ডিওলাস (Gladiolus) একটি বহুল জনপ্রিয় ও চাহিদাসম্পন্ন ফুল যা মূলত কেটে নেওয়ার ফুল (cut flower) হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি তার উজ্জ্বল রঙ, দীর্ঘ দণ্ডাকার ফুলদণ্ড এবং টেকসইতার কারণে সারা বিশ্বে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপকভাবে চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে শীতকালীন ফুল হিসেবে গ্লাডিওলাসের সম্ভাবনা ও বাজার ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে।
গ্লাডিওলাস ফুল চাষ পদ্ধতি
১. চাষের জন্য উপযুক্ত আবহাওয়া ও মাটির ধরন:
উপাদান
বিবরণ
আবহাওয়া
হালকা উষ্ণ, শীতল ও নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া
উপযুক্ততাপমাত্রা
১৫–২৫°C (দিনে আলো থাকলে দ্রুত ফুল ফোটে)
আলো
প্রতিদিন কমপক্ষে ৬–৮ ঘণ্টা সরাসরি সূর্যালোক
মাটি
হালকা বেলে-দোআঁশ, সুনিষ্কাশিত ও জৈবদ্রব্য সমৃদ্ধ
pH
৬.০–৬.৫ (অম্ল-নিরপেক্ষ মাটি)
মাটি প্রস্তুতের আগে পরীক্ষা করে নিন pH ও জৈবদ্রব্যের পরিমাণ।
গ্লাডিওলাস ফুল চাষ পদ্ধতি
২. উপযুক্ত জাত নির্বাচন:
বাণিজ্যিক ও শৌখিন চাষের জন্য নিচের জাতগুলো বিশেষভাবে জনপ্রিয়:
জাত
বৈশিষ্ট্য
প্রিমুলা
উজ্জ্বল লাল ফুল, দ্রুত ফোটে
পিটারপিয়ার্স
কমলা রঙের, সজ্জায় উপযোগী
স্পার্টাকাস
দ্বৈত রঙের, দীর্ঘ দণ্ড
নোভালাক্স
হালকা হলুদ, দীর্ঘস্থায়ী
অস্কার
গাঢ় লাল ও চকচকে
হোয়াইটপ্রসপারিটি
বিশুদ্ধ সাদা, বিয়ের আয়োজনের জন্য জনপ্রিয়
🌿 বিশেষ টিপস: প্রতি বছর ৪–৬ সেমি ব্যাসের সুস্থ কন্দ ব্যবহার করুন। ক্ষতিগ্রস্ত বা পচা কন্দ বর্জন করুন।
গ্লাডিওলাস ফুল চাষ পদ্ধতি
৩. জমি প্রস্তুতি ও সার ব্যবস্থাপনা:
জমি প্রস্তুতি:
২৫–৩০ সেমি গভীর চাষ দিন।
আগাছা ও অতিরিক্ত জলধারণক্ষম মাটি সরিয়ে ফেলুন।
১৫–২০ সেমি উঁচু উঁচু বেড তৈরি করুন।
সার ব্যবস্থাপনা (প্রতি বিঘায়):
সার
পরিমাণ
প্রয়োগের সময়
গোবর সার
৫০০০ কেজি
চাষের ১০–১৫ দিন আগে
ইউরিয়া
৫০ কেজি
৩ কিস্তিতে প্রয়োগ
টিএসপি
৩০ কেজি
রোপণের আগে
এমওপি
২৫ কেজি
২ ভাগে প্রয়োগ
✳️ টিপস: চাষের আগে মাটিতে ট্রাইকোডার্মা ব্যবহার করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৪. কন্দ রোপণের নিয়ম (Corm Planting)
বিষয়
পরামর্শ
কন্দেরআকার
৪–৬ সেমি ব্যাস
রোপণেরদূরত্ব
সারি থেকে সারি: ৩০ সেমি, গাছ থেকে গাছ: ১৫ সেমি
গর্তেরগভীরতা
৬–৮ সেমি
রোপণেরসময়
অক্টোবর–ডিসেম্বর (বাংলাদেশে আদর্শ সময়)
🧪 রোপণের আগে কন্দ ১ ঘণ্টা ফাঙ্গিসাইডে ভিজিয়ে নেওয়া ভালো।
৫. পরিচর্যা ও যত্ন:
✅ সেচ ব্যবস্থাপনা:
রোপণের পর ৭ দিন পরপর হালকা সেচ।
গ্রীষ্মে ৫–৭ দিন পরপর, শীতকালে ৮–১০ দিন পর।
পানি জমা হওয়া থেকে বিরত থাকুন, কন্দ পচে যেতে পারে।
✅ আগাছা নিয়ন্ত্রণ ও মালচিং:
প্রতি ১৫ দিন অন্তর আগাছা পরিষ্কার করুন।
মাটির আর্দ্রতা রক্ষা ও আগাছা নিয়ন্ত্রণে মালচিং (খড়, পলিথিন, কোকো পিট) ব্যবহার করুন।
✳️ আন্তর্জাতিক মানের প্যাকেটিং করলে রপ্তানির সম্ভাবনা বাড়ে।
৮. অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ (প্রতি বিঘা ভিত্তিক)
🔻 মোট ব্যয়:
খাত
আনুমানিক ব্যয় (টাকা)
কন্দ
৩০,০০০
সার
১০,০০০
শ্রমিক
১৫,০০০
সেচ ও পরিচর্যা
৫,০০০
কীটনাশক ও ওষুধ
৩,০০০
মোটব্যয়
৬৩,০০০
🔺 আয়:
বিবরণ
আনুমানিক আয়
উৎপাদন
২০,০০০–২৫,০০০ ফুল
বাজারদর
প্রতি ফুল ৮–১০ টাকা
মোটআয়
৳১,৫০,০০০ – ২,০০,০০০
🧮 লাভ (নেট): প্রায় ৮৭,০০০ – ১,৩৭,০০০ টাকা/বিঘা।
৯. গ্লাডিওলাস চাষের সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ
✅ রপ্তানিযোগ্য ফুল হিসেবে আন্তর্জাতিক চাহিদা
✅ গার্ডেন সেন্টার, হোটেল, ইভেন্ট, ওয়েডিং ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাপক ব্যবহার
✅ কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণে সহায়ক
✅ কৃষি উদ্ভাবন ও মিশ্র ফসল চাষে উপযোগী
✅ ফুল উৎসব ও কৃষিপণ্য মেলায় ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব
গ্লাডিওলাস ফুল চাষ পদ্ধতি
গ্লাডিওলাস চাষ কেবল সৌন্দর্য নয়, এটি একটি লাভজনক কৃষি উদ্যোগ।
সঠিক জাত নির্বাচন, পরিচর্যা ও বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ খাতে উদ্যোক্তা তৈরি এবং রপ্তানি বৃদ্ধির অপার সুযোগ রয়েছে। নতুন প্রজন্ম ও গ্রামীণ উদ্যোক্তারা চাইলে এ খাতে আধুনিক পদ্ধতিতে এগিয়ে যেতে পারেন।
বিটরুট চাষ পদ্ধতি: পুষ্টিকর সবজি উৎপাদনের সহজ উপায়। বিটরুট, যাকে বাংলায় বিট বলা হয়, একটি জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর সবজি। এর রক্তবর্ধক গুণাগুণ এবং সুস্বাদু স্বাদের জন্য এটি বিশেষভাবে পরিচিত। বিটরুটে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই প্রবন্ধে আমরা বিটরুট চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব, যা কৃষকদের জন্য সহজে অনুসরণযোগ্য এবং ফলপ্রসূ হতে পারে।
বিটরুট চাষের জন্য সঠিক মাটি এবং জলবায়ু বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিটরুট সাধারণত দোআঁশ মাটিতে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। মাটির pH স্তর ৬.০ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে থাকা উচিত। এছাড়াও, মাটির মধ্যে পর্যাপ্ত জৈব পদার্থ থাকা প্রয়োজন, যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
বিটরুট চাষের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা ১৫-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি একটি ঠান্ডা আবহাওয়ার ফসল, তাই শীতল ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে বিটরুট ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। উচ্চ তাপমাত্রায় বিটরুটের বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে।
বীজ বপন
বিটরুটের বীজ বপনের জন্য সঠিক সময় এবং পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। সাধারণত, বিটরুটের বীজ বপনের সময় ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ এবং সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত।
বীজ বপন পদ্ধতি
মাটি প্রস্তুতি: প্রথমে মাটি ভালোভাবে প্রস্তুত করতে হবে। মাটিতে জৈব সার বা কম্পোস্ট মিশিয়ে মাটি উর্বর করে নিতে হবে। মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে, যাতে এটি নরম হয় এবং বীজ বপনের জন্য প্রস্তুত হয়।
বীজ বপন: বিটরুটের বীজ সরাসরি জমিতে বোনা যেতে পারে। বীজগুলি সারি ধরে ১-২ সেন্টিমিটার গভীরে বপন করতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০-৪০ সেন্টিমিটার এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ১০-১৫ সেন্টিমিটার রাখা উচিত।
জলসেচ: বীজ বপনের পরপরই মাটিতে জলসেচ দিতে হবে। মাটি সব সময় স্যাঁতসেঁতে রাখতে হবে, তবে অতিরিক্ত জলসেচ করা উচিত নয়, কারণ এটি বীজের অঙ্কুরোদগমে বাধা দিতে পারে।
রোপণ ও পরিচর্যা
বিটরুটের সঠিক বৃদ্ধি এবং উন্নতির জন্য নিয়মিত রোপণ ও পরিচর্যা করা প্রয়োজন। নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:
থিনিং: বীজ অঙ্কুরোদগমের ২-৩ সপ্তাহ পর, অতিরিক্ত চারা সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন হয়। প্রতি সারিতে প্রায় ১০-১৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে একটি চারা রাখতে হবে।
নিরানী: মাটির উপরের অংশে আগাছা গজালে তা নিরানী দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে, যাতে বিটরুটের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি না করে।
সার প্রয়োগ: বিটরুটের ভালো ফলনের জন্য নিয়মিত জৈব সার ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা উচিত। সাধারণত, নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ সার প্রয়োগ করা হয়।
জলসেচ: নিয়মিত জলসেচ দিতে হবে, বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে। তবে অতিরিক্ত জলসেচ করা উচিত নয়, কারণ এটি শিকড়ের পচন ঘটাতে পারে।
পোকামাকড় এবং রোগবালাই
বিটরুটের চাষে বিভিন্ন পোকামাকড় এবং রোগবালাই আক্রমণ করতে পারে। এদের প্রতিরোধের জন্য কিছু সাধারণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ: বিটরুটের প্রধান পোকামাকড়ের মধ্যে অ্যাফিড, বিট আর্মিওয়ার্ম এবং বিটলিফ মাইনার উল্লেখযোগ্য। এদের নিয়ন্ত্রণের জন্য জৈব কীটনাশক বা প্রয়োজন হলে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ: বিটরুটের সাধারণ রোগগুলির মধ্যে পাউডারি মিলডিউ, ডাউনিল মিলডিউ এবং রুট রট উল্লেখযোগ্য। এদের নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ফাঙ্গিসাইড প্রয়োগ করা এবং সঠিক পরিচর্যা করা উচিত।
ফসল সংগ্রহ
বিটরুট সাধারণত বীজ বপনের ৭০-৯০ দিনের মধ্যে সংগ্রহযোগ্য হয়। বিটরুটের শিকড় গুলি যখন ৫-৭ সেন্টিমিটার ব্যাসের হয়, তখন তা সংগ্রহ করা উচিত।
সংগ্রহ পদ্ধতি
শিকড় টেনে তোলা: বিটরুটের শিকড় মাটি থেকে টেনে তোলার সময় মাটি নরম রাখা উচিত, যাতে শিকড় সহজে বের হয়ে আসে।
পরিষ্কার করা: শিকড় তোলার পর, মাটি থেকে পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং সবুজ পাতা কেটে ফেলতে হবে।
সংরক্ষণ: বিটরুট সংগ্রহের পর ঠান্ডা এবং শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করা উচিত, যাতে এটি দীর্ঘ সময় ধরে তাজা থাকে।
বিটরুট চাষ একটি লাভজনক এবং স্বাস্থ্যকর সবজি উৎপাদনের পদ্ধতি। সঠিক মাটি, জলবায়ু, বীজ বপন, পরিচর্যা, পোকামাকড় ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ এবং ফসল সংগ্রহের পদ্ধতি অনুসরণ করে কৃষকরা সহজেই বিটরুট চাষে সফল হতে পারেন। বিটরুটের পুষ্টিগুণ এবং এর বিভিন্ন খাদ্যোপযোগী ব্যবহারের জন্য এটি চাষ করা একটি ভালো বিনিয়োগ হতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিচর্যার মাধ্যমে বিটরুট চাষ থেকে সর্বোচ্চ লাভ পাওয়া সম্ভব।
কই মাছের চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্রের” ১ নং ইউনিটের ১.৫ নম্বর পাঠ। কই মাছ বাংলাদেশের মানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি ছোট মাছ। এটি খেতেও যেমন সুস্বাদু, পুষ্টিগুণেও তেমন ভরপুর। মাছটি পানির উপরে দীর্ঘক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে বলে একে জিয়ল মাছ বলা হয়। এক সময় প্রাকৃতিক ভাবেই এদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়গুলোতে প্রচুর পরিমাণে কই মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানুষ সৃষ্ট কারণে এ মাছটি আজ বিলুপ্তির পথে। স্বাদ, পুষ্টিগুণ, উচ্চ বাজারমূল্য ও সর্বোপরি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার্থে এ মাছকে অবশ্যই গুরুত্ব দেবার সময় এসেছে।
কই মাছের চাষ পদ্ধতি
কই মাছের একক চাষ পদ্ধতি:
আমাদের চাষ পদ্ধতিতে মাছটি অন্তভূর্ক্ত করে উৎপাদন বাড়ানো এখন সময়ের দাবী। তবে পোনার অপ্রতুলতার কারণে কই মাছের চাষ আশানুরূপভাবে প্রসার লাভ করেনি। দেশীয় কই মাছের কৃত্রিম প্রজননের চেষ্টা সফল হলেও নিম্ন বর্ধন হারের কারণে মাছটির বাণিজ্যিক চাষের আশা অনেকটা মিইয়ে যায় এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ২০০২ সালে বেসরকারি পর্যায়ে দেশীয় কই মাছের অনুরূপ একটি বর্ধনশীল জাত থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয় যা ‘থাই কই’ নামে পরিচিত। এদেশের আবহাওয়ায় সহজে মানিয়ে নেওয়ায় বর্তমানে স্থানীয়ভাবেই এ মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন সফলভাবে করা হচ্ছে।
আমাদানিকৃত থাই কই এর উৎপাদন দেশী কই অপেক্ষা ৫০% বেশি হওয়ায় বাণিজ্যিক চাষে অধিক মুনাফা করা সম্ভব। পরবর্তিতে ২০১১ সালে আরো একটি কই এর জাত ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা হয় যা থাই কই এর চেয়েও বেশি বর্ধনশীল। ভিয়েতনামী কই ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং অনেক চাষীই মাছটি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
কই মাছ চাষের সুবিধা :
(১) যে কোন ধরনের জলাশয় এমনকি চৌবাচ্চা বা খাঁচাতেও চাষ করা যায়।
(২) অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়।
(৩) একক এবং মিশ্র চাষের জন্য উপযোগী।
(৪) টেকসই মাছ হওয়ায় বিরূপ পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে।
(৫) কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করা সম্ভব, তাই চাষের জন্য সহজেই পোনা পাওয়া যায়।
(৬) প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ করে।
(৭) কম সময়ে (৩—৪ মাস) বাজারজাত করা যায়, ফলে দ্রুত পঁুজি ফেরত পাওয়া যায়।
(৮) অতিরিক্ত শ্বসন অঙ্গ থাকায় কই মাছ পানি ছাড়াও দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে, ফলে জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করে বেশি দাম পাওয়া যায়।
(৯) রোগীর পথ্য হিসেবে এবং সুস্বাদু হওয়াতে কই মাছের বাজার চাহিদা ব্যাপক।
কই মাছ চাষ করার জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে করতে হবে।
কই মাছ চাষের জন্য পুকুর নির্বাচন :
৪—৬ মাস পানি থাকে এ রকম যে কোন পুকুর কই চাষের জন্য উপযোগী। পুকুরের আয়তন ১৫—৫০ শতাংশ হলে ভালো হয়। নিচের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে পুকুর নির্বাচন করা উচিত:
* মজুদ পুকুর আকৃতিতে আয়তকার হবে।
* পুকুরের মাটি দো—আঁশ হবে।
* পুকুরের তলায় ১৫ সে.মি. এর অধিক কাদা থাকবে না।
* বন্যামুক্ত স্থানে পুকুর নির্বাচন করতে হবে। * পুকুরের স্থানটি আলো—বাতাস পূর্ণ হবে।
পুকুর প্রস্তুতকরণ : পুকুর প্রস্তুত ভালোভাবে না হলে মাছ চাষ চলাকালীন নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। তাই নির্বাচিত পুকুর কই মাছ চাষের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। পুকুর প্রস্তুতকরণের ধাপগুলো নিম্নরূপ—
অবাঞ্চিত প্রাণী ও আগাছা দমন পুকুরের পানিতে আগে থেকেই বসবাসকারী রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ ও প্রাণি দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ রোটেনন, ফসট*িন ইত্যাদি কিনতে পাওয়া যায় যা ব্যবহার করে উক্ত কাজটি করা যেতে পারে।
তবে পরিবেশের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে এসব দ্রব্য যতটা সম্ভব না ব্যবহার করাই ভাল। সেক্ষেত্রে ছোট/চিকন মেসের জাল বার বার টেনে রাক্ষুসে মাছ ও ক্ষতিকর প্রাণি দূর করা যায়। পুকুর সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে কাজটি করলে সবচেয়ে ভাল হয়। এসময় আগাছাও পরিস্কার করে ফেলতে হবে।
তলা ও পাড় মেরামত পুকুরের তলার অতিরিক্ত পঁচা কালো কাদা অপসারণ করে পুকুরের পাড়ের গর্ত খানাখন্দ মেরামত করতে হবে। তলা সমান করে নিতে হবে। পুকুরের পাড়ের ঝোপ—ঝাড় পরিষ্কার করে চারিদিকে এক ফুট উঁচু জাল দিয়ে এমনভাবে ঘিরে দিতে হবে যেন জালের নিচের প্রান্ত পাড়ের মাটিতে গ্রোথিত থাকে। এর ফলে মৎস্যভূক প্রাণি যেমন—সাপ, গোসাপ প্রবেশ করতে পারবে না। আবার কই মাছ ও পুকুর থেকে পালাতে পারবে না।
কই মাছ চাষে চুন ও সার প্রয়োগ:
পুকুরের পানিতে অনেক ধরনের ক্ষতিকর রোগ—জীবাণু থাকে। এসব জীবাণু ধ্বংস করতে এবং পানির গুণাগুণ ঠিক রাখতে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন পানিতে গুলে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরে চুন প্রয়োগের ৩—৪ দিন পর এবং কই মাছের পোনা মজুদের ৭—৮ দিন আগে সার প্রয়োগ করতে হবে।
পানির রং বুঝে পুকুরে সার প্রয়োগ করতে হবে। কারণ উর্বর পুকুরে অনেক সময় চুন প্রয়োগের পর পানিতে প্রচুর ফাইটোপ্ল্যাংকটন জন্মে। সেক্ষেত্রে পুকুরে সার প্রয়োগের কোন প্রয়োজন নাই।
কই মাছ প্রকৃতিতে সাধারণত জুপ্ল্যাংকটন ও জলজ কীটপতঙ্গ খায়। জুপ্ল্যাংকটনের উৎপাদন নির্ভর করে ফাইটোপ্ল্যাংকটনের প্রাচুর্যতার উপর। আর পুকুরে সার প্রয়োগের উদ্দেশ্যই হলো ফাইটোপ্ল্যাংকটনের উৎপাদন বাড়ানো। সাধারণত জৈব ও অজৈব উভয় প্রকার সার পুকুরে প্রয়োগ করতে হয়।
পুকুরে অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ করলে সাধারণত চাষের প্রথম এক মাসের পর আর সার প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয় না। কারণ চাষের এ পর্যায়ে পানিতে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য এমনিতেই তৈরি হয় এবং পানির রং যথেষ্ট সবুজ হয়ে যায়। তবে পানিতে যথেষ্ট প্রাকৃতিক খাদ্য না থাকলে চাষ চলাকালীন সার দিতে হবে (সারনি ২)।
পোনা মজুদ নির্ভরযোগ্য সরকারি/বেসরকারি হ্যাচারি থেকে পোনা সংগ্রহ করতে হবে। ধানী পোনার ক্ষেত্রে ১৫—২০ দিন নার্সারি পুকুরে রেখে ৪—৬ সে.মি লম্বা হলে অথবা ওজন ৩—৪ গ্রাম হলে স্ত্রী পোনাগুলোকে আলাদা করে পুকুরে চাষ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
পুকুর ব্যবস্থাপনা ও সম্পূরক খাদ্যের ওপর নির্ভর করে শতাংশ প্রতি ৫০০—১০০০টি সুস্থ—সবল পোনা মজুদ করা যেতে পারে। পোনাকে অবশ্যই পুকুরের পানির সাথে কন্ডিশনিং করে তারপর ছাড়তে হবে। পোনা মজুদ করার উত্তম সময় হল সকাল বেলা।
কই মাছের সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ:
কই মাছের পুষ্টি চাহিদা বিশেষ করে আমিষের চাহিদা কার্পজাতীয় মাছের চেয়ে বেশি। কই মাছের পোনার আমিষের চাহিদা ৩০—৩৫% এবং চাষযোগ্য মাছের ক্ষেত্রে তা ৩০%। অধিক ঘনত্বে কই মাছ চাষে ভাল উৎপাদন পেতে হলে প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি মাছকে সম্পূরক খাদ্য দিতে হবে।
কই মাছের একটি আদর্শ খাবারে আমিষ ৩০—৩৫%, চর্বি ৪—৫%, শর্করা ৪%, ছাই (অংয) ১৪%, অঁাশ (ঋরনৎব) ৫% ও জলীয় অংশ ১১% থাকা প্রয়োজন। ইদানিং বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির পিলেট খাদ্য (ডুবন্ত ও ভাসমান) কিনতে পাওয়া যায়।
এসব খাদ্য প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানির নির্দেশনাও মানা যেতে পারে। খামারে তৈরি ভিজা খাবারের পাশাপাশি বানিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত ভাসমান পিলেট খাবার কই মাছের পুকুরে প্রয়োগ করা সর্বোত্তম। নিচের সারণি অনুসরণ করে প্রতিদিনের খাদ্যকে দু’ভাগ করে সকাল ও বিকালে ২ বার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
কই মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণ:
আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চাষ করলে ৩—৪ মাসে কই মাছ গড়ে ৯০—১০০ গ্রাম (ভিয়েতনামী কই ২০০—৩০০ গ্রাম) হবে। এ সময় জাল টেনে বা পানি শুকিয়ে মাছ ধরার ব্যবস্থা নিতে হবে। নিচের সারণিতে একর প্রতি কই মাছের উৎপাদন দেখানো হলো
বাজারজাতকরণের আগের দিন জাল টেনে মাছ ধরে ছেড়ে দিতে হবে। এর ফলে বাজারজাত করার সময় মাছের মৃত্যুহার কম হবে। মাছ ধরার পর পরিস্কার পানি দিয়ে মাছগুলো ধৌত করা শ্রেয়। এরপর প্লাষ্টিকের ড্রামে পরিমাণমত পানি নিয়ে জীবন্ত অবস্থায় কই মাছ বাজারজাত করা যেতে পারে। এতে করে ভালো দাম পাওয়া যায়।
কই মাছের রোগ ব্যবস্থাপনা:
* পুকুর প্রস্তুতকরণের কাজটি যথাযথভাবে করতে হবে।
* সুস্থ সবল পোনা মজুদ করতে হবে।
* উৎপাদন উপকরণ ভালভাবে জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করতে হবে।
* পরিমিত পরিমানে সুষম খাবার প্রয়োগ করতে হবে।
* প্রতিমাসে অন্তত: একবার নমুনায়নের মাধ্যমে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। * প্রতি ১৫—২০ দিন অন্তর অন্তর ২০—৩০% পানি পরিবর্তন করে দিতে হবে।
তাছাড়া কই মাছ পরিবহনের সময় আঘাত প্রাপ্ত হলে ক্ষত রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। ক্ষত রোগের প্রাদুর্ভাব হলে টিমসেন প্রতি শতাংশ পুকুরে (১ মিটার গভীরতায়) ২.৬৫ গ্রাম হারে ব্যবহার করা যেতে পারে (ইউনিট—৪ এ ক্ষত রোগ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আছে)।
পুকুরে জীবাণুনাশক হিসেবে অ্যাকুয়াম্যাজিক ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যবহার মাত্রা প্রতি একর পুকুরে ১ মিটার গভীরতার জন্য ৫ কেজি। তাছাড়া পোনা মজুদের পর ১০ গ্রাম/শতাংশ হারে কপার সালফেট ব্যবহারে ভাল ফল পাওয়া যায়।
সূত্র:
কই মাছের চাষ পদ্ধতি | ইউনিট-১ , পাঠ -১.৬ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র
নাইলোটিকার চাষ পদ্ধতি বা নাইলোটিকা মাছের চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করবো। নাইলোটিকার চাষ পদ্ধতি পাঠটি কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র এর ইউনিট-১ এর ১.৪ নম্বর পাঠ।
নাইলোটিকার চাষ পদ্ধতি
নাইলোটিকা মাছ পরিচিতি:
আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল ছিল নীল তেলাপিয়া মাছের আদি নিবাস। সেখানে প্রাকৃতিকভাবেই এ মাছ পাওয়া যায়। মাছটি চাষের উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সালে থাইল্যান্ড হতে আমাদের দেশে প্রথম আমদানি করা হয়।
বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে মাছটিকে নাইলোটিকা নামে ডাকা হয়। এটি আসলে নীল তেলাপিয়া এবং এই নামেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত যদিও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।এটি একটি শক্ত প্রকৃতির দ্রুত বর্ধনশীল মাছ। নদী, হ্রদ, পয়ঃনিষ্কাশন নালা, সেচ নালাসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাদুপানির জলাশয়ে মাছটি স্বাচ্ছন্দে বাড়তে পারে। মাছটি প্রায় সব ধরনের খাদ্য খায়।
কিশোর অবস্থায় এরা সর্বভূক; ফাইটোপ্ল্যাংকটন, জুপ্ল্যাংকটন ও পঁচনশীল জৈব পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে। পূর্ণ বয়স্ক অবস্থায় এরা ফাইটোপ্ল্যাংকটন এবং জুপ্ল্যাংকটন প্রধান খাদ্য হিসেবে খেয়ে থাকে।
সম্পূরক খাদ্য দিয়েও মাছটি চাষ করা যায়। মাছটি ৮—৪২০ঈ তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারে। নাইলোটিকা মাছ তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে ৩—৬ মাসে প্রজননক্ষম হয় বাচ্চা ফোটায় এবং কুসুমথলি মিলিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত বাচ্চাগুলো এরা মুখেই রাখে। উল্লেখ্য, স্ত্রী মাছ ২০০টি পর্যন্ত ডিম মুখে রাখতে পারে। মাছটি দেখতে ধূসর নীলাভ থেকে সাদা লালচে। পুরুষ মাছের গলার অংশের বর্ণ লালচে এবং স্ত্রী মাছের ক্ষেত্রে বর্ণ লালচে হলুদাভ। পৃষ্ঠ পাখনা কৃষ্ণবর্ণের মার্জিনযুক্ত এবং পুচ্ছ পাখনা সাদা বর্ণের সরু ও লম্বা দাগযুক্ত।
নাইলোটিকা মাছের বৈশিষ্ট্য ও চাষের সুবিধা:
(১) নাইলোটিকা মাছ বেশ শক্ত গড়নের হওয়ায় রোগবালাই তেমন হয় না।
(২) মাছটি সুস্বাদু এবং দেখতে আকর্ষনীয় হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
(৩) অধিক ফলনশীল হওয়ায় মাছটি চাষে অধিক লাভ হয়।
(৪) সর্বভূক বিধায় মাছ চাষে উৎপাদন খরচ অনেক কম।
(৫) প্রকৃতির বিরূপ পরিবেশে (যেমন— কম অক্সিজেন, বিরূপ তাপমাত্রা) সহনীয় ক্ষমতা বেশি।
(৬) জৈবিক ও কৃষিজ বর্জ্যকে উন্নত আমিষে রূপান্তরকরণে সক্ষম।
(৭) এ মাছের পোনা সহজেই পাওয়া যায়।
(৮) বেশি ঘনত্বে চাষাবাদ করা যায়।
(৯) স্বাদু ও লবণাক্ত পানি ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের জলাশয়ে চাষাবাদ করা যায়।
(১০) বিভিন্ন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়। যেমন—একক, মিশ্র, সমম্বিত, খাঁচায় ও পেন পদ্ধতি ইত্যাদি।
নাইলোটিকা মাছের একক চাষ পদ্ধতি:
নাইলোটিকা মাছ চাষ করতে হলে নিচের ধাপগুলো ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
১। নাইলোটিকা চাষের জন্য মজুদ পুকুর ব্যবস্থাপনা:
পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি : বছরে ৬ মাস পানি থাকে এমন যে কোনো জলাশয়ে সফলভাবে নাইলোটিকা চাষ করা যায়। পুকুরের পানির গভীরতা ১.৫ মিটার থাকলে ভাল হয়। উল্লেখ্য, ৫ শতাংশ বা তার নিচের আকারের জলাশয়েও নাইলোটিকা মাছ চাষ করা যায়। নির্বাচিত পুকুরের পাড় ভাঙ্গা থাকলে তা মেরামত করতে হবে।
তলায় ৩০ সে.মি. এর বেশি কাদা থাকলে তা অপসরণ করতে হবে এবং তলা সমান করতে হবে যাতে জাল টানতে সুবিধা হয়। তাছাড়া তলার পঁচা কাদা অপসারণ করলে পানিতে বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয় না। পুকুরে ভাসমান অথবা শিকড়যুক্ত সব ধরনের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
রাক্ষুসে মাছ দমন : টাকি, শোল, বোয়াল, চিতল, গজার প্রভৃতি হলো রাক্ষুসে মাছ। এরা চাষকৃত মাছের পোনা ও ডিম খেয়ে ফেলে এবং বিভিন্ন রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। তাই পুকুরে পোনা মজুদের আগে এসব রাক্ষুসে মাছ দমন করতে হবে। দুইভাবে কাজটি করা যেতে পারে। জাল টেনে অথবা ঔষধ প্রয়োগ করে। পুকুরে ঘন ঘন জাল টেনে রাক্ষুসে মাছ দমন করা যেতে পারে। সম্পূর্ণভাবে দমন করা না গেলে পুকুর শুকিয়ে নেওয়া উত্তম। তবে ঔষধ প্রয়োগ করে কাজটি সহজেই করা যায়। এক্ষেত্রে ফসটক্সিন ও রোটেনন ব্যবহার করা যেতে পারে।
চুন ও সার প্রয়োগ: চুনের বাফার হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা আছে। পানির ঢ়ঐ পরীক্ষা করে চুন (ঈধঈড়৩) প্রয়োগ করা উচিত। উল্লেখ্য, কিছুটা ক্ষারীয় ঢ়ঐ মাছ চাষের জন্য উপযোগী। বাংলাদেশে অধিকাংশ পুকুরের পানির ঢ়ঐ ৯ থেকে ৯.৫ এর ভিতরে থাকায় তা মাছ চাষের জন্য বেশ সহায়ক। তবে ঢ়ঐ এর মাত্রা কোনো কারণে অম্লীয় হলে চুন ব্যবহার করতে হবে।
চুন প্রয়োগ করলে পানি পরিষ্কার হয় এবং রোগ জীবাণু ধ্বংস হয়। পুকুরে চুন দিলে সার তাড়াতাড়ি কাজ করে চুনের ডোজ শতাংশে ১ কেজি। বাজারে সচরাচর প্রাপ্ত পাথুরে চুন ব্যবহার করা হয়। চুন প্রয়োগের ৩ থেকে ৪ দিন পর শতাংশে ৩—৪ কেজি গোবর + ২ কেজি মুরগির বিষ্ঠা প্রয়োগ করতে হবে। এর এক সপ্তাহ পর শতাংশে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া+ ৫০ গ্রাম ঞঝচ পানিতে গুলে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত ইউরিয়ার অর্ধেক পরিমাণে ঞঝচ সার দিতে হয়। সার প্রয়োগের ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে পানির রং সবুজাভ হলে পোনা ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।
২। নাইলোটিকা চাষের জন্য পোনা সংগ্রহ ও মজুদকরণ :
নির্ভরযোগ্য কোনো হ্যাচারি থেকে একটু বড় আকারের (৫—৭ সে.মি.) পোনা সংগ্রহ করতে হবে। উল্লেখ্য, বড় আকারের পোনার মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে কম। আধুনিক পদ্ধতিতে অক্সিজেন দিয়ে পোনা সংগ্রহ করতে হবে যাতে করে পোনার ওপর পরিবহনজনিত চাপ (ংঃৎবংং) না পড়ে। সংগৃহিত পোনা প্রতি শতাংশে ৬০ থেকে ৮০ টি করে মজুদ করতে হবে। পোনা মজুদের পূর্বে অবশ্যই পুকুরের পানির তাপমাত্রার সাথে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত করে নিতে হবে। পোনা মজুদের কাজটি সকালে করা ভাল। সকালের দিকে তাপমাত্রা কম থাকায় পোনার উপর তাপমাত্রাজনিত বিরূপ প্রভাব পড়ে না।
৩। নাইলোটিকা মজুদ পরবর্তি ব্যবস্থাপনা :
(ক) নাইলোটিকার পোনার পরিচর্যা :
নাইলোটিকা মাছ পুকুরের সব স্তরে বাস করে এবং সব ধরনের খাদ্য খায়। মজুদ মাছের মোট দৈহিক ওজনের শতকরা ৪—৬ ভাগ হারে চাউলের কঁুড়া, গমের ভূষি ও সরিষার খৈলের মিশ্রণ সকাল ও বিকালে পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। সরিষার খৈল পুকুরে প্রয়োগ করার অন্তত: ১২ ঘন্টা পূর্বে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
পুকুরের নির্দিষ্ট স্থানে প্রতিদিন খাবার দিতে হবে পোনা ছাড়ার ৮ থেকে ১০ দিন পর থেকে সব ধরনের খাবার পুকুরে দেওয়া যায়। বাজার থেকে কেনা পিলেট খাবারও ব্যবহার করা যায় এক্ষেত্রে মাছ চাষের খরচ তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। খাদ্য হিসেবে রান্নাঘরের উচ্ছিষ্টও দেওয়া যায়। প্রতি সপ্তাহে জাল টেনে মাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং মাছের গড় ওজনের সাথে মিলিয়ে খাদ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
(খ) নাইলোটিকার অতিরিক্ত পোনা সরানো :
নাইলোটিকা মাছ পুকুরের বদ্ধ পানিতে বাচ্চা দেয় এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর থেকে বছরে একাধিক বার বাচ্চা দেয়। সঙ্গত কারণেই পুকুর অতিরিক্ত পোনায় ভরে যায়। এর ফলে অধিক ঘনত্বে মাছ আশানুরূপ বড় হতে পারে না এবং খাদ্য সংকট দেখা দেয়। তাই জাল টেনে পোনার ঘনত্ব কমিয়ে ফেলতে হবে।
(গ) নাইলোটিকার অন্যান্য পরিচর্যা :
নাইলোটিকা মাছ খাবার ঠিকমত খাচ্ছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি দেখা যায় সকালের দিকে মাছ পানির ওপরে হা করে শ্বাস নিচ্ছে তখন বুঝতে হবে পানিতে অক্সিজেনের অভাব রয়েছে। এ অবস্থায় পুকুরে খাবার ও সার দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। এ সময় লাঠি দিয়ে পানিতে আঘাত করে, ঘনঘন জাল টেনে অথবা পুকুরে নেমে সাঁতার কেটে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এ্যারেটর ব্যবহার করেও কাজটি করা যেতে পারে।
(ঘ) নাইলোটিকা মাছ আহরন ও বাজারজাতকরণ :
নাইলোটিকা মাছ ৫ থেকে ৬ মাসে ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের হয়ে যায়। এমন ওজনের মাছ টানা বেড় জাল দিয়ে বাজারে বিক্রি করা যেতে পারে। আংশিক আহরণ পদ্ধতিতে শুধুমাত্র বড় মাছ গুলো ধরে জীবিত অবস্থায় বাজারে নিলে ভাল দাম পাওয়া যাবে। একবারের চাষে নাইলোটিকা মাছের উৎপাদন দাঁড়ায় বিঘা প্রতি ২৫০—৩০০ কেজি। তবে ব্যবস্থাপনা উন্নত করে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব।
নাইলোটিকা মাছের রোগ ব্যবস্থাপনা :
নাইলোটিকা মাছ অত্যন্ত শক্ত গড়নের হওয়ায় এর রোগবালাই তেমন একটা দেখা যায় না। তবে প্রতিকূল পরিবেশে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ পেতে পারে। শীতের শুরুতে নাইলোটিকা মাছ লেজ ও পাখনা পঁচা, আঁইস খসে পড়া ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়। তাই শীত শুরুর আগে শতাংশে ১ কেজি চুন পানিতে গুলে পুকুরে দিলে উপকার পাওয়া যায়। শীত মৌসুমের আগেই মাছ আহরণ করে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যান্য ব্যবস্থাপনা রাজপঁুটি মাছের অনুরূপ।
সূত্র:
নাইলোটিকার চাষ পদ্ধতি | ইউনিট ১ , পাঠ -১.৪ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র
তুলা চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি কৃষি শিক্ষা ১ ম পত্রের, ৭ নং ইউনিটের, ৭.৮ নম্বর পাঠ। বর্তমানে ৪টি অঞ্চলে তুলার চাষ হচ্ছে। এ অঞ্চলগুলো হলো-যশোর, রংপুর, ঢাকা ও চট্টগ্রাম। যশোর ও রংপুর অঞ্চলের অধীনস্থ যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর ও রাজশাহী এলাকায সবচেয়ে বেশি তুলাহয়।
তুলা চাষ পদ্ধতি
তুলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ আঁশ জাতীয় ফসল, বাংলাদেশে তুলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বস্ত্রখাতে ব্যবহৃত আঁশের ৭০—৭৫% আসে তুলা থেকে। বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পে বর্তামানে ৫৪ লাখ বেল তুলার প্রয়োজন যার মাত্র ৩% দেশে উৎপন্ন হয়। এ চাহিদা পুরণের জন্য বিদেশ থেকে তুলা আমদানি করতে হয়। তাই বাংলাদেশে তুলা উপযোগী অঞ্চলে আধুনিক পদ্ধতিতে তুলা চাষ করে তুলার চাহিদা পূরণের চেষ্টা করা প্রয়োজন।
চিত্র ৭.৮.১ : তুলা গাছের বাহ্যিক অঙ্গসংস্থান
মাটি ও জলবায়ু :
তুলা উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া পছন্দ করে। চারাগাছের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য ২৪—৩৩ সে. তাপমাত্রা উপযোগী তুলাগাছ অতিবৃষ্টি সহ্য করতে পারে না। বার্ষিক ১০০ সে.মি. বৃষ্টি তুলার জন্য উত্তম। সবধরনের মাটিতেই তুলাগাছ জন্মে। তবে বৃষ্টি পানি জমে থাকে না এমন উঁচু জমি ভাল, দেঁাআশ ও বেলে দেঁাআশ মাটি তুলা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। মাটির পিএইচ (এম) ৬—৭.৫ হলে ভাল হয়।
তুলার জমি তৈরি :
তুলা চাষের জন্য জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে কারণ তুলা গাছের মূল মাটির অনেক গভীরে প্রবেশ করে। সেজন্য জমি
৬—৮টি গভীর চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করে নিতে হবে যেন কোথায় পানি জমতে না পারে। বীজ বপনের সময় রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমেই বীজ বপন করা যায়। রবি মৌসুম : মধ্য শ্রাবণ—ভাদ্র মাস, খরিফ মৌসুম : জৈষ্ঠ্য—আষাঢ় মাস।
তুলার বীজের হার :
শতকরা ৮০ ভাগ বা তার অধিক অংকুরোদগম ক্ষমতা সম্পন্ন ৮—১০ কেজি/হেক্টর বীজ প্রয়োজন, বীজবাহিত রোগ দমনের জন্য ভিটাডেক্স—২০০/পেনকোজে দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। [২—৩ গ্রাম/কেজি বীজ] বীজ প্রক্রিয়াজাত করণ তুলাবীজ থেকে অতিরিক্ত তুলা (ফাজ) সরানোর কয়েকটি পদ্ধতি আছে।
১। ফাজ সরানোর শারীরিক পদ্ধতি :
শুকনো গোবর অথবা ছাই দিয়ে ঘষে বীজ থেকে আঁশগুলো সিয়ে ফেলা হয়।
২। ফাজ সরানোর যান্ত্রিক পদ্ধতি :
বিশেষ একধরণের যন্তের সাহায্যে তুলাবীজ থেকে আঁশ বিচ্ছিন্ন করা হয়—
৩। ফাজ সরানোর রাসায়নিক পদ্ধতি :
এই পদ্ধতিতে ঐঈষ, ঐ২ঝঙ৪ ব্যবহার করে তুলাবীজ আঁশ মুক্ত করা হয়। বীজ বপন পদ্ধতির তুলাবীজ সারিতে বপন করা হয়। সারি থেকে সারি দূরত্ব : ৯০—১০০ সে.মি. গাছ থেকে গাছ দূরত্ব : ৪৫—৫০ সে.মি. নির্দিষ্ট দূরত্বে গর্তে ১—২ সে.মি. গভীর ৩—৪টি বীজ বপন করা হয়।
তুলার জাত :
তুলার বিভিন্ন জাত উদ্ভাবিত হয়ে যেমন :
সিবি—১
সিবি—২
সিবি—৩
সিবি—৫
সিবি—৯
সিবি—১০
সিবি—১২
সিবি—১৩
সিবি—১৪
শুভ্র
হীরা হাইব্রিড
রূপালী—১
ডিএম—২, ৩
পাহাড়ি তুলা—১
পাহাড়ি তুলা—২
এই জাতগুলোর মধ্যে ৫টি জাতের কিছু বৈশিষ্ট্য নিচের সারণীতে দেওয়া হল।
তুলা গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি :
জমিতে শেষ চাষ দেয়ার পর এক—চতুর্থাংশ ইউরিয়া অর্ধেক এমপি সার এবং অন্যন্য সারসমূহ সম্পূর্ণ অংশই জমিতে প্রয়োগ করতে হবে; বাকী ইউরিয়া ও এমপি সার সমান তিনভাগে ভাগ করে তুলাগাছের বয়স ২০—২৫ দিন হলে প্রথম বার, ৪০—৫০ দিন হলে দ্বিতীয় বার এবং ৬০—৭০ দিন হলে তৃতীয় বার পাশ^র্ প্রয়োগ করতে হবে।
তুলা গাছের আন্তঃপরিচর্যা :
১। চারা পাতলাকরণ :
চারা গজানোর ২০ দিন পর একটি সুস্থ ও সবল চারা রেখে অবশিষ্ট চারাগুলো উঠিয়ে ফেলতে হবে।
২। আগাছা দমন :
প্রয়োজন অনুযায়ী ২—৩ বার আগাছা দমন করতে হবে। এসময় আগাছা দমনের সাথে সাথে গাছের গোড়া ও সারির মাঝের মাটির আলগা করে দিতে হবে।
৩। সেচ ও নিকাশ :
তুলা চাষের জন্য প্রায় ৭০—৯০ সেমি পানি প্রয়োজন। তাই মাটিতে রস না থাকলে সাথে সাথে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে জলাবদ্ধতা যেন সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। পানি যেন না
জমতে পারে সেজন্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখতে হবে।
তুলার পোকামাকড় ও বালাই ব্যবস্থাপনা:
তুলা ফসলে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়ে থাকে। নিচের তালিকায় কিছু অনিষ্টকারী পোকার নাম ও দমন ব্যবস্থা দেয়া হল।
তুলার রোগ :
প্রধান রোগ হলে অ্যানথ্রাকনোজ, ড্যাম্পিং অফ বা ঢলে পড়া রোগ ইত্যাদি। এসব রোগ দমনের জন্য ভিটাভেক্স ২০০, কিউপ্রভিট/ ডাইমেন এম ৪৫, টিল্ট ইত্যাদি ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
তুলা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ:
তুলা সংগ্রহ:
অধিক ফলন ও ভালমানের আঁশ পেতে হলে তুলা সংগ্রহের সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
তুলা সংগ্রহের সময় রৌদ্র উজ¦ল দিন তুলা সংগ্রহ করতে হয়। সাধারণত রবি মৌসুমে তুলা কাত্বির্ক—অগ্রাহায়ণ মাসে এবং খরিফ মৌসুমের তুলা ফাল্গুন—চৈত্র মাসে সংগ্রহ করা হয়।
১। শুধুমাত্র পরিপক্ক বল থেকে তুলা সংগ্রহ করতে হবে বল ফেটে তুলা বের হলেই বল পরিপক্ক হয়েছে বুঝতে হবে। বল ফেটে তুলা বের হলেই বল পরিপক্ক হয়েছে বুঝতে হবে।
২। সাধারণ বীজ বপনের ৫—৬ মাস পর তুলা সংগ্রহ করা যায়। ফুল ফোটার ৫০—১০০ দিনের মধ্যে বল পরিপক্ক হয়।
৩। বল পরিপক্ক হলে দেরি না করে সংগ্রহ করে ফেলতে হবে তা না হলে তুলায় ময়লা লেগে তুলা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৪। তিনবার তুলা সংগ্রহ করতে হয়। যখন ৩০—৪০% বল ফেটে যায় তখনই প্রথমবারের মত তুলা সংগ্রহ করতে হবে। এরপর ১৫—২০ দিন পর পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তিতে বাকী সব তুলা সংগ্রহ করতে হবে।
৫। বল সংগ্রহের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন ধূলাবালি, ময়লা বা শুকনা পাতা বলের সাথে লেগে না থাকে।
৬। রোগ বলা দ্বারা আক্রান্ত বল এবং ভাল তুলা আলাদা ভাবে উঠাতে হবে। তুলা ৩—৪ বার রোদে শুকিয়ে গুদাম জাত করতে হবে।
৭। খারাপ ও নষ্ট বীজতুলা আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
৮। তবে ফাটা বল প্রায় এক সপ্তাহ গাছে রেখে শুকাতে পারলে অঁশ এর গুণগতমান আরও উন্নত হয়।
তুলার জিনিং ও গাট বাধা :
তুলার বল থেকে যে তুলা পাওয়া যয় তাকে বীজতুলা বলে। এখানে বীজ ও তুলা একসাথে থাকে। জিনিং শব্দের অর্থ হলো বীজ তুলা থেকে বীজ আলাদা করা। জিনিং করার পর যে তুলা পাওয়া যায় (বাণিজ্যিক তুলা) তাকে লিন্ট (খরহঃ) বলে। সাধারণত মেশিনের মাধ্যমে জিনিং করা হয়।
মেশিনগুলো হল রোলার জিনিং করা হয়। মেশিনগুলো হল জিন এবং ‘স’ জিন। বীজতুলা থেকে আঁশ হাড়িয়ে নেয়ার পরও বীজের গায়ে যে ছোট ছোট আঁশ লেগে থাকে তাকে ফাজ বলা হয়। জিনিং এর পর যে বীজ পাওয়া যায় তাকে তুল বীজ বলে। শুষ্ক তুলার ৮% বা তার কম আর্দ্রতা থাকে। জিনিং করার পর প্রাপ্ত তুলাকে বেল প্রেসের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে বেল বা গাঠ বাঁধা হয়।
তুলাপ্রক্রিয়াজাতকরণে জিনিং আউট টার্ণ এবং কাউন্ট সংখ্যা জিনিং আউট টার্ণ :
জিনিং আউনট টার্ণ বলতে কোন তুলার জাতের বীজতুলার আঁশ ও বীজের অনুপাতকে বোঝায়, অন্যভাবে বলা যায়। বীজতুলায় শতকরা কতভাগ আঁশ বের করা যায় তাকেই জিনিং আউট টার্ণ বলে। বা জিওটি (এঙঞ)। একটি তুলারজাতের এঙঞ ৩৫% এর অর্থ হল ঐ জাতের ১০০০ কেজি বীজতুলা জিনিং করলে ৩৫ কেজি আঁশ বা লিণ্ট পাওয়া যায়।
তুলার কাউন্ট সংখ্যা :
১ পাউন্ড তুলার নমুনা থেকে তৈরি করা ৮৪০ গজ ( বা ৭৬৮ মিটার) দৈর্ঘে্যর সুতা দিয়ে যে কয়টি মোড়া তৈরি করা যায় তার সংখ্যাকে ঐ তুলার কাউন্ট সংখ্যা বলা হয়। বাজারে একে ৪০, ৬০, ৮০, ১০০ এবং ২০০ পর্যন্ত কাউন্টের সুতা হিসাবে অভিহীত করা হয়। তুলার কাউন্ট সংখ্যা যত বেশি হবে তার থেকে তৈরি কাপড় তত বেশি মসৃণ, সিল্কের মত ও দামী হবে। মসলিন কাপড়ের সুতা এত মসৃন ও সুষ্ট ছিল যে মাত্র ৫০০ গ্রাম তুলা থেকে প্রায় ৪০০ মিটার দীর্ঘ সুতা তৈরি করা যেত।
তুলা বীজ সংরক্ষণ : তুলা গাছের মাঝের ও নিচের দিকের পরিপক্ক বল থেকে যে তুলাবীজ সংগ্রহ করা হয় তার গুণগত মান সবচেয়ে ভাল, বীজ থেকে আঁশ হাড়িয়ে নেওয়ার পর ২—৩ দিন এই বীজ ভালভাবে রোদে শুকাতে হবে যখন বীজের আর্দ্রতা ৭—৮% হবে তখন শুকানো বীজগুলোর ছায়ায় ঠান্ড করে বায়ুরোধক কোন পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। তুলার ব্যবহার তুলা একটি অতি প্রয়োজনীয় আঁশ জাতীয় ফসল। নীচে এর কিছু ব্যবহার উল্লেখ করা হল।
১। তুলা সুতা ও বস্ত্র তৈরির ব্যবহৃত হয়
২। তুলা বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়।
৩। তুলা বীজের তল লুব্রিকেন্ট, সাবানও পেইন্ট শিল্পে ব্যবহাত হয়।
৪। তুলা বীজের তেল ভোজ্য তেল হিসাবেও ব্যহৃত হয়।
৫। বীজ থেকে তেল বের করার পর যে খৈল পাওয়া যায় তা পশুখাদ্য ও জৈবসার হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
৬। শুকনা গাছ জ¦ালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়
৭। তুলা দিয়ে লেপ, বালিশ, তোষক তৈরি করা হয়।
তুলার ক্ষতিকর পোকা ও তার দমন ব্যবস্থাপনা:
১। তুলার জ্যাসিড পোকা :
ক্ষতির লক্ষণ : চারা গজানোর ২—৩ সপ্তাহ পর থেকেই এদের আক্রমণ শুরু হয়। নিম্ফ ও পূর্ণবয়ষ্ক উভয় পোকাই পাতার রস শোষণ করে যায় এবং ফলে পাতা হলদে এবং পরে লালচে হয়ে যায়।
তুলার জ্যাসিড পোকার প্রতিকার :
সাকসেস ১.৫ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত জমিতে স্প্রে করতে হবে।
২। তুলার জাব পোকা:
ক্ষতির লক্ষণ : নিম্ফ ও পূর্ণবয়ষ্ক উভয় পোকাই গাছের কান্ড ও পাতা থেকে রস চুষে খায়। ফলে পাতা কঁুকড়ে যায় এবং ডগায় আক্রমণ করলে বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।
তুলার জাব পোকা দমন ব্যবস্থা:
ক) বীজ বপনের পূর্বে প্রতি কেজি বীজ ২ গ্রাম ভিটাভেক্স ২০০ দিয়ে শোধন করে নিতে হবে।
খ) জমিতে পানি যেন না জমে সেজন্য জমি সুনিষ্কাশিত হতে হবে।
গ) আক্রান্ত জমিতে কুপ্রাভিট, ডায়থেন এম ৪৫ ইত্যাদি ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
ক) পোকা প্রতিরোধী জাত চাষ করতে হবে।
খ) ভোর বেলা জমিতে ছাই ছিটিয়ে পোকা দমন করা যায়।
৩। তুলার বোল ওয়ার্ম:
লক্ষণ : ৫—৬ সপ্তাহ বয়সী তুলাগাছের এই পোকার লার্ভা গাছের ডগা, কুড়ি, ফুল বা বোলছিদ্র করে দেয়। এতে গাছের ডগা ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে যায়। ফুল, কুড়ি বা কচি বোল মাটিতে ঝরে পড়ে ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
বেল ওয়ার্ম দমন ব্যবস্থা:
ক) জমি গভীর চাষ দিয়ে রোদে শুকাতে হবে। এতে পোকা, লার্ভা বা শুককীট মরে যায় ও পাখিতে খেয়ে ফেলে
খ) জমির আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে হবে
গ) ঝরে পড়া কুড়ি, ফুল ও বোল সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ঘ) আলোর ফাঁদ দিয়ে বোল ওয়ার্ম পোকার মথ ধরতে হবে।
৪। তুলার সাদা মাছি
ক্ষতির ধরণ : সাদা মাছি পাতার রস শোষণ করে, এরা পাতার উপর এক ধরনর মধুকণা নি:সরণ করে, ফলে সেখানে সুটি মোল্ড ছত্রাক জন্মায়। এর আঠালো পদার্থ তুলার লিন্টের সাথে লেগে লিন্টের গুণগত মান নষ্ট হয়।
তুলার সাদা মাছির প্রতিকার :
ক্লোরোপাইরিফস ২০ তরল ২ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
৫। তুলার চারা গাছের রোগ রোগের লক্ষণ :
ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়। গজানোর পূর্বেই বীজ পঁচে যায়। অংকুরিত চারার ভূমি সংলগ্ন স্থানে পচে যায় গাছের শিকড় পচে যায় এবং অবশেষে চারার গাছ মারা যায়।
তুলার চারা গাছের রোগ দমন ব্যবস্থা:
ক) ডিমের গাদা ও লার্ভা/ক্রীড়া সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে
খ) পাখি যেন পোকা খেতে পারে তাই জমির পাশে ডাল পঁুতে দিতে হবে।
গ) কার্বোসালফান ২০ তরল ২ মি.লি. ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
৬। তুলার এ্যানথ্রাকনোজ রোগ:
লক্ষণ : ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। চারাগাছের বীজপত্র ও পাতায় ছোট ছোট লালচে দাগ পড়ে। বয়ষ্ক গাছের কান্ডে লম্বা বাদামি দাগ পড়ে ও বাকল ফেটে যায়। কচি বোলের উপর পানি ভেজা লালচে কিনারাযুক্ত বসে যাওয়া দাগ দেখা যায়।
তুলার এ্যানথ্রাকনোজ রোগ দমন ব্যবস্থা:
ক) আক্রান্ত গাছ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে
খ) ভিটাভেক্স দিয়ে বীজ শোধন করে বপন করতে হবে।
গ) বোল গঠনের পর ১% বোর্দোমিক্সার ১—২ বার প্রয়োগ করতে হবে।
৭। তুলার ফিউজেরিয়াম উইল্ট বা ঢলে পড়া রোগ:
লক্ষণ : চারাগাছের পাতা প্রথমে হলুদ ও পরে বাদামি হয়ে যায় এবং চারা গাছ দ্রুত ঢলে পড়ে ও মারা যায়। আক্রান্ত অংশ কাটলে ভিতরে কালো রিং দেখতে পাওয়া যায়।
তুলার ফিউজেরিয়াম উইল্ট বা ঢলে পড়া রোগ দমণ ব্যবস্থা:
ক) বপনের পূর্বে বীজ শোধন করে নিতে হয়ে
খ) কু প্রাভিট—৫০, ডাইমন এম ৪৫, কপার অক্সিক্লোরাইড প্রয়োগ করতে হবে।
৮। তুলার পাতায় দাগ পড়া রোগ:
লক্ষণ ছত্রাকের দ্বারা এ রোগ হয়। পাতায় গোলাকার দাগ দেখা যা এবং আক্রান্ত স্থান খসে পড়ে।
তুলার পাতায় দাগ পড়া রোগ দমন ব্যবস্থা :
ক) আক্রান্ত পাতা ছিেঁ ড় পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
খ) রোগমুক্ত বীজ বপন করতে হবে অথবা বপনের পূর্বে বীজ শোধন করে নিতে হবে।
৯। তুলার ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট :
ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এই রোগ হয়।
লক্ষণ :
প্রথম লক্ষণ দেখা যায় চারা গাছের বীজপত্রে। বীজপতের্র নিজের দিকে গোল গোল পানি ভেজা দাগ যায় এবং বীজপত্র ঝরে পড়ে। বয়স্ক গাছের পাতায়ও পানিভেজা দাগ দেখা যায়। বোল আক্রান্ত হলে তাতেও কালো বা বাদামী পানি ভেজা দাগ সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত বোল ঝরে পড়ে।
তুলার ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট দমন ব্যবস্থা :
ক) ফসল কাটার পর বাকী অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
খ) সালফিউরিক এসিড দিয়ে বীজ ডিলিলেড করতে হবে।
১০। বোল পঁচা রোগ :
লক্ষণ :
বিভিন্ন ছত্রাক এ পোকার জন্য দায়ী এ রোগ তুলার রোল আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত বোল পুড়িয়ে কালো হয়ে যায় এবং রোল ফাটতে পারে না। কোন কোন ক্ষেত্রে বোল ফাটলেও তুলা কালো হয়ে যায়।
বোল পঁচা রোগ প্রতিকার :
ক) বপনের পূর্বে বীজ শোধন করে নিতে হবে।
খ) আক্রান্ত জমিতে ২.৫ গ্রাম ডায়থেন এম ৪৫ ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
মুরগি পালন পদ্ধতি – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি কৃষি শিক্ষা ২য় পত্রের, ৯ নং ইউনিটের ৯.১ নং পাঠ।
মুরগি পালন পদ্ধতি
মুরগির ঘরের লাইট [ Lighting in a Poultry ]প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম যে পদ্ধতিতেই ডিম ফোটানো হোক না কেন মুরগি থেকে সঠিক উৎপাদন পেতে হলে এদেরকে সঠিকভাবে লালন—পালন করতে হবে। খামারে একদিন বয়সের বাচ্চা তোলার পর থেকে উৎপাদন শেষে বাতিল করা পর্যন্ত এদের পুরো লালন—পালনকালকে দুটো প্রধান পর্বে ভাগ করা যায়।
যেমন:
১। বাচ্চা পালন পর্ব ও
২। বয়ষ্ক পোল্টি্র পালন পর্ব
১। বাচ্চা পালন পর্ব:
এ পর্বটিকে দুটো উপপর্বে ভাগ করা যায়। যেমন
ক. ব্রুডিং পর্ব:
এ পর্বটি মুরগির জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়ের সঠিক যত্নের ওপরই এদের ভবিষ্যত জীবনের উৎপাদন নির্ভর করে। এ পর্বটির স্থিতিকাল ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির যথাক্রমে ০—৪ ও ০—৫/৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত।
খ. গ্রোয়িং বা বৃদ্ধি পর্ব:
যেহেতু এটি বৃদ্ধি পর্ব তাই এ পর্বের সঠিক যত্নের ওপর এদের বৃদ্ধি ও ভবিষ্যত উৎপাদন অনেকাংশে নির্ভর করে। ব্রয়লার ও ডিমপাড়া বা লেয়ার মুরগির ক্ষেত্রে এর স্থিতিকাল যথাক্রমে ৫—৬/৮ ও ৪/৫১৮/২০ সপ্তাহ পর্যন্ত।
২। বয়ষ্ক পোল্টি্র পালন পর্ব:
এ পর্বটি ডিমপাড়া বা লেয়ার মুরগির ক্ষেত্রে ১৮/২০—৭২ সপ্তাহ পর্যন্ত।
লেয়ার বা ডিমপাড়া মুরগির জীবনে সবগুলো পর্ব আসলেও ব্রয়লার মুরগির পালন শুধু ব্রুডিং ও গ্রোয়িং পর্বেই সীমাবদ্ধ।
রেড জঙ্গল ফাউল [ Red jungle fowl Gallus gallus ]
মুরগি পালন পদ্ধতি:
মুরগি পালন পদ্ধতি আমাদের দেশে সাধারণত তিনভাবে মুরগি পালন করা হয়।
১। মুক্ত পদ্ধতি/ছেড়ে পালন।
২। আধাছাড়া বা অর্ধ—আবদ্ধ অবস্থায় পালন।
৩। আবদ্ধ অবস্থায় পালন।
মুক্ত/ ছেড়ে পালন পদ্ধতি:
এ পদ্ধতিতে সাধারণত গ্রামীণ পরিবেশে মুরগি পালন করতে দেখা যায়। এ পদ্ধিতে মুরগি দিনের বেলায় বাড়ির আঙ্গিনায় চারিদিক থেকে খাবার খুঁজে খায় এবং রাতের বেলায় ঘরে ফেরে। এই পদ্ধতি বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালনের উপযোগী নয় । এই পদ্ধতির সুবিধা হলো ফেলে দেওয়া এঁটো ভাত, চালের খুদ, পোকামাকড়, কচি ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি খায় ফলে খরচ নেই বললেই চলে।
অর্ধমুক্ত/ অর্ধছাড়া পদ্ধতি:
একটি নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে মুরগির চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত থাকে এই পদ্ধতিতে। মুরগি ঘরের সামনে ১.৫—২.০ ফুট উঁচু বাঁশ অথবা তারের জালি দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়। এই ঘেরা জায়গার মধ্যে খাদ্য ও পানি সরবরাহ করা হয়। মুক্ত পদ্ধতির তুলনায় এই পদ্ধতিতে উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে।
আবদ্ধভাবে পালন পদ্ধতি :
এক্ষেত্রে মুরগি সম্পূর্নভাবে ঘরে রেখে পালন করা হয়। এই পদ্ধতিতে জায়গা কম লাগে, খাদ্য খরচ বেশি হলেও লাভজনক। খামারিরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে লাভবান হতে পারেন ।
আবদ্ধভাবে পালনের আবার তিনটি পদ্ধতি রয়েছ। যথা—
১। লিটার পদ্ধতি ২। মাচা পদ্ধতি ৩। খাঁচা/ ব্যাটারি পদ্ধতি
লিটার পদ্ধাতিতে মুরগি পালন:
এ পদ্ধতিতে মুরগির পালনকালের প্রতিটি পর্বই ডিপ লিটারের উপর অতিবাহিত হয়। লিটার হলো ঘরের মেঝের উপর কাঠের ছিলকা, করাতের গুড়া, তুষ, বালি, ছাই ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা বিছানা। লিটার মলমূত্র শোষণ করে এবং মুরগির জন্য আরামদায়ক হয়। এই পদ্ধতিতে ৫.০ সেমি পুরু করে বিছানা তৈরি করতে হয়।
বিছানা বেশি নোংরা বা সঁ্যাতসেঁতে হলে তা সম্পূর্ণ বা আংশিক পরিবর্তন করে দিতে হয়। ২—৩ মাস পরপর মুরগির ঘরের লিটার পরিবর্তন করতে হয়। এ পদ্ধতিতে জায়গা বেশি লাগে। ব্রয়লার পালনের জন্য এটি ভালো পদ্ধতি। তবে, লেয়ার পালনের জন্যও এটি বহুল প্রচলিত। প্রতিটি পূর্ণবয়ষ্ক মুরগির জন্য ১.২—১.৫ বর্গফুট জায়গা দিতে হবে। লিটারের উপর খাবার ও পানির পাত্রে খাবার ও পানি সরবরাহ করা হয়। এই পদ্ধতিতে মুরগির ঘরে আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছণীয়।
মাচা পদ্ধতিতে মুরগি পালন:
এই পদ্ধতিতে ঘরের মধ্যে মেঝে থেকে ১.০—১.৫ ফুট উপরে বাঁশ বা কাঠ দিয়ে মাচা তৈরি করতে হয়। মাচার দুটি বাঁশ বা কাঠের প্লেটের মধ্যে ০.৫—১.০ ইঞ্চির বেশি ফাঁক হলে মুরগির পা ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাচা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে শুধু মুরগির মল নিচে পড়তে পারে। খাবার ও পানির পাত্র মাচার উপরে দিতে হবে। ডিম পাড়ার বাসা মাচার একপাশে নিরিবিলি স্থানে দিতে হবে। এই পদ্ধতিতে ঘর পরিষ্কার থাকে এবং মুরগির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। সমন্বিত পদ্ধতিতে চাষের ক্ষেত্রে পানির উপর এভাবে ঘর তৈরি করে মুরগি পালন করা যায়। চিত্র ৯.১.১ : মাচা পদ্ধতিতে মুরগি পালন
খাঁচায় মুরগি পালন:
এই পদ্ধতিতে এদের ব্রুডিং, গ্রোয়িং ও ডিমপাড়া প্রতিটি পর্বই বিশেষভাবে তৈরি খাঁচার ভিতর সম্পন্ন করা হয়। এ খাঁচাটি মুরগিা সংখ্যা ওপর নির্ভর করে ছোট বা বড় এবং একতলা বা বহুতলাবিশিষ্ট হতে পারে। খাঁচা পদ্ধতিতে তুলনামূলকভাবে জায়গা বেশকম লাগে। তাছাড়া এই পদ্ধতিতে রোগজীবাণুর আক্রমণ কম হয়। ডিমপাড়া মুরগি পালনের জন্য এটি আদর্শ পদ্ধতি। নিচে খাঁচা পদ্ধতিতে মুরগি পালন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
খাঁচার ধরন
১। এক তলাবিশিষ্ট খাঁচা:
যেসব জায়গায় গরম বেশি সেখানে একতলাবিশিষ্ট খাঁচা তৈরি করা ভালো। মুরগির সংখ্যা বেশি হলে এ ধরনের খাঁচা ব্যবহারে জায়গা বেশি লাগে। একটি টিন/ খড়ের চালার নিচে এই খাঁচা স্থাপন করতে হয়। এতে খাদ্য ও পানি প্রদান, ডিম সংগ্রহ এবং ময়লা পরিষ্কার তুলনামূলক সহজ।
২। দুই তলাবিশিষ্ট খাঁচা:
এক্ষেত্রে একটি খাঁচার উপর অন্য একটি খাঁচা এমনভাবে বসাতে হবে যাতে ময়লা সরাসরি নিচের তলার মেঝেতে পড়ে। উভয় তলার মধ্যবর্তী স্থানে টিনের বা প্লাস্টিকের ট্রে দেয়া হয়। ময়লা ট্রের উপর জমা হয়। সপ্তাহে কমপক্ষে তিনদিন ট্রে পরিষ্কার করতে হয়। এক তলাবিশিষ্ট খাঁচার তুলনায় দুই তল বিশিষ্ট খাঁচায় মুরগি পালনে জায়গা কম লাগে।
৩। তিল তলাবিশিষ্ট খাঁচা:
এক্ষেত্রে একটি খাঁচার উপর অন্য একটি খাঁচা এমনভাবে বসাতে হবে যেমনটি সিঁড়ির ক্ষেত্রে দেখা যায়। এতে প্রতি তলার মুরগির মলমূত্র সরাসরি মেঝেতে পড়বে। বানিজ্যিকভাবে মুরগি পালনের ক্ষেত্রে এই খাঁচা অত্যন্ত জনপ্রিয়। যাদের জায়গার অভাব কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালন করতে চান তারা এই পদ্ধতিতে মুরগি পালন করতে পারেন।
চাষের পুকুর/ঘেরে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ – পাঠটি বাউবির “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয় এর ইউনিট – ৩ , পাঠ -৩.৪।
চাষের পুকুর/ঘেরে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ
পুকুরে খাদ্য সরবরাহ :
পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণ না থাকলে অধিক পরিমাণে সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করতে হয় এবং প্রাকৃতিক খাদ্য বেশি পরিমাণ থাকলে কম পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। পুকুরের পানির গুণাগুণের সাথে সাথে খাবারের পরিমাণের সম্পর্ক রয়েছে।
পুকুরে যেসব খাদ্য সরবরাহ করা হয় তার সবটুকু মাছ সরাসরি খাদ্য হিসেব গ্রহণ করতে পারে না। খাদ্যের কিছু অংশ পানিতে মিশে পানির গুণাগুণকে প্রভাবিত করে। এতে করে অনেক সময় পানির গুণাগুণ খারাপ হতে পারে, ফলে মাছের মৃত্যুও হতে পারে। পুকুরের পানির গুণাগুণ ঠিক রাখার কোন সুব্যবস্থা না থাকলে প্রতি একরে ১৫ কেজির বেশি খাবার দেয়া ঠিক না। সেক্কি ডিস্কের পাট ১০ সে.মি. এর কম হলে পুকুরে খাবার সরবরাহ বন্ধ রাখতে হবে। সেক্কি ডিস্কের পাট পুনরায় ২০ সে. মি.বা তার অধিক হলে আবার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
ঘেরে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি :
খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি : পুকুরে গলদা চিংড়ির পোনাকে তাদের ওজনের শতকরা ৩—৫ ভাগ দৈনিক ২ বার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় খাবার দেয়া ভাল। খাদ্য পিলেটগুলোকে পুকুরের পাড়ের চারপাশে ছিটিয়ে দিলে ভালো হয়। সন্ধ্যায় সমস্ত চিংড়ি পুকুর পাড়ের নিকট দিয়ে খাদ্যের সন্ধানে ঘোরাফেরা করে।
ছোট ছোট ভাসমান খাঁচা বা নাইলন জাল পাতলা পুরাতন কাপড় দিয়ে তৈরি করা যায়। ৩ ২ ১ বাঁশের খাঁচা তৈরি করে নিচে সূক্ষ্ম ফাঁসের জাল বা কাপড় দিতে হয়। এ প্রক্রিয়ায় চিংড়ি খাদ্য খেয়েছে কি না জানা যায়। সরবরাহকৃত খাদ্য যদি চিংড়ি গ্রহণ না করে তাহলে পানির গুণাগুণ নষ্ট হয়। চিংড়ির খাদ্য তৈরির পর এদের গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করে দেখার প্রয়োজন। সাধারণত খাবার ও চিংড়ির দেহের বৃদ্ধির অনুপাত ২ ঃ ১ হলেই চিংড়ির ভাল ও উপযোগী খাবার বলে গণ্য করা হয়।
খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি :
১. চিংড়ি সাধারনত: রাতে খাবার গ্রহন করে। তাই চিংড়ির খাবারকে সন্ধ্যা বা রাত্রিতে প্রয়োগ করতে হবে।
২. চিংড়ির দেহ ওজনের অনুপাতে নির্দিষ্ট পরিমাণে খাবার দিতে হবে।
৩. পিলেট জাতীয় খাবার পুকুরের চারিদিকে পাড়ের কাছাকাছি ছিটিয়ে দিতে হবে।
৪. বাঁশের খাঁচায় খাদ্য সরবরাহ করা হলে ৩২১ মিটার আকৃতির বাঁশের খাঁচা তৈরী করে তাতে সম্পূরক খাবার প্রয়োগ করতে হবে।
৫. মাঝে মাঝে ঘের/পুকুরে জাল টেনে চিংড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে খাবার প্রয়োগের অনুপাত কম—বেশী করতে হবে।
খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি মাছ চাষের ক্ষেত্রে খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খাদ্য প্রয়োগের মূল উদ্দেশ্য হলো মাছের অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করা। মাছের খাদ্যভাস ও মাছ চাষ পদ্ধতির ওপর খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি নির্ভরশীল। মাছ চাষ নিবিড় না আধা নিবিড় তার ওপর নির্ভর করে খাদ্যের প্রয়োগ মাত্রা। প্রয়োগকৃত খাবারের সবটুকু মাছ গ্রহণ করলেই কেবল অধিক লাভ নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। মাছের খাদ্য গ্রহণ মাছের আকারের ওপর নির্ভরশীল। মাছের আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে খাবার গ্রহণের পরিমান ও মাত্রা কমতে থাকে। পানির তাপমাত্রা ও দ্রবীভূত অক্সিজেনের ওপরও মাছের খাদ্য গ্রহণের মাত্রা নির্ভরশীল। পানির তাপমাত্রা বাড়লে খাদ্য গ্রহণের মাত্রা বাড়ে। তবে মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রায় খাবার প্রয়োগের মাত্রা কমিয়ে দিতে হবে।
নমুনায়নের মাধ্যমে মাছের গড় ওজন ঠিক করে মাছের খাদ্য প্রয়োগের মাত্রা নির্ণয় করতে হয়। সাধারণত মাছের দেহের ওজনের ৩—৫% খাবার প্রয়োগ করা হয়। ছোট আকারের মাছের জন্য খাদ্য প্রয়োগের মাত্রা বড় মাছের তুলনায় ঘন ঘন হতে হবে। মাছকে প্রধানত: তিন ভাবে খাদ্য প্রয়োগ করা যায় যথা—
১। হাত দিয়ে খাওয়ানো
২। চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানো এবং
৩। স্বয়ংক্রিয়ভাবে।
আমাদের দেশে এখনো হাত দিয়ে খাওয়ানো পদ্ধতিই বহুল প্রচলিত। অন্য ২টি পদ্ধতি বানিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষের ক্ষেত্রে অনেক দেশে ব্যবহৃত হয়।
হাত দিয়ে খাবার প্রয়োগ শ্রম সাধ্য ও সময় সাপেক্ষ। তথাপি এ পদ্ধতির কতগুলো সুবিধা রয়েছে। এ পদ্ধতিতে খাবারের প্রতি মাছ কিরূপ সাড়া দেয় তা খাদ্য প্রয়োগকারী স্বচক্ষে দেখতে পারে যা মাছ চাষে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ভিজা খাবার প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাত ছাড়া অন্য পদ্ধতি কষ্টসাধ্য। একই ব্যক্তি হাত দিয়ে প্রতিদিন খাবার প্রয়োগ করলে মাছগুলো ঐ ব্যক্তির উপস্থিতিতে পরিচিত ও অভ্যস্ত হয়ে উঠে। সাধারণত পুকুরের কোন নির্দিষ্ট স্থানে মাছকে খাবার দিতে হয়। এর ফলে মাছ অল্প দিনের মধ্যে জেনে যায় পুকুরের কোন জায়গায় গেলে সহজে খাবার পাওয়া যাবে।
কিছু দিন একস্থানে খাবার প্রয়োগের পর আবার অন্য স্থানে কিছুদিন খাবার দেয়া ভালো। একই স্থানে সবসময় খাবার দিলে অব্যবহৃত খাবার জমে পঁচে বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে। তাই কিছুদিন পর পর পরীক্ষা করে দেখতে হবে মাছ সব খাবার খেয়েছে কিনা। উপরের অংশ খোলা এরূপ বাক্সে বা পাত্রেও খাবার প্রয়োগ করা যায় । এতে মাঝে মাঝে দেখা যায় মাছ সমস্ত খাবার খেয়েছে কি না। একদিনের খাবার একবারে না দিয়ে সকালে ও বিকালে অথবা সকালে, দুপুরে ও বিকালে (৩ বারে) দেওয়া উত্তম।
নার্সারি পুকুরে পোনা মাছের ক্ষেত্রে পাউডার বা দানাদার খাদ্য মাছের দেহের ওজনের ১০—১৫% হারে প্রতিদিন ৩—৪ বার পুকুরের চার পাশে ৩—৪টি নির্দিষ্ট স্থানে ছড়িয়ে দিতে হবে। মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে দানাদার খাদ্য মাছের দেহের ওজনের ৩—৫% হারে প্রতিদিন ২—৩ বার পুকুরের চার পাশে ৩—৪টি স্থানে ছিটিয়ে দিতে হবে।
সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি পুকুর বা জলাশয়ে মজুদকৃত মাছের দৈহিক ওজন অনুযায়ী খাবার দিতে হয়। মাছ কী পরিমান খাবার গ্রহণ করেছে তার পরিমাণ নির্ধারণ করে সঠিক মাত্রায় খাদ্য প্রয়োগ করতে হয়। কার্প জাতীয় মাছের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় খাদ্য গোলাকার পিন্ড আকারে এবং মাংসাশী ও রাক্ষুসে মাছের ক্ষেত্রে পিলেট আকারে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। একই সাথে পুকুরের বিভিন্ন স্থানে খাদ্য দিতে হবে। খাদ্য দ্রব্য সরাসরি ছিটিয়ে না দিয়ে ডুবন্ত খাবার ট্রে বা পাটাতনে দিতে হবে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্য দিতে হবে।
প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় খাদ্য একবারে না প্রয়োগ করে কয়েকবারে ভাগ করে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রতি দিনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সম্ভব হলে ভাগ করে তিন বারে দিলে ভালো। অল্প পরিমানে ও বেশিবার খাবার প্রয়োগ করলে খাবারের অপচয় হয় না। খাদ্য দিনের আলোতে দিতে হবে। সূর্যোদয়ের আগে বা সূর্যাস্তের পরে খাদ্য দেওয়া ঠিক নয়।
মাছের খাদ্য স্বভাব বিভিন্ন প্রজাতির মাছের খাদ্য স্বভাব বিভিন্ন ধরনের। বাংলাদেশে চাষযোগ্য প্রজাতির মাছগুলো পুকুরে বা জলাশয়ের প্রধানত: তিনটি স্তরের খাবার গ্রহণ করে থাকে। উপরের স্তর, মধ্যের স্তর এবং নিচের স্তর। উপরের স্তরে যেসব মাছ খাদ্য গ্রহণ করে থাকে সেগুলো হলো কাতলা, সিলভার কার্প। রুই মাছ মাঝের স্তরের খাবার গ্রহণ করে থাকে। মৃগেল, মিরর কার্প ও কমন কার্প (কার্পিও) নিচের স্তরের খাবার গ্রহণ করে থাকে। গ্রাস কার্প ও সরপঁুটি বিভিন্ন স্তুরের খাবার গ্রহণ করে থাকে।
কাতলা মাছ কিশোর ও পূর্ণ বয়স্ক উভয় ক্ষেত্রেই প্রাণিজ প্ল্যাঙ্কটন খায়। তবে কিছু কিছু শৈবালও খেয়ে থাকে। রুই মাছ পানির মধ্যভাগের খাবার গ্রহণ করে বিধায় একে কলাম ফিডার বলা হয়। রুই মাছ উদ্ভিদভূক্ত মাছ। এরা ছোট অবস্থায় শুধু প্রাণিজ প্ল্যাঙ্কটন এবং বড় অবস্থায় প্ল্যাঙ্কটন ও পঁচনশীল জৈব পদার্থ খেয়ে থাকে। মৃগেল মাছ বয়স্ক অবস্থায় সাধারণত তলদেশের জৈব পদার্থ খেয়ে থাকে। তবে এরা প্লাঙ্কটনও খেয়ে থাকে। সিলভার কার্প ছোট অবস্থায় রোটিফার নামক জুওপ্লাঙ্কটন এবং বড় অবস্থায় ফাইটোপ্লাঙ্কটন খেয়ে থাকে। গ্রাস কার্প ছোট অবস্থায় প্রাণিজ প্লাঙ্কটন এবং বড় অবস্থায় জলজ আগাছা খেয়ে থাকে।
কমন কার্প বা কার্পিও মাছ সর্বভূক। এরা পুকুরের তলদেশের খাবার খেয়ে থাকে। এরা ১০ সে.মি. লম্বা হলেই এক বিশেষ খাদ্যভ্যাস গ্রহণ করে। এরা গব গব করে কাদা মুখে নেয় এবং উহার জৈব অংশ ছেকে নিয়ে বাকীটুকু ফেলে দেয়। ফলে কার্পিও মাছ যে পুকুরে চাষ করা হয় সে পুকুরের পানি সব সময় খোলা থাকে। তেলাপিয়া মাছ কিশোর অবস্থায় সর্বভূক্ত। এরা ফাইটোপ্লাঙ্কটন ও জুপ্লাঙ্কটনকে প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। শোল, গজার, বোয়াল, আফ্রিকান মাগুর এগুলো রাক্ষুসে মাছ বিধায় এদের খাদ্য স্বভাব ভিন্ন হয়।
এরা ছোট অবস্থায় জুপ্লাঙ্কটন খেয়ে থাকে বড় অবস্থায় শামুক, কীটপতঙ্গ ও ছোট ছোট মাছ খেয়ে থাকে। তাছাড়াও ফিশ মিল, সরিষার খৈল, চালের কুড়া, গমের ভূষি প্রভৃতি সম্পূরক খাদ্যও এরা গ্রহণ করে থাকে।
রাজপুটির চাষ পদ্ধতি – কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র বিষয়ের এই পাঠটি ১ নং ইউনিটের ১.৩ নং পাঠ। আজ রাজ রাজপুটির চাসের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হবে।
রাজপুটির চাষ পদ্ধতি
রাজপুটি মাছ পরিচিতি:
রাজপুটি একটি দ্রুত বর্ধনশীল মিঠাপানির চাষোপযোগী মাছ। দক্ষিণ—পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে (যেমনথাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি) এ মাছ চাষ করা হয়। মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Barbonymus gonionotus. মাছটির আগের নাম ছিল Punitius Gonionotus যা এখন আর ব্যবহৃত হয় না।
১৯৭৭ সালে থাইল্যান্ড থেকে মাছটিকে প্রথম আমাদের দেশে আনা হয়। মাছটি দেখতে অনেকটা দেশী সরপঁুটি মাছের মত। তবে দেশী সড়পুটির তুলনায় এদের দেহ বেশ চেপ্টা ও পাতলা। মাছটিকে অনেকে থাই সরপঁুটিও বলে থাকে। মাছটির পিঠের উপরের দিক হালকা মেটে, শরীরের বর্ণ উজ্জ্বল রূপালি, লেজ খাঁজ কাটা, পেটের পাখনার রং হালকা হলুদাভ। পোনা অবস্থায় এরা ফাইটোপ্ল্যাংকটন ও জুপ্ল্যাংকটন খায়। পরিণত বয়সে এরা বিভিন্ন ধরণের জলজ উদ্ভিদ/আগাছা, ক্ষুদিপানা এবং ছোট ছোট অমেরুদন্ডী প্রাণিও খেয়ে থাকে। চাষের অবস্থায় এরা চালের কঁুড়া, সরিষার খৈল ইত্যাদি খেয়ে থাকে। রাজপুটি প্রায় এক বছরেই প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে। এরা নদী বা খালের ে¯্রাতশীল পানিতে প্রজনন করে থাকে।
চিত্র ১.৩.১: রাজপুটি মাছ
রাজপুটি মাছের বৈশিষ্ট্য/চাষের সুবিধা:
(১) উচ্চ ফলনশীল এবং সুস্বাদু মাছ।
(২) প্রায় সব ধরনের খাদ্যই খায়। তবে ক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদ এদের প্রিয় খাদ্য।
(৩) যে কোনো প্রকার পুকুর, ডোবা বা পতিত জলাশয়ে চাষযোগ্য।
(৪) রুইজাতীয় মাছের সাথে মিশ্র চাষ সম্ভব।
(৫) অল্প সময়ে এবং স্বল্প ব্যয়ে সহজেই মাছটি চাষ করা সম্ভব।
(৬) দ্রুত বর্ধনশীল এ মাছ ৪—৬ মাসের মধ্যে আহরণযোগ্য।
(৭) খাদ্যের জন্য বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হয় না।
(৮) সহজ চাষ ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে ঘোলা পানিতে ও ধান ক্ষেতে সমন্বিতভাবে চাষ করা সম্ভব।
রাজপুটি মাছের একক চাষ পদ্ধতি:
রাজপুটি মাছের একক চাষ পদ্ধতি রাজপুটি চাষ করতে হলে নিম্নোক্ত কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে করা প্রয়োজন।
১। মজুদ পকুর ব্যবস্থাপনা:
পুকুর প্রস্তুতি:
পুকুর প্রস্তুতির উপর মাছ চাষের সফলতা বহুলাংশে নির্ভর করে। সে কারণে পোনা মজুদের পূর্বে অবশ্যই পুকুর ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। সাধারণত: ১০—৩০ শতাংশ আয়তনের যে কোনো মৌসুমী পুকুর যেখানে পানির গভীরতা ১.০—১.৫ মিটার থাকে এমন পুকুর রাজপুটি চাষের জন্য উপযোগী। পুকুর প্রস্তুতির ধাপগুলো হলো:
(ক) পাড় ও তলা ঠিক করা:
পুকুরের পাড় ভালোভাবে মেরামত করতে হবে যাতে বন্যার পানি বা বৃষ্টির পানি পুকুরে ঢুকতে না পারে। জাল টানার সুবিধার্থে পুকুরের তলা সমান করতে হবে। তলায় জমা অতিরিক্ত পচা কাদা অপসরণ করতে হবে নতুবা পানিতে বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হবে। পুকুর পাড়ে বড় গাছপালা থাকলে ডালপালা ছেটে দিতে হবে নতুবা গাছের পাতা পানিতে পড়ে পচে পুকুরের পরিবেশ নষ্ট করবে।
(খ) ক্ষতিকর আগাছা দমন:
জলজ আগাছা হিসেবে পুকুরে কচুরীপানা, টোপাপানা ও তন্তুজাতীয় শেওলা দেখা যায়। মাছের পোনা মজুদের পূর্বে এই সমস্ত জলজ আগাছা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। শিকড়যুক্ত আগাছা থাকলে শিকড়সহ তুলে ফেলতে হবে। পুকুরে আগাছা থাকলে মাছ চাষে বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি করে। যেমন—
পুকুরের রাক্ষুসে মাছ দু’ভাবে অপসারণ করা যায়।
জাল টেনে বা পুকুরে শুকিয়ে মাছের পোনা মজুদ করার পূর্বে ঘন ঘন জাল টেনে রাক্ষুসে মাছ যেমন— শোল, টাকি, চিতল, বোয়ল ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। যদি জাল টেনে রাক্ষুসে মাছ অপসারণ করা না যায় তবে পুকুর শুকিয়ে ফেলে কাজটি করা যেতে পারে।
ওষুধ প্রয়োগ করে
রোটেনন –
প্রতি ফুট পানির গভীরতার জন্য ৩০ গ্রাম/শতাংশ হারে রোটেনন প্রয়োগ করতে হবে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে রোটেনন প্রয়োগ করে পানি ওলটপালট করে দিলে তাড়াতাড়ি কাজ করে।
ফসটক্সিন ট্যাবলেট –
১ মিটার পানির গভীরতার জন্য ৩টি ট্যাবলেট/শতাংশ হারে ব্যবহার করা যাবে। সমস্ত পুকুরে ট্যাবলেট সমানভাবে ছড়িয়ে দিয়ে পানি ওলটপালট করে দিতে হবে। ১—২ ঘন্টা পর মাছ ভাসতে শুরু করলে তুলে ফেলতে হবে। (বি:দ্র: পুকুরে ফসটক্সিন ব্যবহার করা অনেক সময় অনুমোদন করা হয় না। কারণ, ফসটক্সিন থেকে উৎপন্ন গ্যাস মানুষও গবাদি পশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর।)
(ঘ) চুন ও সার প্রয়োগ:
পুকুরের ঘোলা ও বিষাক্ত পানি শোধন ও প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য যথাক্রমে চুন ও সার প্রয়োগ করতে হয়। রাক্ষুসে মাছ অপসারনের ১—২ দিন পর ১ কেজি/শতাংশ হারে চুন পানিতে গুলে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। চুন ক্ষতিকর রোগ জীবাণু ধ্বংস করে, মাটি ও পানির গুণাগুণ ঠিক রাখে, মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও প্রাথমিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। চুন প্রয়োগের ৩—৪ দিন পর ৩—৪ কেজি/শতাংশ হারে গোবর (জৈব সার) অথবা ২ কেজি/শতাংশ হারে হাঁস—মুরগির বিষ্ঠা প্রয়োগ করতে হবে। এর ৬—৭ দিন পর অজৈব সার হিসেবে ১০০—১৫০ গ্রাম ইউরিয়া/শতাংশ এবং ৫০—৭৫ গ্রাম টি.এস.পি/শতাংশ হারে প্রয়োগ করতে হবে।
অজৈব সার পানিতে গুলে সারা পুকুরে ছিটিয়ে প্রয়োগ করলে তাড়াতাড়ি ফল পাওয়া যায়। সার প্রয়োগের ৪—৫ দিন পর পানির রং সুবজাভ হলে বুঝতে হবে পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদিত হয়েছে। তখন মাছের পোনা ছাড়তে হবে।
২। মাছের পোনা মজুদ:
*নিকটবর্তী কোনো সরকারি বা নির্ভরযোগ্য বেসরকারি খামার থেকে প্রয়োজন অনুসারে রাজপুটি মাছের পোনা সংগ্রহ করতে হবে। আধুনিক পদ্ধতিতে পলিথিন ব্যাগে ১/৩ ভাগ পানির সাথে ২/৩ ভাগ অক্সিজেন সহকারে পোনা সংগ্রহ করা উত্তম। পোনা পরিবহনের কাজটি সকালে করা শ্রেয়।
* সংগৃহিত পোনা (৫—৭ সে.মি আকারের) ৭০—৮০টি/শতাংশ হারে মজুদ করা যেতে পারে। সকাল বেলা পোনা মজুদ করার উত্তম সময় কারণ এসময় তাপমাত্রা কম থাকে। ফলে তাপমাত্রাজনিত কারণে পোনা মৃত্যুর হার কম হয়।
ক্স সংগৃহিত পোনা সরাসরি মজুদ করা যাবে না। প্রথমে ব্যাগের পানির তাপমাত্রা মজুদ পুকুরের পানির তাপমাত্রার সমতায় আনতে হবে। এজন্য পোনা ভর্তি ব্যাগ কিছুক্ষণ পুকুরের পানিতে রাখতে হবে। তারপর আস্তে আস্তে কাত করলে ব্যাগের পানি পুকুরে এবং পুকুরের পানি ব্যাগে যাবে। এভাবে রাখলে পোনাও আস্তে আস্তে পুকুরে চলে যাবে।
৩। সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ:
* পোনা মজুদের পরের দিন থেকে মাছের দেহ ওজনের শতকরা ৪—৬ ভাগ হারে চাউলের কঁুড়া (৮০%) ও সরিষার খৈল (২০%) এর মিশ্রণ খাদ্য হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। নিচের সারণি অনুসরণ করেও সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সারণি ১। প্রতি শতাংশে পোনা ছাড়ার পর থেকে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগের পরিমান।
* সকালে ও বিকালে প্রতিদিন দু’বার নির্দিষ্ট জায়গায় খাবার দিতে হবে।
* সম্পূরক খাদ্যের পাশাপাশি প্রাকৃতিক খাবার উৎপাদনের জন্য ২ সপ্তাহ অন্তর অন্তর পুকুরে ৪—৬ কেজি/শতাংশ হারে গোবর ছিটিয়ে দিতে হবে।
৪। মাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি পরীক্ষণ:
প্রতি মাসে অন্তত একবার জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। মাছের নমুনা সংগ্রহ করে ওজন পরীক্ষা করতে হবে। যদি রং উজ্জ্বল হয়, গায়ে পিচ্ছিল স্বচ্ছ পাদার্থ থাকে, কোনো ক্ষত চিহ্ন না থাকে, পাখনাগুলো ভালো থাকে এবং দেখতে বেশ তাজা মনে হয় তবে বুঝতে হবে মাছের স্বাস্থ্য ভালো আছে। রাজপুটি মাছ বেশ শক্ত প্রকৃতির হওয়ায় রোগ বালাই তেমন হয় না। তবে শীতকালে কখনও কখনও ক্ষত রোগ হতে পারে। শীতের শুরুতে ১ কেজি/শতাংশ হারে চুন প্রয়োগ করে পানি শোধন করলে রোগ বালাই থেকে মুক্ত থাকা যায়।
৫। রাজপুটি আহরণ ও উৎপাদন/আয়:
উল্লেখিত পদ্ধতিতে ৫—৬ মাস চাষ করার পর মাছের ওজন ১৫০—১৭০ গ্রাম হয়ে থাকে। এমন ওজনের মাছ বিক্রির জন্য ধরা যেতে পারে।
পুকুর থেকে খুব সকালে মাছ ধরতে হবে, যাতে জীবিত বা তাজা অবস্থায় বাজারে বিক্রি করে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়।
পুকুর না শুকিয়ে বেড় জাল টেনে সমস্ত মাছ আহরণ করা যায়।
আধা—নিবিড় পদ্ধতিতে রাজপুটি মাছ চাষ করে ৫—৬ মাসে প্রতি শতাংশে ১০ থেকে ১২ কেজি ফলন পাওয়া সম্ভব। একক চাষ পদ্ধতিতে সমস্ত উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে প্রতি শতাংশ হতে ৬ মাসে ৫০০—৬০০ টাকা মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
৬। রাজপুটির রোগ ব্যবস্থাপনা:
সাধারণত: শীতকালে মাছ কম খায় ফলে শারীরিকভাবে কিছুটা দূর্বল থাকে। রাজপুটি মাছও এর ব্যতিক্রম নয়। আর ঐ সময়টাই সুযোগ সন্ধানী রোগ জীবাণুর জন্য আদর্শ। তাই শীতকালে মাছ রোগক্রান্ত হতে পারে। রাজপুটি মাছের ক্ষতরোগ, লেজ ও পাখনা পচা রোগ, আঁইশ খসে পড়া ইত্যাদি রোগ হতে পারে। রাঁজপঁুটি মাছের রোগ ব্যবস্থাপনার করণীয় বিষয়গুলো নিম্নরূপ:
(১) পানির ভৌত রাসায়নিক গুণাগুণ মাছ চাষের উপযোগী রাখতে হবে।
(২) পুকুরে গুণগতমানসম্পন্ন ভাল জাতের পোনা মজুদ করতে হবে।
(৩) পুকুরটি হতে হবে খোলামেলা ও আগাছা মুক্ত।
(৪) পুকুরে যাতে কোনো অবাঞ্ছিত বা ক্ষতিকর প্রাণি ঢুকতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
(৫) পুকুরটি বন্যামুক্ত স্থানে হওয়া বাঞ্চনীয়।
(৬) মাত্রাতিরিক্ত সার ও সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
(৭) পানির গুণাগুণ মাছ চাষের উপযোগী রাখার জন্য নিয়মিত চুন ও সার প্রয়োগ করতে হবে।
(৮) শীত মৌসুমের পূর্বেই মাছ আহরণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
(৯) নমুনায়নের সময় আক্রান্ত মাছ পেলে তা সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে ফেলতে হবে এবং তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে হবে।
(১০) আক্রান্ত পুকুরে ব্যবহৃত উপকরণ (জাল) অন্য পুকুরে ব্যবহার করা যাবে না। কড়া রৌদ্রে শুকিয়ে জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করা যেতে পারে।
(১১) পুকুরে মাছের ক্ষতরোগ দেখা দিলে প্রতি শতাংশে ১ কেজি চুন ও ১ কেজি লবণ প্রয়োগ করতে হবে।
(১২) মজুদ মাছের সংখ্যা ও পুকুরের ধারণ ক্ষমতার মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে হবে অর্থাৎ অতিরিক্ত পোনা মজুদ করা যাবে না।
মৎস্য চাষ ও মাছ চাষ পদ্ধতির ধারণা – কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ বিষয়ের একটি পাঠ। এই পাঠটি ১ নং ইউনিটের ১.৪ নং পাঠ। মৎস্য চাষ ও মাছ চাষ পদ্ধতির ধারণা বাংলাদেশে মাছ চাষের ইতিহাস খুব বেশী দিনের নয়। তবে নাজির আহমেদ (১৯৪৭—১৯৬০) নতুনভাবে এদেশে মাছ চাষের গোড়া পত্তন করেন। স্বল্প ব্যয়ে ও স্বল্প পরিশ্রমে প্রচুর মাছ উৎপাদন এবং মাছের ব্যবসা হতে আর্থিক আয়ের বিরাট সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় কালক্রমে এ অঞ্চলে পুকুরে মাছ চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। দেশে বর্তমানে মাছের চাষ পদ্ধতিতে বেশ উন্নতি সাধিত হলেও এখনও বিজ্ঞানভিত্তিক শিল্প হিসেবে এটি গড়ে ওঠেনি।
মৎস্য চাষের গুরুত্ব
মৎস্য বা মাছ বলতে শীতল রক্ত বিশিষ্ট (ectothermic= cold blooded) জলজ মেরুদন্ডী প্রাণিকে বোঝায় যারা অভ্যন্তরিন ফুলকার সাহায্যে শ্বাসকার্য পরিচালনা করে এবং জোড় বা বিজোড় পাখনার সাহায্যে পানিতে চলাচল করে। তবে সব মাছই যে শীতল রক্তবিশিষ্ট এমনটি ভাবার অবকাশ নেই। কিছু মাছ আছে যেমন—White shark এবং Tuna মাছ তাদের দেহের তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারে। অর্থাৎ পরিবেশের তাপমাত্রার তারতম্যের সাথে তাদের দেহের তাপমাত্রার তারতম্য হয় না।
Fish Base এর তথ্য মতে অক্টোবর, ২০১৬ পর্যন্ত পৃথিবীতে ৩৩,৪০০ প্রজাতির কথা জানা যায়। তবে অনেক প্রজাতি আছে যাদের সস্পর্কে এখনও বর্ণনা করা হয়নি অথবা এখনও অজানা। জানা মাছের প্রজাতির সংখ্যাটি মেরুদন্ডী প্রাণির অন্যান্য সকল শ্রেণীর (স্তন্যপায়ী, উভচর, সরীসৃপ ও পাখী) সম্মিলিত যোগফলের চাইতেও বেশী।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, যখন আমরা মাছ বা মৎস্য বলি তখন শুধুমাত্র মাছকেই বোঝানো হয়। আর যখন মাৎস্য বলি তখন মাছের সাথে সাথে অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন সকল জলজ প্রাণীকে বোঝায়।
জীববিজ্ঞানের যে শাখায় মাছের বিভিন্ন দিক যেমন— শ্রেনীবিন্যাস, মাছ চাষ ও ব্যবস্থাপনা, মাছের প্রজনন, প্রতিপালন, সংরক্ষণ, পরিবহন, বিপণন, রোগতত্ত্ব তথা মাছ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে মৎস্যবিজ্ঞান বলে। বর্তমানে মাছ চাষের সাথে অন্যান্য অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন জলজ প্রাণি যেমন— চিংড়ি, কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক, কচ্ছপ, ব্যাঙ ইত্যাদি চাষ করা হয়। বিজ্ঞানের ভাষায় মাছ চাষকে বলা হয় একোয়াকালচার (Aquaculture)।
Aquaculture শব্দটি Latin শব্দ Aqua’ যার অর্থ “পানি” এবং English শব্দ ‘culture’ যার অর্থ “চাষ” নামক দু’টি শব্দের সমম্বয়ে গঠিত হয়েছে। অর্থাৎ Aquaculture অর্থ পানিতে চাষ অথবা মাছ চাষ। অন্যভাবে, নিয়ন্ত্রিত বা অনিয়ন্ত্রিতভাবে অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন জলজ জীবের চাষকে একোয়াকালচার বলে। একে অয়ঁধভধৎসরহম ও বলা হয়। উদাহরণ স্বরূপ: মাছ চাষ (Fish farming/culture), চিংড়ি চাষ (Shrimp farming/culture), ওয়েস্টার চাষ (Oyster farming/culture), সীউঈড চাষ (Seaweed farming/culture) ইত্যাদি।
মাছ চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব (Economic improtance of fish culture) :
পরিবেশিক ও প্রাকৃতিক কারণে মৎস্য চাষে বাংলাদেশ বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। “মাছে ভাতে বাঙালি”— প্রবাদ বাক্যটি বাংলাদেশের মৎস্য ঐতিহ্যেরই ইঙ্গিত বহন করে। মাছ এদেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করে। পুষ্টিমান উন্নয়ন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার্জন, আর্থ—সামাজিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাছ চাষের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে।
(১) পুষ্টিমান উন্নয়ন:
পুষ্টিগত দৃষ্টিকোন থেকে দেহগঠনে আমিষের ভূমিকা ব্যাপক। তুলনামূলক বিচারে প্রাণিজ আমিষ দেহের জন্য ভালো উচ্চ মূল্যের কারণে এদেশের জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ দৈনন্দিন খাবারের সাথে প্রাণিজ আমিষ বিশেষ করে গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদির মাংসের সংস্থান করতে পারে না। এই শ্রেণির মানুষের পুষ্টিমান উন্নয়নে মৎস্য আমিষের ভূমিকা তাই অনস্বীকার্য।
সস্তায় পওয়া যায় এমন মাছ খেয়ে এদের দৈনন্দিন আমিষের চাহিদা মিটে। শুধু এরাই নয়, এদেশের প্রায় সব শ্রেনির সব মানুষের কাছেই মাছ সমানভাবে প্রিয়। সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশের মানুষ দৈনিক যে পরিমান প্রাণিজ আমিষ গ্রহণ করে তার প্রায় ৬০% ই আসে মাছ এবং চিংড়ি থেকে। গুণগত মানে অন্যান্য আমিষের চেয়ে মৎস্য আমিষ ভালো।
পর্যাপ্ত পরিমান মাছ খেলে মানুষের বুদ্ধিমত্তা বাড়ে, রোগের ঝঁুকি কমে এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হয়। মিঠা ও লোনা পানির মাছে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় যা মানুষের শরীরের জন্য বেশ উপকারি। এছাড়া আয়রণ ও জিংকের ভালো উৎস হলো ছোট মাছ। কাজেই মানুষের দৈনিক খাবারের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ খাওয়া উচিত। ২০১৫—১৬ অর্থবছরে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, এদেশের মানুষের দৈনিক মাথাপিছু মাছ গ্রহণের পরিমান ৬০ গ্রামে উন্নীতকরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
(২) কর্মসংস্থান সৃষ্টি:
দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১১ শতাংশের অধিক বা ১ কোটি ৮৫ লক্ষ লোক হ্যাচারি পরিচালনা, মৎস্য চাষ, মৎস্য আহরণ, বিক্রি, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি কাজের সাথে নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে। এসব কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অংশগ্রহণ করে। প্রাপ্ত তথ্যানুসারে প্রায় ১৫ লক্ষ নারী মৎস্যখাতের বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়োজিত। সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মৎস্য সেক্টরে বেকার পুরুষ ও নারীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে প্রচলিত হ্যাচারির ব্যবহার আধুনিকায়ন করে পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও চাহিদা—মাফিক মানসম্পন্ন পোনার উৎপাদন ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করত: সম্ভাব্য সকল জলাশয়কে আধুনিক চাষ ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে। একই সাথে উৎপাদিত মৎস্য বিপণন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থারও ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাতে হবে যাতে করে মাছের গুণগত মান ঠিক থাকে এবং মাছ ও মাছজাত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত হয়। এসকল ক্ষেত্রে দক্ষ জনবলের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। বেকার নর—নারীদেরকে খাতওয়ারী প্রশিক্ষণের আওতায় এনে দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে উল্লিখিত ক্ষেত্রগুলোতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
(৩) বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন:
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। দিনে দিনে এ সেক্টরের অবদান ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে মৎস্য খাতে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সম্ভাবনাময় দেশ।কাজেই, এখাতের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
(৪) আর্থ:
সামাজিক উন্নয়ন: বাংলাদেশে গ্রামে গঞ্জে অসংখ্য পুকুর ডোবা ছড়িয়ে আছে। এসব পুকুরের সিংহভাগ মাছ চাষের আওতায় আনা হলেও একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এখনও পতিত। পতিত বা আপাত মাছ চাষ অযোগ্য এসব পুকুরের মালিকানা দেশের প্রান্তিক চাষী বা বিত্তহীনদের হাতে। সংস্কারের মাধ্যমে এ সমস্ত পুকুরে মাছ চাষ করে বিত্তহীন লোক এবং বেকার যুবকদের আর্থ—সামাজিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।
(৫) হাঁস:
মুরগির খাদ্য:
বাংলাদেশে হাঁস—মুরগির চাষ ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে।
সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে এদের খাদ্যের চাহিদা। মাছের অব্যবহৃত অংশ যেমন—আঁইশ, কাটা, নাড়িভঁুড়ি ইত্যাদি এবং ফিসমিল (ঋরংযসবধষ) দ্বারা হাঁস—মুরগির জন্য উত্তম সুষম খাদ্য তৈরী করা সম্ভব। এসব আমিষ সমৃদ্ধ খাদ্য হাঁস—মুরগিকে খাওয়ালে ডিম ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
(৬) পতিত জমির সদ্ব্যবহার:
পতিত/অব্যবহৃত জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করলে পারিবারিক মাছের চাহিদা মেটানোর সাথে সাথে আর্থিকভাবেও কিছুটা সুফল পাওয়া যেতে পারে।
কাজেই উপরের আলোচনা থেকে এটা বলা যায় যে, বাংলাদেশে মাছ চাষের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
স্কোয়াশ চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজ আলোচনা করবো। স্কোয়াশ মূলত একটি শীতকালীন সবজি। এটি বিদেশি জনপ্রিয় সবজি। দেখতে বাঙ্গির মতো লম্বা ও সবুজ। মিষ্টি কুমড়ার মতো এক ধরনের সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। এটি সবুজ ও হলুদ দুই ধরনের রঙের হয়ে থাকে। বাংলাদেশে নতুনভাবে এটি চাষ শুরু হয়েছে।
স্কোয়াশ চাষ পদ্ধতি
বিদেশি সবজি স্কোয়াশ বিগত কয়েক বছর থেকে বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে। এটি দেখতে অনেকটা শশার মত মনে হয় কিন্তু আকার-আকৃতি একটা বড় মিষ্টি কুমড়ার সমান পর্যন্ত হতে পারে । বারি স্কোয়াশ-১ একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। পরাগায়নের পর থেকে মাত্র ১৫-১৬ দিনেই ফল সংগ্রহ করা যায়। নলাকার গাঢ় সবুজ বর্ণের ফল। গড় ফলের ওজন ১.০৫ কেজি। এ জাতের জীবনকাল ৮০-৯০ দিন।
স্কোয়াশ চাষের জন্য বেলে-দোআঁশ মাটি বেশ উপযুক্ত। বসতবাড়ি ও চরেও এর আবাদ সম্ভব। শীতকালীন চাষাবাদের জন্য সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বীজ বপন করা হয়। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে জমিতে সরাসরি বীজ বপন করা হয়। শতক প্রতি ১০ গ্রাম বীজ লাগতে পারে।
স্কোয়াশের পুষ্টিগুণ ও ব্যবহার :
স্কোয়াশে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ আছে। এর পাতা ও কাণ্ড সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। সামার স্কোয়াশ তরকারি ও ভাজি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। সামার স্কোয়াশ চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয় করাও সম্ভব।
স্কোয়াসের জাত :
বারি স্কোয়াশ-১ জাতটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক অবমুক্ত হয়েছে। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। পরাগায়নের পর থেকে মাত্র ১৫-১৬ দিনেই ফল সংগ্রহ করা যায়। নলাকার গাঢ় সবুজ বর্ণের ফল। গড় ফলের ওজন ১.০৫ কেজি। এ জাতের জীবনকাল ৮০-৯০ দিন। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ৪৫-৫০ টন।
স্কোয়াস চাষের জন্য জলবায়ু ও মাটি :
স্কোয়াশ চাষের জন্য বেলে-দোআঁশ মাটি বেশ উপযুক্ত। আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গাতেই মিষ্টি কুমড়া জন্মায়। অতএব সেসব জায়গায় স্কোয়াশ চাষ করা যাবে।
স্কোয়াশ চাষের জমি তৈরি :
ভালো ফলন পেতে হলে জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে। মাটি ও জমির প্রকারভেদে ৫-৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করে নিতে হবে। শীতকালীন চাষের সময় জমিতে রসের পরিমাণ কম থাকলে প্রয়োজনে জমি চাষের আগে সেচ দিয়ে নিতে হবে।
স্কোয়াস বীজ বপনের সময় :
শীতকালীন চাষাবাদের জন্য ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে বীজ বপন করা হয়। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য ভাদ্র মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে আশ্বিন মাসে (আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে) জমিতে সরাসরি বীজ বপন করা হয়।
স্কোয়াস চাষের জন্য বীজের হার :
এক বিঘা বা ৩৩ শতক জমিতে ছোট সাইজের বীজ হলে ৩০০ গ্রাম/২৪০০-২৫০০টি বীজ লাগবে। বড় সাইজের বীজ হলে ৫০০ গ্রামের মতো লাগতে পারে। শতক প্রতি ১০ গ্রাম বীজ লাগতে পারে। বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি স্কোয়াসের বীজ বাজারজাত করছে।
স্কোয়াস সবজির ওজন :
সাধারণত স্কোয়াশের ওজন ৭০০-৮০০ গ্রাম বা লম্বায় ৭/৮ ইঞ্চি হয়ে থাকে। বেশি বড় সাইজ করলে সবজি হিসেবে স্বাদ ও মান পরিবর্তন হয়ে যায়। এছাড়াও ২-৩টি স্কোয়াশের ওজন প্রায় ১ কেজি। প্রতিটি স্কোয়াশ বিক্রি হয় ৫০-৬০ টাকায়।
স্কোয়াস এর ফুল ও ফল আসার সময় :
বীজ রোপণের অল্প দিনের মধ্যেই গাছ বেড়ে ওঠে এবং রোপণের ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই গাছে ফুল আসে। পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে হবে। বীজ লাগানো থেকে ফল তুলতে সময় লাগে দুই আড়াই মাস। ফুল ও ফল দেখতে অনেকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো। ৫৫-৬০ দিনের ভিতর স্কোয়াশ বাজারজাত করা যায়।
স্কোয়াস চাষের জন্য সার ব্যবস্থাপনা :
জমি তৈরির সময় গোবর ২০ কেজি, টিএসপি ৩৫০ গ্রাম, এমওপি ২০০ গ্রাম, জিপসাম ৪০০ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড ৫০ গ্রাম, বোরাক্স ৪০ গ্রাম, দস্তা ৫০ গ্রাম শতাংশ প্রতি প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপণের ৭-১০ দিন পূর্বে মাদা প্রতি গোবর ১০ কেজি, টিএসপি ৬০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড ৮ গ্রাম দিতে হবে।
চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর মাদা প্রতি ৩০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২৫ গ্রাম এমওপি প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর মাদা প্রতি ২৫ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।
জমিতে কেঁচোর চলাচল বেশি হলে দানাদার বিষ ব্যবহার করতে হবে জৈমি তৈরির আগে।
স্কোয়াস চাষের জন্য শতাংশ প্রতি সারের হিসাব:
সারের নাম
পরিমাণ
গোবর
৮০ কেজি
ইউরিয়া
৭০০ গ্রাম
টিএসপি
৭০০ গ্রাম
এমওপি
৬০০ গ্রাম
জিপসাম
৪০০ গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড
৫০ গ্রাম
বোরাক্স
৪০ গ্রাম
দস্তা
৫০ গ্রাম
স্কোয়াশের বপন এবং রোপণ প্রযুক্তি :
স্কোয়াশ বীজ সরাসরি জমিতে রোপণ করা যায়। তবে ছোট আকারের পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদন করে বা প্লাস্টিক ট্রেতে করে তা জমিতে রোপণ করলে ভালো হয়। এছাড়াও স্কোয়াশের বীজ মাদায় বপন করা যায়। প্রায় ৩ ফুট দূরে দূরে একটি মাদায় ২-৩ টি বীজ বপন করা হয়। বীজ বোপন বা চারা রোপণ করার সময় গাছ থেকে গাছে দূরত্ব ১.৫ ফুট এবং একটি গাছের লাইন থেকে অন্য গাছের লাইনের দূরত্ব হলো ৩ ফুট । বীজ মাটির প্রায় ১ ইঞ্চি গভীরে বপন করতে হবে। চারা গজানোর পর মাটি তুলে ৬-১২ ইঞ্চি উঁচু করে দিতে হবে এবং ১-২ ফুট প্রশ্বস্ত করতে হবে।
বীজ বপনের ৪-৬ সপ্তাহ পরে ফল ধরা আরম্ভ হবে। স্কোয়াশ চারা রোপণের ১০-১২ দিন আগে গর্তের মাটির সাথে জৈব সার মিশিয়ে রাখতে হবে। জৈব সার বলতে পুরানো পচা গোবর সার হতে পারে বা কেঁচো জৈব বা ভার্মি জৈব সার হতে পারে। বীজ বপন করার ১০-১৫ দিনের ভিতর চারা বের হয়ে গাছ দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাবে।
স্কোয়াস চাষের জন্য সেচ ও নিষ্কাশন পদ্ধতি :
সার দেওয়ার পর হালকা সেচ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে। স্কোয়াশ গাছ সপ্তাহে ২ ইঞ্চি পানি শোষণ করে থাকে। তাই প্রয়োজনে সেচ প্রদান করতে হবে।শীতকালীন চাষের জন্য এক মাস পর পর জমিতে সেচ দিতে হবে। স্কোয়াশ চাষের সময় জমিতে পানি বেশি সময় জমতে দেওয়া যাবে না।
স্কোয়াস চাষে মালচিং :
স্কোয়াশ চাষে মালচিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চারা টিকে গেলেই গোড়ার চারপাশে মালচিং করলে তাপমাত্রা ঠিক থাকে এবং মাটি আর্দ্রতা ধরে রাখে। বিষয়টি স্কোয়াশের ফলন আগাম ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
স্কোয়াশ চাষের সময় অন্যান্য পরিচর্যা ও করণীয় :
চাষের সময় মাটির ঢেলা ভেঙে ঝুরঝুরে করে দিতে হবে। গাছের বাউনি ও অন্যান্য যত্ন করতে হবে। জমিতে আগাছা জন্মাতে দেওয়া যাবে না। আগাছা জন্মালে তা নিড়ানির সাহায্যে তুলে ফেলতে হবে। কৃত্রিম পদ্ধতিতে পুরুষ ফুলের রেণু স্ত্রী ফুলের উপর ছড়িয়ে দিলে উৎপাদন বাড়বে। গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট শাখা-প্রশাখা বের হয়। এগুলোকে শোষক শাখা বলে। শোষক শাখা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় ও ফলন কমিয়ে দেয়। তাই এই গুলোকে ভেঙে দিতে হবে।
স্কোয়াশের রোগবালাই ও পোকামাকড় :
স্কোয়াশে মাছিপোকা :
এই পোকা স্কোয়াশের কচিফল ও ফুলের মধ্যে প্রথমে ডিম পাড়ে। পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফল ও ফুলের ভিতর কুরে কুরে খায় যার ফলে ফল ও ফুল পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়। এই পোকার আক্রমণের ফলে প্রায় ৫০-৭০ ভাগ ফল নষ্ট হয়ে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা :
আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে তা নষ্ট করে ফেলতে হবে।জমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সেক্স ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার করতে হবে। মাছির আক্রমণ বেশি হলে এসিমিক্স ৫৫ ইসি ১ মিলি/লিটার অথবা পাইরাজিন ৭০ ডব্লিউ ডি জি ০.৪ গ্রাম/ লিটার অথবা টিডো ১ মিলি/লিটার অথবা নাইট্রো/সবিক্রন ১মিলি/লিটার বা ইমিটাফ ২০ এস এল ১ মিলি/ লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে করতে হবে।
সেক্স ফেরোমন ফাঁদ
স্কোয়াশে রেড পামকিন বিটল পোকা :
পামকিন বিটলের পূর্ণবয়স্কপোকা চারা গাছের পাতায় ফুটো করে এবং পাতার কিনারা থেকে খাওয়া শুরু করে সম্পূর্ণ পাতা খেয়ে ফেলে। এ পোকা ফুল ও কচি ফলেও আক্রমণ করে।
দমন ব্যবস্থাপনা :
চারা আক্রান্ত হলে হাত দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলে। ক্ষেত সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। চারা রক্ষার জন্য পাতায় ছাই ছিটাতে হবে। চারা অবস্থায় ২০-২৫ দিন পর্যন্ত মশারির জাল দিয়ে চারাগুলো ঢেকে রাখলে এ পোকার আক্রমণ থেকে গাছ বেঁচে যায়। সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলি অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলি) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে অথবা রেলোথ্রিন/ রিপকট ১ মিলি/লিটার পানিতে ১০-১২ দিন পর পর ২/৩ বার স্প্রে করতে হবে
স্কোয়াশে জাবপোকা :
জাবপোকার আক্রমণে স্কোয়াশের বাড়ন্ত ডগা ও পাতা হলুদ হয়ে যায়। গাছ তার সতেজতা হারিয়ে ফেলে এবং ফলন গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক জাবপোকা দলবদ্ধভাবে গাছের পাতার রস চুষে খায়। ফলে পাতা বিকৃত হয়ে যায়, বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও প্রায়শ নিচের দিকে কোঁকড়ানো দেখা যায়। মেঘলা, কুয়াশাচ্ছন্ন এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় জাবপোকার বংশ বৃদ্ধি বেশি হয়। প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হলে এদের সংখ্যা কমে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা :
প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাবপোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়। নিম বীজের দ্রবণ বা সাবানগোলা পানি স্প্রে করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়। আক্রমণ বেশি হলে সবিক্রন/টিডো/ইমিটাফ ১মিলি/লিটার পানিতে স্প্রে করতে হবে।
স্কোয়াস চাষে প্রয়োজনীয় সর্তকতা :
চারা বের হওয়া থেকে ৫ দিন পর পর সাদা মাছি বা জাব পোকা দমনে কমপক্ষে ভালো কোম্পানির ২/৩টি ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ ব্যবহার করুন। সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার করতে হবে। ওষুধ ব্যবহার করলে অবশ্যই ভালো কোম্পানির ওষুধ ব্যবহার করা উচিত। ভাইরাস আক্রান্ত গাছকে কোন প্রকার ট্রিটমেন্ট না করে সরাসরি তুলে ফেলে গাছটি মাটি চাপা দিতে হবে।
স্কোয়াশ ফসল সংগ্রহ :
স্কোয়াশ পরিণত হলে গাছ থেকে তা সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত বীজ বপন বা চারা রোপণের ৩০ দিন থেকে ৪০ দিনের ভিতর গাছ থেকে ফুল এসে ফল ধরা শুরু হয়। গাছে ফল ধরার ১৫-২০ দিনের মধ্যে স্কোয়াশ সংগ্রহ করা যায়। এছাড়াও ফলের বোঁটা খয়েরী রঙ ধারণ করে ধীরে ধীরে গাছ মরতে শুরু করলে ফসল সংগ্রহ করা যায়।
স্কোয়াসের ফলন :
হেক্টর প্রতি স্কোয়াশের গড় ফলন ৪৫-৫০ টন। জাত ভেদে সময় কম বেশি হতে পারে। ১ বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমি থেকে এক মৌসুমে ২২০০টি সামার স্কোয়াশ গাছ পাওয়া যায়। একটি গাছে গড়ে ১২-১৬ কেজি ফল হয় যায় এক বিঘা জমিতে প্রায় ২৪,০০০ কেজি। কোনো কোনো সময় ফলের সাইজে উপর মোট উৎপাদন কম বেশি হতে পারে। প্রতি বিঘা জমিতে স্কোয়াশ উৎপাদনের জন্য খরচ হয় ৯-১০ হাজার টাকা। কিন্তু ১ বিঘা জমি থাকে মুনাফা হয় ৬০-৭০ হাজার টাকা।
স্কোয়াস বাজারজাতকরণ :
স্থানীয় বাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুপার শপ-এর চাহিদা ব্যাপক। এছাড়া রেস্তোরাঁতেও স্কোয়াশ সরবরাহ করা যায়।
চরাঞ্চলে নিরাপদ স্কোয়াশ উৎপাদন:
স্কোয়াশ একটি সুস্বাদু ও জনপ্রিয় সবজি হিসেবে বিদেশিদের কাছে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। এ দেশে স্কোয়াশ একটি উচ্চমূল্যের সবজি ফসল। কয়েক বছর ধরে এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষাবাদের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তুলনামূলকভাবে কম উর্বর জমিতে এবং চরাঞ্চলে স্কোয়াশের চাষাবাদ সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিশেষ করে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় স্কোয়াশের চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও মাদারীপুর জেলার চাষিরা।
দেশের অন্য অঞ্চলে রয়েছে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের সম্ভাবনা। গবেষকরাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট হতে বারি স্কোয়াশ-১ নামে একটি জাত রবি মৌসুমে চাষাবাদের জন্য মুক্তায়ন করা হয়েছে। বারি স্কোয়াশ-১ একটি উচ্চফলনশীল জাত। পরাগায়নের পর থেকে মাত্র ১৫-১৬ দিনেই ফল সংগ্রহ করা যায়। নলাকার গাঢ় সবুজ বর্ণের ফল। গড় ফলের ওজন ১.০৫ কেজি। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ৪৫ টন।
চরাঞ্চলে স্কোয়াশ উৎপাদনের জন্য উৎপাদন প্রযুক্তি, মাটি ও আবহাওয়া:
স্কোয়াশের জন্য উষ্ণ, প্রচুর সূর্যালোক এবং নি¤œ আর্দ্রতা উত্তম। চাষকালীন অনুক‚ল তাপমাত্রা হলো ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চাষকালীন উচ্চতাপমাত্রা ও লম্বা দিন হলে পুরুষ ফুলের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং স্ত্রী ফুলের সংখ্যা কমে যায়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ বা এঁটেল দো-আঁশ মাটি এর চাষাবাদের জন্য উত্তম তবে চরাঞ্চলে পলিমাটিতে স্কোয়াশের ভালো ফলন হয়।
চরে স্কোয়াশ চাষে বীজের হার
প্রতি হেক্টরে ২-৪ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
চরে স্কোয়াশ চাষে বীজ বপন ও চারা উৎপাদন
শীতকালে চাষের জন্য অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে বীজ বপন করা যায়। চারা নার্সারিতে পলিব্যাগে উৎপাদন করে নিলে ভালো হয়। বীজ বপনের জন্য ৮ ী ১০ সেমি. বা তার থেকে কিছুটা বড় আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা যায়। প্রথমে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করে পলিব্যাগে ভরতে হবে।
সহজ অঙ্কুরোদগমের জন্য পরিষ্কার পানিতে ১৫-২০ ঘণ্টা অথবা শতকরা এক ভাগ পটাশিয়াম নাইট্রেট দ্রবণে বীজ এক রাত ভিজিয়ে অতঃপর পলিব্যাগে বপন করতে হবে। প্রতি ব্যাগে দুটি করে বীজ বপন করতে হবে। বীজের আকারের দ্বিগুণ মাটির গভীরে বীজ পুঁতে দিতে হবে। বীজ সরাসরি মাদায়ও বপন করা হয়। সেক্ষেত্রে সার প্রয়োগ ও মাদা তৈরির ৪-৫ দিন পর প্রতি মাদায় ২-৩টি করে বীজ বপন করা যেতে পারে। চারা গজানোর ১০-১২ দিন পর ১টি সুস্থ ও সবল চার রেখে বাকিগুলো উঠিয়ে ফেলতে হবে। চারার বয়স ১৬-১৭ দিন হলে তা মাঠে প্রস্তুত মাদায় লাগাতে হবে।
চরে স্কোয়াশ চাষের জন্য বেড তৈরি
বেডের উচচতা ১৫-২০ সেমি. ও প্রস্থ ১-১.২৫ মি. এবং লম্বা জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে সুবিধামতো নিতে হবে। এভাবে পরপর বেড তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি দুইটি বেডের মাঝখানে ৭০ সেমি. প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা থাকবে।
চরে স্কোয়াশ চাষের জন্য মাদা তৈরি
মাদার ব্যাস ৫০-৫৫ সেমি. গভীরতা ৫০-৫৫ সেমি. এবং তলদেশ ৪৫-৫০ সেমি. প্রশস্ত হবে। ৬০ সেমি. প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা সংলগ্ন বেডের কিনারা থেকে ৫০ সেমি. বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে ২ মিটার অন্তর অন্তর এক সারিতে মাদা তৈরি করতে হবে। প্রতি বেডে এক সারিতে চারা লাগাতে হবে।
চরে স্কোয়াশের জন্য সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি
ভালো ফলন পেতে মাটিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের সরবরাহ করতে হবে। তবে মাটির অবস্থা বুঝে সারের পরিমাণ কম/বেশিও হতে পারে।
সমস্ত গোবর সার, ফসফরাস সার ও পটাশ সারের ৩ ভাগের দুইভাগ শেষ জমি প্রস্তুতের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। অবশিষ্ট এক ভাগ পটাশ সার বীজ বপনের ৩০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। তবে নাইট্রোজেন সার তিনটি সমান ভাগে বীজ বপনের ২৫, ৪০ ও ৬০ দিন পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
চরে স্কোয়াশ চারার বয়স ও চারা রোপণ
বীজ গজানোর পর ১৬-১৭ দিন বয়সের চারা মাঠে লাগানোর জন্য উত্তম। মাঠে প্রস্তুত মাদাগুলোর মাটি ভালোভাবে ওলটপালট করে এক কোপ দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জায়গা করে নিতে হবে। অতঃপর পলিব্যাগের ভাঁজ বরাবর বেøড দিয়ে কোটি পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলাসহ চারাটি ওই জায়গায় লাগিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর গর্তে পানি দিতে হবে।
চরে স্কোয়াশ চাষের জন্য পরবর্তী পরিচর্যা
সেচ দেওয়া :
স্কোয়াস ফসল পানির প্রতি খুবই সংবেদনশীল। সেচ নালা দিয়ে প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। জমিতে কখনও সব জমি ভেজানো বা প্লাবন সেচ দেয়া যাবে না। শুধু সেচ নালায় পানি দিয়ে আটকে রাখলে গাছ পানি টেনে নেবে। প্রয়োজনে সেচনালা হতে ছোট কোনো পাত্র দিয়ে কিছু পানি গাছের গোড়ায় দেয়া যাবো। শুষ্ক মৌসুমে ৫-৭ দিন অন্তর সেচ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে।
মালচিং :
প্রত্যেক সেচের পর হালকা খড়ের মালচ করে গাছের গোড়ার মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে। আগাছা অনেক রোগের আবাসস্থল। এ ছাড়াও আগাছা খাদ্যোপাদান ও রস শোষণ করে নেয়। কাজেই চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত জমি সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ : ফলে মাছি পোকার আক্রমণ হতে পারে। এটি থেকে ফসলকে রক্ষা করার জন্য সেক্স ফেরোমন ফাঁদ এবং পরাগায়নের পর ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করে মাছি পোকা দমন করা যায়। এ ছাড়াও ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রæপের কীটনাশক নির্দেশিত মাত্রায় ১০-১২ দিন পরপর ব্যবহার করে এই পোকার আক্রমণ কমানো যায়। রোগবালাইয়ের আক্রমণ তেমনটি চোখে পড়ে না।
বিশেষ পরিচর্যা : সাধারণত স্কোয়াশ উৎপাদনের জন্য ১৬-২৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা ও শুষ্ক পরিবেশ সবচেয়ে উপযোগী। রাতের তাপমাত্রা ১৭-২১ ডিগ্রি সে. এর কম বা বেশি হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ফুল ঝরে পড়ে ও ফলন কমে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একবারেই ফলন হয় না। অক্টোবর মাসে বীজ বপন করে নভেম্বরে লাগালে দেখা যায় যে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ হতে জানুয়ারি পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা অনেক কমে যায়, ফলে গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এজন্য গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য পলিথিন ছাউনি বা গøাস হাউসে গাছ লাগালে রাতে ভেতরের তাপমাত্রা বাইরে অপেক্ষা বেশি থাকে।
ফসল সংগ্রহ : ফল পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে। তখনও ফলে সবুজ রঙ থাকবে এবং ফল মসৃণ ও উজ্জ্বল দেখাবে। নখ দিয়ে ফলের গায়ে চাপ দিলে নখ সহজেই ভেতরে ঢুকে যাবে।
এ দেশে সবজির উৎপাদন বাড়াতে নতুন এই সুস্বাদু সবজি ফসলটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারে এমনটিই প্রত্যাশা সবার।
কৃষি, কৃষি শিক্ষা, কৃষি প্রশিক্ষণ, কৃষি শিল্প, কৃষি গবেষণা