Category Archives: কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুল

কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুল

শিলা ও খনিজ

শিলা ও খনিজ নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি উন্মক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান ১২০৪ বই এর ১ নং ইউনিটের ১.৩ নম্বর পাঠ।

শিলা ও খনিজ

 

সিলিকন (খনিজ)

 

শিলা কী (What is Rocks) ?:

সিলেটের জাফলং বা শ্রীপুর থেকে আগত পাথর ভর্তি ট্রাক কিংবা আমাদের সড়ক ও রেলপথ তৈরির পাথর সবাই দেখে থাকবেন। বনভোজন কিংবা ভ্রমণের জন্য যারা জাফলং কিংবা শ্রীপুরে গিয়েছেন তারা পাহাড়ী ঝরণায় পাথরের আগমন দৃশ্য নিশ্চয় অবলোকন করেছেন। ভূ-তত্ত্ববিদদের মতে, পাহাড়ী ঝরণা ধারায় নেমে আসা এ সব পাথরকে শিলা বলে। তাপ, চাপ ও রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে এরা ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে উঁচু পাহাড়ী এলাকা থেকে পানির স্রোতে গড়িয়ে নিচের দিকে নেমে আসে।

গড়িয়ে গড়িয়ে নিচের দিকে আসার ফলে ঘর্ষণের কারণে এরা মসৃন ও সুন্দর আকার প্রাপ্ত হয়। সুতরাং ভূ-তত্ত্ববিদদের মতে, শিলা হলো দুই বা ততোধিক খনিজের সংমিশ্রণ বা দলা যা ভূত্বকের অপরিহার্য অংশসমূহ গঠন করেছে এবং যাদের ধর্ম ধারণকৃত খনিজের ভিত্তিতে পরিবর্তনশীল। যেমনঃ গ্র্যানাইট, চুনাপাথর ইত্যাদি। (According to the Geologists rock is a mixture or aggregate part of the earth’s crust, the properties of which will vary on the basis of minerals they contain. Such as granite, limestone etc.)।

 

শিলা

 

শিলার প্রকারভেদ (Classification of rocks):

গঠন ও উৎস অনুসারে শিলাকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় :

  • আগ্নেয় শিলা ( Igneous rocks)
  • পাললিক শিলা (Sedimentary rocks)
  • রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic rocks)

 

আগ্নেয় শিলা (Igneous rocks):

পৃথিবীর আদিম অবস্থার উত্তপ্ত ও গলিত লাভা কিংবা আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের সময় উত্থিত উত্তপ্ত গলিত লাভা ঠান্ডা হয়ে যে শিলার সৃষ্টি হয় তাকে আগ্নেয় শিলা বলে।

 

পাললিক শিলা (Sedimentary Rock)

 

আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্য:
  • উত্তপ্ত গলিত অবস্থা হতে ঠান্ডা হয়ে এ জাতীয় শিলার উৎপত্তি হয় বলে আগ্নেয় শিলায় কোন স্তর থাকে না।
  • উত্তপ্ত গলিত পদার্থের মধ্যে জীব-জন্তুর অস্তিত্ব অসম্ভব। বৃক্ষলতাও তাতে জন্মে না। এ কারণে আগ্নেয়শিলার ভিতর জীবাশা দেখতে পাওয়া যায় না।
  • গলিত অবস্থা হতে তাপ বিকিরণ করে ক্ষেত্র বিশেষে এ জাতীয় শিলা কেলাসিত হয় বা নির্দিষ্ট আকার ধারণ করে।
  • উত্তপ্ত গলিত পদার্থ ভূ-পৃষ্ঠে ঠান্ডা হলে তাকে বহিঃজ আগ্নেয় শিলা (Extrusive igneous rocks) বলে। অপর পক্ষে উত্তপ্ত গলিত পদার্থ ভূ-পৃষ্ঠে আসতে না পেরে পৃথিবীর অভ্যন্তরেই ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়ে কঠিন আকার ধারণ করে। এ রূপে গঠিত আগ্নেয় শিলাকে অন্তঃজ (Intrusive) আগ্নেয় শিলা বলে।

ব্যাসল্ট, পিউমিকস্টোন, লাপিলি ইত্যাদি হলো বহিঃজ আগ্নেয় শিলা। অন্যদিকে গ্র্যানাইট, গ্যারো, সায়েনাইট, পরিফাইরি ইত্যাদি অন্তঃজ আগ্নেয় শিলা।

 

পাললিক শিলা (Sedimentary rocks):

তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, সাগরতরঙ্গ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে আগ্নেয় শিলা ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ছোট ছোট নুড়ি, কাকর ও বালিতে পরিণত হয়। অতঃপর অংশসমূহ উল্লিখিত প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা বাহিত হয়ে সমুদ্র, হ্রদ বা উপমহাদেশের তলদেশে পলল বা তলানীরূপে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়। পরে তা বায়ুর চাপে জমে শক্ত ও দৃঢ় আকার প্রাপ্ত হয়। এ ধরনের শিলাকে পাললিক শিলা বলে। পলল বা তলানী হতে এ শিলা গঠিত হয় বলে একে পাললিক শিলা বলে। আবার স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় বলে এ শিলাকে স্তরীভূত (Stratified) শিলা বলে। ইহা অকেলাসিত ।

 

পাললিক শিলা (Sedimentary Rock)

 

পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্য:
  • এ শিলা মূল শিলার (Older rocks) ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ হতে সৃষ্টি হয়।
  • পাললিক শিলা স্তরে স্তরে সৃষ্টি হয় বলে এর মধ্যে স্তর থাকে।
  • এ শিলার মধ্যে জীবাশা দেখা যায়। ইহা উত্তপ্ত অবস্থা হতে সৃষ্ট নয় বলে অকেলাসিত ।
  • ইহা গৌণ বা মাধ্যমিক (Secondary) শিলা নামে পরিচিত।
  • ইহা ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক প্রক্রিয়ায় উন্নত (Developed ) হতে পারে। বালিপাথর (Sand stone), শেল (Shale), ডলোমাইট (Dolomite), সিল্ট স্টোন (Silt stone), চুনাপাথর (Lime. stone) ইত্যাদি পাললিক শিলার উদাহরণ।

 

রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic rocks):

প্রচন্ড তাপ ও চাপের যৌথ প্রভাবে মূল আগ্নেয় ও পাললিক শিলা কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে অধিকতর কঠিন ও স্ফটিকাকার যে নতুন শিলার সৃষ্টি হয় তাকে রূপান্তরিত শিলা বলে। এ ভাবে চুনাপাথর (পাললিক শিলা) রূপান্তরিত হয়ে মার্বেলে, বেলেপাথর (পাললিক শিলা) পরিবর্তিত হয়ে কোয়ার্টজাইট, কাদা পরিবর্তিত হয়ে স্লেটে (Slate), গ্র্যানাইট (আগ্নেয় শিলা) পরিবর্তিত হয়ে নীসে ( Gneisses) পরিণত হয়।

আগ্নেয়শিলা পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলায় রূপান্তরিত হলে তাকে আগ্নেয় রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমন : গ্র্যানাইট নীসে ( Gneisses ), পরিণত হওয়া। অনুরূপভাবে পাললিক শিলা পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হলে তাকে পাললিক রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমনঃ বেলে পাথর পরিবর্তিত হয়ে কোয়ার্টজাইট পরিণত হওয়া।

 

কোয়ার্টজাইট, এক ধরনের রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rock)

 

রূপান্তরিত শিলার বৈশিষ্ট্য:

আগ্নেয় ও পাললিক শিলা উভয় শিলা পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ ইহা আগ্নেয় ও পাললিক শিলার জাতক। প্রচন্ড তাপ ও চাপের যৌথ প্রভাবে এ নতুন প্রকৃতির শিলার সৃষ্টি হয়। ইহা কেলাসিত হয় বলে ইহাকে পাললিক শিলা থেকে পৃথক করা যায়। এ জাতীয় শিলার খনিজ উপাদানগুলি সমান্তরাল থাকে বলে আগ্নেয় শিলা থেকে সহজে পৃথক করা যায়।

 

খনিজ (Minerals) কী?

প্রাকৃতিক অজৈব প্রক্রিয়ায় তৈরি সমসত্ব স্ফটিকাকার বস্তু যার সুনির্দিষ্ট আণবিক গঠন ও রাসায়নিক সংযুক্তি রয়েছে তাকে খনিজ বলে। দুই বা ততোধিক খনিজ একত্রিত হয়ে শিলা গঠন করে। সুতরাং খনিজ হলো শিলা গঠনের উপাদান।

 

খনিজ প্ৰধানত দু’প্রকার :

প্রাইমারী খনিজ (Primary minerals) : উত্তপ্ত গলিত ম্যাগমা শীতল ও কঠিন হওয়ার ফলে সৃষ্ট খনিজকে প্রাইমারী খনিজ বলে। যেমনঃ কোয়ার্টজ (SiO2) অর্থোক্লেজ ( KAISiO3) মাস্কোভাইট [KAl Si O 10 (OH)2], বায়োটাইট ( KAI (Mg-Fe), Si, O 10 (OH)2], ইত্যাদি প্রাইমারী খনিজ।

সেকেন্ডারী খনিজ (Secondary minerals) : তাপ, চাপ ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে প্রাথমিক খনিজ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে খনিজ সৃষ্টি হয় তাকে সেকেন্ডারী খনিজ বলে। যেমনঃ ক্যালসাইট (CaCO3), জিপসাম (CaSO4, 2H2O), লিমোনাইট, (Fe2O3, 3H2O), ডলোমাইট [(CaMg (CO3)2] শিলা ও খনিজের মধ্যে পার্থক্য ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মে শিলা ও খনিজ পদার্থে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। নিচে শিলা ও খনিজের উল্লেখযোগ্য পার্থক্য তুলে ধরা হলো।

 

সালফার (খনিজ)

 

সূত্র:

  • শিলা ও খনিজ, পাঠ ১.৩, ইউনিট ১ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি

 

 

মৃত্তিকা গঠনের উপাদান

মৃত্তিকা গঠনের উপাদান নিয়ে আজকের আলোচনা। কঠিন শিলা থেকে বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়। শিলা থেকে প্রথমে খনিজের সৃষ্টি হয়। শিলা ও খনিজ থেকে মাটি সৃষ্টি হতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। দীর্ঘ সময় ব্যাপিয়া শিলা ও খনিজের উপর বিভিন্ন ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক পরিবর্তন সাধিত হয়ে মৃত্তিকায় পরিণত হয়। বিশেষ করে তাপমাত্রা, বারিপাত (Precipitation), বিভিন্ন রকমের উদ্ভিদ ও জীবজন্তুর চলমান ক্রিয়ায় শিলা ও খনিজ নির্দিষ্ট সময় পর মৃত্তিকায় পরিণত হয়।

মৃত্তিকা গঠনের উপাদান

সুতরাং যেসব উপাদান নতুন মৃত্তিকা গঠনের জন্য দায়ী তাদেরকে মৃত্তিকা গঠনের উপাদান বলে। ঐসব উপাদানের যৌথ ক্রিয়ার ফলে মৃত্তিকা প্রোফাইল গঠিত হয়। ভূত্বকের কোন স্থানের মৃত্তিকা প্রধানত পাঁচটি উপাদানের যুগপৎ ক্রিয়ার ফলে গঠিত হয়। এ পাঁচটি উপাদান হলো ঃ

১। মৃত্তিকার উৎস বস্তু (Parent material)

২। জলবায়ু (Climate )

৩। জীবসত্ত্বা (Biosphere)

৪। ভূমির বন্ধুরতা (Topography)

৫। সময় (Time)

জেনীর সমীকরণ (Jenny’s equation):

মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদানগুলোর প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন উপায় ও তীব্রতায় সংঘটিত হয়। সবগুলো উপাদানই আবশ্যকভাবে পরস্পর নির্ভরশীল। তবে নির্দিষ্টস্থানে বিশেষ কোন উপাদান মৃত্তিকা গঠনের কাজে অধিক সক্রিয় হতে পারে। সেক্ষেত্রে অন্যান্য উপাদানগুলো অবশ্যই সক্রিয় থাকবে তবে তা তুলনামূলকভাবে কম সক্রিয় হতে পারে। মৃত্তিকা গঠনকালে ভিন্ন ভিন্ন উপাদানের সক্রিয়তার তারতম্যের উপর মৃত্তিকার ধর্ম নির্ভরশীল। বিজ্ঞানী Jenny মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদানসমূহ এবং মৃত্তিকার ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক দেখিয়ে একটি সাধারণ সমীকরণ প্রকাশ করেছেন। ইহা জেনীর সমীকরণ নামে পরিচিত। সমীকরণটি নিম্নরূপ ঃ

S=f (p, cl, b, r, t…………)।

এখানে ঃ
S =মৃত্তিকার ধর্ম (Any soil property)
f= ক্রিয়া (Function of )
P= উৎস বস্তু (Parent material)
cl =জলবায়ু (Climate)
b = জীবসত্ত্বা (Biosphere)
r= বন্ধুরতা (Relief)
t= সময় (Time)

 

মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদানসমূহের শ্রেণিবিভাগ:

মৃত্তিকা বিজ্ঞানী Joffe মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদানগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :

  • সক্রিয় উপাদান (Active factor)
  • অক্রিয় উপাদান (Passive factor)

উৎস বস্তু শিলা (Parent material) এবং ভূনিম্নস্থ শিলার (Bed rock) উপর কাজ করে মৃত্তিকা গঠন করিবার জন্য যে সমস্ত উপাদান শক্তি সরবরাহ করে থাকে তাদেরকে সক্রিয় উপাদান (Active factor) বলে। মৃত্তিকা গঠনের পাঁচটি উপাদানের মধ্যে জলবায়ু (Climate) ও জীবসত্ত্বা (Biosphere) হলো সক্রিয় উপাদান। অপরপক্ষে, উৎস বস্তু, ভূমির বন্ধুরতা (Topography/relief) এবং সময় এরা মৃত্তিকা গঠনে সরাসরি কোন শক্তি সরবরাহ করে না বলে তাদেরকে অক্রিয় উপাদান বলে।

মৃত্তিকা গঠনে উৎস দ্রব্য (Parent material):

মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অঘনীভূত ও রাসায়নিকভাবে কম বেশি ক্ষয় প্রাপ্ত যে সকল খনিজ ও শিলা দ্রব্য থেকে মৃত্তিকা প্রোফাইল উৎপন্ন হয় তাকে মাটির উৎস দ্রব্য বলে।

মৃত্তিকা বিজ্ঞানী Jenny’র মতে, S = f(p) { cl, b, c, ….. }

এ সমীকরণে মাটির গুণের সহিত মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদান উৎস দ্রব্য (Parent material) বা P এর কাজের ফাংশন বুঝানো হয়েছে যখন cl. b. . . ……. স্থির থাকে। ভূতাত্বিক প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্টের বিভিন্ন উৎস দ্রব্য হতে মৃত্তিকার উৎপত্তি হয়। উৎস দ্রব্যের প্রকৃতির ওপর উদ্ভূত মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ মাটির বুনট উৎস দ্রব্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, যা মৃত্তিকায় পানির নিম্নমূখী প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলশ্রুতিতে সূক্ষ্ম মৃত্তিকা কলা ও উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদানের সঞ্চায়ন (illuviation) এবং চুয়ীসরন (eluviation) প্রভাবিত হয়। শিলাক্ষয় (Weathering) প্রক্রিয়া ও এর গতি প্রকৃতি উৎস বস্তুর (Parent material) রাসায়নিক ও খনিজ উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে, যা উৎপন্ন উদ্ভিদরাজির প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে।

উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, লাইম স্টোন সমৃদ্ধ উৎস বস্তু হতে সৃষ্ট মৃত্তিকার প্রোফাইল সৃষ্টি হতে দীর্ঘ সময় লাগে, যা আর্দ্র আবহাওয়া দ্বারা ত্বরান্বিত হয়। শক্ত বিশুদ্ধ চুনাপাথর হতে গভীর বালি প্রধান মাটি তৈরি হয়। অপরদিকে মিশ্রিত নরম চুনাপাথর হতে গভীর ও সূক্ষ্ম বুনট সম্পন্ন মাটি তৈরি হয়। উষ্ণ এশিয়ার অধিকাংশ মাটি গ্রানাইট, নীস, বেসন্ট, বালিপাথর, চুনাপাথর, শেইল ও পলিজ অধঃক্ষেপ হতে উৎপন্ন হয়েছে।

ক্লে কর্দমের গুণগত বৈশিষ্ট্যাবলী ও মৃত্তিকা পার্শ্বচিত্র সমভাবে উৎস বস্তু দ্বারা প্রভাবিত হয়। আগ্নেয় শিলা, স্থুল কোয়ার্টজ নুড়ি, বালিপাথর ইত্যাদি ধীর গতিতে ক্ষয় প্রাপ্ত হয় এবং সাধারণ অনুর্বর মাটি গঠন করে। ইহাতে কেওলিনাইট জাতীয় কর্দম কণা উপস্থিত থাকে এবং ক্ষারীয় দ্রবা কম থাকে। অধিকাংশ ক্ষারীয় আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে সূক্ষ্ণ বুনট সম্পন্ন এবং ক্ষারক সম্পন্ন উর্বর মাটি গঠন করে। এতে মন্টমরিলোনাইট জাতীয় কর্দম কণা বেশি থাকে।

জলবায়ু (Climate ):

Jenny’ র মতে, S = f (cl) {p, b, r, ……) এ সমীকরণে মাটির গুণের সাথে মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদান জলবায়ু বা এর কাজের ফাংশানকে বুঝানো হয়েছে, যখন অন্যান্য উপাদান অপরিবর্তিত থাকে। জলবায়ু হলো মৃত্তিকা গঠনের প্রত্যক্ষ এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একটি মৃত্তিকা প্রোফাইল শত শত বছর ধরে মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদানসমূহের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্রিয়ার ফল। জলবায়ু সাধারণত বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রার মাধ্যমে মৃত্তিকা গঠনে প্রভাব বিস্তার করে।

বৃষ্টিপাত:

বৃষ্টিপাত নানাভাবে মাটি গঠনে অংশ গ্রহণ করে। বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি চুয়ানোর মাত্রা বৃদ্ধি পায় ফলে ক্ষারীয় পদার্থ ক্রমেই চুইয়ে নিচে চলে যায়। তখন মাটি অয় হয় এবং সেখানে Fe এবং Al এর প্রাধান্য দেখা যায়। অল্প বৃষ্টি হলে উপরের স্তর হতে CaCO3 ও MgCO3 নিচে নেমে মধ্য স্তরে জমা হয়। ফলে চুন সমৃদ্ধ একটা হরাইজন (Horizon) এর সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বৃষ্টিপাত কম হলে বাষ্পীভবন বেশি হয় ফলে নিচের ক্ষারীয় উপাদান বাষ্পীভবনজনিত টানে পানির সাথে উপরে উঠে। আর পানি বাষ্প হয়ে উড়ে গেলে সে পদার্থগুলো মাটির উপরের স্তরে জমা হয় এবং তখন মাটি ক্ষারীয় বিক্রিয়া প্রদর্শন করে।

বৃষ্টিপাত উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে বাড়ায়, ক্ষুদ্র জীবাণুর বংশবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং তাদের কর্মতৎপরতাকে উৎসাহিত করে। ফলে মাটিতে বেশি পরিমাণে জৈবপদার্থের বিয়োজন হয়ে মৃত্তিকা গঠনের কাজ তরান্বিত করে।
বৃষ্টিপাত ঢালু জমিতে প্রাকৃতিক ভূমিকম্পের মাধ্যমে মাটির প্রোফাইলকে আক্রান্ত করে, ফলে মৃত্তিকা ধাপ (Steep) এ পাতলা মাটির স্তর এবং পাহাড়ের পাদদেশে মৃত্তিকা পদার্থের পুরু স্তর জমা হয়।
বৃষ্টির পরিশ্রুত পানি মৃত্তিকার উৎস বস্তু গঠনকারী পদার্থগুলোকে দ্রবীভূত করে এবং অন্যত্র নিয়ে জমা করে মাটি গঠনে সহায়তা করে। বাংলাদেশে নদীজনিত ভূমিক্ষয় ও পানি জমাটের মাধ্যমে সামুদ্রিক উপকূল অঞ্চলে নতুন মৃত্তিকা গঠিত হয়।

তাপমাত্রা:

মৃত্তিকা গঠনের ক্ষেত্রে তাপমাত্রার প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি ১০° সে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে মৃত্তিকার রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বিগুণ হয়। মেরু অঞ্চলে তাপমাত্রা হচ্ছে মৃত্তিকা গঠনের বিরোধিতাকারী একটি শক্তি। নিচু তাপমাত্রার কারণে সেখানে কোন পরিস্কার রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে না। শুষ্ক অঞ্চলেও পরিস্রবনের পরিমাণ কম। যার কারণ হচ্ছে অধিক বাস্পীভবন। উঁচু পর্বত অঞ্চলে শীতকাল দীর্ঘ হওয়ায় মৃত্তিকা প্রোফাইল এর ভিতর দিয়ে পরিস্রবনের পরিমাণ কম হয়। ফলে হ্রদ জলভূমি পাট গঠিত হয়।

নিচু তাপমাত্রায় অণুজীবের কার্যকলাপ সীমিত হওয়ায় জৈব পদার্থ সঞ্চিত হতে থাকে। ফলে এসব অঞ্চলে জৈব পদার্থের স্তর বেশ বিস্তৃত হয় এবং পিটের নিচে কোন মৃত্তিকা স্তর গঠিত হয় না। অপরপক্ষে, আর্দ্র গ্রীষ্মমন্ডল ও উপ-গ্রীষ্মমণ্ডল অঞ্চলে উদ্ভিদ প্রচুর পরিমাণে জন্মে এবং অবশেষে বিগলিত হওয়ার ফলে Ao স্তরে জৈবপদার্থ খুব কম হয়।

যে সব এলাকায় উত্তাপ ও আর্দ্রতা বেশি সেখানে মাটিতে কর্দম কণা বেশি দেখা যায় কারণ অবক্ষয় প্রক্রিয়া বেশি মাত্রায় হয়। কিন্তু হীম ও শুষ্ক বা হীম ও আর্দ্র এলাকায় ইহা কম হয়। তাপমাত্রা বেশি ও বৃষ্টিপাত কম হলে মৃত্তিকার ধনাত্মক আয়ন বেশি ধরে রাখতে পারে এবং চুয়ানী পানির পরিমাণ কম হয়।

জীব সত্ত্বা (Biosphere):

Jenny’ র মতে, S=f (b) (cl, p, r, t…..} । এই সমীকরণে b দ্বারা জীব সত্ত্বা (Biosphere) বুঝানো হয়েছে যা সবুজ আণুবীক্ষনিক বা অপেক্ষাকৃত বড় জীবসমূহ এবং মানুষের সমন্বয়ে গঠিত। এটি মৃত্তিকা গঠন পদ্ধতিকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। উদ্ভিদ কী প্রকৃতির এবং কী পরিমাণ জৈব পদার্থ প্রদান করিবে তাহার ওপর মৃত্তিকার গঠন নির্ভরশীল। মৃত্তিকার রং, বর্ণ, সংযুক্তি ইত্যাদি ভৌত অবস্থা উদ্ভিদ জাতীয় জৈব পদার্থ দ্বারা পরিবর্তিত হয়। বিশেষ করে উপরের স্তরের ঘাসী জমির মাটিতে জৈব পদার্থ (Organic matter) তুলনামূলকভাবে বনাঞ্চলের মাটি হতে বেশি থাকে।

উচ্চ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটি গাঢ় বর্ণের যার পানি ও ক্যাটায়ন ধারণ ক্ষমতা বনাঞ্চলের মাটি হতে বেশি। মৃত্তিকা গঠনও ঘাসী উদ্ভিদরাজি দ্বারা প্রভাবিত হয়। এছাড়া মৃত্তিকার অম্লত্ব ও ক্ষারকত্বও উদ্ভিদরাজি দ্বারা প্রভাবিত হয় পার্বত্য এলাকার মাটির চাইতে নিম্নভূমির মাটিতে গাছের বৃদ্ধি এবং জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি হয়।

ভূমির বন্ধুরতা (Topography):

Jenny’র মতে, S = f (r) { cl, b, p. …… | এ সমীকরণে মাটির গুণের সাথে মৃত্তিকার বন্ধুরতার বা এর কাজের ফাংশানকে বুঝানো হয়েছে যখন অন্যান্য উপাদান অপরিবর্তিত থাকে। কোন স্থানের ভূমির বন্ধুরতা বলতে সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে উক্ত স্থানের উচ্চতাকে বুঝায়। মৃত্তিকা গঠনে ভূমির বন্ধুরতা সাধারণত নিম্নরূপ প্রভাব বিস্তার করে থাকে :
ভুমির বন্ধুরতা জলবায়ুর প্রভাবকে ত্বরান্বিত করে বা বিলম্বিত করে। অসমতল জমি অপেক্ষা সমতল জমি থেকে অতিরিক্ত পানি কণা বেশি অপসারিত হয়। কোন স্থানে সারা বছর বা বছরের অধিকাংশ সময় পানি জমা থাকলে উহাতে জলবায়ূর প্রভাব ততটা কার্যকর হয় না।

পাড়ের তীক্ষ্ণঢালে সহজে ভূমিক্ষয় হয় এবং পানি মাটির প্রোফাইলে খুবই কম পরিমাণে প্রবেশ করে। এজন্য কম দৈর্ঘ্যের প্রোফাইল গঠিত হয়। ভূমির বন্ধুরতা নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও মাটির পানির স্তরের উচ্চতা নির্ধারণ করে। বন্ধুরতা বা ঢাল মৃদু হলে অধিক পরিমাণ পানি মৃত্তিকা প্রোফাইলে প্রবেশ করে ফলে অধিক দৈর্ঘ্যের প্রোফাইল প্রতিষ্ঠিত হয়।

কম ঢালবিশিষ্ট প্রোফাইলটিতে অধিক জৈব পদার্থ থাকে। ভূ-পৃষ্টের অসমতলতা সমুদ্রপৃষ্ট হতে উচ্চতা বৃদ্ধি করে জলবায়ু অধিকতর শীতল হয়। মাঝে মাঝে অধিক আর্দ্রতাসম্পন্ন হয় যা মৃত্তিকা গঠনে প্রভাব ফেলে। বন্ধুরতা ফসলী জমির ব্যবহার বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে জমির ব্যবহারের উপর প্রভাব ফেলে যা মাটি গঠনের সহায়ক।

সময় (Time):

Jenny’র মতে S = f (t) { cl, b, p, r} | এ সমীকরণে মাটির গুণের সাথে মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদান সময় বা এর কাজের ফাংশানকে বুঝানো হয়েছে, যখন অন্যান্য উপাদান যেমন : cl,b, pr… স্থির থাকে। শিলা হতে মাটি সৃষ্টি হওয়ার জন্য একটা ন্যূনতম সময়ের দরকার। শিলা ও খনিজ পদার্থের ক্ষয় হতে কী পরিমাণ সময় ব্যয়িত হয়েছে তার ওপর মাটির প্রকৃতি নির্ভর করে।

উৎস বস্তু সৃষ্টির পর সময়ের ব্যবধানে সৃষ্ট মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাবলীর পরিবর্তন ঘটে। যদিও সময়ের এ প্রয়োজনীয়তা জলবায়ু, Parent material এর প্রকার, প্রাণী ও উদ্ভিদের কার্যাবলী ও নিষ্কাশন (Drainage) এর উপর ঘনিষ্টভাবে নির্ভরশীল। সাধারণত একটি পরিণত বা সম্পূর্ণ মাটি (Mature soil) তৈরি হতে দুইশত থেকে কয়েক হাজার বছর লাগতে পারে।

নিম্নলিখিত কারণে মাটি তৈরির কাজ বিলম্বিত হয়।

(ক) কম বৃষ্টিপাত

(খ) কম আপেক্ষিক আর্দ্রতা

(গ) অধিক চুন সম্পন্ন উৎস বস্তু

(ঘ) অধিক বালি

(ঙ) অধিক কর্দম কণা

(চ) ক্ষয়রোধী উৎস বস্তু

(ছ) তীব্র ঢাল

(জ) উচ্চ পানি স্তর

(ঝ) সতত মৃত্তিকা দ্রব্যের অপসারণ

(ঞ) তীব্র বায়ু ও পানি ভূমি ক্ষয়

(ট) অধিক গর্ত খননকারী প্রাণী, ইত্যাদি

 

সূত্র:

মৃত্তিকা গঠনের উপাদান ,পাঠ ১.২, ইউনিট ১ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি

 

বীজমান নিয়ন্ত্রণ

কৃষিতে উচ্চ ফলন ও টেকসই উৎপাদনের মূল চাবিকাঠি হলো মানসম্মত বীজ। অথচ এই বীজের গুণগত মান নিশ্চিত না হলে কৃষকের পরিশ্রম ও উৎপাদনশীলতার উপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। তাই বীজের গুণমান নিয়ন্ত্রণ বা বীজমান নিয়ন্ত্রণ কৃষি প্রযুক্তির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অনিবার্য অংশ।

আজকের আলোচনায় আমরা জানতে চেষ্টা করব—বীজমান নিয়ন্ত্রণ বলতে কী বোঝায়, কেন এটি প্রয়োজনীয়, কীভাবে এই নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করা হয়, এবং বাংলাদেশে বীজমান নিয়ন্ত্রণের আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো কেমন। এই পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বীজমান যাচাই, পরীক্ষণ, প্রত্যয়ন ও তত্ত্বাবধান প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা লাভ করবে, যা বাস্তব কৃষি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(বীজ ও বীজ প্রযুক্তি | ইউনিট: ৩ | পাঠ: ৩.৩)

 

বীজমান নিয়ন্ত্রণ

 

বীজমান কী?

বীজের মান বা বীজমান নির্ধারিত হয় একাধিক উপাদানের ভিত্তিতে। এর মধ্যে প্রধান হলো—বীজের বিশুদ্ধতা, অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা, স্বাস্থ্য এবং কৌলিতাত্ত্বিক বিশুদ্ধতা।

বীজের বিশুদ্ধতা বলতে বোঝানো হয় একটি বীজের নমুনায় কতটুকু ধুলাবালি, কাঁকড়, মাটি, আগাছার বীজ, অন্যান্য ফসলের বীজ বা উদ্ভিদের অন্যান্য অংশ উপস্থিত রয়েছে। এই বিশুদ্ধতার মাত্রাই অনেকাংশে বীজের সামগ্রিক গুণমানকে নির্ধারণ করে।

ইতঃপূর্বে আমরা বীজের অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা, স্বাস্থ্যগত অবস্থা ও কৌলিতাত্ত্বিক বিশুদ্ধতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি।

 

বীজের মান নিয়ন্ত্রণ প্রত্যয়ন

বীজমান নিশ্চিতকরণে বীজ প্রত্যয়ন কার্যক্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। উন্নত ও মানসম্মত বীজ উৎপাদন নিশ্চিত করতে এই কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।

বাংলাদেশে বীজ প্রত্যয়ন ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় ১৯৭৪ সালে শস্য বীজ প্রকল্পের আওতায়, যখন বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে, এই কার্যক্রমকে আইনগত বৈধতা দিতে প্রণয়ন করা হয় বীজ অধ্যাদেশ ১৯৭৭ এবং বীজ বিধিমালা ১৯৮০

 

বীজের মান নিয়ন্ত্রণে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো কার্যক্রম

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজনন ও ভিত্তি বীজ উৎপাদন করে। এই বীজসমূহ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বি..ডি.সি) বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও সরবরাহ করে, এবং বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি সেগুলোর প্রত্যয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে।

বীজ অধ্যাদেশ ১৯৭৭ ও বীজ বিধি ১৯৮০ অনুযায়ী, বীজের উৎপাদন, প্রত্যয়ন, বাজারজাতকরণ প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিধিমালার আওতায় বীজের বংশগত বিশুদ্ধতা, বাহ্যিক বিশুদ্ধতা, আর্দ্রতাঅঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতার নির্ধারিত মান যাচাই করা হয়।

বি.এ.ডি.সি বীজ উৎপাদনের প্রতিটি পর্যায়ে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ অনুসরণ করে। বীজ বপনের শুরু থেকে ফসল কাটার পর গুদামজাত করার শেষ পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে নিয়মিত তদারকি ও পর্যবেক্ষণ চালানো হয়।

 

মাঠপর্যায়ে বীজের মাননিয়ন্ত্রণ যাচাই

বীজ ফসলের মাঠ নিয়মমাফিক রোগিং করা হয় এবং বি.এ.ডি.সি ও বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি যৌথভাবে মাঠ পরিদর্শন করে থাকে। কেবলমাত্র নির্ধারিত মানসম্পন্ন ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে যথাযথভাবে গ্রেডিং, ক্লিনিং এবং প্রস্তুতকরণ কার্যক্রম সম্পাদিত হয়।

বিতরণ মৌসুমের আগে প্রতিটি বীজ লট বি.এ.ডি.সি এবং বীজ প্রত্যয়ন প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ পরীক্ষাগারে পৃথকভাবে পরীক্ষা করে। গুণগত মান নিশ্চিত হলে যৌথ ট্যাগযুক্ত প্যাকেট আকারে সরবরাহ করা হয়।

জাতীয় বীজ বোর্ড নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ফসলের মাঠমান ও বীজমান নির্ধারণ করে থাকে, যা দেশের সার্বিক কৃষি উৎপাদনে মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

 

 

 

বীজের মানের অবনতি:

বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণের যে কোন স্তরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বীজের তেজ ও মানের অবনতি ঘটার কারণসমূহ নিম্নে বিশদভাবে আলোচনা করা হলো :

বীজ ফসল কাটার পূর্বে বীজের মানের অবনতি :

বীজ ফসল কাটার পূর্বে অর্থাৎ ফসল মাঠে থাকা অবস্থায়ই বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বীজের তেজ ও মানের অবনতি ঘটতে পারে। যে সব কারণে ফসল মাঠে থাকা অবস্থায়ই বীজ মানের অবনতি ঘটে তা মোটামুটি নিম্নরূপ :

(ক) বৃদ্ধিকালে বীজের মানের অবনতি :

অতিরিক্ত শুষ্ক ও উষ্ণ আবহাওয়া থাকলে বীজ স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি লাভ করতে পারে না এবং দ্রুত পরিপক্কতা লাভ করে। ফলে বীজ ছোট আকারের ও নিম্ন তেজ সম্পন্ন হয় এবং অনেক বীজ অপুষ্ট থেকে যায়।

(খ) বীজ পরিপক্কতা লাভ কালে বীজের মানের অবনতি :

অতিরিক্ত শুষ্ক ও উষ্ণ আবহাওয়া থাকলে বীজ দ্রুত শুকাতে থাকে। ফলে বীজ আবরণী ও বীজদলে ফাটলের সৃষ্টি হয়। এমনকি ভ্রূণেও ফাটলের সৃষ্টি হতে পারে। এ ফাটল বীজের তেজ ও মানের অবনতি ঘটায়। এ ধরনের বীজ বপন করলে অঙ্কুরোদগমকালে বিভিন্ন রোগজীবাণু দ্বারা সহজেই আক্রান্ত হয় এবং সাধারণতঃ অস্বাভাবিক চারার জন্ম দেয়।

(গ) বীজ পরিপক্কতা লাভের পর বীজের মানের অবনতি :

হঠাৎ করে বৃষ্টি হলে বীজ ভিজে যায়। চরম ক্ষেত্রে গাছে লেগে থাকা অবস্থায়ই বীজ গজিয়ে যেতে পারে।

(ঘ) বীজ পরিপক্কতা লাভের পরও বীজ ফসল কাটতে দেরী হলে বীজের মানের অবনতি :

কোন কোন পরিস্থিতিতে ক্ষেতের চরম পারিপার্শ্বিক অবস্থা বীজের মান নষ্ট করতে পারে। দিন ও রাত্রের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার তারতম্যও শুষ্ক বীজের ক্ষতি সাধন করে।

 

বীজফসল কাটা থেকে শুরু করে সংরক্ষণের পূর্ব পর্যন্ত বীজের মানের অবনতি:

বীজ ফসল কাটা ও মাড়াই কালে এবং বীজ শুকানো ও প্রক্রিয়াজাত করার সময় বিভিন্নভাবে বীজের মান নষ্ট হতে পারে। এর যে কোনো পর্যায়ে যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও পতনের ফলে বীজ আঘাত প্রাপ্ত হলে বীজের আবরণ, বীজদল ও ভ্রূণে ফাটল ধরতে পারে। বীজ শুকানোর সময় উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাবেও বীজের মান নষ্ট হতে পারে।

 

বীজ সংরক্ষণকালে বীজের মানের অবনতি:

যথাযথভাবে বীজ সংরক্ষণ করতে না পারলে উন্নত মানের বীজেরও অবনতি হতে পারে। সদ্য সংগৃহীত উচ্চ তেজ সম্পন্ন বীজও সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হলে তার মানের দ্রুত অবনতি ঘটবে। সংরক্ষণ কালে বীজে অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াসমূহের মাত্রা যত বেশি থাকবে বীজের তেজ তত তাড়াতাড়ি নষ্ট হবে। বীজের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াসমূহের মাত্রা আবার নির্ভর করে বিরাজমান তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার উপর। তাই বীজের তেজ ও মান দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে বীজ এমন অবস্থায় সংরক্ষণ করতে হবে যেখানে বীজের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াসমূহের মাত্রা থাকবে নিম্নতম। অতএব তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ বীজ সংরক্ষণের চাবিকাঠি। এ ছাড়াও সংরক্ষণ অবস্থার ওপর নির্ভর করে পোকামাকড় ও ইঁদুরের আক্রমণে বীজের মান নষ্ট হতে পারে।

সংরক্ষণাগারে বীজের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার তেজ ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। এর প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে উক্ত বীজ থেকে উৎপাদিত চারার বৃদ্ধি কমে আসে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বীজের তেজ আরো কমে গেলে সে বীজ প্রতিকূল অবস্থায় শুষ্ক মাটি ও নিম্ন তাপমাত্রায় অংকুরিত হতে পারেনা এবং শেষ পর্যায়ে বীজের মৃত্যু ঘটতে পারে। সময়ের ব্যবধানে সংরক্ষণাগারে বীজের মান কত দ্রুত নষ্ট হবে তা নির্ভর করে বীজের প্রাথমিক তেজ বা গুণগত মান, বীজে রোগজীবাণুর উপস্থিতি, গুদামজাত করার শুরুতে বীজে জলীয় ভাগ ও সংরক্ষণাগারের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার ওপর।

যথাযথ পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করে সংরক্ষণাগারে বীজের মান নষ্ট হওয়ার গতিকে অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। সাধারণভাবে বলা যায় যে, সংরক্ষণাগারের তাপমাত্রা ও বীজের জলীয় ভাগ যত বেশি হবে, বীজের তেজ তত দ্রুত নষ্ট হবে। বীজের জলীয়ভাগ অবশ্য সংরক্ষণাগারের আর্দ্রতার ওপর নির্ভরশীল। বীজ বিজ্ঞানী হ্যারিংটন তার নিজস্ব গবেষণা ও অন্যান্য গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে বীজ সংরক্ষণের ওপর নিম্নলিখিত দুটি মতবাদ ব্যক্ত করেছেন (হ্যারিংটন-১৯৭০) :

 

বীজ বিজ্ঞানী হ্যারিংটনের দুটি মতবাদ:

  •  সংরক্ষণাগারে বীজের তাপমাত্রা প্রতি ৫ সেন্টিগ্রেড কমানোর ফলে বীজের সংরক্ষণকাল দ্বিগুণ হবে। এ নিয়ম ৫০ – ০° সেঃ তাপমাত্রা সীমার মধ্যে প্রযোজ্য।
  • সংরক্ষণাগারে বীজের জলীয়ভাগ ১% কমানোর ফলে বীজের সংরক্ষণকাল দ্বিগুণ হবে। এ নিয়ম বীজের ১৪৪% জলীয়ভাগ সীমার মধ্যে প্রযোজ্য।

 

হ্যারিংটন উদাহরণস্বরূপ দেখিয়েছেন যে, পেয়াজ বীজ ১২% জলীয় ভাগ ও ৪০° সেঃ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করলে ১ সপ্তাহের মধ্যে মরে যাবে, কিন্তু ৭% জলীয় ভাগ ও ১০° সেঃ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করলে ২০ বৎসর পরও তা অঙ্কুরিত হবে। বীজ সংরক্ষণের জন্য অপর একটি প্রচলিত সহজ নিয়ম হচ্ছে- সংরক্ষণাগারের আপেক্ষিক আর্দ্রতা (%) ও তাপমাত্রার (ফারেনহাইটে) যোগফল ১০০ এর অধিক হবে না।

সংরক্ষণকালে বীজের অভ্যন্তরে জলীয় ভাগের বিভিন্ন পরিমাণ বীজের মানকে যথেষ্ট প্রভাবিত করতে পারে। নিম্নে তার একটি বিবরণ দেয়া হলো :

উচ্চ তাপমাত্রা ও অধিক জলীয় অংশে বীজ সংরক্ষণের ফলে বীজ মানের দ্রুত অবনতি ঘটলেও শুধুমাত্র তাপমাত্রা কমিয়ে কিংবা বীজের জলীয় ভাগ কমিয়ে বীজের সংরক্ষণকাল আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

 

সূত্র:

  • বীজমান নিয়ন্ত্রণ , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি , ইউনিট-৩ , পাঠ-৩.৩

বীজ প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা

কৃষি উৎপাদনের মূল ভিত্তি হলো বীজ। একটি উন্নতমানের বীজ কৃষকের সাফল্যের চাবিকাঠি। তাই কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে বীজ প্রযুক্তি। এর সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে ফসলের গুণগত ও পরিমাণগত উন্নতি সম্ভব। বর্তমান পাঠে আমরা বীজ প্রযুক্তির সংজ্ঞা, ধাপ, উপকারিতা ও এর গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

বীজ প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা

(ইউনিট-৩: বীজ ও বীজ প্রযুক্তি, পাঠ-৩.১)

🔍 বীজ প্রযুক্তি কী?

বীজ প্রযুক্তি বলতে বোঝায়—বীজ উৎপাদন, সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বিপণনের পুরো প্রক্রিয়াজাত ধাপসমূহে অনুসরণযোগ্য বিজ্ঞানসম্মত কলাকৌশলসমূহ। এটি একটি সমন্বিত ব্যবস্থা, যার লক্ষ্য হলো গুণগত মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন ও কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

 

⚙️ বীজ প্রযুক্তির ধাপসমূহ:

বীজ উৎপাদন এবং সংরক্ষণের প্রতিটি পর্যায়ে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হয়, যেমন:

  1. উপযুক্ত জমি স্থান নির্বাচন
  2. উন্নত জাত নির্বাচন রোগমুক্ত বীজ সংগ্রহ
  3. পরিবেশ মাটির ধরন অনুযায়ী চাষাবাদ
  4. পর্যাপ্ত সার সেচের ব্যবহার
  5. আগাছা, রোগ পোকা দমন
  6. রোগিং (অবিশুদ্ধ গাছ সরানো) পর্যাপ্ত দূরত্ব রাখা
  7. সঠিক সময়ে ফসল সংগ্রহ প্রক্রিয়াজাতকরণ
  8. পরিশেষে বীজ সংরক্ষণ মান নিয়ন্ত্রণ

এ সকল ধাপ সঠিকভাবে অনুসরণ করলে, বীজের বিশুদ্ধতা, অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা, স্বাস্থ্য জেনেটিক বিশুদ্ধতা বজায় থাকে।

 

🏭 বাংলাদেশের বীজ উৎপাদন কাঠামো

বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর অধীনে ২৪টি বীজ বর্ধন খামারে ধান, গম এবং কিছু আলু জাতের ভিত্তি ও প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদন করা হয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ উদ্ভাবিত এবং জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত জাতগুলো থেকে প্রজনন বীজ সংগ্রহ করে এ উৎপাদন শুরু হয়।

পরবর্তীতে এই বীজ চুক্তিবদ্ধ চাষিদের মাধ্যমে প্রত্যায়িত বীজ হিসেবে উৎপাদন করে কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

 

🚜 চাষিদের মধ্যে প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাব

বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষক এখনো সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন। তারা নিজের উৎপাদিত ফসল থেকে বীজ আলাদা করে সংরক্ষণ করে থাকেন, যা সঠিক পদ্ধতিতে না হওয়ায় বীজের গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ফসলের ফলন আশানুরূপ হয় না।

উন্নত দেশগুলোতে ধানের গড় ফলন যেখানে ৫–টন/হেক্টর, সেখানে বাংলাদেশে তা মাত্র টন/হেক্টর। অথচ সার, পানি ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করেও এ ব্যবধান কমানো যাচ্ছে না। এর প্রধান কারণ হলো—গুণগতমানসম্পন্ন বীজের অভাব।

 

🌾 হাইব্রিড বীজ: আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন

হাইব্রিড (সংকর) বীজ বীজ প্রযুক্তির একটি বড় অর্জন। এগুলো মুক্ত পরাগায়িত বীজের তুলনায় অনেক বেশি সমরূপ, অধিক ফলনশীল, কষ্ট সহিষ্ণু এবং রোগ প্রতিরোধক্ষম। যদিও হাইব্রিড বীজের দাম বেশি, তবে অধিক ফলন দেওয়ায় তা কৃষকের জন্য লাভজনক।

 

বীজ প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগই দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান পথ। ফসল উৎপাদনে স্থবিরতা কাটিয়ে উঠে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের জন্য কৃষকদের আধুনিক বীজ ব্যবস্থাপনা এবং হাইব্রিড বীজ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা জরুরি। তাই ক্রপিং ইনটেনসিটি’হেক্টর প্রতি উৎপাদন’ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বীজ প্রযুক্তির উন্নয়ন বিস্তার একান্ত প্রয়োজন।

বীজ ফসল উত্তোলন বা বীজ কর্তন

বীজ ফসল উত্তোলন বা বীজ কর্তন আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি বীজ ও বীজ প্রযুক্তি বিষয়ের ২ নং ইউনিটের ২.২ নম্বর পাঠ।

বীজ ফসল উত্তোলন বা বীজ কর্তন

বীজ ফসল উত্তোলন বা বীজ কর্তন সঠিক পরিপক্কতা বীজের সর্বোচ্চ ফলন ও উৎকৃষ্ট গুণ সম্পন্ন হতে সহায়তা করে। অপরিপক্কতা বা অতি পরিপক্কতা উভয় অবস্থাতেই বীজের গুণাগুণ ও ফলন ক্ষতিগ্রস্হ হতে পারে। তাই সঠিক পরিপক্কতায় বীজ ফসল উত্তোলন /কর্তন করতে হয়। ফসল তোলা বা কাটার সময় বা পদ্ধতি উভয়ই বীজের মান ও পরিমাণকে প্রভাবিত করে। মাঠে বীজ উৎপাদনের সকল কার্যক্রম এবং পরিচর্যা শেষ করার পরেই মাঠের সর্বশেষ কার্যক্রম হচ্ছে ফসল কর্তন।

বীজ উৎপাদন গাছের বংশ রক্ষার একমাত্র উপায়। তাছাড়া ফসলের ফলন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ভালো বীজ উৎপাদনের বিকল্প নেই। সাধারণ ফসল উৎপাদন পদ্ধতির চেয়ে বীজ ফসল উৎপাদন পদ্ধতি কিছুটা আলাদা। অর্থাৎ বীজ ফসল উৎপাদন করার জন্য বিশেষ কিছু পরিচর্যা ও যত্ন নেয়া প্রয়োজন। আমরা বীজ থেকে ফসল উৎপাদন করি খাওয়ার জন্য।

কিন্তু যখন বীজ হিসেবে ফসল উৎপন্ন করব তখন সতর্কতার সাথে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। যেমন : ভালো বীজ ব্যবহার, উপযুক্ত স্হান ও জমি নির্বাচন, জমি সুচারুরূপে কর্ষন করা এবং মাত্রা মোতাবেক সার প্রয়োগ করা, নির্দিষ্ট ফসলের জন্য নির্দিষ্ট নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা যাতে বিজাতি বা অন্য জাতের সাথে পরাগায়ন হতে না পারে, উত্তমরূপে আগাছা দমন করা এবং সময়মত ও প্রয়োজন মাফিক কীটনাশক/বালাইনাশক স্প্রে করা যাতে বীজ ফসল পোকামাকড় বা রোগবালাই দ্বারা আক্রান্ত না হয়।

বীজ ফসল নির্দিষ্ট সময়ে পরিপক্ক ও পুষ্ট হওয়ার পর বীজ সংগ্রহ করতে হবে। এ ইউনিটে বীজ উৎপাদনের বিস্তারিত পদ্ধতি, আগাছা দমন ও রোগিং এবং বীজ ফসল সংগ্রহের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

 

বীজ ফসল কর্তনের সময়:

বীজের সর্বোচ্চ ফলন ও উৎকৃষ্ট মান পেতে হলে উপযুক্ত সময়ে ফসল কর্তন করতে হবে। বীজ যখন যথাযথভাবে পুষ্ট ও পরিপক্ক হয়, বৃষ্টি বাদলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না এবং ফসল সংগ্রহজনিত সর্বনিম্ন ক্ষতি স্বীকার করে সহজে কাটা এবং পরিষ্কার করার উপযোগী হয় তখনই ফসল কাটার উপযুক্ত সময় হয়েছে ধরে নিতে হবে। ফসল যদি আগে কাটা হয় তবে বীজের মধ্যে অত্যাধিক আর্দ্রতা এবং অপরিপক্কতা থাকার দরুন যন্ত্র দ্বারা (Combine harvester) ফসল কাটা ও মাড়াই করা অসুবিধাজনক হয়ে ওঠে এবং মাড়াই, ঝাড়াই ও পরিষ্কার করার সময় বীজের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।

আবার বিলম্বে কাটলে, আবহাওয়ার খারাপ প্রতিক্রিয়ার দরুন বীজ মানের অবনতিসহ ফসল হেলে পড়া বা দানা/বীজ ঝরে যাওয়ার কারণে ফলন কমে যায়। অতএব এর মাঝামাঝি কোন এক সময়কেই ফসল তোলার উপযুক্ত সময় ধরে নিতে হবে।

 

বীজ কর্তন পদ্ধতি:

বাংলাদেশে সাধারণত হাত দ্বারা (কাস্তে দিয়ে) ফসল কাটা হয়। বীজে যাতে কোন যান্ত্রিক ক্ষত বা মিশ্রণ না ঘটে, ফসল কাটার সময় সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

কমবাইন হারভেস্টার (Combine harvester) দ্বারা ফসল কর্তন করা হলে যন্ত্রটি ব্যবহারের পূর্বে ভালোভাবে পরিষ্কার এবং এর বিভিন্ন অংশ যথাযথভাবে সংযোজন করে ব্যবহার করা উচিত। নতুবা বীজে যান্ত্রিক মিশ্রণ ও ক্ষত সহ বীজের মানের অবনতি হতে পারে।

কমবাইন ফসল কাটা যন্ত্ৰ:

এ যন্ত্র দ্বারা একই সাথে বীজ কাটা ও মাড়াই হয় এবং বস্তা ভর্তি ও সেলাই হয়ে যায়। এটি ব্যয়বহুল যন্ত্র। বাংলাদেশে কেবল সরকারী খামারে এ ধরনের কমবাইন যন্ত্র ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

 

সূত্র:

  • বীজ ফসল উত্তোলন/কর্তন , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি , ইউনিট-২ , পাঠ-২.৩

আগাছা দমন ও রোগিং

আগাছা দমন ও রোগিং নিয়ে আজকের আলোচনা।  বীজ ফসলের জমিতে অনাকাঙ্খিত কোন উদ্ভিদ জন্মালে তাকে আগাছা বলা যাবে। এই আগাছা বীজ ফসলের সাথে খাদ্য ও পানি গ্রহণে প্রতিযোগিতা করবে ও বীজ ফসলকে সুষ্ঠুভাবে বৃদ্ধি হতে দেবে না। তাই বীজ ফসলের প্লট সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। বীজ প্লটের পরিচর্যা আলোচনাকালে বিষয়টি বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বীজ উৎপাদন গাছের বংশ রক্ষার একমাত্র উপায়। তাছাড়া ফসলের ফলন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ভালো বীজ উৎপাদনের বিকল্প নেই। সাধারণ ফসল উৎপাদন পদ্ধতির চেয়ে বীজ ফসল উৎপাদন পদ্ধতি কিছুটা আলাদা।

অর্থাৎ বীজ ফসল উৎপাদন করার জন্য বিশেষ কিছু পরিচর্যা ও যত্ন নেয়া প্রয়োজন। আমরা বীজ থেকে ফসল উৎপাদন করি খাওয়ার জন্য। কিন্তু যখন বীজ হিসেবে ফসল উৎপন্ন করব তখন সতর্কতার সাথে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।

আগাছা দমন ও রোগিং

যেমন : ভালো বীজ ব্যবহার, উপযুক্ত স্হান ও জমি নির্বাচন, জমি সুচারুরূপে কর্ষন করা এবং মাত্রা মোতাবেক সার প্রয়োগ করা, নির্দিষ্ট ফসলের জন্য নির্দিষ্ট নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা যাতে বিজাতি বা অন্য জাতের সাথে পরাগায়ন হতে না পারে, উত্তমরূপে আগাছা দমন করা এবং সময়মত ও প্রয়োজন মাফিক কীটনাশক/বালাইনাশক স্প্রে করা যাতে বীজ ফসল পোকামাকড় বা রোগবালাই দ্বারা আক্রান্ত না হয়। বীজ ফসল নির্দিষ্ট সময়ে পরিপক্ক ও পুষ্ট হওয়ার পর বীজ সংগ্রহ করতে হবে।

রোগিং:

বীজ ফসলের জমিতে অন্য ফসল, অন্য জাত বা একই জাতের অবক্ষয় প্রাপ্ত গাছ জন্মালে সেগুলোকে তুলে ফেলে অপসারণ করাকে রোগিং বলে। বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়াটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ গুলোর উপস্হিতি বীজের বিশুদ্ধতা নষ্ট করে। পর পরাগায়নের মাধ্যমে নির্ধারিত জাতটির যাতে অবক্ষয় না হয় তার জন্য গাছে ফুল আসার আগেই যথা সম্ভব রোগিং করা উচিত। কতবার রোগিং করতে হবে তা নির্ভর করবে ফসল এবং মাঠের অবস্হার ওপর। সাধারণত সকল ফসলের বেলায় নিম্নের যে কোন স্তরে অথবা সব কটি স্তরেই রোগিং করার প্রয়োজন হতে পারে

(ক) গাছের বৃদ্ধি/ফুল আসার আগে।

(খ) ফুল আসার সময়।

(গ) ফসলের পরিপক্কতা আসার পূর্ববর্তী সময়ে।

গাছের বৃদ্ধির সময় এবং ফুল আসার আগেই সর্বপ্রথম রোগিং করা উচিত, যাতে অন্য জাতের সাথে সংক্রমিত হয়ে নির্বাচিত জাতটির বংশগত বিশুদ্ধতা নষ্ট না হয়। এ সময় নির্বাচিত জাতটির সাথে উচ্চতায়, গাছের রং এর বিভিন্নতায়, পাতার আকার ও গঠনে এবং অন্য যে কোন দৃশ্যমান বৈশিষ্ট্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেই তা মাঠ থেকে নির্মূল করতে হবে। এমনকি একই জাতের রোগাক্রান্ত এবং বিকলাংগ গাছ সমূলে তুলে দূরে ফেলে দিতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

 

প্রথম রোগিং এর সময় অনাকাঙ্খিত কোন গাছ চিনতে না পারলে, দ্বিতীয় রোগিং অর্থাৎ ফুল আসার সময় সেগুলোকে নির্মূল করতে হবে। এ সময় খুব সাবধানে রোগিং করা না হলে অনাকাঙ্খিত গাছের পরাগরেনু বাতাসে ছড়িয়ে যেতে পারে। তৃতীয় এবং সর্বশেষ রোগিং ফসল পরিপক্ক হওয়ার পূর্ববর্তী সময়ে করা প্রয়োজন। এ সময় নির্বাচিত জাতটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয় এমন সব গাছ (Off type) তুলে ফেলতে হবে। জাতের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য রোগিং একটি উত্তম পদ্ধতি। ভালো বীজ উৎপাদনের জন্য ফসল ও মাঠের অবস্থাভেদে প্রয়োজনীয় সংখ্যক রোগিং করা আবশ্যক।

সূত্র:

  • আগাছা দমন ও রোগিং , বীজ ও বীজ প্রযুক্তি , ইউনিট-২ , পাঠ-২.২

বীজ উৎপাদন : স্থান নির্বাচন, জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ

বীজ উৎপাদন: স্থান নির্বাচন, জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ – পাঠটি “বীজ ও বীজ প্রযুক্তি” বিষয়ের ২ নং ইউনিটের ২.১ নং পাঠের অংশ। যে কোন জাতের বীজ উৎপাদনে স্থানীয় এলাকার জলবায়ুর প্রভাব অত্যন্ত বেশি। সুতরাং বীজ উৎপাদনের সময় ঐ এলাকার মাটির প্রকৃতি এবং জলবায়ু, যেমন : তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, সুর্যের আলো, দিবসের দৈর্ঘ্য ( Day length), ভূমির উচ্চতা, বাতাসের আর্দ্রতা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে। যে জাত যে পারিপার্শ্বিকতার উপযোগী এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক এবং ব্যাপক চাহিদা আছে সেই জাতের বীজই সেই এলাকায় উৎপাদন করা উচিত।

বীজ উৎপাদন

অধিকাংশ ফসলের ফুলের বৃদ্ধি এবং পরাগায়নের জন্য সূর্যালোকিত শুষ্ক দিন এবং মধ্যম তাপমাত্রার প্রয়োজন। তাই বীজ উৎপাদনের জন্য বাতাসের আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মোটামুটি মাঝারী হলে ভালো হয়। বাতাস অনেক ফসলের পরাগায়নে সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে রৌদ্রজ্জল আবহাওয়ার সাথে হালকা বাতাস ভালো বীজ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত পোকামাকড় ও রোগবালাই এর প্রার্দুভাব ঘটায় এবং বীজকর্তন থেকে বীজ শুকানো পর্যন্ত সকল স্তরে অসুবিধার সৃষ্টি করে। তাই উন্নত মানের বীজ উৎপাদনের জন্য প্রচুর সুর্যের আলো, মাঝারী বৃষ্টিপাত, শুষ্ক ও ঠান্ডা আবহাওয়া এবং পরাগায়নের সময় হালকা বাতাস প্রবাহিত হয় এ ধরনের স্থান নির্বাচন করা উচিত।

 

বীজ উৎপাদনের জন্য জমি নির্বাচন:

জমি নির্বাচন কালে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে :

(ক) জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ উর্বর দোআঁশ মাটি বীজ উৎপাদনের জন্য উত্তম। কারণ এ ধরনের মাটি পর্যাপ্ত রস ও খাদ্যোপাদান ধারণ এবং অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করতে পারে। বীজ উৎপাদনের জমি সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত হওয়া সমীচীন।

(খ) বীজ ফসলের মাটি রোগ জীবাণু এবং ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ মুক্ত হওয়া একান্তপ্রয়োজন। যথোপযুক্ত শস্য পর্যায় ও আবাদ প্রযুক্তি অনুসরণ এবং পরিচ্ছন্ন চাষাবাদের ব্যবস্হা করেও রোগ ও পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

(গ) কোন জমিতে উপর্যুপরি একই জাতের বা পরিবারের সবজি চাষ এবং দুই  তিন বৎসরের মধ্যে সমগোত্রীয় সবজির উৎপাদন করা অনুচিত।

(ঘ) বীজ প্লট সমতল হওয়া উচিত।

 

বীজ উৎপাদনের জন্য জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ:

বীজ উৎপাদনের জন্য নির্বাচিত জমি অবশ্যই উত্তমরূপে তৈরি করতে হবে। ভালোভাবে জমি কর্ষণ করে মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে। জমি ভালোভাবে তৈরি করা হলে বীজ ভালোভাবে অঙ্কুরিত হবে। এ ছাড়াও জমি সমতল হওয়ার কারণে নিয়ন্ত্রিত সেচ প্রয়োগ করা সম্ভব হবে।

বীজের গঠন, পরিপুষ্টি ও ফলন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের প্রয়োজন হয়। বীজ ফসলের সমন্বিত বৃদ্ধির জন্য সঠিক নিয়মে ও সুষম মাত্রায় জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগ করা উচিত। সাধারণত নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম বীজ ফসলের সমন্বিত বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গাছের বৃদ্ধি ও ফলনের উপর নাইট্রোজেনের প্রভাব অত্যন্ত বেশি। নাইট্রোজেনের সুষ্ঠু প্রয়োগ যেমন এ কাজে সহায়তা করে, অতিরিক্ত প্রয়োগেও তেমনি ফসলের পরিপক্কতা বিলম্বিত হওয়ার কারণে বীজ মানের সাংঘাতিক অবনতি হতে পারে।

তাই গাছের বৃদ্ধি বিবেচনা করে নাইট্রোজেন সার কিস্তিতে প্রয়োগ করা বাঞ্ছনীয়। বীজ বপনের কিছুদিন পর প্রথম এবং ফুল আসার সময় দ্বিতীয় মাত্রার নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফসলের বীজের ফলন ও মান উন্নয়নে সহায়তা করে। ফসফরাসের সুষম মাত্রা গাছের শিকড় বৃদ্ধি, কান্ডকে শক্ত ও মজবুত, বীজের ফলন ও পরিপক্কতা বৃদ্ধি ও ফসলকে আগে পাকতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম ফুল ও ফলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং রোগ দমন ও বীজের গুণগতমান উন্নয়নে সাহায্য করে।

এ ছাড়াও অন্যান্য খাদ্য উপাদান যেমন : সালফার, বোরন, ম্যাগনেশিয়াম, কপার ও জিংক এর অভাব বীজ পরিপক্কতা ও বীজ গঠনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। তাই মাটি পরীক্ষা করে সুষম সার প্রয়োগ করা উচিত।

 

বীজ নির্বাচন:

বীজ ফসল উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত বীজ অবশ্যই নির্ধারিত মানের (জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত) এবং পরিচিত ও অনুমোদিত উৎস থেকে সংগৃহীত হতে হবে। বীজ কেনার সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করা প্রয়োজন :

(ক) নির্ধারিত শ্রেণীর বীজ ক্রয়, যেমন : ভিত্তি বীজ উৎপাদন করতে হলে মৌল বীজ ব্যবহার করতে হবে। তেমনি প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদনের জন্য ভিত্তি বীজের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

(খ) ক্রয় করা মৌল বীজ/ভিত্তি বীজের বস্তায় বীজ উৎপাদনকারী ও বীজ প্রত্যয়ন সংস্হার সরবরাহকৃত ট্যাগ ও সিল অক্ষুন্ন থাকতে হবে।

(গ) ব্যবহারের সময়সীমা উত্তীর্ণ হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

(ঘ) ক্রয় করা সকল বীজ একই জাতের কি না তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

বীজ বপন:

প্রায় বীজই সারিতে বপন/রোপণ করা ভালো। নির্দিষ্ট দূরত্বে সারিতে বীজ বপন করলে তা যথেষ্ট আলো বাতাস ও খাদ্য পাবে। বীজ ফসলের অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা সুবিধাজনক হবে এবং বীজও কম লাগবে। সারিতে বীজ বপনের জন্য বীজ বপন যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তা ব্যবহার করার আগে অবশ্যই পরিস্কার করে নিতে হবে যেন উক্ত যন্ত্রে অন্য কোন জাতের বীজ আটকিয়ে না থাকে।

ফসলকে ভালোভাবে দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য বপনের গভীরতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ছোট ছোট বীজ অল্প গভীরে এবং বড় আকারের বীজ মাটির গভীরে বপন করা হয়। কর্দমাক্ত মাটির চেয়ে বেলে মাটিতে অধিক গভীরে বীজ বপন করতে হয়। শুষ্ক মাটিতে কিছুটা গভীরে বীজ বপন করা হলে মাটির আর্দ্রতার সংস্পর্শে এসে অঙ্কুরিত হতে সাহায্য করবে। বীজ বপনের গভীরতা অনেকটা নির্ভর করে মাটির প্রকৃতি, মাটিতে রসের পরিমাণ এবং বীজের আকারের উপর।

 

নিরাপদ দূরত্ব:

বীজ ফসলকে কলুষিত হওয়ার সম্ভাব্য সকল উৎস থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা হয়। অর্থাৎ ভিন্ন জাতের সাথে যাতে পর পরাগায়ন না ঘটে তার জন্য যথাযথ দূরত্ব অবশ্যই বজায় রাখতে হয়। বীজ ফসলের জন্য এটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যথোপযুক্তভাবে পালন করলে এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জাতের মধ্যে পরপরাগায়ন, শস্য সংগ্রহকালীন সংমিশ্রণ এবং সমগোত্রীয় অন্যান্য ফসল থেকে রোগ ও পোকার বিস্তার রোধ করা যায়। যদি কোন কারণে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না হয়, তবে বীজ প্লটের চারদিকে একই ফসলের অতিরিক্ত বর্ডার লাইন রোপণ করে বীজ প্লটের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব।

নিরাপদ দূরত্ব নির্ভর করে বিভিন্ন ফসলের বিভিন্ন জাতের এবং কোন শ্রেণীর বীজ তার ওপর। যেমন : ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদনের বেলায় ২০০ মিটারের মধ্যে একই সময়ে বা একই মৌসুমে নিম্নমানের বীজ দ্বারা আবাদকৃত আলু ফসল বা জাব পোকার আশ্রয়দানকারী ফসল গাছ যেমন : তামাক, মরিচ, বেগুন বা অন্য স্হানীয় জাতের আলুর চাষকরা চলবে না। কারণ ভাইরাস রোগ জাব পোকার মাধ্যমে বীজ আলুতে সংক্রমন হতে পারে। নিম্নে বিভিন্ন ফসলের নিরাপদ দূরত্বের এবং পরাগায়নের ধরনের একটি তালিকা দেয়া হলো :

আগাছা দমন:

বীজ প্লট সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। কারণ জমিতে আগাছা থাকলে বীজ ফসল কর্তনের সময় আগাছা মিশ্রিত থাকার ফলে মাড়াই অংগনে ফসলের বীজ এবং আগাছা বীজ একত্রে মিশে বীজের মানের অবনতি ঘটায়। তাছাড়া আগাছা মূল ফসলের সাথে খাদ্য ও পানি গ্রহণে প্রতিযোগিতা করে বিধায় বীজ ফসলের সুষ্ঠু বৃদ্ধি হয় না। আগাছা পোকামাকড় ও রোগজীবাণুর আশ্রয়স্হল। অতএব বীজ প্লটকে সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে পারলে মান সম্পন্ন বীজ উৎপাদন সম্ভব হবে।

 

কীট-পতংগ ও রোগবালাই দমন:

রোগ ও পোকার আক্রমণে কেবল ফলনই হ্রাস পায় না, অনেক সময় বীজে সংক্রামক রোগের আক্রমণও ঘটে। তাই বীজ প্লটকে কীট পতংগ ও রোগবালাই এর হাত থেকে রক্ষা করতে পারলে শুধুমাত্র বীজের ফলনই বৃদ্ধি পাবে না, সাথে সাথে রোগমুক্ত ও স্বাস্থ্যবান বীজও পাওয়া যাবে। কীট পতংগ এবং রোগবালাই সময়মত দমন করা না হলে বীজের মান নষ্ট হতে পারে।

কিছু কিছু জীবাণু বীজের মধ্যে থাকে যা খালি চোখে দেখা যায় না। যদি এ সমস্ত রোগ দমন করা না হয় তবে রোগের জীবাণু উৎপাদিত বীজের মধ্যে অনেকদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে যা পরবর্তী মৌসুমে রোগাক্রান্ত গাছের জন্ম দিবে। মান সম্পন্ন বীজ পেতে হলে (ক) ব্যবহৃত বীজ অবশ্যই শোধিত হতে হবে, (খ) পোকামাকড় এবং রোগবালাই দেখা দেয়া মাত্র তা দমনের জন্য নির্ধারিত ঔষধ সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে (গ) রোগাক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে রোগ বিস্তার রোধ করতে হবে।

 

পানি সেচ ও নিষ্কাশন:

শুষ্ক আবহাওয়া মান সম্পন্ন এবং রোগমুক্ত বীজ উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। কিন্তুএই পরিবেশে প্রয়োজনীয় সেচ প্রয়োগ না করলে বীজের ভালো ফলন আশা করা যায় না। জমিতে যথেষ্ট রস না থাকলে বীজ বপনের পূর্বে উপযুক্ত পরিমাণ সেচ দিয়ে যথাযথভাবে জমি তৈরি করে নেয়া প্রয়োজন। জমিতে প্রয়োজনীয় রস না থাকলে বীজের অঙ্কুর বের হয় না। আবার জমিতে অতিরিক্ত রস থাকলে তা বীজের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। মাটি পানি দ্বারা সম্পৃক্ত (Saturated) অবস্হায় চলে গেলে অক্সিজেনের অভাবে বীজ অঙ্কুরিত না হয়ে বরং পচে যেতে পারে।

কাজেই ফসল ও মাটি ভেদে সেচের পরিমাণ ও প্রয়োগ নির্ভর করে। সাধারণত ফুল আসার আগে এক থেকে দুইটি সেচই বীজ ফসলের জন্য প্রয়োজন।

 

পরিমিত সেচ গাছের খাদ্য উপাদান গুলোকে ব্যবহারপোযোগী করে গাছের বৃদ্ধি, প্রস্বেদন ও শ্বসনে সহায়তা করে। ফসলের বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে সেচের প্রয়োজনীয়তা এক নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে গাছের শাখা প্রশাখা বৃদ্ধির সময় সেচের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এ সময় মাটিতে রস না থাকলে গাছের বৃদ্ধি থেমে যায় এবং কান্ড শুকিয়ে যায়। পানি পেলে গাছ আবার সজীব হয়ে উঠে। তাই সময়মত প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দেয়া দরকার।

কিছু কিছু বীজ ফসলে সেচ খুবই সংবেদনশীল। সেচ একটু বেশি হলেই বিভিন্ন রোগ ব্যাধির আক্রমণ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত সেচ অনেক সময় ফসলের পরিপক্কতাকে বিলম্বিত করে, যা মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদনের জন্য মোটেই উপাযোগী নয়। কিছু কিছু সবজি ও পেঁপে দাঁড়ানো পানি একবারেই সহ্য করতে পারে না। তাই সেচ বেশি হলে বা বৃষ্টির কারণে পানি জমে গেলে তা দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্হা করতে হবে।

বীজ ফসলের জমিতে সাধারণত নিম্নলিখিত তিন পদ্ধতিতে সেচ দেয়া যেতে পারে:

(ক) সেচ নালার সাহায্যে মাটির উপরিভাগে
(খ) ফোয়ারা পদ্ধতিতে ফসলের উপরে
(গ) মাটির অভ্যন্তরে গাছের গোড়ায়

যে পদ্ধতিতেই সেচ দেয়া হোক না কেন, ফসলের জমিতে সমানভাবে যাতে সেচ প্রয়োগ করা হয়। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পরিমিত এবং সময়মত সেচ প্রয়োগই সেচের কার্যকারিতাকে ফলপ্রসু করে তোলে। ফসল কাটার ২/৩ সপ্তাহ পূর্বে অবশ্যই সেচ দেয়া বন্ধ করতে হবে।

 

বীজের অংকুরোদগম পরীক্ষা, বীজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ( ব্যবহারিক )

বীজ উৎপাদনের জন্য – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “বীজ ও বীজ প্রযুক্তি” বিষয়ের ১ নং ইউনিটের ১.৮ ও ১.৯ নং পাঠ।

 

বীজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ( ব্যবহারিক)

 

কোন বীজের কোন সুপ্ত ভ্রূণ জাগ্রত হওয়ার নাম অংকুরোদগম। অংকুরিত বীজ সংখ্যা তাত্ত্বিকভাবে শতকরা হারে নির্ণয় করে অংকুরোদগম পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে ১০০টি বীজ গজাতে দিলে কতটি বীজ গজিয়েছে বের করলেই বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতার শতকরা হার বের হয়ে আসে। অংকুরোদগম ক্ষমতার হার পূর্ণ সংখ্যায় প্রকাশ করতে হয়।

 

এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য:

(১) বীজ নমূনার স্বাভাবিক চারা উৎপাদনকারী বীজের সংখ্যা (%) নির্ণয়

(২) বীজ নমূনায় অন্যান্য উপকরণ অংশের তুলনায় স্বাভাবিক চারা উৎপাদনকারী বীজের পারস্পরিক পরিমাণ নির্ণয়।

(৩) বপনের জন্য বীজের হার ও বীজের বাজার মূল্য নির্ধারণ।

(৪) বীজের প্রকৃত মান নির্ধারণ।

 

পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি:

(১) বীজ অঙ্কুরোদগম যন্ত্র

(২) বোর্ড (সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য)

(৩) মাটি ও বালির বাক্স

( ৪ ) তোয়ালে, চোষ কাগজ, পেট্রিডিস

(৫) নমূনা রাখার ট্রে ইত্যাদি

 

পরীক্ষা পদ্ধতি:

বিশুদ্ধ বীজের অংশ থেকে অংকুরোদগমের জন্য বীজ নমূনা নিন। অংকুরোদগমের জন্য কমপক্ষে ৪০০ বীজ নিন এবং পরীক্ষা নির্ভুল হওয়ার জন্য এগুলো চারটি ভাগে (Replicate) ভাগ করুন। প্রতি ভাগে ১০০ টি বীজ থাকবে।

সর্ব প্রথম উপযুক্ত পাত্রে যে কোন একটি অংকুরোদগম মাধ্যমের ( চোষ কাগজ, ফিল্টার কাগজ, বালি, করাতের গুড়া, তোয়ালে) উপর প্রয়োজনীয় পানি ও বীজ নিন। বীজ স্হাপনের সময় কমপক্ষে বীজের সমান মাপের ১-৫ গুন স্হান ফাঁকা রাখুন।

পেট্রিডিস ব্যবহার করা হলে বীজ বসানোর প্রথম দিন পেট্রিডিসটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন। এতে পানির বাষপায়ন কম হয়। তারপর পেট্রিডিস গুলো উপযুক্ত পরিবেশে গবেষণাগারে রেখে দিন। সুবিধা থাকলে পেট্রিডিসগুলো নিয়ন্ত্রিত অঙ্কুরোদগম যত্নে রাখুন।

(ক) এখন পেট্রিডিসে নেওয়া বীজের নাম, জাত, সংখ্যা ও পরীক্ষায় বসানোর তারিখ কাগজে লিখে রাখুন।

(খ) প্রতিদিন লক্ষ রাখুন যেন পানি শুকিয়ে না যায়। পানি শুকিয়ে গেলেই পুণরায় পেট্রিডিসে পানি দিন। অতিরিক্ত পানি ক্ষতিকর।

পরীক্ষার ৪টি ভাগের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য হলে পুনরায় পরীক্ষা সম্পাদন করতে হবে।

 

যে বীজগুলোকে অংকুরোদগম পরীক্ষার জন্য বসানো হবে, অংকুরিত হওয়ার পর সেগুলোকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয় যেমন :

(১) স্বাভাবিক বীজ অর্থাৎ যেগুলো স্বাভাবিক চারার জন্ম দেয়।

(২) অস্বাভাবিক বীজ অর্থাৎ যেগুলো অস্বাভাবিক চারার জন্ম দেয়। (৩) মৃত বীজ অর্থাৎ একেবারেই গজায় না।

(৪) সজীব বীজ অর্থাৎ সুপ্তাবস্হা ভাংগার পর অংকুরোদগম হতে পারে।

(৫) শক্ত বীজ অর্থাৎ সুপ্তাবস্হা ভাংগার পরও অংকুরোদগম হতে নাও পারে। (মালভেসী ও লিগুমিনোসি পরিবারের কোন কোন বীজে শক্ত বীজের উপস্হিতি দেখা যায়।)

প্রথম গণনার সময় স্বাভাবিক বীজগুলো (যা গজিয়েছে) গণনা করে এবং মৃত বীজগুলো (যদি চিহ্নিত করা যায়) ফেলে দিতে হয়। প্রাথমিক গণনার ফলাফল কাগজে / রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে। এরপর দ্বিতীয় বা চূড়ান্ত গণনা খুব সতর্কতার সাথে করতে হয়। এ সময় যদি সুপ্ত বীজের উপস্হিতি টের পাওয়া যায় তবে চূড়ান্ত গণনার তারিখ আরও ৫ দিন পর্যন্ত বর্ধিত করা যেতে পারে। বীজের সুপ্তকাল ভাংগার পরও (পটাশিয়াম নাইট্রেট অথবা জিবারেলিক এসিড প্রয়োগ করে) যদি কোন বীজ না গজায়, তবে সে বীজ মৃত/শক্ত বীজ বলে ধরে নিতে হবে।

 

স্বাভাবিক চারার বৈশিষ্ট্য :

স্বাভাবিক চারার বৈশিষ্ট্য সকল বীজের ক্ষেত্রে এক নয়। নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য থাকলে মোটামুটিভাবে চারাকে স্বাভাবিক চারা বলা যেতে পারে।

(ক) সুস্হ ও বর্ধিষ্ণু চারা হলে ।

(খ) চারার শিকড় সুউন্নত হলে।

(গ) ইপিকোটাইল ও হাইপোকোটাইল অক্ষত থাকলে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।

(ঘ) গ্রামিনি পরিবারের চারার ক্ষেত্রে কলিওপটাইল ও প্রাথমিক পাতা সুষ্ঠুভাবে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হলে (যেমন : গম)।একবীজ পত্রী বীজের জন্য একটি বীজপত্র এবং দ্বিবীজপত্রী বীজের ২টি বীজপত্র থাকলে।

(জ) চারার বৃদ্ধি সুষম থাকলে।

(ছ) চারার সীমিত স্হানে ক্ষত রয়েছে, তবে কোন পরিবহণকারী কোষ কলা ক্ষতিগ্রস্হ না হয়ে থাকলে।

(জ) চারা সুস্হ থাকলে, দ্বিবীজপত্রী বীজের একটি বীজপত্র বর্তমান থাকলে (বীজপত্রের সংযোগস্হল অক্ষত থাকা সাপেক্ষে)।

(ঝ) ইপিজিয়েল অংকুরোদগমের ক্ষেত্রে শিকড় ও হাইপোকোটাইলের যুক্ত দৈর্ঘ্য বীজের দৈর্ঘ্যের ৪ গুণের বেশি হয়ে গাছের কান্ড, পাতা ও শিকড় সুষমভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে।

 

অস্বাভাবিক চারার বৈশিষ্ট্য :

(ক) চারা ক্ষতিগ্রস্হ হয়ে বীজপত্র না থাকলে এবং গাছের কান্ড, পাতা ও শিকড়ে বিস্তৃত ক্ষত সৃষ্টি হলে।

(খ) কান্ড, পাতা ও শিকড়ের বৃদ্ধি অসম হলে।

(গ) বেঁকে যাওয়া ও বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রুমিউল বা হাইপোকোটাইল বা এপিকোটাইল সম্পন্ন চারা হলে ।

(ঘ) কান্ড, পাতা, শিকড় রোগাক্রান্ত ও ক্ষয়প্রাপ্ত চারা।

 

১। স্বাভাবিক চারা (এপিকোটাইল ও ব্রেডিকল এর বৃদ্ধি ভাল)

২। অস্বাভাবিক চারা (দুর্বল রেডিকল)

৩। অস্বাভাবিক চারা (রেডিকল বৃদ্ধি খুব খারাপ)

৪। অস্বাভাবিক চারা (স্ফীত এপিকোটাইল)

৫। অস্বাভাবিক চারা (খুব দুর্বল এপিকোটাইল ও রেডিকল)

৬। অস্বাভাবিক চারা (এপিকোটাইল অনুপস্থিত)

 

 

বীজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা:

আন্তর্জাতিক বীজ পরীক্ষা সংস্হা কর্তৃক অনুমোদিত বীজের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কয়েকটি পদ্ধতি নিয়ে বর্ণনা করা হলোঃ

 

(ক) অল্টারনেরিয়া পদ্ধতি :

সরিষা পরিবারের সবজি ও তৈলবীজ অল্টারনেরিয়া গোত্রের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। বীজে ২, ৪ ডাইক্লোরো ফেনোক্সি এসিটিক এসিডে ০.২% সোডিয়াম প্রয়োগ করে ১৮–২২° সেঃ তাপমাত্রায় ৬–১১ দিন রাখার পর অণুবীক্ষন যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করা হয়। এ পরীক্ষায় উল্লেখিত রোগ জীবাণুর উপস্হিতি জানা যায়।

 

(খ) ভাইরাস পরীক্ষা :

সরাসরি বীজে ভাইরাস রোগের উপস্হিতি নির্ণয় করা যায় না, তাই বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে ভাইরাসের আক্রমণ যাচাই করে বীজে ভাইরাসের উপস্হিতি নির্ণয় করা সম্ভব হয়। তাছাড়া বীজ গুঁড়ো করে তার নির্যাস নির্দিষ্ট গাছে প্রয়োগ করে রোগাক্রমণ হয় কী না তা প্রত্যক্ষ করেও বীজে ভাইরাসের উপস্হিতি নির্ণয় করা সম্ভব হয়।

 

 

আপনার টিউটোরিয়েল কেন্দ্রে টিউটরের সহযোগিতায় বীজের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা অনুশীলন করতে পারবেন। তবে বাহ্যিকভাবে ও বীজের গায়ে বিভিন্ন রোগ পোকার আক্রমণের চিহ্ন কিংবা বীজের বর্ণের উজ্জ্বলতার তারতম্য দেখেও বীজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ করা সম্ভব। সুস্থ বীজে সবল চারা উৎপাদন করা সম্ভব। রোগাক্রান্ত বীজ দ্বারা চারা উৎপাদন করা গেলেও পরবর্তীতে উৎপন্ন চারা রোগাক্রান্ত হতে পারে।

বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা

আজকের পাঠে আমরা আলোচনা করব বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা নিয়ে, যা বীজ বীজ প্রযুক্তি বিষয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারিক অংশ। এই পাঠে ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হয়েছে কিভাবে বীজের বিশুদ্ধতা নির্ণয় করা হয় এবং এই পরীক্ষায় কী ধরনের যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।

বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা

বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা কী?

বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা বলতে বোঝায়—কোনো নির্দিষ্ট বীজ নমুনায় ওজনের ভিত্তিতে শতকরা কত ভাগ মূল শস্যের বিশুদ্ধ বীজ রয়েছে, তা নির্ধারণের প্রক্রিয়া। এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় নমুনায় অবাঞ্ছিত উপাদান কতটা বিদ্যমান এবং কৃষকের জন্য তা কতটা উপযোগী।

বীজ নমুনার প্রধান উপাদানসমূহ

একটি সাধারণ বীজ নমুনায় সাধারণত নিচের চারটি উপাদান থাকে:

১. বিশুদ্ধ বীজ (Pure Seed): যে বীজটি মূলত চাষের উদ্দেশ্যে নির্বাচন করা হয়েছে।
২. অন্য ফসলের বীজ (Other Crop Seed): অন্য ফসলের অনাকাঙ্ক্ষিত বীজ যা মূল ফসলের সঙ্গে মিশে গেছে।
৩. আগাছার বীজ (Weed Seed): অনিষ্টকারী আগাছার বীজ যা জমিতে গিয়ে ফসলের ক্ষতি করতে পারে।
৪. জড় পদার্থ (Inert Matter): খড়কুটা, পাতা, ধুলাবালি, চিটা, ছাতাগুটি ইত্যাদি অবাঞ্ছিত বস্তু।

 

ব্যবহারিক পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি

সঠিকভাবে বিশুদ্ধতা নির্ধারণের জন্য নিচের যন্ত্রপাতিগুলি ব্যবহার করতে হয়:

  • পিউরিটি বোর্ড (Seed Purity Board)
  • সুনির্দিষ্ট মাপক নিক্তি (যা +0.001 গ্রাম পর্যন্ত ওজন নির্ণয় করতে পারে)
  • ওয়েল পেপার
  • পেট্রিডিস (মাঝারি ও বড় আকারে)
  • চিমটা (Forcep)
  • স্ট্যান্ডযুক্ত ম্যাগনিফায়িং গ্লাস (Magnifying Glass)

 

পরীক্ষার ধাপসমূহ

১. ওজন নির্ধারণ:
মাপক নিক্তি ব্যবহার করে নমুনার মোট ওজন (ধরা যাক G গ্রাম) পরিমাপ করুন।

  1. বীজ ছড়িয়ে দিন:
    পিউরিটি বোর্ডে নমুনার বীজ সমভাবে ছড়িয়ে দিন।
  2. উপাদান পৃথককরণ:
    নিচের চারটি উপাদান আলাদা করুন—চিমটা ব্যবহার করে:
    • বিশুদ্ধ বীজ
    • অন্য ফসলের বীজ
    • আগাছার বীজ
    • জড় পদার্থ
  3. সনাক্তকরণে সতর্কতা:
    যদি কোনো বীজ শনাক্ত করতে সন্দেহ হয়, ম্যাগনিফায়িং গ্লাস ব্যবহার করে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন।
  4. পেট্রিডিসে সাজানো ওজন নির্ধারণ:
    পৃথক করা প্রতিটি উপাদান আলাদা পেট্রিডিসে রাখুন এবং আলাদাভাবে প্রতিটির ওজন নির্ণয় করুন।

 

বীজের বিশুদ্ধতার হিসাব:

ধরা যাক—

  • বিশুদ্ধ বীজের ওজন = P গ্রাম
  • কার্য সম্পাদিত মোট নমুনার ওজন = W গ্রাম

তাহলে,
বীজের বিশুদ্ধতার হার = (P ÷ W) × 100

⚠️ গুরুত্বপূর্ণ নোট:
যদি কার্য সম্পাদিত নমুনার ওজন W এবং মূল নমুনা ওজন G এর মধ্যে পার্থক্য ১% এর বেশি হয়, তাহলে পুনরায় পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক।

 

বিশুদ্ধ বীজ অংশ :

বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করতে হলে নমুনার প্রতিটি উপাদান সঠিকভাবে শনাক্ত করতে হয়। এজন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুসরণ করে বিশুদ্ধ বীজ, অন্য ফসলের বীজ, আগাছা বীজ এবং জড় পদার্থ পৃথক করতে হবে।

 

. বিশুদ্ধ বীজ অংশ (Pure Seed):

বিভিন্ন ফসল বা প্রজাতিভেদে বিশুদ্ধ বীজের সংজ্ঞা কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণভাবে নিচের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিশুদ্ধ বীজ নির্ধারণ করা যায়:

  • ✅ সম্পূর্ণ, অক্ষত ও সুস্থ বীজ
  • ✅ ভাঙা বীজ হলেও যদি ভ্রূণসহ ৫০% বা তার বেশি অংশ অবশিষ্ট থাকে
  • ❌ আংশিক অপূর্ণ বীজ, চিটা বা ফাঁপা বীজ বিশুদ্ধ বীজ হিসেবে গণ্য হবে না
    📌 বিশুদ্ধ বীজ নির্ধারণে সন্দেহ হলে ম্যাগনিফায়িং গ্লাস ব্যবহার করা উচিত।

 

. অন্য ফসলের বীজ অংশ (Other Crop Seed):

যে বীজটি পরীক্ষাধীন ফসলের নির্ধারিত জাত ব্যতীত অন্যান্য জাত বা প্রজাতির অন্তর্গত, সেগুলো এই শ্রেণিতে পড়বে। এর মধ্যে থাকতে পারে:

  • পুষ্ট বীজ
  • আংশিকভাবে পুষ্ট বীজ
  • ভাঙা বীজ (যদি অর্ধেক বা তার বেশি অংশ থাকে)

🔹 এগুলো দেখতে অনেকটা মূল বীজের মতো হলেও ভিন্ন জাত বা ভিন্ন ফসল হওয়ায় বিশুদ্ধ বীজের মধ্যে গণ্য হবে না।

 

. আগাছার বীজ অংশ (Weed Seed):

পরীক্ষাধীন নমুনায় থাকা সমস্ত সনাক্তযোগ্য আগাছার বীজ এই বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হবে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:

  • পূর্ণ বীজ
  • ভাঙা বীজ
  • ফাটল ধরা বা অপূর্ণ বীজ

🛑 এইসব বীজ মাঠে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় আগাছা হিসেবে বৃদ্ধি পায়, যা ফসলের ফলন ব্যাহত করে।

 

. জড় পদার্থ (Inert Matter):

উপরে উল্লিখিত তিনটি বিভাগের বাইরে যে কোনো উপাদান জড় পদার্থ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:

  1. মূল শস্য বা অন্য শস্য বীজের ৫০% এর কম অবশিষ্ট অংশ
  2. ছাতাগুটি বা কৃমিসদৃশ গঠন (বাইরে বা ভিতরে) যুক্ত বীজ
  3. চিটা বা ফাঁপা বীজ
  4. খড়কুটা, শুকনো পাতা, কাণ্ড ইত্যাদি উদ্ভিজ্জ অংশ
  5. ধুলাবালি, মাটি কণা, ইটের টুকরো, নুড়ি
  6. মৃত বা জীবিত পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ

📌 জড় পদার্থ পরীক্ষার মান ও বিশুদ্ধতা নির্ধারণে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এই উপাদানসমূহ বীজ থেকে পৃথক করা অত্যন্ত জরুরি।

 

✅ পরিশেষে:

বীজ বিশুদ্ধতা নির্ণয়ের পর প্রতিটি উপাদান যথাযথভাবে শ্রেণিবদ্ধ করে নোটবুকে লিপিবদ্ধ করুন। এতে আপনি নিজের হাতে বিশুদ্ধতার হার হিসেব করতে সক্ষম হবেন এবং এটি ব্যবহারিক পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাস এনে দেবে।

 

সূত্র:
বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা, বীজ বীজ প্রযুক্তি, ব্যবহারিক, ইউনিট-১, পাঠ-১.৭

বীজের আর্দ্রতা পরীক্ষা

বীজের আর্দ্রতা পরীক্ষা- পাঠটি “বীজ ও বীজ প্রযুক্তি” বিষয়ের ১ নং ইউনিটের ব্যবহারিক পাঠ ১.৬ নং পাঠের অংশ। তাত্ত্বিকভাবে বীজের আর্দ্রতা বলতে বীজের মধ্যে যে মুক্ত পানি আছে তাকেই বুঝায় যা সমস্ত বীজের ওজনের শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়।ফসল উৎপাদনে বীজ একটি মৌলিক উপকরণ। কারণ বীজ কেবল ফলন বৃদ্ধিই নয় ফসলের মান উন্নয়ন, কীট-পতঙ্গ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নির্দিষ্ট ভূ-প্রাকৃতিক অবস্হায় জন্মানোর উপযোগীতা নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া ফসল উৎপাদনের অনুকূল হওয়া সত্ত্বেও এখানে প্রধান খাদ্যশস্য যেমন : ধান, গম, গোল আলু, মিষ্টি আলু, তৈল ও ডাল বীজের হেক্টর প্রতি ফলন অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।

বীজের আর্দ্রতা পরীক্ষা

এর অন্যতম কারণ হলো ভালো বীজের অপ্রতুলতা এবং কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির অভাব। হেক্টরপ্রতি ফলন বৃদ্ধি এবং চাহিদা মোতাবেক উৎপাদন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভালো বীজ ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। আর ভালো বীজ ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই উন্নত বীজ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশে বর্তমানে কমবেশি ৭০টি ফসলের চাষ হচ্ছে এবং এসব ফসল চাষ করার জন্য বছরে প্রায় ৭ লক্ষ টন বীজের প্রয়োজন হয় যার মূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। ৭০টি ফসলের মধ্যে কেবল ধান, গম, পাট, আলু, কিছু সবজি, ডাল ও তৈলবীজ সরকারী ব্যবস্থাপনায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। দেশের বর্তমান চাহিদার শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ বীজের চাহিদা কৃষক নিজেই পূরণ করে থাকে। যার অধিকাংশ নির্ধারিত মানসম্পন্ন নয় কিন্তু উন্নত দেশে শতকরা ১০০ ভাগ ভালো বীজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বর্তমানে সরকারী পর্যায়ে বীজ উৎপাদন ও বিপণনের যে অবকাঠামো বিদ্যমান তা দিয়ে এর বেশি চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। তাছাড়া সরকারীভাবে বীজ উৎপাদনেও খরচ বেশি হয়। অনেক কৃষক বেশি মূল্যে ভালো বীজ ক্রয় করতে চায় না। তারা নিজেদের ফসলের একাংশ বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব বীজ নিম্নমানের এবং কম উৎপাদনশীল হয়ে থাকে। বীজ প্রযুক্তি সম্পর্কেও বাংলাদেশের কৃষক খুব একটা অবহিত নন। তাই উন্নত বিশ্বের তুলনায় আমাদের দেশের গড় ফলন অনেক কম।

উচ্চফলনশীল বীজ ব্যবহার করে চীন ও জাপানে যেখানে ধানের ফলন হেক্টরপ্রতি ৫-৬ টন সেখানে আমাদের দেশে মাত্র ২ টন। সার, পানি এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। একমাত্র বীজ প্রযুক্তি ছাড়া এটা কাটিয়ে ওঠা যাবে না।

তাই ভালো বীজ এবং বীজ প্রযুক্তি অর্থাৎ ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য, বীজ ফসল উৎপাদনের কলাকৌশল, বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ইত্যাদি সম্পর্কে আমাদের সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে। বীজের আর্দ্রতা পরীক্ষার জন্য অনেক পদ্ধতি আছে, তবে নিম্নলিখিত দু’টি পদ্ধতিই প্রধানত অনুসরণ করা হয়।

  • ওভেন ড্রাই পদ্ধতি।
  • ময়েশ্চার মিটার পদ্ধতি।

ওভেন ড্রাই পদ্ধতি :

আন্তর্জাতিক বীজ পরীক্ষণ সংস্হায় (ISTA) নিয়মানুযায়ী নিম্নলিখিত দু’টি ওভেন ড্রাই পদ্ধতি অনুসরণ করে বীজের আর্দ্রতা নির্ণয় করা যেতে পারে

(ক) অপরিবর্তনীয় নিম্নতাপে (১০৩° সেঃ এ ১৭ ঘন্টা) তৈলসমৃদ্ধ বীজকে শুকানো।

(খ) অপরিবর্তনীয় উচ্চ তাপে (১৩০° সেঃ) ভূট্টা বীজ ৪ ঘন্টা, দানাশস্য বীজ ২ ঘন্টা এবং অন্যান্য বীজ ১ ঘন্টা শুকানো।

পরীক্ষার পদ্ধতি ঃ

এই পদ্ধতিতে বীজের আর্দ্রতা পরীক্ষার জন্য সংগৃহীত বীজ এর কার্য সম্পাদন নমুনা থেকে ৪-৫ গ্রাম ওজনকৃত বীজ নিয়ে (চূর্ন কিংবা অচূর্ন) ওভেনে নির্ধারিত তাপমাত্রায় শুকানো হয়। তার পর ওভেন থেকে বের করে নিয়ে ঠান্ডা করার পর পুনরায় ওজন করা হয়। শুকানোর পূর্বের এবং পরের ওজনের পার্থক্যকে শতকরা হারে প্রকাশ করলেই বীজের আর্দ্রতার পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। বীজের আর্দ্রতা নিম্নের সূত্রের সাহায্যে বের করা হয়

 

ময়েশ্চার মিটার পদ্ধতি ঃ

ময়েশ্চার মিটারের সাহায্যে খুব সহজেই এবং অল্প সময়েই বীজের আর্দ্রতা মাপা যায়। ওসাও ইউনিভার্সেল ময়েশ্চার মিটার (OSAW Universal Moisture Meter) দ্বারা বর্তমানে বাংলাদেশের বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে বীজের আর্দ্রতা মাপা হচ্ছে। এ যন্ত্রটি ব্যবহারের জন্য নিম্নলিখিত পরিসংখ্যান ব্যবহৃত হয়ঃ

  • কার্যকরী নমূনা থেকে বিভিন্ন বীজের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ বীজ নিন। যেমনঃ ধানের ক্ষেত্রে ৫০ গ্রাম বীজ।
  • ওসাও মেশিনের মাইক্রোমিটার স্কেল এবং ভার্টিকেল স্কেল উভয়টি ০ (শুনাতে) মিলিয়ে (Adjustment) রাখুন।
  • উক্ত পরিমাণ বীজ ওসাও মেশিনের টেষ্ট কাপে ভর্তি করে যথাস্থানে রাখুন।
  • তারপর চার্ট অনুযায়ী নির্ধারিত ফসলের বীজের জন্য নির্দিষ্ট পূরুত্বে চাপ প্রয়োগ করুন। যেমনঃ ধান বীজের ক্ষেত্রে ০.৫৫ ইঞ্চি।
  • চাপ প্রয়োগের পর মেশিনের সুইচ ও ডায়াল সুইচ চালু করুন।
  • এখন ক্যালিব্রেশান (Calibration) কাটার রিডিং এবং মেশিনের সেন্টিগ্রেড থার্মোমিটারের রিডিং যে অংকে মিলিত (Coincide) হবে, সে স্হানে ডায়ালকে ঘুরিয়ে আনার ফলে তীর চিহ্নিত স্হানে যে রিডিং পাওয়া যাবে, সেই রিডিংই ঐ বীজের আর্দ্রতার পরিমাণ হিসেবে গণ্য করুন।

এটা খুব সহজ এবং দ্রুত পদ্ধতি। এ মেশিন একবার বাস্তবে ব্যবহার করলে পরীক্ষাটি সহজেই করতে পারবেন। পরীক্ষাশেষে যাবতীয় বিবরণ আপনার নোটবুকে লিপিবদ্ধ করুন।