দেশী গবাদি পশুর পরিচিতি

দেশী গবাদি পশুর পরিচিতি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-দেশী গবাদি পশুর পরিচিতি। বাংলাদেশের অধিকাংশ গরুই দেশী। এদেরকে প্রকৃতপক্ষে বিশেষ কোন জাত বা উন্নত জাতের বলা যাবে না। এরা জেবু অর্থাৎ (Bos indicus) (বস ইন্ডিকাস) প্রজাতিভুক্ত। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশে ঘরে ঘরে গরু পালিত হয়ে আসছে। উৎপাদন ক্ষমতা কম হলেও এরা এদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে খাপ খেয়ে টিকে আছে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে সমস্ত গরু আছে তাদেরকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।

(ক) দেশী জাতের গরু।

(খ) উন্নত বিদেশী জাতের গরু।

(গ) উন্নত সংকর জাতের গরু।

 

দেশী গবাদি পশুর পরিচিতি

 

 

(ক) দেশী জাতের গরু :

আমাদের দেশে অধিকাংশ গরুই দেশী জাতের। এরা আকারে ছোট। একটি প্রাপ্তবয়স্ক গরুর ওজন ১৫০-২৫০ কেজি মাত্র। দেশী জাতের গরুর কুঁজ উঁচু হয় এবং এদের গায়ের রং বিভিন্ন ধরনের। যেমন- সাদা, কাল, লালো, ধূসর ইত্যাদি। এদের দুধ উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম। একটি গাভী দৈনিক ১.৩ লিটার মাত্র দুধ দিয়ে থাকে। এদের কাজ করার ক্ষমতাও কম।

দেশী জাতের গরুকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- (১) লাল হাঁটগেয়ে গরু, (২) মাঝারি আকারের গরু এবং (৩) ছোট আকারের সাধারণ গরু।

(১) লাল চাঁটগায়ে গরু :-

চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এ জাতের গরুর উৎপত্তিস্থল। এরা দেখতে বেশ সুন্দর। এদের গায়ের রং হালকা লাল। গলকম্বল ছোট, ঘাড় চিকন। এদের দুধ উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ২-৩ লিটার।

২) মাঝারি আকারের গরুঃ

পাবনা, সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে এ ধরনের গরু পাওয়া যায়। আকারে এরা অন্যান্য অঞ্চলের গরুর চেয়ে আকারে বড় এবং এদের দুধ উৎপাদন ক্ষমতাও কিছুটা বেশি। ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকার কোন কোন অঞ্চলেও এ ধরনের গরু পাওয়া যায়।

 

 

(৩) দেশী ছোট গরু :

বাংলাদেশের সর্বত্র এ ধরনের গরু দেখা যায়। এরা আকারে খুব ছোট এবং এদের দুধ উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক এক লিটার বা তারও কম। দেশী জাতের গরু প্রথম বাচ্চা দেয় সাড়ে তিন থেকে চার বৎসর বয়সে। দেশী গরু ছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে উন্নত জাতের বিদেশী ফ্রিজিয়ান ও শাহীওয়াল জাতের গরু পাওয়া যায়। এরা মূলত দুধ উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। তবে আকারে বড় হওয়ায় এদের থেকে অনেক বেশি মাংসও পাওয়া যায়। এ জাতের গাভী ৫০০-৬০০ কেজি ওজনের হয়।

এরা দৈনিক ৩০ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়। বিদেশী উন্নত জাতের গরুর সাথে দেশী গাভীর প্রজনন করে উন্নত সংকর জাতের গরু সৃষ্টি করা যায়। উন্নত ফ্রিজিয়ান ও শাহীওয়াল জাতের গরুর সাথে দেশী গরুর প্রজনন করে বাংলাদেশে সংকর জাতের গরু সৃষ্টি করা হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ২০ লক্ষ উন্নত সংকর জাতের গরু আছে। এদের মাংস ও দুধ উৎপাদন ক্ষমতা দেশী গরুর চেয়ে অনেক বেশি।

এরা আমাদের আবহাওয়ার সাথে অনেকটা খাপ খাইয়ে নিতে পারে। উন্নত জাতের এবং সংকর জাতের গরু সাধারণত ৩ বছরের কম বয়সে প্রথম বাচ্চা দেয়। সংকর জাতের গরু থেকে দৈনিক গড়ে ১০ থেকে ১৫ লিটারের বেশি দুধ পাওয়া যায়।

 

 

মহিষ :

আমাদের দেশে উপকূলীয় অঞ্চল, চরের নিম্নাঞ্চলে হাল চাষ এবং গাড়ি টানার জন্য মহিষ পালন করা হয়ে থাকে। এদের থেকে দুধও পাওয়া যায়। আমাদের দেশে মহিষের কোন উল্লেখযোগ্য জাত নেই। ভারত ও পাকিস্তানের মুরা, সুরভি এবং নিলি রাভী মহিষের দুধের জন্য প্রসিদ্ধ। এরা সর্বোচ্চ ১৫-২০ লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে। ভেড়া : চরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভোড়া পালন করা হয়। আমাদের দেশী ভেড়া খুব একটা উন্নত মানের নয় শুধুমাত্র মাংস উৎপাদনের জন্য এদের পালন করা হয়।

সারমর্ম

দেশী জাতের গরু আকারে ছোট। এদের মাংস ও দুধ উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম। তবে এরা আমাদের আবহাওয়ায় টিকে থাকতে পারে। দেশী গরুকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। (১) চট্টগ্রামের লাল গরু (২) মাঝারি আকারের গরু এবং (৩) ছোট আকারের সাধারণ গরু। বিদেশী উন্নত জাত ও সংকর জাতের গরু থেকে অধিক পরিমাণে দুধ ও মাংস পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ২০ লক্ষ সংকর জাতের গরু আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *