আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি
Table of Contents
হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি
এ পাঠ শেষে আপনি-
- হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতির নাম বলতে পারবেন।
- হস্তচালিত কৃষিয় স্ত্রপাতির বিবরণ দিতে পারবেন।
- হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি সনাক্ত করতে পারবেন।
ক্ষেতে খামারে বা বাড়ির আশেপাশে কাজ করতে বিভিন্ন ধরনের হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব কৃষি যন্ত্রপাতির চিত্রসহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে তুলে ধরা হলো।
দেশী লাঙ্গল
জমি চাষ ও কম গভীর বিশিষ্ট নালা তৈরি করতে লাঙ্গল ব্যবহৃত হয়। লাঙ্গলের হাতল, ঈশ, বাট ও তলা সাধারণত কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। তবে বাট, হাতল ও ঈশ কোন কোন সময় বাঁশ দিয়েও তৈরি হয়। একমাত্র লাঙ্গলের ফলা ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়। এছাড়াও বাংলাদেশে কোথাও কোথাও সীমিতভাবে পশুচালিত মোল্ড বোর্ড লাঙ্গলের ব্যবহার দেখা যায়।
জোয়াল
এটার দু’প্রান্ত দুটো গরুর কাঁধে বেঁধে দিয়ে মাঝখানটার সঙ্গে লাঙ্গলের ঈশ রশির সাহায্যে বেঁধে লাঙ্গল টানার ব্যবস্থা করা হয়। জোয়াল বাঁশ বা কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে সাধারণত তিন ধরনের জোয়াল ব্যবহৃত হয়।
(১) বাঁশের জোয়াল সোজা, সরল, শক্ত বাঁশ দ্বারা তৈরি
(২) কাঠের জোয়াল: বৈশিষ্ট্যপূর্ণভাবে ঈষৎ বাঁকানো থাকে।
(৩) গদি সম্পন্ন বাঁশ বা কাঠের জোয়াল : সরল বা ঈষৎ বাঁকানো
মই
চাষের পর জমি সমান করার কাজে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া ঢেলা ভাঙ্গা ও বীজ বপনের পর তা ঢেকে দেয়ার কাজেও মই ব্যবহার হয়। মই কাঠ বা বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে সাধারণত তিন ধরণের মই ব্যবহৃত হয়। যেমন-
(১) বাঁশের ৩ পাটি মই:
(২) বাঁশের ২ পাটি মই:
(৩) কাঠের মই।
যুগুর
জমি চাষের পর বড় বড় ভেলা ভাষার জন্য মুক্তর ব্যবহার করা হয়। এটা সাধারণত কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। তবে এদেশের অধিকাংশ কৃষকই বাঁশের হাতল ব্যবহার করে থাকে।
আঁচড়া বা বিদা
ঘন চারা পাতলা করা, আগাছা দমন করা ও মাটি আলগা করার জন্য আঁচড়া বা বিদা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আঁচড়ার প্রধান অংশ হলো ৩টি ফলা, ঈশ ও হাতল। এগুলো সাধারণত কাঠ বা কোন কোন সময় বাঁশ দিয়েও তৈরি করা হয়। তবে অনেক সময় লোহার তৈরি ফলাও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
কোদাল
কোদালের রেড লোহা দিয়ে এবং এর হাতল কাঠ বা বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়। এর সাহায্যে মাটি কাটা, আইল বাঁধা, আইল মেরামত করা, মাটি আলগা করা প্রভৃতি কাজ করা হয়ে থাকে। ব্যবহারের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে কোনালের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।
এর হাতল কাঠ দিয়ে ও তলা লোহা দিয়ে তৈরি করা হয়। নিড়ানির সাহায্যে ফসলের জমিতে আগাছা পরিষ্কার করা ও মাটি আলগা করার কাজ করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন আকৃতির নিড়ানি ও খুরপি ব্যবহার হয়।
কান্তে বা কাচি
কান্তের হাতল কাঠ নিয়ে ও ব্লেড নরম ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়। এর ব্লেডে দাঁত থাকে। কাছে সাধারনত ফসল কাটার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
দা
না এর ব্লেড লোহা দিয়ে ও হাতল কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। ব্লেডে কোন দাঁত থাকে না। কাস্তে দিয়ে কাটা যায় না এমন না দিয়ে কাটা হয়। এছাড়া না বিভিন্ন আনুষঙ্গিক কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
কলম করার ছুরি
এ সমস্ত ছবির ব্লেড স্টিল দিয়ে ও হাতল কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। গাছের বিভিন্ন ধরনের অঙ্গজ বংশবিস্তারের কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য এসব বিশেষ ধরনের ছবি ব্যবহার করা হয়।
সেউতি বা উড়ি
আদিকাল থেকেই এদেশের সেচকায় সেউতি ব্যবহার হয়ে আসছে। বাঁশের চাটাই বা টিন দিনো সেউতি তৈরি করা হয়। এর দ্বারা ১-১.৫ মিটার উচ্চতায় ভূপৃষ্ঠস্থ পানি উত্তোলন করা
দোন
পানি সেচের প্রাচীনতম পদ্ধতিগুলোর মধ্যে এটি একটি। নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুর থেকে পানি তুলে পাশের কোনো নিচু জমিতে সেচ দেয়ার জন্য লোন ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত কাঠ বা তালগাছের গুড়ি দিয়ে সরু নৌকার মতো করে তৈরি করা হয়। সোনের সাহায্যে সাধারণত ১.০-১.৫ মিটার উচ্চতায় পানি তোলা যায়।
ট্রেভেল পাম্প
ট্রেডেল পাম্প হলো সাধারণ নলকূপের একটা রূপান্তরিত রূপ। ইহার দ্বারা সাধারণত অল্প পরিমাণ জমিতে পানি সেচ দেয়া যায়।
প্যাডেল প্রেসার
এটি কাঠ এবং লোহার পাইক বা দাঁত দিয়ে তৈরি করা হয়। প্যাডেল থ্রেসার ধান মাড়াই করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
ন্যাপস্যাক স্প্রেয়ার (Knapsack sprayer)
বালাই দমনার্থে ভরল বালাইনাশক স্প্রে করার জন্য ন্যাপস্যাক স্প্রেয়ার ব্যবহার করা হয়। এই স্প্রেয়ার ধাতব পদার্থ নিয়ে প্রস্তুত করা হয় ।
সঠিকভাবে ন্যাপসকে স্প্রেয়ার রক্ষনাবেক্ষন করার জন্য অবশ্যই আমাদের ভালো ধারণা থাকা প্রয়োজন। এখন দেখা যাক কীভাবে এই স্পেয়ার রক্ষনাবেক্ষণ করতে হয়।
১। সর্বপ্রথমে স্পেয়ার পাম্পটি খুলে নিতে হবে।
২। সব ভাগের সিটগুলো সুন্দর করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে।
৩। হোজ পাইপে কোন ছিদ্র বা ফুটো থাকলে তা বের করে নিয়ে মেরামত করতে হবে।
৪। স্প্রেয়ার পাম্পের প্রাভারের বাকেটে মবিল বা মিতা ব্যবহার করতে হবে।
৫। স্প্রেয়ারের নজল খুলে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
৬। স্প্রেয়ারের ট্যাঙ্কের ভিতর পরিষ্কার পানি নিয়ে কয়েকটি ঝাকুনি দেয়ার পর স্প্রে করে যে পানি বের করে দিতে হবে। এতে স্প্রেয়ারের ভিতরের অংশগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার হবে।
৭। উপরের সবগুলো কাজ শেষ করে স্প্রেয়ারের মুখটি উল্টো দিকে মুখ করে রেখে দিলে ভিতরের অংশ শুকিয়ে যাবে। এতে স্প্রেয়ার ভালো থাকবে।
সতর্কতা
১। হোজ পাইপে চাপ দেয়া বা বাঁকানো যাবে না। এতে পাইপ ছিল বা ফেটে যেতে পারে।
২। বাকেটে নিয়মিত মবিল বা গ্রিজ দিতে হবে। নচেত বাকেট অল্প সময়ের মধ্যে ফেটে যাবে।
৩। ক্ষেত্রে বালাইনাশক প্রয়োগের পর স্প্রেয়ারের ভিতরের অবশিষ্ট বালাইনাশক ফেলে দিয়ে সুন্দর করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। নচেত ট্যাংক ক্ষয়প্রাপ্ত হবে। বালাইনাশক মিশ্রিত পানি কোন ক্রমেই পুকুর বা নদীতে ফেলা যাবে না। কোন গর্ভে এই পানি ফেলাই উত্তম।
সারমর্ম
অতি প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আসছে। দৈনন্দিন কৃষিকাজে মানুষ সাধারণত: লাঙ্গল, জোয়াল, মই, মুগুর, আচড়া, কোনাল, নিড়ানি, কাস্তে ন্যাপস্যাক স্প্রেয়ার প্রভৃতি হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকে। দিন দিন সব হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতির উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে।