বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের অবদান

বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের অবদান

বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের অবদান – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশের উপাদান” বিষয়ের ইউনিট ২ এর ২.৪ নং পাঠ।

 

বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের অবদান

 

আমাদের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক। মাঠফসল ছাড়া আমাদের কৃষির প্রধান সাব—সেক্টরগুলো হ’লো পশুপাখি, মৎস্য এবং বনজ সম্পদ। পশুপাখি হতে আমরা দুধ, ডিম, মাংস, জৈব সার, জ্বালানি ও শ্রম শক্তি পাই।

তাছাড়া পশুর চামড়া রপ্তানি করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়। বাংলাদেশের প্রত্যেক বাড়িতেই কোন না কোন পশুপাখি পালন করা হয়। পাখির মধ্যে হাঁস, মুরগি, কবুতর, কোয়েল ও তিতির এবং পশুর মধ্যে গরূ, মহিষ, ছাগল এবং ভেড়াই প্রধান। তবে কেউ কেউ সখ করে ঘোড়াও পালন করেন। “মাছে—ভাতে বাঙ্গালী” কথাটি থেকে মাছের গুরুত্ব যথার্থই উপলব্ধি করা যায়। বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে মৎস্য চাষ বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। মৎস্য সম্পদ এদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ। নদীমাতৃক এই বাংলাদেশচ মৎস্য সম্পদের এক অফুরন্ত ভান্ডার।

আমাদের দেশে প্রাণিজ আমিষের প্রধান উৎস হচ্ছে মাছ। প্রাণিজ আমিষের শতকরা ৮০ ভাগ আসে মাছ থেকে। মাছে গড়ে প্রায় শতকরা ২০ ভাগ আমিষ আছে। আমাদের দেশে প্রাণিজ আমিষের প্রধান উৎস হচ্ছে মাছ। খাদ্য হিসেবে এর গুরুত্ব অত্যাধিক। শরীরের জন্য এ,ডি,সি খাদ্যপ্রাণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মাছ ‘এ’ ও ‘ডি’ খাদ্যপ্রাণ সমৃদ্ধ। মাছের চামড়ায় প্রচুর পরিমাণে খাদ্যপ্রাণ ‘সি’ রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপবিশিষ্ট রোগীদের জন্য ক্ষতিকারক কোলেষ্টেরল মাছে নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে প্রাণিজ আমিষের শতকরা ৮০ ভাগ আসে মাছ থেকে। মাছে গড়ে প্রায় শতকরা ২০ ভাগ আমিষ আছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১২ লক্ষ মেট্রিক টন মৎস্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ৯ লক্ষ মেট্রিক টন অভ্যন্তরীণ জলাশয় থেকে বাকি ৩ লক্ষ সামুদ্রিক এলাকা থেকে। এদেশের প্রায় ১২ লক্ষ লোক সার্বক্ষনিকভাবে এবং এক কোটি লোক খন্ডকালীনভাবে মাছ চাষ, মাছ ধরা, মাছ ব্যবসা ও জাল বুননের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এছাড়া মাছ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, সরবরাহ ও বেচাকেনার কাজেও অনেক লোক নিয়োজিত আছে অর্থাৎ মৎস্য স¤žদ মানুষের কর্ম সংস্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা পালন করে আসছে।

বাংলাদেশ হতে যেসব মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয় সেগুলো হলো হিমায়িত চিংড়ি, হিমায়িত মাছ, শুঁটকি, লবণাক্ত মাছ, হাঙ্গরের পাখনা, পোটকা, কচ্ছপ বা কাছিম এবং কাঁকড়া। ১৯৯৪—৯৫ সনে মৎস্য সম্পদ রপ্তানি করে বাংলাদেশ ১৩০৭ কোটি টাকা আয় করে। এ সময় মৎস্য সম্পদের অবদান ছিল জি.ডি.পি.তে ৪% এবং রপ্তানি আয়ে ১২% যা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। মৎস্য সম্পদের অবদান নিম্নে দেয়া হলো:

মাছ শুধু খাবার হিসেবে নয়, বরং এদের বর্জ্য যথা হাড়, পাখনা, অঁাইশ, নাড়ি—ভূড়ি ইত্যাদি পরিত্যক্ত অংশ দিয়ে ফিশমিল ও জৈব সার তৈরি করা যায়। এসব ফিশমিল হাঁস—মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সারমর্ম

বাংলাদেশের ১০% লোক মৎস্য সম্পদের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। মৎস্য সম্পদ রপ্তানি করে বাংলাদেশ ১৯৯৪—৯৫ সনে ১৩০৭ কোটি টাকা আয় করে। এসময়ে জিডি.পি. তে মৎস্য সম্পদের অবদান ছিল ৪% এবং রপ্তানি আয়ে ১২%।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *