খামার পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ও আয় ব্যয়ের হিসাব

খামার পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ও আয় ব্যয়ের হিসাব

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-খামার পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ও আয় ব্যয়ের হিসাব

খামার পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ও আয় ব্যয়ের হিসাব

খামারের পরিকল্পনা

সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে বাসাবাড়িতে পারিবারিক পরিবেশে অথবা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মুরগির নামার স্থাপন করা যেতে পারে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খামার স্থাপন বর্তমানে শিল্প হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। আমাদের দেশে বর্তমানে উলেখযোগ্য সংখ্যক বিভিন্ন আকারের বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠেছে।

উৎপাদনের ভিত্তিতে মুরগির খামার ৪ প্রকার হয়ে থাকে। যথা-

(১) মাংস উৎপাদন খামার বা ব্রয়লার খামার

(২) ডিম উৎপাদন শামার বা লেয়ার খামার

(৩) বাচ্চা উৎপাদন খামার বা হ্যাচারি খামার ও

(৪) বীজ, ডিম উৎপাদন বা ব্রিডার খামার।

 

লাভজনকভাবে খামার স্থাপনে ৩টি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-

১। উন্নত জাত

৩। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।

বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে সঠিকভাবে স্থাপনের পরিকল্পনা তৈরি করতে হয়। খামারের যথাযথ হিসাবরক্ষণ এবং উৎপাদিত পণ্য সঠিক সময়ে বাজারজাতকরণের বিষয়টিও বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হয়। মুরগির খামার স্থাপনের জন্য স্থান নির্বাচন, বাসস্থান, মুরগির জাত নির্বাচন, খাদ্য, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাপনার উপর সামারের লাভ-ক্ষতি নির্ভর করে।

উঁচু সমতল, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে, হাট বাজার থেকে একটু দূরে তবে সংযোগ সড়কের ব্যবস্থা আছে এমন জায়গাতে খামার স্থাপন করা: উত্তম। খামারের প্রকারভেদ ও মুরগির বয়স ও জাতের এবং সংখ্যার ভিত্তিতে ঘরবাড়ি সরঞ্জাম, জনবল ইত্যাদির সংস্থাপন করতে হয়।

 

 

খামার ব্যবস্থাপনা

সুষ্ঠু খামার ব্যবস্থাপনা উৎপাদনের পূর্বশর্ত। ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা ঠিকমতো করা হলে খামারে রোগ-ব্যাধি কম হবে, খাদ্য অপচয় কম হবে এবং উৎপাদন খরচ কমে গিয়ে লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। খামারের কোন কাজ ভবিষ্যতের জন্য ফেলে রাখা যাবে না। নিয়মিত রুটিন অনুসারে দৈনন্দিন কাজসমূহ সম্পন্ন করতে হবে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য নিম্নেবর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।

১। আরামদায়ক বাসস্থান।

২। ঘরের মেঝেতে প্রয়োজনীয় জয়গা।

৩। শুকনো লিটার।

৪। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস।

৫। সুষম খাদ্য এবং প্রয়োজনমতো খাদ্য ও পানির পাত্র।

৬। ডিম পাড়ার বাক্স।

৭। ডিমপাড়া মুরগির ঘরে ১৬ ঘণ্টা আলোর ব্যবস্থা।

৮। নিয়মিত মুরগি বাছাই ও ছাটাই।

৯। স্বাস্থ্য পরিচর্যা।

খামারের নিয়মিত কার্যক্রম

খামারের নিয়মিত কার্যক্রমগুলো হলো:

১। প্রতিদিন সকাল ৮টার মধ্যে পানি ও খাবার পাত্র পরিষ্কার করে পানি ও খাবার দেওয়া।

২। খাবার দেওয়ার সাথে সাথে খামারের সব মুরগি খাবার খাচ্ছে কি-না তা দেখা। কোন মুরগির মধ্যে অসুস্থ্যতার লক্ষণ দেখা গেলে সংগে সংগে আলাদা করা।

৩। দিনে ২-৩ বার ডিম তোলা।

৪। দৈনিকের হিসাব দৈনিক রাখা।

৫। সপ্তাহের কোন নির্দিষ্ট দিনে খাদ্য তৈরি করা।

৬। অন্তত ১৫ দিনের খাদ্য মজুদ রাখা।

৭। নিয়মিত প্রতিষেধক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রেজিস্টারে লিখে রাখা।

৮। অসুস্থ, মৃত ও বাতিল মুরগির হিসাব রাখা।

৯। দৈনিক উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের হিসাব রাখা।

১০। সপ্তাহে ১ দিন লিটার পরিচর্যা করা। বাঁচার মুরগি পালন করলে সপ্তাহে ২ দিন বাঁচার নিচের ময়লা পরিষ্কার করা।

১১। পুরাতন মুরগি পরিবর্তন করে নতুন মুরগি সংগ্রহের আগাম ব্যবস্থা করা যাতে পুরণগুলো সরিয়ে নেবার সাথে সাথে নতুন মুরগি ডিম দিতে শুরু করে।

 

 

খামারের আয়-বয়ের হিসাব

লাভজনকভাবে খামার করতে হলে খামারের আয়-ব্যয়ের হিসাব সঠিকভাবে রাখতে হবে। খামারের ব্যয়ের হিসাবকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:

আবর্তক বা দৈনন্দিন ব্যয়।

স্থায়ী ব্যয় : খামার করার জন্য জমি, ঘরবাড়ি, যন্ত্রপাতি, মুরগি ক্রয় ইত্যাদি জন্য যে টাকা খরচ হয় তাকে স্থায়ী ব্যয় বলে। স্থায়ী বায়কে মূলধন ব্যয়ও বলা হয়ে থাকে। দৈনন্দিন ব্যয় বা আবর্তক বায় মুরগির খাদ্য, ওষুধ, টিকা, শ্রমিক, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদির জন্য যে অর্থ ব্যয় হয় তাকে আবর্তক ব্যয় বা দৈনন্দিন ব্যয় বলা হয়।

মুরগির খামারের দৈনন্দিন ব্যয়ের শতকরা ৬৫-৭০ ভাগই ব্যয় করতে হয় খাদ্যের জন্য। তাই এ বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। লাভজনকভাবে খামার পরিচালনার জন্য খাদ্যের অপচয়। রোধ এবং সুষম খাদ্য সরবরাহ একান্তভাবে প্রয়োজন।

সারমর্ম

লাভজনকভাবে খামার স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- উন্নত জাত, সুষম খাদ্য এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। খামারের ব্যয়ের হিসাবকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ স্থায়ী ব্যয় ও আবতক বা দৈনন্দিন ব্যয়। • মুরগি খামারে দৈনন্দিন ব্যয়ের শতকরা ৬৫-৭০ ভাগ খাদ্যের জন্য করতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *