Category Archives: উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা

বাংলাদেশে কৃষি উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

ব্যবহারিকঃ ব্যাংক থেকে ঋণ পরিশোধের খতিয়ান নিজ খাতায় লেখা

আজকে আমরা ব্যবহারিকঃ ব্যাংক থেকে ঋণ পরিশোধের খতিয়ান নিজ খাতায় লেখা নিয়ে আলোচনা করবো।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর দুগ্ধ খামার স্থাপন ইউনিটের ব্যবহারিক অংশের অন্তর্গত।

 

 

ব্যবহারিকঃ ব্যাংক থেকে ঋণ পরিশোধের খতিয়ান নিজ খাতায় লেখা

খামারের আয় ব্যয়ের হিসাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কী পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করে কী পরিমাণ মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হবে তা আয় ব্যয়ের হিসাব থেকে জানা যায় । প্রকৃতপক্ষে আয় ব্যয়ের হিসাব সঠিক না হলে খামার পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ে।

খামারের প্রকৃত মুনাফা নির্ভর করে এর সুষ্ঠু আয় ব্যয়ের হিসেবের ওপর। আয় ব্যয়ের হিসাব সঠিক না হলে খামার পরিচালনা দুসাধ্য হয়ে পড়ে।

 

 

প্রাসঙ্গিক তথ্য

যে কোনো খামার স্থাপন করা হোক না কেনো এর জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার প্রয়োজন হয় । এ ঋণের টাকা যথাযথভাবে ব্যবহার করে তা থেকে মুনাফা অর্জন করে যথাসময়ে নিয়ম মাফিক পরিশোধ করা উচিত । এখানে পাঠ ২.৫-এ বর্ণিত মোট বিনিয়োগকৃত মূলধনের (১,৭০,৫৪০.০০) ৬০% (১,০২,৩২৪.০০) ব্যাংক ঋণ পরিশোধের খতিয়ান বর্ণনা করা হয়েছে । উল্লেখ্য যে সুদের হার ১২% ছিলো ।

 

 

ব্যাংক ঋণ পরিশোধের খতিয়ান

বছর

ঋণের পরিমান

সুদ

মোট

নীট আয় আবর্তক খরচ বাদে

পরিশোধ

মালিকের উদ্ধৃত্ত নীট আয়

মুল

সুদ

মোট

প্রথম ১,০২,৩২৪.০০ ১২২৭৮.৮৮ ১১৪৬০২.৮৮ ৮৭৮৯০.০০ ২০৪৬৪.৮০ ১২২৭৮.৮৮ ৩২৭৪৩.৬৮ ৫৫১৪৬.৩২
দ্বিতীয় ৮১৮৫.০০ ৯৮২৩.১০ ৯১৬৮২.৩০ ৯৫১৯০.০০ ২০৪৬৪.৮০ ৯৮২৩.১০ ৩০২৮৭.৯০ ৬৪৯০২.১০
তৃতীয় ৬১৩৯৪.২০ ৭৩৬৭.৩০ ৬৮৭৬১.৫০ ১০০১৯০.০০ ২০৪৬৪.৮০ ৭৩৬৭.৩০ ২৭৮৩২.১০ ৭২৩৫৭.৯০
চতুর্থ ৪০৯২৯.৪০ ৪৯১১.৫২ ৪৫৮৪০.৯২ ১০০১৯০.০০ ২০৪৬৪.৮০ ৪৯১১.৫২ ২৫৩৭৬.৩০ ৭৪৮১৩.৬৮
পঞ্চম ২০৪৬৪.৬৮ ২৪৫৫.৭৫ ১২৯২০.৩৫ ১০০১৯০.০০ ২০৪৬৪.৮০ ২৪৫৫.৭৫ ২২৯২০.৫৫ ৭৭২৬৯.৪৫
ষষ্ঠ

 –

১০০১৯০.০০

 –

 –

১০০১৯০.০০
সপ্তম

১৬০১৯০.০০

১৬০১৯০.০০

 

গাভীর মূল্যসহ ব্যাংকে ঋণ পরিশোধ করে নীট মুনাফা = ৬,০৪,৮৬৯.৬০ টাকা ।

ব্যবহারিকঃ হাত দিয়ে দুধ দোহন

দুধ দোহন হলো গাভী বা ছাগল থেকে দুধ সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া, যা কৃষিজীবী ও গৃহপালিত পশুপালকদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। হাত দিয়ে দুধ দোহন প্রথাগত এবং সহজলভ্য একটি পদ্ধতি, যা কোনো যান্ত্রিক সরঞ্জাম ছাড়াই যে কেউ করতে পারে। এই পদ্ধতিতে পশুর যত্ন, দুধের গুণগত মান রক্ষা এবং শুদ্ধতা বজায় রাখা সহজ হয়। সঠিক পদ্ধতি ও সতর্কতা মেনে হাত দিয়ে দুধ দোহন করলে দুধের পরিমাণ বাড়ে এবং পশুর স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। এই প্রবন্ধে আমরা হাত দিয়ে দুধ দোহনের ধাপ, প্রয়োজনীয় উপকরণ, এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যা দুধ উৎপাদনে নতুনদের জন্য দারুন গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে। আজকে আমরা ব্যবহারিকঃ হাত দিয়ে দুধ দোহন আলোচনা করবো।এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর দুগ্ধ খামার স্থাপন ইউনিটের ব্যবহারিক অংশের অন্তর্গত।

 

 

ব্যবহারিকঃ হাত দিয়ে দুধ দোহন

যে প্রক্রিয়া বা কৌশলের মাধ্যমে গাভীর ওলান থেকে দুধ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে তাকে দুধ দোহন বলে । প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সঠিকভাবে গাভী থেকে দ্রুত দুধ দোহন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এতে করে গাভী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে ।

নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুযায়ী প্রতিদিন দু’বার বা তিনবার দুধ দোহন করা উচিত । যখন তখন দুধ দোহন করলে দুধ উৎপাদন কমে যায় ।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

ছোট ছোট দুগ্ধ খামারে এবং গ্রামাঞ্চলে কৃষকরা সাধারণত হাত দিয়ে দুধ দোহন করে থাকে । হাত দিয়ে দুধ দোহনের তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। এ কোর্স বইয়ের পাঠ ২.৩-এর দুধ দোহন অংশটুকু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন ।

 

 

প্রয়োজনীয় উপকরণ

নীচে হাত দিয়ে দুধ দোহনের প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ সংশোধিত তালিকা এবং প্রতিটির কাজ সহ টেবিল দেয়া হলো:

উপকরণের নাম কাজ/ব্যবহার
১. দুগ্ধবতী গাভী দুধ দোহনের প্রধান উৎস, সুস্থ এবং পরিচ্ছন্ন গাভী দুধ উৎপাদনে বেশি ফলপ্রসূ।
২. পরিষ্কার দুধের পাত্র দুধ সংগ্রহের জন্য ব্যবহার হয়; পাত্রটি ঝলমলে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত হতে হবে।
৩. এ্যান্টিসেপটিক লোশন/নিমপাতার গরম পানি গাভীর উরু ও মুতির পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করা হয়, যাতে জীবাণু সংক্রমণ কমে।
৪. সাবান ও পরিষ্কার পানি দুধ দোহনের আগে হাত পরিষ্কার করার জন্য অপরিহার্য।
৫. শুকনো নরম কাপড় হাত ও গাভীর দুধ দোহনের স্থান মুছে পরিষ্কার রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়।
৬. তোয়ালে বা টুপি দুধ দোহনের সময় মাথা ঢেকে রাখা বা পরিবেশ থেকে দূষণ রোধে ব্যবহৃত হতে পারে।
৭. ব্যবহারিক খাতা দুধ দোহনের সময় পর্যবেক্ষণ ও তথ্য লিপিবদ্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হয় (যেমন দুধের পরিমাণ, সময় ইত্যাদি)।
৮. দুধ দোহনের জন্য সঠিক স্থান পরিষ্কার, হাওয়া চলাচলযুক্ত ও ছায়াযুক্ত স্থান যেখানে গাভী আরামদায়কভাবে দুধ দোয়া যায়।

 

 

হাত দিয়ে দুধ দোয়ানো কাজের ধারা:

কাজের ধাপ বর্ণনা ও উদ্দেশ্য
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করুন মাটির ও ধূলার সংস্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং দুধে অশুচিতা এড়ানো।
প্রয়োজনবোধে নখ কেটে নিন নখের নিচে ময়লা বা জীবাণু থাকতে পারে, যা দুধে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
তোয়ালে বা টুপি দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন চুল পড়ে দুধে মিশে যেতে পারে, তাই সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে।
গাভীর ওলান ও বাঁট অ্যান্টিসেপটিক লোশন বা নিমপাতার গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করুন ব্যাকটেরিয়া ও ময়লা দূরীকরণে সাহায্য করে, যা দুধের গুণগত মান রক্ষা করে।
শুকনো নরম কাপড় দিয়ে ওলান ও বাঁট মুছে নিন ভেজা থাকলে দুধের সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে, শুকিয়ে নিতে হবে।
হাত ভেজা থাকলে কাপড় দিয়ে মুছে নিন ভেজা হাত দুধ দোহনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই হাত শুকনো রাখতে হবে।
বাছুর দিয়ে বাঁট চুষান অথবা হাত দিয়ে ওলান ম্যাসেজ করুন গাভীর স্রোত উত্তেজিত করার জন্য, যাতে দুধ সহজে বের হয়।
পূর্ণহস্ত পদ্ধতি বা দু’আঙ্গুলের সাহায্যে দুধ দোহন করুন দুধ সহজে এবং সম্পূর্ণভাবে সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি।
বাঁটে দুধ আসার ৫-৭ মিনিটের মধ্যে সমস্ত দুধ দোহন করুন সময়মত দুধ দোহন না করলে দুধ কম পাওয়া বা গাভীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।
পুরো প্রক্রিয়াটি ব্যবহারিক খাতায় লিখুন কাজের ধারাবাহিকতা ও রেকর্ড রাখার জন্য প্রয়োজন।
ব্যবহারিক খাতাটি টিউটরকে দেখান ও সই নিন কাজের প্রমাণ ও মূল্যায়নের জন্য।

অতিরিক্ত পরামর্শ:

  • দুধ দোহনের আগে এবং পরে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।

  • দুধ সংগ্রহের স্থান পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।

  • দুধ দোহনের সময় গাভীকে শান্ত ও আরামদায়ক রাখতে হবে।

 

দুগ্ধ খামারের আয় ব্যয়ের হিসাব

আজকে আমরা আলোচনা করবো দুগ্ধ খামারের আয় ব্যয়ের হিসাব। এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর দুগ্ধ খামার স্থাপন ইউনিটের অন্তর্গত।

 

 

দুগ্ধ খামারের আয় ব্যয়ের হিসাব

খামারের প্রকৃত মুনাফা নির্ভর করে এর সুষ্ঠু আয় ব্যয়ের হিসেবের ওপর। আয় ব্যয়ের হিসাব সঠিক না হলে খামার পরিচালনা দুসাধ্য হয়ে পড়ে। এখানে পাঠ ২.৪-এ বর্ণিত ৫ টি গাভীর খামারের আয় ব্যয়ের হিসাব বর্ণনা করা হলো।

প্রয়োজনীয় মূলধন বিনিয়োগ

খরচের খাত ঃ

প্রয়োজনীয় জমি

ব্যয় (টাকা)

(নিজস্ব)

দুধালো গাভীর জন্য প্রতি বর্গফুট ৯০/- টাকা হিসেবে ৯৬ বর্গফুট বিশিষ্ট ছন ও বাঁশের ঘর তৈরি বাবদ খরচ

৮৬৪০.০০

দুধবিহীন গাভী এবং বকনার জন্য প্রতি বর্গফুট ৪০/- টাকা হিসেবে ২০০ বর্গফুট ঘর তৈরি বাবদ খরচ

৮০০০.০০

বাছুরের জন্য প্রতি বর্গফুট ৯০/- টাকা হিসেবে ১৪০ বর্গফুট ঘর তৈরি বাবদ খরচ

১২৬০০.০০

৫ টি সংকর জাতের গাভী যার প্রতিটির মূল্য ২৫,০০০/- টাকা হিসেবে

১২৫০০০.০০

বিবিধ খরচ (দুধ, পানি ও খাবার পাত্র ইত্যাদি)

১০০০০.০০

বিনিয়োগকৃত মোট মূলধন

১৬৪২৪০.০০

 

ব্যাংকের মাধ্যমে এ মূলধনের ৬০% সংগ্রহ করা যেতে পারে । অর্থাৎ ব্যাংকের ঋণ ৯৮,৫৪৪.০০ টাকা ।

 

 

খামারের আয়

প্রথম বছর

আয় (টাকা)

প্রতিটি গাভীতে দৈনিক গড়ে ৮.০ কিলো দুধ উৎপাদন হলে ৩০০ দিনে ৩ টি হতে, প্রতি কিলো ২০.০০ টাকা হিসেবে

১,৪৪,০০০.০০

প্রতি ১০০ কিলো দৈহিক ওজন দৈনিক ৬.০ কিলো গোবর উৎপন্ন করলে খামারের ২২৭৫ কিলো দৈহিক ওজন বছরে প্রায় ৫০.০ টন গোবর উৎপন্ন করবে । গোবর ২০০ টাকা টন হিসেবে ২০০x৫০.০

১০০০০.০০

মোট আয়

১,৫৪,০০০.০০

 

দ্বিতীয় বছর

আয় (টাকা)

দুধ ও গোবর হতে আয়

১,৫৪,০০০.০০

বাছুর বিক্রি (৩ টি ১ বছর বয়সী) প্রতিটি গড়ে ১২,০০০/-

৩৬০০০.০০

মোট আয়

১,৯০,০০০.০০

 

তৃতীয় বছর

আয় (টাকা)

দুধ ও গোবর হতে আয়

১,৫৪,০০০.০০

বাছুর বিক্রি (২ টি ১ বছর বয়সী) প্রতিটি গড়ে ১২,০০০/-

২৪,০০০.০০

মোট আয়

১,৭৮,০০০.০০

 

চতুর্থ বছর

আয় (টাকা)

দুধ, গোবর ও ৩ টি ১ বছর বয়সী বাছুর

১,৯০,০০০.০০

 

পঞ্চম বছর

আয় (টাকা)

দুধ, গোবর ও ২ টি ১ বছর বয়সী বাছুর

১,৭৮,০০০.০০

 

ষষ্ঠ বছর

আয় (টাকা)

দুধ, গোবর ও ৩ টি ১ বছর বয়সী বাছুর

১,৯০,০০০.০০

 

সপ্তম বছর

আয় (টাকা)

দুধ, গোবর ও ২ টি ১ বছর বয়সী বাছুর

১,৭৮,০০০.০০

 

সাত বছরে মোট আয় =  ১২,৫৮,০০০.০০

 

 

সাত বছরে মোট ব্যয়

আবর্তক খরচ ১,১৫,১৭৭.০০×৭ বছর

৮,০৬,২৩৯.০০

১২% সুদে ৯৮,৫৪৪.০০ ৭ বছরে

১,৮১,৩১৪.০০

৯,৮৭,৫৫৩.০০

 

সাত বছরে নীট মুনাফা

সাত বছরে আয়

১২,৫৮,০০০.০০

সাত বছরে ব্যয়

৯,৮৭,৫৫৩.০০

নীট মুনাফা

২,৭০,৪৪৭.০০

এখানে মৃত্যুর হার ধরা হয়নি ।

  • যে ৫টি গাভী, ৩টি বকনা ও ২টি বাছুর দিয়ে খামার শুরু করা হয়েছিলো সাত বছর পর সেগুলো খামারের মূলধন হিসেবে বিবেচিত হবে। আবার এই ৫টি গাভী বিক্রয় করে তা থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে খামারের বাছুর প্রতিপালন করা যাবে ।

অনুশীলন ( Activity) ঃ

৩ টি গাভীর খামারের আয় ব্যয়ের হিসাব করুন ।

সারমর্ম

খামারের আয় ব্যয়ের হিসাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কী পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করে কী পরিমাণ মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হবে তা আয় ব্যয়ের হিসাব থেকে জানা যায় । প্রকৃতপক্ষে আয় ব্যয়ের হিসাব সঠিক না হলে খামার পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ে।

 

 

পাঠোত্তর মূল্যায়ন

১। সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (√) দিন ।

ক. দুধালো গাভীর জন্য ছন ও বাঁশের ঘর তৈরিতে প্রতি বর্গফুটের খরচ ধরা হয়েছে-

i. ৭০ টাকা

ii. ১৯০ টাকা

iii. ১২০ টাকা

iv. ১৮০ টাকা

খ. একটি পূর্ণ বয়স্ক গাভী প্রতিদিন শুকনা খড় কত কেজি খাবে?

i. ৪ কেজি

ii. ৫ কেজি

iii. ৬ কেজি

iv. ৮ কেজি

২। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন ।

ক. প্রতি টন গোবরের দাম ২০ টাকা ।

খ. ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের গরু ৬ কেজি গোবর উৎপন্ন করে ।

৩। শূন্যস্থান পূরণ করুন ।

ক. দুধ ছাড়া গাভী থেকে ——- পাওয়া যায় ।

খ. খামারের জন্য প্রয়োজনীয় জমি ——– হতে পারে ।

৪।  এক কথায় বা বাক্যে উত্তর দিন ।

ক. খামারের আয় ব্যয়ের হিসাব কেন করা হয় ?

খ. প্রতিটি গাভীর মূল্য কত ধরা হয়েছে?

৩-৫ টি গাভীর খামার স্থাপনে প্রকল্প প্রণয়ন

আজকে আমরা ৩-৫ টি গাভীর খামার স্থাপনে প্রকল্প প্রণয়ন আলোচনা করবো। দুগ্ধ খামার স্থাপনে প্রাথমিক করণীয়। এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর দুগ্ধ খামার স্থাপন ইউনিটের অন্তর্গত।

 

 

৩-৫ টি গাভীর খামার স্থাপনে প্রকল্প প্রণয়ন

আমাদের দেশের দরিদ্র এবং বেকার যুবকদের জীবিকার সন্ধান ও স্বনির্ভর হওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে গাভীর খামার স্থাপন প্রকল্প অন্যতম । এই পাঠে ৫ টি গাভীর খামার স্থাপন প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ।

পাঁচটি গাভীর খামার প্রকল্প

প্রয়োজনীয় উপকরণ

  • মূলধন
  •  প্রয়োজনীয় গাভী
  • বাসস্থান
  • খাদ্য
  • রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
  • প্রজনন

মূলধন

মূলধন নিজস্ব হতে পারে অথবা ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যেতে পারে । ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে এ মূলধনের শতকরা ৬০ ভাগ সংগ্রহ করা যেতে পারে ।

 

 

প্রয়োজনীয় গাভী

সারণি তে পাঁচটি গাভীর খামার তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় গাভীর ধরন, সংখ্যা, এদের গড় দৈহিক ওজন এবং দৈনিক গড় দুধ উৎপাদন উল্লেখ করা হলো ।

সারণিঃ পাঁচটি গাভীর খামার তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় গাভীর ধরন, সংখ্যা, এদের গড় দৈহিক ওজন এবং দৈনিক গড় দুধ উৎপাদন ।

পশুর ধরন

গাভীর সংখ্যা

গড় দৈহিক ওজন (কেজি)

দৈনিক গড়
দুধ উৎপাদন (কেজি)

ক. দুধালো গাভী (৬৫%)

৩৫০

৮.০

খ. দুধবিহীন গাভী (৩৫%)

৩৫০

গ. বকনা

১৫০

ঘ. বাছুর

৭৫

পাঁচটি গাভীর খামারে মোট দশটি গরু থাকা উচিত।

বাসস্থান

দুগ্ধখামারের বাসস্থান স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া উচিত। ৫ টি গাভীর দুগ্ধখামারে প্রয়োজনীয় গৃহায়ন নিরূপণ হতে হবে ।

গাভীর জন্য গোশালা

  • প্রতিটি দুধালো গাভীর জন্য ৩২ বর্গফুট হিসেবে ৩ টির জন্য মোট ৯৬ বর্গফুট বাঁশের বেড়া, এক চালা টিনের ঘর। ইটের মেঝে খাবার ব্যবস্থা রাখতে হবে ।
  •  প্রতিটি দুধবিহীন গাভী এবং বকনার জন্য ৫০ বর্গফুট হিসেবে ৪ টির জন্য মোট ২০০ বর্গফুট বাঁশের বেড়া ছাড়া একচালা টিনের ঘর ।

বাছুরের জন্য গোশালা

  •  প্রতিটি বাছুরের জন্য ২০ বর্গফুট হিসেবে ৭ টি বাছুরের জন্য মোট ১৪০ বর্গফুটের একচালা টিনের ঘর ।

 

খাদ্য

  • দুধালো গাভীর শুষ্ক পদার্থের প্রয়োজনীয়তা (অপচয় সহ) দৈহিক ওজনের ৩.৩০% আঁশ জাতীয় ও দানাদার খাদ্যের অনুপাত = ৩ঃ২
  • দুধবিহীন গাভীর শুষ্ক পদার্থের প্রয়োজনীয়তা (অপচয় সহ) দৈহিক ওজনের ৩.৩০% আঁশ জাতীয় ও দানাদার খাদ্যের অনুপাত = ৪ঃ১
  • বকনার শুষ্ক পদার্থের প্রয়োজনীয়তা (অপচয় সহ) দৈহিক ওজনের ৩.৫০% আঁশ জাতীয় ও দানাদার খাদ্যের অনুপাত = 980
  • বাছুরের শুষ্ক পদার্থের প্রয়োজনীয়তা (অপচয় সহ) দৈহিক ওজনের ৪.০% আঁশ জাতীয় ও দানাদার খাদ্যের অনুপাত = ৩ঃ২ মোট ১০০ দিনের খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা ।
  • শুকনো ও দানাদার খাদ্যে শুষ্ক পদার্থের পরিমাণ ৯০.০%

সারণি তে পাঁচটি গাভীর খামারে বাৎসরিক খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা ও খরচ উল্লেখ করা হলো

সারণিঃ পাঁচটি গাভীর খামারে বাৎসরিক খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা ও খরচ।

খাদ্যের ধরন

বাৎসরিক খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা (কেজি)

প্রতি কেজির মূল্য (টাকা)

বাৎসরিক মূল্য (টাকা)

দুধালো গাভী

দুধবিহীন গাভী

বকনা বাছুর মোট
আঁশ জাতীয় খাদ্য ৮৪৩২.০ ৭৪৯৫.০ ৩০০০.০ ১১০০.০ ২০০২৭.০

১.০

২০০২৭.০

দানাদার জাতীয় খাদ্য ৫৬২১.০ ১৮৭৪.০ ১৩.০০.০ ৭২০.০ ৯৫১৫.০

১০.০

৯৫১৫০.০

 

সুতরাং পাঁচটি গাভীর খামারে বাৎসরিক খাদ্য খরচ হবে ১,১৫,১৭৭০ টাকা ।

স্বাস্থ্যবিধি ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা

গাভীসহ অন্যান্য বাছুরের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন বয়সে ভ্যাকসিন দিতে হবে। এছাড়া প্রয়োজনে ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স ক্রয় করে গাভীকে খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনে কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করাতে হবে। গাভীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য নিয়মিত গোসল করাতে হবে । গোয়ালঘরের গোবর, চোনা পরিষ্কার করে নির্দিষ্ট স্থানে বা গর্তে জমা করতে হবে । এছাড়া গাভীর গায়ের আঠালী, ডাস (মাছি), জোঁক ইত্যাদি অবাঞ্চিত পোকামাকড় বেছে মেরে ফেলতে হবে ।

 

 

প্ৰজনন

দুগ্ধখামারে দুধ উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এবং নিয়মিত বাচ্চা পাওয়ার জন্য প্রজনন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । এজন্য গাভী কখন গরম হয়, কোন্ ষাঁড় দ্বারা প্রজনন করানো হবে তার বিস্তারিত তথ্য পূর্ব হতেই সংগ্রহ করে রাখতে হবে । মনে রাখতে হবে সঠিক সময়ে ভালো ষাঁড় দ্বারা প্রজনন করিয়ে সুস্থ সবল বাছুর পেলেই কেবল লাভজনক খামার গড়ে তোলা সম্ভব ।

অনুশীলন ( Activity) :

ধরুন, আপনার ৩ টি গাভীর একটি খামার আছে। এদের জন্য কী পরিমাণ জায়গার প্রয়োজন হবে তা হিসেব করে বের করুন ।

সারমর্ম

গাভীর খামার স্থাপনের পূর্বে প্রকল্প প্রণয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । সুষ্ঠু প্রকল্প প্রণয়নের মাধ্যমে খামারের প্রয়োজনীয় উপকরণসহ অন্যান্য বিষয় সম্বন্ধে সম্যক ধারনা পাওয়া যায়। ৩-৫ টি গাভীর | প্রকল্প প্রণয়নের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মূলধন, গাভী, গাভীর খাদ্য, বাসস্থান এবং সর্বোপরি প্রজনন | ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে সম্পাদন করা সম্ভব ।

পাঠোত্তর মূল্যায়ন

১ । সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (√) দিন ।

ক. ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে মূলধনের শতকরা কত ভাগ সংগ্রহ করা যায় ?।

i. ৫০ ভাগ

ii. ৬০ ভাগ

iii. ৭০ ভাগ

iv. ৮০ ভাগ

খ. পাঁচটি গাভীর খামারে দুধালো গাভী কয়টি থাকবে ?

i. টি

ii. ৩ টি

iii. ৪ টি

iv. ৫ টি

২। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন ।

ক প্রতিটি দুধালো গাভীর জন্য ২২ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন ।

খ. প্রতিটি বকনার জন্য ৩৫ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন ।

৩। শূন্যস্থান পূরণ করুন ।

ক. প্রতিটি দুধবিহীন গাভীর জন্য শুষ্ক পদার্থের প্রয়োজনীয়তা দৈহিক ওজনের________

খ. বাছুর পেলেই লাভজনক খামার গড়া সম্ভব ।

৪।  এক কথায় বা বাক্যে উত্তর দিন ।

ক. মূলধনের উৎস কী কী হতে পারে?

খ। খামার স্থাপনে প্রকল্প প্রণয়নের প্রয়োজন কেন ?

 

দুধ দোহন ও দুধ বাজারজাতকরণ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ দুধ দোহন ও দুধ বাজারজাতকরণ । এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর গাভীর জাত উন্নয়ন ইউনিটের অন্তর্গত।

 

 

দুধ দোহন ও দুধ বাজারজাতকরণ

দুধ দোহন (Milking )

যে প্রক্রিয়া বা কৌশলের মাধ্যমে গাভীর ওলান থেকে দুধ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে তাকে দুধ দোহন বলে । প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সঠিকভাবে গাভী থেকে দ্রুত দুধ দোহন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এতে করে গাভী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে ।

দুধ দোহনের বিভিন্ন ধাপ (Steps for milking)

সঠিকভাবে দুধ দোহন সম্পন্ন করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয়—

দুধ দোহনের সময় (Time of milking) :

নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুযায়ী প্রতিদিন দু’বার বা তিনবার দুধ দোহন করা উচিত । যখন তখন দুধ দোহন করলে দুধ উৎপাদন কমে যায় ।

দুধ দোহন ক্রম (Milking order) :

কোনো দলে একের অধিক গাভী থাকলে নিচের ক্রম অনুযায়ী দুধ দোহন করা উচিত ।

১. ম্যাস্টাইটিস রোগমুক্ত বকনা বাছুর ।

২. ম্যাস্টাইটিস রোগমুক্ত বয়স্ক গাভী ।

৩. যে সমস্ত গাভীর পূর্বে ম্যাস্টাইটিস রোগ হয়েছিলো কিন্তু তারপর অনেকদিন পর্যন্ত ম্যাস্টাইটিস রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।

গাভী এবং দোহনকারীকে প্রস্তুত করা (Preparing the cow and milker) :

দোহনকারী ও যে গাভীর দুধ সংগ্রহ করা হবে এদের মধ্যে পারস্পরিক পছন্দ থাকা উচিত । দুধ দোহনের পূর্বে কখনোই গাভীকে বিরক্ত করা উচিত নয় অথবা মারধোর করা উচিত নয় । দোহনের পূর্বে গাভীর ওলান এবং বাঁট অ্যান্টিসেপ্‌টিক লোশন অথবা নিমপাতার গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে । এরপর পরিষ্কার কাপড় পরিধান করতে হবে, তোয়ালে বা টুপি দিয়ে চুল ঢেকে রাখতে হবে এবং প্রতিদিন নখ কাটতে হবে। দুধ দোহনের সময় দোহনকারীর যদি কোনো বদভ্যাস যেমন— মুখ থেকে থুতু ফেলা, নাক ঝাড়া এমনকি দোহনের সময় কথা বলা ইত্যাদি থাকে তাহলে ঐ দোহনকারীকে দিয়ে দুধ দোহন করানো উচিত নয় ।

 

 

পরিষ্কার তৈজসপত্র ব্যবহার করা (Use of clean utensils) :

দুধ সংগ্রহরে জন্য বালতির পরিবর্তে গম্বুজ আকৃতির ঢাকনাসহ স্বাস্থ্যসম্মত হাতাওয়ালা বালতি ব্যবহার করা উচিত। প্রত্যেকবার দুধ দোহনের পর দুধের পাত্র প্রথমে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং পরে ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুতে হবে । পরবর্তী দোহনের পূর্ব পর্যন্ত র‍্যাকে পাত্রগুলো উপুড় করে সাজিয়ে রাখতে হবে ।

 

 

মশামাছির আক্রমণ থেকে গাভীকে মুক্ত রাখা ( Keep cows free from flies etc.) :

দোহনের সময় মশা মাছি বা কোনো বিকট শব্দের ফলে গাভী যেন বিরক্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।

গাভীকে উদ্দীপিত করা (Stimulation of cows) :

বাছুরের সাহায্যে গাভীর বাঁট চুষে অথবা দোহনকারী কর্তৃক ওলান ম্যাসেজ করে গাভীকে উদ্দীপিত করতে হবে। দোহন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, দুধ যেনো সম্পূর্ণভাবে দোহন করা হয় ।

দোহনের সময় খাওয়ানো (Feeding during milking) :

দুধ দোহনের সময় গাভীকে ব্যস্ত রাখার উদ্দেশ্যে অল্প পরিমাণ দানাদার মিশ্রণ খাওয়ানো ভালো। এতে করে গাভী খেতে ব্যস্ত থাকে এবং সহজে দুধ দোহন করা যায় ।

স্ট্রিপ কাপ ব্যবহার করা (Using strip cup) :

গাভী ম্যাস্টাইটিস রোগে আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য স্ট্রিপ কাপ ব্যবহার করা হয়। দোহনের শুরুতেই প্রতিটি বাট থেকে এক থেকে দুই ফোঁটা দুধ স্ট্রিপ কাপে নেয়া হয় । এতে করে দুধে যদি কোনো অস্বাভাবিকতা থাকে তবে তা দোহনকারী বুঝতে পারে এবং পাশাপাশি বাঁটে কোনো ময়লা থাকলে তা বের হয়ে আসে ।

 

 

দুধদোহন পদ্ধতি (Milking procedure ) :

দুধদোহনের যে কোনো একটি পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ করে দুধ দোহন করতে হবে ।

দুধ দোহন পদ্ধতি (Milking procedure)

দুধদোহনের দুটো পদ্ধতি রয়েছে—

১. হাত দিয়ে দুধ দোহন ( Hand milking )

২. যন্ত্রের সাহায্যে দুধ দোহন (Machine milking )

১. হাত দিয়ে দুধ দোহন (Hand milking)

হাত দিয়ে দুধ দোহনের মূলনীতি হচ্ছে— ওলানের বাঁটের গোড়া বন্ধ রেখে বাঁটের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয় । ফলে বাঁটে রক্ষিত দুধ বের হয়ে আসে । আবার চাপ সরিয়ে নিলেই ওলান থেকে বাঁটে দুধ এসে জমা হয়। এভাবেই বারবার প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে। হাত দিয়ে দোহনের ক্ষেত্রে গাভীর বামপাশ থেকে দোহন করতে হয় । দুধ দোহনের নিয়ম হলো— প্রথমে সামনের বাঁট দুটো একসাথে ও পরে পেছনের বাঁট দুটো একসাথে অথবা গুণ চিহ্নের মতো সামনের একটি ও পেছনের একটি বাঁট একসাথে অথবা যে বাঁটে দুধ বেশি আছে বলে মনে হবে সেগুলো আগে— এভাবে দোহন করা যায়। হাত দিয়ে দুধ দোহনের কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে—

ক. পূর্ণ হস্ত পদ্ধতিতে দোহন (Full hand milking)

খ. নোড-এর সাহায্যে দোহন (Milking with node)

গ. দুই আঙুলের সাহায্যে দোহন (Milking with two fingers)

ক. পূর্ণ হস্ত পদ্ধতিতে দোহন (Full hand milking)

যে সমস্ত গাভীর ওলানের গঠন স্বাভাবিক এবং বাঁট পরিমিত আকারের তাদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি সবচেয়ে উপযোগী। এই পদ্ধতিতে হাতের তালু, বৃদ্ধাঙ্গুলি ও প্রথমাঙ্গুলি দিয়ে এমনভাবে বাঁট ধরা হয় যাতে করে কনিষ্ঠাঙ্গুলি মুক্ত থাকে । বৃদ্ধাঙ্গলি ও প্রথমাঙ্গুলি দিয়ে বাঁটের গোড়া বন্ধ রেখে চাপ প্রয়োগ করলেই দুধ বের হয়ে আসে । আবার বাঁটের গোড়া খুলে দিলেই ওলান থেকে দুধ এসে বাঁটে জমা হয়।

 

 

খ. নোডের সাহায্যে দোহন (Milking with node)

যে সমস্ত গাভীর বাঁট মোটা ও মাংসল তাদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে । এই পদ্ধতিটি পূর্ণ হস্ত পদ্ধতির মতোই কিন্তু পার্থক্য হলো এই যে, এক্ষেত্রে বৃদ্ধাঙ্গুলির সামনের অংশ এবং প্রথমাঙ্গুলির সাহায্যে বাঁটের উপর চাপ প্রয়োগ করতে হয়। এটি একটি নিষ্ঠুর পদ্ধতি এবং এই পদ্ধতি সাধারণত অনুসরণ করা হয় না ।

 

 

গ. দুই আঙ্গুলের সাহায্যে দোহন (Milking with two fingers)

গাভী প্রথমবার বাচ্চা প্রসব করার পর সাধারণত বাঁট ছোট থাকে । এ ধরনের গাভীর জন্য এই পদ্ধতিটি প্রযোজ্য । এই পদ্ধতিতে বৃদ্ধাঙ্গুলি ও প্রথমাঙ্গুলি দিয়ে বাঁট ধরতে হয় । অতপর চাপ প্রয়োগ করে আলতোভাবে উপর থেকে নিচের দিকে আঙ্গুল দুটো নিয়ে আসতে হয় ।

 

 

২. যন্ত্রের সাহায্যে দুধ দোহন (Machine milking )

সাধারণত বড়ো বড়ো খামারে যেখানে দুগ্ধবতী গাভীর সংখ্যা অনেক বেশি থাকে সেখানে একসংগে অনেকগুলো গাভীকে দোহনের জন্য দুধদোহন যন্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে । যন্ত্রের সাহায্যে খুব সহজে এবং অল্প পরিশ্রমে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে দুধ দোহন করা সম্ভব হয় ।

একটি দুধদোহন যন্ত্রে সাধারণত যে অংশগুলো থাকে—

  • ভ্যাকুয়াম পাম্প (Vacuum pump )
  •  ভ্যাকুয়াম ট্যাংক (Vacuum tank)
  • ভ্যাকুয়াম লাইন (Vacuum line)
  •  রেগুলেটর (Regulator)
  •  পালসেটর (Pulsator)
  • মিল্ক পাইপ (Milk pipe)
  • এয়ার পাইপ (Air pipe)
  •  টিট কাপ (Teat cup)
  •  দুধ সংগ্রহ পাত্র (Pail )
  • ক্লপিস (Claw piece)

যন্ত্রের সাহায্যে দুধ দোহন পদ্ধতি

দোহনের সময় হলে গাভীর বাঁটে টিট কাপ লাগিয়ে দিয়ে দোহন যন্ত্রটি চালু করতে হবে। ভ্যাকুয়াম পাম্প কর্তৃক সৃষ্ট ভ্যাকুয়াম পালসেটরের মাধ্যমে টিট কাপ শেল ও টিট কাপ লাইনারের মধ্যে শূন্যতার সৃষ্টি করে । ফলে ওলান থেকে দুধ এসে বাঁটে জমা হয়। আবার টিট কাপ সেল ও লাইনারের মধ্যে বাতাস ঢুকিয়ে স্ফীতির সৃষ্টি করলে বাঁটের উপর চাপ পড়ে এবং বাঁটে রক্ষিত দুধ মিল্ক পাইপ দিয়ে দুধ সংগ্রহ পাত্রে এসে জমা হয়।

 

 

 

দুধ বাজারজাতকরণ

বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি ইউনিয়ন (পরিচিতি নাম— মিল্ক ভিটা) এবং কয়েকটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাংলাদেশের কোথাও দুধ বাজারজাতকরণের কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই । বেশিরভাগ দুগ্ধ উৎপাদনকারী নিজেই বাজারে গিয়ে দুধ বিক্রয় করে থাকেন । দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও কোন সুনির্দিষ্ট গুণগত ও স্বাস্থ্যসম্মত মান অনুসরণ করা হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গোয়ালা দুধ উৎপাদনকারীর নিকট দুধ সংগ্রহ করে থাকে । তবে এক্ষেত্রে গোয়ালা অসুদপায় অবলম্বন করায় দুধের গুণগতমান কমে যায় ।

বাংলাদেশে অপ্রতুল পরিবহণ ব্যবস্থা এবং সঠিক বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা না থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মূল্যে দুধ ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে । উদাহরণ স্বরূপ ঢাকা শহরে প্রতি লিটার দুধের মূল্য যেখানে ২০-২৫ টাকা গ্রামাঞ্চলে সেখানে প্রতি লিটার দুধ ১০-১২ টাকা বা তারও কম মূল্যে বিক্রয় হচ্ছে। এছাড়াও গ্রামাঞ্চলে কোনো দিন হয়তো দুধের চাহিদা বাজারে খুব বেশি থাকে আবার কোনো দিন হয়তো চাহিদা খুবই কম থাকে । ফলে দুধ উৎপাদনকারী ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকেন । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দুধ বাজারজাতকরণের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে ।

বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি ইউনিয়ন যে পদ্ধতি অনুসরণ করছে তা আলোচনা করা হলো—

৩-৬ টি গ্রামের ১০০-৪০০ সদস্য নিয়ে প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি গঠন করা হয় । সমিতির সদস্যদের অবশ্যই কমপক্ষে একটি নিজস্ব গাভী থাকতে হবে । এছাড়াও প্রত্যেক সদস্যকে বছরে ১৫০ দিনে কমপক্ষে ১৫০ লিটার দুধ সরবরাহ করতে হবে । সমিতির সদস্যরা উৎপাদিত দুধ নির্দিষ্ট কেন্দ্রে সরবরাহ করে থাকেন। সমিতির সদস্যরা যেন ন্যায্য মূল্য পায় এজন্য দুধে চর্বির শতকরা হারের উপর মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে । ফলে দুগ্ধ উৎপাদনকারী তার উৎপাদিত দুধ নিয়ে যেমন দুঃশচিন্তায় ভোগেন না ঠিক তেমনি ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় উৎপাদনে উৎসাহ বোধ করে থাকেন ।

সারমর্ম

দুগ্ধ খামারে দুধ দোহন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সঠিকভাবে দুধদোহন প্রক্রিয়ার উপর খামারের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে । এজন্যই দুধদোহনের বিভিন্ন ধাপ এবং হাত দিয়ে বা যান্ত্রিকভাবে দুধদোহনের ক্ষেত্রে সঠিক কৌশল অনুসরণ করা উচিত । দুধ একটি পচনশীল দ্রব্য। তাই দুধ উৎপাদনের পর তা বাজারজাতকরণ জরুরী। বাংলাদেশে যদিও দুধ বাজারজাতকরণের | কোনো পদ্ধতি নেই, তবুও বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি ইউনিয়ন দুধ বাজারজাতকরণের পদ্ধতি অনুসরণ করছে।

পাঠোত্তর মূল্যায়ন

১। সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (~) দিন ।

ক. নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুযায়ী প্রতিদিন কতবার দুধদোহন করা উচিত?

i. ২/৩ বার

ii. ৪/৫ বার

iii.৩/৪ বার

iv. ১ বার

খ. হাত দিয়ে দুধ দোহনের কয়টি পদ্ধতি রয়েছে?

i. টি

ii. ৩ টি

iii.৪ টি

iv. ৫ টি

২। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন ।

ক. দোহনকারী ও যে গাভীর দুধ সংগ্রহ করা হবে এদের মধ্যে পারস্ রিক পছন্দ থাকা উচিত ।

খ. গাভী থেকে ধীরে ধীরে দুধদোহন করতে হয় ।

৩। শূন্যস্থান পূরণ করুন ।

ক. যে সমস্ত গাভীর ——– গঠন স্বাভাবিক তাদের ক্ষেত্রে পূর্ণহস্ত পদ্ধতি প্রযোজ্য ।

খ. নোড এর সাহায্যে দুধদোহন একটি ——পদ্ধতি ।

৪।  এক কথায় বা বাক্যে উত্তর দিন ।

ক. প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি কতজন সদস্য নিয়ে গঠন করা হয়?

খ. দুই আঙ্গুলের সাহায্যে দুধদোহন পদ্ধতিতে কোন্ কোন্ আঙ্গুল দিয়ে বাঁট ধরতে হয়?

দুগ্ধ খামার ব্যবস্থাপনা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ  দুগ্ধ খামার ব্যবস্থাপনা। এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর দুগ্ধ খামার স্থাপন ইউনিটের অন্তর্গত।

 

 

 দুগ্ধ খামার ব্যবস্থাপনা

দুগ্ধ খামার হলো শিল্প কারখানার মতো। মোটর কোম্পানীতে যেমন ষ্টিল, রাবার, প্লাস্টিক, শ্ৰমিক ইত্যাদি ব্যবহার করে গাড়ি তৈরি করা হয় ঠিক তেমনি দুগ্ধ খামারেও শ্রমিক, জমি, হে, সাইলেজ এবং অন্যান্য দ্রব্যাদি ব্যবহার করে গাভী থেকে দুধ উৎপাদন করা হয় । তবে দুধ উৎপাদনের জন্য এই কাজগুলো করতে হয় ধাপে ধাপে এবং পরিকল্পনামাফিক । দুগ্ধ খামারের এই প্রক্রিয়াটিই হলো ব্যবস্থাপনা ।

দুগ্ধ খামার ব্যবস্থাপনায় যে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হয় সেগুলো হলো-

  • গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন গাভীর যত্ন ও পরিচর্যা (Care and management of cow during and after parturition)
  • বাসস্থান (Housing )
  • দুগ্ধবতী বাছুর পালন ( Raising dairy calf)
  • দুগ্ধ খামারে তথ্য সংরক্ষণ (Keeping records in dairy farm)
  • অন্যান্য ব্যবস্থাপনা (Other management )

গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন গাভীর যত্ন ও পরিচর্যা (Care and management of cow during and after parturition)

দুগ্ধ খামারের সফলতা নির্ভর করে সঠিক ও উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার উপর । গাভী থেকে অধিক পরিমাণে দুধ উৎপাদনের জন্য এবং সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম বাচ্চা পাওয়ার জন্য গর্ভকালীন ও প্রসবের সময় গাভীর বিশেষ ধরনের যত্ন নেওয়া উচিত । এই কোর্স বইটির পাঠ ১.৬ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন ।

 

 

বাসস্থান (Housing)

পরিকল্পনামাফিক উপযুক্ত বাসস্থান ব্যতীত কখনোই দুগ্ধ খামারের সঠিক ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। অপরিকল্পিত বাসস্থান অনেক সময় দুগ্ধ খামারকে অলাভজনক করে তুলতে পারে । সঠিক বাসস্থানের মাধ্যমে একদিকে যেমন গাভীর আরামদায়ক অবস্থা নিশ্চিত করতে হবে অন্যদিকে তেমনি বাসস্থান যেন স্বাস্থ্যসম্মত, দীর্ঘস্থায়ী ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দুধ উৎপাদনের উপযোগী হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে । এই কোর্স বইটির পাঠ ২.১ এর স্থান নির্বাচন ও বাসস্থান অংশটুকু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন ।

দুগ্ধবতী বাছুর পালন (Raising dairy calf)

একটি গাভীর খামার কতোটা সফলতা লাভ করবে তা নির্ভর করে ঐ খামারে বাছুর কিভাবে পালন করা হচ্ছে । ভালো গাভী কখনোই ক্রয় করা যায় না, খামারে তৈরি করতে হয় । অব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের দেশে বাছুরের মৃত্যুর হারও অনেক বেশি । একটি ভালো গাভী যেমন একটি ভালো বাছুরের জন্ম দেয় তেমনি একটি ভালো বাছুর একটি ভালো গাভী হতে পারে ।

সাধারণত দু’ভাবে বাছুর পালন করা হয়ে থাকে—

ক. বাছুরকে তার মায়ের কাছে থাকতে দেওয়া হয় এবং দোহনের পূর্বে ও পরে অল্প পরিমাণে মায়ের দুধ পান করতে দেওয়া হয় ।

খ. গাভী থেকে পৃথক রেখে বাছুর পালন : এক্ষেত্রে জন্মের ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে বাছুরকে মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। অনেকে আবার কলস্ট্রাম খাওয়ার সময়টুকু পর্যন্ত বাছুরকে মায়ের কাছে রেখে দেয়। পরবর্তীতে একেবারে পৃথকভাবে বাছুরের খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করা হয়ে থাকে । এই পদ্ধতিটির নাম “দুধ ছাড়ানো পদ্ধতি” বা উইনিং সিস্টেম (Weaning system)। এই পদ্ধতিটিই সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং অধিক বিজ্ঞানসম্মত । বৈজ্ঞানিকভাবে বাছুর পালন কার্যক্রম নিচে আলোচনা করা হলো—

জন্মের পূর্বেই বাছুরের খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা

বাছুর গাভীর গর্ভে থাকাকালীন সময় থেকেই তার পালন শুরু হয়ে থাকে । গাভীকে সঠিকভাবে খাদ্য না দিলে এবং উপযুক্ত পরিচর্যা প্রদান না করলে দূর্বল বাছুর প্রসবের সম্ভাবনা থাকে । এজন্য বাছুরের সঠিক বৃদ্ধির জন্য প্রসবের ৩ থেকে ৫ মাস পূর্ব থেকেই গাভীর প্রতি নজর দেওয়া উচিত ।

জন্মের পরপরই বাছুরের যত্ন

বাছুর জন্মানোর পরপরই তার নাক-মুখ থেকে শ্লেষ্মা পরিষ্কার করে গাভীকে চাটতে দিতে হবে । শীতকালে খেয়াল রাখতে হবে যেন বাছুরের ঠান্ডা না লাগে। অতপর জীবাণুমুক্ত কাঁচি দিয়ে নাভীর রজ্জু কেটে টিংচার আয়োডিন লাগিয়ে দিতে হবে ।

 

 

বাছুরকে খাওয়ানোর পদ্ধতি

বাছুরকে দু’পদ্ধতিতে খাওয়ানো যায় । যেমন—

ক. স্বাভাবিক উপায়ে খাওয়ানো (Natural feeding) :

এ পদ্ধতিতে দুধ দোহনের আগে ও পরে বাছুরকে তার মার বাঁট চুষে খেতে দেওয়া হয় । এতে বাছুর অনেক সময় প্রয়োজনমত দুধ খেতে পায় না । এছাড়াও বাছুর কতোটা দুধ খেলো সে সম্পর্কেও জানা যায় না ।

খ. কৃত্রিম উপায়ে খাওয়ানো (Artificial feeding) :

বাছুরকে যখন তার মার কাছ থেকে সরিয়ে পৃথকভাবে পালন করা হয় তখন কৃত্রিম উপায়ে খাওয়ানো হয়ে থাকে । এ পদ্ধতিতে আবার দু’ভাবে খাওয়ানো হয়ে থাকে । যেমন—

১. নিপলে খাওয়ানো (Nipple pail) :

এই পদ্ধতিতে দুধের পাত্রের সাথে নিপল লাগানো থাকে । বাছুরকে শিখিয়ে দিলেই বাছুর খুব সহজেই নিপলে দুধ খেতে শিখে ।

২. বালতিতে খাওয়ানো ( Pail feeding) :

সাধারণত নবজাত বাছুর প্রথমে সরাসরি বালতি বা পাত্রে দুধ খেতে চায় না, সেক্ষেত্রে বাছুরকে দুধ খেতে শেখাতে হয় । পাত্রে দুধ রেখে বাছুরের মুখটা পাত্রের কাছে নিয়ে আসতে হবে। প্রথমে হাতের একটি আঙ্গুল বাছুরকে চুষতে দিতে হবে এবং হাতটা আস্তে আস্তে নামিয়ে দুধের পাত্রে নিয়ে বাছুরের মুখ কাছে এনে আঙ্গুলটা সরিয়ে নিতে হবে। বাছুর দুধের স্বাদ পেলে খেতে শুরু করবে । বাছুরকে বেশ কিছুক্ষণ খেতে না দিয়ে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করলে দ্রুত কার্যকর হয় । বাছুর এভাবে পাত্রে দুধ খেতে শিখলে প্রতিটি বাছুরকে পৃথক পাত্রে বা বালতিতে দুধ খাওয়ানো হয় ।

তবে বালতিতে খাওয়ানোর তুলনায় উঁচুস্থানে সংরক্ষিত নিপল হতে দুধ খাওয়ানো বাছুরের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী । কারণ এ পদ্ধতিতে বাছুর ঘাড় সোজা করে দুধ টানে। ফলে কিছু দুধ সরাসরি অ্যাবোমেজামে চলে আসে। এ দুধ সরাসরি এনজাইমেটিক ডাইজেশন হওয়ায় বাছুরের পুষ্টিতে অধিকতর সহায়ক । একটু খেয়াল করলে দেখাযাবে, গাভী হতে বাছুর প্রকৃতির এনিয়মেই দুধ পান করে ।

 

 

 বাছুরের খাদ্য

বাছুরের প্রাথমিক খাদ্য হলো কলস্ট্রাম বা কাচলা দুধ। জন্মের পর থেকে অন্তত ৩ দিন পর্যন্ত বাছুর যাতে দৈনিক ২ থেকে ২.৫ লিটার পরিমাণ কলস্ট্রাম খেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে ।

বাছুরকে গাভীর দুধ (Whole milk) খাওয়াতে হলে কিছু নিয়ম অনুসরণ করা উচিত । যেমন—

১. দুধ সংগ্রহ করার পরপরই বাছুরকে খাওয়াতে হবে ।

২. পরে খাওয়াতে চাইলে শরীরের তাপমাত্রার সাথে সংগতি রেখে দুধ গরম করে খাওয়াতে হবে।

৩. ৭ দিন বয়স পর্যন্ত দৈনিক ৩ থেকে ৪ বার এবং এরপর দৈনিক দু’বার খাওয়াতে হবে ।

এছাড়াও বাছুরকে ননীবিহীন দুধ (Skim milk), শুষ্ক ননীবিহীন দুধ (Dried skim milk), ছানার পানি (Whey) ইত্যাদি খাওয়ানো যেতে পারে । সাধারণত দু’সপ্তাহ বয়স থেকে বাছুরকে “কাফ স্টারটার” (Calf starter) প্রদান করা যেতে পারে । জন্মের ৭-১৫ দিনের মধ্যে বাছুরকে দানাদার মিশ্রণ খাওয়ানো শুরু করা যেতে পারে । ৩ থেকে ৬ মাস বয়সে বাছুরকে অল্প অল্প করে সাইলেজ খাওয়ানো যায় ।

দুধ ছাড়ার পর বাছুরকে কচি ঘাস খাওয়ানো যায় । বাছুরকে চারণভূমিতে চরে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বাছুর যেন সবসময় পরিষ্কার পানি পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে । বাছুরের খাদ্যে যেন প্রয়োজনমত খাবার লবণ, খনিজ পদার্থ থাকে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে । প্রয়োজনবোধে বাছুরের খাবারের সাথে খনিজ মিশ্রণ সরবরাহ করা যেতে পারে । পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, অ্যান্টিবায়োটিক বাছুরের বৃদ্ধিতে ভালো ভূমিকা রাখে । সুতরাং বাছুরের খাবারের সাথে পরিমাণমত অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহ করা যেতে পারে ।

বাছুরের বাসস্থান

বাছুরের ঘর গাভীর ঘরের কাছাকাছি হওয়া বাঞ্ছনীয় । প্রতিটি বাছুরের জন্য ১০ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন । বাছুরের ঘরের সাথে সরাসরি সংযুক্ত একটি খোলা জায়গা থাকতে হবে যেখানে বাছুর দৌড়াদৌড়ি করতে পারবে এবং এতে করে তার ব্যায়াম হবে । বাছুরের ঘর সংলগ্ন একটি খাবার ঘরও থাকতে হবে । এছাড়া বাছুরের ঘরে পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে । সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য যদি সম্ভব হয় বিভিন্ন বয়সের বাছুর যেমন – ৩ মাসের কম বয়স্ক বাছুর, ৩-৬ মাস বয়সী বাছুর এবং ৬ মাসের বেশি বয়স্ক বাছুর আলাদা আলাদা রাখা যেতে পারে ।

বাছুরের ডিহর্নিং (Dehorning the calf)

ডিহর্নিং এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে রাসায়নিক বস্তু ব্যবহার করে বা যান্ত্রিকভাবে বা বৈদ্যুতিক ডিহর্নারের সাহায্যে শিং কেটে ফেলা হয় । সাধারণত বাছুরের জন্মের ১০ দিনের মধ্যে ডিহর্নিং করা ভালো । ডিহর্নিং করার পদ্ধতিগুলো হলো- –

ক. রাসায়নিক পদ্ধতি ঃ এক্ষেত্রে রাসায়নিক বস্তু হিসেবে কস্টিক পটাশ ব্যবহার করা হয় ।

খ. যান্ত্রিক পদ্ধতি ঃ বিশেষভাবে তৈরিকৃত কর্তন যন্ত্র বা করাত ব্যবহার করে অথবা রাবার ব্যান্ডের সাহায্যে ।

গ. বৈদ্যুতিক ডিহর্নার ব্যবহার করে ।

 

 

 

 

 

বাছুর চিহ্নিতকরণ (Marking the calf)

বাছুর চিহ্নিতকরণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খামার ব্যবস্থাপনা । বাছুর চিহ্নিতকরণের যে পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলো—

ব্রান্ডিং (Branding) :

সংখ্যা, অক্ষর, ডিজাইন বা এসবের সংযোগে তপ্ত লোহা বা রাসায়নিক দ্রব্যের (তরল নাইট্রোজেন) মাধ্যমে ত্বকে ছাপ দিয়ে বাছুর শনাক্তকরণ পদ্ধতিই হলো ব্রান্ডিং ।

 

 

ট্যাটুইং (Tattoing) :

এই পদ্ধতিতে নম্বর লাগানোর জন্য একটি ট্যাটুইং সেট থাকে এবং সেই সেটে থাকে একটি ট্যাটুইং ফরসেপ (চিত্র- ১৮), ট্যাটুইং কালি এবং একটি অনুক্রমিক যুক্ত সংখ্যা বা অক্ষর । সাধারণত কানের ভেতর পাশে আলতোভাবে ট্যাটুইং করা হয় ।

 

 

 

ইয়ার ট্যাগিং (Ear tagging) :

নম্বরযুক্ত হালকা ধাতুর পাত বা শক্ত প্লাসটিকের তৈরি ট্যাগ সুনির্দিষ্ট ট্যাগিং ফরসেপের সাহায্যে বাছুরের কানে ঝুলিয়ে চিহ্নিতকরণের নামই ইয়ার ট্যাগিং ।

 

 

এছাড়া গলায় ট্যাগ নম্বর ঝুলিয়ে বা কানে ছোট ছোট দাগ কেটে বা স্বল্প সময়ের জন্য শরীরে রং লাগিয়েও বাছুর চিহ্নিত করা হয়ে থাকে ।

বাছুরের রোগবালাই প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ (Prevention and control of calf diseases)

বাছুর পালনে সবচেয়ে বড়ো প্রতিবন্ধকতা হলো রোগবালাই । সাধারণত, সাদা স্কাউর, সাধারণ স্কাউর, নিউমোনিয়া, গোলকৃমি এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ পরজীবীর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ।

দুগ্ধ খামারে তথ্য সংরক্ষণ (Keeping records in the dairy farm )

সঠিকভাবে তথ্য সংরক্ষণ ব্যতীত কোনো ব্যবসাই লাভজনক হতে পারে না। দুগ্ধ খামারে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরী। উদাহরণস্বরূপ, তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যমেই খামারের ভালো গাভীটিকে চিহ্নিত করা যায় । আবার প্রতিদিন দুগ্ধ খামারে কী পরিমাণ খাবার দেওয়া হচ্ছে এবং কী হারে উৎপাদন হচ্ছে তা জেনে নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয় । দুগ্ধ খামারে যে সব তথ্য রাখা প্রয়োজন সেগুলো হলো—

  • দুধ উৎপাদন তথ্য (Milk record register)
  • খাদ্য প্রদান তথ্য (Cattle feed register)
  • প্রজনন তথ্য (Breeding record)
  • স্বাস্থ্য তথ্য (Health record)
  • বাছুরের তথ্য (Calf register)
  • আর্থিক তথ্য (Financial record)

অন্যান্য ব্যবস্থাপনা (Other management

দৈনন্দিন কার্যাবলী (Routine work)

প্রতিটি দুগ্ধখামারেই প্রতিদিন নিয়ম মাফিক কিছু কাজ করতে হয়। এই পাঠের শেষ অংশে দুগ্ধ খামারের দৈনন্দিন কার্যাবলী সম্পর্কে জানতে পারবেন ।

পরিচর্যার সময় দয়ালু মনোভাব প্রদর্শন (Kindness in handling)

দুগ্ধখামারে গাভীর প্রতি সবসময় দয়ালু মনোভাব প্রদর্শন করতে হবে । গাভীদের বন্য জীবজন্তুর মতো করে দেখা উচিত নয় । তাদের প্রতি সবসময় স্নেহপূর্ণ দৃষ্টি দিতে হবে ।

দুগ্ধবতী গাভীর গ্রুমিং (Grooming dairy cows)

গাভীর শরীরের বর্হিভাগ একটি ব্রাশ দিয়ে ঘষামাজা করে শরীর থেকে ময়লা ও আলগা চুল অপসারণ করাকেই গ্রুমিং বলে । গ্রুমিং এর ফলে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়, গাভী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে এবং পরিষ্কার দুধ উৎপাদন করা যায় । এছাড়া ওলান ও পেছনের পায়ের অপ্রয়োজনীয় লম্বা চুল কেটে ফেলা উচিত ।

গর্ভবতী গাভীকে দুগ্ধহীনা করা বা গাভীর দুধ বন্ধ করা (Drying off cows)

গাভী বাচ্চা প্রসবের ৪০-৮০ দিন পূর্ব থেকেই দুধ দোহন বন্ধ করা উচিত । দুধ দোহন বন্ধ করার উদ্দেশ্য হলো—

  • দুধ উৎপাদনকারী অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিশ্রাম দেওয়া ।
  • গাভী যে খাদ্য খায় তা দুধ উৎপাদনে খরচ না করে যেন বাচ্চার শারীরিক বৃদ্ধিতে কাজে লাগতে পারে ।
  • গাভীর শরীরে খনিজ পুষ্টির মজুদ গড়ে তোলা যা পরবর্তীতে দুধ উৎপাদনে কাজে লাগবে ।
  • প্রসবের পূর্বে গাভীকে স্বাস্থ্যবতী হতে দেওয়া ।

গাভীকে দুগ্ধহীনা করার তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। এগুলো হলো—

ক. সম্পূর্ণভাবে দোহন না করে (Incomplete milking) :

গাভীর দুধ দোহন বন্ধ করার সময় হলে প্রথমত কয়েকদিন ওলানে সামান্য দুধ রেখে দোহন করতে হবে, এরপর দিনে একবার করে অসম্পূর্ণভাবে দোহন করতে করতে যখন দুধ উৎপাদন অতি সামান্য পরিমাণে হবে তখন দোহন একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে ।

খ. সাধারণ দোহন করে (Intermittent milking) :

যে গাভীকে দুগ্ধহীনা করতে হবে সে গাভীকে প্রথমত দিনে একবার করে অতপর একদিন পরপর দোহন করতে হবে এবং অবশেষে দোহন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে হবে ।

গ. দোহন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে (Complete cessation) :

যে সকল গাভী অল্প পরিমাণে দুধ দেয় (যেমন সর্বোচ্চ ১০ লিটার) সে সকল গাভীর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি নিরাপদে ব্যবহার করা যায় ।

 

 

 

গাভীর গরম হওয়া নির্ধারণ ও পাল দেওয়ানো (Detecting heat and mating) :

সঠিকভাবে সময়মতো গাভীর গরম অবস্থা নির্ণয় করা ও পাল দেওয়ানো দুগ্ধ খামারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ । সময়মতো গাভীর গরম নির্ধারণ করে পাল দেওয়াতে না পারলে খামার ক্ষতিগ্রস্থ হবে ।

গর্ভ পরীক্ষা (Pregnancy diagnosis) :

গাভীকে পাল দেওয়ানোর দু’মাস পরেই গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করাতে হবে । পাল দেওয়ানোর পর গর্ভে বাচ্চা না আসলেও অনেক সময় গাভী পুনরায় গরম হয় না । সুতরাং সময়মতো গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করিয়ে গাভীর সঠিক অবস্থা জানতে হবে ।

দুধ দোহন (Milking) :

প্রতিদিন দুধ দোহনের সময় ওলান ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং যতটা সম্ভব প্রতিদিন একই সময়ে দুধ দোহন করতে হবে । গাভীকে পরিষ্কার করে শুকনো হাতে পূর্ণহস্ত পদ্ধতিতে (Full hand milking) দুধ দোহন করা উচিত ।

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (Disease preventive measures) :

যে বিষয়গুলো নিয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গঠিত সেগুলো হলো—

ক. টিকাদান কর্মসূচী (Vaccination programme) :

সময়মতো বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটোরিয়া ঘটিত রোগের টিকা দিতে হবে। যেমন— রিন্ডারপেস্ট, খুরা রোগ, তড়কা রোগ, বাদলা রোগ, গলাফোলা রোগ, ব্রুসেলোসিস ইত্যাদি ।

খ. বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা (Testing programme) :

বিভিন্ন সময়ে খামারের গাভী পশু চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে সন্দেহমুক্ত থাকতে হবে।

গ. কৃমিনাশক ব্যবহার (Deworming programme) :

খামারের গাভীর গোবর পরীক্ষা করে নির্দিষ্ট কৃমিনাশক ব্যবহার করা উচিত ।

গাভী ছাঁটাই (Culling of dairy animals )

দুগ্ধখামার লাভজনক করতে হলে খামার থেকে ত্রুটিযুক্ত অলাভজনক গাভীকে সময়মত ছাঁটাই করতে হবে । ছাঁটাইয়ের জন্য বিবেচ্য বিষয়গুলো হলো-

  • সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে ।
  • শারীরিক বৃদ্ধি ভালো না হলে ।
  • কম পরিমাণ দুধ দিলে ।
  • ঠিকমত গর্ভধারণ না করলে ।
  • নিয়মিতভাবে গরম না হলে ।
  • বছরে ২৭০ দিনের কম সময় দুধ দিলে ।
  • মারাত্মক বদ অভ্যাস থাকলে ।

বদঅভ্যাস নিয়ন্ত্রণ (Control of bad habits)

গাভীর বিভিন্ন ধরনের বদঅভ্যাস দেখা যায় । যেমন—

ক. নিজের বা অন্যের বাঁট চোষা (Suckling) :

এধরনের বদঅভ্যাসযুক্ত গাভীকে পৃথক করে রাখতে হবে । গাভীর নাকে লোহার রিং পড়িয়ে তার সাথে ২-৩ টি রিং ঝুলিয়ে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায় ।

খ. অন্যের শরীর চাটা (Licking) :

এ ধরনের বদঅভ্যাস দেখা দিলে লবণ বা খনিজ মিশ্রণ জিহ্বায় ঘষে দিতে হবে ।

গ. লাথি মারা (Kicking) :

এসব ক্ষেত্রে গাভী যদি বদরাগী হয় তাহলে তার মাথা উঁচু করে বাঁধতে হবে এতেও কাজ না হলে ওলানের ঠিক সম্মুখভাগে দড়ি দিয়ে বাঁধতে হবে । এভাবে বাঁধার পর ও ফল না পাওয়া গেলে পেছনের দু’পা শক্ত করে বাঁধার ব্যবস্থা করতে হবে ।

 

 

দুগ্ধখামারের দৈনন্দিন কার্যাবলী

দুগ্ধখামারের সফলতার জন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু কাজ নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সম্পন্ন করতে হবে । খামারের ব্যবস্থাপক এ কাজগুলোর তত্ত্বাবধান করে থাকেন । খামারের ব্যবস্থাপক এবং কর্মচারীদের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে এ কাজগুলো সম্পন্ন করা হয়ে থাকে । দুগ্ধ খামারে প্রতিদিন যে কাজগুলো করতে হয় সেগুলো হলো-

সময়

কাজ

ভোর ৩.০০ – ৩.৩০ মিঃ

দুধ দোহন করার ঘর এবং দুগ্ধবতী গাভীগুলোকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে ।

ভোর ৩.৩০ – ৪.৩০ মিঃ

দুধ দোহন শুরু করতে হবে এবং দৈনিক গাভীর যতটুকু দানাদার খাদ্যের প্রয়োজন তার অর্ধেক পরিমাণ দোহনের সময় গাভীকে খেতে দিতে হবে। দোহনের পর বাছুরকে খাওয়াতে হবে ।

সকাল ৫.৩০ – ৬.৩০ মিঃ

বিক্রয়ের জন্য কাঁচা দুধ সরবরাহ করতে হবে ।

সকাল ৬.৩০ – ৭.০০ মিঃ

গাভীগুলোকে শেডে পাঠাতে হবে ও খামারের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাজের সাথে জড়িত কর্মচারীরা সকাল ৭.০০টার মধ্যে তাদের দায়িত্ব শেষ করে চলে যাবেন । খামারের শ্রমিক এবং তদারককারীরা এ সময়ে কাজে যোগ দেবেন । খামারের শ্রমিকবৃন্দ সকাল ৭.০০টা থেকে বিকেল ৩.৩০ মি. পর্যন্ত মাঠে ঘাস সংগ্রহ করবেন ।

সকাল ৭.৩০ – ১১.০০ মিঃ

গাভীগুলো খোলা মাঠে ঘুরে বেড়াবে যাতে করে কিছুটা ব্যায়াম হয় এবং সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন-ডি সংশ্লেষণ করতে পারে । অন্যান্য ব্যবস্থাপনা, যেমন— চিহ্নিতকরণ, বাছুরের ডিহর্নিং, ভ্যাকসিনেশন, সাইলেজ ও হে তৈরিকরণ ইত্যাদি কাজ এ সময়ে করতে হবে ।

সকাল ১১.০০ – ১২.০০ মিঃ

এসময়ের মধ্যে সাইলেজ এবং হে তৈরির কাজ শেষ করতে হবে। গাভীগুলোকে মিল্কিং বার্নে পুনরায় নিয়ে আসতে হবে। অতপর দুধালো গাভী ছাড়া অন্যান্য প্রাণীদের দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে । এসময় অবশ্য সকল প্রাণিকে আঁশ জাতীয় খাদ্য দিতে হবে ।

বিকাল ২.৩০ ৩.০০ মিঃ

দুধালো গাভীসহ অন্যান্য গাভীর বাসস্থান এসময়ের মধ্যে পরিষ্কার পরিছন্ন করতে হবে ।

বিকাল ৩.০০ – ৪.০০ মিঃ

এসময় দুধ দোহন করতে হবে এবং অবশিষ্ট দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। অতপর বাছুরের খাবার সরবরাহ করতে হবে ।

বিকাল ৪.০০ – ৪.৩০ মিঃ

এসময়ে সকল প্রাণীদের আঁশ জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হবে । পিকআপ ভ্যানের সাহায্যে গ্রাহকদের নিকট তরল দুধ পৌঁছে দিতে হবে এবং খালি পাত্র সংগ্রহ করতে হবে ।

সন্ধ্যা ৬.০০ মিঃ

খামারে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে ।

সন্ধ্যা ৬.০০ রাত ১২.০০ মিঃ

নৈশ প্রহরী দায়িত্ব পালন করবে ।

 

ম্যানেজার রাত্রিবেলা খামার ত্যাগ করার প্রাক্কালে যেসব গাভী বাচ্চা প্রসব করতে পারে তাদের সংখ্যা অবশ্যই নৈশ প্রহরীকে অবগত করে যেতে হবে । সেই সাথে ক্যাশে রক্ষিত টাকার পরিমাণও জানিয়ে যেতে হবে । ম্যানেজারের যদি রাতে খামার পরিদর্শন করার ইচ্ছা থাকে তবে তা নৈশপ্রহরীকে বলে যেতে হবে যাতে করে পূর্ব অনুমতিসাপেক্ষে ম্যানেজার অনায়াসে খামারে প্রবেশ করতে পারে ।

সারমর্ম

গাভীর খামারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার উপর তার প্রকৃত মুনাফা নির্ভর করে। খামারের ম্যানেজার যদি | ভালো ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খামার পরিচালনা করেন তবে এর উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে। | খামারের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, শ্রমিকদের কাজের বন্টন, গাভী ও বাচ্চার প্রয়োজন মাফিক খাদ্য প্রদান প্রভৃতি বিষয়ে যদি প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রক্ষা করে খামার পরিচালনা করা হয় তবে সেক্ষেত্রে | উৎপাদনের হারও বেড়ে যাবে । এছাড়া খামারের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনমাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে খামার লাভজনক করে গড়ে তোলা উচিত ।

পাঠোত্তর মূল্যায়ন

১। সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (~) দিন ।

ক. গাভী থেকে পৃথক রেখে বাছুর পালনের ক্ষেত্রে জন্মের কতদিন পর মায়ের কাছ থেকে সরাতে হবে?

i. ২-৩ দিনের মধ্যে

ii. ৩-৪ দিনের মধ্যে

iii.৩-৫ দিনের মধ্যে

iv. ২-৫ দিনের মধ্যে

খ. বাছুরকে খাওয়ানোর পদ্ধতি কয়টি?

i. ৩ টি

ii. ৪ টি

iii. ৫ টি

iv. ২ টি

২। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন ।

ক. সাধারণত বাছুরের জন্মের ১০ দিনের মধ্যে ডিহর্নিং করা ভালো ।

খ. ট্যাটুইং একটি নম্বার লাগানোর যন্ত্র ।

৩। শূন্যস্থান পূরণ করুন।

ক. গাভীকে পাল দেয়ার ———- মাস পরেই গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করাতে হবে ।

সময়মতো গাভীকে বিভিন্ন —— ও —— ঘটিত রোগের টিকা দিতে হবে ।

৪।  এক কথায় বা বাক্যে উত্তর দিন ।

ক. সাধারণত ২ সপ্তাহ বয়স থেকে বাছুরকে কী খাওয়ানো যেতে পারে?

খ. শিং কেটে ফেলার যন্ত্রের নাম কী?

 

দুগ্ধ খামার স্থাপনে প্রাথমিক করণীয়

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ দুগ্ধ খামার স্থাপনে প্রাথমিক করণীয় । এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর দুগ্ধ খামার স্থাপন ইউনিটের অন্তর্গত।

 

 

দুগ্ধ খামার স্থাপনে প্রাথমিক করণীয়

ভূমিহীন, প্রান্তিক চাষী, যুবসম্প্রদায়, গ্রামীণ স্বল্পবিত্ত ও বিত্তহীন মহিলাদের উৎপাদনশীল কাজের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে পারিবারিক পর্যায় থেকে আরম্ভ করে জাতীয় পর্যায়ে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে দুগ্ধ খামার শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে । পৃথিবীর অনেক দেশেই এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশেও দুগ্ধ খামার স্থাপন একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । গাভীর খামার স্থাপনের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে হলে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা উচিত তা হলো—

  • স্থান নির্বাচন (Site selection)
  • বাসস্থান (Housing )
  • গাভী নির্বাচন (Selection of dairy cow)
  • খাদ্য (Feeding)
  • বাজারজাতকরণ (Marketing)

স্থান নির্বাচন (Site selection)

দুগ্ধ খামার স্থাপনের জন্য প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খামারের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন খামারের উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের জন্য বিবেচ্য বিষয়গুলো হলো –

  • স্থানটি শুকনো, উঁচু ও সমতল হবে যাতে করে বৃষ্টির পানি জমবে না এবং সহজেই খামারের বর্জ্য পদার্থসমূহ নিষ্কাশন করা যাবে ।
  • দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি বাজারজাত করার জন্য এবং খামারের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়ের জন্য উপযুক্ত যাতায়াত ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন ।
  • দুগ্ধ খামার অবশ্যই জনবসতি ও জনবহুল রাস্তা থেকে দূরে হতে হবে ।
  • খামারের আশেপাশে জলাভূমি থাকা চলবে না ।
  • ভবিষ্যতে খামারটি বড় করার সুযোগ থাকা আবশ্যক ।
  • স্বল্প খরচে প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ, পরিষ্কার এবং মৃদু পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক ।
  • বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের সুব্যবস্থা থাকতে হবে ।
  • সহজে ও স্বল্পমূল্যে নিয়মিতভাবে শ্রমিক পেতে হবে ।
  • ঘাস চাষের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ জায়গা থাকা উচিত ।

 

 

বাসস্থান (Housing)

বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যপ্রাণী, চোর প্রভৃতি থেকে খামারের গাভীকে রক্ষা করার জন্য এবং উন্নত আরামদায়ক অবস্থা ও উন্নত ব্যবস্থাপনা প্রদানের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান একান্ত প্ৰয়োজন ।

গাভীর বাসস্থান বা ঘর তৈরি করার সময় বিবেচ্য বিষয়গুলো হলো-

  • গাভীর ঘর পূর্ব পশ্চিমে লম্বা হবে ।
  • ঘরগুলো দক্ষিণমুখী হওয়া আবশ্যক ।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে ।
  • ঘরের মেঝে পাকা এবং খসখসে হবে । এতে গাভী পা পিছলে পড়ে যাবার সম্ভাবনা কম থাকে ।
  • ঘরের মেঝে ঢালু হবে এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে গোবর, চনা ইত্যাদি সহজে পরিষ্কার করা যায় ।
  • ঘরের চালা এসবেস্ট, ছন বা বাঁশ দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে । তবে টিন ব্যবহার করলে গরমের দিনে ঘর যাতে উত্তপ্ত না হয় সেজন্য টিনের নিচে চাটাই এর ব্যবস্থা করতে হবে ।
  • প্রতিটি গাভীর জন্য মেঝেতে ৩.৭৫-৪.৭৫ বর্গমিটার জায়গা রাখা উচিত ।

উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে দুটো পদ্ধতিতে গাভীর বাসস্থান তৈরি করা যেতে পারে ।

ক) উদাম ঘর পদ্ধতি (Loose housing system) :

এক্ষেত্রে শুধুমাত্র দুধ দোহন বা চিকিৎসার সময় ছাড়া অন্য সময় গাভীকে বেঁধে রাখা হয় না । এই পদ্ধতিতে গাভীর বাসস্থানের জন্য খরচ খুব কম হয় । তবে এক্ষেত্রে বড় অসুবিধা হলো গাভীগুলোর মধ্যে অন্তঃকলহের কারণে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে এবং উৎপাদন মাত্রা ভিত্তিক খাদ্য সরবরাহ করা সম্ভব হয় না ।

খ) বাঁধা ঘর পদ্ধতি (Stanchion barn system) :

এধরনের ঘরে গাভীগুলোকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বেঁধে রাখা হয় । এই পদ্ধতির বড় অসুবিধা হলো নির্মাণ খরচ বেশি হয় এবং শ্রমিক বেশি লাগে । বাঁধা ঘর আবার দুধরনের হয়ে থাকে—

১. একসারি বিশিষ্ট বাঁধা ঘর (Single rowed stanchion barn) : সাধারণত অল্পসংখ্যক গাভী পালনের জন্য বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে কৃষকেরা তাঁদের নিজেদের বাড়িতে একটি লম্বা সারিতে গাভী বেঁধে পালন করে থাকেন । সারণি ২.১ এ একসারি বিশিষ্ট বাঁধা ঘরে প্রতিটি গাভীর জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ দেয়া হলো ।

সারণিঃ একসারি বিশিষ্ট বাঁধা ঘরে প্রতিটি গাভীর জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা ।

গাভী দাঁড়াবার স্থান (সে.মি.)

গাভী দাঁড়াবার স্থানের পাশের জায়গা (সে.মি.)

খাবার পাত্রের জায়গা ( সে.মি.)

নর্দমার জন্য জায়গা (সে.মি.)

১৬৫

১০৫

৭৫

৩০

২. দুইসারি বিশিষ্ট বাঁধা ঘর (Double rowed stanchion barn) : এই পদ্ধতিতে একসংগে অধিক সংখ্যক গাভী পালন করা যায়। দুইসারি বিশিষ্ট বাঁধা ঘর আবার দুভাবে তৈরি করা যেতে পারে—

অন্তর্মুখী (Fall in) :

এক্ষেত্রে গাভীর মুখ ঘরের ভেতরের দিকে থাকে ।

বহির্মুখী (Fall out) :

এক্ষেত্রে গাভীর মুখ ঘরের বাইরের দিকে থাকে ।

নিম্নে দুইসারি বিশিষ্ট বহির্মুখী ও অন্তর্মুখী বাঁধা ঘরের নমুনা দেখানো হয়েছে ।

 

 

 

গাভী নির্বাচন (Selection of dairy cow)

জমি থেকে ভালো ফলন পেতে হলে যেমন ভালো বীজের প্রয়োজন হয় । ঠিক তেমনি দুগ্ধ খামারকে লাভজনক করতে হলে ঐ ধরনের গাভী নির্বাচন করা উচিত যা বেশি পরিমাণ দুধ দেবে। গাভী নির্বাচনের সময় যে বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া উচিত সেগুলো হলো—

  • জাত (Breed)
  • বংশগত বৈশিষ্ট্য (Pedigree)
  • উৎপাদন বৈশিষ্ট্য (Production records)
  • বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য (Physical appearance)
  • স্বাস্থ্য (Health)

জাত (ইৎববফ) :

দুগ্ধ খামারকে লাভজনক করতে হলে উন্নত জাতের গাভী পালনের বিকল্প নেই । বর্তমান বিশ্বে অধিক দুধ প্রদানকারী জাতগুলোর মধ্যে হলস্টেইন ফ্রিসিয়ান, জার্সি, আয়ারশায়ার, ব্রাউন সুইস, গুয়ের্ণসি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । তবে শুধুমাত্র উন্নত জাতের গাভীর কথা ভাবলেই চলবে না খেয়াল রাখতে হবে-

  • নির্বাচিত জাতের গাভী বাজারে পাওয়া যাবে কিনা ?
  • নির্বাচিত জাতটি আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে কিনা?
  • উন্নত জাতের গাভী পালনের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য প্রদান করা সম্ভব হবে কিনা?

আমাদের দেশে দুগ্ধ খামারের জন্য সংকর জাতের গাভীও নির্বাচন করা যেতে পারে ।

 

বংশগত বৈশিষ্ট্য (Pedigree) :

বংশগত বৈশিষ্ট্য হলো গাভীর পূর্ব পুরুষদের উৎপাদন ইতিহাস । প্রতিটি প্রাণীর ভেতরই তার বংশের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে । খামারের জন্য গাভী নির্বাচন করার পূর্বে ঐ গাভীটির বংশগত বৈশিষ্ট্য জেনে নেওয়া উচিত । তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বংশগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা সম্ভব হয় না ।

উৎপাদন বৈশিষ্ট্য (Production records) :

গাভীর নিজস্ব দুধ উৎপাদন কী রকম তা জেনে নিয়ে খামারের জন্য গাভী নির্বাচন করা উচিত । বাজার থেকে গাভী ক্রয় করলে অনেক সময় সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব হয় না ।

বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য (Physical appearance) :

অধিক পরিমাণ দুধ প্রদানকারী গাভীর কিছু বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দেখে গাভী নির্বাচন করা উচিত । এই বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—

১. সাধারণ বৈশিষ্ট্য (General appearance)

২. দুধালো বৈশিষ্ট্য (Dairy character)

৩. শারীরিক গঠন (Body capacity)

৪. ওলানের বৈশিষ্ট্য (Mammary system)

১. সাধারণ বৈশিষ্ট্য (General appearance)
  • আকর্ষনীয় চেহারা ।
  • গাভীসুলভ আকৃতি ।
  • দেহের সকল অংশ হবে সামঞ্জস্যপূর্ণ ।
  • দেহভঙ্গি হবে চিত্তাকর্ষক।
  • তেজস্বী ।
  • দেহের মাংসপেশী হবে টান টান ।
২. দুধালো বৈশিষ্ট্য (Dairy character)
  • দুধ উৎপাদন করতে সক্ষম এ ধরনের লক্ষণ থাকতে হবে ।
  • কৌণিক গঠন ।
  • শরীর হবে ঢিলেঢালা ।
  • চামড়া পাতলা ও মসৃণ হবে ।
  • দুর্বলতা থাকবে না ।
৩. শারীরিক গঠন (Body capacity)
  • দেহের আকার বড় হবে ।
  • দেহের আকার অনুপাতে বুকের ও পেটের বেড় গভীর হবে ।
  • পাঁজরগুলো হবে স্ফীত এবং ভিন্ন ভিন্ন ।
  • দেহে অপ্রয়োজনীয় চর্বি থাকবে না এবং দেহের সামনের দিক হালকা এবং পেছনের দিক ভারী হবে ।
8. ওলানের বৈশিষ্ট্য (Mammary system)
  • ওলান বেশ বড় হবে যাতে বেশি দুধ ধারণ করতে পারে ।
  • ওলান শরীরের সাথে শক্তভাবে আটকানো থাকবে ।
  • ওলানের বাঁটগুলো একই আকারের হবে এবং সমান দূরত্বে সমান্তরালভাবে সাজানো থাকবে ।
  • ওলানের বুনট হবে সূক্ষ ।
  • ওলানের শিরাগুলো (মিল্ক ভেইন) মোটা হবে এবং নাভীর আশপাশ দিয়ে আঁকাবাঁকাভাবে বিস্তৃত থাকবে বা স্পষ্টভাবে দেখা যাবে ।

 

 

খাদ্য (Feeding)

দুগ্ধবতী গাভীর শরীর রক্ষা, দুধ উৎপাদন ও গর্ভকালীন সময়ে ভ্রুণের সঠিক বৃদ্ধির জন্য সুষম খাদ্য সরবরাহ করা প্রয়োজন । পশুপাখির খামারে খাদ্য খরচ রিকারিং খরচের প্রায় ৭০ শতাংশ । খাদ্য খরচ কমানোর পাশাপাশি উৎপাদন বাড়ানো এক ধরনের দুঃসাহসিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনের জন্য স্বল্পমূল্যে প্রাপ্ত খাদ্য সামগ্রীর পুষ্টিমান, এদের সমন্বয়ে রশদ গঠন ও রশদ খাওয়ানোর পদ্ধতি সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান অর্জন প্রয়োজন ।

গাভীর দৈনিক দুধ উৎপাদনের ভিত্তিতে রশদে শতকরা ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ আঁশজাতীয় খাদ্য থাকা আবশ্যক। এ ধরনের আঁশজাতীয় খাদ্যের প্রতি কেজি শুষ্ক পদার্থে ৭.০ থেকে ৮.০ কিলো মেগাজুল শক্তি থাকা প্রয়োজন । শুকনো খড়ে এর মাত্রা কম থাকায় খড় প্রক্রিয়াজাত করে গাভীকে খাওয়ালে ভাল হয়।

আমাদের দেশী অনেক সবুজ ঘাসেই এ মাত্রায় পুষ্টিমান থাকে না । তবে প্রাপ্ত সবুজ ঘাস গাভীকে খাওয়াতে হবে এবং উদ্বৃত্ত ঘাস সংরক্ষণ করে রাখতে হবে যাতে অভাবের সময় ব্যবহার করে খাদ্য খরচ হ্রাস করা সম্ভব হয় । গাভীর জন্য ব্যবহৃত দানাদার মিশ্রণের প্রতি কেজি শুষ্ক পদার্থে ১০.৫ থেকে ১১.০ মেগাজুল শক্তি এবং ১৭০-১৮০ গ্রাম আমিষ থাকা প্রয়োজন । তাই খামার স্থাপনের পূর্বে কাঁচা ঘাস উৎপাদনের জন্য জমির প্রাপ্যতার কথা মাথায় রাখা উচিত । এছাড়াও গাভীর জন্য অন্যান্য দানাদার খাদ্য মিশ্রণ সস্তায় ও সহজে পাওয়া যাবে কি না তা মনে রাখতে হবে । খামারে সাইলেজ তৈরির ব্যবস্থা থাকতে হবে । অধিক পূর্বশর্তই হলো নিয়মিত সুষম খাদ্য সরবরাহ করা ৷ দুধ উৎপাদনের

বাজারজাতকরণ (Marketing)

খামারের প্রধান উৎপাদিত দ্রব্য হচ্ছে দুধ। দুধ হলো একটি পচনশীল দ্রব্য । সুতরাং খামার স্থাপনের সময় প্রথমেই বিবেচনায় আনতে হবে দুধ নিয়মিতভাবে কাংখিত মূল্যে বিক্রয় করা যাবে কি না? এছাড়াও খামারে উৎপাদিত অন্যান্য উপজাত সমূহও সময়মতো সঠিক মূল্যে বিক্রয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে । সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ ব্যতিত খামার লাভজনক করা সম্ভব নয় ।

 

 

সারমর্ম

দুগ্ধখামার বর্তমানে একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে এদেশে প্রতিষ্ঠিত । একটি দুগ্ধখামার তখনই লাভজনক হবে যখন তা উপযুক্ত স্থানে স্থাপন করা হবে। শুধু তাই নয় দুগ্ধখামারের ঘরগুলো পরিকল্পিতভাবে তৈরি করতে হবে। সুষম খাদ্য সঠিকভাবে সরবরাহ করতে হবে এবং দুধ বাজারজাত করণের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকতে হবে ।

পাঠোত্তর মূল্যায়ন

১. সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (√) দিন ।

ক. গাভীর বাসস্থান তৈরির কয়টি পদ্ধতি রয়েছে?

i. একটি

ii. দুইটি

iii. তিনটি

iv. চারটি

খ. বাঁধা ঘরের বড় অসুবিধা কী ?

i. নির্মাণ খরচ বেশি

ii. নির্মাণ খরচ কম

iii. নর্মিাণ খরচ মাঝারি

iv. কোনটিই নয়

২। শূন্যস্থান পূরণ করুন ।

ক. গাভীর খামার স্থাপনের জন্য প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ———।

খ. প্রতিটি গাভীর জন্য মেঝেতে ———– বর্গমিটার জায়গা রাখা উচিত ।

৩। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন ।

ক. দুধালো গাভীর শরীর ঢিলেঢালা

খ. দুধ হলো একটি পচনশীল দ্রব্য ।

8. এক কথায় বা বাক্যে উত্তর দিন।

ক. উদাম ঘরের প্রধান অসুবিধা কী?

খ. দুধালো গাভীর চামড়া কেমন হবে ?

 

চূড়ান্ত মূল্যায়ন – গাভীর জাত উন্নয়ন

আজকে আমরা চূড়ান্ত মূল্যায়ন – গাভীর জাত উন্নয়ন আলোচনা করবো। এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর গাভীর জাত উন্নয়ন ইউনিটের অন্তর্গত।

 

 

চূড়ান্ত মূল্যায়ন – গাভীর জাত উন্নয়ন

গাভী পালনকে লাভজনক শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন উন্নতজাতের গাভীর । যে সমস্ত গাভী কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে পালন খরচের তুলনায় অধিক উৎপাদনে সক্ষম তাদেরকে উন্নত জাত হিসেবে চিহ্নিত করা যায় । উন্নত জাত সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন সঠিক প্রজনন কর্মসূচী এবং ভবিষ্যত বংশধর সৃষ্টিতে বিশেষ দৃষ্টি প্রদান । এজন্যই বিভিন্ন প্রজনন পদ্ধতি, গাভীর প্রজননতন্ত্র, কৃত্রিম প্রজনন কৌশল, গর্ভ ও প্রসবকালীন এবং প্রসবোত্তর গাভীর যত্ন ও পরিচর্যা ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন ।

 

 

এ ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে জাত উন্নয়নের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি, ষাঁড় ও গাভীর জননতন্ত্র, বকনা বা গাভীর ঋতুচক্র, গরম হওয়ার লক্ষণ ও করণীয়, কৃত্রিম প্রজনন, গর্ভাবস্থা নির্ণয়, গর্ভ ও প্রসবকালীন এবং প্রসবোত্তর গাভীর যত্ন ও পরিচর্যা, গরম হওয়া বকনা বা গাভী শনাক্তকরণ, গর্ভবর্তী বকনা বা গাভী শনাক্তকরণ সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিকসহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে ।

 

 

 

 

চূড়ান্ত মূল্যায়ন – গাভীর জাত উন্নয়ন

সংক্ষিপ্ত ও রচনামূলক প্রশ্ন

১ । বাছাই সূচক পদ্ধতিটি বর্ণনা করুন ।

২। গ্রেডিংআপের মাধ্যমে কীভাবে দেশী অনুন্নত জাতের গাভীর উন্নয়ন ঘটানো যায় তা বর্ণনা করুন।

৩। ষাঁড়ের জননতন্ত্রের বিভিন্ন অংশের কাজ লিপিবদ্ধ করুন ।

৪। চিত্রসহ একটি গাভীর জননতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত করুন ।

৫ ৷ গাভীর গরম হওয়ার লক্ষণগুলো কী কী?

৬ । কৃত্রিম যোনির বিভিন্ন অংশগুলোর নাম লিখুন ।

৭। গর্ভধারণ নির্নয়ের উদ্দেশ্যগুলো বর্ণনা করুন ।

৮ । ডাইলুয়েন্টের বৈশিষ্ট্যগুলো লিপিবদ্ধ করুন ।

৯ । বীর্য সংরক্ষণ কীভাবে করবেন লিখুন ।

১০। প্রসবোত্তর গাভীর যত্ন কীভাবে নিবেন ?

 

ব্যবহারিকঃ গর্ভবতী বকনা বা গাভী শনাক্তকরণ

আজকে আমরা ব্যবহারিকঃ গর্ভবতী বকনা বা গাভী শনাক্তকরণ আলোচনা করবো। এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর গাভীর জাত উন্নয়ন ইউনিটের ব্যবহারিক অংশের অন্তর্গত।

 

 

ব্যবহারিকঃ গর্ভবতী বকনা বা গাভী শনাক্তকরণ

প্রাসঙ্গিক তথ্য

গর্ভবতী গাভীকে চিহ্নিত করে শুরু থেকেই পৃথক খাদ্য ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য এবং অনুর্বর ও বন্ধ্যা গাভী চিহ্নিত করার জন্য গর্ভাবস্থা নির্ণয় অত্যন্ত জরুরী । গাভীর গর্ভাবস্থা নির্ণয়ের ৩টি পদ্ধতি রয়েছে । তবে সবচেয়ে সহজ ও বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হলো রেকটাল পালপেশন পদ্ধতি। গর্ভাবস্থা নির্ণয়ের জন্য রেকটাল পালপেশন পদ্ধতিটি সবচেয়ে প্রচলিত ও সহজ ।

রেকটাল পালপেশন পদ্ধতিতে গাভী গর্ভবতী হয়েছে কিনা শুধুমাত্র এটাই নির্ণয় করা হয় না, গাভী কতদিনের গর্ভবতী তাও নির্ণয় করা হয় । এ পদ্ধতিতে একদিকে যেমন কোনো যন্ত্রপাতি এবং রাসায়নিক দ্রব্যাদির প্রয়োজন হয় না অপরদিকে খুব কম খরচে এবং অল্প সময়ে প্রাথমিক ও মধ্যবর্তী গর্ভাবস্থা নির্ণয় করা যায় ।

 

 

প্রয়োজনীয় উপকরণ

১. একটি বকনা বা গাভী ।

২. বকনা বা গাভীকে আটকানোর জন্য জায়গা।

৩. এ্যাপ্রোন, গামবুট, গ্লাভস, গরম পানি, পিচ্ছিলকারক পদার্থ যেমন— ভেসিলিন, তুলা, রশি ইত্যাদি।

 

কাজের ধারা

  • বকনা বা গাভীকে নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সুবিধাজনক জায়গায় আটকিয়ে ফেলুন ।
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে এ্যাপ্রোন গায়ে দিন এবং গামবুট পড়ে ফেলুন । বামহাতে গ্লাভস পড়ে ফেলুন ।
  • বকনা বা গাভীর যোনি ও মলদ্বার অল্প গরম পানি দিয়ে ধুয়ে তুলো দিয়ে মুছে ফেলুন এবং ভেসিলিন লাগিয়ে পিচ্ছিল করে নিন ।
  • গাভীর ডান পাশে দাঁড়িয়ে ডান হাত দিয়ে গাভীর লেজ তুলে ধরুন এবং বাম হাত মলদ্ধারের প্রাচীরের উপর থেকে গাভীর জননতন্ত্রের অংশগুলোর অবস্থা অনুভব করুন ।
  • আপনার অনুভূতি গাভীর গর্ভাবস্থার কোন্ পর্যায় নির্দেশ করে তা এই কোর্সবইয়ের পাঠ ১.৫ থেকে জেনে নিন ।
  • আপনার ব্যবহারিক খাতাটি টিউটরকে দেখান এবং তাতে সই নিন ।

ব্যবহারিকঃ গরম হওয়া বকনা বা গাভী শনাক্তকরণ

আজকে আমরা ব্যবহারিকঃ গরম হওয়া বকনা বা গাভী শনাক্তকরণ আলোচনা করবো। এটি কৃত্রিম প্রজনন ও খামার স্থাপন এর গাভীর জাত উন্নয়ন ইউনিটের ব্যবহারিক অংশের অন্তর্গত।

 

 

ব্যবহারিকঃ গরম হওয়া বকনা বা গাভী শনাক্তকরণ

বয়ঃপ্রাপ্তির পর (Sexual maturity) বকনা বা গাভী জাতীয় গবাদিপশু হঠাৎ করে একদিন কামোদ্দীপ্ত হয়ে উঠে অর্থাৎ ষাঁড়ের সাথে মিলিত হবার ইচছা প্রকাশ করে । এই কামোদ্দীপনাকেই আমরা ‘গরম হওয়া’ বা ডাকে আসা এস্ট্রাস (Estrous) নামে অভিহিত করে থাকি ।

এটি একটি জৈবিক প্রক্রিয়া যা বকনা বা গাভীর প্রজননতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে পর্যায়ক্রমিকভাবে শারীরবৃত্তীয় ও আকৃতিগত পরিবর্তন আনে । এই সাময়িক পরিবর্তনগুলো পরবর্তীতে গরম হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে এবং এই সময়কালকেই ঋতুচক্র (Estrous cycle) বলে। তবে গরম হওয়ার পর ষাঁড়ের সাথে মিলনের ফলে যদি গর্ভবতী হয় তবে বাচ্চা প্রসবের পূর্ব পর্যন্ত বকনা বা গাভী আর গরম হয় না ।

 

 

প্রাসঙ্গিক তথ্য

বকনা বা গাভী গরম হলে বিভিন্ন ধরনের স্বভাবগত ও শারীরবৃত্তীয় লক্ষণ ও পরিবর্তন দেখা দেয়। সঠিকভাবে প্রজননের জন্য গাভী গরম হয়েছে কিনা তা নির্ণয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । গাভী গরম হওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রজনন না করালে গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা খুব কম থাকে । সাধারণত গাভী গরম হওয়ার ৮ থেকে ১৮ ঘন্টার মধ্যে প্রজনন ক্রিয়া সম্পন্ন করাতে হয় । এজন্যই গাভী কখন গরম অবস্থায় এসেছে তা জানা এবং বোঝা খুবই প্রয়োজন ।

প্রয়োজনীয় উপকরণ

১. গরম অবস্থায় এসেছে এমন ধরনের বকনা বা গাভী ।

২. গ্লোভস, স্পেকুলাম ।

৩. কলম, ব্যবহারিক খাতা ।

 

কাজের ধারা

  • গরম হওয়া বকনা বা গাভীতে যে ধরনের বাহ্যিক লক্ষণ থাকা উচিত সেগুলো প্রকাশ পেয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করুন ।
  • হাতে গ্লোভস পড়ে গাভীর যোনিমুখ সামান্য ফাঁক করে ভেতরটা পর্যবেক্ষণ করুন ।
  • স্পেকুলামের সাহায্যে সার্ভিক্সের মুখ পর্যবেক্ষণ করুন ।
  • আপনার পর্যবেক্ষণগুলো ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করুন ।
  • পর্যবেক্ষণকৃত গাভীটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য লিখুন ।
  • আপনার ব্যবহারিক খাতাটি টিউটরকে দেখান এবং তাতে সই নিন ।