Tag Archives: কৃষি বাতায়ন

কৃষি বাতায়ন

মাঠ ফসল, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু ও মৎস্য খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি

মাঠ ফসল, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু ও মৎস্য খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশের উপাদান” বিষয়ের ইউনিট ৩ এর ৩.২ নং পাঠ।

মাঠ ফসল, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু ও মৎস্য খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি

 

আমাদের দেশে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির নাম নিম্নে দেয়া হলো ঃ

 

১। চাষের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি —

* দেশী লাঙ্গল

* মোল্ডবোর্ড লাঙ্গল

* পাওয়ার টিলার

* ট্রাক্টর প্লাউ * ডিস্ক প্লাউ

* হ্যারো

* রোটোভেটর

* গরুর কাঁধে বাঁধার জন্য জোয়াল

* কোদাল (কোন কোন ক্ষেত্রে )

 

২. জমি সমান করার যন্ত্রপাতি —

* মই

* রোলার

* হ্যারো

* মুগুর (ঢিলা ভাঙ্গার জন্য)

 

৩। বীজ বপনের যন্ত্রপাতি —

* সিড ড্রিল

* ফারোয়ার

 

৪। আঁচড়া দেয়ার যন্ত্রপাতি —

* হ্যান্ড র‌্যাক বা গার্ডেন র‌্যাক

* ফিল্ড র‌্যাক বা বিদা বা অঁাচড়া

 

৫। নিড়ানী দেয়ার যন্ত্রপাতি —

* নিড়ি বা খুরপি

* জাপানিজ রাইস উইডার

* হ্যান্ড হো বা হুইল হো

 

৬। সেচ যন্ত্রপাতি —

* সেউতি

* দোন

* ঝাঝড়া

* টিউবওয়েল

* ট্রেডেল পাম্প

* পাওয়ার পাম্প

* অগভীর নলকূপ

* গভীর নলকূপ

 

৭। আপদনাশক ব্যবহারের যন্ত্রপাতি —

* নেপসেক স্প্রেয়ার

* পাওয়ার স্প্রেয়ার

* সিড ড্রেসার

* এরোপ্লেন

৮। কর্তন, মাড়াই, ঝাড়াই ইত্যাদি যন্ত্রপাতি

* কাস্তে * চালনি

* কোদাল * ডালি

* পেডেল থ্রেসার * ঝাটা

* ঘানি * গ্রেইন কালেক্টর

* ইক্ষু মাড়াই কল * কর্ণ সেলার

* কুলা

 

হাঁস—মুরগির খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি হাঁস—মুরগির খামারে যে সব প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ব্যবহৃত হয় সেগুলো হলো ঃ

* মুরগিকে খাবার দেয়ার জন্য খাবার পাত্র * থামোর্মিটার

* পানির পাত্র * কাঁকর ও ঝিনুকের খোসা রাখার পাত্র

* ডিম পাড়ার বা* * স্প্রেয়ার

* ওজন করার ব্যালেন্স * হারিকেন বাতি

* ডিম গ্রেডিং এর যন্ত্র * ওজন মাপার যন্ত্র

* মুরগি স্থানান্তরের খাঁচা * কোদাল

* ডিম রাখার পাত্র * খুরপি

* খাদ্য মিশানোর যন্ত্র * বালতি

* হাইগ্রোমিটার * ঠেঁাট কাটার যন্ত্র।

 

খামারে ডিম ফুটানোর যন্ত্রপাতি

* ইনকিউবেটর

* জেনারেটর

* ড্রাই বাল্ব ওয়েট বাল্ব থার্মোমিটার

 

ব্রয়লার খামারের যন্ত্রপাতি

* ব্রুডার বা তাপায়নের যন্ত্র

* চিকগার্ড

* ডিম পরীক্ষার বাতি

* ডিম মাপার ব্যালেন্স

* টেবিল

 

গবাদি পশুর খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি

গবাদি পশুর খামারে নিম্নলিখিত যন্ত্রপাতি থাকা আবশ্যক ঃ

* মিল্কিং পেইল * ম্যানুয়েল গ্রাস্ চপিং মেশিন

* দুধ মাপার বাকেট * সার্ভিস ষ্টকার

* দুধের বড় বাকেট * পানি তাপ দেয়ার হিটার

* দুধ মাপার ব্যালেন্স * স্টাজ পাম্প

* নাড়ন কাঠি * ঘর্ণায়নমান ক্রেনূ

* ড্রাম বা দুধ পাত্র * পেডেল থ্রেসার

* ছাঁকনি * কর্ণ সেলার

* দুধ দোহনের যন্ত্র * খাদ্য বহনের ট্রলি

* রি*া বা ভ্যানগাড়ী * পশু মাপার যন্ত্র

* ফিডিং বোতল * হোস পাইপ

* হুইল বারো * পানির পাত্র

* ইলেকট্রিক গ্রাস্ চপিং মেশিন * খাদ্য মাপার যন্ত্র

* দানা খাদ্য মিশানোর যন্ত্র

 

ভেড়ার শেয়ারিং করার যন্ত্রপাতি ডিহর্ণিং করার যন্ত্রপাতি

* পাওয়ার ড্রাইভেন শেয়ারিং মেশিন * ইলেকট্রিক ডি হর্ণার

* ক্লিপার বা হ্যান্ড শেয়ার * হর্ণ শেয়ার

 

খোজা করার যন্ত্রপাতি

* বার্ডিজোস ক্যাস্ট্রেটর * ডাইলেটর

* ধারালো চাকু * ফরসেপ

* রাবার রিং * রেজার গরু বা ঘোড়াকে নাল বা জুতা পরানোর যন্ত্রপাতি

* বাসপ্

* হাতুরি

* ড্রইং নাইফ

* চিমটা * টোইং নাইফ

* বাকার

 

মৎস্য খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি

* জেনারেটর

* অ*িজেন মিটার

* পি. এইচ. মিটার

* এয়ারেটর

 

মাছের কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি

* ইনজেকশনের সিরিঞ্জ এবং নিড্ল

* প্লাষ্টিকের গামলা মৎস্য প্রজনন হ্যাচারিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি

* ৩ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপযুক্ত অগভীর নলকুপ

* ইলেকট্রিক পাম্প — ২২০ ভোল্ট, ১.৫ অশ্ব শক্তি, ১৫ মিটার উচ্চতায় ১২০ লিটার পানি তুলতে সক্ষম।

* অ*িজেন টাওয়ার মাছ ধরার যন্ত্রপাতি

* বেহুন্দি জাল

* বড়শি

* ভাসান জাল

* ফিডিং ট্রে

* স্প্রে মেশিন

* রিফ্রেক্ট্রোমিটার

* এ*েল পাম্প

* হোমোজিনাইজার

* সেন্ট্রিফিউজ

* ইনকিউবেশন বোতল

* পানির ট্যাঙ্ক বা জলাধার

* পানির চৌবাচা

* হাপা

* ঝাকি জাল * ঠেলা জাল

* চাই

* শিব জাল বা ধর্ম জাল।

 

বাংলাদেশের বিভিন্ন সেচ প্রকল্প:

গঙ্গা – কপোতাক্ষ প্রকল্প :

কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারার কাছে পদ্মা নদী থেকে পানি তুলে খালের সাহায্যে বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনা জেলাসমূহের ব্যাপক অঞ্চলে সেচ দেয়ার উদ্দেশ্যে গঙ্গাকপোতাক্ষ প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য পানি সেচ হলেও বন্যা নিয়ন্ত্রণণ ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নেও বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারার কাছে পদ্মা নদী থেকে পানি তুলে খালের সাহায্যে বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনা জেলাসমূহের ব্যাপক অঞ্চলে সেচ দেয়ার উদ্দেশ্যে এ প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে ৮৪ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্য উৎপন্ন হবে।

এ প্রকল্পটি তিনটি ইউনিটে বিভক্ত। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে পদ্মাতীরে ভেড়ামারার কাছে একটি পাম্প ষ্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। এই পাম্প গুলো পরিচালনার জন্য ৮২০০ কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। এ প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য পানি সেচ হলেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নেও বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।

 

কর্ণফুলী বহুমুখী প্রকল্প :

কর্ণফুলী বহুমুখী প্রকল্প প্রধানত বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প হলেও এর সাহায্যে কর্ণফুলী নদীর নিম্নাঞ্চলের বন্যা নিয়ন্ত্রণ, প্রায় ৬৫০ি কলোমিটার নৌচলাচলের সুব্যবস্থা এবং ৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া যায়। এটি একটি বহুমুখী প্রকল্প। এটি প্রধানত বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প হলেও এর সাহায্যে কর্ণফুলী নদীর নিম্নাঞ্চলের বন্যা নিয়ন্ত্রণ, প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার নৌচলাচলের সুব্যবস্থা এবং ৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া যায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীর উপর ৪৬.৬ মিটার উঁচু, ৬৬০ মিটার দীর্ঘ এবং ২৪০ মিটার চওড়া একটি বাঁধ দিয়ে এ প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে। এ কৃত্রিম হ্রদের পানির সাহায্যে রাঙ্গুনিয়া অঞ্চলে বছরে বর্তমানে দু’টি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। এ হ্রদ থেকে বর্তমানে প্রতি বছর ৫ হাজার টনেরও বেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে।

 

উত্তরবঙ্গ গভীর নলকূপ প্রকল্প:

এ প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের উত্তরাঞ্চলে চারটি বৃহত্তর জেলা — রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া ও দিনাজপুরে ৩৬০ টি গভীর নলকূপ এবং ৭৬০ টি পাওয়ার পাম্পের সাহায্যে মহানন্দা ও বড়াল নদীর পানি দিয়ে ১ লক্ষ হেক্টর জমিতে পানির সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ অঞ্চলে বাৎসরিক বৃষ্টিপাত কম এবং শীতকালে নদীতে পানি খুব কম পরিমাণে থাকে। তাই এ এলাকায় সেচের জন্য গভীর নলকূপ এবং পাওয়ার পাম্পই বেশি কার্যকরী। এছাড়াও ১০,৫০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বিশিষ্ট একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও চাষের জমিতে পানি সরবরাহের উপযোগী নালা, প্রধান নালা থেকে ফিল্ড নালা এবং প্লট নালাও এ প্রকল্পের অন্তভূর্ক্ত।

 

চাঁদপুর সেচ প্রকল্প

এটি কুমিল­া—চট্টগ্রাম বহুমুখী প্রকল্পের অংশ বিশেষ। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য চাঁদপুর এলাকার কৃষকদের দীর্ঘদিনের অসুবিধাসম হের অবসান ঘটানো এবং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি সাধন। চাঁদপুর প্রকল্প উত্তর দক্ষিণে দু’ভাগে বিভক্ত। উত্তরাংশে রয়েছে ফরিদগঞ্জ, রায়পুর থানা, রামপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার অংশবিশেষ। এ বহুমুখী প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বন্যা নিরোধ বাঁধ নিমার্ণ এবং বহু সংখ্যক পাম্পিং ষ্টেশন। এ পাম্পিং ষ্টেশনের কাজ প্রয়োজনের সময় জমিতে সেচ প্রদান করা এবং বর্ষার সময় অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করা। এ প্রকল্পের অধিনে জমির পরিমাণ প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টর।

 

 

উপকূলীয় বাঁধ পুনর্বাসন প্রকল্প

এটি একটি বহুমুখী প্রকল্প। বন্যা প্রতিরোধের জন্য এখানে উপক ল বরাবর ৩৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। úুইস গেইটের মাধ্যমে এখানে পানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ১৯৬৮ সনে এ প্রকল্প চালু হয় এবং ৪৭,০০০ হেক্টর জমি পুনরুদ্ধার করে সেচ প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসল উৎপন্ন করা হয়।

 

গোমতী প্রকল্প

গোমতী নদীর বন্যার ফলে দীর্ঘদিন ধরে প্রতি বছর নদী তীরবর্তী অঞ্চল সমূহের মানুষের জীবন ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছিল। এ অবস্থা নিরসনকল্পে প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে লর্ড কর্ণওয়ালিসের সময় গোমতীর তীরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এ বাঁধ প্রথম দিকে প্রায়ই ভেঙ্গে যায় ফলে গোমতী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এটি একদিকে বন্যা নিরোধ এবং অন্যদিকে সেচ প্রকল্প হিসেবে কাজ করে। এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে প্রায় ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা যাবে।

 

ঢাকা—নারায়ণগঞ্জ—ডেমরা সেচ প্রকল্প

এ প্রকল্প ঢাকা শহরের দক্ষিণ—পূর্বে অবস্থিত। এ প্রকল্প এলাকার পূর্বে শীতলক্ষ্যা নদী, দক্ষিণে নারায়ণগঞ্জ শহর, পশ্চিমে বুড়িগঙ্গা নদী এবং উত্তরে ধোলাইখাল। এ প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৬ হাজার হেক্টর চাষাবাদের উপযোগী। এ উদ্দেশ্যে প্রতি সেকেন্ডে ১২৮ ঘনফুট পানি তোলার ক্ষমতা বিশিষ্ট ৪টি পাম্প বসানো এবং ১১ কিলোমিটার লম্বা সেচ খালের উপর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তিস্তা বাঁধ প্রকল্প এ প্রকল্প অনুযায়ী রংপুর জেলার গাদামারী নামক স্থানে তিস্তা নদীতে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।

এ প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর ও বগুড়া জেলার প্রায় সাত লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা যাবে। এতে কতকগুলো úুইস গেইট দিয়ে পানির উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সেচের প্রয়োজন হলে úুইস গেইট বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।

এই পানি তখন নালা দিয়ে জমিতে গিয়ে পড়ে। ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিরোধ বাঁধ প্রকল্প রংপুর,বগুড়া ও পাবনা জেলার এক বিস্তির্ণ অঞ্চল প্রায় প্রতি বছরই তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙ্গনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থা নিরসনকল্পে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিরোধ বাঁধ পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই বাঁধের ফলে প্রায় ২ লক্ষ হেক্টর জমি বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাবে।
এই বাঁধের বিভিন্ন স্থানে পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য আটটি রেগুলেটর বসানো হয়েছে।

 

বরিশাল সেচ প্রকল্প

জমিতে সেচ দিয়ে ফসল উৎপাদনের জন্যই এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে ১৯৮০ সন হতে ৫৬,৬৬০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯৮৫ সন হতে আরও ৪৮,৫৬০ হেক্টর জমিতে এ প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়।

 

 

বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের গুরুত্ব

বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের গুরুত্ব – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশের উপাদান” বিষয়ের ইউনিট ৩ এর ৩.১ নং পাঠ।

বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের গুরুত্ব

কৃষি উন্নয়নে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের অবদান অনস্বীকার্য। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। সেসব দেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ শুধু শ্রম শক্তির লাঘবই করেনি বরং ফসলের উৎপাদন খরচ কমিয়ে তার ফলন ও গুনাগুণ বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। অল্প শ্রম, অল্প সময়, অল্প ব্যয় ও অধিক দক্ষতার সাথে খামারে কাজ করতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সে তুলনায় বাংলাদেশ এখনও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় রয়ে গেছে।

অল্প শ্রম, অল্প সময়, অল্প ব্যয় ও অধিক দক্ষতার সাথে খামারে কাজ করতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জনসংখ্যার ক্রম বৃদ্ধির ফলে ফসলের জমির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে। এই ক্রমবর্ধমান বাড়তি মুখের খাবার যোগান দিতে সীমিত জমিতে প্রচলিত শস্য চাষ রীতি পরিবর্তন করে উৎপাদন বর্ধক শস্য চাষ রীতি অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে হলে কৃষি যান্ত্রিকীকরণসহ উন্নত চাষাবাদ প্রণালী অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।

১৯২৮ সন হতে এ উপমহাদেশে আংশিক খামার যান্ত্রিকীকরণের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। ১৯২৮ সনের “রাজকীয় কৃষি কমিশন”, ১৯৪৫ সনের “দুর্ভিক্ষ অনুসন্ধানী কমিশন”, ১৯৫১ সনের “পাকিস্তান কৃষি অনুসন্ধানী কমিটি”, ১৯৬০ সনের “খাদ্য ও কৃষি কমিশন” এবং পরবর্তীতে স্বাধীনতা উত্তরকালে “খামার যান্ত্রিকীকরণ কমিটি” দেশে ভূমি কর্ষণ, সেচ ও শস্য সংরক্ষণ এ তিন বিষয়ে বিশেষভাবে যান্ত্রিকীকরণের সুপারিশ করে।

 

কৃষি যান্ত্রিকীকরণ কী?

কৃষিক্ষেত্রে বর্ধিত হারে ফসল উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ প্রভৃতি কাজে যন্ত্র শক্তির ব্যবহারকে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বলে। কৃষিক্ষেত্রে বর্ধিত হারে ফসল উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ প্রভৃতি কাজে যন্ত্রশক্তির ব্যবহারকে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বলে। এক্ষেত্রে যন্ত্রশক্তি বলতে মেশিন এবং ইঞ্জিন উভয়কে বোঝায়। যান্ত্রিকীকরণ দু’ধরনের হতে পারে পর্ণ এবং আংশিক। কৃষি ক্ষেত্রে সমুদয় কার্যাদি যখন যূ ন্ত্রশক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয় তখন তাকে পূর্ণ যান্ত্রিকীকরণ বলা হয়। পক্ষান্তরে ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ কতকগুলো কাজ যন্ত্রের সাহায্যে সম্পন্ন করলে তাকে আংশিক কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বলে। বাংলাদেশের আবহাওয়া, কৃষকের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সরকারের সক্রিয় সহযোগিতায় বর্তমানে এখানে আংশিক কৃষি যান্ত্রিকীকরণ শুরু হয়েছে।

 

কৃষি যান্ত্রিকীকরণের গুরুত্ব

কৃষি যান্ত্রিকীকরণের গুরুত্ব অপরিসীম। সুবিধা, অসুবিধা এবং আর্থ সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে দেশে কোন কোন ক্ষেত্রে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব আছে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:

 

বীজ উৎপাদন খামারের জন্য

বীজ কৃষির অন্যতম প্রধান উপকরণ। উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় বিবিধ কারণে বীজের মান কমে যেতে পারে। এসব কাজ সাফল্যজনকভাবে কৃষি যন্ত্রপাতির সাহায্যে বিভিন্ন বীজ বর্ধন খামারে অনায়াসে করা যেতে পারে।

 

কৃষি গবেষণাগারের জন্য

বিভিন্ন কৃষি গবেষণাগার এবং কৃষি শিক্ষার বিদ্যাপিঠে অবশ্যই বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতির সরবরাহ ও ব্যবহার থাকতে হবে। কৃষি উন্নয়নে চাই উপযুক্ত প্রযুক্তি। এসব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের এবং কৃষি শিক্ষায় ছাত্রদের শিক্ষিত করে তুলতে গবেষণাগার ও বিদ্যাপিঠে কৃষি যন্ত্রপাতির সরবরাহ অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

 

কৃষক পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য যন্ত্রপাতি :

কৃষক পর্যায়ে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার সম্ভব:

ক. জমি চাষ

বাংলাদেশে বছরে তিনবার জমি চাষের ব্যস্ত সময় লক্ষ্য করা যায় ।

* মার্চের প্রথম সপ্তাহ হতে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ।

* জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ হতে আগষ্টের তৃতীয় সপ্তাহ।

* নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ হতে মধ্য জানুয়ারী পর্যন্ত ।

দেশে বর্তমানে চাষের বলদের অভাব শতকরা ৪০ ভাগ এবং বছরের ব্যস্ত সময়ে এ অভাব দাঁড়ায় ৭০ ভাগে। দেশে বর্তমানে চাষের বলদের অভাব শতকরা ৪০ ভাগ এবং উপরোক্ত ব্যস্ত সময়ে এ অভাব দাঁড়ায় ৭০ ভাগে। গরুর ভাল জাত, খাদ্য ও চিকিৎসার অভাব, চারণভূমির অভাব এবং বিভিন্ন সময়ের বন্যায় গবাদি পশুর মৃত্যুর ফলে কৃষিক্ষেত্রে পশুশক্তির অভাব বেড়েই চলছে। তাছাড়া যে সকল কৃষকের চাষের বলদ আছে তারা দু’ফসলের মধ্যবর্তী এত কম সময়ে তড়িঘড়ি করে সঠিকভাবে জমি চাষ করতে পারেনা। ফলে ফসলের ফলনও ভাল হয়না। এসব কারণে দেশে পাওয়ার টিলারের চাহিদা বেড়েই চলছে।

পাওয়ার টিলার ব্যবহারের ফলে ব্যস্ত সময়ে জমি চাষ করতে কোন অসুবিধা হচ্ছেনা বরং অল্প সময়ে কৃষক বেশি গভীরতায় জমি চাষ করে বেশি ফলন পাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন বীজ বর্ধন খামার ও গবেষণা ইনষ্টিটিউটে এবং কিছু সংখ্যক ধনী কৃষক তাদের খামারে বিভিন্নঅশ্বশক্তির ট্রাক্টর প্লাউ ব্যবহার করছে এবং দিন দিন এদের ব্যবহার বেড়েই চলেছে।

 

খ. বীজ বপন

বীজ বপন করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট হতে বীজ বপন যন্ত্র আবিষ্কার করা হয়েছে যা গবেষণাগারে, বীজ বর্ধন খামারে এবং কৃষকের মাঠে ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি কৃষকেরা এখন বীজ বপন যন্ত্র সরবরাহের জন্য আবেদন জানাচ্ছে।

 

গ.আগাছা দমন

আগাছা দমনের বিভিন্ন নিড়ানী যন্ত্র যেমন জাপানী ধান নিড়ানীযন্ত্র কৃষকেরা এখন নিজেদের ফসলী জমিতে ব্যাপক হারে ব্যবহার করছে। হ্যাম্পর‌্যাক, গার্ডেন র‌্যাক ইত্যাদিও আজকাল আগাছা দমনের জন্য কিচেন গার্ডেনে ব্যবহৃত হচ্ছে।

 

ঘ. সেচ প্রয়োগ

কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রসার লাভ করেছে বিভিন্ন সেচ যন্ত্রপাতি। ফসলের পানির চাহিদা মেটাতে দেশীয় সেচ পদ্ধতি অতিরিক্ত ফসল ফলানোর জন্য যথেষ্ট নয়। তাই যান্ত্রিক পদ্ধতিতে সেচ প্রয়োগ আজ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রসার লাভ করেছে বিভিন্ন সেচ যন্ত্রপাতি। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে খাল, বিল, নদী এবং ভূ—গর্ভ হতে পানি তুলে ফসলের জমিতে দেয়া হচ্ছে এবং সেচের আওতায় দিন দিন ফসলী জমির পরিমাণ বাড়ছে।

বিভিন্ন সেচ যন্ত্রপাতি যা এদেশে ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলো হলো নলকূপ, ট্রেডেল পাম্প, পাওয়ার পাম্প, অগভীর নলকূপ এবং গভীর নলকূপ, ইত্যাদি। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর বা অগভীর নলকূপ তাদের নির্ধারিত সেচের আওতাভূক্ত জমিতে সেচ দিতে পারছেনা।

এ ক্ষেত্রে পাওয়ার পাম্প দক্ষতার সাথে নদী বা বিল হতে জমিতে সেচ দিতে পারে। সেচের আওতায় জমির পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকেরা বেশি পরিমাণ জমিতে ধান চাষ করছে। ফলে রবি মৌসুমে অন্যান্য ফসল বিশেষ করে ডাল ও মশলা জাতীয় ফসলের জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এতে যদিও ফসলের নিবিড়তা বাড়ছে কিন্তু অন্য ফসলের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে যার ফলে এসব ফসল বিদেশ থেকে আমদানি করে চাহিদা মিটাতে হচ্ছে ।

দেশের খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে হলে বেশি পরিমাণে জমি সেচের আওতায় আনতে হবে। আর তাই সেচ যন্ত্রপাতির চাহিদা এদেশে বাড়তেই থাকবে। ফসল উৎপাদনে সেচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। অতএব কৃষি যান্ত্রিকীকরণের এ উপকরণটি বিশেষ করে ফসল উৎপাদনে সেচ যন্ত্রপাতির গুরূত্ব অপরিসীম।

ঙ. ফসল সংরক্ষণ

আগাছা, রোগ ও পোকা—মাকড়ের আক্রমণ হতে জমির ফসল রক্ষার জন্য হস্ত চালিত ও শক্তিচালিত বিভিন্ন স্প্রেয়ার ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশে এদের ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। বর্তমানে এসব যন্ত্রপাতি আমাদের দেশেই তৈরি হচ্ছে। উঁচু গাছে ঔষধ দেবার জন্য উচ্চ চাপের স্প্রেয়ার তৈরি করা হয়েছে যা দেশের উত্তরাঞ্চলের আম বাগানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিভাগ বিস্তীর্ণ এলাকায় কীটনাশক বা আপদনাশক প্রয়োগের জন্য ছোট ছোট উড়োজাহাজ ব্যবহার করে থাকে।

 

চ. মাড়াই ও প্রক্রিয়াকরণ

আউশ ও বোরো ধান কাটার পর বৃষ্টি হলে অনেক সময় মাড়াই কাজের বিঘ্ন ঘটে। পদচালিত মাড়াই যন্ত্র (চধফফষব ঃযৎবংযবৎ) এক্ষেত্রে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ মাড়াই যন্ত্র তৈরি হচ্ছে। যেখানে আগে গরু দিয়ে মাড়াই কাজ করা হতো, গরু কমে যাওয়ায় এসব কাজ এখন পদচালিত মাড়াই যন্ত্রের সাহায্যে করা হয়। শুধু তাই নয়, গম মাড়াই যন্ত্রের উদ্ভাবনের চেষ্টাও দেশে চল্ছে। ধান, সরিষা ও মশলা যেগুলো ঢেঁকি কিংবা ঘানির সাহায্যে ভাঙ্গানো হতো এখন এসব কাজ মেশিনের সাহায্যে করা হচ্ছে এবং বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে এখন এসব মিল চালু হয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে কৃষি কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের সম্ভাব্য বেকারত্ব।


কৃষি যান্ত্রিকীকরণের বড় সুবিধা এই যে অল্প সময়ে, কম শ্রমিক দিয়ে, দক্ষতার সাথে, কম খরচে অধিক ফসল ফলানো সম্ভব। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে কৃষি কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের সম্ভাব্য বেকারত্ব। দেশের অর্ধেকেরও বেশি শ্রমিক কৃষি শিল্পে নিয়োজিত। দেশে কৃষি ক্ষেত্রে পূর্ণ যান্ত্রিকীকরণ হলে অধিকাংশ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলদেশে আংশিক যান্ত্রিকীকরণই শ্রেয়। দেশের পরিবেশের কথা বিবেচনা করে দেশীয় প্রযুক্তি দিয়ে উদ্ভাবিত যন্ত্রপাতি কৃষি ক্ষেত্রে বেশি লাগসই হবে বলে বিবেচিত। তাই কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

শুধু তাই নয় এসব যন্ত্রপাতির খুচরা যন্ত্রাংশ যেন সহজেই হাতের কাছে পাওয়া যায় সে ব্যাপারেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তাই দেশে খুচরা যন্ত্রাংশ উৎপাদনের কারখানা করতে হবে নতুবা যেসব কৃষি যš পাতি বিদেশ হতে আমদানি করা হয় তাদের খুচরা যন্ত্রাংশও যেন কৃষক সব সময় হাতের কাছে পায় সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।

 

বাংলাদেশের বনজ সম্পদের গুরুত্ব

বাংলাদেশের বনজ সম্পদের গুরুত্ব – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশের উপাদান” বিষয়ের ইউনিট ২ এর ২.৫ নং পাঠ। বাংলাদেশের বনজ সম্পদ জাতীয় অর্থনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। প্রাথমিকভাবে বনজ সম্পদ হতে আমরা কাঠ, খুটি, জ্বালানী কাঠ ও শিল্পের কাচাঁমাল পেয়ে থাকি। বন বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ও পাখির আশ্রয় কেন্দ্র।

বাংলাদেশের বনজ সম্পদের গুরুত্ব

 

বান্দরবান

 

এছাড়া গাছপালা ঝড় প্রতিরোধ করে, বাতাসের ক্ষতিকারক উপাদান গুলোকে শোষন করে মানুষ ও পশু পাখির জন্য নির্মল বায়ু সরবরাহ করে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা উদ্ভিদের এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বন পরিবেশতন্ত্রের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ঐ এলাকায় জৈব ও অজৈব উপাদানের মাঝে সমতা রক্ষা করে। কোন দেশের সুষম কৃষি শিল্পায়নসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সে দেশের স্থলভাগের কমপক্ষে ২৫% জমি বন দ্বারা আচ্ছাদিত থাকা বাঞ্ছনীয়। বাংলাদেশে বর্তমানে মোট বনভূমি ১৮% এবং প্রকৃত বনভূমি ১২% এর নীচে বলে অনুমিত হচ্ছে।

কোন দেশের সুষম কৃষি ও শিল্পায়নসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সে দেশের স্থলভাগের কমপক্ষে ২৫% জমি বন দ্বারা আচ্ছাদিত থাকা বাঞ্ছনীয়। বনের সাথে পরিবেশের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। কেননা আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান যেমন তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, মাটি ও পানির বৈশিষ্ট্যাবলীর উপর বনের প্রভাব অপরিসীম। বাংলাদেশের সঠিক বনভূমির পরিসংখ্যান বলা কষ্টসাধ্য। তবে বনসম্পদ যে ধ্বংস হচ্ছে তা সহজেই চোখে পড়ে। কাগজে কলমে বনসম্পদ উজাড় হবার পরিমাণ কম হলেও বাস্তবে তা অনেক বেশি।

 

চুন্দুল বৃক্ষ

 

স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও টাঙ্গাইলের বহু বন—সম্পদ ধ্বংস করা হয়। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে বহিরাগত ও উপজাতিরা পাহাড় ও টিলার জঙ্গল পরিস্কার করে চাষের জমি তৈরি করে। বর্তমানে সেসব জায়গা ধান, আনারস, পান, সুপারি, আদা, রশুন ও বিভিন্ন সব্জি চাষের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে মোট বনভূমি ১৮% এবং প্রকৃত বনভূমি ১২% এর নিচে বলে অনুমিত হচ্ছে। বন—সম্পদ ও পরিবেশ ধ্বংস করার ফলে বাংলাদেশে বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা যাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে গাছপালা কাটার কারণে জমির উর্বরতা শক্তি ও মাটির আর্দ্রতা হ্রাস পাচ্ছে।

তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ও বায়ুমন্ডলীয় জলীয় বাে¯žর তারতম্য ঘটায় সর্বত্র কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ইতিমধ্যে মরুকরণ শুরু হয়েছে এবং দিন দিন এর বি¯ ৃতি ঘটছে। সবুজ গাছপালা ও নানাবিধ জীবজন্তু অত্যধিক হারে ধ্বংস করার ফলে এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক ও জৈবিক পরিবেশ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে এদেশে শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগই নয় নানা ধরনের নতুন নতুন রোগের প্রাদুর্ভাবও ঘটছে। আভিধানিক অর্থে কৃষিজ বনায়ন হলো কৃষির পাশাপাশি বা কৃষির সাহচর্যে বনায়ন গড়ে তোলা।

 

 

একদিকে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরদিকে ব্যাপক বনাঞ্চল হ্রাস এবং সেই সাথে বিভিন্ন প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ প্রজাতির বিলুপ্তিতে বাংলাদেশের পরিবেশগত ভারসাম্য আজ এক মারাত্বক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। বন সৃষ্টি করার মত ফাঁকা জায়গা পাওয়া মুশকিল। ইচ্ছা করলেও ফসল উৎপাদন বাদ রেখে সেখানে বনাঞ্চল সৃষ্টি করা প্রায় অসম্ভব যদিও গাছপালার অবদান অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তাই বৃক্ষ রোপনের জন্য দরকার সরকারের সঠিক নীতি ও কর্মকৌশল এবং বিজ্ঞানসম্মত কর্মসূচি গ্রহন। কৃষিজ বনায়ন এর মাধ্যমে এ সমস্যা হতে উত্তরণ সম্ভব এবং একাজ ইতিমধ্যেই এদেশে শুরু হয়েছে। আভিধানিক অর্থে কৃষিজ বনায়ন হলো কৃষির পাশাপাশি বা কৃষির সাহচর্যে বনায়ন গড়ে তোলা। একে তিন ধারায় ভাগ করা যেতে পারে —

১. কৃষিজ বনায়ন ধারা :

ক. কাষ্ঠল উদ্ভিদের সাথে ফসলের চাষ

খ. বৃক্ষের সারির সাথে অথবা বৃক্ষের নীচে ফসলের চাষ

গ. বসতবাটীস্থ বাগান

 

২. বনায়ন চারণ ধারা ঃ

ক. বহু বর্ষজীবি উদ্ভিদের মাঝে পশু পালন

খ. কাষ্ঠল উদ্ভিদের সাথে চারণ উদ্যান

গ. কাষ্ঠল উদ্ভিদের সাথে মুক্ত মুরগির চাষ

 

৩.কৃষিজ বনায়ণ চারণ ধারা ঃ

ক. একসাথে বহু বর্ষজীবি কাষ্ঠল উদ্ভিদ, পশু এবং ফসলের চাষ

খ.বসত বাটীস্থ বাগান যে সব স্থানে কৃষিজ বনায়ন করা যেতে পারে সে স্থানগুলো হলো ঃ

ক. পতিত ভূমি ও বালিময় নীচু ও উঁচু এলাকা

খ. রাস্তা, রেলপথ ও বাঁধের দু’ধার

গ. নদীর তীর ও পুকুর পাড়

ঘ. সর্ব সাধারণের ব্যবহারযোগ্য স্থান যথা হাট, বাজার ইত্যাদি

ঙ. অফিস, কলকারখানা, স্কুল, কলেজ ও উপাসনালয় প্রাঙ্গণ

চ. বসত বাড়ির আঙ্গিনা

ছ. মাঠ ফসলের ক্ষেত

 

সিভিট বৃক্ষ

 

পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন বৃক্ষের পরিচিতি পরিবেশের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য বৃক্ষের অবদান অপরিসীম। ঘরের খুটি, আসবাব পত্র, নৌকা, গরুর গাড়ী, খেলনা, শিল্পের কাচামাল, জ্বালানি এবং মাটিতে জৈব পদার্থ যোগান দেয়া ইত্যাদি বহুবিধ কাজে বৃক্ষের ব্যবহার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাছাড়া কিছু কিছু গাছ রং উৎপাদন, কিছু গাছ ঔষধ, আঠা ও রজন তৈরিতে এবং রাবার গাছ রাবার উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের বন সৃষ্টি হয়েছে।

এগুলো হলো পাহাড়ী বন, ম্যানগ্রোভ বন এবং শালবন। এসব বনাঞ্চলে যেসব উদ্ভিদ জন্মে সে সম্বন্ধে নিম্নে আলোচনা করা হলো। পাহাড়ী বন গ্রীষ্মমন্ডলীয় এই চিরসবুজ ও আধা চিরসবুজ বন প্রধাণতঃ গর্জন, সিভিট ও জারুল, ইত্যাদি জাতীয় বৃক্ষের সমন্বয়ে গঠিত। এ বন চট্টগাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত। এখানকার বৃক্ষের মধ্যে সেগুন, গামার, জারুল, পিতরাজ, চাম, কড়ই, লোহা কাঠ, গর্জন, তেলসুর, বয়লাম, পিটলি, বহেরা, ছাতিম, কামদেব, গুটগুটিয়া, হারগোজা, বাজরং, সিভিট, রতা, ডালি, উদল, কুমড়া, বাদি, খার্পাত, অজুর্ন, চম্পক, পানিসাজ, বাটনা, ময়না, নিওল, ভাদি, কুসুম, হিংগুরি, বুরুনা, ঢাকওয়া, হোলা, মালাগিরি, চিকরাসি, ধর্মরা, বনসুম, রক্তোন, কালদা, ছেলফোই, কোম, কাইনজল, বাহাল, কাহিবাং, ডাকরুম, বন্দর ফেলা ইত্যাদি উলে­খযোগ্য। এ ছাড়া এসব অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে বাঁশও জন্মে।

 

ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরী, গেওয়া প্রভৃতি ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদ সমৃদ্ধ এ বনাঞ্চল খুলনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম সমুদ্রতট এলাকায় বিস্তৃত। এখানকার প্রধান বৃক্ষ হলো সুন্দরী, গেওয়া, গোরান, কেওরা, ভারা, পশুর, ক্যাংকারা, বোয়েন, গরান, দুন্দাল, গোলপাতা ইত্যাদি। শালবন শাল বা গজারী বৃক্ষ এবং অন্যান্য চিরসবুজ ও পত্র পতনশীল বৃক্ষ সমন্বয়ে সৃষ্ট বন প্রধানতঃ গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ জেলায় এবং বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় বিরাজমান। কাঠ উৎপাদক গাছ শাল, কড়ই, সোনালু, শিশু, খয়ের, বহেরা, হরিতকী, ছামি, কাঁঠাল, জাম, জামরুল, বাবুল, বেল, মহুয়া, কদম, শিমুল, আম, নিম, তেতুল, ইত্যাদি এখানে ভাল জন্মে ।

অর্থনৈতিকভাবে মূল্যবান কোন গাছ কী কাজে ব্যবহৃত হয় তার কিছু উদাহরণ নিম্নে দেওয়া হলো: কাঠ ও জ্বালানি উৎপাদক বৃক্ষ অর্জুন, অশোক, নিম, আম, আমলা, আমরা, ইপিল ইপিল, ইউক্যালিপটাস, কথবেল, কড়ই, কদম, কনক চাঁপা, কপুর্র, কাঠচাপা, কামরাঙ্গা, কাঠাল, কাঞ্চণ, কুকুর চিতা, কুম্ভি, কুল, গর্জন, গাব, গামার, গেওয়া, গোলমহর, চাঁপা, চালতা, ছাতিম, জাম, জারুল, জিওল, ডেউয়া, তাল, তেতুল, নিম, নিসিন্দা, পিতরাজ, পিটালি, পেয়ারা, বট, বরুন, বহেরা, বাবুল, বাঁশ, বেল, মান্দার, মেহগিনি, রঞ্জন, রিঠা, লিচু, শাল, শিমুল, শিশু, শিরিশ, শ্যাওড়া, সুপারি, সুন্দরী, সেগুন, হরিতকী, হিজল ইত্যাদি।

 

 

বিভিন্ন শিল্প ও অন্যান্য কার্যে ব্যবহৃত গাছ:

বাড়ীঘর তৈরিতে গাছ :

সেগুন, কড়ই, জারুল, সুন্দরী, গামার, গর্জন, চাপলাশ, বইলাস, সোনালু, পসুর, শিশির, আম, জাম, কাঠাল, শিশু, তাল ইত্যাদি।

ঠেলা ও গরুর গাড়ী তৈরিতে গাছ :

বাবুল, শিশু, সুন্দরী, গর্জন, পিতরাজ, শাল, জাম, কুসুম, জারুল, খয়ের, নাগেশ্বর, বহেরা, হরিতকী, কড়ই, দেবদারু, বাঁশ, ইত্যাদি।

নৌকা তৈরিতে গাছ :

সেগুন, আম, জারুল, তেলসুর, গামার, শাল, বাবুল, কড়ই, শিশু, খয়ের, চাম্পা, ইত্যাদি।

কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরিতে গাছ :

বাবুল, জাম, শিশু, কড়ই, কুল, গাব, তেতুল , আম, লোহা কাঠ, কুসুম, শাল, জারুল,ইত্যাদি।

প্যাকিং বাক্স তৈরিতে গাছ :

ছাতিম, শিমুল, চাপলাশ, আমড়া, আম, তুন, চাম্পা, সিভিট, রক্তন, ময়না, সেলকোই, বাঁশ, ইত্যাদি।

নিউজপ্রিন্ট তৈরিতে গাছ :

গেওয়া , বাঁশ, নলখাগড়া, ইত্যাদি।

ম্যাচ বক্স তৈরিতে গাছ :

শিমুল, ছাতিম, পিটালী, নারিকেল, ইত্যাদি।

যন্ত্রাদীর হাতল, বাট তৈরিতে গাছ :

শিশু, বাবুল, সেগুন, সুন্দরী, গামার, কুল, ইত্যাদি।

বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে গাছ :

সেগুন, তুন, গামার, শিশু, শিরিশ, ইত্যাদি। পেন্সিল

ছাতার বাট, ছড়ি ও বিবিধ তৈরিতে গাছ :

ভূতুম, তুন, নিম, সিভিট, ইত্যাদি।

কুটির শিল্প দ্রব্য তৈরিতে গাছ :

শিশু, কুল, তাল, নারিকেল, বেত, বাঁশ, খেজুর, শিমুল, মনাগিরি, গামার, কাঞ্চন, ভূতুম, বেল, আম, গিনারি, কুটেশ্বর, ইত্যাদি। রং উৎপাদনকারী গাছ রং ও ট্যানিন উৎপাদনকারী গাছের মধ্যে লটকন, খয়ের, নীল, বোককান, জাফরান, কুসুমফুল, বকম, ডিভি, সুপারি, গাব, আমলকি, বকুল, বহেরা, হরতকী ইত্যাদি উলে­খযোগ্য।

রবার, আঠা ও রজন উৎপাদনকারী গাছ:

রবার, সফেদা, বুলেট বৃক্ষ, ওয়াক্স পাম, কলম্বিয়া ওয়াক্স পাম, গাম বেঞ্জামিন, বাবলা, অ্যাকাসিয়া, কাফিলা, ইত্যাদি ।

ঔষধি গাছ:

গাছরা বাসক, কালমেঘ, আপাঙ্গ, হাড়জোড়া, কাফিলা, আম, আমড়া, আতা, শরিফা, ছাতিম, কুচি, স্বর্পগন্ধ, কোহিলা, আকন্দ, অনন্তমূল, বাঁশ, সোনা, গলগল, চালমুগরা, শিমুল, বোহারি, খরপাত, বকফুল, জয়ন্তি, কুঁচ, জল করমচা, শিশু, মান্দার, পলাশ, অশোক, তেঁতুল, বোককান, বাঁদর লাঠি, কাঞ্চন, বরুণ, বহেরা, হরিতকী, অজুর্ন, চিল, চালতা, গাব, ভেরেন্ডা, আমলকি, কুকুর চিতা, তেজপাতা, হিজল, জারুল, নিম, বট, গোলাপজাম, কামরাঙ্গা, তাল, নারিকেল, সুপারি, লিচু, বকুল, সেগুন,গামার। এ ছাড়াও গুল্ম জাতীয় অনেক গাছ ঔষধি গাছরূপে ব্যবহৃত হয়।

 

রাতারগুল জলাবন

 

বনের অবদান:

১৯৯২—৯৩ অর্থ বছরে বন হতে ৮১.২২ লক্ষ ঘণফুট কাঠ, ৬৬.৬৩ লক্ষ ঘণফুট জ্বালানিকাঠ, ৬৭ হাজার মেট্রিক টন গোলপাতা, ১১.৯২ কোটি বাঁশ, ১.৮২ লক্ষ মেট্রিক টন মধু এবং ৩৬ হাজার মেট্রিক টন মোম পাওয়া যায় । বন হতে প্রাপ্ত দ্রব্যাদীর খতিয়ান নিম্নে দেয়া হলো। দেশের মোট অভ্যন্তরীণউৎপাদন (এউচ) —এর শতকরা প্রায় পাঁচ ভাগ বন এলাকা হতে আসে বলে অনুমিত। দেশের মোট শিল্প শ্রমিকের প্রায় শতকরা ২৫ ভাগ বন শিল্পে নিয়োজিত।

 

 

বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের অবদান

বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের অবদান – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশের উপাদান” বিষয়ের ইউনিট ২ এর ২.৪ নং পাঠ।

 

বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের অবদান

 

আমাদের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক। মাঠফসল ছাড়া আমাদের কৃষির প্রধান সাব—সেক্টরগুলো হ’লো পশুপাখি, মৎস্য এবং বনজ সম্পদ। পশুপাখি হতে আমরা দুধ, ডিম, মাংস, জৈব সার, জ্বালানি ও শ্রম শক্তি পাই।

তাছাড়া পশুর চামড়া রপ্তানি করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়। বাংলাদেশের প্রত্যেক বাড়িতেই কোন না কোন পশুপাখি পালন করা হয়। পাখির মধ্যে হাঁস, মুরগি, কবুতর, কোয়েল ও তিতির এবং পশুর মধ্যে গরূ, মহিষ, ছাগল এবং ভেড়াই প্রধান। তবে কেউ কেউ সখ করে ঘোড়াও পালন করেন। “মাছে—ভাতে বাঙ্গালী” কথাটি থেকে মাছের গুরুত্ব যথার্থই উপলব্ধি করা যায়। বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে মৎস্য চাষ বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। মৎস্য সম্পদ এদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ। নদীমাতৃক এই বাংলাদেশচ মৎস্য সম্পদের এক অফুরন্ত ভান্ডার।

আমাদের দেশে প্রাণিজ আমিষের প্রধান উৎস হচ্ছে মাছ। প্রাণিজ আমিষের শতকরা ৮০ ভাগ আসে মাছ থেকে। মাছে গড়ে প্রায় শতকরা ২০ ভাগ আমিষ আছে। আমাদের দেশে প্রাণিজ আমিষের প্রধান উৎস হচ্ছে মাছ। খাদ্য হিসেবে এর গুরুত্ব অত্যাধিক। শরীরের জন্য এ,ডি,সি খাদ্যপ্রাণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মাছ ‘এ’ ও ‘ডি’ খাদ্যপ্রাণ সমৃদ্ধ। মাছের চামড়ায় প্রচুর পরিমাণে খাদ্যপ্রাণ ‘সি’ রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপবিশিষ্ট রোগীদের জন্য ক্ষতিকারক কোলেষ্টেরল মাছে নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে প্রাণিজ আমিষের শতকরা ৮০ ভাগ আসে মাছ থেকে। মাছে গড়ে প্রায় শতকরা ২০ ভাগ আমিষ আছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১২ লক্ষ মেট্রিক টন মৎস্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ৯ লক্ষ মেট্রিক টন অভ্যন্তরীণ জলাশয় থেকে বাকি ৩ লক্ষ সামুদ্রিক এলাকা থেকে। এদেশের প্রায় ১২ লক্ষ লোক সার্বক্ষনিকভাবে এবং এক কোটি লোক খন্ডকালীনভাবে মাছ চাষ, মাছ ধরা, মাছ ব্যবসা ও জাল বুননের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এছাড়া মাছ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, সরবরাহ ও বেচাকেনার কাজেও অনেক লোক নিয়োজিত আছে অর্থাৎ মৎস্য স¤žদ মানুষের কর্ম সংস্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা পালন করে আসছে।

বাংলাদেশ হতে যেসব মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয় সেগুলো হলো হিমায়িত চিংড়ি, হিমায়িত মাছ, শুঁটকি, লবণাক্ত মাছ, হাঙ্গরের পাখনা, পোটকা, কচ্ছপ বা কাছিম এবং কাঁকড়া। ১৯৯৪—৯৫ সনে মৎস্য সম্পদ রপ্তানি করে বাংলাদেশ ১৩০৭ কোটি টাকা আয় করে। এ সময় মৎস্য সম্পদের অবদান ছিল জি.ডি.পি.তে ৪% এবং রপ্তানি আয়ে ১২% যা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। মৎস্য সম্পদের অবদান নিম্নে দেয়া হলো:

মাছ শুধু খাবার হিসেবে নয়, বরং এদের বর্জ্য যথা হাড়, পাখনা, অঁাইশ, নাড়ি—ভূড়ি ইত্যাদি পরিত্যক্ত অংশ দিয়ে ফিশমিল ও জৈব সার তৈরি করা যায়। এসব ফিশমিল হাঁস—মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সারমর্ম

বাংলাদেশের ১০% লোক মৎস্য সম্পদের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। মৎস্য সম্পদ রপ্তানি করে বাংলাদেশ ১৯৯৪—৯৫ সনে ১৩০৭ কোটি টাকা আয় করে। এসময়ে জিডি.পি. তে মৎস্য সম্পদের অবদান ছিল ৪% এবং রপ্তানি আয়ে ১২%।

 

 

 

বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের পরিচিতি ও পরিসংখ্যান

বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের পরিচিতি ও পরিসংখ্যান – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশের উপাদান” বিষয়ের ইউনিট ২ এর ২.৪ নং পাঠ।

বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের পরিচিতি ও পরিসংখ্যান

 

বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের চারটি উৎস রয়েছে। এগুলো হলো:

১। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়

২। অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়

৩। আধালোনা পানির জলাশয়

অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের মধ্যে রয়েছে নদী ও খাড়ি অঞ্চল, হাওর, বিল, হ্রদ এবং প্লাবনভূমি। বর্তমানে দেশে মোট মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ ৪০,৪৭,৩১৬ হেক্টর।

৪। সামুদ্রিক জলাশয় ।

অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয় মুক্ত এলাকার সঙ্গে যুক্ত জলাশয়কে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয় বলে। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের মধ্যে রয়েছে নদী ও খাড়ি অঞ্চল, হাওর, বিল, হ্রদ এবং প্লাবনভূমি। প্লাবনভূমি বর্ষাকালে পানিতে ভরে নদীর সাথে একাকার হয়ে যায় এবং শুকনো মৌসুমে জমিতে পরিনত হয় এবং তখন সেখানে ফসলের চাষাবাদ করা হয়। বিভিন্ন কারণে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের মাছের সংখ্যা ও উৎপাদন ক্রমাগত কমে যাচ্ছে।

বর্তমানে দেশে মোট মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ ৪০,৪৭,৩১৬ হেক্টর। অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয় যে সকল জলাশয় নদী, হাওর বা বিলের সাথে যুক্ত নয় এদেরকে অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয় বলে। অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়ের মধ্যে রয়েছে পুকুর, দিঘি, বাওর, ইত্যাদি। বর্তমানে দেশে মোট বদ্ধ জলাশয়ের পরিমাণ ১,৫২,৩৭৮ হেক্টর। আধালোনা পানির জলাশয় নদী ও সমুদ্রের সঙ্গমস্থলকে আধালোনা পানির জলাশয় বলে। এসব এলাকা নদীর পানিবাহিত পুষ্টিকারক ও সমুদ্রের পানির পুষ্টিকারক দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়। আধালোনা পানির জলাশয় যে কোন জলাশয়ের চেয়ে অধিক উৎপাদন ক্ষমতা স¤žন্ন হয়।

আমাদের দেশে আধালোনা পানি অঞ্চল সাতক্ষিরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত। উপকুলীয় চিংড়ি খামার এলাকা বা আধালোনা পানির জলাশয়ের আয়তন ২,৬০,০০০ হেক্টর। সামুদ্রিক জলাশয় সামুদ্রিক জলাশয়ের একান্ত অর্থনৈতিক এলাকা ২০০ নটিক্যাল মাইল এবং মহিসোপান ৮৫,১৫৩ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। আমাদের দেশের দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। এটি সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উৎস। সামুদ্রিক জলাশয়ের একান্ত অর্থনৈতিক এলাকা ২০০ নটিক্যাল মাইল এবং মহিসোপান ৮৫,১৫৩ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

সামুদ্রিক জলাশয়ে আর্টিশনাল ফিশারি ও ট্রলি ফিশারি দিয়ে মাছ ধরা হয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে প্রায় ২৬০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ আছে। এছাড়া এসব জলাশয়ে আরও ১২ প্রজাতির বিদেশী মাছ ও ২৪ প্রজাতির চিংড়ি মাছ আছে। মাছের প্রজাতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে প্রায় ২৬০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ আছে। এছাড়া এসব জলাশয়ে আরও ১২ প্রজাতির বিদেশী মাছ ও ২৪ প্রজাতির চিংড়ি মাছ আছে। সামুদ্রিক এলাকায় রয়েছে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ এবং ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি মাছ। মাছের শ্রেণিবিন্যাস বিভিন্ন রকম হতে পারে।

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন হতে গোত্র বা পরিবার অনুসারে মাছের শ্রেনিবিন্যাস উত্তম। আবার পরিবেশের উপর ভিত্তি করে তথা মিঠা পানির মাছ এবং লোনা পানির মাছ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। মিঠা পানির মাছ হাওড়, বাওড়, পুকুর, দিঘি, নদী, খাল, বিল ইত্যাদিতে বাস করে। দেহের তুলনায় এদের ডিম ধারণ ক্ষমতা বেশি। এরা ঝাঁক বেধে চলাফেরা করে। এদের মাথায় কোন আইশ নেই। ক্যাট ফিশ ব্যতীত অন্য সব মাছের দেহ মাঝারী ও ছোট আইশে ভর্তি থাকে।

ভেটকি, লইট্যা মাছ, রাঙ্গা মাছ, সোনালী বাটা, সামুদ্রিক পাঙ্গাস, লাখ্খা, পরিমাছ, পোয়া, লালাপোয়া, রূপচান্দা, ফাইস্যা, ইলিশ ও টুনা। উপরে বর্ণিত মাছগুলো আমরা নিজেরা খাই এবং কিছু অংশ বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করি।

মৎস্য সম্পদের পরিসংখ্যান বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের পরিসংখ্যান নিম্নে দেয়া হলো ঃ

বিভিন্ন পশুপাখির জাত পরিচিতি

বিভিন্ন পশুপাখির জাত পরিচিতি – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ এর ইউনিট ২ এর পাঠ-২.২ এর আমাদের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক এর জাতীয় অর্থনীতিতে পশুপাখির অবদান বিষয়ক পাঠ।

পশুপাখির জাত পরিচিতি

মাঠফসল ছাড়া আমাদের কৃষির প্রধান সাব—সেক্টরগুলো হ’লো পশুপাখি, মৎস্য এবং বনজ সম্পদ। পশুপাখি হতে আমরা দুধ, ডিম, মাংস, জৈব সার, জ্বালানি ও শ্রম শক্তি পাই। তাছাড়া পশুর চামড়া রপ্তানি করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়। বাংলাদেশের প্রত্যেক বাড়িতেই কোন না কোন পশুপাখি পালন করা হয়।

গরুর জাত

১। দুধের জন্য গরুর জাত:

লাল সিন্ধী, শাহীওয়াল, থার্পাকার্র, হলষ্টিন ফ্রিজিয়ান, জার্সি, গুয়ের্ণসি, আয়ার শায়ার, বাদামী সুইস।

২। কাজের জন্য গরুর জাত:

হরিয়ানা, বাগনারী, ধান্নী ও থার্পাকার্র ।

৩। দুধ ও কাজ উভয়ের জন্য:

হরিয়ানা ও থার্পাকার্র ।

নিম্নে কয়েকটি উন্নত জাতের গরুর পরিচিতি দেয়া হলোঃ শাহীওয়াল শাহীওয়াল জাতের গাভী দৈনিক ৯—১০ লিটার দুধ দেয় এবং প্রায় ২৮০ দিন দুগ্ধবতী থাকে। বলদ বা ষাঁড় হাল চাষের অনুপযোগী। পাকিস্থানের পাঞ্জাব প্রদেশের মন্টগোমারী এর উৎপত্তিস্থল। গাভী আকারে কিছুটা লম্বা, হালকাপাতলা, ছোট পা ও গতি ধীর। এদের মাথা আকারে ছোট এবং কপালের স্থান উচু।

লতি কান ও নাভী ঝুলানো। চুট ও গলকম্বল বেশ বড়। ওলান বড় ও ঝুলন্ত। গায়ের রং হালকা লাল বা হালকা হলুদ। দৈনিক ৯১০ লিটার দুধ দেয় এবং প্রায় ২৮০ দিন দুগ্ধবতী থাকে। বলদ বা ষাঁড় হাল চাষের অনুপযোগী। লাল সিন্ধী পাকিস্থানের সিন্ধু প্রদেশের করাচী, লাসবেলা ও হায়দরাবাদ এর উৎপত্তিস্থল। গায়ের রং লাল বলে একে লাল সিন্ধী বলে।

এটি ছোট মাথাওয়ালা মোটা ও খাটো জাতের গরু। শিং মোটা ও সামনের দিকে বাঁকানো। কপাল প্রশস্ত, কানের আকার মাঝারী, নীচের দিকে ঝুলানো, ওলান বেশ বড় ও সুগঠিত। নাভী বড় ও ঝুলানো। এ গরু প্রতিকূল অবস্থা সহ্য করতে পারে এবং দুধও দেয় বেশি। দৈনিক ৮১০ লিটার দুধ দেয় এবং প্রায় ৩৫০ দিন দুগ্ধবতী থাকে।

 

থার্পার্কার গরু

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের থার্পাকার্র জেলায় এর উৎপত্তিস্থল। এটি শক্ত ও মজবুত গড়নের মধ্যমাকার শক্তিশালী পশু। বলদ গাড়ী ও লাঙ্গল টানার কাজে ব্যবহৃত হয়। গাভী বেশি পরিমাণে দুধ দেয়। দৈনিক দুধ দেয় ৯১১ লিটার এবং বছরের ৩০০ দিন দুগ্ধবতী থাকে। গায়ের রং সাদা। শিং ও চুটি মধ্যম আকারের। হলষ্টিন ফ্রিজিয়ান হল্যান্ডের ফ্রিজল্যান্ড প্রদেশে এর উৎপত্তিস্থল। দুধাল জাতের গাভীর মধ্যে এজাত তূলনাম লকভাবে বড়। শরীরের সামনের অংশ চিকন এবং ওলান বেশ বড়। শরীর বেশ পেশী যুক্ত। গাভীগুলো শান্ত স্বভাবের কিন্তু ষাঁড়গুলি বদ মেজাজের। গায়ের রং কালো সাদায় চিত্রা এবং এ দুয়ের যে কোন একটির প্রধান্য থাকে।

 

জার্সি গরু

ইউরোপ ও আমেরিকায় দেখা যায়। দুধাল জাতের মধ্যে জার্সি সর্বাপেক্ষা বড়। দেহের গঠন উন্নত ও সুন্দর। ওলান বেশ বড়। চুটি নেই। গায়ের রং লাল, জিহ্বা ও লেজের রং কালো। গোচারণে অভ্যস্ত। বাৎসরিক দুধ উৎপাদন ২,৭৫০৪,০০০ লিটার। হরিয়ানা হরিয়ানা জাতের গাভী দৈনিক ৯১০ লিটার দুধ দেয়। বলদ লাঙ্গল ও গাড়ী টানার কাজে ব্যবহৃত হয়।

ভারতের হরিয়ানা অঞ্চলের এ গরু সাদা, দীর্ঘ, উচ্চ ও বলিষ্ঠ। শিং লম্বা, চিকন ও মসৃণ। দেহের বর্ণ সাদাটে বা হালকা ধূসর। দৈনিক ৯১০ লিটার দুধ দেয়। বলদ লাঙ্গল ও গাড়ী টানার কাজে ব্যবহৃত হয়। বাগনারী পাকিস্তানের সিন্ধু অঞ্চলে এর উৎপত্তিস্থল। গরু দীর্ঘকায়, বলিষ্ঠ, দৃঢ় ও শরীর সুগঠিত । গায়ের রং সাদা এবং কাঁধের রং কালো। দৈনিক ২৩ লিটার দুধ দেয়। এই গরু কষ্টসহিষ্ণু এবং গাড়ী ও লাঙ্গল টানার জন্য উপযোগী।

 

ধান্নী গরু

পাকি¯ ানের ইসলামাবাদ অঞ্চলের এই গরু গাড়ী ও লাঙ্গল টানার জন্য ব্যবহৃত হয়। শরীর শক্ত ও মজবুত। এ গরু খুব কম দুধ দেয়। মহিষের জাত বাংলাদেশে নিজস্ব কোন উৎকৃষ্ট জাতের মহিষ নেই। বাহির হতে আনা জাতের মধ্যে মুরড়া, নীলা, রাভি ও কুন্ডি উলে­খযোগ্য। মুরড়া জাতের মহিষই বাংলাদেশে বেশি দেখা যায়। এ জাতের পরিচিতি নিম্নে দেয়া হলো। মুরড়া মুরড়া জাতের মহিষ কষ্ট সহিষ্ণু এবং বাংলাদেশের জলবায়ুতে উপযোগী। ভারতের দিল­ী ও হারিয়ানা এদের উৎপত্তিস্থল। শরীর বড়, পা ছোট, শিং খাট ও বাঁকানো এবং কালো।

চামড়া কালো এবং পশমও কালো। স্ত্রী মহিষের মাথা সুগঠিত কিন্তু পুরুষ মহিষের মাথা ভারী ও মোটা। কপালের সম্মুখভাগ চওড়া ও উঁচু। এরা কষ্ট সহিষ্ণু এবং বাংলাদেশের জলবায়ুতে উপযোগী।

 

ছাগলের জাত:

উদ্দেশ্য অনুযায়ী ছাগলের জাতকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা হয়েছে:

১। দুধ উৎপাদনকারী জাত:

স্যানিন, এ্যাংলো, নুবিয়ান, দামাসকাস, ব্রিটিশ এলপাইন, টংগন বার্গ, যমুনাপারী, বারবারী, স দানীয়ান।

২। মাংস উৎপাদনকারী জাত:

ব্ল্যাক বেঙ্গল, বোয়ার, যমুনাপারী, ফিজিয়ান, মে—ট—অ, কেম্বিং কেটজ।

৩। চামড়া উৎপাদনকারী জাত ঃ

মুবেনডি, ব্ল্যাক বেঙ্গল। নিম্নে যমুনাপারী ও ব্ল্যাক বেঙ্গল নামক দুটি জাত সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো ঃ যমুনাপারী গঙ্গা, যমুনা নদীর তীরবর্তী অঞ্চল এ ছাগলের উৎপত্তিস্থল। ভারতে এ ছাগল বেশি দেখা যায় তবে বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে এ ছাগল নজরে পরে। দীর্ঘকায়, দীর্ঘ পদবিশিষ্ট ভারতীয় এ ছাগল ধূসর বাদামী, কখনো কালো তামাটে বা সাদা রংয়ের হয়ে থাকে। এদের শিং চ্যাপ্টা ও খাটো এবং প্রায় ১০—১২ ইঞ্চি লম্বা ঝুলন্ত কান বহন করে। এ জাতীয় ছাগলের দু’উরুর মাঝে লম্বা তুলতুলে অধিক পরিমাণে লোম থাকে। এ জাতের ছাগল দৈনিক ২৩ লিটার দুধ দেয়।

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল:

ব্ল্যাক বেঙ্গল বাংলাদেশেরকালো ছাগল নামে পরিচিত এবং দেশের সর্বত্রই দেখা যায়। এটি বাংলাদেশের কালো ছাগল নামে পরিচিত এবং দেশের সর্বত্রই দেখা যায়। এর শরীর খাটো এবং নরম কালো লোম দ্বারা আবৃত। এর কানগুলো সাধারণতঃ উপর দিকে খাড়া থাকে। শিং কালো এবং ২—৩ ইঞ্চি লম্বা হয়। অল্প বয়সে গর্ভবতী হয় এবং ছয় মাস পর পর বাচ্চা দেয়। এজাতের খাসির মাংস অতি উৎকৃষ্ট। এ জাতীয় ছাগলের চামড়া মসৃণ ও মোলায়েম হয় এবং বয়স্ক ছাগলের সাদা বা ধূসর বর্ণের দাড়ি থাকে।

ভেড়ার জাত:

ভেড়ার জাতকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিভাগ করা হয়।

১। মাংস বা পশম উৎপাদনের হারের উপর ভিত্তি করে।

২। মুখের রংয়ের উপর (সাদা বা লাল) ভিত্তি করে ।

৩। শিং এর উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে।

৪। উৎপত্তি অনুযায়ী এলাকার উপর (উঁচু ভূমি, পর্বত, নিম্নভূমি) ভিত্তি করে।

৫। পশমের বিভিন্নতা অনুসারে। উপমহাদেশে যে সকল জাতের ভেড়া দেখা যায় সেগুলো হলো বিবরিক, ওয়াজিরি, কাগনি, লোহি, হারনাই, দামানি, ইত্যাদি। লোমের জন্য বিখ্যাত এমন দুটি জাত সম্বন্ধে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

মেরিনো ভেড়ার জাত:

এ জাতীয় ভেড়ার উৎপত্তিস্থল স্পেন দেশে। এদের মুখ ও পা সাদা, কান ও পায়ের গোড়ালীতে লালচে বাদামী রংএর দাগ দেখা যায়। এদের পা এবং মাথার বেশির ভাগই পশম দ্বারা আবৃত। চামড়ার গুণাগুণের উপর ভিত্তি করে মেরিনোকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা ঃ

এ —টাইপ: মোটা জাত। ভেড়ার মাথা হতে লেজের গোড়া পর্যন্ত কোকড়ানো পশমে আবৃত থাকে। বি—টাইপ: ঘাড়ের পশম ব্যতীত সমস্ত শরীর অপেক্ষাকৃত কম পশমে আবৃত থাকে।
সি—টাইপ: চামড়া গোলাপী রং এর। পশম তুলনাম লক ভাবে মসৃণ। মাংসের মান অন্য দু’জাতের তুলনায় উত্তম।

রোমনী নার্স ভেড়ার জাত:

ইংল্যান্ডের রোমনী নার্স অঞ্চলে এদের উৎপত্তিস্থল। এরা সবচেয়ে ছোট জাতের ভেড়া। এদের পা ছোট ও সাদা। মুখ সাদা এবং কপালে এক গুচ্ছ পশম থাকে। এদের শিং নেই।

পাখির জাত পরিচিতি:

হাঁস ও মুরগির জাত:

হালকা জাত ও ভারী জাত —এ দু’শ্রেনীতে মোরগমুরগিকে ভাগ করা যায়। যে সব মুরগির ওজন কম তারা হালকা জাতের অন্তভূর্ক্ত ; যেমন— লেগহর্ন এবং যে সব মুরগির ওজন বেশী তা হলো ভারী জাত; যেমন— রোড আইল্যান্ড রেড। উন্নত খাঁটি মুরগির উৎপত্তিস্থল অনুসারে এরা আমেরিকান, এশিয়াটিক, ইংলিশ ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের জাত হিসেবে পরিচিত। এদের মধ্যে যে সব জাত বাংলাদেশে পরিচিত তাদের সম্বন্ধে নিচে আলোচনা করা হলো:

হোয়াইট লেগহর্ণ মুুরগি:

এটি ভূমধ্যসাগরীয় শ্রেণীর অš র্ভুক্ত। উৎপত্তিস্থল ইতালী। বর্তমানে বিশ্বের সব স্থানে প্রসার লাভ করছে। দেহের আকার আকৃতি ছোট। ডিমের আকার বড়, এদের সাদা, বাদামী, নীলাভ, হলুদ ও কাল জাত আছে। তবে সাদা রং—এর একক ঝুটি বিশিষ্ট উপজাত সবচেয়ে জনপ্রিয়। রোড আইল্যান্ড রেড বাণিজ্যিক হাইব্রিড সৃষ্টির জন্য আর. আই. আর এর ি ডম ব্যবহার করা হয়। এরা আমাদের দেশে ১৫০—২০০ ডিম দেয়।

এটি আমেরিকান শ্রেণীর অন্তভূর্ক্ত ভারী জাত। এটি সংক্ষেপে আর. আই. আর নামে পরিচিত। দেহের পালক লাল কিন্তু লেজের দিকের পালক, গলা এবং ডানার পালক কিছুটা কালো। ডিমের রং বাদামী। বাণিজ্যিক হাইব্রিড সৃষ্টির জন্য এ মুরগির ডিম ব্যবহার করা হয়। এরা আমাদের দেশে ১৫০—২০০ ডিম দেয়। নিউ হ্যাম্পশায়ার আমেরিকার নিউহ্যাম্পশায়ার নামক স্থানে এর উৎপত্তি বলে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। অনেকটা গোলাকৃতি, বড় আকারের এবং হালকা হলুদ বর্ণ বিশিষ্ট এ মুরগি প্রধানতঃ মাংস প্রদানকারী। এর অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আছে হলুদ বর্ণের পা এবং একক ঝুটি।

ডিমের রং বাদামী। বর্তমানে হাইব্রিড মুরগি তৈরি করতে এদের ব্যবহার করা হয়। ফাইওমি এটি ভূমধ্য সাগরীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত জাত। উৎপত্তিস্থল মিশর। এদের গলার দিকে ধুসর এবং সমস্ত শরীরে সাদাকালো রংয়ের মিশ্রণ। এরা খুব চঞ্চল ও চালাক এবং দেশী মুরগির মত এদের ছাড়া অবস্থায় পালন করা যায়। এদের কানের লতি সাদা। মাথার ঝুটি আকারে ছোট, বেজোর এবং লাল। আমাদের দেশে এরা বছরে ১৫০—২০০ টি ডিম দেয়। হাঁসের জাত পৃথিবীতে সর্বাধিক হাঁস পালন করা হয় চীন দেশে এবং বাংলাদেশের স্থান ি দ্বতীয়।

বিশ্বে ২২ প্রকারের হাঁসের জাত আছে। দেশী হাঁস সহ বিদেশী জাতের হাঁসও আমাদের দেশে পালন করা হয়। পৃথিবীতে সর্বাধিক হাঁস পালন করা হয় চীন দেশে এবং বাংলাদেশের স্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশের হাঁস আকারে ছোট, কম ডিম দেয় এবং ডিমের আকার ছোট। দেশী জাতের হাঁসের পরিচয় নিম্নে দেয়া হলো। নগেশ্বরী হাঁস বাংলাদেশের সিলেটে ও ভারতের কাছাড়ে এ হাঁস পাওয়া যায় । এদের গলা ও বুক সাদা এবং শরীরের অন্যান্য অংশ কালো। পা ও ঠোটের রং হলুদ। ডিমের রং হালকা নীল বা সবুজাভ। বছরে এরা প্রায় ১০০টি ডিম পারে।

মাটি হাঁস:

বাংলাদেশের সিলেট জেলায় এ হাঁস পাওয়া যায়। হাঁসের পালক ধূসর বর্ণের। পালকের উপর মাঝে মাঝে কালো দাগ থাকে। ঠোট ও পায়ের রং হলুদ অথবা কালো। ডিমের রং সাদা। সাদা হাঁস বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই এদের এ জাত দেখা যায়। এদের দেহের পালক সাদা, ঠোঁট ও পা হলুদ, আকারে ছোট। ডিমের আকার ছোট। এছাড়াও আমাদের দেশে বিভিন্ন পাতি হাঁস পাওয়া যায়। এদের ডিম উৎপাদনের হার কম। এরা বেশ কষ্ট সহিষ্ণু ও চঞ্চল।

রাজ হাঁস:

ধুসর ও সাদা এ দু’রং এর রাজহাঁস বাংলাদেশে দেখা যায়। এরা বছরে দু’বার প্রতিবারে ৮—১০ টি ডিম পাড়ে। ডিমের আকার বড়। উন্নত জাতের খাঁটি হাঁস উন্নত জাতের খাঁটি হাঁস বলতে বিদেশী হাঁসকে বুঝায়। উন্নত জাতের হাঁস মাংস ও ডিমের জন্য পালন করা হয। ডিমের জন্য ভাল জাত হলো খাকি ক্যাম্বেল, জিংডিং, ইন্ডিয়ান রানার ইত্যাদি। আর মাংসের জন্য ভাল জাত হলো— বেইজিং বা পেকিন এবং মাসকোভি। আমাদের দেশে উন্নত জাতের যে সব হাঁস পালন করা হয় নিম্নে তাদের সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো:

খাকি রংয়ের ক্যাম্বেল হাঁস  ডিম উৎপাদনের জন্য  বিখ্যাত। এরা বছরে প্রায় ২৫০—৩০০ টি ডিম দেয়। খাকি ক্যাম্বেল মালয়েশীয় জংলি হাস, ইন্ডিয়ান রানার ও রুয়েন হাঁসের সঙ্করায়নের ফলে এ জাতের উদ্ভব হয়েছে। ক্যাম্বেল হাঁস সাদা ও খাকি রংয়ের হয়। খাকি রংয়ের ক্যাম্বেল হাঁস ডিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এরা বছরে প্রায় ২৫০—৩০০ টি ডিম দেয়। জিংডিং হাঁস
এ হাঁসের উৎপত্তিস্থল চীন দেশে। এদের গলা ও দেহ কিছুটা লম্বা। হাসের রং উজ্জল। ডিমের রং হালকা নীল ও সবুজাভ। এরা অত্যন্ত কষ্ট সহিষ্ণু এবং বছরে ২০০—২৫০ টি ডিম দেয়।

ইন্ডিয়ান রানার :

এদের ঘাড় লম্বা ও সুগঠিত এবং মাথা উপরের দিকে উঁচু। দেহ হালকা, লম্বা এবং সামান্য গোলাকার। এ জাতের হাঁসের পালকের রং উজ্জল সাদা। মাথার উপরিভাগ চ্যাপটা। এদের ডিমের রং সাদা, বছরে ২০০—২৫০ টি ডিম দেয়।

জাতীয় অর্থনীতিতে পশু সম্পদের অবদান আমাদের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক। কৃষির মধ্যে পশুপাখি পালন উলে­খযোগ্য বিষয় এবং এদের নিয়েই বাংলাদেশের পশু সম্পদ। পশু সম্পদ বাংলাদেশের খুবই মূল্যবান সম্পদ। আমাদের অর্থনীতিতে পশু সম্পদের অবদান বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। পশু সম্পদ হতে আমরা দুধ, মাংস, চামড়া, জ্বালানী, জৈবসার ও শ্রম শক্তি পেয়ে থাকি। সব মিলিয়ে জাতীয় উন্নয়নে পশু সম্পদের অবদান অপরিসীম।

মোট জাতীয় আয়ে পশু সম্পদ সাব সেক্টরের অবদান ৯% যা হাল চাষের মূল্য সমেত বেড়ে দাঁড়ায় ১৫%। মোট জাতীয় আয়ে পশু সম্পদ সাব সেক্টরের অবদান ৯% যা হাল চাষের মূল্য সমেত বেড়ে দাঁড়ায় ১৫%। আমাদের প্রাণীজ আমিষের চাহিদার ২৫% আসে পশু সম্পদ থেকে। দেশের জনসমষ্টির ৩০% সার্বক্ষনিক এবং ৫০% খন্ডকালীন পশু পালনে কর্মরত। গ্রামীন জনসাধারণের এক বিরাট অংশ বিশেষ করে ভূমিহীন, ক্ষুদ্র, প্রান্তিক চাষি, বেকার যুবক, দুঃস্থ মহিলারা হাঁস—মুরগি ও গবাদী পশু পালনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তাদের আয়ের প্রধান উৎস হলো দুধ, মাংস, ডিম, হাল, ইত্যাদি বিক্রয়লব্ধ অর্থ।

আমাদের রপ্তানি আয়ে পশু সম্পদের অবদান শতকরা ১৩ ভাগ। চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য রপ্তানি করে বছরে আয় হয় ৬৭২০ মিলিয়ন টাকা। কৃষি কাজ বা চাষাবাদে পশু শক্তির অবদান শতকরা ৯৫ ভাগ যদিও বর্তমানে এ কাজে কিছু কিছু যান্ত্রিকীকরণ শুরু হয়েছে। এখনও শতকরা ৫০ ভাগ গ্রামীন পরিবহন হয়ে থাকে পশু সম্পদ দ্বারা। বছরে প্রায় ২২ মিলিয়ন টন শুকনো গোবর জৈব সার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করে আমরা লক্ষ লক্ষ টন খাদ্য শস্য উৎপাদন করে থাকি। বর্তমানে ব্যবহৃত রাসায়নিক সারের শতকরা ১০ ভাগ আমরা পশু সম্পদ হতে পেয়ে থাকি। আমাদের প্রচলিত জ্বালানির ২০ ভাগ আসে পশু সম্পদ হতে। দেশে প্রতি বছর ৭ মিলিয়ণ টন গোবর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় ফলে দেশের বেশ বড় অংকের টাকা এখাতে সাশ্রয় হয়।

 

 

বাংলাদেশের পশুপাখির পরিচিতি ও পরিসংখ্যান

বাংলাদেশের পশুপাখির পরিচিতি ও পরিসংখ্যানবাংলাদেশের পশুপাখির পরিচিতি ও পরিসংখ্যান নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশ” বিভাগের ২ নং ইউনিটের ২.১ নং পাঠ।

 

বাংলাদেশের পশুপাখির পরিচিতি ও পরিসংখ্যান

 

বাংলাদেশের পশুপাখি বলতে সে সব পশুপাখিকে বুঝায় যাদের উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশেই । এদের মধ্যে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি এবং কবুতরই প্রধান । সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে গরুর কোন অবিমিশ্র  কিংবা উন্নত জাত নেই। অন্য দেশ থেকে আনা কোন অবিমিশ্র জাতের গরু এদেশের কোন চাষীর বাড়ীতেও দেখা যায়না। আবার এমন কোন মিশ্র, উচ্চ—উৎপাদনশীল জাতও বাংলাদেশী জাত হিসেবে গৃহীত হয়ে উঠেনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গরু সে সব অঞ্চলের নামানুসারে পরিচিত।

যেমন চট্টগ্রাম অঞ্চলের গরুকে চাটগাঁইয়া, পাবনার গরুকে পাবনাইয়া এবং ভৈরবের গরুকে ভৈরবী বলে। এসব স্থানীয় নামের মিশ্রজাত ৩৭ লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে। সময়মত সুষম খাবার প্রদান ও যত্ন নিলে দেশী গরু হতে অধিক পরিমাণে দুধ পাওয়া মোটেই অসম্ভব নয়। এ জাতগুলোর মধ্য হতে নির্বাচন ও নিয়মিত উৎকৃষ্ট জাতের ষাঁড় দিয়ে সংকরায়ন ও প্রজননের মাধ্যমে সহজেই উন্নত জাতের গুণাবলী দেশীয় জাত সমূহের মধ্যে প্রসারিত করা যেতে পারে। বাংলাদেশে নিজস্ব উৎকৃষ্ট জাতের কোন মহিষ নেই। এ দেশে যে সকল মহিষ দেখা যায় এগুলোর প্রায় সবগুলোই বিদেশ থেকে আনা।

এ দেশের আবহাওয়ায় লালিত পালিত এবং বংশ বিস্তারের মাধ্যমে এরা বর্তমানে এদেশের মহিষ নামে পরিচিত। বাংলাদেশে ভারবাহী বা কাজের জন্য জলা মহিষ বা সোয়াম্প মহিষ এবং দুধ উৎপাদনের জন্য নিলা, মুরড়া, কুন্তি ও রাভি জাতের মহিষ দেখা যায়। মহিষ পানি এবং মাটি উভয় জায়গায় থাকে। তবে এরা পানিতে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। মহিষের জন্য জলাশয়, ডোবা, খাদ, গর্ত, বিল, ইত্যাদির প্রয়োজন যেখানে তারা নাক অবদি ডুবিয়ে রাখে। আমাদের দেশের মহিষের দুধ দেয়ার ক্ষমতা দৈনিক ৫১৫ লিটার।

বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ছাগল দেখা যায়। ছাগল পালন এদেশে খুবই পুরানো রেওয়াজ। ব্ল্যাক বেঙ্গল নামক ছাগল এদেশের খুবই পরিচিত জাত। এ জাতের ছাগল এদেশের জলবায়ুতে বসবাসের খুবই উপযোগী। এরা অল্প বয়সে গর্ভবতী হয় এবং ছয়মাস অন্তর অন্তর বাচ্চা প্রসব করে, এবং এক সাথে একাধিক বাচ্চা প্রসব করে থাকে। বাংলাদেশে যেখানে পশু খাদ্যের খুব অভাব, সেখানে কম খাবারে মাংস উৎপাদনের জন্য ছাগল একটি উৎকৃষ্ট প্রাণী।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর সংখ্যক দেশী জাতের ভেড়া দেখা যায়। ভেড়া দলবদ্ধ অবস্থায় থাকতে ভালবাসে। ছাগলের তুলনায় বাংলাদেশে ভেড়ার সংখ্যা কম।

এদেশের ভেড়া আকারে ছোট ও বিভিন্ন রংয়ের হয়। এরা কম উৎপাদনশীল জাত। পৃথিবীর কোন কোন দেশে ভেড়া পালনের প্রধান উদ্দেশ্যে হলো উহা হতে পশম সংগ্রহ করা। তবে এদেশে ভেড়া মাংসের জন্য পালন করা হয়ে থাকে। গ্রামে গৃহস্থের বাড়ীতে ছাড়া অবস্থায় যে সমস্ত মুরগি চড়ে বেড়ায় তারা দেশী জাতের মুরগি। এরা সধারণতঃ ঘর দুয়ার ও বাড়ীর আশে পাশে ক্ষেতে খামারে চড়ে বেড়ায় ও খাদ্য কুড়িয়ে খায়। এরা আকারে ছোট, ডিম কম দেয়। এদের দেহ সুগঠিত ও শক্ত। এরা খুব চালাক ও সতর্ক। দেশী মুরগির মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য পূর্ণ জাত আছে।

এদের মধ্যে আছিল বা লড়াইয়ের মুরগি, পালকশুণ্য গ্রীবা বা গলা ছোলা মুরগি, চাটগাঁয়ের মুরগি এবং মাথায় পালকের গোল ঝুটি মুরগি প্রধান। আছিল বা লড়াইয়ের মুরগি দেখতে সুন্দর কিন্তু তারা চঞ্চল ও হিংস্র। এ জাতের মুরগির মধ্যে মোরগ লড়াইয়ের জন্য ব্যবহার হয়। লড়াইয়ের মোরগ বেশ চড়া দামে বিক্রি হয়। আছিল মুরগি ব্রাক্ষনবাড়িয়া জেলার সরাইল ও চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানায় দেখা যায়। গলা ছোলা মুরগির গলায় কোন পালক থাকে না। এরা আকারে বড়। গলার ফুল বেশ বড় এবং লাল রংয়ের। সিলেট জেলা ও বিভিন্নস্থানে বিচ্ছিন্নভাবে এ মুরগি দেখা যায়। খাঁটি চাটগায়ের মুরগি চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানায় দেখা যায়।

এরা আকারে বড়, গলা লম্বা, মাথা ছোট, মাথায় ঝুঁটি থাকে। মাথায় পালকের গোল ঝঁুটি মুরগি বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়। এদের মাথার পালক গোল হয়ে এক গুচ্ছ ঝুঁটি তৈরী করে। ঝুঁটি ও গলার ফুল খুব ছোট ও লাল রংয়ের। গ্রাম গঞ্জের পুকুর বিল বা ডোবায় যে সমস্ত হাঁস চড়ে বেড়াতে দেখা যায় এগুলো দেশী জাতের পাতি হাঁস। এরা আকারে ছোট ও ডিম কম দেয়। দেশী হাঁস অত্যন্ত কষ্ট সহিষ্ণু চঞ্চল এবং সতর্ক। এদের পালকের রং বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। দেশী হাঁসের মধ্যে নাগেশ্বরী, মাটি হাঁস, সাদা হাঁস, রাজ হাঁস প্রভৃতি উলে­খযোগ্য। নাগেশ্বরী এবং মাটি হাঁস সিলেটে পাওয়া যায় এবং সাদা হাঁস বাংলাদেশের সর্বত্র দেখা যায়। রাজহাঁস কেহ কেহ সখ করে পালন করেন। রাজহাঁস খুব কম ডিম দেয়।

কবুতর শান্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। এরা খুব সুন্দর ও শান্ত প্রাণী এবং নিজেদের খাবার নিজেরাই সংগ্রহ করে খায়। কবুতর বাড়ীতে কিংবা পোড়া বাড়ীতে থাকতে পছন্দ করে। আমাদের দেশে অনেকে সখ করে কবতুতর পালেন। এরা প্রতি দেড় মাসে এক জোড়া বাচ্চা দেয়। কবুতরের বাচ্চার মাংস খুব সুস্বাদু। জাত ও বর্ণ অনুসারে কবুতর বিভিন্ন আকৃতি ও রংয়ের হয়। যে সব জাত আমাদের দেশে দেখা যায় এরা হলো জালালী, সিরাজী, লক্ষেèৗ ও বোগদাদী।

ছক ঃ পশু পাখির সংখ্যা ও উৎপাদন

 

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফসলের অবদান

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফসলের অবদান – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের “পরিবেশের উপাদান” বিষয়ের ইউনিট ১ এর ১.৬ নং পাঠ।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফসলের অবদান

 

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের মানুষের প্রধান পেশা হলো কৃষি অর্থাৎ ফসল উৎপাদন। বাংলাদেশের শতকরা ৬৮.৫ ভাগ মানুষ এ পেশায় নিয়োজিত এবং দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৩৫% আসে কৃষি থেকে। জাতীয় আয়ের সিংহভাগই (৩৯.৩৭%) যোগান দেয় এই কৃষি খাত (বি.বি.এস. ১৯৯৪)।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দেশে ফসলী জমির পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সত্তর এর দশকে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ছিল প্রায় এক একর। বর্তমানে তা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ০.২৫ একর। এই ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণ করছে এদেশের বিভিন্ন ফসল। জমির পরিমাণ হ্রাস পেলেও ধান ও গমের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে খাদ্য ঘাটতি গত বিশ বছর ধরে একই পর্যায়ে রয়েছে। বিগত ১৯৫০—৫১ অর্থ বছরে এদেশে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬২ লক্ষ টন। বিগত তিন দশকে দেশের খাদ্য উৎপাদনে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। ১৯৬০—৬১ অর্থবছরে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ৯৭ লক্ষ টনে উন্নীত হয়।

১৯৮৯—৯০ সনে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৬৪ লাক্ষ টনে । অর্থাৎ ২৯ বছরে এদেশে খাদ্য শস্যের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুন বেড়েছে। এসময় খাদ্য শস্যের প্রবৃদ্ধির হার ছিল শতকরা ২.২০ এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি ছিল ২.২৮ ভাগ। ১৯৯২—৯৩ অর্থ বছরে খাদ্য শস্যের উৎপাদন দাঁড়ায় ১ কোটি ৭২ লক্ষ টনে। উৎপাদন বাড়লেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আমাদের খাদ্য ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। এসব তথ্য থেকে দেখা যায় খাদ্য শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি না হলে ক্রমহ্রাসমান জমিতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পরণ সম্ভব হতো না। কৃষিতে উন্নত ূ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের ফলেই তা সম্ভব হচ্ছে।

তাই একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফসল খুবই গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের প্রধান ফসলগুলো হলো, ধান, গম, পাট, আখ, তামাক, চা, আলু, ডাল ও তৈল জাতীয় শস্য।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফসল এর অবদান:

ধান

বর্তমানে ৩৯টি উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করা হয়েছে যার প্রায় অধিকাংশই কৃষক পর্যায়ে মাঠে চাষ করা হয়।
বাংলাদেশে ধানের জমির পরিমাণ কমলেও প্রতি একক জমিতে এর উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে ধানের উৎপাদন হার ছিল হেক্টরপ্রতি ২—৩ টন আর এখন তা ৫—৬ টনে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে ৩৯টি উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করা হয়েছে যার প্রায় অধিকাংশই কৃষক পর্যায়ে মাঠে চাষ করা হয়। ১৯৭০ সালে চালের উৎপাদন ছিল প্রায় ১০ মিলিয়ন টন বর্তমানে তা প্রায় ১৯ মিলিয়ন টনে উন্নীত হয়েছে। এর পরও এদেশে চালের ঘাটতি রয়েছে যা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।

 

গম

দানা জাতীয় খাদ্য শস্যের মধ্যে ধানের পরই গমের স্থান। গম বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খুব একটা ভূমিকা না রাখলেও ধানের সহকারী খাদ্য হিসেবে গম তার স্থান করে নিয়েছে। দেশে বেশি পরিমাণে জমি সেচের আওতায় আসার ফলে এবং গমের চেয়ে বাঙালিরা ভাত বেশি পছন্দ করে বিধায় বর্তমানে গমের জমির পরিমাণ এবং উৎপাদন দুই—ই স্থিতিশীল হয়ে আসছে। গমের ফলন বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট অদ্যাবধী ১৬টি উচ্চ ফলনশীল গমের জাত উদ্ভাবন করেছে এবং কৃষকের মাঠে এগুলোর প্রায় সব ক’টি চাষ করা হচ্ছে। ১৯৯৭—৯৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৮০.৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে ১৮ লক্ষ মেট্রিক টন গম উৎপন্ন হয়েছে।

 

পাট

পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। বর্তমানে বিশ্ব বাজারে পাটের চহিদা কমে যাওয়ায় তার দামও কমে গেছে; ফলে পাট চাষে কৃষকদের উৎসাহ কমে গেছে। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ বিশ্বের ৬৯টি দেশে পাট রপ্তানি করত । উৎপাদিত পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ৭০% বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। আগে প্রতি বছর বাংলাদেশে ৭০ লক্ষ বেল পাট উৎপন্ন হ’তো যা বর্তমানে এসে ঠেকেছে ৪০ লক্ষ বেলে। ১৯৯২—৯৩ অর্থবছরের মার্চ ’৯৩ পর্যন্ত ৭৮৮ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা পাটজাত দ্রব্য এবং ২২৪ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা কাঁচা পাট রপ্তানি করে আয় হয়।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ১৬% আয় হয় পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে। বর্তমানে ঔষধ ও পোষাক শিল্পের প্যাকেজিংয়ের জন্য প্রায় ১১ শ’ কোটি টাকা মূল্যের ১ লক্ষ ৪ হাজার টন ইন্ডাষ্ট্রিয়াল গ্রেড কাগজ আমদানি হচ্ছে। পাটজাত দ্রব্য দিয়ে এ কাগজ তৈরি করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় সম্ভব। জুটন (৭০% পাট + ৩০% সুতা) তৈরি করতে এখন পাটের আঁশ ব্যবহৃত হচ্ছে। নদীর বাঁধ ভাঙ্গন রোধে চটের বস্তা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।

চা

চা বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান অর্থকরী ফসল। চা বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান অর্থকরী ফসল। ১৯৯৭—৯৮ সনে চা বাগানের আওতায় জমির পরিমাণ ছিল ৪৮.৫ হাজার হেক্টর এবং উৎপাদন ছিল ৫০.৫ হাজার মেট্রিক টন। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে এর প্রায় অর্ধেক পরিমাণ বিদেশে রপ্তানি করা হয়। চা রপ্তানি করে ১৯৮৮—৮৯ অর্থ বছরে আয় হয়েছে ১২০৮ মিলিয়ন টাকা, ১৯৮৯—৯০ অর্থবছরে ১২০১ মিলিয়ন টাকা, ১৯৯০—৯১ অর্থবছরে ১৫৪৪ মিলিয়ন টাকা, ১৯৯১—৯২ অর্থবছরে ১২৯৬ মিলিয়ন টাকা। বংলাদেশে চা এর উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে।

 

আখ

আখ বাংলাদেশের চিনি ও গুড় উৎপাদনকারী প্রধান অর্থকরী ফসল। আখ বাংলাদেশের চিনি ও গুড় উৎপাদনকারী প্রধান অর্থকরী ফসল। বর্তমানে দেশে ১,৭৪,০০০ হেক্টর জমিতে আখ উৎপন্ন হয় এবং বাৎসরিক গড় উৎপাদন ৭২—৭৬ লক্ষ টন। উৎপাদিত আখের ২৩ লক্ষ টন ব্যবহৃত হয় চিনি উৎপদনের জন্য এবং ৩১ লক্ষ টন আখ ব্যবহৃত হয় গুড় উৎপাদনের জন্য।

বাকী আখ বীজ হিসেবে ও চিবিয়ে খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। দেশে বর্তমানে চিনি ও গুড় উৎপাদনের পরিমাণ যথাক্রমে ১.৯ লক্ষ এবং ৩ লক্ষ টন। দেশে বাৎসরিক ৩ লক্ষ টন চিনি এবং ৬ লক্ষ টন গুড়ের চহিদা মিটাতে ১ কোটি ১০ লক্ষ টন আখ উৎপাদন প্রয়োজন। আখের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইক্ষু গবেষণা ইনষ্টিটিউট ২৩ টি উচ্চ ফলনশীল ইক্ষু জাত উদ্ভাবন করেছে। দেশে চিনির চাহিদা মিটানোর জন্য প্রতিবছর প্রায় এক লক্ষ টন চিনি আমদানি করতে হয়।

 

তামাক

তামাক বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল এবং সরকারের রাজস্ব আদায়ের অন্যতম উৎস। বাংলাদেশে বর্তমানে ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৬ হাজার মেট্রিক টন তামাক উৎপন্ন হয় যা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটাতে সক্ষম।

 

ডাল জাতীয় শস্য

দেশে ডাল জাতীয় শস্যের চাহিদার প্রায় বেশির ভাগই বর্তমানে আমদানি করতে হয়। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ডাল জাতীয় শস্যের জমির পরিমাণ ও উৎপাদন কমে গেছে। দেশে সেচের আওতায় জমির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে কৃষকেরা এখন সে জমিতে ডালের পরিবর্তে ধান চাষ করছে তবে ডালের ফলন বৃদ্ধির জন্য সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি ইনষ্টিটিউট বেশ কয়েক জাতের মসুর, ছোলা, মুগ ও মাষ কলাইয়ের উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে।

 

তৈলবীজ জাতীয় শস্য

সরিষা বাংলাদেশের প্রধান তৈলবীজ জাতীয় শস্য। বর্তমানে তৈলবীজ জাতীয় শস্য হিসেবে দেশে সয়াবীনের চাষ হচ্ছে এবং সয়াবীন চাষের উজ্জ্বল সম্ভবনা রয়েছে। কিন্তু সয়াবীন ক্রাস করার মেশিন না থাকায় আমাদের তেলের ঘাটতি মিটাতে প্রতি বছর ৩ থেকে ৬ হাজার মিলিয়ন টাকার সয়াবীন তৈল বিদেশ হ’তে আমদানি করতে হয়। এদেশে তৈল বীজ জাতীয় ফসলের জমির পরিমাণ স্থিতিশীল রয়েছে। তৈলবীজ শস্যের ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের কৃষি গবেষনা প্রতিষ্ঠান সমূহ সরিষার ১০টি, চীনাবাদামের ৬টি, গর্জনতিলের ৩টি ও তিষির ১টি উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। এগুলো চাষের আওতাভূক্ত জমির পরিমাণ বাড়াতে পারলে তৈল আমাদানির পরিমাণ কমে আসবে এবং
দেশের অর্থনীতিতেও যথেষ্ট অবদান রাখবে।

অন্যান্য:

রাবার দেশে রাবার উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় কাঁচা রাবার আমদানি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে এবং এ খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। বর্তমান (১৯৯৪—৯৫) অর্থ বছরে এই সাশ্রয়ের পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা। বিভিন্ন রাবার বাগান হ’তে বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার টন কাঁচা রাবার উৎপাদন হচ্ছে যা দিয়ে দেশের ২৫০টি রাবার জাত দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মোট বার্ষিক চাহিদার ৩০% মিটানো সম্ভব হচ্ছে। ফুল, ফল ও শাকসব্জি ঢাকায় বর্তমানে প্রতিদিন ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের তাজা ফুল বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশে ফুল এখন বাণিজ্যিক পণ্য। ঢাকায় বর্তমানে প্রতিদিন ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের তাজা ফুল বিক্রি হচ্ছে । দেশে বর্তমানে ২ হাজার বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে্ । প্রায় ১৫ হাজার লোক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ফুল ব্যবসার সাথে জড়িত। ১৯৯৩—৯৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১২ লক্ষ টাকা ম ল্যের তাজা ফুল সৌদি আরবে রপ্তানি করে। ফলের উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং যে পরিমাণ উৎপন্ন হচ্ছে তাতে দেশের চাহিদা পূরণ হচ্ছে।

কাঁঠালসহ কিছু ফল বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে । বর্তমানে বাংলাদেশ হ’তে ১৫টিরও অধিক দেশে ৪৮ প্রকারের শাকসব্জি রপ্তানি হচ্ছে । ১৯৯২—৯৩ অর্থবছরে ৩১৩.৫ মিলিয়ন টাকার এবং ১৯৯৩—৯৪ অর্থবছরে ৩২৩.৫ মিলিয়ন টাকার সব্জি বিদেশে রপ্তানি করা হয়। দেশে সব্জি উৎপাদন করার লক্ষ্যে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সমূহ বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে।

উপরের আলোচনা হ’তে এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশ কৃষির উপর নির্ভরশীল হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে এদেশের ফসলসমূহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আশানুরূপ অবদান রাখতে পারছে না। প্রাকৃতিক দূর্যোগ, সুষ্ঠু পরিল্পনার অভাব, কৃষি নীতিমালা বাস্তবায়নে অসফলতা, কৃষকদের অজ্ঞতা ও দারিদ্র, গবেষণা ও সম্প্রসারণের মধ্যে যোগাযোগের অভাব ইত্যাদিই প্রধান কারণ। দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ফসলের অবদান আরোও বাড়বে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

 

 

কৃষি উপকরণ ব্যবহারের বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ, আর কৃষির অগ্রগতি নির্ভর করে আধুনিক ও উপযোগী কৃষি উপকরণের যথাযথ ব্যবহারের উপর। কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, যন্ত্রপাতি প্রভৃতি উপকরণের সঠিক ব্যবহার অপরিহার্য। তবে বাস্তবে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই এসব উপকরণ ব্যবহারে নানা সমস্যা, অসচেতনতা ও সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে।

আজকের পাঠে আমরা “কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ” বিষয়ের ইউনিট ১-এর ১.৫ নম্বর পাঠ অনুযায়ী, বাংলাদেশের কৃষি উপকরণের বর্তমান ব্যবহারিক অবস্থা, এর সুবিধা-অসুবিধা, কৃষকের সচেতনতা ও সরকারি-বেসরকারি সহায়তা নিয়ে আলোচনা করব। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা জানতে পারব, কীভাবে কৃষি উপকরণের কার্যকর ব্যবহার কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

কৃষি উপকরণ ব্যবহারের বর্তমান অবস্থা

 

কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশে, উপকরণ বলতে সেই সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রকে বুঝানো হয় যা কোনো বস্তু তৈরি বা উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। কৃষি ক্ষেত্রে, ফসল উৎপাদনের জন্য সরাসরি যে সকল জিনিসপত্র প্রয়োজন, সেগুলোকে কৃষি উপকরণ বলা হয়। কৃষি উপকরণকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

১. অবস্তুগত উপকরণ
২. বস্তুগত উপকরণ

অবস্তুগত উপকরণ হলো শ্রমিক বা মানুষ, গরু-মহিষ, এবং যান্ত্রিক শক্তি। আর বস্তুগত উপকরণ হলো বীজ, সার, পানি, ও আপদনাশক। এখানে আমরা বিশেষভাবে বস্তুগত উপকরণ সম্পর্কে আলোচনা করবো।

বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষক ফসল উৎপাদনের জন্য নিজেরা সংরক্ষিত বীজ ব্যবহার করেন। তবে উন্নত জাতের বীজ সরবরাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বি.এ.ডি.সি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বি.এ.ডি.সি তাদের বীজবর্ধন খামার থেকে বিভিন্ন ফসলের উন্নত জাতের বীজ উৎপাদন করে কৃষকদের মাঝে বিক্রয় করে থাকে। প্রয়োজন অনুসারে তারা বিদেশ থেকেও বীজ আমদানী করে থাকে, যদিও সরবরাহ এখনও চাহিদার তুলনায় কম।

বি.এ.ডি.সি কর্তৃক বিক্রয়কৃত বিভিন্ন বীজের পরিসংখ্যান (ছক-১) থেকে দেখা যায়, ধান (আউশ, আমন, বোরো), গম, গোল আলু, সরিষা এবং শীতকালীন শাকসবজির বীজ প্রধানত সরবরাহ করা হয়। ১৯৯২-৯৩ সালের মধ্যে আউশ ধানের বীজ বিক্রয় কিছুটা কমলেও আমন ধানের বীজ বিক্রয় বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, গম, গোল আলু, সরিষা ও শীতকালীন শাকসবজির বীজ বিক্রয় পূর্বের তুলনায় কম। এ থেকে ধারণা করা যায় যে কৃষকেরা নিজেদের উৎপাদিত বীজই বেশি ব্যবহার করছেন।

ছক: বি..ডি.সি কর্তৃক বিক্রীত উন্নত বীজের পরিমাণ (১৯৯২৯৩)

ফসলের নাম বীজ বিক্রয়ের পরিমাণ (কেজি) পূর্ববর্তী বছরের তুলনা
আউশ ধান ৫১৮,০৮৪ কম হয়েছে
আমন ধান ৩,৫৯,৪৩,৪৩১ বৃদ্ধি পেয়েছে
বোরো ধান ৭,৪৫,৭৪০ বৃদ্ধি পেয়েছে
গম ৯৬ কম হয়েছে
গোল আলু ৬৭,৫৯৬ কম হয়েছে
সরিষা ৫০,২৯৬ কম হয়েছে
শীতকালীন শাক-সবজি ৫১৯ কম হয়েছে

 

সার

ফসলের জমিতে আমরা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহার করি, যেমন ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট, সুপার ফসফেট, মিউরেট অব পটাশ, জিঙ্ক সালফেট, সালফার ইত্যাদি। এসব সারের মধ্যে কিছু আমাদের দেশের কারখানায় উৎপাদিত হয়, আবার কিছু আমদানি করে আনা হয়। ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমদানির পাশাপাশি দেশে রাসায়নিক শিল্প সংস্থাগুলোও সার উৎপাদন করে থাকে।

নীচের ছক (ছক—২) থেকে দেখা যায়, ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে সারের ব্যবহার আগের বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছিল, তবে ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে তা কিছুটা কমে গেছে। ১৯৯০-৯১, ১৯৯১-৯২ এবং ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে মোট সারের ব্যবহার ছিল যথাক্রমে ১৯,৯৪,১৬০; ২১,২৭,০০৪; এবং ২০,৩৪,৭৯২ মেট্রিক টন।

সেচ

বাংলাদেশে মোট ফসলী জমির পরিমাণ প্রায় ১৩.৭ মিলিয়ন হেক্টর। এর মধ্যে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে সেচ প্রদান করা হয় মোট ফসলী জমির ১৯.৪৬ শতাংশে এবং গতানুগতিক পদ্ধতিতে সেচ প্রদান করা হয় ৪.৪৬ শতাংশ জমিতে। বাকি ৭৬.৩% জমি এখনও সেচের আওতায় আসতে পারেনি।

যদিও বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টি হয়, তবে বৃষ্টির অসম বণ্টনের কারণে রবি মৌসুমের বিশেষ ফসল যেমন বোরো ধান, গম, গোল আলু ইত্যাদির জন্য সেচ প্রদান অপরিহার্য। সেচের আওতায় আরও বেশি জমি আনতে পারলে খাদ্য ঘাটতি অনেক কমে যাবে। বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মাধ্যমে দেশে সেচের পরিমাণ ও প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ছকে (ছক—৩) প্রদর্শিত হয়েছে।

আপদনাশক

ফসলকে বিভিন্ন প্রকার আপদ থেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের আপদনাশক ব্যবহার করা হয়। ফসলের শত্রু হিসেবে কাজ করে আগাছা, পোকামাকড়, রোগ জীবাণু, ইঁদুর এবং গুদামে আক্রমণকারী অন্যান্য প্রাণী। এসব ক্ষতিকারক উপাদানকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন ধরনের আপদনাশক ব্যবহৃত হয়, যা ফসলের উৎপাদনশীলতা ও গুণগত মান বজায় রাখতে সাহায্য করে।

 

 

কৃষিতে পোকা-মাকড়, রোগ-বালাই, আগাছা ও ইঁদুর নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাক্রমে কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক ও রোডেন্টিসাইড ব্যবহার করা হয়। এগুলো পাউডার, তরল এবং দানাদার আকারে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে গত কয়েক দশক ধরে এসব আপদনাশকের ব্যবহার ক্রমবর্ধমান।

উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে মোট ৭৩০৭.২২ মেট্রিক টন আপদনাশক ব্যবহৃত হয়েছিল, যা ১৯৯৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৭৬৪০.৪৯ মেট্রিক টনে। ১৯৯৪ সালের প্রথম ছয় মাসে এককালে ৪৭৪৪.৮ মেট্রিক টন আপদনাশক ব্যবহৃত হয়েছে।

ছক: বাংলাদেশে আপদনাশকের ব্যবহার (মেট্রিক টন)

বছর ব্যবহৃত আপদনাশকের পরিমাণ (মেট্রিক টন)
১৯৯২ ৭৩০৭.২২
১৯৯৩ ৭৬৪০.৪৯
১৯৯৪ (ছয় মাস) ৪৭৪৪.৮

 

ভূমির ব্যবহার ও ফসল পরিসংখ্যান

ভূমির ব্যবহার ও ফসল পরিসংখ্যান – কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ বিষয়ের একটি পাঠ। এই পাঠটি ১ নং ইউনিটের ১.৪ নং পাঠ।

 

ভূমির ব্যবহার ও ফসল পরিসংখ্যান , কৃষি পরিচিতি ও পরিবেশ 

 

বাংলাদেশে মোট জমির পরিমাণ প্রায় ১,৪৯,০০,০০০ হেক্টর (বি.বি.এস. ২০০০) । এ দেশের ভূভাগ বিভিন্ন খাতে ব্যবহৃত হেয়েছ।

এগুলো হলো ঃ

১। বনভূমি

২। আবাদের অনুপোযোগী জমি বাংলাদেশে মোট জমির পরিমাণ প্রায় ১,৪৯,০০,০০০ হেক্টর

৩। আবাদযোগ্য বা চাষযোগ্য জমি

 

আবাদযোগ্য জমিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা ঃ

ক) আবাদযোগ্য বা চাষযোগ্য পতিত জমি

খ) চাষকৃত ফসলী জমি ।

চাষকৃত ফসলী জমিকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো ঃ র) বর্তমান বা চলতি পতিত জমি প্রকৃত ফসলী জমি প্রকৃত ফসলী জমিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা ঃ

ধ) এক ফসলী জমি

ন) দ্বি—ফসলী জমি

প) ত্রি—ফসলী জমি

বাংলাদেশে প্রায় ২৬,২৮,০০০ হেক্টর জমিতে বন রয়েছে যা মোট স্থলভাগের প্রায় শতকরা ১৮ ভাগের মত। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য কোন দেশের ২৫% বনাঞ্চল থাকা উচিত।

১। বনভূমি বাংলাদেশে প্রায় ২৬,২৮,০০০ হেক্টর জমিতে বন রয়েছে যা মোট ভূমির প্রায় শতকরা ১৮ ভাগের মত (বি.বি.এস. ২০০০)। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য কোন দেশের ২৫% বনাঞ্চল থাকা উচিত। বনভূমির দিক হ’তে প্রধান পাঁচটি বৃহত্তর জেলা হচ্ছে— পার্বত্য চট্টগাম, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং টাঙ্গাইল। যে সব জেলায় মোটেই বনাঞ্চল নেই সেগুলো হচ্ছে বৃহত্তর ফরিদপুর, যাশোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া ও পাবনা। সাধারনভাবেই এদেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ কম তারপরেও যেভাবে অনিয়ন্ত্রিত এবং অপরিকল্পিত উপায়ে বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে তা যদি রোধ না করা হয় তবে ভবিষ্যতে এ দেশ মরুভূমিতে পরিণত হ’তে পারে যার কিছু আলামত এখনই দেশের উত্তরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে।

২। আবাদের অনুপোযোগী জমি এ জমিতে বাড়ীঘর, হাট—বাজার, শহর—বন্দর, অফিস—আদালত, স্কুল—কলেজ, মস্জিদ—মন্দির, মাদ্রাসা ইত্যাদি অবস্থিত। এর পরিমাণ প্রায় ৩৪,১৫,০০০ হেক্টর যা মোট জমির শতকরা প্রায় ২৩ ভাগ (বি.বি.এস. ২০০০)।

৩। আবাদযোগ্য জমি চাষযোগ্য পতিত জমি, চলতি পতিত জমি ও প্রকৃত ফসলী জমির পরিমাণের সমষ্টি হলো আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ। আবাদযোগ্য বা চাষযোগ্য জমি বলতে প্রকৃতপক্ষে কতটুকু জমিতে ফসল আবাদ করা সম্ভব তাকে বুঝায়। চাষযোগ্য পতিত জমি, চলতি পতিত জমি ও প্রকৃত ফসলী জমির পরিমাণের সমষ্টি হলো আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ। আরও সহজভাবে বলা যায়

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০০ অনুসারে এ দেশে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ৮৮,০৩,২৩৯ হেক্টর। নিম্নে এর অন্যান্য শ্রেণীবিভাগগুলো আলোচনা করা হলো ঃ

(ক) আবাদযোগ্য বা চাষযোগ্য পতিত জমি:

বাড়ী—ঘর, হাট—বাজার, অফিস—আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ—মন্দির ইত্যাদির আশেপাশে কিছু জমি পতিত থাকে যা কিছুটা যত্ন নিলেই চাষাবাদের আওতায় আনা যায়। এরূপ জমিকে আবাদযোগ্য পতিত জমি বলে এবং এর পরিমাণ প্রায় ৩ লক্ষ হেক্টর যা মোট জমির শতকরা প্রায় ২ ভাগ। এরূপ পতিত জমির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে।

 

(খ) চাষকৃত ফসলী জমি চাষকৃত ফসলী জমি:

বলতে বুঝায় যে জমি চাষাবাদ করে ফসল উৎপাদন করা হয়। চাষকৃত ফসলী জমি = আবাদযোগ্য জমি Ñ আবাদযোগ্য পতিত জমি। অন্য কথায়, চাষকৃত ফসলী জমি = চলতি পতিত জমি + প্রকৃত ফসলী জমি। এর পরিমাণ প্রায় ৮৫ লক্ষ হেক্টর, যা মোট জমির শতকরা প্রায় ৫৭ ভাগ।

 

(গ) চলতি বা বর্তমান পতিত জমি:

অন্যান্য বছর আবাদ করা হলেও কোন কারণে আলোচ্য বছরে কমপক্ষে এক মৌসুমের জন্যও আবাদ করা না হলে তাকে চলতি বা বর্তমান পতিত জমি বলে। কারণগুলো হ’তে পারে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খরা, বীজের অভাব ইত্যাদি। বাংলাদেশে প্রায় ৩.৪৯ লক্ষ হেক্টর চলতি পতিত জমি আছে যা কমিয়ে শুন্যতে আনতে হবে। এর পরিমাণ মোট জমির শতকরা প্রায় ২.৩৪ ভাগ।

(ঘ) প্রকৃত ফসলী জমি:

এক, দ্বি এবং ত্রি—ফসলী জমির যোগফলই হলো প্রকৃত ফসলী জমি। আমাদের দেশের প্রায় ৮১.৩৮ লক্ষ হেক্টর জমি প্রকৃত ফসলী জমির আওতাভূক্ত। এক, দ্বি এবং ত্রি—ফসলী জমির যোগফলই হলো প্রকৃত ফসলী জমি। আমাদের দেশের প্রায় ৮১.৩৮ লক্ষ হেক্টর জমি প্রকৃত ফসলী জমির আওতাভূক্ত। এর পরিমাণ মোট জমির শতকরা প্রায় ৫৪.৬১ ভাগ।

(ঙ) এক ফসলী জমি:

যে জমিতে সারা বছর একটি মাত্র ফসল জন্মানো হয় তাকে এক—ফসলী জমি বলে। আমাদের দেশে এক ফসলী জমির পরিমাণ প্রায় ৩০ লক্ষ হেক্টর। এরূপ জমির পরিমাণ ক্রমশঃ কমে আসছে। এর পরিমাণ প্রকৃত ফসলী জমির শতকরা প্রায় ৩৭ ভাগ।

(চ) দ্বি ফসলী জমি:

যে জমিতে বছরে দুটি ফসল জন্মানো হয় তাকে দ্বি—ফসলী জমি বলে। এদেশে দ্বি—ফসলী জমির পরিমাণ ৪১.৪৮ লক্ষ হেক্টরেরও বেশি। এ জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এর পরিমাণ প্রকৃত ফসলী জমির শতকরা প্রায় ৫১ ভাগ।

(ছ) ত্রি—ফসলী জমি:

যে জমিতে বছরে তিনটি ফসল জন্মানো হয় তাকে ত্রি—ফসলী জমি বলে । আমাদের দেশে বর্তমানে ত্রি—ফসলী জমির পরিমাণ প্রায় ১০ লক্ষ হেক্টর। নতুন নতুন প্রযুক্তি, জাতের উদ্ভব, কৃষি উপকরণ এবং সেচ সুবিধা বৃদ্ধির ফলে এর পরিমাণ দিন দিন বেড়ে চলেছে। এটি প্রকৃত ফসলী জমির শতকরা প্রায় ১২ ভাগ। সর্বমোট ফসলী জমি সর্বমোট ফসলী জমি = এক ফসলী জমি + (দ্বি—ফসলী জমি ২) + (ত্রি—ফসলী জমি৩)।

খরিপ—১, খরিপ—২ এবং রবি মৌসুম মিলিয়ে এক বছরে সর্বমোট যে পরিমাণ জমিতে আবাদ করা হয় তাই সর্বমোট ফসলী জমি। সর্বমোট ফসলী জমি = এক ফসলী জমি + (দ্বি—ফসলী জমি ী ২) + (ত্রিফসলী জমি ী ৩)। বাংলাদেশে মোট ফসলী জমির পরিমাণ প্রায় ১,৪২,৭৮,১৩৮ হেক্টর (বি.বি.এস.
২০০০)।

কোন দেশের মোট কী পরিমাণ জমিতে কী কী ফসল আবাদ করা হয, সেগুলোর মোট উৎপাদন কত এবং প্রতি হেক্টরে সেগুলোর উৎপাদনের পরিমাণ এবং তার হিসাব সম্বন্ধীয় প্রতিবেদনকে ফসল পরিসংখ্যান বলে। দেশে কোন বছর কী পরিমাণ ধান, গম, পাট, আখ, তামাক, ডাল ও তৈল জাতীয় এবং অন্যান্য ফসল উৎপন্ন হয় তা একমাত্র ফসল পরিসংখ্যান হ’তে পাওয়া সম্ভব।

ধানের জমির মধ্যে আমন ধান ৫৮৪৩.৭ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপন্ন হয় যা মোট ধানী জমির শতকরা ৫৭ ভাগ। নিম্নের ছক (২) হ’তে দেখা যায় যে ধানই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে জন্মে। ধানের জমির মধ্যে আমন ধান ৫৮৪৩.৭ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপন্ন হয় যা মোট ধানী জমির শতকরা ৫৭ ভাগ। বোরো ধান উৎপন্ন হয় ২৫৮০.৩ হাজার হেক্টরে এবং আউশ ধান ১৬৪৯.৪ হাজার হেক্টরে। মোট ধানী জমির শতকরা ২৫.৫ ও ১৬.৪ ভাগে যথাক্রমে বোরো ও আউশ ধান উৎপন্ন হয়।

বর্তমানে (১৯৯৩’৯৪) সর্বমোট ১০০৭৩.৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপন্ন হয় এবং মোট উৎপাদনের পরিমাণ ১৮৩০২ হাজার মেট্রিক টন। গত কয়েক বছরের খতিয়ান হ’তে দেখা যায় যে গম চাষের জমির পরিমাণ মোটামুটি স্থিতিশীল। বর্তমানে ৮৮২.২ হাজার হেক্টর জমিতে গম উৎপাদন করা হয় এবং উৎপাদনের পরিমাণ ১৯০৮ হাজার মেট্রিক টন। আন্তজার্তিক বাজারে পাটের মূল্য কমে যাওয়ায় পাট চাষের জমির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৪৭৭.৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হচ্ছে এবং উৎপাদনের পরিমাণ ৮১২ হাজার মেট্রিক টন।

বর্তমানে ১৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে ৬৯৫১ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপন্ন হচ্ছে। তামাক অর্থকরী ফসল। তামাক উৎপাদনের জমি এবং উৎপাদন মোটামুটি স্থিতিশীল। ডাল ফসল ও তৈলবীজ ফসলের উৎপাদন ও জমির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে এবং এ দু’টি ফসলই এখন মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে বিদেশ হ’তে আমদানী করতে হয়। বর্তমানে ৫৪৬.৭ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ডাল ফসল এবং ৫১১.৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন তৈলবীজ ফসলের চাষ করা হয এবং উৎপাদনের পরিমাণ যথাক্রমে ৪১৭ ও ৭০০ হাজার মেট্রিক টন।

ছক — ২ ঃ প্রধান প্রধান ফসলের আবাদকৃত জমির পরিমাণ ও উৎপাদন ।