মৃত্তিকার বর্ণ ও তাপমাত্রা – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “মৃত্তিকা বিজ্ঞান” বিষয়ের, ২ নং ইউনিটের ২.৫ নং পাঠ।
Table of Contents
মৃত্তিকার বর্ণ ও তাপমাত্রা
মৃত্তিকা বর্ণ কী (What is soil colour)?
মৃত্তিকা বর্ণ মৃত্তিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌত ধর্ম। আলোক বিজ্ঞানের ভাষায়, মৃত্তিকা থেকে যে আলো প্রতিফলিত হয়ে চোখে ফেরত আসে তাকে মৃত্তিকা বর্ণ বলে। আপনি নিশ্চয় লক্ষ্য করে থাকবেন, ভূ-পৃষ্টের বিভিন্ন জায়গার মাটি বিভিন্ন ধরনের।
যেমন : পাহাড়ী অঞ্চলের মাটি সাধারণত লাল, কিন্তু নিচু এলাকার মাটি কিছুটা কালচে বর্ণের হয়। এ ছাড়া একই স্থানে মৃত্তিকা পার্শ্বচিত্রের বিভিন্ন স্তর বা হরাইজনে বিভিন্ন বর্ণের মৃত্তিকা দেখা যায়। আপনিকী কখনো ভেবে দেখেছেন মৃত্তিকা বর্ণের এসব পার্থক্য কেন হয়? মৃত্তিকার এ সব বর্ণবৈষম্যের জন্য অনেকগুলো সুনির্দিষ্ট কারণ দায়ী। এসব কারণ সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই ধারনা থাকা প্রয়োজন। কারণ কোন স্থানে মৃত্তিকায় ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা এবং কোন ধরনের ফসল ভাল জন্মাবে তা এর বর্ণ দ্বারা যথেষ্ট প্রভাবিত হয়।
মৃত্তিকা বর্ণের কারণ (Causes of soil colour):
কোন স্থানের মৃত্তিকা লাল, বাদামী, গাঢ় বাদামী কিংবা ধূসর হওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। এসব কারণগুলো হলো নিম্নরূপ:
উৎস দ্রব্য (Parent material) :
মৃত্তিকা সৃষ্টিতে উৎস দ্রব্যের প্রভাব সম্পর্কে পূর্ববর্তী ইউনিটে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। উৎস দ্রবা মৃত্তিকা বর্ণের অন্যতম কারণ। বিভিন্ন স্থানের মাটি বিভিন্ন রকমের উৎস দ্রব্য থেকে সৃষ্টি হয়। মৃত্তিকা বর্ণ নির্ভর করে এসব উৎস দ্রব্যের রাসায়নিক সংস্থিতির (chemical composition) ওপর। যেহেতু উৎস দ্রব্য নানা ধরনের খনিজের সমন্বয়ে গঠিত কাজেই এসব খনিজের বর্ণ মাটির বর্ণে প্রভাব ফেলে। যেমনঃ লাল স্যান্ড স্টোন (red sand stone) হতে যে মৃত্তিকা সৃষ্টি হয় তা লাল বর্ণের হয়। লাল বর্ণের এসব মৃত্তিকাকে লিথোক্রোমিক (lithochromic) মৃত্তিকা বলে।
জৈব পদার্থ :
আমরা জানি, উৎস দ্রব্যের সাথে বিভিন্ন জীবের দেহাবশেষ মিলে জলবায়ুর ক্রিয়ায় দীর্ঘসময় পর মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়। মৃত্তিকার এসব জীবদেহের অবশেষকে মৃত্তিকা জৈব পদার্থ বলে। জৈব পদার্থ কার্বন সমৃদ্ধ বলে জৈব পদার্থের উপস্থিতিতে মৃত্তিকা গাঢ় বর্ণের হয়। যে সব মৃত্তিকায় জৈব পদার্থ অধিক থাকে সেসব মৃত্তিকার বর্ণ গাঢ় ধূসর বা বাদামী থেকে কাল বর্ণ হয়ে থাকে। আবার যে সব মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের পরিমাণ কম সেগুলো সাধারণত হালকা বাদামী, হলুদ কিংবা সাদাটে বর্ণের হয়।
লৌহ দ্রব্যের উপস্থিতি :
মৃত্তিকায় সাধারণত বিভিন্ন ধরনের লৌহ অক্সাইড ও অন্যান্য মৌলের সাথে লৌহের বিভিন্ন যৌগ উপস্থিত থাকে। লৌহ অক্সাইড ও লৌহের অন্যান্য যৌগের উপস্থিতি মৃত্তিকা বর্ণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। এদেশে মধুপুর, সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় মৃত্তিকা লৌহ যৌগের আধিক্যের জন্য লালচে বা হলুদ বর্ণের। লৌহ যৌগের উপস্থিতিতে মৃত্তিকা গাঢ় বাদামী, লাল কিংবা হলুদ বর্ণের হতে পারে।
সিলিকা ও চুন দ্রব্যের উপস্থিতি :
মৃত্তিকায় সিলিকা, চুনদ্রব্য বা অন্যান্য লবণ দ্রবীভূত থাকলে তার বর্ণ সাদা বা ধূসর হয়। সমুদ্র সৈকতে কিংবা নদীর মোহনায় এ বর্ণের মৃত্তিকা পাওয়া যায়।
জলাবদ্ধতা :
মৃত্তিকায় পানি জমে থাকলে সেখানকার বায়ু অপসারিত হয়। ফলে মৃত্তিকায় বিদ্যমান বিভিন্ন মৌলিক বা যৌগিক পদার্থে বিজারণ ঘটে। অক্সিজেনের অনুপস্থিতি এ ধরনের বিজারণে জন্য দায়ী। যেমনঃ লাল বর্ণের ফেরিক অক্সাইড সমৃদ্ধ সুনিষ্কশিত মৃত্তিকা জলাবদ্ধ হলে ফেরিক অক্সাইড বিজারিত হয়ে ফেরাস অক্সাইডে পরিণত হয়। ফলে মৃত্তিকা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। এসব ছাড়াও মৃত্তিকা বর্ণের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী আরও অনেক উপাদান রয়েছে। যেমন : মৃত্তিকা পানি তলের (water table) উঠানামা, বায়ুচলাচল ইত্যাদি।
মৃত্তিকা বর্ণ পরিমাপ:
মৃত্তিকা বর্ণ মৃত্তিকার উর্বরতা, উৎপাদন ক্ষমতা, ফসলের প্রকার ইত্যাদি পরিমাপের পূর্ব শর্ত। কৃষিকাজে মৃত্তিকার অর্থনৈতিক ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা বর্ণের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং চাষাবাদের পরিকল্পনা গ্রহণের পূর্বে মৃত্তিকা বর্ণ পরিমাপ করা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত মৃত্তিকা বর্ণ একটি আদর্শ বর্ণের চার্টের সাথে তুলনা করে নির্ণয় করা হয়। এ কাজে মুনসেল রঙ্গীন চার্ট (Munsell colour notation) ব্যবহার করা হয়। চার্টের বর্ণের সাথে মৃত্তিকা নমুনার বর্ণের তুলনা করে সহজেই মৃত্তিকার বর্ণ নির্ণয় করা যায়।
কৃষিতে মৃত্তিকা বর্ণের গুরুত্ব ( Importance of soil colour in agriculture):
মৃত্তিকা বর্ণ মৃত্তিকার একটি অন্যতম ভৌত গুণ। কোন মৃত্তিকায় কী কী রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে এবং এতে বিদ্যমান জৈব পদার্থ ও উদ্ভিদ খাদ্যোপাদান সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারনা এর বর্ণ দেখে অনুমান করা যায়। মৃত্তিকা বর্ণ মৃত্তিকা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী অন্যতম উপাদান। আর উল্লিখিত উপাদানসমূহ ফসল নির্বাচন, চাষাবাদ কৌশল এবং ফসলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। যাহোক মৃত্তিকা বর্ণের গুরুত্ব সংক্ষেপে নিম্নরূপ :
১। মৃত্তিকা বর্ণ মৃত্তিকা শ্রেণিবিন্যাসের অন্যতম নিয়ামক ( factor) যেমন : লাল মৃত্তিকা, কাল মৃত্তিকা, বাদামী মৃত্তিকা ইত্যাদি।
২। বর্ণ মৃত্তিকার উর্বরতা অনুমান করতে সহায়তা করে। যেমন : কাল বা বাদামী মৃত্তিকা তুলনামূলকভাবে বেশি উর্বর কারণ তাতে অধিক জৈব পদার্থ থাকে।
৩। মৃত্তিকা বর্ণ সরাসরি মৃত্তিকা তাপমাত্রায় প্রভাব ফেলে। কাল বর্ণের মৃত্তিকার তাপশোষণ ক্ষমতা বেশি অন্যদিকে হালকা বর্ণের মৃত্তিকার তাপশোষণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম। যেহেতু মৃত্তিকা তাপমাত্রার ওপর এর রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি নির্ভরশীল সে জন্য মৃত্তিকা বর্ণ মৃত্তিকায় রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি প্রকৃতি নির্ধারণে অন্যতম ভূমিকা পালন করে।
৪। মৃত্তিকার অন্যান্য ভৌত ধর্ম যেমন: বুনট / সংযুক্তি, (Structure) দৃঢ়তা, আঁঠালোতা ইত্যাদির ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
৫। মৃত্তিকা অণুজীবের বৃদ্ধি, উন্নয়ন মৃত্তিকা বর্ণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ ছাড়া মৃত্তিকার রাসায়নিক বিক্রিয়া এবং মৃত্তিকায় উপস্থিত রাসায়নিক মৌল ও যৌগের উপস্থিতি মৃত্তিকা বর্ণ দ্বারা অনেকটা প্রভাবিত হয়।
মৃত্তিকা তাপমাত্রা কী (What is soil temperature)?
মৃত্তিকা বর্ণের ন্যায় মৃত্তিকা তাপমাত্রা মৃত্তিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। ভূ-ত্বক যে সূর্য কিরণ শোষণ করে তাকে মৃত্তিকা তাপমাত্রা বলে। তবে শুধুমাত্র সূর্য কিরণই মৃত্তিকা তাপমাত্রার একমাত্র উৎস নহে। পৃথিবীর অভ্যন্তরস্থ তাপও মৃত্তিকা তাপমাত্রার একটি উৎস। ইতোপূর্বে আমরা আলোচনা করেছি মৃত্তিকা বর্ণ মৃত্তিকা তাপমাত্রার একটি অন্যতম নিয়ামক। কারণ গাঢ় বর্ণের মৃত্তিকা অপেক্ষা হালকা বর্ণের মৃত্তিকা বেশি সূর্য কিরণ শোষণ করতে পারে। ফলে গাঢ় বর্ণের মৃত্তিকার তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি।
মৃত্তিকা দিনের বেলা সৌর তাপ শোষণ করে উত্তপ্ত হয় এবং রাতে তা বিকিরণ করে শীতল হয়। মৃত্তিকা তাপমাত্রার ওপর মৃত্তিকার রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি প্রকৃতি নির্ভরশীল। আর এসব রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বারা উদ্ভিদের মূল দ্বারা পুষ্টি উপাদানের শোষণ প্রভাবিত হয়৷ কাজেই সফলভাবে ফসল উৎপাদনের জন্য মৃত্তিকা তাপমাত্রা সম্পর্কে বিশদ জানা আবশ্যক।
মৃত্তিকা তাপমাত্রার উৎস :
মৃত্তিকা তাপের প্রধান উৎস সূর্য রশ্মি। তবে মৃত্তিকা জৈব পদার্থের বিযোজন ও অন্যান্য রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপন্ন তাপ মৃত্তিকা তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক। সূর্য থেকে সমান তাপ পেলেও সকল মৃত্তিকা সমানভাবে উত্তপ্ত হয় না। এর জন্য মৃত্তিকা অভ্যন্তরস্থ ও বাহ্যিক অনেকগুলো কারণ দায়ী। এসব কারণ নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা রয়েছে। তবে কোন মৃত্তিকার এলবেডো (Albedo) সংখ্যা যত বেশি হয় মৃত্তিকার তাপমাত্রা তত কম হয়। এলবেডো (Albedo) হলো মৃত্তিকায় পতিত সূর্যকিরণ ও প্রতিফলিত সূর্যকিরণের সরাসরি অনুপাতের ফল।
মৃত্তিকার বর্ণ গাঢ় হলে এবং আর্দ্রতা বেশি হলে সূর্যকিরণ কম প্রতিফলিত হয়। এছাড়া মৃত্তিকার উপরিভাগ মসৃন না হয়ে কিছুটা উঁচু নিচু হলে তা অধিক তাপ শোষণ করতে পারে।
মৃত্তিকা তাপমাত্রার ওপর প্রভাবকারী উপাদানসমূহ (Factors affecting soil temperature) :
মৃত্তিকা তাপমাত্রা অনেকগুলো উপাদান (factors) দ্বারা প্রভাবিত হয়। একটু পর্যবেক্ষণ করলেই সহজে ধরা পড়বে যে, বেলে মাটি সূর্য কিরণে খুব দ্রুত উত্তপ্ত হয়। অর্থাৎ বেলে মাটির ক্ষেত্রে উপরের মাটির তাপমাত্রা এবং নিচের মাটির তাপমাত্রার তফাৎ খুব বেশি। এ ছাড়া এ মাটি খুব দ্রুত শীতল হয়। কিন্তু এঁটেল মাটি সৌর তাপে ধীর গতিতে উত্তপ্ত হয়। তবে তা দ্রুত নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। ফলে উপর ও নিচের মাটির তাপমাত্রা তফাৎ কম। এ মাটি ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে থাকে।
সুতরাং এ আলোচনা থেকে সহজেই অনুমিত হয় যে মৃত্তিকা বুনট মৃত্তিকার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী একটি অন্যতম কারণ। অনুরূপভাবে মৃত্তিকা বর্ণও আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা মৃত্তিকার তাপমাত্রা বহুলভাবে নিয়ন্ত্রিত করে। এসব হলো মৃত্তিকার অভ্যন্তরীণ উপাদান। এছাড়াও বাহ্যিক অনেকগুলো উপাদান রয়েছে যা মৃত্তিকা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন : অক্ষাংশ, জলবায়ু, ঋতু ইত্যাদি। যাহোক যেসব উপাদানসমূহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৃত্তিকা।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে তা নিচে তুলে ধরা হলো :
১। মৃত্তিকা বুনট
২, মৃত্তিকা সংযুক্তি
৩। অক্ষাংশ
8। আবহাওয়া ও জলবায়ু
৫। ঋতু.
৬। মৃত্তিকাস্থ পানির পরিমাণ ও বাষ্পায়ন
৭। ঢাল ও দিক (Slope and aspect
৮। মৃত্তিকাস্থ পানি স্তরের উচ্চতা
৯। দ্রবীভূত লবণের ঘনত্ব
১০। জৈব পদার্থের বিয়োজন
১১। কর্ষণ ও মালচিং
১২। মৃত্তিকায় কী ধরনের ফসল রয়েছে, প্রভৃতি।
মৃত্তিকা তাপমাত্রার গুরুত্ব :
মৃত্তিকা তাপমাত্রা মৃত্তিকার অনেক রাসায়নিক ধর্ম এবং কিছু কিছু ভৌত ধর্মে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। ফলে কৃষিকাজে মৃত্তিকাকে সফলভাবে ব্যবহার করতে হলে মৃত্তিকা তাপমাত্রার গুরুত্ব সম্পর্কে ভাল জ্ঞান থাকা আবশ্যক। নিচে সংক্ষেপে মৃত্তিকা তাপমাত্রার গুরুত্ব তুলে ধরা হলো :
১। মৃত্তিকাস্থ রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি ও প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণে তাপমাত্রা একটি অন্যতম উপাদান। বিজ্ঞানীদের মতে, কোন স্থানের মৃত্তিকা তাপমাত্রা ১০°সে. বৃদ্ধি পেলে সেখানকার রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি দ্বিগুণ হয়ে যায়। সেজনা উচ্চ তাপমাত্রায় জৈবপদার্থের বিয়োজন দ্রুত সংঘটিত হয়। উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলের মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের পরিমাণ সাধারণত কম থাকে। এছাড়া মৃত্তিকাস্থ বিভিন্ন আয়নের (NO3, Cath, K’ ইত্যাদি) স্থিতিশীলতা (persistance) এবং আয়ন বিনিময় (Ion exchange) মৃত্তিকা তাপমাত্রা দ্বারা প্রভাবিত হয়।
২। মৃত্তিকাস্থ অণুজৈবিক কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণে তাপমাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মৃত্তিকাস্থ তাপমাত্রার ওপর কোন মৃত্তিকায় কী কী অণুজীব (Microorganism) বর্তমান থাকবে তা নির্ভর করে। এদের বংশবিস্তার, বৃদ্ধি ও উন্নয়ন এবং মৃত্তিকায় এসব অণুজীবের কার্যক্রম সবই তাপমাত্রা দ্বারা কম বেশি প্রভাবিত হয়। যেহেতু বিভিন্ন অণুজীবের কার্যক্রমের ওপর উদ্ভিদের খাদ্য উপাদানের সহজলভ্যতা নির্ভরশীল সেজন্য মৃত্তিকা তাপমাত্রা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের খাদ্য উপাদানের প্রাপ্যতা নিয়ন্ত্রণ করে। এসব অণুজীব জৈব পদার্থের বিয়োজনের মাধ্যমে উদ্ভিদ খাদ্য উপাদানের গ্রহণোপযোগী আকারে নিয়ে আসে।
৩। বীজের অংকুরোদগমে তাপমাত্রা একটি অন্যতম নিয়ামক (factor)। ফসল উৎপাদনের জন্য আমরা মাটিতে বীজ বপন/রোপণ করে থাকি। এসব বীজের অংকুরোদগম হবে কি না কিংবা কী হারে হবে তা মৃত্তিকা তাপমাত্রার ওপর নির্ভরশীল। নির্দিষ্ট ফসলের বীজ একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় অংকুরিত হয়।
শীতকালীন ফসলের বীজের অংকুরোদগমের জন্য গড় মৃত্তিকার তাপমাত্রা ২০° সে. পক্ষান্তরে গ্রীষ্মকালীন ফসল বীজের অংকুরোদগমে তা ৩২° সে.। খুব নিম্ন কিংবা খুব উচ্চ মৃত্তিকা তাপমাত্রায় বীজের অংকুরোদগম বিঘ্নিত হয়। এছাড়া ফসল উদ্ভিদের মূলের বৃদ্ধিও মৃত্তিকা তাপমাত্রার দ্বারা প্রভাবিত হয়।
শিকড় দ্বারা পুষ্টি উপাদান ও পানি পরিশোষণ মৃত্তিকা তাপমাত্রা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। উদ্ভিদের খাদ্য উপাদানের সহজলভ্যতা মৃত্তিকাস্থ রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত হয়। আর রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি ও প্রকৃতি বহুলাংশে মৃত্তিকা তাপমাত্রার ওপর নির্ভরশীল। কাজেই উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদানের পরিশোষণে মৃত্তিকা তাপমাত্রা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া মৃত্তিকা তাপমাত্রা শিকড়ের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে বলে তা পানি ও খাদ্য উপাদান পরিশোষণে পরোক্ষ প্রভাব ফেলে।