মৃত্তিকা কোলয়েড

মৃত্তিকা কোলয়েড

মৃত্তিকা কোলয়েড – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “মৃত্তিকা বিজ্ঞান” বিষয়ের “ইউনিট ৩” এর পাঠ ৩.৪। মৃত্তিকা কোলয়েডের সংজ্ঞা কোলয়েড শব্দটি টমাস গ্রেহাম ১৮৬১ সালে প্রথম ব্যবহার করেন। গ্রীক ভাষায় কোলয়েড মানে আঁঠা। সাধারণতঃ যে সকল মৃত্তিকা কণার ব্যাস ২ মাইক্রন এর কম ঐগুলোকেই মৃত্তিকা কোলয়েড বলা হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৃত্তিকা কোলয়েড কণার ব্যাস থাকে ০.০০৫ থেকে ০.২ মাইক্রন।

মৃত্তিকা কোলয়েড

 

কোলয়েড কণার আকার:

কোলয়েড কণা এতই ক্ষুদ্র যে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না। কোলয়েড ‘কণার আকার হচ্ছে ৫০ A ( A = 10 সে.মি.) থেকে ২ মাইক্রন (১ মাইক্রন সে.মি.)। কোলয়েড মৃত্তিকা = ১০ -br কণাগুলোর ব্যাস ০.০০১ মিলিমিটারের চেয়ে কম। কোলয়েডের ব্যাস ০.০০৫ থেকে ০.২ মাইক্রন এর মধ্যে থাকলে কতকগুলো বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। মৃত্তিকা কোলয়েড কণার আকার আকৃতি নানান রকমের হয়ে থাকে। কোলয়েড কণা লম্বা, দন্ড, গোলাকার, ডিম্বাকার কিংবা ভিন্ন আকারেরও হতে পারে। কাদাকণার আকৃতি পাতলা চাদরের মতও হয়ে থাকে। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে কাদা কণার আকৃতি পাতের মত দেখায়।

 

মৃত্তিকা কোলয়েডের বৈশিষ্ট্য:

১। কোলয়েড দ্রবণ একটি অসমসত্ব মাধ্যম।

২।কোলয়েড দ্রবণের অসমোটিক বা অভিস্রবণীয় চাপ কম।

৩। ফ্যারাডে ও টিনডাল প্রভাব সমৃদ্ধ।

8। খালি চোখে দেখা যায় না। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখলে কোলয়েড দ্রবণ সর্বদাই আকাবাঁকা গতিতে চলতে দেখা যায় বলে ব্রাউনীয় গতি বা সঞ্চরণ প্রদর্শন করে।

৫ ৷ কোলয়েড দ্রবণ অধিশোষণ বা এডজরপশন ও জমাটবদ্ধতা বা কোয়াগুলেশন বৈশিষ্ট্যে সক্রিয়।

৬ । কোলয়েড ‘কণার আকার যতই ছোট হয় উপরিতলের আয়তন ততই বাড়ে এবং উপশোষণও বৃদ্ধি পায় ।

৭। কোলয়েড কণা মাত্রই বৈদ্যুতিক আধান বহন করে। কোলয়েড দ্রবণ বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে স্থাপন করলে চার্জের প্রকৃতি অনুসারে এরা এনোড বা ক্যাথোডের দিকে ধাবিত হয় ।

৮। কণার আকার (৬×১০-৫ – ১৫×১০৫ মি.মি.) ও প্রকৃতির ভিত্তিতে কোলয়েড দ্রবণ কমলা হলুদ, কমলা লাল, নীল লোহিত, বেগুনী প্রভৃতি রঙের হয়ে থাকে এবং সিলভার সলে এ রঙ সুস্পষ্ট ধরা পরে।

৯। সম্পৃক্ত অবস্থায় কোলয়েড কণাগুলো পরস্পরের সংগে আকৃষ্ট হয়ে দলা পাকার ফলে মৃত্তিকা উত্তম চাষাবাদের উপযোগী হয়।

১০। একই কদম কণা Na’ সম্পৃক্ততায় ব্যবধান বাড়ে কিন্তু Ca2+ দ্বারা সম্পৃক্ত হলে তা কমে যায়। অর্থাৎ সমান চার্জ সত্বেও সম্পৃক্ত কর্দম কণার বিকীর্ণন ধর্ম বেশি।

 

মৃত্তিকা কোলয়েডের শ্রেণিবিভাগ:

মোটা বেলে মাটি ছাড়া সর্বত্রই কম বেশি কোলয়েড কণা বিদ্যমান। সকল প্রকার চাষাবাদের ভূমিতে কম বেশি কোলয়েড কণা রয়েছে। উৎপত্তি, আকার, আকৃতি ও অন্যান্য গুণের ভিত্তিতে মৃত্তিকা কোলয়েডকে দু’ভাগে ভাগ করা যায় :

১। অজৈব বা খনিজ কোলয়েড।

২। জৈব বা হিউমাস কোলয়েড।

 

অজৈব বা খনিজ কোলয়েড:

মৃত্তিকায় অজৈব কোলয়েডকে খনিজ কোলয়েড বা কদম কোলয়েড বলা হয়। তবে কোলয়েডের কার্যাবলী শুধু কদম কণাতেই নির্দিষ্ট নয়। কোলয়েড কণা যতই ছোট হয় ধর্ম ও গুণাবলী ততই বৃদ্ধি পায়। প্রকৃত পক্ষে ২ মাইক্রন আকারের নিচের সকল কর্দম কণাই কোলয়েড। উদাহরণ হচ্ছে :

Fe, Al, Mn ও Ti এর অক্সাইড ও হাইড্রোক্সাইড যথা : ম্যাগনেটাইট- Fe304, লিমোনাইট Fe2O3, 3H20, কদম কোলয়েড এবং বক্সাইড – A1,203 2H 20, ব্রাউনাইট- Mn203 1

 

মৃত্তিকা জৈব কোলয়েড:

মৃত্তিকা পৃষ্ঠস্তরে কাদাকণার সংগে হিউমাস কোলয়েডীয় অবস্থায় থাকে। হিউমাস কণার আয়তন অতি ক্ষুদ্র থাকায় ইহা কোলয়েড ধর্ম পেয়ে থাকে। বস্তুত জৈব কোলয়েড বলতে হিউমাসই বুঝায়। মৃত্তিকায় প্রাণী বা উদ্ভিদ অবশেষ পচনের ফলে যে কালো কোলয়েডীয় পদার্থ তৈরি হয় তাকেই হিউমাস বা হিউমিক পদার্থ বলা হয়। হিউমাস আকারবিহীন গাঢ় বাদামী থেকে কালো বর্ণের। হিউমাস কোলয়েড নিগেটিভ চার্জবিশিষ্ট এবং চারপাশে অসংখ্য ঋক তড়িৎ আধান উৎপন্ন হয়।

 

প্রধান জৈব কোলয়েডসমূহ হচ্ছে:

১। হিউমিক এসিড
২। ফালভিক এসিড
৩। হেমাটোমেলানিক এসিড
8। হিউমিনস ও আলমিনস, ইত্যাদি।

 

কৃষিতে মৃত্তিকা কোলয়েডের গুরুত্ব:

১। উদ্ভিদে খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া চালু রাখার জন্য মৃত্তিকা কোলয়েড মাটির ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন বিনিময় ক্ষমতা সক্রিয় রাখে।

২। কোলয়েড সমস্যায় মৃত্তিকা আয়ন বিনিময় ব্যহত হয়। আবার একদম না থাকলে আয়ন বিনিময় প্রক্রিয়াও বন্ধ থাকে।

৩। মৃত্তিকায় কোলয়েড দ্রব্যের পরিমাণের ভিত্তিতে উদ্ভিদের খাদ্যেপাদানের পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। তাই মৃত্তিকা কোলয়েডকে উদ্ভিদের খাদ্য ভান্ডারও বলা যায়।

8। জৈব কোলয়েড ইহার খাদ্য ভান্ডার থেকে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদান সরবরাহ করে গাছপালার সুস্থ জীবন যাত্রা নিশ্চিত করে।

৫। হাইড্রোজেন, এলুমিনিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি ক্যাটায়ন বিনিময় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃত্তিকা কোলয়েড মাটির দ্রবণের ভারসাম্য রক্ষা করে।

৬।মৃত্তিকা কোলয়েড মাটির আমান ও বাফার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৭। মৃত্তিকা কোলয়েড অতিরিক্ত খাদ্যোপাদান ধরে রাখে এবং কোলয়েডের অভাবে এগুলো চুয়ানীর মাধ্যমে মৃত্তিকা থেকে দ রীভূত হয়ে যায়। অবশ্য কোলয়েড দ্রব্য এগুলো পরিশোষণযোগ্য
করে উদ্ভিদের খাদ্য যোগায়।

৮। মৃত্তিকায় কোলয়েড ঘাটতি থাকলে পর্যাপ্ত সার প্রয়োগেও সুফল পাওয়া দুস্কর।

৯। মৃত্তিকায় সকল রাসায়নিক গুণাবলী নিয়ন ণে কোলয়েড সক্রিয় ভূমিকা রাখে।

১০। মৃত্তিকার সকল প্রকার বিষাক্ত দ্রব্য সামগ্রী পরিশোষন, বিয়োজন ও বিনষ্টকরণে মৃত্তিকা কোলয়েড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১১। মৃত্তিকা কোলয়েড ভূমিক্ষয় হ্রাস করে।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *