All posts by নিউজ ডেস্ক, কৃষি গুরুকুল

কৃষি গুরুকুলের নিউজ ডেস্ক

শ্রীপুরে স্ট্রবেরি চাষ করে স্বাবলম্বী শিক্ষার্থী খসরু

গাজীপুর, ১৪ মার্চ ২০২৫ (বাসস): অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র খসরু আহমেদ। নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান হওয়ায় পড়াশোনার খরচ চালানো ছিল তার জন্য চ্যালেঞ্জিং। চাকরির চেষ্টা করেও সফল হতে না পেরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজেই কিছু করার। সেই সিদ্ধান্ত থেকেই শুরু হয় তার স্ট্রবেরি চাষের পথচলা, যা তাকে স্বাবলম্বী করেছে।

মাত্র দেড় বছর আগে তিন বিঘা জমিতে ১৮ হাজার স্ট্রবেরির চারা রোপণ করেন খসরু। এখন তার বাগানে প্রতিটি গাছে লাল-সবুজ থোকায় থোকায় ঝুলছে সুস্বাদু স্ট্রবেরি। প্রতিদিন তিনি প্রায় ৬০ কেজি স্ট্রবেরি সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজার ও পাইকারি আড়তে বিক্রি করেন। এ থেকে তার দৈনিক আয় হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। একসময় যার নিজের পড়ার খরচ চালানো কঠিন ছিল, সেই খসরু এখন পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে সংসারের দায়িত্বও সফলভাবে পালন করছেন।

খসরু জানান, স্ট্রবেরি চাষের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তার চাচার কাছ থেকে। শুরুতে চারা কিনে ও পরে নিজেই চারা তৈরি করে তিন বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। জমি প্রস্তুত, চারা রোপণ, সার প্রয়োগ ও পরিচর্যায় তার প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। তবে যথাযথ পরিচর্যার ফলে তার ফলন হয়েছে আশাতীত।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া বৃষ্টি জানান, শীতপ্রধান দেশের এই ফল এখন বাংলাদেশের কৃষকদের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে খসরুর মতো সফল চাষি বিরল। তার বাগানের উৎপাদন দেখে অনেকেই স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। লাভজনক হওয়ায় এ ফসল চাষে ঝুঁকছেন নতুন কৃষকরা।

খসরুর সফলতা শুধু তার একার নয়, বরং এটি স্থানীয় কৃষি উন্নয়নের একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।

টমেটো চাষে বিপ্লব : হাবিপ্রবি’র গবেষণায় নতুন সম্ভাবনা

দিনাজপুর, ১৪ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): টমেটো চাষে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। কৃষি অনুষদের প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রাইকোডার্মার বায়োফান-জাইসাইড ব্যবহার করে টমেটোর রোগ দমন এবং উচ্চ ফলন নিশ্চিত করা সম্ভব।

গবেষণা ও ফলাফল

গবেষণা পরিচালনা করেছেন হাবিপ্রবি’র প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মহিদুল হাসান ও পিএইচডি গবেষক মো. শরিফুল ইসলাম। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ট্রাইকোডার্মার বায়োফান-জাইসাইড প্রয়োগকৃত টমেটো গাছে অন্যান্য চাষ পদ্ধতির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ফলন হয়েছে।

গবেষণার মূল তথ্য:

বিষয় সাধারণ পদ্ধতি ট্রাইকোডার্মা প্রয়োগকৃত
প্রতি গাছে টমেটোর সংখ্যা ৪০-৪৫টি ৯০টি
টমেটো সংরক্ষণের সময় ৩-৪ দিন ৪-৫ দিন
গাছের উচ্চতা স্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বেশি
পুষ্টিগুণ (লাইকোপিন ও এসকরবিক এসিড) সাধারণ উচ্চ

 

গবেষণার ধাপসমূহ

গবেষকরা ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে তিন মৌসুম ধরে গবেষণা চালান। মাঠপর্যায়ে ৬টি ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। মাটি ও বীজ পৃথকভাবে শোধন করে নির্দিষ্ট ট্রিটমেন্ট অনুযায়ী সার, কীটনাশক এবং ট্রাইকোডার্মা প্রয়োগ করা হয়।

গবেষণার প্রধান ধাপ:

  • বিভিন্ন ধরনের মাটির নমুনা সংগ্রহ ও ট্রাইকোডার্মা আইসোলেশন।
  • মলিকুলার টেস্টের মাধ্যমে ১৮টি ট্রাইকোডার্মার শনাক্তকরণ।
  • মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ ও ফলাফল বিশ্লেষণ।

 

কৃষকদের জন্য সম্ভাবনা

গবেষণার ফলে কৃষকরা জৈবিক উপায়ে ফসলের রোগ দমন করতে পারবেন। বিশেষত, টমেটোর ঢলে পড়া রোগ (কৃষকদের ভাষায় ‘স্ট্রোক রোগ’) নিয়ন্ত্রণে এই প্রযুক্তি কার্যকর হবে। পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমে আসবে, যা কৃষকদের লাভজনক চাষের সুযোগ করে দেবে।

 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ড. মুহিদুল হাসান জানিয়েছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে উদ্ভাবিত ট্রাইকোডার্মার বায়োফান-জাইসাইড বাজারজাত করা হবে। এর ফলে প্রান্তিক কৃষকরাও সহজেই এটি ব্যবহার করতে পারবেন। গবেষণা দল আশা করছে, এটি দেশের কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

টমেটো চাষে এই নতুন উদ্ভাবন কৃষকদের জন্য যেমন লাভজনক হবে, তেমনি দেশের কৃষি খাতকে আরো একধাপ এগিয়ে নেবে।

বীরগঞ্জে পেঁয়াজ বীজ চাষে বিপ্লব, স্বাবলম্বী হচ্ছে কৃষকরা

দিনাজপুর, ১৩ মার্চ ২০২৫ (বাসস): দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় কৃষকদের মধ্যে নতুন আশার আলো জাগিয়েছে পেঁয়াজ বীজ চাষ। এ বছর উপজেলায় ৫১০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে, যা প্রায় ১২০ কোটি টাকার বাজারমূল্যের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। কৃষকদের দিন বদলের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।

পেঁয়াজ বীজ চাষের উত্থান

বীরগঞ্জে আগে প্রধানত গম, ভুট্টা ও আলুর চাষ হতো। কয়েক বছর আগে কয়েকজন কৃষক ঝুঁকি নিয়ে পেঁয়াজ বীজ চাষ শুরু করেন। অধিক মুনাফার কারণে এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে ঝাড়বাড়ী, দেবীপুর, মুরারীপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে ব্যাপক হারে পেঁয়াজ বীজের চাষ হচ্ছে।

পেঁয়াজ বীজ চাষের বিস্তার:

এলাকা জমির পরিমাণ (হেক্টর) আনুমানিক বাজারমূল্য (কোটি টাকা)
ঝাড়বাড়ী ও মরিচা ইউনিয়ন ২২৫ ৩০
ঝাড়বাড়ী ইউনিয়নের তিনটি ব্লক ২৫০ ৫০
বীরগঞ্জ উপজেলার মোট ১২টি ইউনিয়ন ৫১০ ১২০

কৃষকদের সাফল্যগাথা

ঝাড়বাড়ী গ্রামের কৃষক রমিজ উদ্দিন জানান, তাদের গ্রাম ও আশপাশের এলাকায় উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজের বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। স্থানীয় দিনমজুররাও জমি বন্ধক নিয়ে পেঁয়াজ বীজ চাষ শুরু করেছেন।

দেবীপুর গ্রামের আমজাদ আলী গত বছর ৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছিলেন, এবার করেছেন ৮ বিঘা। তিনি বলেন, “গত বছর পেঁয়াজ বীজ চাষ করে আমাদের গ্রামের অন্তত ৫০ জন কৃষক আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এবার আরও বেশি লাভের প্রত্যাশা করছি।”

উৎপাদন খরচ ও লাভ

এই এলাকায় প্রধানত কিং, কুইন, তাহেরপুরী ও সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ বীজ চাষ করা হয়।

জমির পরিমাণ (বিঘা) খরচ (হাজার টাকা) আগের বছরের বিক্রয় মূল্য (প্রতি কেজি) এবারের প্রত্যাশিত মূল্য (প্রতি কেজি)
১ বিঘা ৫০-৬৫ ১,৭০০ ২,০০০

 

পরাগায়ন ও পরিচর্যা

বীরগঞ্জের ঝাড়বাড়ী, মরিচা ও মোহনপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠ এখন পেঁয়াজের সাদা ফুলে ছেয়ে গেছে। কৃষকরা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কৃত্রিম পরাগায়নের কাজ করছেন, বিকেলে চলছে সেচ কার্যক্রম।

কৃষি ও অর্থনীতিতে পরিবর্তন

  • ধুকুরঝাড়ী গ্রামের মহেশ পাল পেঁয়াজ বীজ চাষের মুনাফা দিয়ে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন।
  • গোলাপগঞ্জ হাটের ব্যবসায়ী শহিদুল তার ব্যবসা ছেড়ে ৯ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছেন।
  • বেকার যুবকেরা চাকরির পেছনে না ছুটে পেঁয়াজ বীজ চাষে উদ্যোক্তা হয়েছেন।

মুরারীপুর গ্রামের সোহেল রানা বলেন, “৬ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছি, ৪ মাসের মধ্যে ১৫ লাখ টাকা লাভের আশা করছি। চাকরির পেছনে না ছুটে নিজের ব্যবসা করছি। প্রতিদিন আমার ক্ষেতে ১০ জন শ্রমিক কাজ করছে।”

কৃষি দপ্তরের উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, “এই উপজেলায় পেঁয়াজ বীজ চাষ কয়েকগুণ বেড়েছে। কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রায় শত কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজ বিক্রি সম্ভব হবে।”

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জান মিয়া বলেন, “আমি সরেজমিনে বীরগঞ্জের সফল পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন দেখেছি। ভবিষ্যতে এই কার্যক্রম সমগ্র জেলায় সম্প্রসারণের মহাপরিকল্পনা নেওয়া হবে।”

পেঁয়াজ বীজ চাষ বীরগঞ্জ উপজেলায় কৃষি খাতের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এটি শুধু অর্থনৈতিক উন্নতি নয়, বরং কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করছে। সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে এটি বাংলাদেশের কৃষিতে এক নতুন বিপ্লব ঘটাতে পারে।

নাটোরে পদ্মার চরে ঢেমসি চাষের সফল অভিষেক

নাটোর, ১৩ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): নাটোরের কৃষিতে নতুন সংযোজন হিসেবে প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে ঢেমসি, যা একটি দানাদার সুপারফুড শস্য। লালপুর উপজেলার পদ্মার চর এলাকায় এই অপ্রচলিত ফসলের চাষ শুরু হয়েছে, যা কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে।

পদ্মা চরের বিলমাড়িয়া এলাকায় প্রায় এক বিঘা জমিতে ঢেমসি চাষ করা হয়েছে। সাদা ও লালচে আভার শুভ্র ফুলের সৌন্দর্যে ভরে গেছে মাঠ। ফাল্গুনের বাতাসে ঢেমসি গাছের সবুজ পাতার সাথে সাদা ফুলের মেলবন্ধন বসন্তের অনন্য রূপ তৈরি করেছে।

ঢেমসি চাষের অগ্রদূত কৃষক মুনতাজ আলী

লালপুরের আদর্শ কৃষক মুনতাজ আলী প্রথমবারের মতো ঢেমসি চাষ করেছেন। প্রতিদিন আশপাশের অসংখ্য কৃষক তার জমিতে এসে চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে জানছেন। একই এলাকার কৃষক রবিউল বলেন, “আগামী বছর আমার জমিতেও ঢেমসি চাষ করবো।”

মুনতাজ আলী জানান, এক বিঘা জমিতে ঢেমসি চাষ করতে তার খরচ হয়েছে মাত্র তিন হাজার টাকা। সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন নেই, এমনকি সেচও লাগে না। আগাছাও তুলনামূলকভাবে কম হয়। তিনি বলেন, “অগ্রহায়ণ মাসে বীজ বপন করেছি, আশা করছি তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে ফলন পাবো।”

ঢেমসি: পুষ্টিগুণ ও সম্ভাবনা

ঢেমসি, যা বৈজ্ঞানিকভাবে ফ্যাগোপাইরাম এস্কুলেন্টাম নামে পরিচিত, ইংরেজি ভাষায় এটি বাকহুইট নামে পরিচিত। এটি শস্যদানাসদৃশ বীজের জন্য চাষ করা হয় এবং মাটির আচ্ছাদনী শস্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

উপজেলা কৃষি অফিসার প্রীতম কুমার হোড় বলেন, “সুপারফুড হিসেবে পরিচিত ঢেমসি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, মিনারেল, ফাইবার, ভিটামিন বি, জিংক ও সেলেনিয়াম রয়েছে, যা উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার ও অ্যাজমা প্রতিরোধে সহায়ক। এটি উচ্চমূল্যের একটি সম্ভাবনাময় ফসল।”

ঢেমসি চাষের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ জানান, এলাকার কৃষকরা ঢেমসি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তিনি বলেন, “আশা করছি আগামী মৌসুমে ঢেমসি চাষের পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং এই জমিতে মধু আহরণও সম্ভব হবে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”

উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে ঢেমসি চাষ নাটোরের চরে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। কৃষকরা এর চাষাবাদে সফল হলে এটি দেশের অন্যান্য চরাঞ্চলেও বিস্তৃত হতে পারে।

কুষ্টিয়াসহ দুই জেলার ধানচাষীদের আশা জাগাচ্ছে জিকে সেচ প্রকল্প

কুষ্টিয়া, ১২ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): দীর্ঘদিন পর কৃষকরা এবার মৌসুমের শুরুতেই গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্প থেকে পানির সরবরাহ পাচ্ছেন। এর ফলে কুষ্টিয়া জেলায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা পৌঁছাবে, পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃষকরাও সেচ সুবিধা পাবেন। এতে কৃষকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে, কারণ এবার বোরো আবাদে বিঘাপ্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ কমবে।

কৃষকরা জানান, গত দুই-তিন মৌসুম ধরে সেচ সুবিধা না পাওয়া যাওয়ার কারণে তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে, এবার আগেভাগে পানি পাওয়ায় তারা অনেক স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের কৃষক সুমন আলী জানান, তারা প্রথমে মনে করেছিলেন জিকে সেচ প্রকল্পের পানি পাবেন না, কিন্তু এখন পানির আগমন তাদের জন্য বাড়তি সুবিধা এনে দিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, এই সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষকরা ভালো মুনাফা পাবে। বোরো মৌসুমে সেচ খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা উপকৃত হবেন, বিশেষ করে আউশ ধান চাষে কৃষকরা আরো বেশি লাভবান হবেন। তিনি জানান, এ বছর কুষ্টিয়ায় বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬,৪৬৪ হেক্টর জমি, কিন্তু আবাদ হয়েছে ৩৫,৯৯৬ হেক্টর জমিতে।

জিকে সেচ ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সভাপতি সাফায়েত হোসেন পল্টু বলেন, গত বছর খালে পানি সরবরাহ না হওয়ায় অনেক জমি অনাবাদি ছিল, তবে সেচ ব্যবস্থা সচল হলে ফসল উৎপাদন বাড়বে এবং পরিবেশ রক্ষা হবে। ভেড়ামারায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পের পাম্প ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, ৬ মার্চ থেকে একটি পাম্প দিয়ে পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে এবং একটি পাম্প সচল করার কাজ চলছে।

এছাড়া, কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রশিদুর রহমান জানান, জিকে সেচ প্রকল্পের খাল সংস্কারসহ পাম্প হাউজ আধুনিকায়ন করার জন্য ১,৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যা সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী এক হাজার ৩০০ কোটি টাকায় বাস্তবায়িত হবে।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের আওতাধীন কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ১৯৩ কিলোমিটার প্রধান খাল, ৪৬৭ কিলোমিটার শাখা খাল ও ৯৯৫ কিলোমিটার প্রশাখা খালে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে লাভবান উল্লাপাড়ার কৃষকরা

সিরাজগঞ্জ, ১০ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): পুষ্টিগুণে ভরপুর টমেটো একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সবজি যা কাঁচা, রান্না করা, জুস, কেচাপ বা সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী, কারণ এতে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, পটাশিয়াম, এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লাইকোপিন থাকে যা নানা রোগ থেকে দূরে রাখে। এর চাহিদাও দিন দিন বেড়ে চলছে।

এদিকে, সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার আলিয়ারপুর গ্রামের কৃষক নেজাব আলী মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে ভালো লাভ পেয়েছেন। মালচিং পদ্ধতি হল পলিথিন ব্যবহার করে ফসল চাষের এক বিশেষ পদ্ধতি, যা গাছকে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করতে এবং অতিরিক্ত পানি রোধ করতে সাহায্য করে।

নেজাব আলী জানান, তিনি ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ২৫ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ শুরু করেন। এখন তার বাগানে প্রতি গাছে বিপুল পরিমাণ টমেটো ধরে আছে এবং তিনি ইতোমধ্যে প্রায় ৮ মন টমেটো বাজারে বিক্রি করেছেন। তবে, বাজারে টমেটোর দাম কম থাকায় তার লাভ কিছুটা কম হলেও, তিনি আশা করছেন যে এবছর ২৫/৩০ হাজার টাকা লাভ হবে।

এমএমএস-এর কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল জানান, মালচিং পদ্ধতি ব্যবহারে জমির আদ্রতা ১০ থেকে ২৫ ভাগ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়, এবং এই পদ্ধতিতে আগাছা হওয়া খুবই কম হয়। তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করলে ফলনের গুণগত মান বাড়ে এবং সারের গুণাগুণ ঠিক থাকে।

উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমি জানান, উল্লাপাড়া উপজেলায় টমেটো চাষে বৈচিত্র্য এসেছে, এবং এখানে নেজাব আলীসহ অনেক কৃষক মালচিং পদ্ধতিতে সফলতা পেয়েছেন। এবছর উল্লাপাড়ায় মোট ৫১ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে, এর মধ্যে ১৫ হেক্টর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে চাষ হয়েছে। তিনি বলেন, এই পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে এবং স্থানীয় কৃষকরা এই চাষের মাধ্যমে লাভবান হচ্ছেন।

এমএমএস-এর উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি জানান, এভাবে টমেটো চাষের উন্নয়ন কৃষকদের মাঝে আরো বেশী উৎসাহ জাগাবে।

নাটোরে পদ্মার চরে বাহারী ফসলের মেলা

নাটোর, ৯ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): জেলার লালপুরে পদ্মার চরে ফসলের এক বাহারী মেলা শুরু হয়েছে। এখানকার কৃষকরা বেদনার বালুচরকে কাজে লাগিয়ে স্বপ্ন দেখছেন। পদ্মার চর এখন একটি রঙিন গ্যালারি, যেখানে নানা ধরনের শস্যের চাষ হচ্ছে। সবুজের মধ্যে শোভিত ধনিয়া, পেঁয়াজ, হলুদ সূর্যমুখী ও বেগুনী শিমের ফুল, আর মৌমাছির গুঞ্জন পরিবেশটিকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে।

লালপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন—বিলমাড়িয়া, রসুলপুর, চরজাজিরা এবং আরাজীবাকনাইসহ ১৮টি চরজুড়ে চাষাবাদ হচ্ছে। এখানে প্রায় তিন হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের অর্থকরী শস্য চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ জমিতে আবাদ হচ্ছে আখ (১,৫৬৩ হেক্টর), গম (৮৪১ হেক্টর), মসুর (৪৮২ হেক্টর), চিনাবাদাম (৪৭৮ হেক্টর) এবং সবজি (১২১ হেক্টর)। এছাড়া, ফলবাগানও রয়েছে ১২২ হেক্টরে, যেখানে আম, কুল, পেয়ারা, মাল্টা এবং লেবু উৎপাদিত হচ্ছে। পদ্মার চরেই বর্তমানে চিয়া সীডের চাষ হচ্ছে, যা উচ্চ মূল্যের কারণে দ্রুতই এর উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, রবি মৌসুমে চরের জমি সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়, তবে খরিপ মৌসুমে এই জমির পরিমাণ কমে যায়। খরিপ-১ মৌসুমে আবাদি জমি ছিল ২,৯৪৬ হেক্টর এবং খরিপ-২ মৌসুমে এক হাজার ৭১৫ হেক্টর।

কৃষক মুনতাজ আলী জানান, উর্বর পদ্মার চরে চাষ করা সহজ হলেও সেচ খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। তিনি আশা করছেন, বিএডিসি এখানে সেচ স্ক্রীম চালু করলে তারা উপকৃত হবেন। আর কৃষক মুস্তাক আলী জানিয়েছেন, তিনি এবার দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন এবং আশাবাদী যে, আবহাওয়া ভালো থাকলে তার ফলন ভালো হবে।

তবে পেঁয়াজ চাষী রাউফ মালিথা বাজারে পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় এবার লাভ কম হবে বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, অন্যান্য ফসলের মাধ্যমে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে।

লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার প্রীতম কুমার হোড় জানান, কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রযুক্তি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় সূর্যমুখী চাষ ব্যাপকভাবে হচ্ছে। বর্তমানে, পদ্মার চর বৈচিত্র্যময় শস্য উৎপাদনের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে। এসব ফসলের উদ্বৃত্ত রাজধানীসহ অন্যান্য এলাকায় পাঠানো হচ্ছে।

বিএডিসি (সেচ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিদ্যুৎ না থাকার কারণে প্রচলিত সেচ ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না, তবে পানাসী-২ প্রকল্পের আওতায় সোলার সেচ প্রকল্প চালু হলে পদ্মার চরে তা কার্যকর হবে।

এক কেজি ওজনের ‘লাউ বেগুন’ চাষে সফল নওগাঁর রফিকুল-বৃষ্টি দম্পতি

নওগাঁ, ৭ মার্চ ২০২৫ (বাসস): নওগাঁ জেলার বরেন্দ্র এলাকার সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী বৃষ্টি বানু নতুন জাতের ‘লাউ বেগুন’ চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। দূর থেকে দেখে মনে হবে লাউ, তবে কাছে গেলে জানা যায় এটি পরিচিত বেগুন। এই জাতের নাম বারি-১২।

জেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এটি নওগাঁতে প্রথমবারের মতো চাষ করা হচ্ছে। প্রতি বেগুনের ওজন এক থেকে দেড় কেজি এবং প্রতিটি গাছে ৭ থেকে ৮ কেজি পর্যন্ত বেগুন উৎপাদিত হচ্ছে। অন্যান্য বেগুনের তুলনায় এই জাতের বেগুনে ফলন এবং গুণগত মান ভালো হওয়ায় বাজারে দামও বেশি। এই বেগুনের রোগ-বালাই কম এবং কম সেচে চাষ করা যায়। এর ভর্তা, ভাজি বা অন্যান্য তরকারিতে স্বাদ অতুলনীয়।

উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘এই বেগুনে রয়েছে পুষ্টিগুণ যেমন ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম, যা দাঁত এবং হাড়ের জন্য উপকারী।’ এই বেগুন অন্যান্য বেগুনের তুলনায় বেশি উৎপাদনশীল এবং রোগ প্রতিরোধী।

রফিকুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী বৃষ্টি বানু ২০২৪ সালে ‘মৌসুমী’ নামক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা থেকে বারি-১২ জাতের বেগুন চাষের প্রশিক্ষণ নেন এবং ৬০০টি চারা পান। তারা তাদের ১৫ শতক জমিতে এই বেগুনের চারা রোপণ করেন এবং এখন প্রচুর বেগুন উৎপাদিত হচ্ছে।

রফিকুল ইসলাম জানান, “গত সপ্তাহে নওগাঁ হাটে দেড় মন বেগুন বিক্রি করেছি, যেখানে অন্য বেগুন ৫০০ টাকা মন, আমি তা বিক্রি করেছি ১৬০০ টাকা মন দরে।” তিনি আরও জানান, প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এই বেগুন দেখতে আসছে।

বৃষ্টি বানু বলেন, “এই বেগুন বিক্রি করে ভালো লাভ করেছি, মৌসুমীকে ধন্যবাদ জানাই।”

মৌসুমির কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আরিফ জানান, রফিকুল দম্পতি সফল হয়েছেন এবং তাদের উৎপাদন জেলা জুড়ে সাড়া ফেলেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নতুন জাতের এই বেগুন দ্রুত মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়বে এবং কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে।

ঝিনাইদহে কৃষকদের মধ্যে বীজ ও সার বিতরণ

ঝিনাইদহ, ৬ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): জেলায় তেল ও ডাল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আজ মুগ ডাল ও তিলের বীজ কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। সদর উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে এসব বীজ ও সার বিতরণ করা হয়।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় উপজেলা চত্বরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের আয়োজনে বীজ ও সার বিতরণ কর্মসূচি শুরু হয়।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর এ নবী’র সভাপতিত্বে বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া আক্তার চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ জুনায়েদ হাবীব, মীর রাকিবুল ইসলাম এবং অন্যান্য কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে সদর উপজেলার ৮০০ প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে ৪ মেট্রিক টন মুগ ডাল বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এছাড়া ৫৫০ জন কৃষকের মধ্যে ১ কেজি করে তিলের বীজ এবং কৃষক প্রতি ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার বিতরণ করা হয়।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর এ নবী জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের খরিপ-১ মৌসুমে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এই বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রীষ্মকালীন মুগ ও তিলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্য নিয়ে কৃষকদের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রান্তিক কৃষকেরা উপস্থিত ছিলেন।

নওগাঁয় এবার গমের আবাদে ফিরছেন কৃষকরা

নওগাঁ, ৬ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): বরেন্দ্র জেলা হিসেবে পরিচিত নওগাঁ জেলার কৃষকরা এবার গম চাষে ফিরছেন। চলতি মৌসুমে জেলার ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে গম চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি।

এক সময় নওগাঁর উঁচু বরেন্দ্রভূমি এলাকায় প্রচুর গম চাষ হত, কিন্তু ভালো দাম না পাওয়া ও ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে গম চাষে বিরতি এসেছিল। তবে বর্তমানে কম খরচ ও ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা আবারও গম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তারা জানাচ্ছেন, গত বছর গমের ফলন ভালো হয়েছিল এবং স্থানীয় বাজারে দামও সন্তোষজনক ছিল।

চলতি মৌসুমে আবহাওয়া গম চাষের জন্য অনুকূল রয়েছে, এবং রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণও কম। যদি আবহাওয়া ঠিক থাকে, তাহলে এবারও ভালো ফলন আশা করছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ রবি মৌসুমে নওগাঁর ১১টি উপজেলায় ১৭ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে, যা গত বছরের ১৬ হাজার ১০০ হেক্টরের তুলনায় বেশি।

এ বছরের গমের আবাদ সাপাহার, পোরশা, পত্নীতলা, রাণীনগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে পোরশা উপজেলায় ৪ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে।

পোরশা উপজেলার গাঙ্গুরিয়া গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, তিনি এবারে ৪ বিঘা জমিতে গম আবাদ করেছেন এবং এখন পর্যন্ত কোন রোগবালাই হয়নি। গতবারের তুলনায় এবার গমের দাম ভালো থাকায় তিনি আশা করছেন, ৫৫-৬০ মণ গম পাবেন।

নওগাঁ সাপাহরের কৃষক কুমুজ আলী বলেন, গম চাষে পরিশ্রম কম এবং বীজ রোপণ ও ফসল কেটে ঘরে তোলার মতো কাজ ছাড়া তেমন কিছু করতে হয় না। অন্যান্য ফসলের তুলনায় গম চাষে অনেক সুবিধা রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, গম চাষের জন্য পানি কম জমে এমন উঁচু জমি উপযোগী, যা নওগাঁর বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া যায়। এছাড়া, চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৫০০ প্রান্তিক কৃষককে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে এবং কৃষকদের গম চাষে আগ্রহী করতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।