Category Archives: কৃষি

কৃষি গুরুকুলের “কৃষি” সেকশন হলো জ্ঞানের ভাণ্ডার যেখানে কৃষির ইতিহাস, ঐতিহ্য, আধুনিক গবেষণা ও কৃষি বিষয়ক অথরিটি প্রবন্ধসমূহ প্রকাশিত হয়। এখানে পাঠকরা কৃষি সম্পর্কিত মৌলিক তথ্য, উন্নয়ন, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য ও সমৃদ্ধ কনটেন্ট খুঁজে পাবেন।

সুপারি চাষ পদ্ধতি

সুপারি চাষ পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা। সুপারি বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রাচীনকাল থেকেই এদেশের মানুষ পানের সাথে অপরিহার্য উপাদান হিসেবে সুপারি ব্যবহার করে আসছে। বর্তমানে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাতেও কিছু পরিমাণ সুপারির চাষ হয়ে থাকে।

সুপারি চাষ পদ্ধতি

সুপারির উৎপত্তি ও বিস্তার:

পাক-ভারত উপমহাদেশকেই সুপারির উৎপত্তিস্থল বলা হলেও বাণিজ্যিকভাবে প্রধানত বাংলাদেশ ও ভারতেই সুপারির চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে উৎপাদিত সুপারির ৯০ শতাংশ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে জন্মে থাকে। সুপারি উৎপাদনের অন্যতম জেলাগুলো হলো বরিশাল, খুলনা এবং নোয়াখালী।

সুপারির ব্যবহার

পানের সাথে সুপারি খাওয়া ছাড়াও আহারের পরে অনেকেই মুখের স্বাধ ফিরে পাবার জন্য শুধু সুপারি খেয়ে থাকেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে প্রীতিভোজ শেষে পান সুপারি দিয়ে আপ্যায়নের একটা রেওয়াজ আছে। বাড়িতে মেহমান এলেও পান, সুপারি দিয়ে আপ্যায়িত করা একটি সামাজিক শিষ্টাচার বলে অবিহিত। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রধানত পানের সাথেই সুপারী ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া বয়স্ক সুপারি গাছ বেড়া, চালা এবং খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সুপারি পাতাও বেড়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া সুপারি গাছ বাড়ির শোভাবর্ধন ও বায়ু প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে।

সুপারির উন্নত জাত

কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে এ পর্যন্ত দু’টি উচ্চ ফলনশীল সুপারির জাত উদ্ভাবিত হয়েছে, যা বারি সুপারি-১ এবং বারি সুপারি-২ হিসেবে পরিচিত। তবে সুপারির উচ্চ ফলনশীল এই জাতগুলোর অপ্রতুলতার কারণে চাষিরা স্থানীয় জাতের সুপারি চাষ করে থাকেন। এগুলো আকারে ছোট এবং ফলন কম।

সুপারি চাষের উপযুক্ত মাটি

সুপারি চাষের জন্য উর্বর ও মাঝারী ধরনের মাটি অর্থাৎ হালকা বুনটের মাটি উত্তম, তবে বেলে দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। মাটির পিএইচ মান ৫.৫-৬.০ এর মধ্যে হলে সবচেয়ে ভালো হয়।

সুপারির চারা উৎপাদন পদ্ধতি

বীজ দ্বারা সুপারি গাছের বংশবিস্তার হয়ে থাকে। প্রথমে বীজতলায় বীজ লাগিয়ে চারা উৎপাদন করা হয়। সুপারির চারা বীজতলায় ১-২ বছর রাখার পর নির্দিষ্ট স্থানে লাগাতে হয়। চারা উৎপাদনের জন্য যেসব বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেওয়া দরকার তাহলো:-

ক) সুপারি বীজতলার জন্য মাটি নির্বাচন:

দো-আঁশ, পলি দো-আঁশ মাটি বীজতলার জন্য উপযুক্ত। খোলামেলা, সেচের সুবিধা আছে এমন হালকা বুনটের মাটিতে বীজতলা করা উচিত। বীজতলার মাটিতে বালুর পরিমাণ কম থাকলে কিছু ভিটি বালু মিশিয়ে নিলে ভালো হয়। সুপারির বীজতলা আংশিক ছায়াযুক্ত হলে উত্তম।

খ) সুপারির জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ:

বীজতলার জমি ৪-৫ বার ভালোভাবে চাষ দিয়ে আগাছা ও আবর্জনা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। জমিতে মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে। বীজতলার জমির উর্বরতা অনুযায়ী হেক্টর প্রতি ১৫-২০ টন গোবর বা জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে, তবে কোনও রাসায়নিক সার প্রয়োগের দরকার নেই।

গ) সুপারির বীজতলা তৈরি:

প্রতিটি বীজতলা ১-১.৫ মিটার চওড়া এবং ৩ মিটার লম্বা হওয়া উচিত। বীজতলা উত্তর দক্ষিণে লম্বা হলে ভালো হয়। দুই বেডের মাঝখানে চলাফেলার জন্য দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বরাবর ৫০-৭৫ সেমি বা ২০-৩০ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা রাখতে হয়। এরূপ ফাঁকা স্থানের মাটি তুলে নালা তৈরি করতে হবে এবং নালার মাটি বীজতলায় তুলে দিয়ে বীজতলাকে বেড আকারে ৬-৮ সেমি উঁচু করতে হবে। নালাগুলোর মধ্যে দিয়ে সেচ ও নিকাশের সুবিধা পাওয়া যায় এবং চারার পরিচর্যা করা সহজ হয়।

ঘ) সুপারির বীজ রোপণ:

বীজ সংগ্রহ করার পর দেরি না করে বীজতলায় বীজ রোপণ করতে হবে। বীজ রোপণের সময় সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি বা ১২ ইঞ্চি এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব হবে ২৫ সেমি বা ১০ ইঞ্চি। বীজ ১-২ সেমি. গভীরে এমনভাবে রোপণ করতে হবে যাতে বীজটি মাটির সামান্য নিচে থাকে এবং বীজের উপরে মাটির একটা পাতলা আবরণ থাকে।

ঙ) সুপারির রোপণ পরবর্তী যত্ন:

বীজতলায় বীজ রোপণের পরপরই ওপরে ছায়া দেওয়ার ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বীজতলা খুড়কুটো বা কচুরীপানা দিয়ে ঢেকে রেখে অর্থাৎ মালচিং করে মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখা দরকার। বীজতলা সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে এবং অবশ্যই বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে গরু ছাগল চারা নষ্ট করতে না পারে।

চ) সুপারির ভালো চারা বাছাই:

বীজ লাগানোর পর তিন মাসের মধ্যে যে সকল বীজ গজায় সেগুলো থেকে ভালো চারা পাওয়া যায়। বীজ রোপণের পর সে সকল চারা তাড়াতাড়ি গজায়, দ্রুত বাড়ে, গোড়া মোটা হয়, পাতা ও শিকড় বেশি হয় এসব চারা বাছাই করা উত্তম। চারার বয়স ৬ মাস হলেই বাগানের লাগানো যায়। তবে ১২-১৮ মাস বয়সের চারা, যেগুলো খাটো ও মোটা এবং কমপক্ষে ৫-৬টি পাতা থাকে এমন ধরনের চারা মাঠে লাগানোর জন্য বাছাই করা দরকার।

সুপারি চাষের জন্য জমি নির্বাচন:

সাধারণত আমাদের দেশে বসতবাড়ির আশপাশে, পুকুরের পাড়ে, রাস্তার ধারে স্কুল-কলেজের আঙিনায় সুপারী গাছ লাগানো হয়। তবে সুপারীর বাগান করতে হলে বাগানের জমি সঠিকভাবে নির্বাচন করতে হবে। সুনিষ্কাশিত, উর্বর, কিছুটা ছায়াযুক্ত, তীব্র বাতাস প্রতিরোধী এবং উঁচু জায়গায় বাগানের জন্যে নির্বাচন করা উচিত। জমিতে যেন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।

সুপারি চাষের জন্য জমি তৈরি এবং চারা রোপণ:

ছোট অবস্থায় সুপারি গাছ তীব্র বাতাস এবং প্রখর সূর্যালোক সহ্য করতে পারে না। কাজেই সুপারির চারা মাঠে লাগানোর পূর্বেই ছায়া প্রদানকারী গাছ রোপণ করতে হবে। সুপারির চারা সাধারণত মাদা তৈরি করে লাগানো হয়। মাদার আকার ৭০ সেমি. x ৭০ সেমি. x ৭০ সেমি হলে ভালো হয়। মাদা তৈরি করার সময় উপরের মাটি একদিকে এবং নিচের মাটি অন্যদিকে আলাদা করে রাখতে হবে। গর্তের ভেতরটা শুকনো পাতা, খড় এসব দিয়ে ভরাট করে আগুনে পুড়িয়ে দিলে গর্তটা শোধন হয়ে যাবে।

প্রতিটি গর্তের জন্যে ১০ কেজি পচা গোবর বা কম্পোস্ট এবং ১ কেজি খৈল গর্তের ওপরের অর্ধেক মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে গর্তের তিন-চতুর্থাংশ ঐ মাটি দ্বারা ভরে ফেলতে হবে। সাধারণত মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়। তবে জুন-জুলাই মাস চারা রোপণের জন্য উত্তম। মাদার দূরত্ব অর্থাৎ চারার দূরত্ব বর্গাকার পদ্ধতিতে ৪ হাত এবং আয়াতাকার পদ্ধতিতে লাইন থেকে লাইন ৮ হাত এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪ হাত।

সুপারির অর্ন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা:

চারা রোপণের পর বিভিন্ন ধরনের অর্ন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা প্রয়োজন। যেমন:-

সুপারি গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার:

গাছের গোড়া সব সময়ই আগাছামুক্ত রাখা প্রয়োজন। বর্ষাকালে আগাছা বেশি হয় বিধায় ঘন ঘন আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। সার ও সেচ দেয়ার আগে অবশ্যই আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।

সুপারি গাছের মালচিং:

মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য মালচিং একান্ত প্রয়োজন। মালচিং দ্রব্য হিসেবে কুচরীপানা, খড় সব ব্যবহার করা যায়। সাধারণত সার প্রয়োগের পর সেচ প্রদান করে মালচিং করতে হয়।

সুপারি গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দেওয়া:

গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে। সেচ ও সার প্রয়োগ এবং বৃষ্টিপাতের ফলে গাছের গোড়ার মাটি সরে যায় এবং শিকড় বের হয়ে পড়ে। এজন্যই গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হয়। এছাড়াও গাছের গোড়ায় জলাবদ্ধতা এড়াতে মাটি তুলে দেওয়া প্রয়োজন।

সুপারি চাষের সেচ ও নিকাশ:

সুপারি চাষে সেচ ও নিকাশের গুরুত্ব অপরিসীম। সুপারি কিছুটা আর্দ্র মাটিতে ভালো হয় বিধায় মাটিতে রসের অভাব হলেই সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। শুকনো মৌসুমে মাটির প্রকারভেদে ৫-১০ দিন পরপর সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। সুপারি যেমন আর্দ্রতা পছন্দ করে আবার জলাবদ্ধতাও এর জন্য ক্ষতিকর। তাই সেচের পাশাপাশি পানি নিকাশেরও ব্যবস্থা নিতে হবে।

সুপারি গাছে সার প্রয়োগ:

রাসায়নিক সার ২ ভাগে ভাগ করে বছরে ২ বার গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করতে হবে (প্রথমবার সেপ্টেম্বর মাসে এবং ২য় বার ফেব্রুয়ারি মাসে)।

সুপারি গাছ থেকে ভালো ফলন পেতে গাছের বয়স এক বছর হলে প্রতি গাছের জন্য ২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ১০০ গ্রাম এমওপি সার ২ ভাগ করে এক ভাগ বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক সার ভাদ্র-আশ্বিন মাসে প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স ২ বছর হলে ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ গ্রাম টিএসপি এবং ২০০ গ্রাম এমওপি একই ভাবে দুইভাগ করে একভাগ শুস্ক মৌসুমে অপর অংশ বর্ষায় প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স ৩ বছর হলে ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি এবং ২৫০ গ্রাম এমওপি সার একইভাবে দুই কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স ৪-১০ বছর হলে ৬০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৩০০ গ্রাম এমওপি সার অনুরূপভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

সুপারি গাছে মুচি আসার আগে অর্থাৎ মধ্য চৈত্র থেকে মধ্য বৈশাখ এর মধ্যে গাছের গোড়ার চারিদিকে ২ ফুট দূরত্বে এক ফুট চওড়া ৬ ইঞ্চি গভীর করে মাটি সরিয়ে ফেলতে হবে। পরে ওই মাটির সাথে ৭০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ৮০০ গ্রাম এমওপি, ৩০০ গ্রাম জিপসাম এবং ১০০ গ্রাম জিংক মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। সার মিশ্রিত ওই মাটি দিয়ে পুনরায় গর্ত ভরাট করে দিতে হবে।

সুপারির রোগ বালাই ব্যবস্থাপনা:

সুপারি গাছ ও ফল বিভিন্ন প্রকার রোগ পোকা দ্বারা আক্রান্ত হয়। ভালো ফলন পেতে হলে এ রোগবালাই ব্যবস্থাপনা একান্ত অপরিহার্য। প্রধান প্রধান রোগবালাই এর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।

(ক) সুপারির ফল পচা রোগ:

রোগের আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত সুপারির বোঁটায় পানি ভেজা ছোপ ছোপ দাগ পড়ে এবং আস্তে আস্তে অনেকগুলো দাগ একত্রে মিশে বড় আকার ধারণ করে। আক্রান্ত স্থান ক্রমান্বয়ে বাদামী ও ছাই রঙের হয়ে এক সময়ে পুরো সুপারিটাই  রোগাক্রান্ত হয়ে পচে ঝরে পড়ে।

প্রতিকার:

এ রোগ দমনের জন্যে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের শুরুতেই সুপারির ছড়ায় ও পাতায় ১% ‘বোর্দো মিক্সার’ অথবা ১.৫% হারে ম্যাকুপ্রাক্স নামক ছত্রানাশক রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ১৫-৩০ দিন পর পর ৩/৪ বার গাছে স্প্রে করতে হবে। আক্রান্ত গাছের সুপারি ছড়াসহ পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং গোড়ায় পানি জমে থাকলে তা নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।

(খ) সুপারির কুঁড়ি পচা রোগ:

এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এক্ষেত্রে ছত্রাক জীবাণু মোচার গোড়ায় কাণ্ডের সংযোগ স্থলের নরম টিস্যু আক্রমণ করে। আক্রান্ত স্থানের টিস্যু প্রথমে হলুদ ও পরবর্তীতে বাদামী রঙ ধারণ করে এবং শেষ পর্যায়ে পচে কালো হয়ে কুঁড়িগুলো ঝরে পড়ে।

প্রতিকার:

রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্রই আক্রান্ত স্থান চেছে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু পরিষ্কার করে ‘বোর্দো পেস্ট’ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত স্থান ব্যান্ডেজ করে দিতে হবে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গাছের পাতা ও মোছায় ১% বোর্দো মিক্সার অথবা ১.৫% কুপ্রাভিট ১৫-২০ দিন অন্তর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে। মৃত গাছ, ফলপচা রোগে আক্রান্ত মোচা ও ফল সরিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে এবং বাগানের সমস্ত গাছে ১% বোর্দো মিক্সার অথবা কুপ্রাভিট স্প্রে করে সকল গাছ ভিজিয়ে দিতে হবে।

(গ) সুপারির মোচা শুকিয়ে যাওয়া ও কুড়ি ঝরা:

এ রোগটি প্রধানত গ্রীষ্মকালে হয়ে থাকে। রোগের আক্রমণে আক্রান্ত মোছার গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত হলুদ হয়ে যায়, পরবর্তীতে গাঢ় বাদামী রঙ ধারণ করে এবং পুরো মোচাটি শুকিয়ে যায়। ফলে আক্রান্ত মোচার কুঁড়িগুলো ঝরে পড়ে।

প্রতিকার:

আক্রান্ত গাছের মোচা কেটে পুড়ে ফেলতে হবে। রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই ‘ডায়থেন এম-৪৫ অথবা নোইন নামক ছত্রানাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ চা চামচ হিসেবে গাছে মোনা বের হলেই ১৫ দিন পরপর ৪-৫ বার স্প্রে করতে হবে।

(ঘ) সুপারির মাকড়:

সুপারি গাছ কয়েক ধরনের মাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয় যেমনঃ লাল মাকড়, সাদা মাকড়, হলদে মাকড়। সকল বয়সের সুপারি গাছেই লাল ও সাদা মাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়। এ পোকা পাতার রস চুষে খায়। ফলে আক্রান্ত পাতা প্রথমে হলুদ ও পরে তামাটে রং ধারণ করে এবং পরিশেষে শুকিয়ে যায়। আস্তে আস্তে পুরো পাতাই শুকিয়ে যায়, গাছ নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং মারা যায়।

প্রতিকার:

এ মাকড় দমনের জন্য ১০ লিটার পানিতে ৫ চা চামচ ‘ক্যালথেন’ নামক মাকড়নাশক পাতার নিচের দিকে ১৫-২০ দিন পরপর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।

(ঙ) সুপারির মোচার লেদা পোকা:

এ পোকার মথ কচি মোচায় ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে ক্রীড়া বের হয়ে অফুটন্ত মোচার ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং মোচার মধ্যে কচি-ফুলগুলো খেতে থাকে এবং মল ত্যাগ করে সম্পূর্ণ মোছাটাকেই পূর্ণ করে ফেলে। আক্রান্ত মোচায় ফুল আসে না এবং মোচাটিও ফুটে না।

প্রতিকার:

আক্রান্ত মোচা সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত গাছসহ সকল গাছে ১০ লিটার পানির সঙ্গে ৬ চা চামচ সুমিথিয়ন মিশিয়ে ১৫-২০ দিন পরপর ২-৩ বার মোচায় স্প্রে করতে হবে।

(চ) সুপারির শিকড়ের পোকা:

এ পোকার কীড়া বা বাচ্চা গাছের শিকড়ে আক্রমণ করে। এরা প্রথমে গাছের কচি ও নরম শিকড় খেতে শুরু করে। অতঃপর গাছের শক্ত ও পুরানো শিকড় খেয়ে ফেলে। ফলে পাতা হলুদ হয়ে যায়, ওপরের কাণ্ড চিকন হয়ে আসে এবং ফলন কমে যায়।

প্রতিকার:

এ পোকার আক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলেই গাছের চারপাশে ১ মিটার ব্যসার্ধে হালকা করে কুপিয়ে বাসুডিন ১০ কেজি অথবা ফুরাটার ৩জি গাছ প্রতি ১০ গ্রাম হারে ছিটিয়ে পানি সেচ দিতে হবে এবং মালচিং করে দিতে হবে। বছরে দু’বার অর্থাৎ বর্ষার আগে ও পরে এভাবে মালচিং করে দিতে হবে। তাহলে এ পোকার আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

সুপারির ফসল সংগ্রহ:

সুপারির চারা লাগানোর পর সঠিকভাবে যত্ন নিলে ৪-৫ বছরের মধ্যেই ফলন আসতে শুরু করে। গাছে ফুল আসার পর থেকে ফল পাকতে ৯-১০ মাস বয়স লাগে। ফল সংগ্রহের সময়ে সুপারি ছড়াগুলো দড়ি দিয়ে বেঁধে নামাতে হবে। সুপারি পরিপূর্ণভাবে পাকা, আধাপাকা, অথবা পরিপক্ব কাঁচা অবস্থায় সংগ্রহ করা যায়। উল্লেখ্য যে, সুপারি সংগ্রহ নির্ভর করে তা কীভাবে ব্যবহার করা হবে বা প্রক্রিয়াজাত করা হবে তার ওপর।

সুপারির ফলন:

এলাকা ভেদে বিভিন্ন স্থানের ফলনে পার্থক্য রয়েছে। জাতের বিভিন্নতা, পরিচর্যা, গাছের বয়স, জলবায়ুর প্রভাব এসব কারণগুলো এর জন্য দায়ী। সাধারণত সুপারি গাছ ১০-৪০ বছর পর্যন্ত সর্বোচ্চ ফলন দেয়।

 

কৃষির ইতিহাস: মানব সভ্যতার প্রাচীনতম ভিত্তি

কৃষি মানব সভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন ও মৌলিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। শিকার ও আহরণের যুগ থেকে মানুষ যখন প্রথম শস্য বপন ও প্রাণী গৃহপালন শুরু করল, তখন থেকেই কৃষির ইতিহাসের সূচনা। কৃষি কেবল খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যম নয়; এটি সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং প্রযুক্তির বিকাশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আজকের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, মেকানাইজেশন, এবং স্মার্ট ফার্মিং-এর পিছনে রয়েছে কয়েক হাজার বছরের ঐতিহাসিক বিবর্তন।

 

কৃষির ইতিহাস

 

প্রাগৈতিহাসিক যুগে কৃষির সূচনা

মানব ইতিহাসের প্রথম দীর্ঘ অধ্যায় ছিল শিকার ও খাদ্য সংগ্রহের যুগ। প্রায় ১২,০০০ বছর আগে, শেষ বরফযুগের সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর আবহাওয়া উষ্ণ হতে শুরু করে। তখন মানুষ ধীরে ধীরে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো শস্য যেমন গম, যব, ও ধানের দানা সংগ্রহ করে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার শুরু করে।

পরে তারা লক্ষ্য করে—বীজ মাটিতে ফেললে আবার অঙ্কুরোদ্গম হয়। এভাবেই মানুষ প্রথম সচেতনভাবে বীজ বপন শুরু করে। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায় যে, খ্রিস্টপূর্ব ১০,০০০ অব্দেই মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে কৃষির সূচনা হয়েছিল। এটিই “Neolithic Revolution” বা কৃষি বিপ্লব নামে পরিচিত।

 

প্রাচীন সভ্যতায় কৃষি

মেসোপটেমিয়া

মেসোপটেমিয়া নদী উপত্যকা (টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস) ছিল কৃষির প্রথম কেন্দ্র। এখানে গম, যব ও খেজুর গাছের চাষ হতো। সেচ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল, যা কৃষি উৎপাদন বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

মিশর

নাইল নদীর তীরবর্তী মিশরে কৃষি ছিল সভ্যতার প্রাণশক্তি। প্রতিবছর নাইলের বন্যা মাটিকে উর্বর করে তুলত। গম ও যব ছিল প্রধান ফসল।

সিন্ধু সভ্যতা

সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতায় (আজকের পাকিস্তান ও ভারতের পাঞ্জাব) ধান, গম, খেসারি, তুলা চাষের প্রমাণ পাওয়া যায়। এ অঞ্চলে প্রথমবার তুলা উৎপাদন হয়।

চীন

চীনে প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ অব্দে ধান ও বাজরার চাষ শুরু হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সিল্ক রোডের মাধ্যমে এ কৃষিজ পণ্য বিশ্বের নানা প্রান্তে পৌঁছায়।

 

দক্ষিণ এশিয়ায় কৃষির বিকাশ

বাংলাদেশ ও ভারতীয় উপমহাদেশে কৃষির ইতিহাস প্রায় ৪০০০ বছরের পুরোনো। এ অঞ্চলের উর্বর নদীভূমি (গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু) কৃষির জন্য আদর্শ ছিল।

  • ধান চাষ: বাংলাদেশসহ পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় প্রাচীনকাল থেকেই ধান চাষ প্রচলিত ছিল।
  • আখ গুড় উৎপাদন: আখের চাষ ও গুড় উৎপাদনের ঐতিহাসিক প্রমাণ আছে।
  • তুলা পাট: ভারতবর্ষে প্রাচীনকাল থেকেই তুলা ও পাটের চাষ প্রচলিত ছিল। পাটকে বলা হয় “Golden Fiber of Bengal।”

 

মধ্যযুগে কৃষি

মধ্যযুগে কৃষি আরও উন্নত হয়। ইসলামী বিশ্বে কৃষি জ্ঞানের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে।

  • আরবরা সেচ প্রযুক্তি, খেজুর, কমলা, আখ ও ধানের বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখে।
  • ইউরোপে মধ্যযুগে তিন ফসলি ব্যবস্থা চালু হয় (Three-field system), যাতে এক জমিতে পর্যায়ক্রমে তিন ধরণের ফসল চাষ হতো।
  • বাংলাদেশে সুলতানি ও মোগল আমলে কৃষিকে অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি ধরা হতো। মোগল আমলে নতুন সেচ ব্যবস্থা, খাল কাটার প্রকল্প ও নতুন জমি আবাদ হয়।

 

আধুনিক কৃষির সূচনা

১৭শ শতাব্দীতে ইউরোপে কৃষি বিপ্লব (Agricultural Revolution) শুরু হয়। নতুন কৃষি যন্ত্রপাতি, বীজ নির্বাচন, পশুপালন কৌশল কৃষিকে বদলে দেয়।

  • জেথ্রো টালের উদ্ভাবিত সিড ড্রিল (Seed Drill) ছিল কৃষি যান্ত্রিকীকরণের সূচনা।
  • ফসলের ঘূর্ণন ব্যবস্থা (Crop Rotation) মাটির উর্বরতা বজায় রাখে।
  • শিল্প বিপ্লবের সাথে কৃষিও পরিবর্তিত হয়। কৃষি যন্ত্রপাতি, ট্রাক্টর, রাসায়নিক সার কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব আনে।

 

উপনিবেশিক যুগে ভারতীয় কৃষি

ব্রিটিশ উপনিবেশিক আমলে ভারতীয় কৃষি অনেকটা রপ্তানিমুখী হয়ে ওঠে।

  • আফিম, নীল, তুলা, চা ও পাট চাষে জোর দেওয়া হয়।
  • কৃষকরা খাদ্যশস্যের পরিবর্তে রপ্তানিযোগ্য নগদ ফসল উৎপাদনে বাধ্য হয়।
  • বাংলার নীলচাষ কৃষকদের দুঃসহ অভিজ্ঞতা আজও ইতিহাসে লিপিবদ্ধ।

 

স্বাধীনতার পর কৃষি

বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

  • উচ্চ ফলনশীল ধান (HYV Rice) চালু হয়।
  • কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (BARI, BRRI) প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • কৃষি ঋণ, ভর্তুকি, আধুনিক সার ব্যবস্থাপনা চালু হয়।

ভারতেও সবুজ বিপ্লব (Green Revolution) ঘটে, যা খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিপুল সাফল্য আনে।

 

আধুনিক কৃষি: প্রযুক্তি উদ্ভাবন

২১শ শতকে কৃষি এখন বিজ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে।

  • কৃষি প্রযুক্তি: ড্রোন, সেন্সর, AI ও IoT কৃষি ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হচ্ছে।
  • হাইড্রোপনিক্স অ্যাকুয়াপনিক্স: মাটিবিহীন কৃষি প্রযুক্তি দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে।
  • জৈব কৃষি: স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে জৈব কৃষির গুরুত্ব বাড়ছে।
  • জলবায়ু পরিবর্তন: আধুনিক কৃষি এখন জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভিযোজিত।

 

বাংলাদেশের কৃষি ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য

  • ধাননির্ভর সমাজ: বাংলাদেশে কৃষি ধানকেন্দ্রিক ছিল এবং এখনও ধানই প্রধান খাদ্যশস্য।
  • পাট উৎপাদন: ২০শ শতকে পাটই ছিল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎস।
  • আধুনিকায়ন: স্বাধীনতার পর কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সার, সেচ, উন্নত বীজ কৃষিকে বদলে দিয়েছে।
  • রপ্তানি: আম, কাঁঠাল, চা, সবজি ও সামুদ্রিক মাছ এখন বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় অবদান রাখছে।

 

কৃষির ইতিহাস মূলত মানব সভ্যতার ইতিহাস। প্রাচীন মেসোপটেমিয়া থেকে আধুনিক বাংলাদেশ পর্যন্ত কৃষি কেবল খাদ্য সরবরাহ করেনি, বরং সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির প্রতিটি স্তম্ভকে গড়ে তুলেছে। আজকের আধুনিক প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ কৃষি সেই দীর্ঘ বিবর্তনের ফল।

ভবিষ্যতের কৃষি হবে স্মার্ট, পরিবেশবান্ধব, এবং টেকসই। কিন্তু এর মূল শেকড় প্রোথিত রয়েছে সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগের কৃষকের হাতে, যিনি প্রথমবারের মতো বীজ মাটিতে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন।

মাছ চাষের লাভজনক পদ্ধতি

মাছ চাষের লাভজনক পদ্ধতি: মাছ আমাদের প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস। কর্মসংস্থান, বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন এবং পুষ্টি সরবরাহে মাছের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। একই পুকুরে নানা জাতের মাছ চাষ করা যায়, খাল ও ডোবায় মাছ চাষ করা যায়, আবার চৌবাচ্চায়, খাঁচায় মাছের চাষ করা যায়। কোনো নির্দিষ্ট জলাশয়ে পরিকল্পিত উপায়ে স্বল্পপুঁজি, অল্পসময় ও লাগসই প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছের বিভিন্ন নিয়ম মেনে প্রাকৃতিক উৎপাদনের চেয়ে অধিক মাছ উৎপাদনই মাছ চাষ। মাছ চাষে লাভবান হতে হলে মাছ চাষ পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত প্রতিটি পর্বে মাছ চাষিকে বিশেষ কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]

মাছ চাষের লাভজনক পদ্ধতি

মাছ চাষির অজ্ঞতা বা অবহেলা বা ভুল লাভজনক মাছ চাষের ক্ষেত্রে অন্তরায়। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় মাছ হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মাছের অনেক চাহিদা থাকার কারণে মাছ চাষ করে ভালো আয় করা সম্ভব। স্থানীয় হাট, বাজার ছাড়াও দূরবর্তী বাজারে মাছ বিক্রি করে লাভ করা সম্ভব। তাছাড়া বিদেশে মাছ রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। মাছ চাষে বাংলাদেশ এখন চতুর্থ। এটা আমাদের গর্বের বিষয়।

মাছের গুণাগুণ ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা:

আমাদের দেশের স্বাদু পানিতে ২৬০টিরও বেশি প্রজাতির মাছ আছে। এছাড়া খাঁড়ি অঞ্চলে ও লোনা পানিতে কয়েকশ‘ প্রজাতির মাছ আছে। তবে চাষযোগ্য মাছগুলো হলো রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস, সিলভারকার্প, মিররকার্প, গ্রাসকার্প, কমনকার্প, বিগহেড, রাজপুঁটি, নাইলোটিকা, তেলাপিয়া, বিদেশি মাগুর, থাই পাঙ্গাশ এসব। এসব মাছের কিছু বিশেষ গুণাগুণ আছে।

এসব মাছ খুব দ্রুত বাড়ে; খাদ্য ও জায়গার জন্য একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে না; পুকুরে বেশি সংখ্যায় চাষ করা যায়; পানির সব স্তর থেকে খাবার গ্রহণ করে, পুকুরের পরিবেশ ভালো থাকে; খেতে খুব সুস্বাদু; বাজারে এসব মাছের প্রচুর চাহিদা আছে; সহজে রোগাক্রান্ত হয় না, চাষে লাভ বেশি হয়। এজন্য লাভজনকভাবে এসব মাছে চাষ করা যায় আনয়াসে। মাছ চাষ শুরু করার আগে প্রয়োজন হচ্ছে সঠিক সুষ্ঠু এবং বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা।

 

মাছ উৎপাদন কৌশল:

১. সনাতন পদ্ধতির মাছ চাষ :

এ পদ্ধতিতে পুকুরের কোনো ব্যবস্থাপনা ছাড়াই মাটি ও পানির উর্বরতায় পানিতে যে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয় মাছ তাই খেয়ে জীবন ধারণ করে। এক্ষেত্রে আলাদা কোনো পরিচর্যা নিতে হয় না;

২. আধানিবিড় পদ্ধতির মাছ চাষ :

এ পদ্ধতিতে নিয়মমতো পুকুর প্রস্তুত করে আংশিক সার ও খাদ্য সরবরাহ করে মাছের খাদ্য উৎপন্ন করতে হয়। পুকুরের বিভিন্ন স্তরে উৎপাদিত খাদ্যের সঠিক ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য রেখে মাছের পোনা ছাড়তে হয়;

৩. নিবিড় পদ্ধতির মাছ চাষ :

অল্প জায়গায়, অল্প সময়ে বেশি উৎপাদনের জন্য সুপরিকল্পিতভাবে সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে হয়;

৪. কার্প জাতীয় মাছের মিশ্রচাষ :

পুকুরের বিভিন্ন স্তরে উৎপন্ন খাবার সম্পূর্ণ ব্যবহার করার জন্য রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস, বিগহেড, সিলভারকার্প, মিররকার্প, কমনকার্প, কারপিউ এসব নানা প্রজাতির মাছ একসাথে চাষ করা যায়।

পুকুর নির্বাচন:

১. পুকুরটি খোলামেলা রোদ্রউজ্জ্বল জায়গায় এবং বাড়ির আশপাশে হতে হবে যেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়;

২. মাটির গুণাগুণ পুকুরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত দো-আঁশ, এঁটেল দো-আঁশ ও এঁটেল মাটি পুকুরের জন্য ভালো;

৩. পুকুরের আয়তন কমপক্ষে ১০ শতাংশ হতে হবে। ৩০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ আকারের পুকুর মাছ চাষের জন্য বেশি উপযোগী;

৪. পুকুরের গভীরতা ২-৩ মিটার রাখতে হবে এবং বছরের পুরো সময় পানি থাকতে হবে;

৫. পুকুর পাড়ে বড় গাছ বা ঝোপঝাড় থাকা যাবে না। বিশেষ করে পাতাঝরা গাছ রাখা যাবে না।

 

পুকুর খনন তৈরি ও প্রাথমিক কাজ:

যেখানে পুকুর খনন করা হবে সেখানকার অবকাঠামো, পরিবেশ, পানির গভীরতা, বর্ষায় বন্যার হুমকি, পুকুর পাড়ের ঢাল, বকচর, শুষ্ক মৌসুমে পানি কতটা থাকে, পানি কমে গেলে বাইরে থেকে পানি দেয়ার ব্যবস্থা আছে কিনা এসব বিষয়ে সঠিক ধারণা নিয়ে শুরু করতে হবে। এজন্য প্রথমেই অভিজ্ঞ মৎস্য চাষি বা মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। মাছ চাষ শুরু করার আগে বা মাছের পোনা ছাড়ার আগে সঠিক নিয়মে পুকুর তৈরি করা অত্যাবশ্যক।

পানিতে প্রাকৃতিক খাবার জন্মানো এবং পুকুরে পানি প্রবেশ এবং নিষ্কাশনের রাস্তা সঠিকভাবে রক্ষা করা অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে অবহেলা করা হলে পরবর্তীতে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। পোনা মাছ ছাড়ার আগে পুকুর তৈরি করে নিতে হবে। নতুন পুকুর কাটা কিংবা পুরনো পুকুরই তৈরি করে নেয়া আবশ্যকীয় প্রাথমিক কাজ। পুকুর প্রস্তুতির কাজটি হবে ধাপে ধাপে-

১ম ধাপ : জলজ আগাছা কচুরিপানা, কলমিলতা হেলেঞ্চা, অন্যান্য গাছ শেকড়সহ তুলে ফেলতে হবে;

২য় ধাপ : শোল, গজার, বোয়াল, টাকি রাক্ষুসে মাছ এবং অবাঞ্ছিত মাছ মলা, ঢেলা, চান্দা, পুঁটি সরিয়ে ফেলতে হবে;

৩য় ধাপ : প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন পুকুরে পানি থাকলে ড্রামে বা বালতিতে গুলে ঠা-া করে পুরো পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে;

৪র্থ ধাপ : মাটি ও পানির গুণাগুণ বিবেচনায় রেখে চুন দেয়ার এক সপ্তাহ পর জৈবসার বিশেষ করে পচা গোবর দিতে হবে;

৫ম ধাপ : পুকুর শুকনা হলে পুকুরে সার, চুন/জিওলাইট, গোবর ছিটিয়ে দিয়ে লাঙল দিয়ে চাষ করে দুষণমুক্ত পানি ঢুকাতে হবে;

৬ষ্ঠ ধাপ : পোনা মজুদের আগে পুকুরে ক্ষতিকর পোকামাকড় থাকলে তা মেরে ফেলতে হবে;

৭ম ধাপ : পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মালে পোনা মজুদ করতে হবে। মৃত্যুর হার যেন কম থাকে সেজন্য পোনার আকার ৮-১২ সেন্টিমিটার হতে হবে;

৮ম ধাপ : নিয়মমতো পুকুরে পোনা ছাড়তে হবে। এক্ষেত্রে যেসব বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলো- পোনা হাঁড়িতে বা পলিথিন ব্যাগে আনা হলে, পলিথিন ব্যাগটির মুখ খোলার আগে পুকুরের পানিতে ২০-৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখা; তারপর ব্যাগের মুখ খুলে অল্প করে ব্যাগের পানি পুকুরে এবং পুকুরের পানি ব্যাগে ভরতে হবে। ব্যাগের পানি ও পুকুরের পানির তাপমাত্রা যখন সমান হবে তখন পাত্র বা ব্যাগের মুখ আধা পানিতে ডুবিয়ে কাত করে সব পোনা পুকুরে ছাড়া; সকাল ও বিকাল পোনা ছাড়ার ভালো সময়;

৯ম ধাপ : দিনে দুইবার সকাল ১০টায় এবং বিকাল ৩টায় খৈল, কুঁড়া, ভুসিসহ সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
সতর্কতা ও পরিচর্যা

রোগ প্রতিরোধী মাছের চাষ করতে হবে; সঠিক সংখ্যায় পোনা মজুদ করতে হবে; পোনা ছাড়ার আগে পোনা রোগে আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে; পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং পুকুরে যাতে আগাছা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে; প্রতি ৩-৪ বছর পরপর পুকুর শুকিয়ে ফেলে নতুন করে পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হবে; বর্ষার শেষে পুকুরের পানিতে লাল বা সবুজভাব কমে গেলে অবশ্যই পরিমাণমতো সার দিতে হবে; মাঝে মাঝে জাল টেনে মাছের অবস্থা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখতে হবে; পুকুরে জাল টেনে দড়ি টেনে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ানো এবং মাছের ব্যায়াম করাতে হবে।

 

পোনা যত্নও মজুদ:

মাছ চাষি হ্যাচারি থেকে যেসব পোনা সংগ্রহ করেন তার অধিকাংশই সরাসরি চাষ পুকুরে ছাড়ার উপযোগী নয়। চাষ পুকুরে ছোট পোনা সরাসরি ছেড়ে অনেক সময় চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এতে ব্যাপক হারে পোনা মারা যায়। এ কারণে পোনা ভালোভাবে নার্সিং করতে হবে। নার্সিং করার পর পোনা বড় ও টেকসই হলে গণনার মাধ্যমে পোনা মজুদ পুকুরে দেয়া যায় এবং পরবর্তীতে খাবার ব্যবস্থাপনার সাথে অন্যান্য ব্যবস্থাপনাও যথার্থ হতে হবে। একক চাষের ক্ষেত্রে বিশেষত শিং, মাগুর, কৈ, তেলাপিয়া প্রভৃতি মাছের পোনা হ্যাচারি থেকে সরাসরি চাষ পুকুরে দিয়ে অনেক চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ইচ্ছেমতো বা পুকুরের জায়গার তুলনায় অধিক পরিমাণে পোনা ছাড়া আমাদের মৎস্য চাষিদের একটি প্রচলিত ত্রুটি। তাদের ধারণা বেশি পোনা ছাড়া হলেই বেশি উৎপাদন হবে। চাষের ধরন, অবকাঠামো, পানি বদলানোর সুবিধা, খাবারের ধরন, মাছ চাষের মেয়াদ, মাছের প্রজাতি এসব বিবেচনা করে পোনা মজুতের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ চাষি বা অভিজ্ঞ মৎস্য কর্মকর্তার কাছ থেকে তারা পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। বেশি পোনা নয় বরং পরিমিত পরিমাণে পোনা ছেড়ে অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ।

 

পোনা নির্বাচন পরিবহন ও অবমুক্তকরণ:

চাষিকে মানসম্মত ব্রুড থেকে উৎপাদিত এবং অন্তঃপ্রজনন মুক্ত পোনা, একই আকারের ও বয়সের রোগমুক্ত পোনা সংগ্রহ করতে হবে। মানসম্পন্ন পোনা সংগ্রহ করার পর তা সঠিক নিয়মে পরিবহন এবং পরিবহনের পর যথার্থভাবে পুকুরে অবমুক্ত করতে হবে। পরিবহনজনিত ক্রটি থাকায় এবং পরিবহনের আগে পোনা সঠিক নিয়মে টেকসই করা হয় না বলে পোনা ব্যাপক হারে মারা যায়। অনেক সময় তাৎক্ষণিকভাবে মারা না গেলেও পোনা এতই দুর্বল থাকে যে দুই একদিনের মধ্যে অনেক পোনাই মারা যায়। এ কারণে পোনা পরিবহন ও পোনা ছাড়ার ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে।

 

মিশ্রচাষে জাত নির্বাচন:

পুকুরে পানির তিনটি স্তরে একই রকমের মাছ থাকে না। এ কারণে মিশ্রচাষে প্রজাতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ওপরের স্তর, মধ্য স্তর এবং নিচের স্তরের বিষয়টি বিবেচনা করে প্রতিটি স্তর সঠিক ব্যবহারের জন্য সঠিক সংখ্যা সঠিক প্রজাতি নির্বাচন করতে হবে। অনেক সময় মাছ চাষিরা কোনো একটি স্তরে বেশি মাছ ছেড়ে দেন অথচ অন্য একটি স্তরের উপযোগী মাছ ছাড়েন না। এতে কখনও ভালো ফল আসে না। তাছাড়া একই স্তরে বসবাসকারী বেশি মাছের জন্য তাদের নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন কারণে প্রতিযোগিতা করতে হয়। তাই প্রতিটি স্তরের সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য আনুপাতিক হারে মাছ ছাড়তে হবে। পরস্পরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় এমন প্রজাতি এড়িয়ে যাওয়া ভালো।

ওপরের স্তরের জন্য কাতলা, সিলভার কার্প, তেলাপিয়া, সরপুঁটি, মধ্য স্তরের জন্য রুই, তেলাপিয়া, সরপুঁটি, নিচের স্তরে মৃগেল, মিররকার্প, কার্পিও, কালো বাউশ এ ধরনের মাছ আবাদ করতে হয়। পোনা ছাড়ার সময় আনুপাতিক হার ঠিক রেখেই পোনা ছাড়তে হবে। একই সাথে মৃগেল এবং গলদা চিংড়ি ছাড়া হলে গলদা চিংড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার মাংসভোজী অর্থাৎ একে অপরকে খেয়ে ফেলে এ ধরনের প্রজাতি মিশ্রচাষে দেয়া যাবে না। মিশ্রচাষে রাক্ষুসে প্রজাতিকে এড়িয়ে যাওয়া অত্যাবশ্যক।

 

 

পানির গুণাগুণ রক্ষা:

মাছ পানিতে থাকে বলেই পানির গুণাগুণ ও পরিবেশ রক্ষা করাটা জরুরি। অথচ অনেক মাছ চাষি পানির গুণাগুণ রক্ষায় সচেষ্ট নন। মাছ চাষের জন্য পানির নির্ধারিত স্থিতিমাপ রয়েছে। এগুলো দক্ষতার সাথে রক্ষা করতে পারলে চাষকালীন নানা সমস্যা এড়ানো সম্ভব। পানির পিএইচ, অ্যামোনিয়া, ক্ষারত্ব, দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রভৃতির আদর্শ মাত্রা রয়েছে। এ মাত্রা অতিক্রম করলে বা অস্বাভাবিক কমবেশি হলেই বিপত্তি ঘটে। চাষিরা টেস্ট কিটের মাধ্যমে মাত্রা মেপে পানির গুণাগুণ জানতে এবং করণীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। এ কারণে সব মাছ চাষিদের জন্য একটি টেস্ট কিট রাখা অতি জরুরি।

 

মাছের খাবার ব্যবস্থাপনা:

লাভজনক মাছ চাষের জন্য মানসম্মত খাবার অন্যতম প্রধান শর্ত। কেননা মাছ চাষে ৭০% এর বেশি খরচ হয় খাদ্য সরবরাহে। বাজারের খাদ্য এবং নিজে খাদ্য তৈরি করে সরবরাহ করেন। সঠিক পুষ্টিমান সম্পন্ন এবং মাছের আকার ও বয়স উপযোগী খাবার সরবরাহ না করলে লাভ হবে না। অনেক চাষি নিম্নমানের খাবার কিনে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাছাড়া পরীক্ষাগারে খাদ্য পরীক্ষা করালে খাদ্যের পুষ্টিমান সম্পর্কে জানা যায়।

কম খাবার সরবরাহ করলে যেমন মাছের প্রত্যাশিত উৎপাদন পাওয়া যায় না তেমনি বেশি পরিমাণে খাবার সরবরাহে লোকশান হয়। এতে খাবার ও অর্থ দুই-ই অপচয় হয় এবং পানি দূষণের জন্য মাছ মারা যায়। সাধারণত মাছের পোনার সংখ্যা অজানা থাকায় খাদ্য প্রয়োাগের হিসাবে গড়মিল থাকায় সঠিকমাত্রায় খাবার সরবরাহ করতে পারেন না। এজন্য মাছের সংখ্যা এবং গড় ওজন জেনে পানির গুণাগুণের দিক বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পরিমাণে খাবার সরবরাহ করা দরকার।

অনেকে নিয়মিত খাবার সরবরাহ করার পরিবর্তে মাঝে মাঝে ও অনিয়মিতভাবে খাবার সরবরাহ করেন। এভাবে খাবার সরবরাহ করলে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করা সম্ভব নয়। অর্থাভাবে চাষের মাঝামাঝি সময়ে খাবার সরবরাহে ব্যর্থ হলে চাষি লাভবান হতে পারে না। মাছ চাষে পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনে জৈব ও অজৈব সারের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। অনেক চাষি কেবল সার প্রয়োগের মাধ্যমে মাছ চাষ করতে চান। এ ধারণা থেকে অতিরিক্ত সার প্রয়োগে বিপদ ডেকে আনেন। পানিতে প্লাংক্টন বুম বেশি হয়ে সমস্যার সৃষ্টি করে এক পর্যায়ে পানি নষ্ট হয়ে যায় এবং পুকুরে গ্যাস সৃষ্টি হয়ে মাছ মারা যায়। সুতরাং প্রয়োজন হলেই সার দেয়া উচিত না হলে দরকার নেই। মাছের সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা একান্ত জরুরি।

 

পোলট্রি লিটার ব্যবহার:

পোলট্রি লিটারে খাদ্যমান রয়েছে এ চিন্তা থেকে অনেক মাছ চাষি পোলট্রি লিটারকেই কেবল মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। কিন্তু লিটার ব্যবহারের কারণে মাছ চাষিরা নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। পোলট্রি লিটারে কাঠের গুঁড়া ব্যবহার করা হয় যা মাছ খেয়ে পরিপাক হয় না এবং তা থেকে বদহজম হয় পেট ফুলে মাছ মারা যায়। আবার লিটারে কেবল তুষ থাকার কারণে একই সমস্যা হয়। বেশি পরিমাণে লিটার পানির গুণাগুণ নষ্ট করে। পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাসের কারণে ব্যাপকহারে মাছ মারা যায় এবং পানির গুণাগুণ রক্ষা করতে গিয়ে ওষুধপত্র কিনতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। তাছাড়া এ লিটারের মাধ্যমে মাছে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া যায় যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

নিয়মিত ওজন নেয়া ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা:

প্রতি ১০-১৫ দিন পর পর মাছের গড় ওজন নেয়া আবশ্যক। তা না হলে খাবারের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করা যায় না। মাছের ওজন না নিলে চাষিও বুঝতে পারেন না যে মাছের বাড়বাড়তি সন্তোষজনক নাকি হতাশাব্যঞ্জক। পোনা ছেড়ে এবং খাবার সরবরাহ করেই চাষির দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। মাছের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণ একটি বড় কাজ। মাছের অস্বাভাবিক আচরণ বা দেহে অস্বাভাবিক কোনো কিছু দেখা গেলে বা ক্ষত হলে মৎস্য বিশেষজ্ঞ বা মৎস্য কর্মকর্তার শরণাপন্ন হতে হবে। তবে মাছের রোগ হলে চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধে অধিক মনোযোগী হলে মাছচাষি ক্ষতি এড়াতে পারেন। স্বাস্থ্যসম্মত চাষ ব্যবস্থা

বাস্তবায়নে মাছ চাষে চিকিৎসা, নানা ওষুধপত্র এবং পুষ্টিপণ্য পাওয়া যাচ্ছে যা চাষি ব্যবহার করে সুবিধা পেতে পারেন। আমাদের দেশেও নানা কোম্পানি নানা পণ্য বাজারজাত করছে। অনেক সময় তারা সস্তায় এসব কিনে প্রতারিত হন। আবার সঠিক ব্যবহার বিধি না জানা বা সঠিক মাত্রায় ব্যবহার না করায় সুফল পাচ্ছে না। এ কারণে মৎস্যবিদ বা অভিজ্ঞ চাষির পরামর্শে সঠিক ওষুধ, সঠিক মাত্রায়, সঠিক সময়ে এবং প্রয়োগ বিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

একই পুকুর থেকে একাধারে কয়েক দিন মাছ ধরলে চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। কেননা পরপর কয়েক দিন জাল টানলে অন্য মাছ খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয় বলে মাছের ওজন কমে যায় এবং আঘাতজনিত কারণেও কিছু মাছ মারা যেতে পারে। এ কারণে একটানা কয়েক দিন মাছ না ধরে মাঝে বিরতি দেয়া উচিত।

 

মাছ পরিবহন:

মাছ ধরে সঠিকভাবে বাজারজাত করতে না পারলে মাছ চাষি চাষের শেষ দিকে এসে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। যেসব মাছ জীবিত পরিবহন করা হয় সেগুলো অনেক ক্ষেত্রে অধিক সময় পরিবহন বা অন্য কোনো ক্রটির কারণে মারা যায়। এ ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ড্রামে পরিষ্কার পানিসহ পরিমিত মাছ পরিবহন করা উচিত। আজকাল ড্রামসহ গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়। শিং, মাগুর, কৈ মাছ এভাবে পরিবহন করা হয়। ড্রামে নেয়ার আগে কিছু সময় হাপায় রাখা আবশ্যক। মাছ ধরার ৮-১০ ঘণ্টা আগে খাবার দেয়া বন্ধ রাখলে মাছ অধিক সময় জীবিত থাকে। অন্যান্য মাছ দূরত্ব ভেদে বরফজাত করা উচিত। মাছ চাষিরা একটু সতর্ক হলে এবং চাষকালে প্রতিটি ধাপে দক্ষতার পরিচয় দিলে ক্ষতি বা লোকসান থেকে রক্ষা পেয়ে নিশ্চিত লাভবান হতে পারবেন।

মাছের প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ:

মাছ প্রক্রিয়াজাতের সময় হাত দিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করা যাবে না; মাছ ধরার পর মাছের আকৃতি অনুযায়ী আলাদা করে ফেলতে হবে; বাক্সে বা পাত্রে বরফ দিয়ে স্তরে স্তরে মাছ সাজাতে হবে; শুকনোভাবে অথবা ভেজা অবস্থায় লবণ দিয়ে মাছ সংরক্ষণ করা যায়; মাছ কেটে নাড়িভুঁড়ি ও মাথা ফেলে দিয়ে চাক করে সেগুলো সিদ্ধ করতে হবে। এরপর লবণ, তেল, মসলা চাকের সাথে মেখে টিনের পাত্রে সুন্দর করে স্তরে স্তরে সাজিয়ে পাত্রটি বায়ুশূন্য করে মুখবন্ধ করতে হবে।

একে ফিশকেনিং পদ্ধতি বলে। বরফ ছোট ছোট টুকরা করে ঝুড়ি বা প্যাকিং বাক্সের তলায় ঘন করে স্তরে স্তরে বরফ দিয়ে মাছ প্যাকিং করে দিতে হবে; ব্যবসাভিত্তিক মাছ কোল্ড স্টোরেজে কমদামে একসাথে অনেক সংরক্ষণ করা যায়; বালির ওপর মাছ ছাড়িয়ে দিয়ে অথবা দড়ি টানিয়ে রোদের তাপে ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। তবে তাজা মাছ খাওয়া বেশি সুস্বাদু এবং লাভজনক।

মাছ আমাদের অমূল্য প্রাণিজ জাতীয় সম্পদ। নিজেদের একান্ত প্রয়োজনে পরিকল্পিতভাবে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি পদ্ধতি অনুসরণ এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করলে মাছ চাষে কম খরচে বেশি লাভবান হওয়া যায়। মাছ দিয়ে আমরা আমাদের দেশকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারব। রূপালি সম্পদে দেশকে টইটম্বুর করতে পারব। পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে কৃষি নিয়ে দাঁড়াতে পারব। আমাদের পারিবারিক সামান্য জলসীমা যেন আমরা খালি না রেখে পরিকল্পিত উপায়ে মাছ চাষ করি।

কবির বিন জবেদ*
*জবেদ ফয়জুন মঞ্জিল, রামপুর বাজার, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর

 

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা। কৃষি উৎপাদনে বালাই বা ক্ষতিকর পোকামাকড়, রোগজীবাণু ও আগাছা অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। অতিরিক্ত বা অযৌক্তিকভাবে রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করলে যেমন পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে, তেমনি তা দীর্ঘমেয়াদে মাটির উর্বরতা ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস করে। এই প্রেক্ষাপটে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা (Integrated Pest Management – IPM) একটি কার্যকর ও টেকসই পন্থা হিসেবে স্বীকৃত। এই ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হলো— অর্থনৈতিক ক্ষতির সীমা বজায় রেখে, বালাই দমনে সকল সম্ভাব্য কৌশলকে একত্রে প্রয়োগ করে পরিবেশবান্ধবভাবে কৃষিজ উৎপাদন নিশ্চিত করা।

এই ব্যবস্থায় কেবল রাসায়নিক নয়, বরং জৈব, যান্ত্রিক, জেনেটিক ও সাংস্কৃতিক কৌশলও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। IPM ব্যবস্থা কৃষকের খরচ কমিয়ে দেয়, ফসলের গুণমান বৃদ্ধি করে এবং কৃষিকে পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের দিক থেকে অধিক নিরাপদ করে তোলে।

আপদের সঠিক কোন সংজ্ঞা দেয়া যায় না কারণ এটা বিভিন্নভাবে পরিবর্তনশীল । শুরু ব্যাপক অর্থে যে কোন প্রাণী বা উদ্ভিদ যা মানুষ, তাদের পালিত পশু-পাখি, ফসল, ব্যবহৃত দ্রব্যাদি প্রভৃতির ক্ষতিসাধন করে বা বিরক্তির উদ্রেক করে থাকে তাকে আপন বা বালাই বলা হয়।

যেমন- পোকামাকড়, ইদুরজাতীয় প্রাণী, শিয়াল, পাখি, কাঠবিড়ালি, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, কৃমি, আগাছা ইত্যাদি। ফল বিবেচনা করলে আপসসমূহের মধ্যে পোকামাকড়ের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।

 

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা হলো উদ্ভিদ সংরক্ষণের একটি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পদ্ধতি, যার মাধ্যমে বিভিন্ন দমন কৌশলের সমন্বয় ঘটিয়ে ক্ষতিকর বালাইগুলোকে অর্থনৈতিক ক্ষতির সীমার নিচে রাখা হয়। এতে রাসায়নিক, জৈব, যান্ত্রিক, জেনেটিক এবং সাংস্কৃতিক পদ্ধতির সমন্বয়ে একটি সুষম কৌশল গড়ে ওঠে। এই ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য ফসলের ক্ষতি কমানো এবং পরিবেশ ও উপকারী প্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা।

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনার মূল বৈশিষ্ট্য:
  • IPM-এ শুধু রাসায়নিক কীটনাশক নয় বরং কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে সমস্যার নিরূপণ ও সমাধানে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়।
  • পোকা-মাকড়, রোগ ও আগাছার চক্র বুঝে তাদের সংক্রমণের মাত্রা ও প্রকৃতি অনুযায়ী কৌশল প্রয়োগ করা হয়।
  • নির্দিষ্ট ক্ষতির মাত্রা (“Economic Threshold Level – ETL”)-এর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কীটনাশক ব্যবহার করা হবে কিনা।

 

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনার উপকারিতা:
ক্র. উপকারিতা ব্যাখ্যা
প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা উপকারী জীব যেমন ব্যাঙ, গিরগিটি, টিকটিকি ও পরজীবী পোকা সংরক্ষিত থাকে
পরিবেশ দূষণ কমানো অকার্যকর বা অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার না করায় মাটি, পানি ও বায়ু কম দূষিত হয়
উপকারী পোকামাকড় সংরক্ষণ পরজীবী এবং পরভোজী পোকামাকড়ের জীবিত থাকা ফসলের জন্য প্রাকৃতিক রক্ষা দেয়াল
কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস শুধুমাত্র প্রয়োজন হলে ও পরিমাণ বুঝে ব্যবহার করা হয়
ফসলের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়মিত আক্রমণ থেকে ফসল নিজে রক্ষা করার ক্ষমতা তৈরি করে
কীট প্রতিরোধীতা হ্রাস অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারে যে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে, তা অনেকাংশে রোধ হয়
উৎপাদন খরচ কমে, ফলন বাড়ে কম কীটনাশক, সঠিক কৌশল ও সময়ে ব্যবস্থাপনার ফলে খরচ কমে, ফলন বাড়ে

 

IPM ব্যবস্থায় ব্যবহৃত প্রধান কৌশলগুলো:
কৌশল উদাহরণ
১. সাংস্কৃতিক দমন সঠিক সময়ে চাষ, ফসলের ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ, ফসল পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন (Crop Rotation)
২. যান্ত্রিক দমন হাত দিয়ে বা ফাঁদ দিয়ে পোকা ধরা, আলোর ফাঁদ, পিপিই ব্যবহার
৩. জৈব দমন ট্রাইকোগ্রামা পোকা ছাড়া, বিটি ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার
৪. রাসায়নিক দমন (সীমিতভাবে) নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করলে কীটনাশক ব্যবহারে অনুমোদিত প্রয়োগ
৫. প্রতিরোধী জাত ব্যবহার রোগ ও পোকা সহিষ্ণু বা প্রতিরোধী জাত ব্যবহার

 

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, অন্যদিকে কৃষকের জন্য একটি লাভজনক ও দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদন পদ্ধতি নিশ্চিত করে। একে যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে এটি বাংলাদেশের কৃষিতে একটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব বিপ্লব এনে দিতে পারে।

 

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা (IPM) হলো এমন একটি পরিবেশবান্ধব কৌশল, যার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষতির নিচে থেকে বালাই নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। এতে একাধিক দমন কৌশল (সংস্কৃতিক, জৈবিক, যান্ত্রিক, রাসায়নিক ও প্রতিরোধক জাত) একত্রে এবং সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করা হয়।

নিম্নে এই ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলো ব্যাখ্যা করা হলো:

 

. আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির মাধ্যমে দমন

  • জমি গভীরভাবে চাষ করলে মাটির নিচের পোকা ও ডিম উঠে এসে রোদে বা পাখির খাদ্য হয়ে মারা যায়।
  • ফসল পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন করলে নির্দিষ্ট পোকামাকড় বা রোগের চক্র ভেঙে যায়।
  • সুষম সার ব্যবহারে গাছ সুস্থ থাকে, ফলে রোগ বা পোকার আক্রমণ কমে।
  • ধানখেতে অতিরিক্ত পানি অপসারণ বা সেচ ব্যবস্থা বদল করে নির্দিষ্ট পোকার (যেমন গাছ ফড়িং বা শীষকাটা পোকা) আক্রমণ কমানো যায়।

 

. প্রতিরোধক শস্যের মাধ্যমে দমন

  • প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করলে প্রাকৃতিকভাবেই রোগ বা পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়।
  • উদাহরণ:
    • চান্দিনা ধান – মাজরা পোকার প্রতিরোধী।
    • প্রগতি ধান – টুংরো ভাইরাস, রস্ট ও বাকানী রোগ প্রতিরোধী।

 

. যান্ত্রিক পদ্ধতিতে দমন

  • মানুষের হাত বা যন্ত্র ব্যবহার করে পোকা ধ্বংস করা হয়।
  • পদ্ধতিসমূহ:
    • হাতজাল বা দলে ধরে পোকা ধরা
    • পিটিয়ে, ঝাঁকিয়ে ফেলা
    • কুলা বা চালুনিতে চেলে ফেলা
    • আলো ফাঁদ – আলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পোকা ধরা পড়ে

 

. জৈবিক পদ্ধতিতে দমন

  • প্রাকৃতিক শত্রু বা পরজীবীর মাধ্যমে ক্ষতিকর পোকা দমন করা।
  • উদাহরণ:
    • Trichogramma spp. – ডিমপর্যায়ে পরজীবী
    • Beauveria bassiana – ছত্রাক, যা পোকামাকড়ে সংক্রমণ ঘটায়
    • লেডি বিটল – অ্যাফিড দমন করে

 

. রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন

  • অনুমোদিত এবং নির্দিষ্ট মাত্রায় বালাইনাশক ব্যবহার করে বালাই দমন করা।
  • উদাহরণ:
    • ডায়াজিনন ৬০ ইসি – উদ্ভিদভোজী পোকা দমনে ব্যবহৃত
    • ম্যালাথিয়ন – চুষে খাওয়া পোকা দমনে কার্যকর
    • কুইনালফস, কার্বারিল, ক্লোরপাইরিফস – অন্যান্য বহুল ব্যবহৃত কীটনাশক

 

পদ্ধতিগুলোর তুলনামূলক টেবিল:

দমন পদ্ধতির নাম কার্যপদ্ধতি / কৌশল উদাহরণ / মন্তব্য
আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি গভীর চাষ, ফসল পরিবর্তন, সুষম সার প্রয়োগ, পানি ব্যবস্থাপনা চুঙ্গি পোকার দমন, শীষ কাটা পোকা নিয়ন্ত্রণ
প্রতিরোধক শস্য রোগ ও পোকা প্রতিরোধী জাত ব্যবহার চান্দিনা, প্রগতি জাত
যান্ত্রিক পদ্ধতি ফাঁদ, ঝাঁকানো, কুলা, আলো ফাঁদ ধানক্ষেতে আলো ফাঁদ
জৈবিক পদ্ধতি পরজীবী ও শিকারি জীবের ব্যবহার Trichogramma, Lady Beetle, ছত্রাক
রাসায়নিক পদ্ধতি অনুমোদিত কীটনাশকের সঠিক মাত্রায় ব্যবহার ডায়াজিনন ৬০ ইসি, ম্যালাথিয়ন

 

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা হলো আধুনিক কৃষির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি শুধু উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে না, বরং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায়ও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সঠিক সময়ে ও সঠিক পদ্ধতি বেছে নিয়ে IPM বাস্তবায়ন করলে কৃষক অধিক লাভবান হতে পারে এবং কৃষি ব্যবস্থাপনা আরও টেকসই ও পরিবেশবান্ধব হতে পারে।

 

 

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনার উপাদানসমূহ

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা (IPM) হলো এমন একটি ফসলভিত্তিক টেকসই কৌশল, যার মাধ্যমে ফসলের পুরো চাষাবাদ চক্রে (চারা অবস্থা, বৃদ্ধির পর্যায়, ফুল ও ফল ধরা পর্যন্ত) বালাই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। IPM-এর লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক ক্ষতির মাত্রার নিচে বালাই রাখা এবং পরিবেশ, মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে আনা।

IPM বাস্তবায়নে নিচের ৫টি প্রধান উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:

 

. পর্যবেক্ষণ (Monitoring)

  • ফসলের ক্ষেতে নিয়মিত পরিদর্শনের মাধ্যমে বালাই বা তাদের উপসর্গ আছে কি না তা খেয়াল রাখা।
  • এটি প্রাথমিক সংকেত দেয় যে বালাই নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন কি না।

. জরিপ (Survey)

  • জমিতে উপস্থিত বালাই ও তাদের প্রাকৃতিক শত্রুদের সনাক্তকরণ ও গণনা করা।
  • উদাহরণ: প্রতি নির্দিষ্ট সংখ্যক গাছে কীটপতঙ্গ বা রোগ লক্ষণ কত শতাংশে বিদ্যমান তা নথিভুক্ত করা।

. দমননীতি (Decision-Making Rules)

  • নির্ধারণ করা যে কখন, কত পরিমাণ আক্রমণ হলে এবং কোন পদ্ধতি বেছে নিয়ে বালাই দমন করতে হবে।
  • একে ইকোনমিক থ্রেশহোল্ড লেভেল (ETL) বা অর্থনৈতিক সহনশীল মাত্রাও বলা হয়।

. দমন পদ্ধতি (Control Methods)

  • নিচের চারটি পদ্ধতি থেকে প্রয়োজনে একাধিক কৌশল প্রয়োগ করা হয়:
    • যান্ত্রিক পদ্ধতি: ফাঁদ, হাতজাল, আলো ফাঁদ ইত্যাদি
    • জৈবিক পদ্ধতি: পরজীবী পোকা বা ছত্রাকের ব্যবহার
    • রাসায়নিক পদ্ধতি: অনুমোদিত কীটনাশক, নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ
    • কৃষিনির্ভর পদ্ধতি: জমি চাষ, ফসল পরিবর্তন, সময়মতো সেচ

. অজীবীয় উপাদান (Abiotic Factors)

  • তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, কুয়াশা, বৃষ্টি, বাতাসের গতি ইত্যাদি পরিবেশগত উপাদান অনেক সময় বালাইকে প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
  • যেমন—গ্রীষ্মকালে অধিক তাপমাত্রায় ছত্রাকজাত রোগ কমে যায়, বর্ষায় কিছু পোকা প্রাকৃতিকভাবে ধ্বংস হয়।

 

টেবিলে উপস্থাপন: IPM এর উপাদান কার্যকারিতা

উপাদান কার্যকারিতা বা ভূমিকা
পর্যবেক্ষণ ক্ষেতে নিয়মিত পরিদর্শন করে বালাই উপস্থিতি শনাক্তকরণ
জরিপ বালাই ও প্রাকৃতিক শত্রুর সংখ্যা নিরূপণ
দমননীতি কখন ও কী পদ্ধতিতে দমন করতে হবে তা নির্ধারণ
দমন পদ্ধতি যান্ত্রিক, রাসায়নিক, জৈবিক ও কৃষিনির্ভর উপায় প্রয়োগ
অজীবীয় উপাদান আবহাওয়া ও পরিবেশের প্রতিকূলতা কাজে লাগিয়ে বালাই দমন

 

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনার এই উপাদানসমূহ একে অপরের পরিপূরক। এসব উপাদান কার্যকরভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে ফসলের গুণগত মান বজায় থাকে, উৎপাদন ব্যয় কমে, পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে এবং কৃষি হয় অধিক টেকসই ও লাভজনক।

 

 

 

সারমর্ম

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা হলো উদ্ভিদ সংরক্ষণের একটি পদক্ষেপ যেখানে বিভিন্ন প্রকার দমন পদ্ধতির সমন্ধ্যা সাধন ও প্রয়োগ করাকে বুঝায় অর্থাৎ যখন যে পদ্ধতির দরকার সেটির ব্যবহার বুঝায়। এ ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য হলো পোকামাকড় সম্পূর্ণভাবে নয় বরং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিকর পর্যায়ের নিচে রাখা হয়। এ ব্যবস্থাপনা শস্যভিত্তিক হয়ে থাকে। এর প্রধান উপাদান ৫টি। যথা- পর্যবেক্ষণ, জরিপ, দমননীতি দমন পদ্ধতি ও অজীবীয় উপাদান।

বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ

কৃষির প্রাণ হলো বীজ। ভালো মানের বীজ ছাড়া উচ্চ ফলন, মানসম্পন্ন ফসল এবং কৃষির ধারাবাহিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক দেশ হিসেবে বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বীজের গুণগত মান সরাসরি নির্ভর করে সঠিক উৎপাদন প্রক্রিয়া, রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ, সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কৌশলের ওপর।

ভালো বীজ ব্যবহার করলে উৎপাদন ১৫–২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বাস্তবে অনেক কৃষক এখনও নিম্নমানের বা অনুন্নত বীজ ব্যবহার করেন, ফলে কাঙ্ক্ষিত ফলন পান না। তাই বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং স্থানীয় পর্যায়ে বীজ ব্যাংক গড়ে তোলা টেকসই কৃষি নিশ্চিতের অন্যতম প্রধান কৌশল।

বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ

 

 

বীজ উৎপাদনের কৌশল

ফসলের ভালো ফলন পেতে হলে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদনের বিকল্প নেই। সাধারণ ফসল উৎপাদনের তুলনায় বীজ ফসল উৎপাদন পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন। এজন্য বিশেষ পরিচর্যা ও যত্ন প্রয়োজন। এই বীজ থেকেই খাওয়ার জন্য ফসল উৎপাদন করা হয়।

বীজ ফসল উৎপাদনে কয়েকটি কৌশল অনুসরণ করতে হয়:

১. স্থান নির্বাচন

ভালো মানের বীজ উৎপাদনের জন্য এমন স্থান নির্বাচন করা উচিত যেখানে:

  • প্রচুর সূর্যালোক পাওয়া যায়,

  • মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়,

  • আবহাওয়া শুষ্ক ও ঠাণ্ডা থাকে,

  • পরাগায়নের সময় হালকা বাতাস প্রবাহিত হয়।

 

 

২. জমি নির্বাচন
  • উর্বর, জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ সমতল ভূমি বেছে নিতে হবে।

  • জমিতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থাকবে এবং আগাছার প্রকোপ কম হবে।

  • একই জমিতে বারবার একই জাতের ফসল চাষ না করাই শ্রেয়।

 

 

বীজ সংগ্রহ

ভালো বীজ উৎপাদনের জন্য সঠিক উৎস থেকে বীজ সংগ্রহ অপরিহার্য। এজন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়:

  1. অবশ্যই বীজ অনুমোদনকারী সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত বীজ সংগ্রহ করতে হবে।

  2. প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদনের জন্য ভিত্তি বীজ এবং ভিত্তি বীজ উৎপাদনের জন্য মৌল বীজ সংগ্রহ করা উচিত।

  3. বীজের বস্তা বা প্যাকেটের ট্যাগ পরীক্ষা করতে হবে। সেখানে উল্লেখ থাকবে:

    • জাতের নাম

    • ব্যবহারের সময়সীমা

    • গজাবার ক্ষমতা

    • আর্দ্রতা

    • বীজ পরীক্ষার তারিখ

  4. বীজ বপনের আগে এর গজানোর ক্ষমতা, বিশুদ্ধতা এবং জমির উর্বরতা বিবেচনা করতে হবে।

  5. নির্দিষ্ট জমিতে প্রয়োজনীয় বীজের পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে।

 

 

 

জমি প্রস্ততকরণ :

১. জমি প্রস্তুতকরণ
  • বিভিন্ন জাতের বীজ ফসলের জন্য জমি ভিন্নভাবে তৈরি করতে হয়।

  • ধানের জমি (আউশ/আমন): শুকনো অবস্থায় ৪–৬ বার চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করতে হবে।

  • রোপা ধান: জমিতে পানি ধরে কাদা করে প্রস্তুত করতে হয়।

 

২. বীজ বপনের সময় ও পদ্ধতি
  • নির্বাচিত বীজ সঠিক সময়ে সারিতে বা ছিটিয়ে বপন করতে হয়।

  • সারিতে বপন করলে এর সুবিধা:

    • আলো ও বাতাস সহজে পাওয়া যায়।

    • পরিচর্যা সহজ হয়।

    • বীজও কম লাগে।

  • বপনের গভীরতা নির্ভর করে:

    • বীজের আকার

    • মাটির বুনট

    • আর্দ্রতা

 

৩. স্বাতন্ত্রিকরণ বা পৃথকীকরণ দূরত্ব
  • অনাকাঙ্ক্ষিত সংমিশ্রণ রোধে বীজ ফসলের প্লটের চারপাশে নিরাপদ দূরত্ব রাখতে হবে।

  • ধানের ক্ষেত্রে:

    • ভিত্তি বীজ প্লট → ৯ মিটার দূরত্ব।

    • প্রত্যায়িত বীজ প্লট → ৫ মিটার দূরত্ব।

 

৪. বাছাইকরণ বা রোগিং

ভালো বীজ বপন করলেও অনেক সময় জমিতে অন্য জাতের গাছ জন্মায়। এসব গাছ ফেলে দিতে হয়। একেই রোগিং বলা হয়।

  • রোগিং সাধারণত তিন পর্যায়ে করা যায়:
    ১. গাছে ফুল আসার আগে।
    ২. ফুল আসার সময়।
    ৩. ফসল পরিপক্ক হওয়ার আগে।

এতে বীজের বিশুদ্ধতা ও গুণগত মান বজায় থাকে।

৫. পরিচর্যা
  • জমিতে প্রয়োজনমতো সার ও পানি সেচ দিতে হবে।

  • জলাবদ্ধতা দেখা দিলে অতিরিক্ত পানি বের করে নিতে হবে।

  • আগাছা হলে নিড়ানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

  • পোকা-মাকড় ও রোগবালাই দেখা দিলে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬. বীজ সংগ্রহ
  • ফসল ভালোভাবে পরিপক্ক হওয়ার পর বীজ কাটতে হবে।

  • এরপর মাড়াই করে ঝেড়ে পরিষ্কার করতে হবে।

 

৭. প্রক্রিয়াজাতকরণ
  • মাড়াই শেষে বীজ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

  • এসময় বেছে নিতে হবে:

    • অন্য জাতের বীজ

    • অন্য ফসলের বীজ

    • আগাছার বীজ

    • খড়কুটা ও ভাঙা দানা

  • ঝাড়াই শেষে ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।

 

৮. সংরক্ষণ
  • বীজ সংরক্ষণের সময় আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

  • আর্দ্রতার মাত্রা:

    • ৪%–১২% এর মধ্যে থাকলে বীজ দীর্ঘদিন ভালো থাকে।

    • ১২% এর বেশি হলে পোকা-মাকড় ও রোগবালাই আক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে।

    • ৪% এর নিচে নেমে গেলে বীজের জীবনীশক্তি নষ্ট হয়ে যায়।

 

বীজ সংরক্ষণের নীতি :

বীজের গুণগত মান বজায় রাখা এবং দীর্ঘদিন ধরে সজীব রাখতে হলে কিছু মৌলিক নীতি অনুসরণ করা প্রয়োজন।

১. শুষ্ক ও ঠাণ্ডা পরিবেশে সংরক্ষণ

  • বীজ রাখার জায়গা অবশ্যই শুষ্ক ও ঠাণ্ডা হতে হবে।

২. ভালোভাবে শুকানো

  • সংরক্ষণের আগে বীজ কয়েকদিন রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।

  • পরে ছায়ায় রেখে ঠাণ্ডা করে সংরক্ষণ করতে হবে।

৩. বায়ুনিরোধক পাত্র ব্যবহার

  • সহজে সজীবতা হারায় না এমন উন্নতমানের বীজ

  • বায়ুনিরোধক ধাতব পাত্র বা পলিথিনের ব্যাগে সংরক্ষণ করতে হবে।

৪. পোকা ও রোগ প্রতিরোধ

  • বীজ রাখার জায়গা অবশ্যই পোকামাকড় ও রোগজীবাণুর আক্রমণমুক্ত হতে হবে।

৫. নিয়মিত পরীক্ষা

  • নির্দিষ্ট সময় পর পর বীজ পরীক্ষা করতে হবে।

  • প্রয়োজন হলে আবার শুকিয়ে নিতে হবে।

উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান

উদ্ভিদের সঠিক বৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন হয় নানা ধরণের পুষ্টি উপাদানের। এই পুষ্টি উপাদানগুলো উদ্ভিদের কোষ থেকে শুরু করে পুরো শিকড়, ডাল, পাতা এবং ফলের গঠন ও কার্যক্রমে অবদান রাখে। যেমন পানি, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম সহ বিভিন্ন খনিজ লবণ এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও অণুসমূহ উদ্ভিদের সুস্থ জীবনধারণের মূল ভিত্তি। পুষ্টি উপাদানের অভাব হলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়, ফলন কমে যায় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়। তাই কৃষি ও বাগান ব্যবস্থাপনায় উদ্ভিদের পুষ্টি চাহিদা বোঝা ও পূরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আলোচনায় আমরা উদ্ভিদের প্রধান পুষ্টি উপাদানগুলো, তাদের ভূমিকা এবং সঠিক পরিমাণে প্রয়োগের গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান

উদ্ভিদের অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান

উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, পুষ্টি সংগ্রহ এবং প্রজননের জন্য মাটি, পানি ও বায়ু থেকে যে উপাদানগুলো গ্রহণ করা হয়, সেগুলোকে পুষ্টি উপাদান বলা হয়। উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য মোট ১৬ প্রকার অজৈব উপাদান প্রয়োজন, যাদেরকে অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান বলা হয়।

এই উপাদানগুলো উদ্ভিদের গঠন ও কার্যক্রমে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। কোনো একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদানের অভাবে উদ্ভিদের অস্বাভাবিক লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং রোগের সৃষ্টি হতে পারে। একটি উপাদানের অভাব অন্য কোনও উপাদান দ্বারা পূরণ করা যায় না। মাটিতে পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ ও অবস্থান সম্পর্কে ধারনা পেতে গাছপালার পাতা, বৃদ্ধি এবং ফলনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়। পাশাপাশি মাটি ও গাছপালা রাসায়নিকভাবে বিশ্লেষণ করেও পুষ্টির সঠিক অবস্থা নির্ণয় করা যায়।

অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদানের শ্রেণিকরণ

উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো তাদের প্রয়োজনীয়তার পরিমাণ অনুসারে দুই ভাগে ভাগ করা হয়:

১. মুখ্য পুষ্টি উপাদান
২. গৌণ পুষ্টি উপাদান

মুখ্য পুষ্টি উপাদান

এই উপাদানগুলো উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য বৃহৎ পরিমাণে প্রয়োজন হয়। মুখ্য পুষ্টি উপাদানগুলো হলো:

  • কার্বন (C)
  • হাইড্রোজেন (H)
  • অক্সিজেন (O)
  • নাইট্রোজেন (N)
  • ফসফরাস (P)
  • পটাশিয়াম (K)
  • ক্যালসিয়াম (Ca)
  • ম্যাগনেসিয়াম (Mg)
গৌণ পুষ্টি উপাদান

এই উপাদানগুলো তুলনামূলকভাবে কম পরিমাণে হলেও উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়। গৌণ পুষ্টি উপাদানগুলো হলো:

  • লৌহ (Fe)
  • জিংক (Zn)
  • ম্যাঙ্গানিজ (Mn)
  • মলিবডেনাম (Mo)
  • বোৰন (B)
  • কোবাল্ট (Co)
  • তামা (Cu)
  • ক্লোরিন (Cl)

 

পুষ্টি উপাদানের প্রাপ্তির উৎস

উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান প্রধানত দুইটি উৎস থেকে আসে:

১. প্রাকৃতিক উৎস
২. কৃত্রিম উৎস

. প্রাকৃতিক উৎস

মাটি, বায়ু ও পানি হলো উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদানের প্রাকৃতিক উৎস।

  • উদ্ভিদ বায়ু থেকে কার্বন ও অক্সিজেন গ্রহণ করে।
  • পানি থেকে হাইড্রোজেন গ্রহণ করে।
  • অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ইত্যাদি মাটি থেকে গ্রহণ করে।

. কৃত্রিম উৎস

উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান কৃত্রিমভাবে জৈব ও রাসায়নিক সারের মাধ্যমে সরবরাহ করা যায়।

() জৈব সার

জৈব পদার্থ থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি উপাদান উদ্ভিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ:
গোবর, কম্পোস্ট, খড়কুটা, খৈল, হাড়ের গুঁড়া ইত্যাদি জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

() রাসায়নিক সার

রাসায়নিক সারে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকে, যেমন:

  • ইউরিয়া → নাইট্রোজেন
  • টি.এস.পি. (ট্রিপল সুপার ফসফেট) → ফসফরাস
  • এম.পি. (মিউরেট অব পটাশ) → পটাশিয়াম
  • জিপসাম → গন্ধক

 

১। নাইট্রোজেন (N)

উৎস:

  • মাটিতে নাইট্রোজেনের উৎস হলো নাইট্রোজেন লবণ।
  • যদিও বায়ুমণ্ডলে ৮০% নাইট্রোজেন থাকে, উদ্ভিদ সরাসরি তা গ্রহণ করতে পারে না।
  • বাংলাদেশে ইউরিয়া (৪৫% নাইট্রোজেন) ও অ্যামোনিয়াম সালফেট (২০.৫% নাইট্রোজেন) ব্যবহৃত হয়।

কাজ:

  • উদ্ভিদের কান্ড, পাতা ও অন্যান্য অংশ গাঢ় সবুজ করে।
  • শাখা-প্রশাখার বৃদ্ধি ঘটায়।
  • অধিক কুশি সৃষ্টি করে।
  • পাতার আকৃতি বড় করে সালোকসংশ্লেষণ বৃদ্ধি করে।
  • ফুল ও ফল বড় করে।
  • দানা জাতীয় ফসলে কুশির সংখ্যা, বীজের পুষ্টতা এবং বীজে আমিষের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • পাতা হালকা সবুজ থেকে হলুদ হয়ে যায়।
  • নিচের দিকের পাতাগুলো প্রথমে হলুদ হয়।
  • গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।
  • দানা জাতীয় ফসলের কুশির সংখ্যা ও বীজের পুষ্টতা হ্রাস পায়।
  • ফলন কমে যায়, ফল সঠিকভাবে পুষ্ট হয় না।
  • ফলগাছের পাতা ঝরে পড়ে।

 

২। ফসফরাস (Phosphorus)

উৎস:
বাংলাদেশে ফসফরাসের উৎস হিসেবে মূলত দুটি সার ব্যবহৃত হয়—টি.এস.পি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ও ডি.এ.পি (ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট)। টি.এস.পিতে ফসফেটের পরিমাণ থাকে শতকরা ৪৮–৫২ ভাগ এবং ডি.এ.পিতে থাকে প্রায় ৫৪ ভাগ।

কাজ:

  • উদ্ভিদের কোষ বিভাজনে অংশগ্রহণ করে।
  • উদ্ভিদের সামগ্রিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
  • পার্শ্ব ও গুচ্ছ মূল উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
  • খাদ্য পরিবহনে সহায়তা করে, ফলে ফল ও বীজের পুষ্টতা বৃদ্ধি পায়।
  • মাইটোকন্ড্রিয়ার স্বাভাবিক কাজের জন্য অপরিহার্য। মাইটোকন্ড্রিয়া হলো কোষের শ্বসনের কেন্দ্র ও শক্তির উৎস।

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • পাতা বেগুনি বা লালচে বর্ণ ধারণ করে।
  • মূলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
  • কোষ বিভাজনে বিঘ্ন ঘটে, ফলে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয় এবং গাছ বামন আকৃতির হয়।
  • খাদ্য পরিবহন বিলম্বিত হওয়ায় ফসলের পরিপক্বতা দেরিতে ঘটে।
  • পাতা ও ফুলের সংখ্যা কমে যায়।
  • ফল ছোট হয় এবং সহজে ঝরে যায়।
  • ডাল জাতীয় ফসলে গুটি উৎপন্নকারী ব্যাকটেরিয়ার কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

 

৩। পটাশিয়াম (Potassium)

উৎস:
উদ্ভিদ মাটি থেকে আয়ন রূপে পটাশিয়াম শোষণ করে। মিউরেট অব পটাশ (এম.পি) সার পটাশিয়ামের প্রধান উৎস, এতে শতকরা ৫০–৬০ ভাগ পটাশিয়াম থাকে।

কাজ:

  • উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • পাতায় শর্করা উৎপাদনে সহায়তা করে।
  • কোষ বিভাজনে সহায়ক।
  • পত্ররন্ধ্র খোলা ও বন্ধ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • নাইট্রোজেন ও ফসফরাস শোষণে সাম্যতা বজায় রাখে।
  • দানাদার ফসল হেলে পড়ে না।
  • ফসলের খরা সহ্য করার ক্ষমতা বাড়ায়।

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • গাছের বৃদ্ধি ও উন্নয়ন ব্যাহত হয়।
  • পাতার কিনারা তামাটে বর্ণ ধারণ করে।
  • দানাদার ফসল হেলে পড়ে যেতে পারে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
  • সালোকসংশ্লেষণের হার কমে যায়।
  • খরা ও তুষারপাত সহ্য করার ক্ষমতা হ্রাস পায়।

 

৪। ক্যালসিয়াম (Calcium)

উৎস:
মাটিতে ক্যালসিয়াম লবণের মাধ্যমে বিদ্যমান থাকে। উদ্ভিদ এটিকে আয়ন হিসেবে শোষণ করে। জিপসাম বা ক্যালসিয়াম সালফেট ক্যালসিয়ামের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে শতকরা প্রায় ২২ ভাগ ক্যালসিয়াম থাকে।

কাজ:

  • কোষ প্রাচীর গঠনে সহায়তা করে।
  • মূল গঠন ও বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
  • ডাল জাতীয় ফসলে ফলন বৃদ্ধিতে সহায়ক।

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • কচি পাতায় মারাত্মক রোগ দেখা দেয়।
  • মূলের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়।
  • পাতার স্বাভাবিক সবুজ বর্ণ বিবর্ণ হয়ে যায়।
  • ফুল ফোটার সময় কান্ড শুকিয়ে যেতে পারে এবং উদ্ভিদ নেতিয়ে পড়ে।
  • শীর্ষ কুঁড়ি বা শাখা মারা যায়।

 

৫। ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium)

উৎস:
ম্যাগনেসিয়াম মাটিতে লবণের আকারে থাকে এবং উদ্ভিদ এটি আয়ন রূপে শোষণ করে। ইপসম লবণ ম্যাগনেসিয়ামের একটি সাধারণ উৎস, যাতে শতকরা ৯.৬ ভাগ ম্যাগনেসিয়াম থাকে।

কাজ:

  • সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।
  • ফসফরাস শোষণে সাহায্য করে।

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • পাতার শিরার মাঝখানের অংশ হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
  • পাতা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়।

 

৬. গন্ধক (Sulfur)

উৎস:
গন্ধক সাধারণত মাটিতে সালফেট লবণ হিসেবে থাকে। উদ্ভিদ মূলত সালফেট (SO₄²⁻) ও সালফাইড (S²⁻) আয়ন আকারে গন্ধক শোষণ করে। গন্ধকের একটি পরিচিত উৎস হলো ক্যালসিয়াম সালফেট বা জিপসাম, যাতে প্রায় ১৪% গন্ধক থাকে।

গন্ধকের কাজ:

  • (i) উদ্ভিদের সবুজ কণিকা (ক্লোরোফিল) তৈরিতে সহায়তা করে।
  • (ii) তেলজাতীয় শস্যে তৈল উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
  • (iii) গাছের দৈহিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • (iv) লিগুমিনাস (ডালজাতীয়) ফসলের শিকড়ে নাইট্রোজেন গুটি উৎপাদনে সহায়তা করে।
  • (v) উদ্ভিদে নাইট্রোজেন আত্মিকরণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • (i) কোষ বিভাজনে বিঘ্ন ঘটে।
  • (ii) গাছ খর্বাকৃতি হয়।
  • (iii) পাতা ছোট ও বিবর্ণ হয়, বিশেষ করে কচিপাতা।
  • (iv) কান্ডের শীর্ষ বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ফলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পার্শ্ব কুঁড়ি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

 

গৌণ পুষ্টি উপাদান: উৎস, কাজ ও অভাবজনিত লক্ষণ

১. লৌহ (Iron)

উৎস:
ফেরাস সালফেট সার লৌহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এটি মাটিতে প্রয়োগ করা যায় অথবা পাতায় স্প্রে করা হয়।

কাজ:

  • (i) সবুজ কণিকা (ক্লোরোফিল) গঠনে সহায়তা করে।
  • (ii) নাইট্রোজেন শোষণে সাহায্য করে।
  • (iii) জারক রসের ক্রিয়াশীলতা রক্ষায় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • (i) কচি পাতার সবুজ রং বিবর্ণ হয়ে যায়।
  • (ii) পাতার সরু শিরার মধ্যবর্তী অংশ হলুদ রঙ ধারণ করে।
  • (iii) গাছ খর্বাকৃতি হয়।

 

২. দস্তা বা জিংক (Zinc)

উৎস:
জিংক সাধারণত খনিজ লবণ হিসেবে মাটিতে থাকে। উদ্ভিদ জিংক আয়ন আকারে গ্রহণ করে। জিংক সালফেট সার দস্তার একটি প্রচলিত উৎস, যাতে প্রায় ৩৬% দস্তা ও ১৭% গন্ধক থাকে।

কাজ:

  • (i) গাছের বৃদ্ধি, আমিষ গঠন ও শ্বসন প্রক্রিয়ায় জারণকার্যে সহায়তা করে।
  • (ii) ফুল ও ফল উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।

অভাবজনিত লক্ষণ:

  • (i) কচি পাতার গোড়া বিবর্ণ হয়ে যায়।
  • (ii) পুরনো পাতা মরচে পড়া বাদামি থেকে হলুদাভ-কমলা রঙ ধারণ করে।
  • (iii) জমির চারার বৃদ্ধি অসমান হয়—কোথাও বড় কোথাও ছোট থাকে।
  • (iv) পাতার আকার ছোট হয় এবং অনেক পাতার কিনারা কুঁচকে যায়।

দেশী গরুর বৈশিষ্ট্যগুলো জানা ও খাতায় লেখা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-দেশী গরুর বৈশিষ্ট্যগুলো জানা ও খাতায় লেখা।

এই পাঠ শেষে আপনি –

দেশী গরুর বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নাম বলতে ও লিখতে পারবেন। দেশী গরুর বৈশিষ্ট্যগুলো বলতে পারবেন।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

দেশী -গরু আমাদের দেশে যদিও পরিচিত, তথাপি এর বিভিন্ন গুণাবলী ও উৎপাদন বৈশিষ্ট্যসমূহ অনেকেরই জানা নেই। আমাদের দেশী- গরুকে উন্নত করতে হলে এর মধ্যে যেসব ভালো অথবা নিম্নমানের গুণাবলী আছে তা জানা দরকার।

 

দেশী গরুর বৈশিষ্ট্যগুলো জানা ও খাতায় লেখা

 

প্রয়োজনীয় উপকরণ

একটি ষাঁড় বা গাভী, কলম, পেন্সিল, রাবার, ব্যবহারিক খাতা ইত্যাদি।

 

 

কাজের ধাপ

  • একটি দেশী- গরু দেখে প্রথমে এর দেহের বিভিন্ন অংশ ও অঙ্গের নাম জানুন।
  • নিজ বাড়িতে বা প্রতিবেশীর বাড়িতে যেখানে দেশী- গরু আছে সেখানে যান এবং পাঠ্য বইয়ে উল্লেখিত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নামের সাথে ঐ গরুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো মিলিয়ে নিন।
  • ব্যবহারিক খাতায় একটি ষাঁড় ও একটি গাভীর ছবি এঁকে এদের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চিহ্নিত করুন।
  • ব্যবহারিক খাতাটি মূল্যায়নের জন্য শিক্ষককে দেখান।

 

 

১. পোল, ২. কপাল,৩.এ নাকের বাঁশি, ৪ মুখ, ৫. চোয়াল, ৬. গলা, ৭. কাঁধের অগ্রভাগ, ৮. সিনা , ৯. কনুই, ১০. হাঁটু, ১১. পায়ের পাতা, ১২. নিম্নবক্ষদেশ, ১৩ দুগ্ধকুপ, ১৪ দুগ্ধশিরা, ১৫. ওলানের সম্মুখাংশের সংযোগ, ১৬. ওলানের সম্মুখভাগ, ১৭ ও ১৮. বাঁট, ১৯. খুর, ২০ মুরকব্জি , ২১ লেজের লোম, ২২. হক, ২৩. জংঘা ও খুরের মধ্যস্থল, ২৪ স্টাইফল, ২৫. উরু, ২৬. ওলানের পশ্চাদাংশের সংযোগ, ২৭. কটি, ২৮- লেজ ও লেজের অগ্রভাগ , ২৯. খাল, ৩০. কটির নিম্নদেশ, ৩১ পঙ্গুর, ৩২. পেটের সম্মুখভাগ, ৩৩ চটিফুল, ৩৪ বুকের বেড়, ৩৫. চটি, ৩৬ যায়, ৩৭. শিং।

 

৭.গলকম্বল, ১৪. দুগ্ধশিরা, ১৫ অবধিত বাঁট ও ১৬. অন্ডকোষ। অন্য অঙ্গগুলো গাভী ও ষাঁড়ের মধ্যে একই রকম।

সতর্কতা

  • দেশী- গরুর জাত বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষ করার সময় সতর্কতার সাথে গরুর কাছে যান।