতিতে বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তখনকার সময়ে এটি কল্প—কাহিনী অথবা তাত্ত্বিক ি বষয় হিসেবে বিবেচিত হলেও প্রায় ৬০ বছর পর ১৯৫৭ সালে ক্যালিফর্নিয়ার স্ক্রিপস ইনষ্টিটিউট অব ওসেনোগ্রাফী সে সত্যতার প্রমাণ পান।
ঘটিত জ্বালানির দহন শেষে CO2 নির্গত হয়। অরহেনিয়াস মত প্রকাশ করেন যে, দ্রুত শিল্প বিপ্লবের জন্য অধিক কয়লা পোড়ানো হলে CO2 গ্যাসের মাত্রা বেড়ে যাবে এবং তা ধীর গতিতে বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তখনকার সময়ে এটি কল্প—কাহিনী অথবা তাত্ত্বিক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হলেও প্রায় ৬০ বছর পর ১৯৫৭ সালে ক্যালিফর্নিয়ার স্ক্রিপস ইনষ্টিটিউট অব ওসেনোগ্রাফীসে সত্যতার প্রমাণ পান। তারা দেখান যে, পৃথিবীতে যে পরিমাণ CO2 নির্গত হয় তার প্রায় অর্ধেকই স্থায়ীভাবে বায়ুমন্ডলে আবদ্ধ হয়ে যায়। এরপরে বিজ্ঞানী ডেভিট কিলিং ১৯৫৮ সালে হাওয়াইয়ের মনালয়াতে বায়ুমন্ডলের CO2 এর ঘনত্ব ৩১৫ পিপিএম হিসেবে রেকর্ড করেন। কিন্তু বর্তমানে তা বেড়ে ৩৫০ পিপিএম অতিক্রম করেছে।
সেভানতে অরহেনিয়াসই প্রথম ‘গ্রীন হাউজ ইফেক্ট’ কথাটি ব্যবহার করেন। শিল্প বিপ্লবের যুগে বিপুল পরিমাণ কয়লা পোড়ানের ফলে যে পরিমাণ CO2 বাতাসে মিশেছে তার কুফল সম্পর্কে তিনি সোচ্চার হয়েছিলেন। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, বায়ুমন্ডলে CO2 বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হলে পৃথিবীর উষ্ণতা ৫ সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যাবে। তিনি আরও মত প্রকাশ করেন যে, CO2 গ্যাস কমে যাবার কারণেই তুষার যুগের সৃষ্টি হয়।
সুতরাং এ কথা বলারই অপেক্ষা রাখে না যে, গ্রীন হাউজ প্রভাবই একসময় পৃথিবীকে বাসযোগ্য করেছিল। তাপ অপরিবাহী কম্বল সৃষ্টির কারণেই পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বর্তমানে ১৫ সেণ্টিগ্রেড, অন্যথায় তা ১৭.৭ সেণ্টিগ্রেডের বেশি হতো না। সুতরাং গ্রীন হাউজ গ্যাসের অবর্তমানে পৃথিবী রাতারাতি পরিণত হবে প্রাণহীন শীতল গ্রহে। তাই পৃথিবীর স্বাভাবিক তথা অনুকূল অস্তিত্বের জন্য এক দিকে যেমন এদের পরিমিত উপস্থিতির প্রয়োজন রয়েছে, অন্যদিকে বায়ুমন্ডলে এদের অস্বাভাবিক উপস্থিতি যেন বিপর্যয়কর
অবস্থার সৃষ্টি না করে তাও লক্ষণীয়।
গ্রীন হাউজ গ্যাসসমূহ ও এদের উৎস
গ্রীন হাউজ গ্যাস যে সকল গ্যাস ভূপৃষ্ঠের বিকিরিত তাপ আটকিয়ে রাখার ক্ষমতাস¤পন্ন অর্থাৎ গ্রীন হাউজ প্রভাব সৃষ্টি করতে সমর্থ তাদেরকে গ্রীন হাউজ গ্যাস বলে। এদের মধ্যে রয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), মিথেন (ঈঐ৪), নাইট্রাস অক্সাইড (ঘ২ঙ), ক্লোরো—ফ্লোরো—কার্বন ইত্যাদি। অতীতে CO2 কেই একমাত্র গ্রীন হাউজ গ্যাস হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন সূত্র মতে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায় গ্রীন হাউজ প্রভাব ঘটানোর জন্য CO2 এর ভূমিকা শতকরা প্রায় ৪৯ ভাগ যে সকল গ্যাস ভূপৃষ্ঠের ।
সারণী — ৩.২ — ১ বায়ুমন্ডলে গ্রীন হাউজ গ্যাসের মাত্রা
তবে এটা নিশ্চিত যে, শিল্প বিপ্লবের পর থেকে এ জাতীয় গ্রীন হাউজ গ্যাসের পরিমাণ বায়ুমন্ডলে আশংকাজনক ভাবে বেড়ে চলেছে।
কার্বন ডাই—অক্সাইড (CO2)
শিল্প কারখানা, মটরযান ও নানা রকমের চুল্লীতে বর্ধিত হারে জীবাশ্ম জ্বালানী (যেমনঃ কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল ইত্যাদি) পোড়ানোর ফলে বিপুল পরিমাণে CO2 বায়ুতে নির্গত হচ্ছে বর্তমানে যার পরিমাণ বৎসরে প্রায় ৫.২ বিলিয়ন টন গ্রীন হাউজ প্রভাব সৃষ্টিকারী প্রধান গ্যাসই হেŽছ কার্বন ডাই—অক্সাইড (CO2)। এজন্য বিজ্ঞানের ভাষায় গ্রীন হাউজ ইফেক্টকে অনেকেই ‘কার্বন ডাই—অক্সাইড সমস্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এটি কার্বন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌগ যা কার্বনের দহন থেকে সৃষ্ট। শিল্প কারখানা, মোটরযান ও নানা রকমের চুল্লীতে বর্ধিত হারে জীবাশ্ম জ্বালানি (যেমনঃ কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল ইত্যাদি) পোড়ানোর ফলে বিপুল পরিমাণে CO2 বায়ুতে নির্গত হচ্ছে বর্তমানে যার পরিমাণ বৎসরে প্রায় ৫.২ বিলিয়ন টন।
তাছাড়া আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, দাবানল, জীব ও উদ্ভিদ দেহের পচন প্রভৃতি প্রাকৃতিক কারণেও প্রচুর CO2 বায়ুতে জমা হচ্ছে । জীব জগত নিঃশ্বাসের সাথে যে পরিমাণ CO2 ত্যাগ করছে তার পরিমাণও নেহায়েত কম নয়। একজন মানুষ নিঃশ্বাসের সাথে প্রতিদিন প্রায় ২ পাউন্ডের মতো CO2 বাতাসে ছাড়ছে। এর সাথে আরও যোগ হচ্ছে কাঠ পোড়ানো ও বনরাজি উজাড়িকরণ সংক্রান্ত CO2। ১৯৮০ সনের এক হিসাব মোতাবেক দেখা গেছে বিষুবীয় অঞ্চলে বন ধ্বংসের কারণে ১৬৫৯ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই—অক্সাইড গ্যাস বায়ুতে যোগ হয়েছে। বনায়ন ধ্বংসের কারণে দ্বৈত ঘটনার সৃষ্টি হয়। একদিকে বন নিধনের ফলে সালোকসংশ্লেষনের মাধ্যমে CO2 শোষণকারী গাছের সংখ্যা হ্রাস পায় অন্যদিকে কর্তিত গাছের কাঠ, পাতা ইত্যাদি পোড়ানো বা পঁচনের ফলে নির্গত হয় CO2।
শিল্প বিপ্লবের আগে অর্থাৎ এখন থেকে প্রায় দু’শ বৎসর পূর্বেও বায়ু মন্ডলে CO2 এর স্থিতি নির্ভর করতো প্রাকৃতিক যোগ বিয়োগের মাধ্যমে। কিন্তু শিল্প বিল্পবের সাথে সাথে অর্থাৎ বর্ধিত জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পর থেকে আবহাওয়াগত সমীকরণে এক নূতন মাত্রা যোগ হয়। কারণ শিল্প কারখানা যে পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে বর্ধিত CO2 নির্গত করে, উদ্ভিদ ও সাগর ততটা শোষণ করে নিতে ব্যর্থ হয়। এছাড়া এ শতকের গোড়ার দিক থেকে মোটরযানের আবিস্কারের ফলে ব্যাপক জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলে। এছাড়াও রয়েছে অধিক জনসংখ্যাজনিত কারণে খাদ্য, গৃহনির্মাণ সামগ্রী ও জ্বালানি চাহিদা পূরণের জন্য নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন। ফলে প্রকৃতি হারাচ্ছে CO2 আত্তীকরণের উৎস।
১৯৫৮ সনের পর থেকে পৃথিবীর CO2 বৃদ্ধির পরিমাণ ঘনিষ্ঠভাবে লক্ষ্য করা হচ্ছে । সে সময় থেকে বর্তমান দশক পর্যন্ত CO2 বৃদ্ধির হার ০.৫ ভাগ থেকে ১.০ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। কার্বন ডাইঅক্সাইডের উৎসসমূহ বন্ধ বা নির্গমনের মাত্রা কমাতে না পারলে বৃদ্ধির বর্তমান হার যে আরও উর্ধ্বগামী হবে তাতে কোন্ সন্দেহ নেই। আর এর ফলে বাড়বে গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া।
কারা সবচেয়ে বেশি CO2 দূষণ ঘটাচ্ছে সাধারণ ভাবে উন্নত দেশসমূহকেই বায়ুমন্ডলে CO2 বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয়। ১৯৮০ সনের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে উন্নয়নশীল দেশসমহ থেকে যেখানে বায়ুতে ূ CO2 নির্গমনের পরিমাণ ছিল ১৩% সেখানে উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ ও দূর—প্রাচ্য থেকে নির্গমনের পরিমাণ ছিল ৫৭% CO2। কিন্তু ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশসমূহেও শক্তি ব্যবহারের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে আগামী শতাব্দীর প্রথমাংশেই CO2 নির্গমনের দিক দিয়ে উন্নয়নশীল দেশসমূহ উন্নত দেশগুলিকেও ছাড়িয়ে যাবে।
মিথেন
এক অণু কার্বন ও চার অণু হাইড্রোজেন সমন্বয়ে গঠিত একটি গ্যাসের নাম মিথেন (ঈঐ৪)। এটি প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উৎস এবং এর দাহ্য ক্ষমতা অনেক বেশি। মিথেন নির্গমন জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও কৃষিকার্যের সাথে বহুলাংশে সম্পর্কযুক্ত। বিগত ২০০ বৎসরে বায়ুমন্ডলে মিথেনের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। প্রাকৃতিক উৎস ছাড়াও জলাভূমি, পচনশীল বর্জ্য, গবাদি পশু, উইপোকার অন্তে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি উৎস থেকেও মিথেন গ্যাস নির্গত হয়। জলাবদ্ধ ধানের জমিতে জৈব পদার্থ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিজাড়িত হয়ে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে।
বর্তমানে বিশ্বের মোট মিথেন উৎপাদনের শতকরা ১০ ভাগই জলাবদ্ধ ধানের জমি থেকে আসছে। বিশ্ব—খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ঋঅঙ, ১৯৯৪) মতে ধানের জমি থেকে বৎসরে ৬০ মিলিয়ন টন মিথেন উৎপন্ন হয় এবং এর শতকরা ৯০ ভাগই আসে এশিয় দেশগুলি থেকে। নয়া—দিল্লীস্থ ইন্ডিয়ান এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনষ্টিটিউটের প্রাক্তন ডাইরেক্টর ডঃ সুরেশ, কে. মিনহার (১৯৯৫) মতে ধানের জলাবদ্ধ ধানের জমিতে জৈব পদার্থ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ি বজাড়িত হয়ে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে। বর্তমানে বিশ্বের মোট মিথেন উৎপাদনের শতকরা ১০ ভাগই জলাবদ্ধ ধানের জমি থেকে আসছে। বর্তমানে বায়ুমন্ডলে প্রায় ১.৭ ি পপিএম মিথেন গ্যাস রয়েছে এবং এর পরিমাণ বৎসরে শতকরা ১—২ ভাগ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জমি থেকে নিঃসৃত মিথেনের পরিমাণ অবশ্য ঋঅঙ—র চাইতে ১৫ গুণ কম বলে উলেখ করা হয়েছে। মিথেন গ্যাসের আরেকটি উৎস হচ্ছে গো—মহিষ, ছাগল—ভেড়া ইত্যাদি গৃহপালিত পশুর অন্ত্রে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া। বিশ্ব—খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ঋঅঙ) সমীক্ষা মতে এসকল পশুর অন্ত্র থেকে বৎসরে প্রায় ৮০ মিলিয়ন টন মিথেন উৎপন্ন হয়, যা পৃথিবীতে প্রাকৃতিক ভাবে উৎপাদিত মিথেনের শতকরা ১৮ ভাগ। এছাড়া কাঠ ধ্বংসকারী উইপোকার ঢিবি থেকেও মিথেন গ্যাস নির্গত হয়। জানা গেছে কাঠ ধ্বংসকারী একটি মাঝারি আকৃতির উইপোকার ঢিবি থেকে প্রতি মিনিটে প্রায় ৫ লিটার মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। বর্তমানে বায়ুমন্ডলে প্রায় ১.৭ পিপিএম মিথেন গ্যাস রয়েছে এবং এর পরিমাণ বৎসরে শতকরা ১—২ ভাগ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে বায়ুতে পরিমাণ কম হলেও গ্রীন হাউজ ইফেক্ট ঘটানোর ক্ষমতা CO2 অপেক্ষা মিথেনের বেশি। কারণ— ১ অণু CO2 যে পরিমাণ গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া ঘটায় ১ অণু মিথেন তার চেয়ে ১০ গুণ বেশি প্রতিক্রিয়া ঘটাতে সমর্থ (উবঢ়ঃযহবিং অংরধ, ১৯৯৩)। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডঃ এ্যালান তেরামোরার (১৯৮৮) মতে ১০,০০০ গুণ বেশি।
নাইট্রাস অক্সাইড
বর্তমানে বৎসরে শতকরা ০.৩ ভাগ হারে নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এর গ্রীন হাউজ ইফেক্ট সংগঠন ক্ষমতা CO2 অপেক্ষা ১৮০ থেকে ৩০০ গুণ বেশি। অক্সিজেনের সাথে নাইট্রোজেনের সংযুক্তির ফলে যেসব অক্সাইড তৈরি হয় নাইট্রাস অক্সাইড তার অন্যতম। এ গ্যাসের প্রধান উৎসগুলো হচ্ছে শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র, মোটরযান, প্লাষ্টিক, এসিড, বিস্ফোরক দ্রব্য নির্মান কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানা এবং কৃষি উৎপাদনে ব্যবহৃত নাইট্রোজেন গঠিত সার। এর মধ্যে জৈবিক উৎস থেকে নিঃসৃত গ্যাসের প্রায় এক পঞ্চমাংশই সংযোজিত হয় জমিতে নাইট্রোজেন গঠিত সারের ব্যবহার থেকে। বর্তমানে বৎসরে শতকরা ০.৩ ভাগ হারে নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এর গ্রীন হাউজ ইফেক্ট সংগঠন ক্ষমতা CO2 অপেক্ষা ১৮০ থেকে ৩০০ গুণ বেশি।
ক্লোরো – ফ্লোরো কার্বন
গ্রীন হাউজ ক্ষমতা বিশেষণে CO2 এর পরেই ঈঋঈং এর অবস্থান। এরা বায়ুমন্ডলে দীর্ঘস্থায়ী। আর টপোস্ফিয়ারে পৌঁছে সুর্যের অতি বেগুনী রশ্মির প্রভাবে ভেঙ্গে যায় এবং মুক্ত ক্লোরিন পরমাণু বেড় হয়ে আসে। আর এ ক্লোরিন অণুই ওজোন স্তর ধ্বংসের মুল কারণ। ক্লোরো—ফ্লোরো—কার্বন (ঈঋঈঝ) ক্লোরিন, ফ্লোরিন এবং কার্বনের একটি যৌগ। অন্যান্য গ্রীন হাউজ গ্যাস থেকে এটি ব্যতিক্রম ধর্মী এ জন্য যে এটি কোন্ প্রাকৃতিক উৎস থেকে বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে না বরং মানব সৃষ্ট। বিগত ৫০ বৎসর যাবৎ এটি উৎপাদিত হয়ে আসছে বিভিন্ন দ্রাবক, রিফ্রেজারেটরের তরল পদার্থ, স্প্রে—ক্যানের প্রপেলার এবং ফোম প্যাকিং সামগ্রীতে ব্যবহারের জন্য।
যদিও বায়ুমন্ডলে গ্যাসসমুহের পরিমাণ এখনো খুবই সামান্য তথাপি গ্রীন হাউজ প্রক্রিয়ায় এরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ: (১) কোন্ কোন্ ঈঋঈং— এর বিকিরণ ক্ষমতা CO2 অপেক্ষা দশ হাজার গুণ বেশি, (২) প্রায় সবগুলোই বায়ুমন্ডলে দীর্ঘস্থায়ী, (৩) স্ট্রাটোস্ফিায়ারের ওজোন ধ্বংসকারী, যার পরিণতিতে গ্রীন হাউজ প্রভাব ঘটে, এবং (৪) বায়ুমন্ডলে ঈঋঈং বৃদ্ধির হার অধিক (বর্তমানে ৫—৭%)। প্রকৃতপক্ষে, গ্রীন হাউজ ক্ষমতা বিশ্লেষণে CO2 এর পরেই এর অবস্থান। এরা বায়ুমন্ডলে দীর্ঘস্থায়ী। আর টপোস্ফিয়ারে পৌঁছে সুর্যের অতি বেগুনী রশ্মির প্রভাবে ভেঙ্গে যায় এবং মুক্ত ক্লোরিন পরমাণু বেড় হয়ে আসে। আর এ ক্লোরিন অণুই ওজোন স্তর ধ্বংসের মূল কারণ।
জীব জগত ও গ্রীন হাউজ ইফেক্ট
এ কথা আজ সর্বজন স্বীকৃত যে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই—অ*াইড, মিথেন, নাইট্রাস অ*াইড, সি.এফ.সি প্রভৃতি গ্রীন হাউজ গ্যাসের বৃদ্ধিজনিতকারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। কিন্তু বায়ুমন্ডলে কী পরিমাণ তাপের বৃদ্ধি ঘটেছে বা ভবিষ্যতে ঘটবে তা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে সম্প্রতি যে চিত্র ফুটে ওঠেছে তা থেকে এটা নিশ্চিত যে, বিগত ১০০ বছরে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা ০.৫ ০.১ সেঃ বৃদ্ধি পেয়েছে বায়ুমন্ডলের গড়পড়তা তাপ ১৯৪০ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি পেলেও পরবর্তী তিন দশকে প্রায় অপরিবর্তিত ছিল। কিন্তু ৭০ এর দশকের পর থেকে তা হঠাৎ করে আবার বাড়তে থাকে এবং ৮০ দশকে তা সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছে। এর মধ্যে ১৯৮৮ সালের তাপমাত্রা গত ১৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ বায়ুমন্ডলের গড় তাপমাত্রা আরও ১.৫ থেকে ৪.৫ সেঃ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে বলে আবহাওয়া ও পরিবেশ বিজ্ঞানীদের ধারণা। কিন্তু আবহাওয়াবিদদের মতে তাপমাত্রার গড় অপেক্ষা সাময়িক চরম বৃদ্ধিই বেশি বিপদজনক।
আবহাওয়াগত পরিবর্তন
গ্রীন হাউজ গ্যাস দ্বারা ভূ—পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ুগত পরিবর্তনে নানা ধরনের জটিল প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে রয়েছে ঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বৃদ্ধি, মারাÍক খরা, বৃহৎ দাবানল স্থান বিশেষে শৈত্য প্রবাহ, অধিক হারে অপ্রত্যাশিত বন্যা ইত্যাদি। তবে বায়ুমন্ডলে গ্রীন হাউজ গ্যাসজনিত উত্তাপ বৃদ্ধির প্রভাব পৃথিবীর সর্বত্র একইভাবে হবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন না। পৃথিবীর মধ্য অক্ষাংশে অবস্থিত দেশসমূহ যেমনঃ অস্ট্রেলিয়ার অধিকাংশ স্থান, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মতো দেশসমূহের তাপমাত্রা জনিত আবহাওয়া পরিবর্তন প্রক্রিয়া সর্বাধিক অনুভূত হবে। আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতির একটি বড় বিপদ এই যে, এটি কখন ঘটবে তা নিশ্চিতভাবে অনুধাবন করা যায় না।
হ্যারিকেনের তীব্রতা সম্পন্ন মাত্র কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানীর কারণ হতে পারে। আফ্রিকার অধিকাংশ স্থানে এবং ভারতীয় উপমহাদেশে লাগাতার দুই তিনটি খরা—বৎসর লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনাহার ও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে। ফলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয় ঘটবে যা কেবলমাত্র আণবিক যুদ্ধের ভয়াবহতার সাথে তুলনীয় বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।
বৃষ্টিপাতে প্রভাব
আবহাওয়ার পরিবর্তন হেতু বৃষ্টিপাতের ধরনেও বিরাট পরিবর্তন আসবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। ফলে উর্ধ্ব—অক্ষাংশে প্রচুর বৃষ্টিপাত, গ্রীস্মমন্ডলীয় অঞ্চলে ঘন ঘন বৃষ্টিপাত এবং মধ্য অক্ষাংশে গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে শীতকালে হবে আর্দ্র এবং গ্রীস্মকাল হবে শুষ্ক। পক্ষান্তরে উপ—গ্রীস্মীয় অঞ্চল যা ইতোমধ্যেই শুষ্ক তা আরও শুষ্ক হয়ে যাবে।
গ্রীন হাউজ প্রভাবের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আগামী ৫০ বৎসরের মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগ হ্রাস পাবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। বিজ্ঞানীরা আরও মনে করেন যে আফ্রিকার নিরক্ষীয় অঞ্চলের বৃষ্টিপাত বেষ্টনী উত্তর দিকে সরে গিয়ে সাহেল এলাকা আর্দ্রতাযুক্ত করবে এবং মধ্য চীনের প্রান্তীয় কৃষি ভূমিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটাবে। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের বৃহত্তর অংশ হবে খরা কবলিত।
কৃষিতে গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া
কৃষিতে প্রযুক্তিগত বিপ্লব ঘটে থাকলেও বিশ্ব খাদ্য উৎপাদন আজও আবহাওয়া ও জলবায়ুগত উপাদানের উপর একান্তভাবে নির্ভরশীল। তাই জলবায়ুগত যে কোন্ পরিবর্তনে কৃষি তথা শস্য উৎপাদন, পশু পালন, বন ও মৎস্য চাষের উপর প্রত্যক্ষভাবে যে প্রভাব পড়বে তাতে কোন্ সন্দেহ নেই। কিন্তু বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ঋঅঙ) মতে বায়ুমন্ডলের তাপ বৃদ্ধি পেলে আজ যেখানে তীব্রশীত সেসব স্থানে শস্য উৎপাদন সম্ভব হবে। আগামী ১০০ বৎসরে মধ্য অক্ষাংশের জলবায়ু স্তর ি বজ্ঞানীদের ধারণা আগামী ৫০ থেকে ১০০ বৎসরের মধ্যে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা ২—৫সেঃ বৃদ্ধি পেলে মেরু অঞ্চলের অধিকাংশ বরফ গলে ি গয়ে সাগরের পানিতে যোগ হবে। তাছাড়া উত্তাপ বৃদ্ধিজনিত কারণে সাগরের পানির আয়তনও বৃদ্ধি পাবে।
ফলে ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ০.৩ থেকে ১ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে আশংকা করা হচ্ছে। এবং এর সাথে সম্পৃক্ত ইকোসিস্টেম ২০০ থেকে ৭০০ কিমি পর্যন্ত মেরুর দিকে স্থানান্তরিত হবে। এতে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের দেশসমূহ উপকৃত হবে। কিন্তু শুষ্ক ও উপশুষ্ক অঞ্চলের (অৎরফ ধহফ ংবসর ধৎরফ ুড়হব) দেশসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাহারা মরুভূমি যদি ২০০ কি. মি. দক্ষিণ দিকে সরে যায় তবে সেখানকার সম্পদ শতকরা ৩০ জন লোকের খাদ্য সংস্থান দিতে অসমর্থ হবে।
উদ্ভিদের খাদ্য ও অন্যান্য উপকরণ যথার্থ বজায় থাকলে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই—অ*াইড বৃদ্ধি জনিত কারণে ফসলের উৎপাদন ১০ থেকে ৮০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি উৎপাদনে দু’টি উৎকণ্ঠাজনক উপাত্ত হচ্ছে উŽচ তাপমাত্রা ও স্থানীয় বৃষ্টিপাত বা সেচের ঘাটতি। গ্রীন হাউজ প্রভাবের কারণে সৃষ্ট উচ্চ তাপমাত্রা ভুট্টা ও সয়াবিনের মতো কিছু কিছু উদ্ভিদ চাষের বিস্তৃতি ঘটালেও পৃথিবীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল ধানের পুষ্পায়নের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। উদ্ভিদের খাদ্য ও অন্যান্য উপকরণ যথার্থ বজায় থাকলে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই—অ*াইড বৃদ্ধি জনিত কারণে ফসলের উৎপাদন ১০ থেকে ৮০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কার্বন ডাই— অ*াইডের উর্বরতা সাধন ক্ষমতা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত। ফলে উন্নত বিশ্বে গ্রীন হাউজে ফসল উৎপাদনে CO2 কে সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটা ধারণা করা হয় যে বর্তমান সময়ে ফসলের বর্ধিত উৎপাদনের পিছনে আংশিকভাবে হলেও বায়ুমন্ডলে বর্ধিত কার্বন ডাইঅ*াইডের একটি ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে।
কার্বন ডাই অ*াইডের ইতিবাচক দিক প্রকৃতিতে উদ্ভিদের কার্বন বিপাকের জন্য ঈ৩ ও ঈ৪ জাতীয় দুইটি ভিন্নতর পদ্ধতি রয়েছে। বর্ধিত কার্বন ডাই—অ*াইডের প্রতি সাড়া প্রদানে ঈ৩ উদ্ভিদ ঈ৪ উদ্ভিদ অপেক্ষা বেশি কার্যকরী। এতে করে তুলনামূলকভাবে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ফসল যেমনঃ গম, বার্লি ইত্যাদি অধিক সুবিধা ভোগ করবে। পক্ষান্তরে, আখ, ধান প্রভৃতি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফসল কম সুবিধা পাবে। বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই—অ*াইডের আরেকটি ইতিবাচক দিক হচ্ছে সকল ফসলের জন্য উন্নততর পানি ব্যবহার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এর ফলে কম পানি ব্যবহার দ্বারা শুষ্ক ও উপ—শুষ্ক অঞ্চলে (অৎরফ ্ ংবসর ধৎরফ ৎবমরড়হং) ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে। সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধি জনিত প্রতিক্রিয়া
পৃথিবীর মোট জলরাশির শতকরা ৯৭.৫ ভাগ সাগর এবং মহাসাগরে, দুই ভাগ উŽচ পর্বত—শৃঙ্গ ও মেরু অঞ্চলে এবং বরফে আবদ্ধ। বাকি ০.৫ ভাগের মধ্যে রয়েছে নদ—নদী, খাল—বিল, হ্রদ, ডোবা—নালা, ঝরণা ও ভুগর্ভস্থ পানির আধার। বিজ্ঞানীদের ধারণা আগামী ৫০ থেকে ১০০ বৎসরের মধ্যে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা ২—৫সেঃ বৃদ্ধি পেলে মেরু অঞ্চলের অধিকাংশ বরফ গলে গিয়ে সাগরের পানিতে যোগ হবে। তাছাড়া উত্তাপ বৃদ্ধিজনিত কারণে সাগরের পানির আয়তনও বৃদ্ধি পাবে। ফলে ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ০.৩ থেকে ১ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে আশংকা করা হচ্ছে । তবে মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, বার্মা, চীনসহ পৃথিবীর বহু নিম্নাঞ্চল এবং বাংলাদেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এলাকা লবণাক্ত পানির নিচে ডুবে যাবে।
হারিয়ে যাবে চাষ যোগ্য উর্বর জমি। গৃহহীন হবে লক্ষ লক্ষ জনপদ। বিনষ্ট হবে উপকূলীয় মৎস্য চাষ ও ম্যানগ্রুভ বনাঞ্চল। জলোচ্ছ্বাসের আওতায় আসবে উপকূলীয় নিম্নভূমি। ব—দ্বীপ অঞ্চলের স্বাদু পানির আধারগুলো লবণাক্ত পানিতে ভরে যাবে। এভাবেই ব্যাপক পরিবর্তন আসবে জৈব—ইকোসিস্টেমে।
মৎস্য চাষে প্রভাব
আবহাওয়াগত পরিবর্তনের ফলে মৎস্য স¤žদের উপর অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি হবে, তা সে সাগর বা মিঠা পানি যেখানেই হোক। মাছের সামুদ্রিক আবাসস্থল ও প্লাংটনের স্থানান্তর ঘটবে, ব্যহত হবে উৎপাদনশীলতা। স্বাদু পানির মাছ খরা, বন্যা ও উচ্চ তাপ দ্বারা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে চিংড়ী চাষ। ফলে মৎস্য চাষ ও আহরণের সাথে সম্পৃক্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন যাত্রায় পড়বে চরম টানা পোড়া।
বনসম্পদে প্রভাব পৃথিবীর কার্বন চক্র বিবর্তনে বৃক্ষরাজির ভুমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ২০০০ বিলিয়ন কার্বন পৃথিবীর সবুজ গাছপালা ও মাটি ধারণ করে আছে, যা বায়ুমন্ডলে অবস্থিত মোট কার্বনের প্রায় তিন গুণ। বৃক্ষনিধন বা অপসারণের ফলে ধারণকৃত কার্বন জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে অথবা প্রাকৃতিক উপায়ে জারিত হয়ে পুণরায় বায়ুমন্ডলে ফিরে আসে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ১৯৫০ থেকে ১৯৮৯ সালের মধ্যে বন নিধনের ফলে ৯০—১৮০ বিলিয়ন টন কার্বন বায়ুমন্ডলে জমা হয়েছে যা কয়লা ও জ্বালানি
থেকে জমাকৃত কার্বনের প্রায় সমপরিমাণ।
বর্ধনশীল গাছপালা সালোক—সংশেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাই—অ*াইড শোষে নেয় এবং আত্তীকরণ করে রাখে। অধিক হারে বৃক্ষ নিধনের অর্থ হবে একদিকে কার্বন আত্তীকরণ প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়া, অন্য দিকে কর্তিত বৃক্ষরাজির জারণ প্রক্রিয়া থেকে বায়ুমন্ডলে আরও কার্বন জমা হওয়া। ফলে গ্রীন হাউজ প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পাবে।
গ্রীন হাউজ প্রভাবজনিত উত্তাপ বৃদ্ধিতে বৃক্ষরাজি ও অন্যান্য উদ্ভিদের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। অধিকাংশ বৃক্ষই স্বল্প পরিসর তাপমাত্রার মধ্যে (ঘধৎৎড়ি ৎধহমব ড়ভ ঃবসঢ়বৎধঃঁৎব) অভিযোজিত। বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি সে: বৃদ্ধি পেলে তা হবে বনভুমির জন্য বিপর্যয়কর। কারণ এতে বর্তমান জলবায়ু অঞ্চলগুলো শত শত কি. মি. মেরু অঞ্চলের দিকে সরে যাবে। কিন্তু বনাঞ্চল সরে যাবার জন্য যে সময়ের প্রয়োজন জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান হার তার চেয়েও অধিক। তাই সময়মত বনাঞ্চল অভিবাসন প্রক্রিয়া জোরদার করা না হলে বনাঞ্চলের জীব বৈচিত্র্য মারাÍকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
গ্রীন হাউজ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে করণীয়
গ্রীন হাউজ প্রভাব মানব সৃষ্ট একটি বিশ্ব—ব্যাপি সমস্যা। “মানব সভ্যতা অদ্যাবধি যতগুলো সমস্যা “মানব সভ্যতা অদ্যাবধি যতগুলো সমস্যা মোকাবেলা করেছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাটি হলো এর ভিতর সবচেয়ে মারাত্বক” মোকাবেলা করেছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাটি হলো এর ভিতর সবচেয়ে মারাত্বক” (আল গোর, উপরাষ্ট্রপতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট, এপ্রিল ১৯৯৪)। সুতরাং আঞ্চলিকভাবে এর কোন্ সমাধান সম্ভব নয়। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে বর্তমান দূষণ হার এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি। সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ব—ব্যাপি যে পদক্ষেপগুলো নেয়া উচিত তা হলোঃ
* জীবাশ্ম জ্বালানি যথাসম্ভব নিম্নমাত্রায় রাখতে হবে এবং বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে নিরাপদ জ্বালানির উৎস খঁুজতে হবে।
* পুনঃব্যবহারযোগ্য শক্তি যা সাধারণভাবে পরিবেশ দূষণ ঘটায় না যেমনঃ বায়ু, পানি, সৌরশক্তি, পারমানবিক শক্তি ইত্যাদি ব্যবহারের প্রতি বেশি নজর দিতে হবে।
* স্বল্প তেল ব্যবহার উপযোগী মটরযান উদ্ভাবন করে জ্বালানি ব্যবহার কমাতে হবে।
* প্রাকৃতিক বন সম্পদ সংরক্ষণ ও নতুন করে বনায়নের ব্যবস্থা নিতে হবে।
* কৃষিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
* সস্তা বিকল্প আবিস্কারের মাধ্যমে ঈঋঈং ব্যবহার কমাতে হবে বা প্রয়োজনে বন্ধ করে দিতে হবে।
* মটরযান ও শিল্প কারখানা থেকে নির্গত ধূঁয়া থেকে গ্রীন হাউজ গ্যাস অপসারণের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে।
* শিল্প কারখানা গুলো নিরাপদ রাখার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে।
* ধানের জমি থেকে অল্প মিথেন নির্গত হয় এমন সব ধানের জাত উদ্ভাবন করতে হবে।
* গ্রীন হাউজ প্রভাব দূরীকরণে উন্নত বিশ্বকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় কারিগরী ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।
* গণ—মাধ্যম ও অন্যান্য মাধ্যমের মাধ্যমে গ্রীন হাউজ প্রভাবের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
* স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে।
* যেহেতু জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত কারণেও পরিবেশের দূষণ হচ্ছে সে কারণে জনসংখ্যা বিস্ফোরণরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মৃত্তিকা দূষণ – পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের, পরিবেশ বিভাগের ২ নং ইউনিটের পাঠ ২.৫ নং পাঠের অংশ।
মৃত্তিকা অতীব গুরুত্বপ ূ র্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। ইহা পৃথিবীর অধিকাংশ জীবের খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যম। মৃত্তিকাকে কেন্দ্র করে সকল কৃষিকাজ আবর্তিত হয়। মানুষের ক্রিয়াকর্ম ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপায়ে মৃত্তিকা দূষিত হয়। নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং মানুষের প্রয়োজনে তার অবিবেচিত ব্যবহার দিন দিন উর্বর মৃত্তিকাকে কলুষিত করছে। ফলে মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে এবং ফসল চাষে মৃত্তিকা অনুপযোগী হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
মৃত্তিকা দূষণ
ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন অনন্ত কাল মৃত্তিকাকে নিরাপদে ব্যবহার করতে পারে সেজন্য মৃত্তিকা সম্পদকে দূষণ মুক্ত রাখতে হবে। যাহোক, মৃত্তিকা দূষণ কে নিম্নোপায়ে সংজ্ঞায়িত করা যায়। মৃত্তিকা দূষণ বলতে বোঝায় মাটির প্রয়োজনীয় উপাদানের হ্রাস ও অবাঞ্চিত পদার্থ সমূহের সঞ্চয় যা জীব ও উদ্ভিদ জগতের পক্ষে অমঙ্গলজনক। অবাঞ্চিত পদার্থ বলতে সেসব উপাদান বোঝায় যা মৃত্তিকার নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটায়।
মৃত্তিকা গুণাবলীর অবনমনকেও মৃত্তিকা দূষণের আওতাভুক্ত বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন কারণে মৃত্তিকা দূষণ ঘটে থাকে। মৃত্তিকা দূষণের ফলে মৃত্তিকার ব্যবহারিক মূল্য হ্রাস পায়। মাটি দূষণ পরিবেশ দূষণের অন্যতম অংশ। নগরায়ন ও ব্যাপকহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়। মৃত্তিকা দূষণের প্রধান নিয়ামক সমূহ
১। বিভিন্ন ধরনের ভূমি ক্ষয়
২। বন্যা
৩। অনিয়ন্ত্রিত সেচ ও নিকাশ
৪। আপদনাশক, রাসায়নিক সার ও উচ্চ ফলনশীল জাতের নিবিড় ব্যবহার
৫। মৃত্তিকার অম্লতা বৃদ্ধি (অপরফরভরপধঃরড়হ)
৬। সেচ পানির ব্যবহারে মৃত্তিকার লবণাক্ততা ও ক্ষারকতা বৃদ্ধি
৭। মরুকরণ
৮। অপরিকল্পিত কৃষি ভূমির ব্যবহার
৯। পলিথিন ব্যাগের যথেচ্ছা ব্যবহার
১০। শিল্প বর্জ্য (কঠিন, তরল, জৈব ও অজৈব)
১১। পৌর ও গ্রামীন বর্জ্য
১২। তেজস্ক্রিয় আবর্জনা, ইত্যাদি
মৃত্তিকা দূষণ কীভাবে ঘটে
বিভিন্ন কারণে মৃত্তিকা দূষণ সংঘটিত হয়। বন্যা, নদীভাঙ্গন, অতিবৃষ্টি, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতির কারণে বিভিন্ন ধরনের ভূমিক্ষয় ঘটে। এসব ভূমিক্ষয়ের উর্বর ভূমি ফসল চাষে অনুর্বর হয়ে পড়ে। নদনদীর ক্রমবর্ধমান পড়া এবং পাহাড়ী ঢলে উর্বর ভূমিতে অনুর্বর বালি জমা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। মৃত্তিকা দীর্ঘ সময় পানির নিচে পড়ে থাকা কিংবা দূষিত পানি দ্বারা সেচ প্রদানেও মৃত্তিকা দূষণ ঘটতে পারে। কৃষিক্ষেত্রে অপরিকল্পিতভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার প্রতিনিয়তই মৃত্তিকা দুষিত করে তুলছে। আপদনাশকের অধিকাংশই বিভিন্নভাবে মৃত্তিকায় দীর্ঘদিন অবস্থান করে যা মৃত্তিকার গুণাবলীতে প্রচন্ড ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
এদের প্রভাবে মাটিতে অবস্থানকারী উপকারী জীবাণুরা বেঁচে থাকতে পারে না। আমরা জানি, এক কেজি উর্বর মাটিতে সর্বোচ্চ ২ ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া, ৪০০ মিলিয়ন ছত্রাক, ৫০ মিলিয়ন শ্যাওলা এবং ৩০ মিলিয়ন প্রোটোজোয়াসহ অন্যান্য বড় ও ক্ষদ্র মৃত্তিকা জীব বাস করে। মৃত্তিকায় বায়ুমন্ডলীয় নাইট্রোজেন সংযোজনসহ মৃত্তিকাস্থ বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটনে এদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারে এদের মৃত্যু ঘটায় মাটি শক্ত হয়ে উঠে এবং উর্বরতা হ্রাস পায়।
মৃত্তিকায় মূল আপদনাশকের (চবংঃরপরফব) শতকরা ৭৫—১০০ ভাগ প্রভাব নষ্ট হতে যে পরিমাণ সময় লাগে তা নিচের সারণীতে প্রদত্ত হলো—
মৃত্তিকা দূষণের উৎস
এসিড বৃষ্টি, অম্লীয় রাসায়নিক সারের ব্যবহারে মৃত্তিকার অম্লতা বৃদ্ধি পেয়ে মৃত্তিকা দূষণ ঘটে। কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে নদীর নাব্যতা নষ্ট করা ও ব্যাপক হারে বৃক্ষ নিধনের ফলে খরার প্রকোপ বৃদ্ধি পায় যা মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়। অপরিকল্পিত কৃষি ভূমির ব্যবহার, নিবিড় উফশী ফসলের চাষের ফলে দিন দিন মৃত্তিকা জৈব পদার্থ কমে যায়। এভাবে মাটি ক্রমশঃ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অবাঞ্চিত শিল্প বর্জ্য, তেজস্ক্রিয় পদার্থ ও অন্যান্য ক্ষতিকর বর্জ্যের মিশ্রণ মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়। তেজস্ক্রিয়তা দুষ্ট মাটি থেকে উৎপাদিত ফসল মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের পর তা যেখানে সেখানে মাটিতে ফেলে দিলে তা মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়। পলিথিন ব্যাগ উদ্ভিদের শিকড়ের বৃদ্ধিকে রোধ করে এবং সেচ ও নিকাশে মারাÍক অসুবিধার সৃষ্টি করে।
মৃত্তিকা দূষণ রোধে করণীয় মৃত্তিকা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। এর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে মৃত্তিকাকে দূষণ মুক্ত রাখা আবশ্যক। মৃত্তিকা দূষণ মুক্ত রাখতে কিংবা দূষণ যুক্ত মৃত্তিকাকে ব্যবহারোপযোগী করতে নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১। দুর্বল মৃত্তিকা ব্যবস্থা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূযোর্গের (যেমন বন্যা, খরা, ভূমিক্ষয়, লবণাক্তকরণ, অিèয়করণ, তলানীকরণ, পানি লাগা, উর্বরতা হ্রাস ইত্যাদি) প্রধান কারণ। এ সমস্যা দূরীরণে কৃষি ও কৃষিকাজের সাথে জড়িত সকলকে দুর্বল মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন করতে হবে এবং পাশাপাশি উন্নত ব্যবস্থাপনা কৌশল শিক্ষা দিতে হবে। এক্ষেত্রে
গণমাধ্যমের অংশগ্রহণসহ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।
২। বীজ, সার, পানি ব্যবস্থাপনা, আপদব্যবস্থাপনা, চাষাবাদ প্রণালী, ইত্যাদি যথেষ্ট দক্ষতার সাথে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে যেন মৃত্তিকা দূষণ ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা যায়।
৩। উন্নত প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা কৌশল অবলম্বন করে দুষণযুক্ত মৃত্তিকার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
৪। গবেষণার মাধ্যমে ফসল চাষে উন্নত প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
৫। ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহারের জন্য জাতীয় পর্যায়ে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬। সকল স্তরে পরিবেশ সম্পর্কে শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭। রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে প্রাকৃতি পদার্থের (যেমনঃ জৈবসার, সবুজ সার, কম্পোস্ট, খামারজাত সার, জীবাণু সার, চটের ব্যাগ, ইত্যাদি) ব্যবহার বাড়ানো আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে অসুবিধা হলেও দীর্ঘমেয়াদী লাভের কথা বিবেচনা করে ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
জনসংখ্যা ও পরিবেশ দূষণ – পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের, পরিবেশ বিভাগের ২ নং ইউনিটের পাঠ ২.৪ নং পাঠের অংশ।
জনসংখ্যা ও দূষণের ধারণা আজ আশঙ্কাজনকভাবে সারা পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই হার উন্নত বিশ্ব অপেক্ষা অনুন্নত বিশ্বেই অধিক। ক্রমবর্ধমান এ জনসংখ্যার জন্য চাই প্রয়োজনীয় গৃহ সংস্থান, অন্ন ও বস্ত্র। আর আরাম আয়েশের জন্য চাই বিলাস সামগ্রী, ভৌত সুযোগ—সুবিধা ও আরও অনেক কিছু।
জনসংখ্যা ও পরিবেশ দূষণ
পরিবেশ বিজ্ঞানী ই.পি, ওডামের মতে, নগরীর পরিধি যত বাড়ছে পারিপার্শ্বিক এলাকা থেকে তার চাহিদা যোগানের মাত্রাও বাড়ছে। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হবার আশঙ্কাও প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। মানুষ তার এসব মৌলিক চাহিদা ও বিলাস সামগ্রীর যোগান দিতে গিয়ে বর্ধিত হারে আহরণ করছে খনিজ ও বনজ সম্পদ। কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে ঘটিয়েছে বিপ্লব, উদ্ভাবন করেছে নব নব প্রযুক্তির। ফলে সম্পদের উপর বেড়েছে অনাকাঙ্খিত চাপ। ভারসাম্য হারিয়েছে পরিবেশ, দুষিত হয়েছে তার আদি রূপ।
জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও পরিবেশ দূষণ আজ তাই একে অন্যের পরিপূরক। আর এ বাস্তবতাটি গ্রামাঞ্চল অপেক্ষা শহরাঞ্চলেই বেশি। কারণ, শহরাঞ্চলের মৌলিক চাহিদার যোগান সাধারণভাবে গ্রামাঞ্চল থেকেই হয়ে থাকে। তাই বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী ই.পি, ওডামের মতে, নগরীর পরিধি যত বাড়ছে পারিপার্শ্বিক এলাকা থেকে তার চাহিদা যোগানের মাত্রাও বাড়ছে। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হবার আশঙ্কাও প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। আর এ বিপন্ন পরিবেশই সামাজিক, অর্থনৈতিক, কৃষিজ, বনভূমি ইত্যাদি সংক্রান্ত দূষণের মূল কারণ।
জনসংখ্যাজনিত সামাজিক দূষণ বাস উপযোগী একটি আবাস গৃহ প্রতিটি মানুষেরই অন্যতম মৌলিক অধিকার। এশিয়া প্রশান্তমহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলোতে বিশেষ করে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে পৃথিবীর মোট ৫.৫ বিলিয়ন জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি লোকের বাস এবং এসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও অধিক। সম্পদের স্বল্পতা হেতু এতদঞ্চলে বর্ধিত এ জনসংখ্যার জন্য গৃহায়ণ একটি প্রকট সমস্যা। ফলে নগর ও গ্রামাঞ্চলে মানুষ নিম্নমানের আবাসস্থলে অত্যন্ত অমানবিক অবস্থায় বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে।
শহরাঞ্চল জীবন ধারণের সবচাইতে উপযুক্ত স্থান বলে বিবেচিত। অথচ জনসংখ্যার চাপে ম্যানিলা, ঢাকা, কলিকাতা, বোম্বের ন্যায় এশিয়ার জনবহুল শহরগুলোর এক তৃতীয়াংশের অধিক লোক বস্তিবাসী। তাদের জন্য নেই কোন পরিচ্ছন্ন আলো—বাতাস, পানীয়জল ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃপ্রণালীর ব্যবস্থা। ফলে যত্রতত্র গড়ে উঠছে ময়লা, আবর্জনার স্তুপ। ঘটছে স্বাস্থ্যহানী। বঞ্চিত হচ্ছে লাখো মানুষ জীবনের অধিকার থেকে। এভাবেই বিনষ্ট হচ্ছে সামাজিক পরিবেশ। মানুষ সামাজিক জীব। তাই বহুমুখী চাহিদার যোগাদান দিতে গিয়ে পরস্পরের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। আর এজন্য চাই সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা।
কিন্তু বর্ধিত জনসংখ্যাজনিত কারণে ভূমি ও সম্পদের উপর প্রচন্ড চাপ থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের মতো খুব কম ভূমি ও সম্পদই এসব এলাকায় অবশিষ্ট থাকে। ফলে জনসংখ্যার চাপে এবং যথাযথ যোগাযোগের অভাবে মহামারী, অগ্নিকান্ড, ঝড়ঝঞ্জা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে পরিমিত সাহায্যের অভাবে মানুষ কোন নিশ্চিত অবলম্বন খুঁজে পায় না। ফলে মাত্রাতিরিক্ত স্থানীয় সম্পদ ব্যবহার করে পরিবেশকে করে তোলে ভারসাম্যহীন।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বায়ু দূষণ
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে মানুষের মৌলিক চাহিদা যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি বৃদ্ধি পায় তার ভোগ সামগ্রীর চাহিদা। তাই জনসংখ্যার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে ঘটে চলেছে শিল্প—বিপ্লব। আর জনসংখ্যা ও শিল্প—
আর্দ্র জলাবদ্ধ জমিতে ধান চাষ থেকে নির্গত হচ্ছে মিথেন গ্যাস। এই গ্যাসের গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া ঘটানোর ক্ষমতা CO2 অপেক্ষা ১০ গুণ মতান্তরে হাজার গুণ বেশি। ইতোমধ্যেই বিশ্বের শতকরা ১৭ ভাগ মিথেন ধানের জমি থেকে আসছে। উদ্ভিদ সালোকসংশেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বছরে প্রায় ৪—৯১০১১ কেজি CO2 গ্রহণ করে এবং প্রায় সম পরিমাণ O2 ত্যাগ করে।কারখানা উভয়েই দ্রুত বাড়িয়ে তুলছে শক্তি ব্যবহারের পরিমাণ এবং বায়ু দ ষণের উপকরণ।
জাপানে অবস্থিত বিশ্বপরিবেশ গবেষণা কর্তৃপক্ষ ১৯৯৩ সালে এক সমীক্ষায় প্রকাশ করে যে, এশিয়ার দেশগুলো থেকে নির্গত CO2 এর পরিমাণ বর্তমান দশকেই শতকরা ৩০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে এবং আনুপাতিক হারে মিথেন গ্যাসের বৃদ্ধি ঘটবে। আর এদু’টো গ্যাসই বায়ু দূষণের অন্যতম সোপান। বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ইতোমধ্যেই শতকরা ২৫ ভাগ CO2 এর আধিক্য ঘটেছে। জনসংখা বৃদ্ধিজনিতকারণে CO2 এর পরিমাণ আরও বাড়লে তা বায়ু দষণের ক্ষেত্রে তথাু গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে মারাÍক বিপর্যয় ডেকে আনবে।
কৃষি উৎপাদন ও দূষণ
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে মানুষের খাদ্য চাহিদা বাড়ছে। এই বর্ধিত খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য মানুষ উদ্ভাবন করেছে উফশী জাতের ফসল। ফলন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করছে সার ও কীটনাশক। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে কোন ফসলের উৎপাদন দ্বিগুণ বাড়াতে হলে সার, কীটনাশক ও শক্তি ব্যবহারের পরিমাণ ১০ গুণ বাড়াতে হচ্ছে। ফলে বায়ু ও পানি কলুষিত হচ্ছে। আর্দ্র জলাবদ্ধ জমিতে ধান চাষ থেকে নির্গত হচ্ছে মিথেন গ্যাস। এই গ্যাসের গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া ঘটানোর ক্ষমতা CO2 অপেক্ষা ১০ গুণ মতান্তরে হাজার গুণ বেশি।
ইতোমধ্যেই বিশ্বের শতকরা ১৭ ভাগ মিথেন ধানের জমি থেকে আসছে। আরও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ধানের উৎপাদন বাড়াতে হবে। সেই সাথে মিথেন উৎপাদনও বেড়ে যাবে। নাইট্রাস অক্সাইড আরেকটি শক্তিশালী গ্রীন হাউজ গ্যাস। এর পরিমাণ বৎসরে ০.২ থেকে ০.৩ ভাগ হারে বাড়ছে এবং এর গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া ঘটানোর ক্ষমতা CO2 এর চাইতে ১৮০ থেকে ৩০০ ভাগ বেশি। আর অধিকাংশ ঘ২ঙ গ্যাসই নির্গত হয় জৈবিক উৎস থেকে। এর মধ্যে শস্যক্ষেত্রে ব্যবহৃত নাইট্রোজেনজনিত সারের ব্যবহার থেকে সৃষ্টি হয় প্রায় এক পঞ্চমাংশ।
বন নিধন ও জনসংখ্যা জনিত দূষণ
আজ পৃথিবীতে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তার চেয়ে অধিক গতিতে বন সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। এর মূলে রয়েছে মানুষের নতুন বসতি, গৃহায়ণ, নগর পত্তন ইত্যাদি কারণ। উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বছরে প্রায় ৪—৯১০১১ কেজি CO2 গ্রহণ করে এবং প্রায় সম পরিমাণ C2 ত্যাগ করে। আর এ C2 হচ্ছে সকল প্রাণীর শ্বসনকার্য পরিচালনার উপাদান। সুতরাং অত্যধিক জনসংখ্যার
চাপে বন সম্পদ ধ্বংস হলে তা প্রাণীজ পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনবে।
জনসংখ্যা ও শিল্পায়ন জনিত দূষণ
বায়বীয় পরিবেশ দ ষণের প্রধান উপাদান হিসেবে CO2, ঈঋঈং, মিথেন ইত্যাদিকে দায়ী করা হয় এবং এর অধিকাংশ শিল্পোন্নত দেশের উপজাত বলেই বিবেচিত। কিন্তু বর্তমানে জনসংখ্যাবহুল দেশগুলোতে একদিকে যেমন জনসংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডও দ্রুততার সাথে বেড়ে চলেছে। চীন ১২০ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা উৎপাদনকারী, ৬ষ্ঠ তেল উৎপাদনকারী এবং ৪র্থ বিদ্যুত উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিবেচিত। বর্তমানে তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্বির হার শতকরা প্রায় ৮ ভাগ। মুক্ত বাজার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের আওতায় চীনকে তার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বজায় রাখার জন্য অভ্যন্তরীণ শক্তি ঘাটতি মোকাবেলার জন্য আরও কয়লা ও তেল আমদানী করতে হচ্ছে।
১৯৯৩ সালে ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত আবহাওয়ার আঞ্চলিক সম্মেলনে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী চীন ইতোমধ্যেই পৃথিবীর ১১% CO2 উৎপাদনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরেই তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে। এশীয় দেশগুলো ইতোমধ্যে শতকরা ২৫% গ্রীন হাউজ গ্যাস উৎপাদন করে চলেছে যার অর্ধেকই CO2। কিন্তু যে হারে এশিয়ার জনসংখ্যা বাড়ছে এবং শিল্পায়ন ঘটছে তাতে খুব শীঘ্রই এশিয়ান দেশসমূহ আমেরিকা ও ইউরোপীয়দেশসমূহের সম্মিলিত দূষণ মাত্রাকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জনসংখ্যা সমস্যা ও পরিবেশ দূষণের প্রতিকার/সমাধান
মানুষের সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। আর এটি সীমাবদ্ধ স¤žদের যথাযথ ব্যবস্থাপনা দ্বারাই করতে হবে। এই নীতির ভিত্তিতে এবং বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও পরিবেশ দ ষণের ভয়াবহ সমস্যা মোকাবেলার জন্য যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে তার সার সংক্ষেপ নিম্নরূপ ঃ
জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে একটি দক্ষ সার ব্যবস্থাপনা নীতির মাধ্যমে অন্তত শতকরা ২৫ ভাগ নাইট্রাস অক্সাইড জনিত দূষণ মুক্ত করা সম্ভব।
১। কেবল কৌশল উদ্ভাবন দ্বারা জনসংখ্যা ও দ ষণ বিমোচন করা যাবেনা। এ জন্য চাই সর্বাগ্রে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে নৈতিক, অর্থনৈতিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে পূর্ণ সচেতনতা গড়ে তোলা।
২। পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে এবং তা সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখেই করতে হবে।
৩। আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ের নগর পরিকল্পনায় যতটা সম্ভব ‘ওভার ক্রাউডিং’ পরিহার করতে হবে এবং অন্তত মোট এলাকার এক তৃতীয়াংশ স্থান আলো—বাতাস, খেলা—ধুলা বা বিনোদনের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
৪। শিল্পায়নের ক্ষেত্রে সংখ্যাধিক্য অপেক্ষা মানস¤žন্ন উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে এবং আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। অধিক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে কম ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় শিল্প স্থাপন করতে হবে যাতে জনস্বাস্থের জন্য হুমকি হয়ে না দাড়ায়।
৫। উৎপাদিত পণ্যের মাননিয়ন্ত্রণ বোর্ড এবং ভুক্তা সমিতি গঠনের মাধ্যমে বাজার ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রেই উপজাত তৈরির নীতি অনুসরণ করতে হবে। এতে একদিকে দূষণ বিমুক্ত হবে, অপর দিকে বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
৭। কৃষিক্ষেত্রে কার্যকরী ও সময় উপযোগী সার ব্যবহার সম্পর্কে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে একটি দক্ষ সার ব্যবস্থাপনা নীতির মাধ্যমে অন্তত শতকরা ২৫ ভাগ নাইট্রাস অক্সাইড (ঘ২ঙ) জনিত দূষণ মুক্ত করা সম্ভব।
৮। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের ভয়াবহতা ও পরিবেশ দূষণের ব্যাপকতা সম্পর্কে পরিবেশের উপর বিশেষ কোর্স প্রবর্তন করতে হবে।
পানি দূষণ – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশ” বিভাগের ২ নং ইউনিটের ২.৩ নং পাঠ।
পানি দূষণ
জীবনের অপর নাম পানি। ধারণা করা হয় পানি থেকেই জীবনের উৎপত্তি। সুতরাং মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদ অর্থাৎ জীবকূলের সকলের জন্যই পানির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর প্রায় ৭০ ভাগ জায়গা জুড়ে রয়েছে সাগর মহাসাগরের ন্যায় বিশাল জলরাশি। আরও রয়েছে নদী, খাল, বিল, হ্রদ, ডোবা, পুকুর ও ভূগর্ভস্থ পানির উৎস। পানির এ সকল উৎস থেকেই মানুষ তার কল্যাণের জন্য পানিকে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও আজ এ কথা সত্য যে, মানুষ তার অপরিণামদর্শী ক্রিয়া—কর্ম দ্বারা পানির সকল উৎসকেই কলুষিত করে ফেলছে। আর এ দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে নানা প্রকার জটিল আন্ত্রিক রোগ দেখা দিচ্ছে।
পানি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষের কর্মকান্ড দ্বারা সংযুক্তিক বা বাহ্যিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে পানীয় বা অন্যান্য ব্যবহারিক কাজের অযোগ্য হলে বা ব্যবহারে ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে সেই পানিকে দূষিত পানি বলে।যে কোন জলাশয়েরই নিজস্ব প্রক্রিয়ায় সীমিত পরিমাপের বর্জ্য বা আবর্জনা পূণঃপ্রক্রিয়াজাতের (জবপুপষরহম) ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু যদি বর্জ্য ধারণক্ষমতা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায় এবং পানি তার রং, বর্ণ কিংবা স্বাদ ইত্যাদি হারিয়ে ফেলে বা তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয় তবে তাকে পানি দূষণ বলে। অন্য কথায় পানি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষের কর্মকান্ড দ্বারা সংযুক্তিক বা বাহ্যিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে পানীয় বা অন্যান্য ব্যবহারিক কাজের অযোগ্য হলে বা ব্যবহারে ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে সেই পানিকে দূষিত পানি বলে।
পানি দূষণের উৎস :
পানি দূষণের বহুবিধ উপকরণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে নর্দমা বা পয়ঃপ্রণালী বাহিত আবর্জনা, জৈবিক ও অজৈবিক রাসায়নিক দ্রব্যাদি, ক্ষতিকারক অণুজীব, কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক, তৈল জাতীয় পদার্থ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
১। নর্দমা বা পয়ঃপ্রণালীর আবর্জনা :
শহর বা নগরাঞ্চলে পয়ঃপ্রণালীর ময়লা বা আবর্জনা আংশিক পরিশোধিত বা অপরিশোধিত অবস্থায় নদ—নদী, খাল—বিল, হ্রদ, সমুদ্র ও অন্যান্য জলাশয়ে অজৈব পদার্থে রূপান্তরিত হয় এবং পানিকে দূষিত করে।
ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিদিন ৪৯০০০ কি. গ্রাম এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে প্রতিদিন ৪৫০০০ কিলোগ্রাম শিল্প কারখানা বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এর ফলে বুড়িগঙ্গা ও কর্ণফুলী নদীতে অতিমাত্রায় দস্তা, ক্রোমিয়াম, ক্যাডিয়াম এবং আরসেনিকের মতো ভারি ধাতুর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী ও তৎসংলগ্ন সাগরে পানিতে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র বিনষ্ট হচ্ছে।
২। শিল্প কারখানার আবর্জনা :
বিভিন্ন শিল্প কারখানা, যেমনঃ বস্ত, কাগজ ও কাগজের মন্ড, রং, চিনি, সার, লৌহ জাতীয় ধাতব শিল্প, চামড়া ইত্যাদি থেকে নির্গত অপরিশোধিত আবর্জনা নদী, খাল ও অন্যান্য জলাশয়ে নিপতিত হয়ে পানির দষণ ঘটায়। এর ূ সাথে আরও যোগ হয় পেট্টো—কেমিক্যাল কমপ্লেক্স, তেল শোধনাগার, ঔষধ কারখানা, রেয়ন কারখানা ও প্লাষ্টিক কারখানার আবর্জনাসমূহ। এসব আবর্জনায় সায়ানাইড, ফেনল, এ্যামোনিয়া প্রভৃতি বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য বিদ্যমান থাকে। এক সমীক্ষায় প্রকাশ ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিদিন ৪৯০০০ কি. গ্রাম এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে প্রতিদিন ৪৫০০০ কিলোগ্রাম শিল্প কারখানা বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এর ফলে বুড়িগঙ্গা ও কর্ণফুলী নদীতেঅতিমাত্রায় দস্তা, ক্রোমিয়াম, ক্যাডিয়াম এবং আরসেনিকের মতো ভারি ধাতুর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী ও তৎসংলগ্ন সাগরে পানিতে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র বিনষ্ট হচ্ছে।
৩। কৃষি কাজে ব্যবহৃত ঔষধ ও সার :
কৃষি ক্ষেত্রে ফলন বাড়াতে, ঘরবাড়ী ও শিল্প কারখানা থেকে পোকার আক্রমণ কমাতে অত্যধিক সার, কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, ও আগাছা দমনকারী ঔষধ ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ব্যবহৃত এ সকল ঔষধ বৃষ্টি ও অন্যান্য পানির সাথে মিশে নদী বা সাগরের পানিকে দূষিত করছে। এসকল যৌগিক রাসায়নিক দ্রব্যের মধ্যে উউঞ অত্যন্ত শক্তিশালী, স্থায়ী এবং ক্ষতিকর। কারণ উউঞ নিজস্ব কিংবা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভেঙ্গে যায়না বা বিনষ্ট হয় না। ফলে দীর্ঘ দিন ধরে এর প্রতিক্রিয়া বজায় থাকে।
৪। তেজস্ক্রিয় বর্জ্য :
তেজস্ক্রিয় মৌল ব্যবহারজনিত শিল্প ও পারমাণবিক চূল্লী শীতল রাখার জন্য সর্বদা ঠান্ডা পানির প্রবাহ নিশ্চিত রাখা হয়। ব্যবহারান্তে এই পানি উত্তপ্ত অবস্থায় নদী বা অন্য কোনো জলাশয়ে পড়লে পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
৫। তেল জাতীয় দূষণ :
তেলের ট্যাঙ্কার, কলকারখানা থেকে বেড়িয়ে আসা তেল বা অন্য যে কোনো কারণে তেল নিঃসৃত হয়ে পানিতে পড়লে তা দূষিত হয়।
৬। ডিটারজেণ্ট :
বর্তমান যুগে কাপড় ধোয়ার পাউডার সামগ্রী যা ডিটারজেণ্ট নামে পরিচিত, জলজ পরিবেশে মিশ্রিত হয়ে দূষণ ঘটায়।
৭। জলজ উদ্ভিদ :
অনেক সময় জলজ উদ্ভিদ সমূহ পানি দূষণের জন্য দায়ী। এরা পুকুর বা জলাশয়ের ব্যবহার উপযোগিতা কমায়। ফলে অনেক সময় নাব্যতা, মাছ ধরা ও অন্যান্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
পানি দূষণের প্রভাব :
কীটনাশক দ্রব্য খাদ্য—শিকলে প্রবেশ করে মানবদেহে ক্যান্সার,স্নায়ুদ র্বলতা,লিকোমি য়া প্রভৃতি রোগের জন্ম দেয়। অনেক কীটনাশক বিশেষ করে উঞর প্রভাবে ফাইটোপ্ল্যাংটনের সালোকসংশেষণ ক্ষমতা লোপ পায়।
১। নালা:
নর্দমার দূষিত পানি ব্যবহারে কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় ম্যালেরিয়া প্রভৃতি রোগের সৃষ্টি করে। এই পানিতে জৈবিক দ্রব্যের জারণের ফলে প্রচুর H2 ব্যয়িত হয় এবং CO2 এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে পানিতে শৈবাল, অণুজীব ও ফাইটোপ্ল্যাংটনের আধিক্য ঘটে। পানিতে দ্রবীভূত ঙ২ এর স্বল্পতা মাছ, অন্যান্য জলজ প্রাণী ও অনেক উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর।
২। কল কারখানার আবর্জনা:
কল কারখানার আবর্জনায় সায়ানাইড, ফেনল, এ্যামোনিয়া প্রভৃতি বিষাক্ত দ্রব্য থাকায় তা পানির অণুজীব ও অন্যান্য জীবের জন্য ক্ষতিকর। তদুপরি এগুলো খাদ্য—শিকলে প্রবেশ করেজীব দেহে নানাবিধ জটিলতা সৃষ্টি করে। ইলেকট্রোপ্লেটিং কারখানা হতে নির্গত ভারি ধাতু ও সায়ানাইড পানির ক্ষারত্ব ও অম্লত্ব বৃদ্ধি করে। কষ্টিক সোডা ও ক্লোরিন ফ্যাক্টরি হতে নির্গত আবর্জনায় পারদ জাতীয় দ্রব্যের প্রাচুর্য থাকে যা স্থলজ ও জলজ প্রাণীর জন্য হুমকিস্বরূপ।
৩। কীটনাশক দ্রব্য খাদ্য :
শিকলে প্রবেশ করে মানবদেহে ক্যান্সার,স্নায়ু দূর্বলতা, লিউকামিয়া প্রভৃতি রোগের জন্ম দেয়। অনেক কীটনাশক বিশেষ করে উউঞর প্রভাবে ফাইটোপ্ল্যাংটনের সালোকসংশেষণ ক্ষমতা লোপ পায়। বহু জলজ প্রাণীর শুককীট ধ্বংস হয়। এনজাইম প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হবার কারণে পাখির গোনাড বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়। ফলে ডিম্বস্ফুরণে বিলম্ব ঘটে। ডিমের ক্যালসিয়াম আবরণ ক্রমশ পাতলা হয়ে এক সময় ভ্রƒণের বিকাশ বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে পৃথিবী থেকে বহু প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়েছে।
৪। পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রের বর্জ্য:
পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রের বর্জ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়ের জন্যই তেজস্ক্রিয়তাজনিত বিপদ সৃষ্টি করে। তেজস্ক্রিয় পদার্থের অনুপ্রবেশের ফলে শিশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে অনেক মাছের ডিম ফুটে পোনা বের হলেও পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও খাদ্যাভাবে মারা যায়। মাছের প্রজনন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ পায়।
৫। তেল জাতীয় দুষণ:
তেল জাতীয় দুষণের ফলে পানির উপরে তেলের আস্তরণ পরে। আস্তরণের পুরুত্ব অবশ্য নিঃসৃত তেলের মাত্রার উপর নির্ভরশীল। কুয়েত ও ইরাকের যুদ্ধে প্রচুর তেল উপসাগরীয় এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে প্রচুর পাখি, মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এসময়ে ইরাকে বহু বিকলাঙ্গ সন্তানের জন্ম হয়েছে বলেও প্রকাশ।
৬। পানিতে ডিটারজেণ্টের উপস্থিতি:
পানিতে ডিটারজেণ্টের উপস্থিতি অণুজীবের বৃদ্ধি ঘটায় এবং ইউট্রফিকেশন প্রক্রিয়া তরান্বিত করে। পানি দূষণের প্রতিকার
যতদুর সম্ভব সমম্বিত পোকা—মাকড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে গ্যাস ও জৈবিকসার এর ব্যবহার বাড়াতে হবে।
১। স্বাস্থ্য সম্মত পয়ঃপ্রণালী ব্যবহার করতে হবে। জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নর্দমা ও পয়ঃপ্রণালীর আবর্জনাকে জৈবিক সারে রূপান্তর করতে হবে।
২। পানি বিশুদ্ধ রাখতে হলে শিল্প কারখানার আবর্জনাকে যত্রতত্র ফেলা বন্ধ করতে হবে। এগুলো নিজস্ব প্রক্রিয়ায় জৈব নিধনযোগ্য উপাদান অথবা পুনঃপ্রক্রিয়াজাত— করণের (জবপুপষরহম) ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। স্থায়ী/ অক্ষয়ী রাসায়নিক ও কীটনাশকের ব্যবহার যা খাদ্য—শিকলে প্রবেশ করে, নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। যতদ র সম্ভব সমন্বিত পোকামাকড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে গ্যাস ও জৈবিকসার এর ব্যবহার বাড়াতে হবে।
৪। সতর্কতার সাথে তেজস্ক্রিয় পদার্থের অপসারণ করতে হবে এবং এজন্য উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৫। এছাড়া অনেক উদ্ভিদ নিজেরা দূষিত পদার্থ গ্রহণ করে পানিতে দূষণের মাত্রা কমাতে সক্ষম। যেমন ঃ কচুরী পানা পানিতে দ্রবীভূত ধাতুসহ বহু বিষাক্ত পদার্থ নিমূর্ল করতে সক্ষম।
বায়ু দূষণ – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশ” বিভাগের ২ নং ইউনিটের ২.২ নং পাঠ।
বায়ু দূষণ
আমরা যে বায়ুসমুদ্রে ডুবে আছি তার বিস্তৃতি ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে প্রায় ১৬২ কিলোমিটার এবং এতে প্রায় ৫১০১৮ ঘনমিটার বায়ু বর্তমান। উপাদান হিসেবে এই বায়ুতে রয়েছে বিভিন্ন গ্যাসের সংমিশ্রণ। এর মধ্যে শতকরা ২১ ভাগ অক্সিজেন, ৭৮ ভাগ নাইট্রোজেন। অবশিষ্টাংশে রয়েছে ০.০৩৫ বায়ুতে কেবলমাত্র অক্সিজেন ছাড়া অন্য যে কোনো গ্যাসের আধিক্য ঘটলে অথবা বায়ুতে ধুলি, বালু কণার বৃদ্ধি ঘটলে তাকেই বায়ুর দূষণ বলে। ভাগ কার্বন—ডাই—অক্সাইড, কিছু হাইড্রোজেন, সালফার, আর্গন, ওজোন ইত্যাদি গ্যাসের সমাবেশ। বায়ুতে কেবলমাত্র অক্সিজেন ছাড়া অন্য যে কোনো গ্যাসের আধিক্য ঘটলে অথবা বায়ুতে ধূলি, বালু কণার বৃদ্ধি ঘটলে তাকেই বায়ুর দূষণ বলে।
বায়ু দূষণের উৎস বায়ুর দূষণ প্রধানত মানবসৃষ্ট। বায়ুতে দূষণ সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে কার্বন—ডাই—অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার—ডাই—অক্সাইড, হাইড্রোকার্বন এবং কণাযুক্ত পদার্থসমূহ। বায়ুমন্ডলে বর্ধিত CO2—এর মুল কারণ ব্যাপকহারে জীবাশ্ম জ্বালানির দহন। এছাড়া আগ্নেয়গিরির অগন্যুৎপাত, জীবদেহের পচন, অগ্নিকান্ড, বৃক্ষনিধন ও জ্বালানি, প্রাণীর শ্বাস—প্রশ্বাস প্রভৃতি উৎস থেকে বায়ুতে প্রচুর CO2 জমা হচ্ছে।
১। কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) :
বায়ু দূষণের প্রধান উৎসই হচ্ছে কার্বন—ডাই—অক্সাইড (CO2)। লক্ষ লক্ষ বর্ষব্যাপি বায়ুমন্ডলে CO2—এর পরিমাণ শতকরা ০.০৩ ভাগ বা ৩০০ পি.পি.এম.—এ স্থিতাবস্থায় ছিল। কিন্তু শিল্প বিপ্লবের পর থেকে ক্রমান্বয়ে তা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৩৫০ পি.পি.এম. ছাড়িয়ে গেছে। বায়ুমন্ডলে বর্ধিত CO2—এর মূল কারণ ব্যাপকহারে জীবাশ্ম জ্বালানির দহন। এছাড়া আগ্নেয়গিরির অগন্যুৎপাত, জীবদেহের পচন, অগ্নিকান্ড, বৃক্ষনিধন ও জ্বালানি, প্রাণীর শ্বাস—প্রশ্বাস প্রভৃতি উৎস থেকে বায়ুতে প্রচুর CO2 জমা হচ্ছে।
২। কার্বন মনোক্সাইড (CO) :
বায়ু দষণের প্রায় ১০ূ —১৫% সৃষ্টি হয়ে থাকে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস দিয়ে। কয়লা ও খনিজ তেলজাতীয় জ্বালানীসমূহের পূর্ণ বা অপূর্ণ দহনের ফলে অথবা শিল্প—কারখানা ও মোটরযান হতে নির্গত ধেঁায়া থেকে CO নির্গত হয়। এক হিসেবে দেখা গেছে, কেবল আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র থেকেই বছরে ৬৫ মিলিয়ন টন CO গ্যাস উৎপন্ন হয়।
৩। সালফার ডাই অক্সাইড (SO2) :
সালফার ডাই—অক্স্রাইড (SO2) বায়ু দূষণের অন্যতম বৃহত্তম এই গ্যাসের সাথে সীসা, তামা, ি জঙ্ক, ক্যালসিয়াম, লৌহ, প্রভৃতি ভারি ধাতু ও CO, ঐ২ঝ, ঐঈষ, ঘঙ, হাইড্রোকার্বন, ৩, ৪ বেনজোপাইরিন প্রভৃতি গ্যাসীয় পদার্থ মিশ্রিত থেকে ধেঁায়ার সৃষ্টি করে। উপাদান। এর প্রধান উৎস শিল্প—কারখানা ও শক্তি উৎপাদক কেন্দ্রে ব্যবহৃত সালফার সংযুক্ত কয়লা ও পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের দহন। এই গ্যাসের সাথে সীসা, তামা, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, লৌহ, প্রভৃতি ভারি ধাতু ও CO, ঐ২ঝ, ঐঈষ, ঘঙ, হাইড্রোকার্বন, ৩, ৪ বেনজোপাইরিন প্রভৃতি গ্যাসীয় পদার্থ মিশ্রিত থেকে ধেঁায়ার সৃষ্টি করে। কল—কারখানার আধিক্যহেতু গ্রামাঞ্চল অপেক্ষা শহরাঞ্চলের বায়ুতে এ ধরনের দুষণের মাত্রা অধিক।
৪। বালি ও ধূলিকণা :
কোনো কোনো শিল্প—কারখানা (পাটকল, চাউল—আটার কল, কাগজকল, সুতাকল ইত্যাদি), শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র, আবর্জনা মুক্ত করার কেন্দ্র, ইটের ভাটা ইত্যাদি স্থান থেকে বেরিয়ে আসা ধুলো ও বালিকণা বায়ুতে মিশ্রিত হয়ে দূষণ ঘটায়। ৫। ধাতব কণা ঃ টিন, নিকেল, দস্তা, ক্যাডিয়াম, ভ্যানাডিয়াম, আর্সেনিক ইত্যাদি ধাতুর কণা বা
গ্যাস বিভিন্ন শিল্পের রাসায়নিক উপজাত থেকে সৃষ্ট হয়ে বায়ুতে মিশে যায় ও দষণ ঘটায়।ূ
৬। এরোসোলস :
এরোসলসজাতীয় সামগ্রী থেকে সাধারণত কঠিন ও তরল উভয়বিধ উপাদানই বায়ুতে ভাসমান থাকে। এ সকল দ্রব্যে জিঙ্ক, দস্তা, তামা, লোহা, ইত্যাদি গঠিত বিষাক্ত যৌগিক উপাদান বিদ্যমান থাকায় তা বায়ুতে দূষণ ঘটায়। এসব দ্রব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রসাধন সামগ্রী, কীট ও জীবাণুনাশক, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ঈঋঈং বা ক্লোরো— ফ্লোরো—কার্বন ইত্যাদি।
৭। জৈবিক দূষণ :
প্রকৃতিতে অনেক জৈবিক উপাদান রয়েছে যাদের উপস্থিতির কারণে বায়ু দূষিত হয়, যেমনঃ ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের রেণু , পরাগরেণু ইত্যাদি। বায়ু দূষণের পরিধি বা বিস্তৃতি যেহেতু বায়ু প্রায়ই স্থিতাবস্থায় থাকে না সে কারণে বায়ুর দূষণ ও স্থিতাবস্থায় বিরাজ করে না। দূষণের বিস্তৃতি সাধারণভাবে আবহাওয়ার অবস্থা, বায়ুর গতিবেগ, দূষণ উপাদানের রাসায়নিক দৃঢ়তা (স্থিতাবস্থা) এবং তাদের অণুর আকৃতির উপর নির্ভরশীল।
বায়ু দূষণের সর্বোচ্চ মাত্রা সাধারণভাবে দূষণের উৎস এলাকায় দেখা যায় এবং এটি ঘটে সাধারণভাবে রাত্রিকালীন সময়ে যখন ভূমিসংলগ্ন বায়ু ঊর্ধ্বাকাশের বায়ু অপেক্ষা শীতলতর থাকে। কিন্তু নগরীর ধেঁায়া, শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র এবং ইটের ভাটা থেকে উত্থিত সালফার—ডাই—অক্সাইড গ্যাস, হাইড্রোকার্বন থেকে সৃষ্ট ওজোন ও নগরীর ধেঁায়া থেকে নিঃসৃত নাইট্রোজেন অক্সাইড উৎসস্থল থেকে শত শত কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে বায়ু দূষণের কারণ হতে দেখা যায়।
বায়ু দূষণের প্রভাব :
স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বায়ু দূষণীয় পদার্থ সে এলাকার মেঘ, বৃষ্টিপাত, তাপ প্রবাহ ইত্যাদিতে পরিবর্তন ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এটি সর্বজন স্বীকৃত যে, নগর উৎস থেকে নিঃসৃত অনেক বায়বীয় দূষণবস্তু নগরীর বায়ু কয়েক ডিগ্রি সেলসিয়াম পর্যন্ত উত্তপ্তকরণে সক্ষম এবং নগরকেন্দ্রিক এ ধরনের উত্তাপ পার্শ¦বর্তী বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
মানব দেহের ওপর ধাতব বস্তুর প্রভাব বায়ুমন্ডলে উপস্থিত বিভিন্ন ধাতুসমূহের কণা মানবদেহে রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। ভারি ধাতব কণা এজমা, কাশি, ফুসফূস এবং গলার অন্যান্য রোগের জন্য দায়ী। বায়ুমন্ডলে উপস্থিত বিভিন্ন ধাতুসমূহের কণা মানবদেহে রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। ভারি ধাতব কণা এজমা, কাশি, ফুসফূস এবং গলার অন্যান্য রোগের জন্য দায়ী। সীসা বয়ষ্ক মানুষের স্বাভাবিক কার্যাবলীর ব্যাঘাত ঘটায় এবং মস্তিষ্ক বিকল করে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। ক্যাডিয়াম উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
গ্যাসীয় পদার্থের প্রভাব মানুষ ও প্রাণীর জন্য CO2 একটি শ্বাসরোধী গ্যাস। বায়ুমন্ডলে CO2 এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। ফলে জলবায়ুতে ঘটাবে ব্যাপক পরিবর্তন। মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে। তলিয়ে যাবে পৃথিবীর বহু নিম্নাঞ্চল। বায়ুতে CO এর আধিক্য এবং নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ রক্তের অক্সিজেন বহন ক্ষমতা হ্রাস করে। ফলে মাথাধরা. দৃষ্টিহীনতা, এবং তলপেটে ব্যাথা অনুভূত হয়।
বায়ুতে SO2 এর আধিক্য হাপানী, ব্রংকাইটিস, প্রভৃতি ফুসফুস সংক্রান্ত রোগের জন্ম দেয়। বাতাসে বেনজোপাইরিন হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতি ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। বায়ুর জৈবিক উপাদানঘটিত দূষণ, যথাঃ ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, পরাগরেণু ইত্যাদি এ্যালার্জিজনিত রোগের (যেমনঃ হাপানী, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি) অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত।
এসিড বৃষ্টি :
বিভিন্ন অক্সাইড বিশেষ করে নাইট্রোজেন ও সালফারজাতীয় অক্সাইডের গ্যাস বৃষ্টির পানির সাথে মিলিত হয়ে নাইট্রিক ও সালফিউরিক এসিডে পরিণত হয় যা ‘এসিড বৃষ্টি’ নামে পরিচিত। এসিড বৃষ্টি মাটি ও পানির চঐ হ্রাস করে। ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকা উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এসিড বৃষ্টির ফলে মাছের মড়ক দেখা দেয় এবং প্রজনন প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। বর্তমান পৃথিবীতে শিল্পোন্নত দেশে এসিড বৃষ্টি একটি প্রকট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ভারতের মথুরায় অবস্থিত শিল্প—কারখানা থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন গ্যাস ও এসিড বৃষ্টির কারণে আগ্রার তাজমহল তার উজ্জ্বলতা হারাচ্ছে।
উদ্ভিদের ওপর বায়ু দূষণের প্রভাব :
বায়বীয় দূষণ সবুজ উদ্ভিদ ও শস্য উৎপাদনের জন্যও ক্ষতিকর। নরম পাতাযুক্ত উদ্ভিদ, যেমনঃ মূলা, গাজর, লেটুস এবং বিভিন্ন বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদের উৎপাদনশীলতা দূষিত বায়ুর কারণে ব্যাহত হয়। বাতাসে খনিজ দ্রব্যের ধুলোবালি আধিক্য হলে উদ্ভিদের জৈবিক ক্রিয়া—কর্মে ব্যাঘাত ঘটে। নাইট্রোজেন অক্সাইডের প্রতিক্রিয়ায় উদ্ভিদের পত্রঝরা, ক্লোরোসিস, ছিট—পড়া পাতার ডগা ও কিনারায় পুড়ে যাওয়া প্রভৃতি উপসর্গ দেখা যায়। দূষিত পদার্থের কণা নিকটবর্তী উদ্ভিদের পাতায় পড়ে পত্ররন্ধ্র বন্ধের কারণ ঘটায়। ফলে গ্যাসীয় আদান—প্রদান (এধং বীপযধহমব), পানি ধারণ ক্ষমতা ও অন্যান্য শারীরবৃত্তিয় কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ কারণেই শিল্প কারখানার নিকটবর্তী স্থানে গাছের পাতা ঝরা, ডগা শুকিয়ে যাওয়া, পাতা ও ফলের ক্ষত সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি অসুবিধা দেখা যায়।
বাতাসে SO2 এর আধিক্য ঘটলে আঙ্গুরজাতীয় উদ্ভিদ, তুলা ও আতা ফলের পাতা হলুদ হয়ে যায়। ফলে উৎপাদন ক্ষমতা ব্যাহত হয়। স¦ল্প মাত্রার ওজোন (০.০২— ৫০ পিপিএম) তামাক, টমেটো, সীম, পাইন ইত্যাদি গাছের ক্ষতি সাধন করে।
বায়ু দূষণের প্রতিকার:
ক্ষুদ্র কণাজাতীয় দূষক ও বিভিন্ন ক্ষতিকারক গ্যাসের প্রভাব থেকে বায়ুমন্ডলকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য বর্তমানে বিভিন্ন পদ্ধতির উদ্ভাবন হয়েছে। এগুলোর মধ্যে —
নির্গমনের পূর্বে দূষিত বায়ুকে সিŽছদ্র প্রকোষ্ঠের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত করে বিষাক্ত ক্ষুদ্র কণা পৃথককরণ।
দষিত বায়ুকে পানির টাওয়ারের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত করে দ্রবণীয় দূ ষিত পদার্থ পৃথককরণ।
থলি ছাঁকনার মাধ্যমে বায়ুস্থ ধূলিকণা পরিশোধন করা।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইলেকট্রোস্টাটিক ঝরণার মাধ্যমে।
ধেঁায়া জাতীয় দূষণের পাতন ঘটানো ইত্যাদি উলেখযোগ্য। এগুলো ছাড়াও অতিরিক্ত সতর্কতামুলক ব্যবস্থা হিসেবে যতদূর সম্ভব কয়লা, পেট্রোলিয়াম প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জলবিদ্যুৎ, বায়ুকল (ডরহফ সরষষ),
সৌরশক্তি ইত্যাদির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
কৃষি, কৃষি শিক্ষা, কৃষি প্রশিক্ষণ, কৃষি শিল্প, কৃষি গবেষণা