মুরগি পালনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি কৃষি শিক্ষা ২য় পত্রের, ৯ নং ইউনিটের ৯.২ নং পাঠ।
Table of Contents
মুরগি পালনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা
প্রাকৃতিক পরিবেশে মুরগি তার নিজের তত্ত্বাবধানের রেখে বাচ্চা পালন করে এবং পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়ানো ও পরিবেশে নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার শিক্ষা দেয়। খাদ্য সংগ্রহ ও শিকারী জন্তুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাচ্চারা সম্পূর্ণভাবেই তার মায়ের ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া মুরগি বাচ্চাদের তাপ ও আশয় প্রদানের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখে এবং এদের বৃদ্ধির জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে।
কিন্তু কৃত্রিম পরিবেশে আবদ্ধ পদ্ধতিতে খামারে পালিত বাচ্চাগুলো মুরগির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পাওয়ার সুযোগ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। তাই এগুলো শেখার জন্য এদেরকে নিজেদের ওপরই নির্ভর করতে হয়। এদেরকে একসঙ্গে একই বয়সের শত শত বা হাজার হাজার বাচ্চার সঙ্গে থাকতে হয় যাদের সকলেই আনাড়ি। তাই স্বভাব শেখার বিষয়টি নিজেদেরই সম্পন্ন করতে হয়। সৌভাগ্যবশত মুরগির বাচ্চাগুলো অত্যন্ত ইঁচড়ে পাকা বা অকালপক্ক এবং মায়ের সাহায্য ছাড়াই সবকিছু শিখে নিতে পারে। কাজেই মুরগি থেকে ডিম ও মাংসের ভালো উৎপাদন পেতে হলে এদেরকে উপযুক্ত ও আরামদায়ক পরিবেশে পালন করতে হবে।
মুরগি পালনের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দরকার। আবদ্ধ অবস্থায় পালনের ক্ষেত্রে এ দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
মুরগির প্রয়োজনীয় উপকরনের একটি তালিকা দেয়া হল:
১. থাকার জন্য ঘর
— ঘরে অবশ্যই প্রয়োজনীয় আলো ও বাতাস চলাচল থাকতে হবে
২. ফ্যান
৩. লাইট
৪. ডিম পাড়ার বাক্স
ডিম উৎপাদনকারী মুরগির ক্ষেত্রে
৫. থামোর্মিটার:
৬. হাইগ্রোমিটার
৭. খাবার পাত্র
৮. চিক গার্ড
ছোট বাচ্চার ব্রুডিং—এর সময়
৯. ব্রুডার গার্ড:
ছোট বাচ্চার ব্রুডিং—এর সময়
১০. ভ্যাকসিন প্রয়োগ এর প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি
১১. লিটার:
যেমন— তুষ, বালি, শুকনো পাতা/খড়, কাঠের গুড়া ইত্যাদি
১২. ডিম সংগ্রহ করার ট্রে:
১৩. ঝাঁড়ু
ময়লা পরিষ্কার করার জন্য
১৪. প্রয়োজনীয় পানির লাইন:
মুরগির খাদ্য ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা:
মুরগির খাদ্য ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা প্রচলিত পদ্ধতিতে মুরগি পালনের ক্ষেত্রে খাদ্যেও জন্য কৃষ কবা খামারি তেমন কোন খরচ করে না। কারণ মুক্তভাবে পালন পদ্ধতিতে এঁটো ভাত, চালের খুদ, পরিত্যক্ত অন্যান্য খাদ্যসামগ্রি মুরগিকে খাওয়ানো হয়। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালনের ক্ষেত্রে খামারের মোট খরচের ৬০—৭০ ভাগই খাদ্যবাবাদ হয়। তাই উন্নত পদ্ধতিতে মুরগি পালনের উদ্দেশ্য হলো পযার্প্ত পুষ্টি সরবরাহ করে উৎপাদন বজায় রেখে খাদ্য খরচ কমানো। খাদ্য অবশ্যই সুষম হতে হবে। কারণ পুষ্টির চাহিদা পূরণ না হলে নানাবিধ রোগ দেখা দিতে পারে।
খাদ্য:
যেসব উপাদান খাওয়ার পর হজম ও বিশেষিত হয়ে দেহে তাপ উৎপাদন করে শক্তি যোগায়, শরীর বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ করে, রোগ প্রতিরোধ করে এবং ডিম ও মাংস উৎপাদন করে থাকে তাকে খাদ্য বলে।
সুষম খাদ্য:
যে খাদ্য প্রয়োজনীয় মাত্রায় আমিষ, শর্করা, তেল/চর্বি, ভিটামিন, খণিজপদার্থ, ভিটামিন ও পানি থাকে তাকে সুষম খাদ্য বলে।
খাদ্যের গুরুত্ব:
খাদ্যের গুরুত্ব নিম্নরূপ—
১. মুরগির দৈহিক বৃদ্ধি ও ক্ষয়পুরণ করে
২. মুরগিকে স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে সাহায্য করে
৩. রোগ প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে।
খাদ্যোপাদান:
খাদ্যের উপাদান প্রধানত ৬টি। এগুলো হলো—
১. শকর্রা
২. আমিষ
৩. চর্বি/ তেলজাতীয় খাদ্য
৪. খণিজপদার্থ
৫. ভিটামিন
৬. পানি
শকর্রা জাতীয় খাবার:
শকর্রাজাতীয় খাদ্য প্রধানত শক্তি যোগায়। খাদ্যের ৬টি উপাদানের মধ্যে এটি তুলনামূলক বেশি প্রদান করতে হয় যা প্রায় ৭০—৮০ ভাগ।
প্রধান কাজ:
১. দেহে তাপ উৎপাদনের মাধ্যমে শক্তি যোগায়
২. শক্তি যোগানোর পর অতিরিক্ত শকর্রা মুরগির দেহে চর্বি হিসাবে জমা হয়
উৎস: চাল, চালের খুদ, গম, বার্লি, ভুট্টা, যব ইত্যাদি।
আমিষ জাতীয় খাবার:
আমিষজাতীয় খাদ্য দেহের দৈহিক বৃদ্ধি ও পুষ্টি সাধনের পাশাপাশি ক্ষয়পূরণ করে থাকে।
প্রধান কাজ:
১. শরীরে নতুন কোষ তৈরি করে
২. শরীরের গঠন ও দৈহিক বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য
৩. ভেঙ্গে যাওয়া ও পুরাতন কোষের পুনঃগঠনে সাহায্য করে
৪. শরীরে পাচক রস, হরমোন এবং রক্তের লোহিত কনিকা তৈরি করে
৫. উৎপাদন বৃদ্ধি করে
উৎস: আমিষ পাওয়া যায় ২টি প্রধান উৎস থেকে। যেমন—
প্রাণিজ আমিষ— শুঁটকি মাছের গুঁড়া, শুকনো মাংস ও হাড় গুঁড়া, শুকনো রক্তে গুঁড়া ইত্যাদি
উদ্ভিজ্জ আমিষ— সরিষার খৈল, তৈল খৈল, সয়াবিন মিল, নারিকেল খৈল ইত্যাদি।
চর্বি জাতীয় খাবার:
চর্বি মুরগির দেহে শক্তি যোগায় ও মাংসকে সুস্বাদু করে।
প্রধান কাজ:
১. দেহে শক্তি যোগায়
২. দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
৩. দেহে সঞ্চিত খাদ্যের উৎস হিসাবে থাকে ও প্রয়োজনের সময় শক্তি যোগায়
৪. মাংসের স্বাদ বৃদ্ধি করে
উৎস: সয়াবিন তেল, সরিষার তৈল, নারিকেল তৈল, গরুর চর্বি, মাছের তেল ইত্যাদি
খণিজপদার্থ: খণিজপদার্থের মধ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস প্রধানত দেহের অস্থি ও হাড় গঠনে সাহায্যে করে। বিভিন্ন খণিজপার্থ দেহের ভিন্ন কাজে সাহায্য কেও, যেমন—
১. শরীরের হাড় ও ডিমের খোসা গঠন করে
২. দেহের অম্লত্ব ও ক্ষারত্বের ভারসাম্য বজায় রাখে
উৎস: হাড়ের গুঁড়া, মাছের কাটার গুঁড়া, ডিমের খোসার গুঁড়া, শামুক—ঝিঁনুকের গুড়া, লবণ, চুনা পাথর ইত্যাদি।
ভিটামিন জাতীয় খাবার:
ভিটামিন—এর অপর নাম খাদ্যপ্রাণ। এটি দেহে খুবই সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন, কিন্তু এর অভাবে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়।
ভিটামিনের কাজ:
১. শরীরকে সুস্থ্য রাখে
২. শক্তি পরিবহনে সাহায্য করে
৩. পুষ্টিহীনতা দুর করে
৪. ধকল প্ররিরোধ করে
৫. উৎপাদন বৃদ্ধি করে
ভিটামিনের উৎস: উদ্ভিজ্জ তেল, শস্য দানা, যকৃতের তৈরি খাবার, হাঙর মাছের তেল, সবুজ ঘাস ইত্যাদি
পানি :
পানির অপর নাম জীবন। ছোট বাচ্চার দেহের ৮০ ভাগই পানি। মুরগির দেহে ৫৫ ও ডিমে ৬৫ ভাগ পানি থাকে। দেহের পানির পরিমাণ ২০ ভাগের বেশি কমে গেলে মুরগির মৃত্যু হতে পারে।
পানির কাজ:
১. পানি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
২. দেহ থেকে বর্জ্য পদার্থ বের হতে সাহায্য করে
৩. রক্তের জলীয় পদার্থের মাধ্যমে পুষ্টি উপাদান শরীরের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করে
৪. খাদ্য উপাদান শোষণ সাহায্য করে
৫. দেহের প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা পূরণ করে
উৎস: পানি