Category Archives: আপডেট

“আপডেট” সেকশনে কৃষি খাতের সাম্প্রতিক খবর, গবেষণা, প্রযুক্তি, বাজারদর ও নীতি পরিবর্তনের নির্ভরযোগ্য তথ্য নিয়মিত প্রকাশিত হবে।

বারমুডা ঘাস (Cynodon dactylon)

বারমুডা ঘাস (Cynodon dactylon) একটি উষ্ণ মৌসুমি, বহুবর্ষজীবী, স্থলভাগে দ্রুত বিস্তারকারী ঘাস, যা লন, ক্রীড়াক্ষেত্র, গলফ কোর্স, পার্ক, রাস্তার ডিভাইডার, নদীর পাড় ইত্যাদি সবুজায়নে বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ঘাসটি খরা সহ্যশীলতা, দ্রুত পুনরুদ্ধার ক্ষমতা এবং মাটিকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার ক্ষমতার জন্য পরিচিত।

বারমুডা ঘাস (Cynodon dactylon)

বারমুডা ঘাসের বৈজ্ঞানিক তথ্য

বিষয় তথ্য
বাংলা নাম বারমুডা ঘাস
ইংরেজি নাম Bermuda Grass, Couch Grass
বৈজ্ঞানিক নাম Cynodon dactylon
পরিবার Poaceae
উৎপত্তি অঞ্চল আফ্রিকা, ভারতীয় উপমহাদেশ
প্রজাতির ধরন বহুবর্ষজীবী (Perennial)
বৃদ্ধির ধরণ স্টোলন (Stolons) ও রাইজোম (Rhizomes) মাধ্যমে বিস্তার
শিকড়ের গভীরতা সর্বোচ্চ ২ মিটার পর্যন্ত
উচ্চতা সাধারণত ৫–১৫ সেমি (লনে), প্রাকৃতিকভাবে ৩০ সেমি পর্যন্ত
পাতার রঙ উজ্জ্বল সবুজ, শীতে হালকা বাদামী

 

বারমুডা ঘাসের ইতিহাস বিস্তার

  • বারমুডা ঘাসের উৎপত্তি আফ্রিকা ভারতীয় উপমহাদেশে, কিন্তু বর্তমানে এটি বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে বিস্তৃত।
  • এর নাম “Bermuda Grass” এসেছে কারণ ১৭শ শতকে আফ্রিকা থেকে বারমুডা দ্বীপে এটি ছড়ায় এবং সেখান থেকে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে যায়।
  • আন্তর্জাতিকভাবে এটি খেলাধুলার মাঠের স্ট্যান্ডার্ড গ্রাস হিসেবে স্বীকৃত।

 

বারমুডা ঘাসের বৃদ্ধি পরিবেশগত প্রয়োজন

বিষয় আদর্শ মান
আবহাওয়া উষ্ণ ও রৌদ্রোজ্জ্বল (Tropical & Subtropical)
তাপমাত্রা ২৪°C – ৩৭°C (১৮°C এর নিচে বৃদ্ধি ধীর হয়ে যায়)
সূর্যালোক পূর্ণ সূর্য, প্রতিদিন অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা
মাটি বেলে দোআঁশ, দোআঁশ, বা হালকা কাঁদামাটি
pH মাত্রা ৫.৮ – ৭.০
পানি প্রয়োজন মাঝারি (প্রথম মাসে বেশি, পরে খরা সহ্য করে)

 

বারমুডা ঘাসের প্রধান জাত বৈশিষ্ট্য

জাতের নাম বৈশিষ্ট্য ব্যবহার
Common Bermuda দ্রুত বৃদ্ধি, হালকা সবুজ সাধারণ লন, রাস্তার পাশে
Hybrid Bermuda (Tifway, Tifgreen) ঘন ও মজবুত, গভীর সবুজ গলফ কোর্স, ক্রিকেট মাঠ
Celebration Bermuda ঠান্ডা সহ্যশীল, নরম পাতা ল্যান্ডস্কেপিং, পার্ক
Princess 77 সূক্ষ্ম পাতা, গাঢ় রঙ বিলাসবহুল লন, হোটেল গার্ডেন

 

বারমুডা ঘাসের রোপণ পদ্ধতি

. বীজ থেকে
  • প্রতি ৩০–৪০ বর্গমিটারে কেজি বীজ প্রয়োজন।
  • মাটি সমান ও নরম করে বপন।
  • বপনের পর হালকা রোলিং ও পানি।
. সড/টার্ফ
  • প্রস্তুত টার্ফ কিনে বিছানো।
  • তাৎক্ষণিক সবুজায়ন সম্ভব।
. রানার/স্টোলন
  • দ্রুত বিস্তারের জন্য রানার লাগানো।
  • ১৫–২০ সেমি ব্যবধানে বসানো।

 

বারমুডা ঘাসের রক্ষণাবেক্ষণ সূচি

মাস করণীয়
জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারি ঘাস কেটে শুকনো অংশ অপসারণ
মার্চ–এপ্রিল নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ
মে–জুলাই সেচ ও আগাছা নিয়ন্ত্রণ
আগস্ট–সেপ্টেম্বর পুনঃসার প্রয়োগ
অক্টোবর–ডিসেম্বর কাটা কমানো, শীতের প্রস্তুতি

 

রোগ পোকামাকড় প্রতিরোধ
  • Dollar Spot – ফাঙ্গাসনাশক প্রয়োগ।
  • Armyworms – কীটনাশক ব্যবহার।
  • Mole Crickets – মাটির নিচে কীট নিয়ন্ত্রণ।
  • Weed Control – ঘন লাগানো হলে আগাছা কম হয়।

 

বারমুডা ঘাসের সুবিধা – অসুবিধা

সুবিধা

✅ দ্রুত বিস্তার ও পুনরুদ্ধার ক্ষমতা
✅ খরা ও উচ্চ তাপমাত্রা সহ্যশীল
✅ মাটি ক্ষয় রোধ করে
✅ উচ্চ ট্রাফিক ও চাপ সহ্য করে
✅ কম সময়ে সবুজায়ন সম্ভব

অসুবিধা

❌ ছায়ায় ভালো হয় না
❌ শীতে বাদামী হয়ে যায়
❌ আক্রমণাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ে (কন্ট্রোল দরকার)

 

বাংলাদেশে বারমুডা ঘাসের ব্যবহার সম্ভাবনা

  • শহুরে ল্যান্ডস্কেপিং – পার্ক, হোটেল, অফিস কমপ্লেক্স।
  • ক্রীড়াক্ষেত্র – ফুটবল, ক্রিকেট, গলফ।
  • মাটি ক্ষয় রোধ – নদীর পাড়, ঢালু জমি।
  • রাস্তার ডিভাইডার – কম রক্ষণাবেক্ষণে সবুজ রাখা।

 

বারমুডা ঘাসের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

  • টার্ফ উৎপাদন ব্যবসা – নার্সারি ও ল্যান্ডস্কেপিং কোম্পানির জন্য লাভজনক।
  • রপ্তানি সম্ভাবনা – হাইব্রিড সড বিদেশে রপ্তানি সম্ভব।
  • পশুখাদ্য – কিছু অঞ্চলে চারণভূমির ঘাস হিসেবে।

 

বারমুডা ঘাস

 

বাংলাদেশে বারমুডা ঘাসের বীজ সংগ্রহের উপায়

বাংলাদেশে বারমুডা ঘাসের বীজ সংগ্রহ তুলনামূলকভাবে কিছুটা চ্যালেঞ্জিং, কারণ এখানে এটি প্রধানত টার্ফ (Sod) বা রানার আকারে চাষ ও বাজারজাত করা হয়, বীজ আকারে খুব বেশি পাওয়া যায় না। তবে কিছু নির্ভরযোগ্য উৎস ও পদ্ধতি আছে—

. স্থানীয় নার্সারি টার্ফ সরবরাহকারী
  • ঢাকার সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও খুলনায় অনেক নার্সারি হাইব্রিড বারমুডা রানার সড বিক্রি করে।
  • কিছু উন্নত নার্সারি (যেমন কুড়িল, মিরপুর, টঙ্গী, সাভার অঞ্চলের) আগাম অর্ডারে বারমুডা বীজ সরবরাহ করতে পারে।
  • উদাহরণ: BRAC Nursery, Department of Agricultural Extension (DAE) nurseries
. কৃষি গবেষণা কেন্দ্র
  • বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI) মাঝে মাঝে বারমুডা ঘাসের গবেষণা করে এবং প্রজেক্ট পর্যায়ে বীজ সরবরাহ করে।
  • এদের মাধ্যমে গবেষণা প্রকল্প বা কৃষি প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে বীজ পাওয়া সম্ভব।
. অনলাইন এগ্রি স্টোর
  • কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমন Daraz, Oikko.com.bd, Agrobd.com ইত্যাদিতে বিদেশি বারমুডা ঘাসের বীজ পাওয়া যায়।
  • বীজ কেনার সময় নিশ্চিত হতে হবে যে এটি কোটেড (Coated) বা আনকোটেড (Uncoated) এবং হাইব্রিড জাত উপযুক্ত কি না।
. আন্তর্জাতিক উৎস থেকে আমদানি
  • ভারত, চীন, থাইল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া থেকে Princess 77, Tifway, Tifgreen জাতের বারমুডা ঘাসের বীজ আমদানি করা যায়।
  • বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করতে প্লান্ট কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেটপরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন।
. নিজের মাঠ বা লন থেকে সংগ্রহ
  • যদি আগে থেকে বারমুডা ঘাস থাকে, তবে ফুল ও বীজ উৎপাদন মৌসুমে (গ্রীষ্মের শেষে) কিছু অংশ অযত্নে বেড়ে উঠতে দিয়ে বীজ সংগ্রহ করা যায়।
  • বীজ সংগ্রহের ধাপ:
    1. ঘাস ফুল ফোটানো পর্যন্ত কাটবেন না
    2. ফুল শুকিয়ে গেলে কেটে রোদে শুকাতে হবে
    3. শুকনো ফুল থেকে বীজ আলাদা করে বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ
. সতর্কতা
  • বিদেশি বীজ কেনার সময় গ্রীষ্মকালীন জাত কিনতে হবে, শীতপ্রধান দেশের বারমুডা ঘাস বাংলাদেশে টিকবে না।
  • নকল বীজ এড়াতে শুধুমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডিলারের কাছ থেকে কিনুন।
  • শতভাগ খাঁটি জাত কিনতে হলে প্যাকেটের Germination Rate (অঙ্কুরোদ্গম হার) ৮৫% বা তার বেশি হতে হবে।

বাংলাদেশে ল্যান্ডস্কেপিংয়ে ব্যবহৃত জনপ্রিয় ঘাসের প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য

ল্যান্ডস্কেপিং ঘাস শুধু দৃশ্যমান সৌন্দর্য বাড়ায় না, বরং ভূমি সংরক্ষণ, ধুলাবালি প্রতিরোধ ও পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে আবহাওয়ার ধরন অনুযায়ী বেশ কিছু ঘাস বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রজাতিগুলোর বাংলা ও ইংরেজি নাম এবং তাদের বৈশিষ্ট্য নিচে তুলে ধরা হলো:

বাংলাদেশে ল্যান্ডস্কেপিংয়ে ব্যবহৃত জনপ্রিয় ঘাসের প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য

 

ন্যাপিয়ার ঘাস

 

বিভিন্ন প্রকার ঘাসের বৈশিষ্ট্য, ব্যবহার, মাটি, জলবায়ু পরিচর্যা নির্দেশিকা:

ক্র. ঘাসের নাম বৈজ্ঞানিক নাম উৎপত্তি অঞ্চল বৈশিষ্ট্য ব্যবহার বিশেষ গুণ উপযোগী মাটি প্রয়োজনীয় জলবায়ু পরিচর্যা নির্দেশিকা
বারমুডা ঘাস (Bermuda Grass) Cynodon dactylon আফ্রিকা দ্রুত বেড়ে ওঠে, ঘন ও মজবুত কাঠামোযুক্ত পার্ক, ক্রীড়াক্ষেত্র, গলফ কোর্স, বাড়ির লন খরা-প্রতিরোধী, সূর্যালোকপ্রিয়, দ্রুত পুনরুদ্ধার ক্ষমতা বেলে-দোআঁশ মাটি, ভালো নিষ্কাশন ব্যবস্থা উষ্ণ ও রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া নিয়মিত ঘাস কাটা, মাঝারি পানি, বছরে ২-৩ বার সার প্রয়োগ
বাফেলো ঘাস (Buffalo Grass) Buchloe dactyloides উত্তর আমেরিকা কম উচ্চতা ও ধীরে বৃদ্ধি পাওয়া, কম রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন জলস্বল্পতাপূর্ণ অঞ্চল, পরিবেশবান্ধব ল্যান্ডস্কেপ, গ্রিন কভার খরা সহ্যশক্তি অত্যন্ত বেশি, সার ও পানির প্রয়োজন কম দোআঁশ ও বেলে মাটি, সামান্য ক্ষারযুক্ত মাটি শুষ্ক ও আধা-শুষ্ক জলবায়ু বছরে ১-২ বার কাটা, কম পানি, কম সার প্রয়োগ
জয়সিয়া ঘাস (Zoysia Grass) Zoysia japonica দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নরম, ঘন ও ধীরগতিতে বৃদ্ধি সৌন্দর্যবর্ধক লন, বাগানপথ, রিসোর্ট চত্বর খরা সহ্য করে, সূর্য ও ছায়া উভয় অবস্থায় মানিয়ে নেয় দোআঁশ ও পলিমাটি, আংশিক ছায়াযুক্ত স্থান উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় ও উষ্ণমণ্ডলীয় জলবায়ু ধীর বৃদ্ধি হওয়ায় কম ঘন ঘন কাটা লাগে, মাঝারি পানি ও সার প্রয়োগ
কার্পেট ঘাস (Carpet Grass) Axonopus compressus মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা ঘন ও মাটির ওপর গালিচার মতো বিস্তার লাভ করে রাস্তার পাশে, বড় খোলা জায়গা, জলাভূমি সংলগ্ন এলাকা ছায়া ও আর্দ্রতা সহ্য করে, দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আর্দ্র দোআঁশ মাটি, সামান্য অম্লীয় মাটি আর্দ্র ও উষ্ণ জলবায়ু আর্দ্রতা বজায় রাখা, বেশি কাটা দরকার নেই, মাঝে মাঝে সার প্রয়োগ
সেন্ট অগাস্টিন ঘাস (St. Augustine Grass) Stenotaphrum secundatum ক্যারিবিয়ান ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল পুরু ও বিস্তৃত পাতা, নরম কিন্তু দৃঢ় গঠন উপকূলীয় অঞ্চল, আবাসিক ও বাণিজ্যিক লন লবণাক্ততা ও আর্দ্রতা সহ্যশীল, ছায়ায় ভালো জন্মায় আর্দ্র দোআঁশ বা বেলে মাটি উপকূলীয় ও আর্দ্র উষ্ণ জলবায়ু নিয়মিত পানি দেয়া, বছরে ৩-৪ বার সার প্রয়োগ, ঘন ঘন কাটা দরকার
কিকুয়ু ঘাস (Kikuyu Grass) Pennisetum clandestinum পূর্ব আফ্রিকা (কেনিয়া) খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে, আক্রমণাত্মক প্রকৃতি বড় মাঠ, পার্ক, ভূমি ক্ষয় প্রতিরোধ মাটি ধরে রাখে, উচ্চ ট্রাফিক সহ্য করে, স্বল্প পানিতেই টিকে থাকে বেলে-দোআঁশ ও উর্বর মাটি উষ্ণ ও শুষ্ক থেকে আর্দ্র সব ধরনের জলবায়ু ঘন ঘন কাটা প্রয়োজন, আক্রমণাত্মক বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি
ফেসকিউ ঘাস (Fescue Grass) Festuca arundinacea ইউরোপ ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য উপযুক্ত, কিছু জাত আংশিক ছায়া ও খারাপ মাটিতে জন্মায় পাহাড়ি অঞ্চল, ছায়াযুক্ত লন, বাগান, ঢালু জায়গা ঠান্ডা সহ্য করে, সারবিহীন বা অনুৎপাদনশীল মাটিতেও জন্মায় দোআঁশ ও কাদামাটি নাতিশীতোষ্ণ ও শীতল জলবায়ু নিয়মিত পানি দেয়া, বছরে ২-৩ বার সার প্রয়োগ, ঘাস কাটা প্রয়োজন

 

বাংলাদেশের ভৌগোলিক বৈচিত্র্য ও জলবায়ুগত অবস্থার কারণে এখানে বারমুডা ও কার্পেট ঘাস সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। তবে নির্দিষ্ট আবহাওয়া, মাটির গুণমান এবং চাহিদার ভিত্তিতে অন্য ঘাসগুলিও ব্যবহৃত হচ্ছে।

বারমুডা ঘাস

ল্যান্ডস্কেপিং ডিজাইনার, কৃষিবিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলীরা এই ঘাসগুলো ব্যবহারে জায়গার ধরন ও রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষমতার কথা মাথায় রেখে নির্বাচন করে থাকেন। তবে আমরা কিছু সাধারণ পরামর্শ আপনাকে দিতে পারি। আপনি যদি নিজস্ব জায়গায় ঘাস লাগাতে চান, তাহলে মাটি ও আবহাওয়ার ধরন বিচার করে কৃষি/ল্যান্ডস্কেপ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়। নিচের পরামর্শগুলোতে একবার চোখ বুলিয়ে নিন:

ঘাসের জন্য আবহাওয়া মৌসুমি প্রভাব বিবেচনা

বাংলাদেশ একটি উষ্ণ আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ুর দেশ, যেখানে:

  • তাপমাত্রা: শীতকালে ১২–১৮°C এবং গ্রীষ্মে ৩০–৩৬°C।
  • বর্ষাকাল: জুন–সেপ্টেম্বর (উচ্চ আর্দ্রতা, জলাবদ্ধতা ঝুঁকি)।
  • শুষ্ক মৌসুম: নভেম্বর–মার্চ (কম বৃষ্টিপাত)।
    ➡ তাই এমন ঘাস নির্বাচন করতে হবে যা খরা সহ্যশীল, আর্দ্রতা সহনশীল এবং দ্রুত পুনরুদ্ধার ক্ষমতাসম্পন্ন

 

বাফেলো ঘাস

 

ঘাসের জন্য মাটি প্রস্তুতি

  • মাটি পরীক্ষা: pH ৬.০–৭.০ হলে ঘাস ভালো জন্মায়।
  • প্রস্তুত প্রক্রিয়া:
    1. ১০–১৫ সেমি গভীরতা পর্যন্ত মাটি আলগা করুন।
    2. আগাছা ও পাথর সরান।
    3. ২–৩ সেমি জৈব সার বা কম্পোস্ট মিশিয়ে দিন।
    4. পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখুন যাতে বর্ষায় জলাবদ্ধতা না হয়।

 

জয়সিয়া ঘাস

 

ঘাস রোপণ পদ্ধতি

  • সিড (Seed): কম খরচে, তবে সময় বেশি লাগে (৩–৪ সপ্তাহ)।
  • সড (Sod): তাৎক্ষণিক সবুজ লন, তবে খরচ বেশি।
  • স্প্রিগ বা প্লাগ (Sprig/Plug): মাঝারি খরচ, ২–৩ মাসে পূর্ণ কাভারেজ।
    ➡ বাংলাদেশে বর্ষার আগমনের আগে (মেজুন) বা শীতের শেষে (ফেব্রুয়ারিমার্চ) রোপণ সবচেয়ে ভালো সময়।

 

কার্পেট ঘাস

 

ঘাস পরিচর্যা রক্ষণাবেক্ষণ

  • সেচ:
    • গ্রীষ্মে সপ্তাহে ২–৩ বার।
    • শীতে সপ্তাহে ১–২ বার।
  • ঘাস কাটা:
    • বারমুডা: প্রতি ৭–১০ দিনে।
    • জয়সিয়া/কার্পেট: প্রতি ১৫–২০ দিনে।
  • সার প্রয়োগ:
    • NPK (২০:১০:১০) সার বছরে ৩–৪ বার।
    • জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণ বজায় থাকে।
  • আগাছা নিয়ন্ত্রণ:
    • নিয়মিত হাতে তুলে ফেলা।
    • প্রয়োজনে হার্বিসাইড ব্যবহার (শুধুমাত্র প্রশিক্ষিত ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে)।
  • পোকা রোগ নিয়ন্ত্রণ:
    • লন আর্মিওয়ার্ম, হোয়াইট গ্রাব ইত্যাদি দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
    • ফাঙ্গাল রোগের ক্ষেত্রে ফাংগিসাইড ব্যবহার করতে হবে।

 

কিকুয়ু ঘাস

 

ঘাসের ডিজাইন নান্দনিকতা

  • ফুটপাত হাঁটার পথ: ইট/পাথর/টাইলস দিয়ে তৈরি করে লনের ক্ষতি রোধ করুন।
  • গাছের অবস্থান: বড় গাছের ছায়া ঘাসের বৃদ্ধি কমায়, তাই উপযুক্ত দূরত্ব রাখুন।
  • ফুল ঝোপ: লনের পাশে বর্ডার হিসেবে ব্যবহার করলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
  • আলোকসজ্জা: সোলার গার্ডেন লাইট রাতে ল্যান্ডস্কেপিংকে আকর্ষণীয় করে তোলে।

 

ভেটিভার ঘাস

 

বাজেট অনুযায়ী পরিকল্পনা

  • কম বাজেট: সিড রোপণ + জৈব সার + হাতে পরিচর্যা।
  • মধ্যম বাজেট: প্লাগ/স্প্রিগ রোপণ + মিশ্র সার + প্রাথমিক ডিজাইন।
  • উচ্চ বাজেট: সড রোপণ + ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচার + স্বয়ংক্রিয় সেচ ব্যবস্থা।

 

বিশেষ টিপস (বাংলাদেশের জন্য)

  • বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুব জরুরি।
  • উপকূলীয় এলাকায় সেন্ট অগাস্টিন বা কার্পেট ঘাস বেশি টেকসই।
  • ঢালু জায়গায় কিকুয়ু বা ফেসকিউ ঘাস মাটি ক্ষয় রোধ করে।
  • পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পাওয়া যায় এমন জায়গায় বারমুডা সর্বোত্তম।

 

বালু বা ভরাটকৃত জায়গা স্থিতিশীল করার জন্য উপযোগী ঘাসের তালিকা:

ঘাসের নাম বৈজ্ঞানিক নাম প্রধান বৈশিষ্ট্য কেন উপযোগী অতিরিক্ত সুবিধা উপযুক্ত রোপণ সময়
ভেটিভার ঘাস (Vetiver Grass) Chrysopogon zizanioides গভীর ও শক্তিশালী শিকড় (৩–৪ মিটার), লবণাক্ততা ও খরা সহ্যশীল শিকড় গভীর যায়, মাটিকে আঁকড়ে ধরে ভাঙন রোধ করে ঢালু জায়গা ও নদীর পাড় স্থিতিশীল করে, বন্যা সহ্য করে বর্ষা শুরুর আগে (এপ্রিল–মে) বা বর্ষার প্রথম দিকে
কিকুয়ু ঘাস (Kikuyu Grass) Pennisetum clandestinum দ্রুত বেড়ে ওঠে, আক্রমণাত্মক বিস্তার মাটিকে ঘনভাবে ঢেকে দেয়, ক্ষয় রোধ করে কম পানিতেও টিকে থাকে, উচ্চ ট্রাফিক সহ্য করে বর্ষা শুরুর আগে (এপ্রিল–মে)
বারমুডা ঘাস (Bermuda Grass) Cynodon dactylon শক্ত ও ঘন শিকড় ব্যবস্থা, দ্রুত পুনরুদ্ধার ক্ষমতা ঢালু জায়গা ও ভরাট জমিতে মাটি বাঁধতে সক্ষম খরা সহ্য করে, খেলাধুলার মাঠেও উপযোগী ফেব্রুয়ারি–মে
বাফেলো ঘাস (Buffalo Grass) Buchloe dactyloides ধীরে বেড়ে ওঠে কিন্তু ঘন মাটির আবরণ তৈরি করে কম রক্ষণাবেক্ষণে বালু স্থিতিশীল রাখে সার ও পানির প্রয়োজন কম মার্চ–মে
ন্যাপিয়ার ঘাস (Napier Grass) Pennisetum purpureum লম্বা ও ঘন কান্ড, বিস্তৃত শিকড় বাঁধ ও পাড়ে শক্ত মাটি বাঁধতে সাহায্য করে পশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহারযোগ্য মার্চ–জুন

 

আমাদের পরামর্শ

  • যদি উদ্দেশ্য হয় দীর্ঘমেয়াদি সর্বোচ্চ স্থিতিশীলতা, তাহলে ভেটিভার ঘাস সবচেয়ে কার্যকর।
  • দ্রুত সবুজায়ন চাইলে কিকুয়ু বা বারমুডা লাগাতে পারেন।
  • উপকূলীয় বা লবণাক্ত এলাকায় সেন্ট অগাস্টিন ঘাসও ভালো কাজ করে।
  • লাগানোর সময় বর্ষা শুরুর আগে (এপ্রিলমে) বা বর্ষার প্রথম দিকে রোপণ করলে দ্রুত শিকড় গেঁড়ে বসে।

 

ফেসকিউ ঘাস

 

একেবারে কম যত্নে যেসব ঘাস বাঁচে:

একেবারে যত্ন ছাড়া বা খুব কম রক্ষণাবেক্ষণে যেসব ঘাস বাংলাদেশে ভালো জন্মে, সেগুলো মূলত খরা সহ্যশীল, কম সার-পানি প্রয়োজন হয়, এবং স্থানীয় আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়। যার মধ্যে রয়েছে —

  • বাফেলো ঘাস (Buchloe dactyloides) → খুব ধীরে বেড়ে ওঠে, তাই ঘন হয়ে গেলে আগাছা জায়গা পায় না, সার ও পানির প্রয়োজন খুব কম।

  • ভেটিভার ঘাস (Chrysopogon zizanioides) → লাগানোর পর নিজে থেকেই টিকে যায়, খরা ও অতিরিক্ত পানি দুই-ই সহ্য করতে পারে, এবং বছরে একবার কেটে দিলেই চলে।

এছাড়া বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে আরও কিছু লো-মেইনটেন্যান্স ঘাস আছে, যেমন —

  • কার্পেট ঘাস (Axonopus compressus) → আর্দ্র ও ছায়াযুক্ত জায়গায় নিজে থেকেই ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ যত্ন লাগে না।

  • জয়সিয়া ঘাস (Zoysia japonica) → ধীরে বাড়লেও একবার প্রতিষ্ঠিত হলে খুব কম পানি ও সারেই ভালো থাকে।

#ল্যান্ডস্কেপিং #বাংলাদেশেরঘাস #BermudaGrass #Zoysia #CarpetGrass #LandscapeDesignBD #GreenBangladesh #GrassVarietiesBD #SustainableLandscaping #EnvironmentalDesign

শ্রীপুরে স্ট্রবেরি চাষ করে স্বাবলম্বী শিক্ষার্থী খসরু

গাজীপুর, ১৪ মার্চ ২০২৫ (বাসস): অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র খসরু আহমেদ। নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান হওয়ায় পড়াশোনার খরচ চালানো ছিল তার জন্য চ্যালেঞ্জিং। চাকরির চেষ্টা করেও সফল হতে না পেরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজেই কিছু করার। সেই সিদ্ধান্ত থেকেই শুরু হয় তার স্ট্রবেরি চাষের পথচলা, যা তাকে স্বাবলম্বী করেছে।

মাত্র দেড় বছর আগে তিন বিঘা জমিতে ১৮ হাজার স্ট্রবেরির চারা রোপণ করেন খসরু। এখন তার বাগানে প্রতিটি গাছে লাল-সবুজ থোকায় থোকায় ঝুলছে সুস্বাদু স্ট্রবেরি। প্রতিদিন তিনি প্রায় ৬০ কেজি স্ট্রবেরি সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজার ও পাইকারি আড়তে বিক্রি করেন। এ থেকে তার দৈনিক আয় হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। একসময় যার নিজের পড়ার খরচ চালানো কঠিন ছিল, সেই খসরু এখন পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে সংসারের দায়িত্বও সফলভাবে পালন করছেন।

খসরু জানান, স্ট্রবেরি চাষের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তার চাচার কাছ থেকে। শুরুতে চারা কিনে ও পরে নিজেই চারা তৈরি করে তিন বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। জমি প্রস্তুত, চারা রোপণ, সার প্রয়োগ ও পরিচর্যায় তার প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। তবে যথাযথ পরিচর্যার ফলে তার ফলন হয়েছে আশাতীত।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া বৃষ্টি জানান, শীতপ্রধান দেশের এই ফল এখন বাংলাদেশের কৃষকদের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে খসরুর মতো সফল চাষি বিরল। তার বাগানের উৎপাদন দেখে অনেকেই স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। লাভজনক হওয়ায় এ ফসল চাষে ঝুঁকছেন নতুন কৃষকরা।

খসরুর সফলতা শুধু তার একার নয়, বরং এটি স্থানীয় কৃষি উন্নয়নের একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।

টমেটো চাষে বিপ্লব : হাবিপ্রবি’র গবেষণায় নতুন সম্ভাবনা

দিনাজপুর, ১৪ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): টমেটো চাষে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। কৃষি অনুষদের প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রাইকোডার্মার বায়োফান-জাইসাইড ব্যবহার করে টমেটোর রোগ দমন এবং উচ্চ ফলন নিশ্চিত করা সম্ভব।

গবেষণা ও ফলাফল

গবেষণা পরিচালনা করেছেন হাবিপ্রবি’র প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মহিদুল হাসান ও পিএইচডি গবেষক মো. শরিফুল ইসলাম। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ট্রাইকোডার্মার বায়োফান-জাইসাইড প্রয়োগকৃত টমেটো গাছে অন্যান্য চাষ পদ্ধতির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ফলন হয়েছে।

গবেষণার মূল তথ্য:

বিষয় সাধারণ পদ্ধতি ট্রাইকোডার্মা প্রয়োগকৃত
প্রতি গাছে টমেটোর সংখ্যা ৪০-৪৫টি ৯০টি
টমেটো সংরক্ষণের সময় ৩-৪ দিন ৪-৫ দিন
গাছের উচ্চতা স্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বেশি
পুষ্টিগুণ (লাইকোপিন ও এসকরবিক এসিড) সাধারণ উচ্চ

 

গবেষণার ধাপসমূহ

গবেষকরা ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে তিন মৌসুম ধরে গবেষণা চালান। মাঠপর্যায়ে ৬টি ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। মাটি ও বীজ পৃথকভাবে শোধন করে নির্দিষ্ট ট্রিটমেন্ট অনুযায়ী সার, কীটনাশক এবং ট্রাইকোডার্মা প্রয়োগ করা হয়।

গবেষণার প্রধান ধাপ:

  • বিভিন্ন ধরনের মাটির নমুনা সংগ্রহ ও ট্রাইকোডার্মা আইসোলেশন।
  • মলিকুলার টেস্টের মাধ্যমে ১৮টি ট্রাইকোডার্মার শনাক্তকরণ।
  • মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ ও ফলাফল বিশ্লেষণ।

 

কৃষকদের জন্য সম্ভাবনা

গবেষণার ফলে কৃষকরা জৈবিক উপায়ে ফসলের রোগ দমন করতে পারবেন। বিশেষত, টমেটোর ঢলে পড়া রোগ (কৃষকদের ভাষায় ‘স্ট্রোক রোগ’) নিয়ন্ত্রণে এই প্রযুক্তি কার্যকর হবে। পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমে আসবে, যা কৃষকদের লাভজনক চাষের সুযোগ করে দেবে।

 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ড. মুহিদুল হাসান জানিয়েছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে উদ্ভাবিত ট্রাইকোডার্মার বায়োফান-জাইসাইড বাজারজাত করা হবে। এর ফলে প্রান্তিক কৃষকরাও সহজেই এটি ব্যবহার করতে পারবেন। গবেষণা দল আশা করছে, এটি দেশের কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

টমেটো চাষে এই নতুন উদ্ভাবন কৃষকদের জন্য যেমন লাভজনক হবে, তেমনি দেশের কৃষি খাতকে আরো একধাপ এগিয়ে নেবে।

বীরগঞ্জে পেঁয়াজ বীজ চাষে বিপ্লব, স্বাবলম্বী হচ্ছে কৃষকরা

দিনাজপুর, ১৩ মার্চ ২০২৫ (বাসস): দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় কৃষকদের মধ্যে নতুন আশার আলো জাগিয়েছে পেঁয়াজ বীজ চাষ। এ বছর উপজেলায় ৫১০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে, যা প্রায় ১২০ কোটি টাকার বাজারমূল্যের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। কৃষকদের দিন বদলের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।

পেঁয়াজ বীজ চাষের উত্থান

বীরগঞ্জে আগে প্রধানত গম, ভুট্টা ও আলুর চাষ হতো। কয়েক বছর আগে কয়েকজন কৃষক ঝুঁকি নিয়ে পেঁয়াজ বীজ চাষ শুরু করেন। অধিক মুনাফার কারণে এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে ঝাড়বাড়ী, দেবীপুর, মুরারীপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে ব্যাপক হারে পেঁয়াজ বীজের চাষ হচ্ছে।

পেঁয়াজ বীজ চাষের বিস্তার:

এলাকা জমির পরিমাণ (হেক্টর) আনুমানিক বাজারমূল্য (কোটি টাকা)
ঝাড়বাড়ী ও মরিচা ইউনিয়ন ২২৫ ৩০
ঝাড়বাড়ী ইউনিয়নের তিনটি ব্লক ২৫০ ৫০
বীরগঞ্জ উপজেলার মোট ১২টি ইউনিয়ন ৫১০ ১২০

কৃষকদের সাফল্যগাথা

ঝাড়বাড়ী গ্রামের কৃষক রমিজ উদ্দিন জানান, তাদের গ্রাম ও আশপাশের এলাকায় উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজের বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। স্থানীয় দিনমজুররাও জমি বন্ধক নিয়ে পেঁয়াজ বীজ চাষ শুরু করেছেন।

দেবীপুর গ্রামের আমজাদ আলী গত বছর ৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছিলেন, এবার করেছেন ৮ বিঘা। তিনি বলেন, “গত বছর পেঁয়াজ বীজ চাষ করে আমাদের গ্রামের অন্তত ৫০ জন কৃষক আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এবার আরও বেশি লাভের প্রত্যাশা করছি।”

উৎপাদন খরচ ও লাভ

এই এলাকায় প্রধানত কিং, কুইন, তাহেরপুরী ও সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ বীজ চাষ করা হয়।

জমির পরিমাণ (বিঘা) খরচ (হাজার টাকা) আগের বছরের বিক্রয় মূল্য (প্রতি কেজি) এবারের প্রত্যাশিত মূল্য (প্রতি কেজি)
১ বিঘা ৫০-৬৫ ১,৭০০ ২,০০০

 

পরাগায়ন ও পরিচর্যা

বীরগঞ্জের ঝাড়বাড়ী, মরিচা ও মোহনপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠ এখন পেঁয়াজের সাদা ফুলে ছেয়ে গেছে। কৃষকরা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কৃত্রিম পরাগায়নের কাজ করছেন, বিকেলে চলছে সেচ কার্যক্রম।

কৃষি ও অর্থনীতিতে পরিবর্তন

  • ধুকুরঝাড়ী গ্রামের মহেশ পাল পেঁয়াজ বীজ চাষের মুনাফা দিয়ে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন।
  • গোলাপগঞ্জ হাটের ব্যবসায়ী শহিদুল তার ব্যবসা ছেড়ে ৯ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছেন।
  • বেকার যুবকেরা চাকরির পেছনে না ছুটে পেঁয়াজ বীজ চাষে উদ্যোক্তা হয়েছেন।

মুরারীপুর গ্রামের সোহেল রানা বলেন, “৬ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছি, ৪ মাসের মধ্যে ১৫ লাখ টাকা লাভের আশা করছি। চাকরির পেছনে না ছুটে নিজের ব্যবসা করছি। প্রতিদিন আমার ক্ষেতে ১০ জন শ্রমিক কাজ করছে।”

কৃষি দপ্তরের উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, “এই উপজেলায় পেঁয়াজ বীজ চাষ কয়েকগুণ বেড়েছে। কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রায় শত কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজ বিক্রি সম্ভব হবে।”

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জান মিয়া বলেন, “আমি সরেজমিনে বীরগঞ্জের সফল পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন দেখেছি। ভবিষ্যতে এই কার্যক্রম সমগ্র জেলায় সম্প্রসারণের মহাপরিকল্পনা নেওয়া হবে।”

পেঁয়াজ বীজ চাষ বীরগঞ্জ উপজেলায় কৃষি খাতের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এটি শুধু অর্থনৈতিক উন্নতি নয়, বরং কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করছে। সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে এটি বাংলাদেশের কৃষিতে এক নতুন বিপ্লব ঘটাতে পারে।

নাটোরে পদ্মার চরে ঢেমসি চাষের সফল অভিষেক

নাটোর, ১৩ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): নাটোরের কৃষিতে নতুন সংযোজন হিসেবে প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে ঢেমসি, যা একটি দানাদার সুপারফুড শস্য। লালপুর উপজেলার পদ্মার চর এলাকায় এই অপ্রচলিত ফসলের চাষ শুরু হয়েছে, যা কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে।

পদ্মা চরের বিলমাড়িয়া এলাকায় প্রায় এক বিঘা জমিতে ঢেমসি চাষ করা হয়েছে। সাদা ও লালচে আভার শুভ্র ফুলের সৌন্দর্যে ভরে গেছে মাঠ। ফাল্গুনের বাতাসে ঢেমসি গাছের সবুজ পাতার সাথে সাদা ফুলের মেলবন্ধন বসন্তের অনন্য রূপ তৈরি করেছে।

ঢেমসি চাষের অগ্রদূত কৃষক মুনতাজ আলী

লালপুরের আদর্শ কৃষক মুনতাজ আলী প্রথমবারের মতো ঢেমসি চাষ করেছেন। প্রতিদিন আশপাশের অসংখ্য কৃষক তার জমিতে এসে চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে জানছেন। একই এলাকার কৃষক রবিউল বলেন, “আগামী বছর আমার জমিতেও ঢেমসি চাষ করবো।”

মুনতাজ আলী জানান, এক বিঘা জমিতে ঢেমসি চাষ করতে তার খরচ হয়েছে মাত্র তিন হাজার টাকা। সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন নেই, এমনকি সেচও লাগে না। আগাছাও তুলনামূলকভাবে কম হয়। তিনি বলেন, “অগ্রহায়ণ মাসে বীজ বপন করেছি, আশা করছি তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে ফলন পাবো।”

ঢেমসি: পুষ্টিগুণ ও সম্ভাবনা

ঢেমসি, যা বৈজ্ঞানিকভাবে ফ্যাগোপাইরাম এস্কুলেন্টাম নামে পরিচিত, ইংরেজি ভাষায় এটি বাকহুইট নামে পরিচিত। এটি শস্যদানাসদৃশ বীজের জন্য চাষ করা হয় এবং মাটির আচ্ছাদনী শস্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

উপজেলা কৃষি অফিসার প্রীতম কুমার হোড় বলেন, “সুপারফুড হিসেবে পরিচিত ঢেমসি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, মিনারেল, ফাইবার, ভিটামিন বি, জিংক ও সেলেনিয়াম রয়েছে, যা উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার ও অ্যাজমা প্রতিরোধে সহায়ক। এটি উচ্চমূল্যের একটি সম্ভাবনাময় ফসল।”

ঢেমসি চাষের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ জানান, এলাকার কৃষকরা ঢেমসি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তিনি বলেন, “আশা করছি আগামী মৌসুমে ঢেমসি চাষের পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং এই জমিতে মধু আহরণও সম্ভব হবে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”

উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে ঢেমসি চাষ নাটোরের চরে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। কৃষকরা এর চাষাবাদে সফল হলে এটি দেশের অন্যান্য চরাঞ্চলেও বিস্তৃত হতে পারে।

কুষ্টিয়াসহ দুই জেলার ধানচাষীদের আশা জাগাচ্ছে জিকে সেচ প্রকল্প

কুষ্টিয়া, ১২ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): দীর্ঘদিন পর কৃষকরা এবার মৌসুমের শুরুতেই গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্প থেকে পানির সরবরাহ পাচ্ছেন। এর ফলে কুষ্টিয়া জেলায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা পৌঁছাবে, পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃষকরাও সেচ সুবিধা পাবেন। এতে কৃষকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে, কারণ এবার বোরো আবাদে বিঘাপ্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ কমবে।

কৃষকরা জানান, গত দুই-তিন মৌসুম ধরে সেচ সুবিধা না পাওয়া যাওয়ার কারণে তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে, এবার আগেভাগে পানি পাওয়ায় তারা অনেক স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের কৃষক সুমন আলী জানান, তারা প্রথমে মনে করেছিলেন জিকে সেচ প্রকল্পের পানি পাবেন না, কিন্তু এখন পানির আগমন তাদের জন্য বাড়তি সুবিধা এনে দিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, এই সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষকরা ভালো মুনাফা পাবে। বোরো মৌসুমে সেচ খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা উপকৃত হবেন, বিশেষ করে আউশ ধান চাষে কৃষকরা আরো বেশি লাভবান হবেন। তিনি জানান, এ বছর কুষ্টিয়ায় বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬,৪৬৪ হেক্টর জমি, কিন্তু আবাদ হয়েছে ৩৫,৯৯৬ হেক্টর জমিতে।

জিকে সেচ ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সভাপতি সাফায়েত হোসেন পল্টু বলেন, গত বছর খালে পানি সরবরাহ না হওয়ায় অনেক জমি অনাবাদি ছিল, তবে সেচ ব্যবস্থা সচল হলে ফসল উৎপাদন বাড়বে এবং পরিবেশ রক্ষা হবে। ভেড়ামারায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পের পাম্প ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, ৬ মার্চ থেকে একটি পাম্প দিয়ে পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে এবং একটি পাম্প সচল করার কাজ চলছে।

এছাড়া, কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রশিদুর রহমান জানান, জিকে সেচ প্রকল্পের খাল সংস্কারসহ পাম্প হাউজ আধুনিকায়ন করার জন্য ১,৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যা সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী এক হাজার ৩০০ কোটি টাকায় বাস্তবায়িত হবে।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের আওতাধীন কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ১৯৩ কিলোমিটার প্রধান খাল, ৪৬৭ কিলোমিটার শাখা খাল ও ৯৯৫ কিলোমিটার প্রশাখা খালে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে লাভবান উল্লাপাড়ার কৃষকরা

সিরাজগঞ্জ, ১০ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): পুষ্টিগুণে ভরপুর টমেটো একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সবজি যা কাঁচা, রান্না করা, জুস, কেচাপ বা সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী, কারণ এতে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, পটাশিয়াম, এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লাইকোপিন থাকে যা নানা রোগ থেকে দূরে রাখে। এর চাহিদাও দিন দিন বেড়ে চলছে।

এদিকে, সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার আলিয়ারপুর গ্রামের কৃষক নেজাব আলী মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে ভালো লাভ পেয়েছেন। মালচিং পদ্ধতি হল পলিথিন ব্যবহার করে ফসল চাষের এক বিশেষ পদ্ধতি, যা গাছকে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করতে এবং অতিরিক্ত পানি রোধ করতে সাহায্য করে।

নেজাব আলী জানান, তিনি ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ২৫ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ শুরু করেন। এখন তার বাগানে প্রতি গাছে বিপুল পরিমাণ টমেটো ধরে আছে এবং তিনি ইতোমধ্যে প্রায় ৮ মন টমেটো বাজারে বিক্রি করেছেন। তবে, বাজারে টমেটোর দাম কম থাকায় তার লাভ কিছুটা কম হলেও, তিনি আশা করছেন যে এবছর ২৫/৩০ হাজার টাকা লাভ হবে।

এমএমএস-এর কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল জানান, মালচিং পদ্ধতি ব্যবহারে জমির আদ্রতা ১০ থেকে ২৫ ভাগ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়, এবং এই পদ্ধতিতে আগাছা হওয়া খুবই কম হয়। তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করলে ফলনের গুণগত মান বাড়ে এবং সারের গুণাগুণ ঠিক থাকে।

উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমি জানান, উল্লাপাড়া উপজেলায় টমেটো চাষে বৈচিত্র্য এসেছে, এবং এখানে নেজাব আলীসহ অনেক কৃষক মালচিং পদ্ধতিতে সফলতা পেয়েছেন। এবছর উল্লাপাড়ায় মোট ৫১ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে, এর মধ্যে ১৫ হেক্টর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে চাষ হয়েছে। তিনি বলেন, এই পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে এবং স্থানীয় কৃষকরা এই চাষের মাধ্যমে লাভবান হচ্ছেন।

এমএমএস-এর উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি জানান, এভাবে টমেটো চাষের উন্নয়ন কৃষকদের মাঝে আরো বেশী উৎসাহ জাগাবে।

নাটোরে পদ্মার চরে বাহারী ফসলের মেলা

নাটোর, ৯ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): জেলার লালপুরে পদ্মার চরে ফসলের এক বাহারী মেলা শুরু হয়েছে। এখানকার কৃষকরা বেদনার বালুচরকে কাজে লাগিয়ে স্বপ্ন দেখছেন। পদ্মার চর এখন একটি রঙিন গ্যালারি, যেখানে নানা ধরনের শস্যের চাষ হচ্ছে। সবুজের মধ্যে শোভিত ধনিয়া, পেঁয়াজ, হলুদ সূর্যমুখী ও বেগুনী শিমের ফুল, আর মৌমাছির গুঞ্জন পরিবেশটিকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে।

লালপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন—বিলমাড়িয়া, রসুলপুর, চরজাজিরা এবং আরাজীবাকনাইসহ ১৮টি চরজুড়ে চাষাবাদ হচ্ছে। এখানে প্রায় তিন হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের অর্থকরী শস্য চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ জমিতে আবাদ হচ্ছে আখ (১,৫৬৩ হেক্টর), গম (৮৪১ হেক্টর), মসুর (৪৮২ হেক্টর), চিনাবাদাম (৪৭৮ হেক্টর) এবং সবজি (১২১ হেক্টর)। এছাড়া, ফলবাগানও রয়েছে ১২২ হেক্টরে, যেখানে আম, কুল, পেয়ারা, মাল্টা এবং লেবু উৎপাদিত হচ্ছে। পদ্মার চরেই বর্তমানে চিয়া সীডের চাষ হচ্ছে, যা উচ্চ মূল্যের কারণে দ্রুতই এর উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, রবি মৌসুমে চরের জমি সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়, তবে খরিপ মৌসুমে এই জমির পরিমাণ কমে যায়। খরিপ-১ মৌসুমে আবাদি জমি ছিল ২,৯৪৬ হেক্টর এবং খরিপ-২ মৌসুমে এক হাজার ৭১৫ হেক্টর।

কৃষক মুনতাজ আলী জানান, উর্বর পদ্মার চরে চাষ করা সহজ হলেও সেচ খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। তিনি আশা করছেন, বিএডিসি এখানে সেচ স্ক্রীম চালু করলে তারা উপকৃত হবেন। আর কৃষক মুস্তাক আলী জানিয়েছেন, তিনি এবার দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন এবং আশাবাদী যে, আবহাওয়া ভালো থাকলে তার ফলন ভালো হবে।

তবে পেঁয়াজ চাষী রাউফ মালিথা বাজারে পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় এবার লাভ কম হবে বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, অন্যান্য ফসলের মাধ্যমে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে।

লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার প্রীতম কুমার হোড় জানান, কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রযুক্তি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় সূর্যমুখী চাষ ব্যাপকভাবে হচ্ছে। বর্তমানে, পদ্মার চর বৈচিত্র্যময় শস্য উৎপাদনের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে। এসব ফসলের উদ্বৃত্ত রাজধানীসহ অন্যান্য এলাকায় পাঠানো হচ্ছে।

বিএডিসি (সেচ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিদ্যুৎ না থাকার কারণে প্রচলিত সেচ ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না, তবে পানাসী-২ প্রকল্পের আওতায় সোলার সেচ প্রকল্প চালু হলে পদ্মার চরে তা কার্যকর হবে।

রমজানের বাজার ধরতে পেরে দ্বিগুণ লাভে খুশি ফুলবাড়ীর খিরা চাষিরা

দিনাজপুর, ৮ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): রমজানের বাজার ধরতে পারায় খুশি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার খিরা চাষিরা। অধিক ফলনের পাশাপাশি দ্বিগুণ দাম পাওয়ায় তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

ফুলবাড়ী উপজেলার গোয়ালপাড়া গ্রামের কৃষক গণেশ চন্দ্র (৪২) জানান, চলতি রবি মৌসুমে তিনি নিজের ৪০ শতক জমিতে খিরা চাষ করেছেন। অনুকূল আবহাওয়া ও সুষ্ঠু পরিচর্যার ফলে তার জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। রমজান শুরুর আগে প্রতি কেজি খিরা ১৬ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হলেও, রমজানের প্রথম দিন থেকেই সেই দাম বেড়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এতে তার মতো চাষিরা দ্বিগুণ লাভ পাচ্ছেন।

খিরা চাষ বেড়েছে দ্বিগুণ

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ জানান, গত বছর রমজানে খিরার ভালো দাম পাওয়ায় এবার চাষিদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। তিনি আরও জানান, এবছর ফুলবাড়ী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ১৩৫ হেক্টর জমিতে খিরার চাষ হয়েছে, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।

রমজান মাসে খিরার চাহিদা বেশি থাকায় স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি, পাইকাররা বগুড়া, টাঙ্গাইল এবং রাজধানী ঢাকায় খিরা নিয়ে যাচ্ছেন।

কৃষকের লাভজনক চাষাবাদ

দৌলতপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, “এবছর ৪২ শতক জমিতে খিরা চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত ৪৮ মন খিরা বাজারে বিক্রি করেছি। রমজানের আগে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ১৬ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হলেও, রমজানের শুরু থেকে ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি করছি।” তিনি আরও জানান, জমিতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হলেও, এ বছর তার লাভ হবে লক্ষাধিক টাকা।

শিবনগর গ্রামের সজল মিয়া, আলাদিপুর গ্রামের মেহেরাজ আলীসহ অন্যান্য চাষিরাও জানান, ভালো দামে খিরা বিক্রি করে তারা লাভবান হচ্ছেন। তারা আশা করছেন, ভবিষ্যতেও এই চাষ আরও সম্প্রসারিত হবে।

কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতা

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আকতার জানান, এ বছর উপজেলায় ৬০-৭০ হেক্টর জমিতে খিরা ও শসা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তবে ভালো ফলন এবং গত বছরের উচ্চ মূল্যের কারণে তা বেড়ে ১৩৫ হেক্টরে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, “কৃষকেরা লাভবান হওয়ায় দিন দিন খিরা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই জমিতে বছরে তিনবার খিরা চাষ করা সম্ভব, তবে রমজানকে কেন্দ্র করে চাষিরা বেশি প্রস্তুতি নিয়েছেন।”

তিনি আরও জানান, কৃষি অধিদপ্তর খিরা চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করছে, যার ফলে ফলন ভালো হচ্ছে এবং কৃষকেরা বেশি লাভবান হচ্ছেন।

রমজানে খিরার চাহিদা বৃদ্ধির কারণ

প্রতি বছর রমজান মাসে সবজির চাহিদা ও দাম বৃদ্ধি পায়। সারা বছর খিরার চাহিদা কম থাকলেও রোজায় ইফতারে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা বাড়ে। চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যও বেড়ে যায়, যা চাষিদের জন্য লাভজনক হয়ে ওঠে। দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাষিরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেশি লাভের আশায় রমজানকে সামনে রেখে খিরা চাষ করেন।

চলতি বছরও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। চাষিরা বলছেন, অনুকূল আবহাওয়া ও সরকারি সহায়তার ফলে তারা ভালো ফলন পেয়েছেন এবং রমজানের বাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।