আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় বন নার্সারি – যা বনায়ন এর অন্তর্ভুক্ত । অরণ্য বা বন হলো ঘন বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদের দ্বারা ঘেরা একটি এলাকা। বিভিন্ন মাপকাঠির ভিত্তিতে, বনের নানান ধরনের সংজ্ঞা আছে। ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, ২০০৬ সালে অরণ্য চার বিলিয়ন হেক্টর (১৫ মিলিয়ন বর্গ মাইল) বা বিশ্বের জমির প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকা জুড়ে রয়েছে।
Table of Contents
বন নার্সারি
বন নার্সারি
বাংলাদেশে কৃষির লাভজনক যে সব সেক্টর রয়েছে তার মধ্যে নার্সারি পেশা অন্যতম। যে জায়াগায় চারাগাছ উৎপন্ন করে অন্য কোথাও রোপণের আগ পর্যন্ত তা পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, তাকে নার্সারি বলে। আভিধানিক অর্থে বনজ নার্সারি হলো চারা গাছের আলয় বা চারালয়। আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে একটি আদর্শ নার্সারি থেকে সুস্থসবল ও সুন্দর চারা পাওয়া সম্ভব। নার্সারিতে বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা হয়।
আবার আধুনিক পদ্ধতিতে কলম থেকেও উন্নতমানের চারা উৎপাদন করা হয়। বন নার্সারি ব্যবসার মৌসুম হলো বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত। বর্ষাকালে চাৱা সহজেই বাঁচে এবং দ্রুত বড় হয়। এজন্য এ সময়ে চারা বেশি বিক্রি হয়। শীতকালে চারা বড় হয় না এবং গরমের দিনে চারা শুকিয়ে মরে যায়। মূলত আষাঢ়, শ্রাবণ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে ভাল বিক্রি হয়। এ ব্যবসার মাধ্যমে অবসর সময়ে অল্প জায়গায় বেশি চারা উৎপাদন ও বিক্রির মাধ্যমে ভালো টাকা আয় করা সম্ভব।
নার্সারির প্রয়োজনীয়তা
আধুনিক কৃষিতে নার্সারির গুরুত্ব অপরিসীম। নার্সারি ছাড়া কৃষি কাজ অসম্পূর্ণই বলা চলে। এর প্রধাণ কাজ হলো চারা উৎপাদন ও চারার যত্ন নেয়া। তবে প্রকৃতপক্ষে নার্সারিতে বীজ উৎপাদন, অংগজ চারা উৎপাদন, বিভিন্ন রোপন দ্রব্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, জাত উৎপাদন, ক্ষণস্থায়ী গাছের ব্যবস্থাপনা, স্থায়ী গাছের ও বীজ উৎপাদনকারী মাতৃগাছের সঠিক পরিচর্যা করা ইত্যাদি কর্মকান্ড করা হয়।
নার্সারি কেবল উন্নতমানের বীজ ও চারার সরবরাহই নিশ্চিত করেনা জনগনের কর্মসংস্থাসহ পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করে। যে এলাকায় ভাল নার্সারি আছে সে এলাকায় গাছ-পালার সরবরাহ বেশী থাকে।
ফলে মানুষের শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকে। নার্সারির অর্থনৈতিক গুরুত্বও অনেক। ছোট ছোট নার্সারি থেকে বছরে লাখ লাখটাকা আয় করা সম্ভব। কারণ এক বর্গমিটার জায়গায় কয়েক হাজার চারা উৎপাদন করা যায়।
অনেক চারা বিক্রয়ের উপযোগী করতে মাত্র ৩/৪ সপ্তাহ সময় লাগে। আগাম চারা উৎপাদন করতে পারলে লাভও কয়েকগুন বেড়ে যায়। একটি ভাল নার্সারি থেকে অল্প সময়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যায়। তাই নার্সারি স্থাপন করে নিজে লাভবান হওয়া যায়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা যায় এবং দেশকে সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তোলা যায়। আরও যেসব কারণে নার্সারি অপরিহার্য তাহলো-
১। বিভিন্ন বাসের চরা বিপণন ও বিতরণে সুবিধা হয়।
২। সময়মতো উন্নতমানের সুস্থসবল ও বড় চারা পাওয়া যায় ।
৩। স্বল্পবারে অনেক চারা পাওয়া যায়।
৪। কম পরিশ্রম ও কম খরচে চারা উৎপাদন করা যায়। অনেক চারা একসাথে পরিচর্যা করতে সুবিধা হয় ।
৫। এমন অনেক বাঁজ রয়েছে যেগুলো গাছ থেকে ঝরে পড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোপন করতে হয় ।
৬। এসব প্রজাতির জন্য নার্সারি একান্ত অপরিহার্য। যেমন- গর্জন, শাল, রাবার, তেলসুর প্রভৃতি
আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নার্সারির অবদান
১। নার্সারি ব্যবসা করে অনেক লোকের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে।
২। নার্সারিতে উৎপাদিত চারা দিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বনায়ন করা হয় ।
৩। নার্সারিতে বনজ, ফলজ ও ঔষধি উদ্ভিদের চারা উৎপাদন করে জনসাধারণের নিকট বিক্রয় করা হয়। এর ফলে।
৪। বৃক্ষায়ন বৃদ্ধি পায়। উপকূলী সবুজ বেষ্টনী তৈরিতে নার্সারিতে উৎপন্ন চারা রোপন করা হয় । 8.
৫। নার্সারিতে কাজ করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে।
বন নার্সারির ধরন
১। নার্সারি বিভিন্ন ধরনের হয় যেমন-
২। মধ্যম ভিত্তিক নার্সারি স্থায়িত্ব ভিত্তিক নার্সারি
৩। অর্থনৈতিক ভিত্তিক
৪। ব্যবহার ভিত্তিক
১. মাধ্যমভিত্তিক নার্সারি আবার দুই ধরনের
ক. পলিব্যাগ নার্সারি
এ ধরনের নার্সারিতে পলিব্যাগে চারা তৈরি করা হয়। পলিব্যাগ সহজে সরানো যায় বলে চারা খরা, বৃষ্টি ও দুর্যোগ থেকে রক্ষা করা যায়। গাছ থেকে গাছে সংক্রমণ কম হয়। এ পদ্ধতিতে নিবিড়ভাবে চারার যত্ন নেওয়া যায় ।
খ. বেড নার্সারি
নার্সারি তৈরির ও পদ্ধতিতে সরাসরি মাটিতে বেড তৈরি করে চারা উৎপাদন করা হয়। এ নার্সারিতে এক সাথে অল্প জায়গায় অধিক সংখ্যক চারা তৈরি করা যায়। ফলে বীজের অপচয় কম হয়। দ্রুত বর্ধনশীল চারা উৎপাদন ভালো হয়। কোটিং ও মোথা থেকে চারা উৎপাদন সহজ হয়। চারা উৎপাদন বেডের মাটি উর্বর হতে হয় ।
২. স্থায়িত্ব ভিত্তিক নার্সারি দুই ধরনের যেমন-
ক. স্থায়ী নার্সারি
এ ধরনের নার্সারিতে বছরের পর বছর চারা উত্তোলন করার সুযোগ থাকে। স্থায়ী নার্সারির সুবিধা হলো নার্সারির জন্য সঠিক স্থান নির্বাচন করা যায়। গ্রিন হাউজ ও বীজাগার নির্মাণ করা যায় তবে মূলধনের প্রয়োজন বেশি হয়। চারার পরিবহন খরচ বেশি হয় ।
খ. অস্থায়ী নার্সারি
এ নার্সারিতে চাহিদা অনুযায়ী চারা উৎপাদন করা হয়। অসুবিধাটা হলো এ ধরনের নার্সারি সংরক্ষণের বেগ পেতে হয়।
৩. অর্থনৈতিক ভিত্তিতে নার্সারি দুই ধরনের যেমন-
ক. গার্হস্থ্য নার্সারি
এ প্রকারের নার্সারী ব্যক্তিগত বা পারিবারিক প্রয়োজন মেটানোর লক্ষ্যে জায়গায় ব্যক্তি তার নিজ বাড়িতে তৈরী করে থাকে। এতে ব্যক্তি তার প্রয়োজন অনুযায়ী ফুল, ফল বা বনজ চারা উত্তোলন করে ।
খ. ব্যবসায়িক নার্সারি
ছোট চারা বা কলমের চারা উত্তোলন করে বিক্রয়ের জন্য যে নার্সারী স্থাপন করা তাকে ব্যবসায়িক নার্সারী বলে।
৪. ব্যবহার ভিত্তিক নার্সারি
উদ্ভিদের ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে এ ধরনের নার্সারি করা হয়। যেমন- মেহগনি, সেগুন, রেইনটি গাছের চারা উৎপাদনের জন্য তৈরি নার্সারি।
সারসংক্ষেপ
সুস্থসবল ও সুন্দর চারা পেতে অবশ্যই নার্সারি প্রয়োজন। এছাড়াও কৃষক নার্সারির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক উপকৃত হতে পারেন। আমাদের কৃষিপ্রধান দেশ সেহেতু গাছপালা রোপণ ও পরিচর্যার বিষয় সবার কমবেশি ধারণা আছে। তাই নার্সারিতে বিনিযোগ একটি সহজ পদক্ষেপ বলা যেতে পারে।
জমি নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি দেখতে হবে সেটি হলো সুনিষ্কাশিত ও উঁচু জমি নির্বাচন করা। যাতে পানি জমে না থাকে। দোআঁশ মাটি নার্সারি বেড তৈরিতে উত্তম। প্রচুর পরিমাণে আলো বাতাস আছে এমন জমি নার্সারির জন্য বেশ উপযোগী।