কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র বিষয় টি “বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়” এর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের একটি বিষয়। এর বিষয় কোড কোড ২৮৮৯। এই বিষয়ে মৎস্য চাষ, চিংড়ি চাষ, মাছ ও চিংড়ির খাদ্য, মাছ ও চিংড়ির রোগ ও রোগ ব্যবস্থাপনা, মাছ ও চিংড়ি সংরক্ষণ, পোলট্রির বিভিন্ন জাতি এবং জাত, পোলট্রি খামারের পরিকল্পনা, পোলট্রির ডিম ফোটানো ও বাচ্চা উৎপাদন, মুরগি পালন, কোয়েল, হাঁস, রাজহাঁস ও কবুতর পালন পদ্ধতি, প্রাণি সম্পদ, গবাদি প্রাণি পালন, গবাদি প্রাণির রোগ ব্যবস্থাপনা, দুগ্ধ খামার ব্যবস্থাপনা, বনায়ন, কৃষি ও বৃক্ষ মেলা, কৃষি অর্থনীতি, কৃষি ঋণ ও সমবায় ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবহমানকাল থেকেই এদেশের মানুষের ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে মাছ। আর এজন্যই বলা হয় “মাছে ভাতে বাঙালী। বিপুল জলসম্পদের এই দেশে অগনিত মানুষ মৎস্য আহরণ, চাষ ও বেচা—বিক্রিসহ এ সংক্রান্ত নানা কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে প্রাণীজ আমিষের উত্তম উৎস হিসেবে মাছের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বৈদেশিক মুদ্রার্জনের পাশাপাশি মৎস্য চাষ করে অনেক বেকার যুবকযুবতী স্বাবলম্বী হচ্ছে।
দেশের আর্থ—সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ত্বরাম্বিত হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার মৎস্য খাতের সার্বিক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনাগত উৎকর্ষতা সাধনের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। সময়োপযোগী ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছসহ অন্যান্য জলসম্পদের উৎপাদন বাড়াতে নেওয়া হয়েছে নানা কার্যকর উদ্যোগ। ফলে দেশের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৪—১৫ অর্থবছরে ৩৬ লক্ষ ৮৪ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনা সরকারের সুযোগ্য নেতৃত্বে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ গভীর সমুদ্রে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার মালিকানা অর্জন করেছে। এখন জাতিসংঘ ঘোষিত “টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এস.ডি.জি)” অর্জনে অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের পাশাপাশি সামুদ্রিক বিশাল জলজসম্পদকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে হবে।
জনসংখ্যা ও পরিবেশ দূষণ – পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের, পরিবেশ বিভাগের ২ নং ইউনিটের পাঠ ২.৪ নং পাঠের অংশ।
জনসংখ্যা ও দূষণের ধারণা আজ আশঙ্কাজনকভাবে সারা পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই হার উন্নত বিশ্ব অপেক্ষা অনুন্নত বিশ্বেই অধিক। ক্রমবর্ধমান এ জনসংখ্যার জন্য চাই প্রয়োজনীয় গৃহ সংস্থান, অন্ন ও বস্ত্র। আর আরাম আয়েশের জন্য চাই বিলাস সামগ্রী, ভৌত সুযোগ—সুবিধা ও আরও অনেক কিছু।
জনসংখ্যা ও পরিবেশ দূষণ
পরিবেশ বিজ্ঞানী ই.পি, ওডামের মতে, নগরীর পরিধি যত বাড়ছে পারিপার্শ্বিক এলাকা থেকে তার চাহিদা যোগানের মাত্রাও বাড়ছে। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হবার আশঙ্কাও প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। মানুষ তার এসব মৌলিক চাহিদা ও বিলাস সামগ্রীর যোগান দিতে গিয়ে বর্ধিত হারে আহরণ করছে খনিজ ও বনজ সম্পদ। কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে ঘটিয়েছে বিপ্লব, উদ্ভাবন করেছে নব নব প্রযুক্তির। ফলে সম্পদের উপর বেড়েছে অনাকাঙ্খিত চাপ। ভারসাম্য হারিয়েছে পরিবেশ, দুষিত হয়েছে তার আদি রূপ।
জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও পরিবেশ দূষণ আজ তাই একে অন্যের পরিপূরক। আর এ বাস্তবতাটি গ্রামাঞ্চল অপেক্ষা শহরাঞ্চলেই বেশি। কারণ, শহরাঞ্চলের মৌলিক চাহিদার যোগান সাধারণভাবে গ্রামাঞ্চল থেকেই হয়ে থাকে। তাই বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী ই.পি, ওডামের মতে, নগরীর পরিধি যত বাড়ছে পারিপার্শ্বিক এলাকা থেকে তার চাহিদা যোগানের মাত্রাও বাড়ছে। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হবার আশঙ্কাও প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। আর এ বিপন্ন পরিবেশই সামাজিক, অর্থনৈতিক, কৃষিজ, বনভূমি ইত্যাদি সংক্রান্ত দূষণের মূল কারণ।
জনসংখ্যাজনিত সামাজিক দূষণ বাস উপযোগী একটি আবাস গৃহ প্রতিটি মানুষেরই অন্যতম মৌলিক অধিকার। এশিয়া প্রশান্তমহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলোতে বিশেষ করে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে পৃথিবীর মোট ৫.৫ বিলিয়ন জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি লোকের বাস এবং এসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও অধিক। সম্পদের স্বল্পতা হেতু এতদঞ্চলে বর্ধিত এ জনসংখ্যার জন্য গৃহায়ণ একটি প্রকট সমস্যা। ফলে নগর ও গ্রামাঞ্চলে মানুষ নিম্নমানের আবাসস্থলে অত্যন্ত অমানবিক অবস্থায় বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে।
শহরাঞ্চল জীবন ধারণের সবচাইতে উপযুক্ত স্থান বলে বিবেচিত। অথচ জনসংখ্যার চাপে ম্যানিলা, ঢাকা, কলিকাতা, বোম্বের ন্যায় এশিয়ার জনবহুল শহরগুলোর এক তৃতীয়াংশের অধিক লোক বস্তিবাসী। তাদের জন্য নেই কোন পরিচ্ছন্ন আলো—বাতাস, পানীয়জল ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃপ্রণালীর ব্যবস্থা। ফলে যত্রতত্র গড়ে উঠছে ময়লা, আবর্জনার স্তুপ। ঘটছে স্বাস্থ্যহানী। বঞ্চিত হচ্ছে লাখো মানুষ জীবনের অধিকার থেকে। এভাবেই বিনষ্ট হচ্ছে সামাজিক পরিবেশ। মানুষ সামাজিক জীব। তাই বহুমুখী চাহিদার যোগাদান দিতে গিয়ে পরস্পরের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। আর এজন্য চাই সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা।
কিন্তু বর্ধিত জনসংখ্যাজনিত কারণে ভূমি ও সম্পদের উপর প্রচন্ড চাপ থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের মতো খুব কম ভূমি ও সম্পদই এসব এলাকায় অবশিষ্ট থাকে। ফলে জনসংখ্যার চাপে এবং যথাযথ যোগাযোগের অভাবে মহামারী, অগ্নিকান্ড, ঝড়ঝঞ্জা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে পরিমিত সাহায্যের অভাবে মানুষ কোন নিশ্চিত অবলম্বন খুঁজে পায় না। ফলে মাত্রাতিরিক্ত স্থানীয় সম্পদ ব্যবহার করে পরিবেশকে করে তোলে ভারসাম্যহীন।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বায়ু দূষণ
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে মানুষের মৌলিক চাহিদা যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি বৃদ্ধি পায় তার ভোগ সামগ্রীর চাহিদা। তাই জনসংখ্যার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে ঘটে চলেছে শিল্প—বিপ্লব। আর জনসংখ্যা ও শিল্প—
আর্দ্র জলাবদ্ধ জমিতে ধান চাষ থেকে নির্গত হচ্ছে মিথেন গ্যাস। এই গ্যাসের গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া ঘটানোর ক্ষমতা CO2 অপেক্ষা ১০ গুণ মতান্তরে হাজার গুণ বেশি। ইতোমধ্যেই বিশ্বের শতকরা ১৭ ভাগ মিথেন ধানের জমি থেকে আসছে। উদ্ভিদ সালোকসংশেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বছরে প্রায় ৪—৯১০১১ কেজি CO2 গ্রহণ করে এবং প্রায় সম পরিমাণ O2 ত্যাগ করে।কারখানা উভয়েই দ্রুত বাড়িয়ে তুলছে শক্তি ব্যবহারের পরিমাণ এবং বায়ু দ ষণের উপকরণ।
জাপানে অবস্থিত বিশ্বপরিবেশ গবেষণা কর্তৃপক্ষ ১৯৯৩ সালে এক সমীক্ষায় প্রকাশ করে যে, এশিয়ার দেশগুলো থেকে নির্গত CO2 এর পরিমাণ বর্তমান দশকেই শতকরা ৩০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে এবং আনুপাতিক হারে মিথেন গ্যাসের বৃদ্ধি ঘটবে। আর এদু’টো গ্যাসই বায়ু দূষণের অন্যতম সোপান। বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ইতোমধ্যেই শতকরা ২৫ ভাগ CO2 এর আধিক্য ঘটেছে। জনসংখা বৃদ্ধিজনিতকারণে CO2 এর পরিমাণ আরও বাড়লে তা বায়ু দষণের ক্ষেত্রে তথাু গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে মারাÍক বিপর্যয় ডেকে আনবে।
কৃষি উৎপাদন ও দূষণ
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে মানুষের খাদ্য চাহিদা বাড়ছে। এই বর্ধিত খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য মানুষ উদ্ভাবন করেছে উফশী জাতের ফসল। ফলন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করছে সার ও কীটনাশক। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে কোন ফসলের উৎপাদন দ্বিগুণ বাড়াতে হলে সার, কীটনাশক ও শক্তি ব্যবহারের পরিমাণ ১০ গুণ বাড়াতে হচ্ছে। ফলে বায়ু ও পানি কলুষিত হচ্ছে। আর্দ্র জলাবদ্ধ জমিতে ধান চাষ থেকে নির্গত হচ্ছে মিথেন গ্যাস। এই গ্যাসের গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া ঘটানোর ক্ষমতা CO2 অপেক্ষা ১০ গুণ মতান্তরে হাজার গুণ বেশি।
ইতোমধ্যেই বিশ্বের শতকরা ১৭ ভাগ মিথেন ধানের জমি থেকে আসছে। আরও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ধানের উৎপাদন বাড়াতে হবে। সেই সাথে মিথেন উৎপাদনও বেড়ে যাবে। নাইট্রাস অক্সাইড আরেকটি শক্তিশালী গ্রীন হাউজ গ্যাস। এর পরিমাণ বৎসরে ০.২ থেকে ০.৩ ভাগ হারে বাড়ছে এবং এর গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া ঘটানোর ক্ষমতা CO2 এর চাইতে ১৮০ থেকে ৩০০ ভাগ বেশি। আর অধিকাংশ ঘ২ঙ গ্যাসই নির্গত হয় জৈবিক উৎস থেকে। এর মধ্যে শস্যক্ষেত্রে ব্যবহৃত নাইট্রোজেনজনিত সারের ব্যবহার থেকে সৃষ্টি হয় প্রায় এক পঞ্চমাংশ।
বন নিধন ও জনসংখ্যা জনিত দূষণ
আজ পৃথিবীতে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তার চেয়ে অধিক গতিতে বন সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। এর মূলে রয়েছে মানুষের নতুন বসতি, গৃহায়ণ, নগর পত্তন ইত্যাদি কারণ। উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বছরে প্রায় ৪—৯১০১১ কেজি CO2 গ্রহণ করে এবং প্রায় সম পরিমাণ C2 ত্যাগ করে। আর এ C2 হচ্ছে সকল প্রাণীর শ্বসনকার্য পরিচালনার উপাদান। সুতরাং অত্যধিক জনসংখ্যার
চাপে বন সম্পদ ধ্বংস হলে তা প্রাণীজ পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনবে।
জনসংখ্যা ও শিল্পায়ন জনিত দূষণ
বায়বীয় পরিবেশ দ ষণের প্রধান উপাদান হিসেবে CO2, ঈঋঈং, মিথেন ইত্যাদিকে দায়ী করা হয় এবং এর অধিকাংশ শিল্পোন্নত দেশের উপজাত বলেই বিবেচিত। কিন্তু বর্তমানে জনসংখ্যাবহুল দেশগুলোতে একদিকে যেমন জনসংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডও দ্রুততার সাথে বেড়ে চলেছে। চীন ১২০ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা উৎপাদনকারী, ৬ষ্ঠ তেল উৎপাদনকারী এবং ৪র্থ বিদ্যুত উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিবেচিত। বর্তমানে তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্বির হার শতকরা প্রায় ৮ ভাগ। মুক্ত বাজার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের আওতায় চীনকে তার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বজায় রাখার জন্য অভ্যন্তরীণ শক্তি ঘাটতি মোকাবেলার জন্য আরও কয়লা ও তেল আমদানী করতে হচ্ছে।
১৯৯৩ সালে ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত আবহাওয়ার আঞ্চলিক সম্মেলনে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী চীন ইতোমধ্যেই পৃথিবীর ১১% CO2 উৎপাদনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরেই তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে। এশীয় দেশগুলো ইতোমধ্যে শতকরা ২৫% গ্রীন হাউজ গ্যাস উৎপাদন করে চলেছে যার অর্ধেকই CO2। কিন্তু যে হারে এশিয়ার জনসংখ্যা বাড়ছে এবং শিল্পায়ন ঘটছে তাতে খুব শীঘ্রই এশিয়ান দেশসমূহ আমেরিকা ও ইউরোপীয়দেশসমূহের সম্মিলিত দূষণ মাত্রাকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জনসংখ্যা সমস্যা ও পরিবেশ দূষণের প্রতিকার/সমাধান
মানুষের সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। আর এটি সীমাবদ্ধ স¤žদের যথাযথ ব্যবস্থাপনা দ্বারাই করতে হবে। এই নীতির ভিত্তিতে এবং বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও পরিবেশ দ ষণের ভয়াবহ সমস্যা মোকাবেলার জন্য যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে তার সার সংক্ষেপ নিম্নরূপ ঃ
জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে একটি দক্ষ সার ব্যবস্থাপনা নীতির মাধ্যমে অন্তত শতকরা ২৫ ভাগ নাইট্রাস অক্সাইড জনিত দূষণ মুক্ত করা সম্ভব।
১। কেবল কৌশল উদ্ভাবন দ্বারা জনসংখ্যা ও দ ষণ বিমোচন করা যাবেনা। এ জন্য চাই সর্বাগ্রে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে নৈতিক, অর্থনৈতিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে পূর্ণ সচেতনতা গড়ে তোলা।
২। পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে এবং তা সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখেই করতে হবে।
৩। আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ের নগর পরিকল্পনায় যতটা সম্ভব ‘ওভার ক্রাউডিং’ পরিহার করতে হবে এবং অন্তত মোট এলাকার এক তৃতীয়াংশ স্থান আলো—বাতাস, খেলা—ধুলা বা বিনোদনের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
৪। শিল্পায়নের ক্ষেত্রে সংখ্যাধিক্য অপেক্ষা মানস¤žন্ন উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে এবং আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। অধিক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে কম ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় শিল্প স্থাপন করতে হবে যাতে জনস্বাস্থের জন্য হুমকি হয়ে না দাড়ায়।
৫। উৎপাদিত পণ্যের মাননিয়ন্ত্রণ বোর্ড এবং ভুক্তা সমিতি গঠনের মাধ্যমে বাজার ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রেই উপজাত তৈরির নীতি অনুসরণ করতে হবে। এতে একদিকে দূষণ বিমুক্ত হবে, অপর দিকে বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
৭। কৃষিক্ষেত্রে কার্যকরী ও সময় উপযোগী সার ব্যবহার সম্পর্কে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে একটি দক্ষ সার ব্যবস্থাপনা নীতির মাধ্যমে অন্তত শতকরা ২৫ ভাগ নাইট্রাস অক্সাইড (ঘ২ঙ) জনিত দূষণ মুক্ত করা সম্ভব।
৮। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের ভয়াবহতা ও পরিবেশ দূষণের ব্যাপকতা সম্পর্কে পরিবেশের উপর বিশেষ কোর্স প্রবর্তন করতে হবে।
বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি নিয়ে আলাপ করবো আজ। এই পাঠটি কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র এর ৮ নং ইউনিটের ৮.২ নম্বর পাঠ। এখানে আলোচনা করা হয়েছে ডিম থেকে সন্তোষজনক হারে স্বাস্থ্যবান ও উৎপাদনশীল বাচ্চা পাওয়ার জন্য কিভাবে সঠিকভাবে ডিম নির্বাচন করতে হবে।
বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি
বাচ্চা ফোটানোর জন্য সুস্থ ডিম নির্বাচন:
নিচের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ডিম নির্বাচন করলে সর্বাধিক বাচ্চা পাওয়া যেতে পারে।
১. নিষিক্ত ডিম:
ফোটানোর জন্য ব্যবহৃত ডিম নিষিক্ত হতে হবে। আর এজন্য মুরগিকে মোরগের সংস্পর্শে থাকতে হবে ও প্রজনননে অংশ নিতে হবে।
২. ডিমের আকার:
ফোটানোর জন্য ডিমের আকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডিমের আকার স্বাভাবিক হতে হবে। প্রজাতিভেদে ডিমের আদর্শ ওজন কেমন হয় তার ধারণা থাকতে হবে। সাধারণত মাঝারি আকারের ডিম ফোটানোর জন্য ভালো। মুরগি, হাঁস ও জাপানি কোয়েলের ডিমের আদর্শ ওজন যথাক্রমে ৫০—৫৮ গ্রাম, ৬০—৭০ গ্রাম ও ৮—১০ গ্রাম হওয়া বাঞ্ছনীয়। আদর্শ মানের চেয়ে অতিরিক্ত বড় বা ছোট ডিম ব্যবহার করলে ফোটার হার কম হবে। আবার বেশি লম্বা ও বড় আকারের ডিমে ২টি কুসুম থাকতে পারে বলে এসব ডিম থেকে কখনই বাচ্চা ফুটবে না।
৩. ডিমের আকৃতি:
মুরগির ডিম ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে। অস্বাভাবিক বা বিকৃত, যেমন— লম্বাটে, গোলাকার, আঁকাবাকা ডিম ফোটানোর জন্য নিবার্চন যোগ্য নয়।
৪. ডিমের খোসার পরিচ্ছন্নতা:
অবশ্যই পরিষ্কার ডিম নির্বাচন করতে হবে। অপরিষ্কার ডিম জীবাণুর উৎস। অপরিষ্কার ডিম থেকে একদিকে যেমন ডিম ফোটানোর সময় অন্য ডিমে জীবাণু ছড়ায় তেমনি যন্ত্রপাতিও নোংরা হয়। এতে ডিম ফোটার হারও কমে যায়। তবে অল্প ময়লা লেগে থাকলে তা পরিষ্কার ও শুষ্ক কাপড় বা শিরিষ কাগজ দিয়ে মুছে ফোটানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ফোটানো ডিম কখনও পানি দিয়ে ধোয়া যাবেনা।
৫. ডিমের খোসার রং ও গুরুত্ব:
ডিমের খোসার রং পোল্টি্রর প্রজাতি ও জাতভেদে ভিন্ন হতে পারে। যে প্রজাতি বা জাতের ডিম যে রঙের সে রঙের ডিমই ব্যবহার করতে হবে। খোসা পাতলা ও অসমৃণ হলে ডিম ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। মুরগির ডিমের ক্ষেত্রে ডিমের খোসার আদর্শ পুরত্ব ০.৩৩ মি.মি. হলে ভালো হয়।
৬. ফাটা বা ভাঙ্গা ডিম:
ফাটা বা ভাঙ্গা ডিম নির্বাচন করা যাবে না। আগেই বলা হয়েছে ডিমে অসংখ্য সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকে যা বাইরে থেকে এমনিতে বোঝা যায় না। এক্ষেত্রে একটি ডিমকে অন্য আরেকটি ডিম দিয়ে আলতোভাবে আঘাত করলে সৃষ্ট শব্দ যদি নিস্তেজ হয় তাহলে বুঝতে হবে ডিম ফাটা।
৭. ডিমের বয়স:
ডিমের বয়স বলতে সাধারণভাবে ডিম পাড়ার দিন থেকে ফোটানোর জন্য বসানোর সময় পর্যন্ত সময়টাকেই বুঝায়। বাচ্চা ফোটানোর ডিমের জন্য বয়স গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডিমের বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাচ্চা ফোটার হারও কমতে থাকে। শীতকালে সবোর্চ্চ ৭—১০ দিন এবং গরমকালে ৩—৪ দিনের বেশি বয়সের ডিম ফোটানোর জন্য ব্যবহার করা যাবে না।
৮. ডিমের ভিতরের বৈশিষ্ট্য:
বাইরে থেকে স্বাভাবিকভাবে ডিমের বৈশিষ্ট্য বোঝা যায় না। আলোতে পরীক্ষা করলে তা বুঝা যায়।
৯. ডিমের সাদা অংশ ও কুসুমের পরিমাণ:
ডিমের সাদা অংশ ও কুসুমের পরিমাণের অনুপাত হবে ২ঃ১। ডিমের মধ্যে কোনো রক্তের ছিটা, ঘোলাটে বায়ু ইত্যাদি থাকলে তা বাদ দিতে হবে।
১০. ভাসমান বায়ু থলি:
ফোটানোর ডিম সঠিকভাবে হ্যান্ডলিং করতে হবে। ফোটানোর ডিম ঝাঁকানো যাবে না। অতিরিক্ত ঝাঁকালে ভাসমান বায়ু থলি তৈরি হয় যা ডিম ফোটানোর উপযোগী নয়।
১১. সাধারণ তাপমাত্রায় এনে ব্যবহার:
দূরবর্তী জায়গা থেকে ডিম সংগ্রহ কর ল তা কিছু সময় ছায়ায় রেখে পরে ফোটানোর জন্য ব্যবহার করতে হবে।
ডিম ফোটানোর পদ্ধতি:
ডিম থেকে বাচ্চা ফোটনোর জন্য কিছু পদ্ধতি রয়েছে। সাধারণত ডিম ফোটানোর পদ্ধতি দুই ভাগে বিভক্ত। যেমন— ১. প্রাকৃতিক পদ্ধতি ২. কৃত্রিম পদ্ধতি। কৃত্রিম পদ্ধতিকে পুনরায় ভাগ করা যায়। যেমন – ক) তুষ পদ্ধতি, খ) ইনকিউবেটর পদ্ধতি। ইনকিউবেটর পদ্ধতি আবার দু’ধরনের। যেমন— ১. কোরোসিন ইনকিউবেটর পদ্ধতি, ২. বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটর পদ্ধত। আসুন জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত।
চিত্র ৮.২.১ : বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটর
১) প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ডিম ফোটানো:
প্রাকৃতিক পদ্ধতি হচ্ছে সবার্ধিক প্রচলিত প্রাচীন পদ্ধতি। এ পদ্ধতির সঙ্গে কম—বেশি সবাই পরিচিত। গ্রামাঞ্চলে অল্প পরিসরে যারা হাঁস—মুরগি পালন করেন তারা এই পদ্ধতিতে ডিম ফুটিয়ে থাকেন। দেশি মুরগি ১০—১২টি ডিম দেওয়ার পর উমে বা তায়ে বসার প্রবণতা দেখা যায়। এই অবস্থায় মুরগিকে কুঁচে মুরগি বলে। তখন মুরগিকে একটি নীরব স্থানে বাক্সে অথবা ঝুড়িতে কিছু বিছানাপত্র, যেমন— খড়, শুকনো পাতা বা তুষ রেখে তার উপর ১০—১২টি ডিম দিয়ে বসানো হয়। এ সময় মুরগির কাছাকাছি পাত্রে খাবার ও পানি রাখতে হয় যাতে চাইলেই মুরগি খেতে পারে।
ডিমে বাতাস চলাচল ও মুরগির স্বাস্থ্যের জন্য দিনে একবার ডিম থেকে উঠিয়ে দিতে হয়। এই সময় মুরগি খাবার ও পানি গ্রহণ করবে। খেয়াল রাখতে হবে মুরগি যাতে আধা ঘন্টার বেশি বাইরে না থাকে। এতে ডিমের সঠিক তাপমাত্রা বজায় থাকবে না। মুরগি তার নিজের ঠোঁট দিয়ে ডিমগুলো ঘুরিয়ে দেয়। এতে ডিমের সবদিকে তাপমাত্রা ঠিক থাকে। মুরগির বসার জায়গায় কোন প্যারাসাইট অথার্ৎ উকুন বা অন্য কোন রক্তচোষক আছে কি—না সেদিকে নজর রাখতে হবে। ডিম বসানোর পর কোন ডিম যদি ভেঙ্গে যায়, তাহলে সেটি দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে যাতে অন্য ডিম নোংরা না হয়।
ডিমে তা দেওয়ার সময় মুরগিকে কোনোভাবেই বিরক্ত করা যাবে না। মুরগির ঘরে যথেষ্ঠ আলো—বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং বৃষ্টির দিনে যাতে পানি না পড়ে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এভাবে মুরগির ডিম থেকে ২১ দিন পর এবং হাঁসের ডিম থেকে ২৮ দিন পর বাচ্চা পাওয়া যাবে। ডিম বসানোর উপযুক্ত সময় হলো রাত। রাতে ডিম বসালে ২১ দিন পর রাতে সকল বাচ্চা ফুটবে এবং বাচ্চারা সারা রাত বিশ্রাম পাবে। পরদিন সকালে বাচ্চা বাইরে বেরুরে শক্তি পাবে।
২) কৃত্রিম পদ্ধতিতে ডিম ফোটানো:
প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মুরগি যেভাবে ডিম ফোটায় সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে যা দিয়ে ডিম ফোটানো হয়, এটিকে কৃত্রিম পদ্ধতি বলে। পূর্বে বলা হয়েছে কৃত্রিম পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে— ১) তুষ পদ্ধতি ২) ইনকিউবেটর পদ্ধতি।
নিচের এগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনার করা হলো।
তুষ পদ্ধতিতে ডিম ফোটানো:
গ্রামাঞ্চলে সাধারণত প্রাকৃতিক পদ্ধতি দেখা যায়। তবে আজকাল তুষ পদ্ধতি বাংলাদেশের অনেক জায়গায় বাচ্চা ফোটানোর জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ নেই অথচ অনেক ডিম ফোটানো দরকার সেসব অঞ্চলে তুষ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
এই পদ্ধতিতে হাঁস ও মুরগির ডিম ফোটানো হয়। তবে আজকাল তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের ডিম ফোটানো একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই পদ্ধতিতে দৈহিক পরিশ্রম হলেও খরচ খুব সামান্য। তুষ পদ্ধতিতে ডিম ফোটানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো— বাঁশের চাঁটাই দিয়ে তৈরি নলাকৃত ঝুড়ি, হারিকেন, কাপড়, বায়ুচলাচল শূন্য ও তাপ নিরোধক কক্ষ, বাচ্চা ফোটানোর বিছানা এবং থামোর্মিটার। ইনকিউবেটর পদ্ধতি: ডিম ফোটানোর আধুনিক পদ্ধতির নাম হচ্ছে ইনকিউবেটর পদ্ধতি। এটি প্রধানত দু’ধরনের যথা— ক) কেরোসিন ইনকিউবেটর— নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে এই ইনকিউবেটরের মুল জ¦ালানি হচ্ছে কোরোসিন।
বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটরে ডিম ফোটানো:
বিদ্যুতের সাহায্যে এই ইনকিউবেটর চালিত হয় বলে এর নাম বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটর।
কেরোসিন ইনকিউবেটরে ডিম ফোটানো:
বিদ্যুতবিহীন এলাকাগুলোতে তুষ ইনকিউবেটরের পাশাপাশি কেরোসিন ইনকিউবেটর ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মূল জ¦ালিান যেহেতু কেরোসিন তুষ ইনকিউবেটরের তুলনায় কেরোসিন ইনকিউবেটরে খরচ একটু বেশি হয়। কেরোসিন ইনকিউবেটরে ৫০—৫০০টি ডিম ফোটানো যায়। তবে ডিম ফোটানোর সকল পদ্ধতির মূলনীতি একই। কেরোসিন ইনকিউবেটরের দাম বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটরের তুলনায় কম। সাধারণত কেরোসিন ইনকিউবেটর ডিম ফোটানোর জন্য ৩৮.০—৩৯.৪ সে. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটরে ডিম ফোটানোর পদ্ধতি:
ডিম ফোটানোর সর্বাধুনিক পদ্ধতি এটি। এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো একসাথে প্রায় এক লক্ষ ডিম ফোটানো যায়। তবে ধারণ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে ছোট, মাঝারি ও বড় আকৃতির ইনকিউবেটর পাওয়া যায় যা প্রস্তুতকারক কোম্পানির ওপর নির্ভর করে। বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটর এমন জায়গায় বসাতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল করে। ইনকিউবেটরে ডিম বসানোর পূর্বে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে, সেই সাথে ইনকিউবেটর সঠিকভাবে কাজ করছে কি—না সেটাও পরীক্ষা করতে হবে।
বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটরের প্রধান দুটি অংশ হচ্ছে সেটার ও হ্যাচার। সেটার হচ্ছে যেখানে ডিম বসানো হয়। এখানে নিয়মিত বিরতিতে ডিম ঘোরানো হয়। আর হ্যাচার হচ্ছে ডিম ফোটানোর শেষ তিন দিন যে ট্রেতে ডিম রাখা হয়। অনেক ইনকিউবিটরে সেটার ও হ্যাচার আলাদা নাও থাকতে পারে। সেটারে ডিম বসানোর জন্য খাঁজ/খোপ করা থাকে কিন্তু হ্যাচারে কোনো খোপ থাকে না। ডিম বসানোর সময় ডিমের মোটা অংশ যেন উপর দিকে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ডিম ৪৫ কোন করে সেটিং ট্রেতে বসাতে হবে।
বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটরে ডিম ফোটানো ব্যবস্থাপনা: সফলভাবে ডিম ফোটানোর জন্য নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ গুরুত্বসহকারে পালন করা প্রয়োজন।
১. তাপমাত্রা:
ডিম ফোটানোর জন্য ইনকিউবেটরে ৯৯—১০০ ফারেনহাইট তাপমাত্রা রাখতে হবে। ডিম ফোটানোর জন্য সঠিক তাপমাত্রা ইনকিউবেটরের প্রস্তুতকারক কোম্পানির নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। অতিরিক্ত বা প্রয়োজনের কম তাপমাত্রা দুটোই ক্ষতিকারক। ডিমের চারিদিকে যেন সমভাবে তাপমাত্রা লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার পূর্বের তিন দিন তাপমাত্রা ২—৩ ফারেনহাইট কম রাখতে হবে।
২. বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা:
ডিমের ভিতরে যেহেতু ভ্রƒণের জন্ম হয় ও ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে, তাই সঠিক পরিমাণে অক্সিজেন থাকা অপরিহার্য। ইনকিউবেটরের বায়ুতে স্বাভাবিক অক্সিজেনের পরিমাণ ২১% হওয়া বাঞ্ছণীয়। অন্যদিকে, কার্বন—ডাই—অক্সাইড (ঈঙ২)—এর মাত্রা ০.৫% বেশি হলে ডিম ফোটার হার কমে যায়। এজন্য সঠিক জায়গায় ইনকিউবেটর রাখতে হবে যাতে পযার্প্ত বাতাস চলাচল করে।
৩. আর্দ্রতা:
মুরগির ডিমের ক্ষেত্রে প্রথম ১৮ দিন আর্দ্রতা লাগে ৫৫—৬২% এবং শেষ তিন দিন অথার্ৎ ১৯—২১ দিন ৬৫—৭৫%। আদর্শ আপেক্ষিক আর্দ্রতার চেয়ে কম হলে ভ্রƒম্নণ ডিমের খোসার একপাশে লেগে থাকে ফলে ডিম থেকে বাচ্চা বের হতে পারে না। অনেক সময় ভ্রƒণ শুকিয়ে যায়। এজন্য প্রস্তুতকারক কোম্পানির নির্দেশনা অনুযায়ী আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৪. ডিম পরীক্ষাকরণ:
সাধারণত ইনকিউবেটরে ডিম বসানোর ৭—১০ দিনের মধ্যে প্রথম বার এবং ১৪—১৮ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বার পরীক্ষা করা হয়। এজন্য এক ধরনের যন্ত্র (ক্যান্ডেলার) ব্যবহার করা হয়। একটি অন্ধকার ঘরে ক্যান্ডেলার দ্বারা ডিম পরীক্ষা করা হয়। ডিম নিষিক্ত হলে তাতে রক্তজালিকার মতো দেখা যায়। যদি রক্তজালি ডিমের মোটা অংশের দিকে থাকে তাহলে ভ্রƒণটি পরবর্তীতে বড় হবে এবং সুস্থ বাচ্চার জন্ম হবে। যদি সরু অংশের দিকে অথবা ডিমের এক পা শ গায়ে থিতিয়ে পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে ভ্রƒণটি মারা গেছে এবং তার আর বৃদ্ধি হবে না।
এ ধরনের ডিম বাদ দিতে হবে। অনিষিক্ত ডিমে এ ধরনের কোন রক্তজালিকা থাকবে না। কাজেই সেটি বাদ দিতে হবে। ১৪—১৮ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বার ক্যান্ডেলিং বা পরীক্ষা করলে জীবিত ভ্রম্নণসম্পন্ন ডিমটি সম্পূর্ণ কালো দেখাবে।
৫. ডিম নাড়াচাড়া করানো:
আধুনিক ডিম ফোটানোর যন্ত্র বা ইনকিউবেটরের সকল মূলনীতি তৈরি হয়েছে কঁুচে মুরগির ডিমে তা দেওয়া ও বাচ্চা ফোটানোর পদ্ধতি থেকেই। মুরগি ঠোঁট দিয়ে ডিম উল্টে—পাল্টে দেয় যাতে ডিম সবদিকে সমান তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পায়। এই নীতি অনুসরণ করে আধুনিক ইনকিউবেটর যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে যা টারনার বা ডিম নাড়ানোর যন্ত্র নামে পরিচিত। মেশিনে সেট করা নির্দেশনা অনুযায়ী ৯০ কোনে ডিম ঘোরাতে পারে। দিন—রাত মিলে মোট ৬—৮ বার ডিম ঘোরালে ভালো ফল পাওয়া যায়। এতে ডিম ফোটানোর হারও বেড়ে যায়।
সূত্র : বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম বাছাইকরণ ও ডিম ফোটানো পদ্ধতি | ইউনিট – ৮ , পাঠ – ৮.২ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র
মাছের রোগ ও তার প্রতিকার নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয় এর ৪ নং ইউনিটের ৪.২ নম্বর পাঠ এর অংশ। আমাদের দেশে ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে মাছ চাষ বেশ লাভজনক। মাছ চাষ করে মৎস্যচাষী ও খামারীরা একদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়, অন্যদিকে প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তাছাড়া চাষকৃত মাছ বিদেশে রপ্তানি করে করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো প্রতি বছর রোগের কারণে এ খাতটি আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
মাছের রোগ ও তার প্রতিকার
মাছের রোগ ও রোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত অজ্ঞতার কারণে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাই মাছের রোগ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। রোগ হলো দেহ ও মনের অসুস্থ্য অবস্থা যা বিভিন্ন লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। সুস্থ্য মাছের চলা-ফেরা আচার আচরণ খাদ্য গ্রহণ সবকিছুই স্বাভাবিক থাকে। অপরদিকে, অসুস্থ্য মাছ বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক আচার-আচরণ দেখায়। এই পাঠে মাছের বিভিন্ন ধরনের রোগ, রোগের সাধারণ লক্ষণ, রোগের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। তবে মাছের ক্ষেত্রে রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করাকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়, তাই এখানে রোগ প্রতিরোধের বিভিন্ন উপায় নিয়েও আলোচনা করা হবে।
সুস্থ্য মাছের সাধারণ লক্ষণসমূহ: সুস্থ্য মাছের শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও আচরণ, রোগাক্রান্ত মাছের চেয়ে ভিন্ন হয়ে থাকে। একটি রোগাক্রান্ত মাছ শনাক্ত করতে হলে অনুরূপ একটি সুস্থ্য মাছের শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও আচার—আচরণ সম্পর্কে জানতে হবে। নিম্নে একটি সুস্থ্য মাছের সাধারণ লক্ষণসমূহ উল্লেখ করা হলো—
সুস্থ্য মাছের সাধারণ লক্ষণসমূহ:
সুস্থ্য মাছ স্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ে কাঙ্খিত আকার ও ওজন অর্জন করবে।
দেহের স্বাভাবিক চাকচিক্য ভাব অটুট থাকবে।
মাছ স্বাভাবিক ও স্বত:স্ফুর্তভাবে খাবার খাবে।
সুস্থ মাছ পানির উপরে অলসভাবে বসে থাকবে না এবং ভয় দেখালে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যাবে।
দেহের কোথাও কোন অস্বাভাবিক দাগ থাকবে না।
দেহের কোনো অংশে ঘা বা রক্তক্ষরণ থাকবে না।
পাখনা দুমড়ানো থাকবে না এবং ফুলকায় কোন ধরনের পচন থাকবে না,
দেহের কোথাও কোন পরজীবী আটকে থাকবে না। * সুস্থ্য মাছ স্বাভাবিক আচরণ করবে।
রোগাক্রান্ত মাছের সাধারণ লক্ষণসমূহ:
মাছ রোগাক্রান্ত হলে দৈহিক চাকচিক্য ভাব এবং স্বাভাবিক সতেজতা নষ্ট হয়ে ফ্যাকাশে হয়ে যাবে।
রোগাক্রান্ত মাছ খাবারের প্রতি অনীহা দেখাবে, কখনও কখনও খাবার খাওয়া একেবারে বন্ধ করে দিবে।
শারীরিক ভারসাম্য হারিয়ে এক জায়গায় বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকবে এবং সাঁতারে অস্থিরতা পরিলক্ষিত হবে।
পানির উপরে অথবা কিনারায় অলসভাবে চুপ করে অনেকক্ষণ বসে থাকবে এবং ভয় দেখালেও নড়তে চাইবে না।
রোগাক্রান্ত মাছের দেহে অতিরিক্ত মিউকাস (সঁপঁং) নির্গত হবে।
আঁইশ, ত্বক, পাখনা, ফুলকা অথবা পায়ু পথের গোড়ায় ক্ষত বা ঘা দেখা দিবে; কখনও কখনও পচন দেখা দিতে পারে।
রোগাক্রান্ত হলে অনেক সময় মাছের আঁইশ খসে পড়তে পারে এবং চোখ অক্ষিকোটরের বাইরে বের হয়ে আসতে পারে।
মাছের দেহগহ্বরে তরল জমে পেট ফুলে যেতে পারে।
দেহের বহি:রাংশ এবং ফুলকায় পরজীবী আটকে থাকতে পারে।
রোগাক্রান্ত মাছের ত্বক বা পাখনায় অনেক সময় ছোট ছোট সাদা দাগ বা ফোসকা দেখা যেতে পারে।
মাছ রোগগ্রস্থ হলে স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার বন্ধ হয়ে যাবে এবং অনেকসময় দেহের তুলনায় মাথার আকার বড় রোগাক্রান্ত দেখাবে।
হঠাৎ করে ব্যাপক হারে মড়ক দেখা দিলেও বুঝতে হবে মাছ রোগাক্রান্ত হয়েছে।
মাছের রোগের শ্রেণিবিভাগ :
রোগ সৃষ্টিকারী কারণের উপর ভিত্তি করেই মূলত মাছের রোগের শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। যথা—
(১) ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ :
বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে হয়। যেমন— ব্যাকটেরিয়াজনিত ফুলকা পচা রোগ, পাখনা ও লেজ পচা রোগ ইত্যাদি।
(২) ছত্রাকজনিত রোগ :
এ ধরনের রোগ সৃষ্টির কারণ হলো ছত্রাক। যেমন— ব্রাঙ্কিওমাইকোসিস, ক্ষতরোগ ইত্যাদি।
(৩) ভাইরাসজনিত রোগ :
ভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট রোগ। যেমন— স্প্রিং ভাইরেমিয়া, র্যাবডোভাইরাস রোগ ইত্যাদি।
(৪) পরজীবীঘটিত রোগ:
বিভিন্ন ধরনের এককোষী ও বহুকোষী পরজীবীর আক্রমণে এ রোগ হয়। যেমন— মাছের সাদা দাগ রোগ, মাছের উকুন, কৃমিরোগ ইত্যাদি।
(৫) অপুষ্টিজনিত রোগ :
মাছের খাদ্যে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের স্বল্পতার কারণে মাছে নানা ধরনের অপুষ্টিজনিত রোগ দেখা দিতে পারে। যেমন— প্রোটিনের অভাবজনিত রোগ, লিপিডের অভাবজনিত রোগ, ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ, খনিজ লবণের অভাবজনিত রোগ ইত্যাদি।
(৬) পুষ্টির আধিক্যজনিত রোগ:
পুষ্টি উপাদানের আধিক্যের কারণে হয়।
(৭) খাদ্যস্থিত পুষ্টিবিরোধী উপাদানের কারণে সৃষ্ট রোগ:
মাছের খাদ্য তৈরিতে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিজ্জ উপাদান ব্যবহৃত হয় যাতে অনেক ধরনের পুষ্টিবিরোধী উপাদান থাকে। এসব উপাদান খাদ্যের পুষ্টি শোষনে বাধা দেয় এবং মাছকে নাজুক পরিস্থিতির দিকে দিকে ঠেলে দেয়।
(৮) অন্যান্য কারণে সৃষ্ট পুষ্টিজনিত রোগ :
অনেক সময় খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক ও গ্রোথ ফ্যাক্টর (এৎড়িঃয ভধপঃড়ৎ) ব্যবহার করা হয়। এসব উপাদানের লাগামহীন ব্যবহার অনেক সময় মাছকে রোগের দিকে ঠেলে দিবে পারে। তাছাড়া চর্বিযুক্ত মৎস্য খাদ্যের জারনের ফলে উৎপন্ন পার*াইড, এলডিহাইড, কিটোন মাছের জন্য ক্ষতিকর।
মৎস্য রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার :
ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ:
(১) ব্যাকটেরিয়াজনিত ফুলকা পঁচা রোগ :
গুীড়পড়পপঁং ঢ়রংপরপড়ষঁং নামক ব্যাকটেরিয়া এ রোগের জন্য দায়ী। গ্রাসকার্প ও কমনকার্পের জন্য এটি একটি মারাত্নক রোগ। তবে দেশীয় কার্পজাতীয় মাছেও কখনও কখনও এ রোগ দেখা যায়। এটি একটি সংক্রামক রোগ এবং খুবই দ্রুত ছড়ায়।
লক্ষণ :
* মাছের দেহ বিশেষ করে মাথা কালচে বর্ণ ধারণ করে।
* মাছের বৃদ্ধি হ্রাস পায়।
* মাছের ক্ষুধামন্দা দেখা দেয় এবং মাছ এবড়ো—থেবড়ো চলাফেরা করে।
* মাছের ফুলকা রশ্মি কাদা ও অধিক পিচ্ছিল পদার্থে আবৃত থাকে।
* মাছের ফুলকা ফুলে যায়, ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে ও পচে যায়।
* মারাত্মক অবস্থায় মাছের কানকো পচে যায় এবং কানকো অস্বচ্ছ দেখায়।
* আক্রান্ত মাছের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিদিন মারা যেতে পারে।
চিত্র ৪.২.১ : ফুলকা পচা রোগ আক্রান্ত গ্রাসকার্প
প্রতিকার :
বিভিন্ন পন্থায় এ ’ রোগের চিকিৎসা করা যায়। যেমন—
* ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করে জলাশয়ের পানি জীবাণুমুক্ত করা যেতে পারে।
* এটি যেহেতু ব্যাকটোরিয়াঘটিত রোগ তাই এ রোগের চিকিৎসার জন্য এন্টিবায়োটিক (যেমন— ঊৎুঃযৎড়সুপরহ) ব্যবহার করা হয়।
* পুকুরে মাঝে মাঝে পরিমিত মাত্রায় চুন ব্যবহার করতে হবে।
* প্রতিষেধক প্রদান (রসসঁহরুধঃরড়হ) করেও এ রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
২। লেজ ও পাখনা পচা রোগ এবং অ্যারোমোনাস:
কয়েকটি প্রজাতির ব্যাকটোরিয়ার সংক্রামেই মাছ এ রোগে আক্রান্ত হয়। যথা এ রোগ সৃষ্টিকারী অন্যতম ব্যাকটেরিয়া হলো— চংবঁফড়সড়হধং ভষঁৎবংপবহং. মিঠা পানির কার্পজাতীয় মাছ এবং ক্যাটফিশে এ রোগ দেখা দেয়। জলজ পরিবেশের বিভিন্ন নিয়ামকের যথাযথ মাত্রার হ্রাস বা বৃদ্ধির কারণে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।
লক্ষণ :
* মাছের দেহের পিচ্ছিল আবরণ কমে যায়।
* মাছের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য থাকে না এবং আক্রান্ত মাছ কালচে বর্ণ ধারন করে।
* মাছ খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখায়।
* লেজ ও পাখনায় সাদা সাদা দাগ পড়ে।
* লেজ ও পাখনায় পচন ধরে এবং ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ভেঙ্গে যায়।
* মাছ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এবং ভারসাম্যহীনভাবে ঝাঁকুনি দিয়ে চলাফেরা করে।
* মাছের শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয় এবং শরীর ফ্যাকাশে হয়।
চিত্র ৪.২.২ : লেজ ও পাখনা পচা রোগে আক্রান্ত
প্রতিকার/চিকিৎসা :
* আক্রান্ত পাখনা কেটে ফেলে ২% সিলভার নাইট্রেট বা ২.৫% সাধারণ লবণ পানিতে গোসল করাতে হবে।
* প্রতি কেজি খাবারে ২৫ মি.গ্রা. টেট্রাসাইক্লিন মিশিয়ে পরপর ৭ দিন খাওয়াতে হবে।
* টেট্রাসাইক্লিন ২০ মি.গ্রা/কেজি হারে ইনজেকশন হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
তাছাড়া রোগ প্রতিরোধ কল্পে নিচের কাজগুলো করতে হবে:
১. পুকুরে মজুদকৃত মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে।
২. নির্দিষ্ট দিন পরপর পুকুরে পরিমিত পরিমাণ (সাধারণত শতাংশে ১ কেজি) চুন প্রয়োগ করতে হবে।
৩. জৈব সারের ব্যবহার সাময়িকভাবে বন্ধ করতে হবে।
৪. নিয়মিত জাল/হররা টেনে পুকুরের তলার বিষাক্ত গ্যাস কমিয়ে আনতে হবে।
ছত্রাকজনিত রোগ:
(১) ছত্রাকজনিত ব্রাঙ্কিওমাইকোসিস:
এই রোগ মাছের ফুলকা পঁচা রোগ নামেও পরিচিত।
কারণ/রোগজীবাণু :
ব্রাঙ্কিওমাইসিস (ইৎধহপযরড়সুপবং) নামক এক প্রকার ছত্রাক দ্বারা এ রোগ সংঘটিত হয়। ব্রাঙ্কিওমাইসিস গণের দুইটি প্রজাতির ছত্রাকের সংক্রমণে এ রোগের প্রাদূর্ভাব ঘটে।
রোগের বিস্তার :
প্রায় সব ধরনের কার্পজাতীয় মাছেই এ রোগ সংঘটিত হয়। কোন কোন প্রজাতির ক্যাটফিশেও এ রোগ দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। পুকুরের তলদেশে অতিরিক্ত জৈব পদার্থ থাকলে এবং পুকুরে মাত্রাতিরিক্ত উদ্ভিদপ্ল্যাংকটন উৎপাদিত হলে এ রোগের সংক্রমন বেশি ঘটে। মাছের অতিরিক্ত মজুদ ঘনত্ব এ রোগের একটি অন্যতম কারণ। এ রোগে ছত্রাক মাছের ফুলকাকে আক্রান্ত করে। তন্তুজাতীয় ছত্রাক ফুলকার মধ্যে ঢুকে রক্তসংবহন নালিকায় প্রতিবন্ধকতা সষ্টি কৃ রে। ফলে ফুলকার বহিরাংশে খাদ্য ও অ*িজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং মাছ রোগাক্রান্ত হয়।
রোগের লক্ষণ :
* ফুলকা স্বাভাবিক রং ও ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলে।
* সংক্রমণের শুরুতে ফুলকা বিবর্ণ হয়ে যায় এবং পরে ফুলকায় গাঢ় লাল বর্ণের দাগ দেখা যায়।
* আক্রান্ত ফুলকা ধীরে ধীরে হলদে—বাদামী বর্ণ ধারণ করে।
* ফুলকায় পচন ধরে এবং ফুলকা রশ্মি খসে পড়ে যায়।
* মাছ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়।
প্রতিকার/চিকিৎসা :
আমাদের দেশের মিঠা পানির প্রায় সকল মাছই ছত্রাক রোগে সংবেদনশীল। বিশেষ
করে ত্বক ও ফুলকাতে আঘাতজনিত কারণে সহজেই ছত্রাক আক্রমণ করে রোগ সৃষ্টি করে থাকে। ছত্রাকজনিত রোগের চিকিৎসা নিম্নলিখিত উপায়ে করা যেতে পারে।
১) আক্রান্ত পুকুরে ০.১৫—০.২০ ঢ়ঢ়স হারে ম্যালাকাইট গ্রীন প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে একবার করে দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
২) আক্রান্ত পোনা বা ডিম ০.১০—০.১৫ ঢ়ঢ়স মিথিলীন ব্লু দ্রবণে ধৌত করালে বা ১—২ ঘন্টা গোসল করালে প্রতিকার পাওয়া যায়।
৩) আক্রান্ত মাছকে ২.০— ২.৫% লবণ পানিতে যতক্ষণ সহ্য করতে পারে ততক্ষণ পর্যন্ত গোসল করানো যেতে পারে। এছাড়া কোন কোন ক্ষেত্রে আক্রান্ত মাছকে ০.৫ দ্রবণে ডুবানোর জন্য উপদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে তঁুতে খুব বিষাক্ত এবং ক্ষতিকারক তাই যতদূর সম্ভব তঁুতে দ্বারা চিকিৎসা না করানো ভাল। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিচের কাজগুলো করা যেতে পারেÑ রা) পুকুরে অতিরিক্ত জৈব পদার্থ জমতে দেওয়া যাবে না। া) মাঝে মাঝে পরিমিত মাত্রায় চুন প্রয়োগ করতে হবে।
(২) ছত্রাকজনিত ক্ষতরোগ:
ক্ষতরোগ মাছ চাষে একটি প্রধান সমস্যা। বাংলাদেশে ক্ষতরোগের প্রথম প্রাদূর্ভাব লক্ষ করা যায় ১৯৮৮ সালে। এ রোগ আক্রান্ত মাছের গায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষতরোগের সুনির্দিষ্ট রোগজীবাণু নিয়ে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা রয়েছে। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন এ্যাফানোমাইসেস নামক এক প্রকার ছত্রাক জলজ পরিবেশের বিশেষ অবনতিতে এ রোগ সৃষ্টি করে। আবার অনেকে মনে করেন প্রথম পর্যায়ে ভাইরাস এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্যাকটোরিয়া সংক্রমণে এ রোগ সৃষ্টি হয়।
চাষযোগ্য সব মাছেই এ রোগের প্রাদূর্ভাব লক্ষ্য করা যায়। তবে জিওল মাছ যথা— শোল, টাকি, গজার এবং ছোট মাছ যথা— পঁুটি, মেনি, টেংরা ইত্যাদিতে এ রোগের অধিক সংক্রমণ ঘটে থাকে। কম তাপমাত্রায় ও জলাশয়ের বিরূপ পরিবেশে এ রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দেয়। পানির গুণাবলীর নিম্নরূপ পরিবর্তনে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে যেমন— চঐ এর কমতি (৪—৬), ক্ষারত্ব হ্রাস পাওয়া (৬৫—৭৫ ঢ়ঢ়স), তাপমাত্রা কমে যাওয়া (৭—১৯০ সেলসিয়াস), ক্লোরাইডের ঘাটতি (৬—৭.৫ ঢ়ঢ়স)
রোগের লক্ষণ :
* প্রাথমিকভাবে মাছের গায়ে লাল দাগ দেখা যায় এবং পরবর্তিতে উক্ত স্থানে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
* মাছ খুব দূর্বল হয় ও ভারসাম্যহীনভাবে পানির উপর ভেসে থাকে। নিষ্ক্রিয়ভাবে ধীরে ধীরে সাঁতার কাটে।
* আক্রান্ত মাছ খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখায়।
* আক্রান্ত স্থানে ঘা হয় এবং ঘা থেকে পঁুজ ও তীব্র দুর্গন্ধ বের হয়।
* মারাত্মক আক্রান্ত মাছের লেজ ও পাখনা খসে পড়ে।
* মাছের চোখ নষ্ট হয়ে যায় এবং আক্রান্ত মাছ ১০—১৫ দিনের মধ্যে মারা যায়।
চিত্র ৪.২.৪ : মাছের ক্ষতরোগ
প্রতিকার/চিকিৎসা :
ক্ষতরোগ প্রতিকার করার চেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি করা শ্রেয়। প্রতিকার করার একটি অসুবিধা হলো এ্যাফানোমাইসেস ছত্রাকটি কোষের অভ্যন্তরে অবস্থান করে বিধায় কোন ঔষধ প্রয়োগ করলে ক্ষতের উপরিভাগে অবস্থিত ছত্রাকগুলো মারা গেলেও ভিতরের গুলো সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায় এবং পরবর্তিতে আবার ক্ষতের সৃষ্টি করে।
* শীতের আগমনের আগেই পুকুরে ১ কেজি/শতাংশ হারে চুন দিতে হবে। অনেকেই চুনের সাথে সমান অনুপাতে লবণ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সেই হিসেবে চুনের সাথে ১ কেজি/শতাংশ লবণ পানিতে গুলিয়ে তা সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিলে উপকার পাওয়া যায়।
* আক্রান্ত মূল্যবান মাছকে (যেমন— ব্রুড হিসেবে ব্যবহার করা হবে এমন মাছ) ৫ ঢ়ঢ়স পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণে ১ ঘন্টা গোসল করালে উপকার পাওয়া যায়।
* আক্রমণকারী ছত্রাক মারার জন্য আক্রান্ত মাছকে ০.৫—১.০ ঢ়ঢ়স ম্যালাকাইট গ্রীন দ্রবণে ৫—১০ মিনিট ডুবালে প্রতিকার পাওয়া যায়। ম্যালাকাইট গ্রীন আক্রান্ত পুকুরেও প্রয়োগ করা যায়। সেক্ষেত্রে মাত্রা হল ০.১৫—০.২০ ঢ়ঢ়স.
* ক্ষত সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া মারার জন্য খাবারের সাথে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। সাধারণত অ*িটেট্রাসাইক্লিন বা টেরামাইসিন প্রতি কেজি মাছের জন্য ৭৫—১০০ মি.গ্রা প্রত্যহ খাবারের সাথে মিশিয়ে ৭—১০ দিন পর্যন্ত খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যায়। এছাড়া প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা একই সঙ্গে চালাতে হবে।
* জৈব সার প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ করতে হবে।
* পুকুর আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
* পুকুরে বন্যার পানি প্রবেশ রোধ করতে হবে।
চিত্র ৪.২.৫ : স্প্রিং ভাইরেমিয়া রোগে আক্রান্ত
(3) ভাইরাসজনিত রোগ:
(১) ভাইরাসজনিত স্প্রিং ভাইরেমিয়া:
এই রোগটি এস.ভি.সি নামে পরিচিত। এ রোগে মাছের ফুৎকা প্রদাহ হয় বিধায় একে ঝরিস নামেও ডাকা হয়।
কারণ/রোগজীবাণু :
ভাইরাসের সংক্রমণে এই রোগ সৃষ্টি হয়।
রোগের বিস্তার :
বিভিন্ন প্রজাতির মাছে রোগটি দেখা দেয়। উদাহরণস্বরূপ সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, ক্রসিয়ান কার্প, বিগহেড কার্প, কমনকার্প/কার্পিও এবং বিভিন্ন ধরনের অরনামেন্টাল (ঙৎহধসবহঃধষ) মাছ। তবে রোগটি কার্পিও মাছের জন্য বিরাট হুমকি। এই রোগ কার্পিও মাছের জীবনচক্রের সব দশাতেই সংক্রমণ ঘটিয়ে থাকে।
পরীক্ষামূলকভাবে অন্যান্য প্রজাতি যেমন—নর্দান পাইক গাপ্পি , জেব্রামাছ (তবনৎধভরংয) এবং পাম্পকিনসিড মাছে রোগটির সংক্রামণ দেখা গেছে। এটি একটি সংক্রামক রোগ। এই রোগের ভাইরাস আক্রান্ত মাছের মল এবং মূত্রের সাথে পানিতে অবমুক্ত হয় এবং অন্য মাছেও ছড়িয়ে পড়ে। এস.ভি.সি রোগে আক্রান্ত মাছ প্রজননে ব্যবহার করা হলে উৎপাদিত পোনা মাছেও এই রোগের সংক্রমণ ঘটে।
এ রোগে আক্রান্ত মাছ নিরাময় হলে দ্বিতীয় বার আর এই রোগে আক্রান্ত হয় না। কিন্তু দেহে সারাজীবন এই ভাইরাস বহন করে চলে। এক্ষেত্রে ভাইরাস উক্ত মাছের দেহে সুপ্তাবস্থায় থাকে এবং মাছকে বাহক হিসেবে ব্যবহার করে। অনুকূল পরিবেশে র্যাবডোভাইরাস পোষাক মাছের দেহ থেকে বের হয়ে অন্যান্য মাছে রোগের সংক্রমণ ঘটায়। সাধারণত বসন্তকালে এবং গ্রীষ্মের শুরুতে এই রোগের প্রকোপ বেশি পরিলক্ষিত হয়।
রোগের লক্ষণ :
* আক্রান্ত মাছের দেহ কালচে বর্ণ ধারণ করে এবং আক্রান্ত মাছের
দেহে রক্তক্ষরণ হয়।
* ফুলকায় রক্তক্ষরণ হয় এবং ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে।
* আক্রান্ত মাছের দেহ গহ্বরে ঘন তরল পদার্থ জমা হয় এবং পেট ফুলে যায়।
* মাছের পায়ুপথে প্রদাহ হয় এবং চোখ ফুলে যায় এবং বাইরের দিকে বের হয়ে আসে।
* মাছের অন্ত্র এবং ফুৎকায় রক্তক্ষরণ হয়।
* মাছ দেহের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এবং আক্রান্ত মাছ পানি চিত্র ৪.২.৫ : স্প্রিং ভাইরেমিয়া রোগে আক্রান্ত মাছ নির্গমনের (ড়ঁঃষবঃ) স্থানে জড়ো হয়।
প্রতিকার/চিকিৎসা :
— বর্তমানে এ রোগের কোনো চিকিৎসা বের হয়নি।
মাছ একবার আক্রান্ত হয়ে গেলে আর কোন চিকিৎসা নেই তাই রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়াই উত্তম।
পানির তাপমাত্রা ২০০ সেলসিয়াম/৬৮০ ফারেনহাইট এর উপরে রাখলে এ রোগের প্রাদূর্ভাব কমানো/থামানো যেতে পারে।
পানিকে এবং মাছ চাষে ব্যবহৃত উপকরণকে টঠ ঃৎবধঃসবহঃ করে এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
এছাড়া পানির পরিবেশ দূষণমুক্ত রেখে এবং মাছ চাষে উত্তম ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণ করে এই রোগের ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যায়।
র্যাবডোভাইরাস রোগ :
কারণ/রোগজীবাণু:
র্যাবডোভাইরাস প্রজাতি
রোগের বিস্তার :
এই রোগ প্রধানত গ্রাসকার্পে সংক্রামিত হতে দেখা যায়। রোগের বিস্তারের ধরণ ও কার্যকারণ স্প্রিং ভাইরেমিয়ার অনুরূপ। জলজ পরিবেশের বিভিন্ন ভৌত—রাসায়নিক গুণাবলীর ব্যাপক ওঠা—নামায় এই রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এটিও সংক্রামক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত মাছে ব্যাপক হারে মড়ক দেখা দেয়।
রোগের লক্ষণ :
এই রোগের লক্ষণ এস.ভি.সি—এর প্রায় অনুরূপ। প্রধান প্রধান লক্ষণগুলো হলো—
* পায়ুপথে প্রদাহ ও রক্তক্ষরণ হয় এবং অঁাইশের গোড়ায় রক্তক্ষরণ হয়।
* পাখনা ছিড়ে যায ও পচন ধরে এবং পরিপাক নালীতে প্রদাহ
হয়। চিত্র ৪.২.৬ : র্যাবডোভাইরাস রোগে আক্রান্ত মাছ
* দেহগহ্বরে রক্তাভ ঘন তরল জমা হয় ও পেট ফুলে যায়।
* চোখ বাইরের দিকে বের হয়ে আসে।
প্রতিকার/চিকিৎসা :
ভাইরাসজনিত রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করার জন্য মৎস্য বিজ্ঞানীরা নিরালস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু আজ অবধি যুৎসই কোন উপায় বের করা সম্ভব হয়নি। সেজন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উত্তম ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণ করে, সংক্রমণ ঠেকানোর ব্যবস্থা নিয়ে, রোগের প্রতি সংবেদনশীলতা কমানোর জন্য পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে টিকা (ঠধপপরহব) দিয়ে মাছের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা হয়। একবার ভাইরাস সংক্রমণ হয়ে গেলে আর কোন উপায় থাকে না বিধায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাই উত্তম।
* পানির তাপমাত্রা ২০০ঈ এর উপরে রেখে এ রোগের সংক্রমণ থামানো যায়।
* পানিকে টঠ ট্রিটমেন্ট করে ভালো ফল পাওয়া যায়।
* র্যাবডোভাইরাস আক্রান্ত মাছের পোনা ও ডিম ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
(৪) পরজীবীঘটিত রোগ :
(১) সাদা দাগ রোগ :
এককোষী প্রোটোজোয়ান বহিঃপরজীবী এ রোগ সৃষ্টি করে। রোগের বিস্তার : এটি স্বাদুপানির মাছের একটি খুবই সাধারণ এবং পুনঃপুন ঘটনশীল রোগ। চাষোপযোগী মাছের জন্য খুবই অনিষ্টকারী রোগ এটি। দেশী কার্পজাতীয় মাছে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। চীনা কার্পেও এ রোগের সংক্রমণ ঘটে থাকে। তেলাপিয়া এবং গোল্ডফিশেও এ রোগ দেখা যায়। আঙ্গুলে পোনার ক্ষেত্রে এ রোগের সংক্রমণের তীব্রতা বেশি হয়।
এর সংক্রমণ ও তীব্রতার মাত্রা ২৫০—২৬০ঈ তাপমাত্রায় বৃদ্ধি পায়। গ্রীষ্মে ও বসন্তে সাদা দাগ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। পুকুরে মাছের অতিরিক্ত মজুদ ঘনত্ব, দ্রবীভূত অ*িজেনের স্বল্পতা, রাসায়নিক দূষণ এবং উচ্চ তাপমাত্রা রোগটির প্রাদুর্ভাব (ড়ঁঃনৎবধশ) কে তরান্বিত করে।
রোগের লক্ষণ :
আক্রান্ত মাছের ত্বক, পাখনা এবং কানকোয় বিন্দুর মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাদা ফোটা দেখা দেয়।
রোগের তীব্রতা খুব বেশি হলে মাছের ত্বক সাদা ঝিল্লীতে ঢাকা পড়ে যায়।
মাছের গায়ের পিচ্ছিল আবরণ (সঁপঁং) কমে যায় এবং স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য হারায়।
পরজীবী সংক্রামণের শুরুতে মাছ পানিতে লাফালাফি শুরু করে এবং শক্ত কোন কিছুতে গা ঘষতে থাকে।
আক্রান্ত মাছের পাখনা মুড়িয়ে যায়।
মাছ অলসভাবে চলাফেরা করে এবং খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখায়।
আক্রান্ত মাছ বহি:প্রণোদনে ধীরগতিতে বা দেরীতে সাড়া দেয়। * পানির উপরিভাগে দীর্ঘ সময় অলসভাবে ভেসে থাকে।
প্রতিকার/চিকিৎসা :
নিম্নলিখিত তিনভাবে সাদা দাগ রোগের সংক্রমণ বন্ধ করা এবং চিকিৎসা করা যায়:—
সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা :
পুকুরে অধিক ঘনত্বে মাছ মজুদ করা বন্ধ করতে হবে।
পুকুরে নিয়মিত পানি পরিবর্তন করতে হবে এবং দ্রবীভূত অ*িজেন এর অনুকূল মাত্রা বজায় রাখতে হবে।
পুকুর বন্যামুক্ত রাখতে হবে এবং বাহির থেকে অবাঞ্চিত মাছ ও পাখি/প্রাণির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
পুকুর বা জলাশয় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
পুকুরে নিয়মিত বিরতিতে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
ভৌত পদ্ধতি :
এই পদ্ধতিতে মূলত পরজীবীর জীবন চক্রের বিভিন্ন ধাপ ভেঙ্গে দিয়ে রোগের প্রতিকার করা হয়।
প্রধানত: হ্যাচারি বা ট্যাংকের ছিদ্রযুক্ত কন্টেইনারে (পড়হঃধরহবৎ) রাখা মাছের উপর পানির ফ্লাশ দিয়ে সাদা দাগ রোগের পরজীবীকে দূর করা যায়।
পানিকে টঠ ট্রিটমেন্ট করে ভালো ফল পাওয়া যায়।
র্যাবডোভাইরাস আক্রান্ত মাছের পোনা ও ডিম ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
অ্যাকুরিয়ামে শোভাবর্ধনকারী মাছ এবং জিয়ল মাছের ক্ষেত্রে পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি করেও (৩০—৩২০ঈ) এ রোগের পরজীবীকে দমন করা যায়। কারণ পরজীবীটির জীবন চক্র পানির তাপমাত্রার উপর খুবই নির্ভরশীল জীবন চক্র সম্পন্ন হতে ২৫০ঈ তাপমাত্রায় ৭ দিন এবং ৬০ঈ তাপমাত্রায় ৮ সপ্তাহ সময় লাগে। কাজেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে এদের জীবন চক্রের ধাপগুলোকে ধ্বংস করা যায়।
রাসায়নিক পদ্ধতি :
সাদা দাগ রোগের পরজীবীর জীবন চক্রের দুটি ধাপ বা দুই পর্যায়ে এরা মুক্ত সাঁতারু। আর রাসায়নিক প্রয়োগ করে ধ্বংস করার সবচেয়ে উপযুক্ত হলো এই দুটি পর্যায়।
অ্যাকুরিয়ামের আক্রান্ত মাছকে ১.৫—২.৫% সাধারণ লবণ দ্রবণে ১০ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখতে হবে। এভাবে এক সপ্তাহ চালালে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
পুকুরে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ২ থেকে ৫ ঢ়ঢ়স পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট নিয়মিতভাবে প্রয়োগ করতে হবে। অ্যাকুরিয়ামের ক্ষেত্রে ১৫ দ্রবণে আক্রান্ত মাছ যতক্ষণ সহ্য করতে পারে ততক্ষণ ডুবিয়ে রাখতে হবে।
পুকুরে ১৫—২৫ হারে ফরমালিন ব্যবহার করেও এই পরজীবীর আক্রমণ থেকে মাছকে রক্ষা করা যায়।
৩ থেকে ৪ দিন বিরতিতে পুকুরে ০.১ ঢ়ঢ়স হারে ম্যালাকাইট গ্রীন স্প্রে করে খুবই ভাল ফল পাওয়া যায়। কারণ এর জিংক—মুক্ত অ*ালেট (তরহপ—ভৎবব ঙীধষধঃব) চামড়ার ভিতরে প্রবেশ করে চামড়ায় থাকা পরজীবীকে মেরে ফেলতে পারে।
১০ ঢ়ঢ়স অপৎরভষধারহ অথবা অপৎরভষধারহ যুফৎড়পযষড়ৎরফব দ্রবনে দীর্ঘ সময় ধরে গোসল করালে ভাল ফল পাওয়ার আশা করা যায়। এভাবে ৩ থেকে ২০ দিন গোসল করাতে হবে।
মিথিলীন ব্লু ২ থেকে ৩ ঢ়ঢ়স হারে প্রয়োগ করার সুপারিশ করা হয়। এটি সরাসরি অ্যাকুরিয়ামের পানিতে প্রয়োগ করেও উপকার পাওয়া যায়।
(২) মাছের উকুন :
এই রোগ সাধারণভাবে মাছের উকুন নামে পরিচিত।
মাছের উকুনের কারণ বা রোগজীবাণু:
আরগুলাস গণের কয়েক প্রজাতির পরজীবী এই রোগ সৃষ্টি করে।
মাছের উকুন রোগের বিস্তার :
বহুকোষী পরজীবীঘটিত রোগের মধ্যে আরগুলোসিস মাছের প্রধান রোগ। কার্পজাতীয় মাছের দেশী ও বিদেশী সব প্রজাতিতেই এ রোগের সংক্রমণ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। তাছাড়া স্যামন, ট্রাউটসহ অন্যান্য অনেক প্রজাতির মাছেই আরগুলাস সংক্রমণ দেখা যায়। এমনকি ব্যাঙেও সংক্রামিত হয়।
পুকুরে মাছ চাষের ক্ষেত্রে এ রোগ প্রায়ই দেখা যায়। পরজীবী সংক্রমণের মাত্রা কম হলে মাছের খুব বেশি ক্ষতি হয় না। এ রোগে অনেক সময় পরিপক্ক ও প্রজননক্ষম মাছের ব্যাপক মড়ক দেখা দেয়। পুকুরের পরিবেশ খারাপ হলে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। পুকুর পুরানো হলে এবং পচা কাদা বেশি থাকলে এ পরজীবীর সংক্রমণের মাত্রা ও তীব্রতা দুই—ই বৃদ্ধি পায়। মাছের জীবন চক্রের সব দশাতেই এ পরজীবীর সংক্রমণ ঘটে থাকে। এই পরজীবী খালি চোখে দেখা যায়।
মাছের উকুন রোগের লক্ষণ :
মাছ বিচলিত হয়ে দ্রুত ও অবিশ্রান্তভাবে সাঁতার কাটতে থাকে।
মাছের গায়ে পরজীবী আটকে থাকে।
মাছ পরজীবীর হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য শক্ত কিছুতে গা ঘষতে থাকে।
আক্রান্ত স্থলের চারপাশে লালচে বর্ণ ধারণ করে।
আক্রান্ত স্থানে ঘা সৃষ্টি হয় ও রক্তক্ষরণ হয়।
মাছের দেহ ক্ষীণ হয়ে যায় ও বৃদ্ধি হ্রাস পায়।
মাছ অস্থিরভাবে লাফালাফি করতে থাকে।
মাছের উকুন রোগের প্রতিকার/চিকিৎসা :
মাছের পরজীবী অনেক থাকলেও বাংলাদেশে পরজীবীজনিত রোগের প্রাদূর্ভাব তেমন প্রকট নয়। চিংড়ির ক্ষেত্রে এ সমস্যা নেই বললেই চলে। যে সকল পরজীবীজনিত রোগ মৎস্যচাষে সমস্যা করে তার অধিকাংশই বহি:পরজীবীর আক্রমণে হয়। এগুলোর মধ্যে এককোষী পরজীবী এবং কিছু বহুকোষী পরজীবীর আক্রমণজনিত রোগই প্রধান। নিম্নে আরগুলাস দ্বারা সৃষ্ট রোগের প্রতিকার পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো—
যেহেতু এরা পোকামাকড় জাতীয় পরজীবীঘটিত রোগ সেহেতু এর চিকিৎসার জন্য কীটনাশক (ওহংবপঃরপরফব) ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
ডিপটারে* : ০.৩—০.৫ ঢ়ঢ়স হারে প্রতি সপ্তাহে ১ বার করে দু’সপ্তাহ পর্যন্ত।
সুমিথিওন/ম্যালাথিওন/প্যারাথিওন: ০.২৫—০.৩ ঢ়ঢ়স হারে পুকুরে প্রয়োগ সপ্তাহে ১ বার দু’সপ্তাহ পর্যন্ত।
খরপব—ঝড়ষাব নামক একধরনের ঔষধ পাওয়া যায় যা সরাসরি পুকুর কিংবা ট্যাংকের পানিতে প্রয়োগ করে আরগুলাস মারা যায়।
আরগুলাস আক্রান্ত পুকুরে ঔষধটি ব্যবহার করার সময় পানির দ্রবীভূত অ*িজেনের অনুকূল মাত্রা বজায় রাখতে হবে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিয়ম করে পুকুরে শতাংশ প্রতি ১ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে, জৈব সারের প্রয়োগ মাত্রা কমিয়ে দিতে হবে এবং পুকুরের তলার পচা কাদা তুলে ফেলতে হবে।
(৩) মাছের কৃমিরোগ :
কৃমি হলো বহুকোষী পরজীবী। কৃমিজাতীয় পরজীবী মাছের অন্তঃ এবং বহিঃপরজীবী হিসেবে রোগ সৃষ্টি করে। কৃমিজাতীয় রোগের মধ্যে নিম্নবর্ণিত রোগসমূহ চাষযোগ্য মাছের জন্য ক্ষতিকর:—
(ক) ড্যাকটাইলোগাইরোসিস
(খ) গাইরোড্যাকটাইলোসিস
নিম্নে এদের সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো:
(ক) ড্যাকটাইলোগাইরোসিস :
এই রোগ ফুলকা কৃমি রোগ নামে পরিচিত।
রোগের বিস্তার :
স্বাদু পানি এবং সামুদ্রিক পানির অধিকাংশ মাছই এই রোগের প্রতি সংবেদনশীল। এ রোগে প্রধানত মাছের ফুলকা আক্রান্ত হয়। কার্পজাতীয় মাছের ৪—৫ গ্রাম ওজনের পোনা মাছে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। সংক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে ব্যাপক হারে মড়ক দেখা দেয়। বসন্তের শেষে এবং গ্রীষ্মের শুরুতে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। পানির তাপমাত্রা ২০—২৫০ ঈ এর মধ্যে এ রোগের দ্রুত বিস্তার ঘটে।
রোগের লক্ষণ :
আক্রান্ত মাছ অস্থিরভাবে চলাফেরা করে এবং পানি নির্গমনের নালার কাছে জড়ো হয়।
ফুলকা ফুলে যায় এবং ফুলকায় রক্তক্ষরণ হয়।
ফুলকা ও দেহের রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
কানকো (ড়ঢ়বৎপঁষঁস) খোলা থাকে।
মাছের দেহে অধিক মিউকাস (সঁপঁং) সৃষ্টি হয়
মাছের রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়। * মাছ দূর্বল হয়ে যায়
কৃমিরোগের প্রতিকার/চিকিৎসা :
কৃমরোগের প্রতিকার নিম্নোক্তভাবে করা যায়—
সোডিয়াম ক্লোরাইড বা লবণ দিয়ে : ২.৫% লবণ দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে ১ ঘন্টা গোসল করাতে হবে।
মেবেনডাজলদিয়ে : ১ মিগ্রা/লিটার হারে দ্রবণ তৈরি করে মাছকে ২৪ ঘন্টা গোসল করালে যেকোনো কৃমি দূর হয়।
এসেটিক এসিড দিয়ে : এক লিটার পানিতে ১—২ মি.লি. গ্ল্যাসিয়াল এসেটিক এসিড মিশিয়ে তাতে আক্রান্ত মাছকে ১—১০ মিনিট গোসল করালে ভাল ফল পাওয়া যায়।
ফরমালিন দিয়ে : ২৫০—৩৩০ মি.গ্রা/লিটার ফরমালিন দ্রবণ প্রস্তুত করে আক্রান্ত মাছকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত গোসল করালে সুফল পাওয়া যায়। একই সাথে নিম্নের প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।
পুকুর বা জলাশয় পরিষ্কার—পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং নিয়মিত চুন প্রয়োগ করতে হবে।
মাছকে প্রয়োজনমত পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
পুকুর বা জলাশয়ে যাতে বাহির থেকে কোনো অবাঞ্চিত মাছ/প্রাণি প্রবেশ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
পুকুর শামুক/ঝিনুক জন্মাতে দেওয়া যাবে না।
হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদনের জন্য কৃমিমুক্ত ব্রুডমাছ ব্যবহার করতে হবে।
মাছের অপুষ্টিজনিত রোগ :
মাছের অপুষ্টিজনিত রোগগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়, তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। বিশেষ কোনো খাদ্য উপাদানের অভাবে মাছ অপুষ্টিতে ভুগতে পারে এবং বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। এতে মাছের বৃদ্ধির হার কমে যায়।
(১) মাছের প্রোটিনের অভাবজনিত রোগ:
কারণ :
মৎস্য খাদ্যে প্রোটিন বা অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিডের স্বল্পতা।
লক্ষণ :
মাছের বর্ধন ব্যহত হয়। এনজাইম ও হরমোনের জৈব—সংশ্লেষণ ব্যহত হয়। মাছের বৃক্কে (করফহবু) অস্বাভাবিক ক্যালশিয়াম জমা হতে পারে। একে রেনাল ক্যালশিনোসিস বলা হয়। পৃষ্ঠ পাখনায় ক্ষত দেখা দিতে পারে। চোখে ছানি পড়ে মাছ অন্ধও হয়ে যেতে পারে।
প্রতিকার :
মাছকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সহজপাচ্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
খাদ্যে যথাযথ মাত্রায় লাইসিন যোগ করে পৃষ্ঠ পাখনার ক্ষত হতে প্রতিকার পাওয়া যায়।
মিথিওনিন ও ট্রিপটোফেন নামক অ্যামাইনো এসিড খাদ্যে যথাযথ মাত্রায় ব্যবহার করলে চোখে ছানি পড়ে না।
(২) মাছের লিপিডের অভাবজনিত রোগ :
কারণ :
মৎস্য খাদ্যে লিপিড বা চর্বির স্বল্পতা।
লক্ষণ :
মাছের বৃদ্ধি হ্রাস পায়। মাছের রক্ত শূণ্যতা দেখা দেয় এবং মাছ দূর্বল হয়ে পড়ে। মাছের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়, পুচ্ছ পাখনা ভেঙ্গে যায় এবং যকৃত ফ্যাকাশে হয় এবং ফুলে যায়।
প্রতিকার :
মাছের খাদ্য তৈরিতে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিডের যথাযথ সমম্বয় ঘটিয়ে লিপিডের অভাবজনিত রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়। তাছাড়া সরিষা, তিল ইত্যাদির খৈল খাদ্যের সঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে।
(৩) মাছের ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ :
কারণ : মৎস্য খাদ্যে বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবে নানা ধরনের সমস্যা হয়।
লক্ষণ :
ভিটামিন—অ এর অভাবে মাছের চোখ ফুলে যায় এবং দীর্ঘকাল এভাবে চলতে থাকলে মাছ অন্ধ হয়ে যায়।
ভিটামিন—উ এর অভাবে বৃক্কে (করফহবু) সমস্যা দেখা দেয় এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। মাছের অস্থি ও কাটায় সমস্যা দেখা দেয়।
ভিটামিন—ঊ এর অভাবে মাছের মাংসপেশীতে সমস্যা দেখা দেয় এবং লোহিত রক্তকনিকা ভেঙ্গে যায়। মাছের দেহের বর্ণ কালো হয়ে যায়। এই ভিটামিনের অভাবে মাছের প্রজনন ব্যহত হতে পারে।
ভিটামিন—ক এর অভাবে মাংসপেশীতে রক্তক্ষরণ ঘটে এবং ক্ষতস্থানে রক্ত জমাট বাঁধতে অধিক সময় লাগে।
ভিটামিন—ই পড়সঢ়ষবী এর অভাবে মূলত মাছের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুবিক সমস্যা দেখা দেয়, যার ফলে ক্ষুধামন্দা, দৃষ্টি শক্তি হ্রাস, দূর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
ভিটামিন —ঈ বা এসকরবিক এসিডের অভাবে মাছের ক্ষতস্থান শুকাতে দেরি হয় এবং অস্থি ও কাটায় অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় ।
প্রতিকার :
ভিটামিনের অভাবজনিত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে যে নির্দিষ্ট ভিটামিন সমস্যার জন্য দায়ী সেই ভিটামিন সহযোগে সুষম খাদ্য তৈরী করে তা নিয়মিতভাবে মাছকে খাওয়াতে হবে। এক্ষেত্রে ভিটামিনের সঠিক মাত্রা মেনে চলতে হবে যা নিচের টেবিলে দেওয়া হলো।
(৪) মাছের খনিজ লবণের অভাবজনিত রোগ :
কারণ :
খাদ্যে খনিজ লবণের স্বল্পতা। লক্ষণ : ক্যালসিয়ামের অভাবে মাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয়, হাড় ও কঙ্কালের গঠন বাধাগ্রস্থ হয়।
ফসফরাসের অভাবে মাছের অস্থির গঠন বাধাগ্রস্থ হয় এবং বিপাক ক্রিয়া ব্যহত হয়।
খাদ্যে আয়োডিনের অভাবে থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা হ্রাস পায় ফলে গলগন্ড রোগ দেখা দেয়। * জিঙ্কের অভাবে মাছের চোখে ছানি পড়ে।
লৌহের অভাবে রক্তাল্পতা দেখা দেয়।
প্রতিকার :
মৎস্য খাদ্যে নিম্নোক্ত মাত্রায় খনিজ লবণ যোগ করে সমস্যার সমাধান করা যায়।
মাছের রোগ প্রতিরোধের সাধারণ উপায়:
মাছের রোগ নিয়ন্ত্রণের একটি সাধারণ মূলনীতি প্রচলিত আছে। তা হচ্ছে—রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়। পানিতে বসবাস করে বিধায় মাছের বিভিন্ন কর্মকান্ড, আচার—আচরণ পর্যবেক্ষণ করা কষ্টসাধ্য। একারণে নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় করা এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা করা অধিকতর কষ্টসাধ্য। এ দৃষ্টিকোণ থেকে রোগ হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উত্তম। এখানে মাছের রোগ প্রতিরোধের কয়েকটি উপায় সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো—
(১) পানির গুণাগুণ নিয়ন্ত্রণ :
পানির বিভিন্ন ভৌত—রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাবলীর অনুকূল মাত্রা বজায় রাখার মাধ্যমে মাছকে বাসযোগ্য পরিবেশ দেওয়া যায়। এর ফলে পরিবেশগত ধকল থেকে মাছ রক্ষা পায় এবং সুস্থ থাকে।
(২) মজুদ ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য প্রয়োগ :
সঠিক সংখ্যায় পোনা মজুদ, পরিমিত সার প্রয়োগ ও সুষম খাদ্য সরবরাহ করে মাছকে রোগ হওয়া থেকে মুক্ত রাখা যায়।
(৩) পুকুর জীবাণুমুক্তকরণ :
পুকুর শুকিয়ে এবং পুকুরে রাসায়নিক পদার্থ (চুন, কীটনাশক প্রভৃতি) প্রয়োগের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করে সফলভাবে রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
(৪) উপকরণ জীবাণুমুক্তকরণ :
মাছ চাষে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ যেমন—পোনা পরিবহন পাত্র, হাপা, খাদ্য প্রদানের পাত্র, জাল ইত্যাদি বিভিন্ন রোগজীবাণু ও পরজীবীর বাহক হিসেবে কাজ করে। ব্যবহারের পূর্বে এসব উপকরণ জীবাণুমুক্ত করে নিলে মাছের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।
(৫) বিভিন্ন বয়সের মাছ পৃথকভাবে লালন—পালন :
অনেক সময় প্রজননক্ষম এবং বয়স্ক মাছ অনেক রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে থাকে। ঐসব রোগ অপেক্ষাকৃত কম বয়সের মাছে সংক্রমণ ঘটায়। সুতরাং ভিন্ন ভিন্ন বয়সের মাছকে আলাদাভাবে লালন পালন করে মাছের রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
(৬) মরা বা রোগাক্রান্ত মুমূর্ষু মাছ অপসারণ :
রোগাক্রান্ত মরা মাছে রোগজীবাণু দ্রুত বংশ বিস্তার করে। তাই মরা ও রোগাক্রান্ত মুমূর্ষু মাছ পুকুর থেকে যথাশীঘ্র সম্ভব অপসারণ করে রোগ সংক্রমণের তীব্রতা হ্রাস করা যায়।
(৭) রাসায়নিক প্রতিরোধ :
মাছকে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য (যেমন— এন্টিবায়োটিক) খাইয়ে, রাসায়নিক দ্রবণে মাছকে ডুবিয়ে রেখে বা পুকুরে প্রয়োগ করে রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
(৮) শরীরবৃত্তীয় প্রতিরোধ সৃষ্টি :
কৃত্রিমভাবে শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (রসসঁহব ংুংঃবস) শক্তিশালী করে মাছের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেমন—ভ্যাকসিন দিয়ে মাছের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়।
(৯) সংগনিরোধ :
দূরবর্তী ভিন্ন কোন জলাশয় বা ভিন্ন দেশের কোন মাছ মজুদ করার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সংক্রমণ রোধ করার লক্ষ্যে উক্ত মাছকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সংগনিরোধ ব্যবস্থায় রাখতে হবে। এটি মাছের রোগ প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।
সূত্র:
মাছের রোগ ও তার প্রতিকার , কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র , ইউনিট-৪ , পাঠ -৪.২।
কই মাছের চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্রের” ১ নং ইউনিটের ১.৫ নম্বর পাঠ। কই মাছ বাংলাদেশের মানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি ছোট মাছ। এটি খেতেও যেমন সুস্বাদু, পুষ্টিগুণেও তেমন ভরপুর। মাছটি পানির উপরে দীর্ঘক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে বলে একে জিয়ল মাছ বলা হয়। এক সময় প্রাকৃতিক ভাবেই এদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়গুলোতে প্রচুর পরিমাণে কই মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানুষ সৃষ্ট কারণে এ মাছটি আজ বিলুপ্তির পথে। স্বাদ, পুষ্টিগুণ, উচ্চ বাজারমূল্য ও সর্বোপরি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার্থে এ মাছকে অবশ্যই গুরুত্ব দেবার সময় এসেছে।
কই মাছের চাষ পদ্ধতি
কই মাছের একক চাষ পদ্ধতি:
আমাদের চাষ পদ্ধতিতে মাছটি অন্তভূর্ক্ত করে উৎপাদন বাড়ানো এখন সময়ের দাবী। তবে পোনার অপ্রতুলতার কারণে কই মাছের চাষ আশানুরূপভাবে প্রসার লাভ করেনি। দেশীয় কই মাছের কৃত্রিম প্রজননের চেষ্টা সফল হলেও নিম্ন বর্ধন হারের কারণে মাছটির বাণিজ্যিক চাষের আশা অনেকটা মিইয়ে যায় এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ২০০২ সালে বেসরকারি পর্যায়ে দেশীয় কই মাছের অনুরূপ একটি বর্ধনশীল জাত থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয় যা ‘থাই কই’ নামে পরিচিত। এদেশের আবহাওয়ায় সহজে মানিয়ে নেওয়ায় বর্তমানে স্থানীয়ভাবেই এ মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন সফলভাবে করা হচ্ছে।
আমাদানিকৃত থাই কই এর উৎপাদন দেশী কই অপেক্ষা ৫০% বেশি হওয়ায় বাণিজ্যিক চাষে অধিক মুনাফা করা সম্ভব। পরবর্তিতে ২০১১ সালে আরো একটি কই এর জাত ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা হয় যা থাই কই এর চেয়েও বেশি বর্ধনশীল। ভিয়েতনামী কই ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং অনেক চাষীই মাছটি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
কই মাছ চাষের সুবিধা :
(১) যে কোন ধরনের জলাশয় এমনকি চৌবাচ্চা বা খাঁচাতেও চাষ করা যায়।
(২) অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়।
(৩) একক এবং মিশ্র চাষের জন্য উপযোগী।
(৪) টেকসই মাছ হওয়ায় বিরূপ পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে।
(৫) কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করা সম্ভব, তাই চাষের জন্য সহজেই পোনা পাওয়া যায়।
(৬) প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ করে।
(৭) কম সময়ে (৩—৪ মাস) বাজারজাত করা যায়, ফলে দ্রুত পঁুজি ফেরত পাওয়া যায়।
(৮) অতিরিক্ত শ্বসন অঙ্গ থাকায় কই মাছ পানি ছাড়াও দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে, ফলে জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করে বেশি দাম পাওয়া যায়।
(৯) রোগীর পথ্য হিসেবে এবং সুস্বাদু হওয়াতে কই মাছের বাজার চাহিদা ব্যাপক।
কই মাছ চাষ করার জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে করতে হবে।
কই মাছ চাষের জন্য পুকুর নির্বাচন :
৪—৬ মাস পানি থাকে এ রকম যে কোন পুকুর কই চাষের জন্য উপযোগী। পুকুরের আয়তন ১৫—৫০ শতাংশ হলে ভালো হয়। নিচের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে পুকুর নির্বাচন করা উচিত:
* মজুদ পুকুর আকৃতিতে আয়তকার হবে।
* পুকুরের মাটি দো—আঁশ হবে।
* পুকুরের তলায় ১৫ সে.মি. এর অধিক কাদা থাকবে না।
* বন্যামুক্ত স্থানে পুকুর নির্বাচন করতে হবে। * পুকুরের স্থানটি আলো—বাতাস পূর্ণ হবে।
পুকুর প্রস্তুতকরণ : পুকুর প্রস্তুত ভালোভাবে না হলে মাছ চাষ চলাকালীন নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। তাই নির্বাচিত পুকুর কই মাছ চাষের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। পুকুর প্রস্তুতকরণের ধাপগুলো নিম্নরূপ—
অবাঞ্চিত প্রাণী ও আগাছা দমন পুকুরের পানিতে আগে থেকেই বসবাসকারী রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ ও প্রাণি দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ রোটেনন, ফসট*িন ইত্যাদি কিনতে পাওয়া যায় যা ব্যবহার করে উক্ত কাজটি করা যেতে পারে।
তবে পরিবেশের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে এসব দ্রব্য যতটা সম্ভব না ব্যবহার করাই ভাল। সেক্ষেত্রে ছোট/চিকন মেসের জাল বার বার টেনে রাক্ষুসে মাছ ও ক্ষতিকর প্রাণি দূর করা যায়। পুকুর সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে কাজটি করলে সবচেয়ে ভাল হয়। এসময় আগাছাও পরিস্কার করে ফেলতে হবে।
তলা ও পাড় মেরামত পুকুরের তলার অতিরিক্ত পঁচা কালো কাদা অপসারণ করে পুকুরের পাড়ের গর্ত খানাখন্দ মেরামত করতে হবে। তলা সমান করে নিতে হবে। পুকুরের পাড়ের ঝোপ—ঝাড় পরিষ্কার করে চারিদিকে এক ফুট উঁচু জাল দিয়ে এমনভাবে ঘিরে দিতে হবে যেন জালের নিচের প্রান্ত পাড়ের মাটিতে গ্রোথিত থাকে। এর ফলে মৎস্যভূক প্রাণি যেমন—সাপ, গোসাপ প্রবেশ করতে পারবে না। আবার কই মাছ ও পুকুর থেকে পালাতে পারবে না।
কই মাছ চাষে চুন ও সার প্রয়োগ:
পুকুরের পানিতে অনেক ধরনের ক্ষতিকর রোগ—জীবাণু থাকে। এসব জীবাণু ধ্বংস করতে এবং পানির গুণাগুণ ঠিক রাখতে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন পানিতে গুলে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরে চুন প্রয়োগের ৩—৪ দিন পর এবং কই মাছের পোনা মজুদের ৭—৮ দিন আগে সার প্রয়োগ করতে হবে।
পানির রং বুঝে পুকুরে সার প্রয়োগ করতে হবে। কারণ উর্বর পুকুরে অনেক সময় চুন প্রয়োগের পর পানিতে প্রচুর ফাইটোপ্ল্যাংকটন জন্মে। সেক্ষেত্রে পুকুরে সার প্রয়োগের কোন প্রয়োজন নাই।
কই মাছ প্রকৃতিতে সাধারণত জুপ্ল্যাংকটন ও জলজ কীটপতঙ্গ খায়। জুপ্ল্যাংকটনের উৎপাদন নির্ভর করে ফাইটোপ্ল্যাংকটনের প্রাচুর্যতার উপর। আর পুকুরে সার প্রয়োগের উদ্দেশ্যই হলো ফাইটোপ্ল্যাংকটনের উৎপাদন বাড়ানো। সাধারণত জৈব ও অজৈব উভয় প্রকার সার পুকুরে প্রয়োগ করতে হয়।
পুকুরে অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ করলে সাধারণত চাষের প্রথম এক মাসের পর আর সার প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয় না। কারণ চাষের এ পর্যায়ে পানিতে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য এমনিতেই তৈরি হয় এবং পানির রং যথেষ্ট সবুজ হয়ে যায়। তবে পানিতে যথেষ্ট প্রাকৃতিক খাদ্য না থাকলে চাষ চলাকালীন সার দিতে হবে (সারনি ২)।
পোনা মজুদ নির্ভরযোগ্য সরকারি/বেসরকারি হ্যাচারি থেকে পোনা সংগ্রহ করতে হবে। ধানী পোনার ক্ষেত্রে ১৫—২০ দিন নার্সারি পুকুরে রেখে ৪—৬ সে.মি লম্বা হলে অথবা ওজন ৩—৪ গ্রাম হলে স্ত্রী পোনাগুলোকে আলাদা করে পুকুরে চাষ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
পুকুর ব্যবস্থাপনা ও সম্পূরক খাদ্যের ওপর নির্ভর করে শতাংশ প্রতি ৫০০—১০০০টি সুস্থ—সবল পোনা মজুদ করা যেতে পারে। পোনাকে অবশ্যই পুকুরের পানির সাথে কন্ডিশনিং করে তারপর ছাড়তে হবে। পোনা মজুদ করার উত্তম সময় হল সকাল বেলা।
কই মাছের সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ:
কই মাছের পুষ্টি চাহিদা বিশেষ করে আমিষের চাহিদা কার্পজাতীয় মাছের চেয়ে বেশি। কই মাছের পোনার আমিষের চাহিদা ৩০—৩৫% এবং চাষযোগ্য মাছের ক্ষেত্রে তা ৩০%। অধিক ঘনত্বে কই মাছ চাষে ভাল উৎপাদন পেতে হলে প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি মাছকে সম্পূরক খাদ্য দিতে হবে।
কই মাছের একটি আদর্শ খাবারে আমিষ ৩০—৩৫%, চর্বি ৪—৫%, শর্করা ৪%, ছাই (অংয) ১৪%, অঁাশ (ঋরনৎব) ৫% ও জলীয় অংশ ১১% থাকা প্রয়োজন। ইদানিং বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির পিলেট খাদ্য (ডুবন্ত ও ভাসমান) কিনতে পাওয়া যায়।
এসব খাদ্য প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানির নির্দেশনাও মানা যেতে পারে। খামারে তৈরি ভিজা খাবারের পাশাপাশি বানিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত ভাসমান পিলেট খাবার কই মাছের পুকুরে প্রয়োগ করা সর্বোত্তম। নিচের সারণি অনুসরণ করে প্রতিদিনের খাদ্যকে দু’ভাগ করে সকাল ও বিকালে ২ বার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
কই মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণ:
আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চাষ করলে ৩—৪ মাসে কই মাছ গড়ে ৯০—১০০ গ্রাম (ভিয়েতনামী কই ২০০—৩০০ গ্রাম) হবে। এ সময় জাল টেনে বা পানি শুকিয়ে মাছ ধরার ব্যবস্থা নিতে হবে। নিচের সারণিতে একর প্রতি কই মাছের উৎপাদন দেখানো হলো
বাজারজাতকরণের আগের দিন জাল টেনে মাছ ধরে ছেড়ে দিতে হবে। এর ফলে বাজারজাত করার সময় মাছের মৃত্যুহার কম হবে। মাছ ধরার পর পরিস্কার পানি দিয়ে মাছগুলো ধৌত করা শ্রেয়। এরপর প্লাষ্টিকের ড্রামে পরিমাণমত পানি নিয়ে জীবন্ত অবস্থায় কই মাছ বাজারজাত করা যেতে পারে। এতে করে ভালো দাম পাওয়া যায়।
কই মাছের রোগ ব্যবস্থাপনা:
* পুকুর প্রস্তুতকরণের কাজটি যথাযথভাবে করতে হবে।
* সুস্থ সবল পোনা মজুদ করতে হবে।
* উৎপাদন উপকরণ ভালভাবে জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করতে হবে।
* পরিমিত পরিমানে সুষম খাবার প্রয়োগ করতে হবে।
* প্রতিমাসে অন্তত: একবার নমুনায়নের মাধ্যমে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। * প্রতি ১৫—২০ দিন অন্তর অন্তর ২০—৩০% পানি পরিবর্তন করে দিতে হবে।
তাছাড়া কই মাছ পরিবহনের সময় আঘাত প্রাপ্ত হলে ক্ষত রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। ক্ষত রোগের প্রাদুর্ভাব হলে টিমসেন প্রতি শতাংশ পুকুরে (১ মিটার গভীরতায়) ২.৬৫ গ্রাম হারে ব্যবহার করা যেতে পারে (ইউনিট—৪ এ ক্ষত রোগ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আছে)।
পুকুরে জীবাণুনাশক হিসেবে অ্যাকুয়াম্যাজিক ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যবহার মাত্রা প্রতি একর পুকুরে ১ মিটার গভীরতার জন্য ৫ কেজি। তাছাড়া পোনা মজুদের পর ১০ গ্রাম/শতাংশ হারে কপার সালফেট ব্যবহারে ভাল ফল পাওয়া যায়।
সূত্র:
কই মাছের চাষ পদ্ধতি | ইউনিট-১ , পাঠ -১.৬ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র
নাইলোটিকার চাষ পদ্ধতি বা নাইলোটিকা মাছের চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করবো। নাইলোটিকার চাষ পদ্ধতি পাঠটি কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র এর ইউনিট-১ এর ১.৪ নম্বর পাঠ।
নাইলোটিকার চাষ পদ্ধতি
নাইলোটিকা মাছ পরিচিতি:
আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল ছিল নীল তেলাপিয়া মাছের আদি নিবাস। সেখানে প্রাকৃতিকভাবেই এ মাছ পাওয়া যায়। মাছটি চাষের উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সালে থাইল্যান্ড হতে আমাদের দেশে প্রথম আমদানি করা হয়।
বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে মাছটিকে নাইলোটিকা নামে ডাকা হয়। এটি আসলে নীল তেলাপিয়া এবং এই নামেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত যদিও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।এটি একটি শক্ত প্রকৃতির দ্রুত বর্ধনশীল মাছ। নদী, হ্রদ, পয়ঃনিষ্কাশন নালা, সেচ নালাসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাদুপানির জলাশয়ে মাছটি স্বাচ্ছন্দে বাড়তে পারে। মাছটি প্রায় সব ধরনের খাদ্য খায়।
কিশোর অবস্থায় এরা সর্বভূক; ফাইটোপ্ল্যাংকটন, জুপ্ল্যাংকটন ও পঁচনশীল জৈব পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে। পূর্ণ বয়স্ক অবস্থায় এরা ফাইটোপ্ল্যাংকটন এবং জুপ্ল্যাংকটন প্রধান খাদ্য হিসেবে খেয়ে থাকে।
সম্পূরক খাদ্য দিয়েও মাছটি চাষ করা যায়। মাছটি ৮—৪২০ঈ তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারে। নাইলোটিকা মাছ তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে ৩—৬ মাসে প্রজননক্ষম হয় বাচ্চা ফোটায় এবং কুসুমথলি মিলিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত বাচ্চাগুলো এরা মুখেই রাখে। উল্লেখ্য, স্ত্রী মাছ ২০০টি পর্যন্ত ডিম মুখে রাখতে পারে। মাছটি দেখতে ধূসর নীলাভ থেকে সাদা লালচে। পুরুষ মাছের গলার অংশের বর্ণ লালচে এবং স্ত্রী মাছের ক্ষেত্রে বর্ণ লালচে হলুদাভ। পৃষ্ঠ পাখনা কৃষ্ণবর্ণের মার্জিনযুক্ত এবং পুচ্ছ পাখনা সাদা বর্ণের সরু ও লম্বা দাগযুক্ত।
নাইলোটিকা মাছের বৈশিষ্ট্য ও চাষের সুবিধা:
(১) নাইলোটিকা মাছ বেশ শক্ত গড়নের হওয়ায় রোগবালাই তেমন হয় না।
(২) মাছটি সুস্বাদু এবং দেখতে আকর্ষনীয় হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
(৩) অধিক ফলনশীল হওয়ায় মাছটি চাষে অধিক লাভ হয়।
(৪) সর্বভূক বিধায় মাছ চাষে উৎপাদন খরচ অনেক কম।
(৫) প্রকৃতির বিরূপ পরিবেশে (যেমন— কম অক্সিজেন, বিরূপ তাপমাত্রা) সহনীয় ক্ষমতা বেশি।
(৬) জৈবিক ও কৃষিজ বর্জ্যকে উন্নত আমিষে রূপান্তরকরণে সক্ষম।
(৭) এ মাছের পোনা সহজেই পাওয়া যায়।
(৮) বেশি ঘনত্বে চাষাবাদ করা যায়।
(৯) স্বাদু ও লবণাক্ত পানি ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের জলাশয়ে চাষাবাদ করা যায়।
(১০) বিভিন্ন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়। যেমন—একক, মিশ্র, সমম্বিত, খাঁচায় ও পেন পদ্ধতি ইত্যাদি।
নাইলোটিকা মাছের একক চাষ পদ্ধতি:
নাইলোটিকা মাছ চাষ করতে হলে নিচের ধাপগুলো ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
১। নাইলোটিকা চাষের জন্য মজুদ পুকুর ব্যবস্থাপনা:
পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি : বছরে ৬ মাস পানি থাকে এমন যে কোনো জলাশয়ে সফলভাবে নাইলোটিকা চাষ করা যায়। পুকুরের পানির গভীরতা ১.৫ মিটার থাকলে ভাল হয়। উল্লেখ্য, ৫ শতাংশ বা তার নিচের আকারের জলাশয়েও নাইলোটিকা মাছ চাষ করা যায়। নির্বাচিত পুকুরের পাড় ভাঙ্গা থাকলে তা মেরামত করতে হবে।
তলায় ৩০ সে.মি. এর বেশি কাদা থাকলে তা অপসরণ করতে হবে এবং তলা সমান করতে হবে যাতে জাল টানতে সুবিধা হয়। তাছাড়া তলার পঁচা কাদা অপসারণ করলে পানিতে বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয় না। পুকুরে ভাসমান অথবা শিকড়যুক্ত সব ধরনের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
রাক্ষুসে মাছ দমন : টাকি, শোল, বোয়াল, চিতল, গজার প্রভৃতি হলো রাক্ষুসে মাছ। এরা চাষকৃত মাছের পোনা ও ডিম খেয়ে ফেলে এবং বিভিন্ন রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। তাই পুকুরে পোনা মজুদের আগে এসব রাক্ষুসে মাছ দমন করতে হবে। দুইভাবে কাজটি করা যেতে পারে। জাল টেনে অথবা ঔষধ প্রয়োগ করে। পুকুরে ঘন ঘন জাল টেনে রাক্ষুসে মাছ দমন করা যেতে পারে। সম্পূর্ণভাবে দমন করা না গেলে পুকুর শুকিয়ে নেওয়া উত্তম। তবে ঔষধ প্রয়োগ করে কাজটি সহজেই করা যায়। এক্ষেত্রে ফসটক্সিন ও রোটেনন ব্যবহার করা যেতে পারে।
চুন ও সার প্রয়োগ: চুনের বাফার হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা আছে। পানির ঢ়ঐ পরীক্ষা করে চুন (ঈধঈড়৩) প্রয়োগ করা উচিত। উল্লেখ্য, কিছুটা ক্ষারীয় ঢ়ঐ মাছ চাষের জন্য উপযোগী। বাংলাদেশে অধিকাংশ পুকুরের পানির ঢ়ঐ ৯ থেকে ৯.৫ এর ভিতরে থাকায় তা মাছ চাষের জন্য বেশ সহায়ক। তবে ঢ়ঐ এর মাত্রা কোনো কারণে অম্লীয় হলে চুন ব্যবহার করতে হবে।
চুন প্রয়োগ করলে পানি পরিষ্কার হয় এবং রোগ জীবাণু ধ্বংস হয়। পুকুরে চুন দিলে সার তাড়াতাড়ি কাজ করে চুনের ডোজ শতাংশে ১ কেজি। বাজারে সচরাচর প্রাপ্ত পাথুরে চুন ব্যবহার করা হয়। চুন প্রয়োগের ৩ থেকে ৪ দিন পর শতাংশে ৩—৪ কেজি গোবর + ২ কেজি মুরগির বিষ্ঠা প্রয়োগ করতে হবে। এর এক সপ্তাহ পর শতাংশে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া+ ৫০ গ্রাম ঞঝচ পানিতে গুলে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত ইউরিয়ার অর্ধেক পরিমাণে ঞঝচ সার দিতে হয়। সার প্রয়োগের ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে পানির রং সবুজাভ হলে পোনা ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।
২। নাইলোটিকা চাষের জন্য পোনা সংগ্রহ ও মজুদকরণ :
নির্ভরযোগ্য কোনো হ্যাচারি থেকে একটু বড় আকারের (৫—৭ সে.মি.) পোনা সংগ্রহ করতে হবে। উল্লেখ্য, বড় আকারের পোনার মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে কম। আধুনিক পদ্ধতিতে অক্সিজেন দিয়ে পোনা সংগ্রহ করতে হবে যাতে করে পোনার ওপর পরিবহনজনিত চাপ (ংঃৎবংং) না পড়ে। সংগৃহিত পোনা প্রতি শতাংশে ৬০ থেকে ৮০ টি করে মজুদ করতে হবে। পোনা মজুদের পূর্বে অবশ্যই পুকুরের পানির তাপমাত্রার সাথে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত করে নিতে হবে। পোনা মজুদের কাজটি সকালে করা ভাল। সকালের দিকে তাপমাত্রা কম থাকায় পোনার উপর তাপমাত্রাজনিত বিরূপ প্রভাব পড়ে না।
৩। নাইলোটিকা মজুদ পরবর্তি ব্যবস্থাপনা :
(ক) নাইলোটিকার পোনার পরিচর্যা :
নাইলোটিকা মাছ পুকুরের সব স্তরে বাস করে এবং সব ধরনের খাদ্য খায়। মজুদ মাছের মোট দৈহিক ওজনের শতকরা ৪—৬ ভাগ হারে চাউলের কঁুড়া, গমের ভূষি ও সরিষার খৈলের মিশ্রণ সকাল ও বিকালে পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। সরিষার খৈল পুকুরে প্রয়োগ করার অন্তত: ১২ ঘন্টা পূর্বে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
পুকুরের নির্দিষ্ট স্থানে প্রতিদিন খাবার দিতে হবে পোনা ছাড়ার ৮ থেকে ১০ দিন পর থেকে সব ধরনের খাবার পুকুরে দেওয়া যায়। বাজার থেকে কেনা পিলেট খাবারও ব্যবহার করা যায় এক্ষেত্রে মাছ চাষের খরচ তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। খাদ্য হিসেবে রান্নাঘরের উচ্ছিষ্টও দেওয়া যায়। প্রতি সপ্তাহে জাল টেনে মাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং মাছের গড় ওজনের সাথে মিলিয়ে খাদ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
(খ) নাইলোটিকার অতিরিক্ত পোনা সরানো :
নাইলোটিকা মাছ পুকুরের বদ্ধ পানিতে বাচ্চা দেয় এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর থেকে বছরে একাধিক বার বাচ্চা দেয়। সঙ্গত কারণেই পুকুর অতিরিক্ত পোনায় ভরে যায়। এর ফলে অধিক ঘনত্বে মাছ আশানুরূপ বড় হতে পারে না এবং খাদ্য সংকট দেখা দেয়। তাই জাল টেনে পোনার ঘনত্ব কমিয়ে ফেলতে হবে।
(গ) নাইলোটিকার অন্যান্য পরিচর্যা :
নাইলোটিকা মাছ খাবার ঠিকমত খাচ্ছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি দেখা যায় সকালের দিকে মাছ পানির ওপরে হা করে শ্বাস নিচ্ছে তখন বুঝতে হবে পানিতে অক্সিজেনের অভাব রয়েছে। এ অবস্থায় পুকুরে খাবার ও সার দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। এ সময় লাঠি দিয়ে পানিতে আঘাত করে, ঘনঘন জাল টেনে অথবা পুকুরে নেমে সাঁতার কেটে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এ্যারেটর ব্যবহার করেও কাজটি করা যেতে পারে।
(ঘ) নাইলোটিকা মাছ আহরন ও বাজারজাতকরণ :
নাইলোটিকা মাছ ৫ থেকে ৬ মাসে ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের হয়ে যায়। এমন ওজনের মাছ টানা বেড় জাল দিয়ে বাজারে বিক্রি করা যেতে পারে। আংশিক আহরণ পদ্ধতিতে শুধুমাত্র বড় মাছ গুলো ধরে জীবিত অবস্থায় বাজারে নিলে ভাল দাম পাওয়া যাবে। একবারের চাষে নাইলোটিকা মাছের উৎপাদন দাঁড়ায় বিঘা প্রতি ২৫০—৩০০ কেজি। তবে ব্যবস্থাপনা উন্নত করে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব।
নাইলোটিকা মাছের রোগ ব্যবস্থাপনা :
নাইলোটিকা মাছ অত্যন্ত শক্ত গড়নের হওয়ায় এর রোগবালাই তেমন একটা দেখা যায় না। তবে প্রতিকূল পরিবেশে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ পেতে পারে। শীতের শুরুতে নাইলোটিকা মাছ লেজ ও পাখনা পঁচা, আঁইস খসে পড়া ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়। তাই শীত শুরুর আগে শতাংশে ১ কেজি চুন পানিতে গুলে পুকুরে দিলে উপকার পাওয়া যায়। শীত মৌসুমের আগেই মাছ আহরণ করে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যান্য ব্যবস্থাপনা রাজপঁুটি মাছের অনুরূপ।
সূত্র:
নাইলোটিকার চাষ পদ্ধতি | ইউনিট ১ , পাঠ -১.৪ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র
কৃষি উন্নয়নে সমবায়ের ভুমিকা ও সমবায় আইন – বইটি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয়ের ইউনিট – ১৮, পাঠ – ১৮.৩ এর একটি পাঠ। কৃষি উন্নয়নে সমবায়ের ভূমিকা বাংলাদেশের কৃষির বর্তমান সমস্যা হলো- স্বপ্নজমি, অধিক জনসংখ্যা, জমি খন্ডে খন্ডে বিভক্ত হওয়ার উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা, উপকরণের ক্ষ্মতা, নিম্ন উৎপাদনশীলতা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রতিরোধে অক্ষমতা ইত্যাদি। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য কৃষকদের ব্যক্তিগত উদ্যোগ খুব একটা ফলসু হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কৃষি সমবায় একটি বিরাট ভূমিকা পালন করছে। নিম্নে বিস্তারিতভাবে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
কৃষি উন্নয়নে সমবায়ের ভুমিকা ও সমবায় আইন
ক) উৎপাদন বৃদ্ধি ও লভ্যাংশের সমবন্টন :
আমাদের কৃষকদের খন্ড খন্ড জমিগুলো একত্রিত করে যৌথ চাষাবাদ মাধ্যমে সঠিকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করা। ব্যয়বহুল কৃষি প্রযুক্তি যা কৃষকদের পক্ষে ব্যক্তিগতভাবে প্রচলন করা সম্ভব নয় যেমন গভীর নলকূপ স্থাপন, পানির পাম্প ক্রয়, স্বল্প খরচে ভূমি কর্ষণের জন্য ট্রাক্টর সংগ্রহের মতো অধিক পুজি বিনিয়োগের ক্ষেত্রসমূহ সমবায়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করা সহজ। ফলে উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব এবং সমবায়ের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে লভ্যাংশ নিজেদের মধ্যে সমবন্টনের মাধ্যমে পরস্পর লাভবান হওয়া।
খ) ঋণ প্রদান :
সমবায় সমিতির মাধ্যমে সহজ শর্তে প্রাতিষ্ঠানিক উৎসসমূহ থেকে ঋণ পাওয়া সহজ। ক্ষুদ্র চাষীরা ব্যক্তি উদ্যোগে ঋণ পাওয়ার জন্য মহাজন, ফড়িয়া বা অন্য অর্থাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে হয়রানি হওয়ার সম্ভাবনা লাঘব হয় ।
গ) সঞ্চয়ে উদ্ধুদ্ধ করা :
সমবায় সমিতির উদ্যোগে ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প গড়ে তোলার মাধ্যমে সদস্যদের একটি তহবিল গঠনে সাহায্য করে। এ তহবিল পরবর্তীতে নানান ধরণের আয় বর্ধক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হতে পারে।
ঘ) পণ্য বিক্রয় :
জমিতে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রয় করার ক্ষেত্রে ব্যক্তি কৃষক অধিকাংশ ক্ষেত্রে নায্যমূল্য পায় না। সমবায় সমিতির মাধ্যমে নায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করার মাধ্যমে লাভবান হওয়া সম্ভব।
ঙ) বীমা প্রবর্তন :
প্রাকৃতিক দূযোর্গে ক্ষুদ্র কৃষক প্রায়শই সর্বশান্ত হয়। এ ক্ষেত্রে সমবায় সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারী—বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে শস্য বীমা প্রবর্তন করে দূযোর্গকালীন ক্ষয়ক্ষতির ধকল সামলানো সম্ভব হয়।
চ) সমম্বিত সেচ ব্যবস্থার প্রর্বতন :
সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপন বা ভাড়াভিত্তিতে সময়মত সেচ দেয়া সম্ভব।
ছ) যান্ত্রিক চাষাবাদ প্রচলন :
ভূমি একত্রীকরণের মাধ্যমে স্বল্প খরচে যান্ত্রিক চাষাবাদ পদ্ধতি প্রর্বতন করে ফসলের উৎপাদন বহুগুন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
জ) কুটির শিল্পের প্রসার :
সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ গ্রহণ করে কৃষকরা ছোট ছোট কুটির শিল্প স্থাপন করে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করতে পারে।
ঝ) স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও নিরক্ষরতা দূরীকরণ :
সমবায় সমিতির গঠনের মাধমে গ্রামীণ জনপরিদ যেখানে চিকিৎসা সুবিধা অপ্রতুল সেখানে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে চিকিৎসা সুবিধা পৌছে দিতে পারে। তাছাড়া সমবায় সমিতির মাধ্যম বয়স্ক শিক্ষার প্রচলন করে নিরক্ষরতামুক্ত সমাজ গঠনে সহায়তা প্রদান করতে পারে।
সমবায় আইন:
কৃষি সমবায় সমিতিসমূহ সরকারের সমবায় আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। সমবায় আইনের বিভিন্ন ধারা—উপধারার মাধ্যমে সমিতির কার্যাবলী পরিচালিত হয়। সমবায় আইনের গুরুত্বপূর্ণ বিধিসমূহ হলো—
ক) কৃষি সমবায় বা সমিতির একটি নির্দিষ্ট নাম থাকবে।
খ) সমিতির একটি কার্যালয় থাকবে।
গ) সমবায় সমিতির গঠনতন্ত্র সমবায় অধিদপ্তর কতৃর্ক নিবন্ধিত হতে হবে।
ঘ) সমবায় সমিতির একটি ব্যবস্থাপনা থাকবে।
ঙ) সমিতির নিদিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গঠনতন্ত্রে উল্লেখ থাকবে।
চ) সমবায় সমিতির সদস্যদের চাদা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
সমবায় সমিতিগুলোর গঠনতন্ত্রে কিছু মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ করা একান্ত প্রয়োজনীয়। নিম্নে নীতিমালাসমূহের উপর আলোকপাত করা হলো —
ক) সহযোগিতার মনোভাব :
সদস্যগণের পারস্পারিক সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাবের উপর জোর দিতে হবে। কারণ এর উপর সমবায়ের সাফল্য বহুলাংশে নির্ভরশীল।
খ) একতা:
সদস্যগণের একতা সমবায়ের আসল শক্তি। একতার ভিত্তিতে কাজ করলে সাফল্য লাভ নিশ্চিত হবে।
গ) সাম্য :
সমিতির সদস্য নানান শ্রেণি পেশার হওয়াই স্বাভাবিক। তাই সকল সদস্যই সাম্যের ভিত্তিতে সমান অধিকারের নীতি অবলম্বনপূর্বক কাজ করবে।
ঘ) সততা :
সমিতির সদস্যদের সততা ও ন্যায়নীতির ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। সমিতির সাফল্য সততার উপর সার্বিকভাবে নির্ভরশীল।
ঙ) মিতব্যয়িতা :
সমিতির সদস্যদের মিতব্যয়ী হতে হবে। মিতব্যয়িতার অভ্যাসই দ্রুত উন্নতির জন্য সহায়ক হয়।
চ) গণতন্ত্র :
সমিতির সফল কাজকর্মে সমান সমানাধিকার থাকা আবশ্যক। এখানে কোন প্রকার বৈষম্য থাকলে সমিতির কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পালন সম্ভব হবে না।
কৃষি সমবায় এর ধারণা, উদ্দেশ্যে ও প্রকারভেদ – বইটি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয়ের ইউনিট – ১৮, পাঠ – ১৮.৩ এর একটি পাঠ।
কৃষি সমবায় এর ধারণা
কৃষি সমবায়ের ধারণা :
সমবায় হচ্ছে পারিবারিক সমঝোতা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে একত্রে কাজ করার জন্য স্বাধীনভাবে গড়ে তোলা একটি সংঘ বা সমিতি। কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে সবোর্চ্চ মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে যে সমবায় পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তাকে কৃষি সমবায় বলে। ব্যক্তি উদ্যোগের তুলনায় কিছু সংখ্যক সমমনা ব্যক্তির যৌথ উদ্যোগে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন সহজতর হয় বিধায় কৃষি সমবায়ের ধারণা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।
কৃষি সমবায় আধুনিক কৃষি কাজের প্রয়োজনীয় সফল উপকরণ সংগ্রহ ও ব্যবহারে কৃষকদেরকে অধিকহারে সক্ষম করে তোলার মাধ্যমে কৃষিকাজে সর্বোচ্চ সফলতা এনে দিতে পারে। কৃষি সমবায় এমন একটি সমম্বিত কার্যক্রম যা কৃষি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন এর সফল হিসাব রক্ষা করে এবং প্রত্যেক সদস্যের বিনিয়োগের পরিমান অনুযায়ী মুনাফা বন্টনের দায়িত্বও পালন করে। সমবায়ের এই ধারণাকে আনুষ্ঠানিক রূপ প্রদানে বিভিন্ন সমাজ বিজ্ঞানীরা নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।
যেমন কালভার্ট এর মতে সমবায় হলো একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে মানুষ নিজেদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি সাধনের জন্য স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে সমঅধিকারের ভিত্তিতে একে অন্যের সহযোগিতা করে। অন্যদিকে ড. কে.এল. কাজুর্র মতে — ”সমবায় হলো এমন একটি সাংগঠনিক তৎপরতা যা আর্থিকভাবে শোচনীয় ব্যত্তিদের দ্বারা গঠিত হয় এবং তারা ব্যক্তি লাভের আশায় কাজ না করে সার্বিকভাবে সবার আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করে”। তাই সমবায়ের মূল মন্ত্র হচ্ছে ”সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে”।
কৃষি সমবায়ের উদ্দেশ্যে কৃষি সমবায়ের মূল উদ্দেশ্য হলো সমবায়ের মূলনীতির ভিত্তিতে সংগঠিত কৃষকদেরকে আর্থ—সামজিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলা । কৃষি উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন সমবায়ের ভিত্তিতে পরিচালিত করে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের নায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে কৃষিকাজে গতিশীলতা আনয়ন করা। কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নের সর্বোচ্চ সুবিধা কৃষকদের জন্য নিশ্চিত করা।
কৃষি সমবায়ের প্রকারভেদ:
কৃষিজীবি মানুষদের নিয়ে যে ধরণের সমবায় সংগঠন তৈরী করা হয় তাদেরকে কৃষি সমবায় সমিতি বলে। কৃষি সমবায় তিন ধরণের—
ক) কৃষি উৎপাদন সমবায় সমিতি:
কৃষির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত বা নিয়োজিত কৃষক। ব্যক্তিবর্গ সমবায়ে গঠিত সমবায়কে কৃষি উৎপাদন সমবায় সমিতি বলে। সহজভাবে কৃষিউপকরণ সংগ্রহ, উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন, পশু সম্পদের উন্নয়ন প্রভৃতি কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য কৃষি উৎপাদন সমবায় সমিতি গঠিত হয়।
খ) সেবামূলক সমবায় সমিতি:
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উপকরণ সংগ্রহ যেমন— ভূমি কর্ষন যন্ত্রপাতি (পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, কীটনাশক ছিটানোর যন্ত্র), সেচের যন্ত্রপাতি (শক্তিচালিত পানির পাম্প), এবং কৃষি ঋণ সংগ্রহের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এ ধরণের সমিতি গঠিত হয়।
গ) কৃষি বিপণন সমবায় সমিতি:
কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের নায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের জন্য এই ধরণের সমবায় সমিতি গঠিত হয়। এ সমিতি কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করে থাকে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে গাছ লাগানোর জন্য স্থান ভিত্তিক তালিকা প্রণয়ন করে শিক্ষার্থীরা ক্লাশে উপস্থাপন করবেন।
সারসংক্ষেপ:
সংঘবদ্ধভাবে কৃষি কাজ করে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনই হলো সমবায়ের মূল ধারণা। সমবায়ের মূলনীতির ভিত্তিতে সংগঠিত কৃষকদেরকে আর্থ—সামাজিকভাবে স্বনির্ভর করাই সমবায়ের প্রধান উদ্দেশ্য। কৃষি ও সমাজের সঠিক উন্নতি বিবেচনায় বিভিন্ন ধরণের সমবায় পদ্ধতির প্রচলন করা হয়েছে। যেমন কৃষি উৎপাদন সমাবায় সমিতি, কৃষি বিপণন সমবায় সমিতি, সেবামূলক সমবায় সমিতি ইত্যাদি।
এই পাঠটি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয়ের ইউনিট ১৮, পাঠ ১৮.১-এর অন্তর্ভুক্ত। কৃষি ঋণ বলতে কৃষকরা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন অধিক উৎপাদনশীল বীজ, সার, বালাইনাশক ইত্যাদি ক্রয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উৎস থেকে শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য গ্রহণ করা অর্থকে বোঝানো হয়। সহজভাবে বলতে গেলে, কৃষি ঋণ হলো কৃষক কর্তৃক কৃষি সম্পর্কিত উপাদান ও প্রযুক্তি ক্রয়ের জন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কাছে নেওয়া ঋণ।
কৃষি ঋণ ও সমবায়
কৃষি ঋণের প্রয়োজন কেবলমাত্র বীজ-সার কেনার জন্য সীমাবদ্ধ নয়; এটি কৃষি ভূমির উন্নয়ন, ফসলের সঠিক সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণসহ কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত যাবতীয় কার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ, কৃষকরা উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে সমর্থ হতে এই ঋণের উপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশের কৃষকরা অধিকাংশই আর্থিকভাবে দুর্বল। ফলে নিজেদের সঞ্চিত অর্থ থেকে উৎপাদনের প্রয়োজনীয় খরচ বহন করতে পারেন না। এজন্য তারা বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করেন। তবে দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের উৎসগুলো সাধারণত অসংগঠিত, অনিশ্চিত এবং অত্যন্ত শোষণমূলক হওয়ায় কৃষকদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। এজন্য কৃষকরা বাধ্য হয়ে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ উৎসের দিকে আকৃষ্ট হন, যেখানে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করা হয়।
কৃষিঋণেরপ্রাতিষ্ঠানিকউৎসসমূহ
উৎসেরধরন
উদাহরণ
ভূমিকাওবৈশিষ্ট্য
দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক উৎস
সরকারি ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংক, সমবায় সমিতি, অনুমোদিত এনজিও
কৃষি উন্নয়নে প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান, দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের জন্য ঋণ ও অনুদান দেয়।
প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষকরা সুষ্ঠু ও সময়মত অর্থসাহায্য পেয়ে তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন। এছাড়া, এসব প্রতিষ্ঠান কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, পরামর্শ এবং আধুনিক প্রযুক্তি প্রবর্তনেও ভূমিকা রাখে, যা কৃষি উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এইভাবে, কৃষি ঋণ কৃষকের জন্য উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর এক অপরিহার্য হাতিয়ার। দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে কৃষি ঋণের সঠিক ব্যবহার এবং বিস্তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কৃষকদের আধুনিক ও কার্যকর কৃষি পদ্ধতি অনুসরণে সহায়তা করা এবং ঋণের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করাই বাংলাদেশের কৃষি খাতকে শক্তিশালী করার অন্যতম পথ।
কৃষি ঋণের ধরণ:
কৃষি উৎপাদন একটি ধারাবাহিক এবং সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। জমি চাষের শুরু থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ, ফসলের সংরক্ষণ এবং বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে কৃষকের অর্থের প্রয়োজন পড়ে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ফসল নষ্ট হলে জীবন ধারনের জন্যও কৃষককে ঋণ নিতে হতে পারে। যাইহোক, কৃষক যেকোনো উদ্দেশ্যে ঋণ গ্রহণ করুক না কেন, সময়ের ভিত্তিতে কৃষি ঋণ প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত হয়—
ক) স্বল্পমেয়াদি
খ) মধ্যমেয়াদি
গ) দীর্ঘমেয়াদি
নিচে এই তিন ধরণের ঋণের সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদান করা হলো—
ক) স্বল্পমেয়াদি কৃষি ঋণ
স্বল্পমেয়াদি ঋণ বলতে সাধারণত এক বছরের বা বারোমাস পর্যন্ত সময়সীমার ঋণ বোঝায়। এ ধরনের ঋণ কৃষকের দৈনন্দিন উৎপাদন কর্মকাণ্ড ও ছোটখাটো খরচের জন্য প্রয়োজন হয়। প্রধানত নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যে এই ঋণ গ্রহণ করা হয়:
১. সাময়িক ঋণ: প্রধানত ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অথবা ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ যেমন বীজ, সার, কীটনাশক, বালাইনাশক ক্রয়ের জন্য এ ঋণ প্রদান করা হয়।
২. উপকরণ সংগ্রহের ঋণ: কৃষি কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহে যেমন সার, বীজ, কীটনাশক, আগাছানাশক ইত্যাদি কেনার জন্য স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয়া হয়।
৩. অন্যান্য কৃষিকাজের ঋণ: চাষাবাদ ছাড়াও মৎস্যচাষ, হাঁস-মুরগি পালন, গবাদিপশু পালন ইত্যাদি কৃষি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রমের জন্যও স্বল্পমেয়াদি ঋণ গ্রহণ করা হয়।
খ) মধ্যমেয়াদি কৃষি ঋণ
মধ্যমেয়াদি ঋণ সাধারণত এক বছর থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে পরিশোধের জন্য হয়। এ ধরনের ঋণ কৃষকের উন্নত ও আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় ও ব্যবহারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর কিছু ব্যবহারের ক্ষেত্র হলো:
১. কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়: লাঙ্গল, ট্রাক্টর, পাওয়ারট্রিলার, গরু-মহিষ ইত্যাদি কেনার জন্য এই ঋণ গ্রহণ করা হয়।
২. কৃষি যান্ত্রিকীকরণ: ভূমি কর্ষণ যন্ত্র ছাড়াও শস্য মাড়াই যন্ত্র, গভীর নলকূপ ইত্যাদি ক্রয় ও স্থাপনের জন্য মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবহার করা হয়।
৩. পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন: কৃষি উপকরণ এবং উৎপাদিত পণ্য পরিবহনের জন্য ছোট ট্রাক, অটোরিক্সা, ভ্যানগাড়ি ইত্যাদি যানবাহন ক্রয়ের জন্য এ ঋণ প্রদান করা হয়।
গ) দীর্ঘমেয়াদি কৃষি ঋণ
দীর্ঘমেয়াদি ঋণ হলো পাঁচ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে পরিশোধযোগ্য ঋণ, যা কৃষকের বড় ধরনের বিনিয়োগের জন্য ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে রয়েছে:
জমির সেচ ব্যবস্থা উন্নয়ন
পানি নিষ্কাশনের সমস্যা সমাধান
ভূমি উন্নয়ন
কৃষি খামারের অবকাঠামো নির্মাণ
অন্যান্য স্থায়ী উন্নয়নমূলক কাজ
দীর্ঘমেয়াদি ঋণের মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং জমির স্থায়ী উন্নয়ন সাধিত হয়।
কৃষি ঋণের ধরণের তুলনামূলক সারাংশ
ঋণের ধরণ
মেয়াদ
প্রধান ব্যবহার ক্ষেত্র
উদাহরণ
স্বল্পমেয়াদি
১ বছর বা তার কম
ফসল উৎপাদন, সার-বীজ-কীটনাশক ক্রয়, ছোটখাটো কৃষিকাজ
বীজ ক্রয়, সার সংগ্রহ, হাঁস-মুরগি পালন
মধ্যমেয়াদি
১ থেকে ৫ বছর
কৃষি যন্ত্রপাতি, যান্ত্রিকীকরণ, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন
ট্রাক্টর ক্রয়, নলকূপ স্থাপন
দীর্ঘমেয়াদি
৫ বছর বা তার বেশি
সেচ ব্যবস্থা, অবকাঠামো নির্মাণ, ভূমি উন্নয়ন
সেচ পাম্প, খামারের স্থায়ী কাঠামো নির্মাণ
এই ধরণের ঋণগুলো কৃষকের বিভিন্ন সময়ের ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা করা হয়, যা কৃষি খাতের সুস্থ ও স্থায়ী উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। যথাযথ ঋণ ব্যবস্থাপনা কৃষি উৎপাদন বাড়াতে ও কৃষকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কৃষি ঋণের উৎসসমূহ:
বাংলাদেশের কৃষকেরা সাধারণত দুটি প্রধান উৎস থেকে কৃষি ঋণ গ্রহণ করেন— প্রতিষ্ঠানিক এবং অপ্রতিষ্ঠানিক। নিচে এই উৎসগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করা হলো।
ক) প্রতিষ্ঠানিক উৎসসমূহ
কৃষি ঋণ সরবরাহে প্রতিষ্ঠানিক উৎসগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
১. বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি কৃষকদের ঋণ প্রদান না করলেও, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ও অন্যান্য ঋণ প্রদানকারী সংস্থাকে অল্প সুদে ঋণ প্রদান করে কৃষি ঋণ বিতরণের সহায়তা করে থাকে। বাংলাদেশের ‘কৃষি ঋণ বিভাগ’ এবং ‘কৃষি ঋণ স্থিতিশীলকরণ বিভাগ’ এ কাজে নিয়োজিত।
২. বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক দেশব্যাপী ছয়শোরও অধিক শাখার মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সরাসরি কৃষকদের বিভিন্ন মেয়াদের কৃষি ঋণ প্রদান করে থাকে।
৩. গ্রামীণ ব্যাংক গ্রামীণ ব্যাংক একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হলেও বিশেষভাবে পল্লী অঞ্চলের দরিদ্র কৃষকদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঋণ প্রদান করে থাকে।
৪. কর্মসংস্থান ব্যাংক দেশব্যাপী কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ সরবরাহ করে থাকে।
৫. সমবায় ব্যাংক বিভিন্ন ধরণের সমবায় সমিতির মাধ্যমে কৃষি ঋণ সরবরাহ করে থাকে।
৬. বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) বিআরডিবির প্রধান কাজ হলো গ্রামীণ সমবায় সমিতির মাধ্যমে কৃষকদের সংগঠিত করে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা। তারা উপজেলা/থানা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি গঠন করে কৃষকদের মূলধন গড়ে তোলার জন্য শেয়ার ক্রয় এবং ক্ষুদ্র সঞ্চয় সুবিধা প্রদান করে। পাশাপাশি, সমবায় কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করাও তাদের কর্মকাণ্ডের অংশ।
খ) অপ্রতিষ্ঠানিক উৎসসমূহ
অপ্রতিষ্ঠানিক উৎসসমূহ কৃষকদের জন্য ঋণের সহজলভ্যতা এবং দ্রুততর সেবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এ উৎসগুলোতে ঋণের শর্তকাঠিন্য, উচ্চ সুদহার ও অনিশ্চয়তা বেশি থাকে। প্রধান অপ্রতিষ্ঠানিক উৎসগুলো হলো:
১. আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব ঋণের সহজলভ্যতা ও সাধারণত সুদবিহীন হওয়ার কারণে কৃষকরা আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ নেয়। যদিও এটি অনেক সময় সীমিত পরিমাণে ও সকলের জন্য সম্ভব হয় না।
২. গ্রাম্য মহাজন ও ব্যবসায়ী অতিরিক্ত জরুরি অর্থের প্রয়োজনে কৃষকরা মহাজন ও গ্রাম্য ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঋণ নেন, যারা সাধারণত স্থাবর সম্পত্তি বা গহনা বন্ধক রেখে উচ্চ সুদে ঋণ প্রদান করে। এর ফলে কৃষকরা প্রায়ই শোষণের শিকার হন।
৩. দালাল ও ব্যাপারী কৃষি পণ্যের বাজারে দালাল ও ব্যাপারীরা কৃষকদের ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে থাকেন, তবে অত্যধিক সুদ ধার্য করেন। তারা কৃষকদের কাছ থেকে ফসল আগাম অল্পমূল্যে কিনে নেয়, ফলে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন এবং উৎপাদন খরচের তুলনায় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন।
যদিও অপ্রতিষ্ঠানিক উৎসগুলো সহজ ও দ্রুত ঋণ দেয়ার সুবিধা প্রদান করে, তবুও উচ্চ সুদ ও শোষণমূলক শর্তের কারণে কৃষকদের জন্য প্রতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করাই অধিক উপকারী ও টেকসই পথ। সুতরাং, কৃষি উন্নয়নের জন্য ঋণ প্রাপ্তিতে প্রতিষ্ঠানিক উৎসের ভূমিকা বৃদ্ধি করা ও অপ্রতিষ্ঠানিক ঋণ ব্যবস্থার নেতিবাচক দিক হ্রাস করা জরুরি।
কৃষি ঋণের প্রয়োজনীয়তা :
বাংলাদেশের কৃষকগণ অধিকাংশই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হওয়ায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সঠিক সময়ে নিজস্ব উৎস থেকে সংগ্রহ করতে সক্ষম হন না। এর ফলে কৃষি কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং ফসল উৎপাদনে প্রতিকূল প্রভাব পড়ে। সুতরাং কৃষি ঋণের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য। নিচে কৃষি ঋণের প্রধান প্রয়োজনীয়তাগুলো বর্ণনা করা হলো:
ক) কৃষি উপকরণ ক্রয় ও কৃষিকাজের জন্য ঋণ
কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বীজ, সার, কীটনাশক, যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং ফসল সংগ্রহ, মাড়াই, ঝাড়াই, শুকানো ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার জন্য ঋণের প্রয়োজন পড়ে। এসব কাজে পর্যাপ্ত তহবিল ছাড়া কার্যক্রম সচল রাখা সম্ভব নয়।
খ) ফসলের সুষ্ঠু বিপণন ও সংরক্ষণ
উৎপাদিত কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার জন্য ফসল গুদামজাতকরণ, পরিবহণ ও বাজারজাতকরণে যথাযথ বিনিয়োগ করতে হয়। এর জন্য কৃষকদের কৃষি ঋণের মাধ্যমে অর্থায়ন প্রয়োজন।
গ) প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলার জন্য ঋণ
প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, খরা, ঝড় ইত্যাদির কারণে ফসল নষ্ট হলে কৃষকদের দ্রুত পুনরুদ্ধার ও উৎপাদন পুনরায় শুরু করার জন্য ঋণ গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
ঘ) পারিবারিক ও দৈনন্দিন ব্যয় মেটানোর জন্য ঋণ
ফসল উৎপাদনের সময় কৃষকরা পরিবারের অন্যান্য দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতে ঋণের সাহায্য নেন।
ঙ) ঋণ পরিশোধের জন্য সময়োপযোগী ঋণ ব্যবস্থা
কৃষকগণ উৎপাদন থেকে আয় পাওয়ার পর ঋণ পরিশোধ করে থাকেন, এজন্য ঋণের সময়সীমা ও শর্তাবলী কৃষকদের অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন।
ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা :
ক্ষুদ্র ঋণ বাংলাদেশে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য একটি টেকসই ব্যাংকিং ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। কারণ এটি সেই সমস্ত মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে যায়, যাদের কাছে প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার সেবা পৌছানো সম্ভব হয় না। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রায় তিন কোটি মানুষ ক্ষুদ্র ঋণের সুবিধা গ্রহণ করে থাকে। ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি ঋণগ্রহীতাদের উৎপাদনশীল খাতগুলোতে বিনিয়োগ এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদান করে থাকে।
প্রথাগত ব্যাংকিং ব্যবস্থার তুলনায় ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের মূল পার্থক্য হলো এটি দরিদ্র মানুষের উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে সরাসরি সংযুক্তি ঘটিয়ে তৃণমূল অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনে। ক্ষুদ্র ঋণের ফলে গরীব জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয় এবং একটি সহনশীল অর্থনৈতিক পরিবেশ গড়ে ওঠে। যদিও এটি দারিদ্র বিমোচনের একমাত্র উপায় নয়, তবুও যথাযথ ব্যবহারে অনেক ঋণগ্রহীতা দারিদ্র চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব হোসেন পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ১৯৮৮ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে গ্রামীণ দারিদ্রতা প্রতি বছর প্রায় ১% হারে কমেছে। অনেকের নেতিবাচক অভিমতকে উপেক্ষা করে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে নারীরা এখন আর্থিক স্বাধীনতা লাভ করছে এবং পরিবারে পুরুষ সদস্যদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রও সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শিক্ষার প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধিতেও ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
ক্ষুদ্র ঋণের সুবিধাভোগী পরিবারে জন্মনিয়ন্ত্রণ, ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি এবং শিশুপুষ্টির উন্নতি ঘটেছে। এ ছাড়াও শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০১৫ সালে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) জানিয়েছে, বাংলাদেশে সার্টিফাইড ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থার সংখ্যা ৬৫৯। এসব সংস্থাকে শাখার সংখ্যা ও কার্যক্রমের পরিধি অনুযায়ী ছোট, মাঝারি, বড় ও বৃহৎ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।
এমআরএ কর্তৃক ক্ষুদ্র ঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার ২৭% নির্ধারণ করলেও, পিকেএসএফ-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহ ২৫% এর বেশি সুদ নেয় না। বর্তমানে পিকেএসএফ-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ২২০, এবং বাকী ৪৩৯ টি সংস্থা সুদহার ২৭% হিসেবে চালিয়ে যাচ্ছে।
ক্ষুদ্রঋণেরধরণ
ক্ষুদ্র ঋণ বলতে গ্রামীণ ও ক্ষুদ্র শিল্প বা কুটির শিল্প স্থাপনের জন্য প্রদত্ত ঋণ বোঝানো হয়। এছাড়াও কৃষিকাজ, পশুপালন, মৎস্য চাষ, কুটির শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ঋণ নেওয়া হয়। ক্ষুদ্র ঋণ সাধারণত বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে সরবরাহ করা হয়, যেখানে অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলি অধিক সুদহার আরোপ করে থাকায় অনেক সময় মানুষের শোষণ ঘটে।
প্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলো এ ধরনের শোষণ থেকে মুক্তি দেয় এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে মানুষের আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে সহায়তা করে। যদিও ক্ষুদ্র ঋণের সুদের হার তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি, তার পেছনে কারণ হলো এ ঋণ কর্মসূচীগুলো স্বাস্থ্য বীমা, শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ ইত্যাদি সেবামূলক কার্যক্রমের জন্য অর্থ সঞ্চয় করে রাখে। দেশে এখনও সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা চালু না হওয়া এবং শিক্ষার সর্বস্তরের সুযোগ সবার জন্য না থাকায় ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমকে বিকল্প হিসেবে দেখা হয় না।
সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী zwar দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়ক হলেও ক্ষুদ্র ঋণের বিকল্প নয়। বরং মহাজনীর ঋণই ক্ষুদ্র ঋণের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়, যা সাধারণত উচ্চ সুদে গরীবদের শোষণ করে। মহাজনীরা ঋণ খেলাপির ক্ষেত্রে আগাম শ্রম বা ফসল বিক্রয়ের সুবিধা নিয়ে থাকে, যা ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের নিয়মিত সংস্থাগুলো থেকে আলাদা।
ক্ষুদ্রঋণপাওয়ারশর্তসমূহ
ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণের জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পালন করতে হয়। সেগুলো হলো—
১. ঋণগ্রহীতার মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্তর্গত হওয়া আবশ্যক।
২. ঋণগ্রহীতার অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ থাকা চলবে না।
৩. ঋণগ্রহীতা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং সম্মানিত হতে হবে।
৪. ঋণ নেওয়ার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সুস্থ ও স্বাভাবিক মানসিক অবস্থা থাকতে হবে।
৫. কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত ব্যক্তিকে ঋণ প্রদান করা হয় না।
৬. ঋণগ্রহীতাকে ঋণ পরিশোধের শর্তাবলী মেনে চলার মানসিকতা রাখতে হবে।
৭. ঋণ গ্রহণযোগ্য প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে হবে।
৮. যুব ঋণের ক্ষেত্রে আগ্রহীকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে।
ক্ষুদ্র ঋণ বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামাজিক উন্নয়নে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। এর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ও প্রশিক্ষণ প্রদান অত্যাবশ্যক।
ফসল বিন্যাস নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয়ের ১৭ নং ইউনিটের ১৭.৬ নং পাঠ।
ফসল বিন্যাস :
কোন এলাকায় প্রতি বছর ১২ মাস সময়ে মৌসুমভিত্তিক ফসল উৎপাদনে অনুসরণকৃত ধারাকে ফসল বিন্যাস বলা হয়। ফসল বিন্যাসকে কোন এলাকার শস্যোৎপাদন ধারা বা শস্যচাষ বলা হয়। কোন এলাকার খরিপ—১ (১৬ ফেব্রুয়ারি—১৫ জুন) মৌসুমে পাট, খরিপ—২ (১৬ জুন—১৫ অক্টোবর) মৌসুমে আমন ধান ও রবি (১৬ অক্টোবর—১৫ ফেব্রুয়ারি) মৌসুমে গম আবাদ হলে উক্ত এলাকার ফসল বিন্যাস: পাট — আমন ধান — গম। ফসল বিন্যাস দেশের সকল এলাকায় একই রকম নয়। ফসল বিন্যাসের এ ভিন্নতা অনেকগুলি উপাদান দ্বারা নির্ধারিত বা প্রভাবিত হয়ে থাকে।
প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানগুলিকে প্রধানত ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়।
ক) জলবায়ুগত উপাদান
খ) মৃত্তিকাগত উপাদান
গ) আর্থ—সামাজিক উপাদান
জলবায়ুগত’ উপাদান :
সাধারণত কোন একটি ফসল তার চাহিদা অনুযায়ী তাপমাত্রা, পানি, সূর্যালোক, দিবাদৈর্ঘ্য, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি জলবায়ুর উপাদানসমূহ যে অঞ্চলে পায় সেই এলাকাতেই অভিযোজিত হয়ে থাকে। এলাকা ও মৌসুমভিত্তিক অভিযোজিত/খাপ খাওয়ানো ফসলসমূহ হতে অন্যান্য উপাদান বিবেচনায় কিছু ফসল নির্বাচিত হয়ে যায়। রবি মৌসুমে দেশের উত্তরাঞ্চলে নিম্নতাপমাত্রায় গম উৎপাদন ভালো হওয়ায় ঐ অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকার ফসল বিন্যাসে গম ¯ান ’ পেয়েছে।
মৃত্তিকাগত উপাদান :
কোন ফসলের সুষ্ঠু—স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও সর্বোচ্চ ফলনের সক্ষমতা নির্ভর করে প্রয়োজনীয় জলবায়ুগত পরিবেশ ও উপযুক্ত মাটির উপর। জলবায়ুগত’ উপাদান অনুকূল হলেও মাটির গুণাগুণ ভালো না হলে উক্ত ফসল কাঙ্খিত ফলন দিতে ব্যর্থ হয়। মাটির গুণাগুণ, বন্ধুরতা, বুনট, আর্দ্রতা, লবণাক্ততা, অম্লমান (ঢ়ঐ), খাদ্যোৎপাদনের প্রাপ্যতা প্রভৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। চর এলাকার মাটি হালকা বুনট হওয়ায় সাধারণত ঐ সকল এলাকার ফসল বিন্যাসে তরমুজ, বাদাম, মিষ্টি আলু জাতীয় ফসল দেখা যায়। অম্লীয় মাটিতে চা, আনারস ভালো হয়।
উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ত মাটিতে সব ধরনের ফসল জন্মায় না। তবে নারিকেল, সুপারী, স্থানীয় জাতের ধান চাষ হয়। উচু বা মাঝারী উচু এলাকায় চাষাবাদের জন্য অনেক ফসল নির্বাচনের সুযোগ থাকলেও হাওড় বা নীচু এলাকায় জলি আমন ছাড়া অন্য ফসল লাগানোর সুযোগ থাকে না।
আর্থ-সামাজিক উপাদান :
কোন এলাকার জলবায়ু ও মাটি অনেক ফসলের জন্য অনুকূল হলেও কিছু ফসল ঐ এলাকার কৃষকরা নির্বাচন করে যার সাথে উক্ত এলাকায় জনগণের আর্থিক ও সামাজিক কিছু উপাদান জড়িত। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য, এলাকাভিত্তিক ফসলের চাহিদা, বাজারমূল্য, বিপনন ব্যবস্থা, কৃষকের আর্থিক অবস্থা, ফসল আবাদের উপকরণের প্রাপ্যতা, ঋণ ব্যব¯া, ফসল সংরক্ষণ সুবিধা, পরিবহণ সুবিধা, খাদ্যাভাস, সরকারী নীতিমালা, প্রযুি’ ক্তগত সহযোগিতা প্রভতি।
এক ৃ সময় এ দেশের অধিকাংশ এলাকায় ফসল বিন্যাসে খরিপ—১ মৌসুমে পাট থাকলেও এখন কম। কারণ আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় এবং বাজারমূল্য কম হওয়ায় কৃষক পাট চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে পাট শস্যোৎপাদন ধারা থেকে বাদ পড়েছে।
ভাত নির্ভর খাদ্য তালিকার জন্য প্রায় সব এলাকায় ধান একটি সাধারণ ফসল। কৃষক তার নিজের পারিবারিক খাদ্য নিশ্চয়তার জন্য ধান নির্বাচন করে থাকে। এলাকার কৃষকদের আর্থিক অবস্থা ভালো হলে লাভজনক যে কোন ফসল চাষের উদ্যোগ নিতে পারে কিন্তু আর্থিক সংকট থাকলে কম পুজিতে হয় এমন ফসলই ঐ এলাকায় চাষাবাদ করতে দেখা যায়। কোল্ডস্টোরেজ থাকলে ঐ সকল এলাকায় কৃষকরা আলু চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে থাকে। শহরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ফসল বিন্যাসে লাভজনক শাকসবজি অন্তভুর্ক্ত হয়ে থাকে।
ফসল বিন্যাসের সুবিধা ও অসুবিধা :
এলাকার জলবায়ু, মাটি ও চাহিদা বিবেচনা করে লাভজনক ফসল নির্বাচনের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। প্রচলিত ফসল বিন্যাস অবলম্বনে অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব হয় না।
ফসল ‘বিন্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি :
এলাকার জলবায়ু ও মৃত্তিকা দ্বারা অভিযোজিত ফসলসমূহের মধ্যে হতে কয়েকটি ফসল ‘বিন্যাসে অন্তভুর্ক্ত হয়ে থাকে। এর জন্য আর্থ—সামাজিক উপাদানসমূহই মূলত দায়ী। যার কারণে ফসল ‘বিন্যাসে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। কোন এলাকার জন্য অধিকসংখ্যক লাভজনক ফসল নির্বাচনের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে উচ্চ ফলনশীল আলোক নিরপেক্ষ জাত উদ্ভাবন, আধুনিক প্রযুক্তি হস্তান্তর, ঋণসুবিধা, বাজার ব্যব¯ার উন্নয়ন, ’ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, গুদামঘর তৈরি, খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনয়ন করতে হবে। যা মানুষের সুষম খাবার নিশ্চিত করে এলাকার আর্থ—সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে।
জমির প্রকার বা ধারা অনুসারে আমার দেশে ফসল’ বিন্যাসের উদাহরণ দেয়া হলো—
কৃষি, কৃষি শিক্ষা, কৃষি প্রশিক্ষণ, কৃষি শিল্প, কৃষি গবেষণা