Tag Archives: কৃষি সম্প্রসারণ

কৃষি সম্প্রসারণ

মৃত্তিকার জৈবিক উপাদান

মৃত্তিকার জৈবিক উপাদান নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি বাউবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান – ১২০৪ কোর্সের ইউনিট ৪ এর,  ৪.১ নম্বর পাঠ।

মৃত্তিকার জৈবিক উপাদান

মৃত্তিকা জৈবিক উপাদানসমূহ প্রধানত দু’ধরনের। যথা : বিভিন্ন ধরনের বড় ও ক্ষুদ্র জীব এবং প্রাণহীন বিভিন্ন জৈব অবশেষ যা জৈব পদার্থ, হিউমাস ইত্যাদি নামে পরিচিত। জৈব পদার্থ ও হিউমাস বিভিন্ন জীবের দেহ বা দেহাংশের পচনশীল অবশেষ।

জৈব পদার্থের উপাদান বা গঠন:

জৈব পদার্থ নিম্নলিখিত উপাদান সমূহ বিভিন্ন অনুপাতে ধারণ করে।

নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও সালফার জৈব পদার্থ রূপে থাকলেও সহজে নষ্ট হয় না। জৈব পদার্থে কাইটিন, নিউক্লিক এসিড ও নিউক্লিওটাইড নামক ফসফরাসের যৌগ থাকে। বিয়োজনের ফলে এগুলো থেকে ক্যাটায়ন, অর্থোফসফেট বেরিয়ে আসে। এমাইনো এসিড, সিস্টাইন ও সিস্টিন নামক সালফার ঘটিত যৌগও জৈব পদার্থে থাকে।

কালক্রমে এরা সালফার এর অজৈব যৌগরূপে দেখা যায় । মৃত্তিকার হিউমাস কণিকায় কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, সালফার, ফসফরাস ও অন্যান্য মৌলিক পদার্থ থাকে । দেখা যায় জৈব পদার্থে কার্বন শতকরা ৫০-৬০ ভাগ, নাইট্রোজেন ৩-৬ ভাগ, অক্সিজেন ৩৫ ভাগ, হাইড্রোজেন ৫ ভাগ ও ক্ষার (ছাই) ৫ ভাগ (আনুমানিক) থাকে।

 

হিউমাসের সংজ্ঞা:

মৃত্তিকার জৈব পদার্থ সম্পূর্ণ বিয়োজনের পর অবশিষ্ট দ্রব্য যা তুলনাম লকভাবে স্থায়ী, বিয়োজন প্রতিরোধী, গাঢ় কাল থেকে বাদামী বর্ণের এবং প্রোটিন ও লিগনিন সমন্বয়ে গঠিত, তাকে হিউমাস বলা হয়। জীবাণুর উৎসেচকের অনুঘটক প্রক্রিয়ার ফলে জৈব পদার্থের বিয়োজন ঘটে থাকে। এ বিয়োজনের উপজাত হলো বাদামী বা গাঢ় বাদামী রংয়ের জটিল অনিয়তাকার অসমসত্ব (Heterogeneous) এক প্রকার মিশ্রণ। লিগনিন, প্রোটিন, ও প্রোটিন কাদা জাতীয় উপরোক্ত পদার্থগুলোই এ মিশ্রণের উপাদান। এ মিশ্রণই হিউমাস।

 

হিউমাসের বৈশিষ্ট্য:

১। গাঢ় বাদামী থেকে কালো বর্ণের।

২। পানিতে অদ্রবণীয় তবে ক্ষারে দ্রবণীয়।

৩। রাসায়নিক গঠন বড়ই জটিল।

8। শতকরা আনুমানিক ৩০ ভাগ আমিষ, ৩০ ভাগ লিগনিন ও ৩০ ভাগ জটিল চিনি ধারণ করে।

৫ । শতকরা ৫৫-৫৮ ভাগ কার্বন, ৩-৬ ভাগ নাইট্রোজেন এবং সিলিকন, এলুমিনিয়াম ও লৌহ ধারণ করে।

৬। কার্বন নাইট্রোজেন অনুপাত ১২৪১ ।

৭। সংকোচন ও প্রসারন গুণে সমৃদ্ধ।

৮। ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতা বেশি।

৯। জৈব পদার্থের শতকরা ৮৫-৯০ ভাগই হিউমাস।

 

হিউমাস ও জৈব পদার্থের পার্থক্য:

 

কার্বন-নাইট্রোজেন অনুপাত (CN):

মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের মোট কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাতকে কার্বন-নাইট্রোজেন (সি-এন) অনুপাত বলে। চাষের জমিতে জৈব পদার্থে সি এন অনুপাত ৮:১ হতে ১৫ঃ১ হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ১০ঃ১ থেকে ১২৪১ থাকে। বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা ও জৈব পদার্থের গুণাগুণ সি-এন অনুপাতের তারমত্য ঘটায়। এখানে একটি তালিকায় বিভিন্ন ধরনের জৈব পদার্থের সি-এন এর অনুপাত সাজানো হলো।

 

সি এন অনুপাতের গুরুত্ব:

কোন জৈব পদার্থের সি-এন অনুপাত অধিক হলে বুঝা যায় তাতে কার্বনের পরিমাণ বেশি ও নাইট্রোজেনের পরিমাণ কম এবং তা পুনরায় বিয়োজিত হবে। কোন মাটিতে অধিক সি এন অনুপাত যুক্ত জৈব পদার্থ প্রয়োগ করলে তার হেটারোট্রফিক (Heterotrophic) জীবাণু যথাঃ ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও একটিনোমাইসিটিস অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠে এবং ঐ জৈব পদার্থের বিভাজন/বিশেষণ ঘটায়। এতে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তা অণুজীবরা তাদের বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করে এবং দ্রুত বংশ বিস্তার করে।

দেখা গিয়েছে যে, প্রায় ৩৫% কার্বন অণুজীবরা জৈব পদার্থ হতে গ্রহণ করে এবং বাকী ৬৫% কার্বন বায়বীয় অবস্থায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং জলাবদ্ধ অবস্থায় H2CO3 এবং CH, এ পরিণত হয়।

এই অধিক সংখ্যক জীবাণু দেহগঠনের জন্য মাটির অজৈব NH, NO 3 গ্রহণ করে এবং নিজেদের দেহে জৈব অবস্থায় রূপান্তরিত করে। কিছু নাইট্রোজেন গাছ গ্রহণ করে এবং বাকীটুকু NO3 অবস্থায় চুয়ানের মাধ্যমে অপচয় হয়। এই চুয়ানোর ফলে সি-এন অনুপাত কমে ১০ঃ১ অনুপাতে নেমে আসে যা সমস্ত কৃষি শস্যের জন্য উপযোগী।

এ সময়ে কার্বনের পরিমাণ কমে যাওযায় অণুজীবসম হ মারা যায় এবং তাদের দেহ পুনরায় বিয়োজিত হয় এবং মাটিতে নাইট্রোজেন মুক্ত হয় যা গাছের জন্য সহজে গ্রহণযোগ্য।

সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে, অধিক সি-এন যুক্ত জৈব পদার্থ মাটিতে প্রয়োগ করলে অণুজীবের কার্যকারীতা ও নাইট্রোজেনর সহজলভ্যতা বেড়ে যায়।

 

হিউমিক এসিডের বৈশিষ্ট্য:

১। হিউমিক এসিড শতকরা ৫০-৬০ ভাগ কার্বন, ৪ ভাগ হাইড্রোজেন, ৪০ ভাগ অক্সিজেন ধারণ করে এবং কার্বন ও নাইট্রোজেন অনুপাত ১৪ঃ১।
২। ইহা উচ্চ আণবিক ওজন ( ৩০,০০০-৫০,০০০) সম্পন্ন যৌগ।
৩। ইহা উচ্চ ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতা সম্পন্ন (৫৪৯ মিঃতুঃ / ১০০ গ্রাম মাটি)।
8। সংযুক্তিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ পরিবর্তনশীল ।
৫ ৷ পড়জল ও চারনোজেম মাটি থেকে নিষ্কাশিত হিউমিক এসিড হাইড্রোফিলিক।

 

ফালভিক এসিডের বৈশিষ্ট্য:

১। ক্রিণিক এসিড ও এপোক্রিনিক এসিড যৌথভাবে ফালভিক এসিড বলে পরিচিত।

২। ফালভিক এসিড শতকরা ৪০-৪৭ ভাগ কার্বন ও ৪২-৫০ ভাগ অক্সিজেন ধারণ করে।

৩। উচ্চ আণবিক ওজন সম্পন্ন যৌগ।

8। পানি, এলকোহল ও ক্ষারে দ্রবণীয়।

৫ ৷ অল্প ঘনত্বের ফালভিক এসিড হালকা হলুদ, তবে অধিক ঘনত্বের হলে কমলা হলুদ রঙের হয়।

৬ ।ক্রিনিক এসিড হলদে ও এপোক্রিনিক এসিড বাদামী রংয়ের হয়ে থাকে।

৭।  ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতা ৩০০-৪০০ মিঃতুঃ /১০০ গ্রাম মাটি।

৮। এতে কার্বোক্সিল, মিথোক্সিল ও হাইড্রোক্সিল গ্রুপ বিদ্যমান, ফলে পার্শ্ব বিক্রিয়ার প্রভাব অধিক।

 

হিউমিন ও এলমিনের বৈশিষ্ট্য:

১। এরা যথাক্রমে হিউমিক ও এলমিক এসিড, তবে অণু ছোট।

২। এরা প্রকৃত হিউমিক এসিড তবে মাটির খনিজ অংশের সাথে স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলায় ক্ষারে অদ্রবণীয়।

৩। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নাইট্রোজেন, ফসফরাস, সালফার ও অন্যান্য মৌল ধারণ করে।

 

হেমাটোমেলানিক এসিডের বৈশিষ্ট্য:

১। আণবিক ওজন প্রায় ৮০০।

২। কার্বনের পরিমাণ অন্যান্য এসিডের তুলনায় বেশি।

৩। ইহা পানি, এলকোহল ও ক্ষারে দ্রবণীয়।

8। হিউমিক এসিডের ডেরিভেটিভ।

৫ । এতে কার্বোক্সিল, ফেনোলিক ও মিথোক্সিল গ্রুপ বিদ্যমান।

 

সূত্র:

  • মৃত্তিকার জৈবিক উপাদান – পাঠ ৪.১, ইউনিট ৪ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি

মাটির অস্রমান পরীক্ষা , ব্যবহারিক

আজ দেখবো মাটির অস্রমান পরীক্ষা এর ব্যবহারিক ক্লাস। এই পাঠটি বাউবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান – ১২০৪ কোর্সের ইউনিট ৩ এর,  ৩.৭ নম্বর পাঠ। বাউবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান – ১২০৪ কোর্সের প্রতিটি অধ্যায় শেষেই এইরকম ব্যবহারিক ক্লাসের উদাহরণ রয়েছে।

মাটির অস্রমান পরীক্ষা

মৃত্তিকা পরিবেশ ও প্রকৃতির মহামূল্যবান সম্পদ। মানুষ মৃত্তিকাকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে। ইহা গাছপালা জন্মানোর বাহক। চারদিকে মৃত্তিকার সাধারণ বিস্তৃতি, আকার, আকৃতি ও বাস্থবচিত্র দেখে ইহার রাসায়নিক গুণাবলীর কথা চোখে ভাসে না। কৃষি ক্ষেত্রেই মাটির ব্যবহার সবচেয়ে অধিক, এবং এ সর্বোত্তম ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হলে মৃত্তিকার রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যসমূহ নিয়ে জ্ঞান লাভ প্রয়োজন মৃত্তিকার রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য সমূহ মাটির উর্বরতা, মৃত্তিকাস্থিত পানির গুণাবলী ও গাছপালার পুষ্টিমান নিয়ন্ত্রণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে।

শিলা ও খনিজ পরিচিতি , ব্যবহারিক , মৃত্তিকা বিজ্ঞান ,মৃত্তিকা একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাকৃতিক মিশ্র পদার্থ। ক্ষয়ীভূত শিলা ও খনিজ দ্রব্যের সাথে বিভিন্ন রকম জৈবদ্রব্য পানি ও বায়ুর মিশ্রণই মৃত্তিকা। ফলে বিভিন্ন স্থানের মৃত্তিকার গুণাবলীতে বিরাট পার্থক্য দেখা যায়। কণার আকার, বুনট, সংযুক্তি, ঘনত্ব, বর্ণ, বায়ুচলাচল, তাপমাত্রা প্রভৃতি মৃত্তিকার ভৌত বৈশিষ্ট্য। বুনট ও সংযুক্তি মৃত্তিকার দুটি মৌলিক ধর্ম কারণ এ দুটি উপাদান মৃত্তিকার উর্বরতা ও উৎপাদনক্ষমতা বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া মৃত্তিকার ঘনত্ব, রক্ত পরিসর, দৃঢ়তা, তাপমাত্রা, বর্ণ ইত্যাদি সামগ্রিকভাবে মৃত্তিকায় ফসল উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।

 

মৃত্তিকা পিএইচ নির্ণয় পদ্ধতি:

তিনটি পদ্ধতিতে মৃত্তিকা পিএইচ নির্ণয় করা যায়, যথা

১। মাঠ পদ্ধতি (Field method)

২ । লভিবক্ত পদ্ধতি (Lovibond comparator method)

৩। গ্যাস ইলেকট্রোড পদ্ধতি (Glass electrode method )

 

গ্যাস ইলেকট্রোড পদ্ধতিতে মৃত্তিকার পিএইচ বা অম্লমান নির্ণয় প্রয়োজনীয় উপকরণ:

১। ৫০ মি.লি. মাপের বিকার

২। বাফার দ্রবণ

৩। পিএইচ মিটার

8। পরিশোধিত পানি

৫ । কাঁচের দন্ড

৬। নমুনা মাটি

৭। ৫০ মি.মি. সিলিন্ডার

কাজের ধাপ :

১ । ৫০ মি.লি. মাপের একটি পরিস্কার বিকার নিন 1

২। নিক্তিতে প্রদত্ত নমুনা থেকে ১০ কিংবা ২০ গ্রাম মৃত্তিকা নিন ।

৩। মাটি বিকারে ঢেলে দিন।

8। সিলিন্ডারের সাহায্যে ১০ গ্রাম মাটিতে ২৫ মি.লি. (২০ গ্রাম হলে ৫০ মিলি) পরিশোধিত পানি যোগ করুন (মাটি ও পানির অনুপাত ১:২.৫)।

৫ । একটু পর পর কাঁচের দন্ড দিয়ে ২০-৩০ মিনিট পর্যন্ত নাড়তে থাকুন।

৬।  টেবিলের উপর এক ঘন্টা রাখুন যাতে ভাল তলানী জমে।

৭। সাবধানে বিকার পিএইচ মিটারের কাছে নিয়ে যান।

৮। বাফার দ্রবণ দিয়ে পিএইচ মান ঠিক করুন।

৯। এবার দ্রবণে ইলেকট্রোড ঢুকিয়ে মৃত্তিকার পিএইচ মান লক্ষ করুন।

ফলাফল : প্রাপ্ত মৃত্তিকার সঠিক পিএইচ মান লিখে নিন।

 

সাবধানতা:

১। বাফার দ্রবণের সঠিক ফলাফলে নিশ্চিত হউন ।

২। অসংখ্য নমুনা (Sample) থাকলে একটু পর পর বাফার দিয়ে পিএইচ মান ঠিক করুন।

৩। মাটি ও পানির অনুপাত ঠিক রাখুন।

8। সর্বদাই কাজ শেষে গ্যাস ইলেকট্রোড ও রেফারেন্স ইলেকট্রোড উত্তম রূপে ধৌত করুন।

৫ । সন্দেহজনক ফল আসলে আবারন তন করে কাজ শুরুকরুন।

উল্লেখিত সকল কার্যক্রম আপনার ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করুন।

সূত্র:

  • মাটির অস্রমান পরীক্ষা , ব্যবহারিক , পাঠ ৩.৭, ইউনিট ৩ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি।

 

মাটির আর্দ্রতা পরীক্ষা ব্যবহারিক

আজ দেখবো মাটির আর্দ্রতা পরীক্ষা এর ব্যবহারিক ক্লাস। এই পাঠটি বাউবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান – ১২০৪ কোর্সের ইউনিট ৩ এর,  ৩.৬ নম্বর পাঠ। বাউবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান – ১২০৪ কোর্সের প্রতিটি অধ্যায় শেষেই এইরকম ব্যবহারিক ক্লাসের উদাহরণ রয়েছে।

মাটির আর্দ্রতা পরীক্ষা

 

 

মৃত্তিকা পরিবেশ ও প্রকৃতির মহামূল্যবান সম্পদ। মানুষ মৃত্তিকাকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে। ইহা গাছপালা জন্মানোর বাহক। চারদিকে মৃত্তিকার সাধারণ বিস্তৃতি, আকার, আকৃতি ও বাস্থবচিত্র দেখে ইহার রাসায়নিক গুণাবলীর কথা চোখে ভাসে না। কৃষি ক্ষেত্রেই মাটির ব্যবহার সবচেয়ে অধিক, এবং এ সর্বোত্তম ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হলে মৃত্তিকার রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যসমূহ নিয়ে জ্ঞান লাভ প্রয়োজন মৃত্তিকার রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য সমূহ মাটির উর্বরতা, মৃত্তিকাস্থিত পানির গুণাবলী ও গাছপালার পুষ্টিমান নিয়ন্ত্রণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে।

শিলা ও খনিজ পরিচিতি , ব্যবহারিক , মৃত্তিকা বিজ্ঞান ,মৃত্তিকা একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাকৃতিক মিশ্র পদার্থ। ক্ষয়ীভূত শিলা ও খনিজ দ্রব্যের সাথে বিভিন্ন রকম জৈবদ্রব্য পানি ও বায়ুর মিশ্রণই মৃত্তিকা। ফলে বিভিন্ন স্থানের মৃত্তিকার গুণাবলীতে বিরাট পার্থক্য দেখা যায়। কণার আকার, বুনট, সংযুক্তি, ঘনত্ব, বর্ণ, বায়ুচলাচল, তাপমাত্রা প্রভৃতি মৃত্তিকার ভৌত বৈশিষ্ট্য। বুনট ও সংযুক্তি মৃত্তিকার দুটি মৌলিক ধর্ম কারণ এ দুটি উপাদান মৃত্তিকার উর্বরতা ও উৎপাদনক্ষমতা বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া মৃত্তিকার ঘনত্ব, রক্ত পরিসর, দৃঢ়তা, তাপমাত্রা, বর্ণ ইত্যাদি সামগ্রিকভাবে মৃত্তিকায় ফসল উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।

সুতরাং মৃত্তিকাকে সফলতার সাথে কৃষি কাজে ব্যবহার করতে হলে উল্লিখিত ভৌত বৈশিষ্ট্যাবলী সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। এ ইউনিটে মৃত্তিকার কণা, মৃত্তিকার গঠন ও বুনট, সংযুক্তি, ঘনত্ব, বর্ণ ও তাপমাত্রা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। মৃত্তিকার কণা (Soil seperates), বুনট, সংযুক্তি, ঘনত্ব, রন্ধ্র পরিসর, বর্ণ, তাপমাত্রা ইত্যাদি হলো। মৃত্তিকার ভৌত বৈশিষ্ট্য।

এ ইউনিটে মৃত্তিকার রাসায়নিক উপাদান, মৃত্তিকা দ্রবণ, অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব, মৃত্তিকা কোলয়েড, আয়ন বিনিময় ক্ষমতা প্রভৃতি মৃত্তিকার রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যসমূহ সমন্ধে বিস্থারিত আলোচনা করা হয়েছে।

 

 

মাটির আর্দ্রতা দু’টি পদ্ধতিতে নির্ণয় করা যায়:

১। গ্রেভিমেট্রিক বা ওজন পদ্ধতি

২। টেনসিওমিটার পদ্ধতি

 

গ্রেভিমেট্রিক পদ্ধতিতে মাটির আর্দ্রতা নির্ণয় প্রয়োজনীয় উপকরণ:

১।এলুমিনিয়াম পাত্র

২।ওভেন বা চুল্লী

৩। ডেসিকেটর

8।পেন্সিল বা মার্কার কলম

৫ । নমুনা মাটি

৬। নিক্তধাপ

 

কাজের ধাপ:

১। একটি খালি পরিস্কার এলুমিনিয়াম পাত্র নিন।

2 । নিক্তিতে খালি পাত্রটির ওজন নিন।

৩। এবার পাত্রে নমুনা মাটি রাখুন ও নিক্তিতে ২০-৩০ গ্রাম পরিমাণ ওজন নিন।

8।  পাত্রের কিনারায় কিংবা নিচে পরিচিতির নম্বর বসান।

৫ ৷ তারপর পাত্রটি ওভেন বা চুল্লীর ভিতর ঢুকান ।

৬।চুল্লীটি ১০৫° সেঃ তাপে ১৬-২৪ ঘন্টা রাখুন।

৭। পাত্রটি চুল্লী থেকে বের করুন এবং ডেসিকেটর কিংবা টেবিলে রেখে স্বাভাবিক ঠান্ডা করুন।

৮। এবার শুকনো মাটি সহ পাত্রটির নিক্তিতে ওজন নিন ।

 

ডাটা:
১ ا খালি পাত্রের ওজন = ক

২। ভিজা মাটিসহ পাত্রের ওজন = খ

৩। শুকনা মাটিসহ পাত্রের ওজন = গ

 

হিসাব:

মৃত্তিকায় শতকরা পানির পরিমাণ (%) =

ফলাফল : প্রাপ্ত মৃত্তিকার সঠিক আর্দ্রতার শতকরা পরিমাণ লিখে নিন।

 

 

সাবধানতা:

১। মাটির ওজন তাড়াতাড়ি নিন এবং কখনও খুব শুকনো মাটি নিবেন না।
২। পাত্রের উপর আপনাদের গ্রুপ অথবা আপনার রোল নম্বর লিখুন যাতে ঐটি না হারায়।
৩। অতিরিক্ত ভিজা মাটি কখনও নিবেন না।
8। অবশ্যই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পাত্রটি চুল্লীতে রাখুন।
৫ । তাপমাত্রা ১০৫° সেঃ রাখুন, কম বেশি হলে সঠিক ফলাফল পাবেন না।

উল্লেখিত সকল কার্যক্রম আপনার ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করুন ।

 

সূত্র:

  • মাটির আর্দ্রতা পরীক্ষা , ব্যবহারিক , পাঠ ৩.৬, ইউনিট ৩ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি।

আয়ন বিনিময় প্রক্রিয়া

আয়ন বিনিময় প্রক্রিয়া – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “মৃত্তিকা বিজ্ঞান” বিষয়ৈর ইউনিট ৩ এর পাঠ ৩.৫। আয়ন বিনিময় সূক্ষ্ম খনিজ পদার্থ ও জৈব পদার্থের সংমিশ্রণে প্রাকৃতিক মৃত্তিকা বস্তু জৈব রাসায়নিক গতিশীলতা প্রাপ্ত হয়। কদম কণা, হিউমাস ও সক্রিয় মৃত্তিকা দ্রবণের মধ্যে রাসায়নিক উপাদানের ভারসাম্য রক্ষা আয়ন বিনিময়ের বহিঃ প্রকাশ।

আয়ন বিনিময় প্রক্রিয়া

মৃত্তিকা কোলয়েড ও মৃত্তিকা দ্রবণের মধ্যে বৈদ্যুতিক আধানে ভারসাম্য রক্ষাকল্পে রাসায়নিক অণু ও পরমাণুর আদান প্রদানকে আয়ন বিনিময় প্রক্রিয়া বলে। কদম কোলয়েড ঋাক আধানযুক্ত, এগুলো ধৰ্ম্মক আধানসম্পন্ন আয়নকে আকর্ষণ করে যেগুলো আবার অপসারণযোগ্য। এগুলোকে বিনিময়যোগ্য ক্যাটায়ন বলা হয়। যেহেতু কদম কোলয়েড ঋন্ত্রক আধানযুক্ত তাই এ ঋণাত্বক আধানকে তৃপ্ত করার জন্য মৃত্তিকা কণায় ধনাত্বক আয়ন ধরা থাকে। যখন একটি ক্যাটায়নের অন্যটি দ্বারা বিনিময় ঘটে তখন ক্যাটায়নগুলো পুনঃ স্থাপিত হয়ে যায়।

 

মৃত্তিকা আয়ন বিনিময় প্রক্রিয়া দু’প্রকার যথা:

১। ক্যাটায়ন বিনিময়, ও
২। অ্যানায়ন বিনিময়

 

ক্যাটায়ন বিনিময় (Cation Exchange):

পজিটিভ চার্জযুক্ত আয়ন যা নেগেটিভ চার্জ দ্বারা আকর্ষিত হয় তাকে ক্যাটায়ন বলে। মাটি এবং অন্যান্য পদার্থ দ্বারা ক্যাটায়ন গ্রহণ বা ত্যাগ করাকে ক্যাটায়ন বিনিময় বলে (Taking up and giving off positively charged ion by a soil and other substances is referred as cation exchange) মোট ক্যাটায়ন বিনিময়কে মিলি তুলনাংক/ ১০০ গ্রাম মাটি (সব/১০০ gm soil) এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। যদি কোন কদমের ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতা ১ মিলি তুলনাংক /১০০ গ্রাম মাটি হয় এতে বুঝা যায় যে, কদমের হাইড্রোজেন আয়নের অধিশোষণ (adsorbing) বা ধরে রাখা ক্ষমতা ১ মিলিগ্রাম বা এর সমতুল্য।

মাটিতে যখন কোন ক্যাটায়ন যোগ করা হয় তখন ক্যাটায়ন বিনিময় সংঘটিত হয়। যেমন : মাটিতে চুন যোগ করলে Catt, পটাসিয়াম সার যোগ করলে K’, এবং অ্যানহাইড্রাস অ্যামোনিয়া, অ্যামোনিয়াম ফসফেট বা অ্যামোনিয়াম সালফেট যোগ করলে NH এর বিনিময় সংঘটিত হয়। এসব ক্যাটায়নের বিনিময় সম্পূর্ণরূপে কদম স্ফটিকের (clay crystal) এবং হিউমাস কণার পৃষ্ঠে সংঘটিত হয়। কারণ কদম স্ফটিকে এবং হিউমাস কণার পৃষ্ঠে ঋণাত্বক বা নেগেটিভ চার্জ জালের মত বিস্তৃত থাকে এজন্য ধণাত্বক বা পজিটিভ চার্জ আকর্ষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ ত্মীয় মাটিতে চুন যোগ করলে যে ক্যাটায়ন বিনিময় ঘটে তা নিম্নে দেখান হলো।

 

যাদের মধ্যে মৃত্তিকা ক্যাটায়ন বিনিময় ঘটে:

১।মৃত্তিকা দ্রবণের ক্যাটায়ন ও কদম স্ফটিক বা হিউমাস কণার ক্যাটায়ন এর মধ্যে।

২। উদ্ভিদ শিকড় থেকে মুক্ত ক্যাটায়ন এবং কর্দম স্ফটিক বা হিউমাস কণার ক্যাটায়ন এর মধ্যে।

৩। দুটি কর্দম স্ফটিক ও দু’টি হিউমাস কণার ক্যাটায়ন কিংবা একটি কর্দম স্ফটিক ও একটি হিউমাস কণার ক্যাটায়ন এর মধ্যে।

8। H”, Ca”, Mg”, K’, Na+ ও মেটালের ক্যাটায়ন বিনিময় ধারা যথাক্রমে H> Ca”> Mg”> K> Nat

 

ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতা (সিইসি):

নির্দিষ্ট পরিমাণ (১০ অথবা ২০ গ্রাম) মৃত্তিকার সঙ্গে এমোনিয়াম (NH), পটাসিয়াম (K), বেরিয়াম (Ba”) বা ক্যালসিয়াম (Ca2+) লবণের জলীয় দ্রবণ পর্যায়ক্রমে কয়েকবার বিক্রিয়া করালে মৃত্তিকার ক্যাটায়নগুলো প্রতিস্থাপিত হয়ে যথাক্রমে NH, K, Bat ev Ca2+ এর দ্বারা মাটি সম্পৃক্ত হয়। দ্রবণে অবস্থিত মুক্ত আয়ন পানিতে ধুয়ে সরিয়ে নিয়ে যে কোন ক্যাটায়ন সম্পৃক্ত মাটি থেকে বিনিময় পদ্ধতিতে পুণরায় মাটিতে আবদ্ধ অবস্থা থেকে দ্রবণীয় অবস্থায় নিয়ে আসা সম্ভব। তবে H’ আয়ন ব্যবহার করা সবচেয়ে উত্তম।

বিনিময় দ্বারা মুক্ত ক্যাটায়নের পরিমাণ জানলে অতি সহেজই মৃত্তিকা ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতা হিসাব করা সম্ভব। ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতার ইউনিট হচ্ছে ১০০ গ্রাম মাটিতে মিলিইকুইভ্যালেন্ট (সব/১০০ম) বা মিলি তুল্যাংক। মৃত্তিকা ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতা নির্ণয় করার (সিইসি) হিসাবটি এখানে দেয়া হলো।

ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতা প্রকাশের পদ্ধতি হচ্ছে মিলি তুল্যাংক/ ১০০ গ্রাম মাটি (সব / ১০০g soil), যে মৃত্তিকায় ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতা এক মিলিতুল্যাংক (১ মিঃতুঃ /১০০ গ্রাম মাটি) এর প্রতি ১০০ গ্রাম মৃত্তিকা এক মিলিগ্রাম হাইড্রোজেন বা এর সমতুল্য আয়ন এডজরবড় করতে সক্ষম। এটা প্রতি লক্ষ (১০০,০০০) মিলিগ্রাম মৃত্তিকায় ১ মিলিগ্রাম বা প্রতি মিলিয়নে ১০ অংশের সমতুল্য। এক একর জমি কর্ষণের ফলে সৃষ্ট খাতের ফালি যদি ২০,০০,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত হয়, তবে ১ মিঃতুঃ ২০ পাউন্ড হাইড্রোজেনের সমান বা এর সমতুল্য।

তুল্যমান ব্যবহারে আয়নকে মিঃতুঃ আকারে প্রকাশ করা যায়। ক্যালসিয়ামের আণবিক ওজন ৪০ এবং যোজনী ২, অর্থাৎ ২ আধান (Cath) সম্পন্ন যা ২টি হাইড্রোজেন আয়নের (2H) সমতুল্য। সুতরাং সূত্র অনুসারে এক মিলিগ্রাম হাইড্রোজেন দূর করতে ৪০/২ বা ২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দরকার। অর্থাৎ ১ মিঃতুঃ ক্যালসিয়ামের ওজন ২০ মিলিগ্রাম। একই ভাবে ১ মিঃতুঃ ম্যাগনেসিয়ামের ওজন ১২ মিলিগ্রাম এবং ১ মিঃতুঃ সোডিয়ামের ওজন ২৩ মিলিগ্রাম।

১০০ গ্রাম মৃত্তিকা ৪৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম উপশোষণ (Adsorbed) করলে এর ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতা (সিইসি) হবে ৪৫০/২০ বা ২২.৫ মিঃতুঃ/১০০ গ্রাম মাটি। এখানে প্রতি ১০০ গ্রাম মৃত্তিকার মিঃতুঃ হিসেব করার সুধিবা হচ্ছে সঠিক বিনিময় ক্ষমতা সহজে নির্ণয় করা যায় এবং সংখ্যাগুলো ছোট (০.১-৪০) থাকে। খনিজ মৃত্তিকায় সিইসি কম থাকে পক্ষান্তরে হিউমাস অধিক সিইসি সমৃদ্ধ, যার মান ২০০-৫০০ মিঃতুঃ/১০০ গ্রাম মাটি পর্যন্ত হতে পারে। বেলে মাটি এবং কদম মাটির সিইসি যথাক্রমে ০-৫ এবং ৩০ মিঃতুঃ /১০০ গ্রাম মৃত্তিকা হতে পারে।

 

ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতার তারতম্যের কারণ:

১। মৃত্তিকায় জৈব পদার্থ বা হিউমাসের পরিমাণ ও উৎস বম্প । এসব উপাদানের কারণে সিইসি ২০০-৫০০ মিঃতুঃ/১০০ গ্রাম মৃত্তিকা পর্যন্ত হয়।

২। মৃত্তিকায় অবস্থিত বালি, পলি ও কদম কণার অনুপাত ও আয়তনী পরিমাণ। বেলে মাটির সিইসি ০-৫ মিঃতুঃ/১০০ গ্রাম মাটি, বেলে দোআঁশ মৃত্তিকায় ৫-১০ মিঃতুঃ / ১০০ গ্রাম মাটি, এঁটেল দোআঁশ মৃত্তিকায় ১৫- ২০ মিঃতুঃ/১০০ গ্রাম মাটি এবং কদম মৃত্তিকায় ৩০ মিঃতুঃ/১০০ গ্রাম মাটি এর অধিক হয়।

৩। মৃত্তিকায় কদম কণার শ্রেণি, গঠন, আকার ও আকৃতি। মন্টমরিলোনাইটে সিইসি ৮০-১৫০ মিঃতুঃ/১০০ গ্রাম মাটি, ইলাইটে ১০-৪০ মিঃতুঃ / ১০০ গ্রাম মাটি ও কেওলিনাইট কদম কণায় ৩-১৫ মিঃতুঃ/১০০ গ্রাম মাটি।

8। মৃত্তিকা খনিজের গঠনও ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

৫ । মৃত্তিকা পিএইচও বিনিময়যোগ্য ক্যাটায়নের অনুপাত সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে।

 

ক্যাটায়ন (সিইসি) বিনিময় ক্ষমতার গুরুত্ব:

১। মাটির উর্বরতা সিইসি এর ওপর নির্ভরশীল

২। কোন মাটি অতিরিক্ত ত্মীয় হলে বিনিময়যোগ্য হাইড্রোজেন আয়নের আধিক্যের কারণে তা উর্বর হলেও উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে না। ফলে চুন প্রয়োগ করতে হয়। মাটির সিইসি অধিক হলে কোলয়েড পৃষ্ঠে যে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং এমোনিয়াম ক্যাটায়ন লেগে থাকে তা গাছের জন্য সহজে গ্রহণযোগ্য হয়।

৩। কোলয়েড কদম এবং হিউমাস বিভিন্ন পরিমাণে বিনিময়যোগ্য এবং সহজলভ্য ক্যালসিয়াম,

8। ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও অন্যান্য গৌণ পুষ্টি ধরে রাখে ।

৫ ৷ মাটির ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতার দরুন প্রয়োগকৃত দ্রবণীয় অজৈব সারের পুষ্টি উপাদান ধুয়ে যেতে পারে না।

৬ । ক্যাটায়ন আধিক্যের ফলে অণুজীবের কার্যাবলী বৃদ্ধি পায় যেমন, ক্যালসিয়ামের আধিক্যে এমোনিফিকেশন ও নাইট্রিফিকেশন পদ্ধতিতে প্রভাব ফেলে।

৭। ক্যাটায়নের প্রকৃতি মৃত্তিকা দ্রবণের পিএইচ এর ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। যেমন সোডিয়াম কদম ক্ষার ও হাইড্রোজেন কর্দম নীয়। আবার অধিক া মাটিতে ম্যাঙ্গানিজের সহজলভ্যতা বৃদ্ধি ও ফসফরাসের সহজলভ্যতা কমার কারণে গাছের জন্য বিষাক্ত হয়।

৮। ক্যাটায়ন সম্বন্ধে সুষ্ঠু জ্ঞান থাকলে অতি সহজেই মাটির দূষণ, অম্লত্ব, ক্ষারকত্ব ইত্যাদি সংশোধন সম্ভব।

 

অ্যানায়ন বিনিময় (Anion Exchange):

ঋণাত্বক চার্জযুক্ত আয়ন যা ধনাত্বক চার্জ দ্বারা আকর্ষিত হয়, তাকে অ্যানায়ন বলে। একটি অ্যানায়ন এক বা একাধিক ঋণাত্বক আধান বহন করে। মৃত্তিকা কিংবা অন্য পদার্থ দ্বারা ঋণাত্বক চার্জ গ্রহণ এবং ত্যাগ করাকে অ্যানায়ন বিনিময় বলে। বস্তুত ক্যাটায়নের মতো অ্যানায়ন বিনিময়ও মৃত্তিকা কোলয়েডের এক উল্লেখযোগ্য রাসায়নিক বিক্রিয়া। কাদা কণা পুরাতন হওয়ার সাথে সাথে ক্রমেই এগুলো কেওলিনাইটে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীতে এগুলো কেওলিনাইট জাতীয় কাদা কণায় বিয়োজিত হয়ে লৌহা ও এলুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড উৎপন্ন হয়।

এ সকল অক্সাইডে প্রচুর ঋণাত্বক তড়িৎ আধান সৃষ্টি হয়। মৃত্তিকা দ্রবণে হাইড্রোক্সিল গ্রুপের (OH) আয়নীয় বিশ্লেষণ হয়। এভাবে হাইড্রোক্সিল গ্রুপ পৃথক হয়ে যাওয়ায় কোলয়েডে ধনাত্বক তড়িৎ আধান দেখা দেয়। আবার কারো মতে এ হাইড্রোক্সিল গ্রুপ বিভিন্ন আয়নের সঙ্গে স্থান পরিবর্তন করে। অধিক জৈব পদার্থ সম্পন্ন মৃত্তিকা সামান্য পরিমাণ বিনিময় যোগ্য অ্যানায়ন ধরে রাখতে পার।

এ বিনিময়যোগ্য অ্যানায়নগুলো হচ্ছে NO, SO, HOT, POT, OH ইত্যাদি। এসব অ্যানায়নের বিনিময়যোগ্যতার আপেক্ষিক মাত্রা নিরূপঃ OH> H2PO1 > SO NOT সাধারণত ফসফেট, ক্লোরাইড, নাইট্রেট, কার্বনেট, সালফেট প্রভৃতি আয়নের মাধ্যমে অ্যানায়ন বিনিময় ঘটে থাকে। ক্লোরাইড কিংবা নাইট্রেট কোলয়েডের সঙ্গে হালকাভাবে লেগে থাকে। ফলে অতি সহজেই এরা স্থানচ্যুত হতে পারে। তবে যে সকল ফসফেট আয়নের যোজ্যতা এক (H2PO) এরা খুব শক্তভাবে কোলয়েডের সঙ্গে আটকে থাকে। আর্সেনেট, সিলিকেট, সাইট্রেট, অক্সালেট, হাইড্রোক্সিল ও ক্লোরাইড জাতীয় অ্যানায়ন কিন্তু এদের পরস্পরকে অপসারিত করতে পারে।

কারো কারো মতে অ্যানায়ন বিনিময় প্রক্রিয়াটি আর্সেনেট বা সিলিকেট আয়ন দিয়ে ফসফেট আয়নের অপসারণের মাধামে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়। মৃত্তিকায় ফসফেট অ্যানায়ন সবচেয়ে বেশি পরিমাণ থাকে। তবে স্না মাটিতেই এর আধিক্য ঘটে। কিন্তু সবটুকু বিনিময়যোগ্য নয়। স্নতা বৃদ্ধির সাথে ফসফরাস আটকে থাকা (Fixation) বৃদ্ধি পায়। সেখানে মৃত্তিকাস্থিত ফসফেট অ্যানায়ন দ্রবণীয় লৌহ, এলুমিনিয়াম, সিলেকেট ও ম্যাঙ্গানিজের সাথে বিক্রিয়া করে অদ্রবণীয় ফসফেট যৌগ উৎপন্ন করে।

আবার অদ্রবণীয় ফসফেট যৌগের কিছুটা ফসফেট অন্যান্য অ্যানায়ন যেমন OH দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। এ প্রতিস্থাপনকেই অ্যানায়ন বিনিময় বলে। একটি অ্যানায়ন অন্যটি দ্বারা বিনিময়কে অ্যানায়ন বিনময় বলে। যে সব মৃত্তিকায় প্রধান খনিজ মন্টমরিলোনাইট, ইলাইট সেগুলোর চেয়ে যে মৃত্তিকায় কেওলিনাইট বেশি ঐ সকল মৃত্তিকায় অ্যানায়ন বিনিময় ক্ষমতা বেশি ।

 

মৃত্তিকা কোলয়েড

মৃত্তিকা কোলয়েড – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “মৃত্তিকা বিজ্ঞান” বিষয়ের “ইউনিট ৩” এর পাঠ ৩.৪। মৃত্তিকা কোলয়েডের সংজ্ঞা কোলয়েড শব্দটি টমাস গ্রেহাম ১৮৬১ সালে প্রথম ব্যবহার করেন। গ্রীক ভাষায় কোলয়েড মানে আঁঠা। সাধারণতঃ যে সকল মৃত্তিকা কণার ব্যাস ২ মাইক্রন এর কম ঐগুলোকেই মৃত্তিকা কোলয়েড বলা হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৃত্তিকা কোলয়েড কণার ব্যাস থাকে ০.০০৫ থেকে ০.২ মাইক্রন।

মৃত্তিকা কোলয়েড

 

কোলয়েড কণার আকার:

কোলয়েড কণা এতই ক্ষুদ্র যে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না। কোলয়েড ‘কণার আকার হচ্ছে ৫০ A ( A = 10 সে.মি.) থেকে ২ মাইক্রন (১ মাইক্রন সে.মি.)। কোলয়েড মৃত্তিকা = ১০ -br কণাগুলোর ব্যাস ০.০০১ মিলিমিটারের চেয়ে কম। কোলয়েডের ব্যাস ০.০০৫ থেকে ০.২ মাইক্রন এর মধ্যে থাকলে কতকগুলো বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। মৃত্তিকা কোলয়েড কণার আকার আকৃতি নানান রকমের হয়ে থাকে। কোলয়েড কণা লম্বা, দন্ড, গোলাকার, ডিম্বাকার কিংবা ভিন্ন আকারেরও হতে পারে। কাদাকণার আকৃতি পাতলা চাদরের মতও হয়ে থাকে। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে কাদা কণার আকৃতি পাতের মত দেখায়।

 

মৃত্তিকা কোলয়েডের বৈশিষ্ট্য:

১। কোলয়েড দ্রবণ একটি অসমসত্ব মাধ্যম।

২।কোলয়েড দ্রবণের অসমোটিক বা অভিস্রবণীয় চাপ কম।

৩। ফ্যারাডে ও টিনডাল প্রভাব সমৃদ্ধ।

8। খালি চোখে দেখা যায় না। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখলে কোলয়েড দ্রবণ সর্বদাই আকাবাঁকা গতিতে চলতে দেখা যায় বলে ব্রাউনীয় গতি বা সঞ্চরণ প্রদর্শন করে।

৫ ৷ কোলয়েড দ্রবণ অধিশোষণ বা এডজরপশন ও জমাটবদ্ধতা বা কোয়াগুলেশন বৈশিষ্ট্যে সক্রিয়।

৬ । কোলয়েড ‘কণার আকার যতই ছোট হয় উপরিতলের আয়তন ততই বাড়ে এবং উপশোষণও বৃদ্ধি পায় ।

৭। কোলয়েড কণা মাত্রই বৈদ্যুতিক আধান বহন করে। কোলয়েড দ্রবণ বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে স্থাপন করলে চার্জের প্রকৃতি অনুসারে এরা এনোড বা ক্যাথোডের দিকে ধাবিত হয় ।

৮। কণার আকার (৬×১০-৫ – ১৫×১০৫ মি.মি.) ও প্রকৃতির ভিত্তিতে কোলয়েড দ্রবণ কমলা হলুদ, কমলা লাল, নীল লোহিত, বেগুনী প্রভৃতি রঙের হয়ে থাকে এবং সিলভার সলে এ রঙ সুস্পষ্ট ধরা পরে।

৯। সম্পৃক্ত অবস্থায় কোলয়েড কণাগুলো পরস্পরের সংগে আকৃষ্ট হয়ে দলা পাকার ফলে মৃত্তিকা উত্তম চাষাবাদের উপযোগী হয়।

১০। একই কদম কণা Na’ সম্পৃক্ততায় ব্যবধান বাড়ে কিন্তু Ca2+ দ্বারা সম্পৃক্ত হলে তা কমে যায়। অর্থাৎ সমান চার্জ সত্বেও সম্পৃক্ত কর্দম কণার বিকীর্ণন ধর্ম বেশি।

 

মৃত্তিকা কোলয়েডের শ্রেণিবিভাগ:

মোটা বেলে মাটি ছাড়া সর্বত্রই কম বেশি কোলয়েড কণা বিদ্যমান। সকল প্রকার চাষাবাদের ভূমিতে কম বেশি কোলয়েড কণা রয়েছে। উৎপত্তি, আকার, আকৃতি ও অন্যান্য গুণের ভিত্তিতে মৃত্তিকা কোলয়েডকে দু’ভাগে ভাগ করা যায় :

১। অজৈব বা খনিজ কোলয়েড।

২। জৈব বা হিউমাস কোলয়েড।

 

অজৈব বা খনিজ কোলয়েড:

মৃত্তিকায় অজৈব কোলয়েডকে খনিজ কোলয়েড বা কদম কোলয়েড বলা হয়। তবে কোলয়েডের কার্যাবলী শুধু কদম কণাতেই নির্দিষ্ট নয়। কোলয়েড কণা যতই ছোট হয় ধর্ম ও গুণাবলী ততই বৃদ্ধি পায়। প্রকৃত পক্ষে ২ মাইক্রন আকারের নিচের সকল কর্দম কণাই কোলয়েড। উদাহরণ হচ্ছে :

Fe, Al, Mn ও Ti এর অক্সাইড ও হাইড্রোক্সাইড যথা : ম্যাগনেটাইট- Fe304, লিমোনাইট Fe2O3, 3H20, কদম কোলয়েড এবং বক্সাইড – A1,203 2H 20, ব্রাউনাইট- Mn203 1

 

মৃত্তিকা জৈব কোলয়েড:

মৃত্তিকা পৃষ্ঠস্তরে কাদাকণার সংগে হিউমাস কোলয়েডীয় অবস্থায় থাকে। হিউমাস কণার আয়তন অতি ক্ষুদ্র থাকায় ইহা কোলয়েড ধর্ম পেয়ে থাকে। বস্তুত জৈব কোলয়েড বলতে হিউমাসই বুঝায়। মৃত্তিকায় প্রাণী বা উদ্ভিদ অবশেষ পচনের ফলে যে কালো কোলয়েডীয় পদার্থ তৈরি হয় তাকেই হিউমাস বা হিউমিক পদার্থ বলা হয়। হিউমাস আকারবিহীন গাঢ় বাদামী থেকে কালো বর্ণের। হিউমাস কোলয়েড নিগেটিভ চার্জবিশিষ্ট এবং চারপাশে অসংখ্য ঋক তড়িৎ আধান উৎপন্ন হয়।

 

প্রধান জৈব কোলয়েডসমূহ হচ্ছে:

১। হিউমিক এসিড
২। ফালভিক এসিড
৩। হেমাটোমেলানিক এসিড
8। হিউমিনস ও আলমিনস, ইত্যাদি।

 

কৃষিতে মৃত্তিকা কোলয়েডের গুরুত্ব:

১। উদ্ভিদে খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া চালু রাখার জন্য মৃত্তিকা কোলয়েড মাটির ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন বিনিময় ক্ষমতা সক্রিয় রাখে।

২। কোলয়েড সমস্যায় মৃত্তিকা আয়ন বিনিময় ব্যহত হয়। আবার একদম না থাকলে আয়ন বিনিময় প্রক্রিয়াও বন্ধ থাকে।

৩। মৃত্তিকায় কোলয়েড দ্রব্যের পরিমাণের ভিত্তিতে উদ্ভিদের খাদ্যেপাদানের পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। তাই মৃত্তিকা কোলয়েডকে উদ্ভিদের খাদ্য ভান্ডারও বলা যায়।

8। জৈব কোলয়েড ইহার খাদ্য ভান্ডার থেকে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদান সরবরাহ করে গাছপালার সুস্থ জীবন যাত্রা নিশ্চিত করে।

৫। হাইড্রোজেন, এলুমিনিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি ক্যাটায়ন বিনিময় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃত্তিকা কোলয়েড মাটির দ্রবণের ভারসাম্য রক্ষা করে।

৬।মৃত্তিকা কোলয়েড মাটির আমান ও বাফার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৭। মৃত্তিকা কোলয়েড অতিরিক্ত খাদ্যোপাদান ধরে রাখে এবং কোলয়েডের অভাবে এগুলো চুয়ানীর মাধ্যমে মৃত্তিকা থেকে দ রীভূত হয়ে যায়। অবশ্য কোলয়েড দ্রব্য এগুলো পরিশোষণযোগ্য
করে উদ্ভিদের খাদ্য যোগায়।

৮। মৃত্তিকায় কোলয়েড ঘাটতি থাকলে পর্যাপ্ত সার প্রয়োগেও সুফল পাওয়া দুস্কর।

৯। মৃত্তিকায় সকল রাসায়নিক গুণাবলী নিয়ন ণে কোলয়েড সক্রিয় ভূমিকা রাখে।

১০। মৃত্তিকার সকল প্রকার বিষাক্ত দ্রব্য সামগ্রী পরিশোষন, বিয়োজন ও বিনষ্টকরণে মৃত্তিকা কোলয়েড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১১। মৃত্তিকা কোলয়েড ভূমিক্ষয় হ্রাস করে।

 

 

মৃত্তিকার অশ্রু ও ক্ষার

অশ্রু ও ক্ষার – পাঠটি “মৃত্তিকা বিজ্ঞান” বিষয়ের ইউনিট ৩ , পাঠ ৩.৩ এর পাঠ। মৃত্তিকার স্নত্ব ও ক্ষারকত্ব বলতে কী বুঝায়মৃত্তিকার অত্ব বা ক্ষারকত্ব মৃত্তিকা দ্রবণের পিএইচ (pH) দ্বারা নির্দেশ করা হয়। মৃত্তিকা পিএইচ ৭ এর কম হলে সেই মৃত্তিকাকে নীয় মৃত্তিকা বলে। অপর পক্ষে, মৃত্তিকা pH ৭ এর বেশি হলে তাকে ক্ষারীয় মৃত্তিকা বলে। পিএইচ হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্ব বা গাঢ়তাকে নির্দেশ করে।

অশ্রু ও ক্ষার

সুতরাং মাটির পিএইচ হলো মৃত্তিকা দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়নের (H’ ) ঘনত্বের ঋক লগারিদম। অন্য কথায় কোন্ মৃত্তিকা দ্রবণের হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্বের বিপরীত রাশির লগারিদমকে মৃত্তিকার পিএইচ (pH) বলে । ঢ়ঐ এর কোন একক নেই। তবে হাইড্রোজেন আয়নকে (H’) গ্রাম/লিটারে প্রকাশ করা হয়। pH = -log[H”] ev pH : =log[H]

মৃত্তিকা পিএইচ বলতে এর অত্ব বা ক্ষার ধর্মকে বুঝায়। কোন দ্রবণের অম্লতার জন্য হাইড্রোজেন আয়নের H’ সক্রিয়তাই দায়ী এবং ঋনাত্বক হাইড্রোক্সিল আয়নের সক্রিয়তার ফলে ক্ষার ধর্ম সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। হাইড্রোজেন আয়নকে H এবং হাইড্রোক্সিল আয়নকে OH দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এক লিটার পানিতে যত গ্রাম হাইড্রোজেন ও হাইড্রোক্সিল আয়ন থাকে, এ দুয়ের গুণফল একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সব সময় একটা নিয়ত রাশি (constant) হতে দেখা যায়। ২১° সে তাপে নিয়ত রাশিটি (H) x (OH) = 10-14 হয়ে থাকে। পানিতে দ্রবীভূত বা বিচ্ছুরিত লবণ, এসিড বা ক্ষারকের ধর্মের প্রভাবে এ নিয়ত রাশির মোটেই হেরফের হয় না।

সুতরাং এসিডের সংস্পর্শে এসে হাইড্রোজেন আয়নের (H’) পরিমাণ বাড়লে এবং হাইড্রক্সিল আয়নের (OH) পরিমাণ কমলে অথবা কোন লবণের সংস্পর্শে এসে বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি হলেও এ নিয়ত রাশি একই থেকে যায়। প্রশমিত দ্রবণ ও বিশুদ্ধ পানিতে সাধারণতঃ ১০ গ্রাম হাইড্রোক্সিল আয়ন ও ১০ গ্রাম হাইড্রোজেন আয়ন থাকে।

কোন দ্রবণ এসিড বা অম্ল ধর্মী হলে হাইড্রোক্সিল আয়ন ১০ গ্রামের চেয়ে বেশি থাকে এবং কোন দ্রবণ ক্ষারধর্মী হলে হাইড্রোক্সিল আয়ন ১০ গ্রামের চেয়ে কম থাকে। কোন দ্রবণের অম্লমান ৭ এর কম -9 হলে অম্লীয় এবং ৭ এর বেশি হলে ক্ষারীয় বলা হয়।

 

মাটির অম্লত্ত্বের প্রকারভেদ:

মাটির মতা দুপ্রকার যথা ঃ

১। সক্রিয় অম্লত্ব ঃ

মাটির দ্রবণে যে পরিমাণ H’ আয়ন মুক্ত অবস্থায় থাকে তাকে সক্রিয় স্নত্ব বলে। পিএইচ দিয়ে সক্রিয় অত্নত্বের পরিমাণ জানা যায়।

 

২। প্রচ্ছন্ন বা পটেনসিয়াল অম্লত্ব ঃ

কদম কণা বা কোলয়েড যে পরিমাণ হাইড্রোজেন আয়ন শোষিত বা আবদ্ধ অবস্থায় (adsorbed) রাখে তাকে প্রচ্ছন্ন বা পটেনসিয়াল অত্নত্ব বলে। মাটিতে প্রচ্ছন্ন অম্লত্ব সক্রিয় অম্লত্বের চেয়ে এক হাজার গুণ বেশি এবং এঁটেল মাটিতে এর পরিমাণ আরও অধিক। পিএইচ নির্ণয় সমীকরণ

বিজ্ঞানী সোয়েনসেন পিএইচ এর পরিমাপ ঠিক করার জন্য একটি একক স্থির করছেন যা কৃষি ক্ষেত্রে, রাসায়নিক ও চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। এ এককে কোন এক লিটার দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণ ১০ গ্রাম হলে এ দ্রবণটির পিএইচ ৬ বলে ধরা হয়, অর্থাৎ পিএইচ এককে একে বলা হয় পিএইচ ৬। সমীকরণ অনুযায়ী দেখা যাবে – –

 

পিএইচ মান ও হাইড্রোজেন আয়ন:

১। কোন দ্রবণের পিএইচ মান যত কম হবে তার সক্রিয় হাইড্রোজেনের পরিমাণ তত বাড়বে। অর্থাৎ দ্রবণের সক্রিয় হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্ব ১০, ১০, ১০ হলে ইহার পিএইচ মান যথাক্রমে ১,২,৩……………… ১৪ হবে।

২। প্রত্যেক ছোট এককের পিএইচ ইহার পরবর্তী বড় এককের চেয়ে দশ গুণ বেশি অর্থাৎ দশ গুণ অত্ব বেড়ে যায়। যেমন পিএইচ ৬ এর হাইড্রোজেন আয়ন ও অত্ব পিএইচ ৭ এর চেয়ে দশ গুণ বেশি ।

৩। মৃত্তিকায় হাইড্ৰেজেন আয়ন বাড়লে স্নত্ব বৃদ্ধি পায়।

8। অম্লত্ব ও ক্ষারকত্ব নির্দেশক স্কেলের সাহায্যে পিএইচ নির্ণয় করা যায়।

৫ ৷ অম্লত্ব ও ক্ষারকত্ব স্কেল ১ থেকে ১৪ পর্যন্ত একক নির্দিষ্ট থাকে।

৬। মৃত্তিকার হাইড্রোজেন আয়ন ও পিএইচ মান বাড়ানো বা কমানো সম্ভব।

 

মৃত্তিকায় অম্লতার কারণ:

১। বায়ুতে কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড প্রভৃতি যৌগ থাকে যেগুলো বৃষ্টির পানিতে দ্রবীভূত হয়ে মাটিতে নেমে আসে এবং এসিড উৎপত্তির উৎস হিসাবে কাজ করে ।

২।  মাটিতে নাইট্রিক, সালফিউরিক, ফসফরিক প্রভৃতি এসিড অল্প বিস্তর থাকে বলে জুতা বাড়ে।

৩। এমোনিয়ামঘটিত সার যথা : এমোনিয়াম নাইট্রেট, এমোনিয়াম সালফেট, ইউরিয়া প্রভৃতি মাটিতে জুতা যোগ করে।

8। জুতা তৈরির অন্যতম কারণ হচ্ছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মত ক্ষারক লবণ ক্ষয় হওয়া এবং আর্দ্র এলাকায় তা বৃদ্ধি পায়। কার্বন ডাই অক্সাইড পানির সাথে মিশে কার্বনিক এসিড তৈরি করে যা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম লবণের ক্ষয় ঘটায়।

৫। কোন কোন া শিলা যথা : গ্রানাইট ইত্যাদি থেকে উৎপন্ন মাটিতে আপনা থেকেই ক্ষারকের পরিমাণ কম থাকে ফলে তা বাড়ে। কতকগুলো খনিজ ত্ন শিলা থেকে উৎপন্ন হয়েও অধর্মী মাটি তৈরি করে।

৬। মাটিতে ফসল থাকলে ক্ষারের পরিমাণ কমে, পতিত জমিতে বাড়ে। আবার ঋতু ভেদেও তা সামান্য পরিমাণে বাড়ে কমে।

৭।  দুটি যোগায়ন হাইড্রোজেন ও এলুমিনিয়াম উপাদান বিক্রিয়ার মাধ্যমে মাটির দ্রবণের সংস্পর্শে এসে অত্ব সৃষ্টি করে।

৮।জৈব পদার্থের বিয়োজনের ফলে মাটিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসও প্রচুর উৎপন্ন হয় ফলে অম্লত্ব বাড়ে। CO2+ H2O HCO3, H2CO3 H + HCOTT

৯। এসিটিক এসিড, সাইট্রিক এসিড, অক্জালিক এসিড প্রভৃতি জৈব এসিডও মাটির তা বাড়ায়।

১০। এদেশের অনেক উচ্চ ও মাঝারী পাললিক ভূমি নীয় প্রকৃতির, কারণ অধিক বৃষ্টিপাতে চুয়ানী বেড়ে যায়। আবার মরুভূমি, জলাভূমি, পাহাড়ী অঞ্চলের মাটিও অধিক চূয়ানীর ফলে নীয় প্রকৃতির হয়ে যায়।

১১। উদ্ভিদের মূলের শ্বসন এবং মাটিস্থ অণুজীবসম হের শ্বসনের ফলে CO2 উৎপন্ন হয়। এ CO2 পানির সাথে বিক্রিয়া করে H’ আয়ন উৎপন্ন করে : CO2 + H20 = H + HCO3 মৃত্তিকাস্থিত বায়ুর CO2 কম বাফার সম্পন্ন মাটির পিএইচ উপরোক্ত বিক্রিয়ার মাধ্যমে কমিয়ে দেয়।

১২। মাটির সিলিকেট কোলয়েড লেগে থাকা (adsorbed) হাইড্রোজেন, এলুমিনিয়াম, লৌহ প্রভৃতি মাটিতে হাইড্রোজেন উৎপন্নের মাধ্যমে অম্লত্ব সৃষ্টি করে : Fe + H20 = Fe (OH)3 + H’,
Fe (OH)3 + H20 = Fe (OH)2 + H অনুরূপ ভাবে এলুমিনিয়াম ও হাইড্রোজেন আয়ন উৎপন্ন করে।

 

মাটিতে অম্লতার গুরুত্ব বা প্রভাব:

১। মাটির অম্লত্বের মান ৪ এর কম থাকলে অধিকাংশ গাছপালা কিংবা ফসলাদী জন্মায় না অথবা দুর্বল গাছপালা জন্মায় যেখানে ফলনের হার নিম্নমানের।

২। অম্লত্বের ফলে মাটিতে নাইট্রোজেনের অপচয় কম হয়। তা ছাড়া ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের প্রাপ্যতাও সমভাবে কমতে থাকে।

৩। অত্ব বাড়ার সাথে সাথে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম ও সালফার এর দ্রবণীয়তা কমতে থাকে বিশেষ করে তীব্র অযুক্ত মাটিতে ফসফরাসের দ্রবণীয়তা ব্যাপক হ্রাস পায়।

8। অম্ল মাটিতে মলিবডেনাম, ম্যাঙ্গানিজ ও বোরন এর প্রাপ্যতা বাড়তে থাকে তবে তীব্র অম্লতা কমে যায় ।

৫ । অম্ল মাটিতে লৌহ, কপার ও দস্তার প্রাপ্যতা বেড়ে যায়। তা ছাড়া মাটিতে এলুমিনিয়ামের বিষাক্ততা ঘটায়।

৬। মৃত্তিকা স্নাতা অণুজৈবিক কার্যাবলী, জৈব পদার্থ বিয়োজন ও রাসায়নিক সারের রূপান্তর কমায়।

৭। অম্ল মাটিতে বীজের অংকুরোদগম ভাল হয় না এবং ফসলের গুণাগুণের ওপর প্রভাব ফেলে।

৮।অম্ল ধর্মী মৃত্তিকায় অণুজীবের কার্যাবলীতে প্রভাব ফেলে যা উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও শস্য উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৯। কী সার কতটুকু প্রয়োগ করতে হবে মৃত্তিকা পিএইচ তা বলে দেয় এবং কী পরিমাণ চুন প্রয়োগ করতে হবে তা নিশ্চিত করতে পারে।

১০। কোন্ মাটিতে কোন্ ফসল জন্মাতে হবে তা মৃত্তিকা পিএইচ দ্বারা নির্ণীত হয়। যেমন পাহাড়িয়া অম্ল মাটিতে চা ভাল জন্মে।

১১। ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতার ওপর মৃত্তিকা অম্লতা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে ।

 

পিএইচ মান ভিত্তিক মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ:

পিএইচ মান ভিত্তিক মৃত্তিকা তিন প্রকার যথা ঃ

১। অত্ন বা অত্নীয় মৃত্তিকা – পিএইচ মান ৭ এর কম।
২। নিরপেক্ষ বা প্রশম মৃত্তিকা – পিএইচ মান ৭।
৩। ক্ষার বা ক্ষারীয় মৃত্তিকা – পিএইচ মান ৭ এর উপরে ।

মৃত্তিকা হাইড্রোজেন ও হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণের ভিত্তিতে মাটির অম্লতা ৪ ভাগে এবং ক্ষারকত্বকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায় (টেবিল-১)। টেবিল-১। পিএইচ মান ভিত্তিক মৃত্তিকার অম্লত্ব ও ক্ষারকত্বের শ্রেণীবিভাগ ঃ

মৃত্তিকার অত্নত্ব ও শস্য উৎপাদন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অধিকাংশ ফসলাদী ৫.০-৭.৫ পিএইচ মানের মধ্যে ভাল জন্মে। এখানে এদেশে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ফসলের পাশাপাশি উত্তম পিএইচ মান দেখানো হলো ঃ ধান (৫.০-৬.৬), গম, তামাক ও মিষ্টি আলু (৫.৫-৭.৫), আখ, তুলা, তরমুজ, টমেটো ও ডাল জাতীয় শস্য (৬.০-৭.৫), বাদাম ( ৫.৩-৬.৬), গোল আলু ( ৫.৫-৭.০) এবং চা (৫.২-৫.৮)।

 

মৃত্তিকার বাফার ক্ষমতা:

কোন দ্রবণে সামান্য এসিড বা ক্ষার যোগ করলে যদি দ্রবণের পিএইচ মানের পরিবর্তন না হয় বা অতি সামান্য পরিবর্তিত হয় তবে ঐ দ্রবণকে বাফার দ্রবণ বলা হয়। মাটিতে অবস্থিত কার্বনেট, বাইকার্বনেট ও জৈবযৌগ বাফারিং দ্রব্য হিসাবে কাজ করে। মাটিতে অণুজীবের ক্রিয়ার ফলে অনবরত জৈব এসিড উৎপন্ন হয় যা উৎকৃষ্ট বাফার দ্রব্য হিসাবে কাজ করে। অত্নমান স্থায়ীত্বের জন্য মৃত্তিকায় অধিক বাফার ক্ষমতা থাকা দরকার । বাফার ক্ষমতাসম্পন্ন মাটিতে উদ্ভিদ পরিপুষ্টি নিশ্চয়তা অধিক। মাটির বুনট, সংযুক্তির প্রকার এবং জৈব পদার্থের প্রকার ও পরিমাণের ওপর বাফার ক্ষমতা নির্ভর করে ।

 

ক্ষার মাটির বৈশিষ্ট্য:

কোন মাটিতে যখন ক্ষার জাতীয় লবণ বিশেষতঃ সোডিয়াম কার্বনেটের আধিক্য ঘটার ফলে কোলয়েড মাইসেলিতে এ জাতীয় আয়ন সংখ্যায় বেশি হয়ে পড়ে তখন একে ক্ষার মাটি বলা হয়।

 

ক্ষার মাটির বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

পিএইচ মান ৭ এর উপর থাকে। বিনিময়যোগ্য সোডিয়াম শতকরা ১৫ শতাংশের বেশি থাকে। ক্ষারীয় বিক্রিয়ার জন্য বেশ কিছু জৈব পদার্থ জলীয় দ্রবণে চলে আসে এবং পানি আস্তরন সৃষ্টি করে। শুকিয়ে গেলেনিচের স্তরে প্রচুর কাদা কণা জমে প্রিজম আকৃতির ও স্তম্ভাকৃতির সৃষ্টি করে। ভূ-ত্বকের কোন কোন স্থানে সাদা সাদা চাপবাধা কিংবা কালো রঙের চকচকে মাটির স্তর দেখা যায়। ভূ-ত্বকের মাটি শক্ত হয়ে পড়ে, ফলে চাষ দেয়া কষ্টকর।
বাবলা, খেজুর বিশেষ করে যে সকল গাছপালা লবণ সহ্য করতে পারে ঐ সকল ভাল জন্মে। তবে ধান চাষও সম্ভব।

 

ক্ষার মাটি ও গাছপালা:

মাটির ক্ষার ধর্ম গাছপালার পক্ষে মোটেই অনুকূল নয়। পাঁচটি উপায়ে ইহা প্রতিকূল বিক্রিয়ার সৃষ্টি করে যথা ঃ

(১) অত্যন্ত তীব্র ক্ষারের ক্ষতিকর প্রভাব।

(২) কার্বনেট আয়নের বিষক্রিয়া।

(৩) বিনিময়যোগ্য সোডিয়াম আয়নের ক্ষতিকর প্রভাব।

(৪) ফসফেট আয়নকে গাছপালার গ্রহণের অযোগ্য করে দেয়।

(৫) গাছপালার নাইট্রেট গ্রহণে ক্ষতিকর প্রভাব।

 

ক্ষার মাটি গাছপালার যে সকল ক্ষতি সাধন করে এগুলো হচ্ছে :

১। গাছপালার বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।

২। লবণের গাঢ়তা বা ক্ষারের তীব্রতা বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়, কখনও দেরীতে হয় আবার কখনও একেবারেই হয় না।

৩। মাটির লবণের গাঢ়তা বা ক্ষারের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে চারা গাছ মরে যায়।

8।ক্ষারের তীব্রতায় গাছের পাতা পুড়ে যেতে পারে।

৫ ৷ মাটির ক্ষারের সংস্পর্শে গাছপালার শিকড়ের অংশ বিশেষ নষ্ট হয়ে যায়।

 

ক্ষার মাটিকে চাষাবাদের উপযোগী করা:

মৃত্তিকা ক্ষার দ র করার সাথে দুটি শর্ত জড়িত –

(ক) মাটির কোলয়েড ও দ্রবণ থেকে অতিরিক্ত লবণ বিদ রিত করতে হবে।

(খ) মাটির কোলয়েড থেকে সোডিয়াম দূর করে দিয়ে তার পরিবর্তে ক্যালসিয়াম আয়নের স্থান করে দিতে হবে।

এ দুটি শর্ত পূরণের লক্ষে নিবর্ণিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে : –

১। জমির জরীপ করতে হবে।

২। জমি কীভাবে ক্ষারধর্মী হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য নিতে হবে এবং সুষ্ঠু পুনরুদ্ধার পদ্ধতির মাধ্যমে মাটিকে দ্রুত চাষাবাদ উপযোগী করে তোলা সম্ভব।

৩। জমির ঢাল ও স্বাভাবিক পানি নিষ্কাশনের নালা তৈরি করা।

8। পানি সেচ সীমিত করতে হবে। তাছাড়া পানির লবণাক্ততা পরীক্ষা ছাড়া চাষাবাদের ব্যবহার ঠিক নয়।

৫ । ক্ষার সহ্য করতে পারে এমন ফসল নির্বাচন করতে হবে।

৬।  মাটির ক্ষার বা লবণাক্ততা দুর করার পাশাপাশি উর্বরতার কথাও ভাবতে হবে।

৭। বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করেও ক্ষার কমানো সম্ভব। এক্ষেত্রে কালো ক্ষার মাটিতে সালফার, হাইড্রোজেন আয়ন দুর করতে চুনা পাথর ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।

৮।কখন কীভাবে কত পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে হবে তাও সময়মত ঠিক করতে হবে।

 

ক্ষার মাটি পুনরুদ্ধার পদ্ধতি:

ক্ষার মাটিকে বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে পুনরুদ্ধার সম্ভব যথা ঃ

(১) জল নিষ্কাশন

(2) সেচ দিয়ে পাবিত করা

(৩) চাচিয়া পরিস্কার করা

(৪) বাস্থবায়ন কমাবার ব্যবস্থা করা, যেমন : মালচিং প্রয়োগ করা।

(৫) সেচ খাল ও নালা পাকা করা

(৬) পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব ও সবুজ সার প্রয়োগ

(৭) অন্য স্থান থেকে উর্বর মাটি আনয়ন করে তা ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

 

মৃত্তিকা দ্রবণ

মৃত্তিকা দ্রবণ – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়” এর “বাউবি বিএই ১২০৪ – মৃত্তিকা বিজ্ঞান” বিষয় এর ইউনিট ৩ এর পাঠ ৩.২।

 

মৃত্তিকা দ্রবণ

 

চলুন প্রথমেই জেনে নেই – মৃত্তিকা দ্ৰবণ কী ? মৃত্তিকায় অবস্থিত পানিতে দ্রবণীয় লবণাদি বিদ্যমান থাকার নামই মৃত্তিকা’ দ্রবণ। বিশেষ করে কোলয়েড কদম ও হিউমাসের মিশ্রণকে মৃত্তিকা’ দ্রবণ বলে। এখানে গাছের পুষ্টি উপাদান আয়নিক আকারে দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। অন্য কথায়, মৃত্তিকা রন্ধ্রে বা ফাঁকা স্থানে যে পানি থাকে তাতে বিভিন্ন জৈব ও অজৈব লবণ দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। মৃত্তিকা পানিতে দ্রবীভূত এ লবণকে মৃত্তিকা’ দ্রবণ বলে। মৃত্তিকা ‘দ্রবণ পরিবর্তনশীল। মৃত্তিকায় সার প্রয়োগ করলে তা দ্রবণে মিশে যায়।

 

 

মৃত্তিকা দ্রবণের বৈশিষ্ট্য:

১। পানির চেয়ে মৃত্তিকা’ দ্রবণের ঘনত্ব অধিক এবং মৃত্তিকায় পানি কমে গেলে দ্রবীভূত লবণের ঘনত্ব আরও বৃদ্ধি পায়।

২। আর্দ্র ও বৃষ্টিবহুল এলাকার মাটিতে মৃত্তিকা’ দ্রবণের ঘনত্ব কম কিন্তু খরা সমৃদ্ধ গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে মৃত্তিকা ‘দ্রবণের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।

৩। ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে ১৫ সে.মি. জায়গায় প্রতি হেক্টরে ১০০-৫০০ কেজি দ্রবীভূত লবণ বিদ্যমান।

8।কোন মৃত্তিকায় দ্রবণীয় লবণের ঘনত্ব শতকরা ০.৫ ভাগের অধিক হলে উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর।

৫। অম্ল ও ক্ষার ধর্ম মৃত্তিকা’ দ্রবণের আর এক বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ মৃত্তিকা ‘দ্রবণ অত্ন বা ক্ষারধর্মী হয়।

৬। এঁটেল মাটিতে মৃত্তিকা’ দ্রবণের ঘনত্ব বেশি এবং বেলে মাটিতে কম থাকে।

 

 

মৃত্তিকা দ্রবণে দ্রবীভূত লবণের উৎস:

মৃত্তিকা’ দ্রবণে দ্রবীভূত লবণের প্রধান উৎসসমূহ হচ্ছে :

(১) উৎস বাস্প বা পেরেন্ট ম্যাটেরিয়াল

(২) জৈব ও অজৈব সার

(৩) উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবশিষ্টাংশ

(8) সেচের পানি

(৫) বৃষ্টির পানি

(৬) ভূগর্ভস্থ পানি

(৭) জোয়ারের পানি (সামুদ্রিক )

 

 

মৃত্তিকা দ্রবণের উপাদানে পার্থক্যের কারণ:

অসংখ্য কারণে মৃত্তিকা’ দ্রবণের উপাদানে পার্থক্য ঘটে, তন্মধ্যে মূল কারণগুলো হচ্ছে :

(১) আবহাওয়া ও জলবায়ু

(২) স্থান বা জায়গা

(৩) জনসংখ্যার চাপ

(৪) মানুষের নিত্য ক্রিয়াকর্ম

(৫) মৃত্তিকার ভৌত ধর্ম

(৬) মৃত্তিকা উৎস বস্তুর প্রকৃতি, প্রভৃতি

 

মৃত্তিকা দ্রবণের উপাদানে আয়নিক অবস্থা:

মৃত্তিকায় বিভিন্ন দ্রবণের পরিমাণ থাকে শতকরা প্রায় ১ ভাগ। মৃত্তিকা’ দ্রবণে বিদ্যমান আয়ন সমূহ হচ্ছে :

১। মৃত্তিকা’ দ্রবণে Na, Cat, K, Mg 2+ প্রভৃতি ক্যাটায়নের প্রাধান্য লক্ষণীয়।

২। মৃত্তিকা ‘দ্রবণে NO3, NH, POTH POT, SO, Zn 2, Fet প্রভৃতি অ্যানায়ন ও ক্যাটায়নগুলোও বিদ্যমান।

 

মৃত্তিকা দ্রবণের প্রধান অংশসমূহ:

১। পানি
২। কদম কোলয়েড – কেওলিনাইট, ইলাইট
৩। হিউমাস বা জৈব কোলয়েড, হিউমিক এসিড, ফালভিক এসিড
8। ধনাত্বক আয়ন – Ca2+, Mg 2+, K, Na, Zn2+, Fest, NH”, Mn”, H’, ইত্যাদি।
৫। ঋনাত্বক আয়ন SO 2, NO CI, H, POT, PO, HPO4 ইত্যাদি।
৬। দ্রবীভূত অক্সিজেন
৭। জৈব এসিড, ইত্যাদি।

 

মৃত্তিকা দ্রবণের গুরুত্ব:

১। মৃত্তিকা ‘দ্রবণের উপাদান জানার ফলে সঠিক শস্যের আবাদ সম্ভব।

২। দ্রবণে গাছপালা ও শস্যের অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান আয়নিক আকারে দ্রবীভূত থাকে।

৩। মৃত্তিকা’ দ্রবণ উদ্ভিদ ও জীবাণুর খাদ্য ভান্ডারস্বরূপ কিন্তু দ্রবীভূত লবণের ঘনত্ব শতকরা ০.৫ ভাগের বেশি হলে তা উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর 1

৪।  মৃত্তিকা ‘দ্রবণ শিলাক্ষয় ও সংযুক্তি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৫। দ্রবণের মাধ্যমে উদ্ভিদ খাদ্যোপাদান চলাচল করে, ফলে উদ্ভিদ সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করে যা উচ্চ ফলনের জন্য প্রয়োজন ।

৬। অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা প্রভৃতি কারণে দ্রবণের ঘনত্বে তারতম্য ঘটলে গাছপালার প্রয়োজনমত পুষ্টি সংগ্রহে ব্যাঘাত ঘটে ফলে ফলন কমে আসে।

৭। মৃত্তিকা দ্রবণ মৃত্তিকার ভারসাম্য রক্ষায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে।

৮। ভূগর্ভস্থ পানি দ্রবণে হেভী মেটাল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

৯। আয়ন বিনিময়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। যা উদ্ভিদ কর্তৃক পুষ্টি উপাদানের প্রাপ্যতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।

 

মৃত্তিকার রাসায়নিক উপাদান

আজকের আলোচনার বিষয় হলো মৃত্তিকার রাসায়নিক উপাদান। এই পাঠটি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের “স্কুল অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট” এর বিএজেড স্তরের “বাউবি বিএই ১২০৪ – মৃত্তিকা বিজ্ঞান” কোর্সের ইউনিট ৩, “বাংলাদেশের কৃষি” এর পাঠ ৩.১ অন্তর্ভুক্ত।

মৃত্তিকার রাসায়নিক উপাদান

 

মৃত্তিকায় উপস্থিত রাসায়নিক পদার্থগুলিকে মৃত্তিকার রাসায়নিক উপাদান বলা হয়। বিভিন্ন প্রকার মৃত্তিকায় রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণ ও গঠন ভিন্ন হয়, যা নির্ভর করে মাটির ধরন, ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু ও পরিবেশগত অন্যান্য কারণের উপর। মৃত্তিকার রাসায়নিক গঠন মাটির উর্বরতা, গঠন ও কৃষি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মৃত্তিকার প্রধান রাসায়নিক উপাদান

মৃত্তিকার প্রধান উপাদান হিসেবে সাধারণত সিলিকন অক্সাইড (SiO₂) ও এলুমিনিয়াম অক্সাইড (Al₂O₃) পাওয়া যায়, যা মোট মাটির ওজনের প্রায় ৮০-৮৫% অংশ দখল করে। এছাড়াও জৈব পদার্থ ও অন্যান্য মৌলিক পুষ্টি উপাদান মিলে মোট মৃত্তিকার প্রায় ৯৮% গঠন করে। বাকি অংশে থাকে বিভিন্ন খনিজ ও অণুজীব।

মৃত্তিকার রাসায়নিক উপাদানের তালিকা

উপাদান রাসায়নিক সংকেত ভূমিকা বৈশিষ্ট্য
সিলিকন অক্সাইড SiO₂ মৃত্তিকার প্রধান খনিজ, মাটির গঠন ও কঠোরতা বৃদ্ধি করে।
এলুমিনিয়াম অক্সাইড Al₂O₃ মাটির বেসিক কাঠামো গঠন করে।
আয়রন অক্সাইড Fe₂O₃ মাটির রঙ (লাল, হলুদ) নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।
ক্যালসিয়াম কার্বনেট CaCO₃ মাটির pH নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
পটাশিয়াম K উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান।
ফসফরাস P উদ্ভিদের শক্তি ও বৃদ্ধি বাড়ায়।
নাইট্রোজেন N উদ্ভিদের পাতা ও শাখা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
জৈব পদার্থ জীবজন্তুর অবশেষ, মাটির উর্বরতা ও পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
জল H₂O রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ ও পুষ্টি দ্রবণীয় করে।

 

মৃত্তিকার রাসায়নিক উপাদানের ভিন্ন ধরণের মাটিতে উপস্থিতির তুলনামূলক পরিমাণ (শতকরা)

উপাদান বেলা (Sand) মাটি (%) এঁটেল (Clay) মাটি (%) দোআঁশ (Loam) মাটি (%)
সিলিকা (SiO₂) ৮৪-৯২ ৬৪-৬৫ মধ্যম
এলুমিনা (Al₂O₃) ৩-৪ ৯-১৪ ৩-৪
আয়রন অক্সাইড (Fe₂O₃) মধ্যম
ক্যালসিয়াম অক্সাইড ০.০৬-০.৪ ১-২ ০.০৬-০.৪
ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড ০.২৯-০.৫২ ১-৩ ০.২৯-০.৫২
পটাশিয়াম অক্সাইড ০.১৪-০.৭ ০.১৪-০.৭ ০.১৪-০.৭
সোডিয়াম অক্সাইড ০.০১-০.০৮ অপ্রচলিত ১ (দোআঁশে)
ফসফরাস পেন্টা অক্সাইড ০.০১-০.৩ ০.০১-০.৩ ০.০১-০.৩

(সূত্র: মজুমদার, ১৯৮৫)

 

মৃত্তিকার রাসায়নিক উপাদানের বিভিন্ন অবস্থা

মৃত্তিকার উপাদানগুলো তিনটি অবস্থায় থাকে:

১. উদ্ভিদের গ্রহণ অযোগ্য: যেমন প্রোটিন, যা সরাসরি উদ্ভিদের জন্য প্রাপ্য নয়।

২. বিনিময়যোগ্য বা কোলয়েডের সাথে যুক্ত: যেমন ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ইত্যাদি, যা মাটির কণার সাথে আটকে থাকে এবং সময়ে সময়ে উদ্ভিদের জন্য সরবরাহ হয়।

৩. দ্রবণে বিদ্যমান আয়ন: উদ্ভিদ যখন মাটির দ্রবণে থাকে, তখন তা গ্রহণ করে।

শুষ্ক অঞ্চলের মৃত্তিকার বিশেষতা

শুষ্ক এলাকায় ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইডের পরিমাণ বেশি থাকে। এছাড়া বিভিন্ন মৃত্তিকায় এলুমিনিয়াম, লৌহ, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, টাইটানিয়াম অক্সাইড, ভ্যানাডিয়াম, সেলোনিয়াম, আয়োডিন ও ফ্লোরিনের পরিমাণ বিভিন্ন মাত্রায় বিদ্যমান থাকে।

জৈব পদার্থের গুরুত্ব

অধিকাংশ কৃষি জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ সাধারণত ২% এর নিচে থাকে, যা মাটির উর্বরতার জন্য অপর্যাপ্ত। তবে বনভূমি, আবর্জনা পচানো স্থল এবং পিট মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি। জৈব পদার্থ মৃত্তিকায় পানি ধারণ ক্ষমতা, পুষ্টি চক্র এবং মাটির গঠন উন্নত করে।

 

মৃত্তিকায় ভারী খনিজ উপাদান:

মৃত্তিকায় খনিজ ও জৈব উপাদান ছাড়াও কিছু ভারী ধাতব উপাদান (Heavy Metals) অল্প পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। এদের সাধারণত “ট্রেস এলিমেন্টস” বা “অতি ক্ষুদ্র পরিমাণে বিদ্যমান উপাদান” বলা হয়। এসব উপাদান একদিকে যেমন প্রাকৃতিকভাবে মৃত্তিকায় থাকে, অন্যদিকে শিল্প ও কৃষিজ দূষণের মাধ্যমে অতিরিক্তভাবে মৃত্তিকায় জমা হতে পারে।

 

ভারী খনিজ উপাদান কী?

ভারী খনিজ উপাদান বলতে বোঝায় এমন ধাতব বা অর্ধধাতব মৌল, যাদের ঘনত্ব সাধারণত ৫ গ্রাম/সেমি³-এর বেশি এবং যারা কম ঘনত্বে হলেও বিষাক্ত প্রভাব ফেলে। এদের অধিকাংশই বিষাক্ত এবং মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে থাকলে মৃত্তিকার উর্বরতা, ফসলের গুণমান এবং মানবস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

মৃত্তিকায় সাধারণত পাওয়া যায় এমন ভারী খনিজ উপাদানসমূহ:

ক্রম ভারী খনিজ উপাদান রাসায়নিক প্রতীক উৎস/প্রবেশপথ স্বাস্থ্যে কৃষিতে প্রভাব
সীসা (Lead) Pb ব্যাটারি, রঙ, বর্জ্য স্নায়ু ক্ষতি, শিশুদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত
ক্যাডমিয়াম Cd সার, শিল্পবর্জ্য, প্লাস্টিক কিডনি বিকল, ক্যান্সার, হাড় দুর্বলতা
পারদ (Mercury) Hg থার্মোমিটার, ব্যাটারি, শিল্প দূষণ স্নায়ুতন্ত্র বিকল, মানসিক ভারসাম্যহীনতা
আর্সেনিক As ভূগর্ভস্থ পানি, কীটনাশক ক্যান্সার, চর্মরোগ, হৃদরোগ
ক্রোমিয়াম Cr চামড়া শিল্প, রঙ, রাবার ত্বক ও শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা
নিকেল Ni ইস্পাত, সার, ব্যাটারি অ্যালার্জি, ক্যান্সার
তামা (Copper) Cu বৈদ্যুতিক তার, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ অধিকমাত্রায় ক্ষতিকর, কমমাত্রায় প্রয়োজনীয়
জিংক Zn সার, দস্তার পাত্র, শিল্পবর্জ্য অধিকমাত্রায় গ্যাস্ট্রো সমস্যার সৃষ্টি
লোহা (Iron) Fe প্রাকৃতিকভাবে মৃত্তিকায় বিদ্যমান সাধারণত ক্ষতিকর নয়; তবে অতিরিক্ত মাত্রায় সমস্যা

 

ভারী খনিজ উপাদানের উৎস:

  1. শিল্পবর্জ্য কারখানা নিঃসরণ: চামড়া শিল্প, ধাতু প্রক্রিয়াজাত শিল্প, কাগজ কল ইত্যাদি থেকে ভারী ধাতব উপাদান নির্গত হয়।
  2. রাসায়নিক সার কীটনাশক: বিশেষত ফসফেট সার এবং আর্সেনিকযুক্ত কীটনাশক ভারী ধাতুর অন্যতম উৎস।
  3. শহরাঞ্চল যানবাহনের ধোঁয়া: সীসাযুক্ত জ্বালানি, পুরনো রঙ ও ব্যাটারির মাধ্যমে সীসা ও ক্যাডমিয়াম ছড়ায়।
  4. ভূ-গর্ভস্থ প্রাকৃতিক উৎস: মাটির ভৌম-গঠন অনুসারে কিছু ভারী ধাতু প্রাকৃতিকভাবেই বেশি মাত্রায় থাকতে পারে।

 

প্রভাব ও ঝুঁকি

  • কৃষিতে প্রভাব: ভারী ধাতব উপাদান উদ্ভিদের কোষ বিভাজন, প্রোটিন সংশ্লেষণ এবং ক্লোরোফিল গঠনে বাধা দেয়, ফলে ফসলের বৃদ্ধি ও ফলন কমে।
  • মানব স্বাস্থ্যে প্রভাব: ভারী ধাতব উপাদান খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে দীর্ঘমেয়াদে মানুষের শরীরে জমা হয়ে ক্যান্সার, কিডনি রোগ, স্নায়ুবিক সমস্যা ইত্যাদি ঘটায়।

 

বাংলাদেশে প্রাসঙ্গিকতা

বিশেষ করে আরসেনিক ক্যাডমিয়াম সমস্যা বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে গুরুতর। শিল্প এলাকা ও সেচে ব্যবহৃত দূষিত পানির কারণে মৃত্তিকায় ভারী ধাতব উপাদানের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।

মৃত্তিকা বুনট পরীক্ষা

মৃত্তিকা বুনট পরীক্ষা – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়” এর “স্কুল অব এগ্রিকালচার এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট” এর “বিএজেড” স্তরের “বাউবি বিএই ১২০৪ – মৃত্তিকা বিজ্ঞান” এর “ইউনিট ২” এর “বাংলাদেশের কৃষি” এর পাঠ – ২.৮।

মৃত্তিকা বুনট পরীক্ষা (ব্যবহারিক)

 

ক) মাঠ পদ্ধতিতে মৃত্তিকা নমুনার বুনট নির্ণয়:

প্রয়োজনীয় উপকরণ:

১। সংগৃহীত মৃত্তিকা নমুনা (পূর্ববর্তী পাঠে উল্লিখিত পদ্ধতি অনুসারে মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ করুন)।

২। পানি।

কাজের ধাপ:

১। প্রথমে আধ মুঠো গুঁড়ো করা মৃত্তিকা নমুনা নিন।

২। মৃত্তিকা নমুনার সাথে পরিমিত পানি মেশান।

৩। হাত দিয়ে ভিজা মৃত্তিকার দলা বানানোর চেষ্টা করুন। অতঃপর দলা পর্যবেক্ষণ করুন এবং নিম্নরূপ সিদ্ধান্ত নিন।

  • হাতের চাপে দলা সৃষ্টি না হলে অর্থাৎ মৃত্তিকা কণা আলগা থেকে গেলে নমুনার বুনট বালি হবে। বড় দলা না হয়ে ছোট দলা তৈরি হলে নমুনার বুনট দো-আঁশ বালি হবে।
  • মৃত্তিকা নমুনাকে চ্যাপ্টা রিবন বানাতে গেলে যদি তা টুকরা টুকরা হয়ে ভেঙ্গে যায় তবে নমুনার বুনট বেলে দো-আঁশ হবে। নমুনাকে আংটি বানাতে গেলে তা যদি ভেঙ্গে যায় সেই নমুনার বুনট দো-আঁশ ও পলি দো-আঁশ হবে।
  • নমুনাকে যদি ফাঁটল যুক্ত আংটি বানানো যায় তবে নমুনার বুনট এঁটেল দোআঁশ হবে।
  • মৃত্তিকা নমুনাকে দিয়ে ভাল রকম আংটি বানানো গেলে তা হবে এঁটেল বুনট সম্পন্ন মৃত্তিকা।

৪। আপনার পরীক্ষীত নমুনার ফলাফলসহ বিবরণী ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করে যথাসময়ে নির্ধারিত টিউটরকে দেখিয়ে স্বাক্ষর নিন।

 

খ) গবেষণাগার পদ্ধতিতে মৃত্তিকার বুনট নির্ণয়
গবেষণাগারে দুটি পদ্ধতিতে মৃত্তিকা বুনট নির্ণয় করা হয়।

১।পিপেট পদ্ধতি
২।হাইড্রোমিটার পদ্ধতি

পিপেট পদ্ধতিটি বেশি জটিল। তবে এটি অধিকতর সূক্ষ্ণ এবং ফলাফল বেশি সঠিক। কিন্তু জটিলতার কথা বিবেচনা করে হাইড্রোমিটার পদ্ধতিটি আলোচনা করা হলো। কারণ হাইড্রোমিটার পদ্ধতিটি সহজ ও তুলনামূলক দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।

প্রয়োজনীয় উপকরণ

সংগৃহীত মৃত্তিকা নমুনা (পূর্ববর্তী পাঠে উল্লিখিত পদ্ধতি অনুসারে মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ করুন) পানি।

কাজের ধাপ

  • প্রথমে আধ মুঠো গুঁড়ো করা মৃত্তিকা নমুনা নিন। মৃত্তিকা নমুনার সাথে পরিমিত পানি মেশান।
  • হাত দিয়ে ভিজা মৃত্তিকার দলা বানানোর চেষ্টা করুন। অতঃপর দলা পর্যবেক্ষণ করুন এবং নিম্নরূপ সিদ্ধান্ত নিন।
  • হাতের চাপে দলা সৃষ্টি না হলে অর্থাৎ মৃত্তিকা কণা আলগা থেকে গেলে নমুনার বুনট বালি হবে। বড় দলা না হয়ে ছোট দলা তৈরি হলে নমুনার বুনট দো-আঁশ বালি হবে।
  • মৃত্তিকা নমুনাকে চ্যাপ্টা রিবন বানাতে গেলে যদি তা টুকরা টুকরা হয়ে ভেঙ্গে যায় তবে নমুনার বুনট বেলে দো-আঁশ হবে। নমুনাকে আংটি বানাতে গেলে তা যদি ভেঙ্গে যায় সেই নমুনার বুনট দো-আঁশ ও পলি দো-আঁশ হবে।
  • নমুনাকে যদি ফাঁটল যুক্ত আংটি বানানো যায় তবে নমুনার বুনট এঁটেল দোআঁশ হবে।
  • মৃত্তিকা নমুনাকে দিয়ে ভাল রকম আংটি বানানো গেলে তা হবে এঁটেল বুনট সম্পন্ন মৃত্তিকা।
  • আপনার পরীক্ষীত নমুনার ফলাফলসহ বিবরণী ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করে যথাসময়ে নির্ধারিত টিউটরকে দেখিয়ে স্বাক্ষর নিন।

 

খ) গবেষণাগার পদ্ধতিতে মৃত্তিকার বুনট নির্ণয়

গবেষণাগারে দুটি পদ্ধতিতে মৃত্তিকা বুনট নির্ণয় করা হয়। পিপেট পদ্ধতি হাইড্রোমিটার পদ্ধতি পিপেট পদ্ধতিটি বেশি জটিল। তবে এটি অধিকতর সূক্ষ্ণ এবং ফলাফল বেশি সঠিক। কিন্তু জটিলতার কথা বিবেচনা করে হাইড্রোমিটার পদ্ধতিটি আলোচনা করা হলো। কারণ হাইড্রোমিটার পদ্ধতিটি সহজ ও তুলনামূলক দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।

পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলকে নিচের উদাহরণের ন্যায় হিসেব করে মৃত্তিকা নমুনার বালি, পলি ও কর্দম কণার শতকরা হার বের করুন। অতঃপর তা মৃত্তিকা বুনট নির্ণয়ের Marshall’s Triangular Co-ordinates এ বসিয়ে আপনার নমুনার বুনট শ্রেণি নির্ণয় করুন।

 

মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতির ব্যবহারিক

মৃত্তিকা বিজ্ঞান (Unit-2, Lesson 2.7) বিষয়ক আজকের আলোচনার বিষয় “মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি”। মাটির বৈশিষ্ট্য, উর্বরতা এবং উৎপাদনশীলতা নির্ধারণের জন্য সঠিকভাবে মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধুমাত্র গবেষণা এবং বিশ্লেষণের নির্ভুলতা নিশ্চিত করতেই নয়, বরং ফসল উৎপাদন, মাটির স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও সহায়ক। এ পাঠে আমরা মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহের মৌলিক নীতিমালা, সঠিক পদ্ধতি, এবং নমুনা সংরক্ষণের সেরা প্র্যাকটিসগুলো নিয়ে আলোচনা করবো, যা মাটির গুণগত মান নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

🔶 পাঠ শেষে আপনি —

♦ পরীক্ষার জন্য মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও পাত্রের তালিকা তৈরি করতে পারবেন।
♦ জমি থেকে মৃত্তিকার ক্ষেত্রনির্ধারিত নমুনা সংগ্রহ করতে পারবেন।
♦ সংরক্ষিত মৃত্তিকার নমুনা পরীক্ষার বিভিন্ন নির্দেশনা পালন করতে পারবেন।
♦ মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহের ট্যাগ লাগানোর সঠিক নিয়ম মেনে চলতে পারবেন।

ক) মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি:

ফসলের আকাঙ্ক্ষিত ফলন না পাওয়া বা উৎপন্ন ফসলের বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া অনেকাংশে মাটির গুণাগুণের উপর নির্ভর করে। আকাঙ্ক্ষিত ফলন পেতে হলে মাটির বর্তমান অবস্থা ও উৎপাদনশীলতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন।

মৃত্তিকা উপাদান

যে পরিমাণ রাসায়নিক উপাদান জৈবপদার্থ এবং খনিজ মাটিতে উপস্থিত থাকে তার উপরে মাটির মান নির্ভর করে। এই কারণে মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহের আগে মাটির উপাদানের ধরন জানা গুরুত্বপূর্ণ।

 

মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহের উপকরণ:

উপকরণ ব্যবহার
(ক) কোদাল/ খোন্তা/ নিড়ানী/ বেলচা/ অগার মাটির পৃষ্ঠ থেকে নির্দিষ্ট গভীরতা পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হয়। অগার মূলত গভীর এবং নির্দিষ্ট আকারের মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হয়।
(খ) প্লাস্টিক বালতি / পলিথিন শীট মাটির নমুনা সংগ্রহের পরে তা ভালভাবে মিশ্রণের জন্য এবং প্রাথমিক স্তরে বড় পাথর বা শিকড় আলাদা করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
(গ) পলিব্যাগ ও সুতলি নমুনা সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি নমুনাকে আর্দ্রতা, ধুলা এবং দূষণ থেকে রক্ষা করে।
(ঘ) লেবেলের কাগজ ও পেন্সিল নমুনার পরিচয় নিশ্চিত করতে এবং স্থান, তারিখ, নমুনা সংখ্যা ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করার জন্য প্রয়োজন হয়। পেন্সিল ব্যবহার করা হয় কারণ এটি আর্দ্র অবস্থায়ও দীর্ঘস্থায়ী থাকে।
(ঙ) হ্যান্ড গ্লাভস এবং মাস্ক নমুনা সংগ্রহের সময় হাত ও মুখকে মাটির জীবাণু ও রাসায়নিক থেকে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়।
(চ) পিএইচ স্ট্রিপ বা ডিজিটাল পিএইচ মিটার (ঐচ্ছিক) নমুনা সংগ্রহের সময় প্রাথমিক মাটির অম্লতা নির্ধারণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
(ছ) পকেট নাইফ বা ছুরি শিকড়, পাথর, বা অপ্রয়োজনীয় উপাদান সরানোর জন্য ব্যবহার হয়।
(জ) নমুনা সংগ্রহের নোটবুক/ফিল্ড ডায়েরি নমুনা সংগ্রহের স্থান, সময়, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিপিবদ্ধ করার জন্য প্রয়োজন হয়।
(ঝ) জিপিএস ডিভাইস বা মোবাইল জিপিএস অ্যাপ নমুনা সংগ্রহস্থলের সঠিক স্থানাঙ্ক নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা ভবিষ্যতে মাটির মানচিত্র তৈরি করতে সহায়ক।

 

জমি থেকে কীভাবে কম্পোজিট মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ করবেন:

কাজের ধাপ:

জমির ৪ সীমানা থেকে ২-৩ মিটার বা ৪-৬ হাত ভিতরে চিত্র অনুযায়ী সমান্তরালভাবে সমদূরত্ব বজায় রেখে ৯টি স্থান থেকে মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ করুন। রাস্তা বা বাঁধের নিকটবর্তী স্থান/পরিত্যক্ত ইটের ভাটা/সদ্য সার প্রয়োগকৃত জমি/ গোবর বা কম্পোস্ট কিংবা যে কোন আবর্জনা স্তূপীকৃত এরকম একটি মিশ্র নমুনা কেবল একটি খন্ড/প্লট হতেই নিতে হবে। একাধিক প্লটের মাটির নমুনা পরীক্ষা করতে হলে প্রতি খন্ড থেকে আলাদা মিশ্র নমুনা সংগ্রহ করতে হবে।

জায়গা/ফসলের নাড়া পোড়ানো জায়গা থেকে মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ করবেন না। উল্লেখ্য যে, মাটির মৃত্তিকা সংগ্রহের আগে জমির এক স্থানে গর্ত করে কর্ষণ স্তরের গভীরতা দেখে নিন। সাধারণতঃ রোপা ধানের জমিতে কর্ষণ স্তরের নিচে শক্ত “কর্ষণ তল’ থাকে, নমুনা সংগ্রহ কালে কর্ষণ তল বাদ যাবে। কর্ষণ স্তরে গভীরতা জানার পর জমির আয়তনের মতো চিত্র অনুযায়ী জমির ৯টি স্থান চিহ্নিত করুন।

পরিষ্কার কোদাল বা খন্তা বা যে কোন খনন যন্ত্রের সাহায্যে কর্ষণ স্তরের গভীরতা পর্যন্ত ‘V’ আকৃতির গর্ত করুন এবং এক পাশ থেকে ৪ আঙ্গুল পরিমাণ (৭-৮ সে.মি.) পুরু মাটির ঢাকা তুলে চাকাটির দুই পাশ এবং কর্ষণ তলের অংশে (যদি থাকে) কেটে বাদ দিয়ে চাকাটি প্লাষ্টিক বালতিতে বা পলিথিন শীটের উপর রাখুন। একইভাবে ৯টি স্থান থেকে সংগৃহিত একই পরিমাণ মাটি বালতি/পলিথিন শীটে রাখুন। উল্লেখ্য যে, হাল দেওয়া জমি থেকে মাটি এমনভাবে নিতে হবে যাতে ঢেলাযুক্ত কিংবা গুঁড়োকর্ষণ স্তরের সম্পূর্ণ অংশই সমপরিমাণে সংগ্রহ করা হয়।

ক কর্ষণ স্তর, খ- মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহের উপকরণ;

গ- মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ’ পদ্ধতি, ঘ- মৃত্তিকা নমুনা সংরক্ষণে সহায়ক উপকরণ।

সংগ্রহীত মৃত্তিকার নমুনা ভালভাবে মিশ্রিত করুন:

পরিষ্কার বালতি কিংবা পলিথিন শিটে রাখা সংগৃহীত মৃত্তিকার নমুনার চাকাগুলো পরিষ্কার হতে গুড়ো করে ভালভাবে মেশান। মিশ্রিত মাটি ছায়াযুক্ত স্থানে শুকিয়ে তা থেকে আধা কেজি পরিমাণ শুকনো গুড়ো মাটি পলিথিন ব্যাগে রাখুন।

 

খ)মৃত্তিকা নমুনা সংরক্ষণ পদ্ধতি:

মৃত্তিকা নমুনা সংরক্ষণের উপকরণ তালিকা:

 

ক্র.নং উপকরণ সংক্ষিপ্ত বিবরণ
কাঠের শক্ত হাতুড়ি মাটি বা মৃত্তিকা খণ্ড ভাঙা এবং নমুনা সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত শক্ত কাঠের হাতুড়ি।
পুরু পলিথিন শীট মাটির নমুনা শুকানো এবং ছাঁকানোর সময় মাটি ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে ব্যবহৃত হয়।
প্লাস্টিক বা কাঁচের বোতল মাটির নমুনা দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়।
ফরমালিন মাটির নমুনার জীবাণুনাশক সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ।
১০ মেশ চালনি মাটি ছাঁকতে এবং কণা আকার নির্ধারণে ব্যবহৃত ছিদ্রযুক্ত চালনি।
তথ্য কার্ড নমুনা সংগ্রহের তারিখ, স্থান, গভীরতা, মাটির ধরন, সংগ্রাহকের নাম ইত্যাদি তথ্য লিপিবদ্ধ করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
স্প্যাচুলা বা খুরপি মাটি খনন, সংগ্রহ ও ছোট খণ্ডগুলো আলাদা করতে ব্যবহৃত সরঞ্জাম।
মাপার স্কেল বা টেপ মাটির স্তরের গভীরতা নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়।
নমুনা ব্যাগ বা পাত্র সংগ্রহ করা মাটির নমুনা সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত ব্যাগ বা পাত্র।
১০ ফলকের খুর বা কোদাল মাটি খনন এবং কাটা সহজ করতে ব্যবহৃত সরঞ্জাম।
১১ নিরাপত্তা গ্লাভস ফরমালিন বা অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থের সংস্পর্শ থেকে হাত রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়।
১২ লেবেল বা স্টিকার প্রতিটি নমুনার পাত্র বা ব্যাগে নমুনার পরিচিতি সংক্রান্ত তথ্য লাগানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
১৩ নোটবুক ও পেন্সিল/কলম নমুনা সংগ্রহের বিস্তারিত তথ্য লিপিবদ্ধ করতে ব্যবহৃত হয়।
১৪ পানি স্প্রে বোতল শুকনো মাটির নমুনা ভিজিয়ে বিশ্লেষণের আগে সঠিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয়।
১৫ ছোট ব্রাশ নমুনার মাটির ছোট কণা পরিষ্কার করতে ব্যবহৃত হয়।

 

মৃত্তিকা নমুনা সংরক্ষণের ধাপসমূহ:

ধাপ নং কাজের বিবরণ
শুকানো: সংগ্রহিত মৃত্তিকা ছায়াযুক্ত স্থানে পলিথিন শীটে ছড়িয়ে দিন এবং সম্পূর্ণ শুকিয়ে নিন। সরাসরি সূর্যালোক বা অতিরিক্ত তাপে শুকানো এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে মাটির গুণাগুণ পরিবর্তিত হতে পারে।
গুঁড়ো করা ও মিশ্রণ: শুকানো মৃত্তিকা কাঠের হাতুড়ি বা স্প্যাচুলা দিয়ে গুঁড়ো করুন এবং ভালভাবে মিশ্রণ করুন যাতে নমুনা সমজাতীয় হয়।
ছাঁকনি ব্যবহার: গুঁড়ো করা মৃত্তিকা ১০ মেশ চালনি দিয়ে ছেঁকে নিন, যাতে বড় কণা ও অমেধ্য দূর হয়।
সংরক্ষণ: ছাঁকানো মৃত্তিকা পরিষ্কার ও শুকনো পলিব্যাগ, কাঁচ বা প্লাস্টিকের বোতলে ভরে রাখুন। পাত্রটি অবশ্যই বায়ুরোধী হতে হবে।
লেবেলিং: প্রতিটি পাত্রে স্পষ্টভাবে লেবেল লাগান, যাতে নিম্নলিখিত তথ্য থাকে: নমুনা সংগ্রহের তারিখ, স্থান, গভীরতা, জমির নাম, পূর্ববর্তী ফসল, সার প্রয়োগের ইতিহাস ইত্যাদি।
সংরক্ষণের স্থান: প্রস্তুতকৃত নমুনা ঠান্ডা ও শুষ্ক স্থানে, যেমন আলমারি, শেল্ফ বা ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। সরাসরি সূর্যালোক ও তাপ থেকে দূরে রাখুন।
বিশ্লেষণের জন্য প্রেরণ: নমুনা সংগ্রহের পর যত দ্রুত সম্ভব বিশ্লেষণাগারে প্রেরণ করুন, যাতে নমুনার গুণাগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে।

 

লেবেল বা ট্যাগের নমুনা

 

মৃত্তিকা নমুনা সংরক্ষণের পরামর্শ ও সতর্কতা

ক্র.নং পরামর্শ ও সতর্কতা
নমুনা সংগ্রহের সময় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি মরিচাবিহীন এবং পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন হওয়া আবশ্যক।
একই জমি বা প্লটের মাটি অন্য জমি বা প্লটের মাটির সাথে মেশানো যাবে না।
সংগ্রহের জন্য নির্বাচিত প্লটের মাটি পরিমিত আর্দ্র কিংবা শুকনো হওয়া প্রয়োজন।
কর্ষণ স্তরের গভীরতা পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করতে হবে (সাধারণত ০-১৫ সেমি)।
মাটি গুঁড়ো করার জন্য ধাতব হাতুড়ি বা ধাতব পাত্র ব্যবহার করা যাবে না, কারণ এতে মাটির রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হতে পারে।
তথ্য কার্ড সঠিকভাবে লাগাতে হবে, যাতে নমুনা সম্পর্কে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য স্পষ্টভাবে চিহ্নিত থাকে।
নমুনা সংগ্রহের সময় জমি কাদা অবস্থায় থাকলে বা সম্প্রতি সার প্রয়োগ করা হলে নমুনা সংগ্রহ এড়িয়ে চলুন।
বড় গাছের নিচ, গোবর স্তুপ, খেতের বাঁধ বা নিকাশি নালার কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করবেন না, কারণ এসব স্থানে মৃত্তিকার গুণাগুণ ভিন্ন হতে পারে।
প্রতিটি নমুনার ওজন প্রায় ৫০০ গ্রাম রাখা উচিত, যা বিশ্লেষণের জন্য যথেষ্ট।
১০ নমুনা সংগ্রহের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শুকানো ও প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন করুন, যাতে নমুনার গুণাগুণ বজায় থাকে।
১১ নমুনা শুকানোর সময় সরাসরি সূর্যালোক বা অতিরিক্ত তাপে শুকানো এড়িয়ে চলুন।
১২ নমুনা প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের সময় সব সময় পরিষ্কার হাত গ্লাভস ব্যবহার করুন।
১৩ নমুনা ব্যাগ বা বোতলে নমুনা সংরক্ষণের আগে তা সম্পূর্ণ শুকানো এবং পরিস্কার হওয়া উচিত।
১৪ নমুনা পাত্রে স্পষ্টভাবে লেবেল লাগান, যাতে নিম্নলিখিত তথ্য থাকে: নমুনা সংগ্রহের তারিখ, স্থান, গভীরতা, জমির নাম, পূর্ববর্তী ফসল, সার প্রয়োগের ইতিহাস ইত্যাদি।
১৫ নমুনা ঠান্ডা ও শুষ্ক স্থানে, যেমন আলমারি, শেল্ফ বা ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন।
১৬ নমুনা সংগ্রহের পরে যত দ্রুত সম্ভব বিশ্লেষণাগারে প্রেরণ করুন, যাতে নমুনার গুণাগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে।