Tag Archives: কৃষি উন্নয়ন

কৃষি উন্নয়ন

বাংলাদেশে পশুপাখি ও উৎপাদিত দ্রব্যের পরিসংখ্যান

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-বাংলাদেশে পশুপাখি ও উৎপাদিত দ্রব্যের পরিসংখ্যান। আমাদের জীবনে গৃহপালিত পশুর ( domestic animal) গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীতে বহু ধরনের পশু রয়েছে। এসব পশুর মধ্যে অর্থনৈতিক গুরুত্বের কারণে মানুষ যেগুলোকে স্থায়ীভাবে লালনপালন করে এবং বংশবৃদ্ধি ঘটায় তাদের গৃহপালিত পশু বলে।

আমাদের দেশে গৃহপালিত পশুর মধ্যে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া বিশেষভাবে পরিচিত। অন্যান্য দেশে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া ছাড়াও উট, গাধা, হাতি, খরগোশ, ঘোড়া এবং আরও অনেক ধরনের গৃহপালিত পশু রয়েছে। গৃহপালিত পশুর আদিবাস ছিল জঙ্গলে। কেন, কীভাবে এবং কখন গৃহপালিত পশু মানুষের সান্নিধ্য লাভ করল তার সঠিক ইতিহাস জানা যায় নি। তবে, যেটুকু জানা গেছে তার আলোকে বলা যায়, আদি মানুষও পশুর সঙ্গে জঙ্গলে বাস করতো। তখনকার দিনেও মানুষ অন্নবস্ত্রের জন্য পশুনির্ভর ছিল। তারা মাংস ভক্ষণ করে ক্ষুধা মেটাতো, চামড়া পরিধান করে শীত ও লজ্জা নিবারণ করতো।

হিংস্র জন্তু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আত্মরক্ষার জন্য চামড়ার তাবু ব্যবহার করতো। যখন প্রস্তর যুগ এল মানুষ ঘর-বাড়ি তৈরি করা শিখল। জঙ্গল থেকে পশু শিকার করে বাড়িতে আনতে লাগল। এতে তাদেরকে কিছুটা বাধার সম্মুখীন হতে হতো। যেমন- প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়বৃষ্টি, সব মৌসুমে শিকার না পাওয়া, জঙ্গলে হিংস্র জন্তুর আক্রমণ ইত্যাদি। এসব অসুবিধা দূর করার লক্ষ্যে পরবর্তীতে মানুষ জঙ্গল থেকে জীবিত পশু ধরে বাড়িতে এনে বেঁধে রাখতো এবং এদেরকে পালন করতো। এভাবেই শুরু হয়েছিল বাড়িতে পশুপালন। মধ্যযুগে কৃষি, পরিবহণ এবং খাদ্য উৎপাদনে পশুর অবদান প্রধান ছিল।

বর্তমান শিল্প বিপ্লবের যুগে কৃষি, শিল্প, খাদ্য উৎপাদন ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও আত্মকর্মসংস্থানে গৃহপালিত পশু অবদান রাখছে। গৃহপালিত পশু থেকে দুধ, মাংস ছাড়াও নানা প্রকার উপজাত দ্রব্য, যেমন- শিং, খুর, চামড়া, পশম, চর্বি, রক্ত, দাঁত, হাড়, নাড়িভুড়ি পাওয়া যায়।

দুধ ও মাংস মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উপজাত দ্রব্য থেকে নানাবিধ প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুত করা হয়। আমাদের দেশে গৃহপালিত পশু একটি বিরাট সম্পদ। এ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারলে আমাদের বর্তমান জাতীয় প্রকট সমস্যাসমূহ, যেমন- বেকার সমস্যা ও আমিষের অভাব সমাধান করা সম্ভব হবে। এছাড়াও ভবিষ্যতে এদেশের দারিদ্রতা দূর করে গৃহপালিত পশু থেকে অধিক হারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

এই ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে বাংলাদেশের পশুপাখি ও এদের থেকে উৎপাদিত দ্রব্যের পরিসংখ্যান, কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং দারিদ্র দূরীকরণে গৃহপালিত পশুর গুরুত্ব সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিকসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে

বাংলাদেশে পশুপাখি ও উৎপাদিত দ্রব্যের পরিসংখ্যান

 

এই পাঠ শেষে আপনি

এদেশের গৃহপালিত পশুর অতীত ও বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করতে পারবেন। পশুসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারে বাংলাদেশের মানুষের করণীয় বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করতে পারবেন।এদেশের গৃহপালিত পশু ও উৎপাদিত দ্রব্যের পরিসংখ্যান ছক আকারে তুলে ধরতে পারবেন।

 

বাংলাদেশে গৃহপালিত পশুর অতীত ও বর্তমান অবস্থা

অতীতে বাংলাদেশে প্রায় সব বাড়িতেই গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল পালন করা হতো। এদের মধ্যে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল ছাড়া অন্য কোনো পশুর জাতই উন্নত নয়। সনাতন পদ্ধতিতে দেশের মানুষ এসব পশু পালন করতো। তথাপি তখনকার দিনে এভাবেই বাংলাদেশের মানুষের দুধ ও মাংসের চাহিদা মেটানো সম্ভব ছিল। এর প্রধান কারণ-

পশু পালন গৃহপালিত পশুর সংখ্যা কম থাকায় পর্যাপ্ত পশু খাদ্যের যোগান সম্ভব ছিল। লোকসংখ্যা কম থাকায় চাহিদা কম ছিল এবং পর্যাপ্ত চারণভূমি পাওয়া যেত। শস্য উৎপাদন ব্যবস্থায় গৃহপালিত পশুর জন্য ঘাস উৎপাদিত হতো। পর্যাপ্ত পশু খাদ্য সরবরাহের জন্য পশু থেকে বেশি উৎপাদন পাওয়া যেত।

বর্তমানে বাংলাদেশের সে অবস্থা আর নেই। স্ফীত জনসংখ্যার আমিষের চাহিদা মেটানো দুরূহ হয়ে পড়েছে। দেশী জাতের পশুর মাংস ও দুধ দিয়ে বর্তমান চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পশুপালনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

এ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার বেশ কয়েক বছর আগে হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান ও জার্সি জাতের দুধ উৎপাদনকারী গরু এনে এদেশে দেশী গরুর জাত উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশে গৃহপালিত পশুর জাত উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃত্রিম প্রজননের জন্য মোট ২২টি কেন্দ্র এবং ৪২৫টি উপকেন্দ্র আছে।

আমাদের দেশের পশু বাছাই প্রক্রিয়ায় উন্নয়ন ঘটালে এদের উৎপাদন ক্ষমতাও লাভজনক হারে বাড়ানো সম্ভব হবে।বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১.৫০ মিলিয়ন কর্মক্ষম লোক দেশের অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে। এদের জন্য কাজ দরকার। দেশের আবাদি জমির পরিমাণ মাথাপিছু মাত্র ০.২১ একর।

এর সম্প্রসারণও সম্ভব নয়। এজন্য দরকার অল্প জায়গায় অধিক উৎপাদন। এ লক্ষ্যে দেশের পশুসম্পদ বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে।দেশের পশুসম্পদ উন্নয়নের সম্ভাবনা গত বছরগুলোতে প্রমাণিত হয়েছে৷ দশ বছর আগে যেখানে দেশের কোথাও বেসরকারী পর্যায়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি খামারও ছিল না, বর্তমানে দেশে বেসরকারী পর্যায়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন ৩০ হাজার দুগ্ধ খামার ও ৬২ হাজার মুরগি খামার গড়ে ওঠেছে।

পাশাপাশি এসব খামার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানে বহু লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। পশুসম্পদ উন্নয়নের ফলে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার পূর্বের শতকরা ৩০ ভাগ থেকে বেড়ে ১৯৯৫-এ ১০ ভাগ-এ দাঁড়িয়েছে। গুড়ো দুধ আমদানির পরিমাণ বছরে পূর্বের ৪৫০ কোটি টাকা থেকে কমে ১৪০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।সরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা, উন্নত বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা ও গবেষণার মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পারলে এদেশের পশুসম্পদ অদুর ভবিষ্যতে আরও সম্ভাবনাময় হয়ে ওঠবে বলে আশা করা

 

পশুসম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহারে এদেশের মানুষের করণীয়ঃ

পশুসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো পালন করতে হবে। যথা-

  • গৃহপালিত পশু বিজ্ঞানসম্মতভাবে পালন করতে হবে।
  • পশু থেকে প্রাপ্ত উপজাত দ্রব্য বৈজ্ঞানিকভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে ব্যবহার করতে হবে।
  • উন্নত খাদ্য ও প্রজনন ব্যবস্থার মাধ্যমে অধিক উৎপাদনশীল পশুর সংখ্যা বাড়াতে হবে।
  • বিজ্ঞানসম্মতভাবে পশু পালন করে দুধ ও মাংসের উৎপাদন বাড়াতে হবে।
  • কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে গ্রাম ছেড়ে শহর অভিমুখী না হয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে
  • লাভজনকভাবে গবাদিপশুর খামার গড়তে হবে।
  • পশু বিশেষজ্ঞদের কর্তব্য হবে এদেশের পরিবেশ অনুযায়ী সীমিত সম্পদের বহুল ব্যবহারের মাধ্যমে পশুপালনে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা। বিদেশী কাঠামোকে হুবহু অনুসরণ না করে পথ নির্দেশনার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • পশুপালন বিষয় শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে সম্প্রসারণে সরকারকে আরও তৎপর হতে হবে।
  • শিক্ষার্থীদের জন্য পশুসম্পদ বিষয়ক বিভিন্নমুখী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • গবাদিপশু এবং এগুলো থেকে উৎপাদিত দ্রব্য এবং উপজাত দ্রব্যসামগ্রী বাজারজাতকরণেরসুব্যবস্থা করতে হবে।
  • বিত্তহীন ও ভুমিহীন লোকের জন্য ঋণের ব্যবস্থা আরও সম্প্রসারণ করতে হবে। গবেষণার জন্য আর্থিক সুযোগসুবিধা ছাড়াও গবেষণা সম্পর্কিত সকল বাধা দুরীকরণে সরকার ও জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।
  • গবেষণার ফলাফল সঠিকভাবে ব্যবহার করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • আমাদের বিপুল জনশক্তি বিজ্ঞানভিত্তিতে পশুসম্পদ লালনপালন করতে পারলেই পৃথিবীর বিভিন্ন
  • উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশও একদিন ধনী হয়ে ওঠতে পারবে।

বাংলাদেশের পশুসম্পদ ও উপজাত দ্রব্যের পরিসংখ্যান বাংলাদেশের পশুসম্পদ ও এদের থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য এখানে সারণির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে।

 

সারণি ১ : গৃহপালিত পশুর পরিসংখ্যান (মিলিয়ন)

 

 

সারণি ২ : দেশে দুধ, মাংস ও ডিমের বর্তমান উৎপাদন ও প্রয়োজনীয়তার উপাত্ত (১৯৯৯-২০০০ সালের)

 

 

সারণি ৩ : চাষের জন্য প্রয়োজনীয় ও প্রাপ্ত পশুশক্তি এবং প্রতিবছর উৎপাদিত গোবরের একটি হিসাব

 

 

বনজ নার্সারি স্থাপন পরিকল্পনা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – বনজ নার্সারি স্থাপন পরিকল্পনা। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চারা উৎপাদনের জন্য অবশ্যই ভালো পরিকল্পনা এবং সেই অনুযায়ী কাজ হতে হবে।

বনজ নার্সারি স্থাপন পরিকল্পন

নার্সারি

যে কোন ধরনের বন কিংবা বাগান তৈরি করতে সুস্থ, সবল ও নির্ধারিত মানের চারাগাছ প্রয়োজন। সুস্থ, সবল ও ভালো মানের চারা না হলে ফসল ভালো হয় না। ভালো মানের চারা উৎপাদনের প্রয়োজন হয় নার্সারির। নার্সারির সংজ্ঞা হিসেবে বলা যায়, যে জায়গায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফুল, ফল, শাকসবজি ও বনজ বৃক্ষের চারা উৎপাদন ও কলম তৈরি করা হয় এবং রোপনের পূর্ব পর্যন্ত বর্ধনশীল চারা বা কলমের উপযুক্ত যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় তাকে নার্সারি বলে।

 

 

সুতরাং নার্সারি যেকোন গাছপালার চারা বা কলম উৎপাদনের উপযুক্ত স্থান। এতে নির্দিষ্ট মানের পর্যাপ্ত পরিমাণ চারা বা কলম উৎপাদন করে তা বিক্রয়ের জন্য রক্ষণ করা হয়। নার্সারি শুধুমাত্র বীজ থেকে চারা উৎপাদনের কেন্দ্র নয়। নার্সারিতে চারা উৎপাদন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কলম থেকে চারা তৈরি, ররূপান্তরিত মূল বা শাখা থেকে গাছের বংশবিস্তারের জন্যকলম তৈরি করা হয়।

এছাড়া আধুনিক নার্সারিতে উন্নতমানের মূল্যবান চারা উৎপাদনের জন্য টিকালচার ল্যাবরেটরি এবং গ্রীনহাউজ থাকতে পারে। নিচে সংক্ষেপে নার্সারীর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হলো-

১। নার্সারিতে উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণে চারা উৎপাদন করা যায় এবং তা সময়মতো সরবরাহ করা যায়।

২। অনেক উদ্ভিদের বীজ গুদামজাত করা যায় না। দুই-একদিনের মধ্যে এদের জীবনীশক্তি হারিয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে নার্সারির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যেমন- শাল, গর্জন, তেলশুর ইত্যাদি ।

৩। যে সব উদ্ভিদের বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যায় না কিংবা বীজের চারা থেকে ফলন ভাল হয় না এদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের কলমের চারা বা টিসুকালচার চারা পেতে হলে নার্সারির প্রয়োজন যেমন- বাঁশ, কদম, জানুল ইত্যাদি।

৪। নার্সারিতে বিভিন্ন বয়সের চারা পাওয়া যায়।

৫। চারা বিতরণ ও বিপণনের সুবিধা হয়।

৬। সামাজিক বনায়ন ও বন সম্প্রসারণ কর্মকান্ডের সফলতার জন্য নার্সারি প্রয়োজন।

৭। নার্সারি ব্যবসা লাভজনক। শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতি, দুঃস্থ মহিলা, ভূমিহীন ও কর্মহীন মানুষ অল্প পুঁজি নিয়ে স্বল্প জমিতে নার্সারি স্থাপন করে স্বচ্ছলভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।

 

 

নার্সারির প্রকারভেদ

অর্থনৈতিক বিবেচনায় প্রধানত নার্সারিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

(ক) স্থায়ী নার্সারি ও

খ) অস্থায়ী নার্সারি

নার্সারি স্থাপনের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা দরকার। একটি মনোরম আকর্ষণীয় নার্সারি স্থাপনের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকলে কাজ সহজ এবং খরচ কম হয়। নার্সারি স্থাপনের পূর্বে একজন পরিকল্পনাকারীর যেসব বিষয় প্রথমেই বিবেচনায় আনতে হয় তা হলো :

১। স্থান নির্বাচন

২। ভূমি উন্নয়ন

৩। বেড়া বা বেষ্টনী নির্মাণ।

৪। নার্সারির নক্সা তৈরি।

নিচে এ সম্পর্কে  আলোচনা করা হলো-

১. স্থান নির্বাচন :

নার্সারি স্থাপনের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। স্থান নির্বাচনে ভুল হলে নার্সারির উৎপাদন ও লাভ দুটিই ব্যাহত হয়। উত্তম স্থান নির্বাচনের জন্য বিবেচ্য বিষয় হলো-

ক। নির্বাচিত জমি উঁচু, সমতল এবং বর্ষাকালে জলমুক্ত থাকবে।

খ। জমির মাটি উর্বর বেলে দো-আঁশ ও কাকরমুক্ত হবে।

গ। নার্সারির জায়গায় প্রচুর আলো ও বাতাসের সুবিধা থাকবে।

ঘ। পানি সেচ ও নিকাশের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।

ঙ। মালামাল ও উৎপাদিত চারা পরিবহনের জন্যউন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।

চ। নার্সারি এলাকার জলবায়ু ও আবহাওয়া নার্সারি স্থাপনের অনুকুল হতে হবে।

ছ। নার্সারি ভবিষ্যতে সম্প্রসারণ করার ব্যবস্থা থাকবে।

জ। এলাকার জনসাধারণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় আনতে হবে। পলিব্যাগে চারা উৎপাদনের জন্য ১ বর্গমিটার বা ১০ বর্গফুট নিম্নোক্ত মাপের পলিব্যাগের প্রয়োজন হয়।

১৫সে.মি. ১০ সে.মি. মাপের ব্যাগ ২২৫ টি

২৫ সে.মি. ১৫ সে.মি. মাপের ব্যাগ ১০০ টি ৪০ সে.মি. ২৩ সে.মি. মাপের ব্যাগ ৩৬ টি

নার্সারির বেডে চারা উৎপাদনের জন্য ১ বর্গমিটার বা ১০ বর্গফুট নিম্নোক্ত চারা সংকুলান হয়।

চারা হতে চারার দূরত্ব                চারার সংখ্যা

৫ সে.মি. ০ ৫ সে.মি.                        ৪00 টি

১০ সে.মি. ০৫ সে.মি.                       ২০০টি

১০ সে.মি. ০০১০ সে.মি.                    ১০০ টি

একটি ৪০ মিটার ১০৪ ফুট সাইজের বেড হতে ১৫ সে.মি. ১০ সে.মি. ব্যাগের ৪০০০ টি চারা, ২৫ সে.মি. * ১৫ সে.মি. ব্যাগের ১৭০০ টি চারা ও ৪০ সে.মি. * ব্যাগের ৬২৫ টি। চারা তৈরি করা যায়।

২. ভূমি উন্নয়ন

যেখানে নার্সারি স্থাপন করা হবে সেখানকার সব গাছপালা, লতা-গুল্ম কেটে ভূমিকে পরিষ্কার করতে হবে। গাছের মুখা ও পাথরের টুকরা ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। নার্সারির এলাকা যদি উঁচু নীচু থাকে তাবে তা ভালভাবে সমান করতে হবে। নার্সারির মাটি বেলে দো-আঁশ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে বাহির থেকে বেলে দো-আঁশ মাটি এনে ভরাট
করতে হবে।

৩. বেড়া বা বেষ্টনী নির্মাণ :

নার্সারিতে উৎপাদিত চারা ও কলমকে গবাদি পশু ও অন্যান্য উপদ্রব থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদির হাত থেকে নার্সারির চারা

রক্ষা করার জন্য চতুস্পার্শে বেড়া দিতে হবে। সাধারণত নার্সারিতে পাঁচ ধরনের বেড়া দেওয়া
হয়। गा

ক. আর. সি. সি. পিলাযুক্ত কাঁটা তারের বেড়

খ. ইটের দেওয়া

গ. লোহার জালের বেড়া।

ঘ. জীবড় গাছের বেড়া

ঙ  . বাঁশের বেড়া।

প্রথম চারটি পদ্ধতি স্থান নার্সর জন্য প্রযোজ্য তবে অস্থায়ী নার্সারির জন্য বাঁশের বেড়া गान করা ।

৪. নার্সারির নক্সা তৈরি

নার্সারি স্থাপন পরিকল্পনা উপযুক্ত নক্সা তৈরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নক্সা অনুযায়ী পরবর্তীতে নার্সারি স্থাপন করা হয়। একটি নার্সারির নক্সার নিলখত অংশসমূহ পরিকল্পিত সাজানো থাকে।

১. অফিস ও বাসস্থান নার্সারি পরিচালনায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্য অফিস থাকবে। এছাড়া এদের থাকার জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা ও আদর্শ নার্সারিতে থাকে।

২. নার্সারি ব্লক নার্সারিতে চারা লাগানোর জন্য যে স্থান থাকে তাকে নার্সারি ব্লক বলে।

৩. নার্সারি বেড ও পরিদর্শন পদ্ম বীজতলা ও নার্সারিতে কর্মরত লোকজনের যাতায়াতের জন্য সুনির্দিষ্ট পথ নার্সারিতে থাকে।

৪. পার্শ্বনালা ও নর্দমা সেচ ও নিকাশের জন্য পার্শ্বনালা ও নর্দমা প্রয়োজন।

৫. পলিব্যাগ ভর্তির অস্থায়ী শেষ পলিব্যাগে মাটি ভর্তির জন্য নির্ধারিত স্থান।

৬. কম্পোষ্ট তৈরির গর্ত নার্সারিতে বিভিন্ন আর্বজনা পচিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করে তা মাটির উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। নার্সারিতে নির্দিষ্ট

৭. সীড বেড বীজ থেকে চারা উৎপাদনের নির্ধারিত স্থান। সব বীজ পলি ব্যাগে উত্তোলন করা হয় না। সরাসরি বাজ হতে চারা উৎপাদন করে বাজারজাত করা হয় এমন বীজ যে স্থানে লাগানো হয় সে স্থানকে নীড বেড বলা হয়। প্রত্যেক নার্সারিতে এর জন্য নির্দিষ্ট স্থান থাকতে হবে।

৮. গ্রীন হাউজ গ্রীন হাউজ হলো কাঁচ বা ফাইন্ডার কাঁচের তৈরি বিশেষ ঘর, যেখানে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রিত থাকে। সব ধরনের চারা উত্তোলনের জন্য এর প্রয়োজন হয় না। কিছু কিছু প্রজাতির গাছের চারা বা কলম উৎপাদনের জন্য এর প্রয়োজন হয়। যেমন- বাঁশের কলম (কাটিং) বা টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত যে কোন গাছের চারা বাজারজাতকরণের পূর্বে গ্রীন হাউজে রাখা আবশ্যক।

৯. মাটি রাখার স্থান টন ও পলিব্যাগের জন্য প্রয়োজনীয় মাটি রাখার স্থান।

১০. পানির উৎস গভীর বা অগভীর নলকূপ বা পুকুর ইত্যাদি।

উল্লিখিত অংশসমূহ পরিকল্পিতভাবে সাজালে কম জাগায় অপেক্ষাকৃত সুন্দর নার্সারি তৈরি করা যাবে। নার্সারি বেডসমূহ পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি হলে উত্তম, এতে সূর্যের আলো প্রতিটি বেড়ে সমানভাবে পড়বে।

দুটি বেডের মধ্যে ৪৫-৫০ সে.মি. দূরত্ব রাখাতে হবে যাতে একজন লোক বসে কাজ করতে পারে। নার্সারি বেড সাধারণতঃ ১০-১২০ ১৫-২০ মিটার মাপের হয়ে থাকে, তবে প্রয়োজনে এবং জায়গার অনুপাতে দৈর্ঘ্য কিছুটা কম-বেশী করা যেতে পারে। প্রধান পরিদর্শন পথ ৩-৪ মিটার এবং পার্শ পরিদর্শন পথ ১-২ মিটার হয়। নার্সারিতে পানি নিকাশের জন্য প্রধান নিকাশ নালা ও শাখা নিকাশ নাগা থাকতে হবে।

নিচে একটি আদর্শ নার্সারির নক্সা দেওয়া হলো। আপানার আদর্শ নার্সারিটির নক্সা ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করুন এবং নিজেদের বাতায় আঁকার অভ্যাস করুন। এটি ভালোভাবে আঁকতে পারলে সহজেই যে কোন নির্ধারিত জায়গায় নার্সারি তৈরি করার নক্সা ও আঁকতে পারবেন।

 

 

সফলভাবে নাসারি ব্যবস্থাপনার জন্য কিছু সুযোগ সুবিধে এবং নার্সারি স্থাপনকারীর কতকগুলো বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো- ।

১. পানি সরবরাহ ও এর সহজলভ্যতা

২. বীজ সংগ্রহ ও গুদামজাতকরণ ।

৩. যন্ত্রপাতি ও আনুসঙ্গিক উপকরণ সংগ্রহ।

৪. মাটি, গোবর, কম্পোস্ট, রাসায়নিক সার ইত্যাদি সংগ্রহ।

৫. নার্সারি বেড তৈরি, বীজ বপন, পলিব্যাগে চারা উত্তোলন কৌশল ইত্যাদি।

৬. বিভিন্ন প্রকার ফুল-ফল, শাকসবজি ও বনজ গাছপালা সম্পর্কিত জ্ঞান।

৭. বিপণন ও অন্যান্য অর্থনৈতিক বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান।

সারমর্ম

সফল নার্সারি স্থাপনের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন। নার্সারি স্থাপনের পূর্বে স্থান নির্বাচন, ভূমি উন্নয়ন, বেড়া বা বেষ্টনী নির্মাণ ও নার্সারির নক্সা তৈরি প্রথমেই বিবেচনায় আনতে হ্যা। উল্লিখিত বিষয়সমূহ যথাযথভাবে বিবেচনায় এনে সুপরিকল্পিতভাবে এগোতে পারলে সহজেই একটি সুন্দর নার্সারি স্থাপন সম্ভব। অর্থনৈতিকভাবে নার্সারি দুই প্রকার, যথা- স্থায়ী নার্সারি ও অস্থায়ী নার্সারি।