Category Archives: বাউবি বিএই ২৩০৪ গৃহপালিত পশুপালন

বাউবি বিএই ২৩০৪ গৃহপালিত পশুপালন

মহিষের জাত ও জাতের বৈশিষ্ট্য

মহিষের জাত ও জাতের বৈশিষ্ট্য – কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র বিষয়ের এই পাঠটি ১১ নং ইউনিটের ১১.৪ নং পাঠ। এই পাঠে আমরা বিভিন্ন ধরণের মহিষের জাত ও তদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করবো। মহিষ অন্যতম গৃহপালিত স্তন্যপায়ী। মহিষ মুখ্যত উত্তর গোলার্ধের এক প্রজাতি এবং চেহারায় গরুর সঙ্গে কিছুটা মিল রয়েছে। উত্তর আমেরিকার বাইসনকে (bison) অনেক সময় মহিষ বলা হলেও প্রকৃত মহিষের সঙ্গে এদের কোন সম্পর্ক নেই।

 

মহিষের জাত ও জাতের বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশের সব এলাকেতেই মহিষ পালন করা হয়ে থাকে। তবে বিশেষ নদীর চর, সমুদ্র উপকূল দ্বীপাঞ্চল এবং হাওর-বাঁওড় এলাকায় মহিষ পালন করা হয় বেশি। এদেশে গৃহপালিত মহিষের সংখ্যা প্রায় ১.৪৭ মিলিয়ন(বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০১৫-২০১৬)। মহিষ প্রধানত হালচাষ ও গ্রামীণ পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। তবে মহিষের দুধ ও মাংস উৎকৃষ্ট খাদ্য। এ ছাড়া মহিষের গোবর জৈব সার ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মহিষের হাড় পন্যসামগ্রী যেমন বোতাম, চিরুনি ইত্যাদি তৈরি এবং গবাদি প্রাণিখাদ্য ও সার হিসাবে ব্যবহার করা যায়।

 

মহিষে জাতের শ্রেণীবিভাগ

গৃহপালিত মহিষের জাতগুলোকে আবাসস্থান ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর ভিত্তি কওে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- জলাভূমি মহিষ বা কাদাপানির মহিষ (Swamp Buffalo) এবং নদী মহিষ বা পরিষ্কার পানির মহিষ (River Buffalo)।

 

জলাভূমির মহিষ (Swamp Buffalo ):

জলাভূমির মহিষের বুক সাধারণত চওড়া, দেহ মাংসল ও গোলাকৃতির যা দেখতে অনেকটা ব্যারেলের মতো। এদের শিং বেশ চওড়া, লম্বা ও চন্দ্রাকৃতির। ষাঁড় ও গাভীর ওজন সাধারণত যথাক্রমে ৫০০ ও ৪০০ কেজি। ষাঁড় ও গাভীর উচ্চতা

সাধারণত গড়ে ১৩৫ সে.মি, হয়ে থাকে। এদের পা খাটো এবং কপাল ও মুখমন্ডল চ্যাপ্টা। গায়ের রং গাঢ় ধূসর থেকে সাদা হয়। চামড়ার রঙ নীলচে কালো থেকে ধূষর কালো হয়ে থাকে। গলকম্বলের উপরিভাগ থেকে গলার পাদদেশে পর্যন্ত বক্রাকৃতির দাগ থাকে। এরা অত্যন্ত কম দুধ উৎপাদন করে, দৈনিক গড়ে ১ লিটারের মতো যা বাছুরের জন্যই যথেষ্ট নয়। এরা ৩৯৪ দিনে গড়ে মাত্র ৩৩৬ লিটার দুধ দিয়ে থাকে।

শারীরিক বৃদ্ধির হার কম, ফলে বয়: প্রাপ্তি বিলম্বে ঘটে; সাধারণত তিন বছরের পূর্বে পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটে না। গর্ভকালে ৩২৫—৩৩০ দিন। সাধারণত নিচু কর্দমাক্ত জলাভূমিতে থাকতে পছন্দ করে, কাদায় গড়াগড়ি দেয় এবং জলাভূমি ও আইলের মোটা অঁাশজাতীয় ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। এরা প্রধানত শক্তির কাজেই পটু। তাই হাল, মই ও গাড়ি টানার কাজে ব্যবহৃত হয়। দুধ উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম কিন্তু মাংসের জন্য ভালো।

 

জলাভূমির মহিষ

 

 

কোয়া কাম ও কোয়াইটুই (Kwua Cum and Kwaitui)

এই দু’জাতের মহিষ থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। কোয়াইটুই মহিষের দেহ দীর্ঘ ও প্রশস্ত। গায়ের রঙ কালো, চামড়া পুরু, মুখমণ্ডল লম্বা। গাভীর গলা সরু। উচ্চতা ও ওজন গড়ে যথাক্রমে ১৪০ সে.মি. ও ৪৫০ কেজির মতো।

কোয়াদুরে মহিষ (Kwa kui)

এরা আকারে তুলনামূলভাবে খাটো। দেহ ও গলা সরু, ঘাড় সরু, মুখমণ্ডল লম্বা। গায়ের রঙ হালকা ধূসর। উচ্চতা ও ওজন গড়ে যথাক্রমে ১৩০ সে.মি ও ৩৫০ কেজির মতো। এরা হাল-চাষ ও ভারবাহী জন্ম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কোয়াইয়া (Quipra)

এই উপজাতের মহিষ ধাইল্যান্ডের মি সড টক (Mae Sod Tak) অঞ্চলে দেখা যায়। এরা আকারে ছোট। ওজন ৩০০-৩৫০ কেজির মতো। বন্য স্বভাবের কারণে এদের কদর তুলনামূলকভাবে কম।

ম্যারিড (Marid)

এই উপজাতের মহিষ মায়ানমারে দেখা যায়। মায়ানমারের সমতলভূমির মহিষ থেকে এরা আকারে ছোট। দেহের কালো লোমগুলো দীর্ঘ, সরু ও খাড়া। ধড় ও গাভীর ওজন গড়ে যথাক্রমে ৩০০ ও ৩২৫ কেজির মতো।

লাল মহিষ (Red Buffalo )

এই উপজাতের মহিষ থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে দেখা যায়। এদের দেহ ঘন ও লম্বা লাল রঙের লোমে আবৃত থাকে। তাই এদের নাম লাল মহিষ। এদের দৈহিক ওজন গড়ে সাধারণত ৩৫০ কেজি হয়ে থাকে। তবে, গায়ের রঙ, দেহের গঠন ও ব্যবহারর দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জলাভূমির মহিষের সঙ্গে ভারতের আসামের পশ্চিমাঞ্চলের মহিষের পার্থক্য দেখা যায়।

এদের গায়ের রঙ কালো। শিং অনেকটা কাস্ত্রের মতো থাকা। এরা প্রধানত দুধ উৎপাদনকারী জাত। বিজ্ঞানী মিলেণর ১৯৩৯ সালে এদেরকে নদীর মহিষ হিসেবে নামকরণ করেন। এদের উৎপত্তি ভারত ও পাকিস্তানে, কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চালেও এদের দেখতে পাওয়া যায়।

 

মনিপুরি মহিষ

 

মনিপুরি মহিষ

উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান

আসামের অন্তর্গত মনিপুর এদের আদি বাসস্থান। আসামের প্রায় সর্বত্র এবং বাংলাদেশের সিলেটে দেখতে পাওয়া যায়।

জাত বৈশিষ্ট্য:

এদের গায়ের রঙ ধূসর। এরা সুঠাম দেহের অধিকারী। মাথা অপেক্ষাকৃত ছোট। শিং বড় এবং ভেতরের দিকে বাঁকানো। এরা সব রকমের খাদ্যে অভ্যস্থ। এদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। ধাড় ও গাভীর ওজন যথাক্রমে প্রায় ৫০০ ও ৬০০ কেজি।

 

নদীর মহিষ:

নদীর মহিষের বুক প্রশস্ত, দেহ সাধারণত মাংসল ও অপেক্ষাকৃত কম গোলাকৃতির। শিংয়ের আকার ও আকৃতির মধ্যে পার্থক্য আছে। ভারত এবং পাকিস্তানে নদীর মহিষের অনেকগুলো জাত দেখা যায়। মহিষ ষাড় ও গাভীর ওজন যথাক্রমে ৩০০-৭০০ ও ২৫০-৬৫০ কেজি হয়।

সাধারণত মহিষ ষাঁড় ও গাভীর উচ্চতা যথাক্রমে ১২০-১৫০ ও ১১৫-১৩৫ সে.মি. হয়। নদীর মহিষের দেহ তুলনামূলকভাবে লম্বা, বুকের বেড় কম, পা খাটো, মাথা ভারি, কপাল প্রশস্ত ও মুখাকৃতি লম্বা। নদীর মহিষের শিংয়ের আকার জলাভূমির মহিষের মতো নয় এবং শিংয়ের অবস্থান ঠিক কপালের একই জায়গায় নয়। এই মহিষের শিং দু’প্রকার। যথা- গোলাকৃতি ও সোজা। এরা সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র স্থানে বাস করতে পছন্দ করে এবং পানির মধ্যে দেহ ডুবিয়ে রাখে। বিভিন্ন জাতের নদীর মহিষের মধ্যে মুররা, নীলি, রাভি, সুরাটি, মেশানা, জাফরাবাদি ইত্যাদি প্রধান। এখানে নদীর মহিষের কয়েকটি জাতের উৎপত্তি, প্রাপ্তিস্থান ও বৈশিষ্ট্যাবলী উল্লেখ করা হয়েছে।

উন্নত জাতের মহিষের মধ্যে মুররা, নিলি রাভি, মনিপুরী, জাফরাবাদী, নাগপুরী, কুন্ডি, সুরাটি, টোডো, মন্ডা, সম্বলপুরী, টরাই, মেহসানা উল্লেখযোগ্য। মুররা, নিলি রাভি জাতের মহিষ সরকারী খামারে ( মহিষ প্রজনন খামার, বাগেরহাট) পালন করা হয়।

 

নীলি মহিষ :

এ জাতের মহিষের সাথে মুররা মহিষের বেশ মিল আছে। এদের অনেক বৈশিষ্ট্য প্রায় এক রকম। বিজ্ঞানীদের মতে মুররা জাত থেকেই এদের উদ্ভব হয়েছে। তবে আকার, মুখাকৃতি ও কপালের মধ্যে বেশ পার্থক্য বিদ্যমান। পাকিস্তানের মন্টগোমারি জেলার শতদ্রু নদীর উভয় পাশে এদের আদি বাসস্থান। ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে নীলি জাতের মহিষ পাওয়া যায়। শতদ্রু নদীর নীল পানির বর্ণনায় এদের নামকরণ নীলি রাখা হয়েছে।

 

নীলি মহিষ

 

জাত বৈশিষ্ট্য:

এদের গায়ের ও পশমের রং কালো। কিন্তু ১০—১৫% বাদামি রঙেরও দেখা যায়। দেহাকৃতি মাঝারি ধরনের। কপাল, মুখ, থুতনি, পা এবং লেজের অগ্রভাগে সাদা চিহ্ন দেখা যায়। অনেকটা লম্বাকৃতির মাথার উপরিভাগ স্ফীত এবং দুচোখের মধ্যবর্তী স্থান একটু চাপা। ওলান এবং সিনায় মাঝে মাঝে পিঙ্গল চিহৃ দেখা যায়। শিং ছোট ও শক্তভাবে প্যাঁচানো ঘাড় লম্বা, চিকন ও মসৃণ। ওলান উন্নত লেজ লম্বা। ষাঁড় ও গাভী মহিষের গড় উচ্চতা যথাক্রমে ১৩৭ ও ১২৭ সে.মি. এবং দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১৫৭ ও ১৪৭ সে.মি.।

উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান

পাকিস্তানের মন্টগোমারি জেলার শতদ্রু নদীর উভয় পার্শ্বে এদের আদি বাসভূমি। ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে নীলি জাতের মহিষ পাওয়া যায়৷ শতদ্রু নদীর নীল পানির বর্ণনায় এদের নামকরণ নীলি রাখা হয়েছে।

 

রাভি মহিষ

 

রাভি মহিষ :

এ জাতের মহিষ দুধের জন্য প্রসিদ্ধ। পাক—ভারতের অন্তর্গত রাভি নদীর উভয় পাশে^র্ এদের আদি বাসভূমি। এজন্য এদের নাম রাভি রাখা হয়েছে। পাকিস্তানের লায়ালপুর জেলা, ওকারা, মন্টগোমারি, ভারতের গুজরাট ও চিনাব নদীর উপতাকায় এবং ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে এদের পাওয়া যায়।

জাত বৈশিষ্ট্য:

রাভি মহিষ বৃহদাকৃতির দেহের অধিকারী। গাভীর মাথা মোটা ও ভারি। মাথার মধ্যভাগ উত্তল, শিং প্রশস্ত, মোটা ও কোকড়ানো। থুতনি স্পষ্ট, ওলান সুগঠিত। লেজ বেশ লম্বা এবং প্রান্তদেশে সাদা লোম আছে। গায়ের রং কালো, তবে কোনো সময় বাদামি রঙেরও হয়। ষাঁড় ও গাভী মহিষের উচ্চতা যথাক্রমে ১৩২ ও ১২৭ সেমি এবং দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১৫৪ ও ১৪৯ সেমি এবং ওজন যথাক্রমে ৬০০ ও ৬৪৫ কেজি।

 

মুররা মহিষ :

এ জাতের মহিষের উৎপত্তিস্থল ভারতের উত্তর—পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে, দিল্লির আশপাশ এলাকা। বর্তমানে পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও সিন্ধুতে এ জাতের মহিষ বেশি পাওয়া যায়। এটি দুগ্ধপ্রদানকারী বিশেষ জাত।

 

মুররা মহিষ

 

বৈশিষ্ট্য:

১. এদের দেহ আকারে বেশ বড় হয়।

২. শিং ছোট এবং বাঁকানো হয়।

৩. গায়ের রং সাধারণত কালো হয়।

৪. স্ত্রী মহিষের পিছনের তুলনায় সম্মুখ ভাগ হালকা হয়।

৫. এরা দুধের জন্য প্রসিদ্ধ।

৬. একটি গাভী মহিষ দিনে প্রায় ২২—২৭ লিটার দুধ দিয়ে থাকে।

৭. কপাল বড়, চওড়া ও উন্নত।

৮. পা খাটো, মোটা এবং ওলানগ্রন্থি খুব বড়।

৯. দেহের পশ্চাৎ ভাগ অপেক্ষাকৃত চওড়া ও ভারী।

১০. গাভী ও ষাঁড়ের ওজন কম বেশি ৫৬৭ ও ৫৩০ কেজি।

১১. বলদ মহিষ হালচাষ ও গাড়ি টানার কাজে ব্যবহৃত হয়।

১২. বাঁট লম্বা, সামনের বাঁটের চেয়ে পিছনের বাঁট লম্বা। চিত্র ১১.৪.২ : মুররা

১৩. বাৎসরিক দুধ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০—৩০০০ লিটার।

 

জাফরাবাদি মহিষ

 

জাফরাবাদি মহিষ

জাফরাবাদি গাভী দুধ উৎপাদনকারী এবং ষাঁড় চাষাবাদ ও গাড়ি টানার জন্য বিখ্যাত।

উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের গুজরাট, গির অরন্য ও জাফরাবাদ শহরের আশেপাশে এই জাতের মহিষ দেখা যায়। জাফরাবাদের নামানুসারে এদেরকে জাফরাবাদি বলা হয়।

জাত বৈশিষ্ট্য

এরা আকারে বড়, দেহ গভীর ও সুগঠিত। কপাল স্ফীত, শিং ভারি এবং চ্যাপ্টা। গায়ের রঙ কালো তবে মুখ, পা এবং লেজে সাদা দাগ দেখা যায়। ঘাড় মাংসল, গলকম্বল ও ওলান সুগঠিত। এদের দেহ লম্বাটে, পা লম্বা ও সরু, লেজ খাটো। ষাঁড় ও গাভী মহিষের ওজন যথাক্রমে ৫৯০ ও ৪৫০ কেজি। গাভী দিনে গড়ে ১৫-২০ লিটার দুধ দেয়। দুধে চর্বির পরিমাণ খুব বেশি। ষাড় চাষাবাদ ও গাড়ি টানার কাজে ব্যবহৃত হয়।

 

মেশানা জাতের মহিষ

 

মেশানা মহিষ

উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান

গুজরাট প্রদেশের বারোদা অঞ্চল ও মেশানা জেলা এদের আদি বাসস্থান। মুররা এবং সুরাটি মহিষের সংকরায়নের মাধ্যমে মেনশানা জাতের উৎপত্তি ।

জাত বৈশিষ্ট্য

এরা মুররা এবং সুরাটি মহিষের মধ্যবর্তী, দেহে দু’জাতেরই বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। গায়ের রঙ কালো, বাদামি বা ধূসর। মুখমন্ডল, পা এবং লেজের অগ্রভাগে সাদা দাগ আছে। দেহ লম্বা এবং সুগঠিত। কপাল প্রশস্ত্র, মাঝের অংশ কিছুটা নিচু, শিং কোকড়ানো এবং দেখতে কাস্ত্রের মতো কান মাঝারি এবং অগ্রভাগ চোখা।

ঘাড় মাংসল, সুগঠিত, গলকম্বল নেই। বুক প্রশস্ত, কাঁধ চওড়া এবং দেহের সাথে সুবিনাস্ত্র, পা মাঝারি আকারের। ওলান সুগঠিত ও উন্নত। ষাঁড় ও গাভীর ওজন যথাক্রমে ৪৫০ ও ৬৫০ কেজি। এই জাতের মহিষ ভারতের গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে দুধ ও ঘি সরবরাহের জন্য সুপরিচিত। দুধ উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। এরা নিয়মিত বাচ্চা প্রদানের জন্যও বিখ্যাত।

 

বাংলাদেশের মহিষ:

বর্তমানে বাংলাদেশে মহিষের সংখ্যা প্রায় ৬,২১,৪৭। এর মধ্যে প্রায় ৫৪,০০০ মহিষ শক্তির কাছে নিয়োজিত থাকে। তবে এদেশে মহিষের কোনো উল্লেখযোগ্য জাত নেই । উপকূলীয়, হাওর এবং আখ উৎপাদনকারী এলাকাসমূহে মহিষের বিস্তৃতি তুলনামূলক ভাবে বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশের মহিষকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা— নদী, জলাভূমি এবং নদী ও জলাভূমির মহিষের সংকর। দেশের পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যে সমতলভূমিতে নদীর মহিষ দেখা যায়। এরা প্রধানত ভারতের দক্ষিণ, মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের মহিষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। দেশের পূর্বাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় জলাভূমির মহিষ ও সংকর মহিষের অবস্থান।

দূরপ্রাচ্যের জলাভূমির মহিষ ও আদি মহিদের সাথে এদের বেশ মিল রয়েছে। বাংলাদেশের জলাভূমির মহিষ মূলত শক্তির কাজে ব্যবহৃত হয়। এদের দুধ উৎপাদনের পরিমাণ খুব কম। দক্ষিণাঞ্চলে ছোট ছোট কৃষক পরিবারে ১-৪টি পর্যন্ত মহিষ দেখতে পাওয়া যায়। গাভী দিনে ১-৩ লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে। দুধ প্রধানত মিষ্টি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। গরুর দুধের চেয়ে মহিষের দুধ বাজারে কম দামে বিক্রি হয়।

দুধে স্নেহের ভাগ বেশি। গবাদিপশুর মাংসের মধ্যে মহিষের মাংস বাজারে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। গাড়ি টানা, ঘানি টানা, হালচাষ, সেচকার্য, ধান মাড়াই প্রভৃতি শক্তির কাছে এরা ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের মহিষ প্রধানত দেশী মহিষ হিসেবেই পরিচিত। দেহের আকার, পাড়েন এবং রঙের দিক থেকে এদের মধ্যে বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। শিংয়ের আকার এবং পড়নও ভিন্নতর। প্রাণিজ আমিষজাতীয় খাদ্যের চাহিদা, পশুশক্তির ঘাটতি প্রভৃতি মেটানোর জন্য উন্নত প্রজনন পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এদেশের মহিষের উন্নতি অত্যাবশ্যক।

 

 

অনুশিলন:

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-বিভিন্ন জাতের মহিষের বৈশিষ্ট্যগুলো জানা ও খাতায় লেখা।

এই পাঠ শেষে আপনি-

  • দেশী মহিষের আকার, আকৃতি বলতে পারবেন।
  • দেশী মহিষের সাথে উন্নত জাতের মহিষের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারবেন।
  • গরু ও মহিষের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবেন।

 

প্রাসঙ্গিক তথ্য

বাংলাদেশের সিলেট জেলায় মনিপুরি মহিষ দেখা যায়। এরা প্রধানত মাংস উৎপাদন, হালচাষ বা পরিবহণের জন্য উপযোগী। কিন্তু বাংলাদেশে কোনো কোনো অঞ্চলে মুররা জাতের কিছু মহিষ দেখা যায়। মুররা ও মনিপুরি জাতের মধ্যে দৈহিক এবং উৎপাদনগত পার্থক্য নিরূপন করা যায়।

মহিষ ও গরুর মধ্যে পার্থক্য খুব বেশি নয়। মহিষের গলকম্বল নেই, দেহে লোম খুব কম, জলাভূমির মহিষের শিং বড় ও অনেকটা কাস্ত্রের ন্যায়। তাছাড়া আকারে মহিষ সাধারণত গরু থেকে বড় হয়ে থাকে। এছাড়া বাকি সবগুলো বৈশিষ্ট্য মহিষের ক্ষেত্রে গরুর মতোই।

প্রয়োজনীয় উপকরণ

একটি মহিষ ষাড় বা গাভী, কলম, পেন্সিল, রাবার, ব্যবহারিক খাতা ইত্যাদি।

কাজের ধাপ

  • প্রথমে একটি মহিষ দেখে তার অঙ্গপ্রতঙ্গের নাম জানুন ও খাতায় আঁকুন ।
  • যেসব কৃষকের বাড়িতে মহিষ আছে তাদের বাড়ি যান এবং প্রত্যক্ষভাবে মহিষের আকার,
  • আকৃতি ও দৈহিক বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্য করুন। মহিষের জাতসমূহের বৈশিষ্ট্যের সাথে আপনার দেখা মহিষের
  • বৈশিষ্ট্য মিলিয়ে দেখুন এবং ব্যাবহারিক খাতায় লিখুন।
  • মহিষ দেখার পর তার জাত বৈশিষ্ট্যসমূহ ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করুন।

 

সতর্কতা

প্রত্যক্ষভাবে মহিষ দেখার সময় সতর্কতার সাথে অগ্রসর হোন।

সারমর্ম :

বাংলাদেশের সিলেট জেলায় মনিপুরি মহিষ আছে যা প্রধানত মাংস উৎপাদন, হালচাষ বা পরিবহণের জন্য উপযোগী। এদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে মুররা জাতের মহিষও দেখা যায়। মহিষ ও গরুর মধ্যে পার্থক্য অল্প। মহিষের গলকম্বল নেই, দেহে লোম কম, জলাভূমির মহিষের শিং বড় ও কাস্তের ন্যায়। সাধারণত আকারেও এরা বড় হয়ে থাকে। এছাড়া বাকি বৈশিষ্ট্যগুলো গরুর মতোই।

 

নিজ হাতে একটি গরুর ওজন নির্ণয় করা ও খাতায় লেখা

আজকের পাঠে আমরা শিখব কীভাবে নিজ হাতে একটি গরুর ওজন নির্ণয় করতে হয় এবং সেই তথ্য সঠিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখে রাখতে হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারিক কাজ, বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে আধুনিক ওজন মাপার যন্ত্রের (ডিজিটাল স্কেল) সহজলভ্যতা নেই।

নিজ হাতে একটি গরুর ওজন নির্ণয় করা ও খাতায় লেখা

 

 

 

গরুর ওজন মাপার প্রচলিত পদ্ধতি

গরুর ওজন নির্ণয়ের জন্য মূলত দুটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়:

১. ডিজিটাল স্কেল বা মিটার:

  • সুবিধা: দ্রুত এবং তুলনামূলকভাবে নির্ভুল ওজন পাওয়া যায়।
  • অসুবিধা: মিটার সব জায়গায় পাওয়া যায় না এবং বড় স্কেল না হলে পূর্ণাঙ্গ গরুর ওজন মাপা সম্ভব হয় না।

২. ফিতা দিয়ে দৈর্ঘ্য বুকের বেড় মাপা (পরিমিতি পদ্ধতি):

  • অনেকে ভাবতে পারেন ফিতা দিয়ে ওজন মাপা সম্ভব কিনা। প্রকৃতপক্ষে, দৈর্ঘ্য ও বুকের বেড় নির্ণয় করে একটি গাণিতিক সূত্র প্রয়োগের মাধ্যমে গরুর আনুমানিক ওজন নির্ধারণ করা যায়।

 

 

 

গরুর ওজন নির্ণয়ের গাণিতিক সূত্র

গরুর মোট ওজন (কেজিতে) =
(দৈর্ঘ্য × বুকের বেড় × বুকের বেড়) / ৬৬০

উদাহরণ:
ধরা যাক গরুটির দৈর্ঘ্য ৭০ ইঞ্চি এবং বুকের বেড় ৬০ ইঞ্চি, তাহলে:
ওজন = (৭০ × ৬০ × ৬০) / ৬৬০ = ৩৮১ কেজি (প্রায়)

এই সূত্রে মূলত পাউন্ডে হিসাব করা হয়, তবে আমরা কেজিতে রূপান্তরের জন্য ৬৬০ দিয়ে ভাগ করেছি। এই ওজনের মধ্যে গরুর দেহের সকল অংশ (অন্তঃপ্রবাহসহ) অন্তর্ভুক্ত।

 

 

এই পাঠ শেষে আপনি শিখতে পারবেন:

  • নিজ হাতে গরুর ওজন নির্ণয় করতে
  • নির্ণীত তথ্য ব্যবহারিক খাতায় সঠিকভাবে লিখে রাখতে

 

প্রাসঙ্গিক তথ্য

  • গরুর ওজন নির্ধারণের দুটি পদ্ধতি রয়েছে:
    ১. তুলাদণ্ড ব্যবহার করে (ডিজিটাল স্কেল) – ১০০% নির্ভুল ফলাফল পাওয়া যায়
    ২. দৈর্ঘ্য বুকের বেড় সূত্রের সাহায্যে – ±৫% ত্রুটি থাকতে পারে

এই পাঠে আমরা দ্বিতীয় পদ্ধতিটি ব্যবহার করে গরুর ওজন নির্ণয় করব।

 

প্রয়োজনীয় উপকরণ

  • একটি গরু
  • ফিতা বা টেপ
  • কলম/পেন্সিল
  • ব্যবহারিক খাতা

 

কাজের ধাপসমূহ

১. গরুটিকে সমতলভূমিতে শান্তভাবে দাঁড় করান।
2. চিত্র ৮৬ অনুযায়ী গরুটির বুকের বেড় (এ) ও দৈর্ঘ্য (খ) পরিমাপ করুন এবং খাতায় লিখুন।
3. দৈর্ঘ্য ও বেড় মাপ সেন্টিমিটার (সে.মি.)-এ নিতে হবে।
4. পাঠ ৮.৪-এ দেওয়া সূত্র প্রয়োগ করে কেজিতে গরুর ওজন নির্ণয় করুন।
5. সমস্ত পরিমাপ ও হিসাব ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখে শিক্ষককে প্রদর্শন করুন।

 

সাবধানতা

  • গরু যেন সমতল জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে
  • মাপ নেওয়ার সময় সঠিকভাবে ফিতা ব্যবহার করতে হবে
  • মাপ ইঞ্চিতে নিলে তা সেন্টিমিটারে রূপান্তর করে হিসাব করতে হবে

 

সারাংশ

গরুর ওজন নির্ণয়ের দুটি উপায় রয়েছে – তুলাদণ্ড এবং গাণিতিক সূত্র। আধুনিক স্কেল না থাকলে দৈর্ঘ্য ও বুকের বেড় পরিমাপ করে সূত্র প্রয়োগ করেই ওজন নির্ণয় করা যায়। যদিও এতে ±৫% ত্রুটি থাকতে পারে, তবে এটি একটি সহজ ও ব্যবহারযোগ্য পদ্ধতি। ওজন মাপার পর সঠিকভাবে তথ্য খাতায় লিখে রাখাই এই ব্যবহারিক পাঠের উদ্দেশ্য।

দাঁত দেখে গরুমহিষের বয়স নির্ণয় করা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- দাঁত দেখে গরুমহিষের বয়স নির্ণয় করা।

এই পাঠ শেষে আপনি-

  • বয়স জানার প্রয়োজনীয়তা বলতে পারবেন।
  • গরুমহিষের অস্থায়ী ও স্থায়ী দাঁতের সংখ্যা ও দন্ত সূত্র লিখতে পারবেন।
  • গরুমহিষের অস্থায়ী দাঁত ওঠা, সেগুলো পড়ে গিয়ে স্থায়ী দাঁত গজানো ও স্থায়ী দাঁত ক্ষয় হওয়ার বয়স উল্লেখ করতে পারবেন।

 

দাঁত দেখে গরুমহিষের বয়স নির্ণয় করা

 

গরুমহিষ লালনপালন করার জন্য এদের বয়স নির্ণয় করা একান্ত প্রয়োজন। কারণ বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে পশুর দৈহিক বৃদ্ধি, উৎপাদন ও কর্মক্ষমতার যোগসূত্র রয়েছে। যেমন- গাভী তৃতীয় বিয়ানে (প্রায় ৫-৬ বছর) সর্বোচ্চ পরিমাণ দুধ উৎপাদন করে। কাজেই পশুপালনকারী, প্রজননকারী, বিক্রেতা ও ক্রেতার জন্য পশুর বয়স জানা একান্ত প্রয়োজন ।

এছাড়াও বয়সের তারতম্যের কারণে পশুর রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব ও তীব্রতার তারতম্য ঘটে। তাছাড়া পশুর রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, দেহে সঠিকমাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ প্রভৃতির জন্যও বয়স জানা প্রয়োজন। বয়স নির্ণয়ের নির্ভরযোগ্য উপায় হচ্ছে সকল পশুর জন্মতালিকা প্রস্তুত করা ও তাতে জন্ম ও জন্ম পরবর্তী সকল তথ্য সন্নিবেশ করা।

 

 

কিন্তু আমাদের দেশে পশুপালনে এখনও আধুনিকতার তেমন ছোঁয়া লাগে নি বলে গবাদিপশুর বয়স নির্ণয়ে আধুনিক কোনো পদ্ধতির প্রয়োগই হয় না। বর্তমানে এদেশের গ্রামেগঞ্জে, এমনকী খামার পর্যায়েও দাঁত দেখার মাধ্যমে গবাদিপশুর বয়স নির্ণয় করা হয়। দাঁত দেখার মাধ্যমে সব সময় সঠিকভাবে পশুর বয়স নির্ণয় করা সম্ভব হয় না।

এই পদ্ধতিতে পশুর বয়স সম্বন্ধে অনুমান করা যায় মাত্র। কিন্তু এদেশে গবাদিপশুর বয়স নির্ণয়ে এই পদ্ধতিটিই বহুল প্রচলিত। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি রোমান্থনকারী পশুর দাঁতের সাহায্যে বয়স অনুমান করার জন্য এদের দাঁত সম্বন্ধে কিছু জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। রোমন্থনকারী পশুর দুধরনের দাঁত থাকে। যথা- অস্থায়ী ও স্থায়ী দাঁত।

অস্থায়ী দাঁত (Deciduous teeth) :

পশুর প্রথম সেট দাঁতকে অস্থায়ী দাঁত বলে। জন্মের পর থেকেই এই দাঁত গজানো শুরু হয়। এমনকী রোমান্থনকারী পশু জন্মের সময় বেশ ক’টি দাঁত নিয়ে জন্মায়। নির্দিষ্ট সময় ও নিয়মে ক্রমান্বয়ে প্রথম সেটের দাঁত পড়ে যায় ও দ্বিতীয় সেটের দাঁত গজায়। একারণে অস্থায়ী দাঁতকে দুধে দাঁত (milk teeth) বা পতনশীল দাঁত (deciduous teeth) বলে। গরুমহিষের অস্থায়ী দাঁতের সংখ্যা ২০। দেড় থেকে দু’বছর বয়সের পরে অস্থায়ী দাঁত পড়া শুরু করে ও নতুন স্থায়ী দাঁত (permanent tecth) গজায়।

স্থায়ী দাঁত (Permanent teeth) :

পশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অস্থায়ী দাঁত পড়ে যে নতুন দাঁত গজায় তাদের স্থায়ী দাঁত বলে। স্থায়ী দাঁতের সংখ্যা অস্থায়ী দাঁতের থেকে বেশি। গরুমহিষের স্থায়ী দাঁতের সংখ্যা ৩২।

গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি গবাদিপশুর উপরের চোয়ালের সামনের দিকে কোনো দাঁত নেই। বরং সেখানে একটি শক্ত প্যাড (pad) থাকে। সামনের দিক থেকে পেছনের দিকে মোট তিন ধরনের, যথা- কর্তন (incisor), চর্বন বা প্রাক-পেষণ (premolar) এবং পেষণ (molar) দাঁত থাকে। এদের কোনো ছেদন দাঁত বা শ্বদন্ত (canine) থাকে না । গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার অস্থায়ী ও স্থায়ী দাঁতের সংখ্যা নিলিখিত দত্ত সুত্র দিয়ে প্রকাশ করা যেতে পারে।

অস্থায়ী দাঁত (deciduous teeth) = 2 x [ DI – 0/4 – DC – 0/0 –  DP 3/3  – DM ] = 20

স্থায়ী দাঁত (permanent teeth) – 2x [ 1-0/4 C  0/0 – P – 3/3 – M 3/3 ] = 24

[এখানে, D = deciduous teeth বা অস্থায়ী দাঁত, ও = incisor teeth বা কর্তন দাঁত, C = canine teeth বা ছেলন দাঁত, P = premolar teeth বা প্রাক-পেষণ দাঁত, M molar teeth বা পেষণ দাঁত]

কর্তন দাঁতের মোট সংখ্যা ৮ এবং এগুলোকে মোট চারভাগে ভাগ করা যায়। যথা- কেন্দ্রিক (central), প্রথম মধ্যক (first intermediate), দ্বিতীয় মধ্যক (second intermediate) এবং কৌণিক (corner)। প্রাক-পেষণ এবং পেষণ দাঁতকে একসঙ্গে চোয়ালের দাঁত (cheek teeth) বলে এবং এদের মোট সংখ্যা ২৪। প্রত্যেক চোয়ালে যথাক্রমে ৩টি করে প্রাক-পেষণ ও পেষণ দাঁত থাকে ।

গরুমহিষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে যেভাবে অস্থায়ী দাঁত ওঠে, সেগুলো পড়ে গিয়ে সেখানে স্থায়ী দাঁত গজায় বা স্থায়ী দাঁত ক্ষয় হয় তা সারণি ৩৮ ও ৩৯-এ দেখানো হয়েছে।

সারণি ৩৮: গরুমহিষের অস্থায়ী দাঁত ওঠা এবং সেগুলো পড়ে গিয়ে স্থায়ী দাঁত গজানোর বয়স

 

 

 

 গরুমহিষকে বিভিন্নভাবে আটকানো পদ্ধতি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-  গরুমহিষকে বিভিন্নভাবে আটকানো পদ্ধতি। পশু ব্যবস্থাপনা এমন একটি বিষয় যা পশুর খাদ্য, যত্ন ও প্রজননের সমুদয় কর্মকে বোঝায়। ইতোপূর্বে এসব বিষয় সংক্ষেপে পৃথক পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

জন্মবৃত্তান্ত, জন্মের পর থেকে বাড়ন্ত পশুর জৈবিক পরিবর্তনের ক্রম, যৌন পরিপক্কতা, শারীরিক উপযুক্ততা অর্জন ও এরপর প্রজনন কাজের মধ্য দিয়ে পশুর জীবনচক্র অতিবাহিত হয়। এজন্য জন্মের পর থেকে বয়ঃসন্ধিক্ষণ পর্যন্ত পশুর জীবনে যে পরিবর্তন ও লক্ষণগুলো দেখা যায় তা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। পশুর শারীরিক ওজন, দাঁত ওঠা, বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে দাঁতের গঠন বা অন্যান্য শারীরিক পরিবর্তন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একই সাথে বিভিন্ন পশুকে ঘরের ভেতর ধরা বা আটকানোর পদ্ধতিগুলো পশু ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।

এই ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে পশু ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয়, যেমন- গরুমহিষকে বিভিন্নভাবে আটকানো পদ্ধতি, দাঁত দেখে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার বয়স নির্ণয়, গবাদিপশুর শরীরিক ওজন নির্ণয় প্রভৃতি তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিকসহ সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে ।

 গরুমহিষকে বিভিন্নভাবে আটকানো পদ্ধতি

এই পাঠ শেষে আপনি-

  • গরুমহিষকে কেন আটকানো হয় তা বলতে পারবেন।
  • গরুমহিষকে আটকানোর আড়পাতা পদ্ধতিটি বর্ণনা করতে পারবেন ।
  • গরুমহিষকে মাটিতে শোয়ানোর পদ্ধতিগুলো লিখতে পারবেন।

গরু ও মহিষ আমাদের দেশে ভারবাহী পশু হিসেবে পরিচিত। প্রাচীনকালে পশুরা বনেজঙ্গলে চরে বেড়াতো। সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে আবির্ভাবের পর থেকেই মানুষ নিজের প্রয়োজনে গরুমহিষকে গৃহে লালনপালন করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। কিন্তু তারপরেও পশুদের মধ্যে পুরনো জংলী অভ্যাস ও আচরণগুলো বিদ্যামান। এসব আচরণকে আমরা পশুদের বদঅভ্যাস বা ভাইস (vice) বলে থাকি।

তা সত্ত্বেও গৃহে লালনপালন করার জন্যই পশুকে ধরতে হয়, তার কাছে যেতে হয় এবং চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করতে হয়। মানুষের বিভিন্ন কাজে পশুকে ব্যবহার করা হয়। এসব কারণেই পশুকে নিয়ন্ত্রণ করা বা আটকানোর বিভিন্ন পদ্ধতিগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পশু আটকানোর কতকগুলো পদ্ধতি বা কলাকৌশল এখানে আলোচনা করা হয়েছে।

 

 

আড়পাতা পদ্ধতি (Stanchion / Chute method )

পশুপালনকারী বা চিকিৎসকের জন্য এ পদ্ধতিতে গরুমহিষকে আড়পাতা বা ধরা সম্পূর্ণ নিরাপদ। বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের দেশে গরুমহিষের খামারগুলোতে এই পদ্ধতিতে এদেরকে আটকানো হয়। একটি নির্দিষ্ট সুবিধাজনক স্থানে আড়পাতা হয়। এই আড় লোহা, কাঠ বা বাঁশের তৈরি হতে পারে। প্রধানত পায়ুপথ ও যোনিপথ পরীক্ষা করার সুবিধার জন্য শূটের শেষ প্রান্ত বা পেছন দিকে যথেষ্ট জায়গা থাকে ।

 

 

পশুকে শোয়ানো

রুগ্ন পশুর পরীক্ষা বা অস্ত্রোপচার সুষ্ঠুভাবে করা এবং জবাইয়ের জন্য পশুকে মাটিতে শুইয়ে নিয়ন্ত্রণ করা উত্তম পদ্ধতি। তবে, গবাদিপশুকে মাটিতে ফেলার পূর্বে অবশ্যই স্থানটি দেখে নিতে হবে যাতে পশু মারাত্বক কোনো আঘাত না পায়। পশুদেহের যে কোনো পার্শ্ব মাটির দিকে ফেলা যায়। তবে, সাধারণত বাম দিকে ফেলা শ্রেয়। সাধারণত দড়ির সাহায্যে গরুমহিষকে বেঁধে মাটিতে শোয়ানো হয় । দড়ির সাহায্যে বেঁধে শোয়ানোর বেশ ক’টি পদ্ধতি রয়েছে।

একটি পদ্ধতিতে একটি শক্ত লম্বা রশির এক প্রান্ত পশুর শিংয়ের গোড়ায় বেঁধে তিনবার গেরো দিয়ে শরীরে বেষ্টনি পড়ানো হয় এবং রশির অপর প্রান্ত পেছন থেকে দৃঢ়ভাবে টেনে ধরলে পশু আপনা আপনি পেছনের দিকে নুয়ে পড়ে। রশির গেরো গরুমহিষকে মেরুদন্ড বরাবর দিতে হয়। এতে পশুর কিছু ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে কারণে যত্নসহকারে এটি করতে হয়। অন্য একটি পদ্ধতিতে গরুর পেটের মাঝামাঝি মেরুদন্ড বরাবর একটি শক্ত রশি পরানো হয়। রশির এক প্রান্ত সামনের পায়ের চারদিকে এবং অপর প্রান্ত পেছনের পায়ের চারদিকে ঘিরে ধরতে হয়।

অতঃপর দু’দিক থেকে পিঠ বরাবর রশি টেনে ধরলে পশু হঠাৎ করে একপাশে শুয়ে পড়ে। এতে গরুমহিষের ক্ষতি হতে পারে। অতএব এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। এছাড়াও কম ওজনের পশুকে পেছনের দু’পায়ে বেঁধে হ্যাচকা টানে মাটিতে ফেলা যায়। তবে, এক্ষেত্রে যে স্থানে পশুকে ফেলা হবে তা যেন নরম হয়। গাভী অন্তঃসত্ত্বা হলে তাকে প্রথম পদ্ধতিতে শোয়ানো যায়। তবে, এই অবস্থায় গাভীকে সব সময় বাম দিকে শুইয়ে দিতে হয়। গোশালায় সার্বক্ষনিক বেঁধে রেখে গরুমহিষ লালনপালন করার যে কৌশল অবলম্বন করা হয় তাতে এদেরকে উপরোক্ত কোনো পদ্ধতিতেই আটকানো হয় না।

যে জায়গায় গরু বা মহিষটির অবস্থান সেখানেই আড়পাতা পন্থায় তাকে সব সময় থাকতে হয়। অসুস্থ হলে বা অন্য কোনো প্রয়োজনে যে শিকল পশুর গলায় সব সময় লাগানো থাকে তার একাংশ টেনে নিয়ে পশুর নাকে লাগানো আংটার (nose ring) সঙ্গে একটি প্যাচ দিয়ে উপরে টেনে শিংয়ের সঙ্গে আরেকটি প্যাঁচ দিয়ে আটকে দিলেই পশু আর তেমন নড়াচড়া করতে পারে না। এই পদ্ধতি ইউরোপের বড় খামারগুলোতে চালু আছে। এই কৌশল কিছুটা অসহায়ত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও এভাবেই ওসব দেশে পশু আটকানো হয়। চিকিৎসক ও সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি একজন সাহায্যকারীর সাহায্যে একাজ করে থাকেন।

মহিষের খাদ্য

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- মহিষের খাদ্য। মহিষ থেকে পর্যাপ্ত দুধ, মাংস, শক্তি ইত্যাদি পেতে হলে অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় এদেরকেও পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে। অন্যান্য রোমন্থক প্রাণী, যেমন- গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির মতো মহিষের পাকস্থলীও চারটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত।

 

মহিষের খাদ্য

 

এই পাঠ শেষে আপনি—

  • মহিষের বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের নাম বলতে পারবেন।
  • মহিষের পাকস্থলী ও তার কার্যকলাপ ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
  • মহিষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের পরিমাণ লিখতে পারবেন।
  • বিভিন্ন বয়সের মহিষের খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করতে পারবেন।

মহিষ পালনের অন্যতম সুবিধা হলো এরা গরুর তুলনায় অতি নিম্নমানের খাদ্য খেয়েও সহজে হজম করতে পারে এবং তুলনামূলকভাবে বেশি উৎপাদন দিয়ে থাকে। এদেশের বেশির ভাগ মহিষই রাস্তার পাশের ঘাস, ধানের খড় এবং কোনো কোনো সময় সামান্য থৈল বা ভুশি খেয়ে জীবনধারণ করে। এসব খাদ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খাদ্য উপাদানগুলো উপযুক্ত পরিমাণে থাকে না।

 

খাদ্য (Feed stuffs )

মহিষের দেহরক্ষা, ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি, তাপ সংরক্ষণ ও পেশির শক্তি উৎপাদন, দুধ উৎপাদন এবং বংশবৃদ্ধির জন্য খাদ্যের প্রয়োজন হয়। অন্যান্য গবাদিপশুর ন্যায় মহিষের প্রধান খাদ্যসমূহও উদ্ভিদজাত। এগুলোকে গরু বা ছাগলের খাদ্যের ন্যায় তিনভাগে ভাগ করা যায়।

যেমন- ক. আঁশযুক্ত খাদ্য, খ. দানাদার খাদ্য ও গ. খাদ্য অনুসঙ্গ বা অ্যাডিটিভস্। শুষ্ক আঁশযুক্ত খাদ্যসমূহ, যেমন- বিভিন্ন শস্যের খড় এবং তাজা ঘাস, যেমন- নেপিয়ার, প্যারা, জোয়ার প্রভৃতি মহিষের খাদ্যের প্রধান উৎস। তবে, বিভিন্ন প্রকার লিগিউম বা ডালজাতীয় তাজা আঁশযুক্ত খাদ্য, যেমন- মটর, খেসারি, কলাই ইত্যাদিও অনেক সময় মহিষকে খেতে দেয়া হয়।

দানাদার খাদ্যের মধ্যে চালের কুঁড়া, গমের ভুশি, ভুট্টা, যব, চাল, বিভিন্ন ধরনের খৈল, যেমন- সরিষা, তিসি, তিল, বাদাম ইত্যাদির খৈল এবং বিভিন্ন ধরনের লিগিউমের বীজ, যেমন- বুট, মটর, কলাই, খেসারি ইত্যাদি প্রধান। এছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে তৈরি বিভিন্ন ধরনের ফিড অ্যাডিটিভস্ বাজারে পাওয়া যায়।

 

মেশানা জাতের মহিষ

 

মহিষের পাকস্থলী

গরু, ভেড়া ও ছাগলের মতো মহিষের পাকস্থলীও জটিল ধরনের এবং রুমেন, রেটিকুলাম, ওমেসাম ও অ্যাবোমেসাম নামক চারটি প্রকোষ্ঠ নিয়ে গঠিত। খাদ্যনালীর পরেই রুমেনের অবস্থান এবং আয়তনের দিক থেকে পাকস্থলীর বিভিন্ন অংশের মধ্যে এটিই সর্ববৃহৎ।

জন্মের সময় বাছুরের রুমেন খুব ছোট ও নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। বাছুরের বয়স তিনমাস হলেই রুমেন সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং খাদ্য পরিপাক করতে শুরু করে। এসময় মহিষের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় কিছু কিছু করে আঁশযুক্ত খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করলে রুমেনের গঠন ত্বরান্বিত হয়।

বাছুরের জন্মের সাত সপ্তাহের মধ্যে রুমেন ও রেটিকুলামের গঠন সম্পূর্ণ হয়। জন্মের সময় মহিষ বাছুরের রুমেনের আয়তন ১.৩ লিটার থাকে এবং ১৬ সপ্তাহ বয়সে তা ২০.৯৫ লিটারে পৌঁছে। অন্যদিকে, রেটিকুলাম ও ওমেসামের আয়তন জন্মের সময় যথাক্রমে ৬৯ ও ৩৪ মি.লি. এবং ১৬ সপ্তাহ বয়সে যথাক্রমে ৮০০ ও ১৫০ মি.লি. হয়।

মহিষ তার রুমেনমধ্যস্থিত অনুজীব ও এককোষী প্রাণীর সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের অ-আমিয নাইট্রোজেনজাতীয় খাদ্য এবং সেলুলোজযুক্ত শুকনো খড়জাতীয় খাদ্য থেকে যথাক্রমে উঁচুমানের আমিষ ও শর্করা সংশ্লেষণ করতে সক্ষম।

মহিষের রসদের মোট আমিষের এক-তৃতীয়াংশ ইউরিয়ার সাহায্যে প্রতিস্থাপন করে এবং ইউরিয়া, চিটাগুড়সহকারে দানাদার খাদ্য মিশ্রিত করে খাওয়ালে এদের রুমেনের অনুজীব ও এককোষী প্রাণীর সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পায়। ফলে এদের মাধ্যমে রুমেনমধ্যস্থ খাদ্যবস্তু ভাঙ্গার হার ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সংশ্লেষণের হার বাড়ে।

 

জাফরাবাদি মহিষ

 

মহিষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য

মহিষের খাদ্যতালিকা বা রসদ অবশ্যই সুষম হতে হবে। এতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান, যেমন- শ্বেতসার, আমিষ ও স্নেহপদার্থ শরীর রক্ষা ও উৎপাদনের প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ ও হারে থাকা অপরিহার্য। রসদের তালিকাভুক্ত খাদ্যদ্রব্যগুলো পুষ্টিকর হওয়ার পাশাপাশি যেন সুস্বাদু হয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে। মহিষের জন্য আঁশযুক্ত খাদ্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

এই খাদ্য দেহে কর্মশক্তি যোগায়। এদের রসদে তাজা আঁশযুক্ত খাদ্য দিতে হয়। কারণ, এই খাদ্য থেকেই এরা প্রয়োজনীয় খনিজপদার্থ, যেমন- ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এবং ভিটামিনসমূহ, যেমন- ভিটামিন-ই ও ভিটামিন-এ সংগ্রহ করে নিতে পারে।

একটি মহিষের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো অল্প পরিমাণ খাদ্যের মাধ্যমেও সরবরাহ করা যায়। কিন্তু তা মহিষের ক্ষুধা নিবারণের জন্য যথেষ্ট হয় না। এদের শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলী সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য খাদ্যমানের সঙ্গে খাদ্যের সঠিক আয়তনও প্রয়োজন ।

আঁশযুক্ত খাদ্য মহিষের খাদ্যকে আয়তনসম্পন্ন করে তোলে। খাদ্যতালিকাভুক্ত উপাদানগুলো যেন সহজলভ্য ও সস্তা হয় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।মহিষের দৈহিক ওজন এবং উৎপাদন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শুষ্কপদার্থের প্রয়োজনীয়তার তারতম্য হয়ে থাকে।

সাধারণত একটি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের মহিষের জন্য ২.৫-৩.০ কেজি শুষ্ক পদার্থের প্রয়োজন হয়। এ পরিমাণ শুষ্কপদার্থ আঁশযুক্ত ও দানাদার খাদ্য থেকে পেতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো অবশ্যই ঐ খাদ্যসমূহে থাকতে হবে। এজন্য মহিষের জন্য প্রয়োজনীয় শুষ্কপদার্থের দুই-তৃতীয়াংশ আঁশযুক্ত খাদ্য এবং এক-তৃতীয়াংশ দানাদার খাদ্য থেকে সরবরাহ করা উচিত। আবার আঁশযুক্ত খাদ্যের দুই-তৃতীয়াংশ শুষ্ক আঁশযুক্ত এবং এক-তৃতীয়াংশ তাজা আঁশযুক্ত হওয়া উচিত। তবে, কাঁচা ঘাস দিতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

 

অনুশীলন (Activity) : ধরুন, আপনার ৫টি মহিষ আছে। এদের দৈহিক ওজন যথাক্রমে ৩২৫, ৩৫৫, ৪০৫, ৪৪০ ও ৪৭৫ কেজি। এদের জন্য সর্বমোট কতটুকু শুষ্ক পদার্থ লাগতে পারে ?

 

মহিষের খাদ্যতালিকা:

বাছুর মহিষের খাদ্যতালিকা:

জন্মের পর মহিষের বাচ্চার রুমেন অপরিপক্ক থাকে, তাই এসময় বিশেষভাবে তৈরি খাদ্য খাওয়াতে হবে। বাছুরকে শালদুধ, দুধ, টানা দুধ (skim milk), বিকল্প দুধ ও প্রাথমিক খাদ্য (calf starter) প্রভৃতি খাওয়ানো হয়। তবে, কিছু কিছু উন্নতমানের তাজা বা শুষ্ক ঘাস খাওয়ানো হয় যাতে এর রুমেনের গঠন ত্বরান্বিত হয়। সারণি ৩২-এ ৩ মাস বয়স পর্যন্ত বাছুরের খাদ্যতালিকা দেখানো হয়েছে।

সারণি ৩২ ঃ জন্মের দিন থেকে তিন মাস বয়স পর্যন্ত বাছুরের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা

 

 

বাছুর মহিষের প্রাথমিক খাদ্য:

এটি অল্পবয়স্ক বাচ্চুরকে খাওয়ানোর জন্য এক ধরনের দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ। এতে ২০-২৩% পরিপাচ্য আমিষ ও ৭০-৭৩% সামগ্রিক পরিপাচ্য পুষ্টি (TDN) বিদ্যমান। সারণি ৩৩-এ একটি প্রাথমিক খাদ্যতালিকার নমুনা দেখানো হয়েছে।

সারণি ৩৩৪ বাছুরের জন্য প্রাথমিক খাদ্য তালিকা

 

 

বকনা মহিষের খাদ্যতালিকা

৩-৬ মাস পর্যন্ত বকনা মহিষের জন্য-

দৈনিক ১০-১২ কেজি সবুজ যব/ভুট্টা/সংরক্ষিত সবুজ ঘাস ও ১.২-১.৫ কেজি দানাদার খাদ্য অথবা ৩ কেজি সবুজ ঘাস, ২ কেজি খড় ও ১.৪-২.০ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

৬-১২ মাস বয়সের বকনার জন্য-

দৈনিক ২০-২৫ কেজি সবুজ যব/ভুট্টা ও ১.২৫ কেজি দানাদার খাদ্য অথবা ৫ কেজি সবুজ ঘাস, ৩ কেজি খড় ও ২ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

১ বছর থেকে গর্ভধারণের সময় পর্যন্ত বকনার খাদ্যতালিকা-

দৈনিক ৩০-৩৫ কেজি সবুজ য/ভুট্টা ও ২ কেজি দানাদার খাদ্য অথবা ৩০ কেজি খেসারি/কাউপি, ৩ কেজি খড় ও ১ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

 

 

দুগ্ধবতী মহিষের খাদ্যতালিকা

দুগ্ধবতী মহিষকে খাদ্য প্রদানের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে শরীররক্ষা ও উৎপাদনে সহায়তা করা। উদাহরণস্বরূপ, ৭% হেপদার্থযুক্ত দৈনিক ১০ লিটার দুধ উৎপাদনকারী একটি ৫০০ কেজি ওজনের মহিষের খাদ্যে ১২.৫-১৫.০ কেজি শুষ্ক পদার্থ, ০.৯৩ কেজি পরিপাচ্য আমিষ ও ৮.৩ কেজি সামগ্রিক পরিপাচ্য পুষ্টি (TDN) থাকতে হবে। এই পরিমাণ পুষ্টি পাওয়া যেতে পারে দৈনিক ৬০ কেজি সবুজ বারসিম ও ৫.৫ কেজি গমের খড় বা ২০ কেজি সুবজ যব/ভুট্টা, ৫ কেজি গমের খড় ও ৪ কেজি দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ থেকে।

 

ষাঁড়ের খাদ্যতালিকা

ষাঁড়কে সবল ও সক্রিয় রাখার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য না খাওয়ানোই ভালো। ভালো জাতের সবুজ ঘাস ও খড় খাওয়ানোর মাধ্যমেই ষাঁড়কে সুস্থ রাখা সম্ভব; এজন্য কোনো দানাদার খাদ্যের প্রয়োজন নেই। ৬০০ কেজি ওজনের একটি ষাঁড়ের জন্য দৈনিক ৪০-৫০ কেজি সবুজ ঘাস ও ২-৩ কেজি খড় এবং ২.০-৩.০ কেজি দানাদার খাদ্যই যথেষ্ট।

 

মহিষের বাসস্থান, পরিচর্যা ও স্বাস্থ্যসম্মত লালনপালন ব্যবস্থা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- মহিষের বাসস্থান, পরিচর্যা ও স্বাস্থ্যসম্মত লালনপালন ব্যবস্থা।

এই পাঠ শেষে আপনি-

  • বিভিন্ন বয়সের মহিষের জন্য বাসস্থান তৈরি ও প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ লিখতে পারবেন।
  • মহিষের সাধারণ পরিচর্যাসমূহ বলতে পারবেন।
  • বিভিন্ন বয়সের মহিষের পরিচর্যা ও স্বাস্থ্যসম্মত লালনপালন ব্যবস্থা বর্ণনা করতে পারবেন।

 

মহিষের বাসস্থান, পরিচর্যা ও স্বাস্থ্যসম্মত লালনপালন ব্যবস্থা

 

মহিষের বাসস্থান

গরু, ছাগল এবং অন্যান্য গবাদিপশুর ন্যায় মহিষেরও স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থানের প্রয়োজন। যদিও গ্রামে- গঞ্জে দুচারটা মহিষ পালনের ক্ষেত্রে বাসস্থান বা ঘরের ওপর তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না । তথাপি, খামারভিত্তিতে একসঙ্গে অনেক মহিষ পালন করতে হলে ঘর তৈরির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।

এদেশের উপকূলীয় অঞ্চল, হাওড় এলাকা ও আঁখ উৎপাদনকারী এলাকায় অনেকেই ৪০/৫০ থেকে ১০০ বা ততোধিক মহিষ পালন করে থাকেন। এদের জন্য বাসস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । মহিষের ঘর গরুর অনুরূপভাবেই তৈরি করা যায়।

তবে, ঘর তৈরিতে মজবুত অথচ সস্তা জিনিসপত্রই ব্যবহার করা উচিত। মহিষের ঘর তৈরিতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা উচিত। যেমন-

  • ঘর স্বাস্থ্যসম্মত ও আরামপ্রদ হবে । এতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকবে।
  • মেঝে মজবুত হবে ও তাতে পিচ্ছিলভাব থাকবে না। ঘরে প্রতিটি মহিষের জন্য বয়স অনুপাতে প্রয়োজনীয় জায়গার ব্যবস্থা থাকবে।
  • উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে।
  • এই পাঠে বিভিন্ন বয়সের মহিষের জন্য ঘর ও প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ আলাদাভাবে বর্ণনা করাহয়েছে।

 

 

বাছুরের ঘর

বাছুরের ঘর শুদ্ধ ও আলো-বাতাসপূর্ণ হওয়া উচিত। এতে ঝড়ঝাপ্টা ও ঠান্ডা হাওয়া প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকতে হবে। জন্মের প্রথম মাসে একঘরে একসঙ্গে অনেক বাছুর রাখা উচিত নয়। বরং এদেরকে পৃথক পৃথক খোপে (pon) রাখলে প্রতিটি বাছুরের আলাদাভাবে যত্ন নিতে সুবিধা হয়। একমাস বয়স পর্যন্ত প্রতিটি বাছুরের জন্য ১.০ মিটার x ১.৫ মিটার আকারের খোপের প্রয়োজন।

বাছুরের বয়স একমাসের বেশি হলে ১০, ১৫, ২০ বা ততোধিক বাছুর একসঙ্গে একই ঘরে পালন করা যেতে পারে। এসব ঘরের সামনের দিকে কিছুটা খোলা জায়গা রাখতে হবে যাতে এরা সেখানে সুবিধামতো চলাফেরা বা ব্যয়াম করতে পারে এবং দেহে সূর্যের আলো লাগাতে পারে।

 

বকনা মহিষের ঘর

গ্রামাঞ্চলে বকনা মহিষ অন্যান্য মহিষের সঙ্গে একই ঘরে বা গোয়ালে রাখা হয়। এতে অনেক সময় গোয়াল ঘর অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পালন করতে হলে অবশ্যই বকনা ও ষাঁড় মহিষ পৃথক পৃথক ঘরে রাখতে হবে। এদেরকে সাধারণত ছাদবিহীন বা উদোম ঘরে (loose house) রাখা হয়। এখানে বিশ্রাম ও খাবার খাওয়ানোর জায়গার ব্যবস্থা থাকে। বিশ্রামের স্থানটুকু ছাদযুক্ত হয় এবং মেঝেতে খড় বা শুকনো ঘাস বিছানো থাকে।

খাবার খাওয়ানোর জায়গাটি পাকা হবে। পানি ও খাবারের জন্য আলাদা পাত্র বা চাড়ির (manger) ব্যবস্থা করতে হবে। তবে, এই স্থানে কোনো ছাদ থাকে না। এই ধরনের ঘরে প্রতিটি অগর্ভবর্তী বকনা মহিষের জন্য ৫-৬ বর্গ মিটার উদোম/ছাদবিহীন স্থানঃ ১.০-১.৫ বর্গ মিটার ছাদযুক্ত স্থান ও ৪০-৫০ সে.মি. দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট চাড়ি প্রয়োজন। প্রতিটি গর্ভবর্তী বকনার জন্য ৮-১০ বর্গ মিটার উদোম / ছাদবিহীন স্থান; ৩-৪ বর্গ মিটার ছাদযুক্ত স্থান ও ৫০- ৭৫ সে.মি. দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট চাড়ি প্রয়োজন।

 

প্রসূতি মহিষের ঘর

গর্ভবতী মহিষকে বাচ্চা প্রসবের সপ্তাহখানেক পূর্বে অন্যান্য মহিষ থেকে পৃথক করে প্রসূতি ঘরে (maternity box or pen) রাখা উচিত। প্রসূতি ঘর ৯-১০ বর্গ মিটারের চেয়ে ছোট হওয়া উচিত নয়।

 

এঁড়ে মহিষের ঘর

এঁড়ে মহিষকে ছয় মাস বয়সের সময় বকনা থেকে পৃথক করে আলাদা ঘরে পালন করা হয়। এঁড়ের ঘর বকনার মতোই উদোম হয়। ৬-১২ মাস বয়স পর্যন্ত প্রতিটি এঁড়ে মহিষের জন্য ৪-৫ বর্গ মিটার বিশ্রামের স্থান এবং ১৩-১৪ মাস বয়স পর্যন্ত প্রতিটির জন্য ৫-৬ বর্গ মিটার বিশ্রামের স্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

ষাঁড় মহিষের ঘর

একটি পূর্ণবয়স্ক ষাঁড় মহিষের জন্য ১০-১২ বর্গ মিটার আয়তনবিশিষ্ট ছাদযুক্ত ঘরের প্রয়োজন। এই ঘরের দুপার্শ্ব উন্মুক্ত হবে এবং উন্মুক্ত দিকে ১৫-২০ বর্গ মিটার স্থান জুড়ে খোলা ওঠোন থাকবে। ওঠোনের চারদিকে মোটা লোহার পাইপ বা শক্ত ইটের দেয়াল থাকা উচিত। ষাঁড়ের ঘরে খাবারের চাড়ি ও ষাঁড়কে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে।

 

মহিষের পরিচর্যা ও স্বাস্থ্যসম্মত লালনপালন ব্যবস্থা

মহিষকে সুস্থ সবল ও কর্মক্ষম রাখা এবং এদের থেকে পর্যাপ্ত উৎপাদন পেতে হলে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও যত্ন বা পরিচর্যার প্রয়োজন। তাছাড়া এদেরকে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে লালনপালন করতে হবে। পরিচর্যা ও স্বাস্থ্যসম্মত লালনপালন বলতে সময়মতো খাবার পরিবেশন করা, গর্ভবতী মহিষের যত্ন, বিভিন্ন বয়সের মহিষের পরিচর্যা, অসুস্থদের চিকিৎসা করানো, সুস্থগুলোকে সময়মতো টিকা প্রদান, কৃমির ওষুধ খাওয়ানো, ঘর ও আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করা ইত্যাদি বোঝায়। সব বয়সের মহিষের জন্যই কিছু কিছু সাধারণ পরিচর্যা রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন বয়স ও অবস্থাভেদে বিশেষ ধরনের পরিচর্যারও প্রয়োজন হয় ।

সাধারণ পরিচর্যাসমূহ

  • মহিষ মূলতঃ আধা-পানির (semi aquatic) নিশাচর প্রাণী। তাই পানির প্রতি এদের বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। মহিষের দেহে প্রয়োজনের তুলনায় ঘর্মগ্রন্থির সংখ্যা খুবই কম। তাই নদীর মহিষ পরিষ্কার পানি এবং জলাশয়ের মহিষ ডোবা-নালার কর্দমাক্ত পানি গায়ে মেখে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। একারণে যেখানে ডোবা-নালা নেই সেখানে ছায়াযুক্ত স্থানে পাইপের সাহায্যে দিনে অন্তত দুবার মহিষের গায়ে পানি ছিটানো প্রয়োজন।
  • প্রতিদিন এদের ঘর পরিষ্কার করতে হবে। গোবর, চনা আলাদা জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। সপ্তাহে অন্তত একবার জীবাণুনাশক ওষুধ (যেমন- আয়োসান) দিয়ে ঘর জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
  • এদের গা ভালোভাবে ডলে দিতে হবে এবং নিয়মিত গোসলের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • মহিষের সংখ্যা বেশি হলে চিহ্নিত করার জন্য কানে ট্যাগ নম্বর লাগাতে হবে। প্রয়োজনে, বিশেষ করে ভারবাহী মহিষের ক্ষেত্রে, পায়ে লোহার তৈরি সু বা জুতো লাগাতে হবে।
  • নিয়মিত সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। তাছাড়া পরিষ্কার পানিরও ব্যবস্থা করতে হবে।
  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে দুগ্ধবতী গাভীর দুধ দোহন করতে হবে।  দুধ দোহনের সময় পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
  • ঘরের কোনো মহিষ অসুস্থ হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে পৃথক করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • সকল বয়সের মহিষকে নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে ও টিকা প্রদান করতে হবে।

বিশেষ পরিচর্যা

বাছুরের পরিচর্যা

প্রসবের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাছুর ও প্রস তি মহিষের আলাদা বাসস্থান ও খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। সদ্যপ্রসূত বাছুর যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে শালদুধ বা কলস্ট্রাম পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাছুরের নাভিতে জীবাণুনাশক ওষুধ লাগাতে হবে ও নিয়মিত যত্ন করতে হবে যেন তাতে কোনো রোগজীবাণুর সংক্রমণ না ঘটে।

বাছুরের বয়স দুসপ্তাহ হওয়ার পূর্বেই কৃমিনাশক ওষুধ, যেমন- পাইপারজিন অ্যাডিপেট বা সাইট্রেট সেবন করাতে হবে। গোবসন্ত, বাদলা, তড়কা ও গলাফোলা রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিকটস্থ ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শমতো নির্দিষ্ট সময়ে টিকা প্রদান করতে হবে। প্রয়োজনবোধে বাছুরকে নির্দিষ্ট সময়ে বলদ বানিয়ে নিতে হবে।

বকনা মহিষের পরিচর্যা

বকনা মহিষের সঠিক পরিচর্যার ওপর এদের থেকে ভবিষ্যতে ভালো উৎপাদন পাওয়া নির্ভর করে। বকনা মহিষ পরবর্তীকালে দুগ্ধবতী মহিষকে প্রতিস্থাপন করে, তাই এদেরকে সঠিকভাবে যত্ন না করলে ভবিষ্যতে দুধ উৎপাদন ভালো হবে না। বকনা মহিষের যত্ন সঠিক না হলে এদের পূর্ণতাপ্রাপ্তি দেরিতে ঘটবে। ফলে বাচ্চা পেতে বিলম্ব হবে। এদের খাবারদাবারের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। তাছাড়া এদের ঘর নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। কোনো পোকামাকড় যেন বকনার ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত ধৌত করা, গা ডলা ও পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

গর্ভবর্তী ও প্রসূতি মহিষের পরিচর্যা

গর্ভবতী মহিষকে বাচ্চা প্রসবের অন্তত এক সপ্তাহ পূর্বে অন্যান্য মহিষ থেকে পৃথক করে প্রসূতি ঘরে পালন করতে হবে। প্রসূতি ঘরে স্থানান্তরের পূর্বে তা উত্তমরূপে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। গর্ভবর্তী মহিষকে প্রসবের ৬-৮ সপ্তাহ পূর্ব থেকে দানাদার খাদ্যসহ প্রচুর পুষ্টিকর খাদ্য প্রদান করতে হবে।

প্রসবের এক সপ্তাহ পূর্ব থেকে প্রচুর কাঁচা ঘাস সরবরাহ করতে হবে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। প্রসবের সময় কোনো প্রসববিঘ্ন ঘটে কি-না তা দূর থেকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রসববিঘ্ন দেখা দিলে বা প্রসবের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গর্ভফুল (placenta) জরায়ু (uterus) থেকে বেরিয়ে না আসলে নিকটস্থ ভেটেরিনারি সার্জনের শরণাপন্ন হতে হবে।

প্রসবের পর প্রসূতির দেহ কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। এরপর এদেরকে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রদান করতে হবে।

ছাগলের বাচ্চাকে খাসি বানানো

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- ছাগলের বাচ্চাকে খাসি বানানো। প্রথমেই প্রশ্ন আসতে পারে – খাসি এবং ছাগলের মধ্যে পার্থক্য কী? আসলে এরা উভয়ই ছাগলের পুরুষ প্রজাতি। তবে জন্মের কিছুদিন পরে যেসব পুরুষ ছাগলের লিঙ্গের অণ্ডকোষ কেটে ফেলে দেওয়া হয় সে সব শাবককেই খাসি বলা হয়। আর যেসব শাবক পুরুষ ছাগলের এই অপারেশন হয় না তাদেরকেই পাঠা বলা হয়। অণ্ডকোষ কাটলে খাসী প্রজনন অক্ষম হয়, ফলে অন্যদিকে মনোযোগ না দিয়ে, শুধুমাত্র খাওয়া দাওয়া করে মোটাতাজা হয়। পাশাপাশি খাসি করলে মাংস থেকে দুর্গন্ধ চলে যায় ও আরও সুস্বাদু হয়।

 

এই পাঠ শেষে আপনি-

  • ছাগলের বাচ্চার খাসিকরণ ও তার পদ্ধতিসমূহের নাম লিখতে পারবেন।
  • বাচ্চাকে খাসি বানানোর বিভিন্ন পদ্ধতিগুলো নিজ হাতে করে দেখাতে পারবেন।

 

ছাগলের বাচ্চাকে খাসি বানানো

 

 

খাসিকরণ/খোজাকরণ (Castration):

পুরুষ ছাগল ছানার প্রজনন ক্ষমতা লোপ বা নষ্ট করে দেয়াকে খানিকরণ বা খোঁজাকরণ বলে।

খাসি করার সুবিধা:

  • এতে ছাগলের বিশৃঙ্খল বা অপরিকল্পিত যৌন মিলন রোধ হয়।
  • খাসিকৃত ছাগল কোনো রকম অসুবিধা ছাড়াই ছাগীর সঙ্গে একত্রে পালন করা যায় ।
  • এতে মাংসের মান উন্নত হয়।
  • খাসিকরণের ফলে এরা শান্ত স্বভাবের হয়ে যায়, ফলে পালন করতে বেশ সুবিধা হয় ।
  • প্রজনন নীতিমালা সহজে কার্যকরী করা যায়।

 

খাসি করার বয়স:

সাধারণত ২-৩ মাস বয়সের মধ্যেই ছাগল ছানাকে খাসি করা হয়। তবে ১-২ সপ্তাহ বয়সের বাচ্চাকেও খাসি করা যেতে পারে। কিন্তু এত অল্প বয়সে খাসি করা হলে ভবিষ্যতে এদের মূত্রপথে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

 

খাসি করার পদ্ধতি:

খাসি বানানোর বেশ ক’টি পদ্ধতি রয়েছে। প্রতিটি পদ্ধতিরই সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। পদ্ধতিগুলো নিম্নোক্ত দু’ভাগে বিভক্ত। যথা-

১. উন্মুক্ত পদ্ধতি (Open method) :

যে পদ্ধতিতে অন্ডকোষথলি (scrotum) অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে উন্মুক্ত বা ছেলন করে স্পারমেটিক কর্ড বা শুক্রবাহী নালী (spermatic cord) কেটে নিয়ে অন্ডকোষ বা শুক্রাশয় (testes) বের করে ফেলা হয়, তাকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খাসিকরণ বলে।

২. আবৃত পদ্ধতি (Closed method) :

অন্ডকোষথলি ছেদন বা উন্মুক্ত না করে খাসি বানানোর পদ্ধতিকে আবৃত পদ্ধতিতে খাসিকরণ বলে। যেমন- ক. বার্ডিজো ক্যাস্ট্রেটর পদ্ধতি ও খ. রাবার রিং পদ্ধতি।

 

১. উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খাসি বানানো

প্রয়োজনীয় উপকরণ

১.        ২-৩ মাস বা তার চেয়েও কম বয়সী একটি পুরুষ ছাগল ছানা

 

২.        যন্ত্রপাতি-

ক. যন্ত্র পাতি রাখার জন্য স্টিল বা প্লাস্টিকের তৈরি ট্রে- ১টি

খ. শেভিং ব্লেড- ১ টি

গ. কাঁচি (scissors) – ১ জোড়া

ঘ. স্কালপেল (scalpel)- ১টি

ঙ. সিরিঞ্জ ও সূঁচ (syringe and needle)- ১টি করে

চ. বাঁকা সূঁচ (curved traumatic needle)- ১টি

ছ. নাইলন বা সিল্ক সুতো- পরিমাণমতো

ঝ. তুলো- পরিমাণমতো

 

৩. রাসায়নিক দ্রব্য-

ক. স্থানিক অবশকারী দ্রব্য (local anaesthetics)- (উদাহরণ- লিগনোকেইন হাইড্রোক্লোরাইড, যেমন- জেসোকেইন)

খ. টিঙ্কচার আয়োডিন

গ. আয়োসান (১%)

ঘ. সাবান ইত্যাদি

 

উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খাসি করার কাজের ধাপ:
  • জীবাণুনাশকপূর্ণ (আয়োসান ১%) ট্রেতে করে প্রয়োজনীয় যন্ত্র পাতি ও তুলো নিন।
  • ছাগল ছানাকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করুন। এই কাজে সহায়তা করার জন্য একজন সহকারী নিন। সহকারী চেয়ারে বসে বাচ্চার দু’টো করে পা দু’হাতে ধরে (চিত্র ৭১ দেখুন) নিয়ন্ত্রণ করবেন। এছাড়াও কাঠের পিড়িতে বসিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
  • অন্ডকোষথলির ত্বকের লোম শেভিং ব্লেডের সাহায্যে ভালোভাবে হেঁচে সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করে টিঙ্কচার আয়োডিন লাগিয়ে নিন ।
  • সিরিঞ্জ ও সূঁচের সাহায্যে ২-৫ মি.লি. পরিমাণ স্থানিক অবশকারী দ্রব্য নিন। এর কিছু পরিমাণ অন্ডকোষথলির ত্বকের নিচে এবং বাকি অংশ সরাসরি শুক্রাবাহী নালী বা স্পারমেটিক কর্ডে ইনজেকশন করুন। ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এই সময়ের মধ্যে অন্ডকোষ, ডারমেটিক কর্ডও অন্ডকোষথলি অবশ হয়ে যাবে।
  • অন্ডকোষথলির গলা বাম হাতে করুন। ডান হাতে স্কালপেল নিয়ে অন্ডকোষথলির ত্বকের নিাংশ “ঔ” আকৃতিতে ছেলন করুন। এবার স্কালপেল জীবাণুনাশকপূর্ণ ট্রেতে রেখে ডান হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে অণ্ডকোষকে টেনে বের করুন।
  • স্ক্রুটাল লিগামেন্ট (scrotal ligament) স্কালপেল বা কাঁচি দিয়ে কেটে স্পারমেটিক কর্ড নাইলন বা সিল্ক সুতো দিয়ে শক্ত করে বেধে নিন। বাধা স্থানের প্রায় ২ সে.মি. নিচ থেকে অন্ডকোষ কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলুন।
  • কাজের ধাপগুলো ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখুন ও শিক্ষককে দেখান।

 

 

উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খাসি করার সুবিধা

অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে এটি নির্ভরযোগ্য। অস্ত্রোপচারোত্তর ব্যাথা বা যন্ত্রণা অন্যান্য পদ্ধতি অপেক্ষা কম ।

উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খাসি করার অসুবিধা

ক্ষত সৃষ্টি হওয়ায় সহজেই জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। একারণে এই পদ্ধতি প্রয়োগের পূর্বে ও পরে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।

 

২. আবৃত পদ্ধতি

ক. বার্ডিঙ্গো ক্যাস্ট্রেটর পদ্ধতি (Burdizzo’s Castrator method)

আবৃত পদ্ধতির প্রাসঙ্গিক তথ্য

বার্ডিজো যন্ত্র আবিষ্কারকের নামানুসারে এই পদ্ধতিটির নামকরণ করা হয়েছে। এই পদ্ধতিটি রক্তপাতহীন পদ্ধতি (bloodless method) নামে বিশেষভাবে পরিচিত। এই যন্ত্রটির পেষণ তল দু’টি ভোতা হয়। এর সাহায্যে অন্ডকোষথলির মধ্যের স্পারমেটিক কর্ডকে প্রবল চাপে পেষণ করা যায়। এতে শুক্রাশয়ের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে পুষ্টির অভাবে অন্ডকোষ দু’টি ধীরে ধীরে শুকিয়ে অকেজো হয়ে যায়।

আবৃত পদ্ধতিতে খাসি করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ
  1. বার্ডিজো ক্যাস্ট্রেটর
  2. টিচার আয়োডিন
  3. ভুলো
  4. স্থানিক অবশকারী দ্রব্য (প্রয়োজনবোধে )

 

আবৃত পদ্ধতিতে খাসি করার কাজের ধারা
  • প্রথমে ছাগলটিকে উন্মুক্ত পদ্ধতির ন্যায় ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করুন ।
  • অন্ডকোষথলির গলার চারদিকে তুলোর সাহায্যে টিঙ্কচার আয়োডিন লাগান।
  • প্রয়োজনবোধে স্থানিক অবশকারী দ্রব্য উন্মুক্ত পদ্ধতির ন্যায় প্রয়োগ করুন ।
  • প্রথমে ডান পাশের অন্ডকোষটি বাম হাত দিয়ে টেনে অন্ডকোষের ১-২ সে.মি. উপরে অন্ডকোষথলির গলায় স্পারমেটিক কর্ডের উপর ডান হাতের সাহায্যে বার্ডিঙ্গো ক্যাস্ট্রেটর লাগিয়ে জোরে পেষণ করুন। প্রায় আধা থেকে এক মিনিট পর যন্ত্রটি ছুটিয়ে নিন। এরপর স্পারমেটিক কর্ডটি ভালোভাবে পেষণ হয়েছে কি-না দেখে নিন।
  • এবার পেষণ করা স্থানের ১ সে.মি. নিচে পুনরায় একই নিয়মে পেষণ করুন।
  • ডানপাশের পর বামপাশও একই নিয়মে দু’বার পেষণ করুন। এভাবে পেষণে খাসিকরণের ফলাফল সন্তোষজনক হয়।
  • কাজের ধাপগুলো ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখুন ও শিক্ষককে দেখান।

 

আবৃত পদ্ধতির সাবধানতা
  • পেষণের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন স্পারমেটিক কার্ডটি পিছলে না যায়।
  • ত্বকের ভাঁজে যেন পেষণ করা না হয়।
  • অন্ডকোষ যেন পেষণ করা না হয়।

 

আবৃত পদ্ধতির সুবিধা

বাইরের অংশে কোনো ক্ষতের সৃষ্টি হয় না। তাই জীবাণু সংক্রমণের তেমন কোনো ঝুঁকি থাকে না।

 

আবৃত পদ্ধতির অসুবিধা

অনেকক্ষেত্রে বার্ডিজো ক্যাস্ট্রেটর কর্ডকে পেষণ করতে ব্যর্থ হয়। আবার অত্যধিক পেষণে অন্ডকোষথলির ত্বক ও অন্যান্য অঙ্গের কলা (tissue) বিনষ্ট হতে দেখা যায়। এ পদ্ধতি প্রয়োগের পর অত্যধিক ব্যথা হয় এবং দু’তিন সপ্তাহ পর্যন্ত জায়গাটি ফুলে থাকে।

 

৩. রাবার রিং পদ্ধতি (Rubber ring method)
রাবার রিং পদ্ধতির প্রাসঙ্গিক তথ্য

এই পদ্ধতিতে ইলাস্ট্রেটর ( elastrator) নামক যন্ত্রের সাহায্যে একটি শক্ত রাবারের রিং বা বলয় বাচ্চা ছাগলের অন্ডকোষথলির গলায় পরিয়ে দেয়া হয়। ফলে অক্রাশয়ের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে পুষ্টির অভাবে শুক্রাশয় অন্ডকোষথলিসহ শুকিয়ে খসে পড়ে। সাধারণত বাচ্চার ৭দিন বয়সের মধ্যে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। অবশ্য এটি আমাদের দেশে ব্যবহৃত হয় না। সাধারণত বৃহৎ ছাগল খামারে যেখানে শত শত বা হাজার হাজার ছাগল পালন করা হয় সেখানে এই পদ্ধতিটি ব্যবহৃত হয় ।

রাবার রিং পদ্ধতির প্রয়োজনীয় উপকরণ

১. ইলাস্ট্রেটর

২.রাবার রিং

 

রাবার রিং পদ্ধতিতে কাজের ধাপ
  • রাবারের রিং পরানোর পূর্বে থলির নিচে অন্ডকোষ নেমে আছে কিনা তা দেখে নিন। মনে রাখতে হবে যে, স্ক্রুটাল হার্ণিয়ার (scrotal hernia) ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে না।
  • রাবারের রিং অন্ডকোষের উপরে ও অন্ডকোষথলির গলায় (চিত্র ৭৪ দেখুন) পরিয়ে দিন। অন্ডকোষদ্বয় থলির মধ্যে আছে কিনা আগে তা দেখে নিন ।
  • বাচ্চা যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ মায়ের দুধ পান করতে পারে এবং অস্বস্থিবোধ না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
  • কাজের ধাপগুলো ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখুন ও শিক্ষককে দেখান।

 

রাবার রিং পদ্ধতির সুবিধা
  • খাসিকরণের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে এটিই সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি।
রাবার রিং পদ্ধতির অসুবিধা
  • বাচ্চার ৭দিন বয়সের পর এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে না।
  • অন্ডকোষথলি খসে পড়ার কারণে ছোট ক্ষতের সৃষ্টি হয় যা জীবাণু সংক্রমণের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ থাকে ।

 

অনুশীলন (Activity) : খাসিকরণের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে আপনার মতে ছাগলের জন্য কোটি সবচেয়ে ফলদায়ক? আপনার মতামতের স্বপক্ষে যুক্তি দিন।

 

ছাগলের বাচ্চাকে খাসি বানানো পাঠের সারমর্ম :

পুরুষ ছাগল ছানার প্রজনন ক্ষমতা লোপ বা নষ্ট করে দেয়াকে খাসিকরণ বলে। সাধারণত ২-৩ মাস বয়সের মধ্যেই ছাগল ছানাকে খাসি করা হয়। তবে, ১-২ সপ্তাহ বয়সেও করা যেতে পারে। খাসি বানানোর বেশ ক’টি পদ্ধতি রয়েছে। প্রতিটি পদ্ধতিরই সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। এগুলো দু’ভাগে বিভক্ত। যথা- উন্মুক্ত পদ্ধতি ও আবৃত পদ্ধতি। আবৃত পদ্ধতি আবার দু’ভাগে বিভক্ত। যথা- বার্ডিজো ক্যাস্ট্রেটর পদ্ধতি ও রাবার রিং পদ্ধতি।

খাসিকরণের সবগুলো পদ্ধতির মধ্যে অনাবৃত পদ্ধতি বেশি নির্ভরযোগ্য। এতে অস্ত্রোপচারোত্তর ব্যাথা বা যন্ত্রণা অন্যান্য পদ্ধতি | অপেক্ষা কম। তবে, ক্ষত সৃষ্টি হওয়ায় সহজেই জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। তাই এই পদ্ধতি | প্রয়োগের পূর্বে ও পরে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। আবৃত পদ্ধতির মধ্যে বার্ডিজো পদ্ধতি বেশি প্রচলিত।

এতে কোনো ক্ষতের সৃষ্টি হয় না। তবে, অনেকক্ষেত্রে বার্ডিজো ক্যাস্ট্রেটর কর্ডকে পেষণ করতে ব্যর্থ হয়। এই পদ্ধতি প্রয়োগের পর অত্যধিক ব্যথা হয় ও দু’তিন সপ্তাহ পর্যন্ত জায়গাটি ফুলে থাকে । খাসিকরণের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে রাবার রিং পদ্ধতিই সবচেয়ে সহজ। এতে অন্ডকোষথলি খসে পড়ার কারণে ছোট ক্ষতের সৃষ্টি হয় যা জীবাণু সংক্রমণের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ থাকে । তবে, বাচ্চার ৭ দিন বয়সের পর এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে না ।

 

ছাগলের জন্য দানাদার খাদ্য প্রস্তুত করা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- ছাগলের জন্য দানাদার খাদ্য প্রস্তুত করা। ছাগলের দানাদার জাতীয় খাদ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ডাল, তেলের খৈল,শুটকি মাছের গুড়া, ইত্যাদি। ডালের মধ্যে মাসকলাই অথবা খেসারি ভাঙ্গা দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া গমের ভুষি, চালের কুড়া, ভুট্টা ভাঙ্গা, চিটাগুড় এজাতীয় খাবার গুলো বাচ্চা ছাগলকে খাওয়ানো হয়। ডাই ক্যালসিয়াম ফসফেট ও ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স ছাগল ছানার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

এই পাঠ শেষে আপনি-

বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ আনুপাতিক হারে মিশিয়ে ছাগলের জন্য দানাদার খাদ্য প্রস্তুত করতে পারবেন।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

বিভিন্ন বয়সের ছাগলের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপকরণ ও খাদ্যতালিকাসমূহ তাত্ত্বিক পাঠে (পাঠ ৬.৪) আলোচনা করা হয়েছে। খাদ্য তৈরির পদ্ধতি সব বয়সের ছাগলের জন্যই একই রকম। শুধু বয়স ও উদ্দেশ্যের ভিন্নতার কারণে খাদ্য উপকরণগুলোর পরিমাণ কমবেশি হয়ে থাকে। তাই এই পাঠে সব বয়সের ছাগলের জন্য দানাদার খাদ্য প্রস্তুতকরণ আলাদাভাবে না দেখিয়ে শুধু একটি নমুনা দেখানো হয়েছে।

ছাগলের জন্য দানাদার খাদ্য প্রস্তুত করা

মাংস উৎপাদনকারী ছাগলের জন্য ১০ কেজি দানাদার খাদ্যের প্রস্তুত প্রণালী

 

 

প্রয়োজনীয় উপকরণ

সারণি ৩১-এ উল্লেখিত বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ নির্দিষ্ট পরিমাণে বিভিন্ন পাত্রে সংগ্রহ করুন। এছাড়াও কলম, পেন্সিল, রাবার, ব্যবহারিক খাতা, একটি ছালার বস্তা ইত্যাদিরও প্রয়োজন হবে।

সারণি ৩১ : মাংস উৎপাদনকারী ছাগলের জন্য বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের পরিমাণ

কাজের ধাপ

  • প্রথমে ঘরের শুকনো মেঝে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করুন।
  • পরিমাণে কম এমন উপকরণগুলো, যেমন- খনিজপদার্থ, খাদ্য লবণ প্রভৃতি একসঙ্গে ভালোভাবে মেশান ।
  • এরপর অন্যান্য উপকরণগুলোও পর্যায়ক্রমে একত্রে ভালোভাবে মেশান।
  • এই মিশ্রণের সঙ্গে পূর্বে মিশ্রিত খণিজপদার্থ ও খাদ্য লবণের মিশ্রণ যোগ করুনও ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
  • সমস্ত মিশ্রণটি বস্তায় ভরে মজুদ করুন এবং সেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ছাগলকে খেতে দিন ।
  • কাজের ধাপগুলো ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখুন ও শিক্ষককে দেখান।

সাবধানতা

  • ভেজা, স্যাঁতস্যাতে বা অপরিচ্ছন্ন স্থানে খাদ্য মিশ্রণ করবেন না।
  • খাদ্য মিশ্রণ করার পূর্বে অবশ্যই খাদ্য উপকরণের গুণাগুণ পরীক্ষা করে নিন।
  • ভেজা বা ছত্রাকযুক্ত ও দুষিত খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করবেন না।

উপরিক্ত দানাদার খাদ্যগুলো সঠিক অনুপাতে মিশ্রণ করে পরিবেশন করতে হবে। সাধারণত কোনো ছাগল ছানার বয়স যখন এক মাসের মত হয়ে যায় তখন থেকে ছাগল ছানার পাকস্থলী বিভিন্ন রকমের ঘাস হজম করার উপযোগী হয়ে ওঠে।

ছাগল ছানা দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে দুধ খাওয়া ধীরে ধীরে ছেড়ে দেয়। তাই পূর্ব থেকেই সামান্য পরিমাণ কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। সেই সাথে কিছু পরিমাণ দানাদার জাতীয় খাবার প্রদান করতে হবে। এই সকল দানাদার খাদ্য নির্বাচনে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন নির্বাচিত খাবার গুলো উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ ও কম আশের হয়ে থাকে।

ছাগলের রোগব্যাধি দমন

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- ছাগলের রোগব্যাধি দমন।

এই পাঠ শেষে আপনি-

  • ছাগলের রোগব্যাধি দমনে জাতীয়ভিত্তিক ও ব্যক্তিগত কার্যক্রমগুলো লিখতে পারবেন।
  • ছাগলের গুরুত্বপূর্ণ রোগ ও তার প্রতিকারসমূহ ব্যাখ্যা করে লিখতে পারবেন।

এদেশে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, ছাগলের রোগব্যাধি কম হয়। কথাটি অল্প সংখ্যক ছাগলের ক্ষেত্রে সত্য হলেও যেখানে বেশি সংখ্যায় ছাগল পালন করা হয় (অর্থাৎ খামার) সেখানকার সত্য নয়।

কারণ, খামারে কাছাকাছি থাকার কারণে কোনো ছাগল সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে অন্যরাও সহজেই সে রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। খামারে পালিত ছাগলের রোগব্যাধি এদের বংশবৃদ্ধি ও উৎপাদন বৃদ্ধির অন্তরায়। তবে, এদেশে গরু তুলনায় ছাগলের রোগ বেশ কম হয় ।

চিকিৎসা শাস্তে একটি কথা প্রচলিত আছে “চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়। অর্থাৎ রোগ হলে চিকিৎসা করা হবে সে আশায় না থেকে আগে থেকেই এমন কতকগুলো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যেন রোগই না হয়। তাহলেই রোগ দমন সহজ হবে।

ছাগলের রোগ দমনেও এই কথাটির প্রতিফলন ঘটাতে হবে। ছাগলের রোগব্যাধি সঠিকভাবে দমন করতে পারলে এদেশে ছাগলের সংখ্যা ও উৎপাদন প্রত্যেকটিই যথাক্রমে প্রায় ৩০% করে বৃদ্ধি পাবে। ছাগলের বিভিন্ন ধরনের রোগ দমনে জাতীয়ভিত্তিক কার্যক্রমের পাশাপাশি পালনকারিকে কিছু ব্যক্তিগত কার্যক্রমও গ্রহণ করতে হবে। এসব পদক্ষেপ সুষ্ঠুভাবে গ্রহণ ও সম্পাদন করতে পারলে ছাগলের রোগব্যাধি দমন সহজতর হবে।

 

ছাগলের রোগব্যাধি দমন

 

জাতীয়ভিত্তিক কার্যক্রম

এজাতীয় কার্যক্রম প্রধানত সরকার গ্রহণ করবে। তবে, সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা (এন.জি.ও.) ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও সংশ্লিষ্ট থাকতে পারেন। জাতীয়ভিত্তিক কার্যক্রমের মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর সুষ্ঠু সম্পাদন ছাগলের রোগব্যাধি দমনের পূর্বশর্ত। যথা-

  • ছাগলের সংখ্যা নির্ধারণ বা শুমারি।
  • ছাগল চিহ্নিতকরণ।
  • ছাগলের রোগব্যাধির অনুসন্ধান ও নির্ণয়।
  • ছাগলের রোগব্যাধি নিয়ে গবেষণা ।
  • রোগপ্রতিরোধ আইনের প্রয়োগ।
  • রোগ সম্পর্কে রিপোর্টিং।
  • ছাগলের রোগপ্রতিষেধক ইনজেকশন বা টিকার ব্যবহার।
  • বেআইনিভাবে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে ছাগল আমদানি করা।

ব্যক্তিগত কার্যক্রম

প্রতিটি ছাগল খামারিকে রোগব্যাধি দমনের জন্য নিজস্ব কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এগুলো সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে। নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হলো-

  • ছাগলের ঘরদোর, খাদ্য ও পানির পাত্র এবং অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র জীবাণুনাশক ওষুধ দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
  • এদের গোবর ও চনা সঠিকভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
  • বিভিন্ন বয়সের ছাগলকে আলাদা আলাদা ঘরে বা খোপে (pen) পালন করতে হবে।
  • সব সময় সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে। পচা বা বাসি খাবার সরবরাহ করা যাবে না।
  • বাজার থেকে কিনে আনা নতুন ছাগল খামারের অন্যান্য ছাগলের সঙ্গে রাখার পূর্বে অন্তত কয়েকদিন আলাদা রেখে পর্যবেক্ষণ করতে হবে যে সে কোনো রোগে আক্রান্ত কি-না।
  • কোনো ছাগলের মধ্যে অসুস্থতার লক্ষণ দেখামাত্র তাকে আলাদা করে ফেলতে হবে এবংচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • সংক্রামক রোগে মৃত ছাগলকে খামার থেকে দূরে মাটির নিচে গভীর গর্ত করে তাতে মাটি চাপা
  • দিতে হবে এবং উপরিভাগে চুন বা ডি.ডি.টি. (D.D.T.) ছড়িয়ে শোধন করতে হবে।
  • সব বয়সের ছাগলকে নিয়মিতভাবে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে ও সংক্রামক রোগপ্রতিরোধের জন্য টিকা প্রদান করতে হবে।
  • ছাগলের প্রধান শত্রু ঠান্ডা বা বৃষ্টির পানির কবল থেকে রক্ষা করতে হবে।

 

 

ছাগলের গুরুত্বপূর্ণ রোগ ও প্রতিকার

ছাগল জীবাণুঘটিত, পরজীবীঘটিত, অপুষ্টিজনিত, বিপাকীয় ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এসব রোগের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কটি রোগ এখানে আলোচিত হয়েছে।

তড়কা (Anthrax)

তড়কা বা অ্যানথ্রাক্স ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস (Bacillus anthracis) নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এই জীবাণুটি খাদ্য, পানি, ক্ষত বা শ্বাসের সঙ্গে ছাগলের দেহে প্রবেশ করে। দেহে প্রবেশের ১-৫ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ দেখা যায়। অনেক সময় কোনো লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই ছাগল মারা যায়। মৃত ছাগলের নাক, মুখ বা পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত বের হতে দেখা যায়।

লক্ষণ :

হঠাৎ করে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয়। জাবর কাটে না, লোম খাড়া হয়ে যায় এবং কাঁপতে থাকে। পেট ফুলে ওঠে। দেহের তাপমাত্রা ৪১° সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠতে পারে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এ রোগে মৃত ছাগলের ময়না তদন্ত করা বা চামড়া ছাড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ, এই রোগের জীবাণু মাটিতে ৪০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে এবং মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীকেও আক্রান্ত করতে পারে।

চিকিৎসা:

উল্লেখিত যে কোনো একটি অ্যান্টিবায়োটিক ( antibiotic) ওষুধ ভেটেরিনারি সার্জনের নির্দেশিত মাত্রায় প্রয়োগ করে সাফল্যজনকভাবে চিকিৎসা করা যেতে পারে। যেমন- পেনিসিলিন, অ্যাম্পিসিলিন, টেট্রাসাইক্লিন ইত্যাদি ।

প্রতিরোধ:

এই রোগের প্রতিষেধক টিকা সুস্থ অবস্থায় ছাগলে বছরে একবার প্রয়োগ করতে হয়।

নিউমোনিয়া (Pneumonia)

ফুসফুসের প্রদাহকে নিউমোনিয়া বলে। বহু কারণে এই রোগ হতে পারে। যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, পরজীবী, ছত্রাক প্রভৃতির আক্রমণে। কাজেই এটি একটি জটিল রোগ, এই রোগের জীবাণু বা পরজীবীগুলো খাদ্য ও পানি, রোগাক্রান্ত ছাগলের স্পর্শ বা শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে ছড়াতে পারে ।

লক্ষণ:

দেহের তাপমাত্রা ৪১° সে. পর্যন্ত ওঠতে পারে। শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়। কাশি হয়, নাক দিয়ে সর্দি ঝড়ে। জিহ্বা ফুলে যায় ও তা বের করে রাখে। খাদ্যে অরুচি হয়, জাবর কাটা বন্ধ হয়ে যায় । নিস্তেজ হয়ে পড়ে ও শুয়ে থাকতে পছন্দ করে ।

চিকিৎসা:

উল্লেখিত যে কোনো একটি সালফোনেমাইড গ্রুপের বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করলে সুফল পাওয়া যায়। তবে, একাধিক রোগজীবাণু জড়িত থাকায় সঠিক ওষুধ নির্বাচন করতে হবে। যেমন- সালফাডিমিডিন, পেনিসিলিন, টেট্রাসাইক্লিন, অ্যাম্পিসিলিন, টাইলুসিন প্রভৃতি ।

খুরা বা বাতা রোগ (Foot and mouth disease)

এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ যা সাধারণত বিভক্ত খুরবিশিষ্ট প্রাণী, যেমন- গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল, শুকর, হরিণ প্রভৃতিতে হয়। এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র ভাইরাস এজন্য দায়ী।

লক্ষণ :

প্রথমে জ্বর হয়। মুখের ভেতরে, ঠোঁটে, জিহ্বায় দুই খুরের মাঝখানে পানির ন্যায় রসপূর্ণ ফোস্কা ওঠে। খাওয়ার সময় ঘষা লেগে ফোস্কাগুলো ফেটে গিয়ে লাল রঙের ঘায়ে পরিণত হয়। ঘায়ের কারণে মুখ থেকে প্রচুর লালা ঝড়ে। পায়ে ফোস্কা হয় ও তা ফেটে ঘা হয়। পা ফুলে ওঠে ও পায়ের ঘায়ে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়ায়। ওলানেও ফোস্কা ওঠতে পারে। ঘায়ে পোকা পড়তে পারে ।

চিকিৎসা :

এই রোগের সঠিক কোনো চিকিৎসা নেই। তবে, অন্যান্য রোগজীবাণু দিয়ে যাতে ক্ষত সংক্রমিত না হয় সেজন্য অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। তাছাড়া ক্ষত বা ঘা অ্যান্টিসেপটিক ওষুধ দিয়ে রোজ দুতিনবার ধুয়ে অ্যান্টিসেপটিক পাউডার লাগাতে হবে। প্রতিরোধ ঃ প্রতি ৪-৬ মাস পর পর নির্ধারিত মাত্রায় ছাগলকে খুরা রোগের প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগ করতে হবে।

 

 

এন্টারোটক্সিমিয়া (Enterotoxemia)

ক্লসট্রিডিয়াম প্রজাতির (Clostridium spp.) ব্যাকটেরিয়া কর্তৃক উৎপাদিত টক্সিন বা বিষের কারণে এই রোগের সৃষ্টি হয়। শুধুমাত্র দানাদার খাদ্য খাওয়ালে অন্তে বসবাসকারী এই ব্যাকটেরিয়াগুলো তাড়াতাড়ি বংশ বৃদ্ধি করে ও এদের টক্সিন উৎপাদনের মাত্রা বেড়ে যায়।

লক্ষণ :

আক্রান্ত ছাগল হঠাৎ মারা যেতে পারে। ছাগল হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে ওঠে, দেহ কাঁপতে থাকে । ঘুরতে থাকে, কোনো শক্ত বস্তুর সঙ্গে মাথা ঠেকিয়ে রাখে। মুখ দিয়ে লালা ঝরে। পাতলা পায়খানা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাগল মারা যায়।

চিকিৎসা :

চিকিৎসা করে সব সময় সুফল পাওয়া যায় না। পেনিসিলিন, টেট্রাসাইক্লিনজাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে মাঝে মাঝে উপকার পাওয়া যায়।

 

কৃমি রোগ (Worm infestation)

প্রাপ্তবয়স্ক ছাগলের চেয়ে অল্পবয়স্ক ছাগলই কৃমি রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। প্রাপ্তবয়স্ক ফিতাকৃমি এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক পাতাকৃমি দিয়েই ছাগল বেশি আক্রান্ত হয় ।

লক্ষণ :

আক্রান্ত ছাগলের পেট বড় হয়ে যায় এবং ছাগল ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমে যায় ও কমনীয়তা নষ্ট হয়। মলের সঙ্গে মাঝে মধ্যে কৃমির অংশ বের হয়ে আসে। ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়। পাতলা পায়খানাও করতে পারে ।

চিকিৎসা :

গবাদিপশুর কৃমি নিবারণের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন কৃমিনাশক ওষুধ, যেমন- মেবেন্ডাজল, ক্যামবোজল, থায়োফিনেট প্রভৃতি সঠিক মাত্রায় সেবনের মাধ্যমে সহজেই এই রোগ নিরাময় করা যায় । তবে, এ রোগের আক্রমণ থেকে পশুকে রক্ষা করার জন্য ডোবা ও জলাশয় থেকে সংগৃহীত ঘাস বিশুদ্ধ পানিতে ধুয়ে খাওয়াতে হবে।

ছাগলের বাসস্থান ও পরিচর্যা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- ছাগলের বাসস্থান ও পরিচর্যা।

এই পাঠ শেষে আপনি

  • ছাগলের বাসস্থান তৈরির প বর্ণর্তগুলো লিখতে পারবেন।
  • ছাগলের ঘরের ধরন ও প্রতিটি ছাগলের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ বলতে পারবেন ।
  • ছাগলের সাধারণ পরিচর্যা সম্পর্কে বলতে পারবেন ।
  • গর্ভবতী ছাগী ও পাঠার পরিচর্যা বর্ণনা করতে পারবেন ।

 

ছাগলের বাসস্থান ও পরিচর্যা

 

ছাগলের বাসস্থান

অন্যান্য প্রাণীদের মতো ছাগলেরও রাত্রি যাপন, নিরাপত্তা, ঝড়বৃষ্টি, ঠান্ডা, রোদ ইত্যাদির কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাসস্থানের প্রয়োজন রয়েছে। তবে, এদেশের গ্রামাঞ্চলে পারিবারিক পর্যায়ে ছাগল পালনের ক্ষেত্রে বাসস্থানের জন্য তেমন কোনো আলাদা ব্যবস্থা দেখা যায় না। গোয়াল ঘর বা গোশালায় গরুমহিষের পাশাপাশি, ঘরের বারান্দা, রান্নাঘর প্রভৃতি স্থানে ছাগলের থাকার ব্যবস্থা করা হয়।

অনেকে জায়গা স্বল্পতার জন্য ও নিরাপত্তার কারণে নিজেদের ঘরের ভেতরেই ছাগলের রাত যাপনের ব্যবস্থা করেন। রোগমুক্ত আবহাওয়ায় কেউ কেউ রাতের বেলা এদেরকে নিজেদের ঘরের পাশে গাছের নিচেই বেধে রাখেন। দু’চারটি ছাগল পালনের ক্ষেত্রে এসব ব্যবস্থায় তেমন কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু, একসঙ্গে অনেক ছাগল পালন করতে হলে অর্থাৎ খামারে ছাগল পালন করতে হলে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ছাগলের বাসস্থান বা ঘর তৈরি করতে হবে।

 

 

ছাগলের বাসস্থান বা ঘর তৈরির পূর্বশর্ত

  • শুষ্ক পরিবেশ ও আবহাওয়ায় ঘর তৈরি করতে হবে।
  • ঘরের মেঝে যে দ্রব্যসামগ্রী দিয়েই তৈরি করা হোক না কেন তা অবশ্যই শুষ্ক রাখতে হবে।
  • ঘরটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন তাতে সহজেই প্রচুর আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে এবং তাপ, আর্দ্রতা প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।
  • ঘর কোনোক্রমেই স্যাঁতস্যাঁতে হওয়া চলবে না।
  • এতে বিভিন্ন পরজীবী বা রোগজীবাণুঘটিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • ঘর এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন তাতে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করতে না পারে।
  • মাটির দেয়ালে আবদ্ধ ঘরে ছাগল পালন করলে তা এদের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। তাই দেয়ালের অর্ধেকটা বাঁশের বেড়া বা ইটের গাঁথুনি দিয়ে এবং বাকিটা চট, ত্রিপল প্রভৃতি
  • দিয়ে ঢেকে দিলে শীতের রাতে বা বৃষ্টির সময় এরা ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
  • বৃষ্টি ও ঠান্ডা দুটোই ছাগলের জন্য প্রচন্ড ক্ষতিকর।
  • এতে ছাগলের নিউমোনিয়া (Pneumonia) রোগহতে পারে।
  • ঘরটি মজবুত ও আরামদায়ক হওয়া চাই।
  • বিশ্রাম ও ব্যায়াম করার জন্য ঘরে প্রয়োজনীয় জায়গার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • ঘর যেন সহজেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা যায় এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে ।
  • ঘর এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন তা ছাগলের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়।

ছাগলের ঘরের ধরন

ছাগল পালনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ঘর রয়েছে। তবে, এদেশে নিম্নে উল্লেখিত দু’ধরনের ঘরই বেশি দেখা যায়। যেমন- ১. ভূমির উপর স্থাপিত ঘর ও ২. খুঁটির উপর স্থাপিত ঘর।

১. ভূমির উপর স্থাপিত ঘর

এই ধরনের ঘরেই গ্রামের সাধারণ গৃহস্থরা ছাগল পালন করে থাকেন । এই ধরনের ঘরের মেঝে কাঁচা অর্থাৎ মাটি দিয়ে, আধা পাকা অর্থাৎ শুধু ইট বিছিয়ে অথবা সিমেন্ট দিয়ে পাকা করে তৈরি করা যায়। এই ধরনের ঘরের মেঝেতে শুকনো খড় বিছিয়ে দিলে ভালো হয়। তবে, ঘর সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

. খুঁটির উপর স্থাপিত ঘর

এই ধরনের ঘর সাধারণত মাটি থেকে ১.০-১.৫ মিটার অর্থাৎ ৩.৩-৪.৯ ফুট উচ্চতায় খুঁটির উপর তৈরি করা হয়। এজাতীয় ঘর ছাগলকে মাটির স্যাঁতস্যাঁতে ভাব, বন্যার পানি, নালা-নর্দমা থেকে চোয়ানো পানি প্রভৃতি থেকে রক্ষা করে। এজাতীয় ঘরের মেঝে বাঁশ, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে মাঁচার মতো করে তৈরি করা হয়। ছাগল পালনে এই ধরনের ঘর অত্যন্ত সুবিধাজনক।

তাছাড়া স্বাস্থ্যসম্মতও বটে। কারণ, এই ধরনের ঘর পরিষ্কার করা সহজ এবং ছাগলের গোবর ও চনাসংগ্রহ করাও সহজ। মেঝের ফাঁক দিয়ে গোবর ও চনা নিচে পড়ে যায় বলে খাদ্য ও পানি দুষিত হয় না এবং রোগজীবাণু ও কৃমির আক্রমণও কম হয় ।দু’ধরনের ঘরই একচালা, দোচালা বা চৌচালা হতে পারে এবং ছাগলের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে তা ছোট বা বড় হতে পারে।

 

 

ছাগলের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা

ছাগলের বয়স এবং আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এদের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। সারণি ২৭-এ ছাগলের প্রকৃতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ দেখানো হয়েছে। ১.৮ মিটার x ১.৮ মিটার × ১-৩ মিটার অর্থাৎ ৫.৭ ফুট × ৫.৭৫ ফুট × ৩.৩-৯.৮ ফুট আকারের একটি ঘর ১০টি বাচ্চা ছাগলের জন্য যথেষ্ট।

প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জন্য ০.৭৫ মিটার x ৪.৫ মিটার × ৪.৮ মিটার অর্থাৎ ২.৫ ফুট × ১৪.৭৫ ফুট × ১৫.৭৫ ফুট জায়গার প্রয়োজন হয়। প্রতিটি পাঠার জন্য খোপের মাপ হলো ২.৪ মিটার x ১.৮ মিটার অর্থাৎ ৭.৯ ফুট × ৫.৯ ফুট। গর্ভবতী ছাগলের জন্য আলাদা প্রসূতি কক্ষের ব্যবস্থা থাকা উচিত। খামারে ছাগলের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে ঘর ছোট বা বড় করা যাবে। তবে, লক্ষ্য রাখতে হবে যেন প্রতিটি ছাগল তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ জায়গা পায়।

ছাগলের পরিচর্যা

ছাগলকে সুস্থ সবল ও কর্মক্ষম রাখা এবং ছাগল থেকে সঠিক উৎপাদন পেতে হলে এদেরকে সঠিকভাবে যত্ন বা পরিচর্যা করতে হবে। পরিচর্যা বলতে সময়মতো খাবার পরিবেশন করা, গর্ভবতী ছাগীর যত্ন, অসুস্থ ছাগলকে ওষুধ খাওয়ানো, ঘরদোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা ইত্যাদি বুঝায়। প্রতিটি ছাগলের জন্য সাধারণ পরিচর্যা ছাড়াও গর্ভবর্তী ছাগী, নবজাত বাচ্চা, প্রজননের পাঠা প্রভৃতির জন্য কিছু বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন হয়।

সাধারণ পরিচর্যাসমূহ

  • ছাগলকে প্রতিদিন সকালে ঘর থেকে বের করে খোয়াড়ে (খোয়াড় দিনের বেলা ছাগল রাখার জন্য বাসস্থানের সঙ্গে লাগোয়া ঘর) কিংবা ঘরের আশেপাশের খোলা জায়গায় চরতে দিতে হবে। এদেরকে ব্যায়াম ও গায়ে সূর্যকিরণ লাগানোর পর্যাপ্ত সুযোগ প্রদান করতে হবে।
  • ঘর থেকে ছাগল বের করার পর তা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
  • খামারে বেশি ছাগল থাকলে তাদেরকে চিহ্নিত করার জন্য নির্জীবাণু পন্থায় কানে ট্যাগ (tag) নম্বর লাগাতে হয়। এটা ছোট বড় যে কোনো খামারের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
  • ছাগলকে নিয়মিত সুষম খাবার সরবরাহ করতে হবে। খাবার ও পানির পাত্র পরিষ্কার করে তা খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি নিয়ে পূর্ণ করে নিতে হবে। প্রতিটি ছাগলকে আলাদাভাবে দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর খাবার দিতে হবে। সময়ের হেরফের করা যাবে না। পাতাসহ আম-কাঠালের ডাল ঝুলিয়ে সরবরাহ করলে ভালো হয়।
  • এরা পানি পছন্দ করে না। তাই নিয়মিত গোছলের পরিবর্তে ব্রাশ দিয়ে ঘষে দেহ পরিষ্কার করতে হবে। এতে লোমের ভিতরের ময়লা বেরিয়ে আসবে এবং রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে । নিয়মিত ব্রাশ করলে লোম উজ্জ্বল দেখাবে ও চামড়ার মান বৃদ্ধি পাবে ।
  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে দুগ্ধবতী ছাগীর দুধ দোহন করতে হবে। দুধ দোহনের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। রের কোনো ছাগল অসুস্থ হলো কিনা তা নিয়মিত লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • কোনো ছাগলের মধ্যে অসুস্থতার লক্ষণ দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে পৃথক করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • সকল বয়সের ছাগলকে নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে ও টিকা প্রদান করতে হবে।

 

বিশেষ পরিচর্যা

নবজাত বাচ্চা ছাগল, গর্ভবতী ছাগল, প্রজননের পাঠা প্রভৃতির জন্য বিশেষ কিছু পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে। নবজাত বাচ্চার পরিচর্যা বাচ্চা পালন পাঠে আলোচনা করা হয়েছে। আর এখানে গর্ভবতী ছাগী ও পাঠার পরিচর্যা বর্ণনা করা হয়েছে।

গর্ভবতী ছাগীর পরিচর্যা ঃ বাচ্চা পালন অধ্যায়ে প্রসঙ্গক্রমে এ সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে। ছাগীর গর্ভধারণকাল ১৪৫ দিন (প্রায় ৫ মাস)। ছাগীর গর্ভধারণকাল পূর্ণ হওয়ার এক/দুই দিন আগে বা পরে বাচ্চা প্রসবের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়।

বাচ্চা প্রসব করার অন্তত এক সপ্তাহ পূর্বেই তাকে প্রসূতি ঘরে স্থানান্তর করতে হবে। গর্ভবতী অবস্থায় ছাগীকে উঁচু মাচায় ওঠতে দেয়া যাবে না। সকালে বাইরে আলাদা খোয়াড়ে বা গাছের নিচে বেধে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রসবের পূর্বে ছাগীর ওলান দুধে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। অনেক সময় ওলান খুব বেশি শক্ত হয়ে যায়। তখন দুধ দোহন করা ভালো। তা না হলে ওলানপ্রদাহ বা ম্যাস্টাইটিস (Mastitis) দেখা দিতে পারে।

পাঠার পরিচর্যা : পাঠার পরিচর্যা সঠিক না হলে এর থেকে ভালোমানের বীর্য উৎপাদিত হবে না। ফলে সে পাঠা দিয়ে ছাগীকে প্রজনন করালে ভালোমানের বাচ্চা হবে না। কোনো পাঠার শারীরিক দুর্বলতা, পঙ্গুত্ব বা কোনো যৌন রোগ থাকলে সে পাঠা প্রজননের জন্য বাতিল করে দিতে হবে।

পাঠাকে নির্ধারিত মাত্রায় সুষম খাবার ও বিশুদ্ধ পানি প্রদান করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম এবং সপ্তাহে অন্তত ২/৩ দিন ব্রাশ দিয়ে দেহ পরিষ্কার করে দিতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে যত্ন নিলে ও সুষম খাদ্য সরবরাহ করলে একটি পাঠা ১০-১২ বছর বয়স পর্যন্ত ভালোমানের বীর্য উৎপাদন করতে পারে।