Category Archives: বাউবি কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

বাউবি কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র

খামার স্থাপনের পরিকল্পনা

খামার স্থাপনের পরিকল্পনা পাঠঠি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয়ের ইউনিট – ১৭ , পাঠ – ১৭.৪। খামার পরিকল্পনা হচ্ছে একটি পরিবর্তনশীল, ক্রিয়া যার মাধ্যমে কৃষি পণ্যের মধ্যে কোনটির উৎপাদন লাভজনক সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন করা। খামার পরিকল্পনার অর্থ হচ্ছে কৃষকের সম্ভাব্য বিকল্পগুলোর থেকে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে লাভজনক ফসল, পণ্য বা উপকরণ বেছে নেয়া ও বাস্তবতা প্রয়োগ করা।

খামার স্থাপনের পরিকল্পনা

 

খামার পরিকল্পনার ধাপসমূহ:

১। খামারের সহজ পরিকল্পনা প্রণয়ন। যেমন: ফসল নির্বাচন, জমি নির্বাচন, উপকরণ ইত্যাদি।

২। ফসল ও কৃষি পন্য উৎপাদনের সকল উন্নত প্রযুক্তি ও পদ্ধতিসমূহ প্রয়োগ।

৩। একটি পূর্ণাঙ্গ বাজেট। অর্থাৎ খামারের সকল ফসল ও পণ্য দ্রব্যের সম্ভাব্য আয় ব্যয় নিরূপণ করা।

 

খামার স্থাপন:

খামার স্থাপনের জন্য যেসব বিষয় বিবেচনা নেয়া প্রয়োজন সেগুলো হলো—

ক) খামার মালিক বা পরিচালকের ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যসমূহ যেমন— শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা, বয়স, স্বাস্থ, রুচি ও চাহিদা।

খ) ভূতাত্ত্বিক বিষয়সমুহ, যেমন— মাটির ধরন, আবহাওয়া ও জলবায়ু, ভূমির উচ্চতা।

গ) অর্থনৈতিক বিষয়সমূহ, যেমন— উন্নত প্রযুক্তির প্রাপ্যতা, উপকরণ সরবরাহ ও দান, ঋন প্রাপ্যতা, শ্রমিক সহজলভ্যতা, জমির মূল্য উৎপাদিত পন্যের পরিবহন, বাজারজাতকরন ও দাম।

মাঠ ও উদ্যান ফসলের খামার স্থাপনের পরিকল্পনা সীমিত ব্যয়ে স্বল্প শ্রমে অধিক মুনাফা ও লাভজনক খামারে পরিণত করার জন্য একটি খামার স্থাপন পরিকল্পনা প্রয়োজন। মাঠ ও উদ্যান ফসলের খামার স্থাপনের পরিকল্পনার জন্য যেসব বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে সেগুলো হল:

 

ভূতাত্ত্বিক বিষয়সমূহ:

১। খামারের অবস্থান: সাধারণত শহরে ও বন্দরের আশেপাশে গড়ে উঠে। খামারের চারপাশে রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, পানি উৎস, সেচ ও নিস্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

২। মাটির ধরন: উর্বর সুনিস্কাশিত মাটি ফসল ও উদ্যান খামার স্থাপনের জন্য উপযোগী।

৩। আবহাওয়া ও জলবায়ু: আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর নির্ভর করে একেক অঞ্চলের একেক ধরনের কৃষি খামার গড়ে উঠছে।

৪। ভূমির উচ্চতা: উঁচু জমিতে যেখানে বন্যার পানি উঠে না যেখানে উদ্যান ফসলে খামার ও নার্সারী স্থাপনের জন্য উপযোগী।

 

অর্থনৈতিক বিষয়সমূহ:

১। উন্নত প্রযুক্তির প্রাপ্যতা: কৃষিজ দ্রব্য উৎপাদনের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির প্রাপ্যতার উপর খামার স্থাপন নির্ভর করে বিভিন্ন ফসলের উন্নত বীজ, কৃষি যন্ত্রপাতির প্রাপ্যতা সহজলভ্য হতে হবে।

২। উপকরণ সরবরাহ ও দাম: কৃষি খামার স্থাপনের জন্য ন্যায্যমূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

৩। ঋন ব্যবস্থা: খামার ব্যবস্থা ঝঁুকিপূর্ণ বিধায় কৃষি ঋনের ভূমিকা অপরিসীম। সহজশর্তে ঋণের সুবিধা পেলে খামার স্থাপনে আগ্রহ সৃষ্টি হবে।

৪। জমির মূল্য: জমির মূল্য কম এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো সেখানে খামার গড়ে তোলা উচিত কারণ খামারের জন্য অনেক বেশি জমি প্রয়োজন।

৫। কৃষি পন্যের পরিবহন, বিপনন ও মূল্য: উৎপাদিত কৃষি পণ্য সহজেই পচে যায়। পণ্য সামগ্রী সঠিক সময়ে পরিবহন ও বিপনন করা যায় যে ব্যবস্থা থাকতে হবে। পরিবেশে খামার স্থাপনের আগে উদ্যোক্তারা উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর পরিবহন, বিপনন ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।

সারসংক্ষেপ:

উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উৎপাদনের সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হওয়ায় নতুন নতুন খামার স্থাপন করতে অনেকেই এগিয়ে আসছে। খামার স্থাপনে যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হয় সেগুলো হল এ খামারের অবস্থান, মাটির ধরন, আবহাওয়া ও জলবায়ু, ভূমির উচ্চত, উন্নত প্রযুক্তির প্রাপ্যতা, উপকরণ সরবরাহ ও দাম, খনন ব্যবস্থা, শ্রম, জমির মূল্য, পণ্যের পরিবহন, বিপণন ও দাম।

 

খামারের কার্যাবলী, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা

খামারের কার্যাবলী, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা – পাঠঠি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয়ের ইউনিট – ১৭ , পাঠ – ১৭.৩। খামারের কার্যাবলী খামারের অধিক উৎপাদনশীল করতে নিমèবর্ণিত কার্য সম্পাদন করতে হয় ।

 

খামারের কার্যাবলী, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা

 

যেমন—

১। টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব উপকরণ ব্যবহার করতে হবে।

২। উপকরণ এর সহজ প্রাপ্যতা বিবেচনায় নিতে হবে।

৩। যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা উন্নত হতে হবে।

৪। উৎপাদন উপকরণ যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

৫। সঠিক সময়ে উৎপাদন কার্য পরিচালনা করতে হবে।

৬। শ্রমিকের সহজলভ্যতা ও যোগান নিশ্চিত করতে হবে।

৭। খামারকে লাভজনক করতে আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নয়ন

৮। উৎপাদিত পণ্য যথাসময়ে উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাত করতে হবে।

খামার ব্যবস্থাপনা:

খামার ব্যবস্থাপনার সাথে লাভ লোকসানের সাথে সম্পর্কযুক্ত সিদ্ধান্তগুলোই বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। একটি খামার সাধারণত: ক) জমি, খ) শ্রম, গ) মূলধন, ঘ) যন্ত্রপাতি নিয়ে গঠিত। এ্যান্ডু বসের সংজ্ঞানুসারে, খামার ব্যবস্থাপনা হলো “খামারের উৎপাদন সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট পরিচালনা কাজে ব্যবসায়িক ও বৈজ্ঞানিক নীতিমালার প্রয়োগ। জি.এফ. ওয়ারেন এর মতে খামার ব্যবস্থাপনা হচ্ছে এমন একটি বিজ্ঞান যা ধারাবাহিকভাবে সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে খামারের বিভিন্ন ফসল বা পণ্য সামগ্রী উৎপাদনের সাংগঠনিক ও ব্যবস্থাপনাগত দিক নিয়ে আলোচনা করে থাকে।

 

খামার ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য:

খামার ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য হল বৈজ্ঞানিক উপায়ে জমি, শ্রম, পুঁজি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে উৎপাদন ও মুনাফা বৃদ্ধিকরণ। খামার ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যগুলো হতে পারে— * স্বল্প খরচে উৎপাদন বাড়ানো

* খরচের সাথে মুনাফা সর্বাধিক করা

* বিভিন্ন ধরনের উৎপাদন ঝুঁকি কমিয়ে আনা

* পারিবারিক সচ্ছলতার জন্য পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করা।

* প্রাকৃতিক উৎসের বা সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা।

 

খামার পরিচালনা :

খামার পরিচালনা বলতে উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করা এবং খামারের বিভিন্ন কার্যাবলী সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্পন্ন করার জন্য উপাদানসমূহের সমন্বয় সাধন করাকে বুঝায়। খামার পরিচালনার নীতিমালাগুলো নিম্নে বর্ণিত হলো—

১। ক্রমহ্রাসমান আয়নীতি

২। ব্যয় নীতি

৩। প্রতিস্থাপন নীতি

 

১। ক্রমহ্রাসমান আয় নীতি:

উৎপাদনের সকল উপাদান এর পরিমান অপরিবর্তিত রেখে শুধু কেবল উপাদানের পরিমান বাড়ানো হয়। প্রথমে উপাদান বৃদ্ধির সাথে সাথে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু একটি নির্দিষ্ট বৃদ্ধির পর প্রথমে প্রান্তিক উৎপাদন এবং পরে গড় উৎপাদন হ্রাস পেতে থাকবে। এটাই ক্রমহ্রাসমান আয় নীতি। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যাবহার। জমিতে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন কোন নির্দিষ্ট জমিতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে ফলন বৃদ্ধি পাবে। একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা গেলেও পরে আর ফলন বৃদ্ধি পায় না।

২। ব্যয় নীতি:

খামারের উৎপাদনের লাভ লোকসান নির্ধারনে এ নীতি ব্যবহার করা হয় উৎপাদনে দুই ধরনের খরচ হয়। স্থির খরচ যেমন কর্মচারীর বেতন, খামার নির্মান ব্যয়, জমির খাজনা। অস্থায়ী বা পরিবর্তনশীল খরচ উৎপাদনের সাথে উঠানামা করে। মোট উৎপাদন খরচ যদি উৎপাদন আয়ের চেয়ে কম হয়। তবে খামারে আরো মূলধন বিনিয়োগ করা যাবে ততক্ষন মূলধন ব্যবহার করা যাবে যতক্ষন পর্যন্ত মোট উৎপাদন আয় ও পরিবর্তন ব্যয় সমান না হয়।

 

৩। প্রতিস্থাপন নীতি:

প্রতিস্থাপন নীতি দ্বারা কোন ফসল লাভজনক তা নির্ধারণ করা যায়। এ নীতি ব্যবহার করে কম লাভজনক ফসলের উৎপাদন বন্ধ রেখে অন্য লাভজনক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। এ নীতি ২টি বিষয়ের উপর নির্ভর করে প্রতিস্থাপিত ফসলের ফলন

উদাহরণ হিসাবে আউশ ধানের বাজারদর কমে যাওয়ায় খামারী যদি সে জমিতে পাট লাগানোর ইচ্ছে করেন, এক্ষেত্রে আউশ ধান প্রতিস্থাপিত ফসল এবং আলু হলো চাষকৃত ফসল। যদি প্রতিস্থাপন অনুপাত মূল্য অনুপাতের চেয়ে ছোট হয় তবে ফসল প্রতিস্থাপন করতে হবে। অর্থাৎ আউশ ধানের বদলে আলু চাষ করতে হবে। আর প্রতিস্থাপন অনুপাত মূল্য অনুপাতের চেয়ে বড় হয় তবে ফসল প্রতিস্থাপন করা যাবে না। তখন আলু লাগানো যাবে না।

 

খামার ও খামার করণ

খামার ও খামার করণ – পাঠঠি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয়ের ইউনিট – ১৭ , পাঠ – ১৭.২। খামার হচ্ছে কৃষি উৎপাদনের একটি ইউনিট। খামার বলতে— এমন ভূখন্ড বা জমি যেখানে ব্যক্তি বা যৌথ ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন কৃষি পণ্য উৎপাদন কাজ পরিচালিত হয়। যেমন: ফসল, গবাদি পশু, হাঁস—মুরগী, মাছসহ বিভিন্ন কৃষি উৎপাদন করার স্থান। খামারের জমি হতে পারে নিজস্ব মালিকানাধীন বা বর্গা বা বন্ধকী খামারে ব্যবহৃত শ্রমিক হতে পারে পারিবারিক শ্রমিক বা কেনা শ্রমিক।

খামার ও খামার করণ

 

খামারের অর্থের উৎস হতে পারে — ১। পারিবারিক উৎস, ২। ব্যাংক, ৩। অন্য উৎস।

কৃষি খামার সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে বিভিন্ন কৃষিজ উৎপাদন ব্যবস্থার একটি উপাদান হলো কৃষি খামার। এসব খামার উৎপাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন: ফসল উৎপাদন করলে ফসল খামার, হাঁস—মুরগী ও গবাদি পশু উৎপাদন করলে হাঁস—মুরগী ও গবাদিপশু খামার বলে। কৃষি খামার হল কৃষিজ উৎপাদনের একটি
প্রতিষ্ঠান।

 

একটি আদর্শ কৃষি খামারের বৈশিষ্ট্য:

১। আদর্শ খামার এমন হতে হবে যেখানে উৎপাদনের সুষ্ঠ প্রয়োগের ফলে একক আয়তনে সর্বাধিক ফলন পাওয়া যাবে এবং উৎপাদিত আয় হতে কষক ও তার পরিবার ৃ মোটামুটি সচ্ছল ও সন্তোষজনভাবে জীবিকা নির্বাহ করে। আদর্শ খামারের আয়তন বিভিন্ন হতে পারে। তবে বাংলাদেশের জন্য ৩—৪ একর জমি একটি আদর্শ খামার।

একটি আদর্শ কৃষি খামারে নিম্নবর্ণিত বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন—

১। কৃষি খামারের কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন থাকতে হবে।

চিত্র ১৭.২.২ : পোল্টি্র খামার।

২। কৃষি খামারের পণ্য পরিবহন, উৎপাদনের উপকারণাদি ও বাজারজাতকরণ যাতে সহজে করা যায় সে জন্য বড় রাস্তার পাশে ও লঞ্চ ঘাটের নিকটে হতে হবে।

৩। আদর্শ কৃষি খামারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকবে।

৪। খামার পণ্য পরিবহনের জন্য যানবাহন থাকবে। খামারের সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকবে।

৫। অধিক ও নিরবচ্ছিন্নভাবে মুনাফা অর্জনের জন্য খামারের কার্যক্রম দক্ষভাবে পরিচালিত হবে।

খামারের শ্রেণি বিভাগ:

কোন নির্দিষ্ট স্থানে সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার আওতায় উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরণাদি ব্যবহার করে পণ্য সামগ্রী উৎপাদন খামার বলে। বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে খামার শ্রেণি বিভাগ করা হয়েছে।

১। কৃষির বিভিন্ন খাতের উপর ভিত্তি করে—

ক) ফসল খামার : খামারে একক বা মিশ্রভাবে একাধিক মাঠ বা উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল আবাদ করা হয় যা থেকে কাঙ্খিত ফসল বা বীজ পাওয়া যায়।

খ) পোল্টি্র খামার : যখন খামারে কোন পাখি জাতীয় প্রাণি যেমন: হাঁস, মুরগী, কোয়েল, কবুতর ইত্যাদি মাংস বা ডিমের জন্য পালন করা হয় তখন তাকে পশু—পাখি খামার বলা হয়। চিত্র ১৭.২.৩ : গবাদি পশু খামার

গ) গবাদি পশুর খামার : গৃহপালিত গবাদি পশুর মধ্যে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া অন্যতম।

ঘ) মৎস্য খামার : পরিকল্পিত ভাবে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ একক বা মিশ্র ভাবে চাষ করা হয় তাকে মৎস্য খামার করা যায়। খামারে শুধু মাছের পোনা উৎপাদন করা হলে তখন তাকে হ্যাচারী বলে।

ঙ) দুগ্ধ খামার : বসতবাড়ির উঁচু স্থানে পারিবারিক দুগ্ধ খামারের উন্নত জাতের গাভী পালন করা যায়। চ) নার্সারী : বন নার্সারী বিভিন্ন ফুল, ফল ও বনজ গাছের চারা উৎপাদন করা হয়। আকার / আয়তনের দিক থেকে

ক) পারিবারিক খামার এই খামার থেকে উৎপাদিত পণ্য নিজে এবং তার পরিবার মোটামুটি সন্তোষজনকভাবে জীবন নির্বাহ করেত পারে। এতে মূলধন বিনিয়োগ কম হয় এবং ঝুঁকি সম্ভাবনা নেই।

খ) বাণিজ্যিক খামার এই খামারের মূল লক্ষ্য হলো মুনাফা অর্জন করা। বৃহৎ পরিসরে খামারের যখন নির্দিষ্ট কিছু পণ্য উৎপন্ন করা হয় যা বিক্রি বা রপ্তানী করে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়।

পণ্যের উৎপাদন অনুসারে:

১। মিশ্র খামার (গরীবফ ড়হ উরাবৎংরভরবফ ঋধৎস): একটি খামারে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করা হয়।

২। বিশেষায়িত খামার : একটি মাত্র বা একই ধরনের পণ্য উৎপাদন করে। যেমন: চিংড়ির খামার, চা বাগান ইত্যাদি।

 

মালিকানা ভিত্তিতে খামার:

ক) ব্যক্তি মালিকানাধীন খামার: একজন মালিকের তত্ত্বভবধানে খামারের ব্যবস্থাপনাসহ যাবতীয় কার্যাবলী পরিচালিত হয়।

খ) যৌথ খামার: এলাকার কয়েকজন কৃষক একত্রিত হয়ে যৌথভাবে খামার পরিচালিত করে। গ) রাষ্ট্রীয় খামার: এ ধরনের খামার পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় মালিকানায় পরিচালিত হয়।

 

খামার করণ:

খামারে ফসল, গবাদি পশু, মৎস্য প্রভৃতির যে কোনটি অথবা মিশ্রভাবে একাধিক উৎপাদনের কার্যক্রম পরিচালনাকে খামারকরণ বুঝায়। খামার একজন বা একাধিক কৃষকের সুগঠিত উৎপাদনমুখী। ব্যবস্থাপনা যেখানে প্রতিটি পণ্যের অর্থনৈতিক উৎপাদন প্রক্রিয়া চলে যা প্রাকৃতিক ও আর্থসামাজিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই খামারকরণ বা ফার্মিং হল এক ধরনের উৎপাদন মুখী প্রতিষ্ঠান যেখানে ভূমি, কষক, মূলধন, সংগঠন ইত্যাদির উপযুক্ত ব্যবহরের মাধ্যমে খাদ্য ও অন্যান্য আবশ্যকীয় পণ্য দ্রব্য উৎপাদন করা হয়। খামার করণের মূল উদ্দেশ্য হলÑ

১। পরিকল্পিতভাবে ফসল উৎপাদন।

২। সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।

৩। খামারের স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি।

৪। মানসম্পন্ন অধিক ফসল উৎপাদন। ৫। অধিক মুনাফা লাভ।

 

 

কৃষি অর্থনীতি

অর্থনীতি শাস্ত্রের মূল বিষয় হলো মানুষের অসংখ্য চাহিদা লক্ষ্যের পরিপূরণ, যা তারা বিভিন্ন সম্পদ বা উপকরণের মাধ্যমে করে সর্বোচ্চ তৃপ্তি লাভের চেষ্টা করে। এই বিজ্ঞানসম্মত আলোচনাই অর্থনীতির মূল বিষয়বস্তু। কৃষি অর্থনীতি হচ্ছে কৃষি অর্থনীতির সমন্বিত একটি শাখা, যা কৃষি শিক্ষার অংশ হিসেবে পরিচিত এবং কৃষির উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ বন্টনের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে।

 

কৃষি অর্থনীতি

(কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র, ইউনিট ১৭, পাঠ ১৭.১)

 

 

কৃষি অর্থনীতির সংজ্ঞা

অর্থনীতির সেই শাখাটিকে কৃষি অর্থনীতি বলা হয়, যেখানে কৃষির যাবতীয় কর্মকান্ড যেমন কৃষিপণ্যের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, লাভ-লোকসান ও ভোক্তাদের মাধ্যমে পণ্যের বিতরণ সংক্রান্ত বিষয়সমূহ আলোচনা করা হয়। অধ্যাপক এল. সি. গ্রে-এর মতে, কৃষি অর্থনীতি হলো এমন একটি বিজ্ঞান যা কৃষি শিল্পের বিশেষ পরিস্থিতিতে অর্থনীতির নীতি ও পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষির বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে। অপরদিকে, প্রফেসর হাবার্ড কৃষি অর্থনীতিকে সংজ্ঞায়িত করেন কৃষিতে নিয়োজিত মানুষের সম্পদ আহরণ ও ব্যবহারের বিভিন্ন কার্যকলাপের আলোচনার মাধ্যমে।

 

কৃষি অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়সমূহ

১. কৃষিপণ্য উৎপাদন
২. কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ
৩. কৃষিপণ্য বিপণন
৪. কৃষি মূলধন
৫. কৃষিতে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা
৬. কৃষিখাতে সরকারি নীতিমালা

কৃষি অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য হলো কৃষি সম্পর্কিত অর্থনৈতিক সমস্যাসমূহের সনাক্তকরণ, সমাধান, নির্দেশনা প্রদান ও বিস্তারিত বর্ণনা।

 

কৃষি অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য

  • কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রমের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ, যেমন: কৃষিপণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বন্টন, গুদামজাতকরণ, বাজারজাতকরণ এবং ভোগ।
  • বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের প্রায় ২০% কৃষি থেকে আসে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • কৃষি অর্থনীতি একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

 

জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির অবদান:

একসময় কৃষি বলতে শুধুমাত্র জমি চাষ করে ফসল উৎপাদনকেই বোঝানো হতো। কিন্তু আধুনিক কৃষি ধারণাটি অনেক বিস্তৃত ও ব্যাপক অর্থ বহন করে। বর্তমানে কৃষির অন্তর্ভুক্তি শুধু শস্য উৎপাদনেই সীমাবদ্ধ না থেকে এর উপখাতগুলো যেমন মৎস্য চাষ, গবাদি পশুপালন, হাঁস-মুরগী পালন, দুগ্ধ উৎপাদন, বনায়ন ও বৃক্ষরোপণ, রেশম চাষ, মৌমাছি পালন ও মধু উৎপাদন, সবজি ও ফুলের চাষ পর্যন্ত বিস্তৃত। ফলে কৃষি শুধু একটি প্রথাগত কৃষি কার্যক্রম নয়, এটি এখন একটি গতিশীল অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ শতাংশ গ্রামে বসবাস করে এবং তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষি জাতীয় অর্থনীতিতে বহুমুখী অবদান রাখে, যা নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—

অবদান বিস্তারিত
১. খাদ্যের যোগান কৃষি দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর খাদ্যের প্রধান উৎস, যেমন চাল, গম, মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম সরবরাহ করে। এটি শুধু খাদ্য যোগান দেয়াই নয়, পুষ্টি নিরাপত্তা ও কর্মক্ষমতা নিশ্চিত করে।
২. কাঁচামালের সরবরাহ পাট, তুলা, চামড়া, কাঠ, রেশম ইত্যাদি শিল্পের জন্য কৃষি থেকে কাঁচামাল সরবরাহ করা হয়, যা শিল্পায়নের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত।
৩. কর্মসংস্থান সৃষ্টি কৃষি ও কৃষিজাত শিল্প প্রতিষ্ঠান কৃষি কর্মসংস্থানের বৃহৎ উৎস। দেশের জনসংখ্যার অধিকাংশ কৃষির সাথে যুক্ত।
৪. বিনিয়োগের উৎস কৃষি থেকে অর্জিত আয় ভূমি, রাজস্ব ও করসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে ব্যবহৃত হয়, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে।
৫. বাজার সম্প্রসারণ কৃষিকর্মে নিয়োজিত লোকজন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করে, যেমন পোশাক, আসবাবপত্র, সার, কীটনাশক, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি, যা অর্থনীতির অন্য খাতকে সমৃদ্ধ করে।
৬. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন পাট, চা, তুলা, চিংড়ি মাছসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আনা হয়।
৭. জাতীয় আয় বৃদ্ধি কৃষি খাত দেশের জাতীয় আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ প্রদান করে এবং কৃষিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে এর অবদান আরও বাড়ানো সম্ভব।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শুধু জনজীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করে না, পাশাপাশি দেশের শিল্পায়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে। কৃষির সঠিক উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন দেশের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার ক্ষেত্রে অন্যতম মূল চালিকা শক্তি। তাই কৃষিখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধারাকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব।

 

 

 

কৃষি অর্থনীতির পাঠের প্রয়োজনীয়তা:

কৃষি অর্থনীতি শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হলো অর্থনীতির তত্ত্ব ও পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে কৃষিক্ষেত্রে উদ্ভূত অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিশ্লেষণ ও সমাধান করা। কৃষি অর্থনীতি অধ্যয়ন করার মাধ্যমে কৃষিজ উৎপাদনের লাভ-ক্ষতি, খামার ব্যবস্থাপনা, মূল্য নির্ধারণ ও বিপণন, কৃষি ঋণ ও ভর্তুকি, বন্টন প্রক্রিয়া, কৃষি সমবায় ও সংগঠন সম্পর্কিত ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করা যায়।

এতে কেবল কৃষিক্ষেত্রের সমস্যা চিহ্নিত ও বিশ্লেষণই হয় না, বরং কৃষি উৎপাদন ও আয়ের উন্নয়নের লক্ষ্যে কার্যকর ও যথোপযুক্ত নীতি ও কর্মপদ্ধতির নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ফলে কৃষি অর্থনীতি শিক্ষার মাধ্যমে কৃষি খাতের স্থায়িত্ব ও উন্নয়নের জন্য বাস্তবমুখী সমাধান তৈরিতে সহায়তা পাওয়া সম্ভব হয়।

সংক্ষেপে, কৃষি অর্থনীতি পাঠ কৃষক, নীতি নির্ধারক ও গবেষকদের জন্য অপরিহার্য, কারণ এটি কৃষিক্ষেত্রের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সুসংগঠিত ও দক্ষ করে তোলার পথপ্রদর্শক।

ব্যবহারিক : কৃষি ও বৃক্ষ মেলা পরিদর্শন ও প্রতিবেদন তৈরী

ব্যবহারিক : কৃষি ও বৃক্ষ মেলা পরিদর্শন ও প্রতিবেদন তৈরী নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয়ের ১৬ নং ইউনিটের ১৬.৪ নং পাঠ। কৃষি ও বৃক্ষ সম্পর্কে সাধারণভাবে দেশের আপামর জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি এ বিষয়ে আগ্রহী করে তোলার লক্ষে কৃষি বিষয়ক আধুনিক প্রযুক্তি যেমন: উন্নত ফসলের জাত, আধুনিক চাষাবাদের কলাকৌশল, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি, কৃষকের উৎপাদিত দর্শনীয় কৃষি সামগ্রী, বিভিন্ন প্রকারের ফল—ফসল ও বৃক্ষের চারা সর্বসাধারণের মাঝে প্রদর্শন ও বিক্রি করার জন্য উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে যে মেলার আয়োজন করা হয় তাকে কৃষি ও বৃক্ষ মেলা বলে অভিহিত করা হয়।

ব্যবহারিক : কৃষি ও বৃক্ষ মেলা পরিদর্শন ও প্রতিবেদন তৈরী

সাধারণভাবে কৃষি ও বৃক্ষ মেলায় জনসাধারণের মাঝে কৃষি ও বৃক্ষ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে ফুলফল—ফসল সম্পর্কিত উন্নত জ্ঞান সম্প্রসারণ, ফসল ও বৃক্ষের চারা উৎপাদন, রোপণ ও সুষ্ঠ ব্যবহারের আগ্রহ সৃষ্টির প্রয়াস চালানো হয়। মেলা হচ্ছে দেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্য প্রদর্শনী, আকর্ষনীয় পণ্যের বেচাকেনা ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের একটি কৌশল । কাজেই যে মেলায় কৃষি পণ্য প্রদর্শন, বিক্রয় ও কৃষকদের মাঝে এতদবিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টির আয়োজন করা হয় তাকে কৃষি মেলা বলে।

সাধারণত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগেই প্রতিবছর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এ মেলার বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। দেশের বনভূমি সংকুচিত হওয়ার প্রেক্ষিতে যুবজাগরণ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সরকার ১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম জাতীয় পর্যায়ে বৃক্ষমেলা প্রবর্তন ও তিন মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযান চালু করে। বৃক্ষরোপণে সাধারণ মানুষের আগ্রহ সৃষ্টির জন্য ১৯৯০ সাল থেকে ’বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার’ ব্যবস্থাও চালু হয়েছে। বৃক্ষরোপণকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করার লক্ষে ২০০১—০২ সাল থেকে প্রতিবছর জাতীয় পর্যায়সহ বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বৃক্ষ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।

সার্বিকভাবে কৃষি ও বৃক্ষ মেলা কৃষকদের মাঝে নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি হস্তান্তরের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। নিম্নের পাঠসমূহে কৃষি ও মেলার উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব, বৃক্ষ মেলার উপযোগী প্রজাতি নিবার্চন, উপজেলা ও জাতীয় পর্যায়ে বৃক্ষ মেলার আয়োজন ও বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

জনসাধারণকে কৃষি, বন, বনায়নের গুরুত্ব ও পরিবেশের উপর বনের প্রভাব সম্পকীর্য় ধারণা বাস্তবিকভাবে প্রদানের একটি উৎকৃষ্ট প্রচেষ্টা হলো কৃষি ও বৃক্ষ মেলা। এ ধরণের মেলা পরিদর্শনের ফলে
সরেজমিনে বৃক্ষ প্রজাতি নির্বাচনের সরাসরি ধারণা জম্নে। এতে করে পারিবারিক ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাগান সৃজনের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ফলে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভবনা তৈরী হয় এবং পরিবেশরও উন্নয়ন হয়।

প্রয়োজনীয় উপকরণ :
১. মেলার লোকেশন ম্যাপ
২. নোট বুক
৩. কলম, পেন্সিল, স্কেল ও রাবার

আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন

কাজের ধারা :
১. শ্রেণি শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে নিকটবতীর্ কৃষি ও বৃক্ষ মেলা পরিদর্শন করতে হবে।
২. মেলার স্টলগুলোতে প্রর্দশিত কৃষি প্রযুক্তিসমূহ পর্যবেক্ষণ করে এর সম্বন্ধে বিস্তারিত জ্ঞান আহরণ করতে হবে।
৩. ফসলসমূহের এবং এর জাতসমূহের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে।
৪. মেলায় আগত প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক কৃষি পণ্য, লাগসই প্রযুক্তি ও বৃক্ষসমূহের তালিকা করতে হবে।
৫. স্টলগুলোতে রক্ষিত কৃষি প্রযুক্তি ও বৃক্ষ প্রজাতির উপর প্রকাশিত প্রকাশনাসমূহ সংগ্রহ করতে হবে।

 

উপজেলা ও জাতীয় পর্যায়ে বৃক্ষ মেলা ও বৃক্ষ রোপণ সপ্তাহ

উপজেলা ও জাতীয় পর্যায়ে বৃক্ষ মেলা ও বৃক্ষ রোপণ সপ্তাহ নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয়ের ১৬ নং ইউনিটের ১৭.৬ নং পাঠ।

উপজেলা ও জাতীয় পর্যায়ে বৃক্ষ মেলা ও বৃক্ষ রোপণ সপ্তাহ

বৃক্ষ রোপণ আন্দোলনকে জোরদার করণের জন্য প্রতিবছর পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উদ্দোগে অন্যান্য তার ও স্থানীয় সরকারের সহযোগিতায় উপজেলা ও জাতীয় পর্যায়ে বৃক্ষ মেলা ও বৃক্ষ রোপণ সপ্তাহের আয়োজন করা হয়ে থাকে। নিম্নে উপজেলা ও জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বৃক্ষমেলা সম্মন্ধে আলোচনা করা হলো।

 

উপজেলা পর্যায়ের কৃষি ও বৃক্ষমেলা:

গ্রামীণ জনগণকে বৃক্ষ রোপণে উৎসাহিত করার জন্য প্রত্যক বছর দেশের প্রতিটি উপজেলায় বৃক্ষ ও কৃষি মেলার আয়োজন করা হয়। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উদ্দ্যোগে প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিসার ও বৃক্ষমেলার আয়োজন করে থাকেন। অনেক সময় প্রতিটি জেলায় অবস্থিত বন বিভাগ কর্তৃক জেলা ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে বৃক্ষ মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। মেলাসমূহ সাধারণত ৩-৭ দিন ব্যাপি অনুষ্ঠিত হয়। এসব মেলায় বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ বৃক্ষের চারার পাশাপাশি বিভিন্ন থকার ফসলের জাত কৃষি পণ্য, উৎপাদন উপকরণ, কৃষি প্রযুক্তি ও বিক্রয় করা হয়।

 

উপজেলা বৃক্ষ মেলার বৈশিষ্ট্য:

ক. উপজেলা পর্যায়ে জুন-জুলাই মাসে প্রতিবছর কৃষি ও বৃক্ষ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

খ. সাধারণত উপজেলা কৃষি বিভাগ এবং বন বিভাগের তত্ত্ববধানে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পৃষ্ঠপোষাকতায় মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

গ. এ মেলায় কৃষকদের উৎপাদিত ভালোমানের ফল, ফসল, কৃষি উপকরণাদি প্রদর্শিত হয়।

ঘ. মেলায় কৃষি সম্প্রাসারণ বিভাগ, বনবিভাগ, সরকারি ও বেসরকারী নার্সারী বিভিন্ন প্রকারের বৃক্ষের চারা ও বৃক্ষ রোপণের প্রযুক্তি কৃষকদেরকে প্রদর্শন করেন।

ঙ. মেলায় জনসমাগম বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরণের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

চ. মেলায় কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী নিয়ে আসতে অনুপ্রাণিত হয় সেজন্য আকর্ষনীয় পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়।

 

 

জাতীয় পর্যায়ে বৃক্ষ মেলা ও বৃক্ষ রোপণ সপ্তাহ:

জাতীয় পর্যায়ে বৃক্ষমেলা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর ৫ই জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত ঢাকার শেরেবাংলা নগরে বাণিজ্য মেলার মাঠের বিশাল চত্বরের সুপরিসর স্থানজুড়ে এ মেলার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বন অধিদপ্তর মাসব্যাপী এ বৃক্ষমেলার আয়োজন করে থাকে। বৃক্ষমেলার মূল উদ্দেশ্য হল বৃক্ষরোপণকে একটি অভিযানে রূপান্তরিত করার জন্য জনমানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা।

এ উদ্দেশ্যকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্বপরিবেশ দিবসে এ মেলার উদ্বোধন করেন। মেলার তাৎপর্য বৃহত্তর গণমানুষের কাছে পৌছানোর লক্ষ্যে বণার্ঢ্য র‌্যালী, ব্যানার, ফেস্টুন, পোষ্টার, স্টিকার দিয়ে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়।

এছাড়া বেতার টেলিভিশনে অনুষ্টান, ভিডিও ছবি প্রদর্শন, পত্র পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে বৃক্ষ রোপণে জনগণ এর আগ্রহ সৃষ্টির সর্বাত্মক প্রচেষ্ট চালানো হয়। এ মেলা আয়োজনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন প্রজাতির বনজ, ফলদ ও ভেষজ উদ্ভিদের প্রদর্শনী, বিপণন ও রোপণে মানুষকে উৎসাহিত করা। নগরবাসীর আগ্রহ সৃষ্টির জন্য এ মেলায় প্রচুর অর্ণামেন্টাল গাছ পালার সমরোহ ঘটানো হয় যাতে মানুষ এগুলোর সাথে পরিচিত হতে পারে। সারাদেশ থেকে বড় বড় নার্সারীসহ, বৃক্ষ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ মেলায় অংশ গ্রহণ করে।

 

ইদানিংকালে মাসব্যাপী এ বৃক্ষমেলায় কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন প্রজাতির বনজ, ফলজ, ভেষজ ও অর্ণামেন্টাল গাছের চারা বিক্রয় হয়। এই সাথে চলে ব্যাপক বৃক্ষ রোপণ অভিযান । সাধারণ মানুষ ছাড়াও এই সময়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্দে্যাগে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃক্ষ রোপণ করা হয়। বিগত তিনদশকে এ বৃক্ষমেলার কারণেই বৃক্ষ রোপণের হার যেমন বেড়েছে, গাছপালার পরিমাণও বেড়েছে।

 

বৃক্ষ মেলার উপযোগী প্রজাতি নির্বাচন

বৃক্ষ মেলার উপযোগী প্রজাতি নির্বাচন নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয়ের ১৬ নং ইউনিটের ১৬.২ নং পাঠ।বৃক্ষ মেলা বাংলাদেশের শহর ও গ্রামে বসবাসকারী মানুষদের মাঝে বৃক্ষ রোপণের ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করতে হয়েছে। এজন্য বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে সফলতা লাভ করতে হলে সঠিক প্রজাতির বৃক্ষ নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব স্থানে সব প্রজাতির বৃক্ষের চারা রোপণ করা যায় না। ভূমির প্রকৃতি, মাটির বৈশিষ্ট, আর্থ-সামাজিক পরিবেশ ইত্যাদির উপর বিবেচনা করে বৃক্ষের চারা রোপণ করলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব।

বৃক্ষ মেলার উপযোগী প্রজাতি নির্বাচন

 

নিম্নে স্থানভেদে কোথায় কি বৃক্ষ লাগাতে হবে তার তালিকা প্রদান করা হলো :

ক. বসত বাড়ির আশে পাশে লাগানোর গাছ :

আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, জাম, বেল, নিম্ন সুপারি, নারিকেল, আমড়া, কামরাঙ্গা, ডালিম, কুল, লেবু, লিচু, সজিনা, তেজপাতা, শরিফা, আতা ইত্যাদি। বাড়ীর সম্মুখে পাতাবাহার ও অন্যান্য ফুলের গাছ ও সব্জীর বাগান থাকবে। বাড়ীর উত্তম পশ্চিমে উচু বড় বৃক্ষ এবং দক্ষিণে-পূর্বে নীচু ও মাধ্যম উচ্চতার বৃক্ষ লাগাতে হবে যাতে বাড়িতে প্রচুর আলো বাতাস পাওয়া যায়।

 

খ. কৃষি জমির ধারে ও আইলে রোপণের উপযোগি বৃক্ষ :

কৃষি জমির বাউন্ডারিতে জীবন্ত বেড়ার প্রজাতি যেমন- অড়হর, ডোলকমলি, ফণিমণসা ইত্যাদি। কৃষি জমির আইলে শিকড় কম বিস্তারকারী কিন্তু গভীরমূলী, ডাল পালা ছাটাইযোগ্য বৃক্ষ যেমন- বাবলা, আকাশমনি, সাদা কড়ই, কালো কড়ই, মিনজিরি, ইপিল ইপিল, ঘোড়ানিম ইত্যাদি।

গ. পুকুর পাড়ে লাগানোর উপযোগী বৃক্ষ :

পাড়ের মাটি শক্ত করে ধরে রাখতে পারে আবার পুকুরে রোদ প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি না করে এমন বৃক্ষ প্রজাতি নির্বাচন করা ভালো। যেমন : নারিকেল, সুপারি, তাল, লিচু, ডালিম, আম, খেজুর ইত্যাদি। পুকুরের উত্তর-পশ্চিম কোনায় বাঁশের ঝাড় সৃষ্টি করা যায়।

 

ঘ. রাস্তা ও সড়কের ধারের জন্য উপযোগী বৃক্ষ :

উঁচু সুদৃশ্য বৃক্ষ প্রজাতিসমূহের চারা যেমন- মেহগনি, শিশু, আকাশমনি ইউক্যালিপটাস, জারা, রেইনট্রি, সেগুন, শীল কড়ই, আম, জাম, কাঁঠাল, নিম, হরিতকী, অর্জুন, তেলসুর, পলাশ, কদম ইত্যাদি ।

 

ঙ. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনা :

প্রতিষ্ঠান সমূহের আঙিনা ও আশেপাশে শোভাবর্ধনকারী ও ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষের চারা রোপণ করতে হয়। যেমন-কৃষ্ণচূড়া, দোদরা, ইউক্যালিপটাস, জারা, নিম, আম, কাঁঠাল, লিচু, বকুল, কাঠবাদাম, সেগুন ইত্যাদি ।

 

চ. নদীর ধার ও বাঁধের উপযোগী বৃক্ষ :

বেশি শিকড় বিস্তার করে, শক্ত ও মজবুত, পানি সহিষ্ণু বৃক্ষ প্রজাতি যেমন : হিজল, ছাতিম, পিটালি, তাল খেজুর, বট, মান্দার, জিয়লগাজী, পিটালী ইত্যাদি।

 

ছ. ঘামের হাট বাজার :

ছায়া বিস্তার করে আবার পক্ষীকূলের খাদ্য ও আবাস উপযোগী বৃক্ষ প্রজাতি যেমন : বট, অশ্বত্থ, রেইনট্রি, তেঁতুল, মেহগনি, আম, জাম, কাঠাল ইত্যাদি।

 

জ. উচু অনাবাদি পতিত জমিতে :

ফলজ ও বনজ বৃক্ষ যেমন : আম, জাম, কাঁঠাল, আমলকি, বহেরা অর্জুন, নিম, মেহগনি, সেগুন, শীলকড়ই, আকাশমনি, মহুয়া, নাগেশ্বর ইত্যাদি।

 

ঝ. উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী তৈরীর উপযোগী বৃক্ষ :

লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এবং ঝড় ঝাপটা প্রতিরোধ সক্ষম বৃক্ষ প্রজাতি যেমন- তাল, নারিকেল, খেজুর, সুপারি, সোনালু, ঝাউ, আকাশমনি, জারা, গাব, গর্জন, তেতুল, অর্জুন, শিরিষ, শীলকড়ই, চম্পাফুল ইত্যাদি।

ঞ. স্যাঁতস্যাঁতে নিচু জমিতে :

জলাবদ্ধতা সহনশীল বৃক্ষ প্রজাতি যেমন- হিজল, কদম, পিটালি, বাঁশ, বেত, মূর্তা, মান্দার, জারঙ্গ, অশোক, শিমুল, ছাতিম, পইনাল, চালতা, পিতরাজ, কাঞ্চন, শেওড়া ইত্যাদি। ত. পাহাড়ি এলাকার জন্য উপযোগী বৃক্ষ : গর্জন, গামার, সেগুন, শীলকড়ই, চাম্পাফুল, চাপালিশ, কাঠাল, জলপাই, আকাশমনি ইত্যাদি ।

খ. বাড়ির ছাদে লাগানোর উপযোগী বৃক্ষ :

বাসা বাড়ির ছাদ বিশেষ করে শহর অঞ্চলের বাড়ির ছাদে গাছ লাগানোর একটি প্রবণতা উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ির ছাদে শাক-সব্জীর চারাই প্রধানত গুরুত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি বৃক্ষ জাতীয়

গাছপালা লাগাতে আগ্রহী হলে ফলজ, ঔষধি জাতীয় বৃক্ষ লাগানোই শ্রেয়। এজন্য উপযোগি বৃক্ষ যেমন: আম, সফেদা, লেবু, ডালিম, আমড়া, করমচা, আমলকি, কামরাঙ্গা, জামরুল, শরিফা ইত্যাদি।

 

কৃষি ও বৃক্ষ মেলা

কৃষি ও বৃক্ষ মেলা নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয়ের ১৬ নং ইউনিটের ১৬.১ নং পাঠ। কৃষি ও বৃক্ষ মেলা বর্তমান বাংলাদেশের সমাজ জীবনে একটি প্রয়োজনীয় আনুসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে এ মেলাগুলো নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সাধারণভাবে যে মেলায় সচরাচর বিরল ও উন্নতজাতের কৃষি সামগ্রী, কৃষি প্রযুক্তি ও উপকরণ প্রদর্শন ও বেচাকেনা হয় তাকেই কৃষি মেলা বলে। অন্যদিকে যে মেলায় বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের চারা উৎপাদন, রোপণ, সংরক্ষণ ও সুষ্ঠ ব্যবহারের আগ্রহ সৃষ্টির প্রয়াস চালানো হয় তাকে বৃক্ষ মেলা বলা হয়।

কৃষি ও বৃক্ষ মেলা

 

কৃষি মেলার উদ্দেশ্য:

ক. কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট, ব্যক্তি উদ্দ্যোগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রযুক্তি এ মেলায় প্রদর্শন করা।

খ. উদ্ভাবিত উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তিসমূহ সরাসরি প্রদর্শনপূর্বক এগুলো গ্রহণের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার ব্যাপারে জনগণকে উৎসাহিত করা।

গ. কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ও উদ্ভাবিত কলাকৌশলের মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদেরকে এ ধরণের উদ্ভাবনে আরও আগ্রহী করে তোলা।

ঘ. সাধারণ জনগণকে পুরানো অলাভজনক পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক ও যান্ত্রিক পদ্ধতির সুফল গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা।

ঙ. শস্য উৎপাদন ও সংরক্ষণে পরিবেশবান্ধব জৈবিক পদ্ধতির ভালোমন্দ হাতে কলমে প্রদর্শন করা. চ. উন্নত প্রজাতির গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির জাত প্রদর্শনের মাধ্যমে কৃষকদের আর্থিক লাভের বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করা।

ছ. সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার সফল সম্পর্কে প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাস্তব জ্ঞান দেওয়া।

কৃষি মেলার গুরুত্ব সরকার কৃষি সম্পর্কিত সামাজিক কলাকৌশল জনগণের দোরগোড়ায় পৌছানোর জন্য কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর, মাৎস্য ও পশুপালন অধিদপ্তরসহ কৃষি সম্পর্কিত সব ধরনের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও কৃষির উন্নয়ন ও কৃষি সম্পদের বিপণনের জন্য কৃষি মেলা ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। কারণ মেলা অনুষ্ঠানের সময় ক্রেতা—বিক্রেতা ছাড়াও শুধু বিনোদনের জন্য ব্যাপক সংখ্যক মানুষের সমাগম হওয়ায় মেলায় প্রদর্শিত পণ্য ও প্রযুক্তিসমূহ সাধারণ মানুষের নজর কাড়ে। জনে জনে আলোচনার ফলে বিষয়টি অধিক সংখ্যক মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। এমন নানাবিধ কারণে কৃষি মেলার গুরুত্ব অত্যধিক।

 

বৃক্ষ মেলার উদ্দেশ্য:

ক. বৃক্ষ রোপণে জনগণের সচেতনতা সৃষ্টি করা ।

খ. জনগনকে বৃক্ষের সৌন্দর্য্য উপভোগের জন্য বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের সমাহার ঘটানো ও এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা।

গ. জনগণকে বৃক্ষ রোপণে আগ্রহী করে তোলার জন্য তাদের প্রয়োজনানুযায়ী চারা সরবরাহ করা।

ঘ. আধুনিক জ্ঞান সমৃদ্ধ পুস্তিকা, লিফলেট, প্যামলেট, ফোল্ডার ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণকে আগ্রহী করে তোলা।

ঙ. কাঠের বহুবিধ ব্যবহার এবং এর নান্দনিক দিক জনসাধারণের মাঝে তুলে ধরা।

চ. বৃক্ষরোপণ ও চাষের মাধ্যমে অর্থনৈতিক লাভের বিষয় প্রচার করা।

ছ. বৃক্ষরাজি সম্প্রাসারণের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করা।

 

বৃক্ষ মেলার গুরুত্ব:

দেশের বনভূমি সংকুচিত হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বৃক্ষ সম্পদ বাড়ানোর জন্য বৃক্ষ মেলার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সরকারীভাবে বন বিভাগ বৃক্ষ রোপণকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করার লক্ষে ১৯৯৪ সন থেকে দেশব্যাপী বৃক্ষ মেলার প্রবর্তন করে। তারপর থেকে প্রতিবছর ঢাকায় বৃক্ষ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জনগণের স্বতস্ফুর্ত অংশ গ্রহণে এ মেলা মুূখরিত হয়ে উঠেছে। প্রতিবছরই লাখ লাখ চারা বিক্রি হচ্ছে এবং বৃক্ষ রোপণ অভিযানকে স্বার্থক ও সফল করে তুলছে। বাংলাদেশের ভূ—প্রাকৃতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে এ মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। জনগণ এ মেলাসমূহের কারণে বৃক্ষ রোপণে আগ্রহী হওয়ায় দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। জনবহুল আমাদের এদেশে চাহিদার তুলনায় বৃক্ষ সম্পদ অপ্রতুল।

এ পরিস্থিতিতে বৃক্ষ সম্পদ বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন যা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে আমাদেরকে বৃক্ষ রোপণ ও সংরক্ষণ করে এ সম্পদকে বাড়াতে হবে। তাই জনগনকে উদ্ভুদ্ধ করে বনায়নে সম্পৃক্ত করার জন্যই বৃক্ষ মেলার আয়োজন একান্ত প্রয়োজন। বর্তমানে বৃক্ষ রোপণ একটি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশ উন্নয়নের আন্দোলনে পরিনত হয়েছে। সরকারও বৃক্ষ রোপণকে একটি জাতীয় কর্মসূচী হিসেবে ঘোষনা করেছে।

তাই বৃক্ষ রোপণের এ কর্মসূচীকে সামগ্রিকভাবে সার্থক করে তুলতে হলে বৃক্ষ মেলার মাধ্যমে চারার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বৃক্ষ রোপণ মৌসুমে জনসাধারণ অনেক সময় ভালো চারা না পেয়ে নিম্নমানের চারা রোপণ করেন। সেজন্য বৃক্ষ মেলার মাধ্যমে ভালো চারার সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ব্যাপক ভিত্তিতে এ মেলা অনুষ্ঠানের প্রয়োজন রয়েছে।

 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ ও পরিচর্যা বিষয়ক ব্যবহারিক পাঠ

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ ও পরিচর্যা বিষয়ক ব্যবহারিক পাঠ – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি কৃষি শিক্ষা ২য় পত্রের ১৫ নং ইউনিটের, ১৫.৬ নং পাঠ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ ও পরিচর্যা বিষয়ক ব্যবহারিক পাঠ

মূলতত্ত্ব :

স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা ও ইহার অভ্যন্তরীন রাস্তা ঘাটের আশে পাশে এবং পতিত জমি সমূহে বিভিন্ন ধরণের বনজ, ফলদ, ঔষধি গাছসহ বাহারী গাছপালা রোপণ করা যায়। চারা রোপণের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ এবং রোপণ পরবতীর্ পরিচযার্ চারার বৃদ্ধি ও নিখুঁতভাবে বেড়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ ও ইহার পরবর্তী পরিচর্যা সমূহ ধাপে ধাপে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

ক) গাছের চারা রোপণের জন্য গর্ত খনন প্রাসঙ্গিক তথ্য :

বনজ বৃক্ষের অধিকাংশই মূল্যবান কাষ্টল গাছ। এসব গাছের সুষম বৃদ্ধি ও উন্নয়ণের জন্য চারা লাগানোর পূর্বে গর্ত খনন করতে হবে ও প্রয়োজনীয় সার মেশাতে হবে।

 

ব্যবহারিকের প্রয়োজনীয় উপকরণ :

এ কাজের জন্য কোদাল, শাবল, দা, কুড়াল, ঝুড়ি, খুটি, পলিথিন, জৈব ও রাসায়নিক সার।

 

ব্যবহারিকের কাজের ধারা :

১. প্রথমে যে স্থানে গাছের চারা লাগানো হবে সে স্থানের যাবতীয় আগাছা দিয়ে কেটে পরিষ্কার করুন।

২. এবার চারা রোপণের জন্য নির্ধারিত স্থানে গর্তের জন্য খুটি গেড়ে চিহ্নিত করুন।

১. তারপর ঐ নিম্নের চিত্রের অনুরূপ স্থানে ৫০ সে.মি. দৈর্ঘ্য, ৫০ সে.মি. প্রস্থ ও ৫০ সে. মি. গভীর গর্ত খনন করুন।

২. গর্ত খননের সময় উপরের মাটি এক পাশে এবং নিচের মাটি অন্য পাশে রাখুন।

৩. গের্তর উপরের মাটি একটু শুকিয়ে ভালোভাবে গুড়া করে গর্তের নিচে দিন। এবার মাটির সাথে ১০—১৫ কেজি গোবর ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০০—৪০০ গ্রাম টিএসপি ও এমপি সার দিয়ে ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন।

৪. এবার প্রতিটি গর্তে একটু পানি দিয়ে ১২—১৫ দিন পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখুন।

 

সাবধানতা :

১. সঠিক দূরত্বে গর্ত করা হচ্ছে কিনা তাহা লক্ষ্য রাখুন।

২. গর্তে প্রয়োগের সার ভালোভাবে মিশানো হয়েছে কিনা খেয়াল করুন।

৩. সাবধানে গর্ত করুন যাতে আঘাতপ্রাপ্ত না হন।

 

খ) বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ প্রাসঙ্গিক তথ্য :

সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে চারা রোপণ করা জরুরী। সাধারণত বনজ বৃক্ষের চারা বর্গাকার বা ত্রিভুজাকার নকশা অবলম্বন করে রোপন করা হয়। সারি থেকে সারি এবং গাছ থেকে গাছের দূরুত্ব ১০—১২ মিটার হবে।

 

প্রয়োজনীয় উপকরণ :

ক) নির্বাচিত বৃক্ষের চারা খ) কোদাল (গ) খুটি ও রশি (ঘ) ঝাঁঝরি (ঙ) পানি।

 

কাজের ধারা :

১. পূর্বে খনন কৃত গর্তে দেয়া সার ও মাটি কোদাল দ্বারা কুপিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন

২. তারপর গর্তের মাঝখান থেকে চারার গোড়ার মাটির সমপরিমান মাটি সরিয়ে গর্ত করুন

৩. এবার চারার পলিব্যাগটি ব্লেড বা ছুরি দিয়ে কেটে ফেলুন

৪. এখন দুই হাত দিয়ে চারাটি সোজাভাবে গের্ত বসিয়ে দিন

৫. চারার চার পাশে মাটি চেপে দিন যেন চারার গোড়ার মাটি পাশ্ববর্তী মাটি থেকে খানিকটা উচুঁ থাকে। ৬. এবার ঝাঝরি দিয়ে প্রয়োজনমত পানি দিন ও খুটি দিয়ে চারাটি হালকা করে বেধে দিন।

 

সাবধানতা :

১. চারা লাগানোর সময় পলিব্যাগ সাবধানে কাটুন যাতে চারার গোড়ার মাটি ভেঙ্গে না যায়।
২. চারা রোপণের সময় যাতে শিকড়ের ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

গ) চারা রোপণ পরবর্তী পরিচর্যা প্রাসঙ্গিক তথ্য :

বৃক্ষের চারা রোপণের পর নিয়মিত পানি, সেচ, আগাছা ও রোগবালাই দমন করতে হবে। প্রয়োজনীয় উপকরণ : ক) নিড়ানি খ) ঝাঁঝরি গ) বেড়া দেবার সামগ্রী ঘ) রশি ঙ) বালতি ও পানি ইত্যাদি। কাজের ধারা :

১. চারা লাগানোর পর পর চারার গোড়ায় পানি দিন

২. চারা যেন গরু ছাগল বা ছোট ছোট বাচ্চারা খেলার ছলে উপড়ে না ফেলে সেজন্য বেড়া দিন।

৩. চারা বর্ষার আগে পরে দু’বার প্রয়োজনমত সার দিন।

৪. গাছ লাগানোর পর প্রথম দিকে ঘন ঘন আগাছা পরিষ্কার করে দিন।

৫. রোগ বালাইয়ের আক্রমণ হলে দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

সাবধানতা :

১. চারা লাগানোর পর চারার গোড়ায় যাতে অতিরিক্ত পানি না জমে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
২. বর্ষার সময়ে নালা কেটে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করুন।

 

কাষ্ঠল বৃক্ষের ট্রেনিং, প্রম্ননিং ও ক্ষতস্থান ড্রেসিং

কাষ্ঠল বৃক্ষের ট্রেনিং, প্রম্ননিং ও ক্ষতস্থান ড্রেসিং – পাঠটি বাউবির “কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র” বিষয়ের ইউনিট – ১৫ , পাঠ – ১৫.৫। বৃক্ষরোপণ পরবর্তী পরিচর্যা হলো চারার বেড়ে উঠা পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা, আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা, রোগবালাই দমন করা এবং গাছের প্রম্ননিং, ট্রেনিং ও ব্যবস্থাপনা করা। এ সমস্ত পরিচর্যার মধ্যে ট্রেনিং ও প্রম্ননিং কাষ্টল বৃক্ষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কাষ্ঠল বৃক্ষের ট্রেনিং, প্রম্ননিং ও ক্ষতস্থান ড্রেসিং

 

কাষ্টল বৃক্ষের প্রম্ননিং:

কাষ্টল বৃক্ষের সুষম বৃদ্ধি, সোজা সবল কান্ড ও ভালো মানের কাঠ পাওয়ার জন্য মাঝে মধ্যে প্রম্ননিং করার প্রয়োজন হয়। প্রম্ননিং এর মাধ্যমে বৃক্ষের শাখা প্রশাখা, পাতা, মূল ইত্যাদি পরিমাণমত ছাঁটাই করা উচিত।

 

প্রম্ননিং এর উদ্দেশ্য:

১. বৃক্ষের কান্ড সোজা রাখা ও কাঠের গুনগতমান বৃদ্ধি করা।

২. পাশাপাশি উৎপাদিত অন্য বৃক্ষের বাহু ব্যাহত না করা।

৩. অঙ্গজ বৃদ্ধি ও ফল ধারণের মধ্যে সাম্যতা আনয়ন করা।

৪. বৃক্ষের রোগবালাই আক্রান্ত শাখা—প্রশাখা দূর করা।

৫. একটি নিদিষ্ট পরিমান জায়গায় অধিক গাছ একত্রে জন্মানোর সুযোগ সৃষ্টি করা।

৬. বিভিন্ন প্রজাতির গাছ একত্রে উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হ্রাস করা।

প্রম্ননিং এর প্রকারভেদ বা পদ্ধতি: বৃক্ষের প্রম্ননিং বা ছাঁটাইকরণ বিভিন্নভাবে করা হয়। যথা:

কান্ড ছাঁটাই:

কাষ্টল গাছের প্রধান কান্ড থেকে যখন অসংখ্য শাখা প্রশাখা বাহির হয় তখন প্রধান কান্ডের কাঠের গুনগতমান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত শাখা প্রশাখা ছাঁটাইয়ের প্রয়োজন হয়। আবার পুরাতন গাছে নতুন শাখা গজানোর প্রয়োজনে ছাঁটাই করা হয়ে থাকে।

 

পাতা ছাঁটাই:

অঙ্গজ বৃদ্ধি শেষে গাছে যখন ফুল, ফল ধরার সময় হয় তখন গাছে পাতার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে পুষ্পায়ন ব্যাহত হয়ে ফল কম ধরে। সেই সবক্ষেত্রে অতিরিক্ত পাতা ছাঁটাই করলে ফল ধরায় সহায়তা করে। চারাগাছের ক্ষেত্রে রোপণ পূর্ববতীর্ সময়ে প্রস্বেদনের হার কমানোর জন্য পাতা ছাঁটাই করা হয়।ৱ

 

মূল ছাঁটাই:

কাষ্টল বৃক্ষের সাথে কৃষি ফসলের চাষাবাদ একত্রে করলে কৃষি ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কাষ্টল গাছের মূল ছাঁটাইয়ের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে মাটির উপরিস্তরে আসা মূল বৃক্ষের গোড়ার একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে মাটি সরিয়ে কোদাল বা খন্তা দিয়ে কাটতে হবে। এর পর পরই ঝুরা মাটি দিয়ে বৃক্ষের গোড়া ঢেকে দিতে হবে।

 

ফুল ও ফল ছাঁটাই:

গাছে অতিরিক্ত ফুল ধরলে ফল ধরার পরিমাণ কমে যায়। এই জন্য ফলদ বৃক্ষের ফুল ছাঁটাই করে পাতলা করে দেয়া হয়। এতে ফলের গুনগত মান উন্নত হয়। একই শাখায় অতিরিক্ত ফল ধরলে ফলের আকৃতিও ছোট হয়ে যায়। যেমন— আম, কাঁঠাল, ইত্যাদি।

 

কাষ্টল বৃক্ষের ট্রেনিং:

কাষ্টল বৃক্ষের কাঠামো সুন্দর, সবল ও দৃষ্টিনন্দন করার উদ্দেশ্য শাখা প্রশাখার সংখ্যা ও অবস্থান নিয়ন্ত্রণ করাকে ট্রেনিং বলা হয়। ট্রেনিং এর মূল উদ্দেশ্যে হলো বৃক্ষের আকার আকৃতি ও অঙ্গ বৃদ্ধি কাঙ্খিত অবস্থায় রাখা। গাছের ট্রেনিং পদ্ধতির জন্য প্রথম বছর প্রধাণ কান্ডের নীচ থেকে উপরের শাখা প্রশাখা কান্ডের তিন ভাগের একভাগ উঁচু পর্যন্ত গোড়া থেকে কাটতে হয়। পরের বছর নির্দিষ্ট আকৃতিতে শাখা প্রশাখা অপসারণ করলে গাছ উপরের দিকে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হবে এবং লম্বাটে দেখাবে। যেমন— বাবলা, ইপিল—ইপিল প্রভৃতি উপরের দিকে শাখাম্বিত চারা গাছের জন্য শুরুতে ট্রেনিং এর প্রয়োজন হয় না।

পরের দিকে নিদিষ্ট আকৃতিতে শাখা প্রশাখা ছাঁটাই করা হয়। লিকলিকে চারা গাছ সবল করার জন্য শুরুতে প্রধান কান্ড কেটে দিতে হয়। যেমন— দেবদারু, সেগুন, শিশু ইত্যাদি। পরবতীর্তে গাছ লম্বায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত না হয়ে পাশে শাখা প্রশাখা গজায়। তখন নির্দিষ্ট আকৃতিতে শাখা প্রশাখা ট্রেনিং করলে গাছ সুন্দর লম্বাটে আকার ধারণ করে।

 

ট্রেনিং এর উদ্দেশ্য :

১. ট্রেনিং গাছকে সুঠাম ও শক্ত কাঠামো দানে সহায়তা করে।

২. কাষ্টল গাছের প্রধান কান্ড সোজা হওয়ায় সুন্দর লগ পাওয়া যায়।

৩. বনায়নের জন্য লাগানো গাছের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

৪. ট্রেনিংকৃত গাছ সবল ও মজবুত হয় বলে ঝড়ে সহজে ভাঙ্গে না।

৫. ট্রেনিং করলে গাছে ব্যবহার উপযোগী কাঠের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

 

ট্রেনিং এর প্রকারভেদ/পদ্ধতি:

১. উচ্চ কেন্দ্র পদ্ধতি  : এই পদ্ধতিতে গাছে প্রধান কান্ডটিকে ছাঁটাই না করে শুধু শাখা প্রশাখা অপসারণ করা হয়। এতে গাছ দীর্ঘ কান্ড বিশিষ্ট হয়। যেমন— সেগুন, গর্জন, মেহগনি ইত্যাদি।

২. মুক্ত কেন্দ্র ট্রেনিং  : এ পদ্ধতিতে গাছের প্রধান কান্ডটিকে বৃদ্ধির সুযোগ দিয়ে পরে অগ্রভাগ েঁছটে দেওয়া হয়। এতে গাছ মাঝারি উচ্চতার হয় এবং চারপাশে কিছুটা ছড়ায়। ফলে ফল পাড়া ও অন্যান্য পরিচর্যা সহজ হয়।

৩. নাতি উচ্চ কেন্দ্র ট্রেনিং : এ পদ্ধতিতে প্রধান কান্ডটিকে প্রাথমিকভাবে ভালভাবে বাড়তে দেওয়া হয়। যখন পাশের কয়েকটি শাখা প্রশাখা ভালভাবে বেড়ে উঠে তখন প্রধান কান্ডটির অগ্রভাগ ছেঁটে দেওয়া হয়। এতে গাছ চারপাশে বেশ ছড়িয়ে যায় এবং খাটো থাকে।আম, জাম, আপেল গাছে এ পদ্ধতিতে ট্রেনিং করা হয়।

 

প্রম্ননিং ও ট্রেনিং এর মধ্যে পার্থক্য:

 

বৃক্ষের ক্ষতস্থান ড্রেসিং :

ট্রেনিং ও প্রম্ননিং কার্যক্রম পরবতীর্ বৃক্ষের ক্ষতস্থানসমূহকে ছত্রাকজনিত ও অন্যান্য রোগজীবানুর আক্রমন থেকে রক্ষার পদ্ধতিকে ক্ষতস্থান ড্রেসিং বলে। ছত্রাক ব্যাকটেরিয়া, পোকামাকড় গাছের কান্ড বা ডালে সৃষ্ট ক্ষতের মধ্যে প্রবেশ করে নানান ধরণের উপসর্গ সৃষ্টি করে। এ সব রোগের কারণে গাছের আক্রান্ত স্থানে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতের সৃষ্টি হয় যা আস্তে আস্তে ক্যান্সারে পরিণত হয়। এ ছাড়াও ঝড় ঝাপটার মাধ্যমে বৃক্ষের কান্ড ও শাখা—প্রশাখা ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে ক্ষত তৈরী হয়।

এ ক্ষত দীর্ঘ সময় উন্মুক্ত থাকলে সেখানে পচন ধরে কান্ড নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই কোন পদার্থ যেমন আলকাতরা, বোর্দা মিক্সচার বা অন্য কোন রঙের প্রলেপ দিতে হয়। গ্রীসের মানুষেরা অনেক সময় এঁটেল মাটি ও গোবরের মিশ্রন দ্বারা প্রলেপ দিয়ে থাকে।

 

ড্রেসিং পদ্ধতি :

এ কাজের জন্য প্রথমে বৃক্ষের ক্ষতস্থান ধারালো দা বা ছুরি দ্বারা চেঁছে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর পরিষ্কারকৃত ক্ষতস্থানে আলকাতরা, বোর্দোমিক্সচার বা উপযুক্ত ছত্রাকনাশক পেষ্টের মতো করে লেপে দিয়ে পলিথিন দ্বারা বেঁধে দিতে হবে। এভাবে কয়েকদিন রেখে দিলে ক্ষতস্থান শুকিয়ে আস্তে আস্তে নতুন টিস্যু সৃষ্টি হয়ে ক্ষতস্থান ভরাট হয়ে যাবে।

 

ক্ষতস্থান ড্রেসিং এর উপকারিতা :

ক. ড্রেসিং পচন সৃষ্টিকারী জীবানুর অনুপ্রবেশকে বাঁধা প্রদান করে

খ. ড্রেসিং ক্ষতস্থানের আদ্রতা সংরক্ষণ ও ক্ষয় প্রতিরোধ করে

গ. সময়মতো ড্রেসিং করলে ক্ষতস্থান গভীর হয় না ফলে কাঠ ভালো থাকে

ঘ. কান্ড ও শাখা—প্রশাখার বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকে বলে গাছ সহজে মারা যায় না