আজকে আমরা ব্যবহারিকঃ ব্রয়লার খামারের প্রকল্প প্রস্তুতকরণ আলোচনা করবো।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর মুরগির খামার স্থাপন ইউনিটের ব্যবহারিক অংশের অন্তর্গত।
চূড়ান্ত মূল্যায়ন – মুরগির খামার স্থাপন
আমাদের দেশে আমিষের অভাব খুবই প্রকট। আমিষের এ অভাব মেটাতে মুরগি পালনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে । খুব অল্প সময়ে অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে মুরগি পালন একটি লাভজনক ও সম্ভাবনাময় কৃষি শিল্প হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে । আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সঠিক পরিকল্পনায় মুরগি খামার স্থাপনের মাধ্যমে মুরগি পালনকে লাভজনক করে তোলা যায় ।
মুরগি খামার দুধরনের হতে পারে । যেমন- পারিবারিক মুরগি খামার ও বাণিজ্যিক মুরগি খামার । পারিবারিক মুরগি খামারে অল্পসংখ্যক মুরগি পালন করে সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে বাণিজ্যিক মুরগি খামার গড়ে তোলা যায় । উৎপাদনের উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে মুরগির খামার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে ।
মাংস উৎপাদনের জন্য মুরগি পালন করলে একে বলা হয় ব্রয়লার খামার। আবার ডিম উৎপাদনের জন্য খামার করলে একে বলা হয় লেয়ার বা ডিমপাড়া মুরগির খামার । তবে যে ধরনের খামারই স্থাপন করা হোক না কেন তা লাভজনক করতে চাইলে প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা, বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা ও সঠিক পরিচালনা ।
এ ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে মুরগির খামারের জন্য স্থান নির্বাচন, ব্রয়লার এবং ডিমপাড়া মুরগির খামার পরিকল্পনা ও স্থাপন, খামারের দৈনন্দিন কাজকর্ম, ব্রয়লার এবং ডিমপাড়া মুরগির খামারের প্রকল্প প্রস্তুতকরণ ইত্যাদি বিষয়গুলো তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিকসহ আলোচনা করা হয়েছে ।
মুরগির খামার স্থাপন
সংক্ষিপ্ত ও রচনামূলক প্রশ্ন
১। খামার বলতে কী বোঝেন? বিভিন্ন ধরনের খামারের নাম লিখুন ।
২ । খামারের স্থান নির্বাচনের সময় কী কী বিষয় বিবেচনা করতে হয়?
৩। কী কী বিষয় বিবেচনায় রেখে ব্রয়লার খামারের পরিকল্পনা করতে হয় ?
৪। লেয়ার খামার পরিকল্পনায় বিবেচ্য বিষয়গুলো বর্ণনা করুন ।
৫। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ব্রয়লারের ঘরের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা ছকের মাধ্যমে দেখান ।
৬। লেয়ার খামার স্থাপন ও পরিচালনার খাতগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করুন ।
৭। কীভাবে খামারের আয় হয়?
৮ ৷ মুরগি খামারের ম্যানেজারের দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্ণনা করুন ।
৯। খামারে একজন শ্রমিকের কাজ কী কী?
১০। সপ্তাহে ৩০০ ব্রয়লার উৎপাদনের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তুত করুন ।
আজকে আমরা ব্যবহারিকঃ ডিমপাড়া মুরগি খামারের একটি প্রকল্প প্রস্তুতকরণ আলোচনা করবো।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর মুরগির খামার স্থাপন ইউনিটের ব্যবহারিক অংশের অন্তর্গত।
ব্যবহারিকঃ ডিমপাড়া মুরগি খামারের একটি প্রকল্প প্রস্তুতকরণ
পদক্ষেপ ১ঃ খামারের ধরন/শ্রেণী/টাইপ/বৈশিষ্ট্য
i) বাদামি খোসার ডিম উৎপাদনকারী খামার।
ii) দৈনিক ডিম উৎপাদন- ৫০০টি বাজারজাত করার উপযোগী ডিম ।
iii) দৈনিক প্রকৃত ডিম উৎপাদন- ৫১০টি (গুণাগুণ নির্ধারণের জন্য ২% ডিম বাছাইয়ের সময় বাদ যাবে)।
(iv) মুরগির ঝাঁকে সারাবছর দৈনিক ডিম উৎপাদনের হার ৭৫% ধরতে হবে ।
(v) ডিম উৎপাদনকাল- উৎপাদন শুরু হওয়া থেকে এক বছর পর্যন্ত (কারও কারও মতে উৎপাদন হার ১০% এ পৌঁছার সময় হতে এক বছর)।
vi) মুরগিগুলোর সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকার ক্ষমতা গড়ে বার্ষিক ৮৮% বা গড়ে বার্ষিক মৃত্যুহার ১২% ধরতে হবে ।
viii) পুলেট গৃহায়ণের বয়স- ১ দিন অথবা ১৫-১৬ সপ্তাহ বয়সের পুলেট। ধরুন, এ প্রকল্পের পুলেটের বয়স ১৬ সপ্তাহ ।
পদক্ষেপ ২ঃ স্থায়ী খরচ
১. থাকার জায়গা বা থাকার ঘর
ক. লিটার পদ্ধতি
লিটার ব্যবস্থাপনায় বা মেঝে পালন পদ্ধতিতে ৬৮০টি পুলেটের জন্য ২৫৯.২৫ বর্গমিটার (২৩৮০ বর্গফুট) আকারের ১টি ঘরে ৩২.৪০ বর্গমিটার (২৯৭.৫ বর্গফুট) আকারের ৮টি কক্ষ তৈরি করুন । অথবা ১২৯.৬২ বর্গমিটার (১১৯০ বর্গফুট) আকারের ২টি ঘর তৈরি করুন । প্রতিটি ঘর ৩২.৪০ বর্গমিটার (২৯৭.৫ বর্গফুট) আকারের ৪টি কক্ষে ভাগ করুন । প্রতিটি কক্ষে ৯৬টি পুলেট রাখুন ।
ঘরের প্রকৃতি ও আকৃতি ঃ
মেঝে পাকা; চালা টিনের (G. I. sheet), দোচালা (gable type), বেড়া মেঝেসংলগ্ন ৬০-৭৫ সে.মি. (২.০-২.৫ ফুট) টিন অথবা ইটের দেয়ালের উপর ১২০-১৩৫ সে.মি. (৪.০-৪.৫ ফুট) তারজালি অথবা লোহার গ্রিল দিয়ে তৈরি করুন । দরজা কাঠ বা লোহার ফ্রেমে কাঠ বা টিন দিয়ে তৈরি করুন। প্রতি বর্গমিটারের তৈরি খরচ ১,৫০০.০০ টাকা এবং ঘরের জন্য মোট খরচ = ৩,৭৪,৮৭৫.০০ টাকা ।
খ. খাঁচা পদ্ধতি
প্রতিটি মুরগির জন্য জায়গার পরিমাণ ৪৩৭ বর্গ সেন্টিমিটার । একসঙ্গে প্রতি ইউনিট খাঁচায় মুরগি রাখার সংখ্যা ৫টি । প্রতি ইউনিট খাঁচার আকার ২১৮ বর্গ সেন্টিমিটার । ৬৮০টি মুরগির খাঁচার ইউনিট সংখ্যা ১৩৬ । প্রতি ইউনিট খাঁচার দাম ৫০০.০০ টাকা। খাঁচা স্থাপনের ঘরের আকার ১১৩ বর্গমিটার । প্রতি বর্গমিটার ঘর তৈরির খরচ ১৫০০.০০ টাকা এবং মোট ঘর তৈরির খরচ ৬৮,০০০.০০ টাকা ।
খাঁচাসহ মুরগির ঘর তৈরির খরচ
ক) খাঁচাবাবদ খরচ
= ৬৮,০০০.০০
খ) ঘরবাবদ খরচ
= ১,৬৯,৫০০.০০
মোট টাকা
= ২,৩৭,৫০০.০০
২. খাওয়ার জায়গা (Feeding space)
ক. যদি লম্বা খাবার পাত্রে (feed trough) খাদ্য দেয়া হয় তাহলে প্রতিটি মুরগির জন্য ১০ লিনিয়ার সেন্টিমিটার (৪ লিনিয়ার ইঞ্চি) খাওয়ার জায়গা লাগবে। প্রতিটি খাবার পাত্র যদি দৈর্ঘ্যে ১০৭ সে.মি. (৩.৫ ফুট), প্রস্থে ১৫ সে.মি. (৬ ইঞ্চি), গভীরতায় ১৫ সে.মি. (৬ ইঞ্চি) হয় তাহলে প্রতিটি খাদ্য পাত্রে ২১টি মুরগি একসঙ্গে খেতে পারবে। এরূপ মোট পাত্র লাগবে ৩২টি । নির্মাণসামগ্রী কাঠ বা টিন বলে প্রতিটির নির্মাণ খরচ পড়বে আনুমানিক ২৫০.০০ টাকা । মোট খরচ পড়বে ৬,৫০০.০০ টাকা ।
খ. যদি ঝুলন্ত পাত্র (যধহমরহম ভববফবৎ) হয় তাহলে প্রতি পাত্রে খাবে ১২টি মুরগি। অতএব মোট পাত্রের সংখ্যা হবে ৫৬টি। প্রতিটির মূল্য ২০০.০০ টাকা করে ধরলে মোট মূল্য পড়বে ১১,২০০.০০ টাকা ।
৩. পানির পাত্রের জায়গা (Drinker space or Waterer space)
ক. যদি লম্বা পাত্র হয় তাহলে প্রতিটি মুরগির জন্য ১০ লিনিয়ার সে.মি. (৪ লি.ই.) এবং যদি প্রতিটি পাত্র দৈর্ঘ্যে ১০৭ সে.মি. (৩.৫ ফুট), প্রস্থে ১৫ সে.মি. (৬ ই.) এবং গভীরতায় ১৫ সেমি. ( ইঞ্চি) হয় তাহলে প্রতিটি পাত্রে ২৪টি মুরগি পানি পান করতে পারবে (খাদ্য খাওয়ার মতো হুড়োহুড়ি করে না বলে বেশি সংখ্যায় পান করতে পারবে) । অতএব, মোট পাত্রের সংখ্যা ২৮টি (প্রতি কক্ষে ৪টি করে) । নির্মাণসামগ্রী স্টিল প্লেট বা টিন হলে এবং প্রতিটির মূল্য ৩০০.০০ টাকা ধরলে মোট খরচ ৮৪০০ টাকা পড়বে ।
খ. ঝুলন্ত পানির পাত্র (hanging drinker) হলে প্রতিটিতে পান করবে ২৪টি মুরগি । এখানেও মোট পাত্রের সংখ্যা ২৮টি (প্রতি ঘরে ৪টি করে) । প্রতিটি ২০০.০০ টাকা হিসেবে মোট খরচ পড়বে ৫৬০০.০০ টাকা ।
৪. ডিম পাড়ার জায়গা
ক. মেঝে বা লিটারে পালন পদ্ধতিতে প্রতি ৫টি মুরগির জন্য ১টি করে ডিমপাড়ার বাসা সরবরাহ করতে হবে । প্রতিটি বাসা দৈর্ঘ্যে ৩০ সে.মি. (১ ফুট), প্রস্থে ৩০ সে.মি. (১ ফুট) ও গভীরতায় ৪৫ সে.মি. (১.৫ ফুট) হলে মোট বাসা লাগবে ১৩৬টি ।
৫. বাসা সাজানোর স্টাইল
ক. লিটার পদ্ধতি :
এ পদ্ধতিতে লম্বালম্বিভাবে অথবা একটার পাশে আরেকটা এবং এভাবে ৪টি বা ৫টি বাসার ১ ইউনিট কিংবা ১ ইউনিট বাসার উপর আরও ১ ইউনিট বাসা সিড়ির মতো করে স্থাপন করা যায় । মোট ইউনিট সংখ্যা ৪টি হিসেবে ৪০টি; আর ৫টি হিসেবে ৩২টি। প্রতি কক্ষে ৫টি বা ৪টি ইউনিট থাকবে । ডিমপাড়ার বাসা অবস্থান কক্ষের দেয়ালের মেঝেসংলগ্ন স্থানে এবং দেয়ালের গায়ে সমান্তরালভাবে সাজানো হলে ভালো হয়। এতে সূর্য্যের আলো পড়বে না। নির্মাণসামগ্রী স্টিল প্লেট, টিন বা কাঠ । প্রতি ইউনিট ২০০.০০ টাকা হিসেবে মোট মূল্য ৮,০০০.০০ টাকা ।
খ. খাঁচায় পালন পদ্ধতি :
এ পদ্ধতিতে পালন করলে আলাদাভাবে ডিম পাড়ার বাসা বা বাক্স লাগে না । খাঁচাগুলো ঢালসহ এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে করে মুরগি ডিম পাড়া মাত্রই ডিমগুলো গড়িয়ে গড়িয়ে খাঁচার সামনের গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বাইরের বর্ধিত অংশ এসে জড়ো হয় । এ খাতে আলাদা কোনো খরচ লাগে না ।
দৈনিক (২৪ ঘন্টায়) আলোর প্রয়োজন হবে ১৬ ঘন্টা । কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা ঋতু এবং বছরের ছোট- বড় দিন অনুযায়ী দৈনিক ২.৫ ঘন্টা হতে ৪ ঘন্টা পর্যন্ত হবে । আলোর উৎস বৈদ্যুতিক বাল্ব । যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই সেখানে উজ্জ্বল হারিকেনের আলো দ্বারা ব্যবস্থা করতে হবে ।
বাল্বের প্রকৃতি ঃ
বাল্বের শক্তি হবে ৪০ ওয়াট; আলোর রঙ স্বাভাবিক; আলোর তীব্রতা মৃদু (২০ লাক্স) হবে । ১টি বাল্বের আলোকায়ন এলাকা ৭২,৯০০ বর্গ সে. (১০০০ ব.ফু.)। বাল্ব স্থাপনের এক পয়েন্ট হতে আরেক পয়েন্টের দূরত্ব হবে ৬১০ সে.মি. (২০ ফুট), মোট বাল্বের সংখ্যা হবে ২৪টি । বাল্ববাবদ বছরে গড়ে মোট খরচ ১,০০০.০০ টাকা পড়তে পারে ।
পদক্ষেপ ৩ঃ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা
ক. জনশক্তি-
মাসিক ১,০০০.০০ টাকা হিসেবে ২ জন শ্রমিকের এক বছরের বেতন
= ২৪,০০০.০০
মাসিক ১,০০০.০০ টাকা হিসেবে ১ জন পাহাড়াদারের এক বছরের বেতন মোট
= ১২,০০০.০০
মোট
= ৩৬,০০০.০০
বি. দ্র.ঃ
হিসেব ও অন্যান্য তদারকি কাজ মালিক নিজেই করবেন
খ. প্রতি ব.মি. ২০০০.০০ টাকা হিসেবে ১৩ ব.মি. (৩.৯৬ মি. × ৩.৩০ মি.) আকারের অফিস ঘর তৈরির
খরচ = ২৬,০০০.০০
গ. ১২ মেট্রিক টন খাদ্য ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১টি খাদ্য গুদাম নির্মাণবাবদ ব্যয় = ৪০,০০০.০০
ঘ. প্রতি ব.মি. ৩০০ টাকা হিসেবে ১.৯৮ মি. x ১.৬০ মি. = ৩.১৫ ব.মি. আকারের অসুস্থ্য ও মৃত মুরগি রাখার জায়গার জন্য খরচ = ১,০০০.০০
ঙ. সার বা বিষ্ঠা রাখার স্থান (ছাউনিসহ পাকা গর্ত)- বছরে ২০ টন বিষ্ঠা ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন (প্রতি মুরগি বছরে ৩০ কেজি বিষ্ঠা ত্যাগ করে) ৩৯.২১ ঘনমিটার আকারের গর্ত তৈরির খরচ (প্রতি ঘনমিটার ২৫০.০০ টাকা হিসেবে) = ৯,৮০২.০০
চ. মৃত মুরগি সৎকাজের (disposal pit ) জায়গার জন্য খরচ (বছরে ১২% হিসেবে ৮০টি মুরগি মরতে পারে) = ৫০০.০০
মোট স্থায়ী খরচ
১. মুরগির ঘর –
ক. লিটার পদ্ধতিতে-
খ. খাঁচা পদ্ধতিতে-
= ৩,৭৪,৮৭৫.০০
= ২,৩৭,৫০০.০০
২. ম্যানেজার বা মালিকের অফিস ঘর-
= ২৬,০০০.০০
৩. ডিম সংরক্ষণাগার-
= ৫,০০০.০০
8. গুদাম ঘর-
= ৪০,০০০.০০
৫. অসুস্থ ও মৃত মুরগির ঘর
= ১,০০০.০০
৬. বিষ্ঠা সংরক্ষণাগার-
= ৯,৮০২.০০
৭. মৃত মুরগি সৎকারের জায়গা-
= ৫০০.০০
৮. আসবাবপত্র-
= ২৫,০০০.০০
মোট স্থায়ী খরচ-
ক. লিটার পদ্ধতিতে-
= ৪,৮২,১৭৭.০০
খ. খাঁচা পদ্ধতিতে-
= ৩,৪৪,৮০২.০০
আবর্তক বা চলতি খরচ
১. প্রতিটি ৭৫.০০ টাকা হিসেবে ৬৮০টি পুলেটের মূল্য
= ৫১,০০০.০০
২. বার্ষিক মোট খাদ্য খরচ-
২৪ মেট্রিক টন × ১১০০০.০০ (প্রতিদিন প্রতি মুরগির জন্য ১১০ গ্রাম এবং প্রতি মেট্রিক টন খাদ্য ১১০০০ টাকা হিসেবে)
= ২,৬৪,০০০.০০
৩. লিটার খরচ-
বছরে প্রতি কক্ষে ৮ বস্তা এবং প্রতি বস্তা ২৫.০০ টাকা হিসেবে
= ১,৬০০.০০
8. ওষুধপত্র ও টিকাবাবদ খরচ (মুরগি প্রতি ২০০ হিসেবে)-
= ১,৩৬০.০০
৫. জনশক্তিবাবদ খরচ
= ৩৬,০০০.০০
৬. বছরে খাওয়ার খরচ
= ৫০০০.০০
মোট
= ৩,৫৮,৯৬০.০০
লাভক্ষতির হিসেব
বার্ষিক মোট প্রতিপালন ব্যয়
১. মোট আবর্তক খরচ
= ৩,৫৮,৯৬০.০০
২. মোট মূলধনের উপর সুদ (বছরে ১৩% হারে)
লিটার পদ্ধতিতে-
খাচাঁ পদ্ধতিতে-
= ৮৩,৬০১.০০
= ৫৯,৬৪৬.০০
৩. অপচয় খরচ-
ঘরবাড়ির জন্য বছরে ২% হারে (লিটার পদ্ধতিতে)
আসবাবপত্র- (১০% হারে)
= ১০,০৪০.০০
= ২৫,০০.০০
মোট খরচ
ক. লিটার পদ্ধতিতে-
= ৪,৫৫,১০১.০০
খ. খাঁচা পদ্ধতিতে-
= ৪,২১,১০৬.০০
বার্ষিক আয়
১. প্রতিটি ২.৫০ টাকা হিসেবে ১,৮২,৫০০ টি ডিম ভালো ডিম বিক্রিবাবদ আয়-
প্রতিটি ১.৫০ টাকা হিসেবে ২২৮১টি ডিম বাছাইয়ে বাদপড়া ডিম বিক্রিবাবদ আয়-
= ৪,৫৬,২৫০.০০
= ৩,৪২১.৫০
২. প্রতি মেট্রিক টন ৫০০.০০ টাকা হিসেবে বছরে ২০ মেট্রিক টন বিষ্ঠা বিক্রিবাবদ আয়-
= ১০,০০০.০০
৩. প্রতিটি ১০০.০০ টাকা হিসেবে ৫৯৮টি বাতিল মুরগি (ডিমপাড়া শেষে) বিক্রিবাবদ আয়-
আজকে আমরা ব্যবহারিকঃ ব্রয়লার খামারের প্রকল্প প্রস্তুতকরণ আলোচনা করবো।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর মুরগির খামার স্থাপন ইউনিটের ব্যবহারিক অংশের অন্তর্গত।
ব্যবহারিকঃ ব্রয়লার খামারের প্রকল্প প্রস্তুতকরণ
ব্রয়লার খামারের প্রকল্প প্রস্তুত করার জন্য নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করে নিন । যথা-
১. মূলধন : মূলধনের অবস্থা কী, আপনার নিজের টাকা আছে না-কি তা ব্যাংক থেকে ঋণ করতে হবে? কারণ মূলধন এবং বাজারজাতকরণের সুবিধার ওপর ভিত্তি করেই আপনি প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে বা প্রতি মাসে বা প্রতি দুমাসে বা প্রতিবছর কত ব্যাচ ব্রয়লার বিক্রি করবেন তা ঠিক করবেন।
২. ১ নং এ বর্ণিত সময় ছকে আপনি কী পরিমাণ ব্রয়লার বিক্রি করবেন তার ওপর নির্ভর করে আপনার খামার স্থাপনের জমি, ব্রয়লারের থাকার ঘরের আকার ও সংখ্যা, প্রয়োজনীয় খাদ্যের পরিমাণ অনুসারে গুদামের ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় খাদ্য পাত্র, পানির পাত্র, ব্রুডিং যন্ত্রপাতি, খামার পরিচালনার লোকজনের জন্য অফিসসহ অন্যান্য সুবিধাসমূহ এবং তাদের বেতনভাতা, বাসস্থান প্রভৃতির খরচ যোগাড় করুন ।
৩. যদি জীবন্ত ব্রয়লার হিসেবে একসাথে বিক্রি করা না যায় তাহলে তাদের প্রক্রিয়াজাত (ঢ়ৎড়পবংং) করে বিক্রির ব্যবস্থায় আনুসঙ্গিক খরচের কথাও বিবেচনায় আনুন ।
৪. ব্রয়লার পালনে আপনার পছন্দমতো জাত/উপজাত বা স্ট্রেইন সহজে সুলভ মূল্যে পাওয়া যাবে কি-না সেদিকটায়ও নজর দিন।
৫. সুষম খাদ্য ন্যায্যমূল্যে সারাবছর সংগ্রহ করা যাবে কি-না সে ব্যাপারে চিন্তা করুন । ধীরভাবে ঠান্ডা মাথায় এ বিষয়গুলো চিন্তাভাবনা করে প্রকল্পের কাজে হাত দিন ।
প্রকল্প নমুনা প্রতি সপ্তাহে ৫০০ ব্রয়লার উৎপাদন প্রকল্প
স্থায়ী খরচ
ক. খামারের জমি ক্রয়-
প্রতি একর ১ লাখ টাকা হিসেবে ০.৭৫ একরের মূল্য = ৭৫,০০০.০০
খ. অবকাঠামো নির্মাণ-
i. ব্রয়লার ঘর- প্রতি বর্গফুট (০.০৯৩ বর্গমিটার) ২০০ টাকা হিসেবে ৫০০ বর্গফুট (৪৬.৪৮ বর্গমিটার) আকারের ৯টি টিনের ঘরের মূল্য
= ৯,০০,০০০.০০
ii. ম্যানেজারের কক্ষ- প্রতি বর্গফুট ২০০ টাকা হিসেবে ১২ ফুট × ১০ ফুট = ১২০ বর্গফুটের (১১.১৫ বর্গমিটার) টিনের চাল, দেয়াল, মেঝে পাকাসহ মূল্য
= ২৪,০০০.০০
iii. অফিস কক্ষ- প্রতি বর্গফুট ২০০ টাকা হিসেবে ২০ ফুট × ১৫ ফুট = ১৩০ বর্গফুটের (১২.০৮ বর্গমিটার) মূল্য
= ২৬,০০০.০০
iv. সাধারণ গুদাম- প্রতি বর্গফুট ১৫০ টাকা হিসেবে ১৫ ফুট × ১০ ফুট = ১৫০ বর্গফুটের (১৩.৯৪ বর্গমিটার) মূল্য
= ২২,৫০০.০০
v. খাদ্য গুদাম- প্রতি বর্গফুট ২০০ টাকা হিসেবে ৩০ ফুট x ২০ ফুট = ৬০০ বর্গফুটের (৫৫.৭৭ বর্গমিটার) মূল্য
= ১,২০,০০০.০০
vi. শ্রমিক কক্ষ- প্রতি বর্গফুট ২০০ টাকা হিসেবে ১২ ফুট × ১০ ফুট = ১২০ বর্গফুটের মূল্য
= ২৪,০০০.০০
vii. বিষ্ঠা সংরক্ষণ স্থান- মাসিক ৩ কেজি হিসেবে বছরে ১৫.৫ টনের মূল্য
= ১০,০০০.০০
সর্বমোট = ২, ০১৫০০.০০
গ. যন্ত্রপাতি
i. বাল্ব বা হিটার ব্রুডার- প্রতিটি ৫০০০ টাকা হিসেবে ১০টির (১টি আপদকালীনসহ) মূল্য
= ৫০,০০০.০০
ii. থার্মোমিটার- ১টি আপদকালীনসহ মোট ৫টির (প্রতি ঘরে মাত্র ৩/৪ সপ্তাহ ব্যবহার) মূল্য
= ৬০০.০০
iii. হাইড্রোমিটার- প্রতিটি ৫০০ টাকা হিসেবে ১০টির (১টি আপদকালীনসহ) মূল্য
= ৫০০০.০০
iv. খাদ্য পাত্র-
৪ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত প্রতিদিনের জন্য ২.৫ সে.মি. জায়গা ধরে মোট ৫৬টি খাদ্য পাত্রের মূল্য (প্রতিটি ১০০ টাকা হিসেবে)
৫-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিটি ৭.৫ সে.মি. ধরে ১২.৫ সে.মি. লম্বা ১০০টি পাত্রের মূল্য (প্রতিটি ১২৫ টাকা হিসেবে)
= ৫,৬০০.০০
= ১২,৫০০.০০
v. পানির পাত্র- = ৫,৬০০.০০ = ১২,৫০০.০০
৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ২৮টির মূল্য (খাদ্য পাত্রের অর্ধেক সংখ্যা)৫-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত ৫০টির মূল্য (প্রতিটি ১০০ টাকা হিসেবে)
আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ খামারের দৈনন্দিন কাজকর্ম ।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর মুরগির খামার স্থাপন ইউনিটের অন্তর্গত।
খামারের দৈনন্দিন কাজকর্ম
ম্যানেজারের দায়িত্ব ও কর্তব্য
খামারের ম্যানেজারের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিম্নরূপ-
সূর্য উঠার আগে খামারে গমন ।
প্রতি ঘরে আলোকায়নের অবস্থা নিরীক্ষণ ।
সকালের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক হাজিরা নিরীক্ষণ ।
যথাসম্ভব সব ঘর প্রদক্ষিণ করে মুরগির স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ ।
শ্রমিকদের সাহায্যে মৃত, দুর্বল ও রোগাক্রান্ত মুরগি নির্দিষ্ট জায়গায় অপসারণ ।
প্রত্যেক ঘরে খাবার পাত্র, পানির পাত্র পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা তদারকী করা।
খাদ্য গুদাম খুলে দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণ ।
সকালের কাজ শেষ করে নাস্তা করার জন্য এক-দেড় ঘন্টা বিরতি। বিরতির পর অফিসে এসে ম্যানেজারকে নিম্নলিখিত কাজগুলো সারতে হবে-
সকাল ১০:০০-১২:০০ টার মধ্যে অফিসের কাজ সমাপ্ত ।
দুপুর ১২:০০ টায় মুরগির ঘরে গিয়ে ডিম পাড়ার অবস্থা অবলোকন এবং ডিম সংগ্রহকারী শ্রমিকদের কাজ পর্যবেক্ষণ ।
প্রথমবার (দুপুর বেলায়) মোট কতটি ডিম সংগ্রহ হলো তার হিসেব নেয়া ।
দুপুরের বিশ্রাম ।
বেলা ২:০০ টায় আবার মুরগির ঘরে খাদ্য সরবরাহ পর্যবেক্ষণ শেষে অফিসের কাজে যোগদান ।
বিকেল ৪:০০ টায় দ্বিতীয়বার ডিম সংগ্রহের পরিমাণ দেখে ঐদিনে মোট কতটি ডিম উৎপাদিত হলো তা হিসেবের খাতায় লিপিবদ্ধকরণ ।
বিকেল পাঁচটায় বাড়ি যাওয়ার আগে প্রত্যেক শ্রমিকদের নির্দিষ্ট কাজের হিসেব গ্রহণ ও মুরগির ঘরে গিয়ে মুরগির শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ।
আলোকায়নের অবস্থা ঠিক আছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করে বাড়ি গমন ।
শ্রমিকের কাজ
পোল্ট্রি খামারে একজন শ্রমিকের কাজ নিম্নরূপ-
সকালে খামারে এসে নিজের পরিহিত কাপড় বদলিয়ে খামারে কাজের নির্দিষ্ট পোষাক ধারণ ।
নির্ধারিত মুরগির ঘরে গিয়ে মৃত বা অসুস্থ বা দুর্বল মুরগি বাছাইকরণ ।
সাবান দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে খাবার পাত্র, পানির পাত্র প্রভৃতি পরিষ্কারকরণ ।
খাদ্য গুদাম হতে প্রত্যেক খাদ্য পাত্রে খাদ্য এবং পানির পাত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহকরণ ।
দুপুর বারটায় শ্রমিক নিজে বা ডিম সংগ্রহকারী শ্রমিকদের সঙ্গে থেকে তার ঘরের ডিম উত্তোলন করবেন।
ডিম সংগ্রহ ও জমা দেয়ার পর বিশ্রাম ।
বেলা ২:০০ টায় আবার মুরগির খাদ্য ও পানি সরবরাহকরণ ।
বিকেল ৪:০০ টায় দ্বিতীয়বার ডিম সংগ্রহ ।
প্রয়োজনে অথবা অসুবিধা দেখা দিলে ম্যানেজারের দৃষ্টি আকর্ষণ ।
বিকেল ৫.০০টায় রাতের পাহাড়াদারের খামারে আগমণ ও প্রত্যেক ঘরে মুরগির অবস্থা দর্শন ।
ঘরের দরজার তালা ঠিকমতো আটকানো আছে কি-না তা নিশ্চিতকরণ ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
১। সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (√) দিন ।
ক. ম্যানেজার প্রতিদিন কখন খামারে যান?
i) সূর্য ওঠার আগে
ii) সূর্য ওঠার পরে
iii) বেলা ৯:০০ টায়
iv) বেলা ৮:০০ টায়
খ. দ্বিতীয়বার কখন ডিম সংগ্রহ করা হয়?
i) বেলা ৩:০০ টায়
ii) বেলা ৩:৩০ টায়
iii) বেলা ৪:০০ টায়
iv) বেলা ৫ঃ০০ টায়
২। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন
ক. ম্যানেজার বাড়ি যাওয়ার পূর্বে খামারের আলোকায়নের অবস্থা যাচাই করেন না ।
খ. বেলা ১:০০ টায় মুরগির ঘরে খাদ্য সরবরাহ করা হয় ।
৩। শূন্যস্থান পূরণ করুন ।
ক. ম্যানেজার সকাল ডিম মধ্যে অফিসের কাজ সমাপ্ত করেন ।
খ. দেয়ার পর শ্রমিক বিশ্রাম নেন ।
৪। এক কথায় বা বাক্যে উত্তর দিন ।
ক. খাদ্য গুদাম খুলে দিয়ে ম্যানেজার কী করেন?
খ. শ্রমিক খাবার পাত্র, পানির পাত্র প্রভৃতি পরিষ্কার করার পূর্বে কী করেন?
আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ ডিমপাড়া মুরগির খামার পরিকল্পনা ও স্থাপন ।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর মুরগির খামার স্থাপন ইউনিটের অন্তর্গত।
ডিমপাড়া মুরগির খামার পরিকল্পনা ও স্থাপন
পরিকল্পনা
যে কোনো খামার পরিকল্পনা অর্থনৈতিক লাভের জন্য করা হয়। তাই ডিমপাড়া মুরগির খামার পরিকল্পনার বেলায়ও নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ চিন্তা করে খামার স্থাপন করতে হবে । যথা-
১. মূলধনের উৎস কী ? নিজের টাকা না ব্যাংক ঋণের টাকা?
২. আপনার খামার হতে বার্ষিক কত টাকা লাভ করতে চান তা স্থির করতে হবে ।
৩. আপনার স্থিরিকৃত পরিমাণ টাকা মুনাফা করতে হলে খামারজাত দ্রব্য হতে শতকরা ১০-১২ টাকা লাভের হারে মোট কত টাকা আয় করতে হবে তা হিসেব করতে হবে ।
৪. বর্তমান বাজার দরে কতগুলো ডিম বিক্রি করলে আপনি এ নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আয় করতে পারবেন তা হিসেব করতে হবে । একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে । যেমন- বার্ষিক গড়ে ৭০-৭৫% হারে খাবার ডিম বা অনিষিক্ত ডিম উৎপাদন এবং ৬০-৬৫% হারে বাচ্চা ফুটানো বা নিষিক্ত ডিম উৎপাদন ধরে, প্রতিটি ডিম গড়ে ২.৫০ ৩.০০ টাকা হিসেবে বিক্রি ধরে – বছর শেষে ৮৮% মুরগি সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকবে; আর বাকি পুরানো মুরগি বিক্রি করে ও উৎপাদন খরচ বাদে ১০-১২% লাভ থাকবে এ হিসেব করে পরিকল্পনা করতে পারেন ।
৫. ডিমের ব্যবহার অনুযায়ী ডিমপাড়া মুরগির খামার দুপ্রকার । যথা-
নিষিক্ত বা বাচ্চা ফুটানোর ডিম উৎপাদন খামার
অনিষিক্ত বা খাবার ডিম উৎপাদন খামার
আপনি কোন্ ধরনের খামার তৈরি করবেন তা ঠিক করুন। যদি বাচ্চা ফুটানোর ডিম উৎপাদন করেন তাহলে আপনি দুরকম বাচ্চা ফুটানোর ডিম উৎপাদন করতে পারেন । যথা-
বাচ্চা ফুটানোর ডিম উৎপাদনের খামার
খাবার ডিম উৎপাদনের খামার
আবার খোসার রঙ অনুযায়ী উপরের দুরকম উদ্দেশ্যের জন্যই আপনি
সাদা খোসার ডিম উৎপাদনকারী বা বাদামি খোসার ডিম উৎপাদনকারী মুরগির খামার করতে পারেন ।
৬. সাদা বা বাদামি খোসার খাবার ডিম বা বাচ্চা ফুটানোর ডিম উৎপাদনকারী মুরগি বা বাচ্চা কোথায় পাবেন, আপনি সেগুলো আনতে পারবেন কি-না সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে হবে ।
উপরোক্ত বিষয়সমূহে চিন্তাভাবনা করে খামার স্থাপনের কাজে হাত দিতে হবে ।
খামার স্থাপন ও পরিচালনার খরচ
খামার স্থাপন ও পরিচালনার খরচ দুই খাতে বিভক্ত । যথা-
ক) স্থায়ী খরচ
খ) আবর্তক বা চলমান বা চলতি খরচ
ক) স্থায়ী খরচ
স্থায়ী খরচের খাতওয়ারী হিসেব নিম্নরূপ-
খামার এলাকাভুক্ত জমির মূল্য ।
মুরগির গৃহায়ণ ব্যবস্থাবাবদ খরচ ।
ম্যানেজারের অফিস, ডিম সংরক্ষণাগার, খাদ্য গুদাম, খাদ্য ছাড়া অন্যান্য জিনিসপত্র রাখার স্থান, শ্রমিকদের বিশ্রাম ঘর, অসুস্থ ও মৃত মুরগি রাখার জায়গা নির্মাণবাবদ খরচ ।
আসবাবপত্র ও যানবাহন ক্রয়বাবদ খরচ ।
খ) আবর্তক খরচ
আবর্তক খরচে নিম্নবর্ণিত খাতসমূহ অন্তর্ভুক্ত । যথা-
নিষিক্ত ডিম বা ডিমের জন্য প্রজননক্ষম পুলেট ও ককরেলের মূল্য, অনিষিক্ত বা খাওয়ার ডিম উৎপাদনের জন্য উন্নতমানের পুলেটের মূল্য (হাইব্রিড)।
সুষম খাদ্যের মূল্য ।
টিকা এবং প্রতিষেধক ওষুধপত্রের মূল্য ।
খামার পরিচালনায় জনবলের বেতনভাতা খরচ ।
পরিবহণ ও যাতায়াত খরচ ।
মূলধনের সুদ ।
ডিপ্রেসিয়েসন বা অপচয় খরচ ।
মেরামত খরচ ।
বিদ্যুৎ ও পানির বিলবাবদ খরচ ।
এডভারটাইজিং বা বিজ্ঞাপন ব্যয় ।
নষ্ট বা বাদ যাওয়া ডিমের মূল্য ।
অসুস্থ বা মৃত মুরগির মূল্য ।
খামারের আয়
অন্যদিকে ডিমপাড়া মুরগি হতে আয়ের খাতওয়ারী হিসেব নিম্নরূপ-
ডিম বিক্রিবাবদ আয় ।
উৎপাদন শেষে জীবিত মুরগির বিক্রিত মূল্য ।
বিষ্ঠা বা সারের মূল্য ।
পুরনো বা অকেজো জিনিসপত্র বিক্রিবাবদ আয় ।
খামার স্থাপন
স্থায়ী খরচ
১. নির্দিষ্ট পরিমাণ জমির মূল্য, খামারে যতগুলো মুরগি রাখা হবে তাদের জন্য ঘরের জায়গাসহ গুদাম, অফিস, ডিম রাখার জায়গা রেখে যে পরিমাণ জমি লাগবে তার মূল্য । এলাকা অনুযায়ী প্রতি বিঘা জমির মূল্য কমবেশি হবে ।
২. প্রজাতি বা স্ট্রেইন অনুযায়ী যতগুলো মুরগি রাখা হবে তাদের মোট জায়গার পরিমাণ হিসেব করে ঘর তৈরি করতে হবে । সাদা খোসার ডিম উৎপাদনকারী প্রতিটি মুরগির জন্য ০.২৮ বর্গমিটার (৩ বর্গফুট) জায়গা এবং বাদামি খোসার ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জন্য ০.৩৭ বর্গমিটার (৪ বর্গফুট) জায়গা হিসেব করে থাকার ঘর তৈরি করতে হবে। এসব মুরগি লিটার বা খাঁচায় যে কোনো পদ্ধতিতে পালন করা যায় ।
খাঁচাতে প্রতিটি মুরগির জন্য ৪৩ বর্গ সে.মি. জায়গার প্রয়োজন হবে । কাজেই এ হিসেবে খাঁচা তৈরি করা হয় । খাঁচার সারি লম্বালম্বিভাবে এক সারি বা একটার উপর আরেকটা রেখে ৩/৪ সারি করা যায় । আবার সিড়ির মতো করে সাজিয়ে উভয় পার্শ্বেও সারি করা যায় ।
ঘরের চালা ঃ
ঘরের চালা পূর্বের পাঠে (পাঠ ৩.২) আলোচিত ব্রয়লারের ঘরের অনুরূপ হবে । বাংলাদেশের পরিবেশে দোচালা বা গেবল টাইপ চালই মুরগির জন্য বেশি আরামদায়ক ।
বেড়ার নমুনা :
ব্রয়লার ঘরের বেড়ার মতো লেয়ারের ঘরের বেড়ার উচ্চতার ১/৩ অংশ শক্ত দেয়াল, কাঠ বা বাঁশের চাটাই দিয়ে পূর্ণ করে বাতাস চলাচলের জন্য তারজালি বা বাঁশের চটি দিয়ে আড়াআড়িভাবে তৈরি করতে হবে। বেশি বাতাস বা বেশি শীত হতে মুরগিকে রক্ষার জন্য বেড়ার ফাঁকা অংশ প্রয়োজনে ঢেকে দেয়ার জন্য পলিথিন বা চটের পর্দার ব্যবস্থা করতে হবে ।
মেঝের প্রকৃতি ঃ
লিটার পদ্ধতিতে পালন করলে মুরগির ঘরের মেঝে পাকা হলে ভালো হয় । কাঁচা মেঝের ক্ষেত্রে শক্ত এঁটেল মাটির মেঝে হলেও চলবে । তবে এ ধরনের মেঝে বর্ষাকালে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যেতে পারে । শুকনো বালির মেঝের ক্ষেত্রে বর্ষাকালে সমস্যা হতে পারে ।
এছাড়াও ম্যানেজারের অফিস ঘর তৈরির খরচ প্রতি বর্গফুট (০.০৯৩ বর্গমিটার) হিসেবে মোট মূল্য ।
ডিম সংরক্ষণের ঘর তৈরি খরচ প্রতি বর্গফুট (০.০৯৩ বর্গমিটার) হিসেবে মোট মূল্য ।
খাদ্য গুদাম তৈরির খরচ- মুরগির সংখ্যা অনুসারে প্রতিটি মুরগির জন্য দৈনিক ১১০-১২০ গ্রাম খাদ্যের প্রয়োজন হিসেবে কমপক্ষে ২ মাসের খাদ্য সংরক্ষণাগার তৈরির খরচ ।
বিষ্ঠা বা সার রাখার স্থান নির্মাণের খরচ ।
মৃত মুরগি পুড়িয়ে ফেলা বা পাকা গর্তে ফেলে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখার স্থান নির্মাণবাবদ খরচ।
খ. ঘর তৈরির সাজসারঞ্জাম বিভিন্ন রকমের হতে পারে । যথা-
বাঁশ, টিন বা বিচালী ।
মাটির ঘর ।
ইট, সিমেন্ট বা পাকা দালান ঘর ।
গ. ঘর তৈরির সাজসরঞ্জাম অনুযায়ী প্রতি বর্গফুট ঘর তৈরির খরচ, তা যেভাবেই ঘর তৈরি করা হোক না কেন প্রতি বর্গফুট (০.০৯৩ বর্গমিটার) হিসেবে খরচ ধরে ঘরের মোট খরচ বের করতে হবে ।
ঘ. আসবাবপত্র ক্রয় বা তৈরিবাবদ খরচ-
খাবার পাত্রের দাম ।
পানির পাত্রের দাম ।
ডিম পাড়ার বাক্সের দাম ।
ডিম রাখার ঝুড়ি কেনার জন্য খরচ ।
ডিম বাছাই ও ছাটাই খরচ- যতগুলো ডিম বিক্রির অনুপযুক্ত হলো তার মূল্য ।
টিকা ও ওষুধপত্রের খরচ ।
খাদ্য সংগ্রহ, ডিম বাজারজাতকরণ ও ডিমপাড়া শেষে মুরগি বিক্রির জন্য পরিবহণ খরচ ।
বিভিন্ন কাজে ম্যানেজারের যাতায়াত খরচ ।
ঙ. খামারের জনশক্তির খরচ
ম্যানেজারের বার্ষিক বেতনভাতা ।
অফিস স্টাফের বার্ষিক বেতনভাতা ।
শ্রমিকদের বার্ষিক বেতনভাতা ।
এছাড়াও মূলধনের উপর বার্ষিক সুদ (ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে), জমিবাদে স্থায়ী খরচের অপচয়ের শতকরা হার ইত্যাদি । এভাবে যত খরচ হয় সব যোগ করে বার্ষিক খরচ/মোট খরচের হিসেব রাখতে হবে ।
বার্ষিক আয় –
ডিম বিক্রি- বার্ষিক গড়ে ৭০-৭৫% হারে উৎপাদন ধরে বর্তমান বাজার দরে ডিমের মোট মূল্য ।
শতকরা ৮৮টি মুরগির সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকার ক্ষমতা আছে এ হিসেবে ডিমপাড়া শেষে বর্তমান বাজার দরে মোট মূল্য ।
প্রতিটি মুরগি থেকে বছরে ৩০ কেজি বিষ্ঠা পাওয়া যাবে এভাবে হিসেব করে বর্তমান বাজার দরে মোট বিষ্ঠা বা সারের মূল্য ।
অকেজো আসবাবপত্র বিক্রিবাবদ মোট আয় ।
এভাবে মোট আয় থেকে মোট ব্যয় বাদ দিয়ে প্রকৃত লাভলোকসান হিসেব করতে হবে ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
১ । সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (√) দিন ।
ক. খাঁচা পদ্ধতিতে পালনের ক্ষেত্রে প্রতিটি মুরগির জন্য কতটুকু জায়গার প্রয়োজন হয় ?
i) ৪৩৭ বর্গ সে.মি.
ii) ৪৪২ বর্গ সে.মি.
iii) ৪৫২ বর্গ সে.মি.
iv) ৪৬২ বর্গ সে.মি.
খ. প্রতিটি মুরগির জন্য দৈনিক কতটুকু খাদ্যের প্রয়োজন ধরা হয়?
i) ১০০-১০৫ গ্রাম
ii) ১০৫-১১০ গ্রাম
iii) ১১০-১২০ গ্রাম
iv) ১১৫-১২০ গ্রাম
২। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
ক. মোট আয় থেকে মোট ব্যয় বাদ দিয়ে প্রকৃত লাভলোকসান হিসেব করতে হয় ।
খ. বাতাস বা শীত থেকে মুরগিকে রক্ষা করার জন্য পলিথিন বা চটের পর্দার ব্যবস্থা করতে হয় ।
৩। শূন্যস্থান পূরণ করুন ।
ক. ডিমের ব্যবহার অনুযায়ী ডিমপাড়া মুরগির খামার
খ. শুকনো বালির মেঝের ক্ষেত্রে – সমস্যা হতে পারে ।
৪। এক কথায় বা বাক্যে উত্তর দিন ।
ক. খামার স্থাপনের খরচের প্রধান দুটো খাতের নাম কী ?
খ. বাদামি খোসার ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জন্য কতটুকু জায়গার প্রয়োজন?
আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ ব্রয়লার খামার পরিকল্পনা ও স্থাপন।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর মুরগির খামার স্থাপন ইউনিটের অন্তর্গত।
ব্রয়লার খামার পরিকল্পনা ও স্থাপন
ব্রয়লার খামার পরিকল্পনায় বিবেচ্য বিষয়সমূহ
মাংস উৎপাদনের জন্য যে খামারে মুরগি পালন করা হয় সেটাই ব্রয়লার খামার । যে কোনো খামার বা শিল্পে বাণিজ্যিকভাবে সফলতা লাভের জন্য চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা । ব্রয়লার খামার একটি বিশেষ ধরনের শিল্প । তাই এ খামার প্রতিষ্ঠার জন্য মূল বিষয় ছাড়াও আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হয় । ব্রয়লার খামার পরিকল্পনার সময় নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে । যথা-
মূলধন ।
জমি ।
উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা বা বাজার ।
আধুনিক ব্রয়লার স্ট্রেইনের বাচ্চা সহজে পাওয়ার সম্ভাবনা ।
খাদ্য সংগ্রহ করা সহজ কি-না এবং খাদ্যের মূল্য ন্যায্য কি-না ?
পানি ।
বিদ্যুৎ।
প্রতিশেধক ওষুধপত্র
যোগাযোগের রাস্তাঘাট ইত্যাদি ।
বার্ষিক যত সংখ্যক ব্রয়লার উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে সে সংখ্যক ব্রয়লারের ৭-৮ সপ্তাহ প্রতিপালনের ঘর এবং অন্যান্য সুবিধা, যেমন- অফিস, শ্রমিক ঘর, খাদ্য গুদাম, মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণের ঘর, সংরক্ষণাগার ইত্যাদি তৈরির জন্য জমি এবং এ সকল প্রয়োজনীয় ঘরবাড়ি তৈরির জন্য মোট জায়গার সঙ্গে আরও প্রায় ১.৫ গুণ ফাঁকা জায়গা যোগ করে খামারের মোট জমির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ।
নির্দিষ্ট বয়সের পর ব্রয়লার মুরগির শরীর বর্ধণের হার কমতে থাকে এবং খাদ্য গ্রহণের হারও বেড়ে যায় । যে কারণে মাংস উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়ে মুনাফার হার কমে যায় । তাই নির্দ্দিষ্ট সময়ের পর জীবন্ত ব্রয়লার বা ড্রেসড ব্রয়লার হিসেবে বিক্রি করতে হয়। সুতরাং ব্রয়লার খামার স্থাপনের সময় উৎপাদিত মাংস বাজারজাত করার সুবিধাগুলো নিশ্চিত হয়ে খামার স্থাপন করতে হবে ।
অন্যদিকে ব্রয়ালার যেহেতু কম সময়ে পুনঃপুনঃ বাজারজাত করা যায় সে কারণে কম মূলধন খাটিয়ে অধিক মুনাফা করা যায় ।
ব্রয়লার খামার ব্যবস্থাপনায় তিনটি মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা বিধান করতে হয়, যথা-১. পাখির খাদ্য, ২. বাসস্থান ও ৩. রোগ দমন ।
খাদ্য খরচ মোট উৎপাদন ব্যয়ের প্রায় ৬০-৭৫% এবং খাদ্যের গুণাগুণ ও মূল্যের ওপর লাভলোকসান নির্ভর করে । সেজন্য ব্রয়লার খামার ব্যাবস্থাপনায় খাদ্যের গুরুত্ব অনেক বেশি। কিন্তু বাসস্থানের পরিবেশ অনুকূল ও আরামদায়ক না হলে শুধু খাদ্য দিয়ে তার অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয় । তেমনি খামার রোগমুক্ত না হলেও তা লাভজনক হবে না ।
বাসস্থান
নিরাপদ ও আরামে থাকার জায়গার নাম বাসস্থান । বাসস্থান নিরাপদ রাখতে হলে নির্বাচিত স্থানের উপযোগী দ্রব্যসামগ্রী দিয়ে তা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে ঝড়বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহজে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় । বাসস্থানের অভ্যন্তরীণ চাহিদা, যেমন- ব্রয়লারের জন্য পরিমাণমতো থাকার জায়গা, প্রয়োজনীয় সংখ্যক খাদ্য ও পানির পাত্র, তাপ ও আলো এবং বায়ু চলাচলের সুব্যবস্থা থাকতে হবে । এখানে এগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে ।
মাথাপিছু থাকার জায়গা
বাজারজাত করার বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ব্রয়লারের জন্য ০.০৯৩ বর্গমিটার (১ বর্গফুট) জায়গার প্রয়োজন । এভাবে হিসেবে করে যতটি ব্রয়লার বাজাতজাত করার বয়স পর্যন্ত পালন করা হবে ততটুকু জায়গার দরকার হবে । বাসস্থানের জন্য কয়টি ঘর লাগবে তা নির্ভর করবে ব্রয়লারের সংখ্যার ওপর । এ সংখ্যা প্রতি সপ্তাহে কতটি ব্রয়লার বাজারজাত করা হবে কিংবা একদলের পর আরেক দল বাজারজাত করা হবে কি-না তার ওপর নির্ভর করবে । এখানে উৎপাদনকারীকে ব্রয়লার উৎপাদন সংখ্যার ওপর ভিত্তি করেই ঘরের সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে ।
ঘর তৈরি
উৎপাদনকারীর প্রাথমিক মূলধন বিনিয়োগের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে ঘর নির্মাণ করতে হবে । অর্থাৎ ঘর পাকা, কাঁচা বা টিনের হবে পালনকারীর সামর্থের ওপর নির্ভর করে । তবে যে প্রকারের সামগ্রী দিয়েই ঘর তৈরি করা হোক না কেন, একটি কথা মনে রাখা উচিত যে, প্রতিটি ব্রয়লারের উৎপাদন খরচের তুলনায় এর থাকার জায়গার খরচ খুব সামান্য । ব্রয়লারের ঘর তৈরিতে চালের প্রকৃতি, বায়ু চলাচলের প্রয়োজন অনুযায়ী বেড়ার প্রকৃতি এবং লিটারের ধরন অনুযায়ী মেঝে নির্মাণ করা হয় ।
চালের প্রকৃতি
থাকার ঘরের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও নির্মাণসামগ্রীর ওপর নির্ভর করে চাল তৈরি করতে হয় । পোল্ট্রি খামার কিংবা ব্রয়লার খামারে নিম্নবর্ণিত চাল তৈরির প্রচলন আছে । যথা-
ক. একক চালা
খ. দোচালা বা গেবল টাইপ
গ. মনিটর
ঘ. সেমি-মনিটর টাইপ ।
বেড়ার প্রকৃতি
ব্রয়লার পালনকালে এদেরকে বাজারজাত করার বয়স পর্যন্ত একই ঘরে রাখা হয় । কিন্তু লালনপালনের সুবিধার্থে প্রথম ৪ সপ্তাহ ঘরের তাপমাত্রায় ৩৫° সে. (৯৫° ফা.) থেকে কমাতে কমাতে ২৬.৭° সে. এ (৮০º ফা.) নামিয়ে আনার জন্য বেড়ায় বেশি ফাঁকা জায়গা রাখা যাবে না । কিন্তু প্রয়োজনীয় বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। অন্যদিকে বয়স বাড়ার সাথে তাল রেখে ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা কমিয়ে বাতাস চলাচল বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হয় বিধায় বেড়ার উচ্চতার ৬০% তারজালি দিয়ে তৈরি করতে হয় ।
বাতাসে ২১% এর কম অক্সিজেন ০.৫% এর বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড থাকলে তা পোলট্রির স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে । সাধারণত ব্রয়লালের ঘরে বায়ু চলাচলের সুবিধার জন্য কিছু অংশ নিচ্ছিদ্র বা শক্ত এবং বাকি বেড়ার অংশে তারজালি বা লোহার রডের ফাঁক ফাঁক বেড়া বা জানালা রাখা হয় । স্থান বা আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয় খোলা অংশ বা ফাঁক বেড়ার উপরিভাগে বা নিচের ভাগে তৈরি করা যেতে পারে ।
পরিবেশের তাপমাত্রা :
ব্রয়লারের বাচ্চা বা যে কোনো মুরগির বাচ্চা প্রতিপালনে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের তাপমাত্রার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। সারণি ৩.১ এ বয়স বাড়ার সঙ্গে ব্রয়লারের ঘরে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা দেয়া হয়েছে ।
সারণিঃ বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ব্রয়লারের ঘরের প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা
বয়স (সপ্তাহ)
তাপমাত্রা সে. (ফা.)
প্রথম
৩৫° (৯৫)
দ্বিতীয়
৩২.২০ (৯০)
তৃতীয়
২৯.৪০ (৮৫º)
চতুর্থ
২৯.৪০ (৮৫০)
পঞ্চম
২৬.৭০ (৮০°)
ষষ্ঠ-অষ্টম
২১.১° (৭০°)
আলোক ব্যবস্থাপনা ঃ
প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম যে কোনো উৎস থেকেই ব্রয়লার গৃহে আলোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে । প্রথম সপ্তাহে ব্রয়লার গৃহে খাবার ও পানি দেখার জন্য সারারাত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে । দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে রাতের বেলায় মাঝে মাঝে আলো নিভিয়ে আবার জ্বালাতে হবে এবং এভাবে সারারাত মৃদু আলো জ্বালিয়ে রাখতে হবে ।
খাদ্য ব্যবস্থপনা ঃ
যেহেতু পোল্ট্রি বা ব্রয়লার পালনে মোট উৎপাদন খরচের ৬০-৬৫% খাদ্য খরচ এবং খাদ্যের গুণগত মানের ওপর তাদের প্রয়োজনীয় শারীরিক বর্ধন নির্ভর করে, সেজন্য এদের খাদ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বেশি । খাদ্যের গুণগত মান, খাদ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা, খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ, প্রতি কেজি খাদ্যের দাম, খাদ্য খাওয়ানোর দক্ষতা প্রভৃতি খাদ্য ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত । কাজেই ব্রয়লারের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে খাদ্য ও পানির পাত্র এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের সংখ্যা ও পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে ।
খাদ্য গুদামের জায়গার পরিমাণ :
প্রতিটি ব্রয়লার ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত ৪ কেজি খাদ্য খাবে । তাই এ পরিমাণকে ব্রয়লারের মোট সংখ্যা দিয়ে গুণ করে যে ফল দাড়াবে সেরূপ খাদ্য ধারণক্ষমতাসম্পন্ন গুদাম তৈরি করতে হবে ।
মোট খাদ্য পাত্রের সংখ্যা নির্ণয় ঃ
বয়সভেদে ব্রয়লারের জন্য ২.৫-১০ সে.মি. লম্বা খাদ্যের পাত্র বা ফিড ট্রাফের প্রয়োজন । কাজেই বয়সের ভিত্তিতে ও সংখ্যা অনুযায়ী হিসেব করে ব্রয়লারের ঘরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক খাদ্যের পাত্র সরবরাহ করতে হবে ।
মোট পানির পাত্রের সংখ্যা নির্ণয় ঃ
একইভাবে বয়সের ওপর নির্ভর করে একটি ব্রয়লারের জন্য ২.৫-৭.৫ সে.মি. লম্বালম্বি পানির পাত্রের জায়গার প্রয়োজন হবে । সাধারণভাবে দেখা যায় নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্রয়লারের জন্য মোট খাদ্যের পাত্রের অর্ধেক সংখ্যক পানির পাত্র হলেই চলবে ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
১। সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (√) দিন ।
ক. প্রতিটি ব্রয়লার ৮ সপ্তাহে কতটুকু খাদ্য খাবে?
i) ৪০ কেজি
ii) ৪.২ কেজি
iii) ৪.৩ কেজি
iv) ৪.৫ কেজি
খ. ব্রয়লারের ঘরে প্রথম ৪ সপ্তাহে তাপমাত্রা কত ডিগ্রী সে. থেকে কত ডিগ্রী সে. এ নামাতে হবে?
i) ৩৫° থেকে ২৬.৭° সে.
ii) ৩৪° সে. থেকে ২৬° সে.
iii) ৩০° সে. থেকে ২৬° সে.
iv) ৩০° সে. থেকে ২৬.৭° সে.
২। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন ।
ক. বাজারজাত করার পূর্ব পর্যন্ত প্রতিটি ব্রয়লারের জন্য ০.০৯৩ বর্গমিটার জায়গার প্রয়োজন হয় ।
খ. বয়সভেদে ব্রয়লারের জন্য ৫.০-১২.৫ সে.মি. লম্বা খাদ্যের পাত্রের প্রয়োজন ।
৩। শূন্যস্থান পূরণ করুন ।
ক. খাদ্য খরচ মোট উৎপাদন খরচের প্রায় ——–।
খ. ব্রয়লার বাচ্চা পালনে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ——–যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে ।
৪. এক কথায় বা বাক্যে উত্তর দিন ।
ক. ব্রয়লার খামার স্থাপনের তিনটি মৌলিক চাহিদা কী?
খ. বাতাসে কী পরিমাণ অক্সিজেন ও কার্বণ-ডাই-অক্সাইড থাকলে তা পোল্ট্রির স্বাস্থ্যের উপর কিরূপ প্রভাব ফেলে?
আজকে আমরা মুরগির খামারের জন্য স্থান নির্বাচন আলোচনা করবো।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর মুরগির খামার স্থাপন ইউনিটের অন্তর্গত।
মুরগির খামারের জন্য স্থান নির্বাচন
খামার বলতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে হাঁসমুরগি প্রতিপালন করার জন্য নির্দ্দিষ্ট স্থানকে বুঝায় । হাঁসমুরগির উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে খামার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন- ডিম উৎপাদন খামার (egg farm), মাংস উৎপাদন খামার (broiler farm), প্রজননের খামার বা ব্রিডার খামার (breeder farm ) বাচ্চা উৎপাদন খামার (hatchery) ইত্যাদি । আবার হাঁস উৎপাদনের জন্য স্থাপিত খামারকে হাঁসের খামার (duck farm) বলা হয়।
অনুরূপভাবে, কোয়েল, রাজহাঁস, তিতির ও কবুতর ইত্যাদি উৎপাদনের খামারকে যথাক্রমে কোয়েল খামার, রাজহাঁসের খামার, তিতির পাখির খামার ও কবুতরের খামার বলা হয় । তবে কোয়েলের খামারকে কোয়েলারিও (quailary) বলা হয়ে থাকে । কোয়েলের ক্ষেত্রেও লেয়ার খামার, ব্রয়লার খামার, ব্রিডার খামার ও হ্যাচারি ইত্যাদি রয়েছে । আবার কবুতরের বাচ্চা উৎপাদনের খামার স্কোয়াব খামার (squab farm) নামে পরিচিত ।
এদেশে বাণিজ্যিকভিত্তিতে মুরগি, হাঁস বা কোয়েলের খামার থাকলেও রাজহাঁস, কবুতর ও তিতিরের কোনো বাণিজ্যিক খামার নেই বললেই চলে । এছাড়াও একই স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির ডিম, বাচ্চা ও মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে স্থাপিত খামারকে পোলট্রি খামার (poultry farm) বলে । তবে প্রজাতি বা উৎপাদিত বস্তুর নামে খামারের নাম রাখা অধিক যুক্তিযুক্ত । একটি কথা মনে রাখা উচিত, একই খামারে বিভিন্ন প্রজাতির পোল্ট্রি পালন না করাই ভালো । কারণ একসঙ্গে পালন করলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে নানা ধরনের রোগব্যাধি ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে ।
মুরগির খামার একটি স্থায়ী ব্যবস্থা। যে ধরনের মুরগির খামারই স্থাপন করা হোক না কেন সাফল্যজনকভাবে খামার পরিচালনার জন্য এর স্থান নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কৌশল । কারণ মনে রাখতে হবে শুধু খামার স্থাপন করলেই চলবে না তা করে তুলতে হবে লাভজনক ।
মুরগির খামারের জন্য স্থান নির্বাচনের সময় নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে । যেমন-
খামারের স্থান উঁচু হওয়া উচিত। খামার এমন স্থানে গড়তে হবে যেখানে বন্যা কখনও প্রবেশ করতে না পারে ।
যে স্থানে খামার করা হবে সেখানকার মাটি বালু ও কাঁকর মিশ্রিত হতে হবে এবং মাটির পানি শোষণ ক্ষমতা থাকতে হবে ।
খামার স্থাপনের জন্য নির্বাচিত স্থানে সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে ।
খামারের স্থানটি মানুষের বাড়িঘর থেকে দূরে কোলাহলমুক্ত জায়গায় হতে হবে ।
যে স্থানে খামার করা হবে সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হতে হবে ।
মানুষের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত রাজপথ থেকে অন্তত আধা কিলোমিটার দূরে খামারের স্থান নির্বাচন করা উচিত।
যেখানে খামার করা হবে সেখানে বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে ।
খামারের স্থান নির্বাচনের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আশেপাশে সস্তায় ও সহজে মুরগির খাদ্য ক্রয় করার সুযোগসুবিধা থাকে ।
খামারে উৎপাদিত পণ্য, যেমন- ডিম, মুরগি ইত্যাদি সহজে বাজারজাতকরণের সুযোগ থাকতে হবে ।
খামার স্থাপনের জন্য নির্বাচিত স্থানের মূল্য তুলনামূলকভাবে কম কি-না সেটাও বিবেচনা করতে হবে ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
১। সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (√) দিন ।
ক. কবুতরের বাচ্চা উৎপাদনের খামারকে কী বলে ?
i) স্কোয়াব খামার
ii) লেয়ার খামার
iii) ব্রয়লার খামার
iv) হ্যাচারি
খ. যে স্থানে খামার করা হবে সেখানকার মাটি কেমন হবে ?
i) এঁটেল
ii) দো-আঁশ
iii) বেলে
iv) বালি ও কাঁকর মিশ্রিত
২। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন ।
ক. প্রজননের খামারকে ব্রিডার খামার বলে ।
খ. মুরগির খামার একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা ।
৩। শূন্যস্থান পূরণ করুন ।
ক. কোয়েলের খামারকে ——- বলা হয়ে থাকে ।
খ. যেখানে খামার করা হবে সেখানে ——– ও ———ব্যবস্থা করতে হয় ।
৪। এক কথায় বা বাক্যে উত্তর দিন ।
ক. একই স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির ডিম, বাচ্চা ও মাংস উৎপাদনের খামারকে কী বলে?
আজকে আমরা চূড়ান্ত মূল্যায়ন- দুগ্ধ খামার স্থাপন আলোচনা করবো।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর দুগ্ধ খামার স্থাপন ইউনিটের অন্তর্গত।
চূড়ান্ত মূল্যায়ন- দুগ্ধ খামার স্থাপন
আমাদের দেশে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ও দারিদ্র দূরীকরণে দুগ্ধ খামারের ভূমিকা অনস্বীকার্য । দুগ্ধ খামার স্থাপনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপই একই সুতোয় গাঁথা । খামার স্থাপনের পূর্বে যেমন বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা করে কাজ করতে হয় ঠিক তেমনি খামার স্থাপনের পর খামারের বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি দিতে হয় । দুগ্ধ খামারের মূল উৎপাদিত দ্রব্য হচ্ছে দুধ ।
তাই দুধ বাজারজাতকরনের ব্যবস্থা সম্পর্কেও জ্ঞান থাকা প্রয়োজন । খামার স্থাপনের উদ্দেশ্যই হলো তা থেকে মুনাফা অর্জন করা । সুতরাং দুগ্ধ খামারের আয় ব্যয়ের হিসেব সম্পর্কেও জানা আবশ্যক । অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খামার স্থাপন করে থাকেন । কীভাবে এই ঋণ পরিশোধ করা যায় সে সম্পর্কিত জ্ঞান থাকাও প্রয়োজন ।
এ ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে দুগ্ধখামার স্থাপনে প্রাথমিক করনীয়, খামার ব্যবস্থাপনা, দুধ দোহন ও বাজারজাতকরণ, ৩-৫ টি গাভীর খামার স্থাপনে প্রকল্প প্রণয়ন, খামারের আয় ব্যয়ের হিসাব, হাত দিয়ে দুধ দোহন, ব্যাংক থেকে ঋণ পরিশোধের খতিয়ান নিজ হাতে খাতায় লেখা সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিকসহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে ।
চূড়ান্ত মূল্যায়ন- দুগ্ধ খামার স্থাপন
সংক্ষিপ্ত ও রচনামূলক প্রশ্ন
১। পাঁচটি গাভীর খামার স্থাপনে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলোর নাম লিখুন ।
২। দুধ বাজারজাতকরণ সংক্ষেপে বর্ণনা করুন ।
৩। বাছুরকে খাওয়ানোর পদ্ধতি লিপিবদ্ধ করুন ।
৪। ডিহর্নিং বলতে কী বুঝেন? এটি কত প্রকার ও কী কী?
৫ ৷ বাছুর চিহ্নিত করণ সংক্ষেপে বর্ণনা করুন ।
৬। দুগ্ধ খামারে কী কী তথ্য রাখা হয় তা লিপিবদ্ধ করুন ।
৭। দুধ দোহনের বিভিন্ন ধাপ বর্ণনা করুন ।
৮ । দুধ দোহনের পদ্ধতি কয়টি ও কী কী বর্ণনা করুন ।
৯ । একটি দুধ দোহন যন্ত্রের বিভিন্ন অংশের নাম লিখুন ।
১০। খামারের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত?
আজকে আমরা ব্যবহারিকঃ ব্যাংক থেকে ঋণ পরিশোধের খতিয়ান নিজ খাতায় লেখা নিয়ে আলোচনা করবো।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর দুগ্ধ খামার স্থাপন ইউনিটের ব্যবহারিক অংশের অন্তর্গত।
ব্যবহারিকঃ ব্যাংক থেকে ঋণ পরিশোধের খতিয়ান নিজ খাতায় লেখা
খামারের আয় ব্যয়ের হিসাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কী পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করে কী পরিমাণ মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হবে তা আয় ব্যয়ের হিসাব থেকে জানা যায় । প্রকৃতপক্ষে আয় ব্যয়ের হিসাব সঠিক না হলে খামার পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ে।
খামারের প্রকৃত মুনাফা নির্ভর করে এর সুষ্ঠু আয় ব্যয়ের হিসেবের ওপর। আয় ব্যয়ের হিসাব সঠিক না হলে খামার পরিচালনা দুসাধ্য হয়ে পড়ে।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
যে কোনো খামার স্থাপন করা হোক না কেনো এর জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার প্রয়োজন হয় । এ ঋণের টাকা যথাযথভাবে ব্যবহার করে তা থেকে মুনাফা অর্জন করে যথাসময়ে নিয়ম মাফিক পরিশোধ করা উচিত । এখানে পাঠ ২.৫-এ বর্ণিত মোট বিনিয়োগকৃত মূলধনের (১,৭০,৫৪০.০০) ৬০% (১,০২,৩২৪.০০) ব্যাংক ঋণ পরিশোধের খতিয়ান বর্ণনা করা হয়েছে । উল্লেখ্য যে সুদের হার ১২% ছিলো ।
দুধ দোহন হলো গাভী বা ছাগল থেকে দুধ সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া, যা কৃষিজীবী ও গৃহপালিত পশুপালকদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। হাত দিয়ে দুধ দোহন প্রথাগত এবং সহজলভ্য একটি পদ্ধতি, যা কোনো যান্ত্রিক সরঞ্জাম ছাড়াই যে কেউ করতে পারে। এই পদ্ধতিতে পশুর যত্ন, দুধের গুণগত মান রক্ষা এবং শুদ্ধতা বজায় রাখা সহজ হয়। সঠিক পদ্ধতি ও সতর্কতা মেনে হাত দিয়ে দুধ দোহন করলে দুধের পরিমাণ বাড়ে এবং পশুর স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। এই প্রবন্ধে আমরা হাত দিয়ে দুধ দোহনের ধাপ, প্রয়োজনীয় উপকরণ, এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যা দুধ উৎপাদনে নতুনদের জন্য দারুন গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে। আজকে আমরা ব্যবহারিকঃ হাত দিয়ে দুধ দোহন আলোচনা করবো।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর দুগ্ধ খামার স্থাপন ইউনিটের ব্যবহারিক অংশের অন্তর্গত।
ব্যবহারিকঃ হাত দিয়ে দুধ দোহন
যে প্রক্রিয়া বা কৌশলের মাধ্যমে গাভীর ওলান থেকে দুধ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে তাকে দুধ দোহন বলে । প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সঠিকভাবে গাভী থেকে দ্রুত দুধ দোহন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এতে করে গাভী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে ।
নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুযায়ী প্রতিদিন দু’বার বা তিনবার দুধ দোহন করা উচিত । যখন তখন দুধ দোহন করলে দুধ উৎপাদন কমে যায় ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
ছোট ছোট দুগ্ধ খামারে এবং গ্রামাঞ্চলে কৃষকরা সাধারণত হাত দিয়ে দুধ দোহন করে থাকে । হাত দিয়ে দুধ দোহনের তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। এ কোর্স বইয়ের পাঠ ২.৩-এর দুধ দোহন অংশটুকু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
নীচে হাত দিয়ে দুধ দোহনের প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ সংশোধিত তালিকা এবং প্রতিটির কাজ সহ টেবিল দেয়া হলো:
উপকরণের নাম
কাজ/ব্যবহার
১. দুগ্ধবতী গাভী
দুধ দোহনের প্রধান উৎস, সুস্থ এবং পরিচ্ছন্ন গাভী দুধ উৎপাদনে বেশি ফলপ্রসূ।
২. পরিষ্কার দুধের পাত্র
দুধ সংগ্রহের জন্য ব্যবহার হয়; পাত্রটি ঝলমলে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত হতে হবে।
৩. এ্যান্টিসেপটিক লোশন/নিমপাতার গরম পানি
গাভীর উরু ও মুতির পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করা হয়, যাতে জীবাণু সংক্রমণ কমে।
৪. সাবান ও পরিষ্কার পানি
দুধ দোহনের আগে হাত পরিষ্কার করার জন্য অপরিহার্য।
৫. শুকনো নরম কাপড়
হাত ও গাভীর দুধ দোহনের স্থান মুছে পরিষ্কার রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়।
৬. তোয়ালে বা টুপি
দুধ দোহনের সময় মাথা ঢেকে রাখা বা পরিবেশ থেকে দূষণ রোধে ব্যবহৃত হতে পারে।
৭. ব্যবহারিক খাতা
দুধ দোহনের সময় পর্যবেক্ষণ ও তথ্য লিপিবদ্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হয় (যেমন দুধের পরিমাণ, সময় ইত্যাদি)।
৮. দুধ দোহনের জন্য সঠিক স্থান
পরিষ্কার, হাওয়া চলাচলযুক্ত ও ছায়াযুক্ত স্থান যেখানে গাভী আরামদায়কভাবে দুধ দোয়া যায়।
হাত দিয়ে দুধ দোয়ানো কাজের ধারা:
কাজের ধাপ
বর্ণনা ও উদ্দেশ্য
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করুন
মাটির ও ধূলার সংস্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং দুধে অশুচিতা এড়ানো।
প্রয়োজনবোধে নখ কেটে নিন
নখের নিচে ময়লা বা জীবাণু থাকতে পারে, যা দুধে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
তোয়ালে বা টুপি দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন
চুল পড়ে দুধে মিশে যেতে পারে, তাই সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে।
গাভীর ওলান ও বাঁট অ্যান্টিসেপটিক লোশন বা নিমপাতার গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করুন
ব্যাকটেরিয়া ও ময়লা দূরীকরণে সাহায্য করে, যা দুধের গুণগত মান রক্ষা করে।
শুকনো নরম কাপড় দিয়ে ওলান ও বাঁট মুছে নিন
ভেজা থাকলে দুধের সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে, শুকিয়ে নিতে হবে।
হাত ভেজা থাকলে কাপড় দিয়ে মুছে নিন
ভেজা হাত দুধ দোহনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই হাত শুকনো রাখতে হবে।
বাছুর দিয়ে বাঁট চুষান অথবা হাত দিয়ে ওলান ম্যাসেজ করুন
গাভীর স্রোত উত্তেজিত করার জন্য, যাতে দুধ সহজে বের হয়।
পূর্ণহস্ত পদ্ধতি বা দু’আঙ্গুলের সাহায্যে দুধ দোহন করুন
দুধ সহজে এবং সম্পূর্ণভাবে সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি।
বাঁটে দুধ আসার ৫-৭ মিনিটের মধ্যে সমস্ত দুধ দোহন করুন
সময়মত দুধ দোহন না করলে দুধ কম পাওয়া বা গাভীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।
পুরো প্রক্রিয়াটি ব্যবহারিক খাতায় লিখুন
কাজের ধারাবাহিকতা ও রেকর্ড রাখার জন্য প্রয়োজন।
ব্যবহারিক খাতাটি টিউটরকে দেখান ও সই নিন
কাজের প্রমাণ ও মূল্যায়নের জন্য।
অতিরিক্ত পরামর্শ:
দুধ দোহনের আগে এবং পরে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।
দুধ সংগ্রহের স্থান পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
দুধ দোহনের সময় গাভীকে শান্ত ও আরামদায়ক রাখতে হবে।
কৃষি, কৃষি শিক্ষা, কৃষি প্রশিক্ষণ, কৃষি শিল্প, কৃষি গবেষণা