রমজানের বাজার ধরতে পেরে দ্বিগুণ লাভে খুশি ফুলবাড়ীর খিরা চাষিরা

দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার খিরা চাষিরা অধিক ফলনের পর ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত

দিনাজপুর, ৮ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): রমজানের বাজার ধরতে পারায় খুশি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার খিরা চাষিরা। অধিক ফলনের পাশাপাশি দ্বিগুণ দাম পাওয়ায় তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

ফুলবাড়ী উপজেলার গোয়ালপাড়া গ্রামের কৃষক গণেশ চন্দ্র (৪২) জানান, চলতি রবি মৌসুমে তিনি নিজের ৪০ শতক জমিতে খিরা চাষ করেছেন। অনুকূল আবহাওয়া ও সুষ্ঠু পরিচর্যার ফলে তার জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। রমজান শুরুর আগে প্রতি কেজি খিরা ১৬ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হলেও, রমজানের প্রথম দিন থেকেই সেই দাম বেড়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এতে তার মতো চাষিরা দ্বিগুণ লাভ পাচ্ছেন।

খিরা চাষ বেড়েছে দ্বিগুণ

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ জানান, গত বছর রমজানে খিরার ভালো দাম পাওয়ায় এবার চাষিদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। তিনি আরও জানান, এবছর ফুলবাড়ী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ১৩৫ হেক্টর জমিতে খিরার চাষ হয়েছে, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।

রমজান মাসে খিরার চাহিদা বেশি থাকায় স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি, পাইকাররা বগুড়া, টাঙ্গাইল এবং রাজধানী ঢাকায় খিরা নিয়ে যাচ্ছেন।

কৃষকের লাভজনক চাষাবাদ

দৌলতপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, “এবছর ৪২ শতক জমিতে খিরা চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত ৪৮ মন খিরা বাজারে বিক্রি করেছি। রমজানের আগে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ১৬ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হলেও, রমজানের শুরু থেকে ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি করছি।” তিনি আরও জানান, জমিতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হলেও, এ বছর তার লাভ হবে লক্ষাধিক টাকা।

শিবনগর গ্রামের সজল মিয়া, আলাদিপুর গ্রামের মেহেরাজ আলীসহ অন্যান্য চাষিরাও জানান, ভালো দামে খিরা বিক্রি করে তারা লাভবান হচ্ছেন। তারা আশা করছেন, ভবিষ্যতেও এই চাষ আরও সম্প্রসারিত হবে।

কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতা

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আকতার জানান, এ বছর উপজেলায় ৬০-৭০ হেক্টর জমিতে খিরা ও শসা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তবে ভালো ফলন এবং গত বছরের উচ্চ মূল্যের কারণে তা বেড়ে ১৩৫ হেক্টরে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, “কৃষকেরা লাভবান হওয়ায় দিন দিন খিরা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই জমিতে বছরে তিনবার খিরা চাষ করা সম্ভব, তবে রমজানকে কেন্দ্র করে চাষিরা বেশি প্রস্তুতি নিয়েছেন।”

তিনি আরও জানান, কৃষি অধিদপ্তর খিরা চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করছে, যার ফলে ফলন ভালো হচ্ছে এবং কৃষকেরা বেশি লাভবান হচ্ছেন।

রমজানে খিরার চাহিদা বৃদ্ধির কারণ

প্রতি বছর রমজান মাসে সবজির চাহিদা ও দাম বৃদ্ধি পায়। সারা বছর খিরার চাহিদা কম থাকলেও রোজায় ইফতারে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা বাড়ে। চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যও বেড়ে যায়, যা চাষিদের জন্য লাভজনক হয়ে ওঠে। দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাষিরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেশি লাভের আশায় রমজানকে সামনে রেখে খিরা চাষ করেন।

চলতি বছরও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। চাষিরা বলছেন, অনুকূল আবহাওয়া ও সরকারি সহায়তার ফলে তারা ভালো ফলন পেয়েছেন এবং রমজানের বাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।

Exit mobile version