Category Archives: শাকসবজি

শাকসবজি

বাঁধাকপি চাষের সঠিক পদ্ধতি ও কার্যকরী পরামর্শ

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বাঁধাকপি (Brassica oleracea var. capitate) একটি জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর কপিজাতীয় শীতকালীন সবজি। এর মাথায় ঘনভাবে বিন্যস্ত পাতা খাওয়ার উপযোগী এবং এটি রান্না, সালাদ, ও আচারসহ নানা খাদ্যে ব্যবহৃত হয়। বাঁধাকপি চাষ তুলনামূলক সহজ ও লাভজনক—তবে সঠিক জাত, পদ্ধতি ও যত্ন না নিলে ফলন কমে যেতে পারে। এই নিবন্ধে বাঁধাকপির চাষাবাদ পদ্ধতি, জাত নির্বাচন, সার ব্যবস্থাপনা, রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ, ও সংগ্রহ কৌশল বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

 

 

আবহাওয়া ও মাটি

আবহাওয়া: বাঁধাকপি মূলত শীতপ্রধান ফসল। সর্বোত্তম ফলনের জন্য তাপমাত্রা ১৫–২৫°C উপযুক্ত। অতিরিক্ত তাপমাত্রা পাতা বাঁধা কমিয়ে দেয়।
মাটি: দোঁআশ বা বেলে দোঁআশ মাটি সর্বোত্তম।
pH মান: ৫.৫–৬.৫ হলে ভালো ফলন দেয়।
জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না, তাই সঠিক নিকাশী ব্যবস্থা থাকতে হবে।

 

জাত নির্বাচন

বাঁধাকপির উৎপাদনে জাত নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ ফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী জাত বেছে নিতে হবে।

জাতের নাম বৈশিষ্ট্য ফলনের সময়
গোল্ডেন একর জনপ্রিয় দেশি জাত, বড় মাথা, সহজ পরিচর্যা ৭৫–৮৫ দিন
প্রাইড অফ ইন্ডিয়া বিদেশি জাত, শক্ত মাথা, ভালো সংরক্ষণযোগ্যতা ৮৫–৯৫ দিন
স্নোবল উচ্চ উৎপাদনশীল, শ্বেতবর্ণ ৭০–৮০ দিন
শ্রাবণ মাঝারি মাথা, সংক্ষিপ্ত মেয়াদ ৬৫–৭৫ দিন

 

 

 

চারা উৎপাদন

চারা উৎপাদনই বাঁধাকপি চাষের ভিত্তি। ভালো চারা মানে সুস্থ গাছ।

  • বীজতলা প্রস্তুতি: ১ মিটার × ৩ মিটার আকারে উঁচু বীজতলা তৈরি করুন। প্রতি বীজতলায় ৪–৫ কেজি গোবর, ৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি ও ৫০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
  • বীজ বপন: ১ সেন্টিমিটার গভীর গর্তে বীজ বপন করে পাতলা করে মাটি বা চিটাগুড়-জল মিশ্রিত ছাই দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
  • সেচ: বপনের পর হালকা সেচ। এরপর প্রতি ২–৩ দিন অন্তর মাটি আর্দ্র রাখতে হবে।
  • চারা প্রস্তুত: ৩০–৪৫ দিন পর ৪–৫টি পাতা হলে চারা রোপণের উপযোগী হয়।

 

জমি প্রস্তুতি ও সার প্রয়োগ

জমি প্রস্তুতি: চাষের আগে জমি ২–৩ বার গভীরভাবে চাষ ও মই দিয়ে সমান করুন। আগাছা পরিষ্কার করুন।

জৈব সার:

  • গোবর/কম্পোস্ট: ১০–১৫ টন/বিঘা
  • ভার্মি কম্পোস্ট: ১–২ টন/বিঘা (ঐচ্ছিক)

রাসায়নিক সার (বিঘা প্রতি):

  • ইউরিয়া: ১০–১২ কেজি
  • টিএসপি: ২০–২৫ কেজি
  • এমওপি: ১৫–২০ কেজি

👉 সার প্রয়োগের সময় ২ ধাপে ইউরিয়া প্রয়োগ করুন:
১ম ধাপ – চারা রোপণের ১৫–২০ দিন পর,
২য় ধাপ – ৪৫–৫০ দিন পর।

 

চারা রোপণ ও পরিচর্যা

  • দূরত্ব: গাছ থেকে গাছ – ৩০–৪০ সেমি, সারি থেকে সারি – ৪৫–৬০ সেমি
  • গোড়ায় মাটি চাপা: প্রথমবার ৩০–৩৫ দিন, দ্বিতীয়বার ৬০–৬৫ দিন পর। এটি পাতাকে ভালোভাবে বাঁধতে সহায়তা করে।
  • সেচ:
    • রোপণের পর হালকা সেচ
    • পরবর্তী ৪৫ দিন পর্যন্ত প্রতি ৭–১০ দিন পরপর সেচ
    • অতিবর্ষণে জলাবদ্ধতা এড়িয়ে চলুন
  • আগাছা দমন:
    • প্রথম ১৫–২০ দিনে আগাছা পরিষ্কার
    • প্রয়োজন অনুযায়ী আরও ২–৩ বার পরিষ্কার
  • মালচিং (Mulching): খড় বা শুকনো ঘাস দিয়ে মাটি ঢেকে দিলে মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকে ও আগাছা কমে।

 

রোগবালাই ও প্রতিকার

সাধারণ রোগ:

রোগের নাম উপসর্গ প্রতিকার
ডাউনি মিলডিউ পাতায় হলুদ ও সাদা ছোপ ডাইথেন এম-৪৫ বা রিডোমিল স্প্রে করুন
ব্ল্যাক রোট পাতার কিনারা কালো ও শুকিয়ে যায় রোগাক্রান্ত গাছ তুলে ফেলুন, বীজ শোধন করুন
অ্যানথ্রাকনোজ পাতা ও কান্ডে গাঢ় দাগ কপার অক্সিক্লোরাইড স্প্রে করুন

কীটপতঙ্গ:

কীট প্রতিকার
ডায়মন্ড ব্যাক মথ বিটি (Bacillus thuringiensis) স্প্রে
ক্যাবেজ ওয়েব ওয়ার্ম নিয়ন্ত্রণে সেভিন/কার্বারিল
ক্যাবেজ ফ্লাই গাছের গোড়ায় কাদা চেপে দিন, ট্রাইকোগ্রামা পোকা ব্যবহার করুন

👉 পরিবর্তিত আবহাওয়ায় কীটনাশকের ডোজ নিয়ন্ত্রণ বিকল্প জৈব উপায় বিবেচনা করুন।

 

ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ:

  • পরিপক্বতা: রোপণের ৭০–৯০ দিন পর বাঁধাকপির মাথা শক্ত, ঘন ও মুচমুচে হলে ফসল কাটার সময় হয়।
  • সংগ্রহ পদ্ধতি:
    • ছুরি দিয়ে গাছের গোড়া থেকে কাটুন
    • নিচের কয়েকটি পাতা রেখে দিন যাতে পরিবহন ও সংরক্ষণে ক্ষতি কম হয়
  • সংরক্ষণ:
    • ০–৪°C তাপমাত্রায় ৯০–৯৫% আপেক্ষিক আর্দ্রতায় ২–৩ সপ্তাহ ভালো থাকে
    • বাতাস চলাচল করে এমন ঠাণ্ডা স্থানে রাখা উচিত
    • প্লাস্টিক বাক্স বা জাল ব্যাগ ব্যবহার করুন

 

লাভজনকতা ও বিপণন

বাঁধাকপি চাষে ১ বিঘা জমিতে গড়ে ৮,০০০–১২,০০০ কেজি পর্যন্ত উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে বাজারে বাঁধাকপির চাহিদা স্থায়ীভাবে উচ্চ, বিশেষ করে হোটেল, রেস্তোরাঁ ও প্রক্রিয়াজাত শিল্পে।

👉 একর প্রতি সঠিক ব্যবস্থাপনায় ৫০,০০০–৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা অর্জন সম্ভব।

 

অতিরিক্ত পরামর্শ

  • বীজ কেনার সময় মেয়াদ ও ব্র্যান্ড যাচাই করুন
  • চাষের সময় এলাকার কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিন
  • জৈব ও রাসায়নিক সমন্বয়ে সুষম সার ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করুন
  • মৌসুমি ফসলের পরিবর্তে বাঁধাকপি ইনটেনসিভ ফার্মিংয়ের জন্য উপযোগী

 

 

বাঁধাকপি চাষ একটি লাভজনক ও চ্যালেঞ্জিং কৃষিপদ্ধতি, যা সঠিক পরিকল্পনা, যত্ন, ও প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষকের আয়ের একটি নিশ্চিত উৎস হয়ে উঠতে পারে। চাষের প্রতিটি ধাপে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ এবং আগাম পরিকল্পনা ফলন বৃদ্ধি ও আর্থিক লাভ নিশ্চিত করতে পারে।

খিরা চাষ পদ্ধতি

আজ আমাদের আলোচনার বিষয় খিরা চাষ পদ্ধতি। খিরার রস উপকারী। শরীরের পিএইচ সমতা বজায় রাখে খিরা। সুস্থ থাকে বৃক্ক :বৃক্ক(কিডনি), ইউরিনারি ব্লাডার, লিভার ও প্যানক্রিয়াসের সমস্যায় ডায়েটে খিরা রাখতে পারেন।

খিরা চাষ পদ্ধতি

শসা শুধুমাত্র একটি সতেজ ও বহুমুখী সবজিই নয়, এটি একটি পুষ্টির শক্তিও বটে। হাইড্রেশন প্রচার করা এবং ওজন ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করা থেকে শুরু করে অসংখ্য স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করা, শসা একটি সুষম খাদ্যের একটি মূল্যবান সংযোজন। শসা সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য অসংখ্য সুবিধা প্রদান করে, তা নাস্তা হিসাবে খাওয়া হোক, সালাদে যোগ করা হোক বা ত্বকের যত্নের রুটিনে ব্যবহার করা হোক। সুতরাং, পরের বার যখন আপনি একটি স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য পৌঁছাবেন, নম্র শসা বিবেচনা করুন এবং এর পুষ্টিগত সুবিধাগুলি কাটান।

খিরা / শসার ১২ স্বাস্থ্য উপকারিতা:

খিরা বা শসা খাওয়ার কিছু উপকারিতা নিচে দেওয়া হল:

  • হাইড্রেশন এবং ওজন ম্যানেজমেন্ট: স্বাস্থ্যের জন্য শসা একটি প্রাচীন প্রবাদ। তাদের উচ্চ জল শতাংশ এবং কম ক্যালোরি গণনার কারণে, শসা হাইড্রেটেড থাকার জন্য এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার জন্য একটি চমৎকার পছন্দ। এগুলি কম ক্যালোরি থাকাকালীন পূর্ণতার অনুভূতি প্রদান করে, যা এগুলিকে একটি সুষম খাদ্যের জন্য একটি দুর্দান্ত সংযোজন করে তোলে।
  • হজমশক্তি বাড়ায়: শসায় প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে, যা স্বাস্থ্যকর হজমকে উৎসাহিত করে। ফাইবার মলের জন্য প্রচুর পরিমাণে যোগ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে এবং নিয়মিত মলত্যাগের প্রচার করে। আপনার খাদ্যতালিকায় শসা অন্তর্ভুক্ত করা একটি বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে স্বাস্থ্যকর পাচনতন্ত্র.
  • ত্বকের স্বাস্থ্য: শসার উচ্চ জল উপাদান এবং শীতল বৈশিষ্ট্য ত্বকের স্বাস্থ্য উপকার করে. শসার টুকরো বা শসা-মিশ্রিত পণ্য প্রয়োগ করা রোদে পোড়া ভাব প্রশমিত করতে পারে, ফোলাভাব কমাতে পারে এবং ত্বককে হাইড্রেট করতে পারে। উপরন্তু, শসাতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ত্বকের বার্ধক্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং তারুণ্যের চেহারা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
  • হাড়ের স্বাস্থ্য: শসাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক। পর্যাপ্ত ভিটামিন কে গ্রহণ ক্যালসিয়াম শোষণ উন্নত করতে সাহায্য করে এবং ফ্র্যাকচার এবং অস্টিওপরোসিসের সম্ভাবনা কমায়। তাই মজবুত ও সুস্থ হাড়ের জন্য আপনার খাদ্যতালিকায় শসা অন্তর্ভুক্ত করুন।
  • হার্টের স্বাস্থ্য: শসাতে পটাসিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমায়। উপরন্তু, শসায় উদ্ভিদ যৌগ কিউকারবিটাসিনের প্রদাহ-বিরোধী প্রভাব রয়েছে, যা হৃদরোগকে আরও সমর্থন করতে পারে।
    ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা: শসার গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকে, যা এগুলিকে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত করে তোলে। শসায় থাকা
  • ফাইবার উপাদান হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি রোধ করে। ডায়াবেটিক ডায়েটে শসা অন্তর্ভুক্ত করা রক্তে শর্করার আরও ভাল নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখতে পারে।
  • চোখের মঙ্গল: শসায় রয়েছে বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যেমন বিটা-ক্যারোটিন এবং লুটিন, যা চোখের জন্য উপকারী। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ফ্রি র‌্যাডিকেলগুলি সঞ্চালনের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি থেকে চোখকে রক্ষা করতে সহায়তা করে এবং বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয় এবং ছানি পড়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে।
  • অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য: শসাতে কিউকারবিটাসিনের উপস্থিতি তাদের শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য দেয়। শসা নিয়মিত সেবন শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে, বিভিন্ন অবস্থার উপসর্গ যেমন আর্থ্রাইটিস এবং হাঁপানি দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ: শসায় বিভিন্ন যৌগ রয়েছে, যেমন কিউকারবিটাসিন এবং লিগন্যান, যা গবেষণায় ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই যৌগগুলি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দেয় এবং স্তন, জরায়ু এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার সহ নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়।
  • মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য: শসায় উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েডগুলি জ্ঞানীয় কার্যকারিতা বাড়ায় এবং সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় স্নায়ুজনিত রোগ, যেমন আলঝাইমার রোগ। আপনার খাদ্যতালিকায় শসা অন্তর্ভুক্ত করা একটি সুস্থ মস্তিষ্ক বজায় রাখতে অবদান রাখতে পারে।
  • মৌখিক স্বাস্থ্য: শসা চিবানো লালা উত্পাদনকে উদ্দীপিত করে, যা মুখের অ্যাসিড নিরপেক্ষ করতে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে সহায়তা করে। উপরন্তু, শসার উচ্চ জল শতাংশ মুখ হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে এবং শুষ্ক মুখের ঝুঁকি কমায়।
  • নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করে: মুখের মধ্যে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ বা হ্যালিটোসিসের কারণ হতে পারে। শসায় ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে যা অপ্রীতিকর গন্ধের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে। আপনার খাদ্যতালিকায় শসা অন্তর্ভুক্ত করা সতেজ শ্বাসে অবদান রাখতে পারে।

 

খিরার জাত নির্বাচন:

প্রথমে খিরার ভালো জাতের বীজ বেছে নিতে হবে। যেমন ধরুণ শতাব্দী জাত, যেটা খুব উন্নত জাতের বীজ। শতাব্দী, তাজ ৩৬৫, নওগাঁ গ্রিন, নওগাঁ ৫, ইত্যাদি জাতের মধ্যে হাইব্রিড জাতের যেকোনো একটা বেছে নিতে হবে।

খিরার বীজ জর্মিনেশন:

খিরার বীজগুলো অবশ্যই ৬ ঘণ্টা জলের মধ্যে সুতির কাপড় পেঁচিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপরে জল থেকে আলাদা করে, আরও ছয় ঘণ্টা যদি ওই অবস্থায় রেখে দিতে হবে। এমনটি না করলে সবগুলো বীজের অঙ্কুরোদগম না হবার সম্ভাবনা থাকে।

খিরার জমি তৈরি ও বীজ বপন:

প্রথমত জমির মধ্যে এক ফুট গভীর মাদা তৈরি করতে হবে। মাদার মধ্যে ২-৫ কেজি পরিমানে গোবর দিতে হবে। প্রত্যেকটা মাদার মাটি অবশ্যই ভালোভাবে ঝুরি করতে হবে। জমিতে দুই থেকে তিনবার চাষ দিতে হবে এবং এক থেকে দুইবার মই দিতে হবে।

প্রত্যেকটা মাদার দূরত্ব রাখতে হবে তিন ফুট এবং প্রত্যেকটা মাদার মধ্যে তিন ৩-৪ টি বীজ বপন করতে হবে। বীজগুলো বপন করার ৪ থেকে ৫ দিন পরে বীজ থেকে সব চারা উঠে যাবে। যখন গাছ উঠে যাবে, তখন নিয়মিত জল দিতে হবে। জল বেশি দেয়া হলে চারা মারা যেতে পারে, এটা মনে রাখা খুবই জরুরী।

খিরার গাছে সার প্রয়োগ:

গাছের বয়স যখন ২০-২৫ দিন হবে, তখন রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে।

  • খেয়াল রাখতে হবে গাছের গোড়ায় যাতে সার না পড়ে।
  • গাছের চতুর্দিকে দুই ইঞ্চি বরাবর গর্ত করে রাসায়নিক সার দিতে হবে।
  • গাছের চতুর্দিকে আগাছাগুলো পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
  • প্রথমে যে সার দিতে হবে তা হলো – DAP সার ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম।
  • তারপরে দিতে হবে ইউরিয়া সার ৫০ গ্রাম, প্রত্যেকটা মাদার মধ্যে।
  • প্রত্যেকটা মাদার মধ্যে পটাশ সারটা ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম হারে দিতে হবে।
  • তারপর একটা কীটনাশক দিতে হবে, সেটা হচ্ছে- ফুরাডান। প্রত্যেকটা মাদার মধ্যে পাঁচ গ্রাম করে দিতে হবে।

সার দেওয়ার পর মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং গোড়াটা একটু উঁচু করে রাখতে হবে। এছাড়া সারগুলো দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি দেয়া যাবে না, ১-২ দিন পরে আপনারা জল দিতে হবে। এইভাবে সার প্রয়োগ করলে, খুব দ্রুত গাছে মধ্যে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। চাষে আগ্রহীদের ডিসেম্বর সামনে রেখে পরিকল্পনা করতে হবে। শীতকালে খিরার বাম্পার ফলন ফলে।

খিরার পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্য:

শসায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে যা সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতায় অবদান রাখে। এগুলি জল, পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ এবং ক্যালোরি, চর্বি এবং সোডিয়াম কম। নিচে শসা সম্পর্কে কিছু মূল পুষ্টির তথ্য দেওয়া হল:

  • ভিটামিন এবং খনিজ: শসা ভিটামিন কে এবং সি এর একটি চমৎকার উৎস। ভিটামিন কে রক্ত ​​জমাট বাঁধার জন্য অপরিহার্য এবং হাড়ের স্বাস্থ্য সমর্থন করে. বিপরীতে, ভিটামিন সি কোলাজেন সংশ্লেষণে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। উপরন্তু, শসা পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজের মতো খনিজ সরবরাহ করে, যা সঠিক শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • হাইড্রেশন এবং ডিটক্সিফিকেশন: শসায় প্রায় 96% জল থাকে, যা তাদের একটি চমৎকার হাইড্রেটিং খাবার পছন্দ করে। হজম, বিপাক এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সহ বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপের জন্য ভাল-হাইড্রেটেড থাকা অত্যাবশ্যক। অধিকন্তু, শসা একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক হিসাবে কাজ করে, শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে এবং কিডনির স্বাস্থ্যকর কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস: শসাতে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ট্যানিন সহ বেশ কয়েকটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের সম্ভাবনা হ্রাস করে, যেমন কার্ডিওভাসকুলার ডিজঅর্ডার এবং কিছু কিছু ক্যান্সার ধরণের.

উপরন্তু, শসাতে রয়েছে কিউকারবিটাসিন, শক্তিশালী যৌগগুলির একটি গ্রুপ যা প্রদাহ বিরোধী এবং অ্যান্টিক্যান্সার বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।

বারমাসী হাইব্রিড খিরা শতাব্দী-২:

জাত এর নামঃ
বারমাসী হাইব্রিড খিরা শতাব্দী-২

আঞ্চলিক নামঃ
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠানঃ
Chia Thai Seed Company, Thailand

জীবনকালঃ
০ দিন

সিরিজ সংখ্যাঃ

উৎপাদন ( সেচ সহ ) / প্রতি হেক্টরঃ
০ কেজি

উৎপাদন ( সেচ ছাড়া ) / প্রতি হেক্টরঃ
০ কেজি

জাত এর বৈশিষ্টঃ

  • সারা বৎসর চাষ করা যায়।
  • ফলের রং সবুজ, লম্বা ৫ ইঞ্চি, ওজন ২০০-৩০০ গ্রাম।
  • বীজ বপনের মাত্র ৩০-৩৫ দিন পর থেকে খিরা উঠানো শুরু করা যায়।

চাষাবাদ পদ্ধতিঃ

  • বীজের পরিমাণ : একর প্রতি ১৫০ গ্রাম ( প্রতি শতাংশে ১.৫ গ্রাম)
  • বীজ বপন : ৩ ফুট দূরে লাইন করে ২ ফুট দূরে দূরে একটি করে বীজ বপন করতে হবে। এক জায়গায় একটির বেশি গাছ থাকলে ফলন কম হয়।
  • প্রথম জালি কর্তন : প্রতিটি গাছের প্রথম ২-৩ টি জালি ফুল অবস্থায় ছিড়ে দিতে হবে, এতে গাছের বাড় বাড়তির সুযোগ হবে এবং অনেক বেশী ফলন পাওয়া যাবে। গাছের শাখা প্রশাখা কাটবেন না, কাটলে ফলন কমে যাবে।
  • খুঁটি বা মাচা : খিরা শুকনা মৌসুমে খড় বা নাড়া বিছিয়ে মাটিতে চাষ করা যায় তবে বর্ষা মৌসুমে A টাইপের মাচায় চাষ করতে হবে।
  • সার ব্যবস্থাপনা : শেষ চাষের সময় একর প্রতি প্রচুর পরিমাণে গোবর, ইউরিয়া ৮০ কেজি, টিএসপি ৬০ কেজি, এমওপি ৮০ কেজি, জিপসাম ৫০ কেজি, জিংক সালফেট ৪ কেজি ও বোরাক্স ৪ কেজি।

ছাদে সবজি চাষ পদ্ধতি

ছাদে সবজি চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১৬ কোটি যা ২০৫০ সাল নাগাদ ২২ কোটিতে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হয়। বিপুল জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি জমি হ্রাস, ক্রমাবনতিশীল কৃষি বৈচিত্র ইত্যাদি পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা যোগানে ছাদ ও বাড়ীর আঙ্গিনা, খালি জায়গায় ব্যাপক ভিত্তিতে সবজি বাগান করে সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি তথা জনগণের পুষ্টির চাহিদা মিটান সম্ভব।

ছাদে সবজি চাষ পদ্ধতি

 

 

ছাদের উপর সবজি চাষ নতুন কিছু নয়। এটি সাধারণ সবজি চাষেরই প্রতিরূপ যা একটি সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে করা হয়। বিশেষ করে শহুরে লোকজন তাদের বাড়ির ছাদে টব, বালতি, ড্রাম বা ট্রেতে সীমিত আকারে সবজি চাষ করেন। বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বাড়ির ছাদে বাগান করা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অবশ্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের ছাদে যেসব বাগান দেখা যায় তার অধিকাংশই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে
উঠেছে। পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে বাড়ির ছাদে যে কোন শাকসবজি ফলানো সম্ভব।

টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, ব্রোকলী, ঢেঁড়শ, ডাটা, পুঁইশাক, লাল শাক, কলমী শাক, মুলা, শালগম, পুদিনা পাতা, বিলাতি ধনিয়া, মরিচ (সারা বছর), লাউ, করলা, শসা, ঝিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, সীম, বরবটি ইত্যাদি নানা ধরনের মৌসুমী সবজি ছাড়াও কচু, সজনে, লেবু, পেঁপে ইত্যাদি অনায়াসে উৎপাদন করা যায়।

 

 

ছাদে সবজি বাগানের উদ্দেশ্য

  • ছাদ বাগান সবজি উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
  • নিরাপদ সবজি উৎপাদনের সহজ উপায়।
  • বাড়ির ছাদ ঠাÐা রাখতে সহায়তা করে।
  • জীববৈচিত্র সংরক্ষিত হয় ও পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকে।

 

 

ছাদে বাগান করার জন্য আবশ্যিক বিবেচ্য বিষয়:

  • ছাদে বাগান করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে নিয়মিত পানি সেচ দেয়া।
  • ছাদে বাগানের জন্য গোবর, জৈব সার (কম্পোস্ট), কেঁচো সার (ভার্মিকম্পোস্ট), ট্রাইকোকম্পোস্ট ও কোকোডাস্ট (নারিকেলের ছোবড়ার গুড়া) ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সহজে তিন ভাগ দোয়াশ মাটি, পাঁচ ভাগ গোবর, এক ভাগ ভার্মিকম্পোস্ট সার এবং এক ভাগ কোকোডাস্ট দিয়ে মাটির মিশ্রণ তৈরি করা যায়।
  • বছরে একবার কম্পোস্টযুক্ত নতুন মাটি দিয়ে পুরাতন মাটি বদলিয়ে দিতে হবে।
  • টবে/পাত্রের নিচে ছিদ্র থাকা জরুরী। কয়েকটি ভাঙ্গা চাড়ির টুকরা ছিদ্রের মুখের উপর রেখে টবে মাটি ভরতে হবে।
  • টবে/ড্রামে সবজির ধরণ ও জাত নির্বাচনের পর যৌক্তিকভাবে সাজাতে হয়। ছোট গাছকে সামনে, বড়/লতানো সবজি গাছকে পিছনে রাখতে হবে। যেমন বড় লতান গাছ উত্তর ও পশ্চিম দিকে দিতে হবে।
  • ছাদে বাগান করার ক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল জাতের সবজি চারা ব্যবহার বেশি ফলদায়ক।
  • ছাদে চাষের একটা জরুরী বিষয় হল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। এ জন্য পুরাতন রোগাক্রান্ত, বয়স্ক ডালপালা, পাতা সাবধানতার সাথে কেটে নির্দিষ্ট স্থানে জমা করতে হবে। এতে গাছপালা রোগমুক্ত থাকবে, মানসম্পন্ন ফলন পাওয়া যাবে।
  • আমাদের দেশের আবহাওয়ায় যে কোন ফল জাতীয় সবজিতে পোকা বা রোগের আক্রমণ অহরহ ঘটে থাকে। সেক্ষেত্রে সপ্তাহে কমপক্ষে ২/৩ বার ছাদের বাগান পরিদর্শন করে আক্রান্ত ফল বা ডগা ছেটে ফেলে দিলে পোকা বা রোগের আক্রমণ কমে যাবে এবং ফলনও ভাল পাওয়া যাবে।
  • সহজে পোকামাকড় ব্যবস্থাপনার জন্য আঠালো হলুদ ফাঁদ, আঠালো সাদা ফাঁদ ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী উপযুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে ঘরের ভেতরে, সিড়ি, ব্যালকনি, বারান্দা, কার্নিশ এসব জায়গায় অনায়াসে পাতা জাতীয় সবজি গাছ লাগিয়ে ভাল ফলন পাওয়া যেতে পারে।

 

 

বাড়ির ছাদে সবজি চাষে বিবেচ্য বিষয়সমূহ:

  • ছাদে স্থান নির্বাচন
  • ছাদের আকার
  • সূর্যালোক
  • পানির ব্যবস্থা
  • ছাদের গঠন
  • ছাদের ব্যবহার ইত্যাদি

 

 

ছাদ বাগানে সবজি চাষের জন্য মাধ্যম বা গ্রোয়িং মিডিয়া:

ভাল ফলন পাওয়ার প্রথম শর্ত হল উন্নতমানের গ্রোয়িং মিডিয়া ব্যবহার করা। ছাদে বাগানের জন্য উন্নতমানের কম্পোস্ট সমৃদ্ধ হালকা বুনটের মাটি ব্যবহার করা উত্তম। আবার কিছু কিছু পটিং মিডিয়ার মিশ্রণ যেমন- পিটমস, ভার্মিকুলাইট ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে যেগুলো হালকা, রোগজীবাণু মুক্ত, আগাছা বীজ মুক্ত এবং সুনিষ্কাশন ক্ষমতাসম্পন্ন।

 

ছাদ বাগানে চাষের জন্য আদর্শ গ্রোয়িং মিডিয়ার উদাহরণ:

  • ৫ ভাগ দোয়াশ মাটি + ৫ ভাগ কম্পোস্ট
  • ৩ ভাগ দোয়াশ মাটি + ৫ ভাগ গোবর + ১ ভাগ ভার্মিকম্পোস্ট + ১ ভাগ কোকোডাস্ট
  • ১০০% মাটি ছাড়া মিশ্রণ, যেমন- স্ফ্যাগনাম মশ, ভার্মিকুলাইট, ককোডাস্ট ইত্যাদি।

 

 

 

ছাদ বাগানের জন্য পট বা কনটেইনার:

ছাদ বাগানের জন্য বিভিন্ন ধরনের ও আকারের টব, প্লাস্টিকের/কাঠের বক্স, হাফ ড্রাম বা কনটেইনার ব্যবহার করা যায়। ফসলের আকার আকৃতির উপর ভিত্তি করে কনটেইনারও বিভিন্ন আকারের হতে পারে। নিচে কিছু পটের নামসহ উল্লেখ করা হল।

ছাদ বাগানে টবে সবজি চাষ:

টব বিভিন্ন আকার এবং বিভিন্ন পদার্থের তৈরি হতে পারে। টব মাটির, প্লাষ্টিক বা সিমেন্টের তৈরি হতে পারে। সাধারণত সবজি চাষাবাদের জন্য ১২-১৮ ইঞ্চি ব্যাস এবং ১২-১৮ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট টব ব্যবহার করা যেতে পারে। টবগুলো স্থানান্তর যোগ্য এবং পাতলা বিধায় টবে সবজি চাষ জনপ্রিয়। এসব টবে টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, ব্রোকলী, কুমড়া জাতীয় সবজি (লাউ, করলা, শসা, মিষ্টি কুমড়া) ও সীমের চারা রোপণ করা উত্তম।

ছাদ বাগানে চৌবাচ্চাকৃতি প্লাস্টিক/কাঠ/স্টীল/ইট সিমেন্ট দিয়ে তৈরি পাত্র বা বক্সে সবজি চাষ:

চৌবাচ্চাকৃত পাত্রগুলো প্লাস্টিক/কাঠ/স্টীল/ইট সিমেন্ট দিয়ে তৈরি হতে পারে। এ ধরনের পাত্রগুলো ১০-১২ ইঞ্চি গভীরতা, তিন ফুট প্রস্ত এবং পাঁচ/ছয় ফুট লম্বা আকারের হতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী পাত্রের আকার ছোট বা বড় হতে পারে। এ পাত্রগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী বানিয়ে নিতে হবে বা বাজার হতে ক্রয় করা যাবে।

পাত্রগুলো ছাদের ওপরে কয়েকটি ইট বা অন্য কোন অল্প উঁচু স্থাপনার ওপর রাখতে হবে যাতে পাত্রের নীচে ফাকা থাকে, এতে ছাদের কোন ক্ষতি হবে না। এসব পাত্রে শাক জাতীয় সবজির বীজ সরাসরি বপন ও টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, ব্রোকলী, কুমড়া জাতীয় সবজি (লাউ, করলা, শসা, মিষ্টি কুমড়া) ও সীমের চারা রোপণ করা যেতে পারে।

ছাদ বাগানে হাফ ড্রামে সবজি চাষ:

বড় আকারের ড্রামের মাঝামাঝি কেটে দুই টুকরো করে বড় দুটি ড্রামের টব তৈরি করা যায়। সজনে, কচু চাষের জন্য হাফ ড্রাম ভালো। এগুলো সরাসরি ছাদের ওপর না বসিয়ে কয়েকটি ইটের ওপর বা স্টীলের ফ্রেমে বসানো দরকার।

ছাদ বাগানে মাল্টিলেয়ার বস্তায়/বক্সে সবজি চাষ:

মাল্টিলেয়ার বস্তায়/বক্সে সবজি চাষ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে খাটো শিকড়যুক্ত সবজি নির্বাচন করতে হবে। বিশেষ করে পাতা জাতীয়
সবজি গাছ লাগিয়ে ভাল ফলন পাওয়া যেতে পারে।

উপোরক্ত পাত্রগুলোর নিচে অবশ্যই ছিদ্র থাকা জরুরী। কয়েকটি ভাঙ্গা চাড়ির টুকরা বা নেট ছিদ্রের মুখে দিয়ে পাত্রগুলোতে মাটি ভরতে হবে।

 

 

ছাদে চাষের জন্য সবজি নির্বাচন:

সবজির মৌসুম ও ভোক্তার রুচি অনুযায়ী ছাদে চাষ উপযোগি সবজি নির্বাচন করতে হবে। একটি ভবনের উচ্চতার প্রতি দশ তলা পরপর বাতাসের গতিবেগ দ্বিগুণ হয়। বাতাসের গতিবেগ বৃদ্ধির সাথে সাথে গ্রোয়িং মিডিয়া ও পাতা থেকে পানি উবে যাওয়ার হারও বৃদ্ধি পায়। সুতরাং এ বিষয়টি লক্ষ্য রেখে সবজি নির্বাচন করা উচিৎ।

 

 

ছাদ বাগানে চাষের জন্য চারা উৎপাদন:

গুণগত মানের বীজ সংগ্রহ করার পর সবজি ভেদে বীজ সরাসরি জমিতে বপন বা টবে চারা গজিয়ে তারপর রোপন করতে হবে।

  • সরাসরি বীজ বপন: সাধারণত শাক জাতীয় সবজির ক্ষেত্রে সরাসরি বীজ বপন করতে হয়। যেমন: ডাটা, লাল শাক, কলমী শাক, পালং শাক, পুই শাক, লেটুস, মুলা, গাজর, ধনিয়া। তাছাড়া ঢেঁড়শ চাষেও সরাসরি বীজ বপন করতে হয়।
  • চারা গজিয়ে তারপর রোপন: টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, ব্রোকলী, লাউ, করলা, শসা, মিষ্টিকুমড়া, সীম।
  • চারা উৎপাদন ছায়াবিহীন, পরিষ্কার এবং বাতাস চলাচলের উপযোগী স্থানে করা প্রয়োজন।
  • চারা উৎপাদনের মাটি বেলে দো-আঁশ এবং উর্বর হওয়া উচিত।
  • চারা উৎপাদন পলিথিনের ব্যাগে বা মাটির টবে উৎপাদন করা যায়।
  • আবহাওয়া এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করতে হবে যেন বৃষ্টির পানি ও অতিরিক্ত সূর্যতাপ থেকে চারাকে রক্ষা করা যায়।

 

ছাদ বাগান ব্যবস্থাপনার যন্ত্রপাতি:

ছুড়ি/চাকু, কাঁচি, খুরপি, নিড়ানী, সিক্যাচার, হ্যান্ডি-শাবল, শাবল, বেলচা, কোদাল, হ্যান্ড স্প্রেয়ার, পানির পাইপ, পানির ঝাঝড়ি, ঝাড়–, চালুনী, ট্রলী, ওজন যন্ত্র ছাদের বাগানে কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা আবশ্যক।

 

 

ছাদ বাগানে সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা:

  • ছাদে সেচ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা মাটির আর্দ্রতার জন্য সহজেই গাছপালা নেতিয়ে যাবে তেমনি অতি পানি বা পানির আর্দ্রতার জন্যও গাছ নেতিয়ে মরা যেতে পারে। তাই অবশ্যই ছাদের বাগানে পরিমিত সেচের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
  • ছাদ বাগানে সেচের জন্য স্প্রিংকলার অর্থাৎ ঝাঁঝরি দিয়ে সেচ দেয়া ভালো।
  • পাত্রে চারা লাগানোর পরপরই গোড়ায় পানি দিতে হবে এবং কয়েকদিন পর্যন্ত পরিমিত সেচ দিতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় পানির অভাব হলে ফুল, ফল ধারণ ব্যাহত হয় এবং যেসব ফুল, ফল ধরেছে সেগুলোও আস্তে আস্তে ঝরে যায়। কাজেই প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। অতিরিক্ত পানি বের হওয়ার জন্য নীচের নিকাশ ছিদ্র ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে।

 

 

ছাদ বাগানে বাউনি/জাংলা/মাচা দেওয়া:

লতানো গাছে কাংখিত ফলন পেতে হলে অবশ্যই সুন্দরভাবে বাঁশ/ পিলার দিয়ে জাংলা বা মাচা বানিয়ে টব/প্লাস্টিকের পাত্রে লতানো সবজি আবাদ করা যেতে পারে। মাটিতে চাষ করলে ফলের একদিক বিবর্ণ হয়ে যায়, পচন ধরে এবং প্রাকৃতিক পরাগায়ন কমে যায়। ফলে ফলনও কমে যায়।

 

 

ছাদ বাগানে মালচিং:

সেচের পর মাটিতে চটা বাঁধে। চটা বাঁধলে গাছের শিকড়াঞ্চলে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়। কাজেই প্রত্যেক সেচের পর হালকা মালচ্ করে গাছের গোড়ার মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।

 

 

ছাদ বাগানে আগাছা দমন:

গাছের গোড়ায় আগাছা থাকলে তা খাদ্যোপাদান ও রস শোষণ করে নেয়। গাছে খাদ্যোপাদানের অভাব পড়ে। ফলে কাংখিত ফলন পাওয়া যায় না। তাই সবসময়ই আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।

 

 

ছাদ বাগানের অপ্রয়োজনীয়, বয়স্ক, মড়া শাখা অপসারণ:

গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট ডালপালা হয়। সেগুলোকে শোষক শাখা বলা হয়। তাছাড়া এগুলো ছাড়াও বয়স্ক, মড়া ডালপালা গাছের ফলনে এবং যথাযথ শারীরিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই গাছের গোড়ার দিকে ডালপালাগুলো ধারালো বেøড বা কাঁচি দিয়ে কেটে অপসারণ করতে হবে।

 

 

ছাদ বাগানে পোকামাকড় দমন:

পোকামাকড় ব্যবস্থাপনার জন্য আঠালো হলুদ ফাঁদ, আঠালো সাদা ফাঁদ, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া কিছু পোকা হাত দিয়ে ধরে মেরে ফেলা যায়।

 

ছাদ বাগানে ফল ধারণ বৃদ্ধিতে কৃত্রিম পরাগায়ন:

লাউ, কুমড়া, করলা, ধুনধুল, ঝিঙ্গাতে পরাগায়ন প্রধাণতঃ মৌমাছির দ্বারা স¤পন্ন হয়। উঁচু বিল্ডিং এর ছাদে চাষ করলে মৌমাছির আনাগোনা কমে যায়। সব ফুলে প্রাকৃতিক পরাগায়ন ঘটে না এবং এতে ফলন কমে যায়। তাই হাত দিয়ে কৃত্রিম পরাগায়ন করে ফলন শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব।

 

 

ছাদ বাগানে ফসল সংগ্রহ:

সবজি বাগানে যত সবজি ফল হিসেবে আহরণ/সংগ্রহ করা যাবে ততই সবজি-ফল ধারণ বৃদ্ধি পাবে। তাই কচি অবস্থায় সবজি-ফল সংগ্রহ করা উচিত।

 

 

বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত জনবহুল দেশ। এখানে জনসংখ্যার তুলনায় চাষের জমি খুবই কম। প্রতি বছর এদেশের জনসংখ্যা, আবাসনের জন্য ঘর-বাড়ি, যোগাযোগের জন্য রাস্তা এবং কলকারখানা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দিনদিন কমে যাচ্ছে আবাদি জমি। বাংলাদেশ এই বাড়তি জনসংখ্যার চাপ মোকাবেলার জন্য শুধু আবাদি জমির উপর নির্ভর করলে চলবে না। এ পরিস্থিতিতে বিল্ডিং এর ছাদ চাষের আওতায় আনা যেতে পারে।

পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে বাড়ির ছাদে যে কোন শাক-সবজি ফলানো সম্ভব। টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, ব্রোকলী, ঢেঁড়শ, ডাটা, পুইশাক, লাল শাক, কলমী শাক, মুলা, শালগম, পুদিনা পাতা, বিলাতি ধনিয়া, মরিচ (সারা বছর), লাউ, করলা, শসা, ঝিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, সীম, বরবটি ইত্যাদি নানা ধরনের মৌসুমী সবজি ছাড়াও কচু, সজনে, লেবু, পেঁপে ইত্যাদি অনায়াসে উৎপাদন করা যায়। ছাদে সবজি বাগানের বর্ণিত মডেল অনুসরণ করে সারা বছরই সবজি উৎপাদন করা সম্ভব।

তদুপরি উৎপাদনকালে জৈব সার ব্যবহার করা হয় ও কোন কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না বিধায় এসব সবজি নিরাপদ। তাছাড়া বাড়ির ছাদ ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে এবং জীব বৈচিত্র সংরক্ষিত হয় ও পরিবেশ দূষণ মুক্ত থাকে।

 

ছাদে সবজি বাগানের মডেল:

 

 

সবজির ছাদ বাগান:

 

 

চুই ঝাল চাষ পদ্ধতি

চুই ঝাল চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। চুই ঝাল, বা চই ঝাল হচ্ছে পিপারাসি পরিবারের সপুষ্পক লতা। পান ও চুই ঝাল একই পরিবারের। চুই ঝাল গাছ দেখতে পানের লতার মতো। পাতা কিছুটা লম্বা ও পুরু। পাতায় ঝাল নেই।বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ করে খুলনা বিভাগের রন্ধনশৈলীতে চুইঝালের ব্যবহার ব্যাপক।এর কাণ্ড বা লতা কেটে ছোট টুকরো করে মূলত-মাংস রান্নায় ব্যবহার করা হয়। রান্নার পর এই টুকরো চুষে বা চিবিয়ে খাওয়া হয়। ঝাল স্বাদের এই চুইয়ের রয়েছে নিজস্ব আলাদা স্বাদ ও ঘ্রাণ।

 

চুই ঝাল চাষ পদ্ধতি

 

 

জমি ও মাটিঃ দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত ও ছায়াময় উঁচু জমিতে সাধারণত চুই চাষ করা হয়। সাধারণ ফলবাগান বা বৃক্ষ বাগানের মাটি চুই চাষের জন্য উপযোগী। রোপণের সময়ঃ বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল-মে) এবং আশ্বিন-কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর) মাস এ দুইবার হলো চুইঝালের লতা রোপণের উপযুক্ত সময়। বংশবিস্তারঃ বীজ ও অঙ্গজ প্রজনন বা লতা কাটিং পদ্ধতিতে চুইঝালের বংশবিস্তার করা যায়।

 

 

কাটিং পদ্ধতিতে এর কাণ্ড বা শাখা ৫০ থেকে ৭৫ সেমি লম্বা করে কেটে সরাসরি মাটিতে রোপণ করা হয়। স্থানীয়ভাবে কাটিং বা শাখাকে পোড় বলা হয়। একটি পোড়ে কমপক্ষে ৪/৫ টি পর্বসন্ধি থাকে। বাণ্যিজিকভাবে পলিব্যাগে চারা তৈরি করা যায়। পরে পলিব্যাগ থেকে চারা নিয়ে মূল জমিতে রোপণ করা যায়। লতা কাটিংয়ে গাছ দ্রুত বড় হয় এবং ফলন তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়। বীজ থেকে বংশবিস্তার জটিল, সময়সাপেক্ষ বলে আমাদের দেশে শুধু লতা থেকে বংশবিস্তার করা হয়। কাটিং শোধনঃ চুইঝালের কাটিং চারা রোপণের আগে অবশ্যই শোধন করে নেওয়া ভালো।

 

 

১ লিটার পানিতে ২-৩ গ্রাম প্রোভ্যাক্স/নোইন/অটোস্টিন মিশিয়ে কাটিং ৩০ মিনিট চুবিয়ে রাখার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলে কাটিং রোপণ করতে হবে। ফলে পরবর্তীতে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়।সার ও সেচ ব্যবস্থাপনাঃ চুই চাষে চাষিরা সাধারণত পোড় বা শাখা রোপণের পূর্বে গর্তে পচা আবর্জনা বা ছাই ব্যবহার করেন। তাছাড়া কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী সাধারণ হারে ইউরিইয়া, টিএসপি, এমওপি বর্ষার আগে ও পরে গাছের গোড়া থেকে ১ হাত দূরে প্রয়োগ করে থাকেন। সপ্তাহে ১ বার গাছের গোড়ায় সেচ দিলে গাছের বাড়বাড়তি স্বাভাবিক থাকে। বর্ষাকালে চুইঝালের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সে দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। চুইঝাল গাছ লাগানোর পদ্ধতিঃ সাধারণত আম, সুপারিসহ কাঠ জাতীয় গাছের গোড়া থেকে ১২-১৫ ইঞ্চি দূরে গর্ত করে চুই গাছের কাটিং লাগাতে হয়।

গর্তের মধ্যে কিছু গোবর, বর্জ্য, ৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০ গ্রাম টি এস পি, ৫০ গ্রাম পটাশ দিয়ে গর্তে ও মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে ৭ দিন রেখে কাটিং লাগাতে হবে। গর্তে একটি খুঁটি কাত করে বড় গাছের সাথে বেঁধে দিলে ৩০-৪০ দিনের মাঝে তা গাছের কাণ্ডের সাহায্যে উপরে উঠে যাবে। এভাবে চুই গাছ বাড়তে থাকবে। বাউনি দেওয়াঃ চুইঝাল যেহেতু লতা জাতীয় তাই এর জন্য আরোহণের অন্য গাছের সাপোর্ট লাগে।

 

 

আম, জাম, সুপারি, নারিকেল ও কাফলা গাছ বাউনি হিসেবে চুই চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়। বাউনি না দিলেও মাটিতে বৃদ্ধি পায়। তবে এক্ষেত্রে বর্ষা মৌসুমে গাছের ক্ষতি হয়। কৃষকদের মতে আম ও কাফলা গাছে চাষকৃত চুই খুব সুস্বাদু হয়। ফসল সংগ্রহঃ চুই রোপণের ১ বছরের মাথায় খাওয়ার উপযোগী হয়। তবে ভাল ফলনের জন্য ৫/৬ বছরের গাছই উত্তম। ফলনঃ হেক্টর প্রতি প্রায় ২.০ থেকে ২.৫ মেঃ টন ফলন পাওয়া যায়। ৫/৬ বছরের একটি গাছ থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২৫ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

 

স্কোয়াশ চাষ পদ্ধতি

স্কোয়াশ চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজ আলোচনা করবো। স্কোয়াশ মূলত একটি শীতকালীন সবজি। এটি বিদেশি জনপ্রিয় সবজি। দেখতে বাঙ্গির মতো লম্বা ও সবুজ। মিষ্টি কুমড়ার মতো এক ধরনের সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। এটি সবুজ ও হলুদ দুই ধরনের রঙের হয়ে থাকে। বাংলাদেশে নতুনভাবে এটি চাষ শুরু হয়েছে।

স্কোয়াশ চাষ পদ্ধতি

বিদেশি সবজি স্কোয়াশ বিগত কয়েক বছর থেকে বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে। এটি দেখতে অনেকটা শশার মত মনে হয় কিন্তু আকার-আকৃতি একটা বড় মিষ্টি কুমড়ার সমান পর্যন্ত হতে পারে । বারি স্কোয়াশ-১ একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। পরাগায়নের পর থেকে মাত্র ১৫-১৬ দিনেই ফল সংগ্রহ করা যায়। নলাকার গাঢ় সবুজ বর্ণের ফল। গড় ফলের ওজন ১.০৫ কেজি। এ জাতের জীবনকাল ৮০-৯০ দিন।

স্কোয়াশ চাষের জন্য বেলে-দোআঁশ মাটি বেশ উপযুক্ত। বসতবাড়ি ও চরেও এর আবাদ সম্ভব। শীতকালীন চাষাবাদের জন্য সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বীজ বপন করা হয়। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে জমিতে সরাসরি বীজ বপন করা হয়। শতক প্রতি ১০ গ্রাম বীজ লাগতে পারে।

স্কোয়াশের পুষ্টিগুণ ও ব্যবহার :

স্কোয়াশে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ আছে। এর পাতা ও কাণ্ড সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। সামার স্কোয়াশ তরকারি ও ভাজি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। সামার স্কোয়াশ চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয় করাও সম্ভব।

 

স্কোয়াসের জাত :

বারি স্কোয়াশ-১ জাতটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক অবমুক্ত হয়েছে। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। পরাগায়নের পর থেকে মাত্র ১৫-১৬ দিনেই ফল সংগ্রহ করা যায়। নলাকার গাঢ় সবুজ বর্ণের ফল। গড় ফলের ওজন ১.০৫ কেজি। এ জাতের জীবনকাল ৮০-৯০ দিন। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ৪৫-৫০ টন।

 

স্কোয়াস চাষের জন্য জলবায়ু ও মাটি :

স্কোয়াশ চাষের জন্য বেলে-দোআঁশ মাটি বেশ উপযুক্ত। আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গাতেই মিষ্টি কুমড়া জন্মায়। অতএব সেসব জায়গায় স্কোয়াশ চাষ করা যাবে।

 

স্কোয়াশ চাষের জমি তৈরি :

ভালো ফলন পেতে হলে জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে। মাটি ও জমির প্রকারভেদে ৫-৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করে নিতে হবে। শীতকালীন চাষের সময় জমিতে রসের পরিমাণ কম থাকলে প্রয়োজনে জমি চাষের আগে সেচ দিয়ে নিতে হবে।

 

স্কোয়াস বীজ বপনের সময় :

শীতকালীন চাষাবাদের জন্য ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে বীজ বপন করা হয়। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য ভাদ্র মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে আশ্বিন মাসে (আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে) জমিতে সরাসরি বীজ বপন করা হয়।

 

স্কোয়াস চাষের জন্য বীজের হার :

এক বিঘা বা ৩৩ শতক জমিতে ছোট সাইজের বীজ হলে ৩০০ গ্রাম/২৪০০-২৫০০টি বীজ লাগবে। বড় সাইজের বীজ হলে ৫০০ গ্রামের মতো লাগতে পারে। শতক প্রতি ১০ গ্রাম বীজ লাগতে পারে। বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি স্কোয়াসের বীজ বাজারজাত করছে।

 

স্কোয়াস সবজির ওজন :

সাধারণত স্কোয়াশের ওজন ৭০০-৮০০ গ্রাম বা লম্বায় ৭/৮ ইঞ্চি হয়ে থাকে। বেশি বড় সাইজ করলে সবজি হিসেবে স্বাদ ও মান পরিবর্তন হয়ে যায়। এছাড়াও ২-৩টি স্কোয়াশের ওজন প্রায় ১ কেজি। প্রতিটি স্কোয়াশ বিক্রি হয় ৫০-৬০ টাকায়।

 

স্কোয়াস এর ফুল ও ফল আসার সময় :

বীজ রোপণের অল্প দিনের মধ্যেই গাছ বেড়ে ওঠে এবং রোপণের ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই গাছে ফুল আসে। পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে হবে। বীজ লাগানো থেকে ফল তুলতে সময় লাগে দুই আড়াই মাস। ফুল ও ফল দেখতে অনেকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো। ৫৫-৬০ দিনের ভিতর স্কোয়াশ বাজারজাত করা যায়।

 

 

স্কোয়াস চাষের জন্য সার ব্যবস্থাপনা :

জমি তৈরির সময় গোবর ২০ কেজি, টিএসপি ৩৫০ গ্রাম, এমওপি ২০০ গ্রাম, জিপসাম ৪০০ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড ৫০ গ্রাম, বোরাক্স ৪০ গ্রাম, দস্তা ৫০ গ্রাম শতাংশ প্রতি প্রয়োগ করতে হবে।

  • চারা রোপণের ৭-১০ দিন পূর্বে মাদা প্রতি গোবর ১০ কেজি, টিএসপি ৬০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড ৮ গ্রাম দিতে হবে।
  • চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর মাদা প্রতি ৩০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২৫ গ্রাম এমওপি প্রয়োগ করতে হবে।
  • চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর মাদা প্রতি ২৫ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।
  • জমিতে কেঁচোর চলাচল বেশি হলে দানাদার বিষ ব্যবহার করতে হবে জৈমি তৈরির আগে।

 

স্কোয়াস চাষের জন্য শতাংশ প্রতি সারের হিসাব:
সারের নাম পরিমাণ
গোবর ৮০ কেজি
ইউরিয়া ৭০০ গ্রাম
টিএসপি ৭০০ গ্রাম
এমওপি ৬০০ গ্রাম
জিপসাম ৪০০ গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড ৫০ গ্রাম
বোরাক্স ৪০ গ্রাম
দস্তা ৫০ গ্রাম

 

 

স্কোয়াশের বপন এবং রোপণ প্রযুক্তি :

স্কোয়াশ বীজ সরাসরি জমিতে রোপণ করা যায়। তবে ছোট আকারের পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদন করে বা প্লাস্টিক ট্রেতে করে তা জমিতে রোপণ করলে ভালো হয়। এছাড়াও স্কোয়াশের বীজ মাদায় বপন করা যায়। প্রায় ৩ ফুট দূরে দূরে একটি মাদায় ২-৩ টি বীজ বপন করা হয়। বীজ বোপন বা চারা রোপণ করার সময় গাছ থেকে গাছে দূরত্ব ১.৫ ফুট এবং একটি গাছের লাইন থেকে অন্য গাছের লাইনের দূরত্ব হলো ৩ ফুট । বীজ মাটির প্রায় ১ ইঞ্চি গভীরে বপন করতে হবে। চারা গজানোর পর মাটি তুলে ৬-১২ ইঞ্চি উঁচু করে দিতে হবে এবং ১-২ ফুট প্রশ্বস্ত করতে হবে।

বীজ বপনের ৪-৬ সপ্তাহ পরে ফল ধরা আরম্ভ হবে। স্কোয়াশ চারা রোপণের ১০-১২ দিন আগে গর্তের মাটির সাথে জৈব সার মিশিয়ে রাখতে হবে। জৈব সার বলতে পুরানো পচা গোবর সার হতে পারে বা কেঁচো জৈব বা ভার্মি জৈব সার হতে পারে। বীজ বপন করার ১০-১৫ দিনের ভিতর চারা বের হয়ে গাছ দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাবে।

 

স্কোয়াস চাষের জন্য সেচ ও নিষ্কাশন পদ্ধতি :

সার দেওয়ার পর হালকা সেচ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে। স্কোয়াশ গাছ সপ্তাহে ২ ইঞ্চি পানি শোষণ করে থাকে। তাই প্রয়োজনে সেচ প্রদান করতে হবে।শীতকালীন চাষের জন্য এক মাস পর পর জমিতে সেচ দিতে হবে। স্কোয়াশ চাষের সময় জমিতে পানি বেশি সময় জমতে দেওয়া যাবে না।

 

স্কোয়াস চাষে মালচিং :

স্কোয়াশ চাষে মালচিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চারা টিকে গেলেই গোড়ার চারপাশে মালচিং করলে তাপমাত্রা ঠিক থাকে এবং মাটি আর্দ্রতা ধরে রাখে। বিষয়টি স্কোয়াশের ফলন আগাম ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

 

স্কোয়াশ চাষের সময় অন্যান্য পরিচর্যা ও করণীয় :

চাষের সময় মাটির ঢেলা ভেঙে ঝুরঝুরে করে দিতে হবে। গাছের বাউনি ও অন্যান্য যত্ন করতে হবে। জমিতে আগাছা জন্মাতে দেওয়া যাবে না। আগাছা জন্মালে তা নিড়ানির সাহায্যে তুলে ফেলতে হবে। কৃত্রিম পদ্ধতিতে পুরুষ ফুলের রেণু স্ত্রী ফুলের উপর ছড়িয়ে দিলে উৎপাদন বাড়বে। গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট শাখা-প্রশাখা বের হয়। এগুলোকে শোষক শাখা বলে। শোষক শাখা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় ও ফলন কমিয়ে দেয়। তাই এই গুলোকে ভেঙে দিতে হবে।

 

 

স্কোয়াশের রোগবালাই ও পোকামাকড় :

স্কোয়াশে মাছিপোকা :

এই পোকা স্কোয়াশের কচিফল ও ফুলের মধ্যে প্রথমে ডিম পাড়ে। পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফল ও ফুলের ভিতর কুরে কুরে খায় যার ফলে ফল ও ফুল পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়। এই পোকার আক্রমণের ফলে প্রায় ৫০-৭০ ভাগ ফল নষ্ট হয়ে যায়।

দমন ব্যবস্থাপনা :

আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে তা নষ্ট করে ফেলতে হবে।জমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সেক্স ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার করতে হবে। মাছির আক্রমণ বেশি হলে এসিমিক্স ৫৫ ইসি ১ মিলি/লিটার অথবা পাইরাজিন ৭০ ডব্লিউ ডি জি ০.৪ গ্রাম/ লিটার অথবা টিডো ১ মিলি/লিটার অথবা নাইট্রো/সবিক্রন ১মিলি/লিটার বা ইমিটাফ ২০ এস এল ১ মিলি/ লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে করতে হবে।

 

সেক্স ফেরোমন ফাঁদ
স্কোয়াশে রেড পামকিন বিটল পোকা :

পামকিন বিটলের পূর্ণবয়স্কপোকা চারা গাছের পাতায় ফুটো করে এবং পাতার কিনারা থেকে খাওয়া শুরু করে সম্পূর্ণ পাতা খেয়ে ফেলে। এ পোকা ফুল ও কচি ফলেও আক্রমণ করে।

দমন ব্যবস্থাপনা :

চারা আক্রান্ত হলে হাত দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলে। ক্ষেত সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। চারা রক্ষার জন্য পাতায় ছাই ছিটাতে হবে। চারা অবস্থায় ২০-২৫ দিন পর্যন্ত মশারির জাল দিয়ে চারাগুলো ঢেকে রাখলে এ পোকার আক্রমণ থেকে গাছ বেঁচে যায়। সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলি অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলি) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে অথবা রেলোথ্রিন/ রিপকট ১ মিলি/লিটার পানিতে ১০-১২ দিন পর পর ২/৩ বার স্প্রে করতে হবে

স্কোয়াশে জাবপোকা :

জাবপোকার আক্রমণে স্কোয়াশের বাড়ন্ত ডগা ও পাতা হলুদ হয়ে যায়। গাছ তার সতেজতা হারিয়ে ফেলে এবং ফলন গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক জাবপোকা দলবদ্ধভাবে গাছের পাতার রস চুষে খায়। ফলে পাতা বিকৃত হয়ে যায়, বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও প্রায়শ নিচের দিকে কোঁকড়ানো দেখা যায়। মেঘলা, কুয়াশাচ্ছন্ন এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় জাবপোকার বংশ বৃদ্ধি বেশি হয়। প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হলে এদের সংখ্যা কমে যায়।

দমন ব্যবস্থাপনা :

প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাবপোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়। নিম বীজের দ্রবণ বা সাবানগোলা পানি স্প্রে করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়। আক্রমণ বেশি হলে সবিক্রন/টিডো/ইমিটাফ ১মিলি/লিটার পানিতে স্প্রে করতে হবে।

 

 

 

স্কোয়াস চাষে প্রয়োজনীয় সর্তকতা :

চারা বের হওয়া থেকে ৫ দিন পর পর সাদা মাছি বা জাব পোকা দমনে কমপক্ষে ভালো কোম্পানির ২/৩টি ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ ব্যবহার করুন। সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার করতে হবে। ওষুধ ব্যবহার করলে অবশ্যই ভালো কোম্পানির ওষুধ ব্যবহার করা উচিত। ভাইরাস আক্রান্ত গাছকে কোন প্রকার ট্রিটমেন্ট না করে সরাসরি তুলে ফেলে গাছটি মাটি চাপা দিতে হবে।

 

স্কোয়াশ ফসল সংগ্রহ :

স্কোয়াশ পরিণত হলে গাছ থেকে তা সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত বীজ বপন বা চারা রোপণের ৩০ দিন থেকে ৪০ দিনের ভিতর গাছ থেকে ফুল এসে ফল ধরা শুরু হয়। গাছে ফল ধরার ১৫-২০ দিনের মধ্যে স্কোয়াশ সংগ্রহ করা যায়। এছাড়াও ফলের বোঁটা খয়েরী রঙ ধারণ করে ধীরে ধীরে গাছ মরতে শুরু করলে ফসল সংগ্রহ করা যায়।

 

স্কোয়াসের ফলন :

হেক্টর প্রতি স্কোয়াশের গড় ফলন ৪৫-৫০ টন। জাত ভেদে সময় কম বেশি হতে পারে। ১ বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমি থেকে এক মৌসুমে ২২০০টি সামার স্কোয়াশ গাছ পাওয়া যায়। একটি গাছে গড়ে ১২-১৬ কেজি ফল হয় যায় এক বিঘা জমিতে প্রায় ২৪,০০০ কেজি। কোনো কোনো সময় ফলের সাইজে উপর মোট উৎপাদন কম বেশি হতে পারে। প্রতি বিঘা জমিতে স্কোয়াশ উৎপাদনের জন্য খরচ হয় ৯-১০ হাজার টাকা। কিন্তু ১ বিঘা জমি থাকে মুনাফা হয় ৬০-৭০ হাজার টাকা।

 

স্কোয়াস বাজারজাতকরণ :

স্থানীয় বাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুপার শপ-এর চাহিদা ব্যাপক। এছাড়া রেস্তোরাঁতেও স্কোয়াশ সরবরাহ করা যায়।

 

 

চরাঞ্চলে নিরাপদ স্কোয়াশ উৎপাদন:

স্কোয়াশ একটি সুস্বাদু ও জনপ্রিয় সবজি হিসেবে বিদেশিদের কাছে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। এ দেশে স্কোয়াশ একটি উচ্চমূল্যের সবজি ফসল। কয়েক বছর ধরে এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষাবাদের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তুলনামূলকভাবে কম উর্বর জমিতে এবং চরাঞ্চলে স্কোয়াশের চাষাবাদ সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিশেষ করে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় স্কোয়াশের চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও মাদারীপুর জেলার চাষিরা।

দেশের অন্য অঞ্চলে রয়েছে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের সম্ভাবনা। গবেষকরাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট হতে বারি স্কোয়াশ-১ নামে একটি জাত রবি মৌসুমে চাষাবাদের জন্য মুক্তায়ন করা হয়েছে। বারি স্কোয়াশ-১ একটি উচ্চফলনশীল জাত। পরাগায়নের পর থেকে মাত্র ১৫-১৬ দিনেই ফল সংগ্রহ করা যায়। নলাকার গাঢ় সবুজ বর্ণের ফল। গড় ফলের ওজন ১.০৫ কেজি। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ৪৫ টন।

 

চরাঞ্চলে স্কোয়াশ উৎপাদনের জন্য উৎপাদন প্রযুক্তি, মাটি ও আবহাওয়া:

স্কোয়াশের জন্য উষ্ণ, প্রচুর সূর্যালোক এবং নি¤œ আর্দ্রতা উত্তম। চাষকালীন অনুক‚ল তাপমাত্রা হলো ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চাষকালীন উচ্চতাপমাত্রা ও লম্বা দিন হলে পুরুষ ফুলের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং স্ত্রী ফুলের সংখ্যা কমে যায়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ বা এঁটেল দো-আঁশ মাটি এর চাষাবাদের জন্য উত্তম তবে চরাঞ্চলে পলিমাটিতে স্কোয়াশের ভালো ফলন হয়।

 

চরে স্কোয়াশ চাষে বীজের হার

প্রতি হেক্টরে ২-৪ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

 

চরে স্কোয়াশ চাষে বীজ বপন ও চারা উৎপাদন

শীতকালে চাষের জন্য অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে বীজ বপন করা যায়। চারা নার্সারিতে পলিব্যাগে উৎপাদন করে নিলে ভালো হয়। বীজ বপনের জন্য ৮ ী ১০ সেমি. বা তার থেকে কিছুটা বড় আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা যায়। প্রথমে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করে পলিব্যাগে ভরতে হবে।

সহজ অঙ্কুরোদগমের জন্য পরিষ্কার পানিতে ১৫-২০ ঘণ্টা অথবা শতকরা এক ভাগ পটাশিয়াম নাইট্রেট দ্রবণে বীজ এক রাত ভিজিয়ে অতঃপর পলিব্যাগে বপন করতে হবে। প্রতি ব্যাগে দুটি করে বীজ বপন করতে হবে। বীজের আকারের দ্বিগুণ মাটির গভীরে বীজ পুঁতে দিতে হবে। বীজ সরাসরি মাদায়ও বপন করা হয়। সেক্ষেত্রে সার প্রয়োগ ও মাদা তৈরির ৪-৫ দিন পর প্রতি মাদায় ২-৩টি করে বীজ বপন করা যেতে পারে। চারা গজানোর ১০-১২ দিন পর ১টি সুস্থ ও সবল চার রেখে বাকিগুলো উঠিয়ে ফেলতে হবে। চারার বয়স ১৬-১৭ দিন হলে তা মাঠে প্রস্তুত মাদায় লাগাতে হবে।

 

চরে স্কোয়াশ চাষের জন্য বেড তৈরি

বেডের উচচতা ১৫-২০ সেমি. ও প্রস্থ ১-১.২৫ মি. এবং লম্বা জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে সুবিধামতো নিতে হবে। এভাবে পরপর বেড তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি দুইটি বেডের মাঝখানে ৭০ সেমি. প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা থাকবে।

 

চরে স্কোয়াশ চাষের জন্য মাদা তৈরি

মাদার ব্যাস ৫০-৫৫ সেমি. গভীরতা ৫০-৫৫ সেমি. এবং তলদেশ ৪৫-৫০ সেমি. প্রশস্ত হবে। ৬০ সেমি. প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা সংলগ্ন বেডের কিনারা থেকে ৫০ সেমি. বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে ২ মিটার অন্তর অন্তর এক সারিতে মাদা তৈরি করতে হবে। প্রতি বেডে এক সারিতে চারা লাগাতে হবে।

 

চরে স্কোয়াশের জন্য সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি

ভালো ফলন পেতে মাটিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের সরবরাহ করতে হবে। তবে মাটির অবস্থা বুঝে সারের পরিমাণ কম/বেশিও হতে পারে।
সমস্ত গোবর সার, ফসফরাস সার ও পটাশ সারের ৩ ভাগের দুইভাগ শেষ জমি প্রস্তুতের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। অবশিষ্ট এক ভাগ পটাশ সার বীজ বপনের ৩০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। তবে নাইট্রোজেন সার তিনটি সমান ভাগে বীজ বপনের ২৫, ৪০ ও ৬০ দিন পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।

 

চরে স্কোয়াশ চারার বয়স ও চারা রোপণ

বীজ গজানোর পর ১৬-১৭ দিন বয়সের চারা মাঠে লাগানোর জন্য উত্তম। মাঠে প্রস্তুত মাদাগুলোর মাটি ভালোভাবে ওলটপালট করে এক কোপ দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জায়গা করে নিতে হবে। অতঃপর পলিব্যাগের ভাঁজ বরাবর বেøড দিয়ে কোটি পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলাসহ চারাটি ওই জায়গায় লাগিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর গর্তে পানি দিতে হবে।

 

চরে স্কোয়াশ চাষের জন্য পরবর্তী পরিচর্যা

সেচ দেওয়া :

স্কোয়াস ফসল পানির প্রতি খুবই সংবেদনশীল। সেচ নালা দিয়ে প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। জমিতে কখনও সব জমি ভেজানো বা প্লাবন সেচ দেয়া যাবে না। শুধু সেচ নালায় পানি দিয়ে আটকে রাখলে গাছ পানি টেনে নেবে। প্রয়োজনে সেচনালা হতে ছোট কোনো পাত্র দিয়ে কিছু পানি গাছের গোড়ায় দেয়া যাবো। শুষ্ক মৌসুমে ৫-৭ দিন অন্তর সেচ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে।

মালচিং :

প্রত্যেক সেচের পর হালকা খড়ের মালচ করে গাছের গোড়ার মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে। আগাছা অনেক রোগের আবাসস্থল। এ ছাড়াও আগাছা খাদ্যোপাদান ও রস শোষণ করে নেয়। কাজেই চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত জমি সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ : ফলে মাছি পোকার আক্রমণ হতে পারে। এটি থেকে ফসলকে রক্ষা করার জন্য সেক্স ফেরোমন ফাঁদ এবং পরাগায়নের পর ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করে মাছি পোকা দমন করা যায়। এ ছাড়াও ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রæপের কীটনাশক নির্দেশিত মাত্রায় ১০-১২ দিন পরপর ব্যবহার করে এই পোকার আক্রমণ কমানো যায়। রোগবালাইয়ের আক্রমণ তেমনটি চোখে পড়ে না।

বিশেষ পরিচর্যা : সাধারণত স্কোয়াশ উৎপাদনের জন্য ১৬-২৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা ও শুষ্ক পরিবেশ সবচেয়ে উপযোগী। রাতের তাপমাত্রা ১৭-২১ ডিগ্রি সে. এর কম বা বেশি হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ফুল ঝরে পড়ে ও ফলন কমে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একবারেই ফলন হয় না। অক্টোবর মাসে বীজ বপন করে নভেম্বরে লাগালে দেখা যায় যে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ হতে জানুয়ারি পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা অনেক কমে যায়, ফলে গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এজন্য গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য পলিথিন ছাউনি বা গøাস হাউসে গাছ লাগালে রাতে ভেতরের তাপমাত্রা বাইরে অপেক্ষা বেশি থাকে।

ফসল সংগ্রহ : ফল পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে। তখনও ফলে সবুজ রঙ থাকবে এবং ফল মসৃণ ও উজ্জ্বল দেখাবে। নখ দিয়ে ফলের গায়ে চাপ দিলে নখ সহজেই ভেতরে ঢুকে যাবে।

এ দেশে সবজির উৎপাদন বাড়াতে নতুন এই সুস্বাদু সবজি ফসলটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারে এমনটিই প্রত্যাশা সবার।

 

 

মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি

মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজ আলাপ করবো। মিষ্টি কুমড়া বর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ। কচি মিষ্টি কুমড়া সবজি হিসেবে এবং পাকা ফল দীর্ঘদিন রেখে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। পরিপক্ক ফল শুষ্ক ঘরে সাধারণ তাপমাত্রায় প্রায় ৪-৬ মাস সংরক্ষণ করা যায়। শুধু সবজি হিসেবে নয় মিষ্টি কুমড়ার বীজে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও ওষুধি গুণ।

মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি

 

 

মিষ্টি কুমড়ার জাত :

আমাদের দেশে সাধারণত সুপ্রিমা, সুইটি, ড্রিমগোল্ড, সলিড গোল্ডসহ বেশ কিছু জাতের মিষ্টি কুমড়োর চাষ হয়।

মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য মাটি তৈরি এবং চাষের সময় :

প্রায় সারা বছরই কুমড়ো চাষ করা যায় । কুমড়ার জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন। তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে গেলে গাছের দৈহিক বৃদ্ধির হার কমে যায়। সুনিষ্কাশিত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁআশ বা এঁটেল দোঁআশ মাটি মিষ্টি  কুমড়ো চাষাবাদের জন্য ভালো।

মিষ্টি কুমড়ার চারা  উৎপাদন :

চারা সাধারণত পলিব্যাগে চারা তৈরি করা হয়। এই পদ্ধতিতে চারা তৈরি করা ভাল। পলিব্যাগের আকার ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি হতে হবে। ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর কুমড়োর বীজ বপন করতে হবে। অন্যদিকে ৬:৪ অনুপাতে দোআঁশ মাটির সঙ্গে গোবর-ছাই মিশিয়ে নিয়ে বীজতলা তৈরি করে নিতে হবে।

 

 

মিষ্টি কুমড়ার বীজের হার :

মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য সাধারনত এক বিঘা জমিতে ৬৫০-৮০০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। এক হেক্টর জমিতে ৫-৬ কেজি বীজ লাগে।

মিষ্টি কুমড়া চাষের জণ্য জমি তৈরি ও বীজ বপন :

পারিবারিকভাবে আঙিনায় চাষ করতে হলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে মাদা তৈরি করে তাতে বীজ বপন করতে হবে। তারপর চারা বড় হলে মাচা তৈরি করে দিতে হবে বা কোন গাছের সাথে তুলে দিতে হবে।জমিতে চাষ করতে হলে বীজ বপন করার আগে জমি ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে। জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে। এরপর মাটি সমান করে মাদা তৈরি পর বীজ বপন করতে হবে।

মিষ্টি কুমড়ার পরিচর্যা :

জমিতে আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে চারা গাছের গোড়ায় কিছুটা মাটি তুলে দিতে হবে। মাঝে মাঝে নিড়ানি দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে। কৃত্রিম পদ্ধতিতে পুরুষ ফুলের রেণু স্ত্রী ফুলের ওপর ছড়িয়ে দিলে উৎপাদন বাড়বে। গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট শাখা-প্রশাখা বের হয়। এগুলোকে শোষক শাখা বলে। শোষক শাখা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় ও ফলন কমিয়ে দেয়।

 

 

মিষ্টি কুমড়ার সার প্রয়োগ পদ্ধতি :

মূল জমি তৈরির সময় জৈব সার, টিএসপি, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম ও বোরিক এসিডের অর্ধেক অংশ প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক জৈব সার, টিএসপি, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম ও বোরিক এসিড মাদায় প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সমান তিনভাগে ভাগ করে বীজ বপনের সময় প্রথম ভাগ, ১৫-২০ দিন পর দ্বিতীয় ভাগ এবং ৩৫-৪০ দিন পর তৃতীয়ভাগ প্রয়োগ করতে হবে।

জমির উর্বতা বিবেচনা করে সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি (কেজি শতাংশ):

সার কম উর্বর মধ্যম উর্বর বেশি উর্বর
পচাগোবর/কম্পোষ্ট ৩২ ২৪ ২৬
ইউরিয়া ০.৫২ ০.৪৪ ০.৩৬
টিএসপি ০.৮ ০.৭ ০.৬
এমওপি ০.৬০ ০.৫২ ০.৪৪
জ্সিাম ০.৪৪ ০.৩২ ০.২৪
দস্তা ০.০৫ ০.০৩ ০.০২
বোরিক এসিড ০.০৪ ০.০৩ ০.০২
ম‌্যাগনেশিয়াম ০.২ ০.১ ০.০৮
খৈল ২.০ ১.৬ ১.২

 

মিষ্টি কুমড়াতে সেচ প্রদান :

কুমড়া গাছের বৃদ্ধি, ফুল ও ফল ধারণের জন্য মাটিতে রস থাকার প্রয়োজন। শুষ্ক আবহাওয়া থাকলে ৫-৬ দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে। তবে ফল তোলার তিন সপ্তাহ আগেই সেচ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। অপরদিকে বর্ষা বা বৃষ্টির পানি যেন বেশি দিন গাছের গোড়ায় জমে না থাকে সে ব‌্যবস্থা করতে হবে।

 

 

মিষ্টি কুমড়ার আগাছা দমন :

জমিতে আগাছা জমলে তা দমন করে দিতে হবে। আগাছা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং মাটি থেকে পুষ্টি শোষন করে নেয়। তাই জমিতে আগাছা দমন করতে হবে।

মিষ্টি কুমড়ার পোকা ও রোগ দমন :

কুমড়া জাতীয় গাছের বিভিন্ন পোকার মধ্যে লাল পোকা, কাঁটালে পোকা এবং ফলের মাছি উল্লেখ্যযোগ্য। এ পোকা দমনের জন্য সেভিন। ডায়াজিনন প্রয়োগ করা যেতে পারে। আর এ জাতীয় সবজির রোগের মধ্যে পাউডারি মিলডিও, ডাউনি মিলডিউ ও এনথ্রাকনোজ প্রধান। এসব রোগে দুই সপ্তাহ পর পর ডায়াথেন প্রয়োগ করতে হবে। মিষ্টি কুমড়ায় জাবপোকার আক্রমণে কুমড়ার বাড়ন্ত ডগা ও পাতা হলুদ হয়ে যায়। গাছ তার সতেজতা হারিয়ে ফেলে এবং ফলন গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাবপোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়। নিমবীজের দ্রবণ বা সাবানগোলা পানি স্প্রে করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়।

 

 

মিষ্টি কুমড়ার ফসল সংগ্রহ:

বীজ বপণের দুই মাসের মধ্যে কুমড়ার গাছ ফল ধরতে শুরু করে এবং রোগাক্রান্ত না হলে আড়াই মাসব্যাপী ফল দিয়ে থাকে। পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সবজি হিসেবে খাওয়ার উপযোগী হয়। কুমড়ার ফল সংগ্রহের সুনির্দিষ্ট কোনো পর্যায় নেই। ব্যবহারের উদ্দেশ্য অনুযায়ী অপক্ক ও পরিপক্ক ফল পাড়া হয়। ফল যত বেশি পাড়া হয়, ফলন তত বেশি হয়। সবজি হিসেবে ব্যবহার করতে হলে ওজন আধা কেজি হলেও ফল সংগ্রহ যায়। ফল পরিপক্ক হলে হালকা হলুদ রং ধারণ করে। ফল পাকাতে চাইলে শেষের দিকে গাছে দিতে হবে। ফল পাকালে হেক্টর প্রতি ফলন কমে যায়। তবে সবজি হিসেবে ফল সংগ্রহ করলে হেক্টর প্রতি ২০ টন ফলন পাওয়া যায়।

 

 

মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা :

ফাইবারজাতীয় হওয়ায় মিষ্টি কুমড়া সহজেই হজম হয়। হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে এটি। এছাড়া ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও পরিপাক নালীর খাদ্য সঠিক উপায়ে সরবরাহেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই সবজি। মিষ্টি কুমড়া ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ থেকে দূরে রাখে। স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে মিষ্টি কুমড়া। শরীরে শক্তি ও পুষ্টি জোগায়, ওজন কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। মিষ্টি কুমড়া শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে তাই ফলে লিভারও ভালো থাকে।

মিষ্টি কুমড়া রোগ প্রতিরোধ করে

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মিষ্টি কুমড়া একটি অত্যন্ত কার্যকরী। প্রতিদিন এই খাবারটি খেলে রোগ ব্যাধির সংক্রমণ কমে যায়। এতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন ই মানবদেহে ক্যানসার ও আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। মিষ্টি কুমড়ায় থাকা ভিটামিন সি রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সর্দি-কাশি, ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

মিষ্টি কুমড়া হাই প্রেসার কমায়

যাদের হাই প্রেসার রয়েছে তারা নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেতে পারেন। কারণ মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে। আর এটি আমাদের শরীরে হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তা ছাড়া মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

মিষ্টি কুমড়া চোখ ভালো রাখে

মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ বা বিটাক্যারোটিন রয়েছে। যেটি চোখের জন্য খুবই ভালো। আমাদের চোখের রেটিনার বিভিন্ন অসুখ প্রতিরোধে মিষ্টি কুমড়া খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু চোখের অসুখ নয়, ভিটামিন এ এর অভাবজনিত অন্যান্য রোগেও মিষ্টি কুমড়া উপকারী। তাই চোখ সুস্থ ও সচল রাখতে খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন মিষ্টি কুমড়া রাখতে পারেন।

মিষ্টি কুমড়া ত্বক উজ্বল করে

মিষ্টি কুমড়া ত্বক উজ্বল করতেও সাহায্য করে। এতে বিদ্যমান ভিটামিন এ ও সি চুল এবং ত্বক ভালো রাখে। নিয়মিত এই সবজি খেলে উজ্জ্বল চুল ও চকচকে ত্বকের জন্য উপকারী। তা ছাড়া বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করতেও মিষ্টি কুমড়া সাহায্য করে। এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে জিংক ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো রাখে ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

মিষ্টি কুমড়া খাদ্য হজমে সাহায্য করে

মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার আছে যা সহজেই হজম হয়। এটি হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও পরিপাক নালীর খাদ্য সঠিক উপায়ে সরবরাহে এই সবজির তুলনা হয় না।

মিষ্টি কুমড়া ডায়াবেটিসেও উপকারী

শরীরে নিয়মিত ইনসুলিন সরবরাহ করে এবং ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ চাপ কমায়। এ ছাড়া হজমে সাহায্য করে এমন প্রোটিনও সরবরাহ করে কুমড়োর বিচি। ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

মিষ্টি কুমড়া বয়সের ছাপ কমায়

এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক ও আলফা হাইড্রোক্সাইড। জিংক ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো রাখে ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করতেও মিষ্টি কুমড়া সাহায্য করে।

 

 

লাল শাক চাষ পদ্ধতি

লাল শাক চাষ পদ্ধতি , বাংলাদেশে লাল শাক অত‌্যন্ত জনপ্রিয়। এ কারণে দেশের প্রায় সকল অঞ্চলে লাল শাক চাষ হয়। লাল শাক অত‌্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। একইসাথে এটি অত‌্যন্ত সুস্বাদু। এ কারণে ছেলে-বুড়ো সবার কাছেই এই শাক জনপ্রিয়। ইংরেজিতে একে Red Amaranth বলা হয়। বৈজ্ঞানিক নাম Anaranthus oleraceus. রান্নার পর গাঢ় লাল রঙ ধারণ করে লাল শাক। বাণিজ্যিকভিত্তিতে লাল শাক চাষ ও বাজারজাত করার মাধ‌্যমে যে কেউ নিজের কর্মসংস্থান ব্যবস্থা করতে পারেন।

লাল শাক চাষ পদ্ধতি

লাল শাকের জাত :

লাল শাকের বিভিন্ন জাতের মধ‌্যে আলতা পেটি ২০, রক্ত লাল, বারি লালশাক ১, ললিতা, রক্তরাঙ্গা, পিংকি কুইন, রক্তজবা ও স্থানীয় জাতই উল্লেখযোগ‌্য।

লাল শাক চাষের সময় :

বছরের সব সময়েই লাল শাক চাষ করা যায়। তবে ভাদ্র থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত দেশব‌্যাপী সবচেয়ে বেশি চাষ হয় লাল শাকের।

লাল শাক চাষের জন্য মাটির প্রকৃতি :

প্রায় সব ধরনের মাটিতে লাল শাকের উৎপাদন হয়। তবে বেলে দোঁ-আশ থেকে এঁটেল দোঁ-আশ মাটিতে ভালো ফলন হয়। তাছাড়া যেখানে পানি জমে না, এমন জমি লাল শাক চাষের জন্য উপযোগী।

লাল শাকের বীজবপন পদ্ধতি :

জমি ভাল করে চাষ ও মই দিয়ে সমান করার পর ১ ভাগ বীজের সাথে ৯ ভাগ শুকনা ছাই মিশিয়ে হালকাভাবে ছিটিয়ে লাল শাকের বীজ বুনতে হয়। লাইন করে অথবা সারি করে বুনতে হলে ১৫ থেকে ২০ সেন্টমিটার দূরে দূরে বেড বানাতে হবে। এরপর কাঠি দিয়ে ১.৫ থেকে ২.০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত গভীর করে বীজ বুনতে হয়। পরে সেসব বীজ মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

 

 

লাল শাকে সার প্রয়োগ :

গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে লাল শাক চাষের জমিতে প্রয়োজন মতো জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকে। জৈব সারের পাশাপাশি অন‌্যান‌্য সারের প্রয়োগও করতে হবে।

সারের পরিমাণ :

সার এক শতকে হেক্টর প্রতি
গোবর ৪০ কেজি ১০ টন
ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম ১২৫ কেজি
টিএসপি ৩০০ গ্রাম ৭৫ কেজি
এমওপি ৪০০ গ্রাম ১০০ কেজি

 

সার প্রয়োগের নিয়ম :

বীজ বোনার আগেই সব ধরনের সার মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে এতে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় এবং সার জমির প্রতিটি ইঞ্চিতে সমানভাবে ছড়িয়ে যায়। যে কারণে পুরো জমি থেকেই সমানহারে সুপুষ্ট আবাদ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

লাল শাকের পরিচর্যা :

জমিতে চারা গজানোর পর তা ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। যেসব স্থানে বীজের পরিমাণ বেশি পড়ে, সেখানে চারার পরিমাণ ঘন হয়। এসব ঘন জায়গা থেকে চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে।

বীজ ছিটিয়ে বোনা হলে প্রতি বর্গমিটারে ১০০ থেকে ১৪০টি গাছ রাখলে ভালো হয়। সারিতে বোনা হলে প্রতি লাইনে ৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে গাছ রাখলে লাল শাকের ফলন ভালো হয়। ৪-৫ দিন পর পর জমিতে সেচ দিতে পারলে দ্রুত বাড়ে লাল শাকের চারা। তবে মাঝে মাঝেই জমির আগাছা পরিষ্কার করে মাটি আলগা করে দিতে হবে।

লাল শাকের রোগবালাই ও প্রতিকার :

লাল শাকের রোগবালাইয়ের মধ‌্যে প্রধানত দুটি রোগই দেখা যায়। এর মধ‌্যে একটি হলো শুয়া পোকার আক্রমণ, অপরটি মরিচা রোগ।


লাল শাকে শুয়া পোকার আক্রমণ:

লাল শাকের রোগবালাইয়ের মধ‌্যে প্রধান শত্রু হলো শুয়া পোকা। এ পোকা গাছের পাতা খেয়ে ফেলে। তাই আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না। এ পোকার হাত থেকে ফসল বাঁচাতে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি, রক্সিয়ন ৪০ ইসি, ইকালাক্স ২৫ ইসি ওষুধগুলোর যেকোন একটি হেক্টর প্রতি ১.১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।


লাল শাকে মরিচা রোগ আক্রমণ :

লাল শাকের অন‌্যতম রোগের আরেকটি হলো মরিচা রোগ। শুধুমাত্র শিকড় ছাড়া গাছের সকল অংশই এ রোগে আক্রান্ত হয়। পাতার নিচে সাদা অথবা হলুদ দাগ দেখতে পাওয়া যায়। পরে সেগুলো লালচে বা মরিচা রং ধারণ করে। এতে পাতা মরে যায়। এ রোগের হাত থেকে ফসল বাঁচাতে প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম ডাইথেন এম – ৪৫ ওষুধ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

লাল শাকের ফলন :

নিয়ম মেনে এবং সঠিক পরিচর্যা করলে প্রতি শতকে ৩০ থেকে ৪০ কেজি এবং হেক্টর প্রতি ৫ থেকে ৬ টন শাক পাওয়া সম্ভব।

লাল শাকের ফসল সংগ্রহ :

বীজ বোনার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে শাক খাওয়ার উপযুক্ত হয়। একসাথে শাক সংগ্রহ না করে ধীরে ধীরে সংগ্রহ করা ভালো। তবে বাণিজ‌্যিকভাবে শাক চাষ করলে অনেক কৃষক একবারেই জমির সব শাক তুলে ফেলতে পারেন। এতে আরেকটি ফসল চাষে জমি প্রস্তুত করতে সুবিধা হবে।

 

লাল শাকের পুষ্টিগুণ :

লালশাকে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অন্য শাকের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। দাঁতের সুস্থতা, হাড় গঠন, গর্ভবতী এবং প্রসূতি মায়েদের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে লাল শাক উপকারী। লাল শাকে থাকা প্রচুর ভিটামিন দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে ব‌্যাপক উপকারী। লালশাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বা আঁশ থাকে, যা হজমে সাহায্য করে ফলে স্বাভাবিকভাবেই বদ-হজমের আশঙ্কা কমে। রক্তশূন্যতা রোধ করতে লাল শাক অত‌্যন্ত উপকারী। লাল শাকের এন্টি অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। কিডনি ভালো রাখতে ও কিডনি পরিষ্কার রাখতে লাল শাক খুব ভালো কাজ করে। চুলের স্বাস্থ্যের জন্য লাল শাক অনেক উপকারী। লাল শাক রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

 

ওলকচু চাষ করার পদ্ধতি

ওলকচু চাষ করার পদ্ধতি , ওলকচুর চাষ পদ্ধতি সঠিকভাবে না জানার কারণে চাষিরা তাদের কাঙ্খিত ফলন পান না। ওল মাটির নিচে জন্মানো একটি সবজি। আমাদের দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই ওলকচুর চাষ হয়ে থাকে। ওল কচুতে পুষ্টি ও ওষুধি গুণ উভয়ই বিদ্যমান। ওল কচু তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। আসুন জেনে নেই ওলকচু চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে-

ওলকচু চাষ করার পদ্ধতি

জলবায়ু ও মাটির গুণাগুণ

ওলকচুর জমিতে অবশ্যই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ছায়া থাকলে ভালো হয় না। ওল কচুর গাছ ভালোভাবে বৃদ্ধির জন্য ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা ও বার্ষিক ১০০-১৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন। মাটির নির্বাচনের ক্ষেত্রে এঁটেল দোআঁশ,  দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি ওলকচু চাষের জন্য উপযোগী।

ওলকচুর জাত

বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের ওলকচুর চাষ করা হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে ‘মাদ্রাজি’ জাতের ওলকচু উৎকৃষ্ট মানের। তবে আমাদের দেশে এখনও ওলকচুর তেমন কোনও নির্দিষ্ট জাত আবিষ্কার করা যায়নি।

জমি তৈরি ও চারা রোপণ

ওলকচু চাষের জন্য প্রথমেই মাটি ভালোভাবে চাষ করে নিতে হবে ও মই দিয়ে মটি ঝুরঝুরে করে মই দিয়ে মাটি চেপে দিতে হবে। মাঘ মাসের মাঝামাঝি ও ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি ওলকচুর বীজ বপনের জন্য উপযুক্ত সময়। প্রয়োজনে মধ্য-চৈত্র থেকে মধ্য-বৈশাখ মাসেও লাগানো যায়। তবে এরপরে রোপণ করলে ফলন কমে যায়।

জমি থেকে সাধারণত কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে ওল তোলা শুরু হয়। তখন ওলের চারপাশে যে মুখি জন্মে সেগুলো সংগ্রহ করতে হবে। এসব মুখি থেকেই চাকি তৈরি হয়। চাকির আকার যত বড় হয় ওল তত বড় হয়।

ওলকচু চাষে সার প্রয়োগ

ওলকচুর চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর প্রতি শতক জমির জন্য ১.২ কেজি টিএসপি, ০.৫ কেজি গোবর ও ০.৩ কেজি ইউরিয়া সার মাটির সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। প্রতি গর্তের মাটিতে কী পরিমাণ সার মেশাতে হবে তা নির্ভর করে একরপ্রতি গর্তের সংখ্যার ওপর। সারের মাত্রা একর প্রতি ৩০ কেজি ইউরিয়া, ১২০ কেজি টিএসপি, ৫০ কেজি এমওপি। সার মেশানো মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে।

সারের মাত্রা

সারের মাত্রা একর প্রতি ৩০ কেজি ইউরিয়া, ১২০ কেজি এসএসপি, ৫০ কেজি এমওপি। প্রতি গর্তের মাটিতে কী পরিমাণ সার মিশাতে হবে তা নির্ভর করবে একর প্রতি গর্তের সংখ্যার ওপর। মোট সারের পরিমাণকে একর প্রতি গর্তের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে গর্ত প্রতি সারের পরিমাণ বের করে নিতে হবে। সার মিশানো মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। ভরাট করার সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন মাটিতে ভালো ‘জো’ থাকে। ভরাটের পর গর্তের মুখ মাটি দিয়ে সামান্য উঁচু করে ঢিবির মতো করে দিতে হবে।

এতে সুবিধা হলো, গর্তের মধ্যে অনেক সময় বৃষ্টির জল জমে ‘চাকি’ পচে যায়। ঢিবি তৈরির ফলে এ সম্ভাবনা কমে যায়। ‘চাকি’ থেকে মাটির ওপরে চারা বেরিয়ে আসতে বেশ সময় লাগে। তাই এ সময় সব জমি খড় বা কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখলে ভালো হয়। জমিতে সালফারের অভাব থাকলে একরপ্রতি ২০ কেজি জিপসাম সার এবং সুযোগ থাকলে ১০০ কেজি ছাই ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যায়।

চারা গজানোর পর চারা যাতে ভালোভাবে মাটির ওপরে পাতা ছড়াতে পারে সে জন্য কচুরিপানা বা খড় মুখের কাছে সামান্য আলগা করে ঢেকে দিতে হবে। চারা গজানোর এক মাস পর একর প্রতি ২৫ কেজি ইউরিয়া ও ২০ কেজি এমওপি সার সেচের পর গাছের চারপাশে খড় বা কচুরিপানার নিচে দিতে হবে। কিছু দিন পর গোড়ার মাটি হালকা করে কুপিয়ে দেওয়া যেতে পারে। তবে লক্ষ রাখতে হবে এতে শিকড় যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ‘চাকি’ ক্রমশ ওপরের দিকে বাড়তে থাকে। অনেকেই বলে থাকেন, ওলের আকার-আকৃতি অনেকটা গর্তের আকারের ওপর নির্ভর করে।

ওলকচু চাষে সেচ ও পানি নিষ্কাশন

ওলকচু চাষে প্রয়োজনীয় সেচের ব্যবস্থাও করতে হবে। বীজ লাগানোর পরে যদি বৃষ্টিপাত না হয় তবে সেচ দিতে হবে। দুই সারি বা প্রতি সারির পাশ দিয়ে হালকা নালা তৈরি করে দিতে হবে যাতে সহজেই বৃষ্টির পানি যেতে পারে। ওলের জমিতে পানি জমতে দেয়া যাবে না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ওলকচু চাষে  আগাছা ও নিড়ানি

ওলকচু চাষে সময়মত আগাছা দমন ও নিড়ানি দিতে হবে। ধান, গমের খড় বা কচুরিপানা দ্বারা আচ্ছাদন দিয়ে ফলন অনেক গুণ বৃদ্ধি করা যায় এবং সহজেই আগাছা দমন করা যায়। চারা গজানোর পর আগাছা দমন করতে হবে।

ওলকচু চাষে পোকামাকড় ও রোগদমন

ওলকচুর কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই দ্বারা তেমন আক্রান্ত হয় না । তবে মাঝে মধ্যে ওলকচুতে লিম্ফ ব্লাইট কলার রট ও মোজাইক রোগ দেখা দেয়। আবার গোঁড়া পচা রোগ ওলের প্রধান ক্ষতিকর রোগ। চাকি লাগানোর আগে ছত্রাকনাশক ব্যাভিস্টিন (Bavistin) দিয়ে তা শোধন করে নিলে এ রোগ কম হয়। কচু মুখি কার্তিক মাস থেকে অগ্রহায়ণ মাসের দিকে পরিপক্ব হয়ে থাকে। ওলকচু লাগানোর পর প্রায় ৭ থেকে ১২ মাস পর সংগ্রহ করা যায়। গোড়ার মাটি সরিয়ে ওল সংগ্রহ করা যায়।

 

শালগম চাষের সহজ ও সঠিক পদ্ধতি

শালগম চাষের সহজ ও সঠিক পদ্ধতি , শালগম কমবেশি সবার কাছেই পরিচিত। এটি সাধারণত নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় উপযোগী। কম তাপমাত্রায় এটি ভালো জন্মে। এই গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রচুর আলো দরকার হয়ে থাকে। তাপমাত্রা বেশি হলে ফসলের মান কমে যায়। স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। মূল আঁশময় হয়ে যায়। আবার বেশি বৃষ্টিপাত ও শালগম চাষের জন্য ক্ষতিকর। আজ আপনাদের সাথে শালগম চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই শালগম চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন:

শালগম চাষের সহজ ও সঠিক পদ্ধতি

 

শালগম চাষের জন্য জমি ও মাটি:

শালগম চাষে জমি অধিক আলো যুক্ত হতে হবে। শালগম চাষে সাধারণত বেলে দোআঁশ মাটি বেশি উপযোগী।

শালগম চাষের সময়:

শালগম চাষ করার উপযুক্ত সময় হলো রবি মৌসুম। শালগম গাছ বৃষ্টিপাত সহ্য করতে পারে না। চারা কচি অবস্থায় যদি বৃষ্টি হয় তাহলে ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই শালগম এমন সময় চাষ করতে হবে যখন বৃষ্টি পাত না হয়। সাধারণত নভেম্বর মাসের প্রথম থেকে ডিসেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত শালগমের বীজ বপন করার উপযুক্ত সময়।

শালগম চাষের জন্য জমি তৈরি:

জমিতে বীজ বপন করার আগে জমি ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে। জমিতে ৪-৫টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে। তারপর বীজ বপন করতে হবে।

শালগম চাষের জন্য বীজ প্রস্তুত:

উন্নত ফলন পেতে হলে ভালো মানের বীজ বাছাই করতে হবে। বীজগুলো ৫% লবণের দ্রবণে ডুবিয়ে রাখতে হবে। তাহলে নিম্নমানের বীজগুলো ভেসে উঠবে এবং ভালো বীজগুলো দ্রবণের নিচে থাকবে। এভাবে ভালো বীজ বাছাই করা যাবে।

শালগম চাষের জন্য বীজ শোধন:

বীজ বপন করার আগে বীজ শোধন করে নিতে হবে। বীজ শোধন করে নিলে বীজ বাহিত রোগ দ্বারা ফসল আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে না। বীজগুলো প্রথমে একটু বেশি গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর একবারে খুব ঠাণ্ডা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া বীজগুলো পটাসিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট দ্রবণেও ভিজিয়ে নিয়ে শোধন করা যাবে।

শালগম চাষের জন্য বীজ বপন:

বীজ বপন করে আবার চারা রোপণ করে শালগমের চাষ করা যায়। তবে চারা রোপণ করতে গেলে অনেক সময় প্রধান শেকড় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই চারা রোপণ পদ্ধতি না ব্যবহার করাই ভালো। ভালো মানের বীজ বপন করার ৪০-৫০ দিনের মধ্যেই ফসল সংগ্রহের উপযোগী হয়ে থাকে। বীজ সারিতে বপন করতে হবে। এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হবে ৩০ সেমি। এক চারা থেকে আরেক চারার দূরত্ব হবে ২০ সেমি।

শালগম চাষের জন্য বীজের হার:

বীজ বপন করলে এক শতক জমিতে ১২ গ্রাম চারা প্রয়োজন হতে পারে। চারা রোপণ করলে এক শতক জমিতে ২.৫ গ্রাম চারা করা যেতে পারে।

শালগম চাষের জন্য সার ব্যবস্থাপনা:

উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে। এক হেক্টর জমিতে গোবর দিতে হবে ১০ টন, ইউরিয়া সার ১৫০ কেজি, টিএসপি দিতে হবে ১২৫ কেজি, পটাশ দিতে হবে ১৭৫ কেজি। তবে যদি আগাম জাত চাষ করা হয়ে থাকে তাহলে ফসল লাগানোর সময় সব সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। আর নাবি জাত চাষ করলে ইউরিয়া সার ও পটাশ সার জমিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। বীজ বপন করার ৩০ দিন পর প্রথম কিস্তি সার প্রয়োগ করতে হবে। তখন ইউরিয়া দিতে হবে ১৫০ গ্রাম ও এমওপি দিতে হবে ১৫০ গ্রাম। আর বীজ বপন করার ৪৫ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি দিতে হবে আরও ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১৫০ গ্রাম এমওপি। প্রতিবার সার প্রয়োগ করার পর জমিতে সেচ দিতে হবে।

শালগম চাষে সেচ প্রয়োগ:

উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে সেচ দিতে হবে। সেচ দেওয়ার পর জমিতে জো আসলে মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে। জমিতে চারা রোপণ করার পর প্রয়োজন অনুযায়ী এক সপ্তাহে দুটি সেচ দিতে হবে। তারপর ৭-১০ দিন পর পর সেচ দিলে হবে। জমিতে সেচ ঠিকমত দিতে হবে কারণ ফসলের আর্দ্রতা মাটির আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে। জমিতে জলের পরিমাণ কম হলে ফলগুলো তিতা স্বাদ যুক্ত হয়ে যেতে পারে। আবার পানি বেশি হলে ফলের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং পানি জলময় হয়ে যেতে পারে। তাই শালগম চাষে মাটিতে জলের পরিমাণ ঠিক রাখা খুব জরুরি।

আগাছা দমন: জমির আগাছা ঠিক মত পরিষ্কার করে দিতে হবে। জমিতে আগাছা জমে থাকলে ফসলের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। জমি নিড়ানি দিয়ে গোঁড়া আলগা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে গোঁড়ায় মাটি দিয়ে দিতে হবে।

রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনা: শালগম চাষে কাটুই পোকা ক্ষতিকারক। এ পোকা চারা গাছ কেটে নষ্ট করে ফেলে। তাই এ পোকা দমন করার জন্য ৫ লিটার জলে ১.৫ চা চামচ পরিমাণ ডায়াজিনন নিয়ে মিশাতে হবে। তারপর তা স্প্রে করতে হবে জমিতে। এ ছাড়া জাব পোকা, শুয়ো পোকা ও গাছের পাতা খেয়ে পাতা নষ্ট করে ফেলে। এর জন্য ম্যালাথিয়ন পরিমিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ: শালগম বেশি পরিপক্ব হয়ে গেলে বাজারে আনা যাবে না। তখন সে সব শালগমের মূল আঁশ যুক্ত হয়ে যায় এবং ফসল স্বাদহীন হয়ে যায়। সাধারণত বীজ বপন করার ৪৫-৬০ দিনের মধ্যেই শালগম খাওয়ার উপযু্ক্ত হয়ে থাকে।

শালগম এর ফলন:

এক শতক জমিতে প্রায় ১০০-১২০ কেজি শালগম এর ফলন হয়ে থাকে।

ধুন্দল চাষ পদ্ধতি ও জাত পরিচিতি

ধুন্দল চাষ পদ্ধতি ও জাত পরিচিতি , বাংলাদেশে ধুন্দল (Sponse gourd) চাষ করা হয় সাধারণত সবজি হিসেবে খাওয়ার জন্য। যার বৈজ্ঞানিক নাম Luffa cylindrica এবং পরিবার Cucurbitaceae। আমাদের দেশে দুই ধরনের ধুন্দল পাওয়া যায়। একটি হলো সাধারণত আমরা যেটা খাই। এর শাঁস তিতা নয়, সুস্বাদু এবং নরম। অন্যটি হলো বন্য ধুন্দল, যাকে তিতপল্লা বলা হয়। এর পাকা ফল শুকিয়ে স্পঞ্জের মতো গায়ে সাবান মাখার খোসা তৈরি করা হয়।

ধুন্দল চাষ পদ্ধতি ও জাত পরিচিতি

ধুন্দল চাষ প্রক্রিয়া:

ধুন্দল চাষের জমি:

ধুন্দল চাষে জমির প্রথম শর্ত হচ্ছে উঁচু, পানি জমে থাকে না, গাছের কোনও ছায়া থাকে না এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ ধুন্দুল চাষের জন্য উত্তম। মাটি উর্বর এবং সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়।

ধুন্দল চাষের জন্য বীজের পরিমাণ:

বিঘা প্রতি ৩৩০-৪০০ গ্রাম (শতক প্রতি ১০-১২ গ্রাম) বীজের প্রয়োজন।

ধুন্দল চাষের জন্য জমি প্রস্তুতকরণ:

জমি ৩- ৪ বার ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে ধুন্দুল চাষের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। জমির মাটি ভালো করে আগাছামুক্ত ও ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এরপর ১ ফুট গভীর, ২.৫ ফুট লম্বা এবং ২.০ ফুট চওড়া করে মাদা তৈরি করতে হবে। এক মাদা থেকে অপর মাদার দূরত্ব হবে ৮-১০ ফুট। জমির চেয়ে মাদা কমপক্ষে ৫-৬ ইঞ্চি উঁচু করে তৈরি করতে হবে।

ধুন্দলের বীজ বপন:

বীজ বোনার আগে দেড় থেকে দুদিন ভিজিয়ে রেখে মাদা প্রতি ৪-৫টি বীজ।

ধুন্দল চাষে সার ব্যবস্থাপনা:

ধুন্দলের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য প্রতি শতাংশ (ডেসিমাল) জমির জন্য নিম্নোক্ত হারে সার প্রয়োগ করতে হবে:-

ধুন্দল চাষের জন্য সার প্রয়োগ পদ্ধতি:

সমুদয় গোবর, অর্ধেক টিএসপি ও পটাশ শেষ চাষের সময়। বাকি টিএসপি, পটাশ, সম্পূর্ণ জিপসাম ও অর্ধেক ইউরিয়া মাদার গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া চারার বয়স ৪০-৪৫ দিন হলে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

ধুন্দল চাষে অন্যান্য প্রযুক্তি:

ধুন্দল চাষে সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা:

মাটির অবস্থার ওপর ভিত্তি করে জমিতে সেচ দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে জমিতে যেন অতিরিক্ত পানি না জমে থাকে। থাকলে তা বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

ধুন্দল পরিচর্যা:

প্রতি মাদায় ৩-৪টি সুস্থ-সবল গাছ রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে। গাছ বৃদ্ধির সাথে সাথে জমিতে গাছের গোঁড়ার পাশে বাঁশের কুঞ্চী বা কাটি পুতে দিতে হবে। যাতে করে মাচায় বা জাংলায় সহজে উঠতে পারে। জমিতে মাচা ৩-৪ ফুট উঁচু করে দিলে ভালো হয়। জমিতে আগাছা জন্মালে পরিষ্কার করে দিতে হবে। ১৫-২০ দিন র পর প্রতি মাদায় ৫০ গ্রাম হারে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

ধুন্দল চাষে পোকামাকড় ও রোগবালাই:

ধুন্দলের গাছে অনেক ধরনের রোগ হয়ে থাকে। রোগাক্রান্ত ও মরা পাতা সংগ্রহ করে পুঁতে ফেলতে হবে। ফল ছিদ্রকারী পোকা ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। এ পোকার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। চারা অবস্থায় রেড পাম্পকিন বিটিল চারার পাতা ঝাঁঝরা করে খেয়ে ক্ষতি করে। চারার কচি পাতা ও মাথা খেয়ে এরা ক্ষতি করে। ছাই ছিটিয়ে বা মশারির জাল দিয়ে বীজতলায় চারা ঢেকে রেখে এ পোকার আক্রমণ হতে রক্ষা করা যায়। এ ছাড়া কাঁটালে পোকাও গাছে আক্রমণ করে থাকে।

ধুন্দল ফল সংগ্রহ:

বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ শুরু করা যায়। শরৎকাল পর্যন্ত ধুন্দল তোলা যায়। ফল বোঁটা কেটে সংগ্রহ করতে হবে। খাওয়ার জন্য কচি থাকতেই সবুজ রঙের ধুন্দল তুলতে হবে। খোসা শক্ত হয়ে এলে তা আর খাওয়ার উপযুক্ত থাকে না।

ধুন্দল ফলন:

রোগমুক্ত, উন্নত জাতের বীজ, আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ও সঠিক নিয়ম অনুযায়ী চাষ করলে শতক প্রতি ১২০-১৪০ কেজি এবং একরপ্রতি ১২-১৪ টন ফলন পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়াও হেক্টর প্রতি ৫০ হাজার ধুন্দুল উৎপাদন করা সম্ভব।