ছাদে সবজি চাষ পদ্ধতি

ছাদে সবজি চাষ পদ্ধতি

ছাদে সবজি চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১৬ কোটি যা ২০৫০ সাল নাগাদ ২২ কোটিতে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হয়। বিপুল জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি জমি হ্রাস, ক্রমাবনতিশীল কৃষি বৈচিত্র ইত্যাদি পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা যোগানে ছাদ ও বাড়ীর আঙ্গিনা, খালি জায়গায় ব্যাপক ভিত্তিতে সবজি বাগান করে সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি তথা জনগণের পুষ্টির চাহিদা মিটান সম্ভব।

Table of Contents

ছাদে সবজি চাষ পদ্ধতি

 

 

ছাদের উপর সবজি চাষ নতুন কিছু নয়। এটি সাধারণ সবজি চাষেরই প্রতিরূপ যা একটি সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে করা হয়। বিশেষ করে শহুরে লোকজন তাদের বাড়ির ছাদে টব, বালতি, ড্রাম বা ট্রেতে সীমিত আকারে সবজি চাষ করেন। বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বাড়ির ছাদে বাগান করা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অবশ্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের ছাদে যেসব বাগান দেখা যায় তার অধিকাংশই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে
উঠেছে। পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে বাড়ির ছাদে যে কোন শাকসবজি ফলানো সম্ভব।

টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, ব্রোকলী, ঢেঁড়শ, ডাটা, পুঁইশাক, লাল শাক, কলমী শাক, মুলা, শালগম, পুদিনা পাতা, বিলাতি ধনিয়া, মরিচ (সারা বছর), লাউ, করলা, শসা, ঝিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, সীম, বরবটি ইত্যাদি নানা ধরনের মৌসুমী সবজি ছাড়াও কচু, সজনে, লেবু, পেঁপে ইত্যাদি অনায়াসে উৎপাদন করা যায়।

 

 

ছাদে সবজি বাগানের উদ্দেশ্য

  • ছাদ বাগান সবজি উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
  • নিরাপদ সবজি উৎপাদনের সহজ উপায়।
  • বাড়ির ছাদ ঠাÐা রাখতে সহায়তা করে।
  • জীববৈচিত্র সংরক্ষিত হয় ও পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকে।

 

 

ছাদে বাগান করার জন্য আবশ্যিক বিবেচ্য বিষয়:

  • ছাদে বাগান করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে নিয়মিত পানি সেচ দেয়া।
  • ছাদে বাগানের জন্য গোবর, জৈব সার (কম্পোস্ট), কেঁচো সার (ভার্মিকম্পোস্ট), ট্রাইকোকম্পোস্ট ও কোকোডাস্ট (নারিকেলের ছোবড়ার গুড়া) ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সহজে তিন ভাগ দোয়াশ মাটি, পাঁচ ভাগ গোবর, এক ভাগ ভার্মিকম্পোস্ট সার এবং এক ভাগ কোকোডাস্ট দিয়ে মাটির মিশ্রণ তৈরি করা যায়।
  • বছরে একবার কম্পোস্টযুক্ত নতুন মাটি দিয়ে পুরাতন মাটি বদলিয়ে দিতে হবে।
  • টবে/পাত্রের নিচে ছিদ্র থাকা জরুরী। কয়েকটি ভাঙ্গা চাড়ির টুকরা ছিদ্রের মুখের উপর রেখে টবে মাটি ভরতে হবে।
  • টবে/ড্রামে সবজির ধরণ ও জাত নির্বাচনের পর যৌক্তিকভাবে সাজাতে হয়। ছোট গাছকে সামনে, বড়/লতানো সবজি গাছকে পিছনে রাখতে হবে। যেমন বড় লতান গাছ উত্তর ও পশ্চিম দিকে দিতে হবে।
  • ছাদে বাগান করার ক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল জাতের সবজি চারা ব্যবহার বেশি ফলদায়ক।
  • ছাদে চাষের একটা জরুরী বিষয় হল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। এ জন্য পুরাতন রোগাক্রান্ত, বয়স্ক ডালপালা, পাতা সাবধানতার সাথে কেটে নির্দিষ্ট স্থানে জমা করতে হবে। এতে গাছপালা রোগমুক্ত থাকবে, মানসম্পন্ন ফলন পাওয়া যাবে।
  • আমাদের দেশের আবহাওয়ায় যে কোন ফল জাতীয় সবজিতে পোকা বা রোগের আক্রমণ অহরহ ঘটে থাকে। সেক্ষেত্রে সপ্তাহে কমপক্ষে ২/৩ বার ছাদের বাগান পরিদর্শন করে আক্রান্ত ফল বা ডগা ছেটে ফেলে দিলে পোকা বা রোগের আক্রমণ কমে যাবে এবং ফলনও ভাল পাওয়া যাবে।
  • সহজে পোকামাকড় ব্যবস্থাপনার জন্য আঠালো হলুদ ফাঁদ, আঠালো সাদা ফাঁদ ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী উপযুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে ঘরের ভেতরে, সিড়ি, ব্যালকনি, বারান্দা, কার্নিশ এসব জায়গায় অনায়াসে পাতা জাতীয় সবজি গাছ লাগিয়ে ভাল ফলন পাওয়া যেতে পারে।

 

 

বাড়ির ছাদে সবজি চাষে বিবেচ্য বিষয়সমূহ:

  • ছাদে স্থান নির্বাচন
  • ছাদের আকার
  • সূর্যালোক
  • পানির ব্যবস্থা
  • ছাদের গঠন
  • ছাদের ব্যবহার ইত্যাদি

 

 

ছাদ বাগানে সবজি চাষের জন্য মাধ্যম বা গ্রোয়িং মিডিয়া:

ভাল ফলন পাওয়ার প্রথম শর্ত হল উন্নতমানের গ্রোয়িং মিডিয়া ব্যবহার করা। ছাদে বাগানের জন্য উন্নতমানের কম্পোস্ট সমৃদ্ধ হালকা বুনটের মাটি ব্যবহার করা উত্তম। আবার কিছু কিছু পটিং মিডিয়ার মিশ্রণ যেমন- পিটমস, ভার্মিকুলাইট ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে যেগুলো হালকা, রোগজীবাণু মুক্ত, আগাছা বীজ মুক্ত এবং সুনিষ্কাশন ক্ষমতাসম্পন্ন।

 

ছাদ বাগানে চাষের জন্য আদর্শ গ্রোয়িং মিডিয়ার উদাহরণ:

  • ৫ ভাগ দোয়াশ মাটি + ৫ ভাগ কম্পোস্ট
  • ৩ ভাগ দোয়াশ মাটি + ৫ ভাগ গোবর + ১ ভাগ ভার্মিকম্পোস্ট + ১ ভাগ কোকোডাস্ট
  • ১০০% মাটি ছাড়া মিশ্রণ, যেমন- স্ফ্যাগনাম মশ, ভার্মিকুলাইট, ককোডাস্ট ইত্যাদি।

 

 

 

ছাদ বাগানের জন্য পট বা কনটেইনার:

ছাদ বাগানের জন্য বিভিন্ন ধরনের ও আকারের টব, প্লাস্টিকের/কাঠের বক্স, হাফ ড্রাম বা কনটেইনার ব্যবহার করা যায়। ফসলের আকার আকৃতির উপর ভিত্তি করে কনটেইনারও বিভিন্ন আকারের হতে পারে। নিচে কিছু পটের নামসহ উল্লেখ করা হল।

ছাদ বাগানে টবে সবজি চাষ:

টব বিভিন্ন আকার এবং বিভিন্ন পদার্থের তৈরি হতে পারে। টব মাটির, প্লাষ্টিক বা সিমেন্টের তৈরি হতে পারে। সাধারণত সবজি চাষাবাদের জন্য ১২-১৮ ইঞ্চি ব্যাস এবং ১২-১৮ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট টব ব্যবহার করা যেতে পারে। টবগুলো স্থানান্তর যোগ্য এবং পাতলা বিধায় টবে সবজি চাষ জনপ্রিয়। এসব টবে টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, ব্রোকলী, কুমড়া জাতীয় সবজি (লাউ, করলা, শসা, মিষ্টি কুমড়া) ও সীমের চারা রোপণ করা উত্তম।

ছাদ বাগানে চৌবাচ্চাকৃতি প্লাস্টিক/কাঠ/স্টীল/ইট সিমেন্ট দিয়ে তৈরি পাত্র বা বক্সে সবজি চাষ:

চৌবাচ্চাকৃত পাত্রগুলো প্লাস্টিক/কাঠ/স্টীল/ইট সিমেন্ট দিয়ে তৈরি হতে পারে। এ ধরনের পাত্রগুলো ১০-১২ ইঞ্চি গভীরতা, তিন ফুট প্রস্ত এবং পাঁচ/ছয় ফুট লম্বা আকারের হতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী পাত্রের আকার ছোট বা বড় হতে পারে। এ পাত্রগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী বানিয়ে নিতে হবে বা বাজার হতে ক্রয় করা যাবে।

পাত্রগুলো ছাদের ওপরে কয়েকটি ইট বা অন্য কোন অল্প উঁচু স্থাপনার ওপর রাখতে হবে যাতে পাত্রের নীচে ফাকা থাকে, এতে ছাদের কোন ক্ষতি হবে না। এসব পাত্রে শাক জাতীয় সবজির বীজ সরাসরি বপন ও টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, ব্রোকলী, কুমড়া জাতীয় সবজি (লাউ, করলা, শসা, মিষ্টি কুমড়া) ও সীমের চারা রোপণ করা যেতে পারে।

ছাদ বাগানে হাফ ড্রামে সবজি চাষ:

বড় আকারের ড্রামের মাঝামাঝি কেটে দুই টুকরো করে বড় দুটি ড্রামের টব তৈরি করা যায়। সজনে, কচু চাষের জন্য হাফ ড্রাম ভালো। এগুলো সরাসরি ছাদের ওপর না বসিয়ে কয়েকটি ইটের ওপর বা স্টীলের ফ্রেমে বসানো দরকার।

ছাদ বাগানে মাল্টিলেয়ার বস্তায়/বক্সে সবজি চাষ:

মাল্টিলেয়ার বস্তায়/বক্সে সবজি চাষ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে খাটো শিকড়যুক্ত সবজি নির্বাচন করতে হবে। বিশেষ করে পাতা জাতীয়
সবজি গাছ লাগিয়ে ভাল ফলন পাওয়া যেতে পারে।

উপোরক্ত পাত্রগুলোর নিচে অবশ্যই ছিদ্র থাকা জরুরী। কয়েকটি ভাঙ্গা চাড়ির টুকরা বা নেট ছিদ্রের মুখে দিয়ে পাত্রগুলোতে মাটি ভরতে হবে।

 

 

ছাদে চাষের জন্য সবজি নির্বাচন:

সবজির মৌসুম ও ভোক্তার রুচি অনুযায়ী ছাদে চাষ উপযোগি সবজি নির্বাচন করতে হবে। একটি ভবনের উচ্চতার প্রতি দশ তলা পরপর বাতাসের গতিবেগ দ্বিগুণ হয়। বাতাসের গতিবেগ বৃদ্ধির সাথে সাথে গ্রোয়িং মিডিয়া ও পাতা থেকে পানি উবে যাওয়ার হারও বৃদ্ধি পায়। সুতরাং এ বিষয়টি লক্ষ্য রেখে সবজি নির্বাচন করা উচিৎ।

 

 

ছাদ বাগানে চাষের জন্য চারা উৎপাদন:

গুণগত মানের বীজ সংগ্রহ করার পর সবজি ভেদে বীজ সরাসরি জমিতে বপন বা টবে চারা গজিয়ে তারপর রোপন করতে হবে।

  • সরাসরি বীজ বপন: সাধারণত শাক জাতীয় সবজির ক্ষেত্রে সরাসরি বীজ বপন করতে হয়। যেমন: ডাটা, লাল শাক, কলমী শাক, পালং শাক, পুই শাক, লেটুস, মুলা, গাজর, ধনিয়া। তাছাড়া ঢেঁড়শ চাষেও সরাসরি বীজ বপন করতে হয়।
  • চারা গজিয়ে তারপর রোপন: টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, ব্রোকলী, লাউ, করলা, শসা, মিষ্টিকুমড়া, সীম।
  • চারা উৎপাদন ছায়াবিহীন, পরিষ্কার এবং বাতাস চলাচলের উপযোগী স্থানে করা প্রয়োজন।
  • চারা উৎপাদনের মাটি বেলে দো-আঁশ এবং উর্বর হওয়া উচিত।
  • চারা উৎপাদন পলিথিনের ব্যাগে বা মাটির টবে উৎপাদন করা যায়।
  • আবহাওয়া এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করতে হবে যেন বৃষ্টির পানি ও অতিরিক্ত সূর্যতাপ থেকে চারাকে রক্ষা করা যায়।

 

ছাদ বাগান ব্যবস্থাপনার যন্ত্রপাতি:

ছুড়ি/চাকু, কাঁচি, খুরপি, নিড়ানী, সিক্যাচার, হ্যান্ডি-শাবল, শাবল, বেলচা, কোদাল, হ্যান্ড স্প্রেয়ার, পানির পাইপ, পানির ঝাঝড়ি, ঝাড়–, চালুনী, ট্রলী, ওজন যন্ত্র ছাদের বাগানে কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা আবশ্যক।

 

 

ছাদ বাগানে সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা:

  • ছাদে সেচ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা মাটির আর্দ্রতার জন্য সহজেই গাছপালা নেতিয়ে যাবে তেমনি অতি পানি বা পানির আর্দ্রতার জন্যও গাছ নেতিয়ে মরা যেতে পারে। তাই অবশ্যই ছাদের বাগানে পরিমিত সেচের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
  • ছাদ বাগানে সেচের জন্য স্প্রিংকলার অর্থাৎ ঝাঁঝরি দিয়ে সেচ দেয়া ভালো।
  • পাত্রে চারা লাগানোর পরপরই গোড়ায় পানি দিতে হবে এবং কয়েকদিন পর্যন্ত পরিমিত সেচ দিতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় পানির অভাব হলে ফুল, ফল ধারণ ব্যাহত হয় এবং যেসব ফুল, ফল ধরেছে সেগুলোও আস্তে আস্তে ঝরে যায়। কাজেই প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। অতিরিক্ত পানি বের হওয়ার জন্য নীচের নিকাশ ছিদ্র ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে।

 

 

ছাদ বাগানে বাউনি/জাংলা/মাচা দেওয়া:

লতানো গাছে কাংখিত ফলন পেতে হলে অবশ্যই সুন্দরভাবে বাঁশ/ পিলার দিয়ে জাংলা বা মাচা বানিয়ে টব/প্লাস্টিকের পাত্রে লতানো সবজি আবাদ করা যেতে পারে। মাটিতে চাষ করলে ফলের একদিক বিবর্ণ হয়ে যায়, পচন ধরে এবং প্রাকৃতিক পরাগায়ন কমে যায়। ফলে ফলনও কমে যায়।

 

 

ছাদ বাগানে মালচিং:

সেচের পর মাটিতে চটা বাঁধে। চটা বাঁধলে গাছের শিকড়াঞ্চলে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়। কাজেই প্রত্যেক সেচের পর হালকা মালচ্ করে গাছের গোড়ার মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।

 

 

ছাদ বাগানে আগাছা দমন:

গাছের গোড়ায় আগাছা থাকলে তা খাদ্যোপাদান ও রস শোষণ করে নেয়। গাছে খাদ্যোপাদানের অভাব পড়ে। ফলে কাংখিত ফলন পাওয়া যায় না। তাই সবসময়ই আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।

 

 

ছাদ বাগানের অপ্রয়োজনীয়, বয়স্ক, মড়া শাখা অপসারণ:

গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট ডালপালা হয়। সেগুলোকে শোষক শাখা বলা হয়। তাছাড়া এগুলো ছাড়াও বয়স্ক, মড়া ডালপালা গাছের ফলনে এবং যথাযথ শারীরিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই গাছের গোড়ার দিকে ডালপালাগুলো ধারালো বেøড বা কাঁচি দিয়ে কেটে অপসারণ করতে হবে।

 

 

ছাদ বাগানে পোকামাকড় দমন:

পোকামাকড় ব্যবস্থাপনার জন্য আঠালো হলুদ ফাঁদ, আঠালো সাদা ফাঁদ, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া কিছু পোকা হাত দিয়ে ধরে মেরে ফেলা যায়।

 

ছাদ বাগানে ফল ধারণ বৃদ্ধিতে কৃত্রিম পরাগায়ন:

লাউ, কুমড়া, করলা, ধুনধুল, ঝিঙ্গাতে পরাগায়ন প্রধাণতঃ মৌমাছির দ্বারা স¤পন্ন হয়। উঁচু বিল্ডিং এর ছাদে চাষ করলে মৌমাছির আনাগোনা কমে যায়। সব ফুলে প্রাকৃতিক পরাগায়ন ঘটে না এবং এতে ফলন কমে যায়। তাই হাত দিয়ে কৃত্রিম পরাগায়ন করে ফলন শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব।

 

 

ছাদ বাগানে ফসল সংগ্রহ:

সবজি বাগানে যত সবজি ফল হিসেবে আহরণ/সংগ্রহ করা যাবে ততই সবজি-ফল ধারণ বৃদ্ধি পাবে। তাই কচি অবস্থায় সবজি-ফল সংগ্রহ করা উচিত।

 

 

বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত জনবহুল দেশ। এখানে জনসংখ্যার তুলনায় চাষের জমি খুবই কম। প্রতি বছর এদেশের জনসংখ্যা, আবাসনের জন্য ঘর-বাড়ি, যোগাযোগের জন্য রাস্তা এবং কলকারখানা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দিনদিন কমে যাচ্ছে আবাদি জমি। বাংলাদেশ এই বাড়তি জনসংখ্যার চাপ মোকাবেলার জন্য শুধু আবাদি জমির উপর নির্ভর করলে চলবে না। এ পরিস্থিতিতে বিল্ডিং এর ছাদ চাষের আওতায় আনা যেতে পারে।

পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে বাড়ির ছাদে যে কোন শাক-সবজি ফলানো সম্ভব। টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, ব্রোকলী, ঢেঁড়শ, ডাটা, পুইশাক, লাল শাক, কলমী শাক, মুলা, শালগম, পুদিনা পাতা, বিলাতি ধনিয়া, মরিচ (সারা বছর), লাউ, করলা, শসা, ঝিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, সীম, বরবটি ইত্যাদি নানা ধরনের মৌসুমী সবজি ছাড়াও কচু, সজনে, লেবু, পেঁপে ইত্যাদি অনায়াসে উৎপাদন করা যায়। ছাদে সবজি বাগানের বর্ণিত মডেল অনুসরণ করে সারা বছরই সবজি উৎপাদন করা সম্ভব।

তদুপরি উৎপাদনকালে জৈব সার ব্যবহার করা হয় ও কোন কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না বিধায় এসব সবজি নিরাপদ। তাছাড়া বাড়ির ছাদ ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে এবং জীব বৈচিত্র সংরক্ষিত হয় ও পরিবেশ দূষণ মুক্ত থাকে।

 

ছাদে সবজি বাগানের মডেল:

 

 

সবজির ছাদ বাগান:

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *