মাছের খাদ্য প্রস্তুতকরণ ও সংরক্ষণ

মাছের খাদ্য প্রস্তুতকরণ ও সংরক্ষণ নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা। মাছের সব ধরণের খাবার তৈরি প্রক্রিয়া নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করবো।

Table of Contents

মাছের খাদ্য প্রস্তুতকরণ ও সংরক্ষণ

 

মাছের খাদ্য

 

 

মাছের খাদ্য: প্রাকৃতিক ও সম্পূরক:

মাছের খাদ্য: প্রাকৃতিক ও সম্পূরক – পাঠটি বাউবির “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয় এর ইউনিট – ৩ , পাঠ -৩.১। যে সকল দ্রব্য গ্রহণের ফলে মাছের দেহের বৃদ্ধিসাধন, ক্ষয়পূরণ, তাপ ও শক্তি উৎপন্ন হয় এবং বংশ বৃদ্ধি ঘটে সেগুলোকে মাছের খাদ্য বলে। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্যে খাদ্য একটি অপরিহার্য উপাদান। পরিমিত পরিমাণে খাদ্যের যোগান দিয়ে মাছের কাক্সিক্ষত উৎপাদন করা যায়। মাছের বংশ বৃদ্ধিতে খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সুষম খাদ্য গ্রহণে মাছে বৃদ্ধি ত্বরাণি¦ত হয় এবং মাছ যথাসময়ে যৌন পরিপক্কতা লাভ করে।

এতে মাছের জননগ্রন্থি (gonad) পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয় এবং ডিম্বাণু ও শুক্রাণু উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে যায়। মাছে জীবনযাত্রার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, যথা : রক্ত সংবহন, শ্বাসকার্য পরিচালনা, অভি¯্রবণীয় চাপ নিয়ন্ত্রণ, প্রলম্বন (Suspension) ও পানির ভিতরে স্থিতিবস্থায় অবস্থানের জন্যে প্রচুর পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন হয়। মাছ গৃহীত খাদ্য থেকেও শক্তি পেয়ে থাকে। শৈশবস্থা থেকেই মাছকে নিয়মিত ও সুষম খাদ্য সরবরাহ করা উচিত।

খামারে মাছের ক্ষেত্রে সরবরাহ হঠাৎ ব্যহত হলে এবং দীর্ঘসময় খাদ্য প্রদান বন্ধ থাকলে বন্ধ্যাত্বের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুস্থ—সবল পোনা উৎপাদনের জন্যে পরিপক্ব মাছকে পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান করা উচিত। মাছ চাষের জন্য জলাশয়ে প্রাকৃতিক’ খাদ্যের যোগান দান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক খাদ্য মাছের খাদ্যচক্রকে সচল রাখে। এতে করে জলাশয়ে মাছের বিভিন্ন প্রকার খাদ্য উপাদান চক্রাকারে ও অবিরত ভাবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। ফলে মাছের দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি সাধন ও বৃদ্ধি ঘটে থাকে। প্রাকৃতিক’ খাদ্য মাছের স্বাভাবিক খাদ্য হওয়ায় মাছ সহজেই তা গ্রহণ করে থাকে।

প্রাকৃতিক খাদ্যের পুষ্টিমান বেশি এবং সহজেই হজম হয়। ফলে প্রাকৃতিক’ খাদ্যের পরিবর্তন হার সূচক সংখ্যামান কম, যা অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করে। গোবর, হাঁস—মুরগির বিষ্ঠা, ইত্যাদি জৈব সার সহজলভ্য ও দামে সস্তা। এসব জৈব সার ব্যবহারে পানিতে প্রচুর পরিমানে প্লাঙ্কটন উৎপাদিত হয় যা জলাশয়ের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, পুকুরে উৎপাদিত প্রাকৃতিক খাদ্য কার্প জাতীয় মাছের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যক। পুকুরে প্রয়োগকৃত সম্পূরক’ খাদ্য অনেক সময় সুষম হয় না তাই মাছ চাষে প্রাকৃতিক’ খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

 

মাছের সম্পূরক খাদ্য

 

খাদ্যের প্রকারভেদ প্রকৃতিতে মাছের বহু ধরনের খাদ্য বিরাজমান। এর মধ্যে যেমন রয়েছে জলজ ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণি তেমনি রয়েছে দ্রবীভূত পুষ্টি উপাদানসহ অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণিজ পোষক। স্থলভাগেও অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণিজ দ্রব্য রয়েছে। মাছের খাদ্যকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা : (১) প্রাকৃতিক খাদ্য, (২) সম্পূরক ‘খাদ্য।

(১) প্রাকৃতিক’ খাদ্য :

পুকুরের নিজস্ব এবং সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফাইট্রোপ্লাঙ্কটন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপদান সরবরাহের ফলে জলাশয়ে যে খাদ্য উৎপাদন হয় তাকে প্রাকৃতিক খাদ্য বলে।

(২) সম্পূরক খাদ্য :

অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রাকৃতিক’ খাদ্য যোগানের পাশাপাশি পুকুরের বাইরে থেকে মাছকে কিছু খাদ্য দেওয়া হয়। বাইরে থেকে দেওয়া এসব খাদ্যকে সম্পূরক’ খাদ্য বলা হয়। চালের কঁুড়া, গমের ভুষি, সরিষার খৈল ইত্যাদি সম্পূরক’ খাদ্য।

 

মাছের খাদ্যের পুষ্টি উপাদান :

জীবের পুষ্টির সবগুলো উপাদানের সংমিশ্রণে প্রয়োজনীয় আনুপাতিক হারে যে খাদ্য তৈরি করা হয় তাকে সুষম খাদ্য বলে। আমাদের দেশে সম্পূরক ‘খাদ্যের উপাদানের জন্য যে উপাদানগুলো ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে সরিষার খৈল, চালের কঁুড়া, গমের ভুষি, চিটাগুড় ইত্যাদি প্রধান। গবেষণার মাধ্যমে রুই জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ এবং অঁাতুর পুকুরে পোনা মাছ চাছের জন্য স্বল্পমূল্যের উন্নতমানের সুষম সম্পূরক খাদ্য তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে।

উপকারী উদ্ভিদ ও প্রাণি পানিতে যেসব অতিক্ষুদ্র অণুবীক্ষণিক জীবকণা ভাসমান অবস্থায় থাকে তাদেরকে প্ল্যাঙ্কটন বলে। প্লাঙ্কটন দুই ধরনের। যেমন :

১. উদ্ভিদ কণা বা ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন (Phytoplankton)

২. প্রাণী কণা বা জুওপ্ল্যাঙ্কটন (Zooplakton)

 

১. উদ্ভিদ কণা :

পানিতে যেসব অতিক্ষুদ্র উদ্ভিদ কণা ভাসমান অবস্থায় থাকে তাদেরকে উদ্ভিদ প্লাঙ্কটন বলে। এগুলোকে খালি চোখে দেখা যায় না বিধায় আণুবীক্ষণিক যন্ত্রের সাহায্যে দেখতে হয়। উদ্ভিদ কণা সূর্যালোকের সাহায্যে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজের খাদ্য নিজেরা তৈরি করে। এ সময় এরা কার্বন ডাই—অক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন ত্যাগ করে। ফলে পুকুরের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। এছাড়া এসব উদ্ভিদ কণা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উদ্ভিদ কণাসমূহ প্রত্যক্ষভাবে নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে বিধায় এদেরকে প্রাথমিক উৎপাদক বলা হয়। মাছের জন্যে উপকারী উদ্ভিদ কণা বা ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনগুলো হলো নাভিকুলা, পোডিয়েস্ট্রাম, স্পাইরোগাইরা, ও ইউগ্লিনা, ফেকাস, এনাবিনা ইত্যাদি।

 

২. প্রাণিকণা :

যেসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণি ভাসমান থাকে তাদেরকে প্রাণিকণা বা জুপ্লাংটন বলে। এসব প্রাণিকণা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিক খাদ্যের মধ্যে শুধুমাত্র প্রাণিকণা হতে মাছ প্রায় শতকরা ৪০—৭০ ভাগ প্রাণিজ আমিষ পেয়ে থাকে। মাছের জন্যে উপকারী প্রাণিকণা বা জু্প্লাঙ্কটন হলো ডেফনিয়া, বসনিয়া ফিলিনিয়া, ডায়াপটোমাস সাইক্লপস ইত্যাদি।

 

 

মাছের সম্পূরক খাদ্য :

অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রাকৃতিক খাদ্য যোগানের পাশাপাশি পুকুরের বাইরে থেকে মাছকে কিছু খাদ্য দেওয়া হয়। বাইরে থেকে দেওয়া এসব খাদ্যকে সম্পূরক খাদ্য বলা হয়। চালের কঁুড়া, গমের ভুষি সরিষার খৈল ইত্যাদি সম্পূরক খাদ্য।

মাছের খাদ্যের পুষ্টি উপাদান :

জীবের পুষ্টির সবগুলো উপাদানের সংমিশ্রণে প্রয়োজনীয় আনুপাতিক হারে যে খাদ্য তৈরি করা হয় তাকে সুষম খাদ্য বলে। আমাদের দেশে সম্পূরক খাদ্যের উপাদানের জন্য যে উপাদানগুলো ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে সরিষার খৈল, চালের কঁুড়া, গমের ভুষি, চিটাগুড় ইত্যাদি প্রধান। গবেষণার মাধ্যমে রুই জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ এবং অঁাতুর পুকুরে পোনা মাছ চাছের জন্য স্বল্পমূল্যের উন্নতমানের সুষম সম্পূরক খাদ্য তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। রুই জাতীয় মাছের সম্পূরক খাবার উৎপাদনের কৌশল নিম্নে উল্লেখ করা হলো : পদ্ধতি : ১। রুই জাতীয় মাছের মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে সম্পূরক খাদ্য তৈরি পদ্ধতি নিম্নরূপ :

 

মাছের সম্পূরক খাদ্য প্রস্তুত :

প্রথমে পরিমাণ মত খৈল একটি পাত্রে কমপক্ষে ১০—১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। অতঃপর ভিজা খৈলের সাথে প্রয়োজনীয় পরিমাণ চালের কুঁড়া বা চিটাগুড়া মিশিয়ে ছোট ছোট গোলাকার বল তৈরি করতে হবে। তৈরিকৃত বলগুলোকে একটি পাত্রে রেখে বলসহ পাত্রটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে পুকুরের একটি নির্দিষ্ট স্থানে ৩০—৪৫ সে.মি. গভীরতায় ডুবিয়ে রাখতে হবে।

মাছের খাদ্য গ্রহণের নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। তবে সকাল এবং বিকাল বেলা মাছের খাদ্য সরবরাহ করার উত্তম সময়। কারণ এ সময়ই মাছ খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে নির্দিষ্ট সময়ে খাবার সরবরাহ করলে খাবার কম পরিমাণে অপচয় হয় এবং তাছাড়া মাছ কী পরিমাণ খাবার গ্রহণ করছে তার পরিমাণ নির্ধারণ করে সঠিক মাত্রার খাবার সরবরাহ করা যায়।

মাছের দৈহিক ওজন অনুযায়ী পুকুরে প্রতিদিন খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। সাধারণভাবে রুই জাতীয় মাছের ক্ষেত্রে মজুতকৃত মাছের মোট ওজনের ৩—৫% হারে প্রতিদিন দুবার সকাল—বিকাল সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হয়। সাধারণত প্রতি মাসে কমপক্ষে এক বার জাল টেনে কিছু সংখ্যক মাছের ওজন নিয়ে গড় ওজন বের করতে হয়। এরপর মজুদকৃত মাছের সংখ্যাকে প্রাপ্ত গড় ওজন দ্বারা গুণ করে পুকুরের মাছের মোট ওজন নির্ণয় করতে হয়।

পুকুরে মাছের মোট ওজন হিসাব করে সম্পূরক খাদ্য সরবরাহের পরিমাণ বের করতে হয়। পুকুরে গ্রাস কার্প, থাই সরপঁুটি ও বিভিন্ন ধরনের ঘাস কেটে ছোট ছোট করে মাছকে খাবার হিসেবে পুকুরে সরবরাহ করতে হয়। এ ধরনের খাবার পুকুরের মাঝখানে অথবা এক পাশে বাঁশের সাহায্যে ভাসিয়ে রাখা হয়।

সম্পূরক খাবার তৈরির পদ্ধতি : চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরির বিভিন্ন উপাদানগুলো পাউডার আকারে সঠিক মাত্রায় একত্রে মিশাতে হয়। অতঃপর কোনো আঠালো খাদ্য উপাদান যেমন আঠা বা ঐ জাতীয় কৃত্রিম আঠালো পদার্থ যা চিংড়ির দেহের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন উপাদান পরিমাণ মত পানির সাথে মিশিয়ে পাত্রে গরম করতে হয়।

নাড়তে নাড়তে যখন মণ্ডে পরিণত হবে তখন পাত্রটি অঁাচ থেকে নামিয়ে কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা হওয়ার পর কাঠের ছাঁকনি বা মেশিনের সাহায্যে ছোট ছোট পিলেট তৈরি করা হয়। খাবারের উপাদানগুলো ভালভাবে গুঁড়ো করা হয়েছে কিনা তা ভালভাবে লক্ষ রাখতে হবে। যদি ভালভাবে গুঁড়া না হয় তাহলে প্রতিটি খাদ্য উপাদানকে আলাদাভাবে ছাকতে হবে।

সম্পূরক খাদ্য তৈরি চালের কুঁড়া, গমের ভুসি, ফিসমিল, সরিষার খৈল, শামুক—ঝিনুকের মাংশল অংশ ইত্যাদি দিয়ে খুব সহজেই চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরি করা যায়। নীচে চিংড়ির কয়েকটি সম্পূরক খাদ্য তৈরির নমুনা দেয়া হলো—

 

মাছের খাদ্য প্রস্তুতের নিয়মাবলী :

খাদ্য প্রস্তুতের পূর্বে যেসব বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা উচিত সেগুলো হলো : ১। মাছের বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মাছের খাদ্য তৈরি করতে হবে ; ২। যে মাছের জন্য খাদ্য তৈরি করা হবে সে মাছের খাদ্যাভাস, পরিপাকতন্ত্রের গঠনও বিবেচনায় আনতে হবে এবং ৩। মাছের পুষ্টি চাহিদাকে বিবেচনায় এনে সঠিক পদ্ধতিতে খাবার তৈরি করতে হবে।

খাদ্য উপকরণ নির্বাচন মাছের খাদ্য তৈরির উপকরণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে।

১। খাদ্য উপকরণের সহজলভ্যতা

২। খাদ্য উপকরণের বাজার মূল্য

৩। খাদ্য উপকরণের পুষ্টিগুণ

৪। খাদ্য উপকরণে পুষ্টিবিরোধী উপাদানের উপস্থিতি

 

মাছের খাদ্যের চূড়ান্ত প্রস্তুতি :

নির্বাচিত খাদ্য উপকরণ ভালোভাবে গুঁড়া করে চালুনি দ্বারা চেলে সুনির্দিষ্ট পরিমাণে মেপে নিতে হবে। একটি পাত্রে সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে সঠিক মাত্রায় পানি ব্যবহার করে নরম করতে হবে। যে মাছের জন্য খাবার তৈরি করা হবে সে মাছের আকার বা মুখের আকারের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট যন্ত্রের সাহায্যে পিলেট বা দানাদার খাবার তৈরি করতে হবে।

 

মাছের খাবার দিচ্ছেন চাষি

 

 

 

মাছের খাদ্য সংরক্ষণ:

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মাছের খাদ্য সংরক্ষণ  – যা কৃষি প্রযুক্তি : বীজ, মাছ ও পশু-পাখির খাদ্য সংরক্ষণ এর অন্তর্ভুক্ত ।

মাছের খাদ্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা:

মাছের খাদ্য সংরক্ষণের জন্য সুষ্ঠুভাবে গুদামজাতকরণ অত্যাবশ্যক। সম্পূর্ণ বা দানাদার খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত খাদ্য উপকরণ বা তৈরি খাবার গুদামজাতকরণের প্রয়োজন হয়। গুদামজাতকরণের সময় ওজন ও গুণগত মান এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে। মাছকে দেয়া খাবারের মান গুদামজাতকরণের ওপর নির্ভরশীল ।

গুদামজাত করার সময় খাদ্যের প্রাথমিক গুণগত মানের ওপর গুদামজাত খাদ্য এর দ্রুত বা ধীরে নষ্ট হওয়া নির্ভর করে। যে ধরনের খাবারই মাছ চাষের পুকুরে ব্যবহার করা হোক না কেন তার গুণগতমান ভালো থাকা আবশ্যক। খাবারের গুণগতমান ভালো না হলে সুস্থ সবল পোনা ও মাছ পাওয়া সম্ভব নয় । মাছ সহজেই রোগাক্রান্ত হয় এবং মাছের মৃত্যুহার অনেক বেড়ে যায় ।

আবার মাছের বৃদ্ধিও আশানুরূপ হয় না । খাদ্যের গুণাগুণ ভালো রাখার জন্য খাদ্য উপকরণ বা তৈরি খাদ্য সংরক্ষণ ও গুদামজাতকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । কোনো খাদ্যের পুষ্টিমান ও গুণাগুণ ঠিক রেখে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য খাদ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে রেখে দেওয়াকে খাদ্য সংরক্ষণ বলা হয়।

নিম্নলিখিত নিয়ামকসমূহ গুদামজাতকরণের সময় খাদ্যের গুণগত মান এবং ওজন ক্ষতিগ্রস্থ করে-

  • মানুষ কর্তৃক চুরি হওয়া, অগ্নিদগ্ধ হওয়া কিংবা ইঁদুর ও পোকামাকড় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া
  • বৃষ্টি, আর্দ্রতা ক্ষতিগস্থ হওয়া।
  • ছত্রাক কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া। খাদ্যের আর্দ্রতার পরিমাণ ১০% এর বেশি হলে খাদ্যে ছত্রাক জন্মাতে পারে ।
  • এনজাইমের বিক্রিয়া এবং জারণের ফলে পঁচন ।
  • বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬৫% এর বেশি থাকলে খাদ্যে ছত্রাক বা পোকামাকড় জন্মাতে পারে ।
  • সূর্যালোকে খোলা অবস্থায় খাদ্য রাখা হলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে কিছু কিছু ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায় ।
  • খোলা অবস্থায় রাখা হলে বাতাসের অক্সিজেন খাদ্যের রেনসিডিটি (চর্বির জারণ ক্রিয়া) ঘটাতে পারে যাতে খাদ্যের গুণগতমান ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে ।
  • উচ্চ তাপমাত্রা খাদ্যের অপচয় এবং খাদ্য নষ্ট হওয়ার গতিকে ত্বরান্বিত করে । উচ্চ তাপমাত্রা খাদ্যে ছত্রাক এবং পোকা মাকড়ের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ।

 

মাছের খাবার দিচ্ছেন চাষি

 

মাছের  খাদ্য সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি:

শুকনো খাদ্য এবং খাদ্য উপাদান সংরক্ষণ পদ্ধতি নিম্নরূপ:

১। মাছের খাদ্যকে বায়ুরোধী পলিথিনের বা চটের অথবা কোনো মুখ বন্ধ পাত্রে শুষ্ক ও ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে । মাঝে মাঝে এসব খাদ্য আবার রোদে শুকিয়ে নিতে হয় ।

২। মাছের খাদ্য শুকনো, পরিষ্কার, নিরাপদ ও পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করে এমন ঘরে রাখতে হবে ।

৩ । পোকা-মাকড় নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্যের বস্তার নিচে এবং আশে পাশে ছাই ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে ।

৪ । ইঁদুর বা অন্যান্য প্রাণির উপদ্রবমুক্ত স্থানে খাদ্য সংরক্ষণ করতে হবে ।

৫ । গুদাম ঘরে সংরক্ষিত মাছের খাদ্য মেঝেতে না রেখে ১২ থেকে ১৫ সে.মি. উপরে কাঠের পাটাতনে রাখতে হবে ।

৬। খাদ্য তিন মাসের বেশি গুদামে না রেখে এর মধ্যেই ব্যবহার করে ফেলতে হবে । ৭ । মাছের খাদ্য এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে কোন কীটনাশক ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ না থাকে ।

 

ভেজা বা আর্দ্র খাদ্য উপাদান সংরক্ষণ পদ্ধতি নিম্নরূপ-

১। চর্বিযুক্ত বা তৈলাক্ত মাছের খাদ্য কালো রঙের বা অস্বচ্ছ পাত্রে নির্ধারিত তাপমাত্রায় রাখতে হবে ।

২ । খাদ্য তৈরির উপাদান তাজা ছোট মাছ হলে সাথে সাথেই খাওয়াতে হবে অথবা রেফ্রিজারেটরে রেখে দিতে হবে ।

৩ । খণিজ লবণ ও ভিটামিনসমূহ বাতাস ও আলোকবিহীন পাত্রে রেফ্রিজারেটরে রাখতে হবে ।

মাছের খাদ্য গুদামজাতকরণের সময় বিবেচ্য বিষয়সমূহ মাছের খাদ্য উপকরণ এবং তৈরি খাবার যেন নষ্ট না হয় সেজন্য গুদামজাতকরণের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত ।

  • সম্ভব হলে ভূমি থেকে উঁচুতে কাঠের ওপর স্তুপাকারে সংরক্ষণ করতে হবে ।
  • ছোট ছোট স্তুপাকারে খাদ্য গুদামজাত করতে হবে ।
  • খাদ্য উপকরণ ও তৈরি খাদ্য সঠিকভাবে লেবেল বা চিহ্নিত করে রাখতে হবে ।
  • খাদ্য রাখা ব্যাগের উপর হাটা চড়া করা যাবে না ।
  • এতে করে খাদ্য ভেঙ্গে যেতে পাৱে ।
  • গুদামের দেয়ালের সাথে লাগিয়ে ব্যাগ স্তুপীকৃত করা যাবে না ।
  • গুদামের তাপমাত্রা সম্ভব হলে ২০ সে এর নিচে রাখতে হবে ।
  • গুদামে ইঁদুর বা অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে ।

 

 

মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরির ব্যবহারিক পাঠ:

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ব্যবহারিক: মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরি – যা কৃষি প্রযুক্তি : বীজ, মাছ ও পশু-পাখির খাদ্য সংরক্ষণ এর অন্তর্ভুক্ত ।

মূলতত্ত্ব : মাছের দ্রুত বৃদ্ধি ও অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য প্রাকৃতিক খাদ্য যথেষ্ট নয় । এই ঘাটতি পূরণে সম্পূরক খাদ্যের প্রয়োজন হয় । মাছের জন্য বাইরে থেকে যে খাদ্য পুকুরে দেওয়া হয় তাকে সম্পূরক খাদ্য বলে। এই খাদ্যে মাছের প্রয়োজনীয় শ্বেতসার, আমিষ, ভিটামিন খনিজ লবণ, স্নেহ ইত্যাদি সঠিক পরিমাণ থাকে ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ :

(ক) ফিশমিল, (খ) মাছের গুঁড়া, (গ) চালের কুঁড়া, (ঘ) সরিষার খৈল, (ঙ) গম, (চ) বালতি, (ছ) ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ, (জ) চিটাগুড়, (ঝ) পানি ইত্যাদি ।

খাদ্যের উপকরণের তালিকা:

খাদ্যোপকরণের নাম                                  পরিমাণ

১. চালের কুড়া                                         ৩.৩০ কেজি

২. গ‍ম                                                    ২.০০ কেজি

৩. সরিষার খৈল                                      ৩.০৫ কেজি

৪. মাছের গুড়া                                        ১.০০ কেজি

৫. চিটাগুড়                                             ৬০০ গ্রাম

৬. ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ                    ৫০ গ্রাম

মোট                                                    = ১০ কেজি

 

ব্যবহারিক কার্যপদ্ধতি :

১. প্রথমে প্রয়োজনমত সরিষার খৈল একটি পাত্রের পানিতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে ।

২. ভিজা খৈল, পরিমাণ মতো চালের কুঁড়া ও চিটা গুড় একত্রে মিশিয়ে ছোট ছোট বল তৈরি করতে হবে ।

৩. পাত্রটি পুকুরে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পানির ৩০ থেকে ৪৫ সে.মি. নিচে বাঁশের সাথে বেঁধে ডুবিয়ে রাখতে হবে ।

৪. প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য দু’ভাগ করে সকালে ও বিকালে পানির নিচে পাত্রে দিতে হবে।

৫. খাদ্য প্রদানের স্থানকে মাঝে মাঝে পরিষ্কার করে দিতে হবে ।

৬. পোনার ক্ষেত্রে ১০-১৫% ভেজা খাদ্য মোল্ড আকারে পুকুরের চারদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে ।

 

ব্যবহারিক কাজের সময় সাবধানতা :

১. সকল উপকরণ সঠিক ও নির্ভুলভাবে মেপে দিতে হবে । ২. খাদ্য তৈরির স্থান পরিষ্কার হতে হবে।
৩. খাদ্য উপকরণ যেন নষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে ।

 

ব্যবহারিক কাজের চূড়ান্ত মূল্যায়ন:

সৃজনশীল প্রশ্ন

১) করিম সাহেব তার মাছের খামারে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করতে আগ্রহী । মাছকে পর্যাপ্ত খাদ্য প্রদান করার পরও উৎপাদন আশানুরূপ না হওয়ার তিনি মাৎস্য কর্মকর্তা শরণাপন্ন হলেন ।

ক) মাছের সম্পূরক খাদ্য বলতে কী বুঝায়? মাৎস্য চাষে এর গুরুত্ব কী?
খ) মাছের সম্পূরক খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করুন ।
গ) মাছের সম্পূরক খাদ্যের বিভিন্ন ধারনের খাদ্য উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত লিখুন ।

২) ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার মনিরা বেগমের ‘ঝলমল’ মৎস্য খামারের কথা কে না জানে? তিনি তার পুকুরগুলোতে সর্বদা পুষ্টি উপাদান বিবেচনায় রেখে সুষমখাদ্য, সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করে থাকেন । তিনি মৎস্য কর্মকর্তার নিকট থেকে আদর্শ (খাদ্য তালিকা) তৈরির বিষয়গুলো জেনে আসেন । মনিরা বেগম বলেন উপযুক্ত রসদ খাবার যে কোনো প্রাণীর জীবন রক্ষা করে ।

ক) সুষম খাদ্য কাকে বলে?
খ) খাদ্য কীভাবে প্রাণীর জীবন রক্ষা করে ব্যাখ্যা কর ।
গ) মৎস্য কর্মকর্তার নিকট থেকে মনিরা বেগম আদর্শ রসদের কী কী বৈশিষ্ট্য জেনেছেন বলে আপনি মনে করেন?
তা ব্যাখ্যা করুন ।
ঘ) আপনি যদি আপনার গৃহপালিত পশু-পাখির আদর্শ রসদ তৈরি করতে যান তাহলে কী কী বিবেচনা আনবেন? মনিরা বেগমের অভিজ্ঞতার আলোকে আপনার মতামত ব্যাখ্যা করুন ।

৩ । জয়নাল সাহেবের একটি গবাদিপশু খামার ও একটি মুরগির খামার আছে। তিনি উপজেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তার নিকট থেকে গৃহপালিত পশুপাখির নানা ধরনের খাদ্য তৈরি, খাদ্য সংরক্ষনের নিয়মকানুন ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান লাভ করেন। ফলে তিনি সফলভাবে তার খামারের জন্য খাদ্য তৈরি ও সংরক্ষণ করতে পারেন ।

ক) খাদ্য সংরক্ষণ কাকে বলে ?
খ) হে তৈরি করতে কী কী বিষয় বিবেচনা করতে হবে? ব্যাখ্যা করুন ।
গ) জয়নাল সাহেব তার খামারের জন্য হে ও সাইলেজ কীভাবে তৈরি করেন? ব্যাখ্যা কর ।
ঘ) ‘গৃহপালিত পশুপাখির জন্য খাদ্য সংরক্ষণ করা অতীব জরুরি”- জয়নাল সাহেবের অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যাখ্যা কর ।

 

 

 

 

মাছের সুষম সম্পূরক খাদ্য তৈরি ও প্রয়োগ পদ্ধতির ব্যবহারিক পাঠ:

মাছের সুষম সম্পূরক খাদ্য তৈরি ও প্রয়োগ পদ্ধতি ব্যবহারিক পাঠ – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি কৃষি শিক্ষা ২য় পত্রের, ৩ নং ইউনিটের ৩.৪ নং পাঠ। পুকুরে উৎপাদিত প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি মাছের দ্রুত শারীরিক বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত খাবার দেবার প্রয়োজন। এই খাবারই সম্পূরক খাদ্য। এই পাঠে আমরা জানবো এই খাবর তৈরির মুল তথ্য ও ধাপে ধাপে খাবার তৈরির বিস্তারিত।

 

কাতল মাছ

 

সুষম সম্পূরক খাদ্যের মূলতত্ত্ব :

মাছের দ্রুত বৃদ্ধি ও অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য প্রাকৃতিক খাদ্য যথেষ্ট নয়। এই ঘাটতি পূরণে সম্পূরক খাদ্যের প্রয়োজন হয়। মাছের জন্য বাইরে থেকে যে খাদ্য পুকুরে দেওয়া হয় তাকে সম্পূরক খাদ্য বলে। এই খাদ্যে মাছের প্রয়োজনীয় শ্বেতসার, আমিষ, খনিজ লবণ, স্নেহ ইত্যাদি সঠিক পরিমাণ থাকে।

জীব জগতের উদ্ভিদ প্রাণি নির্বিশেষে প্রতিটি জীবই তাদের নিজ নিজ পরিবেশ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। মাছ জলজ মেরুদণ্ডী প্রাণি বিধায় জীবনধারণ, শরীর গঠন ও বৃদ্ধির জন্য জলজ পরিবেশ থেকেই খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য খাদ্য একটি অপরিহার্য উপাদান। মাছের কাঙ্খিত উৎপাদন এবং মাছের বংশ বৃদ্ধিতে খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

কৈ মাছ

 

উন্নত কলাকৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাছের জীবন চক্রের বিভিন্ন দিক যেমন শারীরবৃত্ত, খাদ্য ও খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস, খাদ্য প্রয়োগের হার ও পদ্ধতি, পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলী এবং মাছ চাষে এর প্রভাব ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন। চিংড়ি সর্বভূক শ্রেণিভূক্ত প্রাণি। এরা পঁচা জৈব পদার্থ, ব্যাকটেরিয়া, ডায়াটম জাতীয় শেওলা, পচনশীল প্রাণীদেহ ইত্যাদি খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে থাকে। তবে চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি এবং অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্যের জোগান দেওয়া উত্তম।

আজকাল বিভিন্ন দেশে উন্নত পদ্ধতিতে চিংড়ি পোনার লালন – পালনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্ভিদজাত ও প্রাণিজাত খাদ্যের চাষ করা হচ্ছে। আধা – নিবিড় ও নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে পুকুরের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক খাদ্য পুষ্টি লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই চিংড়ির দ্রুত বৃদ্ধি ও অধিক ফলনের জন্য সম্পূরক খাদ্য সরবরাহের প্রয়োজন হয়।

চালের কুঁড়া, গমের ভূষি, ফিস মিল, সরিষার খৈল ইত্যাদি উপাদান পরিমিত পরিমাণ ব্যবহার করে খুব সহজেই চিংড়ির সম্পূরক খাবার তৈরি করা যায়। এ ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে মাছের খাদ্য: প্রাকৃতিক ও সম্পূরক, চিংড়ির খাদ্য, মাছ ও চিংড়ির খাদ্য প্রস্তুতকরণ পদ্ধতি, চাষের পুকর/ঘেরে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি, মাছের সুষম সম্পূরক খাদ্য তৈরি ও প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

 

সুষম সম্পূরক খাদ্যে তৈরিতে প্রয়োজনীয় উপকরণ :

(ক) ফিশমিল, (খ) মাছের গুঁড়া, (গ) চালের কঁুড়া, (ঘ) সরিষার খৈল, (ঙ) গম, (চ) বালতি, (ছ) ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ, (জ) চিটাগুড়, (ঝ) পানি ইত্যাদি।

 

সুষম সম্পূরক খাদ্যে তৈরির ধাপে ধাপে কার্যপদ্ধতি :

১. প্রথমে প্রয়োজনমত সরিষার খৈল একটি পাত্রের পানিতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।

২. ভিজা খৈল, পরিমাণ মতো চালের কুঁড়া ও চিটা গুড় একত্রে মিশিয়ে ছোট ছোট বল তৈরি করতে হবে।

৩. পাত্রটি পুকুরে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পানির ৩০ থেকে ৪৫ সে.মি. নিচে বাঁশের সাথে বেঁধে ডুবিয়ে রাখতে হবে।

৪. প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য দু’ভাগ করে সকালে ও বিকালে পানির নিচে পাত্রে দিতে হবে।

৫. খাদ্য প্রদানের স্থানকে মাঝে মাঝে পরিষ্কার করে দিতে হবে।

৬. পোনার ক্ষেত্রে ১০ — ১৫% ভেজা খাদ্য মোল্ড আকারে পুকুরের চারদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে।

 

সুষম সম্পূরক খাদ্যে তৈরিতে সাবধানতা :

১. সকল উপকরণ সঠিক ও নিভুর্লভাবে মেপে দিতে হবে।

২. খাদ্য তৈরির স্থান পরিষ্কার হতে হবে।

৩. খাদ্য উপকরণ যেন নষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

 

By একাডেমিক ডেস্ক, কৃষি গুরুকুল

কৃষি গুরুকুলের একাডেমিক ডেস্ক

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version