জমির উর্বরতা সংজ্ঞা ও ভূমিকা

কৃষি উৎপাদনের মূল ভিত্তি হলো জমি। একটি জমি যদি উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান, পানি ও বায়ু সঠিক অনুপাতে সরবরাহ করতে পারে, তখন তাকে উর্বর জমি বলা হয়। অর্থাৎ, জমির উর্বরতা বলতে এমন স্বাভাবিক ও আর্থিক বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়, যা উদ্ভিদের সুস্থভাবে গজানো, বেড়ে ওঠা ও কাঙ্ক্ষিত ফলন দিতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তা নির্ভর করে এই উর্বর জমির পরিমাণ ও ব্যবস্থাপনার ওপর। সঠিকভাবে জমির উর্বরতা রক্ষা ও বৃদ্ধি করা গেলে টেকসই কৃষি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

জমির উর্বরতা সংজ্ঞা ও ভূমিকা

 

 

জমির উর্বরতা সংজ্ঞা ও ভূমিকা

জমি কৃষি উৎপাদনের মূল ভিত্তি। তবে প্রতিটি জমির গুণগত মান একরকম নয়। কোনো জমি উর্বর, কোনোটা অনুর্বর। জমির উর্বরতা নির্ণয়ের জন্য মাটির পরীক্ষা প্রয়োজন। উর্বরতা বলতে বোঝায়একটি মাটি উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সব খাদ্যোপাদান নির্দিষ্ট অনুপাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করতে সক্ষম কি না। অন্যদিকে, মাটির উৎপাদনক্ষমতা বোঝায়জমিটি বাস্তবে কতটুকু ফলন দিতে সক্ষম।

 

 

একটি জমি উর্বর হলেও সেটি সবসময় উৎপাদনক্ষম নাও হতে পারে। যেমন, যদি জমিতে প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান থাকলেও সেখানে অতিরিক্ত আর্দ্রতা, খরার প্রভাব, অত্যধিক অম্লতা, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা বা সঠিক নিষ্কাশনের অভাব থাকে, তাহলে ফলন ব্যাহত হতে পারে। আবার অনেক সময় খাদ্যোপাদান থাকলেও তা গাছের গ্রহণযোগ্য অবস্থায় না থাকলে সেই জমিকে কার্যকরভাবে উৎপাদনশীল বলা যায় না।

তাই শুধুমাত্র জমিকে উর্বর করলেই চলবে না, তাকে উৎপাদনক্ষম করতেও উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে। যেমন—সঠিক হালচাষ, সার প্রয়োগ, বীজ বপন, সেচ ব্যবস্থা, আগাছা ও রোগ-পোকা দমন ইত্যাদি।

জমিকে অনুর্বর করে তুলতে পারে কিছু কারণ, যেমন:

  • অতিরিক্ত অম্লতা বা ক্ষারত্ব
  • লবণাক্ততা
  • নিষ্কাশনের দুর্বলতা
  • বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতি

এই ধরনের সমস্যাগুলো দমন করে এবং জমির ব্যবস্থাপনা উন্নত করে একটি জমিকে উৎপাদনশীল করে তোলা সম্ভব।

বাংলাদেশের মাটিতে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু সব জায়গায় ফলন একরকম হয় না। এর পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে—জমির উর্বরতার পার্থক্য ও উৎপাদন ব্যবস্থাপনার গুণগত মান।

অতিমাত্রায় ফসল উৎপাদনের ফলে মাটির খাদ্যোপাদান ধীরে ধীরে ফুরিয়ে যায়। বিশেষ করে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়ামের ঘাটতি বেশি দেখা যায়। এসব উপাদানের অভাবের কারণে ফসলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং উৎপাদন কমে যায়।

জৈব পদার্থ মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি মাটির গঠন, জলধারণ ক্ষমতা এবং পুষ্টিমান বাড়াতে সাহায্য করে। তবে বাংলাদেশের অধিকাংশ মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ অত্যন্ত কম। এজন্য জৈব উপাদানের সংরক্ষণ ও বৃদ্ধিতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

সারসংক্ষেপ:

মাটির উর্বরতা ও উৎপাদনক্ষমতা বজায় রাখতে হলে আমাদের মাটির সঠিক ব্যবস্থাপনা, জৈব পদার্থের সংরক্ষণ এবং সুষম সার ব্যবহারের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে এবং খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। সুতরাং, উর্বর জমিকে উৎপাদনক্ষম করে গড়ে তোলা এবং মাটির স্বাভাবিক পুষ্টি বজায় রাখাই কৃষিক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত।

 

 

এই ইউনিটে পাঁচটি পাঠে জমির উর্বরতা, উর্বরতার প্রভাবকসমূহ, মাটিতে জৈব পদার্থের উৎস, জৈব পদার্থের কারণে মাটির গুণাগুণের তারতম্য, মাটিতে জৈব পদার্থ বৃদ্ধির সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং মাটির উর্বরতা শক্তি বজায় রাখার কৃষিতাত্ত্বিক উপায় আলোচনা করা হয়েছে।

By একাডেমিক ডেস্ক, কৃষি গুরুকুল

কৃষি গুরুকুলের একাডেমিক ডেস্ক

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version