Category Archives: বাউবি ১৮৮৯ কৃষি শিক্ষা ১ম পত্র

বাউবি ১৮৮৯ কৃষি শিক্ষা ১ম পত্র

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফসলের অবদান

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফসলের অবদান – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশের উপাদান” বিষয়ের ইউনিট ১ এর ১.৬ নং পাঠ।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফসলের অবদান

 

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের মানুষের প্রধান পেশা হলো কৃষি অর্থাৎ ফসল উৎপাদন। বাংলাদেশের শতকরা ৬৮.৫ ভাগ মানুষ এ পেশায় নিয়োজিত এবং দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৩৫% আসে কৃষি থেকে। জাতীয় আয়ের সিংহভাগই (৩৯.৩৭%) যোগান দেয় এই কৃষি খাত (বি.বি.এস. ১৯৯৪)।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দেশে ফসলী জমির পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সত্তর এর দশকে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ছিল প্রায় এক একর। বর্তমানে তা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ০.২৫ একর। এই ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণ করছে এদেশের বিভিন্ন ফসল। জমির পরিমাণ হ্রাস পেলেও ধান ও গমের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে খাদ্য ঘাটতি গত বিশ বছর ধরে একই পর্যায়ে রয়েছে। বিগত ১৯৫০—৫১ অর্থ বছরে এদেশে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬২ লক্ষ টন। বিগত তিন দশকে দেশের খাদ্য উৎপাদনে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। ১৯৬০—৬১ অর্থবছরে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ৯৭ লক্ষ টনে উন্নীত হয়।

১৯৮৯—৯০ সনে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৬৪ লাক্ষ টনে । অর্থাৎ ২৯ বছরে এদেশে খাদ্য শস্যের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুন বেড়েছে। এসময় খাদ্য শস্যের প্রবৃদ্ধির হার ছিল শতকরা ২.২০ এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি ছিল ২.২৮ ভাগ। ১৯৯২—৯৩ অর্থ বছরে খাদ্য শস্যের উৎপাদন দাঁড়ায় ১ কোটি ৭২ লক্ষ টনে। উৎপাদন বাড়লেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আমাদের খাদ্য ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। এসব তথ্য থেকে দেখা যায় খাদ্য শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি না হলে ক্রমহ্রাসমান জমিতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পরণ সম্ভব হতো না। কৃষিতে উন্নত ূ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের ফলেই তা সম্ভব হচ্ছে।

তাই একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফসল খুবই গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের প্রধান ফসলগুলো হলো, ধান, গম, পাট, আখ, তামাক, চা, আলু, ডাল ও তৈল জাতীয় শস্য।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফসল এর অবদান:

ধান

বর্তমানে ৩৯টি উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করা হয়েছে যার প্রায় অধিকাংশই কৃষক পর্যায়ে মাঠে চাষ করা হয়।
বাংলাদেশে ধানের জমির পরিমাণ কমলেও প্রতি একক জমিতে এর উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে ধানের উৎপাদন হার ছিল হেক্টরপ্রতি ২—৩ টন আর এখন তা ৫—৬ টনে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে ৩৯টি উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করা হয়েছে যার প্রায় অধিকাংশই কৃষক পর্যায়ে মাঠে চাষ করা হয়। ১৯৭০ সালে চালের উৎপাদন ছিল প্রায় ১০ মিলিয়ন টন বর্তমানে তা প্রায় ১৯ মিলিয়ন টনে উন্নীত হয়েছে। এর পরও এদেশে চালের ঘাটতি রয়েছে যা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।

 

গম

দানা জাতীয় খাদ্য শস্যের মধ্যে ধানের পরই গমের স্থান। গম বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খুব একটা ভূমিকা না রাখলেও ধানের সহকারী খাদ্য হিসেবে গম তার স্থান করে নিয়েছে। দেশে বেশি পরিমাণে জমি সেচের আওতায় আসার ফলে এবং গমের চেয়ে বাঙালিরা ভাত বেশি পছন্দ করে বিধায় বর্তমানে গমের জমির পরিমাণ এবং উৎপাদন দুই—ই স্থিতিশীল হয়ে আসছে। গমের ফলন বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট অদ্যাবধী ১৬টি উচ্চ ফলনশীল গমের জাত উদ্ভাবন করেছে এবং কৃষকের মাঠে এগুলোর প্রায় সব ক’টি চাষ করা হচ্ছে। ১৯৯৭—৯৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৮০.৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে ১৮ লক্ষ মেট্রিক টন গম উৎপন্ন হয়েছে।

 

পাট

পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। বর্তমানে বিশ্ব বাজারে পাটের চহিদা কমে যাওয়ায় তার দামও কমে গেছে; ফলে পাট চাষে কৃষকদের উৎসাহ কমে গেছে। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ বিশ্বের ৬৯টি দেশে পাট রপ্তানি করত । উৎপাদিত পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ৭০% বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। আগে প্রতি বছর বাংলাদেশে ৭০ লক্ষ বেল পাট উৎপন্ন হ’তো যা বর্তমানে এসে ঠেকেছে ৪০ লক্ষ বেলে। ১৯৯২—৯৩ অর্থবছরের মার্চ ’৯৩ পর্যন্ত ৭৮৮ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা পাটজাত দ্রব্য এবং ২২৪ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা কাঁচা পাট রপ্তানি করে আয় হয়।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ১৬% আয় হয় পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে। বর্তমানে ঔষধ ও পোষাক শিল্পের প্যাকেজিংয়ের জন্য প্রায় ১১ শ’ কোটি টাকা মূল্যের ১ লক্ষ ৪ হাজার টন ইন্ডাষ্ট্রিয়াল গ্রেড কাগজ আমদানি হচ্ছে। পাটজাত দ্রব্য দিয়ে এ কাগজ তৈরি করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় সম্ভব। জুটন (৭০% পাট + ৩০% সুতা) তৈরি করতে এখন পাটের আঁশ ব্যবহৃত হচ্ছে। নদীর বাঁধ ভাঙ্গন রোধে চটের বস্তা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।

চা

চা বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান অর্থকরী ফসল। চা বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান অর্থকরী ফসল। ১৯৯৭—৯৮ সনে চা বাগানের আওতায় জমির পরিমাণ ছিল ৪৮.৫ হাজার হেক্টর এবং উৎপাদন ছিল ৫০.৫ হাজার মেট্রিক টন। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে এর প্রায় অর্ধেক পরিমাণ বিদেশে রপ্তানি করা হয়। চা রপ্তানি করে ১৯৮৮—৮৯ অর্থ বছরে আয় হয়েছে ১২০৮ মিলিয়ন টাকা, ১৯৮৯—৯০ অর্থবছরে ১২০১ মিলিয়ন টাকা, ১৯৯০—৯১ অর্থবছরে ১৫৪৪ মিলিয়ন টাকা, ১৯৯১—৯২ অর্থবছরে ১২৯৬ মিলিয়ন টাকা। বংলাদেশে চা এর উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে।

 

আখ

আখ বাংলাদেশের চিনি ও গুড় উৎপাদনকারী প্রধান অর্থকরী ফসল। আখ বাংলাদেশের চিনি ও গুড় উৎপাদনকারী প্রধান অর্থকরী ফসল। বর্তমানে দেশে ১,৭৪,০০০ হেক্টর জমিতে আখ উৎপন্ন হয় এবং বাৎসরিক গড় উৎপাদন ৭২—৭৬ লক্ষ টন। উৎপাদিত আখের ২৩ লক্ষ টন ব্যবহৃত হয় চিনি উৎপদনের জন্য এবং ৩১ লক্ষ টন আখ ব্যবহৃত হয় গুড় উৎপাদনের জন্য।

বাকী আখ বীজ হিসেবে ও চিবিয়ে খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। দেশে বর্তমানে চিনি ও গুড় উৎপাদনের পরিমাণ যথাক্রমে ১.৯ লক্ষ এবং ৩ লক্ষ টন। দেশে বাৎসরিক ৩ লক্ষ টন চিনি এবং ৬ লক্ষ টন গুড়ের চহিদা মিটাতে ১ কোটি ১০ লক্ষ টন আখ উৎপাদন প্রয়োজন। আখের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইক্ষু গবেষণা ইনষ্টিটিউট ২৩ টি উচ্চ ফলনশীল ইক্ষু জাত উদ্ভাবন করেছে। দেশে চিনির চাহিদা মিটানোর জন্য প্রতিবছর প্রায় এক লক্ষ টন চিনি আমদানি করতে হয়।

 

তামাক

তামাক বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল এবং সরকারের রাজস্ব আদায়ের অন্যতম উৎস। বাংলাদেশে বর্তমানে ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৬ হাজার মেট্রিক টন তামাক উৎপন্ন হয় যা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটাতে সক্ষম।

 

ডাল জাতীয় শস্য

দেশে ডাল জাতীয় শস্যের চাহিদার প্রায় বেশির ভাগই বর্তমানে আমদানি করতে হয়। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ডাল জাতীয় শস্যের জমির পরিমাণ ও উৎপাদন কমে গেছে। দেশে সেচের আওতায় জমির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে কৃষকেরা এখন সে জমিতে ডালের পরিবর্তে ধান চাষ করছে তবে ডালের ফলন বৃদ্ধির জন্য সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি ইনষ্টিটিউট বেশ কয়েক জাতের মসুর, ছোলা, মুগ ও মাষ কলাইয়ের উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে।

 

তৈলবীজ জাতীয় শস্য

সরিষা বাংলাদেশের প্রধান তৈলবীজ জাতীয় শস্য। বর্তমানে তৈলবীজ জাতীয় শস্য হিসেবে দেশে সয়াবীনের চাষ হচ্ছে এবং সয়াবীন চাষের উজ্জ্বল সম্ভবনা রয়েছে। কিন্তু সয়াবীন ক্রাস করার মেশিন না থাকায় আমাদের তেলের ঘাটতি মিটাতে প্রতি বছর ৩ থেকে ৬ হাজার মিলিয়ন টাকার সয়াবীন তৈল বিদেশ হ’তে আমদানি করতে হয়। এদেশে তৈল বীজ জাতীয় ফসলের জমির পরিমাণ স্থিতিশীল রয়েছে। তৈলবীজ শস্যের ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের কৃষি গবেষনা প্রতিষ্ঠান সমূহ সরিষার ১০টি, চীনাবাদামের ৬টি, গর্জনতিলের ৩টি ও তিষির ১টি উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। এগুলো চাষের আওতাভূক্ত জমির পরিমাণ বাড়াতে পারলে তৈল আমাদানির পরিমাণ কমে আসবে এবং
দেশের অর্থনীতিতেও যথেষ্ট অবদান রাখবে।

অন্যান্য:

রাবার দেশে রাবার উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় কাঁচা রাবার আমদানি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে এবং এ খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। বর্তমান (১৯৯৪—৯৫) অর্থ বছরে এই সাশ্রয়ের পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা। বিভিন্ন রাবার বাগান হ’তে বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার টন কাঁচা রাবার উৎপাদন হচ্ছে যা দিয়ে দেশের ২৫০টি রাবার জাত দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মোট বার্ষিক চাহিদার ৩০% মিটানো সম্ভব হচ্ছে। ফুল, ফল ও শাকসব্জি ঢাকায় বর্তমানে প্রতিদিন ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের তাজা ফুল বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশে ফুল এখন বাণিজ্যিক পণ্য। ঢাকায় বর্তমানে প্রতিদিন ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের তাজা ফুল বিক্রি হচ্ছে । দেশে বর্তমানে ২ হাজার বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে্ । প্রায় ১৫ হাজার লোক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ফুল ব্যবসার সাথে জড়িত। ১৯৯৩—৯৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১২ লক্ষ টাকা ম ল্যের তাজা ফুল সৌদি আরবে রপ্তানি করে। ফলের উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং যে পরিমাণ উৎপন্ন হচ্ছে তাতে দেশের চাহিদা পূরণ হচ্ছে।

কাঁঠালসহ কিছু ফল বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে । বর্তমানে বাংলাদেশ হ’তে ১৫টিরও অধিক দেশে ৪৮ প্রকারের শাকসব্জি রপ্তানি হচ্ছে । ১৯৯২—৯৩ অর্থবছরে ৩১৩.৫ মিলিয়ন টাকার এবং ১৯৯৩—৯৪ অর্থবছরে ৩২৩.৫ মিলিয়ন টাকার সব্জি বিদেশে রপ্তানি করা হয়। দেশে সব্জি উৎপাদন করার লক্ষ্যে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সমূহ বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে।

উপরের আলোচনা হ’তে এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশ কৃষির উপর নির্ভরশীল হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে এদেশের ফসলসমূহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আশানুরূপ অবদান রাখতে পারছে না। প্রাকৃতিক দূর্যোগ, সুষ্ঠু পরিল্পনার অভাব, কৃষি নীতিমালা বাস্তবায়নে অসফলতা, কৃষকদের অজ্ঞতা ও দারিদ্র, গবেষণা ও সম্প্রসারণের মধ্যে যোগাযোগের অভাব ইত্যাদিই প্রধান কারণ। দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ফসলের অবদান আরোও বাড়বে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

 

 

কৃষি উপকরণ ব্যবহারের বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ, আর কৃষির অগ্রগতি নির্ভর করে আধুনিক ও উপযোগী কৃষি উপকরণের যথাযথ ব্যবহারের উপর। কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, যন্ত্রপাতি প্রভৃতি উপকরণের সঠিক ব্যবহার অপরিহার্য। তবে বাস্তবে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই এসব উপকরণ ব্যবহারে নানা সমস্যা, অসচেতনতা ও সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে।

আজকের পাঠে আমরা “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের ইউনিট ১-এর ১.৫ নম্বর পাঠ অনুযায়ী, বাংলাদেশের কৃষি উপকরণের বর্তমান ব্যবহারিক অবস্থা, এর সুবিধা-অসুবিধা, কৃষকের সচেতনতা ও সরকারি-বেসরকারি সহায়তা নিয়ে আলোচনা করব। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা জানতে পারব, কীভাবে কৃষি উপকরণের কার্যকর ব্যবহার কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

কৃষি উপকরণ ব্যবহারের বর্তমান অবস্থা

 

কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশে, উপকরণ বলতে সেই সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রকে বুঝানো হয় যা কোনো বস্তু তৈরি বা উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। কৃষি ক্ষেত্রে, ফসল উৎপাদনের জন্য সরাসরি যে সকল জিনিসপত্র প্রয়োজন, সেগুলোকে কৃষি উপকরণ বলা হয়। কৃষি উপকরণকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

১. অবস্তুগত উপকরণ
২. বস্তুগত উপকরণ

অবস্তুগত উপকরণ হলো শ্রমিক বা মানুষ, গরু-মহিষ, এবং যান্ত্রিক শক্তি। আর বস্তুগত উপকরণ হলো বীজ, সার, পানি, ও আপদনাশক। এখানে আমরা বিশেষভাবে বস্তুগত উপকরণ সম্পর্কে আলোচনা করবো।

বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষক ফসল উৎপাদনের জন্য নিজেরা সংরক্ষিত বীজ ব্যবহার করেন। তবে উন্নত জাতের বীজ সরবরাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বি.এ.ডি.সি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বি.এ.ডি.সি তাদের বীজবর্ধন খামার থেকে বিভিন্ন ফসলের উন্নত জাতের বীজ উৎপাদন করে কৃষকদের মাঝে বিক্রয় করে থাকে। প্রয়োজন অনুসারে তারা বিদেশ থেকেও বীজ আমদানী করে থাকে, যদিও সরবরাহ এখনও চাহিদার তুলনায় কম।

বি.এ.ডি.সি কর্তৃক বিক্রয়কৃত বিভিন্ন বীজের পরিসংখ্যান (ছক-১) থেকে দেখা যায়, ধান (আউশ, আমন, বোরো), গম, গোল আলু, সরিষা এবং শীতকালীন শাকসবজির বীজ প্রধানত সরবরাহ করা হয়। ১৯৯২-৯৩ সালের মধ্যে আউশ ধানের বীজ বিক্রয় কিছুটা কমলেও আমন ধানের বীজ বিক্রয় বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, গম, গোল আলু, সরিষা ও শীতকালীন শাকসবজির বীজ বিক্রয় পূর্বের তুলনায় কম। এ থেকে ধারণা করা যায় যে কৃষকেরা নিজেদের উৎপাদিত বীজই বেশি ব্যবহার করছেন।

ছক: বি..ডি.সি কর্তৃক বিক্রীত উন্নত বীজের পরিমাণ (১৯৯২৯৩)

ফসলের নাম বীজ বিক্রয়ের পরিমাণ (কেজি) পূর্ববর্তী বছরের তুলনা
আউশ ধান ৫১৮,০৮৪ কম হয়েছে
আমন ধান ৩,৫৯,৪৩,৪৩১ বৃদ্ধি পেয়েছে
বোরো ধান ৭,৪৫,৭৪০ বৃদ্ধি পেয়েছে
গম ৯৬ কম হয়েছে
গোল আলু ৬৭,৫৯৬ কম হয়েছে
সরিষা ৫০,২৯৬ কম হয়েছে
শীতকালীন শাক-সবজি ৫১৯ কম হয়েছে

 

সার

ফসলের জমিতে আমরা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহার করি, যেমন ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট, সুপার ফসফেট, মিউরেট অব পটাশ, জিঙ্ক সালফেট, সালফার ইত্যাদি। এসব সারের মধ্যে কিছু আমাদের দেশের কারখানায় উৎপাদিত হয়, আবার কিছু আমদানি করে আনা হয়। ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমদানির পাশাপাশি দেশে রাসায়নিক শিল্প সংস্থাগুলোও সার উৎপাদন করে থাকে।

নীচের ছক (ছক—২) থেকে দেখা যায়, ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে সারের ব্যবহার আগের বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছিল, তবে ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে তা কিছুটা কমে গেছে। ১৯৯০-৯১, ১৯৯১-৯২ এবং ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে মোট সারের ব্যবহার ছিল যথাক্রমে ১৯,৯৪,১৬০; ২১,২৭,০০৪; এবং ২০,৩৪,৭৯২ মেট্রিক টন।

সেচ

বাংলাদেশে মোট ফসলী জমির পরিমাণ প্রায় ১৩.৭ মিলিয়ন হেক্টর। এর মধ্যে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে সেচ প্রদান করা হয় মোট ফসলী জমির ১৯.৪৬ শতাংশে এবং গতানুগতিক পদ্ধতিতে সেচ প্রদান করা হয় ৪.৪৬ শতাংশ জমিতে। বাকি ৭৬.৩% জমি এখনও সেচের আওতায় আসতে পারেনি।

যদিও বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টি হয়, তবে বৃষ্টির অসম বণ্টনের কারণে রবি মৌসুমের বিশেষ ফসল যেমন বোরো ধান, গম, গোল আলু ইত্যাদির জন্য সেচ প্রদান অপরিহার্য। সেচের আওতায় আরও বেশি জমি আনতে পারলে খাদ্য ঘাটতি অনেক কমে যাবে। বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মাধ্যমে দেশে সেচের পরিমাণ ও প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ছকে (ছক—৩) প্রদর্শিত হয়েছে।

আপদনাশক

ফসলকে বিভিন্ন প্রকার আপদ থেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের আপদনাশক ব্যবহার করা হয়। ফসলের শত্রু হিসেবে কাজ করে আগাছা, পোকামাকড়, রোগ জীবাণু, ইঁদুর এবং গুদামে আক্রমণকারী অন্যান্য প্রাণী। এসব ক্ষতিকারক উপাদানকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন ধরনের আপদনাশক ব্যবহৃত হয়, যা ফসলের উৎপাদনশীলতা ও গুণগত মান বজায় রাখতে সাহায্য করে।

 

 

কৃষিতে পোকা-মাকড়, রোগ-বালাই, আগাছা ও ইঁদুর নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাক্রমে কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক ও রোডেন্টিসাইড ব্যবহার করা হয়। এগুলো পাউডার, তরল এবং দানাদার আকারে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে গত কয়েক দশক ধরে এসব আপদনাশকের ব্যবহার ক্রমবর্ধমান।

উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে মোট ৭৩০৭.২২ মেট্রিক টন আপদনাশক ব্যবহৃত হয়েছিল, যা ১৯৯৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৭৬৪০.৪৯ মেট্রিক টনে। ১৯৯৪ সালের প্রথম ছয় মাসে এককালে ৪৭৪৪.৮ মেট্রিক টন আপদনাশক ব্যবহৃত হয়েছে।

ছক: বাংলাদেশে আপদনাশকের ব্যবহার (মেট্রিক টন)

বছর ব্যবহৃত আপদনাশকের পরিমাণ (মেট্রিক টন)
১৯৯২ ৭৩০৭.২২
১৯৯৩ ৭৬৪০.৪৯
১৯৯৪ (ছয় মাস) ৪৭৪৪.৮

 

ভূমির ব্যবহার ও ফসল পরিসংখ্যান

ভূমির ব্যবহার ও ফসল পরিসংখ্যান – কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ বিষয়ের একটি পাঠ। এই পাঠটি ১ নং ইউনিটের ১.৪ নং পাঠ।

 

ভূমির ব্যবহার ও ফসল পরিসংখ্যান , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ 

 

বাংলাদেশে মোট জমির পরিমাণ প্রায় ১,৪৯,০০,০০০ হেক্টর (বি.বি.এস. ২০০০) । এ দেশের ভূভাগ বিভিন্ন খাতে ব্যবহৃত হেয়েছ।

এগুলো হলো ঃ

১। বনভূমি

২। আবাদের অনুপোযোগী জমি বাংলাদেশে মোট জমির পরিমাণ প্রায় ১,৪৯,০০,০০০ হেক্টর

৩। আবাদযোগ্য বা চাষযোগ্য জমি

 

আবাদযোগ্য জমিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা ঃ

ক) আবাদযোগ্য বা চাষযোগ্য পতিত জমি

খ) চাষকৃত ফসলী জমি ।

চাষকৃত ফসলী জমিকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো ঃ র) বর্তমান বা চলতি পতিত জমি প্রকৃত ফসলী জমি প্রকৃত ফসলী জমিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা ঃ

ধ) এক ফসলী জমি

ন) দ্বি—ফসলী জমি

প) ত্রি—ফসলী জমি

বাংলাদেশে প্রায় ২৬,২৮,০০০ হেক্টর জমিতে বন রয়েছে যা মোট স্থলভাগের প্রায় শতকরা ১৮ ভাগের মত। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য কোন দেশের ২৫% বনাঞ্চল থাকা উচিত।

১। বনভূমি বাংলাদেশে প্রায় ২৬,২৮,০০০ হেক্টর জমিতে বন রয়েছে যা মোট ভূমির প্রায় শতকরা ১৮ ভাগের মত (বি.বি.এস. ২০০০)। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য কোন দেশের ২৫% বনাঞ্চল থাকা উচিত। বনভূমির দিক হ’তে প্রধান পাঁচটি বৃহত্তর জেলা হচ্ছে— পার্বত্য চট্টগাম, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং টাঙ্গাইল। যে সব জেলায় মোটেই বনাঞ্চল নেই সেগুলো হচ্ছে বৃহত্তর ফরিদপুর, যাশোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া ও পাবনা। সাধারনভাবেই এদেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ কম তারপরেও যেভাবে অনিয়ন্ত্রিত এবং অপরিকল্পিত উপায়ে বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে তা যদি রোধ না করা হয় তবে ভবিষ্যতে এ দেশ মরুভূমিতে পরিণত হ’তে পারে যার কিছু আলামত এখনই দেশের উত্তরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে।

২। আবাদের অনুপোযোগী জমি এ জমিতে বাড়ীঘর, হাট—বাজার, শহর—বন্দর, অফিস—আদালত, স্কুল—কলেজ, মস্জিদ—মন্দির, মাদ্রাসা ইত্যাদি অবস্থিত। এর পরিমাণ প্রায় ৩৪,১৫,০০০ হেক্টর যা মোট জমির শতকরা প্রায় ২৩ ভাগ (বি.বি.এস. ২০০০)।

৩। আবাদযোগ্য জমি চাষযোগ্য পতিত জমি, চলতি পতিত জমি ও প্রকৃত ফসলী জমির পরিমাণের সমষ্টি হলো আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ। আবাদযোগ্য বা চাষযোগ্য জমি বলতে প্রকৃতপক্ষে কতটুকু জমিতে ফসল আবাদ করা সম্ভব তাকে বুঝায়। চাষযোগ্য পতিত জমি, চলতি পতিত জমি ও প্রকৃত ফসলী জমির পরিমাণের সমষ্টি হলো আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ। আরও সহজভাবে বলা যায়

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০০ অনুসারে এ দেশে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ৮৮,০৩,২৩৯ হেক্টর। নিম্নে এর অন্যান্য শ্রেণীবিভাগগুলো আলোচনা করা হলো ঃ

(ক) আবাদযোগ্য বা চাষযোগ্য পতিত জমি:

বাড়ী—ঘর, হাট—বাজার, অফিস—আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ—মন্দির ইত্যাদির আশেপাশে কিছু জমি পতিত থাকে যা কিছুটা যত্ন নিলেই চাষাবাদের আওতায় আনা যায়। এরূপ জমিকে আবাদযোগ্য পতিত জমি বলে এবং এর পরিমাণ প্রায় ৩ লক্ষ হেক্টর যা মোট জমির শতকরা প্রায় ২ ভাগ। এরূপ পতিত জমির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে।

 

(খ) চাষকৃত ফসলী জমি চাষকৃত ফসলী জমি:

বলতে বুঝায় যে জমি চাষাবাদ করে ফসল উৎপাদন করা হয়। চাষকৃত ফসলী জমি = আবাদযোগ্য জমি Ñ আবাদযোগ্য পতিত জমি। অন্য কথায়, চাষকৃত ফসলী জমি = চলতি পতিত জমি + প্রকৃত ফসলী জমি। এর পরিমাণ প্রায় ৮৫ লক্ষ হেক্টর, যা মোট জমির শতকরা প্রায় ৫৭ ভাগ।

 

(গ) চলতি বা বর্তমান পতিত জমি:

অন্যান্য বছর আবাদ করা হলেও কোন কারণে আলোচ্য বছরে কমপক্ষে এক মৌসুমের জন্যও আবাদ করা না হলে তাকে চলতি বা বর্তমান পতিত জমি বলে। কারণগুলো হ’তে পারে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খরা, বীজের অভাব ইত্যাদি। বাংলাদেশে প্রায় ৩.৪৯ লক্ষ হেক্টর চলতি পতিত জমি আছে যা কমিয়ে শুন্যতে আনতে হবে। এর পরিমাণ মোট জমির শতকরা প্রায় ২.৩৪ ভাগ।

(ঘ) প্রকৃত ফসলী জমি:

এক, দ্বি এবং ত্রি—ফসলী জমির যোগফলই হলো প্রকৃত ফসলী জমি। আমাদের দেশের প্রায় ৮১.৩৮ লক্ষ হেক্টর জমি প্রকৃত ফসলী জমির আওতাভূক্ত। এক, দ্বি এবং ত্রি—ফসলী জমির যোগফলই হলো প্রকৃত ফসলী জমি। আমাদের দেশের প্রায় ৮১.৩৮ লক্ষ হেক্টর জমি প্রকৃত ফসলী জমির আওতাভূক্ত। এর পরিমাণ মোট জমির শতকরা প্রায় ৫৪.৬১ ভাগ।

(ঙ) এক ফসলী জমি:

যে জমিতে সারা বছর একটি মাত্র ফসল জন্মানো হয় তাকে এক—ফসলী জমি বলে। আমাদের দেশে এক ফসলী জমির পরিমাণ প্রায় ৩০ লক্ষ হেক্টর। এরূপ জমির পরিমাণ ক্রমশঃ কমে আসছে। এর পরিমাণ প্রকৃত ফসলী জমির শতকরা প্রায় ৩৭ ভাগ।

(চ) দ্বি ফসলী জমি:

যে জমিতে বছরে দুটি ফসল জন্মানো হয় তাকে দ্বি—ফসলী জমি বলে। এদেশে দ্বি—ফসলী জমির পরিমাণ ৪১.৪৮ লক্ষ হেক্টরেরও বেশি। এ জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এর পরিমাণ প্রকৃত ফসলী জমির শতকরা প্রায় ৫১ ভাগ।

(ছ) ত্রি—ফসলী জমি:

যে জমিতে বছরে তিনটি ফসল জন্মানো হয় তাকে ত্রি—ফসলী জমি বলে । আমাদের দেশে বর্তমানে ত্রি—ফসলী জমির পরিমাণ প্রায় ১০ লক্ষ হেক্টর। নতুন নতুন প্রযুক্তি, জাতের উদ্ভব, কৃষি উপকরণ এবং সেচ সুবিধা বৃদ্ধির ফলে এর পরিমাণ দিন দিন বেড়ে চলেছে। এটি প্রকৃত ফসলী জমির শতকরা প্রায় ১২ ভাগ। সর্বমোট ফসলী জমি সর্বমোট ফসলী জমি = এক ফসলী জমি + (দ্বি—ফসলী জমি ২) + (ত্রি—ফসলী জমি৩)।

খরিপ—১, খরিপ—২ এবং রবি মৌসুম মিলিয়ে এক বছরে সর্বমোট যে পরিমাণ জমিতে আবাদ করা হয় তাই সর্বমোট ফসলী জমি। সর্বমোট ফসলী জমি = এক ফসলী জমি + (দ্বি—ফসলী জমি ী ২) + (ত্রিফসলী জমি ী ৩)। বাংলাদেশে মোট ফসলী জমির পরিমাণ প্রায় ১,৪২,৭৮,১৩৮ হেক্টর (বি.বি.এস.
২০০০)।

কোন দেশের মোট কী পরিমাণ জমিতে কী কী ফসল আবাদ করা হয, সেগুলোর মোট উৎপাদন কত এবং প্রতি হেক্টরে সেগুলোর উৎপাদনের পরিমাণ এবং তার হিসাব সম্বন্ধীয় প্রতিবেদনকে ফসল পরিসংখ্যান বলে। দেশে কোন বছর কী পরিমাণ ধান, গম, পাট, আখ, তামাক, ডাল ও তৈল জাতীয় এবং অন্যান্য ফসল উৎপন্ন হয় তা একমাত্র ফসল পরিসংখ্যান হ’তে পাওয়া সম্ভব।

ধানের জমির মধ্যে আমন ধান ৫৮৪৩.৭ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপন্ন হয় যা মোট ধানী জমির শতকরা ৫৭ ভাগ। নিম্নের ছক (২) হ’তে দেখা যায় যে ধানই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে জন্মে। ধানের জমির মধ্যে আমন ধান ৫৮৪৩.৭ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপন্ন হয় যা মোট ধানী জমির শতকরা ৫৭ ভাগ। বোরো ধান উৎপন্ন হয় ২৫৮০.৩ হাজার হেক্টরে এবং আউশ ধান ১৬৪৯.৪ হাজার হেক্টরে। মোট ধানী জমির শতকরা ২৫.৫ ও ১৬.৪ ভাগে যথাক্রমে বোরো ও আউশ ধান উৎপন্ন হয়।

বর্তমানে (১৯৯৩’৯৪) সর্বমোট ১০০৭৩.৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপন্ন হয় এবং মোট উৎপাদনের পরিমাণ ১৮৩০২ হাজার মেট্রিক টন। গত কয়েক বছরের খতিয়ান হ’তে দেখা যায় যে গম চাষের জমির পরিমাণ মোটামুটি স্থিতিশীল। বর্তমানে ৮৮২.২ হাজার হেক্টর জমিতে গম উৎপাদন করা হয় এবং উৎপাদনের পরিমাণ ১৯০৮ হাজার মেট্রিক টন। আন্তজার্তিক বাজারে পাটের মূল্য কমে যাওয়ায় পাট চাষের জমির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৪৭৭.৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হচ্ছে এবং উৎপাদনের পরিমাণ ৮১২ হাজার মেট্রিক টন।

বর্তমানে ১৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে ৬৯৫১ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপন্ন হচ্ছে। তামাক অর্থকরী ফসল। তামাক উৎপাদনের জমি এবং উৎপাদন মোটামুটি স্থিতিশীল। ডাল ফসল ও তৈলবীজ ফসলের উৎপাদন ও জমির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে এবং এ দু’টি ফসলই এখন মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে বিদেশ হ’তে আমদানী করতে হয়। বর্তমানে ৫৪৬.৭ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ডাল ফসল এবং ৫১১.৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন তৈলবীজ ফসলের চাষ করা হয এবং উৎপাদনের পরিমাণ যথাক্রমে ৪১৭ ও ৭০০ হাজার মেট্রিক টন।

ছক — ২ ঃ প্রধান প্রধান ফসলের আবাদকৃত জমির পরিমাণ ও উৎপাদন ।

 

 

গাছপালা ও জীবজন্তুর উপর জলবায়ুর প্রভাব

গাছপালা ও জীবজন্তুর উপর জলবায়ুর প্রভাব – কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ বিষয়ের একটি পাঠ। এই পাঠটি ১ নং ইউনিটের ১.৩ নং পাঠ। জলবায়ুর উপর নির্ভর করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ জন্মে এবং বিভিন্ন জীবজন্তু বাস করে। কোন জীব এককভাবে প্রকৃতিতে থাকতে পারেনা। সাধারণত বিভিন্ন গোত্রের জীবসমূহ সমষ্টিগতভাবে একস্থানে বাস করে। বেশির ভাগ জীব সম্প্রদায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর সমষ্টি দ্বারা গঠিত। একেক অঞ্চলে একেক ধরণের গাছপালা ও জীবজন্তু পরিলক্ষিত হয় যা ঐ অঞ্চলের পরিবেশতন্ত্র বা ইকোসিষ্টেমের উপর নির্ভরশীল।

 

গাছপালা ও জীবজন্তুর উপর জলবায়ুর প্রভাব

 

 

বাংলাদেশের জলবায়ুর বৈচিত্র ও উদ্ভিদ ধরণের উপর নির্ভর করে একে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যেতে পারে।

১। গঙ্গা নদীর বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চল

২। চিরহরিৎ পত্রঝরা অরণাঞ্চল

৩। পত্রঝরা অরণ্যাঞ্চল

৪। ম্যানগ্রোভ অরণ্যাঞ্চল

 

গঙ্গানদীর বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চল

দেশের প বার্ঞ্চলের কিছু অনুচ্চ পাহাড় ও টিলা ব্যতিত প্রায় সমগ্র বাংলাদেশই একটি বিস্তীর্ণ সমভূমি। দেশের পূবার্ঞ্চলের কিছু অনুচ্চ পাহাড় ও টিলা ব্যতিত প্রায় সমগ্র বাংলাদেশই একটি বিস্তীর্ণ সমভূমি। বিভিন্ন নদ—নদী ও এদের শাখা প্রশাখা জালের মত সমগ্র দেশে ছড়িয়ে আছে। দেশের সমভূমি অঞ্চল এসব নদী ও শাখা নদী বিধৌত পলি দ্বারা গঠিত। এ অঞ্চলের উদ্ভিদসম হকে তিনভাগে করা যায়। যেমন— জলজ উদ্ভিদ, অনাবাদী জমির গাছপালা এবং আবাদী জমির ফসল।

বর্ষাকালে যখন প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় তখন বিল, হাওর ও পুকুরে বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ জন্মে। এরা হলো পাতাশেওলা, পাতাঝাঁঝি, কচুরিপানা, শাপলা, পদ¥, ক্ষুদে পানা, টোপা পানা, গুঁড়িপানা, সিঙ্গারা, ইত্যাদি। হাওর, বিল ও পুকুরের কিনারায় সঁ্যাতসেঁতে মাটিতে নলখাগড়া, কলমী, হেলেঞ্চা, পানি মরিচ, বাত শোলা, ইত্যাদি উদ্ভিদ দেখা যায়। এদের জন্ম ও বংশ বৃদ্ধি এ মৌসুমেই বেশি।

বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, ব্যাঙ, সাপ এসব জলাশয়ে বাস করে। বৃষ্টির পানিতে যখন চারিদিক ভরে যায় তখন এসব প্রাণীরাও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পরে। এসময়ই এদের প্রজনন সময়। বর্ষাকালে যখন নীচু জমি পানিতে ভরে যায় তখন বিভিন্ন প্রাণী বাড়ীর আশে পাশে উঁচু জায়গায় চলে আসে। শীতকালে এসব হাওরে বিভিন্ন দেশ হ’তে অতিথি পাখিরা এসে ভীড় করে এবং বর্ষা আসার সাথে সাথে এরা চলে যায়।

আবাদযোগ্য জমি ছাড়া বাড়ীর আশে পাশে, রেল লাইন ও রাস্তার পার্শ্বে, নদীর ধার ও অন্যান্য সাধারণ জায়গায় বিভিন্ন ঔষধী, গুল্ম ও অন্যান্য উদ্ভিদ দেখা যায়। এদের জন্ম ও বৃদ্ধি আবহাওয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এসব স্থানে যে সকল উদ্ভিদ জন্মে এগুলো হলো — শ্বেতদ্রোন, ক্রোটন, শাকনটে, কাটানটে, হাতীশুড়, ধুতুরা, পানি মরিচ, শিয়াল মতি, কচু, ঘাঘরা ইত্যাদি। এদের কোনটা খরিপ মৌসুমে আবার কোনটা রবি মৌসুমে জন্মে। এছাড়া কিছু কিছু ফসল উভয় মৌসুমেও চাষ করা হয় এবং নারিকেল, তাল, সুপারি, খেজুর, ইত্যাদি বাড়ীর আশেপাশে বা রাস্তার ধারে দেখা যায়। ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষ হিসেবে তেতুল, বট, ইত্যাদি গ্রাম বাংলার হাট বাজারে নজরে পড়ে।

দেশের উত্তর—পশ্চিমাঞ্চলে ক্ষেতের আইলে বা রাস্তার ধারে প্রচুর বাবলা গাছ চোখে পড়ে। উর্বর মাটি ও আবহাওয়া ফসল উৎপাদনের জন্য অনুকূল হওয়ায় সমতলভূমি অঞ্চলে সারা বছরই বিভিন্ন ফসল জন্মে। জলবায়ু ও আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে এখানে বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন ফসল জন্মে থাকে।

কোন কোন ফসল খরিপ মৌসুমে ভাল জন্মে আবার কোনটা শুধু রবি মৌসুমেই হয় আবার কিছু কিছু ফসল উভয় মৌসুমেই জন্মে। বাঁশ, আম, জাম, নারিকেল, আতা, লেবু, কলা, লিচু, বেল, কাঁঠাল, পেয়ারা, জাম্বুরা, ইত্যাদি ফলের গাছ প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই দেখা যায়।

বাড়ীর আশে পাশের ঝোপ বা ঝাড়ে শিয়াল, বেজি, খরগোশ, সাপ, গুইসাপ, কাঠবিড়ালি, বনবিড়াল, খাটাস এবং নানা রকম পাখি দেখা যায়। শীতকালে এরা দূরবতীর্ স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। কিন্তু বর্ষাকালে এরা বাড়ীর আশে—পাশে উঁচু স্থানে চলে আসে। কিছু কিছু প্রাণী যেমন— সাপ, ব্যাঙ প্রভৃতি শীতকালে গর্তে থাকে। তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত বাড়ার সাথে সাথে তারা গর্ত থেকে বের হয়ে আসে।

 

চিরহরিৎ ও পাতাঝরা বনাঞ্চল

চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলার পাহাড়ী অঞ্চলে অবস্থিত বনাঞ্চল এ অঞ্চলের অন্তর্গত। এ অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। উদ্ভিদের ধরনের উপর ভিত্তিকরে এ এলাকার উদ্ভিদসম হকে চারভাগে ভাগ করা হয়েছে— চিরহরিৎ, পাতাঝরা, বাঁশ ঝাড় ও তৃণ ভূমি। চিরহরিৎ উদ্ভিদের মধ্যে গর্জন, বৈলাম, মেহগিনি, শিরিষ, জারুল,অর্জুন, বট, অশোক, ইত্যাদির বিভিন্ন প্রজাতি বর্তমান। এ ছাড়া বিভিন্ন আরোহী উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে ফার্ণ, মস, অর্কিড, ইত্যাদি।

পাতাঝরা বৃক্ষের মধ্যে রয়েছে সেগুন, চালতা ও গামারি। বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশও এখানে প্রচুর জন্মে। ফাঁকা জায়গায় যেখানে বৃক্ষের সংখ্যা কম সেখানে প্রচুর ঘাস জন্মে। পাহাড়ের ঢালে চা, আনারস ও কলার চাষ করা হয়। পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে জঙ্গল পরিষ্কার করে উপজাতীয় লোকেরা এখানে ঝুম পদ্ধতিতে জমি চাষ করে। চট্টগ্রামের দক্ষিনাঞ্চলে রাবারের চাষ হয়। বিভিন্ন প্রজাতির বন্য জীবজন্তু এ বনাঞ্চলে বাস করে। এদের মধ্যে বন্যহাতী, শুকর, চিতাবাঘ, গয়াল, বনগরু, বনরুই, সজারু, বানর, হনুমান, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ বিশেষ করে অজগর সাপ প্রধান। ফসল পাকার সময় হাতী, শুকর, বানর, টিয়াপাখি পাহাড়ী জঙ্গল থেকে নেমে এসে ফসলের ক্ষতি করে থাকে।

 

পাতাঝরা বনাঞ্চল

পাতাঝরা বনাঞ্চলের বৃক্ষরাজির মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগই শালগাছ। সমুদ্রের উপকলবর্তী লবণাক্ত মাটি জোয়ার ভাটার কারণে সব সময়ই ভিজা থাকে এবং এখানে যে বিশেষ ধরনের বনাঞ্চল গড়ে উঠেছে তাই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল নামে পরিচিত।


এ বনাঞ্চল দেশের মধ্যবতীর্ ও উত্তরাঞ্চলে অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টিপাত এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো অবস্থায় আছে। ভাওয়ালের গড়, মধুপুরের গড়, গাড়ো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বনাঞ্চল, শেরপুরের রাংটিয়া বনাঞ্চল, বরেন্দ্র বনাঞ্চল এবং কুমিল্লার শাল বিহার এ অঞ্চলের অন্তর্গত। এসব বনাঞ্চলের বৃক্ষরাজির মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগই শালগাছ। এসব বনাঞ্চলে বৃষ্টিপাত অপেক্ষাকৃত বেশি।

বিভিন্ন প্রকার জীবজন্তু ও পশুপাখির সমন্বয়ে এসব শালবন গঠিত। শীতকালে এসব বনাঞ্চলে গাছের পাতা ঝরে যায় এবং বসš কালে নতুন পাতা গজাতে শুরু করে। বন্য প্রাণীর মধ্যে বানর, খরগোশ, শিয়াল, বনবিড়াল, খাটাস, বেজি, কাঁঠবিড়ালী, শুকর, বাদুর, গুইসাপ, আঞ্জিনা, দাড়াশ সাপ, গোখরা সাপ, ইত্যাদি দেখা যায়। জঙ্গলের মাঝখানে বাইদে বর্ষাকালে কই, শিং, মাগুর, পঁুটি, লাটা, ডানকানা, টেংরা, বাইম, রাঙা, গুতুম ইত্যাদি মাছ পাওয়া যায়।

 

ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল

সমুদ্রের উপকলবর্তী লবণাক্ত মাটি জোয়ার ভাটার কারণে সব সময়ই ভিজা থাকে এবং এখানে যে বিশেষ ধরনের বনাঞ্চল গড়ে উঠেছে তাই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল নামে পরিচিত। বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলের ২০০০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। এর মধ্যে ৩৫ বর্গমাইল পটুয়াখালী জেলার দক্ষিন—পশ্চিমাঞ্চল ও বাকি অংশ খুলনা জেলার দক্ষিন অঞ্চল নিয়ে গঠিত এবং পূর্বে বালেশ্বর, পশ্চিমে রায় মঙ্গল নদী ও দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত। এখানকার জলবায়ু আর্দ্র এবং সর্বদা পানি পায় বলে এ অঞ্চলের গাছপালা চিরহরিৎ।

এ অঞ্চলের বনাঞ্চল সুন্দরবন নামে পরিচিত। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে কম লবনাক্ত এলাকায় সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়া, গোল—পাতা, হারগোজা, ইত্যাদি বৃক্ষ জন্মে। বেশি লবণাক্ত এলাকায় গেওয়া, গোরান ও ভেনা গাছ ভাল জন্মে।
পৃথিবীর বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুন্দর বনে বাস করে। শীতকালে বাঘ পানি খাবার জন্য নদীর তীর ধরে নিচে নেমে আসে। মধু ও গোলপাতা সংগ্রহের সময় যারা এসময় সুন্দর বনে যায় প্রায়ই তারা বাঘ দ্বারা আক্রান্ত হয়। বানর, হনুমান, চিতাবাঘ, বনগরু, গয়াল, হরিন, শুকর এবং নদীতে কুমির, কচ্ছপ, ইত্যাদি বসবাসের জন্য এখানকার জলবায়ু অত্যন্ত চমৎকার। তাছাড়া সমুদ্র অঞ্চলে তিমি ও সুন্দরবনের অরন্যে ময়ূর বাস করে।

আমাদের দেশে দু’ধরনের পাখি দেখা যায়। কিছু কিছু পাখি এদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে মিশে স্থায়ীভাবে বাস করে আবার কিছু পাখি কিছুদিনের জন্য অতিথি হয়ে এদেশে আসে। সাধারণতঃ শীতের প্রারম্ভে এদেশের বড় বড় জলাশয়ে এদের আগমন ন্তু হয় এবং শীত শেষে বষার্র প্রারম্ভে এরা ফিরে যায়। আমাদের দেশের পাখিরা হলো কবুতর, হারকলা, ঘুঘু, টিয়া, ময়না, কোকিল, বউ কথা কও, চাতক, বিভিন্ন প্রজাতির বক, হারগিলা, মাছরাঙ্গা, জল কবুতর, বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস, কোরা, ডাহুক, চিল, শকুন, গাংচিল, বনেশ, মাছমরাল, পেঁচা, কাঠ ঠুকরা, বুলবুলি, চড়ূই, কাক, সাতভাই, বাবুই, টুনটুনি, শ্যামা, দোয়েল, ফিঙ্গে ইত্যাদি।

এদের কোনটা বাড়ীতে, কোনটা বাড়ীর আশে—পাশের বাগানে, কোনটা বড় গাছের ডালে কোনটা জঙ্গলে বাস করে। মৌসুম ও আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে এদের চলাফেরা এবং আচার আচরণেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

জলবায়ু ও আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে এদেশের বিভিন্ন স্থানে যেমন বিভিন্ন গাছ পালা জন্মে তেমনি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন জীবজন্তু ও পশু—পাখির বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। জীব জন্তু যে অঞ্চলে নিরাপদ আশ্রয় ও বসবাসের পরিবেশ ভাল পায় সেখানেই তারা দলবদ্ধভাবে বাস করে। শীতকালে বিভিন্ন জীবজন্তু ও পাখিরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে কিন্তু বর্ষাকালে যখন চারিদিকে পানি উঠে তখন তারা বাড়ির আশে—পাশ উঁচু জায়গায় চলে আসে। অনেক প্রজাতির জীবজন্তু বর্ষাকালে স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করে অথচ শীতকালে তাদের তেমন দেখা যায় না।

 

 

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান – কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ বিষয়ের একটি পাঠ। এই পাঠটি ১ নং ইউনিটের ১.২ নং পাঠ।

 

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান

 

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশ বিষুব রেখার ২০.৩৪ ডিগ্রি থেকে ২৬.৩৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.০১ ডিগ্রি থেকে ৯২.৪১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় অবস্থিত দক্ষিণ—পূর্ব এশিয়ার একটি ছোট্ট দেশ। এর আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার (বি. বি. এস. ১৯৯৪)। বাংলাদেশের কিছু এলাকা অবনিরক্ষীয় এবং কিছু এলাকা নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থিত। বাংলাদেশের উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা ও মায়ানমার, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনির হাট, গাইবান্ধা, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুর হাট জেলাসমহ অবনিরক্ষীয় ূ অঞ্চলের অন্তর্গত।


অন্যদিকে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম, ক*বাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি জেলাসমূহ নিরক্ষীয় অঞ্চলের অন্তভুর্ক্ত। বাংলাদেশের উপকূল রেখার বর্তমান দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৪৩ কিলোমিটার। এই উপকূল ক*বাজারের দক্ষিন হ’তে রায়মঙ্গল নদীর মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশের উপকূলভাগে হাতিয়া, সন্দীপ, ভোলা, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সেন্টমার্টিন প্রভৃতি দ্বীপ রয়েছে।
আবহাওয়া ও জলবায়ু

কোন নির্দিষ্ট সময়ে কোন নির্দিষ্ট স্থানের বায়ু মন্ডলে যে অবস্থা বিরাজ করে ঐ অবস্থাকে সেই স্থানের উক্ত সময়ের আবহাওয়া বলে। তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, সূর্যালোক, আর্দ্রতা, বায়ুর গতি, কূয়াশা, তুষারপাত প্রভৃতি হলো আবহাওয়ার উপাদান। বায়ুমন্ডলের অবস্থা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয় এবং ফলে আবহাওয়াও প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হয়ে। কোন স্থানের বা অঞ্চলের অন্ততঃ ২৫ বৎসরের

আবহাওয়ার গড়কে ঐ স্থানের বা অঞ্চলের জলবায়ু বলে। কোন সময়ই যে জলবায়ুর উলে­খযোগ্য পরিবর্তন হয়না তাকে সমভাবাপন্ন জলবায়ু বলে। কোন স্থানে বছরের অধিকাংশ সময় বৃষ্টিপাতযুক্ত হলে ঐ স্থানের জলবায়ু আর্দ্র হয়। অত্যাধিক ঠান্ডাও নয় আবার অত্যধিক উষ্ণও নয় এরূপ জলবায়ুকে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু বলে। যে স্থানে গ্রীষ্ম কালে অত্যাধিক গরম ও শীতকালে অত্যাধিক শীত, এরূপ স্থানের জলবায়ুকে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু বলে। সমুদ্র উপকুলবর্তী স্থানগুলোর জলবায়ু মৃদুভাবাপন্ন। এতে শীত ও গ্রীষ্মের তারতম্য কম থাকে।

 

তাপমাত্রা:

তাপের আদি উৎস হলো সূর্য। সূর্য থেকে বিকিরণের মাধ্যমে তাপ বায়ুমন্ডল ভেদ করে আসার পথে নানাভাবে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় এ তাপ বহুলাংশে কমে যায়। সূর্য হ’তে বিকিরিত যে তাপ পৃথিবীতে আসে তাকে সৌরতাপ বলে যা বিভিন্নভাবে বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করে। সৌরতাপ পৃথিবীর স্থল ও জলভাগে পতিত হওয়ায় ভূ—পৃষ্ট উত্তপ্ত হয়। পরে ভূ—ত্বক এ তাপ বিকিরন করায় বায়ুমন্ডল পূনরায় উত্তপ্ত হয়। বাংলাদেশের তাপমাত্রা মোটামুটি উষ্ণ। দেশের অধিকাংশ অঞ্চল সমতল ভূমি (৮৭%) হওয়ায় এবং দক্ষিনে সমুদ্র, উত্তরে হিমালয় পর্বত থাকায় এদেশে তত শীত বা গরম অনুভূত হয় না। তবে খরিপ মৌসুমে রবি মৌসুম অপেক্ষা তাপমাত্রা বেশি। খরিপ মৌসুমে তাপমাত্রা সাধারণতঃ ২৪ক্ক সেলসিয়াস হ’তে ৩৫ক্ক সেলসিয়াস এর মধ্যে থাকে।

তবে কোন কোন সময় এ তাপমাত্রা ৪৩ক্ক সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে থাকে। তাপমাত্রা দেশের দক্ষিনাঞ্চল হ’তে উত্তরাঞ্চলে ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। শীতকালে তাপমাত্রা ৭ক্ক সেলসিয়াস থেকে ২৭ক্ক সেলসিয়াস পর্যন্ত দেখা যায়। দক্ষিনের সমুদ্র উপকূল থেকে এ তাপমাত্রা উত্তর দিকে ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। এ সময় দেশের উত্তরাঞ্চলের কোন কোন জেলায় তাপমাত্রা ৪ক্ক সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে আসে। দেশের উত্তরাঞ্চলে খরিপ মৌসুমে তাপমাত্রা বেশি হয় আবার রবি মৌসুমে এখানে তাপমাত্রা অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কম থাকে। এ অঞ্চলে কম তাপমাত্রা বেশি দিন থাকে বলে কিছু কিছু ফসল যেমন: গম এখানে ভাল জন্মে।

 

তাপমাত্রার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে নিম্নলিখিত তিনটি  অঞ্চলে ভাগ করা যায়:

 

উত্তর অঞ্চল:

খরিপ মৌসুমে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয় বৃহত্তর রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায়। ১৯৯২ সনে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ৪৩ক্ক সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। মধ্যম অঞ্চল বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলা সমূহে মধ্যম তাপমাত্রা বিরাজমান থাকে। খরিপ মৌসুমে এখানে সর্বোচ্চ ৩৮—৩৯ক্ক সেলসিয়াস তাপমাত্রা হয়ে থাকে।

 

দক্ষিণ—পূর্বাঞ্চল:

বৃহত্তর বরিশাল, কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলাসমূহে খরিপ মৌসুমে অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়। এসময় এসব অঞ্চলে ৩৪— ৩৫ক্ক সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজমান থাকে। বৃষ্টিপাত বারিমন্ডল থেকে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত প্রচুর পরিমানে জলীয় বাষ্প বায়ুতে ভেসে বেড়ায়। বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা তাপমাত্রার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কোন কারণে বায়ুমন্ডলের

তাপমাত্রা ১০ক্ক সেলসিয়াস এর নিচে নেমে এলে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় ভূ—পৃষ্ঠে নেমে আসে যা বৃষ্টিপাত নামে পরিচিত। খরিপ মৌসুমে বাংলাদেশে দক্ষিন—পশ্চিম দিক থেকে মৌসুমি বায়ু বঙ্গপোসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় ফলে এই মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। রবি মৌসুমে বায়ু উত্তর—পূর্ব দিকে অবস্থিত পর্বত অঞ্চল হ’তে প্রবাহিত হয় বলে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। বাংলাদেশের মোট বৃষ্টিপাতের পাঁচ ভাগের চারভাগই হয় বর্ষাকালে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় জুনজুলাই মাসে। তবে এই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দেশের পূর্বদিক হ’তে পশ্চিম দিকে ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে।

১৯৯২ সনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চট্টগ্রাম ও সিলেটে যথাক্রমে ২২৪১ এবং ৩৫০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত ঘটে যা অন্যান্য জেলার তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি। সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয় রাজশাহী জেলায় যা মাত্র ৮৪৯ মিলিমিটার। সিলেট জেলার লালখালে বৎসরে দেশের সবার্পেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাত হয় (৬৪৯৬ মিমি.) এবং সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয় রাজশাহী জেলার লালপুরে (১১৯৯ মিমি.)। দেশের বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাত ২২২ মিমি কিন্তু নভেম্বর হ’তে মার্চ মাস পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয় মাত্র ৩০ মিলিমিটার। দেশে বৃষ্টিপাত প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া সত্ত্বেও সময়মত ও পরিমাণ মত না হওয়ায় প্রত্যেক বৎসরেই জমিতে প্রয়োজনীয় রসের অভাবে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয় এবং রবি মৌসুমে সেচ ছাড়া সাফল্যজনকভাবে কোন ফসল করা সম্ভব হয়না।

বৃষ্টিাপাতের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশকে নিম্নলিখিত তিনভাগে ভাগ করা যায় —

* কম বৃষ্টিপাত অঞ্চল — বৃহত্তর রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চল।

* মাঝারী বৃষ্টিপাত অঞ্চল — বৃহত্তর ঢাকা ও খুলনা অঞ্চল।

* বেশি বৃষ্টিপাত অঞ্চল — বৃহত্তর সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চল। আপেক্ষিক আর্দ্রতা

কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় ও চাপে কোন নিদ্দির্ষ্ট আয়তনের বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প আছে এবং একই উষ্ণতায় ও চাপে ঐ পরিমাণ বায়ুকে সম্পৃক্ত করতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্পের প্রয়োজন হয় —এ দু’য়ের
অনুপাতকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে।

বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিকে আর্দ্রতা বলে। কোন স্থানের আর্দ্রতা সেই স্থানের বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় ও চাপে কোন নিদ্দির্ষ্ট আয়তনের বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প আছে এবং একই উষ্ণতায় ও চাপে ঐ পরিমাণ বায়ুকে সম্পৃক্ত করতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্পের প্রয়োজন হয় —এ দু’য়ের অনুপাতকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে। আপেক্ষিক আর্দ্রতাকে শতকরা (%) হারে প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশে বর্ষাকালে আর্দ্রতা শীতকাল অপেক্ষা বেশি। কারণ এ সময় তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত এবং নদী—নালা পানিতে ভরাট থাকায় বায়ুমন্ডলের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়।

উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার জন্য এ দেশ পাট উৎপাদনের জন্য বেশি উপযোগী। বাংলাদেশের বায়ুমন্ডলে সাধারণতঃ শতকরা ৭০—৮০ ভাগ আপেক্ষিক আর্দ্রতা দেখা যায়। এই আর্দ্রতা দিনের প্রারম্ভে বেশি থাকে। সূর্যের আলো সূর্যের আলো না থাকলে পৃথিবী এমন সবুজ সুন্দর থাকত না। সূর্যের আলোক শক্তিকে ব্যবহার করে সবুজ উদ্ভিদ খাদ্য তৈরী করে যার উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষসহ সকল প্রাণী নির্ভরশীল। সব গাছের জন্য সূর্যের প্রত্যক্ষ আলো বাঞ্ছনীয় নয়। চা, পান ইত্যাদি গাছের জন্য ঈষৎ ছায়ার ব্যবস্থা থাকা ভাল। সরাসরি সূর্যের আলো এসব গাছের পাতা ঝলসিয়ে দেয়।

এজন্য চা বা পানের জমিতে যথাক্রমে শিম^ জাতীয় গাছ ও পাটশোলা কিংবা খড়কুটা দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়। আবার কোন কোন ফসল যেমন: হলূদ ছায়াযুক্ত স্থানে ভাল জন্মে। দিনের দৈর্ঘ্য যে সমস্ত উদ্ভিদ একটি নির্দিষ্টি দিন দৈর্ঘ্য বা তার আগে শীষ, ফুল, ফল বা বীজ উৎপন্ন করে তাদেরকে ছোট উদ্ভিদ বলে।

দিনের দৈর্ঘ্যের উপর আলো ও তাপমাত্রার পরিমাণ নির্ভর করে। শীতকালে ক্ষুদ্রতম দিন ১০ ঘন্টা এবং বর্ষাকলে বৃহত্তম দিন প্রায় ১৪ ঘন্টা হয়ে থাকে। দিন বড় হলে আলোর পরিমাণ বেশি হয় যদি আকাশে মেঘ না থাকে এবং কম হলে আলোর পরিমাণ কমে যায়। বড় দিন বা আলো অনেক উদ্ভিদের ফুল ও বীজ উৎপাদন ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে থাকে। উদ্ভিদ জীবনের উপর এ বিশেষ প্রক্রিয়া তথা যৌন বংশ বৃদ্ধির উপর আলোর এরূপ প্রভাব বিস্তারকে ফটোপিরিয়ডিজম বলে। গাছের জন্ম এবং বৃদ্ধির উপর দিনের দৈর্ঘে্যর সরাসরি প্রভাব রয়েছে।

কিছু কিছু গাছপালা আলোক সংবেদনশীল আবার কোন কোন গাছপালা আলোক সংবেদনশীল নয়। আলোক সংবেদনশীল গাছ ফটো পিরিয়ড কতৃর্ক প্রভাবান্বিত হয়। কিন্তু যে সকল গাছ আলোক সংবেদনশীল নয় তারা ফটো পিরিয়ড কতৃর্ক প্রভাবান্বিত হয় না। ফটো পিরিয়ডের উপর ভিত্তি করে আলোক সংবেদনশীল গাছকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়, যথা — ১। ছোট দিন উদ্ভিদ এবং ২। বড় দিন উদ্ভিদ ।

 

ফটো পিরিয়ডের উপর ভিত্তি করে আলোক সংবেদনশীল গাছ:

ছোট দিন উদ্ভিদ

যে সমস্ত উদ্ভিদ একটি নির্দিষ্টি দিন দৈর্ঘ্য বা তার আগে শীষ, ফুল, ফল বা বীজ উৎপন্ন করে তাদেরকে ছোট দিন উদ্ভিদ বলে। এই দিন দৈর্ঘ্য বিভিন্ন ফসল বা গাছের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হ’তে পারে
এবং একে ক্রিটিক্যাল দিন দৈর্ঘ্য (ঈৎরঃরপধষ ফধু ষবহমঃয) বলে। ছোট দিন উদ্ভিদ ক্রিটিক্যাল দিন
দৈর্ঘ্য বা ফটো পিরিয়ডের পরে ফুল ফল দেয় না। যেমন — পাট, সয়াবীন, ইত্যাদি।

যে সমস্ত উদ্ভিদ কেবল মাত্র কোন নির্দিষ্ট দিন দৈর্ঘে্যর পরেই ফুল, ফল দেয় তাদেরকে বড় দিন উদ্ভিদ বলে।

 

বড় দিন উদ্ভিদ

যে সমস্ত উদ্ভিদ কেবল মাত্র কোন নির্দিষ্ট দিন দৈর্ঘে্যর পরেই ফুল, ফল দেয় তাদেরকে বড় দিন উদ্ভিদ বলে। নির্দিষ্ট ফটো পিরিয়ডের পূর্বে এসকল উদ্ভিদ কোন ক্রমেই ফুল, ফল দেয় না। দিন নিরপেক্ষ উদ্ভিদকোন কোন উদ্ভিদ দিন নিরপেক্ষ। দিন নিরপেক্ষ উদ্ভিদের ফুল, ফল উৎপাদনে ফটো পিরিয়ডের কোন প্রভাব নেই। বড় দিন উদ্ভিদের ফুল, ফল গ্রীষ্মকালে এবং ছোট দিন উদ্ভিদের ফুল ফল শীত ও বসন্তকালে আসে। বাংলাদেশের বিভিন্ন মাসের দিনের দৈর্ঘ্য নিম্নে দেয়া হলো।

বায়ু প্রবাহ বায়ু মন্ডলের তাপমাত্রার পার্থক্যের ফলে সৃষ্ট বায়ুমন্ডলীয় চাপের পার্থক্যের কারণে প্রায় প্রতি মুহূর্তে বায়ু একস্থান হ’তে অন্যস্থানে স্থানান্তরিত হচ্ছে। বায়ুর এই স্থানান্তরকে বায়ু প্রবাহ বলে। বাংলাদেশে প্রধানতঃ দু‘ধরনের বায়ু প্রবাহ দেখা যায়। যথা ঃ ১। সাময়িক (ঝবধংড়হধষ) এবং ২। অনিয়মিত বায়ু প্রবাহ। সাময়িক বায়ু প্রবাহের মধ্যে এদেশে স্থল বায়ু, সমুদ্র বায়ু এবং মৌসুমি বায়ু উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে অনিয়মিত বায়ু প্রবাহের মধ্যে সাইক্লোন বা ঘুর্ণিঝড়, কালবৈশাখী এবং টর্নেডোর নাম করা যেতে পারে।

শীতকালে মৌসুমি বায়ু উত্তর পূর্ব—দিক হ’তে প্রবাহিত হয় এবং এ বায়ুর গতিবেগ কম এবং কোনরূপ জলীয় বাষ্প থাকেনা ফলে এ বায়ু প্রবাহের ফলে কোন বৃষ্টিপাতও হয় না। মার্চ—এপ্রিল মাসে এদেশে কালবৈশাখী আঘাত হানে এবং জানমালের বেশ ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়। জুন—সেপ্টেম্বর মাসে দক্ষিণ—পশ্চিম দিক হ’তে মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। এ বায়ু সমুদ্র হ’তে প্রচুর জলীয় বাষ্প বয়ে আনে এবং এসময় দেশে প্রচুর বৃষ্টি হয়। অক্টোবর—নভেম্বর মাসে সমুদ্র উপকূলবতীর্ অঞ্চলে সাধারনতঃ সাইক্লোন ও জলোচ্ছাস হয়ে থাকে। বঙ্গোপসাগরের তীরে শেষরাতে ও ভোরের দিকে স্থলভাগ হ’তে স্থলবায়ু সমুদ্রের দিকে এবং অপরাহ্নে সমুদ্র থেকে সুমুদ্র বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়।

কৃষি মৌসুম বাংলা বছরে ২ মাসে এক ঋতু হয়। এগুলো হচ্ছে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। কিন্তু কোন ফসলই দুই মাসে তার জীবন চক্র সম্পন্ন করতে পারেনা। তাই কৃষি কাজের সুবিধার্থে সমস্ত বছরকে প্রধানতঃ দুটি কৃষি মৌসুমে ভাগ করা হয়েছে —

* রবি মৌসুম
* খরিপ মৌসুম ।

রবি মৌসুম

নভেম্বর মাসে রবি মৌসুম শুরু হয় এবং শেষ হয় ফেব্রুয়ারী মাসে। যে সকল ফসলের জীবনকাল সম্পূর্ণ বা অধিকাংশ সময় এ মৌসুমে অতিবাহিত করে সেগুলোকে রবিশস্য বলে। যেমন— তামাক, গোল আলু, গম, মসুর, খেসারী, ছোলা ইত্যাদি।

 

খরিপ মৌসুম

খরিপ মৌসুম শুরু হয় মার্চ মাসে এবং শেষ হয় অক্টোবর মাসে। যে সকল ফসলের জীবন চক্রের সম্পূর্ণ বা অধিকাংশ সময় এই মৌসুমে অতিবাহিত হয় সেগুলোকে খরিপ শস্য বলে। যেমন— আউশ ধান, পাট এবং বিভিন্ন গ্রীষ্মকালীন শাক—সব্জি। খরিপ মৌসুমকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা ঃ—

খরিপ—১ একে প্রাক খরিপ মৌসুমও বলা হয়। খরিপ—১ মার্চ মাসে শুরু হয়ে জুন মাসে শেষ হয়।

খরিপ—২ জুলাই মাসে শুরু হয় এবং অক্টোবর মাসে শেষ হয়। রবি মৌসুমে তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত এবং আর্দ্রতা কম থাকে। দিন ছোট হয় এবং রাত বড় থাকে। এসময় মৌসুমি বায়ু উত্তর—পূর্ব দিক হ’তে প্রবাহিত হয় বলে দেশে বৃষ্টিপাত কম হয়। রবি ফসলের মধ্যে উলে­খযোগ্য হলো রবি সব্জি যেমন— আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, লাউ, গম, সরিষা, তিষি, চীনাবাদাম ও ডাল জাতীয় ফসল।

খরিপ মৌসুমে তাপমাত্রা , বৃষ্টিপাত এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে। দিন বড় ও রাত ছোট হয়। দক্ষিন—পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহের ফলে এসময় দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। খরিপ ফসলের মধ্যে রয়েছে ঢঁ্যাড়স, পুইশাক, আউশ ধান, ইত্যাদি। এখানে উল্লেখ করা যেতে পরে যে, কেবল একবষীর্ ফসল সম হকেই রবি এবং খরিপ ফসল অনুযায়ী ভাগ করা সম্ভব।

 

 

কৃষির ধারণা ও গুরুত্ব এবং বাংলাদেশের ভূমির প্রকৃতি

কৃষির ধারণা ও গুরুত্ব এবং বাংলাদেশের ভূমির প্রকৃতি – কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ বিষয়ের একটি পাঠ। এই পাঠটি ১ নং ইউনিটের ১.১ নং পাঠ।কৃষিকে ইংরেজীতে “Agriculture” এবং ল্যাটিনে “Agricultura” বলে। দু’টি ল্যাটিন শব্দ ‘Ager’ এবং cultura’ এর সমন্বয়ে “Agriculture” বা কৃষি গঠিত। ‘Ager’ অর্থ জমি এবং ‘cultura’ অর্থ চাষ করা। তাই শাব্দিক অর্থে কৃষি হলো জমি চাষ করে ফসল দু’টি ল্যাটিন শব্দ ‘Ager’ এবং cultura’ এর সমন্বয়ে “Agriculture” বা কৃষি গঠিত । ‘Ager’ অর্থ জমি এবং ‘Cultura’ অর্থ চাষ করা। তাই শাব্দিক অর্থে কৃষি হ’লো জমি চাষ করে ফসল উৎপাদন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে কৃষি সম্বন্ধে মানুষের সীমিত ধারণারও বিস্তৃতি ঘটেছে।

কৃষির ধারণা ও গুরুত্ব এবং বাংলাদেশের ভূমির প্রকৃতি

 

 

বর্তমানে কৃষি বলতে ভূমি কর্ষণ তথা জমি প্রস্তুতকরণ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার শস্য, ফল—মূল, গাছ—পালা, শাক—সব্জি ও ফুল, পশু ও পশুজাত দ্রব্য এবং মৎস্য উৎপাদনকে বুঝানো হয়। শুধু কৃষিতত্বই (Agronomy) কৃষি বিজ্ঞান নয়। যে সকল বিদ্যার ব্যবহার দ্বারা উৎপাদন কায্যর্ সম্পন্ন হয়ে থাকে সে সবগুলোই কৃষি বিজ্ঞানের অন্তভূর্ক্ত। আর সেগুলো হচ্ছে শস্য উৎপাদন (Crop production), পশুপালন (Animal Husbandry), পশু চিকিৎসা (Veterinary science), কৃষি প্রকৌশল (Agricultural engineering), কৃষি অর্থনীতি (Agricultural economics) এবং তৎসংশি­ষ্ট বিষয়াদি। এক কথায় মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, ঔষধ এবং সার্বিক মঙ্গলার্থে প্রয়োজনীয় মৌলিক উপাদান গুলো উৎপাদনে প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক জ্ঞানই কৃষি বিজ্ঞান।

কৃষি মানুষের মৌলিক চাহিদাবলী যথা খাদ্য, বস্ত্র , আশ্রয়ের মৌলিক উপাদান গুলোর যোগান দেয়। কৃষি মানুষের মৌলিক চাহিদাবলী যথা খাদ্য, বস্ত্র , আশ্রয়ের মৌলিক উপাদানগুলোর যোগান দেয়। কৃষির উন্নয়নের সাথে সাথে দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটে। কৃষি বাংলাদেশের জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধির মেরুদন্ড। “জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধি হলো গাছের ন্যায়। কৃষি হলো তার মূল, শিল্প তার শাখা এবং বাণিজ্য তার পাতা। মূলে ক্ষত দেখা দিলে তা সমস্ত গাছটিকে ধ্বংস করে দেয়”Ñ চীনা এ প্রবাদটি কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রযোজ্য । বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি সুষ্ঠু কৃষি উন্নয়নের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। মানুষের অস্তিত্বের সাথে জড়িত

কৃষির গুরুত্বপূর্ণ অবদানগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

  • মানুষের বেঁচে থাকার প্রধান উপকরণ হলো খাদ্যÑ যা কৃষি থেকে আসে।
  • কৃষি শিল্পের কাঁচামালের প্রধান উৎস ।
  • কৃষি দেশের রাজস্বের প্রধান উৎস।
  • কৃষি মানুষের জীবিকার উৎস ।
  • কৃষি পণ্য আমদানি রপ্তানির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে ।
  • কৃষি জ্বালানির উৎস।
  • বাসস্থান ও আসবাবপত্র তৈরিতে কৃষির অবদান অনস্বীকার্য।

জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কৃষির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। মানুষকে বেেঁচ থাকার জন্য কৃষি পণ্যের উপর একান্তভাবে নির্ভরশীল হ’তে হয়। অতএব কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম।

 

 

বাংলাদেশের ভূমির প্রকৃতি:

সাধারণভাবে বাংলাদেশের প্রায় ৮৭ ভাগ সমতলভূমি তবে ভূতলের সমতা একইরূপ নয়। ভূতলের সমতার ভিত্তিতে সমগ্র বাংলাদেশকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো :

১। উঁচু ভূমি

উঁচু ভূমি অঞ্চলের মৃত্তিকা প্রাচীন পলল দ্বারা গঠিত হওয়ায় একে “প্রাচীন পলল ভূমি” নামেও অভিহিত করা হয়। এখানকার মাটি লাল বর্ণের ও কঙ্কর যুক্ত। এরূপ জমিতে বর্ষার পানি জমে না। আইল দিয়ে পানি আটকিয়ে ফসল উৎপন্ন করা হয়। মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় অঞ্চল, রাজশাহী, দিনাজপুর ও রংপুরের অন্তর্গত বরেন্দ্র অঞ্চল, কুমিল্লার লালমাই অঞ্চল এবং সিলেটের টিলা অঞ্চল নিয়ে উঁচু ভূমি গঠিত। এ অঞ্চলের মৃত্তিকা প্রাচীন পলল দ্বারা গঠিত হওয়ায় একে “প্রাচীন পলল ভূমি” নামেও অভিহিত করা হয়। এখানকার মাটি লাল বর্ণের ও কঙ্কর যুক্ত। এখানে সাধারনত গজারি, শাল, চা, নানা রকম ফল, রোপা আমন ধান, বিভিন্ন শাক—সব্জি ভাল জন্মে। উঁচু ভূমির মোট আয়তন ২৩,৩০০ বর্গ কিলোমিটার।

২। মধ্যম ভূমি

এই অঞ্চলে জমির পানি আইল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, ময়মনসিংহের কিছু অংশ, ঢাকার উত্তরাংশ, বরিশাল, ও সিলেটের কিছু অংশ, কুমিল­া, নোয়াখালি ও চট্টগ্রামের পূবার্ঞ্চল নিয়ে মধ্যম ভুমি গঠিত। আউশ ধান, আমন ধান ও পাট এ অঞ্চলের প্রধান ফসল। এর মোট আয়তন ৬২,১৩৩ বর্গ কিলোমিটার।

৩। নিচু ভূমি

এ অঞ্চলে বর্ষাকালে সাধারণতঃ ৩—৪ ফুট পানি হয় এবং কোন কোন সময় পানির উচ্চতা দাঁড়ায় ১০১২ ফুট। পাবনা ও ফরিদপুর জেলার অধিকাংশ অঞ্চল, ঢাকা জেলার দক্ষিনাংশ, কুমিল্লা ও নোয়াখালি জেলাদ্বয়ের পশ্চিমাংশ, বগুড়া, খুলনা ও সিলেটের কিছু অংশ নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। ছিটিয়ে বোনা আমন, আউশ, পাট ও রবিশস্য এ অঞ্চলের প্রধান ফসল। এর মোট আয়তন ৩৪,৯৫০ বর্গ কিলোমিটার।

৪। অত্যন্ত নিচু জমি

দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত বিল, হাওর ও নদী নালার তীরবর্তী এলাকাসমূহ নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। বর্ষাকলে এ অঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত থাকে এবং বিরাট হ্রদের মত দেখায়। বর্ষাকালে এসমস্ত এলাকায় পানির গভীরতা ৩০ ফুট পর্যন্ত হ’তে পারে কিন্তু শীতকালে মধ্যস্থান ব্যাতিত অন্যস্থান শুকিয়ে যায়। রবি মৌসুমে সেচের সাহায্যে এখানে বোরো ধান করা যায়। এ অঞ্চলের আয়তন ৪,১৪২ বর্গ কিলোমিটার।

৫। পাহাড়ি অঞ্চল

পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম জেলার কিয়দংশ, কুমিল্লা জেলার লালমাই অঞ্চল, সিলেট জেলার দক্ষিণপূর্বাংশ, নোয়াখালি জেলার উত্তর পূবার্ংশ এবং ময়মনসিংহ জেলার উত্তর—পূর্বাংশ নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। অনেকগুলো ছোট বড় পাহাড়, টিলা এবং এদের পাদভূমি নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগামের পাহাড়িয়া অঞ্চলই বাংলাদেশের একমাত্র বিস্তীর্ণ পাহাড়ী এলাকা। এখানকার পাহাড়ের সর্বোচ্চ চুড়া কিয়োক্রাডাং এর উচ্চতা ১,২৩২ মিটার। প্রায় সমস্ত অঞ্চলই বন জঙ্গলে আবৃত। এখানে আনারস, কাঁঠাল ভাল হয়। আয়তন ১৮,১২২ বর্গ কিলোমিটার।

 

 

 

আচার ও জেলী তৈরির কৌশল

আচার ও জেলী তৈরির কৌশল – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি ইউনিট ৯ এর ৯.৪ নং পাঠ।

ফল ও সবজি প্রক্রিয়াাজাত করে বিভিন্ন খাবার তৈরি করা যায় এবং সেগুলো অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়। এসব খাবার সুস্বাদু ও স্বাস্থসম্মত। এইসব খাবার তৈরি করতে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। নিচে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরির কৌশল উল্লেখ করা হল:

আচার ও জেলী তৈরির কৌশল

 

আচার তৈরির কৌশল:

আচার তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ:

 

আচার প্রস্তুত প্রণালী :

১। কাঁচা আম পরিষ্কার পানিতে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

২। আমগুলো খোসাসহ লম্বা করে কেটে আটি বাদ দিয়ে দিতে হবে।

৩। আমের টুকরাগুলোতে লবণ ও সামান্য হলুদ মিশিয়ে ১—২ দিন রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।

৪। শুকনা মরিচ, রসুন কিছু পরিমাণ সিরকা দিয়ে পেষ্ট করে নিতে হবে।

৫। কড়াইতে তেল দিয়ে তাতে পাঁচ ফোড়ন দিয়ে একটু ভেজে নিতে হবে।

৬। এরপর কড়াইতে রসুন ও মরিচের পেষ্ট দিয়ে একটু কমিয়ে নিতে হবে।

৭। তারপর একে এক আমের টুকরা, চিনি, লবণ, জিরার গুড়া এবং সিরকা দিয়ে ভালভাবে নেড়ে সব উপকরণ আমের সাথে মিশাতে হবে।

৮। কিছুক্ষণ জাল দেওয়ার পর মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে জাল বন্ধ করতে হবে।

৯। আচারগুলো বায়ুরোধী জীবাণুমুক্ত কাঁচের বোতলে ভরে বোতলের মুখ লাগিয়ে দিতে হবে।

১০। আচারের বোতলগুলো শুকনো এবং পরিষ্কার জায়গায় রাখতে হবে।

আচার তৈরির প্রণালী :

১। প্রথমে জলপইগুলো বেঁাটা ছিঁড়ে পরিষ্কার পানিতে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

২। এখন একটি হাড়িতে জলপাইগুলো নিয়ে পানি দিয়ে সেগুলো সেদ্ধ করে নিতে হবে। সেদ্ধ করার সময় তাতে একটু লবণ দিতে হবে।

৩। সেদ্ধ হলে জলপাইগুলো থেকে খুব ভালভাবে পানি ঝড়িয়ে নিতে হবে।

৪। জলপাইগুলো একটু ঠান্ডা হলে এগুলোকে কিছুটা ভেঙ্গে নিতে হবে।

৫। একটি কড়াইতে সরিষার তেল দিয়ে তাতে আধা ভাঙ্গা রসুনের কোয়া দিয়ে দিতে হবে এবং কিছুটা লাল করে ভাজতে হবে।

৬। এরপর তেলে পাঁচ ফোড়ন দিতে হবে ও ঘন ঘন নাড়তে হবে।

৭। শুকনা মরিচগুলো আস্ত/অর্ধেক করে কেটে তেলে দিতে হবে ও ভাজা ভাজা করতে হবে।

৮। এরপর সেদ্ধ করা ভাঙ্গা জলপাইগুলো তেলে দিতে হবে।

৯। এরপর একে একে এতে লবণ, শুকনা মরিচের গুড়া, আখের গুড় দিতে হবে। ভালভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে যেন জলপাই এর সাথে সব উপকরণ মিশে যায়।

১০। এভাবে এগুলোকে চুলায় কিছুক্ষণ জাল দিতে হবে যেন মিশ্রণটি ঘন হয়ে আসে। এরপর সাথে ভিনেগার মিশাতে হবে।

১১। ভিনেগার মিশিয়ে জলপাই আবার আরও কিছুক্ষণ জ্বাল দিতে হবে।

১২। এরপর এর সাথে গরম মসল্লা গুড়া আধা ভাঙ্গা মৌরী গুড়ো যোগ করে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।

১৩। চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে।

১৪। বায়ুরোধী কাচের বোতলে ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। আচারের বোতলগুলো পরিষ্কার ও শুকনো জায়াগায় স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে।

পেয়ারার জেলী তৈরির কৌশল ১

পেয়ারার জেলী তৈরির উপকরণ ১ :

পেয়ারা—১ কেজি চিনি—৬৫০ গ্রাম সাইট্রিক এসিড—৭—৮ গ্রাম পানি—পরিমাণমত প্রণালী

১। পরিপুষ্ট পেয়ারা ভালভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

২। পেয়ারা গুলো টুকরো করে কেটে সমপরিমাণ পানি দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে।

৩। সিদ্ধ করার সময় কাঠের হাতল দিয়ে টুকরোগুলোকে ভালভাবে নেড়ে দিতে হবে যেন এগুলোকে আঠালো ভাব সৃষ্টি হয়।

৪। ৩৫—৪০ মিনিট সিদ্ধ করলে পেয়ারা থেকে যে রস বের হয় তাই জেলী তৈরির জন্য উপযোগী।

৫। এরপর পাতলা কাপড় দিয়ে রস ছেকে আলাদা করে নিতে হবে।

 

পেয়ারার জেলী তৈরির প্রণালী ১:

১। প্রথমে জলপইগুলো বেঁাটা ছিঁড়ে পরিষ্কার পানিতে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

২। এখন একটি হাড়িতে জলপাইগুলো নিয়ে পানি দিয়ে সেগুলো সেদ্ধ করে নিতে হবে। সেদ্ধ করার সময় তাতে একটু লবণ দিতে হবে।

৩। সেদ্ধ হলে জলপাইগুলো থেকে খুব ভালভাবে পানি ঝড়িয়ে নিতে হবে।

৪। জলপাইগুলো একটু ঠান্ডা হলে এগুলোকে কিছুটা ভেঙ্গে নিতে হবে।

৫। একটি কড়াইতে সরিষার তেল দিয়ে তাতে আধা ভাঙ্গা রসুনের কোয়া দিয়ে দিতে হবে এবং কিছুটা লাল করে ভাজতে হবে।

৬। এরপর তেলে পাঁচ ফোড়ন দিতে হবে ও ঘন ঘন নাড়তে হবে।

৭। শুকনা মরিচগুলো আস্ত/অর্ধেক করে কেটে তেলে দিতে হবে ও ভাজা ভাজা করতে হবে।

৮। এরপর সেদ্ধ করা ভাঙ্গা জলপাইগুলো তেলে দিতে হবে।

৯। এরপর একে একে এতে লবণ, শুকনা মরিচের গুড়া, আখের গুড় দিতে হবে। ভালভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে যেন জলপাই এর সাথে সব উপকরণ মিশে যায়।

১০। এভাবে এগুলোকে চুলায় কিছুক্ষণ জাল দিতে হবে যেন মিশ্রণটি ঘন হয়ে আসে। এরপর সাথে ভিনেগার মিশাতে হবে।

১১। ভিনেগার মিশিয়ে জলপাই আবার আরও কিছুক্ষণ জ্বাল দিতে হবে।

১২। এরপর এর সাথে গরম মসল্লা গুড়া আধা ভাঙ্গা মৌরী গুড়ো যোগ করে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।

১৩। চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে।

১৪। বায়ুরোধী কাচের বোতলে ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। আচারের বোতলগুলো পরিষ্কার ও শুকনো জায়াগায় স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে।

 

পেয়ারার জেলী তৈরির কৌশল ২:

পেয়ারা জেলী তৈরির উপকরণ ২ :

পেয়ারা—১ কেজি চিনি—৬৫০ গ্রাম সাইট্রিক এসিড—৭—৮ গ্রাম পানি—পরিমাণমত প্রণালী

১। পরিপুষ্ট পেয়ারা ভালভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

২। পেয়ারা গুলো টুকরো করে কেটে সমপরিমাণ পানি দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে।

৩। সিদ্ধ করার সময় কাঠের হাতল দিয়ে টুকরোগুলোকে ভালভাবে নেড়ে দিতে হবে যেন এগুলোকে আঠালো ভাব সৃষ্টি হয়।

৪। ৩৫—৪০ মিনিট সিদ্ধ করলে পেয়ারা থেকে যে রস বের হয় তাই জেলী তৈরির জন্য উপযোগী।

৫। এরপর পাতলা কাপড় দিয়ে রস ছেকে আলাদা করে নিতে হবে।

৬। এ রসের সাথে চিনি মিশিয়ে জাল দিতে হবে। রস ঘন হয়ে এলে সাইট্রিক এসিড মিশিয়ে দিতে হবে।

৭। জেলী ঘন হয়ে এলে গরম অবস্থায় বোতলে ভরতে হবে।

৮। এরপর বোতলে রেখে জেলী ঠান্ডা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

৯। ঠান্ডা হয়ে গেলে বোতলের মুখ বন্ধ করে তা সংরক্ষণ করতে হবে।

 

পেয়ারা জেলী প্রস্তুত প্রণালি ২:

১। পাকা ও ত্রুটিমুক্ত টমেটো পরিস্কার পানিতে ভালভাবে ধুয়ে লম্বা লম্বা করে কেটে নিতে হবে কাটার সময় এর বোটার দিকের গোল অংশটা কেটে বাদ দিতে হবে।

২। এখন একটি পাত্রে কাটা টমেটোর সাথে অল্প পানি আ¯ Í দারুচিনি ও লবঙ্গ গুলো দিয়ে সিদ্ধ করতে হবে।

৩। সিদ্ধ করা টমেটো ব্লেন্ডারে ঢেলে দিতে হবে। এর সাথে কাটা পেঁয়াজ যোগ করে ভালভাবে ব্লেন্ড করতে হবে।

৪। এবার একটি চালনি দিয়ে বেল্ড করা টমেটো ভালভাবে ছেঁকে নিতে হবে যেন তাতে কোন বীজ বা খোসার অংশ না থাকে।

৫। ছেঁকে নেওয়া টমেটোর সাথে লবণ ও চিনি মিশিয়ে আবার চুলায় জাল দিতে হবে, ঘন হয়ে আসলে তাতে ভিনেগার মিশাতে হবে।

৬। বেশিদিন টমেটো সস সংরক্ষণ করতে চাইলে তাতে সোডিয়াম বেনজোয়েট যোগ করতে হবে।

৮। গরম সস শুকনা জীবাণুমুক্ত কাচের বোতলে ভরে ঠান্ডা করে নিতে হবে। ঠান্ডা হলে ভালভাবে মুখ লাগিয়ে রাখতে হবে। এভাবে তৈরি সস ৫—৬ মাস পর্যš Í সংরক্ষণ করা যায়।

 

চাল কুমড়ার মোরব্বা তৈরি

মোরব্বা তৈরির কৌশল সঠিক পরিপক্কতায় সংগৃহিত আস্ত ফল বা বড় টুকরা করে কাটা ফলকে ঘণ চিনির রসে ফুটিয়ে স্বচ্ছ করে নিয়ে যে খাদ্য বস্তু তৈরি হয় তাকে মোরব্বা বলে। নানা রকম ফল যেমন আম, আনারস, আপেল, পেঁপে এবং সবজি যেমন চাল কুমড়া, শশা, লাউ ইত্যাদি দিয়ে মোরব্বা তৈরি করা যায়।

 

চাল কুমড়ার মোরব্বা তৈরির উপকরণ

পাকা চাল কুমড়া ২ কেজি পানি ১ লিটার চিনি ৪ কেজি

খাবার সোডা আধা চা চামুচ  চুন ২%  দুধ ১ টেবিল চা চামচ দারুচিনি ৪ টুকরা চিত্র ৯.৪.৪ : মোরব্বা প্রণালী

১। পাকা চাল কুমড়ার খোসা চাড়িয়ে বীজ সহ নরম অংশ কেটে বাদ দিতে হবে এবং বড় বড় টুকরা করে কেটে নিতে হবে।

২। কাটা চামচ দিয়ে চাল কুমড়ার টুকরোগুলো ছিদ্র করে নিতে হবে।

৩। এই চাল কুমড়ার টুকরোগুলো ২% চুন গোলা পানিতে ৩—৪ ঘন্টা ডুবিয়ে রাখতে হবে। এতে টুকরোগুলো নরম হয়ে গলে যায় না।

৪। এবার চুনের পানি থেকে টুকরোগুলো উঠিয়ে ফুটন্ত পানিতে ৫ মিনিটের জন্য সেদ্ধ করে নিতে হবে।

৫। অন্য একটি হাড়িতে চিনির সিরা তৈরি করতে হবে এবং তাতে দারচিনি দিতে হবে। চিনির সিরায় ময়লা থাকলে সেগুলো উঠিয়ে নিতে হবে। এরপর চিনির সিরায় চালকুমড়া দিয়ে জ্বাল দিতে হবে।

৬। চিনির সিরা ঘন ও আঠালো হয়ে এলে খাবার সোডা পানিতে গুলে সিরাতে দিয়ে ঘন ঘন নাড়তে হবে।

৭। মোরব্বা চুলা থেকে নামিয়ে অবশিষ্ট চিনির সিরা কুমড়ার টুকরাগুলো উপর দিয়ে দিতে হবে।

৮। চিনি জমে আসলে একটি ছড়ানো পাত্রে মোরব্বা গুলো ছড়িয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে।

৯। ঠান্ড করা মোরব্বা বোতলে ভরে মুখবদ্ধ করে ৩—৪ মাস পর্যš Í সংরক্ষণ করা যায়।

 

আলুর চিপস ও ফ্লেঞ্চ ফ্রাই তৈরি:

 

আলুর চিপস ও ফ্লেঞ্চ ফ্রাই তৈরির কৌশল উপকরণ :

১। মাঝারি আকারের আলু—৫

২। পানি

৩। লবণ—২৫০ গ্রাম

৪। সোডিয়াম মেটা বাই সালফাইড ৩০ গ্রাম

 

চিপস প্রস্তুত প্রণালি :

১। আলু ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে। আলুর খোসা ছাড়িয়ে ২% লবণ পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে।

২। স্লাইসার (ঝষরপবৎ) দিয়ে আলোগুলো খুব পাতলা করে গোল গোল টুকরা করে কেটে পুনরায় লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।

৩। এরপর একটি হাড়িতে পানি ফুটাতে হবে। লবণে ভেজানো আলুর স্লাইসগুলো উঠিয়ে ঐ ফুটানো পানিতে ৩—৪ মিনিট ব্লাঞ্চিং করতে হবে।

৪। আলুর স্লাইসগুলো থেকে পানি ঝড়িয়ে ফেলে ঠান্ডা করতে হবে।

৫। অন্য একটি পাত্রে প্রায় ৫ লিটার পানির সাথে ৩০ গ্রাম সোডিয়াম মেটা বাই সালফাইড দিয়ে ১ ঘন্টা আলুগুলো ভিজিয়ে রাখতে হবে।

৬। এরপর এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে পানি ঝড়িয়ে আলুর স্লাইসগুলো রোদে শুকাতে হবে।

৭। রোদে ভাল করে শুকিয়ে আলুর স্লাইসগুলো পলিথিন ব্যাগে ভরে মুখ বন্ধ করে বায়ুরোধী কোন কৌটায় ভালে করে ঢাকনা দিয়ে মুখ বন্ধ করে রেখে দিতে হবে। এভাবে আলু ২ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

৮। এই আলুগুলো খাওয়ার জন্য ফুটন্ত ডুবো তেলে ভাজতে হবে।

৯। তেল থেকে উঠিয়ে টিস্যু পেপারের উপর বিছিয়ে রেখে অতিরিক্ত তেল মুক্ত করা হয়। পরে ইচ্ছেমত লবণ, বীট লবণ গোলমরিচের গুড়া যোগ করে পরিবেশন করা যায়।

আলুর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তৈরির পদ্ধতি প্রয়োজনীয় উপকরণ: আলু (মাঝারি) ৫ কেজি পানি লবণ—২৫০ গ্রাম সয়াবিন তেল

এরপর তাতে লবণ ছিটিয়ে টমেটো কেচাপ দিয়ে পরিবেশন করতে হবে। সংরক্ষণ করতে চাইলে ব্লাঞ্চিং করা আলুর ফালিগুলো থেকে পানি ঝড়িয়ে ঠান্ডা করে বায়ুরোধী ফ্রিজে রাখার উপযোগী বক্স বা পলিব্যাগে ভরে ডীপ ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। এভাবে ২ মাস পর্যন্ত রাখা যাবে।

 

ফল ও শাকসবজি বাজারজাত করণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ

ফল ও শাকসবজি বাজারজাত করণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ – বিষয়ক আজকের আলোচনা। এই পাঠটি ইউনিট ৯ এর ৯.৩ নং পাঠ।

 

ফল ও শাকসবজি বাজারজাত করণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ

ফল ও শাকসবজি দ্রুত পচনশীল পণ্য এবং এদের উৎপাদন মৌসুম সীমিত বলে এসব পণ্যের বাজারজাতকরণ একটি স্পর্শকাতর বিষয়। তবে মৌসুমের সময় প্রচুর উৎপাদন হয় বলে এদের দাম কম থাকে। যদিও অন্যান্য খাদ্যোপাদানের সাথে সাথে ফল ও শাকসবজির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এই পরিস্থিতি সুষ্ঠ বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একদিকে যেমন কৃষক ন্যায্য মূল পাবে তেমনি ক্রেতাসাধারণও পর্যাপ্ত পরিমাণে ভালমানের ফল ও শাকসবজি কিনতে পারবে।

ফলে কৃষক, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সবাই লাভবান হবে। আমাদের দেশে ফল ও শাকসবজি বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া এখনও তেমন সুনির্দিষ্ট কোন পদ্ধতির আওতায় আসে নাই।

 

ফল ও সবজি সাধারণত তিনটি ধাপে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পেঁৗছায়—

ধাপ—১ : কৃষক সবজি উৎপন্ন করার পর সংগ্রহ করে এবং আড়তে বিক্রি করে।

ধাপ—২ : আড়ত থেকে ফরিয়া বা মধ্যস্বত্বভোগীরা ফল ও সবজি শহরের পাইকারী বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে।

ধাপ—৩ : খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ভোক্তারা ফল ও সবজি ক্রয় করে।

এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং এর ফলে কৃষক যেমন ন্যায্যমূল্য পায় না তেমনি ক্রেতা বা ভোক্তাদেরও উচ্চমূল্যে পণ্য কিনেতে হয়। এই পদ্ধতিতে ফল ও সবজি বাজারে পৌছাতে সময় বেশি লাগে। তাই বাজারে নেওয়ার পূর্বে ফল ও সবজি ভালভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। তা না হলে ফল ও সবজি পচে গিয়ে অপচয় বেড়ে যায়। বাজারজাতকরণের ত্রুটি দূর করার জন্য নিম্নের কাজগুলো করতে হবে।

 

বাজারজাতকরণের ত্রুটি দূর করার জন্য কাজ:

ক) যথাসময়ে সংগ্রহ :

ফল বা শাকসবজি গাছ থেকে সময়মত সংগ্রহ করতে হবে। অতিরিক্ত পাকা বা অপরিপক্ক ফল বা সবজি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।

 

খ) গ্রেডিং করা :

ফল ও শাকসবজিকে আকার, আকৃতি, বর্ণ ইত্যাদি বাহ্যিক গুণের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। গ্রেডিং করা ফল ও শাকসবজির সংরক্ষণ কাল বেড়ে যায় এবং গ্রেডিং করা শাকসবজি ও ফলের বাজারমূল্য ভাল পাওয়া যায়।

 

গ) ফল ও শাকসবজি শীতল করা :

শাকসবজি ও ফল সংগ্রহের পরও শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া চলতে থাকে এবং এতে এইসব পণ্য দ্রুত পচে যায়। তাই মাঠ থেকে ফল উত্তোলনের পর এগুলোকে বায়ুচলাচলের সুবিধাযুক্ত ছায়াযুক্ত স্থানে কিছুক্ষণ রেখে ঠান্ডা করে নিতে হয়। অনেক সময় ঠান্ডা করার জন্য উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেমন: সবজি বা ফলের উপর দিয়ে আর্দ্র ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত করা হয়। বরফ পানি ছিটানো হয় বা বরফ পানিতে ফল ও সবজি ডুবানো হয়।

এতে করে ফল ও সবজি দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায়। বরফ পানিতে ডুবানোর একটি সুবিধা হলো এর সাথে ছত্রাকনাশক মিশিয়ে ফল ও শাকসবজি জীবাণুমুক্ত করা যায়। বাণিজ্যিকভাবে ফল ও শাকসবজি দূরের কোন স্থানে পরিবহণ করার আগে এভাবে ঠান্ডা করে নিলে বেশিদিন এগুলো সংরক্ষণ করা যায়।

 

ঘ) প্যাকেজিং :

প্যাকেজিং নির্ভর করে পণ্য কতদূরে এবং কিভাবে যাবে তার উপর। প্যাকেট এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে পরিবহনের সময় পণ্য আঘাত প্রাপ্ত না হয়। উন্নত বিশ্বে বাতাস চলাচলে সুবিধাযুক্ত প্লাস্টিক কাঠ বা হাডবোর্ডের বাক্সে শাকসবজি ও ফল পরিবহন করা হয়।

 

ঙ) পরিবহণ :

পরিবহণের সময় পণ্য বেশি গাদাগাদি করে বোঝাই করা উচিৎ নয়। এতে, ফল ও সবজি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। তাই পরিবহণের সময় ফল ও সবজি যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। শীতকালে একটানা ১২ ঘন্টা এবং গ্রীষ্মকালে ৮ ঘন্টার বেশি ফল ও শাকসবজি যানবাহনে রাখা যাবে না। পরিবহনকালে শাকসবজির প্যাকেট বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকা অপরিহার্য। ফল ও শাকসবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তাকে নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ছয়টি খাদ্য উপাদানের মধ্যে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ উল্লেখযোগ্য।

ফল ও শাকসবজি এই ভিটামিন ও খনিজের প্রধান উৎস, ফল ও শাকসবজি যেমন আমাদের রসনার তৃপ্তি দেয়, তেমনি আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। ফল ও সবজিতে ভিটামিন ও খনিজ ছাড়াও সহজ প্রাপ্য শর্করা আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাদ্য উপাদান রয়েছে। এসব খাদ্য শরীর গঠনে যেমন সাহায্য করে তেমনি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে। এতগুণ সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও ফল ও সবজি দীর্ঘদিন তাজা অবস্থায় রেখে খাওয়া যায় না। এগুলো পচনশীল পণ্য। তাই ফল ও সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন খাদ্য তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায়। এসব প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্য সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত।

বিভিন্ন ফল ও সবজির গুণগত মানের পরিবর্তন না করে ভৌত ও রাসায়নিক পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের আকৃতি প্রকৃতি পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

 

খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করণের গুরুত্ব:

নিম্নে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করণের গুরুত্ব আলোচনা করা হল:

১। পুষ্টিমান সংরক্ষণ :

প্রক্রিয়াজাত করনের ফলে সবজি ও ফলের গুণগত মানের তেমন কোন পরিবর্তন হয় না। ফলে সারাবছর ঐ ফল বা সবজির স্বাদ গ্রহণ করা যায় ও পুষ্টি ও পাওয়া যায়।

 

২। উৎপাদিত পণ্যের অপচয় রোধ :

আমাদের দেশে মৌসুমের সময় যে ফল ও সবজি উৎপাদিত হয় সংগ্রহ পরবতীর্ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে এর বড় একটি অংশ পচে নষ্ট হয়। তাই শাকসবজি ও ফলকে প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন খাবার যেমন, জ্যাম, জেলী, জুস, আচার, ইত্যাদি তৈরি করলে সবজি ও ফল অপচয় রোধ করা যাবে।

৩। কৃষকের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি :

উৎপাদন মৌসুমে সাধারণত ফল ও সবজির দাম কম থাকে। এ সময় অপচয়ও হয় বেশি। কিন্তু এসব দিয়ে প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্য তৈরি করা হলে কৃষক ন্যায্য মূল্য পাবে।

 

৪। কর্মসংস্থান সৃষ্টি :

খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের সাথে অনেক কাজ জড়িত। ফলে সেখানে প্রচুর লোকের প্রয়োজন হয়। এবং এভাবে অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়।

 

৫। বৈদেশিক মুদ্রা আয় :

প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্য বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আর করা সম্ভব।

 

ফল ও শাকসবজি সংরক্ষণ পদ্ধতি

ফল ও শাকসবজি সংরক্ষণ পদ্ধতি – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি ইউনিট ৯ এর ৯.২।

ফল ও শাকসবজি সংরক্ষণ পদ্ধতি

ফল ও শাকসবজি সংগ্রহ করার পর জীবাণু সংক্রমণ, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়া, পোকামাকড়ের আক্রমণ ইত্যাদি প্রতিরোধ করতে পারলে ফল দ্রুত পঁচনের হাত থেকে রক্ষা পাবে। ফল ও শাকসবজি সংরক্ষণের সময় বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় যেন এই সব ক্ষতিকর প্রক্রিয়া থেকে মুক্ত তাকে এবং দীর্ঘদিন তা খাওয়ার উপযোগী থাকে। ফলে পুষ্টিমান বজায় রেখে দীর্ঘদিন ফল ও শাকসবজি উপযোগী করে রাখাকেই ফল ও শাকসবজি সংরক্ষণ বলে।

ফল ও শাকসবজি সংরক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হল।

 

ফল সংরক্ষণ :

ফল সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলোকে সুবিধাজনক ভাবে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

১। টাটকা অবস্থায় ফল সংরক্ষণ;

২। শুকিয়ে ফল সংরক্ষণ;

৩। প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে ফল সংরক্ষণ।

 

 

১। টাটকা অবস্থায় ফল সংরক্ষণ :

কিছু ফল উৎপাদন মৌসুমের দীর্ঘদিন পরও টাটকা অবস্থায় খাওয়া যায়। যেমন: কমলা, মালটা, আপেল, আঙ্গুর, নারিকেল ইত্যাদি। টাটকা ফল বিভিন্নভাবে সংরক্ষণ করা যায়।

 

ক) রেফ্রিজারেটর পদ্ধতি :

অল্প পরিমাণ ফল সংরক্ষণের জন্য এ পদ্ধতি খুব কার্যকর। নিম্ন তাপমাত্রায় টাটকা ফল বেশ কিছুদিন সংরক্ষণ করা যায়। ১০ সে. তাপমাত্রার নিচে অনেক শারীরবত্তীয় কার্যাবলি বন্ধ হৃ য়ে যায় এবং জীবাণুর আক্রমণ হয় না বলে ফলে সহজে পচন ধরে না।

 

খ) হিমাগার পদ্ধতি :

বাণিজ্যিক ভাবে ফল সংরক্ষণ করার জন্য হিমাগারের ফল সংরক্ষণ করা হয়। হিমাগারের তাপমাত্রা একটি কাংখিত মাত্রায় নামিয়ে আনা হয় এবং সেই সাথে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণেরও ব্যবস্থা থাকে। হিমাগারে ফল সংরক্ষণের আগে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ফল প্রিকুলিং করে নিতে হবে। ফলের ধরণ বা প্রকার অনুযায়ী হিমাগারের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যেন ফলের স্বাদ, পুষ্টিমান, গন্ধ প্রায় অপরিবর্তিত থাকে।

গ) মডিফায়েড এ্যাটমোসফিয়ার পদ্ধতি :

এটি হিমাগার পদ্ধতির একটি পরিবর্তিত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে হিমাগারের অক্সিজেন এর পরিমাণা কমানো হয় এবং কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

 

ঘ) মোম আবৃতকরণ পদ্ধতি :

সম্পূর্ণ ফলকে মোম দিয়ে আবৃত করা হয়। এ কারণে ফলে শ্বসন ও প্রস্বেদন কম হয়। রোগ জীবাণু ও পোকামাকড় দ্বারাও ফল আক্রাš Í হয় না। এই অবস্থায় ফলকে অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়।

 

ঙ) পলিথিন পদ্ধতি :

নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে ফল গুদামজাত করার সময় মোড়ক হিসাবে পলিথিন ব্যবহার করলে ফল বেশিদিন টাটকা থাকে।

 

চ) আইচ ব্যাংক কুলার :

এই পদ্ধতিতে ফলের বাক্সের উপর দিয়ে খুব ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত করা হয়। ফলে ফল দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায়। এই ঠান্ডা ফলকে ০০.৫—০.৮ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রায় উচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৯৮% এ সংরক্ষণ করা হয়।

 

২। শুকিয়ে ফল সংরক্ষণ :

কিছু কিছু ফল আছে যাদেরকে শুকিয়ে অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। শুকনো ফলে জীবানুর আক্রমণ কম হয়। আবহাওয়া শুষ্ক থাকলে ফল রোদে শুকানো যায়। তবে রোদে ফল শুকালে অনেক সময় তাতে ধুলাবালি লাগে, পশুপাখির উপদ্রব হয়। রোদে শুকানো ছাড়াও ওভেন বা ডিহাইড্রেটর যন্ত্রের সাহায্যে ফলকে শুকানো যায়। এই প্রক্রিয়াকে নির্জলীকরণ বা ডিহাইড্রেশন বলে। আঙ্গুর (কিসমিস), এপ্রিকট, কুল, খেজুর, ডুমুর, নাসপাতি ইত্যাদি।

ফল শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। ফল যদি রোদে শুকানো হয় তাহলে শুকানোর পূর্বে ২—৩ মিনিট ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ করে নিতে হয়। এতে এনজাইমের কার্যকারিতা নষ্ট হয় এবং বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার হাত থেকে ফল রক্ষা পায়। মেশিনে শুকালে ফল সেদ্ধ করার প্রয়োজন নেই। শুকনো ফল এরপর বায়ূরোধী পাত্রে বা পলিথিন ব্যাগে ভরে সংরক্ষণ করতে হবে।

 

৩। প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে ফল সংরক্ষণ :

বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে ফল দিয়ে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী তৈরি করে ১—৩ বছর পর্যন্ত ফল সংরক্ষণ করা যায়। প্রক্রিয়াজাতকরণের ফলে কখনও কখনও ফলের স্বাদ ও গন্ধের তেমন পরিবর্তন হয় না আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের খাদ্য তৈরি করা হয়। নিম্নে সেগুলো আলোচিত হল—

 

ক) ক্যানিং বা টিনজাত করে সংরক্ষণ :

আম, আনারস, লিচু, কমলা ইত্যাদি ফলকে টিনজাত করে সংরক্ষণ করা যায়। সাধারণত মানসম্পন্ন টাটকা, পাকা ফল পরিস্কার করে খোসা ছাড়ানো হয় এবং ছোট ছোট টুকরা করা হয়। টিনজাত করার আগে ফলকে ষ্টেরিলাইজেশন করে নেয়া হয় এবং প্রিজারভেটিভ যোগ করে স্টেরিলাইজড পাত্রে রাখা হয়। পাত্রটিকে বায়ুশুন্য করা হয় এবং বায়ুরোধী অবস্থায় ঠান্ডা করে লেবেল লাগিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।

 

খ) তাপ ও রাসায়নিক দ্রব্যের সাহায্যে সংরক্ষণ :

উচ্চতাপমাত্রায় (১২০—১৫০ সে.) ফলের ভেতরের রোগ জীবাণু মারা যায় ও ফলের আভ্যন্তরীণ বিপাক ক্রিয়া বন্ধ হয়। এ প্রক্রিয়ায় খাদ্য মানের তেমন পরিবর্তন হয় না, তবে ভিটামিন বি ও সি নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে উচ্চতাপ প্রয়োগ করে ফলকে অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়। আবার কিছু রাসায়নিক দ্রব্য, যেমন—বেনজয়িক এসিড, জিবারোলিক এসিড ব্যবহার করলে বেশ কিছু দিন ফলের মান বজায় রেখে সেগুলোকে সংরক্ষণ করা যায়।

 

গ) চিনির দ্রবণে ফল সংরক্ষণ :

চিনির ঘন রসে বিভিন্ন ফল যেমন আনারস, লিচু, পীচ, আম, আঙ্গুর, মাল্টা, কমলা, চেরি, পেঁপে, নাসপাতি ইত্যাদি ফল সংরক্ষণ করা যায়। ফল সংরক্ষণের জন্য চিনির দ্রবণের ঘনত্ব কমপক্ষে ৬০% হতে হবে। ফলের মিষ্টতা অনুযায়ী চিনির পরিমাণ কমবেশি হয়। ছোট ছোট ফল যেমন, লিচু, চেরী, কমলার কোয়া ইত্যাদি আস্ত সংরক্ষণ করা হয়। অন্যান্য ফল সংরক্ষণের আগে সুবিধামত ছোট টুকরা করে পাতলা রসের সাথে জ্বাল দিয়ে সিরাপের ঘনত্ব ৬০—৭০ করা হয়। খেয়াল রাখতে হবে ফলের টুকরা গুলো যেন আস্ত থাকে, গলে না যায়, সিদ্ধ করার পর সিরাপসহ ফল বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।

 

 

ঘ) লবণের দ্রবণে সংরক্ষণ :

টকস্বাদ যুক্ত ফলকে সাধারণত এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়। জলপাই, আমলকী, লেবু, কাঁচা আম ইত্যাদি ফল আস্ত অথবা ছোট টুকরা করে লবণ পানিতে সেদ্ধ করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত লবণ দ্রবণের ঘনত্ব ২০—২৫% না হয়। পরে ফলগুলো লবণ পানি থেকে উঠিয়ে বায়ূরোধী টিনে বা কাঁচের পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়।

 

ঙ) জৈব অম্ল ব্যবহার:

জৈব অম্ল ব্যবহার করে সিরকায় ৪—৬% এসিটিক এসিড থাকে যাতে জীবাণু বাঁচতে পারে না তাই ফল সংরক্ষনের জন্য সিরকা বা এসিটিক এসিড ব্যবহার করা যায়।

 

চ) রস হিসেবে ফল সংরক্ষণ :

যে কোন রসালো ফল থেকে রস বের করে তা সংরক্ষণ করা যায়। ফলে রস দ্রুত স্টেরিলাইজেশন করে বায়ূরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়। এর সাথে প্রিজারভেটিভ যোগ করলে অনেকদিন ভাল থাকবে। ফলের রসের সাথে চিনির বা সিরাপ যোগ করে স্কোয়াশ বা ফ্রুট সিরাপ তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায়। আম, আনারস, লিচু, কমলা, আপেল ইত্যাদি ফল রস করে সংরক্ষণ করা যায়।

 

ছ) জেলী তৈরি করে সংরক্ষণ :

ফলের রস থেকে জেলী তৈরি করা হয়। চিনি ও পেকটিন ব্যবহার করা হয়। পেকটিন
পালপ জমাট বাধতে সাহায্য করে। পেয়ারাতে পেকটিনের পরিমাণ বেশি বলে এতে বাড়তি পেকটিন যোগ করতে হয় না। পেয়ারা, কমলা, আনারস, আম, পেঁপে, স্ট্রবেরি ইত্যাদি ফল দিয়ে জেলি তৈরি করা হয়।

জ) জ্যাম তৈরি করে সংরক্ষণ :

জ্যাম তৈরি করতে ফলের পাল্প ব্যবহার করা হয়। অনেক ফল দিয়েই জ্যাম তৈরি করা যায়। কখনও কখনও একাধিক ফল মিশিয়ে মিক্সড ফ্রুট জ্যাম। (গরীবফ ঋৎঁরঃ ঔধস) তৈরি করা যায়। জ্যাম ও জৈলী তৈরিতে পেকটিন ছাড়াও সাইট্রিক এসিড বা লেবুর রস মিশানো হয়।

 

ঝ) মোরব্বা তৈরি করে সংরক্ষণ :

ফলের টুকরাগুলো চিনির দ্রবণ দিয়ে জ্বাল করে তারপর সিরা নিংড়ে মোরব্বা বানানো হয়। এতে ফলের পানীয় অংশ কমে যায়, চিনির পরিমাণ বাড়ে এবং ফল প্রায় শুষ্ক অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়।

 

ঞ) আচার বা চাটনি তৈরি করে সংরক্ষণ :

শুকনো করা ফলের সাথে সরিষার তেল, ভিনেগার ইত্যাদি মিশিয়ে আচার তৈরি করা হয়। আচার ব্যবহৃত তেল ও এসিড প্রিজারভেটিভ হিসাবে কাজ করে। আম, জলপাই, আমড়া, কুল, চালতা, তেতুল, আমলকী ইত্যাদি দিয়ে আচার ও চাটনী তৈরি করে বেশ কিছুদিন সংরক্ষণ করা যায়। শাক সবজি সংরক্ষণ পদ্ধতি সংরক্ষণকালীন সময়ের উপর ভিত্তি করে শাকসবজি সংরক্ষণ পদ্ধতিকে দুইভাগে ভাগ করা যায়।

১। স্বল্পকালীন সংরক্ষণ ও ২। দীর্ঘকালীন সংরক্ষণ ।

 

১। স্বল্পকালীন সংরক্ষণ পদ্ধতি নিচে আলোচনা করা হল :

(ক) পর্যাপ্ত বায়ুচলাচলের সুবিধা আছে এমন ছায়াযুক্ত স্থানে শাকসবজি সংরক্ষণ করতে হবে। (খ) সংরক্ষণ ঘরে যেন সরাসরি সূর্যের আলো প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

(গ) সংরক্ষণ ঘরের দেয়াল এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন বাইরের তাপ ঘরে না ঢোকে।

(ঘ) শাকসবজি ঘরের মেঝেতে স্তুপ করে না রেখে বিভিন্ন তাকে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতে হবে।

(ঙ) পাতা জাতীয় সবজি পলিথিন ব্যাগে রাখলে আর্দ্রতা দ্রুত কমে যাবে না।

(চ) শাকসবজি ধুয়ে কেটে, ছোট ছোট পলিথিন ব্যাগে ভরে রেফ্রিজারেটর রাখা যায়।

(ছ) নিম্ন তাপমাত্রায় শাকসবজি ভাল থাকলেও সব সবজির জন্য একই নিম্নতাপমাত্রা উপযোগী নয়। সেজন্য ভিন্ন ভিন্ন শাকসবজির জন্য বিভিন্ন তাপমাত্রা প্রয়োজন :

 

২। দীর্ঘকালীন সংরক্ষণ পদ্ধতি :

বেশি দিনের জন্য সংরক্ষণ করতে হলে শাকসবজি ঠান্ডা ঘরে (হিমাগার) রাখতে হবে। বিভিন্ন শাকসবজির জন্য ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও প্রয়োজনীয় আলো—বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

হিমাগারে রাখার পূর্বে সবজিকে অবশ্যই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে বাছাই করে নিতে হবে। প্যাকিং করে সেগুলোকে সারিবদ্ধভাবে গুছিয়ে রাখতে হবে। গোল আলু, মিষ্টি আলু এবং অন্যন্য রূপান্তরিত কান্ড বা মূল জাতীয় সবজি হিমাগারে সংরক্ষণ করা যায়। অনেকসময় হিমাগারে অক্সিজেন কমিয়ে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বাড়িয়ে সবজির শ্বসন নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং সবজি বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায়।
সবজি কোন অবস্থায় সংরক্ষণ করা হবে তার উপর ভিত্তি করে দীর্ঘকালীন সংরক্ষণ পদ্ধতি তিন প্রকার।

১। তাজা ও কাঁচা অবস্থায় সংরক্ষণ

২। শুকিয়ে সংরক্ষণ এবং

৩। প্রক্রিয়াজাত করে সংরক্ষণ।

 

১। তাজা ও কাঁচা অবস্থায় সংরক্ষণ :

তাজা ও কাঁচা অবস্থায় দীর্ঘ সময় শাকসবজি সংরক্ষণ করতে চাইলে সংরক্ষণ স্থানের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বায়ু চলাচল সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ফলে সবজির স্বাদ, গন্ধ, সতেজতা ও পুষ্টিমান অনেকটাই অপরিবর্তিত থাকে। নিচের কয়েকটি সবজির সংরক্ষণের উপযোগী তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও ঐ অবস্থায় কতদিন কতদিন সংরক্ষণ করা যাবে। তা উল্লেখ করা হল।

 

ফল ও শাকসবজির পঁচনের কারণ ও লক্ষণ

ফল ও শাকসবজির পঁচনের কারণ ও লক্ষণ – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি ৯ নং ইউনিটের ৯.১ নং পাঠ। ফল ও শাকসবজি দ্রুত পচনশীল খাদ্য দ্রব্য বা মাঠ থেকে সংগ্রহ করার অল্প দিনের মধ্যেই সেগুলো খেয়ে ফেলতে হয়। বেশি দিন রেখে দিলে সেগুলো পচে নষ্ট হয়ে যায়।

ফল ও শাকসবজির পঁচনের কারণ ও লক্ষণ

 

ফল ও শাকসবজি পঁচনের কারণ

শাকসবজি ও ফল পচনের কারণ ও লক্ষণ গুলো নিচে আলোচনা করা হল।

১। পরিবেশ প্রতিকূল অবস্থা :

(ক) তাপমাত্রার কারণে পচন :

উচ্চতাপমাত্রা শাক সবজি ও ফল পচনের জন্য দায়ী ফল ও শাকসবজির কোষ স্বাভাবিক থাকার জন্য একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা প্রয়োজন। প্রতি ১০ সে. তাপমাত্রা বেড়ে গেলে শ্বসনের মাত্রা প্রায় তিনগুণ বেড়ে যায়, ফলে আভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত ইথিলিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যা শাকসবজি ও ফলে দ্রুত পচন ঘটায়। এমতাবস্থায় রোগজীবাণুর বংশবৃদ্ধি ও সংক্রমণ বেড়ে যায় যা ফল ও শাকসবজিতে পচন ঘটায়।

(খ) আর্দ্রতার কারণে পচন :

আর্দ্রতা কমে গেলে (৮৩—৮৫% এর কম) ফল ও শাক সবজি অল্প সময়ে নষ্ট হয়ে খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে।

(গ) বায়ুচলাচল এর কারণে পচন :

শাকসবজি ও ফল যেখানে সংরক্ষণ করা হয় সেখানে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা না থাকলে অক্সিজেন ও কার্বনডাই অক্সাইডের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং ফল ও শাকসবজি দ্রুত পচে যায়।

 

 

২। শ্বসন এর কারণে পচন:

ফল ও শাকসবজি সংগ্রহ করার পর যে সব আভ্যন্তরীণ মেটাবলিক পরিবর্তন ঘটে শ্বসন তাদের মধ্যে প্রধান। বিভিন্ন এনজাইমে র প্রভাবে শ্বসন প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। এতে ফলের অভ্যন্তরে যে শর্করা থাকে তা রাসায়নিক ভাবে ভেঙ্গে কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানি তৈরি হয় এর ফলে ফল দ্রুত পচে যায় আবার শ্বসন বাড়লে ফল ও সবজিতে ইথিলিনের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং শাকসবজি ও ফল দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।

৩। পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় পচন :

ফল ও শাকসবজিতে জলীয় অংশ থাকে বেশি। সংগ্রহের পর শ্বসন ও প্রস্বেদনের মাধ্যমে দ্রুত পানি বের হয়ে যায় এবং এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে পানির অভাবে ফল ও শাকসবজি নেতিয়ে পড়ে, কুকড়ে যায়, দ্রুত সজীবতা হারায় ও খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে।

৪। রোগজীবাণু ও পোকার আক্রমণে পচন :

রোগজীবাণু ও পোকার আক্রমণে অনেক ফল ও শাকসবজি নষ্ট হয়ে যায়। ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক উচ্চতাপে এবং অধিক আর্দ্রতায় সক্রিয় হয়ে উঠে এবং দ্রুত ফল ও শাকসবজিকে সংক্রমিত করে পঁচিয়ে ফেলে।

৫। সংরক্ষণ জনিত ত্রুটির কারণে পচন :

সঠিক পদ্ধতিতে ফল ও সবজি সংরক্ষণ করা না হলে, সংরক্ষণ কক্ষের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ইত্যাদি উপযোগী না হলে ফল ও সবজি পচে যায়।

৬। পরিবহণজনিত ত্রুটির কারণে পচন :

পরিবহনের সময় ফল ও সবজি বাক্স বা ঝুড়িতে একটির উপর আর একটি ¯প ক‘ রে নেয়া হয়। পরিবহনের সময় ঝাকুনি, আঘাত বা চাপে ফল বা সবজি অনেক সময় থেতলে যায় বা আঘাত প্রাপ্ত হয়। এসব পণ্য তখন দ্রুত জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় ও নষ্ট হয়ে যায়।

৭। পরিপক্কতা এ ফলের জাত ও ধরণ না বোঝায় পচন :

গাছ থেকে অপরিপক্ক ফল সংগ্রহ করলে দ্রুত পচে যায়। আবার বিভিন্ন ফল ও সবজির ভিন্ন ভিন্ন জাতের সংরক্ষণ গুণ ভিন্ন হয়।

৮। বাছাইজনিত ত্রুটির কারণে পচন :

ফল ও সবজি সংগ্রহের পর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বাছাই করতে হয়। আঘাত প্রাপ্ত, থেতলানো বেশি পাকা ফল বা সবজি আলাদা করা না হলে অন্যান্য ফল ও সবজিও দ্রুত পচে নষ্ট হয়ে যায়।

 

 

ফল ও শাকসবজি পচনের লক্ষণ:

১। ফল ও শাকসবজির গায়ে কালো, বড় দাগ হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে সাদা বা ছাইয়ের মত আবরণ পড়ে।

২। ফল ও শাকসবজির রং পবির্তন হয়, বিবর্ণ হয়ে যায়।

৩। ফল ও শাকসবজি বেশি নরম হয়ে যায়।

৪। অনেক সময় ফল ও সবজির গায়ে গর্ত বা ছিদ্র তৈরি হয়।

৫। ফল ও শাকসবজি থেকে দুর্গন্ধ বের হয় ও পঁচা রস বের হয়।

৬। এদের স্বাদ পরিবর্তন হয়ে বেশির ভাগ সময় তিক্ত স্বাদ যুক্ত হয়।

৭। ফল ও শাকসবজির ওজন বেড়ে যায়।

৮। ফলের সাথে খোসা আলগাভাবে লেগে থাকে।

ফল ও শাকসবজি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কিছু কিছু সবজি ও ফল আছে যা সারা বছর পাওয়া যায়। তবে অনেক ফল ও সবজি মৌসুমে উৎপন্ন হয়। যেমন আলু, ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, আম, জলপাই, পেয়ারা ইত্যাদি। এই সমস্ত ফল ও সবজি সারাবছর বা অমৌসুমে খেতে চাইলে তাদের সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের বিকল্প নাই।

আবার অনেক সময় উৎপাদন মৌসুমে কোন কোন ফল ও সবজি প্রচুর উৎপন্ন হয় যা চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকে। এগুলো অনেক সময় পচে নষ্ট হয়ে যায়। উদাহরণ স্বরূপ আম, টমেটোর আনারস ইত্যাদি। এই অপচয় রোধের জন্য ও মারাত্মক পুষ্টি সমস্যা সমাধানের জন্য ফল’ ও শাকসবজি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

 

শাকসবজি ও ফল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা:

যে সব কারণে শাকসবজি ও ফল সংরক্ষণ করা প্রয়োজন তা নিচে আলোচনা করা হল:

১। ফল ‘ও শাকসবজিকে পচনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন:

২। মৌসুম ছাড়াও বছরে অন্যান্য সময় বিভিন্ন ফল’ ও শাকসবজির সরবরাহ করার জন্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

৩। শাক সবজি বাজারজাত কাজের সময় ও পরিধি বৃদ্ধি পায়।

৪। দেশের সব স্থানে সব ধরণের ফল’ ও শাকসবজি উৎপন্ন হয় না, ফল ‘ও শাকসবজি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা গেলে সারাদেশের সব স্থানেই ঐ সব ফল ও সবজির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

৫। বিদেশে রপ্তানি করার সময় পরিবহনের সময়, অনেক ফল ও সবজি পচে যায়। সঠিকভাবে এগুলো সংরক্ষণ করে রপ্তানি করা হলে সবগুলোর গুণাগুন অক্ষুন্ন থাকবে এবং রপ্তানি আয়ও বাড়বে।

৬। আর্থিকভাবে বেশি লাভাবন হওয়া যায়। উৎপাদন মৌসুমে ফল’ ও শাকসবজির দাম কম থাকে। এগুলো সংরক্ষণ করে পরে বিক্রি করলে বেশি দাম পাওয়া যায়।

৭। ফল’ ও শাকসবজি থেকে চিপস, জুস, জ্যাম, জেলী, আচার মোরোব্বা ইত্যাদি তৈরি করে সারা বছর খাওয়া যায়।

৮। বিভিন্ন শিল্প কারখানায় বিভিন্ন খাদ্য পণ্য উৎপাদন করতে সারা বছর প্রচুর ফল’ ও শাকসবজি ব্যবহার করা যায়।

৯। ফল’ ও শাকসবজি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে তার পুষ্টিগুণ অক্ষুন্ন থাকে। ফলে সারাক্ষণ মানুষের পুষ্টির চাহিদা পুরণ হয়।

১০। আপদকালীন বা অসময়ের প্রয়োজন মেটানো যায়।

১১। অনেক সময় সংরক্ষণের অভাবে বিভিন্ন ফল ও সবজি পচে নষ্ট হয়। ফলে কৃষক আর ঐ ফসল ফলাতে আগ্রহী হয় না। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা গেলে কৃষক ঐ সব ফসল উৎপাদনে আরও উৎসাহিত হবে।

১২। ফল ও সবজি সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাত করণ সরবরাহ ও ক্রয় বিক্রয় প্রক্রিয়ায় অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়।

১৩। সর্বোপরি, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।