Category Archives: আপডেট

“আপডেট” সেকশনে কৃষি খাতের সাম্প্রতিক খবর, গবেষণা, প্রযুক্তি, বাজারদর ও নীতি পরিবর্তনের নির্ভরযোগ্য তথ্য নিয়মিত প্রকাশিত হবে।

মাটি ও মাটির গঠন

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – মাটি ও মাটির গঠন। মাটি বা মৃত্তিকা হলো পৃথিবীর উপরিভাগের নরম আবরণ। ভূ-ত্বক প্রথমে শিলা দ্বারা গঠিত ছিল। পরে তা শিলা ক্ষয় প্রক্রিয়ায় ভেঙ্গে ছোট খণ্ডে বা এককে রূপান্তরিত হয়। মাটির এই অংশ বালি, পলি ও কর্দম কণা দ্বারা গঠিত। আসুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

মাটি ও মাটির গঠন

 

মাটি

মাটি একটি মিশ্র পদার্থ বিজ্ঞানীরা মনে করেন পৃথিবী প্রথমে একটি জলন্ত অগ্নিগোলকের পিন্ড ছিল। দীর্ঘকাল ধরে তাপ বিকিরণ করতে করতে এর বাহিরের অংশ ঠাণ্ডা হয়ে শিলাময় শক্ত ভূত্বকেরা সৃষ্টি করে। তাপ, পানি, বাতাস ইত্যাদির নৈসর্গিক প্রভাবে চূর্ণ-বিচূর্ণ ও ক্ষয়ীভূত হয়ে কালক্রমে এ মৃতকের বাহিরের স্তর কোমল হয়ে আসে এবং মাটির সৃষ্টি হয়।

জীবজন্ত ও গাছপালার দেহাবশেষও মিশে মাটির আশে পরিণত হয়। সংজ্ঞা হিসেবে বলা যেতে পারে, ভস্মীভূত শিলা ও নানা প্রকারের জৈব পদার্থের সংমিশ্রণে গঠিত ভূ-ত্বকের বাইরের যে করে গাছপালা জন্মে এবং যে স্তর থেকে গাছপালা পুষ্টি উপাদান শোষণ করে বেঁচে থাকে তাকে মাটি বলে। বিভিন্ন প্রকার জৈব পদার্থ, অজৈব পদার্থ, পানি ও বায়ু যারা গঠিত মাটি এক অন্য মাধ্যম। এ মাটিতেই চাষাবাদ করে মানুষ শস্য ফলায়, আর মাটিতেই বাড়িঘর করে মানুষ জীবন কাটায়।

 

 

মাটি গঠনের উপাদান

মাটি প্রধানত চারটি উপাদান দ্বারা গঠিত। এগুলো হলো:

(১) অজৈব পদার্থ বা পার্থ

(২) জৈব পদার্থ

(৩) পাি

(৪) বায়ু

(১) অজৈব পদার্থ বা খনিজ পদার্থ

ভূপৃষ্ঠ প্রকৃতপক্ষে শিলা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। প্রাকৃতিক শক্তি তথা তাপ, বৃষ্টিপাত বায়ুপ্রবাহ, তুষারপাত, বায়ু ও পানি প্রবাহ ইত্যাদির প্রভাবে সময়ের ব্যবধানে আদি শিলা পূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে মাটির অজৈব বা খনিজ পদার্থ সৃষ্টি করেছে।

অ্যালুমিনিয়াম, লৌহ, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও অন্যান্য ধাতব পদার্থের অক্সিজেন মিশ্রিত যৌগিক পদার্থ এবং সিলিকা জাতীয় যৌগিক পদার্থের সমন্বয়ে মৃত্তিকার অজৈব বা শনি অংশ গঠিত। বালিকণা, কদমকণা, পলিকণা ইত্যাদি হচ্ছে অনিতা পদার্থ।

এসব পদার্থ বিভিন্নভাবে মিশে মাটির বুনট সৃষ্টি করে। মাটির বুনট ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাটির অজৈব বা নিজ পদার্থগুলো পরস্পর মিশে যৌগিক কণা গঠন করলে তাকে মাটির সানাবন্ধন বা গঠন বলে। মাটিতে খনিজ পদার্থের পরিমাণ শতকরা প্রায় ৪৫

(২) জৈব পদার্থ

উদ্ভিদ ও প্রাণী দেহের পচনশীল ধ্বংসাবশেষই মৃত্তিকার জৈব পদার্থের প্রধান উৎস। এসব অবশেষ প্রায় সব সময়ই পচনত্রিনার মাধ্যমে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মাটিতে মিশে যাচ্ছে। মাটিতে প্রায় শতকরা ৫ ভাগ জৈব পদার্থ থাকে। এ জৈব পদার্থের কাজ হলো মাটির ভৌত গুণাবলীর উৎকর্ষ ঘটানো এবং মাটির আঠালোভাব কমানো।

ভারি কাদা মাটিতে অধিক পরিমাণে জৈব পদার্থের মিশ্রণ ঘটালে মাটি হালকা হয় এবং মাটির গঠন উন্নতমানের হয়। জৈব পদার্থকে মাটির প্রাণ বলা হয়। কেননা জৈব পদার্থের উপস্থিতিতে মাটির অণুজীবগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় যা উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান সৃষ্টির জন্য সহায়ক।

এছাড়া জৈব পদার্থ মাটিতে হিউমাসের পরিমাণ বাড়িয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে জৈব পদার্থ উদ্ভিদের খাদ্যোপাদানসমূহ সরবরাহ মাটিতে পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মাটির মধ্য দিয়ে বায়ু চলাচলে সহায়তা করে। এছাড়া মাটির গঠন ও সংযুক্তির উন্নতি ঘটায়।

(৩) পানি

মাটির একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পানি। মাটির মধ্যে কিছু না কিছু পানি বিদ্যমান থাকে। বৃষ্টিপাত, বায়ুমণ্ডলের জলীয়বাষ্প ভূ-মধ্যস্থ পানি ও সেচ ব্যবস্থা থেকে মাটি পানি লাভ করে। মাটির পানিই গাছের খাদ্য উপাদানগুলোকে দ্রবীভূত রাখে এবং মাটিকে রসালো করে। ফলে গাছপালা সহজেই পুষ্টি উপাদান দ্রবীভূত অবস্থায় শোষণ করে নেয়। মাটিতে সাধারণত শতকরা ২৫ ভাগ পানি থাকে।

(৪) বায়ু

গাছপালার জীবন ধারণের জন্য বায়ু একা প্রয়োজন মাটির কণার ফাঁকে ফাঁকে বায়ু থাকে। ভূমি প্লাবিত হলে মাটিতে বায়ুর পরিমাণ হ্রাস প্রায় এবং পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। জমি চাষ করলে মাটিতে বায়ুর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। স্কুল ক্যাবিশিষ্ট মাটির সূক্ষ্মকণাবিশিষ্ট মাটির চেয়ে বায়ুর ধারণ ক্ষমতা বেশি। মাটিতে বায়ুর মধ্যে অক্সিজেন ও কার্বনডাই অক্সাইড ছাড়াও থাকে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন সালফাইড, মিথেন প্রভৃতি গ্যাস। মাটিতে বাহুর পরিমাণের হ্রাস-বৃদ্ধি মাটিস্থ পানির পরিমাণের উপর নির্ভরশীল। মাটিতে শতকরা ২৫ ভাগ বায়ু থাকে।

মাটির প্রকারভেদ

মাটির অজৈব বা খনিজ অংশ বিভিন্ন আকারের ও আয়তনের কণা সহযোগে গঠিত। মাটির কণা বলতে মাটিতে উপস্থিত বালি, পলি ও কর্নম কণাকে বুঝায়। কোন কোন মাটির কণা স্কুল ও মোটা, মাবার কোন কোন মাটির কণা সূক্ষ্ম। আকার অনুসারে মাটির একক কণার পারস্পরিক সমস্যয়কে বুনট বলে। কণার ভিন্নতার জন্য মাটির গুণাবলী বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। কণার আয়তন ভেলে মাটির কণাগুলোর নাম ও আয়তন নিচে উল্লেখ করা হলো।

মাটি কণার নাম মোটা বালিকণা

আয়তন (মি.মি. ব্যাস)

2.0-0.2

0.2-0.02

পলিকণা

0.02 0.002

করুণা

০.০০২ এর কম

মাটির বুনটের উপর ভিত্তি করে মাটিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

(১) বেলে মাটি

(২) দো-আঁশ মাটি ও

(৩) এঁটেল মাটি

(১) বেলে মাটি

যে মাটিতে শতকরা ৭০ ভাগ বা তার ও বেশি বালিকণা থাকে তাকে বেলে মাটি বলে। বেলে মাটিতে পলি ও কর্দম কণার পরিমাণ কম থাকে। এ মাটি চিলা ও ঝুরঝুরে পানি ধারণ ক্ষমতা কম এবং জৈব পদার্থের পরিমাণ কম থাকায় এ মাটি অনুর্বর।

মোটা কণাযুক্ত বেলে মাটি কৃষি কাজের অনুপোযগী। তবে সূক্ষ্ম কণাযুক্ত বেলে মাটিতে প্রচুর কম্পোস্ট, গোবর ও সবুজ সার প্রয়োগ করে চিনা, কাউন, ফুটি, আলু, তরমুজ ইত্যাদি চাষ করা সম্ভব। দিনাজপুর ও বগুড়া জেলার কিছু অঞ্চলে ও অন্যানা জেলার প্রধান নদীর চনা ও তীরে এ মাটি দেখা যায়।

(২) দো-আঁশ মাটি

যে মাটিতে বালিকণার পরিমাণ শতকরা ৭০ ভাগের কম কিন্তু ২০ ভাগের বেশি তাকে নো- আঁশ মাটি বলে। তবে আদর্শ দো-আঁশ মাটিতে অর্ধেক বালিকনা এবং বাকি অর্ধেক পলি ও কদম কণা থাকা আবশ্যক। এ মাটির পানি শোষণ ও ধারণ ক্ষমতা বেলে মাটির তুলনায় বেশি।

চাষ আবাদের জন্য এ মাটি সর্বাপেক্ষা উপযোগী। এ জন্য সব ধরনের ফসল এ মাটিতে ভাল জন্যে। বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকার মাটি দো-আঁশ প্রকৃতির। কৃষিক্ষেত্রে দো-আঁশ মাটিকে আদর্শ মাটি বলা হয়।
দো-আঁশ মাটিকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

(ক) বেলে দো-আঁশ মাটি

(খ) পলি দো-আঁশ মাটি;

(গ) এঁটেল দো-আঁশ মাটি ।

 

 

(ক) বেলে দোআঁশ মাটি

যে মাটিতে বালিকণার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি সে মাটিকে বেলে দো-আঁশ মাটি বলে। এ মাটিতে বালির পরিমাণ সাধারণত শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ থেকে ৬৫ ভাগ পর্যন্তহতে পারে। তিার পলি অঞ্চলে এ মাটি পাওয়া যায়। এ মাটিতে আলু, মূলা, তামাক, মরিচ ইত্যাদি ফসল ভাল জন্যে।

(খ) পলি দো-আঁশ মাটি

যে মাটিতে পলিকণার পরিমাণ বেশি থাকে সে মাটিকে পলি দো-আঁশ মাটি বলে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে পলি দো-আঁশ মাটি অধিকহারে পরিলক্ষিত হয়। এ মাটিতে ধান, পাট, ইক্ষু ও শাকসবজি ভাল জনে।

(গ) এঁটেল দো-আঁশ মাটি

যে দো-আঁশ মাটিতে কম ও পলিকণার পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি তাকে এঁটেল দো-আঁশ মাটি বলে। এ মাটিতে সাধারণত শতকরা ৩৫ ভাগ কর্ণন ও প্রায় সম পরিমাণ পলিকণা থাকতে পারে। গঙ্গার বিধৌত সমভূমি অঞ্চলে এ মাটি বেশি দেখা যায়। এ মাটিতে ধান, গম, তুলা সরিষা, ডাল প্রভৃতি ফসল ভাল জন্মে।

(৩) এঁটেল মাটি

যে মাটিতে কমপক্ষে শতকরা ৪০ ভাগ কর্নমকণা থাকে তাকে এঁটেল মাটি বলে। এ মাটিতে পলিকনা ও বেশি থাকে। ভেজা অবস্থায় এ মাটি খুব নরম ও শুদ্ধ অবস্থায় অত্যন্ত শক্ত ও কঠিন হয়ে পড়ে। এঁটেল মাটিকে ভারী মাটিও বলা হয়।

এ মাটিতে ছিদ্র কম থাকায় পানি শোষণ ক্ষমতা কম কিন্তু পানি ধারণ ক্ষমতা বেশি। ঢাকা জেলার উত্তরাংশ টাঙ্গাইল জেলার পূর্বাংশ ও ময়মনসিংহ জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে এ মাটি দেখা যায়। এ মাটিতে চাষ করা খুব কষ্টকর। প্রচুর জৈব সার প্রয়োগ করে চাষ উপযোগী করা সম্ভব। ধান, পাট, ইক্ষু, শাকসবজি এ মাটিতে ভাল জন্যে।

সারমর্ম

ক্ষয়ীভূত শিলা ও নানা প্রকারের জৈব পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত ভূত্বকের বাইরের দিকের স্তরে গাছপালা জন্মে এবং যে স্তর থেকে গাছপালা পুষ্টি উপাদান শোষণ করে। বেঁচে থাকে, তাকে মাটি বলে।
• মাটি প্রধানত চারটি উপাদান দ্বারা গঠিত। যথা- খনিজ পদার্থ বা অজৈব পদার্থ, জৈব পদার্থ, পানি ও বায়ু। মাটির কণা বলতে মাটিতে উপস্থিত বালি, পলি ও কর্নম কণাকে বুঝায়।
• মাটির একক কণার পারস্পরিক সমন্বয়কে বুনট বলে।
• বুনট অনুসারে মাটি তিন প্রকার। যথা- বেলেমাটি, দো-আঁশ মাটি ও এঁটেল মাটি।

জলবায়ু ও কৃষি আবহাওয়া

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – জলবায়ু ও কৃষি আবহাওয়া। জলবায়ু হচ্ছে কোনো এলাকা বা ভৌগোলিক অঞ্চলের ৩০-৩৫ বছরের গড় আবহাওয়া।

জলবায়ু ও কৃষি আবহাওয়া

এ পাঠ শেষে আপনি-

কৃষি আবহাওয়ার সংজ্ঞা লিখতে পারবেন।

• বাংলাদেশের কৃষি আবহাওয়া ভিত্তিক অঞ্চলগুলো উল্লেখ করতে পারবেন।

• জলবায়ু বলতে কী বুঝায় তা বলতে পারবেন।

• ফসল উৎপাদনে কৃষি আবহাওয়া ও জলবায়ু ভিত্তিক মৌসুমগুলো উল্লেখ করতে পারবেন।

কৃষি আবহাওয়া

কৃষি আবহাওয়া বলতে মূলত কোন স্থানের বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, সূর্যকিরণ, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুর চাপ ইত্যাদি নিয়ামক যা ফসল উৎপাদন ও কৃষিকাজকে নানাভাবে প্রভাবিত করে তার দৈনিক সমষ্টিগত অবস্থাকে বুঝায়। ফসল উৎপাদন সরাসরি কৃষি- আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল ।

তাই বাংলাদেশে সাধারণত আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে ফসল চাষাবাদের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার মধ্যে বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ ও বায়ুর আর্দ্রতার বেশ পার্থক্য বিদ্যমান। এ কারণে বিশেষ কোন অঞ্চলে নির্দিষ্ট কোন ফসল ভাল জন্মে। কৃষি -আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশকে তিনটি প্রধান কৃষি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। যথা-

(১) উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল : রাজশাহী বিভাগ, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের উত্তরাংশ।

২) উত্তর-পূর্বাঞ্চল : ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল ।

(৩) দক্ষিণাঞ্চল : ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগসমূহের দক্ষিণাঞ্চল । এ সব অঞ্চলের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য ও উৎপাদিত ফসল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

(১) উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল : এ অঞ্চলে শীতকালে অধিক শীত এবং গ্রীষ্মকালে অধিক গরম অনুভূত হয়। এখানকার উলে-খযোগ্য ফসল: ধান, পাট, গম, আলু, ইক্ষু, শীতকালীন শাকসবজি, আম, লিচু, তামাক, পটল, মরিচ, ডাল ইত্যাদি।

(২) উত্তর-পূর্বাঞ্চল ঃ এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকে। এ অঞ্চলের প্রধান ফসলগুলো হচ্ছে- পাট, চা, আনারস, কমলালেবু, তৈলবীজ, শাকসব্জি ইত্যাদি।

(৩) দক্ষিণাঞ্চল : বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে শীতকাল ও গ্রীষ্মকালের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য তুলনামূলকভাবে কম। সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় এ অঞ্চলের বাতাসে আর্দ্রতা বেশি। বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেশি। এ অঞ্চলের প্রধান ফসল: ধান, নারিকেল, সুপারি, গোলপাতা, বিলেতি গাব, পান, কলা, পেঁয়াজ ইত্যাদি।

 

জলবায়ু

কোন স্থানের বা অঞ্চলের ২৫-৩০ বছরের আবহাওয়ার গড়কে ঐ স্থানের বা অঞ্চলের জলবায়ু বলে। সারা বছর যে জলবায়ুর উলেখযোগ্য পরিবর্তন হয় না তাকে সমভাবাপন্ন জলবায়ু বলা হয়। বাংলাদেশের জলবায়ু অনেকটা সমভাবাপন্ন। ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষি -আবহাওয়ার সাথে সাথে জলবায়ু ও সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের ফসল উৎপাদনের জন্য জলবায়ুর ভিত্তিতে সারা বছরকে প্রধান দুটি মৌসুমে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

(১) রবি মৌসুম ও

(২) খরিপ মৌসুম

এসব মৌসুমের বৈশিষ্ট্য ও প্রধান উৎপাদিত ফসল উল্লেখ করা হলোঃ

(১) রবি মৌসুম :

আশ্বিন মাস থেকে ফাল্গুন মাস ( মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য মার্চ) পর্যন্ত সময় কালকে রবি মৌসুম বলে। এ মৌসুমে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা কম থাকে। বৃষ্টিপাতও কম হয়। এ সময় শীতকালীন শাকসবজি যেমন- ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, গাজর, লাউ, সীম, টমেটো, আলু ইত্যাদির চাষ করা হয়। এ ছাড়া বোরো ধান, গম, ডাল ও সরিষা রবি মৌসুমের ফসল।

 

 

 

(২) খরিপ মৌসুম

খরিপ মৌসুমকে পুনরায় দু’ভাগে ভাগ করা হয়।

(ক) খরিপ-১: ফাল্গুন মাস হতে আষাঢ় মাস (মার্চ মাস থেকে জুলাই মাস) পর্যন্ত সময় খরিপ-১ এর অন্তর্ভুক্ত। এ সময়কালকে গ্রীষ্মকালও বলা হয়। এ সময় তাপমাত্রা বেশি থাকে। মাঝে মাঝে ঝড় বৃষ্টি হয়। এ মৌসুমে আউশ ধান, পাট, ঢেঁড়শ, করলা, পটল, কাঁকরোল, বরবটি ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়। আম, জাম, কাঠাল, লিচু, পেঁপে ইত্যাদি এ মৌসুমের প্রধান ফল।

(খ) খরিপ-২ : আষাঢ় মাস থেকে ভাদ্র মাস (মধ্য জুলাই থেকে মধ্য অক্টোবর) পর্যন্ত সময়কাল খরিপ-২ এর অন্তর্ভুক্ত। এ মৌসুমে বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকে এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এ মৌসুমকে তাই বর্ষাকাল বলে। আমন ধান ও বর্ষাকালীন শাকসবজি এ মৌসুমের প্রধান ফসল। প্রধান ফলের মধ্যে জাম্বুরা, তাল, আমলকি, কাঠাল, জলপাই উল্লেখযোগ্য।

সারমর্ম

কৃষিকাজে প্রভাব বিস্তার করে এমন কোন নির্দিষ্ট সময়ে কোন নির্দিষ্ট স্থানের বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, সূর্যকিরণ, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুরচাপ ইত্যাদির দৈনিক সমষ্টিগত অবস্থাকে আবহাওয়া বলে। কোন স্থানের বা অঞ্চলের ২৫-৩০ বছরের কৃষি -আবহাওয়ার গড়কে ঐ স্থানের বা অঞ্চলের কৃষি জলবায়ু বলে।

কৃষি আবহাওয়ার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে তিনটি প্রধান কৃষি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। যথা- উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল। – কৃষি জলবায়ুর ভিত্তিতে সারা বছরকে প্রধান দুটি মৌসুমে ভাগ করা যায়, যথা- রবি মৌসুম ও খরিপ মৌসুম।

 গরুমহিষকে বিভিন্নভাবে আটকানো পদ্ধতি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-  গরুমহিষকে বিভিন্নভাবে আটকানো পদ্ধতি। পশু ব্যবস্থাপনা এমন একটি বিষয় যা পশুর খাদ্য, যত্ন ও প্রজননের সমুদয় কর্মকে বোঝায়। ইতোপূর্বে এসব বিষয় সংক্ষেপে পৃথক পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

জন্মবৃত্তান্ত, জন্মের পর থেকে বাড়ন্ত পশুর জৈবিক পরিবর্তনের ক্রম, যৌন পরিপক্কতা, শারীরিক উপযুক্ততা অর্জন ও এরপর প্রজনন কাজের মধ্য দিয়ে পশুর জীবনচক্র অতিবাহিত হয়। এজন্য জন্মের পর থেকে বয়ঃসন্ধিক্ষণ পর্যন্ত পশুর জীবনে যে পরিবর্তন ও লক্ষণগুলো দেখা যায় তা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। পশুর শারীরিক ওজন, দাঁত ওঠা, বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে দাঁতের গঠন বা অন্যান্য শারীরিক পরিবর্তন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একই সাথে বিভিন্ন পশুকে ঘরের ভেতর ধরা বা আটকানোর পদ্ধতিগুলো পশু ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।

এই ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে পশু ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয়, যেমন- গরুমহিষকে বিভিন্নভাবে আটকানো পদ্ধতি, দাঁত দেখে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার বয়স নির্ণয়, গবাদিপশুর শরীরিক ওজন নির্ণয় প্রভৃতি তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিকসহ সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে ।

 গরুমহিষকে বিভিন্নভাবে আটকানো পদ্ধতি

এই পাঠ শেষে আপনি-

  • গরুমহিষকে কেন আটকানো হয় তা বলতে পারবেন।
  • গরুমহিষকে আটকানোর আড়পাতা পদ্ধতিটি বর্ণনা করতে পারবেন ।
  • গরুমহিষকে মাটিতে শোয়ানোর পদ্ধতিগুলো লিখতে পারবেন।

গরু ও মহিষ আমাদের দেশে ভারবাহী পশু হিসেবে পরিচিত। প্রাচীনকালে পশুরা বনেজঙ্গলে চরে বেড়াতো। সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে আবির্ভাবের পর থেকেই মানুষ নিজের প্রয়োজনে গরুমহিষকে গৃহে লালনপালন করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। কিন্তু তারপরেও পশুদের মধ্যে পুরনো জংলী অভ্যাস ও আচরণগুলো বিদ্যামান। এসব আচরণকে আমরা পশুদের বদঅভ্যাস বা ভাইস (vice) বলে থাকি।

তা সত্ত্বেও গৃহে লালনপালন করার জন্যই পশুকে ধরতে হয়, তার কাছে যেতে হয় এবং চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করতে হয়। মানুষের বিভিন্ন কাজে পশুকে ব্যবহার করা হয়। এসব কারণেই পশুকে নিয়ন্ত্রণ করা বা আটকানোর বিভিন্ন পদ্ধতিগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পশু আটকানোর কতকগুলো পদ্ধতি বা কলাকৌশল এখানে আলোচনা করা হয়েছে।

 

 

আড়পাতা পদ্ধতি (Stanchion / Chute method )

পশুপালনকারী বা চিকিৎসকের জন্য এ পদ্ধতিতে গরুমহিষকে আড়পাতা বা ধরা সম্পূর্ণ নিরাপদ। বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের দেশে গরুমহিষের খামারগুলোতে এই পদ্ধতিতে এদেরকে আটকানো হয়। একটি নির্দিষ্ট সুবিধাজনক স্থানে আড়পাতা হয়। এই আড় লোহা, কাঠ বা বাঁশের তৈরি হতে পারে। প্রধানত পায়ুপথ ও যোনিপথ পরীক্ষা করার সুবিধার জন্য শূটের শেষ প্রান্ত বা পেছন দিকে যথেষ্ট জায়গা থাকে ।

 

 

পশুকে শোয়ানো

রুগ্ন পশুর পরীক্ষা বা অস্ত্রোপচার সুষ্ঠুভাবে করা এবং জবাইয়ের জন্য পশুকে মাটিতে শুইয়ে নিয়ন্ত্রণ করা উত্তম পদ্ধতি। তবে, গবাদিপশুকে মাটিতে ফেলার পূর্বে অবশ্যই স্থানটি দেখে নিতে হবে যাতে পশু মারাত্বক কোনো আঘাত না পায়। পশুদেহের যে কোনো পার্শ্ব মাটির দিকে ফেলা যায়। তবে, সাধারণত বাম দিকে ফেলা শ্রেয়। সাধারণত দড়ির সাহায্যে গরুমহিষকে বেঁধে মাটিতে শোয়ানো হয় । দড়ির সাহায্যে বেঁধে শোয়ানোর বেশ ক’টি পদ্ধতি রয়েছে।

একটি পদ্ধতিতে একটি শক্ত লম্বা রশির এক প্রান্ত পশুর শিংয়ের গোড়ায় বেঁধে তিনবার গেরো দিয়ে শরীরে বেষ্টনি পড়ানো হয় এবং রশির অপর প্রান্ত পেছন থেকে দৃঢ়ভাবে টেনে ধরলে পশু আপনা আপনি পেছনের দিকে নুয়ে পড়ে। রশির গেরো গরুমহিষকে মেরুদন্ড বরাবর দিতে হয়। এতে পশুর কিছু ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে কারণে যত্নসহকারে এটি করতে হয়। অন্য একটি পদ্ধতিতে গরুর পেটের মাঝামাঝি মেরুদন্ড বরাবর একটি শক্ত রশি পরানো হয়। রশির এক প্রান্ত সামনের পায়ের চারদিকে এবং অপর প্রান্ত পেছনের পায়ের চারদিকে ঘিরে ধরতে হয়।

অতঃপর দু’দিক থেকে পিঠ বরাবর রশি টেনে ধরলে পশু হঠাৎ করে একপাশে শুয়ে পড়ে। এতে গরুমহিষের ক্ষতি হতে পারে। অতএব এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। এছাড়াও কম ওজনের পশুকে পেছনের দু’পায়ে বেঁধে হ্যাচকা টানে মাটিতে ফেলা যায়। তবে, এক্ষেত্রে যে স্থানে পশুকে ফেলা হবে তা যেন নরম হয়। গাভী অন্তঃসত্ত্বা হলে তাকে প্রথম পদ্ধতিতে শোয়ানো যায়। তবে, এই অবস্থায় গাভীকে সব সময় বাম দিকে শুইয়ে দিতে হয়। গোশালায় সার্বক্ষনিক বেঁধে রেখে গরুমহিষ লালনপালন করার যে কৌশল অবলম্বন করা হয় তাতে এদেরকে উপরোক্ত কোনো পদ্ধতিতেই আটকানো হয় না।

যে জায়গায় গরু বা মহিষটির অবস্থান সেখানেই আড়পাতা পন্থায় তাকে সব সময় থাকতে হয়। অসুস্থ হলে বা অন্য কোনো প্রয়োজনে যে শিকল পশুর গলায় সব সময় লাগানো থাকে তার একাংশ টেনে নিয়ে পশুর নাকে লাগানো আংটার (nose ring) সঙ্গে একটি প্যাচ দিয়ে উপরে টেনে শিংয়ের সঙ্গে আরেকটি প্যাঁচ দিয়ে আটকে দিলেই পশু আর তেমন নড়াচড়া করতে পারে না। এই পদ্ধতি ইউরোপের বড় খামারগুলোতে চালু আছে। এই কৌশল কিছুটা অসহায়ত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও এভাবেই ওসব দেশে পশু আটকানো হয়। চিকিৎসক ও সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি একজন সাহায্যকারীর সাহায্যে একাজ করে থাকেন।

বাছুরের বাসস্থান ও পরিচর্যা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- বাছুরের বাসস্থান ও পরিচর্যা। দুগ্ধ খামারের ভবিষ্যত নির্ভর করে বাছুরের সন্তোষজনক অবস্থার ওপর। কারণ, আজকের বাছুরই ভবিষ্যতের দুধ উৎপাদনশীল গাভী, উন্নতমানের প্রজনন উপযোগী ষাড় বা মাংস উৎপাদনকারী গরু। তাই পশুপালনে বাছুর পালন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের দেশে যে সংখ্যক গবাদিপশু পালিত হয় তার মধ্যে শতকরা ২৪ ভাগেরও বেশি বাছুর।

বাছুরের বাসস্থান ও পরিচর্যা

 

 

নবজাত বাছুরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় এরা অত্যন্ত রোগ সংবেদনশীল হয়। এমতাবস্থায় সামান্য যত্নের অভাবে বাছুর রোগে আক্রান্ত হতে পারে ও পরবর্তীতে এর মৃত্যুও ঘটতে পারে। তাই সুস্থ সবল বাছুর পেতে হলে একদিকে যেমন গর্ভাবস্থায় গাভীর সুষ্ঠু যত্ন ও পর্যাপ্ত সুষম খাদ্যের প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন প্রসবকালীন ও নবজাত বাছুরের সঠিক যত্ন।

বাছুর পালনের কলাকৌশল সঠিকভাবে অবলম্বন না করায় প্রতিবছর বহুসংখ্যক বাছুর মারা যায় এবং দেশের পশুসম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে জনসাধারণের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক। তাই বাছুর পালনে যত্নবান হওয়া উচিত। এই ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে বাছুরের বাসস্থান, পরিচর্যা, খাদ্য, রোগব্যাধি দমন ইত্যাদি সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিকসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

এই পাঠ শেষে আপনি –

  • বাছুর কাকে বলে তা বলতে পারবেন।
  • বাছুরের বাসস্থানের বৈশিষ্ট্যসমূহ বলতে ও লিখতে পারবেন।
  • বাছুরের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ লিখতে পারবেন।
  • বাছুরের পরিচর্যা বলতে কী বুঝায় তা বলতে পারবেন।
  • বাছুরের পরিচর্যার কৌশলগুলো বর্ণনা করতে পারবেন।

গরু মহিষের শৈশবকালকে বাছুর বলে। সাধারণত জন্মের পর থেকে এক বছরের কিছু বেশি বয়সের গরু মহিষের বাচ্ছাই বাছুর নামে পরিচিত। এই সময়ে বাছুরের শারীরবৃত্ত ও শারীরিক গঠন বৈশিষ্ট্য সাপেক্ষে বাসস্থান তৈরি করতে হয়। সংগে সংগে বাছুরের বয়স, খাদ্যাভ্যাস, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, আবহাওয়া ও রোগবালাই সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাব্যতাও বিবেচনা করতে হবে।

বাছুরের বর্ধিষ্ণু শারীরবৃত্তের দিকে লক্ষ্য রেখে এবং খাদ্য পরিবেশন, যত্ন ও পরিচর্যার কথা বিবেচনা করে প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রতিরোধের জন্য বাসস্থান তৈরি করা উচিত। আমাদের দেশের বাছুরের জন্মের ওজন গড়ে ১৫-২০ কেজি হয়। অবশ্য উন্নত সংকর জাতের বাছুরের জন্মের ওজন ২৫-৩০ কেজি হয়ে থাকে। জাত ভিন্ন হওয়ায় তাদের বাসস্থান এবং পরিচর্যাও ভিন্ন হবে।

 

 

প্রতিটি বড় বাছুরের জন্য ১.৫২ মিটার x ২.১৩ মিটার = ৩.২৪ বর্গ মিটার অর্থাৎ ৫ ফুট × ৭ ফুট = ৩৫ বর্গ ফুট জায়গার ভিত্তিতে বাছুরের বাসস্থান তৈরি করা যায়। এই বাসস্থানে প্রচুর আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় রেখে বৃষ্টিপাত ও বর্ষাকালের কর্দমাক্ত অবস্থা পরিহারের লক্ষ্যে পশুর বাসস্থান স্থাপন বাঞ্ছনীয়। এই বাসস্থান কাঁচা অথবা পাকা হতে পারে। এতে বাছুরের মলমূত্র নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিটি ঘরে ছোট ছোট খোপ (calf pen) তৈরি করে প্রতি খোপে একটি করে বাছুর রেখে পালন করা যায়।

সেক্ষেত্রে এ খোপগুলোর প্রতিটির পরিসর হবে ০.৯১ মিটার x ১.২২ মিটার x ১.০৭ মিটার অর্থাৎ ৩ ফুট × ৪ ফুট × ৩.৫ ফুট। অন্যদিকে, একটি নির্দিষ্ট আলো-বাতাস ব্যবস্থাসম্পন্ন ঘরে একসাথে সমবয়সী ৫-১০টি বাছুর পালন করা যায়। তবে, উভয়ক্ষেত্রেই ঘরের সামনে বেষ্টনি ঘেরা খোলা জায়গা থাকা দরকার যাতে বাছুর ব্যায়াম ও খেলাধুলা করতে পারে ।

 

অনুশীলন ( Activity) :

ধরুন, আপনার খামারে ১২টি বাছুর আছে। এদেরকে আলাদা আলাদা খোপে রাখা হলে সর্বমোট কতটুকু জায়গার প্রয়োজন হবে। (সূত্রঃ একটির জন্য ০-৯১ মিটার x ১.২২ মিটার ×১.০৭ মিটার = ১.১৯ দঘন মিটার জায়গার প্রয়োজন) বাছুরের খোপে খড়বিচালি দিয়ে বিছানা তৈরি করতে হবে।

মেঝে পাঁকা হলে ২.৫৪ সে.মি. বা এক ইঞ্চি পুরু বিছানার প্রয়োজন হয়। মেঝে কাঁচা হলে তা যেন কর্নমাক্ত ও স্যাঁতস্যাঁতে না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা স্যাঁতস্যাঁতে ও নোংরা পরিবেশে বায়ুর ফুসফুস প্রদাহ (Pneumonia) রোগে ভুগে থাকে। এই রোগ বাছুরের জন্য মাঝক ক্ষতির কারণ হয়। ১.৫-২.০ মাস বয়সের বাছুরকে বড় বাছুরের বাসস্থানে স্থানান্তর করা উচিত যেখানে একসঙ্গে অনেক বাহুর প্রতিপালিত হয়। এককথায় বাসস্থান হবে আলোকিত, পরিষ্কার ও শুকনো।

 

বাছুরের পরিচর্যা

বাছুরের পরিচর্যা বলতে এদের খাদ্য পরিবেশন, রোগবালাই মুক্ত রাখা, দেখাশোনা করা ইত্যাদি বুঝায়। আমাদের দেশে বাচ্চুর প্রতিপালনে আলাদা কোনো যত্ন ও সেবার রেওয়াজ নেই। কিন্তু এটি পশুপালন বিজ্ঞানের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাছুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে দৈহিক পরিপক্কতা অর্জন করে সাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত এদের পালন করা হয়। এই সময়কালটা বাছুরের জন্মের দিন থেকে ১৮০ দিন পর্যন্ত বিস্তৃত । এখানে বাচ্চুর পরিচর্যার কলাকৌশল বর্ণনা করা হয়েছে।

১) বাছুরকে গাভীর দুধ পান করা শেখানো ও বাছুরকে দুধ পান করানো শেখানো:

জন্মের পরই বাছুর তার মায়ের বাট থেকে দুধ চুষে নিতে পারে না। বাছুরকে তাই বাট মুখে পুরে দুধ টানা শেখাতে হয়। পারিবারিক খামারে তো বটেই, বৃহদাকার দুগ্ধ উৎপাদন খামারেও বাছুরকে হাতে তুলে পান করাতে হয়।

গাভীর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা কম হলে তো কথাই নেই। সেক্ষেত্রে মা গাভী থেকে দোহনকৃত দুধের অতিরিক্ত দুধ পান করানোর প্রয়োজন হতে পারে। বাছুরকে শৈশবে ৩৭.৫° সে. তাপমাত্রায় দুধ পান করানো হয়। এর দু’টো পদ্ধতি রয়েছে, যেমন- এক. বোতলে করে ও দুই বালতিতে করে।

তবে, বোতলে (nipple feeding) করে দুধ পান করানোর সুবিধা হলো এতে অপেক্ষাকৃত ছোট ঢোকে দুখ বাছুরের পাকস্থলীতে ঢুকে থাকে। এতে দুধের অপচয় কম হয়। বোতল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো বিকল্প নেই। বিশুদ্ধ পানি ও গরুর দুধ ১:২ অনুপাতে মিশিয়ে পাতলা করে পান করানো উত্তম।

২) খামার পর্যায়ে বাছুর চিহ্নিতকরণ বা কানে ট্যাগ নম্বর লাগানো :

বাছুর চিহ্নিতকরণের জন্য নির্জীবাণু পন্থায় কানে ট্যাগ নম্বর (tag number) লাগাতে হয়। এটা ছোট আকারের পারিবারিক খামারে প্রয়োজন না হলেও বড় খামারে খুবই প্রয়োজন। পশুর জাত উন্নয়ন বা অন্য কোনো গবেষণা কাজে প্রতিটি গবাদিপশুর আলাদা তথ্য সংগ্রহ করা অত্যাবশ্যক।

এজন্য বাছুরের মাতা-পিতা অনুসারে চিহ্নিতকরণ খুবই প্রয়োজন। সীসার পাতে নম্বর থাকে যা বাছুরের কানে একটি বিশেষ যত্রের সাহায্যে পরিয়ে দেয়া হয় ।

৩) বাছুরের পরিমিত খাদ্য পরিবেশন, মলমূত্র ও বিছানা পরিষ্কার করা :

বাছুর প্রতিপালনে দৈনিক পরিমিত খাদ্য পরিবেশনের কোনো বিকল্প নেই। বর্ধিষ্ণু বাছুরের চাহিদা অনুসারে জন্ম থেকে

স্বয়ংসম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত খাদ্যতালিকা অনুসারে নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।তাছাড়া স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রতিপালনের জন্য বাছুরের শয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের ঘরটিতে মলমূত্র নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা থাকতে হবে।

কেননা মলমূত্র থেকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয় এবং এতে বাছুর  কৃমিসহ নানা ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। যে বিছানা বাছুরের ঘরে বা খোপে দেয়া হয় তাও মাঝে মধ্যে পরিষ্কার করে শুকনো রাখতে হবে। স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থায় এদের নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। এতে কাফ স্কাউর রোগেরও সৃষ্টি হতে পারে।

হয়। সারাদিন খোপে আবদ্ধ রাখা যেমন ঠিক নয়, তেমনি দিনভর খোলা জায়গায় বিচরন করতে দেয়াও উচিত নয় । এটা গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত মৌসুম নির্বিশেষে করা প্রয়োজন। বৃষ্টিতে ভেজা বা অতিরিক্ত ঠান্ডায় থাকলে বাছুরের ফুসফুস প্রদাহ রোগ হতে পারে ।

৫) বাছুরের প্রাত্যহিক পর্যবেক্ষণ ও রোগচিকিৎসা ঃ

প্রাত্যহিক পর্যবেক্ষণ ও রোগব্যাধিতে নিয়মিত ওষুধ সেবন বাছুর পরিচর্যার অন্যতম করনীয় কাজ। তাছাড়া সময় সময় দৈহিক বৃদ্ধির তথ্য বা
অবনতির পরিমাপ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। জন্ম থেকে মাসিকভিত্তিতে দৈনিক ওজন পরিমাপ করা পশু পরিচর্যার এক নিয়মমাফিক কাজ।

এই কাজটি গ্রামীণ পারিবারিক খামারে সম্ভব না হলেও বৃহদাকার গরুর খামারে অত্যাবশ্যক কাজ হিসেবেই বিবেচিত। দৈহিক বৃদ্ধি বা ওজন তথ্য বাছুরের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তের পরিচায়ক।

কৃষিকাজে পশুর গুরুত্ব

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-কৃষিকাজে পশুর গুরুত্ব

এই পাঠ শেষে আপনি-

কৃষিকাজে গবাদিপশুর প্রত্যক্ষ ব্যবহার বলতে ও লিখতে পারবেন। ধান মাড়াই, আখ মাড়াই, ঘানি টানা প্রভৃতি কৃষির সাথে সম্পর্কিত কাজে পশুর ব্যবহার বর্ণনা করতে পারবেন। মাঠে শস্য উৎপাদন ছাড়াও পশুপাখি এবং মাছ চাষও কৃষিকাজের অন্তর্ভুক্ত। কৃষির সাথে সম্পর্কিত প্রায় প্রতিটি কাজে গবাদিপশুর কিছু না কিছু অবদান রয়েছে।

তবে, মাঠে ফসল উৎপাদনে গবাদিপশুর অবদান সবচেয়ে বেশি। কারণ, বাংলাদেশের সকল কৃষিযোগ্য ভূমি যান্ত্রিক চাষের অধীনে আনা আপাতত সম্ভব নয়। এদেশে পশুশক্তিকে একেবারে বাদ দিয়ে যান্ত্রিক চাষের প্রচলন করতে আরও সময় লাগবে। তাই আমরা বলতে পারি, এদেশে কৃষি আয়ের সিংহভাগই নির্ভর করছে পশুসম্পদের ওপর।

পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও কৃষিকাজে পশুশক্তির ব্যবহার হয়। এক তথ্য থেকে জানা যায়, আমাদের দেশে হালচাষ, গাড়ি টানা ইত্যাদি বাবদ প্রাপ্ত শক্তি এবং গোবর, চনা ইত্যাদির দাম ধরলে পশুসম্পদ জাতীয় অর্থনীতিতে প্রায় ১৫.০% অবদান রাখে। ফসল উৎপাদন করার জন্য যেসব কাজে প্রত্যক্ষভাবে পশুশক্তির ব্যবহার হয়ে আসছে সেগুলো হলো—

  • জমিতে হালচাষ করা,
  • শস্যক্ষেতে শস্য নিড়ানি, পশুচালিত পরিবহন,
  • জমিতে গোবর ও কম্পোস্ট সারের ব্যবহার প্রভৃতি।

 

কৃষিকাজে পশুর গুরুত্ব

 

হালচাষ

জমিতে বীজ বপনের পূর্বে মাটি নরম করার জন্য চাষ করতে হয়। এজন্য বাঁশ বা কাঠের তৈরি লাঙ্গল ও মই ব্যবহার করা হয়। সাধারণত ষাঁড় বা মহিষ দিয়ে লাঙ্গল ও মই টানা হয়। একেই হালচাষ বলে। ষাঁড়, মহিষ প্রভৃতি সাধারণত হালচাষের কাজে ব্যবহার করা হয়।

আগেকার দিনে যখন কলের লাঙ্গল ছিল না তখন হালচাষ সম্পূর্ণভাবে গবাদিপশুর ওপর নির্ভরশীল ছিল। বর্তমান যান্ত্রিক যুগে জমি চাষ করার জন্য ট্র্যাক্টর বা কলের লাঙ্গল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু খন্ড খন্ড জমিতে ট্র্যাক্টর চালানো যায় না। ব্যক্তিমালিকানাধীনে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত খণ্ড খণ্ড জমির সৃষ্টি হয়। এসব জমিতে ট্র্যাক্টরের পরিবর্তে পশুচালিত লাঙ্গলের ব্যবহার হয়।

এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, যেমন- ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিশর প্রভৃতি বিভিন্ন অঞ্চলে এখন পর্যন্ত ট্র্যাক্টর অপেক্ষা পশুচালিত লাঙ্গলের প্রচলন বেশি।আমাদের দেশে ষাঁড় ও মহিষ জমি চাষে ব্যবহার করা হয়। এদেশে ১০.৮২ মিলিয়ন হালের গরু আছে।

গবেষণা থেকে জানা যায়, একটি মহিষ প্রত্যহ ৫ ঘন্টা কাজ করলে ৫২০ মেগাওয়াট শক্তি ব্যয় হয় এবং কোনো বিরতি ছাড়াই একটানা কয়েকঘন্টা কাজ করতে পারে। একজোড়া বলদ দৈনিক এক একর জমির এক-তৃতীয়াংশ চাষ করতে পারে। হালের পশুর সংখ্যার অভাব মাত্র ৭.৮৫% হলেও মোট কর্ষণ শক্তির অভাব প্রয়োজনের তুলনায় ৪০.৮%।

কারণ, প্রতিটি পশুর শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা ০.২৫ হর্স পাওয়ার থেকে কমে ০.১৭ হর্স পাওয়ারে দাঁড়িয়েছে। খাদ্য ও প্রজননের জন্য উন্নতমানের ষাঁড়ের অভাবই এর প্রকৃত কারণ। দেশে ২৩৩৪ মিলিয়ন একর কৃষিভূমির জন্য মোট ৪৯৪২.৩ মিলিয়ন মেগাওয়াট শক্তির প্রয়োজন। কিন্তু, পশু ও অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া যায় মাত্র ২৯২২.৪ মেগাওয়াট। এরপরও আরও ২০১৯.৮ মিলিয়ন মেগাওয়াট শক্তির প্রয়োজন থেকে যায়। পশু থেকে কতটুকু শক্তি পাওয়া যাবে তা নির্ভর করে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর ওপর। যথা-

  • পশুর দৈহিক বৈশিষ্ট্য, দেহের গঠন, ওজন ও জাত।
  • পশুর খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থা৷
  • জলবায়ু, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা।
  • পশুর লিঙ্গ (স্ত্রী/পুরুষ)।
  • জোয়াল ও মইয়ের আকার, ওজন ও শারীরিক গঠন ইত্যাদি।

সারণি ৫ : খামারপ্রতি ও একরপ্রতি উৎপাদিত পশুশক্তি জরিপের একটি প্রতিবেদন

 

পশুচালিত পরিবহন

মৌণ পরিবহনে ও মহিষেরকরা হয়।কৃষির সঙ্গে পরিবহন গভীরভাবে সম্পর্কিত। বীজ, যন্ত্রপাতি, সার প্রভৃতি মাঠে আনা-নেয়া, ফসল বাড়িতে ও বাজারে নিয়ে যাওয়া প্রভৃতির জন্য পরিবহনের প্রয়োজন। এসব কাজের জন্য পৃথিবীরবিভিন্ন দেশে গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, মহিষের গাড়ির প্রচলন আছে।

উন্নয়নশীল দেশে যেসব অঞ্চলে পাকা রাস্তা নেই সেখানকার মানুষ পশুচালিত পরিবহনের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। পাকিস্তান, ভারত, আফ্রিকা ও আরব দেশগুলোতে পশুচালিত পরিবহণের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে মহিষ ও গরুর গাড়ি প্রচুর সংখ্যায় দেখা যায়।

কৃষির বিভিন্ন কাজে কৃষক প্রধানত এসব গাড়ি ব্যবহার করেন। কারণ—
  • বেশিরভাগ গ্রামে পাকা রাস্তা নেই।
  • দরিদ্র কৃষক বেশি মূল্য দিয়ে মোটরযান ভাড়া করতে পারে না।
  • ক্ষেতের আইলের উপর দিয়ে পশুচালিত পরিবহণ চালানো যায়।
  • এসব গাড়ির দাম ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম।

 

 

 

কৃষির অন্যান্য কাজে পশুর গুরুত্ব

মাঠে ফসল উৎপাদন ছাড়াও কৃষির সঙ্গে জড়িত আরও বিভিন্ন ধরনের কাজ আছে, — শস্য নিড়ানি, ধান মাড়াই, আখ মাড়াই, শস্য ভাঙ্গানো ইত্যাদি। এগুলোতেও পশুর ব্যবহার হয়ে থাকে।

শস্য নিড়ানি

শসাক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার না করলে শস্যের ক্ষতি হয়। আগাছা পরিষ্কার করার পদ্ধতিকে নিড়ানি বলে। এজন্য কাঠ দিয়ে লম্বা চিরুনির মতো যন্ত্র তৈরি করা হয়। দেশীয় ভাষায় এটিকে মারাকাচি আঁচড়া বলে। মই ও লাঙ্গলের মতোই মারাকাচিও গরু দিয়ে টানা হয়। তাতে আগাছা উঠে আসে। কয়েকদিনের মধ্যেই সে আগাছা রৌদ্রে শুকিয়ে যায় ও মাঠ আগাছামুক্ত হয়।

জামিতে গোবর সারের ব্যবহার

বাংলাদেশের কৃষিজমি দিন দিন অনুর্বর হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে অবৈজ্ঞানিক মাত্রা ও অনুপাতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার। কৃষিজমির উর্বরাশক্তি ফিরে পেতে হলে গবাদিপশুর গোবর সার অত্যন্ত প্রয়োজন। এ সার একদিকে যেমন মাটির সার্বিক অবস্থা উন্নত করে অন্যদিকে অধিক ফসল ঘরে তুলতে সাহায্য করে।

কাজেই প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কৃষি উন্নয়নে পশুসম্পদের ভূমিকা অপরিসীম। গোবর কিছুদিন মাটির গর্তে রাখলে পচে উত্তম সারে রূপান্তরিত হয়। এটা কালো রঙের ও মাটির মতো নরম। এ সার আদিকাল থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে প্রথম স্থান অধিকার করে আছে৷ শুষ্ক পদার্থের ভিত্তিতে আমাদের দেশের গোবরে শতকরা ১.৪০-২.০ ভাগ নাইট্রোজেন, ০.৯০-১০ ভাগ ফসফরাস এবং ০.৭০-০৮০ ভাগ পটাশিয়াম থাকে।

এক টন গোবরের শুষ্ক পদার্থে পড়ে ১৭০ কেজি জৈব পদার্থ, ৪৬ কেজি নাইট্রোজেন, ১৯০ কেজি ফসফরাস ও ১৫০ কেজি পটাশিয়াম পাওয়া যায়। এদেশের গোমূত্রে ০.০৪-০.১% নাইট্রোজেন, ০.১৩-০.৪০% পটাশিয়াম, ০.০২-০.১৩% ফসফরাস থাকে। তবে, গবাদিপশুর গোবর ও মূত্রের রাসায়নিক গঠন অবশ্যই খাদ্যেরগুণাগুণের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশে বর্তমানে ৮০ মিলিয়ন টন কাঁচা বা ২২ মিলিয়ন টন শুকনো গোবর উৎপন্ন হয় যা বর্তমানের রাসায়নিক সারের ১০%।

কম্পোস্ট যা আবর্জনা

গবাদিপশুর উচ্ছিষ্ট খড়কুটা থেকে কম্পোস্ট সার তৈরি করা যায়। কম্পোস্ট অর্থ মোটামুটি অপচনশীল ও পূর্ণক্ষহীন জৈব পদার্থ যা বায়ুর উপস্থিতিতে উত্তাপ সৃষ্টির মাধ্যমে এক বা একাধিক জৈব পদার্থের মিশ্রণ পচনের পর উৎপন্ন হয়। কম্পোস্ট (দখলাময়া) ল্যাটিন শব্দ। গরু-বাছুরের উচ্ছিষ্ট খাবারের সঙ্গে আগাছা, কচুরিপানা, শস্যের অবশিষ্টাংশ মিশ্রিত করে কয়েকটি স্তরে সাজিয়ে পচানো হয়৷ কম্পোস্ট সার জমিতে আদর্শ জৈব পদার্থ যোগ করে। শাকশবজি ও ফলের চারা জন্মানোর জন্যেই এ সার বীজতলায় ব্যবহার করা অপরিহার্য।

জ্বালানি কাজে শুকনো গোবরের ব্যবহার

শুকনো গোবর আমাদের গ্রাম বাংলায় কৃষকের ঘরে উত্তম জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এদেশের গরীব কৃষক সম্প্রদায় নিতান্ত অভাবী। কেরোসিন কিংবা কাঠ কেনার মতো সঙ্গতি তাদের নেই। অথচ কৃষকের বাড়িতে কৃষির আনুসাঙ্গিক কাজ, যেমন- ধান সিদ্ধ, মুড়ি বা খ‍ই ভাজা প্রভৃতিতে প্রচুর জ্বালানির প্রয়োজন।

সাধারণত শুকনো গোবর, গাছের শুকনো ডালপালা দিয়ে তারা জ্বালানির কাজ চালায়। এছাড়াও গরুর গোবর থেকে বায়োগ্যাস তৈরি করে জ্বালানি হিসেবে এবং অবশিষ্ট গোবর সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এখানে ধান মাড়াই, আখ মাড়াই, ঘানি টানা প্রভৃতি কৃষিকাজে পশুশক্তির ব্যবহার সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।

ধান মাড়াই

ধান মাড়াইয়ের কাজেও পশুশক্তি ব্যবহৃত হয়। গাছ থেকে ধান ছাড়ানোকে ধান মাড়াই বলে। ধান মাড়াই কাজে একরে অনেকগুলো গরু ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিতে মাঠে ধানগাছগুলো হাত দিয়ে ছাড়িয়ে ধানগাছের বিছানা তৈরি করা হয়।

বিছানো ধানের মাঝখানে একটি গরু রাখা হয়। ঐ গরুটির সংগে আরও গরু সারিবদ্ধভাবে বেঁধে ছড়ানো ধানের উপর ঘোরানো হয়। মাঝখানের গরুটি আস্তে আস্তে ঘুরতে থাকে এবং সবগুলো গরুকে চক্রাকারে ঘুরতে সাহায্য করে। গরুর পা দিয়ে দলিত মথিত হয়ে গাছ থেকে ধান আলাদা হয়ে আগে।

আখ মাড়াই

আমাদের দেশের বহু কৃষক আখ চাষ করেন। আখ থেকে গুড়ও উৎপাদন করেন, বিশেষ করে যেসব এলাকায় চিনির কল নেই। আখ থেকে রস বের করার পদ্ধতিকে আখ মাড়াই বলে। আখ মাড়াইয়ের কাছে গবাদিপশু ব্যবহার করা হয়।

খানি টানা

এদেশের কৃষকদের মধ্যে কলু নামে এক সম্প্রদায় আছে যারা তেলবীজ থেকে তেল উৎপাদন করেন। সরিষা, তিল বা নারিকেল থেকে তেল উৎপাদন করার জন্য ঘানি টানার কাজে গবাদিপশু ব্যবহার করা হয়।

 

জমিতে সার প্রয়োগ: সারের মাত্রা, প্রয়োগ সময় ও প্রয়োগ পদ্ধতি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় জমিতে সার প্রয়োগ: সারের মাত্রা, প্রয়োগ সময় ও প্রয়োগ পদ্ধতি

জমিতে সার প্রয়োগ: সারের মাত্রা, প্রয়োগ সময় ও প্রয়োগ পদ্ধতি

জমিতে সার প্রয়োগ : সারের মাত্রা, প্রয়োগ সময় ও প্রয়োগ পদ্ধতি

জীব মাত্রই বেঁচে থাকার জন্য অর্থাৎ তাদের বৃদ্ধি, বিকাশ, বংশ বৃদ্ধি ও অন্যান্য কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয় এবং সে শক্তির উৎস হলো পুষ্টি বা খাদ্য। যেহেতু ফসল জীব জগতের অন্তর্ভুক্ত তাই তাদেরও খাদ্যের প্রয়োজন হয়। মানুষের খাদ্য তালিকায় যেমন রয়েছে আমিষ, শর্করা, স্নেহ, খনিজপদার্থ, পানি ও ভিটামিন, তেমনি উদ্ভিদের বেলায়ও রয়েছে বেশ কয়েকটি রাসায়নিক পুষ্টি মৌল বা পুষ্টি উপাদান।

উদ্ভিদদেহ বিশ্লেষণ করে এ পর্যন্ত ৩০টির মতো মৌল উপাদানের সন্ধান পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে বিজ্ঞানীদের মতে ১৬টি উপাদান উদ্ভিদের জন্য অপরিহার্য। অবশ্য কোনো কোনো বৈজ্ঞানিকের মতে অপরিহার্য মৌল উপাদানের সংখ্যা ২০ বা তারও বেশি। উদ্ভিদের অপরিহার্য খাদ্যোপাদান বলতে সেসব পুষ্টি মৌলকে বোঝায় যার যে কোনো একটির অনুপস্থিতি বা অভাব উদ্ভিদের স্বাভাবিক কার্যকলাপ ব্যাহত করে, এমনকি উদ্ভিদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।

এদের যে কোনো একটির অভাব বা অনুপস্থিতি অন্য কোনোটির স্বল্প বা অধিক মাত্রায় ব্যবহার দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয় ।
এসব পুষ্টি উপাদান যে আকারে গাছ গ্রহণ করে সে আকারে গাছে বা মাটিতে প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না, কোনো না কোনো যৌগিক দ্রব্য (সার) হিসেবে প্রয়োগ করতে হয়।

এসব দ্রব্য মৃত্তিকাস্থ পানিতে দ্রবীভূত হয়ে ক্যাটায়ন (+) ও অ্যানায়ন (-) হিসেবে প্রধানত উদ্ভিদের মূলরোমের সাহায্যে দেহে প্রবেশ করে গাছের বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। কিছু কিছু পুষ্টি উপাদান উদ্ভিদ তার পাতা ও কান্ডের মাধ্যমে আয়ন রূপে গ্রহণ করতে পারে। এদের মধ্যে রয়েছে নাইট্রোজেন, আয়রন (লৌহ), কপার (তামা), জিঙ্ক (দস্তা) প্রভৃতি।
উদ্ভিদের অপরিহার্য পুষ্টি উপাদানগুলোর নাম, এদের উৎস ও পরিশোষণযোগ্য আকারসহ নিচের তালিকায় দেখানো হল :

 

 

 

স্বীকৃত ১৬টি পুষ্টি উপাদানের মধ্যে প্রথম ৯ টিকে (N, P, K, C, H, O, Ca Mg, S) উদ্ভিদ বেশি পরিমাণে পরিশোষণ করে বলে এদেরকে বলা হয় মুখ্য উপাদান (Major element)। আর বাকি ৭ টিকে (Zn, Cu, Mo, B, Fe, Mn, Cl) বলা হয় গৌণ উপাদান (Minor element), কারণ এদেরকে উদ্ভিদ খুব অল্প পরিমাণে শোষণ করে।

শোষণের পরিমাণগত দিক থেকে মুখ্য ও গৌণ হিসেবে গণ্য হলেও গুরুত্বের দিক থেকে এদের মধ্যে কোন তারতম্য নেই; সবগুলোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। মুখ্য পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে N, P, এবং K উদ্ভিদের সবচাইতে বেশি পরিমাণে প্রয়োজন হয় এবং এদেরকে প্রাইমারী বা প্রাথমিক পুষ্টি উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে এবং জমিতে প্রতিনিয়ত এদের অভাব পরিলতি হয়ে থাকে।

তাই এদেরকে যথাক্রমে ইউরিয়া, ট্রিপল সুপারফসফেট (টিএসপি) এবং মিউরেট অব পটাশ (এমপি) সারের মাধ্যমে প্রত্যেক মৌসুমেই ফসল ে তে প্রয়োগ করতে হয়। প ান্তরে গৌণ উপাদানগুলো ফসলের স্বাভাবিক চাহিদার তুলনায় মাটিতে যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান থাকে বলে অধিকাংশ েত্রে এদের অভাব পরিল িত হয় না। অভাব দেখা দিলে অবশ্যই এদেরকে সার হিসেবে প্রয়োগ করতে হয়।

যেমন ইদানিং বাংলাদেশে সেচের সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়াতে ধান চাষাবাদের জন্য বৎসরের অধিকাংশ সময় মাটি ভেজা থাকায় সালফার (গন্ধক) ও জিঙ্ক (দস্তা) এর অভাব পরিলতি হচ্ছে এবং এদেরকে যথাক্রমে জিপসাম ও জিঙ্ক অক্সাইড বা জিঙ্ক সালফেট নামক সারের মাধ্যমে জমিতে প্রয়োগ করা হচ্ছে।

ফসলের চাহিদা

একক জমির (যেমন- একর বা হেক্টর) একটি ফসল বিভিন্ন খাদ্যোপাদান কী পরিমাণে ও অনুপাতে পরিশোষণ করে, উদ্ভিদের দেহ বিশেষণ করে তার একটা ধারণা পাওয়া যায়। বিভিন্ন ফসলের খাদ্যোপাদানের চাহিদা এদের ধরন, জাত, উৎপাদন কলাকৌশল ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। চাহিদার একটি অংশ আসে মাটিতে সঞ্চিত খাদ্যোপাদান থেকে, আর বাকিটা সারের মাধ্যমে জমিতে সরবরাহ করতে হয়।

সারের মাত্রা

মাটির উর্বরতা, আবহাওয়া, উৎপাদন মৌসুম, ফসলের ধরন ও জাত, ফসল ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে সারের মাত্রা নির্ধারিত হয়। উল্লেখ্য, যে দুটো জিনিসের নিরূপণ ছাড়া সারের মাত্রা ঠিক করা যায় না তার একটি হলো ফসলের চাহিদা এবং দ্বিতীয়টি হলো একক জমিতে বিদ্যমান পরিশোষণযোগ্য অবস্থায় গাছের খাদ্যোপাদানের পরিমাণ।

যদি একক জমিতে সঞ্চিত খাদ্যোপাদানের পরিমাণ একক জমির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাছের চাহিদার সমান বা বেশি হয় তা হলে সে জমিতে সার প্রয়োগ করার কোন প্রয়োজন হয় না। আর যদি কম থাকে তবে সে জমিতে অবশ্যই সার প্রয়োগ করতে হবে। তখন সারের পরিমাণ হবে গাছের চাহিদা এবং মাটিতে সঞ্চিত খাদ্যোপাদানের পরিমাণের ব্যবধানের সমান।

অর্থাৎ গাছের চাহিদা যদি হয় ৩০ কেজি নাইট্রোজেনের আর জমিতে থাকে ২২ কেজি, তাহলে সার হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে ৩০-২২ = ৮ কেজি নাইট্রোজেন, যা ইউরিয়ার মাধ্যমে প্রয়োগ করলে প্রয়োজন হবে ১৭.৩৯১ কেজির এবং এমোনিয়াম সালফেটের মাধ্যমে দিলে লাগবে ৩৯.০২৪ কেজি। অনুরূপভাবে অন্যান্য সারের মাত্রাও নিরূপণ করা যাবে।

যেহেতু বিভিন্ন এলাকার মাটির উর্বরতা বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। এমনকি একই জমির বিভিন্ন অংশে উর্বরতা ভিন্নতর হতে পারে । সেজন্য যে কোন এলাকার জন্য সারের নিখুঁত মাত্রা সুপারিশ করা সম্ভব হয় না । তবুও অনেক পরীা-নিরীা, এলাকার শস্য বিন্যাস, আবহাওয়া ও সাধারণ অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে কোন এলাকার জন্য সারের মাত্রা নির্ধারিত হয়ে থাকে।

এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো মাটির উর্বরতা বজায় রেখে এবং সারের অপচয় না ঘটিয়ে লাভজনক ও সাফল্যজনকভাবে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করা। নিচে বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি ফসলের সারের মাত্রা উল্লেখ করা হলো। স্থানীয় অবস্থার পরিপ্রে িতে এর কিছু কমবেশি (অতি উর্বর মাটির জন্য কিছুটা কম এবং অনুর্বর মাটির জন্য কিছুটা বেশি) হতে পারে।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি

সার প্রয়োগের প্রক্রিয়াকে সার প্রয়োগ পদ্ধতি বলে। প্রয়োগ পদ্ধতির উপর সারের কার্যকারিতা বহুলাংশে নির্ভরশীল। উপযুক্ত সময়ে ও সঠিক পদ্ধতিতে সার ব্যবহার না করলে পুষ্টি উপাদানের অপচয় ঘটে। যেমন- আয়তনবহুল গোবর, কম্পোস্ট সার ইত্যাদি জমি চাষের শুরুতেই প্রয়োগ করলে মাটিতে ভালভাবে মিশতে পারে এবং পুষ্টি উপাদানগুলো সহজেই উদ্ভিদের গ্রহণযোগ্য অবস্থায় চলে আসে।

সবটুকু নাইট্রোজেন সার একবারে প্রয়োগ করলে উদ্ভিদ গ্রহণ করার আগেই তা বিভিন্নভাবে নষ্ট হয়ে যায়। নিচে সার প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ।

ছিটিয়ে প্রয়োগ

দানাদার এবং শুকনা সার হাত দিয়ে বা যন্ত্রের সাহায্যে জমিতে সমভাবে ছিটিয়ে দেয়াকে ছিটানো প্রয়োগ পদ্ধতি বলে। এেেত্র অল্প অল্প করে একবার জমির এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ও পরে আড়াআড়িভাবে ছিটিয়ে দিতে হয়। বীজ বপনের পূর্বে যে পরিমাণ সার প্রয়োগ করা হয় সে পরিমাণকে ব্যাসাল ডোজ (Basal dose) বা প্রাথমিক মাত্রা বলা হয় ।

টপ ড্রেসিং (Top dressing) বা উপরি প্রয়োগ পদ্ধতি

জমিতে দাঁড়ানো অবস্থায় ফসলের উপর থেকে ছিটিয়ে সার প্রয়োগকে টপ ড্রেসিং বা উপরি প্রয়োগ পদ্ধতি বলা হয়। সাধারণত নাইট্রোজেনজাতীয় সার এভাবে প্রয়োগ করা হয়। প্রয়োজনে পটাশিয়াম সারও এ পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। তবে যে সব সার সহজে মাটির মধ্যে চলাচল করতে পারে না, যেমন ট্রিপল সুপার ফসফেট, সেগুলো এ পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা হয় না ।

পার্শ্ব প্রয়োগ পদ্ধতি

ফসল গাছের গোড়ায় সারির এক পাশ বা উভয় পাশ থেকে ছিটিয়ে সার প্রয়োগ করাকে পার্শ্ব প্রয়োগ বলা হয়, যেমন- আলু, চীনাবাদাম, ফুলকপি, বাঁধাকপির বেলায় প্রযোজ্য।

স্থানীয়ভাবে বা অকুস্থলে প্রয়োগ পদ্ধতি

ফসল গাছের শিকড়ের কাছাকাছি স্থানে মাটির নিচে ফালিতে (Furrow) সার প্রয়োগকে স্থানীয়ভাবে বা অকুস্থলে প্রয়োগ পদ্ধতি বলে। সারের অপচয় রোধ করাই এর মূল উদ্দেশ্য। স্থানীয়ভাবে প্রয়োগ পদ্ধতি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে ।

 

মাদায় প্রয়োগ পদ্ধতি

বীজ বা চারা লাগানোর জন্য তৈরি মাদায় ঝুরঝুরে মাটিতে সার মিশিয়ে দেয়াকে মাদায় প্রয়োগ পদ্ধতি বলে, যেমন- লাউ, কুমড়া, সীম, আম, কাঁঠাল ইত্যাদির বেলায় প্রযোজ্য।

সিঞ্চন পদ্ধতি

তরল সার অথবা শুকনা সারকে পানিতে দ্রবীভূত করে স্প্রে বা সিঞ্চন যন্ত্রের সাহায্যে সার প্রয়োগকে সিঞ্চন পদ্ধতি বলে। ইউরিয়া বা অন্যান্য গৌণ সার এ পদ্ধতিতে পাতায় প্রয়োগ করা হয়।