Category Archives: কৃষি

কৃষি গুরুকুলের “কৃষি” সেকশন হলো জ্ঞানের ভাণ্ডার যেখানে কৃষির ইতিহাস, ঐতিহ্য, আধুনিক গবেষণা ও কৃষি বিষয়ক অথরিটি প্রবন্ধসমূহ প্রকাশিত হয়। এখানে পাঠকরা কৃষি সম্পর্কিত মৌলিক তথ্য, উন্নয়ন, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য ও সমৃদ্ধ কনটেন্ট খুঁজে পাবেন।

বীজের সংজ্ঞা, প্রকৃত ও কৃষি বীজের মধ্যে পার্থক্য এবং বীজের গুরুত্ব

বীজের সংজ্ঞা, প্রকৃত ও কৃষি বীজের মধ্যে পার্থক্য এবং বীজের গুরুত্ব – পাঠটি “বীজ ও বীজ প্রযুক্তি” বিষয়ের ১ নং ইউনিটের ব্যবহারিক পাঠ ১.১ নং পাঠের অংশ।

বীজ কাকে বলে বা বীজের সংজ্ঞা কী তা আপনার জানা দরকার। বীজ উদ্ভিদের বংশ বিস্তারের মাপাম হিসেবে কাজ করে। উত্ভিদতান্তিক বৈশিষ্ট্যাবলী এবং কৃষি কাজের বৈচিত্রাময় ব্যবহার অনুসারে বীজের সংজ্ঞা দু’রকম হতে পারে। প্রথমত, উত্ভিদতত্তানুসারে ফুলের পরাগরেণু দ্বারা ডিন্গক নিষিক্ত হবার পর পরিপক্ক ডিম্বককে বীজ বলে। যেমন ৪ পান, গম, পেপে বীজ।

বীজের সংজ্ঞা, প্রকৃত ও কৃষি বীজের মধ্যে পার্থক্য এবং বীজের গুরুত্ব

 

দ্বিতীয়ত, কৃষিতত্তানুসারে গাছের যে অংশ (শারীরিক বা জাননিক) বংশ বিস্তারের জন্য ব্যবহৃত হয় পাথরকুচির পাতা, বিভিন্ন ফুল গাছের শাখা-প্রশাখা, পান, গম ইত্যাদি। উপরিউক্ত সংজ্ঞা দ্বারা প্রকৃত বীজ ও কৃষি বীজের পার্থক্য নিরূপণ করতে পারি। প্রকৃত বীজ বা ধৌন বীজ হচ্ছে বীজত্বকদ্বারা আবৃত এক সুপ্ত ভ্রণপারী পরিণত ও নিষিক্ত ডিন্ক। আর গাছের যে কোন অংশ বিশেষ, যা উপযুক্ত পরিবেশে একই রকম গাছের বংশ বিস্তারের জন্য ব্যবহার হয়ে
থাকে, তাকে কৃষি বীজ বলে।

আলুর টিউবার বলতে আমরা যে আলু খাই তাকে বোঝায়। কলার সাকার বলতে কলার চারা বোঝায় যা মুখ্য বা তেউড় নামেও পরিচিত। আনারসের চারাকেও সাকার বলে। কচুর চারাকে কন্দ বা গুঁড়িকন্দ বলে।

বীজের গুরুত্ব

বীজ থেকে গাছ জন্মায় যা পৃথিবীকে ধূসর বিবর্ণ মরুভূমিতে পরিণত হতে না দিয়ে আচ্ছাদিত করে সবুজ বৃক্ষরাজিতে এবং পরিবেশকে বাসপোযোগী করে। বীজ মানুষের জন্য একটি সর্বোত্তম কল্যাণকর শক্তি। অতি ক্ষুদ্র একটি বীজ মাটিতে বপন করার পর তা সুন্দর, সতেজ ও বৃহৎ একটি গাছে রূপান্তরিত হওয়া নিঃসন্দেহে একটি শক্তি। মানুষ যখন আবিষ্কার করল বীজ থেকে গাছ জন্মায়, মানব সভ্যতার উন্মেষ তখন থেকেই শুরু। কৃষিতে বীজের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ বীজ কেবল ফসলের ফলন বৃদ্ধিই করে না, এর মান উন্নয়ন, কীট ও রোগাক্রমণ প্রতিরোধ, ভালো বাজার প্রাপ্তি এবং নির্দিষ্ট ভূ-প্রাকৃতিক অবস্হায়

কম খরচ করে অদিক ফলন পাওয়া কৃষকের একটি অন্যতম লক্ষ্য থাকে। রোগজীবাণু, পোকামাকড় ও আগাছা মুক্ত সে জক্ষারটি অর্জন করতে পারে। কৃষি ও পলাটী উন্নয়ন স্কুল জন্মানোর উপযোগিতা ইত্যাদি গুণাগুণও নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ফসল উৎপাদনে বীজকে একটি মৌলিক উপকরণ বলা যেতে পারে। অতএব কৃষি কাজে সম্পৃক্ত সকলেরই বীজের গুরুত্ব সম্পর্কে সমাক পারণা থাকা প্রয়োজন। নিমোক্ত বিষয়সমূহ সংক্ষেপে বীজের গুরুত্ব তুলে পরে।

১। বীজ ফসল উৎপাদনের প্রান মৌলিক উপকরণ।

২। উন্নত মানের বীজে উচ্চ ফলন হয়।

৩। ভালো বীজ পোকামাকড় ও গাছের রোগবালাই প্রতিরোপ করে।

৪। ভালো বীজ পরোক্ষভাবে উৎপাদন ব্যয় কমায়।

৬। বীজের মাপামে সংকরায়ন করে উন্নত জাতের বীজ উদ্ভাবন করা হয়।

৭। বীজ ব্যবসা খুবই লাভজনক।

৮। বীজের মাপানে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

ঈ। বীজ প্রজাতি টিকিয়ে রাখার অনাতম প্থা।

১০। বীজের খামার বা বীজ বর্ণন খামার করে জীবিকা নির্বাহ করা খুবই লাভজনক।

১১। বীজের মাপ্যমে সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়ন করা যায়।

আসুন এসব বিষয়সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।

 

বীজ ফসল উৎপাদনের প্রধান মৌলিক উপকরণ

ফসল উৎপাদনের জনা অন্যান কৃষি উপকরণ, যেমন $ঃ সার, সেচ, ও বালাইনাশকের ন্যায় বীজ একটি অন্যতম মৌল উপকরণ। কারণ বীজ বপন না করে অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করলে কোন ফসল আসবে না। কিন্তু বীজ বপন করে তন্যান্য যত্ত না নিলেও কিছু ফলন পাওয়া সম্ভব৷ ততএব উপরোক্ত বিষয়াদি বিবেচনা পূর্বক বীজকেই প্রপান মৌলিক উপকরণ বলা যায়।

 

উচ্চ ফলনশীল বীজে অধিক ফলন হয়

যেখানে জমি সীমিত এবং লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেখানে খাদ্যোৎপাদন বাড়ানোর জন্য উচ্চ কিছুটা সফলতা পাওয়া গিয়েছে। পূর্বে দেশী পান জাতের (যেমন ঃ ধারিয়াল, দুলার, কটকতারা ইত্যাদি) হেক্টর প্রতি ফলন ছিল ১.০-১৫ টন বর্তমানে উফশী বীজ ব্যবহার করে (বরি-পান ৩০, ৩১ ৩২ ইত্যাদি) হেক্টর প্রতি ৪-৬ টন ফলন পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া দেশী আলুর উৎপাদন যেখানে হেক্টর প্রতি ছিল ৮_-১০ টন সেখানে আপুনিক জাত (ডায়মন্ড, পেট্রোনিজ, মুলটা প্রভৃতি) বাবহার করে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ২৫৩০ টন।

 

ভালো বীজ রোগবালাই ও পোকামাকড় প্রতিরোধী

অনেক রোগের জীবাণু বীজবাহিত। তাছাড়া, বীজের স্তুপে পোকা, রোগজীবাণু ও আগাছার বীজে মিশ্রিত থাকতে পারে। বর্তমানে বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাপামে এগুলো দূর করা সম্ভব হচ্ছে এবং প্রত্যায়িত ভালো বীজ কৃষকের মগ বিতরণ করা যাচ্ছে।

 

ভালো বীজ উৎপাদন ব্যয় কমায়

কম খরচ করে অপিক ফলন পাওয়া কৃষকের একটি অনাতম লক্ষা থাকে। রোগজীবাণু পোকামাকড ও আগাছা মুক্ত ভালো বীজ বাবহার করে কৃষক সে লক্ষি অন করতে পারে। সেক্ষেত্রে কীটনাশক, বালাইনাশক এবং আগাছা দমনের জনা শ্রমিক বায় কমে আসবে।

 

বীজ উন্নত জাত উদ্ভাবনের মাধ্যম

বিজ্ঞানের একটি অন্যতম অবদান হলো উদ্ভিদের বিভিন্ন জাতের মধ্যে বিদ্যমান বৈশিষ্টাসমৃহকে সংকরায়নের মাপামে একটি জাতে সংযোগ করা সম্ভব। এ প্রক্রিয়াটি যে সমস্ত ফসল উদ্ভিদতান্তিক বীজ উৎপন্ন করে কেবল সেক্ষেত্রে সম্ভব। যেমন ঃ বি আর-৩ পান দুইটি জাতের পানের বীজের সাথে সংকরায়ন পদ্ধতিতে সৃষ্টি করা হয়েছে।

 

 

বীজ ব্যবসার উপাদান

বর্তমানে বীজ ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসা। বিভিন্ন বীজের ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করেছে এমন নজিরও এদেশে আছে। বিশেষ করে তরমুজ, বীপাকপি, ফুলকপি ও আলু বীজের ব্যবসা খুবই লাভজনক।

 

বীজের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব

উন্নত জাতের বীজ ও হাইবরীড বীজ উৎপাদন করে তান্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাজার তৈরি করে বৈদেশিক ঘুদ্রা অর্জন করা যায়। বীজ রপ্তানি করে জাপান, তাইওয়ান, ডেনমার্ক, হল্যান্ড উন্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।

 

বীজ প্রজাতি টিকিয়ে রাখার অন্যতম পশ্থা

গাছ থেকে যে বীজ উৎপন্ন হয়, সেই বীজ অনুরূপ গাছ উৎপাদনে সন্দম। সুতরাং যুগ যুগ পরে বীজ তার প্রজাতি টিকিয়ে রাখছে।

 

বায়োগ্যাস ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

বায়োগ্যাস ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা – পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের, পরিবেশ বিভাগের ৩ নং ইউনিটের পাঠ ৩.৫ নং পাঠের অংশ।

বায়োগ্যাস কী?

গোবর ও অন্যান্য পচনশীল জৈব পদার্থ বায়ুর অনুপস্থিতিতে জৈব বিজারণের ফলে মিথেন  গ্যাস উৎপন্ন হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে যে সকল প্রাণী জাবর কাটে (যেমনঃ গো—মহিষ, ছাগল) তাদের অন্ত্রে এবং অক্সিজেন বিবর্জিত ইকোলজীক্যাল এলাকা যেমনঃ জলাবদ্ধ ভূমি, সঁ্যাতসঁ্যাতে ভেজা জায়গা, ময়লাযুক্ত পানির আধার প্রভৃতি স্থান থেকেও মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। এই গ্যাস রংবিহীন এবং খুব সহজেই দাহ্য। জৈব উৎস থেকে উৎপন্ন বলে এই গ্যাসকে বায়োগ্যাস বলা হয়।

বায়োগ্যাস ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

 

বায়োগ্যাসের ব্যবহার ও সুবিধা

১। বায়োগ্যাস জ্বালানি হিসেবে সব ধরনের রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। ব্যবহারের ফলে হাড়ি—পাতিল, বাড়ি—ঘর ও কাপড়—চোপড়ে ময়লা পড়ে না।

২। এই গ্যাস দিয়ে রাতে ম্যান্টল জ্বেলে হ্যাজাক লাইটের মতো আলো পাওয়া যায়। কেরোসিনের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজেও বায়োগ্যাস ব্যবহৃত হয়।

৩। রসায়নাগারে কোলগ্যাস, এ্যারোজেন গ্যাস বা পেট্রোল গ্যাসের বিকল্প হিসেবে কম খরচে এই গ্যাস ব্যবহারযোগ্য।

৪। গোবর ও অন্যান্য পচনশীল জৈব পদার্থ থেকে বায়োগ্যাস উপরি হিসেবে পাওয়া যায়। এর পরে úারী হিসেবে যা অবশিষ্ট থাকে তা খুবই উন্নতমানের জৈব সার। জৈব—দহন প্রক্রিয়ার কারণে সকল আগাছার বীজ অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে এই সার ব্যবহারে জমিতে আগাছার পরিমাণও হ্রাস পায়।

৫। বায়ুরোধী অবস্থায় পচন ক্রিয়া স¤žন্ন হয় বলে কোন দুর্গন্ধ ছড়ায় না এবং মশামাছির উপদ্রবও  গোবর ও অন্যান্য পচনশীল জৈব পদার্থ থেকে বায়োগ্যাস উপরি হিসেবে পাওয়া যায়। এর পরে úারী হিসেবে যা অবশিষ্ট থাকে তা খুবই উন্নতমানের জৈব সার। থাকে না।

৬। এই গ্যাস পারিবারিক পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখে। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় বলে উদ্ভিদ জ্বালানির উপর চাপ কমে যায়।

৭। একটি বায়োগ্যাস প্লাণ্ট স্বল্প পরিসর স্থানে এমনকি জনবহুল এলাকাতেও তৈরি করা সম্ভব। এর প্রস্তুত প্রণালী ও রক্ষণাবেক্ষণ সহজ এবং খরচও কম।

 

বায়োগ্যাস প্লান্ট নির্মাণ কৌশল

একটি বায়োগ্যাস প্লাণ্টের প্রধান অংশ হচ্ছে ডাইজেস্টার বা ফারমেণ্টেশন ট্যাঙ্ক এবং গ্যাস হোল্ডার। এর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে ইনলেট ট্যাঙ্ক বা খাদকনালী , নিগর্মন নালী ও আউটলেট কূপ এবং গ্যাস সরবরাহ লাইন। একটি বায়োগ্যাস প্ল্যাণ্টের বিভিন্ন অংশের আকার আকৃতি নির্ভর করে গ্যাসের চাহিদা, ব্যবহৃত কাঁচামালের পরিমাণ, ধরণ ইত্যাদির উপর।

এখানে ৪—৫ টি গরু/মহিষ আছে এমন বাড়ীতে ৬/৭ জন পারিবারিক সদস্যের জ্বালানি চাহিদা মেটানো উপযোগী একটি বায়োগ্যাস প্ল্যাণ্টের বর্ণনা দেয়া হলো। প্রথমে ৮ ফিট গভীর ও ৭ ফিট ব্যাসের একটি কূপ খনন করতে হবে। খননকৃত কূপের তলায় ৩ আর.সি.সি ঢালাই দিতে হবে।

এই ঢালাইয়ের উপরে ৬ ফুট অভ্যন্তরীণ ব্যাস ও ৮ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ৫ ইঞ্চি ইটের গাঁথুনী দিয়ে একটি গোলাকার নিশ্ছিদ্র কূপ তৈরি করতে হবে। দেয়ালের ৫ ফুট উচ্চতায় ভেতরে ও বাইরে ৩ ইঞ্চি ইটের একটি বর্ধিত গাঁথুনী চতুর্দিকে দিতে হবে। খালি অবস্থায় গ্যাস হোল্ডারটি এর উপরে অবস্থান করবে। বর্ধিত গাঁথুনীর ঠিক নিচ দিয়ে ৪—৬ ফুট ব্যাসের ৮—১০ ফুট লম্বা একটি আর.সি.সি পাইপ এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে এর নিম্নাংশ কূপের প্রায় মাঝামাঝি স্থানে তলদেশ থেকে ১ ফুট উপরে অবস্থান করে। অপর অংশ ২২২ মাপের ইটের তৈরি ইনলেট বা ফিডিং ট্যাঙ্কের সাথে সংযুক্ত থাকবে।

ডাইজেস্টারের উপরের দিকে দেয়ালের গায়ে সুবিধা মতো স্থানে একটি ছিদ্র করে তার সাথে ৪— ৬ ব্যাসের ৩— ৪ দীর্ঘ একটি আর.সি.সি পাইপ জুড়ে দিয়ে নির্গমন কূপের সাথে সংযুক্ত করে দিতে হবে। এই পথেই গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে যাবার পর úারী (পানি মিশ্রিত গোবর) ডাইজেস্টারের বাইরে চলে আসবে। ডাইজেস্টারের তলায় ঠিক কেন্দ্র বিন্দুতে ১  ১  ১ ঢালাই এর মাধ্যমে ৮ ফুট লম্বা ২ ব্যাসের একটি রড খাড়া ভাবে বসাতে হবে। এই রডের উপরেই গ্যাস হোল্ডার বসানো থাকে।

 

গ্যাস হোল্ডার

গ্যাস হোল্ডারের ব্যাস অবশ্যই ডাইজেস্টারের ব্যাস অপেক্ষা সামান্য (প্রায় ৩) কম হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় এটি সহজে ডাইজেস্টারের কূপের ভেতরে ঘুরানো বা উঠানামা করানো যাবে না। প্রায় ১০০ ঘন ফুট গ্যাস ধারণক্ষম একটি ডাইজেস্টারের জন্য ৩ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি বাসের (৩.৫— ২ নং চিত্র অনুযায়ী) একটি গ্যাস হোল্ডার প্রয়োজন। এটি ১৬ থেকে ২৪ গজী এম, এস সিট ওয়েল্ডিং করে তৈরি করা যায়। গ্যাস হোল্ডারের অভ্যন্তরে আড়াআড়িভাবে দু’টো রড এমনভাবে লাগাতে হবে যাতে গ্যাস হোল্ডারটি সহজে উপরে নিচে উঠা নামা করতে পারে এবং চারদিকে ঘুরতে পারে। গ্যাস হোল্ডারের এক মুখ খোলা এবং অপর মুখ বন্ধ থাকবে।

বন্ধ মুখের কেন্দ্রস্থল থেকে খোলা মুখের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত লম্বা একটি জি,আই পাইপ সোজাভাবে আড়াআড়ি রডের সাথে ওয়েল্ডিং করে লাগাতে হবে। ডাইজেস্টারের কেন্দ্রে অবস্থিত রডটি জি, আই পাইপের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে গ্যাস হোল্ডারটি ডাইজেস্টারের উপরে স্থাপন করতে হবে। গ্যাস হোল্ডারের উপরে ভালভ্সহ ১ ইঞ্চি ব্যাসের একটি গ্যাস ট্যাপের সংযোজন দিতে হবে। এই সংযোগস্থল থেকে জি,আই পাইপের সাহায্যে ব্যবহারস্থলে গ্যাস সরবরাহ করা হয়।

বায়োগ্যাস প্ল্যাণ্ট চালুকরণ নির্মাণ শেষে এ ধরনের গ্যাস প্ল্যাণ্ট প্রথম চালু করার জন্য ৪০/৫০ মণ গোবর প্রয়োজন। গোবর ও পানি ১:১ অনুপাতে মিশিয়ে úারী (গোবরের দ্রবণ) তৈরি করে ফিডিং ট্যাঙ্কের মধ্যে ঢেলে দিলেই তা দ্রুত ডাইজেস্টারে পৌঁছবে। ফিডিং এর সময় গ্যাস হোল্ডার বায়ু শূন্য করার জন্য গ্যাস লাইন খোলা রাখতে হয়। ডাইজেস্টার ট্যাঙ্ক ভর্তি হবার পর হুইল কর্ক বন্ধ করে গ্যাস লাইনের সংযোগ দিতে হয়।

 

কয়েক দিনের মধ্যেই গ্যাস জমা হয়ে গ্যাস হোল্ডার উপরের দিকে উঠে যাবে। প্রথম দিকে গ্যাস হোল্ডারে কিছু কার্বন ডাই—অক্সাইড জমা হবার কারণে তা নাও জ্বলতে পারে। সে ক্ষেত্রে গ্যাস হোল্ডারে জমাকৃত সম্পূর্ণ গ্যাস বের করে দিতে হবে। প্রথমেই úারীর সাথে কিছু পরিমাণ লাইম বা চুন (ঈধঙ) মিশিয়ে দিলে বায়োগ্যাস উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়ার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং কার্বন—ডাইঅক্সাইড উৎপাদন হ্রাস পায়। নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য প্রতিদিন ৪/৫ বালতি গোবর ও সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ফিডার চ্যানেলের মাধ্যমে ডাইজেস্টারে প্রবেশ করাতে হবে।

এখানে উলে­খযোগ্য যে, টংবফ ঁঢ় ংষঁৎৎু বা ঊভভষঁবহঃ গ্যাস উৎপাদনের পর যা বের হয়ে আসে তা অত্যন্ত উন্নত মানের জৈব সার হিসেবে মাটিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ সারে ১.৫৮% নাইট্রোজেন, ১.২% ফসফেট (চ২ঙ৫) এবং ০.৭% পটাশ (ক২ঙ) থাকে।

সতর্কতা

১। ডাইজেস্টারে যাতে বৃষ্টির পানি না ঢুকে তার জন্য ফিডিং ট্যাঙ্ক ডাইজেস্টার থেকে সামান্য উপরে থাকা বাঞ্ছনীয়। প্রয়োজনে উপরে শেড তৈরি করা যেতে পারে।

২। ডাইজেস্টারে গোবর—পানি প্রবেশকালে অন্য কোন আবর্জনা যাতে না ঢুকে তা লক্ষ রাখতে হবে।

৩। গ্যাস হোল্ডারটি মাঝে মধ্যে কেন্দ্রীয় পাইপের চারদিকে ঘুরিয়ে দিলে উপরে গোবর ও পানির মিশ্রণ শক্ত হতে পারবে না।

৪। কোন কারণে ইনলেট বা আউটলেট পাইপ বন্ধ হয়ে গেলে সোজা সরু কাঠি দিয়ে তা ছাড়িয়ে দিতে হবে।

৫। কোন সময় গ্যাস লাইনে পানি জমলে পানি জমাস্থান খুলে পানি বের করে দিতে হবে।

 

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

ব্যবহার শেষে বস্তুর পরিত্যাক্ত যে কোন্ অংশের নামই বর্জ্য বা আবর্জনা। অন্যকথায়, পূণঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া কোন্ বস্তু তার ব্যবহার যোগ্যতা হারিয়ে ফেল্লে তাকেই বর্জ্য বলে। বর্জ্য িবভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমনঃ কঠিন বর্জ্য ও ক্ষতিকারক বর্জ্য।ব্যবহার শেষে বস্তুর পরিত্যাক্ত যে কোন অংশের নামই বর্জ্য বা আবর্জনা। অন্যকথায়, পূণঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া কোন বস্তু তার ব্যবহার যোগ্যতা হারিয়ে ফেললে তাকেই বর্জ্য বলে। বর্জ্য বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমনঃ কঠিন বর্জ্য ( ও ক্ষতিকারক বর্জ্য ।

১। কঠিন বর্জ্য ( ঃ কঠিন বর্জ্য বলতে বোঝায় বাড়ী ঘর থেকে ফেলে দেয়া অপ্রত্যাশিত বস্তু, রাস্তার ঝাড়ু দেয়া আবর্জনা, ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প প্রতিষ্ঠান, কৃষি খামার প্রভৃতি স্থান হতে মানব কার্য কলাপ সৃষ্ট অনাকাঙ্খিত বস্তুসমহকে। শহরাঞ্চলে এসব বর্জ্য ূ এবং গ্রামাঞ্চলে আবর্জনা হিসেবে পরিচিত। এসবের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের উপাদান রয়েছে, যেমনঃ ধুলা, খাদ্যজাত উচ্ছিষ্ট, কাগজ, ধাতব উপাদান, প্লাষ্টিক, রাবার কাঁচ, পরিত্যক্ত কাপড়, বাগানের আবর্জনা, নির্মাণ সামগ্রীর ফেলে দেয়া অংশ, প্যাকিং সামগ্রী, শিল্পজাত বর্জ্য, ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ইত্যাদি। এ ছাড়া রয়েছে আরও বহুবিধ দহনযোগ্য ও অদহনযোগ্য সামগ্রী এবং তেজষ্ক্রিয়া পদার্থ। বহু ধরনের খামারজাত উচ্ছিষ্টও কঠিন বর্জ্য শ্রেণিভুক্ত, যেমনঃ গোবর ও গৃহপালিত পশু—পাখির বিষ্ঠা, খড়কুটা, শস্যের পরিত্যাক্ত অংশ ইত্যাদি।

বাংলাদেশে মাথাপ্রতি বর্জ্য সংগ্রহের পরিমাণ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। যেমনঃ ঢাকায় মাথাপ্রতি প্রতিদিনের গড় যেখানে মাত্র ০.২২ কেজি সেখানে কলকাতায় ০.৫১ কেজি এবং নিউইর্য়কে ১.৮ কেজি। নগর বর্জে্যর বৈশিষ্ট্য নগরের অধিকাংশ কঠিন বর্জ্যই গৃহ, শিল্প ও বাণিজ্যিক উৎস থেকে সৃষ্ট। প্রতিদিন জনপ্রতি কী পরিমাণ কঠিন বর্জ্য সংগৃহীত হবে তা নগরের আয়তন, এবং ঋতুর উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশে মাথাপ্রতি বর্জ্য সংগ্রহের পরিমাণ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।

যেমনঃ ঢাকায় মাথাপ্রতি প্রতিদিনের গড় যেখানে মাত্র ০.২২ কেজি সেখানে কলকাতায় ০.৫১ কেজি এবং নিউইর্য়কে ১.৮ কেজি। ঢাকায় এত কম হওয়ার প্রধান কারণ হয়ত সেখানকারচ্ছ’র্বল সংগ্রহ ব্যবস্থা। নগরের প্রধান প্রধান বর্জ্য সমূহের তালিকায় রয়েছে ফেলে দেয়া খাদ্য, বাজার এলাকার উচ্ছিষ্ট, পাতা, ঘাস, কাগজ, প্লাষ্টিক সামগ্রী, ধাতব পদার্থ, ক্যান, কাঁচ, বোতল, ইটের টুকরা, বস্ত্রাংশ, ভগ্নস্তুপ, ময়লা,
ছাই, কাঠ, চামড়া ও রাবারজাত দ্রবাদি।

২। ক্ষতিকারক বর্জ্য ঃ কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম থেকেই ক্ষতিকারক বা বিষাক্ত উপাদান সৃষ্টি হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব উপাদানে শতকরা ৭৫ ভাগের ওপরে থাকে রাসায়নিক দ্রব্য। উৎপন্ন হবার পর থেকেই এ সকল উপাদান দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সৃষ্টি করে। এটি যেমনঃ উন্নত বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য, তেমনি অনুন্নত বিশ্বের জন্যও প্রযোজ্য। এসকল রাসায়নিক দ্রব্যাদি বায়ু, পানি এবং আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে প্রবেশের সুযোগ করে নেয়। এক তথ্য বিবরণীতে প্রকাশ ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিদিন ৪৯,০০০ কি.গ্রা. শিল্পজাত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতেও প্রতিদিন ৪৫,০০০ কি.গ্রা. শিল্পজাত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।

এসকল বর্জে্যর কারণে বুড়িগঙ্গা ও কর্ণফুলী নদীর পানিতে দস্তা, ক্রোমিয়াম, ক্যাডিয়াম ও আরসেনিকের মতো ভারি ধাতুর মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে নদী ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় মাছের চারণ ও প্রজনন ক্ষেত্র বিনষ্ট হচ্ছে।

 

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কৌশল

আবর্জনা বা জঞ্জাল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মানুষের সামনে যে তিনটি পথ খোলা রয়েছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে তুলে ধরা হলো।

(১) উন্মুক্তস্থানে, নদী, হ্রদ, সাগর বা অন্য কোন জলাশয়ে অশোধিত অবস্থায় নিক্ষেপন করা। এ প্রক্রিয়ার মূল দর্শন, “দূষণের সমাধান হচ্ছে হালকাকরণ” (“ঞযব ংড়ষঁঃরড়হ ঃড় ঢ়ড়ষষঁঃরড়হ রং ফরষঁঃরড়হ”)। বিশ্বের সর্বত্র এটিই বহুল প্রচলিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপায় হিসেবে বিবেচিত। যে কারণে নগর ও শিল্প কারখানাগুলো সাধারণত জলপথের তীর ধরে গড়ে উঠেছে।

(২) বিশেষভাবে নির্বাচিত স্থানে জঞ্জাল স্তুপীকৃতকরণ এবং প্রায় প্রাকৃতিক উপায়ে বিয়োজন ঘটিয়ে পূনঃব্যবহারযোগ্য সম্পদ সৃষ্টিকরণ। স্বাভাবিক প্রাকৃতিক দূষণ পরিহারকারী এটিই সহজতম পদ্ধতি। এর মাধ্যমে অধিক পরিমাণে বর্জ্য মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতি তেমন হুমকি সৃষ্টি না করেই পরিশোধন করা সম্ভব।

(৩) যান্ত্রিক—রাসায়নিক পদ্ধতি (ঈযবসড়—সবপযধহরপধষ ঢ়ৎড়পবংং) অনুসরণ করে পূনঃব্যবহারযোগ্য সম্পদ সৃষ্টিকরণ। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে যান্ত্রিক উপায়ে রাসায়নিক শোধন দ্বারা বর্জ্য পরিশোধন করে পূনঃব্যবহার উপযোগী করা হয়। এই পদ্ধতি দূষণ নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী। কিন্তু ব্যয়বহুল পদ্ধতি বিধায় কিছু কিছু উন্নত দেশ ছাড়া সর্বত্র প্রচলিত নয়।

বাংলাদেশে যেসব বর্জে্যর কিছুটা বাজার চাহিদা রয়েছে সেগুলো তিন পর্যায়ে সংগ্রহ বা উদ্ধার করা হয়ে থাকে। প্রথম পর্যায়ে উদ্ধারের সাথে জড়িত থাকেন বাড়ীর গৃহিণীরা। তারা কাগজ, বোতল, কনটেইনার, পুরাতন কাপড়, জুতা ইত্যাদি দ্রব্যাদি (যাদের ভাল বাজার চাহিদা রয়েছে) বাছাই করেন এবং হকারদের নিকট বিক্রয় করেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে বস্তি এলাকার দরিদ্র শিশুরা যারা ‘টোকাই’ নামে পরিচিত। এরা ভাঁঙ্গা কাঁচ, ক্যান, কার্ডবোর্ড, ফেলে দেয়া কাগজ, ছিন্ন বস্ত্র, প্লাষ্টিক সামগ্রী, ধাতব পাত্র, ও ফেলে দেয়া অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করে। তৃতীয় পর্যায়েও রয়েছে দ্ররিদ্র শ্রেণির টোকাইরা। তারা পৌরসভার গাড়ী থেকে চূড়ান্ত নিগর্মন স্থানে বর্জ্য ফেলার সময় তা থেকে বাছাইকৃত বর্জ্য সংগ্রহ করে।

বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থা পুণঃব্যবহার উপযোগীকরণের পর্যায়গুলো চিত্র ৩.৫—৩ এর মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। হকার, টোকাই এবং আবর্জনা ফেলার স্থান থেকে সংগ্রহকারীদের মাধ্যমে সংগৃহীত দ্রব্যাদি পুরাতন দ্রব্য বিক্রয়কারীদের দোকানে পৌঁছে। তারা সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে, ধৌতকরণ, বাছাইকরণ প্রক্রিয়া শেষে ডিলারদের নিকট সরবরাহ করে। পুরাতন সামগ্রীর ডিলারগণ যথাযথ পৃথকীকরণের পর সরাসরি ব্যবহারকারীদের নিকট বিক্রয় করে। আর বিক্রয় অযোগ্য দ্রবাদি পণঃব্যবহারযোগ্যকরণ ু কারখানায় (জবসড়ষফরহম ভধপঃড়ৎরবং) প্রেরণ করে। সেখান থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণের পর পুণরায় তা বাজারে ফিরে আসে।

 

চূড়ান্ত বিসর্জন ও বিকল্প ব্যবস্থা 

বাজারমূল্য আছে এমন সব বর্জ্য সামগ্রী অসাংগঠনিক পন্থায় পুণরুদ্ধার করা হয়। আর বিয়োজকযোগ্য জৈবিক উপাদানসমূহ খোলা অবস্থায় নগরের অপেক্ষাকৃত নিচুস্থানে স্তুপাকারে ফেলে দেয়া হয়। আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে এসব দ্রব্য দ্রুত পঁচনের ফলে তৎসংলগ্ন এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে এবং অসস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি করে। বৃষ্টির পানি ময়লার স্তুপের ভিতরে প্রবেশ করে পরিবেশ দুষণক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তুলে। এদের প্রচুর দূষণ ক্ষমতাযুক্ত চুয়ানি ভূমি ও ভূগর্ভস্থ পানিকে দূষিত করে। কম খরচে পরিবেশ দূষণমুক্ত জৈবপদার্থ বিসর্জনের উপায় হচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যান্ডফিল (ঝধহরঃধৎু ষধহফ ভরষষ) পদ্ধতি।

এই পদ্ধতিতে উচ্চ দূষক পদার্থ সংগ্রহের নিরাপদ ব্যবস্থা রাখা হয় এবং মিথেন গ্যাস সংগ্রহ করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যার বর্ণনা এ পাঠের প্রথমাংশে দেয়া হয়েছে। বাছাইকৃত জৈব বর্জ্য কমপোষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জৈবসারে রূপান্তরিত করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় পরিমিত পানি ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীবের সাহায্যে জৈব উপাদানসমূহের দ্রুত পচন ঘটিয়ে তা জৈব সারে পরিণত করা হয়।

পানি সরবরাহের পরিমাণ জৈব বর্জে্যর ধরণের উপর নির্ভরশীল এবং এটি স্ববাত  অবস্থায় সম্পন্ন করা হয়। যান্ত্রিক উপায়ে স্ববাত গার্বেজ কমপোষ্ট প্রক্রিয়া বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশেই অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক বলে বিবেচিত হয়নি। অবশ্য বাছাইকৃত কিছু কিছু জৈব বর্জ্য ভারত ও চীনে উদ্ভাবিত অবাত কম্পোষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সারে পরিণত করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অনুসৃতঃ পদ্ধতি চিত্র নং ৩.৫ — ৩ এর সাহায্যে দেখানো হয়েছে।

পৌর এলাকার অনিধনযোগ্য বর্জ্য নিচু এলাকা ভরাটের কাজে ব্যবহার করে পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব।

 

কই মাছের চাষ পদ্ধতি

কই মাছের চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্রের” ১ নং ইউনিটের ১.৫ নম্বর পাঠ। কই মাছ বাংলাদেশের মানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি ছোট মাছ। এটি খেতেও যেমন সুস্বাদু, পুষ্টিগুণেও তেমন ভরপুর। মাছটি পানির উপরে দীর্ঘক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে বলে একে জিয়ল মাছ বলা হয়। এক সময় প্রাকৃতিক ভাবেই এদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়গুলোতে প্রচুর পরিমাণে কই মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানুষ সৃষ্ট কারণে এ মাছটি আজ বিলুপ্তির পথে। স্বাদ, পুষ্টিগুণ, উচ্চ বাজারমূল্য ও সর্বোপরি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার্থে এ মাছকে অবশ্যই গুরুত্ব দেবার সময় এসেছে।

কই মাছের চাষ পদ্ধতি

 

কই মাছের একক চাষ পদ্ধতি:

আমাদের চাষ পদ্ধতিতে মাছটি অন্তভূর্ক্ত করে উৎপাদন বাড়ানো এখন সময়ের দাবী। তবে পোনার অপ্রতুলতার কারণে কই মাছের চাষ আশানুরূপভাবে প্রসার লাভ করেনি। দেশীয় কই মাছের কৃত্রিম প্রজননের চেষ্টা সফল হলেও নিম্ন বর্ধন হারের কারণে মাছটির বাণিজ্যিক চাষের আশা অনেকটা মিইয়ে যায় এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ২০০২ সালে বেসরকারি পর্যায়ে দেশীয় কই মাছের অনুরূপ একটি বর্ধনশীল জাত থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয় যা ‘থাই কই’ নামে পরিচিত। এদেশের আবহাওয়ায় সহজে মানিয়ে নেওয়ায় বর্তমানে স্থানীয়ভাবেই এ মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন সফলভাবে করা হচ্ছে।

আমাদানিকৃত থাই কই এর উৎপাদন দেশী কই অপেক্ষা ৫০% বেশি হওয়ায় বাণিজ্যিক চাষে অধিক মুনাফা করা সম্ভব। পরবর্তিতে ২০১১ সালে আরো একটি কই এর জাত ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা হয় যা থাই কই এর চেয়েও বেশি বর্ধনশীল। ভিয়েতনামী কই ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং অনেক চাষীই  মাছটি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

কই মাছ চাষের সুবিধা :

(১) যে কোন ধরনের জলাশয় এমনকি চৌবাচ্চা বা খাঁচাতেও চাষ করা যায়।

(২) অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়।

(৩) একক এবং মিশ্র চাষের জন্য উপযোগী।

(৪) টেকসই মাছ হওয়ায় বিরূপ পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে।

(৫) কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করা সম্ভব, তাই চাষের জন্য সহজেই পোনা পাওয়া যায়।

(৬) প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ করে।

(৭) কম সময়ে (৩—৪ মাস) বাজারজাত করা যায়, ফলে দ্রুত পঁুজি ফেরত পাওয়া যায়।

(৮) অতিরিক্ত শ্বসন অঙ্গ থাকায় কই মাছ পানি ছাড়াও দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে, ফলে জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করে বেশি দাম পাওয়া যায়।

(৯) রোগীর পথ্য হিসেবে এবং সুস্বাদু হওয়াতে কই মাছের বাজার চাহিদা ব্যাপক।

কই মাছ চাষ করার জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে করতে হবে।

কই মাছ চাষের জন্য পুকুর নির্বাচন :

৪—৬ মাস পানি থাকে এ রকম যে কোন পুকুর কই চাষের জন্য উপযোগী। পুকুরের আয়তন ১৫—৫০ শতাংশ হলে ভালো হয়। নিচের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে পুকুর নির্বাচন করা উচিত:

* মজুদ পুকুর আকৃতিতে আয়তকার হবে।

* পুকুরের মাটি দো—আঁশ হবে।

* পুকুরের তলায় ১৫ সে.মি. এর অধিক কাদা থাকবে না।

* বন্যামুক্ত স্থানে পুকুর নির্বাচন করতে হবে। * পুকুরের স্থানটি আলো—বাতাস পূর্ণ হবে।

পুকুর প্রস্তুতকরণ : পুকুর প্রস্তুত ভালোভাবে না হলে মাছ চাষ চলাকালীন নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। তাই নির্বাচিত পুকুর কই মাছ চাষের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। পুকুর প্রস্তুতকরণের ধাপগুলো নিম্নরূপ—

অবাঞ্চিত প্রাণী ও আগাছা দমন পুকুরের পানিতে আগে থেকেই বসবাসকারী রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ ও প্রাণি দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ রোটেনন, ফসট*িন ইত্যাদি কিনতে পাওয়া যায় যা ব্যবহার করে উক্ত কাজটি করা যেতে পারে।

তবে পরিবেশের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে এসব দ্রব্য যতটা সম্ভব না ব্যবহার করাই ভাল। সেক্ষেত্রে ছোট/চিকন মেসের জাল বার বার টেনে রাক্ষুসে মাছ ও ক্ষতিকর প্রাণি দূর করা যায়। পুকুর সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে কাজটি করলে সবচেয়ে ভাল হয়। এসময় আগাছাও পরিস্কার করে ফেলতে হবে।

তলা ও পাড় মেরামত পুকুরের তলার অতিরিক্ত পঁচা কালো কাদা অপসারণ করে পুকুরের পাড়ের গর্ত খানাখন্দ মেরামত করতে হবে। তলা সমান করে নিতে হবে। পুকুরের পাড়ের ঝোপ—ঝাড় পরিষ্কার করে চারিদিকে এক ফুট উঁচু জাল দিয়ে এমনভাবে ঘিরে দিতে হবে যেন জালের নিচের প্রান্ত পাড়ের মাটিতে গ্রোথিত থাকে। এর ফলে মৎস্যভূক প্রাণি যেমন—সাপ, গোসাপ প্রবেশ করতে পারবে না। আবার কই মাছ ও পুকুর থেকে পালাতে পারবে না।

 

কই মাছ চাষে চুন ও সার প্রয়োগ:

পুকুরের পানিতে অনেক ধরনের ক্ষতিকর রোগ—জীবাণু থাকে। এসব জীবাণু ধ্বংস করতে এবং পানির গুণাগুণ ঠিক রাখতে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন পানিতে গুলে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরে চুন প্রয়োগের ৩—৪ দিন পর এবং কই মাছের পোনা মজুদের ৭—৮ দিন আগে সার প্রয়োগ করতে হবে।

পানির রং বুঝে পুকুরে সার প্রয়োগ করতে হবে। কারণ উর্বর পুকুরে অনেক সময় চুন প্রয়োগের পর পানিতে প্রচুর ফাইটোপ্ল্যাংকটন জন্মে। সেক্ষেত্রে পুকুরে সার প্রয়োগের কোন প্রয়োজন নাই।

কই মাছ প্রকৃতিতে সাধারণত জুপ্ল্যাংকটন ও জলজ কীটপতঙ্গ খায়। জুপ্ল্যাংকটনের উৎপাদন নির্ভর করে ফাইটোপ্ল্যাংকটনের প্রাচুর্যতার উপর। আর পুকুরে সার প্রয়োগের উদ্দেশ্যই হলো ফাইটোপ্ল্যাংকটনের উৎপাদন বাড়ানো। সাধারণত জৈব ও অজৈব উভয় প্রকার সার পুকুরে প্রয়োগ করতে হয়।

পুকুরে অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ করলে সাধারণত চাষের প্রথম এক মাসের পর আর সার প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয় না। কারণ চাষের এ পর্যায়ে পানিতে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য এমনিতেই তৈরি হয় এবং পানির রং যথেষ্ট সবুজ হয়ে যায়। তবে পানিতে যথেষ্ট প্রাকৃতিক খাদ্য না থাকলে চাষ চলাকালীন সার দিতে হবে (সারনি ২)।

পোনা মজুদ নির্ভরযোগ্য সরকারি/বেসরকারি হ্যাচারি থেকে পোনা সংগ্রহ করতে হবে। ধানী পোনার ক্ষেত্রে ১৫—২০ দিন নার্সারি পুকুরে রেখে ৪—৬ সে.মি লম্বা হলে অথবা ওজন ৩—৪ গ্রাম হলে স্ত্রী পোনাগুলোকে আলাদা করে পুকুরে চাষ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

পুকুর ব্যবস্থাপনা ও সম্পূরক খাদ্যের ওপর নির্ভর করে শতাংশ প্রতি ৫০০—১০০০টি সুস্থ—সবল পোনা মজুদ করা যেতে পারে। পোনাকে অবশ্যই পুকুরের পানির সাথে কন্ডিশনিং করে তারপর ছাড়তে হবে। পোনা মজুদ করার উত্তম সময় হল সকাল বেলা।

 

কই মাছের সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ:

কই মাছের পুষ্টি চাহিদা বিশেষ করে আমিষের চাহিদা কার্পজাতীয় মাছের চেয়ে বেশি। কই মাছের পোনার আমিষের চাহিদা ৩০—৩৫% এবং চাষযোগ্য মাছের ক্ষেত্রে তা ৩০%। অধিক ঘনত্বে কই মাছ চাষে ভাল উৎপাদন পেতে হলে প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি মাছকে সম্পূরক খাদ্য দিতে হবে।

কই মাছের একটি আদর্শ খাবারে আমিষ ৩০—৩৫%, চর্বি ৪—৫%, শর্করা ৪%, ছাই (অংয) ১৪%, অঁাশ (ঋরনৎব) ৫% ও জলীয় অংশ ১১% থাকা প্রয়োজন। ইদানিং বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির পিলেট খাদ্য (ডুবন্ত ও ভাসমান) কিনতে পাওয়া যায়।

এসব খাদ্য প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানির নির্দেশনাও মানা যেতে পারে। খামারে তৈরি ভিজা খাবারের পাশাপাশি বানিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত ভাসমান পিলেট খাবার কই মাছের পুকুরে প্রয়োগ করা সর্বোত্তম। নিচের সারণি অনুসরণ করে প্রতিদিনের খাদ্যকে দু’ভাগ করে সকাল ও বিকালে ২ বার প্রয়োগ করা যেতে পারে।

 

কই মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণ:

আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চাষ করলে ৩—৪ মাসে কই মাছ গড়ে ৯০—১০০ গ্রাম (ভিয়েতনামী কই ২০০—৩০০ গ্রাম) হবে। এ সময় জাল টেনে বা পানি শুকিয়ে মাছ ধরার ব্যবস্থা নিতে হবে। নিচের সারণিতে একর প্রতি কই মাছের উৎপাদন দেখানো হলো

বাজারজাতকরণের আগের দিন জাল টেনে মাছ ধরে ছেড়ে দিতে হবে। এর ফলে বাজারজাত করার সময় মাছের মৃত্যুহার কম হবে। মাছ ধরার পর পরিস্কার পানি দিয়ে মাছগুলো ধৌত করা শ্রেয়। এরপর প্লাষ্টিকের ড্রামে পরিমাণমত পানি নিয়ে জীবন্ত অবস্থায় কই মাছ বাজারজাত করা যেতে পারে। এতে করে ভালো দাম পাওয়া যায়।

কই মাছের রোগ ব্যবস্থাপনা:

* পুকুর প্রস্তুতকরণের কাজটি যথাযথভাবে করতে হবে।

* সুস্থ সবল পোনা মজুদ করতে হবে।

* উৎপাদন উপকরণ ভালভাবে জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করতে হবে।

* পরিমিত পরিমানে সুষম খাবার প্রয়োগ করতে হবে।

* প্রতিমাসে অন্তত: একবার নমুনায়নের মাধ্যমে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। * প্রতি ১৫—২০ দিন অন্তর অন্তর ২০—৩০% পানি পরিবর্তন করে দিতে হবে।

তাছাড়া কই মাছ পরিবহনের সময় আঘাত প্রাপ্ত হলে ক্ষত রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। ক্ষত রোগের প্রাদুর্ভাব হলে টিমসেন প্রতি শতাংশ পুকুরে (১ মিটার গভীরতায়) ২.৬৫ গ্রাম হারে ব্যবহার করা যেতে পারে (ইউনিট—৪ এ ক্ষত রোগ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আছে)।

পুকুরে জীবাণুনাশক হিসেবে অ্যাকুয়াম্যাজিক ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যবহার মাত্রা প্রতি একর পুকুরে ১ মিটার গভীরতার জন্য ৫ কেজি। তাছাড়া পোনা মজুদের পর ১০ গ্রাম/শতাংশ হারে কপার সালফেট ব্যবহারে ভাল ফল পাওয়া যায়।

 

সূত্র:

  • কই মাছের চাষ পদ্ধতি | ইউনিট-১ , পাঠ -১.৬ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

নাইলোটিকার চাষ পদ্ধতি

নাইলোটিকার চাষ পদ্ধতি বা নাইলোটিকা মাছের চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করবো। নাইলোটিকার চাষ পদ্ধতি পাঠটি  কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র  এর ইউনিট-১ এর ১.৪ নম্বর পাঠ।

নাইলোটিকার চাষ পদ্ধতি

 

নাইলোটিকা মাছ পরিচিতি:

আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল ছিল নীল তেলাপিয়া মাছের আদি নিবাস। সেখানে প্রাকৃতিকভাবেই এ মাছ পাওয়া যায়। মাছটি চাষের উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সালে থাইল্যান্ড হতে আমাদের দেশে প্রথম আমদানি করা হয়।

বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে মাছটিকে নাইলোটিকা নামে ডাকা হয়। এটি আসলে নীল তেলাপিয়া এবং এই নামেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত যদিও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।এটি একটি শক্ত প্রকৃতির দ্রুত বর্ধনশীল মাছ। নদী, হ্রদ, পয়ঃনিষ্কাশন নালা, সেচ নালাসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাদুপানির জলাশয়ে মাছটি স্বাচ্ছন্দে বাড়তে পারে। মাছটি প্রায় সব ধরনের খাদ্য খায়।

কিশোর অবস্থায় এরা সর্বভূক; ফাইটোপ্ল্যাংকটন, জুপ্ল্যাংকটন ও পঁচনশীল জৈব পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে। পূর্ণ বয়স্ক অবস্থায় এরা ফাইটোপ্ল্যাংকটন এবং জুপ্ল্যাংকটন প্রধান খাদ্য হিসেবে খেয়ে থাকে।

সম্পূরক খাদ্য দিয়েও মাছটি চাষ করা যায়। মাছটি ৮—৪২০ঈ তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারে। নাইলোটিকা মাছ তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে ৩—৬ মাসে প্রজননক্ষম হয় বাচ্চা ফোটায় এবং কুসুমথলি মিলিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত বাচ্চাগুলো এরা মুখেই রাখে। উল্লেখ্য, স্ত্রী মাছ ২০০টি পর্যন্ত ডিম মুখে রাখতে পারে। মাছটি দেখতে ধূসর নীলাভ থেকে সাদা লালচে। পুরুষ মাছের গলার অংশের বর্ণ লালচে এবং স্ত্রী মাছের ক্ষেত্রে বর্ণ লালচে হলুদাভ। পৃষ্ঠ পাখনা কৃষ্ণবর্ণের মার্জিনযুক্ত এবং পুচ্ছ পাখনা সাদা বর্ণের সরু ও লম্বা দাগযুক্ত।

 

নাইলোটিকা মাছের বৈশিষ্ট্য ও চাষের সুবিধা:

(১) নাইলোটিকা মাছ বেশ শক্ত গড়নের হওয়ায় রোগবালাই তেমন হয় না।

(২) মাছটি সুস্বাদু এবং দেখতে আকর্ষনীয় হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

(৩) অধিক ফলনশীল হওয়ায় মাছটি চাষে অধিক লাভ হয়।

(৪) সর্বভূক বিধায় মাছ চাষে উৎপাদন খরচ অনেক কম।

(৫) প্রকৃতির বিরূপ পরিবেশে (যেমন— কম অক্সিজেন, বিরূপ তাপমাত্রা) সহনীয় ক্ষমতা বেশি।

(৬) জৈবিক ও কৃষিজ বর্জ্যকে উন্নত আমিষে রূপান্তরকরণে সক্ষম।

(৭) এ মাছের পোনা সহজেই পাওয়া যায়।

(৮) বেশি ঘনত্বে চাষাবাদ করা যায়।

(৯) স্বাদু ও লবণাক্ত পানি ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের জলাশয়ে চাষাবাদ করা যায়।

(১০) বিভিন্ন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়। যেমন—একক, মিশ্র, সমম্বিত, খাঁচায় ও পেন পদ্ধতি ইত্যাদি।

 

নাইলোটিকা মাছের একক চাষ পদ্ধতি:

নাইলোটিকা মাছ চাষ করতে হলে নিচের ধাপগুলো ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করা প্রয়োজন।

 

১। নাইলোটিকা চাষের জন্য মজুদ পুকুর ব্যবস্থাপনা:

পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি : বছরে ৬ মাস পানি থাকে এমন যে কোনো জলাশয়ে সফলভাবে নাইলোটিকা চাষ করা যায়। পুকুরের পানির গভীরতা ১.৫ মিটার থাকলে ভাল হয়। উল্লেখ্য, ৫ শতাংশ বা তার নিচের আকারের জলাশয়েও নাইলোটিকা মাছ চাষ করা যায়। নির্বাচিত পুকুরের পাড় ভাঙ্গা থাকলে তা মেরামত করতে হবে।

তলায় ৩০ সে.মি. এর বেশি কাদা থাকলে তা অপসরণ করতে হবে এবং তলা সমান করতে হবে যাতে জাল টানতে সুবিধা হয়। তাছাড়া তলার পঁচা কাদা অপসারণ করলে পানিতে বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয় না। পুকুরে ভাসমান অথবা শিকড়যুক্ত সব ধরনের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।

রাক্ষুসে মাছ দমন : টাকি, শোল, বোয়াল, চিতল, গজার প্রভৃতি হলো রাক্ষুসে মাছ। এরা চাষকৃত মাছের পোনা ও ডিম খেয়ে ফেলে এবং বিভিন্ন রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। তাই পুকুরে পোনা মজুদের আগে এসব রাক্ষুসে মাছ দমন করতে হবে। দুইভাবে কাজটি করা যেতে পারে। জাল টেনে অথবা ঔষধ প্রয়োগ করে। পুকুরে ঘন ঘন জাল টেনে রাক্ষুসে মাছ দমন করা যেতে পারে। সম্পূর্ণভাবে দমন করা না গেলে পুকুর শুকিয়ে নেওয়া উত্তম। তবে ঔষধ প্রয়োগ করে কাজটি সহজেই করা যায়। এক্ষেত্রে ফসটক্সিন ও রোটেনন ব্যবহার করা যেতে পারে।

চুন ও সার প্রয়োগ: চুনের বাফার হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা আছে। পানির ঢ়ঐ পরীক্ষা করে চুন (ঈধঈড়৩) প্রয়োগ করা উচিত। উল্লেখ্য, কিছুটা ক্ষারীয় ঢ়ঐ মাছ চাষের জন্য উপযোগী। বাংলাদেশে অধিকাংশ পুকুরের পানির ঢ়ঐ ৯ থেকে ৯.৫ এর ভিতরে থাকায় তা মাছ চাষের জন্য বেশ সহায়ক। তবে ঢ়ঐ এর মাত্রা কোনো কারণে অম্লীয় হলে চুন ব্যবহার করতে হবে।

চুন প্রয়োগ করলে পানি পরিষ্কার হয় এবং রোগ জীবাণু ধ্বংস হয়। পুকুরে চুন দিলে সার তাড়াতাড়ি কাজ করে চুনের ডোজ শতাংশে ১ কেজি। বাজারে সচরাচর প্রাপ্ত পাথুরে চুন ব্যবহার করা হয়। চুন প্রয়োগের ৩ থেকে ৪ দিন পর শতাংশে ৩—৪ কেজি গোবর + ২ কেজি মুরগির বিষ্ঠা প্রয়োগ করতে হবে। এর এক সপ্তাহ পর শতাংশে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া+ ৫০ গ্রাম ঞঝচ পানিতে গুলে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত ইউরিয়ার অর্ধেক পরিমাণে ঞঝচ সার দিতে হয়। সার প্রয়োগের ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে পানির রং সবুজাভ হলে পোনা ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।

 

২। নাইলোটিকা চাষের জন্য পোনা সংগ্রহ ও মজুদকরণ :

নির্ভরযোগ্য কোনো হ্যাচারি থেকে একটু বড় আকারের (৫—৭ সে.মি.) পোনা সংগ্রহ করতে হবে। উল্লেখ্য, বড় আকারের পোনার মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে কম। আধুনিক পদ্ধতিতে অক্সিজেন দিয়ে পোনা সংগ্রহ করতে হবে যাতে করে পোনার ওপর পরিবহনজনিত চাপ (ংঃৎবংং) না পড়ে। সংগৃহিত পোনা প্রতি শতাংশে ৬০ থেকে ৮০ টি করে মজুদ করতে হবে। পোনা মজুদের পূর্বে অবশ্যই পুকুরের পানির তাপমাত্রার সাথে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত করে নিতে হবে। পোনা মজুদের কাজটি সকালে করা ভাল। সকালের দিকে তাপমাত্রা কম থাকায় পোনার উপর তাপমাত্রাজনিত বিরূপ প্রভাব পড়ে না।

৩। নাইলোটিকা মজুদ পরবর্তি ব্যবস্থাপনা :

(ক) নাইলোটিকার পোনার পরিচর্যা :

নাইলোটিকা মাছ পুকুরের সব স্তরে বাস করে এবং সব ধরনের খাদ্য খায়। মজুদ মাছের মোট দৈহিক ওজনের শতকরা ৪—৬ ভাগ হারে চাউলের কঁুড়া, গমের ভূষি ও সরিষার খৈলের মিশ্রণ সকাল ও বিকালে পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। সরিষার খৈল পুকুরে প্রয়োগ করার অন্তত: ১২ ঘন্টা পূর্বে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।

পুকুরের নির্দিষ্ট স্থানে প্রতিদিন খাবার দিতে হবে পোনা ছাড়ার ৮ থেকে ১০ দিন পর থেকে সব ধরনের খাবার পুকুরে দেওয়া যায়। বাজার থেকে কেনা পিলেট খাবারও ব্যবহার করা যায় এক্ষেত্রে মাছ চাষের খরচ তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। খাদ্য হিসেবে রান্নাঘরের উচ্ছিষ্টও দেওয়া যায়। প্রতি সপ্তাহে জাল টেনে মাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং মাছের গড় ওজনের সাথে মিলিয়ে খাদ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।

(খ) নাইলোটিকার অতিরিক্ত পোনা সরানো :

নাইলোটিকা মাছ পুকুরের বদ্ধ পানিতে বাচ্চা দেয় এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর থেকে বছরে একাধিক বার বাচ্চা দেয়। সঙ্গত কারণেই পুকুর অতিরিক্ত পোনায় ভরে যায়। এর ফলে অধিক ঘনত্বে মাছ আশানুরূপ বড় হতে পারে না এবং খাদ্য সংকট দেখা দেয়। তাই জাল টেনে পোনার ঘনত্ব কমিয়ে ফেলতে হবে।

(গ) নাইলোটিকার অন্যান্য পরিচর্যা :

নাইলোটিকা মাছ খাবার ঠিকমত খাচ্ছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি দেখা যায় সকালের দিকে মাছ পানির ওপরে হা করে শ্বাস নিচ্ছে তখন বুঝতে হবে পানিতে অক্সিজেনের অভাব রয়েছে। এ অবস্থায় পুকুরে খাবার ও সার দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। এ সময় লাঠি দিয়ে পানিতে আঘাত করে, ঘনঘন জাল টেনে অথবা পুকুরে নেমে সাঁতার কেটে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এ্যারেটর ব্যবহার করেও কাজটি করা যেতে পারে।

(ঘ) নাইলোটিকা মাছ আহরন ও বাজারজাতকরণ :

নাইলোটিকা মাছ ৫ থেকে ৬ মাসে ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের হয়ে যায়। এমন ওজনের মাছ টানা বেড় জাল দিয়ে বাজারে বিক্রি করা যেতে পারে। আংশিক আহরণ পদ্ধতিতে শুধুমাত্র বড় মাছ গুলো ধরে জীবিত অবস্থায় বাজারে নিলে ভাল দাম পাওয়া যাবে। একবারের চাষে নাইলোটিকা মাছের উৎপাদন দাঁড়ায় বিঘা প্রতি ২৫০—৩০০ কেজি। তবে ব্যবস্থাপনা উন্নত করে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব।

 

নাইলোটিকা মাছের রোগ ব্যবস্থাপনা :

নাইলোটিকা মাছ অত্যন্ত শক্ত গড়নের হওয়ায় এর রোগবালাই তেমন একটা দেখা যায় না। তবে প্রতিকূল পরিবেশে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ পেতে পারে। শীতের শুরুতে নাইলোটিকা মাছ লেজ ও পাখনা পঁচা, আঁইস খসে পড়া ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়। তাই শীত শুরুর আগে শতাংশে ১ কেজি চুন পানিতে গুলে পুকুরে দিলে উপকার পাওয়া যায়। শীত মৌসুমের আগেই মাছ আহরণ করে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যান্য ব্যবস্থাপনা রাজপঁুটি মাছের অনুরূপ।

সূত্র:

  • নাইলোটিকার চাষ পদ্ধতি | ইউনিট ১ , পাঠ -১.৪ | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

ফল ও শাকসবজি বাজারজাত করণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ

ফল ও শাকসবজি বাজারজাত করণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ – বিষয়ক আজকের আলোচনা। এই পাঠটি ইউনিট ৯ এর ৯.৩ নং পাঠ।

 

ফল ও শাকসবজি বাজারজাত করণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ

ফল ও শাকসবজি দ্রুত পচনশীল পণ্য এবং এদের উৎপাদন মৌসুম সীমিত বলে এসব পণ্যের বাজারজাতকরণ একটি স্পর্শকাতর বিষয়। তবে মৌসুমের সময় প্রচুর উৎপাদন হয় বলে এদের দাম কম থাকে। যদিও অন্যান্য খাদ্যোপাদানের সাথে সাথে ফল ও শাকসবজির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এই পরিস্থিতি সুষ্ঠ বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একদিকে যেমন কৃষক ন্যায্য মূল পাবে তেমনি ক্রেতাসাধারণও পর্যাপ্ত পরিমাণে ভালমানের ফল ও শাকসবজি কিনতে পারবে।

ফলে কৃষক, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সবাই লাভবান হবে। আমাদের দেশে ফল ও শাকসবজি বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া এখনও তেমন সুনির্দিষ্ট কোন পদ্ধতির আওতায় আসে নাই।

 

ফল ও সবজি সাধারণত তিনটি ধাপে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পেঁৗছায়—

ধাপ—১ : কৃষক সবজি উৎপন্ন করার পর সংগ্রহ করে এবং আড়তে বিক্রি করে।

ধাপ—২ : আড়ত থেকে ফরিয়া বা মধ্যস্বত্বভোগীরা ফল ও সবজি শহরের পাইকারী বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে।

ধাপ—৩ : খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ভোক্তারা ফল ও সবজি ক্রয় করে।

এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং এর ফলে কৃষক যেমন ন্যায্যমূল্য পায় না তেমনি ক্রেতা বা ভোক্তাদেরও উচ্চমূল্যে পণ্য কিনেতে হয়। এই পদ্ধতিতে ফল ও সবজি বাজারে পৌছাতে সময় বেশি লাগে। তাই বাজারে নেওয়ার পূর্বে ফল ও সবজি ভালভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। তা না হলে ফল ও সবজি পচে গিয়ে অপচয় বেড়ে যায়। বাজারজাতকরণের ত্রুটি দূর করার জন্য নিম্নের কাজগুলো করতে হবে।

 

বাজারজাতকরণের ত্রুটি দূর করার জন্য কাজ:

ক) যথাসময়ে সংগ্রহ :

ফল বা শাকসবজি গাছ থেকে সময়মত সংগ্রহ করতে হবে। অতিরিক্ত পাকা বা অপরিপক্ক ফল বা সবজি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।

 

খ) গ্রেডিং করা :

ফল ও শাকসবজিকে আকার, আকৃতি, বর্ণ ইত্যাদি বাহ্যিক গুণের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। গ্রেডিং করা ফল ও শাকসবজির সংরক্ষণ কাল বেড়ে যায় এবং গ্রেডিং করা শাকসবজি ও ফলের বাজারমূল্য ভাল পাওয়া যায়।

 

গ) ফল ও শাকসবজি শীতল করা :

শাকসবজি ও ফল সংগ্রহের পরও শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া চলতে থাকে এবং এতে এইসব পণ্য দ্রুত পচে যায়। তাই মাঠ থেকে ফল উত্তোলনের পর এগুলোকে বায়ুচলাচলের সুবিধাযুক্ত ছায়াযুক্ত স্থানে কিছুক্ষণ রেখে ঠান্ডা করে নিতে হয়। অনেক সময় ঠান্ডা করার জন্য উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেমন: সবজি বা ফলের উপর দিয়ে আর্দ্র ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত করা হয়। বরফ পানি ছিটানো হয় বা বরফ পানিতে ফল ও সবজি ডুবানো হয়।

এতে করে ফল ও সবজি দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায়। বরফ পানিতে ডুবানোর একটি সুবিধা হলো এর সাথে ছত্রাকনাশক মিশিয়ে ফল ও শাকসবজি জীবাণুমুক্ত করা যায়। বাণিজ্যিকভাবে ফল ও শাকসবজি দূরের কোন স্থানে পরিবহণ করার আগে এভাবে ঠান্ডা করে নিলে বেশিদিন এগুলো সংরক্ষণ করা যায়।

 

ঘ) প্যাকেজিং :

প্যাকেজিং নির্ভর করে পণ্য কতদূরে এবং কিভাবে যাবে তার উপর। প্যাকেট এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে পরিবহনের সময় পণ্য আঘাত প্রাপ্ত না হয়। উন্নত বিশ্বে বাতাস চলাচলে সুবিধাযুক্ত প্লাস্টিক কাঠ বা হাডবোর্ডের বাক্সে শাকসবজি ও ফল পরিবহন করা হয়।

 

ঙ) পরিবহণ :

পরিবহণের সময় পণ্য বেশি গাদাগাদি করে বোঝাই করা উচিৎ নয়। এতে, ফল ও সবজি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। তাই পরিবহণের সময় ফল ও সবজি যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। শীতকালে একটানা ১২ ঘন্টা এবং গ্রীষ্মকালে ৮ ঘন্টার বেশি ফল ও শাকসবজি যানবাহনে রাখা যাবে না। পরিবহনকালে শাকসবজির প্যাকেট বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকা অপরিহার্য। ফল ও শাকসবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তাকে নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ছয়টি খাদ্য উপাদানের মধ্যে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ উল্লেখযোগ্য।

ফল ও শাকসবজি এই ভিটামিন ও খনিজের প্রধান উৎস, ফল ও শাকসবজি যেমন আমাদের রসনার তৃপ্তি দেয়, তেমনি আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। ফল ও সবজিতে ভিটামিন ও খনিজ ছাড়াও সহজ প্রাপ্য শর্করা আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাদ্য উপাদান রয়েছে। এসব খাদ্য শরীর গঠনে যেমন সাহায্য করে তেমনি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে। এতগুণ সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও ফল ও সবজি দীর্ঘদিন তাজা অবস্থায় রেখে খাওয়া যায় না। এগুলো পচনশীল পণ্য। তাই ফল ও সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন খাদ্য তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায়। এসব প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্য সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত।

বিভিন্ন ফল ও সবজির গুণগত মানের পরিবর্তন না করে ভৌত ও রাসায়নিক পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের আকৃতি প্রকৃতি পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

 

খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করণের গুরুত্ব:

নিম্নে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করণের গুরুত্ব আলোচনা করা হল:

১। পুষ্টিমান সংরক্ষণ :

প্রক্রিয়াজাত করনের ফলে সবজি ও ফলের গুণগত মানের তেমন কোন পরিবর্তন হয় না। ফলে সারাবছর ঐ ফল বা সবজির স্বাদ গ্রহণ করা যায় ও পুষ্টি ও পাওয়া যায়।

 

২। উৎপাদিত পণ্যের অপচয় রোধ :

আমাদের দেশে মৌসুমের সময় যে ফল ও সবজি উৎপাদিত হয় সংগ্রহ পরবতীর্ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে এর বড় একটি অংশ পচে নষ্ট হয়। তাই শাকসবজি ও ফলকে প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন খাবার যেমন, জ্যাম, জেলী, জুস, আচার, ইত্যাদি তৈরি করলে সবজি ও ফল অপচয় রোধ করা যাবে।

৩। কৃষকের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি :

উৎপাদন মৌসুমে সাধারণত ফল ও সবজির দাম কম থাকে। এ সময় অপচয়ও হয় বেশি। কিন্তু এসব দিয়ে প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্য তৈরি করা হলে কৃষক ন্যায্য মূল্য পাবে।

 

৪। কর্মসংস্থান সৃষ্টি :

খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের সাথে অনেক কাজ জড়িত। ফলে সেখানে প্রচুর লোকের প্রয়োজন হয়। এবং এভাবে অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়।

 

৫। বৈদেশিক মুদ্রা আয় :

প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্য বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আর করা সম্ভব।

 

চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ

চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “উদ্যান ফসল” বিষয়ের ৮ নং ইউনিটের, পাঠ নং ৮.৯।

চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ

চন্দ্রমলিকা শীতকালীন মৌসুমী ফুল। চীন ও জাপান চ ন্দমলিকার উৎপত্তিস্ল। এটি জাপানের জাতীয় ফুল চন্দ্রমলিকা বিশ্বব্যাপি অত্যন্ত জনপ্রিয় যা গোলাপের পরই এর স্থান। নানা আকার, বাহারি রং, আকার আকৃতি এবং ফুলের দীর্ঘস্থায়িত্ব এর কারণে সকল মৌসুমি ফুলের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। এই ফুল টবে, উদ্যানে, বিশেষ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। শরৎকালীন ফুল ফোটে বলে শরতের রাণী বা Autmn queen বলা হয়। চীন, জাপান ইউরোপের এ এই ফুলের আরও উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কাজ চলছে। সংকরায়নের মাধ্যমে প্রচুর সংখ্যক জাত উদ্ভাবন হচ্ছে। শুধু বাগানের সৌন্দর্য নয় কাটফ্লাওয়ার চাষের প্রসার বাড়ছে।

 

চন্দ্রমল্লিকার জাত :

চন্দ্রমল্লিকা জাতভেদে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। (১) সিঙ্গেল (২) এনিমোন—ফ্লাওয়ার্ড (৩) ডেকোরেটিভ (৪) পমপন (৫) ইনকার্ভড (৬) কাসকেড (৭) হেয়ারি বা স্পাইডারী (৮) রিফ্লেক্সড (৯) লার্জ একজিবিশন (১০) স্পুন (১১) লিলিপুট। বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা কতৃর্ক উদ্ভাবিত জাত বারি চন্দ্রমল্লিকা—১, বারি চন্দ্রমল্লিকা—২। জলবায়ু ও মাটি

চন্দ্রমল্লিকা সাধারণত : ঠান্ডা ও রৌদ্রজ্জল পরিবেশ পছন্দ করে। দোআঁশ ও পলিদোআঁশ মাটি চন্দ্রমল্লিকা চাষের জন্য উপযোগী।

 

চন্দ্রমল্লিকার চারা উৎপাদন :

চন্দ্রমল্লিকা চারা বীজ, সাকার ও শাখা কলম হতে প্রস্তুত করা হয়। বীজ থেকে উৎপন্ন চারা থেকে ভালোমানের ফুল পাওয়া যায়না আবার ফুল আসতে সময় লাগে। সেদিক থেকে কলম করে চারা উৎপাদন করাই উত্তম।

১। সাকার থেকে চারা উৎপাদন :

গাছে ফুল ধরা শেষ হলে ১৫—২৫ সে.মি. উপরে ডালগুলো কেটে দিতে হয়। মাস খানেকের মধ্যে গাছের গোড়া থেকে সাকার বের হয়। এগুলো গাছের গোড়া থেকে ছিঁড়ে নিয়ে প্রতিটি খন্ডে ২—৩ টি পাতা রেখে প্রথমে ছোট টবে লাগাতে হবে। টবে মাটির মিশ্রনে সমপরিমাণ পচা গোবর সার কিংবা পাতা পচা সার এবং বালি মিশিয়ে নিতে হবে।

পরিমাণ মতো পানি সেচ দিলে এক মাসের মধ্যে সাকারের খন্ডগুলো থেকে মুল গজাবে। মধ্য জুন—মধ্য জুলাই মাস পর্যন্ত খন্ডগুলো বড় হবে এবং পাশ দিয়ে শাখা বের হবে সেগুলোকে কেটে নিয়ে টবে বা বীজতলয়ে ৩০ সে.মি. দুরে দুরে রোপন করা যেতে পারে। চারাগুলোকে কড়া রোদ ও অতিরিক্ত বৃষ্টি থেকে রক্ষাসহ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

২। শাখা কলম থেকে চারা উৎপাদন :

শাখা কলম তৈরির জন্য জুলাই—আগষ্ট মাসের দিকে ৮—১০ সে.মি. দীর্ঘ করে অগ্রভাগ কেটে নিতে হবে। ২—৩টি নোড সম্পন্ন শাখা কলমের খন্ডগুলোকে তিনভাগ বালি ও একভাগ পাতা পচা সারের মিশ্রণে রোপন করতে হবে।

 

চন্দ্রমল্লিকার চারা রোপন :

সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সে.মি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ২৫ সে.মি. চারা রোপন করতে হবে। সারপ্রয়োগ চন্দ্রমল্লিকার জন্য গোবর সার একর প্রতি ৪০০০ কেজি, ১৬০ কেজি ইউরিয়া, ১১০ কেজি টি এসপি ১২০ কেজি এমপি, ৬৬ কেজি জিপসাম, ৪.৮ কেজি বরিক এসিড, ১.৬ কেজি জিঙ্ক অক্সাইড হারে প্রয়োগ করতে হবে (বারি, ২০০৪)। শেষ চাষের সময় সমুদয় সার মাটির দুই কিস্তিতে ভাগ করে একভাগ রোপনের ২৫—৩০ দিন পর এবং বাকি অর্ধেক ৪৫—৫৯ দিন পর গোড়ার চারপাশে দিতে হবে। প্রতিবার সার প্রয়োগের পর পানি সেচ দিতে হবে। কুড়ি অপসারণ বর্ষাকালে প্রথম দিকে যখন শাখা বের হতে থাকে তখন মুল কান্ডের মাথা কেটে দিতে হবে।

 

 

এরপর শাখা বের হলে প্রয়োজনীয় শাখা রেখে বাকি শাখা কেটে দিতে হয়। এতে ফুলের সংখ্যা বাড়ানো যায়। শাখাগুলির অগ্রভাগের ফুলের কুড়ি রেখে বাকিগুলো ফেলে দিতে হবে। এর ফলে বড় আকারের ফুল পাওয়া যায়। ঠেক দেওয়া চন্দ্রমল্লিকার গাছ যাতে হেলে না পড়ে সেজন্য ঠেক দেয়া প্রয়োজন।

 

চন্দ্রমল্লিকার রোগ ও পোকা দমন :

চন্দ্রমল্লিকার সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল জাবপোকা। এ পোকা কচি পাতা, ফুলের রস খেয়ে ফেলে। এই পোকা ১ লিটার পানিতে ২ মিলি ম্যালাথিয়ন মিশিয়ে ৭—১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে। থ্রিপস পোকাও পাতা ও ফুলের রস চুষে খায় ফলে পাতা ও ফুল শুকিয়ে যায়। চন্দ্রমল্লিকা পাউডারি মিলডিউ নামক ছত্রাক জনিত রোগের প্রার্দূভাব দেখা যায়। এ রোগ হলে পাতার উপর সাদা সাদা পাউডার দেখা যায়। এটি দমনের জন্য রিডোমিল ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে টিল্ট ২৫০ ইসি ৭—১০ দিন পর পর প্রয়োগ করলে রোগ দমন হয়। ফুল সংগ্রহ চারা লাগানোর ১০০—১২৫ দিনের মধ্যে চন্দ্রমল্লিকার ফুল ফোটে।

বাংলাদেশে নভেম্বর—জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এ ফুল ফোটে। চন্দ্রমল্লিকা ফুল কুড়ি অবস্থায় না তুলে বাইরে পাপড়িগুলো সম্পূর্ণ খুলে গেলে এবং মাঝের পাপড়িগুলো ফুটতে শুরু করলে দীর্ঘ বেঁাটা সহ ছুরি দিয়ে কেটে আনতে হবে। চন্দ্রমল্লিকার ফুল অনেক দিন পর্যন্ত তাজা থাকে। ফুল সংগ্রহের পর বাজারে পাঠানোর আগ পর্যন্ত পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে।

 

চন্দ্রমল্লিকার উন্নত চাষ পদ্ধতি

চন্দ্রমল্লিকার উন্নত চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলাপ করবো আজ। চন্দ্রমল্লিকা জনপ্রিয় একটি মৌসুমী ফুল। ক্রিসমাসের সময় ফোটে বলে একে ক্রিসেন্থিমামও বলা হয়। জাপান ও চীন এর আদি জন্মস্থান। এটি বিভিন্ন বর্ণ ও রঙের হয়। তাই একে ‘শরৎ রানি’ও বলা হয়। বাড়ির আঙিনা, বারান্দা ও ছাদে ফুলটি চাষ করা যায়।

উন্নত চন্দ্রমল্লিকার চাষের জন্য জলবায়ু :

চন্দ্রমল্লিকা তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা আবহাওয়া এবং রৌদ্রোজ্জ্বল জায়গায় ভালো জন্মে। বাংলাদেশে শীতকালই এ ফুল চাষের উপযুক্ত সময়।

উন্নত চন্দ্রমল্লিকার চাষের জন্য মাটি :

জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ ও বেলে মাটি চন্দ্রমল্লিকা চাষের জন্য উপযোগী। মাটির পিএইচ ৬.০-৭.০ হওয়া জরুরি।

উন্নত চন্দ্রমল্লিকার চারা তৈরি :

বীজ, সাকার ও শাখা কলম থেকে চন্দ্রমল্লিকার চারা তৈরি করা যায়। জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে শাখা কলম করা শুরু হয়। একবছর বয়সী সবল ডাল থেকে ৮-১০ সেন্টিমিটার লম্বা ডাল তেরছাভাবে কেটে বেডে বা বালতিতে বসিয়ে দিলে তাতে শেকড় গজায়। ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে যখন ফুল দেওয়া শেষ হয়ে যায়। তখন গাছগুলোকে মাটির উপর থেকে ১৫-২০ সেন্টিমিটার রেখে কেটে দেওয়া হয়। কিছুদিন পর ওসব কাটা জায়গার গোড়া থেকে কিছু সাকার বের হয়। এসব সাকার ৫-৭ সেন্টিমিটার লম্বা হলে মা গাছ থেকে ওদের আলাদা করে ছায়াময় বীজতলায় বা টবে লাগানো হয়। মে-জুলাই মাসে চারাকে বৃষ্টি ও কড়া রোদ থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

উন্নত চন্দ্রমল্লিকার চারা রোপণ :

শেষবারের মতো নির্দিষ্ট স্থানে কিংবা টবে রোপণের আগে চারাগুলোকে স্বতন্ত্র জমিতে বা টবে পাল্টিয়ে নিয়ে তাদের ফুল উৎপাদনের উপযুক্ততা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। জমি কিংবা টবে চারা রোপণের উপযুক্ত সময় অক্টেবর-নভেম্বর। জাতভেদে ৩০x২৫ অন্তর চন্দ্রমল্লিকা রোপণ করতে হবে।

উন্নত চন্দ্রমল্লিকার চাষে সার প্রয়োগ :

চন্দ্রমল্লিকা গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদন শোষণ করে থাকে। এ কারণে জৈব ও রাসায়নিক খাদ্যযুক্ত মাটিতে এ গাছ খুব ভালোভাবে সাড়া দেয়। প্রতি হেক্টরে ১০ টন পঁচা গোবর বা কম্পোস্ট, ৪০০ কেজি ইউরিয়া, ২৭৫ কেজি টিএসপি, ৩০০ কেজি মিউরেট অব পটাশ, ১৬৫ কেজি জিপসাম, ১২ কেজি বোরিক অ্যাসিড ও জিংক অক্সাইড সার প্রয়োগ করতে হবে।

সাকার রোপণের ১০-১৫ দিন আগে পঁচা গোবর বা কম্পোস্ট এবং ইউরিয়া বাদে অন্যান্য সার ৭-১০ দিন আগে মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সাকার রোপণের ২৫-৩০ দিন পর ইউরিয়া সারের অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে এবং বাকি অর্ধেক সার সাকার রোপণের ৪৫-৫০ দিন পর গাছের গোড়ার চারপাশে একটু দূর দিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। উপরি প্রয়োগের পর সার মাটির সাথে মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।

উন্নত চন্দ্রমল্লিকার কুঁড়ি :

চন্দ্রমল্লিকার বেড ও টব আগাছামুক্ত রাখা উচিত। চারা লাগানোর মাসখানেক পর গাছের আগা কেটে দিতে হয়। এতে গাছ লম্বা না হয়ে ঝোপালো হয়। চারা গাছে তাড়াতাড়ি ফুল আসলে তা সঙ্গে সঙ্গে অপসারণ করতে হয়। বড় আকারের ফুল পেতে হলে ডিসবাডিং করা উচিত। অর্থাৎ মাঝের কুঁড়িটি রেখে পাশের দুটি কুঁড়ি কেটে ফেলতে হয়। আর মধ্যম আকারের ফুল পেতে চাইলে মাঝের কুঁড়িটি অপসারণ করা উচিত।

উন্নত চন্দ্রমল্লিকার চাষে সেচ :

চন্দ্রমল্লিকার চারা বিকেলে লাগিয়ে গোড়ার মাটি চেপে দিতে হয়। চারা লাগানোর পর হালকা সেচ দিতে হয়। গাছ কখনো বেশি পানি সহ্য করতে পারে না। তাই পানি এমনভাবে দিতে হবে যেন গোড়ায় বেশিক্ষণ পানি জমে না থাকে। চারা রোপণের আগে এবং পরে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে পরিমাণমতো পানি সেচ জরুরি।

উন্নত চন্দ্রমল্লিকার ঠেস দেয়া :

চন্দ্রমল্লিকা ফুল সাধারণত ডালপালার তুলনায় বড় হয়। তাই গাছের গোড়া থেকে কুঁড়ি পর্যন্ত একটা শক্ত কাঠি পুঁতে দিতে হবে। এতে ফুল নুয়ে পড়বে না। চারা লাগানোর সময় কাঠি একবারেই পুঁতে দেওয়া ভালো। এজন্য জাত বুঝে চন্দ্রমল্লিকা গাছের উচ্চতা অনুযায়ী বাঁশের কাঠি চারার গোড়া থেকে একটু দূরে পুঁতে দিতে হয়।

উন্নত চন্দ্রমল্লিকার নিয়মিত পরিচর্যা :

ঘন ঘন নিড়ানি দিয়ে সব সময় জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। ঘাস না থাকলেও মাঝে মাঝে মাটিতে নিরানি দিলে গাছ স্বাস্থ‌্যবান হয়। লাগানোর ১০ দিনের মধ্যে মরে যাওয়া চারাগুলি বদলে দিতে হবে। মূল কাণ্ডের অগ্রভাগ ছেঁটে দিয়ে কাক্ষিক মুকুলের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। চারা গুলি যখন ২০ সেমি লম্বা হয়, তখন ছাঁটাই করতে হয়। ছোট ফুলের ক্ষেত্রে আরও এক বার ডগা ভেঙে দিতে হয়। বড় ফুলের গাছগুলি উঁচু হয় এবং এদের শক্ত কাঠি দিয়ে বেঁধে খাড়া করে রাখতে হয়। অবাঞ্ছিত ও অপরিণত কুঁড়ি ভেঙে দিলে কম সংখ্যক বড় আকারের বা বেশি সংখ্যক ছোট ফুল উৎপাদন করা সম্ভব।

চন্দ্রমল্লিকার রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ :

চন্দ্রমল্লিকার শোষক পোকা :

এ পোকা পাতা ও ফুলের রস শোষণ করে। ফলে আক্রান্ত পাতা ও ফুলে দাগ পড়ে। এমনকি ফুল এবং গাছও শুকিয়ে যায়। এ পোকা দমনের জন্য ২ মিলি ম্যালাথিয়ন ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।

চন্দ্রমল্লিকার জাব পোকা :

অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয় অবস্থাতেই গাছের নতুন ডগা বা ফুলের রস চুষে খায়। এটি গাছের বৃদ্ধি এবং ফলনে মারাত্মক ক্ষতি করে। নোভাক্রন (০.১%) বা রগর (১%) প্রয়োগ করে এ পোকা দমন করা যায়।

চন্দ্রমল্লিকার পাউডারি মিলডিউ :

এ রোগ হলে গাছের পাতা ধূসর হয়ে যায়। পাতার ওপরে সাদা সাদা পাউডার দেখা যায়। টিল্ট ২৫০ইসি ০.৫ মিলি বা ২ গ্রাম থিয়োভিট প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

 

চন্দ্রমল্লিকার ফলন :

ভালো ফলন হলে বিঘা প্রতি প্রায় তিন লাখ ছোট চন্দ্রমল্লিকা ফুল পাওয়া যায় যার ওজন প্রায় দুই টন এর মত এবং বড় চন্দ্রমল্লিকা ফুল পাওয়া যায় প্রায় ৭৫ হাজার।

 

চন্দ্রমল্লিকা ফুল তোলা :

চন্দ্রমল্লিকা ফুলের কুঁড়িতে রং এলেই ফুল তোলা যায়। পুষ্প দণ্ডের নিচের ১০ সেমি থেকে পাতা ছেঁটে ফেলতে হয়। ফুল তোলার সঙ্গে সঙ্গে তা সংরক্ষক ও ব্যাকটেরিয়ানাশক মেশানো পানিতে কিছু সময় রাখতে হয়। গাছে ২৮ থেকে ৩৫ দিন পর্যন্ত ফুল তাজা থাকে। স্পর্শ জনিত কীটনাশকের দ্রবণে কাটা ফুল আধ ঘণ্টা ডুবিয়ে রেখে তারপর শুকিয়ে রাখা উচিত। প্লাস্টিকে মুড়ে -০.৫ ডিগ্রি –০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চন্দ্রমল্লিকা ফুল প্রায় দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত হিম ঘরে মজুত করে রাখা যায়‌।

 

ডালিয়া ফুল চাষ

ডালিয়া ফুল চাষ – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “উদ্যান ফসল” বিষয়ের ৮ নং ইউনিটের, পাঠ নং ৮.৫।

ডালিয়া ফুল চাষ

 

 

ডালিয়া বিভিন্ন রং, সুন্দর এবং আকারের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি শীতকালীন মৌসুমি ফুল। বাগান, টবে, বর্ডার প্লান্ট হিসেবে বাসগৃহ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও রাস্তার শোভাবর্ধনের জন্য এই ফুলের চাষ করা হয়। এর আকর্ষণীয় আকার, বর্ণ বৈচিত্র্যের জন্য এর বাণিজ্যিক ব্যবহারও বেড়ে চলেছে। ফুল এর উৎপত্তিস্থল মেক্সিকো সুইডেনের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী আন্দ্রের ডাল এর নাম অনুসারে এর নাম ডালিয়া হয়েছে।

 

ডালিয়া ফুলের জাত:

ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল সোসাইটি ডালিয়া জাতগুলোকে ১০টি শ্রেণিতে ভাগ করেছে সেগুলো হলো:

১। সিঙ্গেল ফ্লাওয়ার্ড : যেমন— ককেট, ফ্রামে

২। এনিমোন ফ্লাওয়ার্ড : যেমন—কমেট

৩। কোলারেট : যেমন—লেডি ফ্রেন্ড, স্টারলেট কুইন

৪। পিউনি ফ্লাওয়ার্ড : যেমন—বিশপ অব ল্যান্ডডাফ

৫। ডেকোরেডিভ : যেমন—পিটার র‌্যামসে, লিবারেটর

৬। বল : যেমন—এ্যালটামি, রিস্কা মাইনার

৭। পম্পন : যেমন—অ্যাসকগ, জীনলিস্টার চিত্র ৮.৫.১ : ডালিয়া ফুল

৮। ক্যাটটাস: যেমন—এ্যালবার্ট, আরবকুইন

৯। সেমিক্যাকটাস : যেমন—আলফ্রেড সি ১০। বিবিধ : যেমন—পিঙ্ক গ্রাফি মাটি ও জলবায়ূ

 

 

প্রচুর সূর্যালোক সম্পন্ন ঠান্ডা আবহাওয়া ডালিয়া চাষের জন্য উপযোগী। উর্বর ও সুনিষ্কাশিত দেঁাআশ মাটি উত্তম। বংশ বিস্তার সাধারণত অঙ্গজ বংশ বিস্তারের মাধ্যমে চারা তৈরি করা হয়। কন্দমুল ও শাখা কলম থেকে চারা করা হয়। শুধুমাত্র সিঙ্গেল জাতের ক্ষেত্রে বীজ থেকে চারা করা যেতে পারে। কন্দমুলকে সরাসরি টবে বা জামিতে রোপন করা যায়। কন্দমুল কে টুকরো করেও রোপন করা যায় তবে প্রতিটি টুকরোতে একটি চোখ থাকতে হবে।

আবার কন্দুমলের প্রতিটি চোখ থেকে অনেকগুলো চারা বের হয় সেগুলোকে কেটে আলাদা করে টবে বা জমিতে রোপন করা যায়।

 

ডালিয়া ফুলের শাখা কলম :

কন্দমুল থেকে গাছ জন্মালে দুই তিনটি পাতাসহ ৭—৮ সে.মি. কেটে মে থেকে জুন মাসে শাখা কলম করেচারা রোপন করা যায়। মাটি বা জমি তৈরি ডালিয়া ফুল বেড ও টবে দুইভাবে চাষ করা যায়। জমি ভালোভাবে চাষ করে মাটি ঝুর ঝুরে করে নিতে হবে। মৃত্তিকা বাহিত রোগ জীবাণু থেকে রক্ষার জন্য মাটি শোধন করে নিতে হবে।

চারা লাগানো সাধারণত সেপ্টেম্বর—অক্টোবর মাসে চারা লাগানো হয়। জাতের উপর ভিত্তি করে চারা থেকে চারা ৪০—১০০ সে.মি. সারি থেকে সারি ৭০—১০০ সে.মি. দূরত্বে চারা লাগানো উচিত। সার প্রয়োগ ফুলের কাক্সিক্ষত আকার হওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিমাণে সার দেয়া প্রয়োজন। প্রতি শতকের গোবর সার ২০ কেজি, টিএসপি ১ কেজি, এমপি ৫০০ গ্রাম প্রয়োগ করা যেতে পারে। পটাশ ও ফসফরাস এবং অর্ধেক পরিমাণ ইউরিয়া ৩৫—৪০ দিন পর প্রয়োগ করতে হয়। তবে ইউরিয়া মাঝে মাঝে পাতায় স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

ডালিয়া ফুলের আন্তঃ পরিচর্যা :

পানি সেচ বা অতিরিক্ত পানি নিস্কাশনের জন্য নালা তৈরি করতে দিতে হবে। ডালিয়া কান্ড নরম এবং এর ফুল বড় বলে গাছ যেন হেলে না পড়ে বা বাতাসে ভেঙ্গে না যায় সেজন্য শক্ত করে খঁুটি বেঁধে দিতে হয়। তিন দিকে ৩টি খঁুটি ত্রিভুজের মতো পুতে দিলে গাছ সোজা হয়ে বেড়ে উঠে।

 

ডালিয়া ফুলের চাষে সেচ :

ডালিয়া গাছের জন্য পর্যাপ্ত পানি দিতে হবে। ফুল ফোটা পর্যন্ত নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। স্টপিং, থিনিং এন্ড টাইমিং চারার ডগা কেটে পাশ থেকে শাখা বের হয় তাকে স্টপিং বলে। স্টপিং এর মাধ্যমে একাধিক শাখা তৈরি করে অনেকগুলি ফুল পাওয়া যায়। প্রয়োজনীয় সংখ্যক শাখা রেখে বাকিগুলোকে কেটে ফেলাকে থিনিং বলে। টাইমিং হলো প্রয়োজনে বা প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে ফুল ফোটানোর সময় নিয়ন্ত্রণকে টাইমিং বলে। ডিসবাডিং প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে গাছের ফুল সীমিত বা বড় আকারের জন্য কেন্দ্রীয় বা কয়েকটি কঁুড়ি রেখে বাকি সব কঁুড়ি বাদ দেয়াকে ডিসবাডিং বলে।

 

ডালিয়া ফুলের রোগ ও পোকা মাকড় দমন :

রোগ দমন পাউডারি মিলডিউ রোগ হলে পাতায় সাদা পাউডারের মত দেখা যায়। উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া থাকলে দ্রুত বিস্তার লাভ করে। ০.১% বেভিস্টিল স্প্রে করলে এ রোগ দমন করা যায়। এছাড়া ও ঢলে পড়া, ড্যাম্পিং অফ, কান্ড পচা রোগ দেখা যায়। এসব ছত্রাক বাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য চারা লাগানোর পূর্বে মাটি শোধন করে নেয়া উচিত।

ডালিয়া গাছে জাবপোকা আক্রমণ করলে পাতা, কুড়ি ও ফুলের রস চুষে নিয়ে উৎপাদন হ্রাস করে। এর সাথে সাথে ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে। ম্যালাথিয়ন, বাসুডিন মাত্রা অনুযায়ী স্পে করতে হবে। মাকড় পাতার রস চুষে খেয়ে পাতা বাদামী রং হয় এবং পাতা শুকিয়ে যায়। এক্ষেত্রে মেটাসিস্টক্স বা কেলথেন স্প্রে করা যেতে পারে। ফুল সংগ্রহ খুব সকালে বা সন্ধ্যার দিকে ধারালো ছুরি দ্বারা ফুল সম্পূর্ণ ফোটার আগেই সংগ্রহ করতে হবে। সাথে সাথে অর্ধেক পানিতে ভরা পাত্রে ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে। গাছটি কেটে না ফেলে আরও কিছুদিন রাখলে আবার ডাল বের হয়ে ফুল আসবে।

 

ডালিয়া ফুলের কন্দমুল তোলা ও সংরক্ষণ :

ফুল ফোটা শেষ হলে গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করলে ১৫—২০ সে.মি. রেখে গাছটি কেটে দিতে হবে। এরপর কন্দ মুলগুলো উঠিয়ে নিয়ে ছায়ায় শুকিয়ে শুকানো বালির মধ্যে সংরক্ষণ করতে হবে। ডালিয়ার মুল ৪—৭ সে. তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করলে ভালো থাকে।

 

তুলা চাষ পদ্ধতি

তুলা চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি কৃষি শিক্ষা ১ ম পত্রের, ৭ নং ইউনিটের, ৭.৮ নম্বর পাঠ। বর্তমানে ৪টি অঞ্চলে তুলার চাষ হচ্ছে। এ অঞ্চলগুলো হলো-যশোর, রংপুর, ঢাকা ও চট্টগ্রাম। যশোর ও রংপুর অঞ্চলের অধীনস্থ যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর ও রাজশাহী এলাকায সবচেয়ে বেশি তুলাহয়।

তুলা চাষ পদ্ধতি

 

তুলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ আঁশ জাতীয় ফসল, বাংলাদেশে তুলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বস্ত্রখাতে ব্যবহৃত আঁশের ৭০—৭৫% আসে তুলা থেকে। বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পে বর্তামানে ৫৪ লাখ বেল তুলার প্রয়োজন যার মাত্র ৩% দেশে উৎপন্ন হয়। এ চাহিদা পুরণের জন্য বিদেশ থেকে তুলা আমদানি করতে হয়। তাই বাংলাদেশে তুলা উপযোগী অঞ্চলে আধুনিক পদ্ধতিতে তুলা চাষ করে তুলার চাহিদা পূরণের চেষ্টা করা প্রয়োজন।

 

চিত্র ৭.৮.১ : তুলা গাছের বাহ্যিক অঙ্গসংস্থান

 

মাটি ও জলবায়ু :

তুলা উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া পছন্দ করে। চারাগাছের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য ২৪—৩৩ সে. তাপমাত্রা উপযোগী তুলাগাছ অতিবৃষ্টি সহ্য করতে পারে না। বার্ষিক ১০০ সে.মি. বৃষ্টি তুলার জন্য উত্তম। সবধরনের মাটিতেই তুলাগাছ জন্মে। তবে বৃষ্টি পানি জমে থাকে না এমন উঁচু জমি ভাল, দেঁাআশ ও বেলে দেঁাআশ মাটি তুলা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। মাটির পিএইচ (এম) ৬—৭.৫ হলে ভাল হয়।

 

তুলার জমি তৈরি :

তুলা চাষের জন্য জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে কারণ তুলা গাছের মূল মাটির অনেক গভীরে প্রবেশ করে। সেজন্য জমি
৬—৮টি গভীর চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করে নিতে হবে যেন কোথায় পানি জমতে না পারে। বীজ বপনের সময় রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমেই বীজ বপন করা যায়। রবি মৌসুম : মধ্য শ্রাবণ—ভাদ্র মাস, খরিফ মৌসুম : জৈষ্ঠ্য—আষাঢ় মাস।

 

তুলার বীজের হার :

শতকরা ৮০ ভাগ বা তার অধিক অংকুরোদগম ক্ষমতা সম্পন্ন ৮—১০ কেজি/হেক্টর বীজ প্রয়োজন, বীজবাহিত রোগ দমনের জন্য ভিটাডেক্স—২০০/পেনকোজে দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। [২—৩ গ্রাম/কেজি বীজ] বীজ প্রক্রিয়াজাত করণ তুলাবীজ থেকে অতিরিক্ত তুলা (ফাজ) সরানোর কয়েকটি পদ্ধতি আছে।

১। ফাজ সরানোর শারীরিক পদ্ধতি :

শুকনো গোবর অথবা ছাই দিয়ে ঘষে বীজ থেকে আঁশগুলো সিয়ে ফেলা হয়।

২। ফাজ সরানোর যান্ত্রিক পদ্ধতি :

বিশেষ একধরণের যন্তের সাহায্যে তুলাবীজ থেকে আঁশ বিচ্ছিন্ন করা হয়—

৩। ফাজ সরানোর রাসায়নিক পদ্ধতি :

এই পদ্ধতিতে ঐঈষ, ঐ২ঝঙ৪ ব্যবহার করে তুলাবীজ আঁশ মুক্ত করা হয়। বীজ বপন পদ্ধতির তুলাবীজ সারিতে বপন করা হয়। সারি থেকে সারি দূরত্ব : ৯০—১০০ সে.মি. গাছ থেকে গাছ দূরত্ব : ৪৫—৫০ সে.মি. নির্দিষ্ট দূরত্বে গর্তে ১—২ সে.মি. গভীর ৩—৪টি বীজ বপন করা হয়।

 

তুলার জাত :

তুলার বিভিন্ন জাত উদ্ভাবিত হয়ে যেমন :

  • সিবি—১
  • সিবি—২
  • সিবি—৩
  • সিবি—৫
  • সিবি—৯
  • সিবি—১০
  • সিবি—১২
  • সিবি—১৩
  • সিবি—১৪
  • শুভ্র
  • হীরা হাইব্রিড
  • রূপালী—১
  • ডিএম—২, ৩
  • পাহাড়ি তুলা—১
  • পাহাড়ি তুলা—২

এই জাতগুলোর মধ্যে ৫টি জাতের কিছু বৈশিষ্ট্য নিচের সারণীতে দেওয়া হল।

 

তুলা গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি :

জমিতে শেষ চাষ দেয়ার পর এক—চতুর্থাংশ ইউরিয়া অর্ধেক এমপি সার এবং অন্যন্য সারসমূহ সম্পূর্ণ অংশই জমিতে প্রয়োগ করতে হবে; বাকী ইউরিয়া ও এমপি সার সমান তিনভাগে ভাগ করে তুলাগাছের বয়স ২০—২৫ দিন হলে প্রথম বার, ৪০—৫০ দিন হলে দ্বিতীয় বার এবং ৬০—৭০ দিন হলে তৃতীয় বার পাশ^র্ প্রয়োগ করতে হবে।

 

তুলা গাছের আন্তঃপরিচর্যা :

১। চারা পাতলাকরণ :

চারা গজানোর ২০ দিন পর একটি সুস্থ ও সবল চারা রেখে অবশিষ্ট চারাগুলো উঠিয়ে ফেলতে হবে।

২। আগাছা দমন :

প্রয়োজন অনুযায়ী ২—৩ বার আগাছা দমন করতে হবে। এসময় আগাছা দমনের সাথে সাথে গাছের গোড়া ও সারির মাঝের মাটির আলগা করে দিতে হবে।

৩। সেচ ও নিকাশ :

তুলা চাষের জন্য প্রায় ৭০—৯০ সেমি পানি প্রয়োজন। তাই মাটিতে রস না থাকলে সাথে সাথে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে জলাবদ্ধতা যেন সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। পানি যেন না
জমতে পারে সেজন্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখতে হবে।

 

তুলার পোকামাকড় ও বালাই ব্যবস্থাপনা:

তুলা ফসলে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়ে থাকে। নিচের তালিকায় কিছু অনিষ্টকারী পোকার নাম ও দমন ব্যবস্থা দেয়া হল।

তুলার রোগ :

প্রধান রোগ হলে অ্যানথ্রাকনোজ, ড্যাম্পিং অফ বা ঢলে পড়া রোগ ইত্যাদি। এসব রোগ দমনের জন্য ভিটাভেক্স ২০০, কিউপ্রভিট/ ডাইমেন এম ৪৫, টিল্ট ইত্যাদি ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।

তুলা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ:

তুলা সংগ্রহ:

অধিক ফলন ও ভালমানের আঁশ পেতে হলে তুলা সংগ্রহের সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

তুলা সংগ্রহের সময় রৌদ্র উজ¦ল দিন তুলা সংগ্রহ করতে হয়। সাধারণত রবি মৌসুমে তুলা কাত্বির্ক—অগ্রাহায়ণ মাসে এবং খরিফ মৌসুমের তুলা ফাল্গুন—চৈত্র মাসে সংগ্রহ করা হয়।

১। শুধুমাত্র পরিপক্ক বল থেকে তুলা সংগ্রহ করতে হবে বল ফেটে তুলা বের হলেই বল পরিপক্ক হয়েছে বুঝতে হবে। বল ফেটে তুলা বের হলেই বল পরিপক্ক হয়েছে বুঝতে হবে।

২। সাধারণ বীজ বপনের ৫—৬ মাস পর তুলা সংগ্রহ করা যায়। ফুল ফোটার ৫০—১০০ দিনের মধ্যে বল পরিপক্ক হয়।

৩। বল পরিপক্ক হলে দেরি না করে সংগ্রহ করে ফেলতে হবে তা না হলে তুলায় ময়লা লেগে তুলা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

৪। তিনবার তুলা সংগ্রহ করতে হয়। যখন ৩০—৪০% বল ফেটে যায় তখনই প্রথমবারের মত তুলা সংগ্রহ করতে হবে। এরপর ১৫—২০ দিন পর পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তিতে বাকী সব তুলা সংগ্রহ করতে হবে।

৫। বল সংগ্রহের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন ধূলাবালি, ময়লা বা শুকনা পাতা বলের সাথে লেগে না থাকে।

৬। রোগ বলা দ্বারা আক্রান্ত বল এবং ভাল তুলা আলাদা ভাবে উঠাতে হবে। তুলা ৩—৪ বার রোদে শুকিয়ে গুদাম জাত করতে হবে।

৭। খারাপ ও নষ্ট বীজতুলা আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

৮। তবে ফাটা বল প্রায় এক সপ্তাহ গাছে রেখে শুকাতে পারলে অঁশ এর গুণগতমান আরও উন্নত হয়।

 

তুলার জিনিং ও গাট বাধা :

তুলার বল থেকে যে তুলা পাওয়া যয় তাকে বীজতুলা বলে। এখানে বীজ ও তুলা একসাথে থাকে। জিনিং শব্দের অর্থ হলো বীজ তুলা থেকে বীজ আলাদা করা। জিনিং করার পর যে তুলা পাওয়া যায় (বাণিজ্যিক তুলা) তাকে লিন্ট (খরহঃ) বলে। সাধারণত মেশিনের মাধ্যমে জিনিং করা হয়।

মেশিনগুলো হল রোলার জিনিং করা হয়। মেশিনগুলো হল জিন এবং ‘স’ জিন। বীজতুলা থেকে আঁশ হাড়িয়ে নেয়ার পরও বীজের গায়ে যে ছোট ছোট আঁশ লেগে থাকে তাকে ফাজ বলা হয়। জিনিং এর পর যে বীজ পাওয়া যায় তাকে তুল বীজ বলে। শুষ্ক তুলার ৮% বা তার কম আর্দ্রতা থাকে। জিনিং করার পর প্রাপ্ত তুলাকে বেল প্রেসের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে বেল বা গাঠ বাঁধা হয়।

 

তুলাপ্রক্রিয়াজাতকরণে জিনিং আউট টার্ণ এবং কাউন্ট সংখ্যা জিনিং আউট টার্ণ :

জিনিং আউনট টার্ণ বলতে কোন তুলার জাতের বীজতুলার আঁশ ও বীজের অনুপাতকে বোঝায়, অন্যভাবে বলা যায়। বীজতুলায় শতকরা কতভাগ আঁশ বের করা যায় তাকেই জিনিং আউট টার্ণ বলে। বা জিওটি (এঙঞ)। একটি তুলারজাতের এঙঞ ৩৫% এর অর্থ হল ঐ জাতের ১০০০ কেজি বীজতুলা জিনিং করলে ৩৫ কেজি আঁশ বা লিণ্ট পাওয়া যায়।

তুলার কাউন্ট সংখ্যা :

১ পাউন্ড তুলার নমুনা থেকে তৈরি করা ৮৪০ গজ ( বা ৭৬৮ মিটার) দৈর্ঘে্যর সুতা দিয়ে যে কয়টি মোড়া  তৈরি করা যায় তার সংখ্যাকে ঐ তুলার কাউন্ট সংখ্যা বলা হয়। বাজারে একে ৪০, ৬০, ৮০, ১০০ এবং ২০০ পর্যন্ত কাউন্টের সুতা হিসাবে অভিহীত করা হয়। তুলার কাউন্ট সংখ্যা যত বেশি হবে তার থেকে তৈরি কাপড় তত বেশি মসৃণ, সিল্কের মত ও দামী হবে। মসলিন কাপড়ের সুতা এত মসৃন ও সুষ্ট ছিল যে মাত্র ৫০০ গ্রাম তুলা থেকে প্রায় ৪০০ মিটার দীর্ঘ সুতা তৈরি করা যেত।

তুলা বীজ সংরক্ষণ : তুলা গাছের মাঝের ও নিচের দিকের পরিপক্ক বল থেকে যে তুলাবীজ সংগ্রহ করা হয় তার গুণগত মান সবচেয়ে ভাল, বীজ থেকে আঁশ হাড়িয়ে নেওয়ার পর ২—৩ দিন এই বীজ ভালভাবে রোদে শুকাতে হবে যখন বীজের আর্দ্রতা ৭—৮% হবে তখন শুকানো বীজগুলোর ছায়ায় ঠান্ড করে বায়ুরোধক কোন পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। তুলার ব্যবহার তুলা একটি অতি প্রয়োজনীয় আঁশ জাতীয় ফসল। নীচে এর কিছু ব্যবহার উল্লেখ করা হল।

১। তুলা সুতা ও বস্ত্র তৈরির ব্যবহৃত হয়

২। তুলা বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়।

৩। তুলা বীজের তল লুব্রিকেন্ট, সাবানও পেইন্ট শিল্পে ব্যবহাত হয়।

৪। তুলা বীজের তেল ভোজ্য তেল হিসাবেও ব্যহৃত হয়।

৫। বীজ থেকে তেল বের করার পর যে খৈল পাওয়া যায় তা পশুখাদ্য ও জৈবসার হিসাবে ব্যবহার করা যায়।

৬। শুকনা গাছ জ¦ালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়

৭। তুলা দিয়ে লেপ, বালিশ, তোষক তৈরি করা হয়।

 

তুলার ক্ষতিকর পোকা ও তার দমন ব্যবস্থাপনা:

১। তুলার জ্যাসিড পোকা :

ক্ষতির লক্ষণ : চারা গজানোর ২—৩ সপ্তাহ পর থেকেই এদের আক্রমণ শুরু হয়। নিম্ফ ও পূর্ণবয়ষ্ক উভয় পোকাই পাতার রস শোষণ করে যায় এবং ফলে পাতা হলদে এবং পরে লালচে হয়ে যায়।

তুলার জ্যাসিড পোকার প্রতিকার :

সাকসেস ১.৫ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত জমিতে স্প্রে করতে হবে।

 

২। তুলার জাব পোকা:

ক্ষতির লক্ষণ : নিম্ফ ও পূর্ণবয়ষ্ক উভয় পোকাই গাছের কান্ড ও পাতা থেকে রস চুষে খায়। ফলে পাতা কঁুকড়ে যায় এবং ডগায় আক্রমণ করলে বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।

তুলার জাব পোকা দমন ব্যবস্থা:

ক) বীজ বপনের পূর্বে প্রতি কেজি বীজ ২ গ্রাম ভিটাভেক্স ২০০ দিয়ে শোধন করে নিতে হবে।

খ) জমিতে পানি যেন না জমে সেজন্য জমি সুনিষ্কাশিত হতে হবে।

গ) আক্রান্ত জমিতে কুপ্রাভিট, ডায়থেন এম ৪৫ ইত্যাদি ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

ক) পোকা প্রতিরোধী জাত চাষ করতে হবে।

খ) ভোর বেলা জমিতে ছাই ছিটিয়ে পোকা দমন করা যায়।

 

৩। তুলার বোল ওয়ার্ম:

লক্ষণ : ৫—৬ সপ্তাহ বয়সী তুলাগাছের এই পোকার লার্ভা গাছের ডগা, কুড়ি, ফুল বা বোলছিদ্র করে দেয়। এতে গাছের ডগা ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে যায়। ফুল, কুড়ি বা কচি বোল মাটিতে ঝরে পড়ে ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়।

বেল ওয়ার্ম দমন ব্যবস্থা:

ক) জমি গভীর চাষ দিয়ে রোদে শুকাতে হবে। এতে পোকা, লার্ভা বা শুককীট মরে যায় ও পাখিতে খেয়ে ফেলে

খ) জমির আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে হবে

গ) ঝরে পড়া কুড়ি, ফুল ও বোল সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

ঘ) আলোর ফাঁদ দিয়ে বোল ওয়ার্ম পোকার মথ ধরতে হবে।

 

৪। তুলার সাদা মাছি

ক্ষতির ধরণ : সাদা মাছি পাতার রস শোষণ করে, এরা পাতার উপর এক ধরনর মধুকণা নি:সরণ করে, ফলে সেখানে সুটি মোল্ড ছত্রাক জন্মায়। এর আঠালো পদার্থ তুলার লিন্টের সাথে লেগে লিন্টের গুণগত মান নষ্ট হয়।

তুলার সাদা মাছির প্রতিকার :

ক্লোরোপাইরিফস ২০ তরল ২ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

 

৫। তুলার চারা গাছের রোগ রোগের লক্ষণ :

ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়। গজানোর পূর্বেই বীজ পঁচে যায়। অংকুরিত চারার ভূমি সংলগ্ন স্থানে পচে যায় গাছের শিকড় পচে যায় এবং অবশেষে চারার গাছ মারা যায়।

তুলার চারা গাছের রোগ দমন ব্যবস্থা:

ক) ডিমের গাদা ও লার্ভা/ক্রীড়া সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে

খ) পাখি যেন পোকা খেতে পারে তাই জমির পাশে ডাল পঁুতে দিতে হবে।

গ) কার্বোসালফান ২০ তরল ২ মি.লি. ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

 

৬। তুলার এ্যানথ্রাকনোজ রোগ:

লক্ষণ : ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। চারাগাছের বীজপত্র ও পাতায় ছোট ছোট লালচে দাগ পড়ে। বয়ষ্ক গাছের কান্ডে লম্বা বাদামি দাগ পড়ে ও বাকল ফেটে যায়। কচি বোলের উপর পানি ভেজা লালচে কিনারাযুক্ত বসে যাওয়া দাগ দেখা যায়।

তুলার এ্যানথ্রাকনোজ রোগ দমন ব্যবস্থা:

ক) আক্রান্ত গাছ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে

খ) ভিটাভেক্স দিয়ে বীজ শোধন করে বপন করতে হবে।

গ) বোল গঠনের পর ১% বোর্দোমিক্সার ১—২ বার প্রয়োগ করতে হবে।

৭। তুলার ফিউজেরিয়াম উইল্ট বা ঢলে পড়া রোগ:

লক্ষণ : চারাগাছের পাতা প্রথমে হলুদ ও পরে বাদামি হয়ে যায় এবং চারা গাছ দ্রুত ঢলে পড়ে ও মারা যায়। আক্রান্ত অংশ কাটলে ভিতরে কালো রিং দেখতে পাওয়া যায়।

তুলার ফিউজেরিয়াম উইল্ট বা ঢলে পড়া রোগ দমণ ব্যবস্থা:

ক) বপনের পূর্বে বীজ শোধন করে নিতে হয়ে

খ) কু প্রাভিট—৫০, ডাইমন এম ৪৫, কপার অক্সিক্লোরাইড প্রয়োগ করতে হবে।

 

৮। তুলার পাতায় দাগ পড়া রোগ:

লক্ষণ ছত্রাকের দ্বারা এ রোগ হয়। পাতায় গোলাকার দাগ দেখা যা এবং আক্রান্ত স্থান খসে পড়ে।

তুলার পাতায় দাগ পড়া রোগ দমন ব্যবস্থা :

ক) আক্রান্ত পাতা ছিেঁ ড় পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

খ) রোগমুক্ত বীজ বপন করতে হবে অথবা বপনের পূর্বে বীজ শোধন করে নিতে হবে।

 

৯। তুলার ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট :

ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এই রোগ হয়।

লক্ষণ :

প্রথম লক্ষণ দেখা যায় চারা গাছের বীজপত্রে। বীজপতের্র নিজের দিকে গোল গোল পানি ভেজা দাগ যায় এবং বীজপত্র ঝরে পড়ে। বয়স্ক গাছের পাতায়ও পানিভেজা দাগ দেখা যায়। বোল আক্রান্ত হলে তাতেও কালো বা বাদামী পানি ভেজা দাগ সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত বোল ঝরে পড়ে।

তুলার ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট দমন ব্যবস্থা :

ক) ফসল কাটার পর বাকী অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

খ) সালফিউরিক এসিড দিয়ে বীজ ডিলিলেড করতে হবে।

 

১০। বোল পঁচা রোগ :

লক্ষণ :

বিভিন্ন ছত্রাক এ পোকার জন্য দায়ী এ রোগ তুলার রোল আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত বোল পুড়িয়ে কালো হয়ে যায় এবং রোল ফাটতে পারে না। কোন কোন ক্ষেত্রে বোল ফাটলেও তুলা কালো হয়ে যায়।

বোল পঁচা রোগ প্রতিকার :

ক) বপনের পূর্বে বীজ শোধন করে নিতে হবে।

খ) আক্রান্ত জমিতে ২.৫ গ্রাম ডায়থেন এম ৪৫ ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।

 

সূত্র:

  • তুলা চাষ পদ্ধতি , পাঠ- ৭.৮ , ইউনিট – ৭

ঘরের ভিতরে মাশরুম চাষ

ঘরের ভিতরে মাশরুম চাষ নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি শিক্ষা ১ম পত্র ১৮৮৯” বিষয়ের ৫ নং ইউনিটের ৫.৮ নং পাঠ। মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু একটি সবজি। একটি ছত্রাক জাতীয় একটি উদ্ভিদ। এর ভেষজ গুণ রয়েছে। চাষ করার জন্য মাঠে কোনো জমির প্রয়োজন পড়ে না। ঘরের মধ্যেই ৭—১০ দিনে জন্মানো যায়। ঘরের মধ্যেই তাকে তাকে সাজিয়ে জন্মানো যায় বলে একটি ঘরকে কয়েকটি ঘরের সমান ব্যবহার করা যায়। মাশরুমের বীজকে স্পন বলা হয়।

ঘরের ভিতরে মাশরুম চাষ

 

ঘরের ভিতরে মাশরুম চাষে প্রয়োজনীয় উপকরণ :

১। মাশরুম বীজের প্যাকেট

২। কাঠ বা বাঁশের তৈরি তাক

৩। ে¯প্রয়ার

৪। প্লাষ্টিকের গামলা বা বালতি

৫। চট

৬। চোষ কাগজ

৭। ব্লেড বা চাকু

৮। ছিদ্রযুক্ত লম্বা পলিথিন শীট

৯। খবরের কাগজ বা পাতলা সুতি কাপড়

১০। থার্মোমিটার

১১। হাইগ্রোমিটার ইত্যাদি।

ঘরের ভিতরে মাশরুম চাষে কাজের ধাপ :

১। বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান থেকে মাশরুম বীজের প্যাকেট সংগ্রহ করুন।

২। প্রতিটি প্যাকেটের দুই পাশের কাঁধ বরাবর অর্ধ—চন্দ্রাকৃতির বা উল্টো উ আকারে কেটে নিন।

৩। গামলা বা বলতিতে পানি নিয়ে কাটা প্যাকেটগুলো উপুড় করে চুবানোর পর ভালোভাবে পানি ঝরিয়ে নিন।

৪। প্যাকেটগুলো ঘরের মেঝে বা তাকে ২ ইঞ্চি পর পর সারি করে সাজিয়ে নিন।

৫। পাকেটগুলোর পার্শ্বের আর্দ্রতা ৭০—৮০% রাখার জন্য শীতে ও বর্ষার দিনে ২/৩ বার এবং গরমের সময় দিনে ৪/৫ বার পানি ে¯প্র কর এবং প্রয়োজনে চোষ কাগজ পানিতে ভিজিয়ে প্যাকেটগুলোর পার্শ্বে স্থাপন করুন।

৬। ঘরের তাপমাত্রা ২০—৩০০ সে. এর বেশি হলে প্যাকেটের একটু উপরে পাতলা সুতি কাপড় বা খবরের কাগজ বিছিয়ে দিন।

৭। ঘরের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনে প্যাকেটগুলোর উপর সামান্য উঁচু করে ছিদ্রযুক্ত লম্বা পলিথিন শীট বেঁধে দিন।

৮। মাশরুম বীজের প্যাকেট তাকে বসানোর ২—৩ দিনের মধ্যে পিনের মতো মাশরুম অঙ্কুর বের হবে। একসাথে অনেক
অঙ্কুর বের হলে নিচের ছোটগুলো কেটে ফেল এবং ৮—১২ টি ফ্রুটিং বডি রেখে দিন।

৯। অঙ্কুরগুলো যাতে কোনোভাবে ভেঙ্গে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

১০। অঙ্কুর বের হবার ৫—৭ দিনের মধ্যেই মাশরুম তোলা বা সংগ্রহ করার উপযোগী হবে।

১১। মাঝে মাঝে চাষ ঘরের চট বেড়া ও মেঝে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিন।

১২। চাষ ঘরের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা সঠিক আছে কিনা তা দেখার জন্য মাঝে মাঝে থার্মোমিটার দ্বারা তাপমাত্রা ও হাইগ্রোমিটার দ্বারা আর্দ্রতা মেপে নিন।

 

 

ঘরের ভিতরে মাশরুম চাষে সতর্কতা :

১। মাশরুম অত্যন্ত স্পর্শকাতর সবজি হওয়ায় চাষ ঘর ও এর আশে পাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যাবশ্যক।

২। প্রয়োজনে ে¯প্রয়ারের মাধ্যমে চাষ ঘরের চট বেড়া ও মেঝে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে।

৩। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনে চোষ কাগজ ভিজিয়ে প্যাকেটের পার্শ্বে রাখতে হবে অথবা সুতি কাপড় বা খবরের কাগজ দিয়ে প্যাকেট ঢেকে দিতে হবে।

৪। অঙ্কুর বের হবার সময় এমনভাবে পানি ে¯প্র কর যাতে পানির ফেঁাটার আঘাতে মাশরুম অঙ্কুর ভেঙ্গে না যায়।

৫। কাঁটা অঙ্কুরগুলোর স্থান এমনভাবে চেছে দিতে হবে যাতে প্যাকেটের গায়ে কোনো গর্ত তৈরি না হয়।

৬। মাশরুম ভালোভাবে সংরক্ষনের স্বার্থে তোলার ১২ ঘন্টা আগ পর্যন্ত এর গায়ে পানি ে¯প্র করা যাবে না।

 

গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন

আজকের আলোচনার বিষয় গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন। কৃত্রিম প্রজনন ব্যাখ্যা করার আগে প্রথমে বুঝতে হবে প্রজনন কী? প্রজনন হলো জীবের একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে জীব তার বংশ রক্ষা করে এবং একই বৈশিষ্ট্যের নতুন জীবন সৃষ্টি হয়। প্রজনন প্রধানত দুই ধরনের হয়—
১. প্রাকৃতিক উপায়ে প্রজনন
২. কৃত্রিম উপায়ে প্রজনন।

এই পাঠে আমরা কৃত্রিম প্রজননের গুরুত্ব, প্রক্রিয়া ও উপকারিতা বিস্তারিতভাবে জানব।

গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন

ডাকে আসা বা গরম হওয়া বকনা বা গাভীকে সরাসরি ষাঁড় দ্বারা পাল দেওয়াকে প্রাকৃতিক প্রজনন বলা হয়। প্রাকৃতিক প্রজনন মাঠে বা ঘাটে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে থাকে, আবার গাভীর মালিক নিজেও ষাঁড়ের কাছে নিয়ে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন। তবে, প্রাকৃতিক প্রজননের মাধ্যমে গরুর জাত উন্নত করা সম্ভব নয়।

দেশীয় বা অনুন্নত গরুকে উন্নত করতে হলে উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীর্য ব্যবহার করে কৃত্রিম প্রজনন করতে হয়। কৃত্রিম প্রজননে উন্নত ষাঁড় থেকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে বীর্য সংগ্রহ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তা ডাকে আসা বকনা বা গাভীতে প্রয়োগ করে গর্ভধারণ করানো হয়। এর ফলে বাচ্চার মধ্যে উন্নত জাতের বৈশিষ্ট্য আসে।

বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন বেসরকারি ও সমবায় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে দেশীয় গাভী বা বকনাকে উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীর্য দিয়ে প্রজনন করানো হয়। এজন্য উন্নত ও মানসম্মত ষাঁড়ের নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি।

ষাঁড়ের যে সমস্ত গুণাবলি থাকা দরকার তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহারের জন্য ষাঁড়ের অবশ্যই কিছু নির্দিষ্ট গুণাবলি থাকা আবশ্যক। ভাল মানের ষাঁড় থেকে উন্নত জাতের বাচ্চা পাওয়ার জন্য নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো পূরণ করা জরুরি:

১. শারীরিক স্বাস্থ্য ও শক্তিশালী: ষাঁড়কে অবশ্যই সুস্থ, সবল ও সতেজ থাকতে হবে। রোগমুক্ত এবং শরীর স্বাভাবিক কর্মক্ষমতাসম্পন্ন হতে হবে।

২. রোগমুক্ত ও বংশগত সমস্যা মুক্ত: ষাঁড়কে সকল প্রকার রোগ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। বংশগত বা জেনেটিক কোনো রোগ থাকলে তা গ্রহণযোগ্য নয়।

৩. মাতার গুণগত মান: ষাঁড়ের মাতাকে অবশ্যই উন্নত জাতের এবং অধিক দুধ বা মাংস উৎপাদনক্ষম হতে হবে, যাতে গুণগত মান নিশ্চিত করা যায়।

৪. উর্বর শুক্রাণু: ষাঁড়ের শুক্রাণু অবশ্যই সম্পূর্ণরূপে উর্বর এবং প্রজনন ক্ষমতাসম্পন্ন হতে হবে।

৫. উপযুক্ত বয়স: ষাঁড়ের বয়স কমপক্ষে ২ থেকে ৩ বছর হতে হবে। তবে জাতভেদে বয়সের সীমা কিছুটা কমবেশি হতে পারে।

৬. আকর্ষণীয় গায়ের রঙ: ষাঁড়ের দেহ বা গায়ের রঙ পরিষ্কার ও আকর্ষণীয় হওয়া উচিত, কারণ কৃত্রিম প্রজননে উৎপাদিত বাচ্চার গায়ের রঙ ষাঁড়ের মতো হয়।

৭. স্বাস্থ্যগত মধ্যম মান: ষাঁড়ের স্বাস্থ্য যদি মধ্যম মানের হয়, তা অধিকতর সুবিধাজনক।

৮. পরজীবী মুক্ত: ষাঁড়ের শরীরে কোনো পরজীবী থাকা যাবে না।

৯. শান্ত মেজাজ: ষাঁড়ের স্বভাব শান্ত ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য হওয়া আবশ্যক, যাতে প্রজনন প্রক্রিয়া সহজ হয়।

ষাঁড়ের যত্ন ও ব্যবস্থাপনা

কৃত্রিম প্রজননের পূর্বে ষাঁড়কে সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য ও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি সরবরাহ করতে হবে। ষাঁড়কে কোনো প্রকার ভয়-ভীতি দেখানো যাবে না এবং তাকে ভারী বা কঠোর কাজে ব্যবহার করা উচিত নয়। নিয়মিত গোসল করানো এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও আরামদায়ক পরিবেশে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অতিরিক্ত, ষাঁড়ের প্রজনন যোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত পশুচিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করানো আবশ্যক। এভাবে ষাঁড়ের স্বাস্থ্য ও প্রজনন ক্ষমতা নিয়মিত যাচাই করলে কৃত্রিম প্রজননের সফলতা বৃদ্ধি পায়।

কৃত্রিম প্রজননের ধাপসমূহ:

গরুর কৃত্রিম প্রজননের জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয় :

১। বীর্য সংগ্রহ :

গরুর কৃত্রিম প্রজননে সফলতার জন্য নির্দিষ্ট ধাপগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। প্রধান ধাপসমূহ হলো:

(ক) প্রাকৃতিক প্রজনন পদ্ধতি:
গরুর প্রাকৃতিক প্রজননের পর বকনা বা গাভীর যোনিপথ থেকে সরাসরি বীর্য সংগ্রহ করা যায়।

(খ) মলদ্বার উত্তেজনা পদ্ধতি:
ষাঁড়ের মলদ্বার নাড়ানো হলে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, যা বীর্যপাত ঘটায়। এই সময় বীর্য সংগ্রহ করা হয়।

(গ) বৈদ্যুতিক উত্তেজনা পদ্ধতি:
বিশেষ বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করে ষাঁড়কে উত্তেজিত করলে বীর্যপাত ঘটে, যাকে সংগ্রহ করা যায়।

(ঘ) কৃত্রিম যোনি পদ্ধতি (Artificial Vagina):
বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও কার্যকর পদ্ধতি হলো কৃত্রিম যোনি পদ্ধতি। এটি অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় সহজ ও কম খরচে সম্পাদনীয়।

  • এই পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট মাপের শক্ত রাবারের নলের মধ্যে পাতলা রাবারের আরেকটি নল ঢোকানো হয়। নল দুটির সংযোগ এমনভাবে করা হয় যাতে মাঝখানে পানি ঢেলে তা বের হতে না পারে।

  • একপ্রান্তে রাবারের পাতলা টিউব এবং অপরপ্রান্তে কাঁচের টিউব সংযুক্ত করা হয়।

  • মাঝের জায়গায় গরম পানি দিয়ে কৃত্রিম যোনির তাপমাত্রা গাভীর যোনির তাপমাত্রার সমপর্যায়ে রাখা হয়।

  • একটি বিশেষ খোয়াড় বা ট্রাভিসে (যাকে ‘ডামি’ বলা হয়) একটি কাঁঠের ষাঁড় দাঁড় করানো হয়। ষাঁড় উত্তেজিত হয়ে গাভীর উপর উঠলে তার লিঙ্গ বের হয় এবং সেটি কৃত্রিম যোনির ভিতরে প্রবেশ করানো হয়।

  • উত্তেজিত ষাঁড় বীর্যপাত করে, যা রাবারের নলের মাধ্যমে কাঁচের টিউবে জমা হয়।

  • সংগ্রহকৃত বীর্য দ্রুত রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা হয়।

এই ধাপগুলি সঠিকভাবে পালন করলে উন্নত জাতের ষাঁড় থেকে উচ্চমানের বীর্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়, যা কৃত্রিম প্রজননের সফলতার মূল ভিত্তি।

২। বীর্য পরীক্ষা :

ষাঁড়ের বীর্যের গুণাগুণ ও মান নির্ধারণের জন্য প্রধানত পাঁচটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, যা নিম্নরূপ:

(ক) বীর্যের আয়তন মাপা:
সংগৃহীত বীর্য মাপার জন্য আয়তন মাপক নলের সাহায্য নেওয়া হয়। একটি সুস্থ ষাঁড় থেকে প্রতিবার গড়ে ৫ থেকে ৮ সিসি বীর্য প্রাপ্তি হলে সেটিকে উপযুক্ত পরিমাণ ধরা হয়।

(খ) বীর্যের রঙ নিরীক্ষণ:
ভালো মানের বীর্যের রঙ সাধারণত ক্রিমের মতো ধূসর বা হালকা সাদাটে হয়। যদি বীর্যের রঙ হলুদ, লালচে, রক্তমিশ্রিত, পুঁজ-আবদ্ধ অথবা প্রস্রাবের মতো মিশ্রিত থাকে, তবে সে বীর্য ব্যবহারের জন্য অযোগ্য বলে গণ্য হয়।

(গ) বীর্যের ঘনত্ব পরিমাপ:
সুস্থ ও শক্তিশালী ষাঁড়ের বীর্যের ঘনত্ব সাধারণত ক্রিমের মতো মজবুত হয়। কিন্তু অসুস্থ বা দুর্বল ষাঁড়ের বীর্য পানির মতো পাতলা হয়ে থাকে, যা ব্যবহারযোগ্য নয়।

(ঘ) অনুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা:
বীর্য সংগ্রহের সঙ্গে সঙ্গেই একটি ফোঁটা বীর্য স্লাইডে নিয়ে অনুবীক্ষণ যন্ত্রে শুক্রাণুর নড়াচড়ার গতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই গতি ০ থেকে ৫ গ্রেডে ভাগ করা হয়। যেখানে গ্রেড ০ অর্থ শুক্রাণু একদমই নড়াচড়া করছে না, যা ব্যবহারের অনুপযোগী। গ্রেড যত বাড়বে, বীর্যের গুণমান তত ভালো হবে।

(ঙ) বীর্যের রাসায়নিক পরীক্ষা:
সংগৃহীত বীর্যের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে কয়েক ফোঁটা মিথাইল ব্লু মিশিয়ে ১১-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় টেস্ট টিউবে পানির সাথে মিশ্রিত করা হয়। যদি টেস্ট টিউবের নীল রঙ ৩ থেকে ৬ মিনিটের মধ্যে হারিয়ে যায়, তবে বীর্য ভালো মানের বলে ধরা হয়। নীল রঙ দীর্ঘস্থায়ী হলে বীর্য ব্যবহারের উপযোগী নয়।

উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে ষাঁড়ের বীর্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়, যা সফল কৃত্রিম প্রজননের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

 

৩। বীর্য তরলীকরণ :

কৃত্রিম প্রজননের ক্ষেত্রে বীর্য তরলীকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, একটি মাত্র উর্বর শুক্রাণুই বকনা বা গাভীর গর্ভধারণের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বীর্যে লক্ষ লক্ষ শুক্রাণু থাকে এবং তা অত্যন্ত ঘন রূপে থাকে। এই ঘন বীর্য সরাসরি কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহার করলে অতিরিক্ত শুক্রাণু অপচয় হয় এবং স্বল্পসংখ্যক প্রাণীর প্রজননেই তা শেষ হয়ে যায়।

এই কারণে কৃত্রিম প্রজননে ঘন বীর্যকে একটি বিশেষ দ্রবণের সাহায্যে পাতলা বা তরল করে নেওয়া হয়, যাতে করে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বীর্য দিয়ে একাধিক বকনা বা গাভীকে প্রজনন করানো সম্ভব হয়। এই পদ্ধতিকে বীর্য তরলীকরণ (Semen Dilution) বলা হয়।

তরলীকরণে ব্যবহৃত দ্রবণ: কুসুম-সাইট্রেট দ্রবণ

কুসুম-সাইট্রেট দ্রবণ বীর্য তরলীকরণের জন্য সবচেয়ে প্রচলিত ও কার্যকর মাধ্যম। এটি বীর্যকে শুধু তরল করে না, বরং শুক্রাণুকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিও সরবরাহ করে, যার ফলে বীর্যের কার্যকারিতা বজায় থাকে।

প্রস্তুত প্রণালি:

১. প্রথমে ২–৯ গ্রাম সোডিয়াম সাইট্রেট (Sodium Citrate) ও ১০০ মিলিলিটার পাতিত পানি একসঙ্গে মিশিয়ে সাইট্রেট সলিউশন তৈরি করা হয়।

২. পরে ২ ভাগ সাইট্রেট সলিউশনের সঙ্গে ১ ভাগ ডিমের কুসুম মিশিয়ে কুসুম-সাইট্রেট দ্রবণ প্রস্তুত করা হয়।

৩. এই দ্রবণের সঙ্গে সংগৃহীত বীর্য নির্ধারিত অনুপাতে মিশিয়ে যথাযথভাবে তরলীকরণ করা হয়।

এই ডাইলুয়েন্ট বা তরলকারক দ্রব্য শুক্রাণুর জন্য একটি আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে, তাদের সক্রিয়তা বজায় রাখে এবং জীবাণুমুক্ত রাখতেও সাহায্য করে। ফলে কৃত্রিম প্রজননের সাফল্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ করলে কম পরিমাণ বীর্য থেকে অনেক বেশি সংখ্যক প্রাণীকে সফলভাবে গর্ভবতী করা সম্ভব, যা পশুসম্পদ উন্নয়নে অত্যন্ত সহায়ক।

 

৪। বীর্য সংরক্ষণ :

কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়ায় ষাঁড়ের কাছ থেকে সংগৃহীত বীর্যকে তরলীকরণের মাধ্যমে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা হয়, যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে গাভী বা বকনাকে প্রজনন করানো যায়। বীর্য সংরক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো—বীর্যের গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রাখা এবং দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারের জন্য তা সহজলভ্য করে তোলা।

বীর্য সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়:

(ক) স্বল্পমেয়াদে রেফ্রিজারেটর বা বরফযুক্ত থার্মোফ্লাক্সে বীর্য সংরক্ষণ

এই পদ্ধতিতে তরলীকৃত বীর্যকে টেস্টটিউব বা ভায়ালে ভরে ৩–৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেফ্রিজারেটরে রাখা হয়। এভাবে সংরক্ষিত বীর্যকে ২–৩ দিন পর্যন্ত কার্যকর রাখা যায়। তবে দূরবর্তী স্থানে বীর্য পরিবহনের সময় রেফ্রিজারেটরের বাইরের তাপমাত্রার প্রভাবে বীর্য দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ সমস্যা এড়াতে বরফযুক্ত থার্মোফ্লাক্স ব্যবহার করা হয়। এতে ঠান্ডা পরিবেশ বজায় রাখার ফলে বীর্য ৩ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে। এইভাবে সংরক্ষিত বীর্যকে তরল বীর্য (Liquid Semen) বলা হয়।

(খ) দীর্ঘমেয়াদে তরল নাইট্রোজেন ভর্তি সিমেন ক্যান-এ বীর্য সংরক্ষণ

এটি হলো আধুনিক ও কার্যকর বীর্য সংরক্ষণ পদ্ধতি, যা হিমায়িত বীর্য (Frozen Semen) নামে পরিচিত। এই পদ্ধতিতে তরলীকৃত বীর্যকে বিশেষভাবে তৈরি ছোট নল বা স্ট্র-তে ভরে তরল নাইট্রোজেন ভর্তি সিমেন ক্যানের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ডুবিয়ে রাখা হয়। প্রতিটি স্ট্র-তে সাধারণত ২০–৩০ মিলিয়ন উর্বর শুক্রাণু থাকে।

তরল নাইট্রোজেনের তাপমাত্রা প্রায় –196° সেলসিয়াস, যেখানে বীর্য ২০–২৫ বছর পর্যন্ত কার্যক্ষমভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব। তবে বীর্যের কার্যক্ষমতা রক্ষার জন্য সিমেন ক্যানের ভেতরে স্ট্রগুলো সার্বক্ষণিক তরল নাইট্রোজেনের মধ্যে ডুবে থাকতে হয়। এজন্য ক্যানের নাইট্রোজেন স্তর সবসময় ১০ সেমি বা তার বেশি রাখতে হয়।

একটি ২ লিটার ধারণক্ষমতার সিমেন ক্যান সাধারণত প্রতি ৪–৫ দিন পরপর তরল নাইট্রোজেন দিয়ে পূরণ করতে হয়, যাতে তাপমাত্রা স্থিতিশীল থাকে এবং বীর্যের কার্যক্ষমতা বজায় থাকে।

এইভাবে সঠিকভাবে বীর্য সংরক্ষণ করলে উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীর্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছানো যায় এবং কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গাভী বা বকনার জাত উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

 

৫। বকনা বা গাভীতে বীর্য প্রয়োগ পদ্ধতি :

কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বকনা বা গাভীকে গর্ভবতী করার জন্য প্রধানত দুই ধরনের বীর্য প্রয়োগ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়:

(ক) তরল বীর্য প্রয়োগ পদ্ধতি

এই পদ্ধতিতে তরল বীর্য সংরক্ষণ করা হয় রেফ্রিজারেটর বা থার্মোফ্লাস্কে। প্রয়োগের ধাপগুলো নিম্নরূপ:

১। বীর্য সংগ্রহ: ১ মিলিলিটার তরল বীর্য নিডলের মাধ্যমে সিরিঞ্জে নেওয়া হয়।

২। এ.আই. টিউব প্রস্তুতকরণ: সিরিঞ্জে সংযুক্ত টিউবটিকে গ্লিসারিন দিয়ে পিচ্ছিল করে নেওয়া হয় যাতে এটি সহজে যোনিতে প্রবেশ করতে পারে।

৩। প্রয়োগ পদ্ধতি:
 — বাম হাতে জীবাণুমুক্ত গ্লাভস পরে, হাতটি মলদ্বার দিয়ে ধীরে ধীরে ঢুকিয়ে জরায়ুকে ধরতে হয়।
 — ডান হাতে সিরিঞ্জসহ টিউবটি যোনিতে প্রবেশ করাতে হয় যাতে টিউবের অগ্রভাগ বাম হাতে অনুভব করা যায় (কিন্তু তা জরায়ুর অভ্যন্তরে প্রবেশ করবে না)।

৪। বীর্য প্রয়োগ: ডান হাত দিয়ে সিরিঞ্জের পিস্টনে চাপ দিলে বীর্য জরায়ু মুখে প্রবেশ করে এবং প্রজনন সম্পন্ন হয়।

(খ) হিমায়িত বীর্য প্রয়োগ পদ্ধতি

এই পদ্ধতিতে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ধাপগুলো নিম্নরূপ:

১। থয়িং (Thawing):
 — হিমায়িত বীর্য ভর্তি নল বা স্ট্র সিমেন ক্যান থেকে চিমটার সাহায্যে বের করে তা ৩৪–৩৮° সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রিত পানিতে ৩০–৪০ সেকেন্ড ধরে গরম করতে হয়।
 — একে “থয়িং” বলা হয়। গলানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই এই বীর্য ব্যবহার করতে হয়।

২। এ.আই. গান প্রস্তুতকরণ:
 — বীর্য ভর্তি স্ট্র-এর কটন প্লাগ প্রান্ত নিচের দিকে রেখে তা গানের মধ্যে ঢুকাতে হয়।
 — স্ট্র-এর উন্মুক্ত বায়ুশূন্য প্রান্তটুকু সমান করে কেটে ফেলা হয় এবং তা জীবাণুমুক্ত এ.আই. সিথে ঢুকিয়ে লকিং ডিভাইস দিয়ে আটকাতে হয়।

৩। প্রয়োগ পদ্ধতি:
 — গাভী বা বকনাকে খোঁয়াড়ে আটকে রেখে যোনিপথ পরিষ্কার করতে হয়।
 — বাম হাতে গ্লাভস পরে তাতে তরল প্যারাফিন লাগিয়ে তা মলদ্বার দিয়ে ঢুকিয়ে জরায়ু ধরে রাখতে হয়।
 — ডান হাতে এ.আই. গানটি যোনিতে ঢুকিয়ে, বাম হাতে অবস্থান নিশ্চিত করে, ধীরে ধীরে পিস্টনে চাপ দিয়ে বীর্য প্রয়োগ করতে হয়।

🔶 গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা:

  • ব্যবহৃত সকল যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।

  • ষাঁড় ও গাভীর পরিচ্ছন্নতা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে।

  • সফল প্রজননের জন্য সঠিক তাপমাত্রা, সময় ও দক্ষতা অপরিহার্য।

 

কত্রিম প্রজনৃ নে সফলতার কারণ —

গাভী বা বকনার কৃত্রিম প্রজনন একটি সূক্ষ্ম ও বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া। এই পদ্ধতির সফলতা নির্ভর করে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণের উপর। সেগুলো হলো:

১। উর্বর ও মানসম্পন্ন ষাঁড় নির্বাচন:
কাঙ্ক্ষিত বা উন্নত জাতের সুস্থ ও উর্বর ষাঁড় থেকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় বীর্য সংগ্রহ করা কৃত্রিম প্রজননের ভিত্তি।

২। বীর্যের গুণগতমান যাচাই:
সংগ্রহের পর ল্যাবরেটরিতে বীর্যের চলনক্ষমতা, ঘনত্ব, গুণমান ও স্বাস্থ্যগত বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হয়।

৩। সঠিকভাবে বীর্য সংরক্ষণ:
বীর্যকে নির্ধারিত তাপমাত্রায়, তরল নাইট্রোজেনের ট্যাংকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হয় যাতে তা কার্যকারিতা না হারায়।

৪। সাবধানতার সাথে বীর্য পরিবহন:
সংরক্ষিত বীর্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরের সময় অতিরিক্ত তাপ বা কম্পন যেন বীর্যের গুণমান নষ্ট না করে তা নিশ্চিত করতে হয়।

৫। যন্ত্রপাতি ও পরিবেশ জীবাণুমুক্ত রাখা:
প্রজনন কাজে ব্যবহৃত এ.আই. গান, সিথ, গ্লাভসসহ সকল উপকরণ এবং কাজের পরিবেশ পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত হওয়া আবশ্যক।

৬। অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত কৃত্রিম প্রজননকারী:
যিনি কৃত্রিম প্রজনন সম্পাদন করবেন, তার অভিজ্ঞতা ও হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ থাকা জরুরি।

৭। বকনা বা গাভীর গরম হওয়া নিশ্চিতকরণ:
প্রজননের আগে বকনা বা গাভীর হিট বা গরম হওয়ার লক্ষণ সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হতে হয়।

৮। সঠিক সময়ে প্রজনন:
গরম হওয়ার ১২–১৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রজনন করানো হলে সর্বোচ্চ সফলতা পাওয়া যায়।

৯। অনিয়মিত গরম হওয়া গাভীর চিকিৎসা:
যেসব গাভী অনিয়মিত বা দেরিতে গরম হয়, তাদের পশুচিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা করে উপযুক্ত করে তুলতে হয়।

১০। প্রজননের আগে ও পরে বিশ্রামের ব্যবস্থা:
বকনা বা গাভীর ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ না দিয়ে যথাযথ বিশ্রাম দেওয়া দরকার, যাতে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ে।

১১। যৌনাঙ্গে সংক্রমণমুক্ত থাকা:
যোনি বা জরায়ু সংক্রান্ত কোনো সংক্রমণ বা যৌন রোগ থাকলে কৃত্রিম প্রজননের সফলতা ব্যাহত হয়, তাই পূর্বেই তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত করতে হয়।

কৃত্রিম প্রজননে ব্যার্থতার কারণ —

যথাযথভাবে পরিকল্পনা ও প্রযুক্তি প্রয়োগ না করলে কৃত্রিম প্রজনন ব্যর্থ হতে পারে। ফলে কাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ঘটে না এবং গবাদি পশু থেকে আশানুরূপ উৎপাদন মেলে না। নিচে কৃত্রিম প্রজননে ব্যর্থতার সম্ভাব্য কারণগুলো তুলে ধরা হলো:

১। রোগাক্রান্ত, দুর্বল বা অনুর্বর ষাঁড় থেকে বীর্য সংগ্রহ করা:
এমন ষাঁড়ের বীর্যে যথেষ্ট পরিমাণে চলনক্ষম ও স্বাস্থ্যবান শুক্রাণু না থাকায় গর্ভধারণে ব্যর্থতা ঘটে।

২। বীর্যের গুণগতমান যাচাই না করা:
বীর্য সংগ্রহের পর তা পরীক্ষা না করলে, দূষিত বা কম উর্বর বীর্য ব্যবহৃত হয়ে প্রজননে ব্যর্থতা ঘটতে পারে।

৩। সঠিকভাবে বীর্য সংরক্ষণ না করা:
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ না থাকলে বা তরল নাইট্রোজেন যথেষ্ট না থাকলে বীর্যের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।

৪। বীর্য পরিবহনে সতর্কতার অভাব:
কম্পন, অতিরিক্ত উত্তাপ বা সময়সীমা অতিক্রম করলে বীর্যের গুণমান নষ্ট হয়ে যায়।

৫। সিমেন ক্যানের নাইট্রোজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া:
তরল নাইট্রোজেন পর্যাপ্ত না থাকলে বীর্য হিমায়িত অবস্থায় নষ্ট হয়ে যায়।

৬। সঠিকভাবে স্ট্র থয়িং না করা:
স্ট্র (বীর্য ভর্তি নল) নির্ধারিত সময় ও তাপমাত্রায় গরম না করলে শুক্রাণুর কার্যকারিতা নষ্ট হয়।

৭। প্রজনন কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত না রাখা:
দূষিত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে, যা গর্ভধারণে বাধা সৃষ্টি করে।

৮। অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ প্রজননকারী:
সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করলে শুক্রাণু ভুল স্থানে প্রবেশ করে অথবা প্রজনন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়।

৯। বকনা বা গাভীর গরম হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া:
গরম না হওয়া অবস্থায় বীর্য প্রয়োগ করলে গর্ভধারণ সম্ভব হয় না।

১০। সঠিক সময়ে প্রজনন না করা (১২–১৮ ঘণ্টার মধ্যে):
প্রজননের নির্দিষ্ট সময়সীমা না মানলে শুক্রাণু নিষিক্ত হতে পারে না।

১১। ভুল স্থানে শুক্রাণু স্থাপন করা:
জরায়ুর পরিবর্তে যোনিতে বা অন্যত্র শুক্রাণু পড়লে গর্ভধারণ ব্যর্থ হয়।

১২। অনিয়মিত গরম হওয়া বকনা বা গাভীকে চিকিৎসা না করেই প্রজনন করানো:
হরমোনজনিত বা শারীরিক সমস্যার কারণে সফলতা নাও আসতে পারে।

১৩। প্রজননের আগে ও পরে পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব:
অতিরিক্ত চলাফেরা বা মানসিক চাপ গর্ভধারণের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

১৪। যৌনাঙ্গে সংক্রমণ বা যৌন রোগের উপস্থিতি:
এসব সমস্যা থাকলে জরায়ুতে শুক্রাণুর জীবনচক্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং গর্ভসঞ্চার সম্ভব হয় না।

বকনা বা গাভীর গরম হওয়া বা ডাকে আসার বাহ্যিক লক্ষণসমূহ —

বকনা বা গাভী গরমে আসলে (Heat বা Estrus) তার প্রজনন সক্ষমতা অর্জন করে এবং এ সময় প্রজননের জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে। কৃত্রিম প্রজননের জন্য গাভীর গরম হওয়া শনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে গরম হওয়া বা ডাকে আসার সাধারণ ও লক্ষণীয় বাহ্যিক চিহ্নসমূহ তুলে ধরা হলো:

১। অস্থিরতা বেড়ে যাওয়া ও ঘন ঘন ডাকাডাকি করা:
গাভী সাধারণত শান্ত প্রকৃতির হলেও গরমে এলে অস্থির আচরণ করে এবং বারবার ডাকতে থাকে।

২। এক জায়গায় স্থির হয়ে না দাঁড়িয়ে ছটফট করতে থাকা:
সে এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করতে থাকে এবং আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়।

৩। লেজ বারবার নাড়া ও উঁচু করে রাখা:
প্রায়ই লেজ তুলে রাখে এবং পেছনের অংশ ঘন ঘন নাড়ে, যা যৌন উত্তেজনার লক্ষণ।

৪। ঘন ঘন অল্প পরিমাণ প্রস্রাব করা:
প্রস্রাবের ফ্রিকোয়েন্সি বেড়ে যায়, তবে পরিমাণে খুব কম থাকে।

৫। ক্ষুধা কমে যাওয়া বা খেতে না চাওয়া:
সাধারণ খাদ্যে আগ্রহ হারায় এবং খাওয়া কমিয়ে দেয়।

৬। যোনিদ্বার ফুলে যাওয়া ও লালচে দেখানো:
প্রজনন অঙ্গ ফুলে ওঠে এবং তাতে লালচে ভাব দেখা যায়।

৭। যোনিদ্বার থেকে স্বচ্ছ, জেলির মতো শ্লেষ্মা নির্গত হওয়া:
এই শ্লেষ্মা লেজের গোড়া এবং যোনির চারপাশে লেগে থাকতে দেখা যায়, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।

৮। অন্য গরুর উপর লাফিয়ে ওঠা ও নিজে লাফিয়ে উঠতে দেওয়া:
গরমে আসা গাভী সাধারণত অন্য গরুর উপরে লাফানোর চেষ্টা করে এবং অন্য গরুকে নিজের উপরে উঠতে দেয়। অনেক সময় নিজের পেছনে অন্য গরুকে চাটতেও দেয়।

৯। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া:
শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে একটু বেশি অনুভূত হয়।

১০। দুধের পরিমাণ হঠাৎ কমে যাওয়া (দুধালো গাভীর ক্ষেত্রে):
গাভীর গরমে আসার সময়ে দুধ উৎপাদন কিছুটা কমে যেতে পারে।

✅ এসব লক্ষণগুলো গাভী বা বকনার গরম হওয়া নিশ্চিত করতে সহায়ক। সঠিক সময়ে (সাধারণত গরম হওয়ার ১২–১৮ ঘণ্টার মধ্যে) কৃত্রিম প্রজনন করালে গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

 

কৃত্রিম প্রজননের সুবিধা :

কৃত্রিম প্রজনন আধুনিক প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী পদ্ধতি। এর মাধ্যমে প্রাণির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, জাত উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। নিচে কৃত্রিম প্রজননের প্রধান সুবিধাগুলো তুলে ধরা হলো:

১। দেশীয় অনুন্নত জাতের প্রাণির উন্নয়ন সম্ভব:
উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীর্য ব্যবহার করে দেশীয় গরুর গুণগত মান ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা যায়।

২। একটি ষাঁড়ের বীর্যে বহু প্রাণিকে প্রজনন করানো সম্ভব:
একবার সংগৃহীত বীর্য থেকে প্রায় ১০০ থেকে ৪০০টি বকনা বা গাভীকে প্রজনন করানো যায়, যা ব্যয় ও সময় সাশ্রয় করে।

৩। উন্নত বা কাঙ্ক্ষিত ষাঁড়ের বীর্য সহজে ব্যবহারযোগ্য:
দূরবর্তী বা বিদেশি উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীর্যও সহজে সংগ্রহ ও প্রয়োগ করা যায়।

৪। দীর্ঘমেয়াদে বীর্য সংরক্ষণ:
উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীর্য হিমায়িত অবস্থায় বহুদিন সংরক্ষণ করে পরবর্তী সময়ে ব্যবহার করা যায়।

৫। সঙ্গমে অক্ষম হলেও ষাঁড়ের বীর্য ব্যবহার সম্ভব:
শারীরিকভাবে সঙ্গমে অক্ষম বা বয়স্ক ষাঁড় থেকেও কার্যকর বীর্য নিয়ে তা কৃত্রিমভাবে ব্যবহার করা যায়।

৬। উচ্চ হারে গর্ভধারণ সম্ভব:
সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে বকনা বা গাভীর গর্ভধারণের হার তুলনামূলক বেশি হয়।

৭। বহু দূরের অঞ্চলেও প্রজনন করানো যায়:
কাঙ্ক্ষিত ষাঁড়ের বীর্য দেশের যেকোনো স্থানেই পৌঁছে দিয়ে প্রজনন করানো যায়, এমনকি দেশের বাইরেও।

৮। প্রাকৃতিক প্রজনন অপছন্দকারী প্রাণির জন্য উপযোগী:
অনেক সময় কিছু গাভী বা বকনা ষাঁড়ের সংস্পর্শে যেতে চায় না বা শুয়ে পড়ে না—তাদের ক্ষেত্রে কৃত্রিম প্রজনন একটি কার্যকর সমাধান।

৯। হাইব্রিড বা সংকর জাত তৈরির সুযোগ:
ভিন্ন ভিন্ন জাতের প্রাণির মধ্যে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সংকর জাত বা হাইব্রিড তৈরি করে অধিক উৎপাদনশীল ও টেকসই প্রজাতি সৃষ্টি করা যায়।

১০। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার সুযোগ:
বীর্য ও যোনি পরীক্ষা করে প্রজনন অঙ্গের বিভিন্ন রোগ বা সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হয়।

 

কৃত্রিম প্রজননের অসুবিধা :

যদিও কৃত্রিম প্রজনন গবাদিপশুর জাত উন্নয়নে অত্যন্ত কার্যকর একটি আধুনিক প্রযুক্তি, তবুও এ পদ্ধতির কিছু সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। নিচে কৃত্রিম প্রজননের গুরুত্বপূর্ণ অসুবিধাগুলো তুলে ধরা হলো:

১। দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রজননকারীর প্রয়োজনীয়তা:
এ পদ্ধতি পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রজননকারী দরকার হয়। অদক্ষ ব্যক্তির দ্বারা কার্য সম্পন্ন হলে তা ব্যর্থতার ঝুঁকি তৈরি করে।

২। বিশেষায়িত যন্ত্রপাতির প্রয়োজন:
বীর্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রয়োগের জন্য নির্দিষ্ট যন্ত্রপাতি যেমন—এ.আই. গান, থার্মোফ্লাক্স, স্ট্র থয়িং ডিভাইস ইত্যাদি অপরিহার্য। এগুলো ব্যয়বহুল এবং সবসময় সহজলভ্য হয় না।

৩। ত্রুটিযুক্ত বীর্য ব্যবহারে ব্যর্থতা:
নষ্ট বা নিম্নমানের বীর্য ব্যবহার করলে গর্ভধারণ সম্ভব হয় না এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।

৪। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করলে সফলতা কমে:
প্রজননের সময় ভুল পদ্ধতি প্রয়োগ, বীর্য ভুল স্থানে প্রয়োগ ইত্যাদি সমস্যায় গর্ভধারণের হার অনেক কমে যায়।

৫। উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীর্যের অভাব:
কাঙ্ক্ষিত গুণসম্পন্ন উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীর্য সহজে পাওয়া না গেলে প্রজননের উদ্দেশ্য সফল হয় না।

৬। বীর্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জটিলতা:
নির্ধারিত তাপমাত্রায় এবং নিরাপদভাবে বীর্য সংরক্ষণ না করলে তা অকেজো হয়ে যেতে পারে।

৭। নীরব গরম (Silent Heat) শনাক্তে সমস্যা:
অনেক বকনা বা গাভী গরম হলেও তা বাহ্যিকভাবে বোঝা যায় না। ফলে নির্ধারিত সময়ে প্রজনন না করানো গেলে গর্ভধারণ সম্ভব হয় না।

৮। সঠিক সময়ে প্রজনন করাতে ব্যর্থ হওয়া:
গরমের সঠিক সময় জানার ঘাটতি থাকলে বীর্য প্রয়োগ ব্যর্থ হয় এবং চক্র আবার পুনরায় অপেক্ষা করতে হয়।

৯। প্রজননকারীর অদক্ষতা:
যন্ত্রপাতি ব্যবহার বা পশুর আচরণ বোঝার ক্ষেত্রে অদক্ষতা থাকলে সঠিকভাবে প্রজনন সম্ভব হয় না।

১০। প্রতিকূল পরিবেশ ও আবহাওয়ার প্রভাব:
অতিরিক্ত গরম, ঠান্ডা বা বর্ষাকালে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার, বীর্য সংরক্ষণ ও পরিবহণ জটিল ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে।

কৃত্রিম প্রজননের গুরুত্ব :

কৃত্রিম প্রজনন হলো আধুনিক কৃষি ও পশুপালন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, যা গবাদি পশুর উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাত উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এর গুরুত্বগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

১। অনুন্নত গরুর জাতকে উন্নত জাতের সঙ্গে রূপান্তরিত করা যায়:
দেশীয় বা নিম্নমানের গবাদি পশুকে উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীর্য ব্যবহার করে উচ্চ ফলনশীল ও প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতে রূপান্তরিত করা সম্ভব।

২। উন্নত জাতের কারণে দুধ ও মাংসের চাহিদা পূরণে সহায়ক:
উন্নত জাতের গবাদি পশুর মাধ্যমে দেশের দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যা জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে।

৩। গবাদি পশুর প্রজনন সংকট প্রতিরোধে কার্যকর:
প্রজনন সমস্যা থাকলে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে দ্রুত ও নিয়ন্ত্রিত প্রজনন সম্ভব হয়।

৪। গাভী বা বকনার গর্ভধারণের হার বৃদ্ধি পায়:
সঠিক সময়ে ও সঠিক পদ্ধতিতে বীর্য প্রয়োগের ফলে গর্ভধারণের সফলতার হার বেড়ে যায়।

৫। কাঙ্খিত জাতের হাইব্রিড বা সংকর বাচ্চা উৎপাদন:
বীর্যের নির্বাচনের মাধ্যমে উচ্চমানের সংকর জাতের বাচ্চা উৎপাদন সম্ভব, যা অধিক ফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধক।

৬। গবাদি পশুর যৌন রোগ প্রতিকার ও নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে সরাসরি ষাঁড়ের সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকায় যৌন রোগের সংক্রমণ কমে।

৭। কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি:
এ কার্যক্রমে প্রশিক্ষিত জনশক্তির চাহিদা থাকায় অনেক বেকার ব্যক্তি কর্মসংস্থান পায়।

৮। একটি ষাঁড় থেকে ব্যাপক সংখ্যক গাভী বা বকনাকে প্রজনন করানো সম্ভব:
বছরে একটি উন্নত ষাঁড়ের বীর্য ব্যবহার করে প্রায় ১০,০০০ টি গাভী বা বকনাকে গর্ভবতী করা যায়, যা প্রজনন খরচ ও সময় বাঁচায়।

৯। গ্রামাঞ্চলে উন্নত জাতের ষাঁড় পালনের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পায়:
কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উন্নত জাতের বীর্য সরবরাহে গৃহ পর্যায়ে উন্নত জাতের পশু পালন সহজ হয়।

১০। বীর্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘস্থায়িত্ব:
উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীর্য হিমায়িত অবস্থায় সংরক্ষণ করে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা সম্ভব, যা প্রজনন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে।

কৃত্রিম প্রজনন দেশের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এর সুফল নিশ্চিত করা গেলে দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের গড় উন্নত হবে এবং কৃষকের আয় বৃদ্ধি পাবে।