বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় কৃষি পণ্যের উৎপাদনের পরিমাণ

বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় কৃষি পণ্যের উৎপাদনের পরিমাণ – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশের উপাদান” বিষয়ের ইউনিট ৩ এর ৩.৫ নং পাঠ।

 

বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় কৃষি পণ্যের উৎপাদনের পরিমাণ

 

বাংলাদেশে কৃষি পণ্যের উৎপাদন প্রয়োজনের তুলনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কম। পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের হার বাড়ানো প্রয়োজন। আর সেজন্য প্রয়োজন উন্নত প্রযুক্তি ও সময় মত কৃষকের নিকট লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর।

কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি যোগ হতে থাকলে কম সময়ে স্বল্প পরিসর আবাদী জমিতে অধিক ফসল ফলিয়ে অধিক পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের হার বাড়ানো প্রয়োজন। আর সেজন্য প্রয়োজন উন্নত প্রযুক্তি ও সময় মত কৃষকের নিকট লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর। উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষ ও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে বিগত কয়েক বৎসরে অধিকাংশ ফসলেরই উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির দিক বিবেচনায় আনলে কৃষি পণ্যের উৎপাদন সে তুলনায় বাড়েনি, তাই এ ঘাটতি পূরণের জন্য অধিকাংশ কৃষি পণ্যই আমাদের বিদেশ হতে আমাদানি করতে হয়।

প্রয়োজনের তুলনায় আমরা কী পরিমাণ কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন করি এবং কতটুকু ঘাটতি বা উদ্বৃত্ত্ব তার পরিসংখ্যান নিম্নে (ছক — ১) দেয়া হলো:
ছক — ১ ঃ কৃষি পণ্যের প্রয়োজন, উৎপাদন ও ঘাটতি বা উদ্বৃত্ত্বের পরিমাণ (১৯৯২—৯৩) [‘০০০’ কেজি]

উপরের ছক হতে দেখা যায় বাংলাদেশে ধান উৎপন্ন হয় ১৮৩.৪১ লক্ষ টন এবং প্রয়োজন ১৮৩.৭১ লক্ষ টন। এ হিসেবে ঘাটতির পরিমাণ ৩০ হাজার টন। তবে খাদ্য হিসেবে ধানের (চাল) পরিবর্তে আমরা বেশি করে গম আমদানি করে থাকি। দেশে বর্তমানে ১১.৭৬ লক্ষ টন গম উৎপন্ন হয় এবং বিদেশ হতে আমদানি করা হয় ১০.৩৩ লক্ষ টন যা মোট প্রয়োজনের ৪৭ শতাংশ। দেশে গমের মোট প্রয়োজন ২২.০৯ লক্ষ টন। দেশে চিনির প্রয়োজন প্রায় ৮.২৪ লক্ষ টন এবং উৎপন্ন হয় প্রায় ৭.৫১ লক্ষ টন। প্রয়োজনীয় বাকী ৭৩ হাজার টন চিনি বিদেশ হতে আমদানি করে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে হয় অর্থাৎ চাহিদার প্রায় ৮১ শতাংশ চিনি আমরা উৎপন্ন করি।

দেশে ডালের উৎপাদন ৫.১৯ লক্ষ টন অথচ আমাদের প্রয়োজন ৫.৭৬ লক্ষ টন। বর্তমানে দেশে ডালের ঘাটতি ৫৭ হাজার টন। এ ঘাটতি মোট প্রয়োজনের ১০ শতাংশ। তৈল বীজ হতে আমরা যে তৈল পাই (তৈল বীজে ৩৩% তৈল ধরে হিসেবে করা হয়েছে) এর পরিমাণ প্রায় ১.৫৩ লক্ষ টন। কিন্তু আমাদের প্রয়োজন এর চেয়ে অনেক বেশি অর্থাৎ প্রায় ৪.১২ লক্ষ টন।

তৈলের ঘাটতি ২.৫৯ লক্ষ টন যা আমরা বিদেশ হতে আমদানি করে থাকি এবং এর পরিমাণ প্রয়োজনের প্রায় ৬৩ শতাংশ। আমাদের প্রয়োজনীয় কৃষি পণ্যের মধ্যে তৈলের ঘাটতিই সবচেয়ে বেশি। মশলা, গোল আলু, শাকসব্জি ইত্যাদির প্রয়োজন যথাক্রমে ৩.১২, ১৩.৮৫ এবং ১২.৬২ লক্ষ টন এবং আমাদের দেশে এদের উৎপাদনের পরিমাণ যথাক্রমে ৩.০২, ১৩.৮৪ এবং ১১.৯৮ লক্ষ টন। যে সকল কৃষি পণ্য উৎপাদনে ঘাটতি আছে সেগুলো আমদানি করে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে হয়। প্রয়োজনের তুলনায় বিভিন্ন কৃষি পণ্যের ঘাটতির পরিমাণ শতকরা ০.০৫৬২.৯৮ ভাগ।

আমাদের সব কৃষি পণ্যেরই যে উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে তা নয় বরং কোন কোন পণ্য আমরা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি উৎপন্ন করে থাকি। এ ক্ষেত্রে চা, পাট এবং তামাকের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে । চায়ের বাৎসরিক উৎপাদন ৫০.৮ হাজার টন। এ উৎপাদন থেকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে আমরা ২৯.৬২ হজার টন বিদেশে রপ্তানি করে থাকি যা মোট উৎপাদনের ৫৮.৩ শতাংশ। দেশে পাটের মোট উৎপাদন প্রায় ৯.১৮ লক্ষ টন এবং এখান হতে প্রায় ৪.৩৩ টন বিদেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে এবং এটা মোট উৎপাদনের ৪৭.১৭ শতাংশ। বর্তমানে দেশে প্রয়োজনের চেয়ে ১ হাজার টন বেশি তামাক উৎপন্ন হয়।

তামাকের মোট উৎপাদন ৩৬.০০ হাজার টন এবং প্রয়োজন ৩৪.৯২ হাজার টন। উৎপাদিত অতিরিক্ত এক হাজার টন তামাক আমরা বিদেশে রপ্তানি করে থাকি যা মোট উৎপাদনের তিন শতাংশ। উৎপাদিত কৃষি পণ্যের মধ্যে শতকরা হিসেবে চা—ই আমরা বেশি রপ্তানি করে থাকি। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে চা, পাট ও তামাকের ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত্বের পরিমাণ যথাক্রমে ৫৮.৩, ৪৭.২ এবং ৩ শতাংশ ।

 

By একাডেমিক ডেস্ক, কৃষি গুরুকুল

কৃষি গুরুকুলের একাডেমিক ডেস্ক

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version