আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ছাগলের খামার ব্যবস্থাপনা। বাংলাদেশে ছাগল অন্যতম গৃহপালিত পশু। ছাগী ৭-৮ মাসের মধ্যে বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা অর্জন করে। এটি একসাথে ২-৩টি বাচ্চা দেয়ার কারণে কৃষকের নিকট খুব জনপ্রিয়। একটি ছাগল খাসি ১২-১৫ মাসের মধ্যে ১৫-২০ কেজি হয়ে থাকে। ছাগলের মাংস খুব সুস্বাদু। তাই বাজারে এ ছাগলের অনেক চাহিদা রয়েছে। ছাগলকে গরিবের গাভী বলা হয়।কারণ গাভী পালনের জন্য প্রাথমিক মূলধন, বাসস্থান ও খাদ্য বেশি লাগে।
Table of Contents
ছাগলের খামার ব্যবস্থাপনা
লাভজনকভাবে খামার স্থাপনের জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে খামার পরিচালনার জন্য খামারের স্থায়ী এবং দৈনন্দিন যাবতীয় কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সম্পাদন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণকেই খামার ব্যবস্থাপনা বলে। উন্নত খামার ব্যবস্থানায় নিম্নে বর্ণিত বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে নজর দিতে হয়।
১। খামার স্থান
উঁচু পানি জমে না, এরকম খোলা আলো-বাতাস পূর্ণ জায়গায় খামার স্থাপন করলে ব্যবস্থাপনা সহজতর হয়। ছাগলের ব্যবহার উপযোগী গাছ এবং ঘাস চাষের সুবিধা থাকলে ভালো হয়। পর্যাপ্ত পরিষ্কার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা থাকতে হবে। সংযোগ সড়ক ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২। খামারের ঘর
বিভিন্ন বয়সের এবং জাতের জন্য আলাদা ঘর, খাদ্য গুদাম অফিস: ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখতে হবে। ঘরগুলো সারিবদ্ধভাবে সুবিন্যস্ত হলে খাদ্য দেওয়া এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা সহজ হয়। ঘর মাটিতে অথবা খুঁটির উপর মাচাতে যেভাবে করলে সুবিধা হয় সেভাবে করতে হবে। ঘর যাতে স্যাঁতসেঁতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা ঠান্ডা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় ছাগল অসুস্থ হয়ে পড়ে।
৩। খামারের দৈনন্দিন
কার্যক্রম প্রতিদিন সকালে ৭-৮ টার মধ্যে ছাগল আঙ্গিনায় ছেড়ে দিয়ে ঘর পরিষ্কার করতে হবে। খাবার এবং পানির পাত্র ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। ছাগলের অল্পতেই ঠান্ডা লাগে। তাই শীতকালে বাচ্চার জন্য মেঝেতে খড় ও ছালা দিয়ে। বিছানা করে দিতে হয়।
ছাগলের বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো
দিনে ৩-৪ বার বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। বাচ্চা যাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ দুধ পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মায়ের দুধের অভাব হলে গর দুধ খাওয়াতে হবে।
ছাগলের দুধ দোহন :
প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে দুধ দোহন করতে হবে। অধিক দুধ উৎপাদনকারী ছাগলের দুধ সকাল বিকালে দুবেলা দোহন করা যেতে পারে। খাদ্য প্রদান প্রতিদিন নিয়ম মত সকাল এবং বিকাল দুবেলায় ছাগলকে প্রয়োজন মত সুষম খাদ্য দিতে হবে। মাঠে ছাড়ার ব্যবস্থা না থাকলে আঁশ জাতীয় খাদ্য ঘরে সরবরাহ করতে হবে। পরিষ্কার পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করতে হবে।
ছাগলের শরীর পরিষ্কার করা
ছাগল পানি ভয় পায়। তাই নিয়মিত গোছলের পরিবর্তে ব্রাশ নিয়ে ঘসে শরীর পরিষ্কার করতে হয়। এতে উকুন জাতীয় পোকা বা ময়লা বেরিয়ে আসে।
ছাগলের স্বাস্থ্য পরিচর্যা :
ছাগলকে নিয়মিত কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে এবং সময়মত টাকা প্রদান করতে হয়। ছাগল অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। খামারের সর্বাঙ্গীণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। দৈনন্দিন স্বাস্থ্যসম্মত তথ্য রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে। অনুৎপাদনশীল ছাগল বাছাই করে তা বিক্রি করে দিতে হবে। ছাগলের কানে নাম্বার লাগিয়ে ছাগলকে চিহ্নিত করা যায়। শ্রমিক ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে হবে। দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করলে ২ জন শ্রমিকের পক্ষে ২০০ ছাগল দেখাশোনা করা সম্ভব।
ছাগল খামারের নথিপত্র
১। সম্পদের রেজিষ্ট্রার
২। ছাগলের স্টক রেজিস্টার । বিভিন্ন বয়সে এবং জাতের জন্য আলাদাভাবে রেকর্ড রাখতে হবে।
৩। দুধ ও মাংস উৎপাদন রেজিস্ট্রার।
৪। খাদ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার রেজিস্ট্রার।
৫। প্রজনন রেজিস্ট্রার।
৬। বাচ্চার উৎপাদন রেজিস্ট্রার।
৭। স্বাস্থ্য পরিচর্যা-,টাকা, চিকিৎসা ইত্যাদির রেজিস্ট্রার।
৮। ছাগলের মৃত্যুর রেজিষ্টার।
৯। শ্রমিক হাজিরার রেজিষ্ট্রার।
১০। আয়-ব্যয়ের রেজিস্ট্রার।
সারমর্ম
ছাগলকে সুস্থ-সবল রাখতে হলে এবং বেশি দুধ ও মাংস পেতে হলে আঁশ জাতীয় লতাপাতা, সবুজ ঘাস, শাক শব্জী ও উচ্ছিষ্ট খাদ্য দ্রব্যের সাথে সাথে দানাদার খাদ্যও দিতে হয়। ছোলা, ভুট্টা বা গম ভাঙ্গা, তিল বা চিনা বাদামের খৈল, গমের ভূষি, খনিজ মিশ্রণ ও লবণ, পরিমাণমতো মিশিয়ে দানাদার খাদ্য মিশ্রণ তৈরি করতে হয়।
বাচ্চাকে প্রতি পাঁচ কেজি ওজনের দৈনিক ৫০ গ্রাম জন্য একটি ছাগিকে দৈনিক ৩৫০ গ্রাম এবং উন্নত পাঁঠাকে ৫০০-১০০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য দিতে হয়। সাথে প্রচুর পরিষ্কার পানিও সরবরাহ করতে হয় লাভজনকভাবে খামার স্থাপনের জন্য সুষ্ঠু খামার ব্যবস্থানা অপরিহার্য।