মাটির প্রকৃতি অনুসারে ভূমিকর্ষণ ও জমি তৈরির নীতিমালা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় মাটির প্রকৃতি অনুসারে ভূমিকর্ষণ ও জমি তৈরির নীতিমালা

মাটির প্রকৃতি অনুসারে ভূমিকর্ষণ ও জমি তৈরির নীতিমালা

 

 

মাটির প্রকৃতি অনুসারে ভূমি কর্ষণ ও জমি তৈরির নীতিমালা

সব মাটিতে সব রকম ফসল ফলানো যায় না। ফসল ফলানোর উদ্দেশ্যেই ভূমি কর্ষণ করা হয়। তাই মাটির প্রকৃতি অনুসারে ভূমি কর্ষণ করা উচিত। ভূমি কর্ষণের জন্য নিম্নলিখিত নীতিমালা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়।

মাটির বুনট ও গঠন (Soil texture and Structure)

মাটির বুনট তথা মাটিতে বালি, পলি, কর্দম কণা ইত্যাদির উপস্থিতি কতটা আছে তা নির্ণয় করে ভূমি কর্ষণ করা উচিত। মাটির বুনট সম্পর্কে ধারণা থাকলে জমিতে কোন ধরণের ফসলের চাষ করা যাবে তা নির্বাচনে সাহায্য করে। কেননা, যে কোন মাটিতে যে কোন ফসল চাষ করা যায় না। বালি মাটির কণাগুলো বেশ বড়। বালি মাটির দলা গঠন মতা খুব কম ।

এ মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ খুব কম এবং মাটি ফসল উৎপাদনের জন্য উপযোগী নয়। পান্তরে এঁটেল মাটির কণাগুলো খুব ছোট, এর গঠন খুব শক্ত। এঁটেল মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে। এ রকম মাটির পানি ধারণ মতা অনেক বেশি। এ জন্য ফসলের চাষ করতে হলে এঁটেল মাটি থেকে পানি নিষ্কাশনের ভাল ব্যবস্থা থাকা দরকার।

ভিজে অবস্থায় এঁটেল মাটি মাখনের মত নরম হয় এবং কাদা সৃষ্টি করে। কাদা মাটিতে ভূমি কর্ষণ কষ্টকর। কাদা মাটি শুকিয়ে গেলে এমন শক্ত হয় যে লাগুল চালানো বেশ কষ্টকর হয়ে পরে। তবে ধান চাষের জন্য এঁটেল মাটি বেশ উপযোগী। কাদা মাটির উর্বরতা সংর ণ মতা বেশি এবং সেখানে সূJ জীবাণুর কার্যকলাপের হারও বেশি। তাই এ মাটিতে বিশেষ সার প্রয়োগ না করেও ফসল চাষ করা যায়।

যে মাটিতে বালি, পলি ও কাদার ভাগ প্রায় সমান অনুপাতে থাকে, সেই মাটিকে দো-আঁশ মাটি বলে। এ মাটির গঠন, পানি ও জৈব পদার্থের ধারণ মতা এবং বুনটের আকার মাঝারি ধরণের। দো-আঁশ মাটিতে ভূমি কর্ষণ বেশ সহজ। বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা যদি অনুকূল থাকে; রোগ-বালাই, আগাছা ইত্যাদি যদি সময়মত দমন বা প্রতিরোধ করা যায়, তবে দো-আঁশ মাটিতে যে কোন ফসল জন্মানো যেতে পারে।

মাটির বন্ধুরতা (Soil roughness )

যে মাটির উপরিভাগ যত সমতল, সে মাটিতে তত বেশি ফাঁক, ফাটল, চিড় ও গর্ত থাকার দরুন প্রবাহমান পানি (Run off water) কম গড়াবে। সাধারনত সমতল মাটির পানির পরিশোষণ মতা বেশী।

 

চিত্র – ১: ভূমি য়ে মাটির বন্ধুরতার প্রভাব (জনসন ও অন্যান্য, ১৯৭৯)

এ ধারণা থেকে সংর ণ ভূমি কর্ষণ ধারণার উদ্ভব হয়েছে। যদি ফসলের অবশিষ্টাংশ অথবা অন্যান্য জাবরা জাতীয় পদার্থ মাটির উপরে থাকে তাহলে বৃষ্টির পানির প্রবাহে সমতল জমির ভূমি য় কম হয়, ফলে মাটির সংর ণ সহজতর হয়।

ভূমি কর্ষণের দিক (Direction of tillage )

ঢালু জমিতে ফসল বপন ও রোপণ, ভূমি কর্ষণ ইত্যাদি কাজ উপর-নিচ (Up and Down) দিকে না করে আড়াআড়িভাবে (Across করলে ভূমি য় অনেকাংশে কমানো যায়। সংর ণ ভূমি কর্ষণের েত্রে বাটালি চাষ (Chisel ploughing)* উপর-নিচ দিকে না করে আড়াআড়িভাবে চাষ করলে মাটির য় কম হয় ।

 

চিত্র – ২ : ভূমি কর্ষণের দিকের জন্য প্রচলিত ও সংরণ ভূমি কর্ষণে মাটির য়।

বাটালি চাষ (Chisel ploughing): এ পদ্ধতিতে একটি বিশেষ ছুরি আকৃতির যন্ত্রের (বাটালি) সাহায্যে শক্ত মাটির স্তরকে ভেঙ্গে দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে, বাটালি চাষে সাধারণত বেশি গভীরতার (৩০-৬০ সে.মি) মাটির স্তর ভাঙ্গা হয় কিন্তু মাটিকে উল্টিয়ে দেয়া হয় না। ২ নং রেখাচিত্রে দেখানো হয়েছে যে প্রচলিত ভূমিকর্ষণে বাটালি চাষের চেয়ে অনেক বেশি মাটির য়
হয়। আড়াআড়ি চাষে মাটির য় প্রায় অর্ধেক। আড়াআড়ি বাটালি চাষে মাটির য় একেবারেই কম।

বালাই দমন

ভূমি কর্ষণের মাত্রার উপর (Degree of tillage) বালাই দমন অনেকাংশে নির্ভরশীল। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, সংর ণ ভূমি কর্ষণ পদ্ধতিতে আগাছা, পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই দমনের জন্য রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার (Chemical control) উপর সমধিক নির্ভরশীল হতে হয়। সংর ণ ভূমিকর্ষণ পদ্ধতিতে অধিক পরিমাণে ফসলের অবশিষ্টাংশ মাটিতে থাকায় আগাছানাশকের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।

এ রকম ভূমি কর্ষণে চাষের মাত্রা কম থাকায় বিভিন্ন প্রকার বালাই (Pest) ময়লা আবর্জনায় বেঁচে থাকতে পারে এবং পরবর্তী মৌসুমে বালাইয়ের উপদ্রব তীব্র হতে পারে। ধান চাষে মাজরা পোকা (Stem borer) দমনের েত্রে এ রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।

By একাডেমিক ডেস্ক, কৃষি গুরুকুল

কৃষি গুরুকুলের একাডেমিক ডেস্ক

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version