ভূমি সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা

ভূমি সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা

ভূমি সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি বাউবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান – ১২০৪ কোর্সের, ইউনিট ৫ এর পাঠ ৫.৪ নম্বর পাঠ।

ভূমি সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা

থানা ভিত্তিক কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, সে এলাকার ভূমি, মৃত্তিকা ও পানি সম্পদ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও তার সঠিক ব্যবহার নিরূপণের ওপরে বিশেষভাবে নির্ভরশীল পুস্পকের নামই ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা। বাংলাদেশের প্রতিটি থানার জন্য রয়েছে পৃথক নির্দেশিকা । মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এ নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে ।

ভূমি সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকার নির্দেশিকার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:

১। থানায় ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদের সঠিক ব্যবহার সুনিশ্চিত করা।

২। চাষী নিজেই যেন তার মৃত্তিকার সমস্যা জানতে ও সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে পারে।

৩। যথাযথ পানি ও সার ব্যবহারে নিশ্চিত থাকতে পারা।

৪। বন্যা সমস্যায় সময়মত পদক্ষেপ নেয়া।

৫ ।এলাকা ভিত্তিক ফসল চক্র বেছে নিয়ে সময়মত সঠিক ফসল চাষাবাদ নিশ্চিত করা।

৬।  কৃষক কর্তৃক তার কোন জমিতে কখন কোন ফসল ফলাবে তা নিজেই যেন ঠিক করতে পারে।

৭। চাষীদের মৃত্তিকা ও কৃষি বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানার্জনের পথ সুগম করা।

৮। ব্লক সুপারভাইজার ও স্থানীয় কৃষি কর্মী এবং কৃষকদের মধ্যে কৃষি ভিত্তিক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলা ।

 

ভূমি সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকায় তথ্যাবলী:

১। এলাকার সাধারণ বিবরণ :

যথা : অবস্থান ও আয়তন, প্রশাসনিক কাঠামো, জনসংখ্যা, যাতায়াত ব্যবস্থা, জলবায়ু ও প্রকৃতি, পানি সম্পদ ও সেচ ব্যবস্থা।

২। মানচিত্র তথ্যাবলী :

ভূ -প্রকৃতি, মাটির গুণাগুণ এবং উন্নয়ন সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে ভূমি সম্পদ উন্নয়নের একক শনাক্ত করা। প্রতিটি এককে রয়েছে ঃ

(ক) সাধারণ তথ্য
(খ) জমির বর্তমান ব্যবহার
(গ) প্রতিবন্ধকতা ও উন্নয়ন সম্ভাবনা

৩। পরিশিষ্ট ঃ

এখানে রয়েছে প্রতিটি এককের ওপর পূর্ণাংগ চিত্র যথা:

(১) মৃত্তিকা দল

(২) অপ্রচলিত শব্দের ব্যাখ্যা

(৩) মৃত্তিকার রাসায়নিক গুণাবলী

(৪) সার ব্যবহারের সুপারিশ প্রণয়ন তথ্য

(৫) সার প্রয়োগ পদ্ধতি

(৬) ইউনিয়ন ভিত্তিক মৌজার নাম ও আয়তন এবং

(৭) ভূমি ও মৃত্তিকা বৈশিষ্ট্য অনুসারে ফসলের উপযোগিতা ও সম্ভাব্য ফসল বিন্যাস

৪।  ভৌগলিক তথ্য বা মানচিত্র ও নকশা:

(ক) দেশের মানচিত্রে থানার অবস্থান

(খ) ইউনিয়ন ভিত্তিক মানচিত্র

(গ) মৃত্তিকা ও ভূমি শ্রেণির মানচিত্র

ভূমি সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকার কুফল বা সমস্যাদি:

১।নির্দেশিকা তথ্যে কোন ভূল থাকলে তা কোন এলাকার সমস্যা বাড়াতে পারে।

২। মৃত্তিকার গুণাগুণ পরিবর্তনশীল, ফলে নির্দেশিকার কথাবার্তা সব সময় কাজে নাও লাগাতে পারে।

৩। নির্দেশিকা সম্বন্ধে চাষীরা জানে না কিংবা এ বিষয় সম্বন্ধে তাদের বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানের অভাব।

৪। প্রশিক্ষণ বা ভাল শিক্ষা ছাড়া নির্দেশিকার তথ্যাদি বুঝা বা গ্রহণ করা কষ্টকর ।

৫ । যারা নির্দেশিকা হাতে নিয়ে কাজ করে তারা নিয়মিত চাষীদের কাছে না গেলে চাষীরা পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাবে না।

৬।নির্দেশিকার নীতিমালা বা পদক্ষেপ বংশানুক্রমে এলাকায় আসন প্রতিষ্ঠা না-ও করতে পারে।

ভূমি সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকার কার্যাবলীর সম্প্রসারণে সুপারিশ:

১।প্রতিটি থানায় ইউনিয়ন, একক, ব্লক, গ্রাম ও মৌজা ভিত্তিক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা।

২। প্রতিটি গ্রামে, বাজারে, স্কুলে ও খেলার মাঠে প্রদর্শনীয় ব্যবস্থা করে নির্দেশিকার ব্যবহার নিয়মনীতি শিখানো।

৩।প্রতিটি চাষীকে তার জমির গুণগত মান পরীক্ষা নিরীক্ষা করে শিখানো।

৪। মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ ও সম্প্রসারণ কৃষিকর্মী পাঠিয়ে সঠিক তথ্য নেয়া।

৫। রুটিন গবেষণা করে নির্দেশিকার গুণগত মান উন্নয়ন ও সুপারিশ প্রদান ।

৬ । প্রতি ৫ বৎসর পর নির্দেশিকার সংশোধন ও পূণর্মুদ্রণ।

৭।নির্দেশিকার সার সংক্ষেপ বের করে প্রতিটি চাষীর হাতে দেয়া যাতে সে চাষাবাদে অধিক উৎসাহ পায় ।

৮।কোথায় কোথায় নির্দেশিকার কপি রয়েছে তা সর্ব সাধারণ বা এলাকার লোকদেরকে জানানো।

থানা ভূমিসম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকায় এদেশের প্রতিটি থানার ভূমির মান, কৃষি ও অন্যান্য কাজে যথাযথ ব্যবহার কৌশল বিশেষ করে ভূমি ও মৃত্তিকা বৈশিষ্ট্য অনুসারে ফসলের উপযোগিতা ও সম্ভাব্য ফসল বিন্যাস, সার প্রয়োগ পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এটি কৃষক ও স্থানীয় পরিকল্পনাকারীদের দ্বারা যথাযথভাবে ব্যবহৃত হলেই এর উদ্দেশ্য সফল হবে। কাজেই এ ব্যাপারে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

সূত্র:

  • ভূমি সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা ,পাঠ ৫.৪, ইউনিট ৫ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *