Category Archives: বাউবি বিএই ১২০৪ – মৃত্তিকা বিজ্ঞান

বাউবি বিএই ১২০৪ – মৃত্তিকা বিজ্ঞান

মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা অনুশীলন, ব্যবহারিক

আজ দেখবো মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা অনুশীলন, ব্যবহারিক ক্লাস। বাউবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান – ১২০৪ কোর্সের প্রতিটি অধ্যায় শেষেই এইরকম ব্যবহারিক ক্লাসের উদাহরণ রয়েছে।

মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা অনুশীলন, ব্যবহারিক

বাংলাদেশের ৪৬০টি থানার ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহারে সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের সাহায্যার্থে স্থান ভিত্তিক তথ্যাদি সংগ্রহের মাধ্যমে একটি পুস্তক রচনা করা হয় যা ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা বলে পরিচিত।

নির্দেশিকা অনুশীলন:

১।এলাকার ভূমিভিত্তিক কী সমস্যা ঐগুলো লিখতে হবে।

২। সমস্যা একাধিক হলেও এখানে গুরুত্ব অনুসারে তালিকায় সাজাতে হবে।

৩। নির্দেশিকা অনুশীলন করার প্রশিক্ষণ থাকলে সমস্যা কম হবে।

8। নির্দেশিকাটি ৩-৫ বার কিংবা আরও অধিক বার পড়তে হবে।

৫। বুঝতে অসুবিধা হলে কিংবা প্রশ্ন আসলে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, ঢাকায় কিংবা স্থানীয় জেলা অফিসে গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে তা বুঝে নিতে হবে।

৬। নির্দেশিকায় যে সকল তথ্যাবলী রয়েছে:
(ক) সাধারণ বিবরণ
(খ) মানচিত্র একক ভিত্তিক পরিশিষ্ট
(গ) এলাকার মানচিত্র ও কৃষি ভিত্তিক মৌলিক চিত্র

(ক) সাধারণ বিবরণ থেকে যে সকল তথ্য নেয়া সম্ভব :
(১) এলাকার অবস্থান ও পরিচিতি
(২) এলাকার আয়তন
(৩) প্রশাসনিক কাঠামো
(৪) জনসংখ্যা
(৫) যাতায়াত ব্যবস্থা
(৬) জলবায়ু
(৭) ভূ-প্রকৃতি ও
(৮) পানি সম্পদ

বস্তুতঃ সাধারণ বিবরণ থেকে এলাকার মানুষ, জমি, ফসল ও জীবনযাত্রার বাস্তবচিত্র চোখে ভাসে যাগবেষণা ও সঠিক উন্নয়নে প্রয়োজন।

মানচিত্রের তথ্যাবলী:

এখানে এক একটি থানায় সমগুণ সম্পন্ন এক একটি এলাকাকে উন্নয়ন এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শনাক্তকৃত এলাকাগুলোর মধ্যে ভূমি ও মাটির প্রকারভেদ, বর্তমান ভূমি ব্যবহার, কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা এবং উন্নয়ন সম্ভাবনার ক্ষেত্র তুলে ধরা হয়। আবার ভূপ্রকৃতি, মাটির গুণাগুণ এবং উন্নয়ন সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে ভূমি সম্পদ উন্নয়নের একক শনাক্ত করা হয়েছে এবং এসব এককের এলাকাগত বিস্তার, সংযোজন, মৃত্তিকা ও ভূমি মানচিত্রে দেখানো হয়েছে। এককে ভূমির উঁচু নিচু প্রকারভেদ, মৃত্তিকা দল, ভূমির গুণাগুণ, ভূমি ব্যবহারের দিকদর্শন প্রদান করে।

নির্দেশিকার পরিশিষ্টে মৃত্তিকার রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা আছে। এখানে এলাকা ভিত্তিক মাটির গুণাগুণের ভিত্তিতে নিম্ন মাধ্যম ও উত্তম সার প্রয়োগের সুপারিশ রয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানের মাটিতে গন্ধক এবং দস্তার অভাব পরিলক্ষিত হওয়ায় এখন যথাক্রমে জিপসাম ও জিংক অক্সাইড/জিংক সালফেট ব্যবহৃত হচ্ছে।

নির্দেশিকা ভিত্তিক সার প্রণয়ন:

সার সুপারিশের জন্য মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রদত্ত নীতিমালা/ পদক্ষেপগুলো দেয়া হলো। এগুলো অনুশীলন করুন।

১। মানচিত্রে চিহ্নিত একটি এলাকায় কোন শস্যের জন্য সার ব্যবহার সুপারিশ করা হবে, তা সে এলাকার জমির বর্তমান ব্যবহার শীর্ষক সারণী থেকে নির্ধারণ করুন।

২। এবার যে শস্যের জন্য সার সুপারিশ করা হবে এবং যে জমিতে যে ফসল বপন/রোপণ করা হবে, সে জমির গড় উর্বরতামান উক্ত এলাকার মৃত্তিকা দলের রাসায়নিক গুণাবলী শীর্ষক সারণী হতে নির্ধারণ করুন।

৩। যে শস্যের জন্য সার সুপারিশ করা হবে, তার ফলনমাত্রা পরিশিষ্ট সারণী-১ হতে নির্ধারণ করুন।

8। বিভিন্ন শস্যের জন্য মাটির উর্বরতাভেদে (নিম্ন, মধ্যম ও উত্তম) সার সুপারিশ পরিশিষ্ট সারণী ২ হতে নিরূপণ করুন।

৫। উচ্চ ফলনমাত্রার সার সুপারিশের জন্য বিএআরসি কর্তৃক প্রকাশিত ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন গাইড অনুসরণ করুন।

কীভাবে সার সুপারিশ তৈরি করবেন:

ধরা যাক, আপনাকে মানচিত্র একক-৩ এর দু’টি ভিন্ন ক্ষেতে দু’টি ভিন্ন শস্যের যেমন স্থানীয় (উন্নত) আউশ ধান এবং সরিষা (উফশী) এর জন্য সার সুপারিশ করতে হবে। আউশ ধানের মাঝারি উঁচু জমির ‘ঈশ্বরদী’ মৃত্তিকা দলের মাটির পরীক্ষার ফলাফল থেকে (সারণী-৬খ) দেখা গেল যে, ঐ মাটিতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, গন্ধক দস্তা এবং বোরনের পরিমাণ যথাক্রমে, নিম্ন মধ্যম, মধ্যম উত্তম, নিম্ন মধ্যম, মধ্যম এবং উত্তম। তাহলে এক্ষেত্রে ফলনমাত্রার স্থানীয় আউশ ধান উৎপাদনের জন্য সার সুপারিশ হবে যথাক্রমে হেক্টর প্রতি ৫০ কেজি নাইট্রোজেন, ৪০ কেজি ফসফেট, ০ কেজি পটাশ, ০ কেজি গন্ধক এবং ০ কেজি দস্তা এবং ০ কেজি বোরন ( পরিশিষ্ট সারণী-২; নির্দেশিকা পুস্তক)।

মৌজা ভিত্তিক নির্দেশিকার অনুশীলন ঃ উদাহরণ

বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট (এস.আর.ডি.আই) কর্তৃক প্রদত্ত নীতিমালা এখানে অনুশীলন করা হলো। এ নির্দেশিকাকে সর্বক্ষেত্রে মৌজাভিত্তিক ব্যবহারের পূর্বে মৌজাভিত্তিক তথ্য ও প্রতিবেদন প্রস্তুত করা প্রয়োজন। থানার ইউনিয়নভিত্তিক মৌজা মানচিত্র এবং তার বিস্তারিত তথ্যাদি সন্নিবেশিত করা হলো। নিম্নে সংক্ষেপে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্লক সুপারভাইজারগণ (বি,এস) কীভাবে তাদের ব্লকের তথ্য ও প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেন তার একটি নমুনা দেয়া হলো :

১। থানা নির্দেশিকার মানচিত্র থেকে ব্লক সুপারভাইজার তার এলাকায় প্রাপ্ত মৃত্তিকা দলের তালিকা প্রস্তুত করবেন। থানায় প্রাপ্ত সব কটি মৃত্তিকা দল তার ব্লকে নাও থাকতে পারে। তিনি তার এলাকার শনাক্তকৃত দলগুলোর বৈশিষ্ট্যসমূহের একটি চার্ট নির্দেশিকার পরিশিষ্ট-১ হতে প্রস্তুত করবেন।

২। ব্লকে সুপারভাইজার তার এলাকার সব কটি মৌজা মানচিত্র স্কেল ১৬ = ১ মাইল সংগ্রহ করবেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাবে, প্রাপ্ত মৌজা মানচিত্রের সাথে সরজমিনে গরমিল আছে। যেমন, কোন একটি দাগ নম্বরের প্লট বাস্তবে একাধিক ছোট ছোট প্লটে বিভক্ত। বুঝতে হবে, মৌজা মানচিত্রটি ছাপার পর ওয়ারিশান সূত্রে বা বিক্রয়ের মাধ্যমে বা বন্টনের দ্বারা ঐ প্লটটিকে একাধিক ছোট ছোট প্লটে বিভক্ত করা হয়েছে বা নতুন কোন পুকুর খনন বা বাড়ীঘর তৈরি করা হয়েছে অথবা প্রদর্শিত কোন পুকুর কিংবা বসতবাটী বর্তমানে সরজমিনে নেই।

৩। ব্লক সুপারভাইজার তার এলাকার যে কোন একটি মানচিত্রে চিহ্নিত আছে এমন একটি নির্দিষ্ট প্লট অথবা পুকুর অথবা অন্য যে কোন স্থায়ী বস্তু মৌজায় গিয়ে সরজমিনে শনাক্ত করবেন।

8। এবার চিহ্নিত বস্তু হতে কাছাকাছি যে কোন একটি প্লট শনাক্ত করবেন এবং সে জমির মালিক বা যিনি ঐ জমি সন্ধন্ধে জ্ঞাত আছেন এমন লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করে ভূমি শ্রেণি, রবিমৌসুমে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে পানি অপসারণ অবস্থা, মাটির রস সরবরাহ ক্ষমতা, মাটির নিষ্কাশন শ্রেণি ও জমির ফসল বিন্যাস ইত্যাদি সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করবেন। উদাহরণ : মাঠ পর্যায় উদাহরণ হিসেবে ঝাউডাংগা ইউনিয়নের ‘ক’ মৌজার ‘খ’ নম্বরের প্লটটি নেয়া হলো। উক্ত প্লটের কৃষক অথবা পার্শ্ববর্তী এলাকার কৃষকের বিবৃতির ভিত্তিতে প্লটটি সম্বন্ধে নিম্নরূপ তথ্য পাওয়া গেলো ঃ

এখন কোদাল বা অগারের সাহায্যে খুঁড়ে মাটির উপরিস্তর ও নিম্নস্তরের রং, বুনট, দৃঢ়তা, প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি নিরূপণ করে চার্টের তালিকার সাথে মিলিয়ে মৃত্তিকা দলটি শনাক্ত করে দেখা গেলো যে, আলোচিত প্লটটির মৃত্তিকা দল ‘সারা’।

তারপর বি, এস, ‘খ’ দাগের প্লটটি মৌজা মানচিত্রের ওপর একটি সংকেতিক চিহ্ন বা নম্বর যথা- ১ দ্বারা চিহ্নিত করবেন এবং একটি নোট বুকে ১ নম্বর চিহ্ন লিখে উপরোক্ত প্রয়োজনীয় তথ্য লিপিবদ্ধ করবেন। এর সাথে প্রতিবন্ধকতা, বর্তমান ভূমি ব্যবহার বা প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্যাদিও লিখবেন।

অনুরূপভাবে ক্রমান্বয়ে জরিপের পার্শ্ববর্তী প্লটগুলো সন্বন্ধে যাবতীয় তথ্য মৌজা মানচিত্রে ও নোট বুকে চিহ্ন দিয়ে লিপিবন্ধ করবেন।

এ পদ্ধতিতে সমগ্ৰ ‘ক’ মৌজার ভূমি শ্রেণি, মৃত্তিকা দল, ফসল বিন্যাস ও প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। যেসব প্লট একই মৃত্তিকা দল বা ভূমি শ্রেণির অন্ত গর্ত সেগুলোর চতুর্দিকে লাইন টেনে চৌহদ্দী এঁকে দিতে হবে।

জরিপকারী জরিপকার্যে যত বেশি অভিজ্ঞতা লাভ করবেন, ভূমি শ্রেণি, মৃত্তিকা দল, ফসল বিন্যাস ইত্যাদির মধ্যে নিহিত কার্যকারণ সম্বন্ধগুলো তার নিকট ক্রমাগত তত সহজতর হয়ে উঠবে। পরবর্তীতে তিনি ‘ক’ মৌজার বন্যা উপদ্রুত এলাকা, খরাক্লিষ্ঠ এলাকা অথবা কোন একটি শস্যের আবাদকৃত এলাকার প্রতিবেদন প্রণয়নে অনেক বেশি আত্নপ্রত্যয়ের সাথে কাজ করতে পারবেন (নির্দেশিকা থেকে নেয়া হয়েছে)।
এখানে নির্দেশিকা অনুযায়ী বি.এস বা ব্লক সুপারভাইজার নির্দেশিকার অনুশীলন কীভাবে করবেন তা উল্লেখ করা হলো যা বিএজিএড প্রোগ্রামের ছাত্রদের জন্যও প্রযোজ্য।

সূত্র:

  • মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা অনুশীলন, ব্যবহারিক, পাঠ ৫.৫, ইউনিট ৫ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি

ভূমি সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা

ভূমি সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি বাউবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান – ১২০৪ কোর্সের, ইউনিট ৫ এর পাঠ ৫.৪ নম্বর পাঠ।

ভূমি সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা

থানা ভিত্তিক কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, সে এলাকার ভূমি, মৃত্তিকা ও পানি সম্পদ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও তার সঠিক ব্যবহার নিরূপণের ওপরে বিশেষভাবে নির্ভরশীল পুস্পকের নামই ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা। বাংলাদেশের প্রতিটি থানার জন্য রয়েছে পৃথক নির্দেশিকা । মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এ নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে ।

ভূমি সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকার নির্দেশিকার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:

১। থানায় ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদের সঠিক ব্যবহার সুনিশ্চিত করা।

২। চাষী নিজেই যেন তার মৃত্তিকার সমস্যা জানতে ও সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে পারে।

৩। যথাযথ পানি ও সার ব্যবহারে নিশ্চিত থাকতে পারা।

৪। বন্যা সমস্যায় সময়মত পদক্ষেপ নেয়া।

৫ ।এলাকা ভিত্তিক ফসল চক্র বেছে নিয়ে সময়মত সঠিক ফসল চাষাবাদ নিশ্চিত করা।

৬।  কৃষক কর্তৃক তার কোন জমিতে কখন কোন ফসল ফলাবে তা নিজেই যেন ঠিক করতে পারে।

৭। চাষীদের মৃত্তিকা ও কৃষি বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানার্জনের পথ সুগম করা।

৮। ব্লক সুপারভাইজার ও স্থানীয় কৃষি কর্মী এবং কৃষকদের মধ্যে কৃষি ভিত্তিক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলা ।

 

ভূমি সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকায় তথ্যাবলী:

১। এলাকার সাধারণ বিবরণ :

যথা : অবস্থান ও আয়তন, প্রশাসনিক কাঠামো, জনসংখ্যা, যাতায়াত ব্যবস্থা, জলবায়ু ও প্রকৃতি, পানি সম্পদ ও সেচ ব্যবস্থা।

২। মানচিত্র তথ্যাবলী :

ভূ -প্রকৃতি, মাটির গুণাগুণ এবং উন্নয়ন সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে ভূমি সম্পদ উন্নয়নের একক শনাক্ত করা। প্রতিটি এককে রয়েছে ঃ

(ক) সাধারণ তথ্য
(খ) জমির বর্তমান ব্যবহার
(গ) প্রতিবন্ধকতা ও উন্নয়ন সম্ভাবনা

৩। পরিশিষ্ট ঃ

এখানে রয়েছে প্রতিটি এককের ওপর পূর্ণাংগ চিত্র যথা:

(১) মৃত্তিকা দল

(২) অপ্রচলিত শব্দের ব্যাখ্যা

(৩) মৃত্তিকার রাসায়নিক গুণাবলী

(৪) সার ব্যবহারের সুপারিশ প্রণয়ন তথ্য

(৫) সার প্রয়োগ পদ্ধতি

(৬) ইউনিয়ন ভিত্তিক মৌজার নাম ও আয়তন এবং

(৭) ভূমি ও মৃত্তিকা বৈশিষ্ট্য অনুসারে ফসলের উপযোগিতা ও সম্ভাব্য ফসল বিন্যাস

৪।  ভৌগলিক তথ্য বা মানচিত্র ও নকশা:

(ক) দেশের মানচিত্রে থানার অবস্থান

(খ) ইউনিয়ন ভিত্তিক মানচিত্র

(গ) মৃত্তিকা ও ভূমি শ্রেণির মানচিত্র

ভূমি সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকার কুফল বা সমস্যাদি:

১।নির্দেশিকা তথ্যে কোন ভূল থাকলে তা কোন এলাকার সমস্যা বাড়াতে পারে।

২। মৃত্তিকার গুণাগুণ পরিবর্তনশীল, ফলে নির্দেশিকার কথাবার্তা সব সময় কাজে নাও লাগাতে পারে।

৩। নির্দেশিকা সম্বন্ধে চাষীরা জানে না কিংবা এ বিষয় সম্বন্ধে তাদের বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানের অভাব।

৪। প্রশিক্ষণ বা ভাল শিক্ষা ছাড়া নির্দেশিকার তথ্যাদি বুঝা বা গ্রহণ করা কষ্টকর ।

৫ । যারা নির্দেশিকা হাতে নিয়ে কাজ করে তারা নিয়মিত চাষীদের কাছে না গেলে চাষীরা পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাবে না।

৬।নির্দেশিকার নীতিমালা বা পদক্ষেপ বংশানুক্রমে এলাকায় আসন প্রতিষ্ঠা না-ও করতে পারে।

ভূমি সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকার কার্যাবলীর সম্প্রসারণে সুপারিশ:

১।প্রতিটি থানায় ইউনিয়ন, একক, ব্লক, গ্রাম ও মৌজা ভিত্তিক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা।

২। প্রতিটি গ্রামে, বাজারে, স্কুলে ও খেলার মাঠে প্রদর্শনীয় ব্যবস্থা করে নির্দেশিকার ব্যবহার নিয়মনীতি শিখানো।

৩।প্রতিটি চাষীকে তার জমির গুণগত মান পরীক্ষা নিরীক্ষা করে শিখানো।

৪। মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ ও সম্প্রসারণ কৃষিকর্মী পাঠিয়ে সঠিক তথ্য নেয়া।

৫। রুটিন গবেষণা করে নির্দেশিকার গুণগত মান উন্নয়ন ও সুপারিশ প্রদান ।

৬ । প্রতি ৫ বৎসর পর নির্দেশিকার সংশোধন ও পূণর্মুদ্রণ।

৭।নির্দেশিকার সার সংক্ষেপ বের করে প্রতিটি চাষীর হাতে দেয়া যাতে সে চাষাবাদে অধিক উৎসাহ পায় ।

৮।কোথায় কোথায় নির্দেশিকার কপি রয়েছে তা সর্ব সাধারণ বা এলাকার লোকদেরকে জানানো।

থানা ভূমিসম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকায় এদেশের প্রতিটি থানার ভূমির মান, কৃষি ও অন্যান্য কাজে যথাযথ ব্যবহার কৌশল বিশেষ করে ভূমি ও মৃত্তিকা বৈশিষ্ট্য অনুসারে ফসলের উপযোগিতা ও সম্ভাব্য ফসল বিন্যাস, সার প্রয়োগ পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এটি কৃষক ও স্থানীয় পরিকল্পনাকারীদের দ্বারা যথাযথভাবে ব্যবহৃত হলেই এর উদ্দেশ্য সফল হবে। কাজেই এ ব্যাপারে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

সূত্র:

  • ভূমি সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা ,পাঠ ৫.৪, ইউনিট ৫ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি।

 

মৃত্তিকা ক্ষয় ও সংরক্ষণ

মৃত্তিকা ক্ষয় ও সংরক্ষণ নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি বাউবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান – ১২০৪ কোর্সের ইউনিট ৫ এর,  পাঠ ৫.৩ নম্বর পাঠ।

মৃত্তিকা ক্ষয় ও সংরক্ষণ

 

মৃত্তিকা ক্ষয় বা ভূমি ক্ষয় (Soil erosion):

বৃষ্টির জোরালো আঘাত, পানির স্রোত, সূর্যের উত্তাপ, প্রবল বায়ু প্রবাহ, বিশাল নদীর ঢেউ, তুষারপাত, কালবৈশাখী ঝড়, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, পোকা-মাকড়, জীবাণু এবং মানুষের দৈনন্দিন ক্রিয়াকর্মের ফলে ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগের মাটি এক স্থান থেকে অন্যত্র স্থানান্তর হওয়াকে মৃত্তিকা ক্ষয় বা ভূমিক্ষয় বলে। পৃথিবী সৃষ্টির পর যখন থেকে জল প্রবাহ ও বায়ু প্রবাহ শুরু হয়েছে, তখন থেকেই এ প্রক্রিয়াটি অবিরত চলছে।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যে মাটি গড়ে উঠে, তা অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ভূমিক্ষয় বিশেষ করে পানি চলাচল ও বায়ু প্রবাহ প্রক্রিয়ায় আলগা হয়ে অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়ে যায়। পানির স্রোত দ্বিগুণ বাড়লে ৬৪ গুণ বড় কণা বহন করতে পারে, অর্থাৎ ৩২ গুণ বেশি পরিমাণ মাটি পানির সংগে ভেসে যেতে পারে এবং ভূমিক্ষয় ৪ গুণ বৃদ্ধি পায়।

ভূমিক্ষয় উপাদান সূত্র:

ভূমিক্ষয়ের পরিমাণ ও তীব্রতা মূলতঃ ৫টি উপাদানের ওপর নির্ভরশীল। এ সকল উপাদান একটি সূত্রের সাহায্যে প্রকাশ করা যায়, যথা ভূমিক্ষয়, e = f(cl, vs, th

এখানে,

f = function of or dependent on ( উপাদান)

cl = climate (জলবায়ু – বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ ও তাপমাত্রা)

v = vegetation (উদ্ভিজ – বৃক্ষ ও লতা গুল্মের পাতা, গাছপালা, ঘাস, গাছের শিকড় প্রভৃতি)।

t = topography (ভূমির বন্ধুরতা – ঢাল, ঢালের দৈর্ঘ্য ও দিক, জমির দৈর্ঘ্য)।

s = nature of soils (মৃত্তিকার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য – কণার আকার, বুনট, সংযুক্তি, জৈব পদার্থ, ভূমিধস প্রভৃতি)।

h = human activities (মানুষের কাজকর্ম)।

ভূমি ক্ষয়ের প্রকারভেদ:

ভূমি ক্ষয়কে প্রধানতঃ দু’টি ভাগে ভাগ করা যায় যথা,

ক) পানি ভূমি ক্ষয় (Water erosion)

খ) বায়ু ভূমি ক্ষয় (Wind erosion)

ক) পানি ভূমিক্ষয় আবার ৮ প্রকার যথা :

১। ছিটকে পড়া বা বৃষ্টির ফোঁটা জনিত (Splash or raindrop erosion)

২। পাত ভূমিক্ষয় (Sheet erosion)

৩। পলি ক্ষয় বা প্রারম্ভিক ভূমিখাত (Rill erosion)

8। গালি ভূমিক্ষয় (Gully erosion)

৫ । ধ্বস ভূমিক্ষয় (Slip erosion)

৬। নদী তীর ভূমিক্ষয় (Stream bank erosion)

৭। সমুদ্র উপকূল ভূমিক্ষয় বা বেলাভূমির ভূমি ক্ষয় (Sea shore erosion)

৮। পার্বত্য জলধারা বা ঝোরা ক্ষয় (Torrent erosion)

খ) বায়ু ভূমি ক্ষয় আবার দুপ্রকার, যথা

১। সল্টেশন (Saltation)
২। বায়ু বাহিত ধূলিকণা (Suspension)

 

মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ:

১।বনভূমির ধ্বংস বা উচ্ছেদ সাধন ।

২। বনের মধ্যে গাছপালা পরে গিয়ে বনভূমি ক্ষতি কিংবা পতিত গাছপালায় নিয়ন্ত্রণ বিহীন আকস্মিক আগুন ধরে যাওয়া।

৩। গভীর অরণ্যে বুশ ফায়ারে বনভূমির ক্ষতি কিংবা বিলুপ্তি।

৪। চারণ ভূমির ঘাস বার বার কেটে ফেলা।

৫ ৷ চারণভূমিতে ব্যাপক হারে গরু কিংবা অন্যান্য জীবজন্তু চড়ানো।

৬। আগুন দিয়ে বনভূমির লতাপাতা, আগাছা, বুশ ইত্যাদি পুড়িয়ে ফেলা।

৭।  মাঠে আগুন দিয়ে ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলা।

৮। পাহাড় বা টিলার ঢালুতে চাষাবাদ করা।

৯।ঘরবাড়ী তৈরি, আবাদ ভূমি সৃষ্টি, ও জ্বালানীর প্রয়োজনে বনভূমির পরিধি কমিয়ে আনা।

১০।বেলে মাটি দীর্ঘ সময় পতিত রাখা কিংবা চাষাবাদ না দিয়ে বায়ু ক্ষয়কে উৎসাহিত করা।

১১। বন্যার ফলে ভূপৃষ্টের ক্ষয় প্রবল বেড়ে যাওয়া।

১২। বৃষ্টির আঘাতে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের মাটিস্তর ভীষণ ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া।

১৩। দিনরাত মানুষের বিচরণ বা চলাফেরা।

১৪। মাঠে ঘাটে নানান খেলাধ লার প্রভাব যথা, দৌড়, লাফ, গোল্লাছুট, দাঁড়িয়া বাধা, হাডুডু, ফুটবল, হকি, প্রভৃতি।

১৫। মাঠ চাষ দিয়ে কিংবা ফসল কেটে দীর্ঘ সময় পতিত ফেলা রাখা।

১৬। সময় অসময় শিলা বৃষ্টির প্রকোপতা।

১৭। পুকুর রাস্তাঘাট, কিংবা মাঠে এলো মেলো অসংখ্য গর্ত করে ফেলে রাখা অথবা গর্ত করে গাছপালা না লাগানো। ১৮। যুগ যুগ ধরে একই এলাকায় একই রকম খাদ্যশস্য উৎপন্ন করা।

 

 

মৃত্তিকা ক্ষয়ের উদাহরণ:

১।নদীর পাড় বা কিনারার ভাঙ্গন।।

২। পুকুর পাড় ভাঙ্গন ।

৩। খালের পাশের ভাঙ্গন।

৪। নর্দমার ভাঙ্গন ।

৫ । রাস্তাঘাট ধ্বসে পড়া কিংবা রাস্তার পাশের ভাঙ্গন ।

৬। নদীর বুকে চর জাগা।
৭। বন্যার ফলে মাটিতে কাঁদা, পলি কিংবা বালির স্তর জমা।

৮। পুকুর, খাল, বিল, লেক কিংবা নদীর বুকে তলানী পড়া অর্থাৎ ৯। এখানে সেখানে মাটির স্তুপ জমে থাকা।

১০। গাছপালার শিকড় বের হয়ে যাওয়া।

১১। গোড়া অথবা শিকড়সহ গাছপালা ধ্বসে পড়া।

১২। হাঁটার রাস্তায় উঁচু নিচু কিংবা গর্ত থাকা।

১৩। পাহাড়ের পাদদেশের মাটির স্তুপে রাস্তাঘাটে চলাচল বন্ধ থাকা।

১৪। ক্ষেতের পানি বের করার মুখ প্রান্ত ।

১৫। গরুর গাড়ী কিংবা রিক্সা চলাচলে রাস্তায় গর্ত থাকা।

১৬। ছাদের পানি পড়ে গর্ত হওয়া।

১৭। নলকূপের পানি পড়ায় সামনের গর্ত।

১৮। গভীরতা কমে আসা।

 

মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রতিক্রিয়া/প্রভাব:

১। সরাসরি বৃষ্টিপাতের ফলে পানি মাটির জমাট বাধা পদার্থগুলোকে ধৌত করে নিয়ে যায় ফলে

২।মাটির কণাগুলো বিভাজিত হয়। মাটির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলী সুস্পষ্ট ধরা পরে। 2।

৩।ফলন কমে যায়।

৪।কোথাও মাটি চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে যেতে পারে।

৫ । মৃত্তিকায় প্রোফাইলের স্তর সঠিক রূপ নিয়ে গড়ে উঠতে পারে না।

৬। মৃত্তিকায় উর্বরতা লোপ পায়।

৭। মাটির জৈব পদার্থ কমে যায়।

৮।মাটি মরুভূমিতে রূপ নিতে পারে।

৯।মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যায়।

১০। মাটিতে অণুজীবের সংখ্যা কমে আসে।

১১। মাটিতে গাছপালা জন্মানো অসম্ভব হয়ে যায়।

১২। এলাকায় সুস্থ পরিবেশ রক্ষা করা যায় না কিংবা সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনাও হাতে নেয়া যায় না।

১৩। গাছপালা দ্রুত মরে যেতে পারে।

১৪। আকস্মিক ব্যতিক্রমধর্মী মৃত্তিকার জন্ম নিতে পারে।

১৫। মাটিতে ফুল ফল কিংবা শাকসবজির চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না।

১৬। কোন বৃক্ষ কিংবা ফলের গাছ থাকলে তা কালক্রমে মরে যায়।

১৭। বায়ু মৃত্তিকা ডাষ্টকে শত মাইলের বেশি দূরেও স্থানান্তর করতে পারে, ফলে মাটিতে প্রবল ডাস্টের উৎপত্তি ঘটলে এলাকার গাছপালার দূষণ ঘটায় এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও ফুল উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

 

মৃত্তিকা ক্ষয়রোধ/সংরক্ষণ:

শত শত বৎসর ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক প্রক্রিয়ায় যে মৃত্তিকা গঠিত হয়, একে যথাস্থানে যথাযথভাবে ধরে রেখে গুণগত মান রক্ষা করার নামই মৃত্তিকা ক্ষয়রোধ বা মৃত্তিকা সংরক্ষণ কিংবা মৃত্তিকা কনজারভেশন। সুস্থ পরিবেশ ও মানুষের জীবন যাত্রার উন্নয়নের জন্য মৃত্তিকা সংরক্ষণ অপরিহার্য। যতদিন পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব টিকে থাকবে ততদিনই মৃত্তিকা সংরক্ষণ চলতে থাকবে।

 

মৃত্তিকা ক্ষয় ও মৃত্তিকা ক্ষয়রোধের মধ্যে পার্থক্য:


মৃত্তিকা ক্ষয়রোধ বা সংরক্ষণ পদ্ধতি:

১।  মাটি জৈব পদার্থ কিংবা খড়, অন্য লতাপাতা দিয়ে ঢেকে দেয়া বা মালচিং করা।

২। বৃক্ষ রোপণ ।
ক) রাস্তার পাশে বৃক্ষ রোপণ ।
খ) নদীর পাড়ে বৃক্ষ রোপণ ।

৩। মাটি উঠানোর পর ঘাস লাগানো।

৪। ক্রপ রোটেশন বা ফসল চক্র অবলম্বন করা।

৫। গোবর, কম্পোস্ট কিংবা জৈব সার প্রয়োগ করা।

৬ । একই মাঠে বিভিন্ন ফসল বা মিক্সড ক্রপিং অনুশীলন করা।

৭।  নদীর চরে শন, ধনচে কিংবা হালকা বৃক্ষ লাগানো।

৮। বাড়ীর আশ পাশে আম, কাঠাল, জাম, বাঁশ, লিচু, কলাগাছ প্রভৃতি রোপণ ।

৯ । নদীর ধারে বাঁধ দেয়া কিংবা পাথর ফেলে নদীর পাড় রক্ষা করা।

১০। প্রতিটি প্লটে জমির আইল বেঁধে পানি মওজুদ রাখা।

১১। জমিতে ফসলের অবশিষ্টাংশ রেখে আসা।

১২। ঢালু জমি পর্যায়ক্রমে আইল বেঁধে চাষাবাদ করা।

১৩। মাঠে জমির আইলে ডোল কলমি, বাবলা কিংবা মাঝারী আ3কৃতির গাছ লাগানো।

১৪। সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ের টিলায় চা বাগান করা।

১৫। উত্তরবঙ্গে বরেন্দ্রভূমির ক্ষয়রোধ ও মরুকরণ প্রতিরোধে বিভিন্ন রাস্তার পাশে চারাগাছ লাগানো।

১৬। দেশে এনজিওদের তৎপরতায় বৃক্ষ রোপণ কার্যের পরিধি বৃদ্ধি করা।

১৭। পুকুর পাড় ভেঙ্গে পরলে কিংবা পাড়ে লাগানো গাছের শিকড় বেরিয়ে আসলে পুণরায় মাটি দিয়ে কিংবা বেড়া দিয়ে মাটি বসায়ে কিনারার অতিরিক্ত ভাঙ্গন রোধ করা।

১৮। পুল তৈরি কৃত এলাকায় চার পাশের মাটি বার বার কেটে নেয়ার ফলে মারাত্বক ভূমিক্ষয় আরম্ভ হয় ফলে ঐ সকল এলাকায় ব্যাপক হারে গাছ লাগানো।

১৯। কৃষিক্ষেত্রে ধনচে, সয়াবিন, ভূট্টা ইত্যাদি গাছ লাগিয়ে গ্রীনম্যানুরিং (Green Manuring) করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া।

২০। গ্রামের হাট বাজার ও শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় মানুষ ও যানবাহন চলাচলের ফলে মাটি শীত ও গ্রীষ্মকালে ব্যাপক ক্ষয় হতে থাকে, ফলে ঐ সকল এলাকার রাস্তাঘাটে সকাল বিকেলে ব্যক্তিগত উদ্যোগ কিংবা গাড়ীর সাহায্যে পানি ছিটানো।

২১। ঢালু জমিতে বিশেষ পদ্ধতিতে ফসলের চাষ।

 

 

সূত্র:

  • মৃত্তিকা ক্ষয় ও সংরক্ষণ ,পাঠ ৫.৩, ইউনিট ৫ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি

বাংলাদেশের মৃত্তিকার শ্রেণিগত পরিচিতি

বাংলাদেশের মৃত্তিকার শ্রেণিগত পরিচিতি নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি বাউবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান – ১২০৪ কোর্সের ইউনিট ৫ এর,  ৫.২ নম্বর পাঠ।

 

বাংলাদেশের মৃত্তিকার শ্রেণিগত পরিচিতি

 

বাংলাদেশের মৃত্তিকাকে ২০টি সাধারণ শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। এখানে এলাকা, মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ও ফসলের ভিত্তিতে প্রতিটি মৃত্তিকার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো :

১। চুনমুক্ত পলিমাটি (Non Calcareous Alluvium)

এলাকা ঃ

দেশের শতকরা ২ ভাগ এলাকায় এ মাটি বিদ্যমান। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও মেঘনার তীরবর্তী চরাঞ্চলে সাম্প্রতিক জমা পলিমাটি নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত।

মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য :

বর্ণ ধূসর, বুনট – দোআঁশ, পলি কিংবা বেলে। মৃত্তিকা প্রায় নিরপেক্ষ প্রকৃতির, পিএইচ মান ৬.০-৬.৭ ।

উল্লেখযোগ্য ফসল:

ধান পাট, গম, মিষ্টি আলু, তৈলবীজ, ডাল ফসল প্রভৃতি।

 

২। চুনযুক্ত পলিমাটি (Calcareous Alluvium):

এলাকা ঃ

দেশের শতকরা ৬ ভাগ এলাকায় এ মাটি বিদ্যমান। পদ্মা ও নিম্ন মেঘনার দু’পাশে চরাঞ্চলে পলি সমন্বয়ে গঠিত। রাজশাহী, ফরিদপুর, নোয়াখালী ও পটুয়াখালীতে কিছু এলাকা বিদ্যমান। মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ঃ চুনযুক্ত পলিমাটির বর্ণ হালকা ধ সর; বুনট – বেলে দোআঁশ, পলি দোআঁশ, নিরপেক্ষ, সামান্য ক্ষার বিদ্যমান, পিএইচ ৭০-৮০। মাটিতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের আধিক্য রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য ফসল : ধান, গম, পাট, ডাল, কলা, তৈলবীজ ইত্যাদি।

 

৩। কশ মাটি (Acid Sulphate Soils ):

এলাকা ঃ

দেশের শতকরা ১ ভাগ এলাকা নিয়ে এ অঞ্চল বিদ্যমান। সুন্দরবন, চকোরিয়া, মহেশখালী, কক্সবাজারের সালফার ও লোনা পানি প্লাবিত এলাকা, উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ এলাকার অধীনে কিছু স্থান নিয়ে এ অঞ্চল বিদ্যমান।

মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ঃ

বর্ণ ধূসর, গাঢ় ধূসর, বুনট – পলি, কাঁদা, এঁটেল; ভিজা অবস্থায় নিরপেক্ষ (পিএইচ ৭.০), শুকালে অত্যধিক অত্নীয় হয়ে উঠে, পিএইচ ২.০-৪০। ব্যাপক অত্নত্বের কারণে মাটিতে লোহা, এলুমিনিয়াম ও মাঙ্গানিজ দ্রবীভূত হয়ে যায় যা উদ্ভিদের জন্য বিষাক্ত, সালফার প্রধান, পাইরাইট খনিজ বিদ্যমান।

উল্লেখযোগ্য ফসল : ইহা সমস্যাবহুল মাটিতে আওতাভুক্ত। মাটির ফসল ভাল জন্মে না, তবে সামান্য ধান, সুপারী ও নারিকেল জন্মে।

 

8। পিট মাটি (Peat Soils):

এলাকাঃ

ফরিদপুর, খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, বরিশাল, মাগুরার সীমান্তবর্তী এলাকা, সিলেটের কোন কোন স্থানে পিট জাতীয় মৃত্তিকা বিদ্যমান। বর্ষাকালে এ সকল এলাকা গভীরভাবে প্লাবিত হয়। শুকনো মৌসুমে ও ভিজা থাকে।

মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য :

বর্ণ কালো; অবিয়োজিত বা স্বল্প বিয়োজিত জৈব পদার্থ ইহার প্রধান উপাদান। অত্নীয় মৃত্তিকা, পিএইচ ৫.০-৬.০; জৈব পদার্থ শতকরা ৩০-৬০ ভাগ। ইহা সমস্যাবহুল মৃত্তিকার আওতাভূক্ত । উল্লেখযোগ্য ফসল ঃ ফসল কম হয়, শুধুমাত্র বোনা আমন ধানের চাষ হয়।

 

৫। চুনমুক্ত ধসর প্লাবন ভূমির মাটি (Non Calcareous Grey Floodplain Soils):

এলাকা ঃ

দেশের শতকরা ২৫ ভাগ এলাকায় চুনমুক্ত ধূসর প্লাবন ভূমির মাটি বিদ্যমান। রংপুর, বগুড়া, ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাংগাইল, মানিকগঞ্জ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, বরিশাল, খুলনা প্রভৃতি এলাকায় বিদ্যমান ।

মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ঃ

বর্ণ ধূসর, বাদামী, বাদামী দাগযুক্ত, বুনট-দোআঁশ, এঁটেল, বিক্রিয়া অত্নীয় থেকে নিরপেক্ষ, পিএইচ ৫.৫-৭.৩।

উল্লেখযোগ্য ফসল: ধান, পাট, গম, শাকসবজি, ফলমূল ও অন্যান্য মাঠ ফসল প্রভৃতি।

 

৬ । চুনযুক্ত ধূসর প্লাবন ভূমির মাটি (Calcareous Grey Floodplain Soils):

এলাকা ঃ

খুলনার দক্ষিণ পশ্চিমাংশ।

মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ঃ

বর্ণ ধূসর; বুনট – দোআঁশ, এঁটেল দোআঁশ; সামান্য ক্ষারমর্ধী, পিএইচ, ৭.০-৮.০। মাটিতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের আধিক্য বিদ্যমান।

উল্লেখযোগ্য ফসল ঃ

ধান, পাট, কলা, শাক সবজি প্রভৃতি।

 

৭। ধূসর পাদভূমির মাটি (Grey Piedmont Soils):

এলাকা :

সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও পাবত্য চট্টগ্রাম এলাকায় বিদ্যমান ।

মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ঃ

বর্ণ ধূসর, নিম্নস্তরের মাটি লাল বাদামী ছিট দাগ যুক্ত। বুনট-দোআঁশ, এঁটেল দোআঁশ, বিক্রিয়া অম্লীয়, পিএইচ ৫.০-৭.0 । উল্লেখযোগ্য ফসল : আউশ ও রোপা আমন ধান, শাকসবজি, নিচু এলাকায় বোনা আমনপ্রভৃতি ।

 

 

৮। অম্ল বেসিন কদম (Acid Basin Clays):

এলাকা ঃ

দেশের মোট জমির শতকরা ৮ ভাগ এলাকায় এ মাটি বিদ্যমান। সিলেট, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহের হাওড়, ভাওয়ালের নীচু এলাকার মাটি, চলনবিল ও মধুপুর এ শ্রেণির অন্তর্গত।

মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ঃ

বর্ণ গাঢ় ধূসর থেকে কালচে; বুনট এঁটেল; জৈব পদার্থে সমৃদ্ধ; অত্ন প্রকৃতির, পিএইচ ৫.০-৭.0 ।

উল্লেখযোগ্য ফসল :

উচ্চ এলাকায় আউশ, রোপা আমন, শাকসবজি, নিচু এলাকায় বোনা আমন।

এলাকা ঃ

দেশের শতকরা ৩ ভাগ স্থানে এ মাটি বিদ্যমান। পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ ও জামালপুরের পাহাড়ের পাদদেশের সমভূমি ও পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকা অঞ্চল এ শ্রেণির অন্তর্গত।

 

৯। চুনমুক্ত গাঢ় ধূসর প্লাবন ভূমির মাটি (Non Calcareous Dark Grey Floodplain Soils):

এলাকা :

দেশের শতকরা প্রায় ১০ ভাগ এলাকায় চুনমুক্ত গাঢ় ধূসর প্লাবন ভূমির মাটি বিদ্যমান। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, পদ্মা ও তিস্তার দু’পাশে বিশেষ করে ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোণা প্রভৃতি স্থানে নিম্ন সমভূমি নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত।

মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ঃ

বর্ণ ধূসর, গাঢ় ধূসর; বুনট দোআঁশ, এঁটেল-দোআঁশ। বিক্রিয়া অত্মীয় থেকে নিরপেক্ষ, পিএইচ ৫.০-৬.৮ ।

উল্লেখযোগ্য ফসল :

ধান, পাট, গম, শাকসবজি, ডাল, তৈলবীজ প্রভৃতি এ অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য ফসল ।

 

১০। চুনযুক্ত গাঢ় ধূসর প্লাবন ভূমির মাটি (Calcareous Dark Grey Floodplain Soil):

এলাকা ঃ

দেশের শতকরা ৮ ভাগ ভূমি এ এলাকায় আওতাভূক্ত। পদ্মার দু’পাশে এবং মেঘনার আশে পাশে বিশেষ করে রাজশাহী, পাবনা, মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, ও যশোর অঞ্চলে এ মৃত্তিকা বিদ্যমান ।

মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ঃ

বর্ণ বাদামী, ধূসর, গাঢ় ধূসর; বুনট এঁটেল, দোআঁশ। বিক্রিয়া নিরপেক্ষ থেকে সামান্য ক্ষার, পিএইচ ৭.০-৮.০ উর্বরতা মধ্যম। উল্লেখযোগ্য ফসল: ধান, পাট, গম, ডাল, তৈলবীজ প্রভৃতি ।

 

১১। চুনযুক্ত বাদামী প্লাবন ভূমির মাটি (Calcareous Brown Floodplain Soils):

এলাকা ঃ

দেশের শতকরা ৮ ভাগ এলাকা এ অঞ্চলের অন্ত গর্ত। পদ্মা বিধৌত সমতল ভূমির উচ্চ স্থান বিশেষ করে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর, ঢাকা, বরিশাল ও নোয়াখালীর অংশবিশেষ নিয়ে এ এলাকা গঠিত।

মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ঃ

বর্ণ ধূসর, হালকা বাদামী; বুনট দোআঁশ, এঁটেল; বিক্রিয়া নিরপেক্ষ থেকে হালকা ক্ষার, পিএইচ ৭.০-৭.৮। নিচুস্তর ১.০-১.৫ মিটার চুনযুক্ত, তবে উপরিভাগে চুনের আধিক্য লক্ষণীয় নয়। উল্লেখযোগ্য ফসল ঃ ধান, পাট, গম, আলু, শাকসবজি, ফলমুল প্রভৃতি ।

 

১২। চুনমুক্ত বাদামী প্লাবন ভূমির মাটি (Non Calcareous Brown Floodplain Soils):

এলাকাঃ

দেশের শতকরা ৩ ভাগ এলাকায় এ মৃত্তিকা বিদ্যমান। তিস্তা ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র আববাহিকা বিশেষ করে হিমালয়ের পাদদেশ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও দিনাজপুরের পশ্চিমাংশ এ অঞ্চলের অন্ত গর্ত।

মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য :

বর্ণ উপরের মাটি হালকা বাদামী এবং নিম্নস্তর ধূসর। বুনট-এঁটেল দোআঁশ, বেলে দোআঁশ; বিক্রিয়া অম্লীয়, পিএইচ ৫.0-6.0 । উল্লেখযোগ্য ফসল: ধান, (আউশ ও বোনা আমন), শাকসবজি, অন্যান্য মাঠ ফসল।

 

১৩। বাদামী পাদভূমির মাটি (Brown Piedmont oils):

মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য :

বর্ণ বাদামী ও ধূসর, ঢালের উপরিভাগের মাটি বাদামী ও নিচু অংশের মাটি ধূসর। বুনট বেলে দোআঁশ থেকে এঁটেল দোআঁশ; মৃত্তিকা অম্লীয় প্রকৃতির, পিএইচ ৪.৮

উল্লেখযোগ্য ফসল:

ধান, আনারস, আদা, হলুদ, শাকসবজি, ফলমূল প্রভৃতি।

 

১৪। কালো তেরাই মাটি (Black Terai Soils):

এলাকাঃ

পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও ও দিনাজপুরের উত্তর-পশ্চিম কোণে এ শ্রেণির মাটি বিদ্যমান। বৎসরের অধিকাংশ সময় জলাবদ্ধ থাকে।

মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ঃ

বর্ণ কালচে, বুনট-বেলে, দোআঁশ। বিক্রিয়া প্রকট অত্নীয়, পিএইচ ৫.০ ৫.৮; জৈব পদার্থের পরিমাণ গড়ে শতকরা ২ ভাগ।

উল্লেখযোগ্য ফসল ঃ

রোপা আমন, গম, কাউন, শাকসবজি প্রভৃতি।

 

 

১৫। বাদামী পাহাড়ী মাটি (Brown Hill Soils):

এলাকা ঃ

দেশের শতকরা ১৩ ভাগ এলাকা নিয়ে এ অঞ্চল বিদ্যমানএ উল্লেখযোগ্য স্থান সমূহ হচ্ছে- পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম, সিলেটের ঢালু পাহাড়ী অঞ্চল, ময়মনসিংহ ও জামালপুরের উত্তর পার্শ্ব ।

মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ঃ

বর্ণ লাল বা বাদামী; বুনট-বেলে দোআঁশ, এঁটেল দোআঁশ। মাটি অধিক অত্ন, পিএইচ ৪.৩-৫.৫; নিচু স্তরে পলি/বালি পাথর বিদ্যমান।

উল্লেখযোগ্য ফসল ঃ

পাদদেশে ধান; আনারস, মসলা, শাকসবজি, চা, কফি, লেবু প্রভৃতি ।

 

১৬। অগভীর লাল বাদামী সোপান মাটি (Shallow Red Brown Terrace Soils):

এলাকা :

দেশের শতকরা একভাগের কম এলাকা নিয়ে এ মাটি বিদ্যমান। নরসিংদী, আখাউড়া, ভাওয়াল, লালমাই, মধুপুর, উচ্চ বরেন্দ্র এলাকা এর আওতাভূক্ত।

মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ঃ

বর্ণ লালমাই ও বাদামী, উপরিভাগ কর্দমপূর্ণ। বুনট-এঁটেল দোআঁশ, দোআঁশ; অত্নধর্মী, পিএইচ ৪.৮-৬.০ ।

উল্লেখযোগ্য ফসল ঃ

আনারস, কলা, মসলা, ধান, গম, শাকসবজি, কাঁঠাল, ফলমূল, গজারী ও শাল বৃক্ষ ।

 

১৭। গভীর লাল বাদামী সোপান মাটি (Deep Red Brown Terrace Soils):

এলাকা ঃ

দেশের শতকরা ৩ ভাগ এলাকায় এ অঞ্চল বিদ্যমান। ভাওয়াল, মধুপুর গড়, বরেন্দ্রভূমি অঞ্চল, কুমিল্লার লালমাই পাহাড়, চট্টগ্রাম ও সিলেটে কিছু স্থান দেখা যায়। মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ঃ বর্ণ লালচে, বাদামী, বুনট-এঁটেল দোআঁশ, বেলে দোআঁশ; অত্ন প্রকৃতির, পিএইচ ৪.৫-৫.৫।

উল্লেখযোগ্য ফসল ঃ

কাঁঠাল, আনারস, শাকসবজি, ধান প্রভৃতি।

 

১৮। বাদামী ছিটদাগ সোপান মাটি (Brown Mottled Terrace Soils):

এলাকা ঃ

দেশের শতকার ২ ভাগ এলাকায় এ অঞ্চল বিদ্যমান। ভাওয়াল, মধুপুর ও বরেন্দ্র অঞ্চলের উত্তর প বাংশে দেখা যায়।

মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ঃ

বর্ণ ধূসর, হালকা বাদামী, নিম্ন স্তরে হালকা বাদামী থেকে লাল, ধুসর ও বাদামীর মিশ্রণ বা ছিট দাগ যুক্ত। বুনট এঁটেল, অত্নপ্রকৃতির, পিএইচ ৫.০-৬.০। কাঁদা অবস্থায় নিরপেক্ষ বা প্ৰশম।

উল্লেখযোগ্য ফসল ঃ

রোপা আমন, কাঁঠাল প্রভৃতি।

 

১৯। ধূসর সোপান মাটি (Grey Terrace Soils):

এলাকা ঃ

দেশের শতকরা ৪ ভাগ এলাকায় এ অঞ্চলে বিদ্যমান। মধুপুর, ভাওয়াল, বরেন্দ্র অঞ্চল, উত্তর ময়মনসিংহের কিছু স্থানে দেখা যায় ।

মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ঃ

ধূসর সোপান মাটির বর্ণ ভিজে অবস্থার ধূসর, শুকনো অবস্থায় সাদা, মাঝে মাঝে বাদামী ছিট থাকে। বুনট-পলি দোআঁশ থেকে এঁটেল দোআঁশ; শুকনো অবস্থায় অত্ন, পিএইচ ৫.৫-৬.০, ভিজা অবস্থায় নিরপেক্ষ।

উল্লেখযোগ্য ফসল ঃ

রোপা আমন, কাঁঠাল, শাকসবজি প্রভৃতি ।

 

২০। গভীর ধ সর সোপান মাটি (Deep Grey Terrace Soils):

এলাকা :

মধুপুর, ভাওয়ালের সমতল এলাকা, বরেন্দ্র ভূমি, উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ের নিচু ঢাল ও পাদভূমি অঞ্চল ।

মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ঃ

বর্ণ ধূসর, ছিটে দাগ রয়েছে। বুনট-পলি দোআঁশ, এঁটেল; অত্নধর্মী, পিএইচ 8.0-6.01

উল্লেখযোগ্য ফসল:

ধান, রবিশস্য, শাকসবজি প্রভৃতি।

 

 

সূত্র:

  • বাংলাদেশের মৃত্তিকার শ্রেণিগত পরিচিতি , পাঠ ৫.২, ইউনিট ৫ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি

মৃত্তিকার শ্রেণিকরণের প্রয়োজনীয়তা

মৃত্তিকার শ্রেণিকরণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি বাউবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান – ১২০৪ কোর্সের ইউনিট ৫ এর,  ৫.১ নম্বর পাঠ।

মৃত্তিকার শ্রেণিকরণের প্রয়োজনীয়তা

মৃত্তিকা জরিপের সংজ্ঞা:

কোন নির্দিষ্ট স্থানের মৃত্তিকার ধারাবাহিক পরীক্ষা, বর্ণনা, শ্রেণিবন্ধন ও মানচিত্র তৈরি করার নামই মৃত্তিকা জরিপ। মৃত্তিকা জরিপে মৃত্তিকা ছবি বা চিত্র, বর্ণনা, প্রয়োজনীয় ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলী,শস্য উৎপাদন, মৃত্তিকা ব্যবহার সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা প্রভৃতি তথ্যাবলী জানা যায়।

 

মৃত্তিকা জরিপ বিবরণীর উপকরণ:

১ । মৃত্তিকা জরিপ বিবরণী মূল উদ্দেশ্য সমৃদ্ধ থাকে ।

২। নির্ধারিত স্থান বা এলাকার বর্ণনা, যথা ঃ অবস্থান, আয়তন, মাটির ছবি, বন সম্পদ, জলাবায়ু, কৃষি, আর্থ সামাজিক দিক, সমস্যাদি ইত্যাদি।

৩।  মৃত্তিকা গঠন, শ্রেণিবন্ধন, এককের চিত্র।

8। মৃত্তিকা শস্য সম্পর্ক, ভূমির সক্ষমতা, সার প্রয়োগ, পানি সেচ, উৎপাদন ক্ষমতা প্রভৃতি।

৫ । অন্যান্য এলাকা ও মৃত্তিকা সম্পর্কে অন্যান্য তথ্য তালিকা, ছবি প্রভৃতি।

মৃত্তিকা শ্রেণিকরণ:

পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ বড়ই বিচিত্র। প্রকৃতি, পরিবেশ ও গাছপালা মাটিকে বৈচিত্র্যময়ী করে তুলেছে কিন্তু এত ভিন্ন রূপী হলেও গাছপালা উৎপাদন ও মাটির গুণাবলীতে কখনও কখনও বিভিন্ন স্থানের মৃত্তিকায় বেশ সামঞ্জস্য বিদ্যমান। এ সকল গুণাবলী, বৈচিত্র্যতা ও পার্থক্য বিশ্লেষণ করে মৃত্তিকাকে নানা বিভাগে সাজানোর নামই মৃত্তিকা শ্রেণিবন্ধন। মৃত্তিকার এ সকল গুণাবলীর ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিন্যাস করণকে মৃত্তিকা শ্রেণিকরণ বলা হয়। বিজ্ঞানী ডকোচেভ ১৮৮০ সালে প্রথম মৃত্তিকার শ্রেণিবন্ধন পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করেন। সংজ্ঞা হিসেবে বলা যায় নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ও নির্দিষ্ট গুণাবলীর ভিত্তিতে ধারাবাহিকভাবে মাটিকে এক বা একাধিক স্তর বা শ্রেণিতে বিন্যাস করাকে মৃত্তিকা শ্রেণিকরণ বলা হয়।

 

মৃত্তিকা শ্রেণিকরণের উদ্দেশ্য:

১।মৃত্তিকা সম্পর্কে বিশদ জ্ঞানলাভ করা।

২। শ্রেণিবদ্ধকৃত পপুলেশনের সুনির্দিষ্ট ও বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে যে সম্পর্ক তা অবগত হওয়া বা অনুধাবন করা ।

৩। উদ্দেশ্যপূর্ণ শ্রেণিবদ্ধ মাটির গুণাবলী স্মরণ করা।

8। পপুলেশনের যে শ্রেণিবিভাগ করা হয় তার মূলনীতি ও নতুন সম্পর্কগুলো সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করা।

৫ । মাটির বাস্তব ব্যবহারের উদ্দেশ্যের রীতি অনুসারে গবেষণার মাধ্যমে গ্রুপ বা সাব-ডিভিশনের  প্রতিষ্ঠা করা। যার ব্যবহারিক উদ্দেশ্য নিম্নরূপ :

ক) উহাদের ধর্মাবলী, ফিচার এর প বসংকেতকরণ।

খ) উহাদের সর্বোত্তম ব্যবহার শনাক্তকরণ।

গ) উহাদের উৎপাদন ক্ষমতা নিরূপণকরণ

ঘ) গবেষণার ফলাফল বা পর্যবেক্ষণ বিস্তারের জন্য গবেষণার একক বা উপাদানগুলো প্রস্তুতকরণ ।

ঙ) কাম্য ভূমি ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।

 

মৃত্তিকা শ্রেণিকরণের প্রয়োজনীয়তা:

১। দেশের পূর্ণাঙ্গ মৃত্তিকা চিত্র তুলে ধরার জন্য মৃত্তিকা শ্রেণিকরণ গুরুত্বপূর্ণ।

২। মৃত্তিকা শ্রেণিকরণের ফলে মৃত্তিকার ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলীর ভিত্তিতে ফসল বিন্যাস সুনিশ্চিতকরণ সহজ হয়।

৩। মৃত্তিকা প্রোফাইল থেকে মাটির উৎপত্তি, গঠন ও স্তরবিন্যাস জানা যায়।

8। মৃত্তিকার উর্বরতা সম্বন্ধে জানা যায় ফলে সমস্যায় সঠিক পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব।

৫ । মৃত্তিকার সঠিক ব্যবহারে সাহায্য করে।

৬।মৃত্তিকার উৎপাদন ক্ষমতার ধারণা দেয়।

৭। কৃষি খামার, কিংবা কোন এলাকায় কৃষিভিত্তিক কী খামার গড়ে তোলা যাবে তার পরিকল্পনা করা সম্ভব।

৮। বীজ হার নির্ণয়, সার প্রয়োগ, ফসলের পরিচর্যা, সেচ ব্যবস্থা নির্ধারণ প্রভৃতি উন্নয়নে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব।

৯। শ্রেণিভিত্তিক পার্থক্য থাকার ফলে চাষী কিংবা গবেষকগণ সহজেই অন্য মৃত্তিকার সাথে তফাৎ বুঝতে পারেন কিংবা আর কোথায় একই মৃত্তিকা বিদ্যমান তা জানতে পারেন।

১০। গবেষণায় তুলনামুলক চিত্র পেতে সহজ হয়।

১১। মৃত্তিকা শ্রেণিকরণ মৃত্তিকা জরিপ শাখার এক অপরিহার্য বিষয়। সুতরাং, মৃত্তিকা বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে এটার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

১২। শ্রেণিভিত্তিক বৈশিষ্ট্য জানার মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে দেশের সকল মৃত্তিকার পরিচয় মিলে।

১৩। এক দেশের মৃত্তিকা অন্যান্য দেশের মৃত্তিকার সাথে তুলনাম লক পর্যালোচনা করা সহজ হয়। ১৪। মৃত্তিকা সংরক্ষণ নীতিমালা গড়ে তোলা সম্ভব।

১৫। আন্তর্জাতিক শ্রেণিকরণের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব। ফলে আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা শ্রেণিকরণের মধ্য দিয়ে জাতীয় মত্রিকার যথাযথ স্থান নির্ধারণ পরিচর্যা ও যথাযথ ব্যবহার সহজ হয়।

 

সূত্র:

  • মৃত্তিকার শ্রেণিকরণের প্রয়োজনীয়তা , পাঠ ৫.১, ইউনিট ৫ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি

শিমজাতীয় গাছের শিকড়ের নড়্যুল পরীক্ষা, ব্যবহারিক

শিমজাতীয় গাছের শিকড়ের নড়্যুল পরীক্ষা নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি বাউবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান – ১২০৪ কোর্সের ইউনিট ৪ এর,  ৪.৬ নম্বর পাঠ। বাউবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান – ১২০৪ কোর্সের প্রতিটি অধ্যায় শেষেই এইরকম ব্যবহারিক ক্লাসের উদাহরণ রয়েছে।

শিমজাতীয় গাছের শিকড়ের নড়্যুল পরীক্ষা, ব্যবহারিক

হ্যাংগিং ড্রপ বা ঝুলন্ত ফোটা পদ্ধতিতে নড্যুল (অর্বুদ) পরীক্ষা:

সাধারণত মৃত্তিকায় বায়ু চলাচল সুবিধাদি, তাপমাত্রা, স র্যালোক, ক্যালসিয়াম ও পিএইচ বা অম্লমান, মৌলিক পদার্থের পরিমাণ ইত্যাদি উপাদান এ জাতীয় ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সহায়ক। শিমজাতীয় গাছ একর প্রতি ২৫-৫০ কেজি নাইট্রোজেন সংযোজন করে থাকে, তবে মাসকলাই ১৯ কেজি, মুগ ১৭ কেজি, মসুর ২৮ কেজি, বরশিম ২৭ কেজি, বরবটি ২৫ কেজি ও মেথি ৩০-৬০ কেজি নাইট্রোজেন একর প্রতি বাতাস থেকে মাটিতে মওজুদ করে।

সাধারণত মৃত্তিকায় জৈব পদার্থ শতকরা ৫ ভাগের কম থাকে। কিন্তু গুরুত্বের ভিত্তিতে একে মাটির প্রাণ বলা হয়। লক্ষ লক্ষ জীব ও উদ্ভিদ মাটিতে বসবাস করে। এরা সবাই জৈব পদার্থ থেকে তাদের খাদ্য গ্রহণ করে। আবার জৈব পদার্থ অণুজীবের বাসস্থান ও খাদ্য যোগায়। মৃত্তিকায় সুস্থ পরিবেশ রক্ষার জন্য জৈব পদার্থের ভূমিকা অতুলনীয়। মৃত্তিকা আবার জৈবিক বৈচিত্র্যতায় পরিপূর্ণ। এখানে জৈব পদার্থের চারপাশে ভরে রয়েছে বড়জীব ও অণুজীব। মৃত্তিকায় জৈবিক কর্মকান্ড ব্যাহত হলে চাষাবাদ সম্ভব নয়। এ ইউনিটে মৃত্তিকার জৈবিক উপাদান, জৈব পদার্থের গুরুত্ব, মৃত্তিকা জীব, মৃত্তিকা অণুজীব ও মৃত্তিকা অণুজৈবিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ :

(১) তাজা নড্যুল

(২) ওয়াচ গ্লাস বা পেট্রিডিশ

(৩) পরিস্কার পানি

(৪) লুপ যুক্ত বিশেষ নিড়ল/সুই

(৫) গ্লাস রড

(৬) হলো বা গর্তযুক্ত পাইড

(৭) কভার পিপ ও

(৮) অণুবীক্ষণ যন্ত্ৰ

 

কাজের ধাপ:

১। মাঠ থেকে সুস্থ ও সতেজ শিম জাতীয় গাছের নড্যুলসহ শিকড় সংগ্রহ করুন।

২। নড্যুল (অর্বুদ) নিয়ে ভালভাবে পরিস্কার পানি দিয়ে ধৌত করুন।

৩। নড্যুল সমূহ তারপর ওয়াচ গ্লাস বা পেট্রিডিশে রাখুন।

8। কাঁচের রড বা দন্ড দিয়ে আস্তে চাপ দিয়ে ভাঙ্গুন।

৫ । টিউবওয়েল/পাতিত অথবা পরিস্কার পানি দিয়ে নির্যাস বা সাসপেনসন তৈরি করুন।

৬। নড্যুলের খোসা ফেলে দিনে।

৭। এবার পরিষ্কার হলো বা গর্তযুক্ত বিশেষ পাইড ও কভার পিপ নিন।

৮।কভার পিপের মাঝখানে সুইয়ের মাথার লুপ দিয়ে এক ফোটা সাসপেনসন রাখুন।

৯। কভার পিপের চার পাশে সামান্য আঠালো দ্রব্যাদি দিন ।

১০। পাইডটির গর্তের দিকটা পরীক্ষা করে গর্তটি ঠিক কভার পিপের মাঝখানে পড়ে এরূপভাবে বসান।

১১। কভার পিপে চাপ রেখে উল্টো করুন যাতে কভারশিপ পাইডের উপরের দিকে থাকে। তারপর অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে কভার পিপের ভিতর ড্রপটি পর্যবেক্ষণ করুন।

 

 

পর্যবেক্ষণ:

১। ব্যাকটেরিয়ার গতি চোখে ভাসলে বুঝতে হবে জীবন্ত বা মোটাইল ব্যাকটেরিয়া।
২। ব্যাকটেরিয়ার গতি স্থির থাকলে বুঝতে হবে ননমোটাইল বা মৃত কিংবা স্থির গতিসম্পন্ন ব্যাকটেরিয়া।

ফলাফল : পর্যবেক্ষণ থেকে লিখে নিন যে ব্যাকটেরিয়া মোটাইল নাকি ননমোটাইল ।

 

সাবধানতা:

১। আবশ্যই সতেজ ও ভাল গাছ বাছাই করুন যাতে শিকড়ে পর্যাপ্ত নড্যুল থাকে।

২। বৃদ্ধ গাছ আনবেন না।

৩। পরিস্কার পাইড ও কভার পিপ নিন।

8। বড় ড্রপ বা ২-৩ বার ড্রপ দিবেন না।

৫ ৷ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহয্যে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করুন যাতে কভার পিপ বা পাইড ভেঙ্গে না যায়।

৬ । অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রথমে কম ও পরে অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন ল্যান্স ব্যবহার করুন।

পরীক্ষা পদ্ধতি, প্রয়োজনীয় উপকরণ, কাজের ধাপ, পর্যবেক্ষণ, ফলাফল ও সাবধানতা আপনার ব্যবহারিক খাতায় লিখে নিন। এবার আপনার টিউটরকে দেখিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিন।

সূত্র:

  • শিমজাতীয় গাছের শিকড়ের নড়্যুল পরীক্ষা , পাঠ ৪.৬, ইউনিট ৪ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি

মৃত্তিকা অণুজৈবিক প্রক্রিয়া

মৃত্তিকা অণুজৈবিক প্রক্রিয়া নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি বাউবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান – ১২০৪ কোর্সের ইউনিট ৪ এর,  ৪.৫ নম্বর পাঠ।

মৃত্তিকা অণুজৈবিক প্রক্রিয়া

মৃত্তিকায় অসংখ্য অণুজীব রয়েছে তা আমরা পূর্ববর্তী পাঠে জেনেছি। এসব অণুজীব দ্বারা নানা রকম অণুজৈবিক ক্রিয়া নিয়ত চলতে থাকে। এসব অণুজৈবিক ক্রিয়া দ্বারা মৃত্তিকার গঠন উন্নত হয় এবং উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। মৃত্তিকায় সংঘটিত বিভিন্ন অণুজৈবিক প্রক্রিয়া দ্বারা উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদান সহজলভ্য আকারে আসে। ফলে উদ্ভিদ তা সহজে মূলের মাধ্যমে গ্রহণ করে পুষ্টিলাভ করে।

মৃত্তিকায় সংঘটিত বিভিন্ন অণুজৈবিক প্রক্রিয়া:

১। জৈব পদার্থের বিশ্লেষণ :

মৃত্তিকাস্ত জীবাণু মাটিতে যেসব কাজ করে তার মধ্যে জৈব পদার্থের বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ। এ বিশ্লেষণের মাধ্যমে যে সকল খাদ্য উপাদান জটিল জৈব যৌগরূপে উপস্থিত থাকে, জীবাণুরা তাদের গাছের পক্ষে গ্রহণযোগ্য অবস্থায় রূপান্তরিত করে।

২। মাটিতে জীবাণুর সাহায্যে কিছু অজৈব খাদ্যের রূপান্তর :

মৃত্তিকাস্ত জীবাণুরা মাটিতে জারণ পদ্ধতি দ্বারা এমোনিয়াম আয়ন থেকে নাইট্রেট আয়নে এবং বিশ্লেষিত জৈব পদার্থের সালফারকে সালফেট আয়নে রূপান্তরিত করে। এ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া বিভিন্ন এনজাইমের দ্বারা সংগঠিত হয়ে থাকে। এছাড়া অন্য কোন খনিজ দ্রব্যও জীবাণুর দ্বারা রূপান্তরিত হয়। এদের মধ্যে আয়রন (Fe) ও ম্যাঙ্গানিজ (Mn) উল্লেখ্যযোগ্য। উন্নত বায়ু ও পানি চলাচল সম্পন্ন জমিতে স্বজীবী ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আয়রন ও ম্যাঙ্গানিজ জারিত হয়ে উচ্চ যোজ্যতা প্রাপ্ত হয়।

এ জারিত অবস্থায় মাঝারি pH এর মাটিতে এদের দ্রাব্যতা অনেক কমে যায়। এজন্যই অম্ল মাটিতে জলীয় দ্রবণে ম্যাঙ্গানিজ ও আয়রনের পরিমাণ অস্বাভাবিক রকমে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় না। কিন্তু জীবাণুদের দ্বারা এ জারণ পদ্ধতি যদি সংঘটিত না হত তাহলে অধিকাংশ অম্ল মাটিতে আয়রন ও ম্যাঙ্গানিজের পরিমাণ এত অস্বাভাবিক রকমে বেড়ে যেত যে
গাছের পক্ষে তা বিষত ল্য হয়ে উঠত।

৩। নাইট্রোজেন সংযোজন ( Nitrogen Fixation) :

বাতাসের মধ্যে যে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন মৌল নিষ্ক্রিয় গ্যাস অবস্থায় (N2) থাকে সে নাইট্রোজেন কিছু কিছু জীবাণু গ্রহণ করতে পারে কিন্তু গাছ সরাসরি পারে না। ঐ জীবাণুগুলো মাটিতে যখন মারা যায় তখন জৈব বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঐ নাইট্রোজেন গাছ গ্রহণ করতে পারে।

সাধারণতঃ দু’ধরনের ব্যাকটেরিয়া বাতাস থেকে নিজেদের শরীরে নাইট্রোজেন আহরণ করতে সমর্থ হয়। প্রথমতঃ শিমজাতীয় গাছের শিকড়ে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে অর্বুদ বা নড্যুল সৃষ্টি করে। এদের অনেক সময় অর্বুদ জীবাণুও বলা হয়।

এই ব্যাকটেরিয়া বাতাসের নাইট্রোজেন আহরণে সমর্থ। এরা পারস্স্থরিক বিনিময় সম্পর্ক সৃষ্টি করে গাছের শিকড়ে অবস্থান করে। গাছ কার্বোহাইড্রেট দিয়ে ব্যাকটেরিয়াকে শক্তি যোগায়, বিনিময়ে ব্যাকটেরিয়ারা বাতাস থেকে গৃহিত নাইট্রোজেনকে গাছের গ্রহণযোগ্য অবস্থায় সরবরাহ করে। এ ধরনের সম্পর্ককে সিমবায়োটিক সম্পর্ক বলে এবং এ ঘটনাকে সিমবায়োসিস বলে। দ্বিতীয়তঃ মাটিতে স্বাধীনভাবে অর্থাৎ গাছের সঙ্গে কোনরকম বিনিময় সম্পর্ক সৃষ্টি না করে বসবাস করে এমন এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া আছে যারা বাতাসের নিষ্ক্রিয় নাইট্রোজেনকে নিজেদের শরীরে গ্রহণ করতে সমর্থ। মাটির জৈব পদার্থকে এরা শক্তির উৎস হিসাবে ব্যবহার করে।

পরে যখন এই জীবাণুগুলো মারা যায় তখন এ নাইট্রোজেনের কিছু অংশ গাছের পক্ষে গ্রহণযোগ্য হয়। প্রথমোক্ত বায়ুমন্ডলী নাইট্রোজেন সংযোজনকে সিমবায়োটিক নাইট্রোজেন সংযোজন বলে আর দ্বিতীয় পদ্ধতিকে নন সিমবায়োটিক নাইট্রোজেন সংযোজন বলে।
Rhizobium এবং Azotobacer যথাক্রমে সিমবায়োটিক এবং নন-সিমবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার উদাহরণ।

জৈব পদার্থের বিয়োজন প্রক্রিয়ার ধাপ ও উৎপাদিত পদার্থ:

১। জীবাণুরা প্রথমে শ্বেতসার, শর্করা ও পানিতে দ্রবণীয় প্রোটিন ধ্বংস করে বা বিয়োজিত করে।

২। এর পরের পর্যায়ে নানা জৈব পদার্থের মধ্যে বিয়োজনের কাজ চলে। জটিল প্রোটিন,হেমিসেলুলোজ, গাম ইত্যাদি যৌগিক পদার্থ এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য।

৩। তৃতীয় পর্যায়ের বিয়োজনে পড়ে সেলুলোজ ।

8। তেল, চর্বি, মোম, রেজিন ও লিগনিন সবচেয়ে দেরীতে বিয়োজিত হয়। লিগনিন সহজে বিয়োজিত হতে পারে না বলেই মাটিতে হিউমাস উৎপন্ন হয়।

কোন প্রকার জৈব পদার্থ বিয়োজিত হয়ে কী কী পদার্থ উৎপন্ন হয় এগুলো এখানে দেয়া হলো ঃ

১। কার্বন গঠিত যৌগ : কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বনেট, বাইকার্বনেট ও মৌলিক কার্বন।

২। নাইট্রোজেন যৌগ : এমোনিয়াম, নাইট্রেট, নাইট্রাইট, ও মৌলিক নাইট্রোজেন ।

৩। সালফারের যৌগ ঃ সালফার, হাইড্রোজেন সালফাইড, সালফাইট, সালফেট, কার্বন ডাই সালফাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড।

8। ফসফরাসের যৌগ ঃ ফসফরিক এসিড, ফসফেট, ডাই ফসফেট ও মনোফসফেট

৫। অন্যান্য উপজাত ঃ হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, বিভিন্ন অক্সাইড ও হাইড্রোঅক্সাইড, পানি, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি।

 

মৃত্তিকা অণুজৈবিক কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান:

মৃত্তিকা উপাদান বুনট, সংযুক্তি, অম্লমান, বায়ু চলাচল, পানি ধারণ ক্ষমতা, খাদ্যোপাদান সরবরাহ ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অণুজীবের অবস্থান, সংখ্যা ও কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে। মধ্যম বুনট, উত্তম সংযুক্তি, নিরপেক্ষ বা প্রশম বিক্রিয়া সম্পন্ন মাটিতে অণুজৈবিক তৎপরতা অধিক। লবণাক্ততা, বিষাক্ত দ্রব্য, মৃত্তিকা ঘনত্ব, প্রোফাইল, আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা প্রভৃতি প্রধান মৃত্তিকা উপাদান রূপে পরিচিত।

জলবায়ু উপাদান তাপমাত্রা, সূর্যকিরণ ও বৃষ্টিপাত শক্তিশালী জলবায়ু উপাদান। এরা মৃত্তিকা তাপ ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে। মৃত্তিকার অণুজীবের কার্যাবলী সম্পন্ন করার জন্য উত্তম তাপমাত্রা হচ্ছে ২৫ ৩৫° সেঃ ।

শক্তি দ্রব্য সরবরাহ জৈব পদার্থের প্রকৃতি, প্রকার, পরিমাণ, পচন পর্যায় প্রভৃতি অণুজীবের কার্যাবলীকে নিয়ন্ত্রণ করে। মূলতঃ জৈব পদার্থ বিয়োজনের মাধ্যমে শক্তি সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে ।

মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা উপাদান  জমির চাষ, ফসলের প্রকার ও পরিচর্যা পদ্ধতি, মৃত্তিকায় অবস্থানরত অণুজীবের প্রকার, সংখ্যা ও কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে। চাষ বা ভূমি কর্ষণ মাটির বায়ু ও পানি চলাচল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অণুজৈবিক কার্য পরিচালিত করে।

মিনারেলাইজেশন (Mineralization):

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক সার, ফসলের অবশিষ্টাংশ, সবুজ ও জৈব সার, জৈব পদার্থে অবস্থিত নাইট্রোজেন প্রভৃতি বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে গাছের গ্রহণযোগ্য অবস্থায় আসে তাকেই মিনারেলাইজেশন বলে। এ প্রক্রিয়ায় জটিল জৈব যৌগ বিভিন্ন অণুজীবের ক্রিয়ায় ভেঙ্গে সরল দ্রব্যে পরিণত হয়।

ইমোবিলাইজেশন (Immobilization):

যে প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের গ্রহণোপযোগী অজৈব নাইট্রোজেন যৌগ পরিবর্তিত হয়ে জৈব নাইট্রোজেনেপরিণত হয় তাকে ইমোবিলাইজেশন বলে। এ প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকা অণুজীবসম হ সরল নাইট্রোজেন গ্রহণ করে ফলে সাময়িকভাবে মাটিতে উদ্ভিদের জন্য নাইট্রোজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। কিন্তু এসব অণুজীব মারা গেলে গৃহীত নাইট্রোজেন জৈব পদার্থরূপে বিমুক্ত হয়।

সাধারণতঃ মিনারেলাইজেশন, ইমমোবিলাইজেশন ও বিমুক্তকরণ মিলেই নাইট্রোজেন চক্র সম্পন্ন হয়। ছবিতে নাইট্রোজেন চক্র দেখানো হল। মূলতঃ মিনারেলাইজেশন প্রক্রিয়ার তিনটি ধাপ থাকে, যথা ঃ

(১) অ্যামিনাইজেশন (Amminization)
(২) এমোনিফিকেশন (Ammonification) (৩) নাইট্রিফিকেশন (Nitrification)

তিনটি ধাপই জৈবিক প্রক্রিয়ার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উপরের ছবিতে নাইট্রোজেন চক্র উপস্থাপনের মাধ্যমে মিনারেলাইজেশন প্রক্রিয়ার ধাপসমূহও দেখানো হয়েছে। নিম্নে প্রক্রিয়া তিনটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো।

১। অ্যামিনাইজেশন (Amminization):

প্রোটিন থেকে এমিনো এসিডের জৈবিক রূপান্তর হওয়ার প্রক্রিয়াকে অ্যামিনাইজেশন বলে । প্রোটিনের আর্দ্র বিশেষণের ধাপগুলো হচ্ছে : প্রোটিন পলিপেপটাইড পেপটাইড, এমাইনো এসিড ইউরিয়া এমোনিয়া।

এমোনিফিকেশন (Ammonification):

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এমাইনো যৌগ হতে এমোনিয়া উৎপন্ন হয় তাকে এমোনিফিকেশন বা এমোনিকরণ বলে। অ্যামিনাইজেশন ও এমোনিফিকেশন প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও একটিনোমাইসিটিস অণুজীব প্রত্যক্ষ অংশ নেয়। ইউরিয়েজ (rease) নামক এনজাইমের সাহায্যে জৈব প্রোটিন ভেঙ্গে এমোনিয়াম উৎপন্ন হয় এবং একেই এমোনিফিকেশন বলে। রাসায়নিক সমীকরণের সাহায্যেও এটা দেখানে সম্ভব। ইউরিয়া CO(NH2)2 + 2H20 ইউরিয়েজ → (NH4), CO, H ) 2 NH,+CO,

 

এমোনিফিকেশনে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান সমূহ হচ্ছে :

(১) মাটির গুণাগুণ

(২) জৈব পদার্থ

(৩) অনুজীবের প্রকৃতি

(৪) চুন প্রয়োগ

(৫) পানি নিষ্কাশন

(৬) চাষাবাদ

(৭) তাপমাত্রা

(৮) মৃত্তিকা পিএইচ বা অম্লতা ও

(৯) লবণাক্ততা

নাইট্রিফিকেশন (Nitrification):

এমোনিয়ার বিশেষ অংশ ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণুরা গ্রহণ করে, আর একটা অংশ গাছপালা শোষণ করে এবং অবশিষ্টাংশ মাটিতে থেকে যায়। এ এমোনিয়া থেকে এবার কোন কোন ব্যাকটেরিয়া নাইট্রাইট উৎপন্ন করে এবং নাইট্রাইট আবার নাইট্রেটে রূপান্তরিত হয়। এমোনিয়া থেকে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় নাইট্রেটে রূপান্তর ঘটার নামই নাইট্রিফিকেশন (Nitrification)।

এখানে স্বভোজী (অটোট্রফিক) ও পরভোজী (হেটারট্রাফিক) ব্যাকটেরিয়া জৈবিক রূপান্তর ঘটায়। প্রথমতঃ নাইট্রোসোমোনাস (Nitrosomonas) ও নাইট্রোসোকক্কাস (Nitrosococcus) জাতীয় ব্যাকটেরিয়া এমোনিয়াকে নাইট্রাইটে পরিবর্তিত করে তারপর নাইট্রোব্যাক্টার (Nitrobacter) জাতীয় ব্যাকটেরিয়া এ নাইট্রাইট থেকে নাইট্রেট তৈরি করে।

নিচে বিক্রিয়া দেখানো হলো :
2NH3 + 802 = 2HNO2 + H20
2HNO2 + 02 = 2HNO3

 

নাইট্রিফিকেশনে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান সমূহ হচ্ছে :

(১) মাটির অম্লমান

(২) বায়ু চলাচল

(৩) আর্দ্রতা

(৪) তাপমাত্রা

(৫) জৈব পদার্থ

(৬) সি-এন অনুপাত

(৭) লবণের ঘনত্ব

(৮) চাষাবাদ

(৯) চুন প্রয়োগ

(১০) সার / পেস্টিসাইড প্রয়োগ

(১১) কদম কণা ও

(১২) মৃত্তিকা স্তর বা গভীরতা

 

অণুজীবের ক্ষতিকর প্রভাব:

১। উদ্ভিদ ও প্রাণীর রোগ সৃষ্টি করে।

২। বড় বড় গাছপালা ও চাষের ফসলের সাথে প্রতিযোগিতা করে।

৩। কোন কোন বিষাক্ত দ্রব্য উৎপাদন করে।

8। নাইট্রোজেন বিমুক্ত করণ বা ডিনাইট্রিফিকেসনে অংশ নেয়।

মৃত্তিকাস্থিত নাইট্রোজেন যৌগকে বিজারিত করে অ্যামোনিয়া বা মৌলিক নাইট্রোজেন মুক্ত করে দেয়ার নামই নাইট্রোজেন বিমুক্তকরণ বা ডিনাইট্রিফিকেশন। কখনও এমোনিয়ারূপে ও আবার কখনও নাইট্রোজেনরূপে মুক্ত হয়ে বায়ুমন্ডলে চলে যেতে পারে।

সূত্র:

  • মৃত্তিকা অণুজৈবিক প্রক্রিয়া , পাঠ ৪.৫, ইউনিট ৪ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি

 

মৃত্তিকা অণুজীব

মৃত্তিকা অণুজীব নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি বাউবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান – ১২০৪ কোর্সের ইউনিট ৪ এর,  ৪.৪ নম্বর পাঠ এর অংশ।

মৃত্তিকা অণুজীব

ব্যাকটেরিয়া:

১। ব্যাকটেরিয়া এক প্রকার এককোষী ক্ষুদ্র অণুজীব।

২। কখনও খালি চোখে দেখা যায় না।

৩।অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখতে হয়।

8।  এরা সর্বত্রই বিদ্যমান যথা- মাটি, পানি, বায়ু এবং জীবদেহের ভিতর ও বাহির।

 

ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য:

১। এককোষী জীবাণু ।

২। দেহে এক বা একাধিক ফ্লাজেলা থাকতে পারে।

৩। দেহ লম্বারূপ ধারণ করে দ্বিখন্ডীকরণ বা বাইনারীফিসন পদ্ধতিতে বংশ বৃদ্ধি করে।

8। আকারে ২-৫ মাইক্রন এবং ব্যতিক্রমধর্মী ০২-৮০ মাইক্রন হয়ে থাকে।

৫ ৷ এরা পরজীবি, মৃতজীবি, বায়ুজীবি কিংবা অবায়ুজীবি হতে পারে।

ব্যাকটেরিয়ার গঠন:

১। নিউক্লিয়াস সরল এবং সাইটোপ্লোজমের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে থাকে।

২।গোল ও দন্ড হতে শুরু করে বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। যথা ঃ গোলাকার, দন্ডাকার, পেচানো আকৃতির, কমা আকৃতির, প্রিজম আকৃতির ইত্যাদি তবে দন্ডাকৃতির সংখাই বেশি।

৩। ব্যাকটেরিয়ার দেহে যে সকল অংশ থাকে

ক) কোষ প্রাচীর

খ)মেজোসম

গ)লিপিড দানা

ঘ)নিউক্লিয়ার দ্রব্যগ

ঙ) পাজমা ঝিল্লি

চ) রাইবোসম

 

মৃত্তিকায় ব্যাকটেরিয়ার অবস্থান:

১। মাটিতে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া থাকে।

২। প্রতি গ্রামে ১-১০ বিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া এবং প্রতি একরে ১৮০-১৮০০ কেজি বায়োমাস থাকে।

৩। ব্যাকটেরিয়া মাটিতে বিভিন্ন কণার চারদিকে যেখানে বিশেষ করে তাদের খাবার এবং অন্যান্য অনুকূল অবস্থা পায় সেখানে বংশ বৃদ্ধি করে কলোনী সৃষ্টি করে।

৪। মাটিতে খনিজ ও মিশ্রিত জৈব কোলয়েড ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির পক্ষে উপযুক্ত মাধ্যম।

৫ ।  মাটিতে পরজীবি শ্রেণিভূক্ত ব্যাকটেরিয়াই বেশি থাকে এবং এরা জৈব পদার্থ বিশ্লেষণের মাধ্যমে শক্তি সংগ্রহ করে।

বিভিন্ন কারণে মাটিতে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণে তারতম্য ঘটে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ বা উপাদান সমূহ হচ্ছে :

(১) জৈব পদার্থ

(২) আর্দ্রতা

(৩) গ্রহণযোগ্য খাদ্যের পরিমাণ

(৪) বায়ু চলাচলের অবস্থা

(৫) তাপমাত্রা

(৬) অম্লত্ব ও ক্ষারকত্ব

(৭) মৃত্তিকার স্তরের অবস্থান

(৮) ঋতু পরিবর্তন, প্রভৃতি

 

মৃত্তিকায় ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির উপাদান:

পানি:

(ক) গাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য যতটুকু পানি মাটিতে থাকা প্রয়োজন ঠিক সে পরিমাণ পানি ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির জন্য সর্বাধিক অনুকূল।

(খ) মাটিতে পানির মাত্রা অক্সিজেন সরবরাহকে প্রভাবিত করে।

(গ) ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি মাটিতে অক্সিজেন সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল ।

তাপমাত্রা:

(ক) ২০°-৩৭.৫° সে. তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়ার কার্যক্ষমতা সবচেয়ে বেশি।

(খ) অত্যধিক তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া মরে যায়।

 

জৈব পদার্থ:

(ক) জৈব পদার্থ ব্যাকটেরিয়ার শক্তির উৎস হিসাবে কাজ করে।

(খ) জৈব পদার্থ বেশি থাকলে ব্যাকটেরিয়াও বেশি থাকে।

 

বিনিময়যোগ্য ক্যালসিয়াম ও অম্লতা:

(ক) অধিক বিনিময়যোগ্য ক্যালসিয়াম ও ৬-৮ অম্লতা ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক।

(খ) কোন শ্রেণির ব্যাকটেরিয়া কত থাকবে তা নির্ভর করে মাটির অম্লতা ও বিনিময়যোগ্য ক্যালসিয়ামের ওপর

(গ) কোন কোন ব্যাকটেরিয়া অধিক অম্ল (পিএইচ ৩.০ এর কম) ও অধিক ক্ষার (পিএইচ ৯.০ এর বেশি) অবস্থাতেও সক্রিয় থাকে।

 

ব্যাকটেরিয়ার কার্যাবলী:

১। ব্যাকটেরিয়া জৈব পদার্থ বিয়োজন বা বিশ্লেষণে সর্বাধিক সহায়ক।

২। ব্যাকটেরিয়া বায়ুমন্ডলীয় নাইট্রোজেন সংযোজনে অন্যতম ভূমিকা রাখে। নাইট্রোজেন সংযোজন করে ভূমির উর্বরতা বাড়ায়।

৩। ব্যাকটেরিয়া তিনটি বিশেষ ধরণের জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া মাটিতে সংঘটিত করে।

ক) নাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়ায় এমোনিয়াম (NH) কে জারিত করে নাইট্রেট (NO3) উৎপন্ন করে ।
খ) সালফারকে জারিত করে সালফেটে (SO2) রূপান্তরিত করে।
গ) নাইট্রোজেন ফিক্সেশন বা বায়ুস্থিত নিষ্ক্রিয় নাইট্রোজেনকে শিমজাতীয় উদ্ভিদের শিকড়ের নডিউলে (Nodule) জমা করে। যা উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং মৃত্তিকায় নাইট্রোজেনের পরিমাণ বাড়ায়।

 

ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিভাগ:

বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ ভিত্তিতে ব্যাকটেরিয়ার ৭-৮ প্রকার শ্রেণিবিভাগ করা সম্ভব। এগুলো হচ্ছে

১। ট্যাক্সোনোমিক শ্রেণিবিভাগ
২। তাপমাত্রাভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ
৩। দেহে ফ্লাজেলার অবস্থান ভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ
৪। আকার আকৃতি ভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ, যথা ঃ
(ক) দন্ডাকার
(খ)গোলাকার
(গ) পেচানো (ঘ) কমাকৃতি ও
(ঙ) প্রিজম

৫। পুষ্টিভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ, যথা ঃ
(ক) স্বভোজী ও (খ) পরভোজী।

৬। অক্সিজেনের উপস্থিতিভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ, যথা :
(ক) বায়ুজীবি ও (খ) অবায়ুজীবি।

 

একটিনোমাইসিটিসের পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য:

১। ব্যাকটেরিয়ার মত এককোষী উদ্ভিদ ।

২। ব্যাকটেরিয়ার মতই এদের ব্যাস।

৩। এদের যখন শাখাযুক্ত মাইসেলিয়া থাকে তখন ছত্রাকের মত দেখায় এবং যখন মাইসেলিয়া ভেঙ্গে যায় তখন ব্যাকটেরিয়ার মত দেখায় কিন্তু উপরটা মোমের মত মসৃণ তাই সহজে ভিজে না।

8। এদের দেহকোষ সুতোরমত এবং অসংখ্য শাখা প্রশাখাবিশিষ্ট।

৫ ৷ রেণুস্থলী ছত্রাকের মতই উৎপন্ন হয়।

৬। এরা ভিজা ও নিরপেক্ষ (পিএইচ ৬.০-৭.৫) মৃত্তিকায়ও বেশ বাড়তে পারে।

৭। একটিনোমাইসিটিস থেকে এন্টিবায়োটিক উৎপন্ন হয় এবং সবচেয়ে পরিচিত এন্টিবায়োটিকগুলো হচ্ছে-স্ট্রেপটোমাইসিন, টেরামাইসিন, নিয়োমাইসিন প্রভৃতি।

 

যে সকল অনুকূল অবস্থা একটিনোমাইসিটিসের কার্যাবলীর সহায়ক এগুলো হছে –

(১) অধিক আর্দ্র, সুনিষ্কাশিত ও সুষ্ঠু বায়ু চলাচল সম্পন্ন মৃত্তিকা

(২) যথেষ্ট জৈব পদার্থ

(৩) মাটির অম্লমান বা পিএইচ ৬.০-৭.৫

(৪) উষ্ণ আবহাওয়া

 

একটিনোমাইসিটিসের কার্যাবলী:

১। একটিনোমাইসিটিস জৈব পদার্থ উচ্চমাত্রায় বিয়োজন ঘটায় যেমন কম্পোস্ট, খামারজাত সার ইত্যাদি। এত অধিক তাপমাত্রায় অন্যান্য অণুজীবের কার্যাবলী ব্যহত হয়।

২। এরা ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংখ্যা ও কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে।

৩। হিউমাস উৎপাদনে সাহায্য ও সহায়তা দেয়।

8। যে সব যৌগ ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক দ্বারা ভালভাবে পচতে বা বিয়োজিত হতে পারে না যেমন আমিষ, লিগনিন, কাইটিন, ফেনল প্রভৃতি বিয়োজনে এরা গুরুত্বপ র্ণ ভূমিকা রাখে।

৫। অতিরিক্ত অম্ল (পিএইচ ৫.০- এর কম) মৃত্তিকায় এদের কার্যাবলী থেমে থাকে। ৫।

৬। সদ্য কর্ষিত মৃত্তিকা থেকে যে বিশেষ গন্ধ বের হয় তার কারণ সাধারণত একটিনোমাইসিটিস।

৭। এরাই মাটিতে জৈব পদার্থে অবস্থিত খাদ্য গাছের গ্রহণযোগ্য অবস্থায় রূপান্তর করে।

 

শৈবাল বা শেওলার বৈশিষ্ট্য:

১। এরা অতি ক্ষুদ্র স তোর মত এককোষী উদ্ভিদ।

২। ভুত্বকের কাছাকাছি অর্থাৎ মৃত্তিকার উপরিভাগের ১৫ সে.মি. এর মধ্যে বসবাস করে।

৩। এদের দেহে ক্লোরোফিল আছে ফলে সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে নিজের খাদ্য নিজেই উৎপাদন করতে পারে। তবে কিছু কিছু প্রজাতির শৈবালে ক্লোরোফিল থাকে না।

8।নাইট্রেট ও এ জাতীয় যৌগিক পদার্থ এরা মাটি থেকে গ্রহণ করে এবং বায়ু বা মৃত্তিকাস্থিত  বায়ুর কার্বন-ডাই-অক্সাইড হতে কার্বন গ্রহণ করে।

৫।সূর্যের আলো পেলে তা থেকেই শক্তি সংগ্রহ করে। আবার মাটির বেশ গভীরে থাকলে জৈব পদার্থ বিয়োজিত করে শক্তি পায়।

৬ । ভিজা মাটি ও আর্দ্র আবহাওয়া এদের বসবাসের জন্য উত্তম। তবে রেণু (স্পোর) আকারে পানি ব্যতিরেকে অনেকদিন থাকতে পারে।

৭। মৃত্তিকায় শৈবালের ৬০ প্রকার প্রজাতি বিদ্যমান।

৮। ০-১৫ সেমি উপরিস্থরের প্রতি বর্গমিটার মৃত্তিকায় ১০-১০০ লক্ষ শৈবাল দেখা যায়।

৯। এরা নিরপেক্ষ মৃত্তিকা বিশেষ করে ৭-৮ পিএইচ মান সম্পন্ন জমিতে থাকতে পছন্দ করে যদিও সীমিত সংখ্যক অম্ল মাটিতেও দেখা যায়।

১০। বায়ু থেকে মুক্ত নাইট্রোজেন নিয়ে এরা নিজেদের শরীর গঠনের কাজে লাগায় যাকে নাইট্রোজেন বন্ধন বা নাইট্রোজেন ফিক্সেশন প্রক্রিয়া বলা হয়।

 

শ্রেণিবিভাগ ঃ

মৃত্তিকায় তিন প্রকার শৈবাল পাওয়া যায়, যথাঃ

(১) নীলাভ সবুজ,

(২) সবুজ বা ঘাস সবুজ ও

(৩) ডায়াটম

 

নীলাভ সবুজ শৈবালের (Blue Green Algae) গুরুত্ব:

১। এদেশের মাটিতে এরা প্রতি হেক্টরে ৩০ কেজি নাইট্রোজেন যোগ করে।

২। এরা মাটিতে ৪০-২৪ টন/হেঃ জৈব পদার্থ যোগ করে।

৩। রাসায়নিক সারের সাথে মিশিয়ে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়।

8। পেস্টিসাইড প্রয়োগ কিংবা অন্যান্য রাসায়নিক সার প্রয়োগে এদের উপর তেমন প্রভাব ফেলে না।

৫ । যে কোন মৃত্তিকায় প্রয়োগ সম্ভব। ইহা মৃত্তিকার ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাগুণের উন্নতি ঘটায়।

৬। অজৈব দ্রব্যকে জৈব দ্রব্যে পরিণত করতে সহায়তা দান করে।

৭। উৎপাদন খরচ কম। এদের ব্যবহারে ফলন কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

৮। মৃত্তিকার সংযুক্তি ও বুনটের উন্নতি ঘটায় ।

৯। ভূমিক্ষয়রোধ করে।

১০। কার্বন-ডাই-অক্সাইড বিযুক্তির ফলে মাটির ক্ষারকত্ব কমায়।

১১। শুকনো অবস্থায় বহু বৎসর টিকিয়ে রাখা ও গুণাগুণ রক্ষা করা সম্ভব।

১২। ব্যবহারে ফসলের ফলন বৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে।

১৩। এ নীলাভ সবুজ শৈবাল জলাভূমিতে ধানগাছের খুব সহায়ক। এরা কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ ও অক্সিজেন ত্যাগ করে যা কার্বোহাইড্রেট উৎপাদনের কাজে লাগে। এদের দেহ থেকে বেরিয়ে আসা অক্সিজেন ধান গাছ গ্রহণ করে। মৃত্যুর পর জমিতে পর্যাপ্ত নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থ সরবরাহ করে।

১৪। মৃত্তিকার জীবনকাল সারাক্ষণ সজিব রাখে।

 

নীলাভ সবুজ শৈবালের জেনাস ও স্পেসিস:

নীলাভ সবুজ শৈবালের অধীনে ১৫০টি জেনাস ও ১৫০০ স্পসিস বা প্রজাতি রয়েছে। এদেশের মৃত্তিকায় নিলিখিত নীলাভ সবুজ শৈবাল দেখা যায় ঃ
(১) এনাবেনা (২) নস্টক (৩) সাইটোনেমা (8) পে- কটোনেমা (৫) ক্যালোথ্রিক্স (৬) এ্যলুমিয়া (৭) টলিপোক্সি ও (৮) ফোরমিডিয়াম

 

ছত্রাক:

মৃত্তিকায় অবস্থানরত অণুজীবের মধ্যে ছত্রাকের পরিমাণ অনেক বেশি। এক গ্রাম মাটিতে ৮ হাজার থেকে ১০ লক্ষ পর্যন্ত্র ছত্রাক থাকতে পারে। একর প্রতি ০-১৫ সে.মি. মৃত্তিকায় ৫০০-৭৫০ কেজি ছত্রাক থাকে। ফসল ও চাষাবাদের জমিতে এদের সংখ্যা বেশি থাকে। মাটিতে ১৭০ বর্গের অন্ত গত ৬৯০টি ছত্রাক প্রজাতি রয়েছে। ছত্রাক মূল, কান্ড, পাতাবিহীন নিম্ন শ্রেণির উদ্ভিদ। অঙ্গজ অবস্থায় এরা দেখতে সূতোর মত। সূতোর মত ছত্রাক আকারে একটু বড় হতে পারে এবং দেহে শাখা প্রশাখাও বের হতে পারে আবার নাও পারে। এরা বহুকোষী। এদের চলন শক্তি নেই। যৌন ও অযৌন পদ্ধতিতে প্রজনন ঘটায় বিশেষ করে রেণু বা স্পোরের মাধ্যমে বংশবিস্তার হয়।

মাটিতে তিন প্রকার ছত্রাক রয়েছে, যথা : ইস্ট, ছাতা (মোল্ড) এবং ব্যাঙের ছাতা। এরা অম্ল, নিরপেক্ষ ও ক্ষার মাটিতে অর্থাৎ প্রায় সব মাটিতে বসবাস করতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অম্ল মাটিতেই এরা অধিক হারে থাকে। চুন প্রয়োগে সংখ্যা হ্রাস পায়।

 

ছত্রাকের বৈশিষ্ট্য:

১। এদের দেহে ক্লোরোফিল নেই।

২।এরা কার্বনের জন্য জৈব পদার্থের ওপর নির্ভর করে। ফলে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটিতে অধিক পরিমাণ থাকে ।

৩। এরা মৃতজীবী, মিথোজীবী বা পরজীবী।

8। অধিক অম্ল মাটিতে বেঁচে থাকতে এদের অসুবিধে হয় না।

৫ ৷ জলাশয় বা জলাবদ্ধ এলাকায় এরা টিকে থাকতে পারেনা।

৬। বায়ুজীবী বলে উপরের স্তরে অধিক ও নিম্ন স্তরে কম থাকে।

৭। দেহ সূক্ষ সূতোর মত দেখা যায়।

৮। শাখা প্রশাখা থাকতে পারে কিংবা নাও পারে।

৯। কোন কোন প্রজাতি বীজ রেণু ধারণ করে যা দেখতে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন হয়।

 

ছত্রাকের কার্যাবলী:

১। কতকগুলো ছত্রাক (যেমন মাইকোরাইজা) গাছের ম লে মিথোজীবী রূপে অবস্থান করে এবং গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদান বিশেষ করে ফসফরাস গ্রহণে সাহায্য করে।

২। এরা কতকগুলো স্থায়ী জৈব পদার্থ যথা : সেলুলোজ, লিগনিন ও গাম, এবং সহজে বিয়োজিত জৈব পদার্থ যথা : চিনি, স্টার্চ ও প্রোটিন বিয়োজনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

৩।  এসিড ও পিট মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের বিয়োজন ঘটায়।

8।  জৈব পদার্থ থেকে হিউমাস উৎপাদনে সাহায্য করে।

৫ । মৃতদেহ থেকে মাটিতে জৈব পদার্থ যোগ হয়।

৬। কোন কোন ছত্রাক (পরজীবী) ফসলের রোগ ছড়িয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।

৭। অনেক প্রজাতির ছত্রাক জৈব পদার্থকে ভেঙ্গে এমোনিয়ামে পরিবর্তন করে।

৮। ব্যাঙের ছাতা (মাশরুম) ছত্রাক না থাকলে অরণ্য মাটির জৈব পদার্থ মোটেই বিয়োজিত হতো না। মাশরুম বা ব্যাঙের ছাতা পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে বিবেচিত।

৯। ছত্রাক মৃত্তিকা কার্বন ও নাইট্রোজেনের অধিকাংশ নিজেদের শরীর গঠনের কাজে লাগায় ।

 

মাইকোরাইজা:

মাইকোরাইজার অর্থ ছত্রাকম ল। ছত্রাকের মাইসোলিয়াম ও কতকগুলো সজীব উদ্ভিদের শিকড়ের ঘনিষ্ঠ সহাবস্থানকে মাইকোরাইজা বলে। এ সহাবস্থান মিথোজৈবিক বা সিমবায়োটিক। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে বনাঞ্চালের কিছু গাছে এ ধরনের সম্পর্ক প্রথম দেখা যায়। আধুনিক গবেষণায় ফলে বিভিন্ন মৃত্তিকায় মাইকোরাইজার উপস্থিতি ও উপযোগিতা নির্দিষ্টরূপে জানা গেছে। ছত্রাকের সূতাকৃতি হাইফা ও উদ্ভিদ শিকড়ের কোষের মধ্যে সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে এদেরকে দু’টি শ্রেণিতে ভাগ কার যায় –

১। একটোট্রফিক বা বহিঃমাইকোরাইজা – শিকড়ের কোষের চারদিকে অর্থাৎ অম্ল কোষের ফাঁকে প্রবেশ করলে তাকে বহিঃমাইকোরাইজা বলে ।

২। এন্ডোট্রফিক বা অন্ত : মাইকোরাইজা – এরা উদ্ভিদের মূলের কোষের অভ্যন্তরে (এপিডার্মিস ও করটেক্স, প্রবেশ করে। ছত্রাক গাছের শিকড়ে প্রবেশ করার ফলে বিশেষ এনজাইম নিঃসৃত হয়।

 

মাইকোরাইজার কার্যাবলী:

১। মূলকে রোগজীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

২। অন্ত ঃ মাইকোরাইজা মরে গেলে সরাসরি উদ্ভিদের পুষ্টি যোগায়।

৩। বহিঃমাইকোরাইজা মাটিতে জৈব পদার্থ যোগায়।

8। মাইকোরাইজা উদ্ভিদ শিকড়ের পুষ্টি পরিশোষণ এলাকা বাড়ায় ফলে ফসফরাস শোষণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

৫ । শিমজাতীয় উদ্ভিদের শিকড়ে গুটি (নডিউল) উৎপাদন এবং নাইট্রোজেন সংযোজনে সাহায্য করে।

 

সূত্র:

  • মৃত্তিকা অণুজীব ,পাঠ ৪.৪, ইউনিট ৪ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি

 

মৃত্তিকা জীব

মৃত্তিকা জীব নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি বাউবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান – ১২০৪ কোর্সের ইউনিট ৪ এর,  ৪.৩ নম্বর পাঠ।

মৃত্তিকা জীব

মৃত্তিকা জীব ও এদের শ্রেণিবিভাগ মমৃত্তিকায় অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী জৈব পদার্থ বিয়োজন বা বিশ্লেষণ করে মাটিকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার জন্য বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকে। এদের অধিকাংশই অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখতে হয়। তবে মুষ্টিমেয় কতকগুলো খালি চোখেও দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা এ জীব জগতের শ্রেণিবিভাগ করছেন।

মৃত্তিকা বড় জীব সম হকে প্রধানত দু’টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, যথা : মৃত্তিকা প্রাণী ও মৃত্তিকা উদ্ভিদ। এখানে মৃত্তিকা জীবের বিস্তারিত শ্রেণিবিভাগ দেখানো হলো। এ পাঠে মৃত্তিকাস্থিত জীব কেঁচো (বড় প্রাণী) এবং প্রোটোজোয়া, নেমাটোড ও রোটিফারস (ছোট প্রাণী) এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

মৃত্তিকা জীবসম হের (মৃত্তিকাস্থ বড় প্রাণী) কার্যাবলী:

মৃত্তিকায় বড় রন্ধ্রতে বা গর্তকরে নানা প্রকার বড় প্রাণী বসবাস করে। অবশ্য এদের আকৃতি ও প্রকৃতিতে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। ইঁদুর, পোকামাকড়, মাইট, শামুক, গুগলি, কেঁচো, মিলিপেড ও সেন্টিপেড এদের মধ্যে অন্যতম। এ সকল জীবের সাধারণ কার্যাবলী এখানে দেয়া হলো :

১। মৃত্তিকা জীবসম হ মাটি ওলট পালট করে দানা বাধায় সাহায্য করে, বিশেষ করে এক স্থানের মাটি অন্যস্থানে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।

২। মাটির সংযুক্তি ও বুনটের উন্নতি হয় এবং রন্ধ্র সমূহ বায়ু চলাচল সুনিশ্চিত করে।

৩। পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায় ।

8। ইঁদুর, কেঁচো ও অন্যান্য পোকা মাকড়ের বাসা ও তৈরি নালা দিয়ে বায়ু ও পানি একস্থান হতে অন্যান্য স্থানে সহজে যেতে পারে।

৫। এদের মৃতদেহ পচনের ফলে মৃত্তিকার জৈব পদার্থ বাড়ে। ৫ ।

৬ । জৈব পদার্থ স্থানান্তরে সহায়তা করে।

৭। মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়ায় বিশেষ করে ইঁদুর ধান, গম ইত্যাদি খড় কুটা সংগ্রহ করে যা গর্তে পচে ।

৮। মিলিপেড, সেন্টিপেড, মাইট, শামুক, গুগলি প্রভৃতি প্রাণী জৈব পদার্থ খেয়ে ফেলে এবং বিয়োজিত জৈব পদার্থ মল হিসাবে ত্যাগ করে। যা উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে।

কেঁচো:

কেঁচো মৃত্তিকাস্থিত বড় ধরনের প্রাণী। কৃষিতে এর গুরুত্ব ব্যাপক, বিশেষ করে মাটির গঠন ও উর্বরতা ,বৃদ্ধিতে কেঁচোর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এরা মাটিতে বসবাস করে এবং মাটি খেয়েই বেঁচে থাকে। কেঁচো সাধারণত ভিজে অথচ বায়ু চলাচল করে এমন মাটিতে বসবাস করতে পছন্দ করে। বস্তুতঃ স্যাঁতসেঁতে মাটির এক মিটার পর্যন্ত উপরিভাগে বাস করে। রাতে খাদ্যের সন্ধানে গর্ত থেকে বের হয় কিন্তু দিনের আলোতে গর্তে থাকে। বৃষ্টি বা বন্যার পানিতে গর্ত ডুবে গেলে এরা নিকটবর্তী উপযুক্ত স্থানে চলে যায় তবে শুকনো মাটি এদের বসবাসযোগ্য নয়। উর্বর মাঝারি উঁচু জমিতে অধিক হারে থাকে কিন্তু শুষ্ক বেলে মাটি, জলাবদ্ধস্থান ও নিচু জমিতে এদের সংখ্যা কম। অম্ল মাটিতে সকল প্রজাতির কেঁচো বসবাস করতে পারে না।

গোটাবিশ্বে প্রায় সাত হাজার কেঁচো প্রজাতি রয়েছে। তন্মধ্যে দুশ’ প্রজাতির কেঁচো মাটিতে দেখা যায় । ভারত বর্ষে পেরিটিমা পাসথুমা প্রজাতিই প্রধান। তবে শীত প্রধান দেশের মাটিতে লামব্রিকাস টেরিট্রিস বা নৈশ কেঁচো ও এ্যলোবোফোরা ক্যালিজিনোসা বা গোলাপী কেঁচো অধিক পাওয়া যায়। মূলতঃ কৃষি জমিতে নৈশ, গোলাপী, বাগান ও রুবেলাস এ চার প্রকার কেঁচোই সচরাচর দেখা যায়।

মৃত্তিকা উর্বরতা বৃদ্ধিতে কেঁচোর প্রভাব:

১। এক হেক্টর জমিতে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার কেঁচো বসবাস করে। এরা গর্ত করার সময় সন্মুখের প্রায় ৪৫ হাজার টন মাটি পর্যায়ক্রমে ভক্ষণ ও মল ত্যাগ করে। সাধারণত কেঁচোর মলে ব্যাকটেরিয়া ও জৈব পদার্থ থাকে।

২। মাটিতে নাইট্রোজেন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশ ও ফসফরাস ইত্যাদি অনেকটা বেশি পরিমাণে গ্রহণযোগ্য অবস্থায় চলে আসে।

৩। কেঁচো মাটিতে গর্তের মাধ্যমে বায়ু পানি চলাচল বাড়ায়। আসলে কেঁচো না থাকলে উদ্ভিদের শিকড় বায়ুর অভাবে মরে যেত।

8। মাটিতে গর্ত করে মাটির ওলট পালটের মাধ্যমে মাটির ভৌত ও রাসায়নিক অবস্থার উন্নয়ন করে। মাটি নরম রাখে ও উর্বরতা সুনিশ্চিত করে। তাই কেঁচোকে কৃষকের বন্ধু বা প্রাকৃতিক লাঙ্গল বলে।
৫ । কতক কেঁচো পচনশীল জৈব পদার্থ ভক্ষণ করে। কেঁচোর মাটি দেখে মৃত্তিকার জৈব পদার্থের পরিমাণ অনুমান করা যায়।

৬। এরা জৈব ও খনিজ পদার্থের উত্তম মিশ্রণ ঘটিয়ে মাটির উর্বরতা বাড়ায়।

৭।  আয়ন বিনিময় প্রক্রিয়ায় দ্রুত সহায়তা করে।

৮। মাটির ক্ষারীয় দ্রব্য সরবরাহ সংরক্ষণ করে প্রশমতা সুনিশ্চিত করে।

৯। কেঁচোর মলে উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ পাশাপাশি মাটি থেকে কয়েকগুণ বেশি হয়ে থাকে।

মৃত্তিকায় কেঁচোর অনুকূল অবস্থা:

১। মৃত্তিকা পানির পরিমাণ মৃত্তিকা নির্দিষ্ট মাত্রায় আর্দ্র থাকতে হবে।
২। মাটির কণা ও বুনট-এটেল মাটিতে বেশি কিন্তু বেলে মাটিতে কম কেঁচো উপস্থিত থাকে ।
৩। জৈব পদার্থ-গোবর কম্পোস্ট প্রয়োগে কেঁচো বাড়ে। জৈব পদার্থ যত বেশি হবে কেচোর পরিমাণ তত বেশি হয়ে থাকে।
8। পিএইচ-উত্তম পিএইচ মান ৬-৭ ।
৫ । মাটির উত্তাপ- অতিরিক্ত তাপমাত্রা, অতি শীত ও তুষারপাতে কেঁচো কমে যায়।
৬। চাষাবাদ- অনাবাদী জমির চেয়ে আবাদী জমিতে কেঁচোর সংখ্যা বাড়ে।

 

প্রোটোজোয়া:

এরা এককোষী প্রাণী। অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না। আকারে এরা ব্যাকটেরিয়া থেকে বড়। এরা তিন প্রকার যথা- (১) সিলিয়েটস, ইনফিউসোরিয়া বা পক্ষল, (২) বেত্রাকার বা ফ্লাজেটেটিস্, (৩) অ্যামিবা। পক্ষলের সুতোর মত চুল থাকে, এবং বেত্রাকারের থাকে বেতের মতো বেড়ে থাকা প্রোটোপ্লাজমের অঙ্গ। তবে অ্যামিবা একটু ভিন্ন। মাটিতে ২৫০ প্রজাতির প্রোটোজোয়া দেখা যায় এবং এমনকী ভারতের মাটিতে ৪০-৫০ প্রজাতির প্রোটোজোয়া দেখা যায়। এক গ্রাম মাটিতে এদের সংখ্যা দশ লক্ষ হতে পারে।

এক গ্রাম মাটিতে পক্ষল ৮০-১০০০, বেত্রাকার ৫-১০ লক্ষ এবং অ্যামিবা ১-৫ লক্ষ থাকতে পারে। খাদ্য ও বায়ু চলাচলের সুবিধার ওপর এদের সংখ্যা নির্ভর করে। এদের খাদ্য জৈব পদার্থ ও ব্যাকটেরিয়া। জলাবদ্ধ স্থানে কিংবা অধিক জৈব পদার্থ থাকলে এরা ব্যাকটেরিয়া খায়। এরা রোগজীবাণুও খায়। এরা মৃত্তিকায় যা কিছু করুক উর্বরতা তারমত্য ঘটে না বরং গাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়। এদের খাদ্য গ্রহণ ৩ রকম যথা- (১) কারো শরীরে ক্লোরোফিল থাকে ফলে স্বভোজী হয়, (২) কেহ মৃতজীবির মত খায় (৩) কেহ ব্যাকটেরিয়ার মত শক্ত খাদ্য নেয় ও হজম করে।

 

নেমাটোড:

সকল প্রকার মৃত্তিকায় নেমাটোড রয়েছে। এরা দেখতে গোলাকার মাঝ খানটা একটু উঁচু, পিছন দিকটা সরু ও সুচাল; লম্বায় ০.৫-১.৫ মি.মি.। অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না। এক গ্রাম মাটিতে ৫০টি নেমাটোড দেখা যায় এবং এ হিসাবে একর প্রতি এদের সংখ্যা দাঁড়ায় সাড়ে চার কোটি। মাটিতে জৈব পদার্থ বেশি থাকলে এদের সংখ্যা বাড়ে। খাদ্যের ভিত্তিতে এদেরকে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়ঃ ১। জৈব পদার্থ ভোজী যাদের খাদ্য বিয়োজিত জৈব পদার্থ, ২। প্রাণীভোজী- যাদের খাদ্য নেমাটোড, ব্যাকটেরিয়া, শেওলা, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া, ছোট কেঁচো প্রভৃতি।

(৩) পর ভোজী – যারা গাছের শিকড়ে প্রবেশ করে এবং কোষের ভিতর আশ্রয় নেয়। এদের মধ্যে পরভোজী বেশি ক্ষতিকর। এরা গাছপালার শিকড়ে প্রবেশ করে রস শোষণ করে। মটর, বরবটি, গাজর, তামাক, আলু, কুমড়া প্রভৃতি ফসলের পক্ষে এরা ক্ষতিকর। পরভোজী নেমাটোড ফসলের বিভিন্ন মারাত্বক রোগ সৃষ্টি করে।

সূত্র:

  • মৃত্তিকা জীব , পাঠ ৪.৩, ইউনিট ৪ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি

জৈব পদার্থের গুরুত্ব

জৈব পদার্থের গুরুত্ব নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি বাউবি’র মৃত্তিকা বিজ্ঞান – ১২০৪ কোর্সের ইউনিট ৪ এর,  ৪.২ নম্বর পাঠ।

জৈব পদার্থের গুরুত্ব

জৈব পদার্থের সংজ্ঞা :

উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবশিষ্টাংশ, অণুজীব ও মৃত্তিকাস্থিত জীবের কোষকলা বিযোজিত (Decomposed) হয়ে যে গাঢ় দ্রব্য অবশিষ্ট থাকে তাকে মৃত্তিকা জৈব পদার্থ বলে। জৈব পদার্থকে মৃত্তিকার প্রাণ বলা হয়।

জৈব পদার্থের উৎস:

অসংখ্য উৎস থেকে জৈব পদার্থ মৃত্তিকায় মজুদ হয়। এগুলো হচ্ছে ফসলের অবশিষ্টাংশ, কান্ড, পাতা, সবুজ সার, গোবর, খৈল, খামারজাত সার, কম্পোস্ট, ডাস্টবিনের আবর্জনা, ঘরবাড়ীর আবর্জনা, পরিত্যক্ত কাগজ, শহর বন্দরের আবর্জনা, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগীর মল ও ব্যবহৃত খাদ্যদ্রব্য বন জঙ্গলে পরিত্যক্ত পাতা, হার্ব, ঘাসের শিকড়, ঘাস, ধনচে, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, প্রটোজোয়া, কেঁচো, শৈবাল, প্রভৃতির মৃতদেহ, মেরুদন্ডী ও অমেরুদন্ডী প্রাণীর মৃতদেহ, কলকারখানার বিশেষ বিশেষ কাঁচামাল প্রভৃতি ।

মৃত্তিকার ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাবলীতে জৈব পদার্থের গুরুত্ব মৃত্তিকার ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাবলীতে জৈব পদার্থের গুরুত্ব অপরিসীম। জৈব পদার্থকে মাটির প্রাণ বলা হয়।

 

ভৌত গুণাবলীতে জৈব পদার্থের গুরুত্ব:

মৃত্তিকার ভৌত গুণাবলী কৃষি উৎপাদনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত। এসব গুণাবলীকে উন্নত করতে জৈব পদার্থ অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। মাটির রং, গঠন, পানি ধারণ ক্ষমতা, বাতাস চলাচলসহ প্রায় সব ভৌত ধর্মই জৈব পদার্থ দ্বারা প্রভাবিত হয়। নিচে জৈব পদার্থের প্রধান অবদানগুলো তুলে ধরা হলো:

১। মৃত্তিকার রং পরিবর্তন করে

  • মাটিকে ধূসর, গাঢ় ধূসর, বাদামী, গাঢ় বাদামী কিংবা কালো করতে সাহায্য করে।

  • মাটির রং গাঢ় হলে তাপ শোষণ বেশি হয়, যা উদ্ভিদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।

২। মৃত্তিকার ভৌত ধর্ম নিয়ন্ত্রণ করে

  • ঘনত্ব, পানি ধারণ, বুনট ও রন্ধ্রতা জৈব পদার্থের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।

৩। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে

  • মাটির উষ্ণতা ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে গাছপালা আবহাওয়ার পরিবর্তনে সহজে মানিয়ে নিতে পারে।

৪। বায়ু চলাচল বৃদ্ধি করে

  • মাটির ভেতর বায়ুর আদান–প্রদান সহজ হয়।

  • শিকড়ের শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকে।

৫। সংযুক্তি ও দলা উন্নত করে

  • মাটির গঠন মজবুত হয়।

  • দলা (aggregate) তৈরি হয়, যা মাটিকে সহজে ভাঙা বা ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা করে।

৬। পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

  • মাটি দীর্ঘ সময় আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে।

  • পানির অপচয় কম হয়।

৭। উপরিভাগের আস্তরণ রোধ করে

  • মাটির উপরে শক্ত স্তর তৈরি হওয়া বন্ধ হয়।

  • ফলে চারা গজানো সহজ হয়।

৮। বেলে ও কাদা মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

  • বেলে মাটিকে উর্বর করে তোলে।

  • কাদা মাটিকে ঝুরঝুরে ও সহজে চাষযোগ্য করে।

৯। ভূমিক্ষয় রোধ করে

  • মাটির দলা মজবুত থাকায় বৃষ্টির পানিতে ক্ষয় হয় না।

  • পাহাড়ি বা ঢালু জমিতে মাটি ধরে রাখতে সাহায্য করে।

১০। দুর্বহ এঁটেল মাটি হালকা করে

  • ভারী এঁটেল মাটিকে চাষযোগ্য করে তোলে।

  • মাটির সহজ বায়ু চলাচল ও পানি নিষ্কাশন নিশ্চিত হয়।

জৈব পদার্থ মৃত্তিকার ভৌত গুণাবলী উন্নত করার মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি মাটিকে উর্বর, চাষযোগ্য ও টেকসই করে তোলে। তাই টেকসই কৃষি নিশ্চিত করতে নিয়মিতভাবে জৈব সার ও জৈব পদার্থ মাটিতে প্রয়োগ করা প্রয়োজন।

 

মৃত্তিকার রাসায়নিক গুণাবলীতে জৈব পদার্থের গুরুত্ব:

মৃত্তিকার রাসায়নিক গুণাবলী সরাসরি ফসল উৎপাদন, পুষ্টি সরবরাহ এবং মাটির উর্বরতার ওপর প্রভাব ফেলে। এ ক্ষেত্রে জৈব পদার্থের অবদান অপরিসীম। এটি মাটিকে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ করে, রাসায়নিক ভারসাম্য বজায় রাখে এবং উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদান সহজলভ্য করে। নিচে এর প্রধান গুরুত্বগুলো তুলে ধরা হলো:

১। উদ্ভিদের খাদ্য ভান্ডার হিসেবে কাজ করে

  • জৈব পদার্থকে উদ্ভিদের খাদ্য ভান্ডার বলা হয়।

  • এটি উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদান মজুদ রাখে এবং প্রয়োজনমতো ধীরে ধীরে সরবরাহ করে।

২। নাইট্রোজেনের মূল উৎস

  • মৃত্তিকায় নাইট্রোজেনের প্রায় ৯৮% জৈব যৌগে বিদ্যমান থাকে।

  • এই নাইট্রোজেন উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩। অম্লত্ব ও ক্ষারকত্ব নিয়ন্ত্রণ

  • জৈব এসিড ও কার্বনিক এসিড তৈরি করে মাটির ক্ষারকত্ব কমায়।

  • ফলে উদ্ভিদের জন্য উপযোগী পরিবেশ বজায় থাকে।

৪। রাসায়নিক বাফার হিসেবে কাজ করে

  • চুন বা রাসায়নিক সার প্রয়োগে মাটিতে যে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে তা জৈব পদার্থ শোষণ করে প্রশমিত করে।

  • এটি মাটির pH ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।

৫। পুষ্টির সুষম সম্পর্ক বজায় রাখা

  • সার ও মৃত্তিকাস্থিত অন্যান্য উপাদানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে।

  • একক পুষ্টির আধিক্য বা ঘাটতি রোধ করে।

৬। পুষ্টি উপাদান সংরক্ষণ

  • খনিজ সার থেকে মুক্ত হওয়া পুষ্টি উপাদান জৈব কোলয়েড শক্তভাবে আটকে ধরে।

  • এতে চুয়ানি ক্ষয় (Leaching) কমে যায় এবং পুষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হয়।

৭। আয়ন মুক্তকরণে সহায়ক

  • জৈব পদার্থের বিয়োজনের ফলে বিভিন্ন আয়ন (আয়রন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি) মুক্ত হয়।

  • এগুলো উদ্ভিদের জন্য সহজলভ্য হয়ে যায়।

৮। ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

  • মৃত্তিকার ক্যাটায়ন এক্সচেঞ্জ ক্যাপাসিটি (CEC) বৃদ্ধি পায়।

  • বিশেষ করে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যামোনিয়াম সহজে উদ্ভিদ শোষণ করতে পারে।

৯। বিষ শোষণ ক্ষমতা

  • কীটনাশক বা পেস্টিসাইড ব্যবহারে মাটিতে জমে থাকা বিষাক্ত উপাদান জৈব পদার্থ শোষণ করে।

  • এতে মাটি নিরাপদ ও টেকসই থাকে।

১০। পানি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

  • সেলুলোজ ও হেমিসেলুলোজের রাসায়নিক প্রকৃতি মাটির পানি শোষণকে ত্বরান্বিত করে।

  • ফলে মাটির আর্দ্রতা দীর্ঘসময় বজায় থাকে।

১১। ফসফরাসের সহজলভ্যতা বৃদ্ধি করে

  • অম্ল মাটিতে জৈব পদার্থ লোহা, অ্যালুমিনিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজের সঙ্গে বিক্রিয়া করে স্থায়ী যৌগ তৈরি করে।

  • এতে ফসফরাস ফিক্সেশন রোধ হয় এবং ফসফরাস সহজলভ্য হয়।

১২। জারণ ও বিজারণ বিক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে

  • জৈব পদার্থ মাটির বিভিন্ন রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় (Oxidation–Reduction) অংশগ্রহণ করে।

  • এর ফলে মাটির রাসায়নিক পরিবেশ স্থিতিশীল থাকে।

১৩। প্রয়োজনীয় মৌল সরবরাহ করে

  • জৈব পদার্থে কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, সালফার, ফসফরাসসহ বিভিন্ন মৌল থাকে।

  • এগুলো উদ্ভিদের জন্য অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান।

জৈব পদার্থ মৃত্তিকার রাসায়নিক গুণাবলীর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। এটি মাটিকে পুষ্টিসমৃদ্ধ, ভারসাম্যপূর্ণ ও টেকসই করে তোলে। তাই টেকসই কৃষি ও দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদনশীলতার জন্য নিয়মিতভাবে জৈব পদার্থ (কম্পোস্ট, গোবর সার, সবুজ সার) মাটিতে প্রয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি।

 

মৃত্তিকার জৈবিক গুণাবলীতে জৈব পদার্থের গুরুত্ব:

১। জৈব পদার্থের প্রধান উপকরণ হচ্ছে কার্বন। কার্বন জারিত হওয়ার ফলে যে শক্তি উৎপন্ন হয় সে শক্তি গ্রহণ করেই মাটিতে জীবাণুরা তাদের কার্যক্ষমতা রক্ষা করে। যে মাটিতে যত বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়, সে মাটিতে তত অধিক জীবাণু থাকে। ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, মাইকোরাইজা, শেওলা, একটিনোমাইসিটিস প্রভৃতি অণুজীব মৃত্তিকার উর্বরতায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। মৃত্তিকায় জৈব পদার্থ না থাকলে এসব জীবাণুর সংখ্যা কমে যায় ফলে মৃত্তিকার উর্বরতা ব্যহত হয়।

২। কেঁচো, পিঁপড়া, উইপোকা, ইঁদুর, সেন্টিপেড ইত্যাদি জীব জৈব পদার্থ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে। এরা মাটিতে গর্ত করে, ফলে শিকড় অধিক পরিমাণ অক্সিজেন পায়, গাছের বৃদ্ধি ও সতেজতা বাড়ে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড সহজে বের হয়ে যেতে পারে।

৩। মৃত্তিকা জৈব পদার্থ মৃত্তিকা অণুজীবের জীবনীশক্তি বৃদ্ধি করে।

8। জৈব পদার্থস্থিত প্রোটিন মৃত্তিকাস্থ অণুজীব দ্বারা ভেঙ্গে বিভিন্ন অ্যামাইনো এসিড উৎপন্ন করে। এনজাইমের সাহায্যে এমোনিয়াম যৌগ তৈরি করে ও সর্বশেষে নাইট্রেটে রূপান্তরিত হয়। ফলে গাছের পক্ষে এমোনিয়াম ও নাইট্রেট গ্রহণ সহজতর হয়। মৃত্তিকা জৈব পদার্থ উল্লিখিত অণুজীবের (ব্যাকটেরিয়া) সংখ্যা বাড়ায়।

 

গাছপালার উপর জৈব পদার্থের প্রভাব বা গুরুত্ব:

জৈব পদার্থ গাছপালার জন্য অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। মাটিতে জৈব পদার্থের ঘাটতি হলে কোন গাছপালা ভালভাবে বাড়তে পারে না এবং ফসলের ফলনও কমে যায়। কোন কোন গাছ জৈব নাইট্রোজেনও গ্রহণ করতে পারে। তবে পরিমাণে অতি সামান্য, অর্থাৎ প্রয়োজনের অতি সামান্য অংশ পূরণ করতে পারে। জৈব পদার্থ গাছের বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় অজৈব নাইট্রোজেন ও সালফার সরবরাহে সহায়তা করে। তাছাড়া ইহা কার্বন, হাইড্রোজেন এবং পানিরও অন্যতম উৎস।

জৈব পদার্থ শুধু যে গাছপালার খাদ্যের উৎস তা নয়, ইহা মৃত্তিকায় ভিটামিন ও হরমোন জাতীয় পদার্থেরও যোগান দেয়। জৈব পদার্থ বিয়োজিত হয়ে এ সকল পদার্থ মুক্ত হয়। পরিমাণের দিক থেকে সামান্য হলেও গাছপালার বৃদ্ধিতে অসামান্য প্রভাব ফেলে। জৈব পদার্থ সরাসরি মালচিং হিসাবেও কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

আবার গাছপালা লাগিয়ে গোড়ায় জৈব পদার্থ মালচিং আকারে দেয়া হয় যাতে গোড়ার মাটি বৃষ্টিতে ধুয়ে না যায়। যুগ যুগ ধরে চাষাবাদের ফলে মাটির যে গুণগত মান হ্রাস পায় এবং ফসলের ফলনের ওপর প্রভাব ফেলে জৈব পদার্থ মাটির এ সুস্থতা নিশ্চিত করে। বীজের অংকুরোদগম, শিকড়ের বৃদ্ধি ও উন্নয়ন জৈব পদার্থ দ্বারা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত হয়।মৌলিক পদার্থ থাকে যা উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান হিসেবে বিবেচিত।

কখনও কখনও জৈব পদার্থ গাছপালার পক্ষে অনিষ্টকর হয়ে উঠতে পারে। জৈব পদার্থ থেকে ডাই হাইড্রোস্টিয়ারিক এসিড নামক পদার্থ উৎপন্ন হতে পারে যা গাছপালার পক্ষে ক্ষতিকর। অতিরিক্ত পানি জমে এরূপ পদার্থ উৎপন্ন হয়। সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশন, চুন প্রয়োগ, যথাযথ সার ও উন্নত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে এ অবস্থার উন্নতি হয় এবং ক্ষতিকর যৌগগুলো আপনা থেকে নষ্ট হয়। মৃত্তিকা জৈব পদার্থের সুষ্ঠু পচনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে।

সূত্র:

  • জৈব পদার্থের গুরুত্ব , পাঠ ৪.২, ইউনিট ৪ , ১২০৪, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বিএজিএড, বাউবি।