Category Archives: আপডেট

“আপডেট” সেকশনে কৃষি খাতের সাম্প্রতিক খবর, গবেষণা, প্রযুক্তি, বাজারদর ও নীতি পরিবর্তনের নির্ভরযোগ্য তথ্য নিয়মিত প্রকাশিত হবে।

এক কেজি ওজনের ‘লাউ বেগুন’ চাষে সফল নওগাঁর রফিকুল-বৃষ্টি দম্পতি

নওগাঁ, ৭ মার্চ ২০২৫ (বাসস): নওগাঁ জেলার বরেন্দ্র এলাকার সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী বৃষ্টি বানু নতুন জাতের ‘লাউ বেগুন’ চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। দূর থেকে দেখে মনে হবে লাউ, তবে কাছে গেলে জানা যায় এটি পরিচিত বেগুন। এই জাতের নাম বারি-১২।

জেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এটি নওগাঁতে প্রথমবারের মতো চাষ করা হচ্ছে। প্রতি বেগুনের ওজন এক থেকে দেড় কেজি এবং প্রতিটি গাছে ৭ থেকে ৮ কেজি পর্যন্ত বেগুন উৎপাদিত হচ্ছে। অন্যান্য বেগুনের তুলনায় এই জাতের বেগুনে ফলন এবং গুণগত মান ভালো হওয়ায় বাজারে দামও বেশি। এই বেগুনের রোগ-বালাই কম এবং কম সেচে চাষ করা যায়। এর ভর্তা, ভাজি বা অন্যান্য তরকারিতে স্বাদ অতুলনীয়।

উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘এই বেগুনে রয়েছে পুষ্টিগুণ যেমন ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম, যা দাঁত এবং হাড়ের জন্য উপকারী।’ এই বেগুন অন্যান্য বেগুনের তুলনায় বেশি উৎপাদনশীল এবং রোগ প্রতিরোধী।

রফিকুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী বৃষ্টি বানু ২০২৪ সালে ‘মৌসুমী’ নামক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা থেকে বারি-১২ জাতের বেগুন চাষের প্রশিক্ষণ নেন এবং ৬০০টি চারা পান। তারা তাদের ১৫ শতক জমিতে এই বেগুনের চারা রোপণ করেন এবং এখন প্রচুর বেগুন উৎপাদিত হচ্ছে।

রফিকুল ইসলাম জানান, “গত সপ্তাহে নওগাঁ হাটে দেড় মন বেগুন বিক্রি করেছি, যেখানে অন্য বেগুন ৫০০ টাকা মন, আমি তা বিক্রি করেছি ১৬০০ টাকা মন দরে।” তিনি আরও জানান, প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এই বেগুন দেখতে আসছে।

বৃষ্টি বানু বলেন, “এই বেগুন বিক্রি করে ভালো লাভ করেছি, মৌসুমীকে ধন্যবাদ জানাই।”

মৌসুমির কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আরিফ জানান, রফিকুল দম্পতি সফল হয়েছেন এবং তাদের উৎপাদন জেলা জুড়ে সাড়া ফেলেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নতুন জাতের এই বেগুন দ্রুত মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়বে এবং কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে।

ঝিনাইদহে কৃষকদের মধ্যে বীজ ও সার বিতরণ

ঝিনাইদহ, ৬ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): জেলায় তেল ও ডাল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আজ মুগ ডাল ও তিলের বীজ কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। সদর উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে এসব বীজ ও সার বিতরণ করা হয়।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় উপজেলা চত্বরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের আয়োজনে বীজ ও সার বিতরণ কর্মসূচি শুরু হয়।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর এ নবী’র সভাপতিত্বে বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া আক্তার চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ জুনায়েদ হাবীব, মীর রাকিবুল ইসলাম এবং অন্যান্য কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে সদর উপজেলার ৮০০ প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে ৪ মেট্রিক টন মুগ ডাল বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এছাড়া ৫৫০ জন কৃষকের মধ্যে ১ কেজি করে তিলের বীজ এবং কৃষক প্রতি ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার বিতরণ করা হয়।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর এ নবী জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের খরিপ-১ মৌসুমে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এই বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রীষ্মকালীন মুগ ও তিলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্য নিয়ে কৃষকদের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রান্তিক কৃষকেরা উপস্থিত ছিলেন।

নওগাঁয় এবার গমের আবাদে ফিরছেন কৃষকরা

নওগাঁ, ৬ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): বরেন্দ্র জেলা হিসেবে পরিচিত নওগাঁ জেলার কৃষকরা এবার গম চাষে ফিরছেন। চলতি মৌসুমে জেলার ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে গম চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি।

এক সময় নওগাঁর উঁচু বরেন্দ্রভূমি এলাকায় প্রচুর গম চাষ হত, কিন্তু ভালো দাম না পাওয়া ও ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে গম চাষে বিরতি এসেছিল। তবে বর্তমানে কম খরচ ও ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা আবারও গম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তারা জানাচ্ছেন, গত বছর গমের ফলন ভালো হয়েছিল এবং স্থানীয় বাজারে দামও সন্তোষজনক ছিল।

চলতি মৌসুমে আবহাওয়া গম চাষের জন্য অনুকূল রয়েছে, এবং রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণও কম। যদি আবহাওয়া ঠিক থাকে, তাহলে এবারও ভালো ফলন আশা করছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ রবি মৌসুমে নওগাঁর ১১টি উপজেলায় ১৭ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে, যা গত বছরের ১৬ হাজার ১০০ হেক্টরের তুলনায় বেশি।

এ বছরের গমের আবাদ সাপাহার, পোরশা, পত্নীতলা, রাণীনগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে পোরশা উপজেলায় ৪ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে।

পোরশা উপজেলার গাঙ্গুরিয়া গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, তিনি এবারে ৪ বিঘা জমিতে গম আবাদ করেছেন এবং এখন পর্যন্ত কোন রোগবালাই হয়নি। গতবারের তুলনায় এবার গমের দাম ভালো থাকায় তিনি আশা করছেন, ৫৫-৬০ মণ গম পাবেন।

নওগাঁ সাপাহরের কৃষক কুমুজ আলী বলেন, গম চাষে পরিশ্রম কম এবং বীজ রোপণ ও ফসল কেটে ঘরে তোলার মতো কাজ ছাড়া তেমন কিছু করতে হয় না। অন্যান্য ফসলের তুলনায় গম চাষে অনেক সুবিধা রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, গম চাষের জন্য পানি কম জমে এমন উঁচু জমি উপযোগী, যা নওগাঁর বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া যায়। এছাড়া, চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৫০০ প্রান্তিক কৃষককে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে এবং কৃষকদের গম চাষে আগ্রহী করতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।

 

কৃষিতে সফল হোসেনপুরের শিক্ষিত যুবক রেদুয়ান

কিশোরগঞ্জ, ৫ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত যুবক মো. রেদুয়ান মোল্লা। মাদ্রাসা থেকে ফাজিল শেষ করার পর, যখন তার বন্ধুরা চাকরির খোঁজে ব্যস্ত, তখন তিনি কৃষিতে মনোনিবেশ করে সফলতার স্বাদ গ্রহণ করেছেন। বাড়ির পাশের পতিত জমিতে শসা চাষ করে তিনি এখন লাভবান হচ্ছেন। বাজারে শসার দাম ভালো থাকায় তার কৃষি কার্যক্রমে মুনাফা হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের মোল্লাবাড়ি এলাকার যুবক মো. রেদুয়ান মোল্লা এবার ২৬ শতক জমিতে শসা চাষ করেছেন। এদিকে, তার সফল কৃষি কাজ দেখে এলাকার বেকার যুবকরা তাকে অনুসরণ করে আত্মনির্ভরশীল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

রেদুয়ান মোল্লা জানান, পড়াশোনার সময় তিনি তার পিতাকে কৃষিতে সহযোগিতা করতেন, এবং এ থেকেই তার কৃষি বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হয়। তিনি এবার ২৬ শতক জমিতে এয়ার মালিক সিডের হাইব্রিড জাতের শসা চাষ করেছেন। বর্তমানে বাজারে শসা ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এবং পাইকারী দামে মণ প্রতি ১৬০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আশা করছেন, এ বছর দেড় থেকে দুই লক্ষাধিক টাকার শসা বিক্রি করতে পারবেন।

রেদুয়ান মোল্লা বলেন, “কিছু বছর আগে আমি কৃষি বিষয়ে দুটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। এরপর সিডলেস লেবু এবং বেগুন চাষ করেছি। এখন শসার প্রকল্পে কাজ করছি। দুই-তিন দিন পর পর ৭ থেকে ৮ মণ করে শসা সংগ্রহ করতে পারছি। এ পর্যন্ত প্রায় ১৫০ মণের শসা বিক্রি করেছি। ভবিষ্যতে বড় পরিসরে কৃষি কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে।”

রেদুয়ানের বাবা জালাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, “আমরা সবসময় চাইছিলাম ছেলে ভালো একটা চাকরি করবে, কিন্তু সে যখন চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষি কাজ শুরু করে, প্রথমে মন খারাপ হলেও এখন ভালো লাগে। আমার ছেলে একজন সফল উদ্যোক্তা। সে আমাদের ধারণা বদলে দিয়েছে যে শুধুমাত্র চাকরি করেই টাকা উপার্জন করা সম্ভব।”

স্থানীয় কৃষক মরজত আলী বলেন, “রেদুয়ান মোল্লা দুই বছর ধরে শসা চাষ করছেন। আমরা প্রায়ই তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে থাকি। তাকে দেখে আমরাও কৃষিতে মনোনিবেশ করেছি। তিনি উচ্চ শিক্ষিত যুবক, চাকরি না করে কৃষি কাজ করে আমাদের উৎসাহ দিচ্ছেন।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম শাহজাহান কবির বলেন, “মাঠ পর্যায়ে কৃষি অফিস কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছে। বর্তমানে সাধারণ কৃষকদের পাশাপাশি রেদুয়ান মোল্লাদের মতো উচ্চ শিক্ষিত যুবকরা কৃষিতে মনোনিবেশ করছেন, যা দেশের কৃষিকে এগিয়ে নিতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে।”

 

ফলের মাছি পোকা দমনে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করলেন বাকৃবি গবেষক

ময়মনসিংহ, ৬ মার্চ ২০২৫ (বাসস): ফলের মাছি পোকা বিশ্বব্যাপী হর্টিকালচার শিল্পের অন্যতম প্রধান বাধা। এটি অনেক দেশে ‘কোয়ারেন্টাইন পেস্ট’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ করে ইউরোপে আমসহ বিভিন্ন ফল রপ্তানিতে সমস্যা সৃষ্টি করে।

এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর খান নতুন একটি ‘ফ্রুট ফ্লাই ট্র্যাপ’ উদ্ভাবন করেছেন। তার উদ্ভাবিত এই ট্র্যাপ মাছি পোকা দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে, যা পরিবেশবান্ধব এবং ব্যয়সাশ্রয়ী।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাছি পোকা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। যেমন, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় ‘মাসট্র্যাপিং’ পদ্ধতি প্রচলিত, যেখানে পুরুষ মাছি পোকাকে আকৃষ্ট করে ধ্বংস করা হয়, ফলে স্ত্রী পোকাদের প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়। বাংলাদেশে প্রচলিত ট্র্যাপে সাধারণত লিউর এবং সাবান-পানি ব্যবহার করা হয়, তবে কার্যকারিতা বজায় রাখতে এসব পদ্ধতিতে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

ড. মঞ্জুর খানের উদ্ভাবিত ট্র্যাপে কোনো রাসায়নিক বা পানি ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। বিশেষ গঠনশৈলীর কারণে পোকাগুলো একবার প্রবেশ করলে আর বের হতে পারে না, ফলে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রযুক্তি কুমড়া, লাউ, করলা, তরমুজ, বাঙ্গি, আম, পেয়ারা, ড্রাগন ফলসহ বিভিন্ন ফসলে সফলভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব।

গবেষকের মতে, এই ট্র্যাপের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলে কৃষকদের জন্য এটি সহজলভ্য হবে, ফলে কীটনাশকের ব্যবহার কমবে, ব্যয় সাশ্রয় হবে এবং পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। একটি ট্র্যাপ উৎপাদনে আনুমানিক ৫০ টাকা খরচ হবে এবং এটি পাঁচ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে, শুধুমাত্র লিউর পরিবর্তন করলেই চলবে।

অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) এক সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা এই উদ্ভাবনের প্রশংসা করেছেন। প্রযুক্তিটি বাণিজ্যিকভাবে উন্মুক্ত করতে এখন এর পেটেন্ট ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির প্রয়োজন বলে জানান গবেষক।

অধ্যাপক ড. মঞ্জুর খান ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরে গবেষণা শুরু করেন এবং ২০২০ সালে এই প্রযুক্তির চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করেন। বর্তমানে, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের অর্থায়নে নিরাপদ আম উৎপাদনে এ ট্র্যাপের কার্যকারিতা নিয়ে আরও গবেষণা চলছে।

 

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের সংকট

কুষ্টিয়া, ৩ মার্চ ২০২৫ (বাসস): বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে ক্রমবর্ধমান তাপদাহের প্রভাব কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে চাষাবাদ কার্যত ব্যাহত হচ্ছে, যা খাদ্য উৎপাদনের জন্য হুমকিস্বরূপ।

দেশের অন্যতম বৃহৎ সেচ প্রকল্প গঙ্গাকপোতাক্ষ (জিকে) খালের পাম্প হাউজ ছয় বছর ধরে অকেজো থাকায় ভূ-উপরিস্থ জলাধার প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। ফলে কৃষি সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। তবে ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গভীর সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

তিন জেলার কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ২ লাখ ৩২ হাজার হেক্টর উর্বর কৃষিজমিতে সেচের জন্য ৫৮৩টি গভীর নলকূপ, ৩২৭টি এলএলপি এবং ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৫১টি অগভীর নলকূপ চালু রয়েছে। কিন্তু পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাওয়ায় কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকদের মতে, পানি সংকটের কারণে ফসল উৎপাদনে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, অথচ ফলন আশানুরূপ হচ্ছে না। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রাবিয়া খাতুন বলেন, ‘পানির অভাবে ধানের মাঠ শুকিয়ে যাচ্ছে, এমন চলতে থাকলে আমাদের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়বে।’

মেহেরপুর সদর উপজেলার কৃষক মিরাউল হক বলেন, ‘প্রতি বছর পানির স্তর নেমে যাচ্ছে, শ্যালো পাম্প চালিয়ে জমিতে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না।’ তিনি গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে পানি সংকট নিরসনের দাবি জানান।

পরিবেশবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের এই নিম্নগতি আগামীতে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। বিশেষজ্ঞ গৌতম কুমার রায় বলেন, ‘পানির সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকলে ভবিষ্যতে মরুময়তার দিকে ধাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ তিনি বর্ষার পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে জলাধার তৈরির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহিম মো. তৈমুর বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। ভূ-উপরিস্থ জলাধার সংরক্ষণ এবং গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে সুপেয় পানির মজুত সুরক্ষা করা যেতে পারে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। গবেষকরা জানিয়েছেন, ২০৭০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা আরও ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে, যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পানি সংকটকে আরও তীব্র করবে।

চাষিরা দাবি করেছেন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) পরিচালিত গভীর নলকূপ ও এলএলপি পাম্পের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ করা হলে সেচব্যয় হ্রাস পাবে এবং ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। চুয়াডাঙ্গার কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সরকার যদি আরও বেশি গভীর নলকূপ স্থাপন করে, তবে কৃষিকাজ সহজ হবে এবং পানির সংকট অনেকাংশে কমবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন, যাতে এই অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন টিকে থাকে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়।

বরগুনায় লবণাক্ত জমিতে লবণ সহিষ্ণু ফসলের সাফল্য

বরগুনা, ৩ মার্চ ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশের মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) এর গবেষণা অনুযায়ী, বরগুনা বরিশাল অঞ্চলের সবচেয়ে লবণাক্ত এলাকা, যেখানে ৯৫ হাজার ৬২০ হেক্টর জমি লবণাক্ততার শিকার। এই জমিগুলোর লবণের মাত্রা ১৬ থেকে ২৮.৫ ডেসিসিমেন পার মিটার (ডিএস/এম), যা সাধারণ চাষাবাদের জন্য অত্যন্ত প্রতিকূল।

এ দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা মোকাবিলায় বরগুনার কৃষকরা গত কয়েক বছর ধরে লবণ সহিষ্ণু গম, ডাল, পাট ও সূর্যমুখীর চাষ শুরু করেছেন। বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আলিমুর রহমান জানান, একবার জমি লবণাক্ত হয়ে গেলে তা আগের অবস্থায় ফেরানো কঠিন, তবে লবণ সহিষ্ণু ফসল চাষ করে এই জমিগুলোর ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব।

২০০৭ সালের সিডরের আগে বরগুনার উপকূলীয় অঞ্চলে মূলত আমন ধানের চাষ হতো, যা ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে কাটা হতো। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততা বেড়ে গিয়ে জমি পতিত থাকতো। সেচের পানির অভাবের কারণে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৪ লাখ ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে শুষ্ক মৌসুমে কোনো ফসল ফলানো সম্ভব হতো না।

এই সমস্যা সমাধানে কৃষি গবেষকরা ২০১৭ সাল থেকে লবণাক্ত পতিত জমিতে গমসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এতে দেখা যায়, গম প্রকৃতিগতভাবে কিছুটা লবণসহিষ্ণু, যা অল্প পানি সেচ দিয়েই ভালো ফলন দিতে পারে। গবেষণার মাধ্যমে রিলে পদ্ধতিতে গম ও মুগ ফসলের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়, যা কৃষকদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।

সম্প্রতি নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে আঁশজাতীয় ফসল ‘কেনাফ’। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) জানিয়েছে, কেনাফ পাটের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে এবং লবণাক্ত, খরা ও অনাবৃষ্টি মোকাবিলা করেও ভালোভাবে বেড়ে উঠতে সক্ষম। পটুয়াখালী পাট গবেষণা উপকেন্দ্রের কর্মকর্তা সৈয়দ আফলাতুন কবির জানান, কেনাফ চাষ সম্প্রসারিত হলে বরগুনাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের পতিত জমিগুলো কৃষির আওতায় আসবে।

বরগুনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী উপপরিচালক এসএম বদরুল আলম জানান, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কম বৃষ্টিপাত ও উজানের পানির প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে ভয়াবহ লবণাক্ততা ছড়িয়েছে। তবে কৃষকদের নতুন ফসল চাষের আগ্রহ ও বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে এই সমস্যার কার্যকর সমাধান সম্ভব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

চুয়াডাঙ্গায় জিকে খালে পানি সরবরাহ বন্ধ, কৃষি কাজে বিপর্যয়

চুয়াডাঙ্গা, ৩ মার্চ ২০২৫ (বাসস): বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসলের মৌসুমে চুয়াডাঙ্গার জিকে সেচ খালে পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে পানি না পাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বাধ্য হয়ে সেচ পাম্প মালিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত খরচে পানি কিনতে হচ্ছে, ফলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে, পদ্মা নদীতে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় এবং পলি অপসারণ না হওয়ায় জিকে সেচ খালে দীর্ঘদিন ধরে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। চুয়াডাঙ্গার সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলার কৃষকরা এই সেচ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান, ভুট্টা, গম, মসুরি, সরিষা চাষ করেন। কিন্তু ১৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ জিকে সেচ খালে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কৃষকদের বাড়তি দামে সেচ পানি কিনতে হচ্ছে, তবুও প্রয়োজনীয় সময়ে তা পাচ্ছেন না।

আলমডাঙ্গার জিকে খাল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পানির অভাবে খাল শুকিয়ে ফেটে গেছে, শিশু-কিশোররা সেখানে খেলাধুলা করছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, গত বছরও ঠিকমতো পানি পাননি, এবার জানুয়ারিতে পানি সরবরাহের কথা থাকলেও এখনো খাল শুকনো পড়ে আছে। খালের পানি দিয়ে সেচ দিতে যেখানে প্রতি বিঘায় খরচ ৩০০ টাকা, সেখানে শ্যালো মেশিন ব্যবহারে ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার জানিয়েছেন, জিকে ক্যানেলের আওতায় ৪ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে, এছাড়া ৮৬০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা ও সরিষার চাষ হয়েছে। পানির অভাবে বোরো চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে পানি পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ আহমেদ জানান, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের আওতায় চুয়াডাঙ্গার প্রধান ও সেকেন্ডারি ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ খালে পানি সরবরাহ করা হয়। তবে পদ্মার পানির স্তর নেমে যাওয়া এবং পলি জমে খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ড্রেজিং ও পাম্প মেরামতের কাজ চলছে, যা শেষ হলে পুনরায় পানি সরবরাহ শুরু হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

 

রিকশাচালক থেকে সফল মাশরুম চাষী হাসিব, বছরে আয় ৭-৮ লাখ টাকা

নারায়ণগঞ্জের তিনগাঁও গ্রামের মোহাম্মদ হাসিব একসময় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে তার স্বপ্ন ছিল ভিন্ন কিছু করার। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয় তাকে। রিকশা চালিয়ে আয় করলেও সেটিতে তৃপ্তি খুঁজে পাননি। নতুন কিছু করার তাগিদ থেকেই মাশরুম চাষে নামেন তিনি।

২০২০ সালে এক বন্ধুর পরামর্শে মাত্র এক হাজার টাকার মাশরুমের স্পন কিনে চাষ শুরু করেন হাসিব। প্রথমদিকে কিছু ব্যর্থতা থাকলেও অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের মাধ্যমে ধীরে ধীরে তিনি সফল হন। বর্তমানে তিনি মাশরুম চাষ ও স্পন উৎপাদনের মাধ্যমে বছরে ৭-৮ লাখ টাকা আয় করছেন। শুধু নিজের জন্যই নয়, তিনি আশপাশের অনেককেও মাশরুম চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন।

হাসিব জানান, ইউটিউবে ঘন্টার পর ঘন্টা ভিডিও দেখে মাশরুম চাষের কৌশল শিখেছেন। পরে সাভারের মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই স্পন তৈরি শুরু করেন। প্রথমবার ব্যর্থ হলেও একাধিকবার চেষ্টার পর সফল হন। বর্তমানে তিনি প্রতিদিন ৮-১০ কেজি মাশরুম বিক্রি করেন, যেখানে প্রতি কেজি ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া শুকানো মাশরুম ১০০০-১৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন।

নিজের ভাড়া বাসার এক কক্ষকে ল্যাবরেটরি বানিয়ে হাসিব মাশরুমের স্পন উৎপাদন করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় বাড়ির পাশে জমি ইজারা নিয়ে দুটি টিনশেড কক্ষে মাশরুম চাষ চালিয়ে যাচ্ছেন। মৌসুমে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করলেও বেশিরভাগ সময় স্ত্রী ও সন্তানদের সহযোগিতায় কাজ চালান।

তার স্ত্রী সাদিয়া সংসারের কাজ সামলে হাসিবকে সহায়তা করেন। হাসিবের মা শিল্পী বেগম জানান, ছেলের এই সফলতা তাদের পরিবারের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। হাসিবের মেয়ে হাবিবা তাবাসসুমও স্কুলের ফাঁকে বাবার কাজে সহযোগিতা করে।

হাসিবের স্বপ্ন, মাশরুমকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা এবং দেশের আরও তরুণ উদ্যোক্তাদের মাশরুম চাষে উদ্বুদ্ধ করা। প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা পেলে আগামী বছরে তার আয় দ্বিগুণ করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।

দিনাজপুরের মাসুমের সফল স্ট্রবেরি চাষ: তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা

দিনাজপুর, ৩ মার্চ ২০২৫ (বাসস): জেলার খানসামা উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা মাসুম বিল্লাহ প্রথমবারের মতো স্ট্রবেরি চাষ করে অভূতপূর্ব সফলতা অর্জন করেছেন। তার ক্ষেতজুড়ে সবুজ পাতার ফাঁকে লাল স্ট্রবেরির মনোরম দৃশ্য যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি চাষাবাদের প্রতি স্থানীয় কৃষকদের আকৃষ্ট করছে।

স্থানীয়ভাবে নতুন এই ফসলের আবাদ দেখতে আশপাশের কৃষক ও উৎসাহী মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। খানসামার ভাবকী ইউনিয়নের চককাঞ্চন গ্রামে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, মাসুম নিজেই যত্ন নিয়ে স্ট্রবেরি তুলছেন এবং বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন।

মাসুম জানান, ইউটিউব থেকে স্ট্রবেরি চাষের ভিডিও দেখে তিনি আগ্রহী হন এবং পরে পৈতৃক জমিতে চাষের সিদ্ধান্ত নেন। মাত্র ১০ শতক জমিতে ৪০০ চারা রোপণ করে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেন তিনি। জয়পুরহাট থেকে সংগ্রহ করা প্রতিটি চারা ১২ টাকা দরে কিনে তার মোট বিনিয়োগ হয় প্রায় ২৫ হাজার টাকা। প্রথমবারের মতো এমন চাষ দেখে অনেকে সন্দিহান ছিলেন, কিন্তু সফলতার পর এখন তার ক্ষেত থেকেই স্ট্রবেরি কিনতে আসছেন স্থানীয়রা।

প্রথম মৌসুমেই ভালো ফলন পেয়েছেন মাসুম। প্রতিটি গাছ থেকে ৮০০ গ্রাম পর্যন্ত ফল আহরণ সম্ভব হয়েছে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি স্ট্রবেরি ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হওয়ায় প্রায় ৯০ হাজার টাকার স্ট্রবেরি বিক্রির আশা করছেন তিনি। এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করলেও আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদেরও বেশ কিছু স্ট্রবেরি উপহার দিয়েছেন।

এলাকায় স্ট্রবেরির বাজার সৃষ্টি হওয়ায় তিনি নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌর এলাকায় স্ট্রবেরি সরবরাহ করছেন। খানসামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার জানান, অল্প বিনিয়োগে বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী করা হচ্ছে। মাসুমের সফলতা দেখে আরও অনেক তরুণ এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান মিয়া জানান, তিনি মাসুমের ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন এবং ফলন সন্তোষজনক পেয়েছেন। তার সাফল্য দেখে এলাকার অন্যান্য তরুণরাও স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন, যা কৃষিক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে।