পারিবারিক মৎস্য খামার

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পারিবারিক মৎস্য খামার – যা কৃষি সমবায় ও পারিবারিক খামার এর অন্তর্ভুক্ত। খামার পরিচালনার বিভিন্নধাপ অনেকগুলো ধারাবাহিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে খামার পরিচালনা করা হয়। খামার পরিচালনার বিভিন্ন ধাপগুলো হচ্ছেঃ

পারিবারিক মৎস্য খামার

 

 

(ক) খামারে পোনা মজুদপূর্ব ব্যবস্থাপনা (পুকুর প্রস্তুতি):

১। পুকুরের আগাছা পরিষ্কার

২।  রাক্ষুসে ও অপ্রয়োজনীয় মাছ দূরীকরণ

৩। পাড় মেরামত

৪। চুন প্রয়োগ

৫। সার প্রয়োগ

৬। পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা

৭। পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা ।

(খ) পোনা মজুদকালীন ব্যবস্থাপনাঃ

১। পোনাৰ প্ৰজাতি নিৰ্বাচন

২। ভালোপোনা বাছাইকরণ

৩। পোনা শোধন

৪। পোনার পরিমাণ নির্ধারণ

৫। পোনা পরিবহন

৬। পোনা অভ্যন্তকরণ ও ছাড়া।

গ) পোনা মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা

১। নিয়মিত সার প্রয়োগ

২। সম্পূরক খা

৩। মাছের বৃদ্ধি পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা

৪। মাছ ধরা ও বিক্রয়

খামার পরিচালনার বিভিন্ন উপকরণ

খামার পরিচালনার বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন উপকরণ প্রয়োজন। খামার ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পর্যায়ভিত্তিক উপকরণসমূহের চাহিদা নিচে দেয়া হলো

 

 

মাছের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা

মাছ চাষকালীন সময়ে রোগাক্রান্ত হতে পারে। তাই মাসে একবার জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য ও অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। মাছের রোগের সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে মাছের সাভাবিক চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায়, ফুলকার স্বাভাবিক রং নষ্ট হয়ে যায়, দেহের উপর লাল / কালো / সাদা দাগ পড়ে, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয় বা কম যায়, মাছের দেহ অতিরিক্ত খসখসে অনুভূত হয়।

চাষকালীন মাছের কয়েকটি সাধারণ রোগ হচ্ছে ক্ষতরোগ, লেজ ও পাখনা পচা রোগ, লাল ফুটকি রোগ, ফুলকা পচা রোগ এবং মাছের উকুন। খামারের পুকুরে মাছ রোগাক্রান্ত হলে মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শ নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

১. মাছের ক্ষত রোগ

প্রাথমিকভাবে পুঁটি, শোল, টাকি মাছ এবং পরবর্তী সময়ে কার্প জাতীয় মাছ এ রোগে আক্রান্ত হয় । সাধারণতঃ শীত এবং গ্রীষ্মকালে এ রোগ দেখা যায়। রোগ নিরাময়ের চেয়ে রোগ প্রতিরোধ অধিকতর সহজ।

রোগ প্রতিরোধের সহজ উপায় হচ্ছে পুকুরে নিয়মিত শুকিয়ে চুন দেওয়া, পুকুরে নিয়মিত সার প্রয়োগ করে প্রাকৃতিক খাদ্যের যোগান স্থিতিবস্থায় রাখা । মাছের পাশাপাশি পুকুরে কিছুসম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করা পুকুরে অতিরিক্ত পোনা মজুদ না করা পুকুরে কোনো ক্ষতিকর দ্রব্য না ফেলা, পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদা না রাখা এবং পুকুরে ঘনঘন ঝাকি জাল না ফেলা।

পুকুরের কিছু সাধারণ সমস্যা ও প্রতিকার

১. মাছ ভেসে ওঠা ও খাবি খাওয়া (পানিতে অক্সিজেনের অভাব) পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদার উপস্থিতি, জৈব পদার্থের পচন, বেশি সার প্রয়োগ, ঘোলাত্ব, মেঘলা আবহাওয়া ও তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে পানিতে অক্সিজেনের অভাব হয় এবং এ সমস্যা দেখা যায়। এর ফলে মাছ ও চিংড়ি মারা যায়।

অক্সিজেনের অভাবে মৃত মাছের মুখ “হা” করা থাকে। প্রতিকার ব্যবস্থা: পানিতে সাঁতার কেটে বা পানির উপর বাঁশ পিটিয়ে পুকুরের পানি আন্দোলিত করে অথবা হররা টেনে পুকুরে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়াতে হবে। বিপদজনক অবস্থায় পুকুরে পরিষ্কার নতুন পানি সরবরাহ করতে হবে অথবা পাম্প দিয়ে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

২. পানির উপর সবুজ স্তর অতিরিক্ত সবুজ শেওলা উৎপাদনের ফলে এ সমস্যা দেখা যায়। এর ফলে মাছের শ্বাস কষ্ট হয় হয় ও মাছ পানির উপর খাবি খেতে থাকে। শেওলা পচে পরিবেশ নষ্ট হয়। মাছ ও চিংড়ির মৃত্যু হয়। প্রতিকার ব্যবস্থা পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে তুলে ফেলা যায়। সার ও খাদ্য দেওয়া সাময়িক বন্ধ রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে কিছু পানি পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু বড় সিলভার কার্প ছেড়ে জৈবিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

৩. পানির উপর লাল স্তর  লাল শেওলা অথবা অতিরিক্ত আয়রনের জন্য এ সমস্যা দেখা যায়। এর প্রভাবে পানিতে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না। মাছ ও চিংড়ির প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন কমে যায়। আবার পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতিও হয়। শতাংশ প্রতি ১২-১৫ গ্রাম কপার সালফেট বা ছুঁতে ছোট ছোট পোটলায় বেঁধে পানির উপর থেকে ১০-১৫ সে.মি। নিচে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখলে বাতাসে পানিতে ঢেউয়ের ফলে তুঁতে পানিতে মিশে শেওলা দমন করে । প্রতিকার ব্যবস্থা: খড়ের বিচালি বা কলাগাছের পাতা পেঁচিয়ে পানির উপর টেনে বা পাতলা সুস্তি কাপড় দিয়ে তুলে ফেলা যায়।

৪. ঘোলা পানি বৃষ্টি ধোয়া পানি পুকুরে প্রবেশ করে পানি ঘোলাটে হয়ে যেতে পারে। পাড়ে ঘাস না থাকলেও এমনটি দেখা যায় । এর ফলে পানিতে সূর্যের আলো ঢুকে না, ফুলকা নাই হয়ে যায় ও প্রাকৃতিক খাদ্য কমে যায়। প্রতিকার ব্যবস্থা। পুকুরে চুন (১-২ কেজি/শতক), জিপসাম (১-২ কেজি/শতক) বা ফিটকারী (২৪০-২৪৫ গ্রাম/শতক) প্রয়োগ করা যায়।

৫. পুকুরের তলদেশের কাদার গ্যাস জমা হওয়া কারণ পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদার উপস্থিতি এবং বেশি পরিমাণ লতাপাতা ও আবর্জনার পচনের ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে করে পানি বিষাক্ত হয়ে মাছ মারা যায়। প্রতিকার ব্যবস্থা। পুকুর শুকনো হলে অতিরিক্ত কাদা তুলে ফেলতে হবে। হরো টেনে তলার গ্যাস দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে।

 

সারাংশ

পারিবারিক মৎস্য খামার স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবারের মাছের চাহিদা মেটানো এবং সেসাথে সাথে সম্ভব হলে বাড়তি কিছুমাছ বাজারে বিক্রি করে পরিবারের স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি করা। এছাড়াও পারিবারিক খামারের মাধ্যমে পরিবারের বেকার সদস্যের কর্মসংস্থানের সুযোগ হতে পারে ।

 

By একাডেমিক ডেস্ক, কৃষি গুরুকুল

কৃষি গুরুকুলের একাডেমিক ডেস্ক

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version