খিরা চাষ পদ্ধতি

খিরা চাষ পদ্ধতি

আজ আমাদের আলোচনার বিষয় খিরা চাষ পদ্ধতি। খিরার রস উপকারী। শরীরের পিএইচ সমতা বজায় রাখে খিরা। সুস্থ থাকে বৃক্ক :বৃক্ক(কিডনি), ইউরিনারি ব্লাডার, লিভার ও প্যানক্রিয়াসের সমস্যায় ডায়েটে খিরা রাখতে পারেন।

খিরা চাষ পদ্ধতি

শসা শুধুমাত্র একটি সতেজ ও বহুমুখী সবজিই নয়, এটি একটি পুষ্টির শক্তিও বটে। হাইড্রেশন প্রচার করা এবং ওজন ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করা থেকে শুরু করে অসংখ্য স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করা, শসা একটি সুষম খাদ্যের একটি মূল্যবান সংযোজন। শসা সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য অসংখ্য সুবিধা প্রদান করে, তা নাস্তা হিসাবে খাওয়া হোক, সালাদে যোগ করা হোক বা ত্বকের যত্নের রুটিনে ব্যবহার করা হোক। সুতরাং, পরের বার যখন আপনি একটি স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য পৌঁছাবেন, নম্র শসা বিবেচনা করুন এবং এর পুষ্টিগত সুবিধাগুলি কাটান।

খিরা / শসার ১২ স্বাস্থ্য উপকারিতা:

খিরা বা শসা খাওয়ার কিছু উপকারিতা নিচে দেওয়া হল:

  • হাইড্রেশন এবং ওজন ম্যানেজমেন্ট: স্বাস্থ্যের জন্য শসা একটি প্রাচীন প্রবাদ। তাদের উচ্চ জল শতাংশ এবং কম ক্যালোরি গণনার কারণে, শসা হাইড্রেটেড থাকার জন্য এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার জন্য একটি চমৎকার পছন্দ। এগুলি কম ক্যালোরি থাকাকালীন পূর্ণতার অনুভূতি প্রদান করে, যা এগুলিকে একটি সুষম খাদ্যের জন্য একটি দুর্দান্ত সংযোজন করে তোলে।
  • হজমশক্তি বাড়ায়: শসায় প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে, যা স্বাস্থ্যকর হজমকে উৎসাহিত করে। ফাইবার মলের জন্য প্রচুর পরিমাণে যোগ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে এবং নিয়মিত মলত্যাগের প্রচার করে। আপনার খাদ্যতালিকায় শসা অন্তর্ভুক্ত করা একটি বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে স্বাস্থ্যকর পাচনতন্ত্র.
  • ত্বকের স্বাস্থ্য: শসার উচ্চ জল উপাদান এবং শীতল বৈশিষ্ট্য ত্বকের স্বাস্থ্য উপকার করে. শসার টুকরো বা শসা-মিশ্রিত পণ্য প্রয়োগ করা রোদে পোড়া ভাব প্রশমিত করতে পারে, ফোলাভাব কমাতে পারে এবং ত্বককে হাইড্রেট করতে পারে। উপরন্তু, শসাতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ত্বকের বার্ধক্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং তারুণ্যের চেহারা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
  • হাড়ের স্বাস্থ্য: শসাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক। পর্যাপ্ত ভিটামিন কে গ্রহণ ক্যালসিয়াম শোষণ উন্নত করতে সাহায্য করে এবং ফ্র্যাকচার এবং অস্টিওপরোসিসের সম্ভাবনা কমায়। তাই মজবুত ও সুস্থ হাড়ের জন্য আপনার খাদ্যতালিকায় শসা অন্তর্ভুক্ত করুন।
  • হার্টের স্বাস্থ্য: শসাতে পটাসিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমায়। উপরন্তু, শসায় উদ্ভিদ যৌগ কিউকারবিটাসিনের প্রদাহ-বিরোধী প্রভাব রয়েছে, যা হৃদরোগকে আরও সমর্থন করতে পারে।
    ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা: শসার গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকে, যা এগুলিকে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত করে তোলে। শসায় থাকা
  • ফাইবার উপাদান হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি রোধ করে। ডায়াবেটিক ডায়েটে শসা অন্তর্ভুক্ত করা রক্তে শর্করার আরও ভাল নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখতে পারে।
  • চোখের মঙ্গল: শসায় রয়েছে বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যেমন বিটা-ক্যারোটিন এবং লুটিন, যা চোখের জন্য উপকারী। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ফ্রি র‌্যাডিকেলগুলি সঞ্চালনের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি থেকে চোখকে রক্ষা করতে সহায়তা করে এবং বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয় এবং ছানি পড়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে।
  • অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য: শসাতে কিউকারবিটাসিনের উপস্থিতি তাদের শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য দেয়। শসা নিয়মিত সেবন শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে, বিভিন্ন অবস্থার উপসর্গ যেমন আর্থ্রাইটিস এবং হাঁপানি দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ: শসায় বিভিন্ন যৌগ রয়েছে, যেমন কিউকারবিটাসিন এবং লিগন্যান, যা গবেষণায় ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই যৌগগুলি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দেয় এবং স্তন, জরায়ু এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার সহ নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়।
  • মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য: শসায় উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েডগুলি জ্ঞানীয় কার্যকারিতা বাড়ায় এবং সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় স্নায়ুজনিত রোগ, যেমন আলঝাইমার রোগ। আপনার খাদ্যতালিকায় শসা অন্তর্ভুক্ত করা একটি সুস্থ মস্তিষ্ক বজায় রাখতে অবদান রাখতে পারে।
  • মৌখিক স্বাস্থ্য: শসা চিবানো লালা উত্পাদনকে উদ্দীপিত করে, যা মুখের অ্যাসিড নিরপেক্ষ করতে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে সহায়তা করে। উপরন্তু, শসার উচ্চ জল শতাংশ মুখ হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে এবং শুষ্ক মুখের ঝুঁকি কমায়।
  • নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করে: মুখের মধ্যে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ বা হ্যালিটোসিসের কারণ হতে পারে। শসায় ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে যা অপ্রীতিকর গন্ধের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে। আপনার খাদ্যতালিকায় শসা অন্তর্ভুক্ত করা সতেজ শ্বাসে অবদান রাখতে পারে।

 

খিরার জাত নির্বাচন:

প্রথমে খিরার ভালো জাতের বীজ বেছে নিতে হবে। যেমন ধরুণ শতাব্দী জাত, যেটা খুব উন্নত জাতের বীজ। শতাব্দী, তাজ ৩৬৫, নওগাঁ গ্রিন, নওগাঁ ৫, ইত্যাদি জাতের মধ্যে হাইব্রিড জাতের যেকোনো একটা বেছে নিতে হবে।

খিরার বীজ জর্মিনেশন:

খিরার বীজগুলো অবশ্যই ৬ ঘণ্টা জলের মধ্যে সুতির কাপড় পেঁচিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপরে জল থেকে আলাদা করে, আরও ছয় ঘণ্টা যদি ওই অবস্থায় রেখে দিতে হবে। এমনটি না করলে সবগুলো বীজের অঙ্কুরোদগম না হবার সম্ভাবনা থাকে।

খিরার জমি তৈরি ও বীজ বপন:

প্রথমত জমির মধ্যে এক ফুট গভীর মাদা তৈরি করতে হবে। মাদার মধ্যে ২-৫ কেজি পরিমানে গোবর দিতে হবে। প্রত্যেকটা মাদার মাটি অবশ্যই ভালোভাবে ঝুরি করতে হবে। জমিতে দুই থেকে তিনবার চাষ দিতে হবে এবং এক থেকে দুইবার মই দিতে হবে।

প্রত্যেকটা মাদার দূরত্ব রাখতে হবে তিন ফুট এবং প্রত্যেকটা মাদার মধ্যে তিন ৩-৪ টি বীজ বপন করতে হবে। বীজগুলো বপন করার ৪ থেকে ৫ দিন পরে বীজ থেকে সব চারা উঠে যাবে। যখন গাছ উঠে যাবে, তখন নিয়মিত জল দিতে হবে। জল বেশি দেয়া হলে চারা মারা যেতে পারে, এটা মনে রাখা খুবই জরুরী।

খিরার গাছে সার প্রয়োগ:

গাছের বয়স যখন ২০-২৫ দিন হবে, তখন রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে।

  • খেয়াল রাখতে হবে গাছের গোড়ায় যাতে সার না পড়ে।
  • গাছের চতুর্দিকে দুই ইঞ্চি বরাবর গর্ত করে রাসায়নিক সার দিতে হবে।
  • গাছের চতুর্দিকে আগাছাগুলো পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
  • প্রথমে যে সার দিতে হবে তা হলো – DAP সার ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম।
  • তারপরে দিতে হবে ইউরিয়া সার ৫০ গ্রাম, প্রত্যেকটা মাদার মধ্যে।
  • প্রত্যেকটা মাদার মধ্যে পটাশ সারটা ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম হারে দিতে হবে।
  • তারপর একটা কীটনাশক দিতে হবে, সেটা হচ্ছে- ফুরাডান। প্রত্যেকটা মাদার মধ্যে পাঁচ গ্রাম করে দিতে হবে।

সার দেওয়ার পর মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং গোড়াটা একটু উঁচু করে রাখতে হবে। এছাড়া সারগুলো দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি দেয়া যাবে না, ১-২ দিন পরে আপনারা জল দিতে হবে। এইভাবে সার প্রয়োগ করলে, খুব দ্রুত গাছে মধ্যে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। চাষে আগ্রহীদের ডিসেম্বর সামনে রেখে পরিকল্পনা করতে হবে। শীতকালে খিরার বাম্পার ফলন ফলে।

খিরার পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্য:

শসায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে যা সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতায় অবদান রাখে। এগুলি জল, পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ এবং ক্যালোরি, চর্বি এবং সোডিয়াম কম। নিচে শসা সম্পর্কে কিছু মূল পুষ্টির তথ্য দেওয়া হল:

  • ভিটামিন এবং খনিজ: শসা ভিটামিন কে এবং সি এর একটি চমৎকার উৎস। ভিটামিন কে রক্ত ​​জমাট বাঁধার জন্য অপরিহার্য এবং হাড়ের স্বাস্থ্য সমর্থন করে. বিপরীতে, ভিটামিন সি কোলাজেন সংশ্লেষণে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। উপরন্তু, শসা পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজের মতো খনিজ সরবরাহ করে, যা সঠিক শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • হাইড্রেশন এবং ডিটক্সিফিকেশন: শসায় প্রায় 96% জল থাকে, যা তাদের একটি চমৎকার হাইড্রেটিং খাবার পছন্দ করে। হজম, বিপাক এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সহ বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপের জন্য ভাল-হাইড্রেটেড থাকা অত্যাবশ্যক। অধিকন্তু, শসা একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক হিসাবে কাজ করে, শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে এবং কিডনির স্বাস্থ্যকর কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস: শসাতে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ট্যানিন সহ বেশ কয়েকটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের সম্ভাবনা হ্রাস করে, যেমন কার্ডিওভাসকুলার ডিজঅর্ডার এবং কিছু কিছু ক্যান্সার ধরণের.

উপরন্তু, শসাতে রয়েছে কিউকারবিটাসিন, শক্তিশালী যৌগগুলির একটি গ্রুপ যা প্রদাহ বিরোধী এবং অ্যান্টিক্যান্সার বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।

বারমাসী হাইব্রিড খিরা শতাব্দী-২:

জাত এর নামঃ
বারমাসী হাইব্রিড খিরা শতাব্দী-২

আঞ্চলিক নামঃ
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠানঃ
Chia Thai Seed Company, Thailand

জীবনকালঃ
০ দিন

সিরিজ সংখ্যাঃ

উৎপাদন ( সেচ সহ ) / প্রতি হেক্টরঃ
০ কেজি

উৎপাদন ( সেচ ছাড়া ) / প্রতি হেক্টরঃ
০ কেজি

জাত এর বৈশিষ্টঃ

  • সারা বৎসর চাষ করা যায়।
  • ফলের রং সবুজ, লম্বা ৫ ইঞ্চি, ওজন ২০০-৩০০ গ্রাম।
  • বীজ বপনের মাত্র ৩০-৩৫ দিন পর থেকে খিরা উঠানো শুরু করা যায়।

চাষাবাদ পদ্ধতিঃ

  • বীজের পরিমাণ : একর প্রতি ১৫০ গ্রাম ( প্রতি শতাংশে ১.৫ গ্রাম)
  • বীজ বপন : ৩ ফুট দূরে লাইন করে ২ ফুট দূরে দূরে একটি করে বীজ বপন করতে হবে। এক জায়গায় একটির বেশি গাছ থাকলে ফলন কম হয়।
  • প্রথম জালি কর্তন : প্রতিটি গাছের প্রথম ২-৩ টি জালি ফুল অবস্থায় ছিড়ে দিতে হবে, এতে গাছের বাড় বাড়তির সুযোগ হবে এবং অনেক বেশী ফলন পাওয়া যাবে। গাছের শাখা প্রশাখা কাটবেন না, কাটলে ফলন কমে যাবে।
  • খুঁটি বা মাচা : খিরা শুকনা মৌসুমে খড় বা নাড়া বিছিয়ে মাটিতে চাষ করা যায় তবে বর্ষা মৌসুমে A টাইপের মাচায় চাষ করতে হবে।
  • সার ব্যবস্থাপনা : শেষ চাষের সময় একর প্রতি প্রচুর পরিমাণে গোবর, ইউরিয়া ৮০ কেজি, টিএসপি ৬০ কেজি, এমওপি ৮০ কেজি, জিপসাম ৫০ কেজি, জিংক সালফেট ৪ কেজি ও বোরাক্স ৪ কেজি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *