পাট খেতের চারা পাতলাকরণ ও সার প্রয়োগ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় পাট খেতের চারা পাতলাকরণ ও সার প্রয়োগ

পাট খেতের চারা পাতলাকরণ ও সার প্রয়োগ

 

 

পাট খেতের চারা পাতলাকরণ ও সার প্রয়োগ

প্রত্যেক ফসলের বেলায়ই একটি গাছের সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য কতটুকু জায়গার প্রয়োজন অথবা প্রতি একক জমিতে কতগুলো গাছ থাকা উচিত তা জানা না থাকলে ফসলের আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত গাছ থাকলে গাছের পুষ্টিগ্রহণ, পানির চাহিদা পুরণ ইত্যাদিতে ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে পুষ্টিহীনতার জন্য ইন্সিত ফল লাভ হয় না।

অন্যদিকে প্রয়োজনের তুলনায় গাছের সংখ্যা কম হলে গাছ প্রতি ফলন কিছুটা বাড়লেও মোট ফলন অনেক কমে যায়। বিশেষ করে পাট ফসলের বেলায় একক জমিতে গাছের সংখ্যা ফলনের উপর ভীষণভাবে প্রভাব বিস্তার করে। ইন্সিত ফলনের জন্য এক একর জমিতে ১,৭০,০০০ থেকে ১,৭৫,০০০ পর্যন্ত পাট গাছ থাকা বাঞ্ছনীয় ।  পাটবীজ ছিটিয়ে অথবা লাইনে বপন করা হয়।

সাধারণত হেক্টর প্রতি কাঙ্খিত পরিমাণ গাছের সংখ্যার চাইতে কিছু বেশি সংখ্যক গাছ পাবার জন্য বেশি বীজ বপন করা হয়। জমিতে পানির স্বল্পতা, আগাছার প্রাদুর্ভাব, বীজের নিমানের অঙ্কুরোদগম মতা, অতিরিক্ত তাপমাত্রা, অনাবৃষ্টি ইত্যাদি প্রতিকূল পারিপার্শ্বিক অবস্থার জন্য প্রায় সময়ই দেখা যায় অনেক বীজ গজায় না অথবা অনেক চারা অঙ্কুরোদগমের পর ছোট অবস্থাতেই মারা যায়।

প্রয়োজনের তুলনায় চারার সংখ্যা বেশি হলে চারা পাতলাকরণ যত সহজ চারার সংখ্যা কম হলে তা নুতন করে চারা রোপণের মাধ্যমে শূন্যস্থান পূরণ করা তেমন সহজ নয়, বরং খুবই কঠিন। এজন্যই বপনের সময় বীজহার কিছুটা বাড়িয়ে দেয়া হয়। পরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত চারা উঠিয়ে কাঙ্খিত সংখ্যক চারা রেখে দেয়া হয় ।

পাট খেতের চারা পাতলাকরণ (Thinning) পদ্ধতি

পাটের অতিরিক্ত চারার সবগুলো একবারে না উঠিয়ে ধাপে ধাপে উঠাতে হয়। সবগুলো একবারে উঠিয়ে নিলে ফাঁকা গাছে ডালপালা গজাবার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এতে পাটের আঁশ ছড়ানোর সময় আঁশের বেশ কিছু অংশ ছিড়ে গিয়ে পাটখড়িতে আটকে থাকে এবং পাটের ফলন অনেকাংশে কমে যায়। তাছাড়া সবগাছ একবারে পাতলা করে ফেলার পর পরবর্তীতে গাছ রোগ বা পোকা দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাছ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয় না বলে ফলন কম হয় ।

সাধারণত পাটের চারা ২/৩ বারে পাতলা করা হয়। চারার বয়স যখন ১০-১২ দিন এবং উচ্চতা ২-৫ সেন্টিমিটার হয় তখন প্রথমবার পাতলা করুন। প্রথম নিড়ানি দেবার সময়ই পাতলাকরণের কাজটি হয়ে যায়। দ্বিতীয় বার চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন এবং উচ্চতা ৫০-৬০ সেন্টিমিটার হলে অধিক ঘনত্ববিশিষ্ট স্থানের চারা পাতলা করুন।

 

 

এসময় উঠানো গাছগুলো শাক বা গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, অন্যথায় গাছের দু’সারির মধ্যবর্তী স্থানে ফেলে রাখুন, এর ফলে এগুলো পচে গিয়ে মাটিতে জৈব পদার্থ যোগ করে। পাটের উচ্চতা যখন ১ মিটার ছাড়িয়ে যায় তখন তৃতীয় বার পাতলা করুন। এ পাটকে বাছপাট বলা হয় এবং পচিয়ে আঁশও পাওয়া যায়। তবে আঁশ দেখতে সুন্দর হলেও তেমন শক্ত হয় না।

তৃতীয় বার পাতলাকরণের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো একই ব্যাসের পাটগাছ রেখে চিকন গাছগুলো আলাদা করে ফেলা যেন জাগ দেয়ার সময় সবগুলো গাছ একই সময়ে ও সমভাবে পচে ।  প্রথমবার নিড়ানির সাহায্যে এবং পরবর্তীকালে কাঁচি দিয়ে কেটে চারা অপসারণ করুন। বড় চারা টেনে উঠালে শিকড়ের সঙ্গে অনেক মাটি উঠে আসে ও আশপাশের অন্যান্য চারার তি হয় ৷

ধান েতে রোদবৃষ্টি বা ভেজা কিংবা শুকনা যে কোন অবস্থায় নিড়ানি দেয়া যায় কিন্তু পাট ে তে তা অনেক সময় সম্ভব হয় না। পাটেেত নিড়ানি দেয়া বা পাতলাকরণের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখুন যেন মাটি স্যাঁতসেঁতে বা ভেজা না থাকে। ভেজা মাটিতে পায়ের ছাপ বা মাটিতে পা ডেবে গেলে তে প্রবেশ করা ঠিক নয়। এতে পাটের শিকড় ছিড়ে গিয়ে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ।

সার প্রয়োগ

ফাল্গুনী তোষা জাত ছাড়া অন্যান্য জাতের বেলায় বপনের পূর্বে শেষ চাষে হেক্টর প্রতি ৫০ কেজি ইউরিয়া, ২৫ কেজি টিএসপি, ৪৫ কেজি মিউরেট অব পটাশ, ৪৫ কেজি জিপসাম ও ১১ কেজি জিঙ্ক সালফেট সার ভালভাবে মিশ্রিত করে জমিতে ছিটিয়ে দিন।

ফাল্গুনী তোষা পাটের জন্য ১০০ কেজি ইউরিয়া, ৫০ কেজি টিএসপি, ৯০ কেজি মিউরেট অব পটাশ, ৪৫ কেজি জিপসাম ও ১১ কেজি জিঙ্ক সালফেট একইভাবে প্রয়োগ করুন। বীজ বপনের ৪৫-৫০ দিন পরে অন্যান্য জাতের বেলায় ৫০ কেজি ইউরিয়া এবং ফাল্গুনী তোষার জন্য ১০০ কেজি ইউরিয়া শুকনা বালির সঙ্গে মিশিয়ে বিকেলের দিকে উপরিপ্রয়োগ করুন।

 

গোবর সার বা কম্পোস্ট পাওয়া গেলে ফাল্গুনী তোষার জমিতে হেক্টর প্রতি ৯ টন এবং অন্যান্য জাতের বেলায় ৪.৫ টন প্রথম চাষের পর সমভাবে ছড়িয়ে দিন।

By একাডেমিক ডেস্ক, কৃষি গুরুকুল

কৃষি গুরুকুলের একাডেমিক ডেস্ক

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version