সরিষা ফসল চাষ

সরিষা ফসল চাষ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- সরিষা ফসল চাষ

সরিষা ফসল চাষ

বাংলাদেশে তৈল ফসল হিসেবে সবিধা, সয়াবিন, তিল, তিনি চিনাবাদাম, সূর্যমুখী প্রভৃতি চাষ হয়ে থাকে। তবে এদেশের মানুষ সরিষাকেই তৈল ফসল হিসেবে বেশি চাষ করে থাকে। অতি প্রাচীনকাল থেকেই এদেশের মানুষ সরি মা গায়ে মাখাতে অভ্যন্ত।

এছাড়া রান্নার কাজে ও সর্দি-কাশি হলে নাকে-মুখে ব্যবহার করে। কিন্তু এ তেলের জন্য একটি দিক হলো- এতে 80 80% ক্ষতিকর ইরোসিক এসিড থাকে যা হৃদপিন্ডে রোগ সৃষ্টি করে থাকে। তবে আশার কথা আমরা প্রতিদিন যে পরিমাণ সরিষার তৈল দেয়ে থাকি তাতে কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

সরিষার বীজ থেকে তৈল নিষ্কাশনের পর যে খৈল থাকে তাতে প্রায় ৩৫% প্রোটিন এবং ৬.৪% নাইট্রোজেন থাকে। এ জন্য খৈল গৃহপালিত পরে ভালো খাবারও বটে। খৈলে নাইট্রোজেন থাকায় ভালো জৈব সার হিসেবে জমিতে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।

এছাড়া পরিবার জমিতে কৃত্রিম উপায়ে অত্যন্ত অল্প খরচে মৌমাছি পালন করে বেশ মধু সংগ্রহ করা যায়। এ জন্য সরিষাকে মধু উদ্ভিদ বলা হয়। উপাস্থ মৌমাছি থাকাতে সরিষ্কার পরাগায়ন ভালোভাবে হয় বিদায় সরিষার ফলনও বেশি হয়।

 

 

জমি নির্বাচন

পানি নিকাশের সুব্যবস্থা আছে এমন বেলে দো-আঁশ মাটি সম্পন্ন জমি সরিষা চাষের জন্য উপযোগী।

জাত, বপন সময় ও বীজ ছাটাই

সরিসার স্থানীয় ও উষশী দুধরনের জাত রয়েছে। নিম্নে এদের কয়েকটির নাম, বপন সময়, বীজ হার ও জীবনকাল একটি তালিকার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলো :

 

বীজ শোধন

প্রতি কেজি বীজ ২.৫ গ্রাম ভিটায়ার ২০০ বা ক্যাপটান দিয়ে শোধন করে নিয়ে বুনতে হয়।

জমি তৈরি

মাটির জো অবস্থার আড়াআড়ি ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ো কুরকরে করে জমি তৈরি করতে হবে। উল্লেখ্য যে সরিষার বীজ ছোট বিধানা মাটি অবশ্যই মিহি করতে হবে যাতে বীজ সহজেই মাটির সংস্পর্শে আসতে পারে। জমির উপরিভাগ ই এর সাহায্যে সমতল করে নিতে হবে যেন কোথাও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে না পারে।

সার প্রয়োগ

সরিষার জাত ও মাটি ভেদে সারের পরিমাণের পার্থক্য হয়ে থাকে। নিম্নে সাধারণ একটি হিসেব উপস্থাপন ক

সারের নাম

কম্পোস্ট / খামার

টি এস পি

এম পি

সারের পরিমাণ/হেক্টর

২০০-২৫০ কেজি

১৫০-১৮০ কেজি

৭৫-৮৫ কেজি

উল্লেখ্য ইউরিয়া সারের অর্ধেকসহ বাকি সব সার জমি করার সময় মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ফুল আসার সময় জমিতে ছিটিয়ে দিতে হয়। কোন জমিতে সালফার, দত্তা ও বোরনের অভাব পরিলক্ষিত হলে স্থ পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণ জিপসাম, জিংক সালফেট ও সোহানা ( বরিক এসিড) উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সার প্রয়োগ করার পর জমিতে সেচ দিলে সরিষার ফলন আরও বৃদ্ধি পাবে। গাছে শিশির শুকিয়ে গেলে অর্থাৎ পড়ন্ত বিকেলে উপরি প্রয়োগ করা উচিত।

বপন পদ্ধতি

সরিষার বীজ সাধারণত ছিটিয়ে বোনা হয় বোঁজ ছোট বিধায় বোনার সময় জমিতে সমানভাবে ছিটানো কষ্টকর হয়। এজন্য বালি বা হাই এর যে কোন একটি বাঁজের সাথে মিশিয়ে বীজ ছিটালে জমিতে সমভাবে পড়ে। এতে জমির কোন জায়গায় গাছ মন আনার কোন জায়গায় পাতলা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

লাইন করে সরদার বোনা যায়। এতে সার, সেচ, নিড়ানি প্রভৃতি পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়। এক্ষেত্রে লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব সাধারণত ২৫-৩০ সে.মি. রাখা হয় এবং প্রতি লাইনে প্রয়োজনীয় পরিমাণ বীজ ছিটিয়ে বুনতে হয়।

পরিচর্যা

রোগ ও পরগাছা দমন পোকা নাগ পড়া বা অলটারনেরিয়া রাইটি কোন করা। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে পাকার বাদামী বা গাঢ় বাদামী দাগ পড়ে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে পাতা, কাজ শুঁটি ও বীজেও এই দাগ পড়ে।
এ রোগ দমনের জন্য মাইনে এম-৪৫ বা বোবা ডব্লিউপি ১ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১২ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।

এছাড়া সরিষা ক্ষেত্রে অরোবাংকি নামক এক প্রকার পরাম্য জ ক ক্ষতিসাধন করে। অরোবাংকি দেখা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা নিড়ানি দিয়ে জমি থেকে উঠিয়ে ধ্বংস করে ফেলতে হবে।

ফসল কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াই

কোন জাতের সরিমা কতদিন পর সংগ্রহ করতে হবে তার একটি হিসেব পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া সারদা ছে শতকরা ৮০-৮৫ ভাগ গাছ হলদে হলে পরিষ্কার দিনে সকাল বেলা গাছ কেটে নিয়ে মাড়াই করার স্থানে নিয়ে যেতে হয়। এখানে প্রখর সূর্যালোকে ২-৩ দিন চকানোর পর বিকেলের দিকে গরু মারা মাড়াই করতে হয়। এরপর সি করে কুলা ও চালুনি ব্যবহার করে পরিচানা করাতে হয়।

বীজ শুকানো ও সংরক্ষণ

পরিষ্কার বীজ রোদে ৩-৪ দিন ভালোভাবে শুকিয়ো (আর্দ্রতা ৫-৬%) নিতে হয়। এই বাঁহ শীতল পরিবেশ ও আর্দ্রতা কম এমন স্থানে অকনো পরিষ্কা যে কোন পারে ১-২ বছর পর্যন্ত कन्या गारा

ফলন

১৫০০- ২০০০ কেজি / জেনা

১৫০- ১১০০ কেজি / হেক্টর

সারমর্ম

সরিমা এদেশের বিভিন্ন তৈল জাতীয় ফসলের মধ্যে অন্যতম। সরিষার বীজ থেকে তৈল ও ধৈল পাওয়া যায়। তৈলে ক্ষতিকর ইরোসিক এসিড বিদ্যমান। আজ সার ও পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সুনিষ্কাশিত বেলে দো-আঁশ মাটি সরিষা চাদের জন্য উপযুক্ত। সরিষা বীজ প্রধানত মধ্য অক্টোবর থেকে নভেম্বরের শেষ পর্য কোন गा সরদা ফসলের ক্ষতিকর পোকা, পরগাছা ও রোগ হলো- गान পোকা, অরোবাংকি এবং পাতার দাগ পড়া রোগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *