Category Archives: বাউবি উচ্চ মাধ্যমিক

বাউবি উচ্চ মাধ্যমিক

ব্যবহারিক: কৃষি যন্ত্রপাতির যন্ত্রাংশ পর্যবেক্ষণ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ব্যবহারিক: কৃষি যন্ত্রপাতির যন্ত্রাংশ পর্যবেক্ষণ। একটা সময় ছিল যখন দেশের শতকরা ৮০ ভাগ লোক কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত ছিল। দ্রুত নগরায়ন ও শিল্পায়নের কারণে বর্তমানে সে অবস্থা নেই। এখন দেশের মাত্র শতকরা ৪৮ ভাগ লোক কৃষিকাজের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। বাকি ৫২ ভাগ লোক শিল্প ও সেবা খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বর্তমানে একজন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা। অন্যদিকে একজন কাঠমিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি বা রং-মিস্ত্রি দৈনিক মজুরি পান ৫০০ টাকা।

ব্যবহারিক: কৃষি যন্ত্রপাতির যন্ত্রাংশ পর্যবেক্ষণ

 

একজন রিকশা-ভ্যান চালকও দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা উপার্জন করেন। তাহলে কৃষির মতো এত পরিশ্রমের কাজ কেন করতে যাবে মানুষ? এ দেশে শিক্ষার হার বাড়ছে। কারিগরি শিক্ষায়ও শিক্ষিত হচ্ছে অনেক যুবক। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত যুবকরা কৃষির মতো কষ্টের কাজ পছন্দ করে না। তারা কৃষি যন্ত্রপাতি, যানবাহন, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, মোবাইল ফোন মেরামতের মতো অল্প পরিশ্রমের কাজকেই বেশি পছন্দ করে। তাই কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে। এসব বিবেচনায় কৃষিকাজের জন্য যন্ত্র নির্ভরতা একটি বাস্তবতা হিসেবে মেনে নিতেই হবে। সেসব বিবেচনা করেই কৃষি যন্ত্রপাতির অধ্যয়ন কারিগরি শিক্ষায় যুক্ত করা হয়েছে।

বিষয়-১:কৃষি যন্ত্রপাতির যন্ত্রাংশ পর্যবেক্ষণ

প্রয়োজনীয় উপকরণ

  •  হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি।
  • শক্তিচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি ।

 

 

কাজের ধারা

১। তাত্ত্বিক অংশে এদেশে প্রচলিতভাবে যে সমস্ত হস্তচালিত ও শক্তিচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয় সেগুলোর চিত্রসহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া আছে।

২। প্রতিটি যন্ত্রের চিত্র ভালোভাবে দেখা প্রত্যেকটি অংশের নাম মনে রাখার চেষ্টা করুন।

৩। আপনার এলাকায় বা স্কুলের কাছাকাছি কোন ওয়ার্কশপে গিয়ে প্রতিটি যন্ত্র ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিন।

 

 

৪। এরপর প্রতিটি যন্ত্রের চিত্র সুন্দর করে ব্যবহারিক যাত্রায় অংকন করে প্রত্যেকটি অংশ চিহ্নিত করুন।

৫। প্রত্যেকটি যন্ত্র সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচায় খাতায় লিখুন।

৬। বুঝতে কোন প্রকার সমস্যায় পড়লে আপনার শিক্ষক বা কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করে নিন।

 

চূড়ান্ত মূল্যায়ন

সংক্ষিপ্ত ও রচনামূলক প্রশ্ন

১। শক্তিচালিত কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে কেন?

২। দশটি হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতির নাম উল্লেখ করুন এবং যে কোন ৫টি চিত্রসহ বর্ণনা করুন।

৩। কীভাবে ন্যাপসকে স্প্রেয়ার রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়।

৪। একটি শক্তিচালিত কর্ষণ যন্ত্রের নাম ও এর বিভিন্ন অংশ উল্লেখ করুন এবং চালানোর আগে কী কী পরীক্ষা করে দেখতে হয় তা

 

 

৫। সেন্ট্রিফিউগাল পাম্পের অপর নাম কিন্তু এর কার্যপ্রণালী বর্ণনা করুন।

৬। পানিসেচ কি? এর গুরুত্ব উল্লেখ করুন।

৭। কীভাবে সেচের পানির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা যায়?

৮। পানি সেচ ও নিকাশের ক্ষতিকর প্রভাব বর্ণনা করুন।

৯। পানি নিকাশের উদ্দেশ্য ও সুফল ব্যাখ্যা করুন।

পানি সেচ ও নিকাশ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-পানি সেচ ও নিকাশ

পানি সেচ ও নিকাশ

ফসলের প্রয়োজনে মাটির ভৌত ধর্ম ও মাটির মধ্যে পানির পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করে সেচ দেয়ার সময় ও সেচের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হয়। আবার অতিরিক্ত সেচ বা প্রাকৃতিক কারণে জমিতে প্রয়োজনের বেশি পানি জমা হলে তা বের করে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হয়।

সেচ ও সেচের উদ্দেশ্য

ফসলের সুষ্ঠু বৃদ্ধি ও উন্নয়নের লক্ষে প্রয়োজনে জমিতে কৃত্রিম উপায়ে পানি সরবরাহ করাকেই সেচ বলা হয়। যে কোনো জীবের বাঁচার জন্য যেমন পানি অপরিহার্য, ফসলের জন্যও তেমনি। ফসল সুন্দরভাবে বাঁচার ও ফলন দেবার জন্য মাটি থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি ও পানিতে দ্রবীভূত পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করে। ধরা, অনাবৃষ্টি বা অন্য কোন কারণে ফসলের জমিতে পানির আবশ্যকতা দেখা দেয়। সুতরাং সেচের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা।

 

 

সেচের উপকারিতা

১। উদ্ভিদ মূল রোমের সাহায্যে পানি পরিশোষণ করে। মাটিতে আর্দ্রতার অভাব হলে সেচ প্রদান অপরিহার্য।

২। উদ্ভিদ কর্তৃক প্রস্বেদন মাটি থেকে বাস্পীভবন এবং মাটির অভ্যন্তরে পানি অনুপ্রবেশ এ সমস্ত কারণে মাটি রসের অভাব হচ্ছে। ঐ অভাব সময়মত পূরণের উপযুক্ত মাধ্যম হচ্ছে সেচ।

৩। মাটি থেকে খনিজ খাদ্যে উপাদানসমূহকে উদ্ভিদ পানির উপস্থিতিতে আয়ন হিসেবে গ্রহণ করে।

৪। ভূ-গর্ভস্থ পানি স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি করা যায়।

৫। জমিকে জো অবস্থায় আনতে সেচের প্রয়োজন।

৬। সেচের পানি মাটিতে অবস্থানরত উপকারী অণুজীবের কার্যাবলি ত্বরান্বিত করে।

৭। সেচের পানি দ্রুত জৈব পদার্থকে পচিয়ে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।

৮। মাটির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে সেচের মাধ্যমে তা কমিয়ে আনা সম্ভব।

৯। রোপা পদ্ধতিতে ধান চাষ করলে জমি কাদা করতে হয়। বস কম থাকলে প্রয়োজনমত সেচ প্রদান আবশ্যক হয়ে পড়ে।

সেচের অপকারিতা

১। ক্ষেতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে মশা ও রোগ-জীবাণুর বিস্তার বেড়ে যায়।

২। স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

৩। অতি সেচের কারণে জমির ক্ষারত্ব বা লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেলে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায়।

৪। অতি সেচের কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে গাছের শিকড় অঞ্চলে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং এতে গাছ মারা যা

৫। ভূ-পৃষ্ঠস্থ পদ্ধতিতে সেচের জন্য নালা তৈরিতে অনেক জমি নষ্ট হয়।

৬। ফসল উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়।

৭। বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে নদী-নালার পানি এবং ভূ-গর্ভস্থ পানি দুষিত হতে পারে ইত্যাদি।

৮। হালকা বুনটের মাটিতে অতিরিক্ত সেচ প্রদান করলে মাটিতে বিদ্যমান খাদ্য পাদান ধুয়ে মাটি অনুর্বর হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও প্রচুর Ca ধুয়ে গেলে মাটি অম্ল হয়ে পড়ে।

৯। ভূ-পৃষ্ঠস্থ সেচের মাধ্যমে আগাছার বীজ সহজে বিস্তার লাভকরে।

সেচের পানির উৎস

নোনা পানির উৎসগুলোকে সেচের পানির উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। স্বাদু পানির উৎসকে সেচের পানির উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভূ-পৃষ্ঠ উৎস-নদীনালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, ঝরনা প্রভৃতির পানি। ভূ-গর্ভস্থ উৎস মাটির নিচের জমাকৃত পানিকে বোঝায়। এ পানি সাধারণ কৃপ গভীর বা অগভীর নলকূপের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।

 

 

সেচের পানির কার্যকারিতা বৃদ্ধির উপায়

উৎস থেকে সেচের পানি জমিতে নেয়ার পথে এবং জমিতে প্রয়োগ করার পর বিভিন্নভাবে পানির অপচয় হয়। এই অপচয় যত কম হবে সেচের পানির কার্যকারিতা তত বেশি হবে। এছাড়া মাটির অবস্থা বুকে ফসলের প্রয়োজনের সময় সেচ দিতে পারলে সেচের পানির কার্যকারিতা আরও বৃদ্ধি পায়। বাষ্পীভবন, চুয়ানো, অনুস্রবণ, শোষণ, লিক প্রভৃতির মাধ্যমে পানির অপচনা হ্রাস করতে পারলে সেচের পানির কার্যকারিতা অনেক বৃদ্ধি পায়। পানিতে নিম্নে বর্ণিত উপাদান বিদ্যমান থাকলে সে পানি সেচের জন্য ব্যবহার করা ঠিক নয়।

উদ্ভিদ, মাটি ও মানুষের জন্য ক্ষতিকারক জৈব বিষ ।

ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ।

ক্ষতিকারক জীবাণু ইত্যাদি।

পানি নিকাশ

ফসলের প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি অপসারণ করাকেই পানি নিকাশ বলা হয়। পানি নিকাশের উদ্দেশ্য:-

১। জমির সঠিক আর্দ্রতা ও লবণের ভারসাম্যতা রক্ষা করে অধিক ফসল ফলানো নিশ্চিত করা।

২। উদ্ভিদের জন্য জলাভূমি, জলাশয় ও জলাবদ্ধ জমি ইত্যাদি পুনরুদ্ধার করা।

৩। অতিরিক্ত সেচ বা বৃষ্টির পানি বের করে দেয়া।

৪। বন্যার পানি অপসারণ করা।

৫। বাহির থেকে চুয়ানো পানির আগমন রোধ করা ইত্যাদি।

 

 

পানি নিকাশের উপকারিতা

১। জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারবে না যেমন- তোষাপাট, মরিচ, তুলা, কাঠাল ইত্যাদির প্রাণ রক্ষায় নিষ্কাশন অত্যাবশ্যক।

২। উদ্ভিদের শিকড় অঞ্চলের গভীরতা বেড়ে যাওয়ার ফলে মাটির প্রয়োজনীয় অার্দ্রতা ও গাছের খাবারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

৩। মাটির সবাত অবস্থা সৃষ্টিতে সহায়তা করে।

৪। মুর্ত্তিকা ক্ষয় কমায়।

৫। অতিরিক্ত ক্ষতিকর পবন অপসারণ করে।

৬। মাটির প্রয়োজনীয় তাপ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

৭। বিভিন্ন ধরনের শস্য চাষের সুযোগ সৃষ্টি করে।

৮। কৃষি কাজের বায় কমে যায়।

৯। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জমি চাষের ও বীজ বপনের সুযোগ পাওয়া যায় ইত্যাদি।

১০। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হলে বায়ু চলাচলের পথ সুগম হওয়ায় মাটিতে অক্সিজেন বৃদ্ধি পায় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয়ে আসতে পারে।

পানি নিকাশের অপকারিতা

১। ভূগর্ভস্থ পানির তল নিচে নেমে যেতে পারে।

২। মাটির আর্দ্রতা অতিরিক্ত কমে গেলে ফসলহানি ও জমির উর্বরতা হ্রাসের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।

৩। বিল ও জল এলাকা কমে যাওয়ার ফলে মাছ, পানি ইত্যাদির প্রাপ্যতা কমে যায় এবং জীব বৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলে।

সারমর্ম:

ফসলের সুষ্ঠু বৃদ্ধি ও উন্নয়নের লক্ষে কৃত্রিম উপায়ে কোন জমিতে পানি সরবরাহ করাকেই পানি সেচ বলা হয়। আবার কোন জমি থেকে ফসলের প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি অপসারণ করে দেয়াকেই পানি নিকাশ বলে। পানি সেচ ও পানি নিকাশ উভয়েই উপকারী। ও অপকারী প্রভাব রয়েছে।

শক্তিচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- শক্তিচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি

শক্তিচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি

যে সব কৃষি যন্ত্রপাতি বিদ্যুৎ বা ডিজেল দিয়ে চালিত হয় তাদেরকে শক্তিচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি -বলে। বাংলাদেশে পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, পাওয়ার পাম্প, পাওয়ার স্প্রেয়ার, অগভীর নলকূপ, গভীর নলকূপ, মাড়াইযন্ত্র, প্রভৃতি শক্তিচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে পাওয়ার টিলার ও সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প এ দুটোই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

পাওয়ার টিলার

পাওয়ার টিলার হলো একটি যান্ত্রিক শক্তির উৎস যার সাথে একটি কর্ষণ যন্ত্র সংযুক্ত থাকে। এর দ্বারা সাধারণত: জমি কর্ষণের কাজই বেশি করা হয়। তবে একে সেচ পাম্প চালানো, বালাইনাশক ছিটানো, কলা মাড়াই, ধান ভাঙ্গার কল চালানো, পরিবহন প্রভৃতি কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে গতশক্তির বিকল্প হিসেবে পাওয়ার টিলার ভূমি কর্ষণ ও কৃষিজাত পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন কারণে হালের বলদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এদেশে দিন দিন পাওয়ার টিলারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাওয়ার টিলারের ক্ষমতার উৎস একটি ইঞ্জিন। সামনের দিকে নাট-বল্টু দিয়ে ফ্রেমের সাথে ইঞ্জিনটি আটকানো থাকে। মিনি পাওয়ার টিলারের ক্ষেত্রে ৩-৫ অশ্বশক্তি বিশিষ্টি একটি পেট্রোল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। তবে সাধারণত ৭-১২ অশ্বশক্তি সম্পন্ন ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়।

 

 

পাওয়ার টিলারের বিভিন্ন অংশের নাম হলো- ঢাকার শ্যাফট, পার্শ্ব গ্রেট, কানা প্রতিরোধক ঢাকনা, বিজার ড. পিছনের ঢাকা আটকানোর হাতল, স্টিয়ারিং ক্লাচ লিভার, প্রধান হাতল, এক্সিলারেটিং লিভার, সাহায্যকারী হাতল, গতি পরিবর্তন লিভার, মেইন ব্লাড লিভার, স্ট্যান্ড লিভার, ম্যাজিক বার, টেনশন পুলি, স্ট্যান্ড, প্রটেক্টর, ইঞ্জিন পুলি, মেইনগুলি – বেল্ট, টুল বক্স, ল্যাম্প চেন্ত সুইচ, টায়ার, রোটারি টিলার ইত্যাদি।

পাওয়ার টিলার চালানোর আগে কী করতে হয় তা জেনে নেয়া প্রয়োজন। এবার দেখা যাক কাজগুলো কী?

১। পাওয়ার টিলারটি সমতল জায়গায় রাখতে হবে যাতে ইঞ্জিনটি মাটির সমান্তরালে থাকে।

২। পানির ট্যাংকের ক্যাপটি খুলে পানির পরিমাণ দেখে নিতে হবে। পানি না থাকলে বা কম থাকলে পরিষ্কার পানি দিয়ে তা পূর্ণ করে নিতে হবে।

৩। জ্বালানি ট্যাংকের ক্যাপ খুলে ডিজেলের পরিমাণ দেখতে হবে। ডিজেল না থাকলে বা কম পরিমাণে থাকলে ডিজেল দিয়ে তা পূর্ণ করে নিতে হবে।

৪। ইঞ্জিনের ডিপস্টিকটি খুলে নিয়ে মরিলের পরিমাণ পরীক্ষা করতে হবে। ইঞ্জিনে এমন পরিমাণ মবিল থাকতে হবে যাতে ডিপস্টিকটি লাগালে মরিলের মাত্রা ডিপস্টিকের উচ্চমাত্রা ও নিমাত্রার নাগের মাঝামাঝি পর্যায়ে থাকে।

সতর্কতা

১। ডিজেল ও মবিলে যাতে ধুলোবালি, ময়লা বা পানি না থাকে।

২। ডিজেল ও মবিল ঢালার পাত্রটিও যাতে ধূলোবালি ও পানিযুক্ত থাকে।

৩। পাওয়ার টিলার চালানোর আগে অবশ্যই ডিজেল, মবিল ও পানির পরিমাণ পরীক্ষা করে নিতে হবে।

 

 

সেন্টিফিউগাল পাম্প

এটা পাওয়ার পাম্প নামে পরিচিত। বাংলাদেশে পানি সেচের জন্য বিভিন্ন ধরনের শক্তিচালিত পাম্প ব্যবহৃত হয়। এগুলোর মধ্যে নদী-নালা খালবিল ও পুকুর-ডোবা থেকে পানি উত্তোলনের জন্য সেন্টিফিউগাল পাম্পই বেশী ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এদেশে অগভীর নলকূপে যে পাম্প ব্যবহার করা হয় সেটিও সেন্টিফিউগাল পাম্প। সেন্টিফিউগাল পাম্প হচ্ছে একটি ঘূর্ণায়মান যন্ত্র যা দুটো অংশের সমন্বয়ে গঠিত।

অংশ দুটো হচ্ছে- ইম্পেলার (ঘূর্ণায়মান অংশ) ও পাম্প কেসিং (স্থির অংশ)। চাকতির ন্যায় এক বা একাধিক ইম্পেলার পাম্প শ্যাফটের সঙ্গে লাগানো থাকে। বিয়ারিংযুক্ত শ্যাফট বৈদ্যুতিক মটর বা ইঞ্জিন দিয়ে খুবালে ইম্পেলার তার সাথে সাথে ঘুরতে থাকে। এ পাম্পে ইম্পেলার বন্ধ প্রকোষ্ঠে ঘুরে পানিকে কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত করে। পরবর্তীতে পানিকে কেন্দ্রাতিক বল প্রয়োগ করে কেসিং থেকে ডিসচার্জ পাইপে নিক্ষেপ করে।

 

 

কার্যপ্রণালী :

চালু করার পূর্বে পাম্প পানি দিয়ে ভর্তি করা হয় এবং ইম্পোর ঘুরানো হয়। পানি ইম্পেলারের সাথে সাথে ঘুরতে থাকে এবং উচ্চ গতিবেগ প্রাপ্ত হয়। কেন্দ্রাতিক বল পানিকে বাইরের দিকে নিক্ষেপ করে। এতে পানির প্রবেশ পথে শূন্যতা সৃষ্টি হন এবং

বাইরের বায়ুচাপ পানি উৎস থেকে পাইপে প্রবেশ করে। পাম্প কেসিং এ প্রবিষ্ট পানির উচ্চ গতিবেগ উচ্চ চাপে পরিণত হয় এবং ডিসচার্জ পাইপের ভিতর দিয়ে পানি সেচ নালায় গিয়ে পৌঁছায়। এ ধরনের পাম্প ৭.৫ মিটার থেকে কম গভীরতার পানি তুলতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পাম্প চালু করার পূর্বে সাকশন পাইপ ও কেসিং পানি দিয়ে ভর্তি করে নিতে হয়। এ কাজকে প্রাইমিং বলা হয়।

সতকতা

১। অস্বাভাবিক আওয়াজ বা কালো দুয়া বের হলে পাম্প বন্ধ করতে হবে।

২। পাম্প চালানোর আগে ডিজেল ও মরিলের পরিমাণ পরীক্ষা করে নিতে হবে।

৩। পাম্প ও পানি উৎসের মাঝখানের জায়গায় উপর উচ্চতা ৩২ ফুট বা ১০ মিটারের কম হতে হবে।

৪। ঢিলেঢালা পোশাক পরে পাম্প চালানো যাবে না। এতে দুর্ঘটানার আশঙ্কা থাকে।

সারমর্ম

প্রধানত কৰ্ষণ কাজের জন্য পাওয়ার টিলার ব্যবহৃত হয়। তবে পাওয়ার টিলার দ্বারা সেচ পাম্প চালানো, বালাইনাশক ছিটানো, ফসল মাড়াই, ধান ভাঙ্গার কল চালানো, পরিবহন প্রভৃতি কাজ করা যায়। এর প্রধান প্রধান অংশ হচ্ছে জ্বালানি ট্যাংক, পানির ট্যাংক, ক্র্যাংক কেস, ক্র্যাংক শ্যাফট, ফ্রেম বাস্পার কর্ষণ ইউনিট প্রভৃতি। সেন্ট্রিফিউগাল পাম্পের প্রধান অংশ হলো দুটো-ইম্পেলার ও পাম্প কেসিং। এ পাম্প হলো পানি সেচের একটি যন্ত্র।

হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি

হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি

এ পাঠ শেষে আপনি-

  • হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতির নাম বলতে পারবেন।
  • হস্তচালিত কৃষিয় স্ত্রপাতির বিবরণ দিতে পারবেন।
  • হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি সনাক্ত করতে পারবেন।

ক্ষেতে খামারে বা বাড়ির আশেপাশে কাজ করতে বিভিন্ন ধরনের হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব কৃষি যন্ত্রপাতির চিত্রসহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে তুলে ধরা হলো।

দেশী লাঙ্গল

জমি চাষ ও কম গভীর বিশিষ্ট নালা তৈরি করতে লাঙ্গল ব্যবহৃত হয়। লাঙ্গলের হাতল, ঈশ, বাট ও তলা সাধারণত কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। তবে বাট, হাতল ও ঈশ কোন কোন সময় বাঁশ দিয়েও তৈরি হয়। একমাত্র লাঙ্গলের ফলা ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়। এছাড়াও বাংলাদেশে কোথাও কোথাও সীমিতভাবে পশুচালিত মোল্ড বোর্ড লাঙ্গলের ব্যবহার দেখা যায়।

 

জোয়াল

এটার দু’প্রান্ত দুটো গরুর কাঁধে বেঁধে দিয়ে মাঝখানটার সঙ্গে লাঙ্গলের ঈশ রশির সাহায্যে বেঁধে লাঙ্গল টানার ব্যবস্থা করা হয়। জোয়াল বাঁশ বা কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে সাধারণত তিন ধরনের জোয়াল ব্যবহৃত হয়।

(১) বাঁশের জোয়াল সোজা, সরল, শক্ত বাঁশ দ্বারা তৈরি

(২) কাঠের জোয়াল: বৈশিষ্ট্যপূর্ণভাবে ঈষৎ বাঁকানো থাকে।

(৩) গদি সম্পন্ন বাঁশ বা কাঠের জোয়াল : সরল বা ঈষৎ বাঁকানো

 

মই

চাষের পর জমি সমান করার কাজে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া ঢেলা ভাঙ্গা ও বীজ বপনের পর তা ঢেকে দেয়ার কাজেও মই ব্যবহার হয়। মই কাঠ বা বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে সাধারণত তিন ধরণের মই ব্যবহৃত হয়। যেমন-

(১) বাঁশের ৩ পাটি মই:

(২) বাঁশের ২ পাটি মই:

(৩) কাঠের মই।

 

যুগুর

জমি চাষের পর বড় বড় ভেলা ভাষার জন্য মুক্তর ব্যবহার করা হয়। এটা সাধারণত কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। তবে এদেশের অধিকাংশ কৃষকই বাঁশের হাতল ব্যবহার করে থাকে।

 

আঁচড়া বা বিদা

ঘন চারা পাতলা করা, আগাছা দমন করা ও মাটি আলগা করার জন্য আঁচড়া বা বিদা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আঁচড়ার প্রধান অংশ হলো ৩টি ফলা, ঈশ ও হাতল। এগুলো সাধারণত কাঠ বা কোন কোন সময় বাঁশ দিয়েও তৈরি করা হয়। তবে অনেক সময় লোহার তৈরি ফলাও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

কোদাল

কোদালের রেড লোহা দিয়ে এবং এর হাতল কাঠ বা বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়। এর সাহায্যে মাটি কাটা, আইল বাঁধা, আইল মেরামত করা, মাটি আলগা করা প্রভৃতি কাজ করা হয়ে থাকে। ব্যবহারের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে কোনালের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।

এর হাতল কাঠ দিয়ে ও তলা লোহা দিয়ে তৈরি করা হয়। নিড়ানির সাহায্যে ফসলের জমিতে আগাছা পরিষ্কার করা ও মাটি আলগা করার কাজ করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন আকৃতির নিড়ানি ও খুরপি ব্যবহার হয়।

 

কান্তে বা কাচি

কান্তের হাতল কাঠ নিয়ে ও ব্লেড নরম ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়। এর ব্লেডে দাঁত থাকে। কাছে সাধারনত ফসল কাটার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

দা

না এর ব্লেড লোহা দিয়ে ও হাতল কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। ব্লেডে কোন দাঁত থাকে না। কাস্তে দিয়ে কাটা যায় না এমন না দিয়ে কাটা হয়। এছাড়া না বিভিন্ন আনুষঙ্গিক কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

কলম করার ছুরি

এ সমস্ত ছবির ব্লেড স্টিল দিয়ে ও হাতল কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। গাছের বিভিন্ন ধরনের অঙ্গজ বংশবিস্তারের কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য এসব বিশেষ ধরনের ছবি ব্যবহার করা হয়।

সেউতি বা উড়ি

আদিকাল থেকেই এদেশের সেচকায় সেউতি ব্যবহার হয়ে আসছে। বাঁশের চাটাই বা টিন দিনো সেউতি তৈরি করা হয়। এর দ্বারা ১-১.৫ মিটার উচ্চতায় ভূপৃষ্ঠস্থ পানি উত্তোলন করা

দোন

পানি সেচের প্রাচীনতম পদ্ধতিগুলোর মধ্যে এটি একটি। নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুর থেকে পানি তুলে পাশের কোনো নিচু জমিতে সেচ দেয়ার জন্য লোন ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত কাঠ বা তালগাছের গুড়ি দিয়ে সরু নৌকার মতো করে তৈরি করা হয়। সোনের সাহায্যে সাধারণত ১.০-১.৫ মিটার উচ্চতায় পানি তোলা যায়।

ট্রেভেল পাম্প

ট্রেডেল পাম্প হলো সাধারণ নলকূপের একটা রূপান্তরিত রূপ। ইহার দ্বারা সাধারণত অল্প পরিমাণ জমিতে পানি সেচ দেয়া যায়।

প্যাডেল প্রেসার

এটি কাঠ এবং লোহার পাইক বা দাঁত দিয়ে তৈরি করা হয়। প্যাডেল থ্রেসার ধান মাড়াই করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

ন্যাপস্যাক স্প্রেয়ার (Knapsack sprayer)

বালাই দমনার্থে ভরল বালাইনাশক স্প্রে করার জন্য ন্যাপস্যাক স্প্রেয়ার ব্যবহার করা হয়। এই স্প্রেয়ার ধাতব পদার্থ নিয়ে প্রস্তুত করা হয় ।

 

সঠিকভাবে ন্যাপসকে স্প্রেয়ার রক্ষনাবেক্ষন করার জন্য অবশ্যই আমাদের ভালো ধারণা থাকা প্রয়োজন। এখন দেখা যাক কীভাবে এই স্পেয়ার রক্ষনাবেক্ষণ করতে হয়।

১। সর্বপ্রথমে স্পেয়ার পাম্পটি খুলে নিতে হবে।

২। সব ভাগের সিটগুলো সুন্দর করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে।

৩। হোজ পাইপে কোন ছিদ্র বা ফুটো থাকলে তা বের করে নিয়ে মেরামত করতে হবে।

৪। স্প্রেয়ার পাম্পের প্রাভারের বাকেটে মবিল বা মিতা ব্যবহার করতে হবে।

৫। স্প্রেয়ারের নজল খুলে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

৬। স্প্রেয়ারের ট্যাঙ্কের ভিতর পরিষ্কার পানি নিয়ে কয়েকটি ঝাকুনি দেয়ার পর স্প্রে করে যে পানি বের করে দিতে হবে। এতে স্প্রেয়ারের ভিতরের অংশগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার হবে।

৭। উপরের সবগুলো কাজ শেষ করে স্প্রেয়ারের মুখটি উল্টো দিকে মুখ করে রেখে দিলে ভিতরের অংশ শুকিয়ে যাবে। এতে স্প্রেয়ার ভালো থাকবে।

সতর্কতা

১। হোজ পাইপে চাপ দেয়া বা বাঁকানো যাবে না। এতে পাইপ ছিল বা ফেটে যেতে পারে।

২। বাকেটে নিয়মিত মবিল বা গ্রিজ দিতে হবে। নচেত বাকেট অল্প সময়ের মধ্যে ফেটে যাবে।

৩। ক্ষেত্রে বালাইনাশক প্রয়োগের পর স্প্রেয়ারের ভিতরের অবশিষ্ট বালাইনাশক ফেলে দিয়ে সুন্দর করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। নচেত ট্যাংক ক্ষয়প্রাপ্ত হবে। বালাইনাশক মিশ্রিত পানি কোন ক্রমেই পুকুর বা নদীতে ফেলা যাবে না। কোন গর্ভে এই পানি ফেলাই উত্তম।

সারমর্ম

অতি প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আসছে। দৈনন্দিন কৃষিকাজে মানুষ সাধারণত: লাঙ্গল, জোয়াল, মই, মুগুর, আচড়া, কোনাল, নিড়ানি, কাস্তে ন্যাপস্যাক স্প্রেয়ার প্রভৃতি হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকে। দিন দিন সব হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতির উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে।

ব্যবহারিক :বীজের বিশুদ্ধতা নির্ণয়

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ব্যবহারিক :বীজের বিশুদ্ধতা নির্ণয়

ব্যবহারিক :বীজের বিশুদ্ধতা নির্ণয়

 

বিষয়- ১ :বীজের বিশুদ্ধতা নির্ণয়

উপকরণ :

১. বীজ, ২. নিক্তি, ৩. সাদা কাগজ, ৪, ক্যালকুলেটর, ৫. চিমটা, ৬. পেট্রিডিস

কাজের ধাপ

১।যে কোন একটি ফসলের কিছু বীজ মেপে নিন।

২।বীজগুলো একটা সমান জায়গায় সাদা কাগজের উপর ঢেলে নিন।

৩।বীজগুলের মধ্য থেকে কাঙ্ক্ষিত ফসলের বীজ বেছে নিয়ে মেপে নিন। ধরুন এর ওজন w

81 অন্য ফসলের বীজ বেছে নিয়ে মেপে নিন। ধরুন এর ওজন X গ্রাম।

 

 

৫।আগাছার বীজ বেছে নিয়ে মেপে নিন। ধরা যাক এর প্রজনy গ্রাম

৬। জড়পদার্থও বেছে নিয়ে মেপে নিন। ধরুন এর ওজন 2 গ্রাম। Wx100

৭।এবার নিম্নের সূত্র ব্যবহার করে বীজের বিশুদ্ধতার হার বের করে নিন।

 

 

৮। উপরিউক্ত কাজের ধাপগুলো অনুসরণ করে বীজের বিশুদ্ধতার হার, অন্য ফসলের বীজের হার, আগাছার বীজের হার ও জড়পদার্থের হার নির্ণয় করুন এবং ব্যবহারিক খাতায় কাজের বিবরণীসহ তা লিপিবদ্ধ করুন।

 

 

বিষয় ২ : ধানের বীজ বাছাই

উপকরণ: ১. ধানের বীজ ২. বালতি ৩. পানি ৪. ইউরিয়া

কাজের ধাপ

১। কমপক্ষে ২০ লিটার পানি ধরে এরকম একটি বালতি নিন।

২। বালতির মধ্যে ১৩ লিটার পরিষ্কার পানি মেপে নিন।

৩। ১৩ লিটার পানির জন্য আধা কেজি ইউরিয়া সার মেপে নিয়ে তা বালতির পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিন।

 

৪। এবার ইউরিয়া সার মিশানো পানিতে ধানের বীজ ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন।

৫। লক্ষ্য করে দেখুন ভারী ও পুষ্ট বীজগুলো বালতির পানিতে ডুবে আছে এবং অপুষ্ট ও চিটা বীজগুলো ভেসে আছে।

৬। ভাসমান বীজগুলো হাত বা চালুনি দিয়ে তুলে ফেলুন।

৭। এরপর বালতির পানিতে ডুবে থাকা বীজগুলো তুলে পরিষ্কার পানিতে ২-৩ বার ভালো করে ধুয়ে ছায়ায় শুকিয়ে নিন। ধানের বীজ বাছাইয়ের জন্য এভাবে উপরিউক্ত কাজগুলো অনুশীলন করুন এবং ব্যবহারিক খাতায় তা লিপিবদ্ধ করুন।

ইঁদুর দমন

আজকের আলোচনার বিষয় ইঁদুর দমন—যা কৃষি ও জনস্বাস্থ্যের দিক থেকে অত্যন্ত জরুরি ও প্রাসঙ্গিক। ইঁদুর হলো মেরুদণ্ডী স্তন্যপায়ী প্রাণী। যুগ যুগ ধরে মানুষ ও ইঁদুরের সহাবস্থান থাকলেও, বাস্তবে এটি মানুষের অন্যতম ক্ষতিকর শত্রু হিসেবে পরিচিত। এরা মাঠ ও গুদামে ফসলের বিপুল পরিমাণ ক্ষতিসাধন করে থাকে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ইঁদুরের কারণে ফসলের প্রায় ১০-২০% ক্ষতি হয়ে থাকে। এক জরিপ অনুযায়ী, প্রতিবছর ইঁদুরের কারণে ৩০০-৪৮০ কোটি টাকার ফসল ও অন্যান্য সম্পদ নষ্ট হয়।

 

ইঁদুরের পরিচিতি ও আচরণ

ইঁদুরের মুখের উপরের পাটিতে একজোড়া ধারালো, তীক্ষ্ণ এবং সদাবর্ধিষ্ণু ছেদন দাঁত থাকে। এই দাঁত দিয়ে ইঁদুর নিয়মিত কিছু না কিছু কাটাকাটি করে, যাতে দাঁত ক্ষয় হয় এবং স্বাভাবিকভাবে খেতে পারে। দাঁত ক্ষয় না হলে দাঁতের বৃদ্ধি বন্ধ হয় না, ফলে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাঘাত ঘটে।

শুধু কৃষি ক্ষতিই নয়, ইঁদুর মানুষের শরীরে মারাত্মক রোগ যেমন প্লেগ ছড়িয়ে দিতে সক্ষম।

 

বাংলাদেশে প্রচলিত ক্ষতিকর ইঁদুর প্রজাতি

নিম্নোক্ত ইঁদুর প্রজাতিগুলো কৃষিতে বিশেষভাবে ক্ষতিকর:

১. কালো মেঠো ইঁদুর
২. কালো মে (বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন)
৩. গেছো ইঁদুর
৪. মাঠের নেংটি ইঁদুর
৫. সোলাই বা ঘরের নেংটি ইঁদুর
৬. নরওয়ে বা বাদামী ইঁদুর
৭. নরম পশমযুক্ত ইঁদুর

 

প্রজনন ক্ষমতা ও বিস্তার

ইঁদুর যেকোনো সময় গর্ভধারণ ও বাচ্চা দিতে সক্ষম। তবে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম আবহাওয়ায় তাদের প্রজননের হার কিছুটা কমে যায়। অনুকূল পরিবেশে মাত্র এক জোড়া ইঁদুর থেকে এক বছরে ৮০০-১০০০ ইঁদুর পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এদের গর্ভকাল মাত্র ২২ দিন, যা বিস্তারের দিক থেকে ভয়ংকর।

মা ইঁদুর বাচ্চা প্রসবের ২/৩ দিন পর আবার গর্ভধারণ করে। ইঁদুরের দর্শন শক্তি অত্যন্ত দুর্বল। তবে এদের প্রবণ, ঘ্রাণ ও খান ইন্দ্রিয় খুব উন্নত। গর্ত করা, গাছে চড়া, লাক দেয়া ও সাঁতার কাঁটা অনেক ইঁদুরের অভ্যাস। কিছু কিছু ইঁদুর থেকে থেকে প্রায় ১ মিটার ঊর্ধ্বে লম্বভাবে লাফ দিতে সক্ষম।

এ জন্য এরা সব সময় পরিবেশের উপর নির্ভর করে বসবাসের স্থান পরিবর্তন করে। ইঁদুর যায় না এমন জিনিস কম। প্রতি রাতে এরা শরীরের ওজনের প্রায় ১০% মানা যায়। লুকিয়ে খেতে খুব পছন্দ করে। তাই আমরা সাধারণত এদের দেখতে পাই না। এদের উপস্থিতির লক্ষন দেখেই বুঝতে হয় ইঁদুর আছে কিনা।

 

ইঁদুরের উপস্থিতির চিহ্ন

ইঁদুরের গতিবিধি অনেক সময় সরাসরি চোখে পড়ে না, তবে কিছু লক্ষণ দেখে সহজেই বুঝা যায় তাদের উপস্থিতি। নিচে ইঁদুরের উপস্থিতি নির্ণয়ের কিছু সাধারণ চিহ্ন উল্লেখ করা হলো:

১. বাসা: ধানক্ষেত, ঝোপঝাড়, ছাদ কিংবা মাটির নিচে গোলাকৃতি বাসা তৈরি করে।
২. গর্ত: ঘরবাড়ি বা ক্ষেতে টাটকা গর্ত দেখা গেলে তা ইঁদুরের উপস্থিতির প্রমাণ।
৩. পায়ের ছাপ: কাদা বা বালির উপর ছোট ছোট পায়ের ছাপ দেখা গেলে তা ইঁদুরের।
৪. ক্ষতির চিহ্ন: কাটা শসা, ফল, কিংবা বস্তার তেরছা দাগ দেখে তাদের উপস্থিতি বোঝা যায়।
৫. চলার পথ: ইঁদুর সাধারণত একটি নির্দিষ্ট পথ ব্যবহার করে এবং তা পরিষ্কার রাখে।
৬. মলমূত্র: বিভিন্ন জায়গায় ইঁদুরের পায়খানার চিহ্নও উপস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
৭. শব্দ: রাতে ঘরে দৌড়ঝাঁপ বা কুটকুট শব্দ শোনা গেলে ইঁদুর আছে বলেই ধরে নিতে হয়।

 

ইঁদুর দমন পদ্ধতি

ইঁদুর দমনের জন্য প্রধান শর্ত হচ্ছে সতর্কতা, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং পরিচ্ছন্নতা। ইঁদুরের চলাফেরা লক্ষ্য করে প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে বড় ক্ষতি এড়ানো যায়। ইঁদুর দমন পদ্ধতিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

১. অরাসায়নিক দমন পদ্ধতি

১. ধাতব পাত্রে খাদ্য সংরক্ষণ: ধান-চাল বা শস্য ধাতব পাত্রে রাখা এবং গুদামের ফাটল বন্ধ করা।
২. পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: বাড়ির আশপাশ ও ক্ষেতের আইল পরিষ্কার রাখলে ইঁদুর নিরাপদ আশ্রয় পায় না।
3. মসৃণ টিনের প্রতিরোধ: ঘরের খুঁটির নিচে মসৃণ টিন লাগালে ইঁদুর উপরে উঠতে পারে না।
৪. গাছপালা পরিষ্কার: গাছের কাণ্ডে মসৃণ টিনের প্যাঁচ এবং গাছ ছাঁটাই করে প্রতিরোধ গড়া।
৫. ফাঁদ ব্যবহার: স্প্রিং টাইপ বা কেস টাইপ ফাঁদে শুঁটকি, ভাজা চাল ইত্যাদি দিয়ে ফাঁদ পাতা।
৬. গর্ত ধ্বংস: গর্তে পানি ঢালা, ধোঁয়া দেওয়া বা শুকনো মরিচ পুড়িয়ে ধোঁয়া প্রয়োগ করে ইঁদুর বের করা।
৭. প্রাকৃতিক শিকারি: বিড়াল, বেজি, চিল, পেঁচা, সাপ ইত্যাদি ইঁদুরের প্রাকৃতিক শিকারি। এদের রক্ষা করা প্রয়োজন।

 

 

 

 

 

রাসায়নিক দমন পদ্ধতি

ইঁদুর দমনে রাসায়নিক বিষ অত্যন্ত কার্যকর হলেও এটি ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। সাধারণত দুই ধরনের রাসায়নিক বিষ ব্যবহার করা হয়:

 

১. তীব্র বিষ (Acute Poison)

তীব্র বিষ হিসেবে জিংক ফসফাইড (Zinc Phosphide) সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এই বিষ গ্রহণ করলে ইঁদুর তৎক্ষণাৎ মারা যায়। তবে সমস্যা হলো, ইঁদুর সাধারণত বিষ মিশ্রিত টোপের প্রতি লাজুক হয় — প্রথমে একটু মুখে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখে, এবং অপছন্দ হলে আর খায় না।

সমাধান:
ইঁদুরের এই বিষটোপ-লাজুকতা এড়াতে শুরুতে ২-৩ দিন টোপে বিষ না দিয়ে শুধু খাবার রাখা হয়। এরপর হঠাৎ করে বিষ মিশিয়ে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতি ইঁদুরকে অভ্যস্ত করে তোলে এবং বিষ গ্রহণ নিশ্চিত করে। প্রতি ৪-৫ সপ্তাহ পরপর টোপের গঠন ও উপাদান পরিবর্তন করাও কার্যকর।

ঘরের ইঁদুরদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বেশি দরকার হয়, তবে মাঠের কালো মেঠো ইঁদুর তেমন সতর্ক নয়।

 

২. দীর্ঘস্থায়ী বিষ (Chronic Poison)

রেকুমিন (Racumin) হলো দীর্ঘস্থায়ী বিষের একটি উদাহরণ। এই বিষ গ্রহণের পরে ইঁদুর সরাসরি না মরে ধীরে ধীরে ৬-৭ দিনের মধ্যে মারা যায়। বিষ শরীরে প্রবেশ করলে ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়, ফলে ইঁদুর দুর্বল হয়ে মৃত্যুবরণ করে।

বিষটোপে মিশিয়ে এই বিষ প্রয়োগ করলে অধিকাংশ ইঁদুর ধরা পড়ে।

 

রাসায়নিক ব্যবহারে সতর্কতা

রাসায়নিক বিষ অত্যন্ত বিষাক্ত হওয়ায় মানুষ ও প্রাণীর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই ব্যবহারকালে নিচের সতর্কতাগুলো অনুসরণ করা উচিত:

১. নিরাপদ স্থানে টোপ তৈরি করুন — ঘরের বাইরে, বাচ্চা বা গবাদিপশুর নাগালের বাইরে।
২. বিষ ব্যবহারে সাবধানতা — টোপ তৈরি বা প্রয়োগকালে নাক কাপড় দিয়ে ঢেকে নিন।
৩. ব্যবহার শেষে ধোয়া — হাতমুখ ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৪. দুর্ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থা নিন — বিষক্রিয়া দেখা দিলে দ্রুত বমির ব্যবস্থা করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৫. অনুমতি সতর্কীকরণ — ঘরে বা মাঠে বিষ ব্যবহার করলে সবাইকে আগে থেকে জানিয়ে দিন।

 

সারমর্ম

ইঁদুর হলো মানুষের অন্যতম শত্রু, যা প্রতি বছর ফসলের ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিসাধন করে। এদের প্রজনন হার অত্যন্ত বেশি এবং চলাফেরা খুব চতুর। ইঁদুর বিভিন্ন জাতের হয়ে থাকে, যেমন— কালো মেঠো ইঁদুর, গেছো ইঁদুর, বাদামী ইঁদুর, নেংটি ইঁদুর প্রভৃতি।

ইঁদুর দমনের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো— পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, অরাসায়নিক প্রতিরোধ, এবং রাসায়নিক বিষের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে ইঁদুর দমন করা সম্ভব।

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা। কৃষি উৎপাদনে বালাই বা ক্ষতিকর পোকামাকড়, রোগজীবাণু ও আগাছা অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। অতিরিক্ত বা অযৌক্তিকভাবে রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করলে যেমন পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে, তেমনি তা দীর্ঘমেয়াদে মাটির উর্বরতা ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস করে। এই প্রেক্ষাপটে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা (Integrated Pest Management – IPM) একটি কার্যকর ও টেকসই পন্থা হিসেবে স্বীকৃত। এই ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হলো— অর্থনৈতিক ক্ষতির সীমা বজায় রেখে, বালাই দমনে সকল সম্ভাব্য কৌশলকে একত্রে প্রয়োগ করে পরিবেশবান্ধবভাবে কৃষিজ উৎপাদন নিশ্চিত করা।

এই ব্যবস্থায় কেবল রাসায়নিক নয়, বরং জৈব, যান্ত্রিক, জেনেটিক ও সাংস্কৃতিক কৌশলও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। IPM ব্যবস্থা কৃষকের খরচ কমিয়ে দেয়, ফসলের গুণমান বৃদ্ধি করে এবং কৃষিকে পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের দিক থেকে অধিক নিরাপদ করে তোলে।

আপদের সঠিক কোন সংজ্ঞা দেয়া যায় না কারণ এটা বিভিন্নভাবে পরিবর্তনশীল । শুরু ব্যাপক অর্থে যে কোন প্রাণী বা উদ্ভিদ যা মানুষ, তাদের পালিত পশু-পাখি, ফসল, ব্যবহৃত দ্রব্যাদি প্রভৃতির ক্ষতিসাধন করে বা বিরক্তির উদ্রেক করে থাকে তাকে আপন বা বালাই বলা হয়।

যেমন- পোকামাকড়, ইদুরজাতীয় প্রাণী, শিয়াল, পাখি, কাঠবিড়ালি, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, কৃমি, আগাছা ইত্যাদি। ফল বিবেচনা করলে আপসসমূহের মধ্যে পোকামাকড়ের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।

 

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা হলো উদ্ভিদ সংরক্ষণের একটি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পদ্ধতি, যার মাধ্যমে বিভিন্ন দমন কৌশলের সমন্বয় ঘটিয়ে ক্ষতিকর বালাইগুলোকে অর্থনৈতিক ক্ষতির সীমার নিচে রাখা হয়। এতে রাসায়নিক, জৈব, যান্ত্রিক, জেনেটিক এবং সাংস্কৃতিক পদ্ধতির সমন্বয়ে একটি সুষম কৌশল গড়ে ওঠে। এই ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য ফসলের ক্ষতি কমানো এবং পরিবেশ ও উপকারী প্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা।

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনার মূল বৈশিষ্ট্য:
  • IPM-এ শুধু রাসায়নিক কীটনাশক নয় বরং কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে সমস্যার নিরূপণ ও সমাধানে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়।
  • পোকা-মাকড়, রোগ ও আগাছার চক্র বুঝে তাদের সংক্রমণের মাত্রা ও প্রকৃতি অনুযায়ী কৌশল প্রয়োগ করা হয়।
  • নির্দিষ্ট ক্ষতির মাত্রা (“Economic Threshold Level – ETL”)-এর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কীটনাশক ব্যবহার করা হবে কিনা।

 

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনার উপকারিতা:
ক্র. উপকারিতা ব্যাখ্যা
প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা উপকারী জীব যেমন ব্যাঙ, গিরগিটি, টিকটিকি ও পরজীবী পোকা সংরক্ষিত থাকে
পরিবেশ দূষণ কমানো অকার্যকর বা অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার না করায় মাটি, পানি ও বায়ু কম দূষিত হয়
উপকারী পোকামাকড় সংরক্ষণ পরজীবী এবং পরভোজী পোকামাকড়ের জীবিত থাকা ফসলের জন্য প্রাকৃতিক রক্ষা দেয়াল
কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস শুধুমাত্র প্রয়োজন হলে ও পরিমাণ বুঝে ব্যবহার করা হয়
ফসলের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়মিত আক্রমণ থেকে ফসল নিজে রক্ষা করার ক্ষমতা তৈরি করে
কীট প্রতিরোধীতা হ্রাস অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারে যে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে, তা অনেকাংশে রোধ হয়
উৎপাদন খরচ কমে, ফলন বাড়ে কম কীটনাশক, সঠিক কৌশল ও সময়ে ব্যবস্থাপনার ফলে খরচ কমে, ফলন বাড়ে

 

IPM ব্যবস্থায় ব্যবহৃত প্রধান কৌশলগুলো:
কৌশল উদাহরণ
১. সাংস্কৃতিক দমন সঠিক সময়ে চাষ, ফসলের ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ, ফসল পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন (Crop Rotation)
২. যান্ত্রিক দমন হাত দিয়ে বা ফাঁদ দিয়ে পোকা ধরা, আলোর ফাঁদ, পিপিই ব্যবহার
৩. জৈব দমন ট্রাইকোগ্রামা পোকা ছাড়া, বিটি ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার
৪. রাসায়নিক দমন (সীমিতভাবে) নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করলে কীটনাশক ব্যবহারে অনুমোদিত প্রয়োগ
৫. প্রতিরোধী জাত ব্যবহার রোগ ও পোকা সহিষ্ণু বা প্রতিরোধী জাত ব্যবহার

 

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, অন্যদিকে কৃষকের জন্য একটি লাভজনক ও দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদন পদ্ধতি নিশ্চিত করে। একে যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে এটি বাংলাদেশের কৃষিতে একটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব বিপ্লব এনে দিতে পারে।

 

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা (IPM) হলো এমন একটি পরিবেশবান্ধব কৌশল, যার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষতির নিচে থেকে বালাই নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। এতে একাধিক দমন কৌশল (সংস্কৃতিক, জৈবিক, যান্ত্রিক, রাসায়নিক ও প্রতিরোধক জাত) একত্রে এবং সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করা হয়।

নিম্নে এই ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলো ব্যাখ্যা করা হলো:

 

. আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির মাধ্যমে দমন

  • জমি গভীরভাবে চাষ করলে মাটির নিচের পোকা ও ডিম উঠে এসে রোদে বা পাখির খাদ্য হয়ে মারা যায়।
  • ফসল পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন করলে নির্দিষ্ট পোকামাকড় বা রোগের চক্র ভেঙে যায়।
  • সুষম সার ব্যবহারে গাছ সুস্থ থাকে, ফলে রোগ বা পোকার আক্রমণ কমে।
  • ধানখেতে অতিরিক্ত পানি অপসারণ বা সেচ ব্যবস্থা বদল করে নির্দিষ্ট পোকার (যেমন গাছ ফড়িং বা শীষকাটা পোকা) আক্রমণ কমানো যায়।

 

. প্রতিরোধক শস্যের মাধ্যমে দমন

  • প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করলে প্রাকৃতিকভাবেই রোগ বা পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়।
  • উদাহরণ:
    • চান্দিনা ধান – মাজরা পোকার প্রতিরোধী।
    • প্রগতি ধান – টুংরো ভাইরাস, রস্ট ও বাকানী রোগ প্রতিরোধী।

 

. যান্ত্রিক পদ্ধতিতে দমন

  • মানুষের হাত বা যন্ত্র ব্যবহার করে পোকা ধ্বংস করা হয়।
  • পদ্ধতিসমূহ:
    • হাতজাল বা দলে ধরে পোকা ধরা
    • পিটিয়ে, ঝাঁকিয়ে ফেলা
    • কুলা বা চালুনিতে চেলে ফেলা
    • আলো ফাঁদ – আলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পোকা ধরা পড়ে

 

. জৈবিক পদ্ধতিতে দমন

  • প্রাকৃতিক শত্রু বা পরজীবীর মাধ্যমে ক্ষতিকর পোকা দমন করা।
  • উদাহরণ:
    • Trichogramma spp. – ডিমপর্যায়ে পরজীবী
    • Beauveria bassiana – ছত্রাক, যা পোকামাকড়ে সংক্রমণ ঘটায়
    • লেডি বিটল – অ্যাফিড দমন করে

 

. রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন

  • অনুমোদিত এবং নির্দিষ্ট মাত্রায় বালাইনাশক ব্যবহার করে বালাই দমন করা।
  • উদাহরণ:
    • ডায়াজিনন ৬০ ইসি – উদ্ভিদভোজী পোকা দমনে ব্যবহৃত
    • ম্যালাথিয়ন – চুষে খাওয়া পোকা দমনে কার্যকর
    • কুইনালফস, কার্বারিল, ক্লোরপাইরিফস – অন্যান্য বহুল ব্যবহৃত কীটনাশক

 

পদ্ধতিগুলোর তুলনামূলক টেবিল:

দমন পদ্ধতির নাম কার্যপদ্ধতি / কৌশল উদাহরণ / মন্তব্য
আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি গভীর চাষ, ফসল পরিবর্তন, সুষম সার প্রয়োগ, পানি ব্যবস্থাপনা চুঙ্গি পোকার দমন, শীষ কাটা পোকা নিয়ন্ত্রণ
প্রতিরোধক শস্য রোগ ও পোকা প্রতিরোধী জাত ব্যবহার চান্দিনা, প্রগতি জাত
যান্ত্রিক পদ্ধতি ফাঁদ, ঝাঁকানো, কুলা, আলো ফাঁদ ধানক্ষেতে আলো ফাঁদ
জৈবিক পদ্ধতি পরজীবী ও শিকারি জীবের ব্যবহার Trichogramma, Lady Beetle, ছত্রাক
রাসায়নিক পদ্ধতি অনুমোদিত কীটনাশকের সঠিক মাত্রায় ব্যবহার ডায়াজিনন ৬০ ইসি, ম্যালাথিয়ন

 

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা হলো আধুনিক কৃষির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি শুধু উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে না, বরং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায়ও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সঠিক সময়ে ও সঠিক পদ্ধতি বেছে নিয়ে IPM বাস্তবায়ন করলে কৃষক অধিক লাভবান হতে পারে এবং কৃষি ব্যবস্থাপনা আরও টেকসই ও পরিবেশবান্ধব হতে পারে।

 

 

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনার উপাদানসমূহ

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা (IPM) হলো এমন একটি ফসলভিত্তিক টেকসই কৌশল, যার মাধ্যমে ফসলের পুরো চাষাবাদ চক্রে (চারা অবস্থা, বৃদ্ধির পর্যায়, ফুল ও ফল ধরা পর্যন্ত) বালাই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। IPM-এর লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক ক্ষতির মাত্রার নিচে বালাই রাখা এবং পরিবেশ, মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে আনা।

IPM বাস্তবায়নে নিচের ৫টি প্রধান উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:

 

. পর্যবেক্ষণ (Monitoring)

  • ফসলের ক্ষেতে নিয়মিত পরিদর্শনের মাধ্যমে বালাই বা তাদের উপসর্গ আছে কি না তা খেয়াল রাখা।
  • এটি প্রাথমিক সংকেত দেয় যে বালাই নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন কি না।

. জরিপ (Survey)

  • জমিতে উপস্থিত বালাই ও তাদের প্রাকৃতিক শত্রুদের সনাক্তকরণ ও গণনা করা।
  • উদাহরণ: প্রতি নির্দিষ্ট সংখ্যক গাছে কীটপতঙ্গ বা রোগ লক্ষণ কত শতাংশে বিদ্যমান তা নথিভুক্ত করা।

. দমননীতি (Decision-Making Rules)

  • নির্ধারণ করা যে কখন, কত পরিমাণ আক্রমণ হলে এবং কোন পদ্ধতি বেছে নিয়ে বালাই দমন করতে হবে।
  • একে ইকোনমিক থ্রেশহোল্ড লেভেল (ETL) বা অর্থনৈতিক সহনশীল মাত্রাও বলা হয়।

. দমন পদ্ধতি (Control Methods)

  • নিচের চারটি পদ্ধতি থেকে প্রয়োজনে একাধিক কৌশল প্রয়োগ করা হয়:
    • যান্ত্রিক পদ্ধতি: ফাঁদ, হাতজাল, আলো ফাঁদ ইত্যাদি
    • জৈবিক পদ্ধতি: পরজীবী পোকা বা ছত্রাকের ব্যবহার
    • রাসায়নিক পদ্ধতি: অনুমোদিত কীটনাশক, নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ
    • কৃষিনির্ভর পদ্ধতি: জমি চাষ, ফসল পরিবর্তন, সময়মতো সেচ

. অজীবীয় উপাদান (Abiotic Factors)

  • তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, কুয়াশা, বৃষ্টি, বাতাসের গতি ইত্যাদি পরিবেশগত উপাদান অনেক সময় বালাইকে প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
  • যেমন—গ্রীষ্মকালে অধিক তাপমাত্রায় ছত্রাকজাত রোগ কমে যায়, বর্ষায় কিছু পোকা প্রাকৃতিকভাবে ধ্বংস হয়।

 

টেবিলে উপস্থাপন: IPM এর উপাদান কার্যকারিতা

উপাদান কার্যকারিতা বা ভূমিকা
পর্যবেক্ষণ ক্ষেতে নিয়মিত পরিদর্শন করে বালাই উপস্থিতি শনাক্তকরণ
জরিপ বালাই ও প্রাকৃতিক শত্রুর সংখ্যা নিরূপণ
দমননীতি কখন ও কী পদ্ধতিতে দমন করতে হবে তা নির্ধারণ
দমন পদ্ধতি যান্ত্রিক, রাসায়নিক, জৈবিক ও কৃষিনির্ভর উপায় প্রয়োগ
অজীবীয় উপাদান আবহাওয়া ও পরিবেশের প্রতিকূলতা কাজে লাগিয়ে বালাই দমন

 

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনার এই উপাদানসমূহ একে অপরের পরিপূরক। এসব উপাদান কার্যকরভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে ফসলের গুণগত মান বজায় থাকে, উৎপাদন ব্যয় কমে, পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে এবং কৃষি হয় অধিক টেকসই ও লাভজনক।

 

 

 

সারমর্ম

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা হলো উদ্ভিদ সংরক্ষণের একটি পদক্ষেপ যেখানে বিভিন্ন প্রকার দমন পদ্ধতির সমন্ধ্যা সাধন ও প্রয়োগ করাকে বুঝায় অর্থাৎ যখন যে পদ্ধতির দরকার সেটির ব্যবহার বুঝায়। এ ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য হলো পোকামাকড় সম্পূর্ণভাবে নয় বরং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিকর পর্যায়ের নিচে রাখা হয়। এ ব্যবস্থাপনা শস্যভিত্তিক হয়ে থাকে। এর প্রধান উপাদান ৫টি। যথা- পর্যবেক্ষণ, জরিপ, দমননীতি দমন পদ্ধতি ও অজীবীয় উপাদান।

বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ

কৃষির প্রাণ হলো বীজ। ভালো মানের বীজ ছাড়া উচ্চ ফলন, মানসম্পন্ন ফসল এবং কৃষির ধারাবাহিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক দেশ হিসেবে বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বীজের গুণগত মান সরাসরি নির্ভর করে সঠিক উৎপাদন প্রক্রিয়া, রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ, সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কৌশলের ওপর।

ভালো বীজ ব্যবহার করলে উৎপাদন ১৫–২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বাস্তবে অনেক কৃষক এখনও নিম্নমানের বা অনুন্নত বীজ ব্যবহার করেন, ফলে কাঙ্ক্ষিত ফলন পান না। তাই বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং স্থানীয় পর্যায়ে বীজ ব্যাংক গড়ে তোলা টেকসই কৃষি নিশ্চিতের অন্যতম প্রধান কৌশল।

বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ

 

 

বীজ উৎপাদনের কৌশল

ফসলের ভালো ফলন পেতে হলে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদনের বিকল্প নেই। সাধারণ ফসল উৎপাদনের তুলনায় বীজ ফসল উৎপাদন পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন। এজন্য বিশেষ পরিচর্যা ও যত্ন প্রয়োজন। এই বীজ থেকেই খাওয়ার জন্য ফসল উৎপাদন করা হয়।

বীজ ফসল উৎপাদনে কয়েকটি কৌশল অনুসরণ করতে হয়:

১. স্থান নির্বাচন

ভালো মানের বীজ উৎপাদনের জন্য এমন স্থান নির্বাচন করা উচিত যেখানে:

  • প্রচুর সূর্যালোক পাওয়া যায়,

  • মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়,

  • আবহাওয়া শুষ্ক ও ঠাণ্ডা থাকে,

  • পরাগায়নের সময় হালকা বাতাস প্রবাহিত হয়।

 

 

২. জমি নির্বাচন
  • উর্বর, জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ সমতল ভূমি বেছে নিতে হবে।

  • জমিতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থাকবে এবং আগাছার প্রকোপ কম হবে।

  • একই জমিতে বারবার একই জাতের ফসল চাষ না করাই শ্রেয়।

 

 

বীজ সংগ্রহ

ভালো বীজ উৎপাদনের জন্য সঠিক উৎস থেকে বীজ সংগ্রহ অপরিহার্য। এজন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়:

  1. অবশ্যই বীজ অনুমোদনকারী সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত বীজ সংগ্রহ করতে হবে।

  2. প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদনের জন্য ভিত্তি বীজ এবং ভিত্তি বীজ উৎপাদনের জন্য মৌল বীজ সংগ্রহ করা উচিত।

  3. বীজের বস্তা বা প্যাকেটের ট্যাগ পরীক্ষা করতে হবে। সেখানে উল্লেখ থাকবে:

    • জাতের নাম

    • ব্যবহারের সময়সীমা

    • গজাবার ক্ষমতা

    • আর্দ্রতা

    • বীজ পরীক্ষার তারিখ

  4. বীজ বপনের আগে এর গজানোর ক্ষমতা, বিশুদ্ধতা এবং জমির উর্বরতা বিবেচনা করতে হবে।

  5. নির্দিষ্ট জমিতে প্রয়োজনীয় বীজের পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে।

 

 

 

জমি প্রস্ততকরণ :

১. জমি প্রস্তুতকরণ
  • বিভিন্ন জাতের বীজ ফসলের জন্য জমি ভিন্নভাবে তৈরি করতে হয়।

  • ধানের জমি (আউশ/আমন): শুকনো অবস্থায় ৪–৬ বার চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করতে হবে।

  • রোপা ধান: জমিতে পানি ধরে কাদা করে প্রস্তুত করতে হয়।

 

২. বীজ বপনের সময় ও পদ্ধতি
  • নির্বাচিত বীজ সঠিক সময়ে সারিতে বা ছিটিয়ে বপন করতে হয়।

  • সারিতে বপন করলে এর সুবিধা:

    • আলো ও বাতাস সহজে পাওয়া যায়।

    • পরিচর্যা সহজ হয়।

    • বীজও কম লাগে।

  • বপনের গভীরতা নির্ভর করে:

    • বীজের আকার

    • মাটির বুনট

    • আর্দ্রতা

 

৩. স্বাতন্ত্রিকরণ বা পৃথকীকরণ দূরত্ব
  • অনাকাঙ্ক্ষিত সংমিশ্রণ রোধে বীজ ফসলের প্লটের চারপাশে নিরাপদ দূরত্ব রাখতে হবে।

  • ধানের ক্ষেত্রে:

    • ভিত্তি বীজ প্লট → ৯ মিটার দূরত্ব।

    • প্রত্যায়িত বীজ প্লট → ৫ মিটার দূরত্ব।

 

৪. বাছাইকরণ বা রোগিং

ভালো বীজ বপন করলেও অনেক সময় জমিতে অন্য জাতের গাছ জন্মায়। এসব গাছ ফেলে দিতে হয়। একেই রোগিং বলা হয়।

  • রোগিং সাধারণত তিন পর্যায়ে করা যায়:
    ১. গাছে ফুল আসার আগে।
    ২. ফুল আসার সময়।
    ৩. ফসল পরিপক্ক হওয়ার আগে।

এতে বীজের বিশুদ্ধতা ও গুণগত মান বজায় থাকে।

৫. পরিচর্যা
  • জমিতে প্রয়োজনমতো সার ও পানি সেচ দিতে হবে।

  • জলাবদ্ধতা দেখা দিলে অতিরিক্ত পানি বের করে নিতে হবে।

  • আগাছা হলে নিড়ানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

  • পোকা-মাকড় ও রোগবালাই দেখা দিলে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬. বীজ সংগ্রহ
  • ফসল ভালোভাবে পরিপক্ক হওয়ার পর বীজ কাটতে হবে।

  • এরপর মাড়াই করে ঝেড়ে পরিষ্কার করতে হবে।

 

৭. প্রক্রিয়াজাতকরণ
  • মাড়াই শেষে বীজ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

  • এসময় বেছে নিতে হবে:

    • অন্য জাতের বীজ

    • অন্য ফসলের বীজ

    • আগাছার বীজ

    • খড়কুটা ও ভাঙা দানা

  • ঝাড়াই শেষে ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।

 

৮. সংরক্ষণ
  • বীজ সংরক্ষণের সময় আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

  • আর্দ্রতার মাত্রা:

    • ৪%–১২% এর মধ্যে থাকলে বীজ দীর্ঘদিন ভালো থাকে।

    • ১২% এর বেশি হলে পোকা-মাকড় ও রোগবালাই আক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে।

    • ৪% এর নিচে নেমে গেলে বীজের জীবনীশক্তি নষ্ট হয়ে যায়।

 

বীজ সংরক্ষণের নীতি :

বীজের গুণগত মান বজায় রাখা এবং দীর্ঘদিন ধরে সজীব রাখতে হলে কিছু মৌলিক নীতি অনুসরণ করা প্রয়োজন।

১. শুষ্ক ও ঠাণ্ডা পরিবেশে সংরক্ষণ

  • বীজ রাখার জায়গা অবশ্যই শুষ্ক ও ঠাণ্ডা হতে হবে।

২. ভালোভাবে শুকানো

  • সংরক্ষণের আগে বীজ কয়েকদিন রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।

  • পরে ছায়ায় রেখে ঠাণ্ডা করে সংরক্ষণ করতে হবে।

৩. বায়ুনিরোধক পাত্র ব্যবহার

  • সহজে সজীবতা হারায় না এমন উন্নতমানের বীজ

  • বায়ুনিরোধক ধাতব পাত্র বা পলিথিনের ব্যাগে সংরক্ষণ করতে হবে।

৪. পোকা ও রোগ প্রতিরোধ

  • বীজ রাখার জায়গা অবশ্যই পোকামাকড় ও রোগজীবাণুর আক্রমণমুক্ত হতে হবে।

৫. নিয়মিত পরীক্ষা

  • নির্দিষ্ট সময় পর পর বীজ পরীক্ষা করতে হবে।

  • প্রয়োজন হলে আবার শুকিয়ে নিতে হবে।

ভূমিক্ষয় ও সংরক্ষণ পদ্ধতি

আজকের আমাদের আলোচনা বিষয় হলো — ভূমিক্ষয় এবং তার সংরক্ষণ পদ্ধতি। বৃষ্টি, নদী, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ক্রিয়াশীলতায় ভূমির উপরিভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং ভূমিপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমশ কমে যায়। ভূমির এই ধীরগতি ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষয়কে ভূমিক্ষয় বলা হয়। এটি একটি প্রাকৃতিক, দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া যা পৃথিবীর ভূ-আকৃতির পরিবর্তনের অন্যতম কারণ।

ভূমিক্ষয় ও সংরক্ষণ পদ্ধতি

 

ভূমিক্ষয়

বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণ যেমন বায়ুপ্রবাহ, পানি প্রবাহ, বৃষ্টিপাত এবং অন্যান্য উপাদানের প্রভাবে ভূমির উপরিভাগের উর্বর মাটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ভূমিক্ষয় বলা হয়। কৃষি জমির উপরের ১৫-২০ সে.মি. গভীরতা পর্যন্ত উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো বেশি পরিমাণে সঞ্চিত থাকে। ভূমিক্ষয়ের ফলে এসব পুষ্টি উপাদানের স্থানান্তর ঘটে, যার ফলে জমি অনুর্বর হয়ে যায়। ভূমিক্ষয় প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত:

(১) পানি দ্বারা ভূমিক্ষয়:

পানির চলাচল বা দ্রুত প্রবাহের কারণে ভূমির ক্ষয়কে পানি দ্বারা ভূমিক্ষয় বলা হয়। এটি আবার পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়:

(ক) আস্তরণ বা পাত ভূমিক্ষয়

বৃষ্টিপাত বা সেচের পর যখন ভূমির পানি চারদিকে সরে যেতে থাকে, তখন মাটির উপরের স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এই ক্ষয় প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে হওয়ায় তা সহজে চোখে পড়ে না। তবে এই প্রক্রিয়ায় মাটির উপরিভাগের অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান অপসারিত হয়, ফলে মাটি তার উর্বরতা হারায়। এই ধরনের ক্ষয়কে আস্তরণ বা পাত ভূমিক্ষয় বলা হয়। সাধারণত সমতল ভূমির চেয়ে সামান্য ঢালু জমিতে এটি বেশি ঘটে।

(খ) রিল ভূমিক্ষয়

পাত ভূমিক্ষয়ের একটি উন্নত পর্যায় হলো রিল ভূমিক্ষয়। মাটির উপরের স্তর ক্রমশ ক্ষয় হওয়ার ফলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নালা গঠন হয়। এগুলো পানি চলাচলের গতি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং গভীরতায় বড় হয়ে প্রশস্ত নালা গড়ে তোলে। এই ধরনের ভূমিক্ষয়কে রিল ভূমিক্ষয় বলা হয়।

(গ) নালী ভূমিক্ষয়

যদি রিল ভূমিক্ষয় অবাধে চলতে থাকে, তবে ছোট ছোট নালাগুলো প্রতিবছর ক্ষয়ে বড় বড় নালায় পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়াকে নালী ভূমিক্ষয় বলে। অধিক বৃষ্টিপাতে কয়েক বছরের মধ্যেই নালার সংখ্যা বাড়ে এবং জমি ফসল আবাদের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

(ঘ) নদীকূলের ভূমিক্ষয়

প্রবল স্রোত, ঢেউ বা জলোচ্ছ্বাসের কারণে নদীর পাড় ক্ষয়প্রাপ্ত ও ভেঙে যায়। নদীতে জোয়ারের সময় এ ধরনের ভাঙ্গনের গতি বৃদ্ধি পায়। এই প্রক্রিয়াকে নদীকূলের ভূমিক্ষয় বলা হয়। নদীকূল ভূমিক্ষয় দুইভাবে ঘটে:

  • নদীর ধারা নালা বা খালের পথে প্রবাহিত হয়ে নদীতে পতিত হলে, মিলনস্থলের প্রবল স্রোত নদীর দুপাড়কে ক্ষয় করে ভেঙে ফেলে।
  • নদীর পাড় নিজেই স্রোতের চাপ এবং মাটির দুর্বলতার কারণে ভেঙে পড়ে, যা সাধারণত নদীর বাঁকের কাছে বেশি দেখা যায়।

(ঙ) সাগরকূলের ভূমিক্ষয়

সাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চল জলোচ্ছ্বাস ও ঢেউয়ের প্রভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। সমুদ্র উপকূলীয় দ্বীপগুলিতেও এ ধরনের ভূমিক্ষয় হতে দেখা যায়।

 

 

বায়ুর প্রবাহের কারণে জমির মাটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে বায়ু দ্বারা ভূমিক্ষয় বলা হয়। সাধারণত উন্মুক্ত স্থান, বা যেখানে গাছপালা কম, সেখানে বায়ু দ্বারা ভূমিক্ষয় অধিক পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে মরু অঞ্চলে ভূমিক্ষয়ের প্রধান কারণ বায়ু প্রবাহই।

এই ধরনের স্থানে জমির উপরের স্তরের মাটি বায়ুর প্রবাহের কারণে স্থানান্তরিত হয়। বিশেষ করে ধূলিময় বা বেলে প্রাকৃতির মাটি বায়ুর মাধ্যমে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও, চাষাবাদের পর যদি মাটি চূর্ণবিচূর্ণ ও মিহি হয়ে যায়, তখন বায়ুর প্রবাহ দ্বারা ভূমিক্ষয় আরও তীব্র হয়।

 

ভূমিক্ষয়ের অন্যান্য কারণ

পানি ও বায়ু ছাড়াও ভূমিক্ষয়ের জন্য আরও কিছু কারণ রয়েছে, যেগুলো ভূমির ক্ষয়ের মাত্রাকে প্রভাবিত করে:

১. বৃষ্টিপাত

ভূমিক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ হলো বৃষ্টিপাত। বৃষ্টির তীব্রতা, ফোঁটার আকার ও পরিমাণ সরাসরি ভূমিক্ষয়ের মাত্রাকে প্রভাবিত করে। বড় আকারের বৃষ্টির ফোঁটা মাটির কণাকে শক্তভাবে আঘাত করে এবং কণা পানির সাথে মিলিত হয়ে স্থানান্তরিত হয়।

ঘনঘন ও মুষলধারে বৃষ্টিপাত হলে মাটির শোষণ ক্ষমতা কমে যায়। অতিরিক্ত পানির সঙ্গে মাটির কণা মিশে জমির ওপর দিয়ে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। প্রবাহমান পানির গতি যত বেশি, মাটির ক্ষয়ও তত বেশি ঘটে।

২. ভূমির ঢাল

ভূমির ঢাল ভূমিক্ষয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ঢাল যত বেশি এবং তার দৈর্ঘ্য যত দীর্ঘ, তত বেশি ভূমিক্ষয় ঘটে, কারণ ঢালু জমিতে পানির গতি বেশি হওয়ায় মাটির ক্ষয় দ্রুত হয়।

৩. মাটির প্রকৃতি

মাটির বুনন, দানাবদ্ধতা এবং জৈব পদার্থের উপস্থিতি ভূমিক্ষয়ের মাত্রায় প্রভাব ফেলে। হালকা, দানাদার এবং জৈব পদার্থসমৃদ্ধ মাটি ছিদ্রবহুল হওয়ায় বৃষ্টির পানি সহজে শোষিত হয় এবং এ ধরনের মাটির ক্ষয় কম হয়। অন্যদিকে ভারী এঁটেল জাতীয় মাটির ছিদ্রতা কম থাকায় পানি শোষণ কম হয়, ফলে অল্প বৃষ্টিতেই ভূমিক্ষয় বেশি হয়।

৪. শস্যের প্রকার

শস্যের ধরন নির্বাচন করেও ভূমিক্ষয় কমানো সম্ভব। অধিক পাতাযুক্ত ফসল যেমন চীনাবাদাম, খেশারি, বরবটি, সয়াবিন ইত্যাদির চাষাবাদে ভূমিক্ষয় কম হয়। অন্যদিকে কম পাতাযুক্ত ফসল যেমন ইক্ষু, ভুট্টা, তুলা ইত্যাদির চাষাবাদে ভূমিক্ষয় বেশি হয়। জমির প্রকৃতি বুঝে না চাষাবাদ করলে উর্বর মাটির ক্ষয় বেশি ঘটে।

৫. জমির চাষ পদ্ধতি

অসমতল বিশেষ করে পাহাড়ি জমিতে ঢালের অক্ষরেখার বিপরীতে চাষাবাদ করলে ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পায়। চাল বরাবর বা ঢালু জমির অনুক্রম অনুযায়ী চাষ করলে ভূমিক্ষয় কমানো যায়।

৬. অত্যধিক পশুচারণ

অত্যধিক বা অনিয়মিত পশুচারণ ভূমিক্ষয়ের আরেকটি কারণ। পশুর পায়ের চাপে জমির মাটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মাটির ওপরিভাগ অপসারিত হয়।

৭. মানব কার্যাবলী

মানব কার্যাবলী ভূমিক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। বনজঙ্গল বা মাঠ-ঘাট সাধারণত স্বাভাবিক অবস্থায় ভূমিক্ষয়ের ঝুঁকিতে থাকে না। তবে মানুষের অপরিকল্পিত গাছপালা কর্তন এবং জমি উন্মুক্ত করার ফলে ভূমিক্ষয় বেড়ে যায়।

 

 

 

ভূমিক্ষয়ের অপকারিতা

ভূমিক্ষয়ের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হল জমির উপরিভাগের উর্বর ও নরম মাটি অপসারণ হওয়া। সাধারণত কৃষি জমির উপরের ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার গভীরতায় উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো সমৃদ্ধ থাকে। ভূমিক্ষয়ের ফলে এই উর্বর স্তরের মাটি অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়, যা জমির উর্বরতা ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয় এবং ফলস্বরূপ ফসলের ফলন হ্রাস পায়।

এছাড়াও, ভূমিক্ষয়ের কারণে মাটি নদী, নালা ও খাল-বিলের তলদেশে জমা হতে থাকে। পানিবাহিত মাটির এই ভারী কণাগুলো জলাধারগুলোতে জমা হয়ে জলপ্রবাহ কমিয়ে দেয় এবং খাল-বিলগুলো ভরাট হয়ে যায়। এর ফলে বর্ষাকালে বন্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, কারণ জল নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে শুষ্ক মৌসুমে নদী-নালা ও খালগুলোর গভীরতা কমে যাওয়ায় নৌপরিবহন ও মৎস্য চাষের কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং কৃষিকাজে অসুবিধার সৃষ্টি হয়।

ভূমিক্ষয়ের কারণে:

  • মাটির উর্বরতা ও ফলন হ্রাস: গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান মাটির সাথে অপসারিত হয়ে যায়, ফলে ফসলের গুণগত মান ও পরিমাণ কমে যায়।

  • জলাধার ভরাট: নদী, খাল ও বিল ভরাট হয়ে বন্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

  • পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি: পানির চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়, যা মৎস্যজীবন ও কৃষি জলের প্রাপ্যতাকে প্রভাবিত করে।

  • অর্থনৈতিক ক্ষতি: ফলন হ্রাস ও অতিরিক্ত বন্যার কারণে কৃষকদের আর্থিক লোকসান হয় এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

সুতরাং ভূমিক্ষয় রোধে সচেতনতা ও সঠিক নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি, যাতে কৃষি জমির উর্বরতা বজায় থাকে এবং প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট ঝুঁকি হ্রাস পায়। কৃষি উৎপাদনের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে ভূমিক্ষয়ের বিরুদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

 

 

ভূমি সংরক্ষণ

আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনায় মৃত্তিকা বা মাটির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিক্ষয় রোধ না করা হলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট ক্ষতি হবে। প্রকৃতি এবং মানুষের অমনোযোগী কার্যকলাপ থেকে ভূমিকে সুরক্ষা দিতে দ্রুত ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। কৃষক থেকে শুরু করে সরকারি পর্যায় পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া ভূমিক্ষয় রোধ করা সম্ভব নয়।

নিচে ভূমি সংরক্ষণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:

১. পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ

বৃষ্টির পানির বেগ কমিয়ে ভূমিক্ষয় রোধ করা যায়। এর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে, যেমন:

  • জমির মাঝে মাঝে প্রয়োজনীয় স্থানে আড়াআড়িভাবে ছোট ছোট আইল বা বাঁধ তৈরি করা।
  • অসমতল জমি কেটে সমতল করা ও ভালভাবে চাষাবাদ করা।
  • জমির ছোট ছোট নালা ভরাট করা।
  • বড় নালায় আগাছা জমানো ও খুঁটি পুঁতে তার সাথে তারের জাল দিয়ে পানি প্রবাহ কমানো।
  • নদীর উজানে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করা।

২. পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা

কৃষিজমি থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হলে জমিতে পানি জমে জমে ফেনাভাব সৃষ্টি হয়, যা ভূমিক্ষয় বাড়িয়ে দেয়। এর প্রতিরোধে মাটির নিচে টাইল নালা তৈরি করা যেতে পারে, যাতে পানি ধীরে ধীরে নির্গত হয় এবং ক্ষয় কম হয়।

৩. পর্যাপ্ত জৈব সার প্রয়োগ

জৈব সার মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মাটির কণাগুলোকে একসাথে আটকে রাখে, ফলে মাটি সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। সঠিক পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ মাটির উর্বরতা বজায় রাখার অন্যতম উপায়।

৪. বনভূমি সৃষ্টি

বায়ুর প্রবাহ দ্বারা ভূমিক্ষয় বেশি হলে বায়ু প্রবাহের পথে সারি সারি লম্বা ও ঝোপজাতীয় গাছপালা লাগানো উচিত। এই গাছগুলো বায়ুর গতিবেগ কমিয়ে ভূমিক্ষয় রোধ করে।

৫. ধাপ চাষ (Terrace Farming)

পাহাড়ি ও ঢালু জমিতে শস্যের সারিগুলো ঢালের বিপরীতে আড়াআড়িভাবে সাজানো হয়, যা পানির সরাসরি প্রবাহ কমিয়ে ভূমিক্ষয় রোধ করে। পাহাড়ের ঢাল কেটে সিঁড়ির মতো ধাপে জমি সাজানো হয়, যাকে ধাপ চাষ বলে।

৬. খন্ড খন্ড প্লটে শস্য চাষ

অসমতল বা পাহাড়ি জমিতে এক ধরনের ফসল না চাষ করে জমিকে খন্ড খন্ড করে বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়। এতে ভূমিক্ষয় কমে এবং মাটির উর্বরতা বজায় থাকে।

৭. অনিয়মিত পশুচারণ রোধ

অত্যধিক বা অনিয়মিত পশুচারণে মাটির উপরিভাগ উন্মুক্ত হয়ে যায়, যা ভূমিক্ষয় বাড়িয়ে দেয়। তাই পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করে ভূমি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

৮. বাঁধ বা আইল নির্মাণ

জমির চারপাশে সুষ্ঠু বাঁধ বা আইল তৈরি করলে বৃষ্টি ও সেচের পানি জমির বাইরে সরাতে সাহায্য করে এবং ভূমিক্ষয় রোধ হয়।

 

ভূমি সংরক্ষণের উপকারিতা

উপায় ভূমি সংরক্ষণের ভূমিকা
পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ পানির বেগ কমিয়ে মাটির ক্ষয় রোধ করে।
পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা জমিতে পানি জমতে দেয় না, ফলে ভূমিক্ষয় কম হয়।
জৈব সার প্রয়োগ মাটির গঠন মজবুত করে এবং পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়।
বনভূমি সৃষ্টি বায়ুর গতিবেগ কমিয়ে মাটির ক্ষয় রোধ করে।
ধাপ চাষ ঢালু জমিতে পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করে ভূমিক্ষয় কমায়।
খন্ড খন্ড প্লটে চাষ মাটির ক্ষয় রোধ করে এবং ফসলের বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করে।
পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ মাটির ওপরিভাগ রক্ষা করে ভূমিক্ষয় কমায়।
বাঁধ বা আইল নির্মাণ বৃষ্টির পানি নিয়ন্ত্রণ করে জমি ধ্বংস ঠেকায়।

 

সুতরাং, বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে ভূমিক্ষয় রোধের জন্য এসব পদ্ধতি কার্যকরভাবে গ্রহণ করা হলে দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, জমির উর্বরতা বজায় থাকবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কৃষক ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভূমি সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি চর্চায় গুরুত্ব দিতে হবে।

 

এই পাঠের সারমর্ম

  • বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক কারণ যেমন- বায়ুপ্রবাহ, পানি প্রবাহ, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি এবং অন্যান্য কারণে ভূমির উপরিভাগের উর্বর মাটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে যাওয়াকে ভূমিক্ষয় বলে।
  • ভূমিক্ষয় প্রধানত দুভাবে হতে পারে, যথা- পানি দ্বারা ভূমিক্ষয় ও বায়ু দ্বারা ভূমিক্ষয়।
  • মাটির উপরিভাগের ১৫-২০ সে.মি. গভীরতা পর্যন্ত উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান মজুদ থাকে।
  • মাটিতে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সংরক্ষণ ভূমিক্ষয় রোধ করা প্রয়োজন।

বনজ নার্সারি স্থাপন পরিকল্পনা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – বনজ নার্সারি স্থাপন পরিকল্পনা। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চারা উৎপাদনের জন্য অবশ্যই ভালো পরিকল্পনা এবং সেই অনুযায়ী কাজ হতে হবে।

বনজ নার্সারি স্থাপন পরিকল্পন

নার্সারি

যে কোন ধরনের বন কিংবা বাগান তৈরি করতে সুস্থ, সবল ও নির্ধারিত মানের চারাগাছ প্রয়োজন। সুস্থ, সবল ও ভালো মানের চারা না হলে ফসল ভালো হয় না। ভালো মানের চারা উৎপাদনের প্রয়োজন হয় নার্সারির। নার্সারির সংজ্ঞা হিসেবে বলা যায়, যে জায়গায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফুল, ফল, শাকসবজি ও বনজ বৃক্ষের চারা উৎপাদন ও কলম তৈরি করা হয় এবং রোপনের পূর্ব পর্যন্ত বর্ধনশীল চারা বা কলমের উপযুক্ত যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় তাকে নার্সারি বলে।

 

 

সুতরাং নার্সারি যেকোন গাছপালার চারা বা কলম উৎপাদনের উপযুক্ত স্থান। এতে নির্দিষ্ট মানের পর্যাপ্ত পরিমাণ চারা বা কলম উৎপাদন করে তা বিক্রয়ের জন্য রক্ষণ করা হয়। নার্সারি শুধুমাত্র বীজ থেকে চারা উৎপাদনের কেন্দ্র নয়। নার্সারিতে চারা উৎপাদন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কলম থেকে চারা তৈরি, ররূপান্তরিত মূল বা শাখা থেকে গাছের বংশবিস্তারের জন্যকলম তৈরি করা হয়।

এছাড়া আধুনিক নার্সারিতে উন্নতমানের মূল্যবান চারা উৎপাদনের জন্য টিকালচার ল্যাবরেটরি এবং গ্রীনহাউজ থাকতে পারে। নিচে সংক্ষেপে নার্সারীর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হলো-

১। নার্সারিতে উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণে চারা উৎপাদন করা যায় এবং তা সময়মতো সরবরাহ করা যায়।

২। অনেক উদ্ভিদের বীজ গুদামজাত করা যায় না। দুই-একদিনের মধ্যে এদের জীবনীশক্তি হারিয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে নার্সারির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যেমন- শাল, গর্জন, তেলশুর ইত্যাদি ।

৩। যে সব উদ্ভিদের বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যায় না কিংবা বীজের চারা থেকে ফলন ভাল হয় না এদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের কলমের চারা বা টিসুকালচার চারা পেতে হলে নার্সারির প্রয়োজন যেমন- বাঁশ, কদম, জানুল ইত্যাদি।

৪। নার্সারিতে বিভিন্ন বয়সের চারা পাওয়া যায়।

৫। চারা বিতরণ ও বিপণনের সুবিধা হয়।

৬। সামাজিক বনায়ন ও বন সম্প্রসারণ কর্মকান্ডের সফলতার জন্য নার্সারি প্রয়োজন।

৭। নার্সারি ব্যবসা লাভজনক। শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতি, দুঃস্থ মহিলা, ভূমিহীন ও কর্মহীন মানুষ অল্প পুঁজি নিয়ে স্বল্প জমিতে নার্সারি স্থাপন করে স্বচ্ছলভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।

 

 

নার্সারির প্রকারভেদ

অর্থনৈতিক বিবেচনায় প্রধানত নার্সারিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

(ক) স্থায়ী নার্সারি ও

খ) অস্থায়ী নার্সারি

নার্সারি স্থাপনের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা দরকার। একটি মনোরম আকর্ষণীয় নার্সারি স্থাপনের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকলে কাজ সহজ এবং খরচ কম হয়। নার্সারি স্থাপনের পূর্বে একজন পরিকল্পনাকারীর যেসব বিষয় প্রথমেই বিবেচনায় আনতে হয় তা হলো :

১। স্থান নির্বাচন

২। ভূমি উন্নয়ন

৩। বেড়া বা বেষ্টনী নির্মাণ।

৪। নার্সারির নক্সা তৈরি।

নিচে এ সম্পর্কে  আলোচনা করা হলো-

১. স্থান নির্বাচন :

নার্সারি স্থাপনের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। স্থান নির্বাচনে ভুল হলে নার্সারির উৎপাদন ও লাভ দুটিই ব্যাহত হয়। উত্তম স্থান নির্বাচনের জন্য বিবেচ্য বিষয় হলো-

ক। নির্বাচিত জমি উঁচু, সমতল এবং বর্ষাকালে জলমুক্ত থাকবে।

খ। জমির মাটি উর্বর বেলে দো-আঁশ ও কাকরমুক্ত হবে।

গ। নার্সারির জায়গায় প্রচুর আলো ও বাতাসের সুবিধা থাকবে।

ঘ। পানি সেচ ও নিকাশের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।

ঙ। মালামাল ও উৎপাদিত চারা পরিবহনের জন্যউন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।

চ। নার্সারি এলাকার জলবায়ু ও আবহাওয়া নার্সারি স্থাপনের অনুকুল হতে হবে।

ছ। নার্সারি ভবিষ্যতে সম্প্রসারণ করার ব্যবস্থা থাকবে।

জ। এলাকার জনসাধারণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় আনতে হবে। পলিব্যাগে চারা উৎপাদনের জন্য ১ বর্গমিটার বা ১০ বর্গফুট নিম্নোক্ত মাপের পলিব্যাগের প্রয়োজন হয়।

১৫সে.মি. ১০ সে.মি. মাপের ব্যাগ ২২৫ টি

২৫ সে.মি. ১৫ সে.মি. মাপের ব্যাগ ১০০ টি ৪০ সে.মি. ২৩ সে.মি. মাপের ব্যাগ ৩৬ টি

নার্সারির বেডে চারা উৎপাদনের জন্য ১ বর্গমিটার বা ১০ বর্গফুট নিম্নোক্ত চারা সংকুলান হয়।

চারা হতে চারার দূরত্ব                চারার সংখ্যা

৫ সে.মি. ০ ৫ সে.মি.                        ৪00 টি

১০ সে.মি. ০৫ সে.মি.                       ২০০টি

১০ সে.মি. ০০১০ সে.মি.                    ১০০ টি

একটি ৪০ মিটার ১০৪ ফুট সাইজের বেড হতে ১৫ সে.মি. ১০ সে.মি. ব্যাগের ৪০০০ টি চারা, ২৫ সে.মি. * ১৫ সে.মি. ব্যাগের ১৭০০ টি চারা ও ৪০ সে.মি. * ব্যাগের ৬২৫ টি। চারা তৈরি করা যায়।

২. ভূমি উন্নয়ন

যেখানে নার্সারি স্থাপন করা হবে সেখানকার সব গাছপালা, লতা-গুল্ম কেটে ভূমিকে পরিষ্কার করতে হবে। গাছের মুখা ও পাথরের টুকরা ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। নার্সারির এলাকা যদি উঁচু নীচু থাকে তাবে তা ভালভাবে সমান করতে হবে। নার্সারির মাটি বেলে দো-আঁশ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে বাহির থেকে বেলে দো-আঁশ মাটি এনে ভরাট
করতে হবে।

৩. বেড়া বা বেষ্টনী নির্মাণ :

নার্সারিতে উৎপাদিত চারা ও কলমকে গবাদি পশু ও অন্যান্য উপদ্রব থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদির হাত থেকে নার্সারির চারা

রক্ষা করার জন্য চতুস্পার্শে বেড়া দিতে হবে। সাধারণত নার্সারিতে পাঁচ ধরনের বেড়া দেওয়া
হয়। गा

ক. আর. সি. সি. পিলাযুক্ত কাঁটা তারের বেড়

খ. ইটের দেওয়া

গ. লোহার জালের বেড়া।

ঘ. জীবড় গাছের বেড়া

ঙ  . বাঁশের বেড়া।

প্রথম চারটি পদ্ধতি স্থান নার্সর জন্য প্রযোজ্য তবে অস্থায়ী নার্সারির জন্য বাঁশের বেড়া गान করা ।

৪. নার্সারির নক্সা তৈরি

নার্সারি স্থাপন পরিকল্পনা উপযুক্ত নক্সা তৈরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নক্সা অনুযায়ী পরবর্তীতে নার্সারি স্থাপন করা হয়। একটি নার্সারির নক্সার নিলখত অংশসমূহ পরিকল্পিত সাজানো থাকে।

১. অফিস ও বাসস্থান নার্সারি পরিচালনায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্য অফিস থাকবে। এছাড়া এদের থাকার জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা ও আদর্শ নার্সারিতে থাকে।

২. নার্সারি ব্লক নার্সারিতে চারা লাগানোর জন্য যে স্থান থাকে তাকে নার্সারি ব্লক বলে।

৩. নার্সারি বেড ও পরিদর্শন পদ্ম বীজতলা ও নার্সারিতে কর্মরত লোকজনের যাতায়াতের জন্য সুনির্দিষ্ট পথ নার্সারিতে থাকে।

৪. পার্শ্বনালা ও নর্দমা সেচ ও নিকাশের জন্য পার্শ্বনালা ও নর্দমা প্রয়োজন।

৫. পলিব্যাগ ভর্তির অস্থায়ী শেষ পলিব্যাগে মাটি ভর্তির জন্য নির্ধারিত স্থান।

৬. কম্পোষ্ট তৈরির গর্ত নার্সারিতে বিভিন্ন আর্বজনা পচিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করে তা মাটির উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। নার্সারিতে নির্দিষ্ট

৭. সীড বেড বীজ থেকে চারা উৎপাদনের নির্ধারিত স্থান। সব বীজ পলি ব্যাগে উত্তোলন করা হয় না। সরাসরি বাজ হতে চারা উৎপাদন করে বাজারজাত করা হয় এমন বীজ যে স্থানে লাগানো হয় সে স্থানকে নীড বেড বলা হয়। প্রত্যেক নার্সারিতে এর জন্য নির্দিষ্ট স্থান থাকতে হবে।

৮. গ্রীন হাউজ গ্রীন হাউজ হলো কাঁচ বা ফাইন্ডার কাঁচের তৈরি বিশেষ ঘর, যেখানে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রিত থাকে। সব ধরনের চারা উত্তোলনের জন্য এর প্রয়োজন হয় না। কিছু কিছু প্রজাতির গাছের চারা বা কলম উৎপাদনের জন্য এর প্রয়োজন হয়। যেমন- বাঁশের কলম (কাটিং) বা টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত যে কোন গাছের চারা বাজারজাতকরণের পূর্বে গ্রীন হাউজে রাখা আবশ্যক।

৯. মাটি রাখার স্থান টন ও পলিব্যাগের জন্য প্রয়োজনীয় মাটি রাখার স্থান।

১০. পানির উৎস গভীর বা অগভীর নলকূপ বা পুকুর ইত্যাদি।

উল্লিখিত অংশসমূহ পরিকল্পিতভাবে সাজালে কম জাগায় অপেক্ষাকৃত সুন্দর নার্সারি তৈরি করা যাবে। নার্সারি বেডসমূহ পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি হলে উত্তম, এতে সূর্যের আলো প্রতিটি বেড়ে সমানভাবে পড়বে।

দুটি বেডের মধ্যে ৪৫-৫০ সে.মি. দূরত্ব রাখাতে হবে যাতে একজন লোক বসে কাজ করতে পারে। নার্সারি বেড সাধারণতঃ ১০-১২০ ১৫-২০ মিটার মাপের হয়ে থাকে, তবে প্রয়োজনে এবং জায়গার অনুপাতে দৈর্ঘ্য কিছুটা কম-বেশী করা যেতে পারে। প্রধান পরিদর্শন পথ ৩-৪ মিটার এবং পার্শ পরিদর্শন পথ ১-২ মিটার হয়। নার্সারিতে পানি নিকাশের জন্য প্রধান নিকাশ নালা ও শাখা নিকাশ নাগা থাকতে হবে।

নিচে একটি আদর্শ নার্সারির নক্সা দেওয়া হলো। আপানার আদর্শ নার্সারিটির নক্সা ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করুন এবং নিজেদের বাতায় আঁকার অভ্যাস করুন। এটি ভালোভাবে আঁকতে পারলে সহজেই যে কোন নির্ধারিত জায়গায় নার্সারি তৈরি করার নক্সা ও আঁকতে পারবেন।

 

 

সফলভাবে নাসারি ব্যবস্থাপনার জন্য কিছু সুযোগ সুবিধে এবং নার্সারি স্থাপনকারীর কতকগুলো বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো- ।

১. পানি সরবরাহ ও এর সহজলভ্যতা

২. বীজ সংগ্রহ ও গুদামজাতকরণ ।

৩. যন্ত্রপাতি ও আনুসঙ্গিক উপকরণ সংগ্রহ।

৪. মাটি, গোবর, কম্পোস্ট, রাসায়নিক সার ইত্যাদি সংগ্রহ।

৫. নার্সারি বেড তৈরি, বীজ বপন, পলিব্যাগে চারা উত্তোলন কৌশল ইত্যাদি।

৬. বিভিন্ন প্রকার ফুল-ফল, শাকসবজি ও বনজ গাছপালা সম্পর্কিত জ্ঞান।

৭. বিপণন ও অন্যান্য অর্থনৈতিক বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান।

সারমর্ম

সফল নার্সারি স্থাপনের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন। নার্সারি স্থাপনের পূর্বে স্থান নির্বাচন, ভূমি উন্নয়ন, বেড়া বা বেষ্টনী নির্মাণ ও নার্সারির নক্সা তৈরি প্রথমেই বিবেচনায় আনতে হ্যা। উল্লিখিত বিষয়সমূহ যথাযথভাবে বিবেচনায় এনে সুপরিকল্পিতভাবে এগোতে পারলে সহজেই একটি সুন্দর নার্সারি স্থাপন সম্ভব। অর্থনৈতিকভাবে নার্সারি দুই প্রকার, যথা- স্থায়ী নার্সারি ও অস্থায়ী নার্সারি।