ফসল – পশুপাখি আন্তঃক্রিয়া

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ফসল – পশুপাখি আন্তঃক্রিয়া। কৃষি খামার ব্যবস্থায় ফসল ও পশুপাখি অংগের বিভিন্ন প্রকার সংযোগ ও ক্রিয়ার মাধ্যমে আন্তঃক্রিয়া ঘটে। শস্যমান নির্ধারণ থেকে শুরু করে নানা ধরণের প্রয়োজনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন হবে।

ফসল – পশুপাখি আন্তঃক্রিয়া

 

 

আন্তঃক্রিয়ার সংশ্লিষ্ট বিষয়

খামার ব্যবস্থার যে কোন দুই বা ততোধিক অংগের আন্তঃক্রিয়া আলোচনার পূর্বে সংশ্লিষ্ট কতগুলো বিষয়ে ধারণা নেয়া প্রয়োজন। এগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-

১। খামারের সকল আবাস, ভূমি, শ্রম, পুকুর/ডোবা, পশুপাখি, গাছপালা, যন্ত্রপাতি, মেধা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি সবই সম্পদ (Resources)।

২। একটি খামারে দুটি প্রধান কাজ সম্পন্ন হয়। একটি উৎপাদন (Production) এবং অপরটি ভোগ (Consumption)।

৩। উৎপাদনের মাধ্যমে প্রাপ্ত উৎপাদকসমূহকে চারভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো- দ্রব্য (Product or commodity), উপজাত (By-product), উচ্ছিষ্ট (Residue) এবং বর্জ্য (Waste)।

৪। আন্তঃক্রিয়া নিরূপণে পরিমাণ (Quantity), অর্থ (Money), পুষ্টি উপাদান (Nutrients) ও শক্তি (Energy)- এই চারটি একক ব্যবহার করা যায়।

৫। বর্তমান পুস্তকে আন্তঃক্রিয়া কোনভাবে নিরূপিত না করে সাধারণভাবে ব্যবহার্যতা (Utility) নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

 

আন্তঃক্রিয়ার বিবরণ

খামার ব্যবস্থায় ফসল ও পশুপাখি অংগের বিভিন্ন সংযোগের মাধ্যমে আন্তঃক্রিয়া ঘটে। এগুলো এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। চিত্র ৪-এ ফসল-পশুপাখি আন্তঃসম্পর্ক বুঝানো হলো ।

জৈব-পরিবেশগত সংযোগ (Ecological linkage)

এ ক্ষেত্রে একটি প্রচলন (নিয়ম) অন্য একটি কাজকে প্রভাবিত করে। পতিত জমি বা সাময়িক পতিত জমি এবং ফসল উঠানোর পর C তে পশু বা পাখি ঘাস, খড়, শস্য প্রভৃতি খায়। এই পশুপাখিরা সেখানেই বিষ্ঠা বা মূত্র ত্যাগ করে। এভাবে জমি তথা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় ।

বিনিময় সংযোগ (Exchance linkage )

দুটি খামারের বা বাড়ির মধ্যে ফসলাদি ও পশুপাখির দ্রব্য বা ব্যবহার (কাজ) বিনিময় দ্বারা এটি ঘটে থাকে। যেমন- ডিম কিনে চাউল/ধান দেয়া, হাল-চাষ করে ধান দেয়া ইত্যাদি।

প্রতিযোগিতা সংযোগ (Competition linkage )

এ ক্ষেত্রে একই সম্পদ (ভূমি) ফসল উৎপাদন এবং পশু চারণের উপযোগী হয়ে থাকে। যেমন- উঁচু বা মাঝারি উঁচু জমি। এসব এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভূমি ব্যবহার ঠিক করা হয়, যা খামার বিশেষে ভিন্ন হতে পারে ।

 

 

বিনিয়োগ সংযোগ (Investment linkage )

একটি খামারে পশুপাশি সম্পদ থাকার পাশাপাশি ফসলের ত থাকলে এই সংযোগ সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও ফসল বৃদ্ধিতে উৎসাহের সুযোগ থাকে। অনুরূপভাবে ফসল পশুপাখি পালন ও উৎপাদন বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে উৎসাহ দেয়।

খাদ্য সংযোগ (Food linkage )

বিনিয়োগ সংযোগকে সহায়তা করে খাদ্য সংযোগ। কৃষক পরিবার খাদ্যশস্যের সম্পূরক রূপে মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি বা এগুলোর উৎপাদিত দ্রব্য খেতে পারে।

জৈব সার সংযোগ (Manure linkage )

পশুপাখির বিষ্ঠা, মূত্র, উচ্ছিষ্ট খাদ্য ও বর্জ্য ফসলের জমিতে জৈব সার যোগান দেয়। অধিক জনসংখ্যার চাপে নিবিড় চাষাবাদ এলাকায় এই সংযোগের গুরুত্ব অনেক বেশি ।

পশুশক্তি সংযোগ (Draft linkage)

কৃষি কাজে হালচাষ, মই ও আঁচড়া দেয়া এবং ঘানি টানায়, ই, মাড়াইয়ে বা গাড়ি টানায় ষাঁড়, বলদ, এমনকি অনেক েত্রেই গাভীও ভারবাহী পশুরূপে ব্যবহৃত হচ্ছে।

পশুখাদ্য সংযোগ (Fodder linkage )

ফসলের খড়, অবশিষ্টাংশ, উপজাত (খৈল, ভূষি, কুঁড়া) বা বিভিন্ন শস্য ইত্যাদি পশু বা পাখির বিভিন্ন খাদ্য সরবরাহ করে।

জ্বালানী সংযোগ (Fuel linkage)

 

 

নিবিড় ফসল আবাদকারী এলাকায় ফসলের গোড়া, অবিশিষ্টাংশ, গোবর, শুকনা পাতা, শুকনা ঘাস প্রভৃতি সবই কৃষক পরিবারে জ্বালানীর উৎস। অন্যথায় এগুলো পশুপাখির খাদ্য ও জমির জৈব সার রূপে ব্যবহার করা যেত।

By একাডেমিক ডেস্ক, কৃষি গুরুকুল

কৃষি গুরুকুলের একাডেমিক ডেস্ক

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version