বৃক্ষ মেলার উপযোগী প্রজাতি নির্বাচন

বৃক্ষ মেলার উপযোগী প্রজাতি নির্বাচন নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয়ের ১৬ নং ইউনিটের ১৬.২ নং পাঠ।বৃক্ষ মেলা বাংলাদেশের শহর ও গ্রামে বসবাসকারী মানুষদের মাঝে বৃক্ষ রোপণের ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করতে হয়েছে। এজন্য বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে সফলতা লাভ করতে হলে সঠিক প্রজাতির বৃক্ষ নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব স্থানে সব প্রজাতির বৃক্ষের চারা রোপণ করা যায় না। ভূমির প্রকৃতি, মাটির বৈশিষ্ট, আর্থ-সামাজিক পরিবেশ ইত্যাদির উপর বিবেচনা করে বৃক্ষের চারা রোপণ করলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব।

বৃক্ষ মেলার উপযোগী প্রজাতি নির্বাচন

 

নিম্নে স্থানভেদে কোথায় কি বৃক্ষ লাগাতে হবে তার তালিকা প্রদান করা হলো :

ক. বসত বাড়ির আশে পাশে লাগানোর গাছ :

আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, জাম, বেল, নিম্ন সুপারি, নারিকেল, আমড়া, কামরাঙ্গা, ডালিম, কুল, লেবু, লিচু, সজিনা, তেজপাতা, শরিফা, আতা ইত্যাদি। বাড়ীর সম্মুখে পাতাবাহার ও অন্যান্য ফুলের গাছ ও সব্জীর বাগান থাকবে। বাড়ীর উত্তম পশ্চিমে উচু বড় বৃক্ষ এবং দক্ষিণে-পূর্বে নীচু ও মাধ্যম উচ্চতার বৃক্ষ লাগাতে হবে যাতে বাড়িতে প্রচুর আলো বাতাস পাওয়া যায়।

 

খ. কৃষি জমির ধারে ও আইলে রোপণের উপযোগি বৃক্ষ :

কৃষি জমির বাউন্ডারিতে জীবন্ত বেড়ার প্রজাতি যেমন- অড়হর, ডোলকমলি, ফণিমণসা ইত্যাদি। কৃষি জমির আইলে শিকড় কম বিস্তারকারী কিন্তু গভীরমূলী, ডাল পালা ছাটাইযোগ্য বৃক্ষ যেমন- বাবলা, আকাশমনি, সাদা কড়ই, কালো কড়ই, মিনজিরি, ইপিল ইপিল, ঘোড়ানিম ইত্যাদি।

গ. পুকুর পাড়ে লাগানোর উপযোগী বৃক্ষ :

পাড়ের মাটি শক্ত করে ধরে রাখতে পারে আবার পুকুরে রোদ প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি না করে এমন বৃক্ষ প্রজাতি নির্বাচন করা ভালো। যেমন : নারিকেল, সুপারি, তাল, লিচু, ডালিম, আম, খেজুর ইত্যাদি। পুকুরের উত্তর-পশ্চিম কোনায় বাঁশের ঝাড় সৃষ্টি করা যায়।

 

ঘ. রাস্তা ও সড়কের ধারের জন্য উপযোগী বৃক্ষ :

উঁচু সুদৃশ্য বৃক্ষ প্রজাতিসমূহের চারা যেমন- মেহগনি, শিশু, আকাশমনি ইউক্যালিপটাস, জারা, রেইনট্রি, সেগুন, শীল কড়ই, আম, জাম, কাঁঠাল, নিম, হরিতকী, অর্জুন, তেলসুর, পলাশ, কদম ইত্যাদি ।

 

ঙ. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনা :

প্রতিষ্ঠান সমূহের আঙিনা ও আশেপাশে শোভাবর্ধনকারী ও ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষের চারা রোপণ করতে হয়। যেমন-কৃষ্ণচূড়া, দোদরা, ইউক্যালিপটাস, জারা, নিম, আম, কাঁঠাল, লিচু, বকুল, কাঠবাদাম, সেগুন ইত্যাদি ।

 

চ. নদীর ধার ও বাঁধের উপযোগী বৃক্ষ :

বেশি শিকড় বিস্তার করে, শক্ত ও মজবুত, পানি সহিষ্ণু বৃক্ষ প্রজাতি যেমন : হিজল, ছাতিম, পিটালি, তাল খেজুর, বট, মান্দার, জিয়লগাজী, পিটালী ইত্যাদি।

 

ছ. ঘামের হাট বাজার :

ছায়া বিস্তার করে আবার পক্ষীকূলের খাদ্য ও আবাস উপযোগী বৃক্ষ প্রজাতি যেমন : বট, অশ্বত্থ, রেইনট্রি, তেঁতুল, মেহগনি, আম, জাম, কাঠাল ইত্যাদি।

 

জ. উচু অনাবাদি পতিত জমিতে :

ফলজ ও বনজ বৃক্ষ যেমন : আম, জাম, কাঁঠাল, আমলকি, বহেরা অর্জুন, নিম, মেহগনি, সেগুন, শীলকড়ই, আকাশমনি, মহুয়া, নাগেশ্বর ইত্যাদি।

 

ঝ. উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী তৈরীর উপযোগী বৃক্ষ :

লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এবং ঝড় ঝাপটা প্রতিরোধ সক্ষম বৃক্ষ প্রজাতি যেমন- তাল, নারিকেল, খেজুর, সুপারি, সোনালু, ঝাউ, আকাশমনি, জারা, গাব, গর্জন, তেতুল, অর্জুন, শিরিষ, শীলকড়ই, চম্পাফুল ইত্যাদি।

ঞ. স্যাঁতস্যাঁতে নিচু জমিতে :

জলাবদ্ধতা সহনশীল বৃক্ষ প্রজাতি যেমন- হিজল, কদম, পিটালি, বাঁশ, বেত, মূর্তা, মান্দার, জারঙ্গ, অশোক, শিমুল, ছাতিম, পইনাল, চালতা, পিতরাজ, কাঞ্চন, শেওড়া ইত্যাদি। ত. পাহাড়ি এলাকার জন্য উপযোগী বৃক্ষ : গর্জন, গামার, সেগুন, শীলকড়ই, চাম্পাফুল, চাপালিশ, কাঠাল, জলপাই, আকাশমনি ইত্যাদি ।

খ. বাড়ির ছাদে লাগানোর উপযোগী বৃক্ষ :

বাসা বাড়ির ছাদ বিশেষ করে শহর অঞ্চলের বাড়ির ছাদে গাছ লাগানোর একটি প্রবণতা উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ির ছাদে শাক-সব্জীর চারাই প্রধানত গুরুত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি বৃক্ষ জাতীয়

গাছপালা লাগাতে আগ্রহী হলে ফলজ, ঔষধি জাতীয় বৃক্ষ লাগানোই শ্রেয়। এজন্য উপযোগি বৃক্ষ যেমন: আম, সফেদা, লেবু, ডালিম, আমড়া, করমচা, আমলকি, কামরাঙ্গা, জামরুল, শরিফা ইত্যাদি।

 

By একাডেমিক ডেস্ক, কৃষি গুরুকুল

কৃষি গুরুকুলের একাডেমিক ডেস্ক

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version