ভাইরাসজনিত রোগ

ভাইরাসজনিত রোগ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – ভাইরাসজনিত রোগ। ভাইরাস ল্যাটিন ভাষা হতে গৃহীত একটি শব্দ। এর অর্থ হল বিষ। আদিকালে রোগ সৃষ্টিকারী যে কোন বিষাক্ত পদার্থকে ভাইরাস বলা হত। বর্তমান কালে ভাইরাস বলতে এক প্রকার অতি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক অকোষীয় রোগ সৃষ্টিকারী বস্তুকে বোঝায়। উদ্ভিদ ও প্রাণীর বহু রোগ সৃষ্টির কারণ হল ভাইরাস। ভাইরাস কে জীবাণু না বলে ‘বস্তু’ বলা হয়। কারণ, জীবদেহ ডিএনএ,আরএনএ ও নিওক্লিক এসিড দিয়ে গঠিত,প্রোটিন তাই ভাইরাস অকোষীয়।

ভাইরাসজনিত রোগ

 

 

ভাইরাসজনিত রোগঃ

সাধারণভাবে মাছ চাষের ক্ষেত্রে ভাইরাসজনিত রোগের সংক্রমণ যথেষ্ট পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়। ভাইরাসের তীব্রতার মাত্রা এবং এসব ভাইরাসঘটিত রোগের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ মাছের প্রজাতি এবং জলাশয়ভেদে নানারকম হয়ে থাকে। জলজ পরিবেশে বেশি পরিমাণে। জৈব পদার্থের উপস্থিতি এবং বেশি তাপমাত্রার কারণে জলাশয়ে জৈব পদার্থসমূহের যে পচন সংঘটিত হয়, মূলত তা-ই জলাশয়ের মাছে নানা ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তার ঘটায়। বাংলাদেশে মাছ চাষের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন জলাশয়ে বেশ কয়েক ধরনের ভাইরাসঘটিত রোগ মাছে পরিদৃষ্ট হয়। নিচে এসব রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :

ড্রপসি:

ভাইরাসঘটিত এ রোগটি বিজ্ঞানীদের কাছে স্প্রিং ভাইরেমিয়া নামে পরিচিত। একে সংক্ষেপে এসভিসি বা স্প্রিং ভাইরেমিয়া অব কার্প নামে চিহ্নিত। তবে সাধারণভাবে এ রোগটি ড্রপসি নামেই সমধিক পরিচিত। রোগের জীবাণু এ রোগটি র‍্যাবডোভাইরাস কার্পিও (Rhabdovirus carpio) নামক একটি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত।

রোগের বিস্তার :

এ রোগ কার্প জাতীয় মাছে সারাজীবনেই দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ পোনা থেকে শুরু করে বয়স্ক মাছে যে কোন সময়েই এ ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। সাধারণত বিদেশী কার্প মাছে এ রোগ সংক্রমিত হলেও দেশী কার্পজাতীয় মাছে এ রোগের বিস্তারও অনেক সময় দেখা যায়।

এ ভাইরাসের পোষক হিসেবে রক্তচোষক পরজীবী জোঁক এবং আরগুলাস বেশি পরিচিত। কোনো জলাশয়ের একটি মাছে এ রোগ সংক্রমিত হলে, তা পানির সাহায্যে বাহিত হয়ে সেই জলাশয়ের প্রায় সব মাছকেই সংক্রমিত করে থাকে। এ ভাইরাস সাধারণত মাছের ফুলকাতে বংশবিস্তার করে।

 

 

রোগের লক্ষণ :

এ রোগের বেশি কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন-

ক) মাছের দেহ গাঢ় বর্ণ ধারণ করে এবং মাছের ত্বক ও ফুলকাতে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।

খ) মাছ দৈহিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।

গ) মাছের চোখ ফুলে যায় এবং বাইরের দিকে বের হয়েআসে।

ঘ) মাছের পায়ুপথে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।

র‍্যাবডোভাইরাস রোগ

এ রোগ চাষকৃত মাছের ক্ষেত্রে নানাধরনের বিপত্তির সৃষ্টি করে থাকে। রোগের জীবাণু এ রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসের নাম র‍্যাবডোভাইরাস (Rhabdovirus sp) | রোগের বিস্তার : এ রোগ প্রধানত বিদেশী কার্প মাছের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। তবে দেশীয় মাছেও এদের উপস্থিতি কম নয়।

 

 

রোগের লক্ষণ :

এ রোগের লক্ষণ অনেকটা ড্রপসি রোগের মতো। নিচে এ রোগের প্রধান প্রধান লক্ষণসমূহ উল্লেখ করা হলো:

(ক) আইশের গোড়া ছিড়ে যায় এবং রক্তক্ষরণ ঘটে।

(খ) পাখনা ছিড়ে যায় বা পাখনায় পচন ধরে।

(গ) চোখ বাইরের দিকে প্রক্ষিপ্ত হয়ে বের হয়ে আসে।

ড। পায়ুপথে প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়।

সারমর্ম :

মাছ চাষের বিভিন্ন পর্যায়ে মাছে নানা ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। এসব ভাইরাস মাছে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি করে। এসব রোগ দীর্ঘস্থায়ী হলে মাছ চাষ প্রক্রিয়া ধ্বংস হওয়াসহ ব্যাপকভাবে মাছের মড়ক দেখা দেয়। ভাইরাস রোগের মধ্যে ড্রপসি ও র‍্যাবডোভাইরাস রোগ অন্যতম ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *