ছাগলের বাসস্থান ও পরিচর্যা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ছাগলের বাসস্থান ও পরিচর্যা।

ছাগলের বাসস্থান ও পরিচর্যা

 

গ্রামাঞ্চলে পারিবারিক পর্যায়ে ছাগল পালনের জন্য আলাদা বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয় না। গোয়ালঘর, বারান্দা বা রান্নাঘরের এক কোণায় রাত্রিবেলা ছাগলের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সারাদিন মাঠে-ঘাটে চরার পর শুধু রাত্রি বেলা ছাপল এসব ঘরে রাখা হয়। কিন্তু একসাথে অনেক ছাগল পালন করলে বা ছাগলের খামার স্থাপন করলে ছাগলের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান তৈরি করতে হয়। ছাগল সাধারণত স্যাঁতসেঁতে ভেজা জায়গায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই ছাগলের বাসস্থান শুকনা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। ছাগলের ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ছাগলের ঘর দুই রকমের হতে পারে। যেমন-

১। ভূমির উপর স্থাপিত ঘর

এ ধরনের ঘরের মেঝে কাঁচা আধা-পাকা বা পাকা হতে পারে। ঘরের মেঝেতে কিছু শুকনা খড় বিছিয়ে দিলে ভালো হয়। তবে ঘর সব সময় শুকনা এবং পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতে হবে।

২। খুটির উপর স্থাপিত ঘর

মাটি থেকে ১ থেকে ১.৫ মিটার উচুতে এ ঘর তৈরি করা হয়। এ জাতীয় ঘরে বাঁশ, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে ঘরের মেঝেতে মাচা তৈরি করা হয়। মাচার বাঁশ বা কাঠ সামান্য ফাঁক ফাঁক করে লাগালে গোবর ও চানা নিচে পড়ে যাবে। এতে ঘর পরিষ্কার করতে সুবিধা হয়। ফাঁক বেশি হলে ছাগলের পা আটকে যেতে পারে। ৪ বর্গমিটার মেঝেতে ছাগলের ১০টি বাচ্চা পালন করা যায়। বিভিন্ন ধরনের ছাপলের জন্য মেঝের প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ নিম্নে দেওয়া হলো:

প্রতিটি বাচ্চা ছাগলের জন্য

০.৪ বর্গমিটার

১.৫ বর্গমিটার

প্রতিটি ছাগীর (অগর্ভাবস্থায়) জন্য

২.০ বর্গমিটার

৩০ বর্গমিটার

প্রতিটি ছাগীর (গর্ভাবস্থায়) জন্য প্রতিটি পাঁঠার জন্য। ছাগলের ২ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট একটি দোচালা ঘর তৈরি করতে হবে। ঘরের বেড়া মুলিবাঁশ দিয়ে দেওয়া যায়। তবে মেঝে থেকে আধা মিটার পর্যড় ইটের দেওয়াল তৈরি করে তার উপর মুলিবাঁশের ফাঁকা ছিদ্রযুক্ত বেড়া বা তারের নেট দিলে ভালো হয়। এতে ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পাওয়া যাবে। তবে বৃষ্টির সময় বা অধিক শীতে চট দিয়ে দিতে হবে। যাতে বৃষ্টির পানি ঢুকতে না পারে এবং ঠান্ডা লাগতে না পারে।

 

ছাগলের পরিচর্যা:

ফাগলকে সুস্থ সবল এবং উৎপাদনশীল রাখার জন্য সূর্য পরিচর্যার প্রয়োজন।

 

 

সাধারণ পরিচর্যা :

• ছাগলকে ঘর থেকে বের করে দিনের বেলায় খোলা জায়গায় চরতে দিতে হবে।
• ছাগলের ঘর ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।
• ছাগলকে নিয়মিত সুষম খাবার দিতে হবে। পানি এবং খাবার পাত্র ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। • কোন ছাগল অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
• সকল বয়সের ছাগলকে নিয়মিত কৃমি নাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে এবং টাকা দিতে হবে।

বিশেষ পরিচর্যা :

নবজাত বাচ্চা, গর্ভবর্তী ছাগল এবং প্রজননের পাঁঠার জন্য বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন হয়।

বাচ্চার পরিচর্যা

বাচ্চার সঠিক যত্নের উপর শারীরিক বৃদ্ধি নির্ভর করে। বাচ্চা প্রসবের পরপরই বাচ্চার নাক মুখের লালা পরিষ্কার করে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। শরীর পরিষ্কার করে দিতে হবে। নাভী রজ্জু দেহ থেকে ২.৫ থেকে ৩.০০ সে.মি. বাড়তি রেখে জীবানুমুক্ত কাঁচি দিয়ে কেটে দিতে হবে।

কাটার পর উক্তস্থানে টিংচার আয়োডিন বা জীবাণুনাশক ওষুধ লাগাতে হবে। বাচ্চার জন্মের ১-২ ঘণ্টার মধ্যেই শাল দুধ বা কলড্রামখাওয়াতে হবে। একাধিক বাচ্চা জন্ম হলে মায়ের দুধ পর্যাপ্ত নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে বাচ্চাকে আলাদাভাবে দুধ খাওয়াতে হবে।

একটি বাচ্চা ছাগলকে জন্মের প্রথম সপ্তাহে দৈনিক ৩০০-৩২৫ মিলি দুধ খাওয়াতে হয়। দুই সপ্তাহ বয়স হলে দুধের সাথে ঘাস, পাতা, দানাদার খাদ্য খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। দুমাস বয়স পর্যন্ত বাচ্চাকে মায়ের দুধ পান করানো যায়। ৩ মাস বয়সে পুরুষ এবং স্ত্রী বাচ্চা আলাদা রাখা ভালো।

ছাগীর পরিচর্যা

স্ত্রী বাচ্চা ৬ মাস বয়সে বয়প্রাপ্ত হয়। তবে ৮-৯ মাস বয়সে প্রজনন করতে হয়। ছাগীর গর্ভধারন কাল প্রায় ৫ মাস। প্রসবের অন্তত ১ সপ্তাহ পূর্বে ছাগীকে আলাদা করে বিশেষ ভাবে নজর রাখতে হবে। গর্ভবতী ছাগীকে উঁচু মাছায় উঠতে দেওয়া যাবে না।

প্রসবের জন্য খড় বিছিয়ে বিছানা করে দিতে হয়। বাচ্চা প্রসবের পর গর্ভের ফুল স্বাভাবিক ভাবে বের হয়ে না আসলে চিকিৎসকের সাহায্যে নিতে হবে। প্রসবের পূর্বে ওলান দুধে পূর্ণ হয়ে ওঠে। অনেক সময় ওলান বেশি শক্ত হয়ে যাবে। এসময় দুধ ফেলে দিতে হয়। নতুবা ওলান প্রদাহ হতে পারে।

পাঠার পরিচর্যা :

পাঁঠার পরিচর্যা সঠিক না হলে ভালো বাচ্চা পাওয়া যাবে না। পাঁঠাকে নিয়মিত সুষম খাবার দিতে হবে। সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্রাশ দিয়ে ঘসে পরিষ্কার করতে হবে। একটি পাঠার জন্য ১.৫ ০০২০২ মিটার মাপের ঘর প্রয়োজন। সুষম খাদ্য এবং সঠিকভাবে যত্ন নিলে একটি পাঠা ১০-১২ বছর বয়স পর্যন্ত প্রজননের জন্য ব্যবহার করা যায়।

সারমর্ম

ছাগল সাধারণত মাংস ও দুধ উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের চামড়া পৃথিবীখ্যাত। এক বছরে দুবার এবং প্রতিবারে গড়ে ২ টি বাচ্চা দেয়। বিভিন্ন জাতের ছাগলের লোম থেকে গরম কাপড় তৈরি করা হয়।

ছাগলের ঘর দুরকমের হয়ে থাকে।

১। ভূমির উপর স্থাপিত ২। খুটির উপরে স্থাপিত।

চার বর্গমিটার মেঝেতে ১০টি ছাগলের বাচ্চা পালন করা যায়। ছাগলকে সুস্থ, সবল ও উৎপাদনশীল রাখার জন্য সুষ্ঠু পরিচর্যার প্রয়োজন। বাচ্চা, গর্ভবর্তী ও পাঁঠার বিশেষভাবে যত্ন নিতে হয়। ৮-৯ মাস বয়সে স্ত্রী বাচ্চাকে প্রজনন করাতে হয়। ছাগলের গর্ভধারণ কাল সাধারণত ৫ মাস।

By একাডেমিক ডেস্ক, কৃষি গুরুকুল

কৃষি গুরুকুলের একাডেমিক ডেস্ক

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version