পেঁপে চাষের পদ্ধতি ,যেভাবে পেঁপে চাষে মিলবে দ্বিগুণ ফলন, গ্রামের বাড়ির উঠানে পেঁপে গাছ পরিচিত ছবি। পেঁপের রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ। এটি দারুণ জনপ্রিয় ফল হলেও সবজি হিসেবেও সর্বত্র সমাদৃত। লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন পেঁপে। আর আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করলে দ্বিগুণ ফলন পাওয়া সম্ভব।
পেঁপে চাষের পদ্ধতি ,যেভাবে পেঁপে চাষে মিলবে দ্বিগুণ ফলন
পেঁপে স্বল্পমেয়াদী ফল, চাষের জন্যও বেশি জায়গার প্রয়োজন পড়ে না। বাড়ির আঙিনায় কয়েকটি গাছ লাগালে সেটা থেকে সারাবছর সবজি-ফল পাওয়া যায়।
জেনে নেওয়া যাক পেঁপে চাষের পদ্ধতি-
পেঁপে গাছ মোটেও জলাবদ্ধতা সহনশীল নয়। পেঁপে চাষের জন্য জলাবদ্ধতামুক্ত এবং সেচ সুবিধাযুক্ত জমি নির্বাচিত করতে হবে। জমি একাধিকবার চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে তৈরি করতে হবে। দ্রুত পানি নিষ্কাষণে ‘বেডপদ্ধতি’ অবলম্বন করা ভালো। পাশাপাশি দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ২০ সেন্টিমিটার গভীর নালা থাকবে। নালাসহ প্রতিটি বেড ২মিটার চওড়া এবং জমি অনুযায়ী লম্বা হবে।
১৯৯২ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট শাহী নামের একটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করে। জাতের বৈশিষ্ট্য হলো- এটি একলিঙ্গী। গাছের উচ্চতা ১.৬ থেকে ২ মিটার। কাণ্ডের খুব নিচু থেকে ফল ধরে। ডিম্বাকৃতি ফলের ওজন হয় ৮০০-১০০০ গ্রাম। আর ফলপ্রতি বীজ হয় ৫০০-৫৫০টি। ফল বেশ মিষ্টি ও সুস্বাদু। রং গাঢ় কমলা থেকে লাল। গাছ প্রতি ফলের সংখ্যা ৪০-৬০টি। এ জাত দেশের সব জায়গায় চাষ উপযোগী।
পদ্ধতি
পেঁপের চারা বীজতলা ও পলিথিন ব্যাগে তৈরি করা যায়। চারা তৈরির ক্ষেত্রে ১০-১৫ সেন্টিমিটার সারি করে প্রতিটিতে ৩-৪ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে। বপনের ১৫-২০ দিন পর চারা বের হয়। আর ৪০-৫০ দিন পর তা রোপণের উপযোগী হয়।
২.২ মি দূরত্বে পেঁপের জন্য গর্ত তৈরি করতে হবে। প্রতি গর্তে ৩টি করে চারা রোপণ করলে হেক্টরপ্রতি চারা লাগবে ৭৫০০টি। এসব সুস্থ-সবল চারা পেতে ৪০০-৫০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন। তবে হাইব্রিড পেঁপের জন্য ১০০-১৫০ গ্রাম বীজ যথেষ্ট।
চারা রোপণের ১৫-২০ দিন আগে বেডের মাঝ বরাবর ২ মিটার দূরত্বে তৈরি করতে হবে গর্ত। এর সাথে গর্তপ্রতি ১৫ কেজি পচা গোবর, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম জিপসাম, ২০ গ্রাম বরিক এসিড এবং ২০ গ্রাম জিংক সালফেট সার প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মেশাতে হবে। সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে গর্ত পূরণ করে সেচ দিতে হবে।
আশ্বিন এবং পৌষ মাস উন্নত পদ্ধতিতে পেঁপে চাষে সফলতা পেতে বীজ বপন ও চারা রোপণের সময়। বপনের ৪০-৫০ দিন পর অর্থাৎ মাঘ-ফাল্গুন মাসে চারা রোপণের উপযোগী হয়।
চারা রোপণের আগে গর্তের মাটি ভালোভাবে ওলট-পালট করে নিতে হবে। প্রতি গর্তে ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্বে ত্রিভুজ আকারে ৩টি করে চারা রোপণ করতে হবে। বীজতলায় উৎপাদিত চারার উন্মুক্ত পাতাগুলো ফেলে দিলে রোপণ করা চারার মৃত্যুহার হ্রাস পায়। এ ছাড়া চারা দ্রুত বড় হয়।
পলিব্যাগে উৎপাদিত চারার ক্ষেত্রে খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। পলিব্যাগটি দেখেশুনে অপসারণ করতে হবে, যাতে মাটির বলটি ভেঙে না যায়। পড়ন্ত বিকেলে চারা রোপণের জন্য উত্তম সময়। লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে চারার গোড়া বীজতলা বা পলিব্যাগে মাটির যতটা গভীরে ছিল তার চেয়ে বেশি নিচে না যায়।
ভালো ফলন পেতে হলে পেঁপে গাছে সময়মতো সুষমমাত্রায় সার দিতে হবে। প্রতি গাছে ৪৫০-৫০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৪৫০-৫০০ গ্রাম এমওপি সার দিতে হবে। চারা রোপণের এক মাস পার হলে প্রতিমাসে গাছপ্রতি ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম এমওপি সার দিতে হয়। গাছে ফুল আসার পর এই মাত্রা দ্বিগুণ করতে হবে। মাটিতে রসের অভাব হলে পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
উন্নত পদ্ধতিতে পেঁপে চাষে অবশ্যই পরিচর্যার দিকে শতভাগ খেয়াল রাখতে হবে। জমি সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। বর্ষা মৌসুমে আগাছা দমন করতে গিয়ে মাটি যাতে বেশি আলগা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজন অনুযায়ী পানি সেচ দিতে হবে। সেচের ও বৃষ্টির পানি যাতে জমিতে জমে না থাকে সে জন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
চারা লাগানোর ৩-৪ মাস পর গাছে ফুল আসলে প্রতি গর্তে একটি করে সুস্থ-সবল স্ত্রী গাছ রেখে বাকিগুলো কেটে ফেলতে হবে। তবে সুষ্ঠু পরাগায়ন ও ফল ধারণের জন্য বাগানের বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে শতকরা ৫টি পুরুষ গাছ থাকা দরকার।
পেঁপের অধিকাংশ জাতের ক্ষেত্রে একটি পত্রক থেকে একাধিক ফুল আসে। এর থেকে ফল ধরে। ফল কিছুটা বড় হওয়ার পর প্রতি পত্রকক্ষে সবচেয়ে ভালো ফলটি রেখে বাকিগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে। দ্বিতীয় বা তার পরবর্তী বছরে যে পেঁপে হয় সেগুলো ঠাসাঠাসি অবস্থায় থাকে। ফলে ঠিকমতো বাড়তে পারে না এবং এদের আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ছোট ফলগুলো ছাঁটাই করতে হবে।
পেঁপের ভাইরাসঘটিত পাতা মোড়ানো রোগ: এই রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো পাতা নিচের দিকে বা ভিতরের দিকে গুটিয়ে যায়। অন্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে- পত্রশিরা মোটা হয়ে যাওয়া, মাঝেমধ্যে বাইরের দিকে পত্রশিরার স্ফীতি প্রভৃতি দেখা যায়। পাতা চামড়ার মতো খসখসে ও ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং পত্রবৃন্ত বিকৃত হয়ে পাকিয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। গাছের ওপরের দিকের পাতাকেই বেশি আক্রমণ করে। রোগের পরবর্তী পর্যায়ে পত্রমোচন ঘটে। গাছের বৃদ্ধি রোধ হয় এবং গাছে ফুল ও ফল ধরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদি ফল ধরেও তবে তা ছোট, আকারে বিকৃত হয় এবং অকালেই ঝরে পড়ে।
এই রোগের ভাইরাসের প্রধান বাহক হলো বেসমিসিয়া ট্যাবাসি (Bemisia tabaci) নামক সাদা মাছি। এই মাছি এক গাছ থেকে অন্য গাছে উড়ে গিয়ে এই রোগের ভাইরাসের বিস্তারে সাহায্য করে। বাহকের শরীরে ভাইরাস সক্রিয় অবস্থায় থাকাকালে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ছড়িয়ে যায়।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: রোগ প্রতিরোধী উদ্ভিদের জাত রোপণ করার চেষ্টা করুন। পেঁপে গাছের আশেপাশে এই রোগের জীবাণুকে পরাশ্রয় প্রদান করে এমন ধরনের উদ্ভিদ বেড়ে উঠতে দেবেন না। উপকারী পোকামাকড় যাতে অত্যধিক কীটনাশকের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলে নষ্ট করে দিন। ফসল তোলার পরে উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ যাতে জমিতে পড়ে না থাকে সেদিকে নজর রাখুন।
করলা চাষে অধিক ফলন এবং ব্যবস্থাপনা কৌশল , করলা দেশের অন্যতম প্রধান সবজি। স্বাদে তিক্ত হলেও এটি প্রিয় সবজি হিসেবেই পরিচিত। আর সঠিক পদ্ধতিতে করলা চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। করলা চাষে অধিক ফলন পেতে সঠিক পদ্ধতি জানা জরুরি।
করলা চাষে অধিক ফলন এবং ব্যবস্থাপনা কৌশল
করলা চাষে মাটি:
যে জমিতে পানি জমে থাকে না, এ ধরনের প্রায় সব রকম মাটিতেই করলার চাষ সম্ভব। আর জৈব পদার্থযুক্ত দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিত করলা চাষে অধিক উপযোগী।
করলা চাষের জন্য জলবায়ু:
করলা চাষের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী। উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় এ সবজি ভালো জন্মে। তবে ফুল আসার সময় অধিক বৃষ্টিপাত ফল ধরাতে সমস্যার করে।
করলার জাত:
দেশে করলার বেশ কয়েকটি উচ্চ ফলনশীল জাত রয়েছে। এর মধ্যে বারি করলা-১ এবং বিএডিসির গজ করলা উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া আরও কয়েক রকমের হাইব্রিড জাত রয়েছে। কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট কৃর্তক উদ্ভাবিত বারি করলা-১ উচ্চফলনশীল জাত। এ জাতের একটি গাছে ২০-৩০টি করলা ধরে। হেক্টরপ্রতি ফলন ৩০ টনের কাছাকাছি।
আরেকটি উচ্চ ফলনশীল করলার জাত হলো বিএডিসির গজ করলা। এ জাতের একটি গাছে ১৫-২০টি ফল ধরে। হেক্টরপ্রতি ফলন ২৫ টনের কিছুটা কম।
করলার আরও যে কয়টি হাইব্রিড জাত আছে, তার মধ্যে বুলবুলি, টিয়া, প্যারট, কাকলি, তাজ-৮৮, গ্রিনস্টার, গৌরব, প্রাইড-১, প্রাইড-২, গ্রিন রকেট, হীরক, মানিক, জয়, রাজা, প্রাচী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
করলার জীবনকাল:
করলার মোট জীবনকাল প্রায় ৪ থেকে সাড়ে চার মাস। তবে জাত-আবহাওয়া ভেদে সময় কম বেশি হতে পারে।
করলার উৎপাদন মৌসুম:
ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের যে কোনও সময় করলার বীজ বোনা যেতে পারে। অনেকে জানুয়ারি মাসেও বপন করে থাকেন। কিন্তু এসময় তাপমাত্রা কম থাকায় গাছ দ্রুত বাড়তে পারে না। এ কারণে আগাম ফসল উৎপাদনে তেমন সুবিধা হয় না।
করলা চাষের জন্য জমি তৈরি ও বপন:
হেক্টরপ্রতি করলা ও উচ্ছের জন্য যথাক্রমে ৬-৭.৫ ও ৩-৩.৫ কেজি বীজ লাগবে। উচ্ছে ও করলার বীজ সরাসরি মাদায় (৪০x৪০x৪০ সে.মি) বোনা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতি মাদায় কমপক্ষে ২টি বীজ বপন অথবা পলিব্যাগে উৎপাদিত ১৫-২০ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হবে। উচ্ছের ক্ষেত্রে সারিতে ১.০ মিটার এবং করলার জন্য ১.৫ মিটার দূরত্বের মাদা তৈরি করতে হবে। মাদা বীজ বুনতে বা চারা রোপণ করতে হলে অন্তত ১০ দিন আগে নির্ধারিত সার প্রয়োগ করে তৈরি করে নিতে হবে।
করলা চাষের জন্য সেচ ও নিষ্কাশন:
ক্ষেতে খরা হলে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে হবে। পানির অভাবে গাছের বৃদ্ধির বিভিন্ন ধাপে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন প্রাথমিক অবস্থায় চারার বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাওয়া। পরবর্তীতে ফল ঝরে যাওয়া। জুন-জুলাই মাস থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর আর সেচের প্রয়োজন হয় না। জমির পানি নিষ্কাশনের জন্য বেড ও নিকাশ নালা সর্বদা পরিষ্কার করে রাখতে হবে। করলার বীজ উৎপাদনের সময় ফল পরিপক্ব হওয়া শুরু হলে সেচ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। বাউনির ব্যবস্থা করা করলার প্রধান পরিচর্যা। চারা ২০-২৫ সেমি উঁচু হতেই ১.০-১.৫ মি. উঁচু মাচা তৈরি করতে হবে।
করলার রোগ বালাই ও দমন:
করলার মাছি পোকা:
স্ত্রী মাছি কচি ফলের নিচের দিকে ওভিপজিটর ঢুকিয়ে ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার স্থান থেকে পানির মত তরল পদার্থ বেড়িয়ে আসে যা শুকিয়ে বাদামী রং ধারণ করে। ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফলের শাস খেতে শুরু করে। এরপর ফল হলুদ হয়ে পচে ঝরে যায়।
দমন ব্যবস্থা: আক্রান্ত ফল বা ফুল সংগ্রহ করে ধ্বংস করা বা পুড়ে ফেলা। ভালোভাবে জমি চাষ করে পোকার পুত্তলি পাখিদের খাবার সুযোগ করে দেওয়া। ক্ষেতের মাঝে মাঝে কাঁঠালের মোথা দেওয়া। এতে করলার পরিবর্তে স্ত্রী মাছি কাঁঠালের মোথায় ডিম পাড়বে। ফলে ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে। প্রথম ফুল আসামাত্র ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করা। প্রতি ১০ শতাংশের জন্য ৩টি। আম বা খেজুরের রসে সামান্য বিষ মিশিয়ে তা বোতলে রেখে জানালা কেটে দিয়ে ক্ষেতের মাঝে মাঝে স্থাপন করা।
করলার সাদা মাছি পোকা:
স্ত্রী মাছি কচি ফলে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে কীড়াগুলো ফলের শাস খায়। ফল পচে অকালে ঝরে পড়ে।
দমন ব্যবস্থা: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ। আক্রান্ত অংশ সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে। সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদের যৌথ ব্যবহার। বিষটোপের জন্য থেঁতলানো ১০০ গ্রাম পাকা মিষ্টি কুমড়ার সাথে ০.২৫ গ্রাম সেভিন ৮৫ পাউডার মিশিয়ে ব্যবহার করতে হয়। বিষটোপ ৩-৪ দিন পরপর পরিবর্তন করতে হয়।
করলা চাষের জন্য সার ব্যবস্থাপনা
সারের নাম
মোট পরিমাণ
(হেক্টর প্রতি)
মোট পরিমাণ (শতাংশ প্রতি)
জমি তৈরির সময় (শতাংশ প্রতি)
চারা রোপণের ৭-১০
দিন পূর্বে
চারা রোপণের ১০-১৫
দিন পর
চারা রোপনের ৩০-৩৫
দিন পর
চারা রোপনের ৫০-৫৫
দিন পর
চারা রোপনের ৭০-৭৫
দিন পর
পচা গোবর
২০ টন
৮০ কেজি
২০ কেজি
৫ কেজি
–
–
–
–
টিএসপি
১৭৫ কেজি
৭০০ গ্রাম
৩৫০ গ্রাম
৩০ গ্রাম
–
–
–
–
ইউরিয়া
১৭৫ কেজি
৭০০ গ্রাম
–
–
১৫ গ্রাম
১৫ গ্রাম
১৫ গ্রাম
১৫ গ্রাম
এমপি
১৫০ কেজি
৬০০ গ্রাম
২০০ গ্রাম
২০ গ্রাম
১৫ গ্রাম
–
–
–
জিপসাম
১০০ কেজি
৪০০ গ্রাম
৪০০ গ্রাম
–
–
–
–
–
দস্তা সার
১২.৫ কেজি
৫০ গ্রাম
৫০ গ্রাম
–
–
–
–
–
বোরাক্স
১০ কেজি
৪০ গ্রাম
৪০ গ্রাম
–
–
–
–
–
ম্যাগনেশিয়াম
১২.৫কেজি
৫০ গ্রাম
–
৫ গ্রাম
–
–
–
–
করলা ফসল সংগ্রহ:
চারা গজানোর ৪৫-৪৫ দিন পর উচ্ছের গাছ ফল দিতে থাকে। করলার বেলায় লেগে যায় প্রায় ২ মাস। স্ত্রীফুলের পরাগায়নের ১৫-২০ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। ফল আহরণ একবার শুরু হলে তা দুমাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে উচ্ছে ও করলার হেক্টর প্রতি ফলন যথাক্রমে ৭-১০ টন (৩০-৪০ কেজি/শতাংশ) এবং ২০-২৫ টন (৮০-১০০ কেজি/শতাংশ) পাওয়া যায়।
নিরাপদে বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে আলাপ করবো আজ। বেগুন একটি সর্বাধিক জনপ্রিয় সবজি। বছরজুড়েই এটি চাষ করা যায়। নিরাপদ বেগুন চাষের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে। এসব হলো- জাত ও জাতের বৈশিষ্ট্য, বালাই দমন ও সার প্রয়োগ।
দেশে প্রায় শতাধিক জাতের বেগুন পাওয়া যায়। যেমন- পটলা, ঝুপি, তারাপুরী, কাজলা, ইসলামপুরী নয়নতারা, খটখটিয়া, শিংনাথ। এসব স্থানীয়, স্থানীয় উন্নত, বারি ও হাইব্রিড জাত সারা দেশে বছরজুড়ে চাষ হয়।
নিরাপদে বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য
চারা উৎপাদন ও সার প্রয়োগ
বেগুনের জমি তৈরি:
আগাছা বেছে মাটি তৈরি করতে হয়। শীতকালীন বেগুন আগস্ট-অক্টোবর ও বর্ষাকালীন জানুয়ারি-এপ্রিলে বীজতলায় বীজ বপন করতে হয়। ২৫ গ্রাম বীজ ৩ বর্গ মিটার বীজতলায় বুনতে হয়। বীজতলায় ৫০ মেস নাইলন নেট দিয়ে ঢেকে চারা উৎপাদন করলে চারা অবস্থায় ভাইরাস রোধ করা সম্ভব। গজানোর ১০-১২ দিন পর চারা দ্বিতীয় বীজতলায় লাগাতে হয়। চারার বয়স ৩০-৪০ দিন অথবা ৪-৬টি পাতা হলে রোপণ করতে হবে।
বেগুনের সার:
জাতের ফলন ক্ষমতা ও অপুষ্টি লক্ষণ দেখে সার দিতে হবে। গাছে অপুষ্টি লক্ষণ দেখে সার ও চুন প্রয়োগ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বেগুনের রোগ দমন ব্যবস্থাপনা:
বেগুনের গোড়া পচা, ঢলেপড়া ও ক্ষুদে পাতা রোগ:
গোড়া পচা দমনের জন্য অটোস্টিন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। ঢলেপড়া রোগ ও খাটো আকৃতির পাতা রোগ দমনে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকনাশক এবং ভাইরাস বাহক সাদা মাছি (ইমিটাফ/নাইট্রো প্রয়োগ) দমন করতে হবে।
বেগুনের ফমপসিস রোগ (Phomopsis) :
ফমপসিস রোগ দমনে বীজ শোধন করার জন্য গরম পানিতে (৫১ ডি. সে.) ১৫ মিনিট রাখা, অটোস্টিন ০.১ গ্রাম/৫০ গ্রাম বীজ, মূল জমিতে অটোস্টিন ১০ গ্রাম/৫লিটার পানি স্প্রে করতে হবে।
বেগুনের ডেম্পিং অফ বা চারা ধসা/ঢলে পড়া রোগ:
বীজতলায় ‘ডেম্পিং অফ’ ছত্রাক রোগের আক্রমণ হয়। চারার কাণ্ড ও শিকড়ে রোগ ছড়িয়ে পড়লে চারা মারা যায়। রোভরাল (২ গ্রাম/লি) বা কম্প্যানিয়ন (২ গ্রাম/লি) ৮ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে। অটোস্টিন দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
বেগুনের পোকা:
ফল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, মেলিবাগ, বিটল, সাদা মাছি ও জেসিড। এসব পোকা দেখা গেলে যথানিয়মে ট্রেসার ২টি স্প্রে তারপর মারশাল এই চক্র অনুসরণ করে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
বেগুনের ডগা ও ফলের মাজরা পোকা:
এই পোকার আক্রমণ অধিক হলে সর্বাধিক ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত ফলন ক্ষতি হতে দেখা গেছে। বেগুন ছাড়াও এ পোকা টমেটো, আলু, মটরশুঁটি ইত্যাদি সবজিকেও আক্রমণ করতে পারে। ফল বিস্বাদ, খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে যায়। পোকা দমন করতে ১-২টি ফসল মৌসুমে গড় দৈনিক হিসাবে শতাধিক বার অতি বিষাক্ত কীটনাশক স্প্রে করার উদাহরণ রয়েছে।
বেগুন ট্রেসার মার্শাল প্রয়োগ:
চারা রোপণের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে জমিতে মথ দেখার সাথে সাথে ট্রেসার ১০ লিটার পানিতে ৪ মিলি হারে স্প্রে করতে হবে। জমিতে লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত ডগা অপসারণ করে একই হারে পুনরায় ট্রেসার প্রয়োগ করতে হবে। এর ৭-১০ দিন পর মার্শাল ২০ ইসি ১০ লিটার পানিতে ৩০ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। রোপণের কয়েক দিন পর থেকেই এ পোকার আক্রমণ হয় এবং শেষ ফলটি সংগ্রহ করার আগ পর্যন্ত এর আক্রমণ চলতে থাকে। গ্রীষ্মকালে জীবনচক্র সম্পন্ন করতে ২০-৩০ দিন এবং শীতকালে ৩৪-৪৫ দিন লাগে।
বছরে এরা ৫ বা বেশি বংশবিস্তার করতে পারে। মে-অক্টোবর ৩টি বংশ এবং নভেম্বর-এপ্রিল মাসের মধ্যে ২টি বংশবিস্তার হয়। স্ত্রী মথ পাতার উল্টো দিকে, কুঁড়িতে, বোঁটায় ও ডগায় ডিম পাড়ে। গ্রীষ্মকালে ৩-৫ দিন এবং শীতকালে ৭-৮ দিনে ডিম ফুটে কীড়া বের হয়।
বেগুন ক্ষেতে সমন্বিত বালাই দমন :
বেগুন ক্ষেতে প্রতি সপ্তাহে পোকার উপস্থিতি যাচাই করতে হবে। আক্রান্ত ডগা ও ফল কীড়াসহ ছিঁড়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। নিরাপদ বেগুন উৎপাদনে ব্যাগিং ও অর্গানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। বেগুনের জমি গভীরভাবে চাষ-মই দিয়ে সমান করে আগাছামুক্ত করতে হবে। জমি স্বল্প ব্যয়ে আগাছামুক্ত রাখতে চাইলে চারা রোপণের ২-৩ দিনের মধ্যে মাটিতে পানিডা ৩৩ ইসি বিঘাতে ৩০০ মিলি প্রয়োগ করতে হবে।
জমি তৈরির শেষ চাষে কার্বোটাফ ৫জি ১.৫ কেজি/বিঘা দিতে হবে। সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া অতিরিক্ত দেওয়া যাবে না। রোপণের ১৫ দিন থেকে সপ্তাহে একদিন ক্ষেতে জরিপ করতে হবে। ক্ষেত আগাছানাশক (পানিডা) দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ফুল আসার আগে ডগা বা পাতায় পোকা দেখলে পোকা ধ্বংস করাসহ বালাইনাশক দিতে হবে।
বেগুন বীজ উৎপাদনে করণীয়:
পরিপক্ব ফল হলদে হলে সংগ্রহ করা। সপ্তাহপর ফলের চামড়া ছিলে বীজসহ মাংসল অংশ কেটে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। রোদে শুকিয়ে আর্দ্রতা ৮ শতাংশ হবে।
বিটি বেগুন ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধ যা জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়েছে। বিটি (ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস) ব্যাকটেরিয়া থেকে জিনকে পৃথক করে বেগুনে স্থানান্তর করা হয়। এই জিন বেগুনে ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকাকে বাধা দেয়।
লাউ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য, লাউ জনপ্রিয় সবজি, যা অনেকের কাছেই প্রিয় খাবার। এটি সাধারণত শীতকালে বসতবাড়ির আশপাশে চাষ হয়। বর্তমানে প্রায় সারা বছরই লাউ চাষ হয়। একইসঙ্গে সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর সবজি লাউ। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের শাকের মধ্যে সহজলভ্য লাউ শাক। ঘরের কোণে, উঠানে বা খেতখামারে, যেখানেই লাগান না কেন; লাউ গাছ বাড়তে থাকে। অন্যদিকে লাউয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান ও পানি থাকার পাশাপাশি এতে উপকারী ফাইবার। লাউ-মাছের তরকারি, লাবড়া, নিরামিষ, ভাজি, বড়া কিংবা সালাদ হিসেবেও বেশ সমাদৃত।
লাউয়ের পাতা সবুজ ও নরম। লাউ প্রধানত শীত মৌসুমের। এটি উচ্চতাপ ও অতিবৃষ্টি সহিষ্ণু হওয়ায় সারা বছরও ফলানো যায়। পুরুষ ফুল রোপণের ৪২-৪৫ এবং স্ত্রী ফুল ৫৭-৬০ দিনের মধ্যে ফুটে। হালকা সবুজ রঙয়ের ফলের আকৃতি লম্বা ৪০-৪৫ এবং বেড় প্রায় ৩০-৩৫ সেমি। লাউয়ের ওজন ১.৫-২ কেজি। প্রতি গাছে গড়ে ১০-১২টি লাউ ধরে। চারা রোপণের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে প্রথম ফল তোলা যায়। শীতকালে চাষের জন্য ভাদ্রের প্রথমে আগাম ফসল চাষ করা যাবে।
লাউ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য
জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ এঁটেল, দো-আঁশ মাটি লাউ চাষের জন্য উত্তম। লাউয়ের জীবনকাল গড়ে ১৬৫-১৮৫ দিন। আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। তবে বীজ উৎপাদনের জন্য অক্টোবরের শেষ দিকে বীজ বোনা উত্তম। বিঘাপ্রতি ৭০০-৮০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। বীজবাহিত রোগ প্রতিরোধ এবং সবল সতেজ চারা উৎপাদনে বীজ শোধন জরুরি। কেজিপ্রতি ২ ভিটাভেক্স/ক্যাপটান ব্যবহার করে বীজ শোধন করা যায়।
লাউয়ের চারা উৎপাদন ও বীজতলা তৈরি
লাউ চাষের জন্য নার্সারিতে পলিব্যাগে চারা উৎপাদন করে নিতে হবে। এজন্য আলো-বাতাস স্বাভাবিকভাবে পাওয়া যায় এমন জায়গায় ২০-২৫ সেমি উঁচু বেড করে নিতে হবে। বেড়ের ওপর ৪-৫.২ মিটার আকৃতির ঘর তৈরি করে নিতে হবে। ঘরের কিনারা বরাবর মাটি হতে ঘরের উচ্চতা হবে ০.৬ মিটার এবং মাটি হতে ঘরের মধ্যভাগের উচ্চতা হবে ১.৭ মিটার। ঘর তৈরির জন্য বাঁশ, বাঁশের কঞ্চি লাগেবে। এছাড়া ছাউনির জন্য প্লাস্টিক এবং বাঁধার জন্য দড়ি রাখতে হবে।
লাউয়ের বীজ বপন:
বীজ বপনের জন্য ৮x১০ সেমি বা তার থেকে কিছুটা বড় আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা যায়। প্রথমে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিতে হবে। মাটিতে বীজ গজানোর জন্য ‘জো’ নিশ্চিত করতে হবে। মাটি ‘জো’ না থাকলে পানি দিয়ে করে নিতে হবে। এরপর তা পলিব্যাগে ভরতে হবে। এরপর প্রতি ব্যাগে দুটি করে বীজ বুনতে হবে।
বীজতলায় লাউয়ের চারা পরিচর্যা:
নার্সারিতে চারার প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। বেশি শীতে বীজ গজানোর সমস্যা হয়। এজন্য শীতকালে চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বীজ গজানোর পূর্ব পর্যন্ত প্রতি রাতে প্লাস্টিক দিয়ে পলিব্যাগ ঢেকে রাখতে হবে এবং দিনে খোলা রাখতে হবে। চারায় প্রয়োজন অনুসারে পানি দিতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে চারার গায়ে পানি না পড়ে। পলিব্যাগের মাটি চটা বাঁধলে তা ভেঙে দিতে হবে।
লাউয়ের জমি নির্বাচন ও জমি তৈরি:
এসব ফসল চাষে সেচ ও নিষ্কাশনে উত্তম সুবিধাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। একই জমিতে বার বার একই ফসলের চাষ পরিহার করতে পারলে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কমানো যাবে। ব্যাপক শিকড় বৃদ্ধির জন্য জমি এবং গর্ত ভালোভাবে তৈরি করতে হবে।
লাউয়ের বেড তৈরি ও দূরত্ব:
বেডের উচ্চতা হবে ১৫-২০ সেমি, প্রস্থ ২.৫ মিটার এবং লম্বা জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে নিতে হবে। এভাবে পরপর বেড তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি ২টি বেডের মাঝখানে ৬০ সেমি ব্যাসের সেচ নালা থাকবে এবং প্রতি ২ বেড পর ৩০ সেমি প্রশস্ত শুধু নিষ্কাশন নালা থাকবে।
লাউয়ের মাদা তৈরি এবং দূরত্ব:
মাদার আকার হবে ব্যাস ৫০-৫৫ সেমি, গভীরতা ৫০-৫৫ এবং তলদেশ ৪৫-৫০ সেমি। বেডের যেদিকে ৬০ সেমি প্রশস্ত সেচ ও নিষ্কাশন নালা থাকবে সেদিকে বেডের কিনারা হতে ৬০ সেমি বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে ২ মিটার পর পর এক সারিতে মাদা তৈরি করতে হবে। একটি বেডের যে কিনারা হতে ৬০ সেমি বাদ দেওয়া হবে তার পার্শ্ববর্তী বেডের ঠিক একই কিনার থেকে ৬০ সেমি বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে একই নিয়মে মাদা করতে হবে
লাউয়ে সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি:
এসব ফসল দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে এবং অনেক লম্বা সময়ব্যাপী ফল দিয়ে থাকে। কাজেই এসব ফসলের সফল চাষ করতে হলে গাছের জন্য পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পর্যাপ্ত খাবার সংগ্রহের জন্য এর শিকড় অঞ্চল অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত করে।
লাউ ফসলে সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি:
জমি তৈরির সময় সারের যে মাত্রা বলা হয়েছে, তার মধ্যে গোবর চাষের পর এবং টিএসপি, এমপি, জিপসাম ও বোরক্স সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। মাদায় চারা রোপণের যে সারের মাত্রা সুপারিশ করা হয়েছে তা দেওয়ার পর পানি দিয়ে মাদার মাটি ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। তারপর ‘জো’ এলে ৭-১০ দিন পর চারা লাগাতে হবে।
লাউয়ের চারা রোপণ:
বীজ গজানোর পর ১৬-১৭ দিন বয়সের চারা মাঠে লাগানোর জন্য উত্তম। চারাগুলো রোপণের আগের দিন বিকালে পানি দিয়ে ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। পরের দিন বিকেলে রোপণ করতে হবে। চারাগুলো নার্সারি থেকে ট্রলি বা টুকরি করে মাঠে নিয়ে যেতে হবে। মাঠে প্রস্তুত মাদাগুলোর মাটি ভালোভাবে ওলটপালট করে, এক কোপ দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জায়গা করে নিতে হবে। এরপর পলিব্যাগের ভাঁজ বরাবর ব্লেড দিয়ে কেটে পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলাসহ চারাটি নির্দিষ্ট জায়গায় লাগিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর গর্তে পানি দিতে হবে। পলিব্যাগ সরানোর সময় এবং চারা রোপণের সময় সাবধান থাকতে হবে যাতে চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হলে গাছের বৃদ্ধি দেরিতে শুরু হবে।
লাউয়ের পরবর্তী পরিচর্যা:
লাউ ফসল পানির প্রতি খুবই সংবেদনশীল। প্রয়োজনীয় পানির বেশি হলে ফল ধারণ ব্যাহত হবে এবং ফল আস্তে আস্তে ঝরে যাবে। কাজেই সেচনালা দিয়ে প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। লাউয়ের জমিতে কখনো সব জমি ভিজিয়ে প্লাবন সেচ দেওয়া যাবে না। শুধুমাত্র সেচ নালায় পানি দিয়ে আটকে রাখলে গাছ পানি টেনে নেবে। শুষ্ক মৌসুমে লাউ ফসলে ৪-৫ দিন পর পর সেচ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।
লাউয়ের আগাছা দমন:
কিছু নির্দিষ্ট প্রজাতির ঘাস লাউতে বোটল গোর্ড মোজাইক ভাইরাস নামে যে রোগ হয় তার হোস্ট। কাজেই চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত জমি সব সময়ই আগাছামুক্ত রাখতে হবে। এ ছাড়াও গাছের গোড়ায় আগাছা থাকলে তা খাদ্যোৎপাদন ও রস শোষণ করে নেয়।
লাউয়ে সার প্রয়োগ:
লাউ চাষের জন্য জমি তৈরির সময় হেক্টর প্রতি ৫০-৬০ টন গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে। হেক্টর প্রতি ৫০ কেজি নাইট্রোজেন ও ৬০ কেজি ফসফরাস দিতে হবে।
লাউয়ের বিশেষ পরিচর্যা:
গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট ডালপালা হয়। সেগুলোকে শোষক শাখা বলা হয়। এগুলো গাছের ফলনে এবং যথাযথ শারীরিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটায়। কাজেই গাছের গোড়ার দিকে ৪০-৪৫ সেমি পর্যন্ত ডালপালা কেটে অপসারণ করতে হবে।
লাউয়ের ফলন:
বারি লাউ-১ এবং বারি লাউ-২ চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৩৫-৪০ টন এবং বিঘাপ্রতি প্রায় ৪.৫-৫.০টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
লাউয়ের বীজ উৎপাদন:
বীজের জন্য অবশ্যই ভালোভাবে পরিপক্ব ফল সংগ্রহ করতে হবে। দুটি উপায়ে ফলের পরিপক্বতা বুঝা যাবে। ফল নাড়ালে ভেতরে বীজের শব্দ পাওয়া যাবে। ফলের খোসা শুকিয়ে যাবে এবং শক্ত হয়ে যাবে কিন্তু ভেতর শুকাবে না। এই অবস্থায় বীজের সংগ্রহের আগে পরিপক্বতার জন্য ফল ২-৩ সপ্তাহ রেখে দিতে হবে।
লাউয়ের রোগ বালাই ও দমন:
লাউয়ের মাছি পোকা রোগ:
এ পোকা লাউয়ের ফলের মধ্যে প্রথমে ডিম পাড়ে। পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফলের ভেতরে খেয়ে নষ্ট করে ফেলে।
দমন ব্যবস্থা:
মাছি পোকার কীড়া আক্রান্ত ফল দ্রুত পচে যায় এবং গাছ থেকে ঝরে পড়ে। পোকা আক্রান্ত ফল কোনোক্রমেই জমির আশেপাশে ফেলে রাখা উচিত নয়।
লাউয়ের ক্ষেতে সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদের যৌথ ব্যবহার:
কিউলিওর নামক সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণে মাছি পোকার পুরুষ পোকা আকৃষ্ট করা সম্ভব। পানি ফাঁদের মাধ্যমে ওই ফেরোমন ব্যবহার করে আকৃষ্ট মাছি পোকাগুলোকে মেরে ফেলা যায়। বিষটোপ ফাঁদে পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী ও পুরুষ মাছি পোকা আকৃষ্ট হয় এবং ফাঁদে পড়ে মারা যায়। ১০০ গ্রাম পাকা মিষ্টি কুমড়া কুচি কুচি করতে হবে।
সেক্স ফেরোমন ফাঁদ
সেটা থেঁতলিয়ে এতে ০.২৫ গ্রাম মিপসিন, ৭৫ পাউডারে এবং ১০০ মিলি পানি মিশিয়ে ছোট মাটির পাত্রে রেখে দিতে হবে। এরপর তিনটি খুঁটি দিয়ে এমনভাবে স্থাপন করতে হবে, যাতে বিষটোপের পাত্রটি মাটি থেকে ০.৫ মিটার উঁচুতে থাকে। বিষটোপ তৈরির পর ৩-৪ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করে তা ফেলে দিয়ে আবার নতুন করে তৈরি বিষটোপ ব্যবহার করতে হয়। সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদ কুমড়া জাতীয় ফসলের জমিতে ক্রমানুসারে ১২ মি. দূরে দূরে স্থাপন করতে হবে।
লাউয়ের পামকিন বিটল রোগ:
এই পোকা চারাগাছের পাতায় ফুটো করে। পাতার কিনারা থেকে শুরু করে সম্পূর্ণটা খেয়ে ফেলে। বয়স্ক গাছের পাতার শিরা-উপশিরা রেখে বাকি সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। এ পোকা ফুল ও কচি ফলে আক্রমণ করে। এটি শিকড় বা মাটির নিচে থাকা কাণ্ড ছিদ্র করে। ফলে গাছ ঢলে পড়ে। শেষে শুকিয়ে মারা যায়।
দমন ব্যবস্থা:
চারা অবস্থায় আক্রান্ত হলে হাত দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলতে হবে। ক্ষেত সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। চারা বের হওয়ার পর থেকে ২০-২৫ দিন পর্যন্ত মশারির জাল দিয়ে চারাগুলো ঢেকে রাখলে এ পোকার আক্রমণ থেকে চারাগুলো বেঁচে যায়। আক্রমণের হার বেশি হলে চারা গজানোর পর প্রতি মাদার চারদিকে মাটির সঙ্গে চারাপ্রতি ২-৫ গ্রাম অনুমোদিত দানাদার কীটনাশক (কার্বফুরান জাতীয় কীটনাশক) মিশিয়ে গোড়ায় পানি সেচ দেয়।
লাউয়ের মোজাইক রোগ:
চারা অবস্থায় বীজ গজানোর পর বীজপত্র হলুদ হয়ে যায় এবং পরে চারা নেতিয়ে পড়ে। বয়স্ক গাছের পাতায় হলুদ-সবুজ ছোপ ছোপ মোজাইকের মতো দাগ দেখা যায়। দাগগুলো অসম আকারের। দ্রুত বড় হয়। আক্রান্ত পাতা ছোট, বিকৃত ও নিচের দিকে কোঁকড়ানো, বিবর্ণ হয়ে যায়। শিরা-উপশিরাও হলুদ হয়ে যায়। ফুল কম আসে এবং অধিক আক্রমণে পাতা ও গাছ মরে যায়। আক্রান্ত ফল বেঁকে যায় ও গাছের কচি ডগা জটলার মতো দেখায়। ফলের উপরি অংশ এবড়ো থেবড়ো দেখা যায়।
প্রতিকার ব্যবস্থা: আক্রান্ত গাছ দেখলেই প্রাথমিকভাবে তা তুলে ধ্বংস করা। ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার রাখা। ক্ষেতে বাহক পোকা উপস্থিতি দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করে তা দমন করা। রোগাক্রান্ত গাছ থেকে কোনও বীজ সংগ্রহ ও ব্যবহার না করা।
লাভজনক পদ্ধতিতে মাছ চাষ এবং উৎপাদন কৌশল ,মাছ প্রাণীজ আমিষের অন্যতম অনুষঙ্গ। কর্মসংস্থান, বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন এবং পুষ্টি সরবরাহে মাছের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। একই পুকুরে নানা জাতের মাছ চাষ করা যায়। আবার খাল ও ডোবায়ও চাষ করা যায়। আবার চৌবাচ্চা, খাঁচায় করা সম্ভব। নির্দিষ্ট জলাশয়ে পরিকল্পিত উপায়ে স্বল্পপুঁজি, অল্পসময় ও লাগসই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন নিয়ম মেনে প্রাকৃতিক উৎপাদনের চেয়ে অধিক মাছ উৎপাদনই মাছ চাষ। মাছ চাষে লাভবান হতে হলে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত বিশেষ কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়।
লাভজনক পদ্ধতিতে মাছ চাষ এবং উৎপাদন কৌশল
গুণাগুণ ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা
দেশের স্বাদু পানিতে ২৬০টিরও বেশি প্রজাতির মাছ আছে। খাঁড়ি অঞ্চলে ও লোনা পানিতেও কয়েকশ প্রজাতির মাছ আছে। তবে চাষযোগ্য মাছ হলো রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস, সিলভার কার্প, মিরর কার্প, গ্রাস কার্প, কমন কার্প, বিগহেড, রাজপুঁটি, নাইলোটিকা, তেলাপিয়া, বিদেশি মাগুর, থাই পাঙ্গাশ। এসব মাছ খুব দ্রুত বাড়ে। মাছ চাষ শুরু করার আগে প্রয়োজন হচ্ছে সঠিক সুষ্ঠু এবং বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা।
উৎপাদন কৌশল
সনাতন পদ্ধতির মাছ চাষে পুকুরের কোনও ব্যবস্থাপনা ছাড়াই মাটি ও পানির উর্বরতায় পানিতে যে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয় মাছ সেটা খেয়ে জীবনধারণ করে। এক্ষেত্রে আলাদা কোনও পরিচর্যা নিতে হয় না।
আধানিবিড় পদ্ধতিতে নিয়মমতো পুকুর প্রস্তুত করে আংশিক সার ও খাদ্য সরবরাহ করে মাছের খাদ্য উৎপন্ন করতে হয়। পুকুরের বিভিন্ন স্তরে উৎপাদিত খাদ্যের সঠিক ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য রেখে মাছের পোনা ছাড়তে হয়।
নিবিড় পদ্ধতিতে অল্প জায়গা, অল্প সময়ে বেশি উৎপাদনের জন্য সুপরিকল্পিতভাবে সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে হয়।
পুকুর নির্বাচন
পুকুর খোলামেলা রৌদ্রজ্জ্বল জায়গায় এবং বাড়ির আশপাশে হতে হবে। মাটির গুণাগুণ পুকুরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত দো-আঁশ, এঁটেল দো-আঁশ ও এঁটেল মাটি পুকুরের জন্য ভালো। পুকুরের আয়তন কমপক্ষে ১০ শতাংশ হতে হবে। ৩০-৫০ শতাংশ আকারের পুকুর মাছ চাষের জন্য বেশি উপযোগী। পুকুরের গভীরতা ২-৩ মিটার রাখতে হবে। বছরের পুরো সময় পানি থাকতে হবে। পুকুর পাড়ে বড় গাছ বা ঝোপঝাড় থাকা যাবে না।
পুকুর খনন ও প্রাথমিক কাজ
যেখানে পুকুর খনন করা হবে সেখানকার অবকাঠামো, পরিবেশ, পানির গভীরতা, বর্ষায় বন্যার হুমকি, পুকুর পাড়ের ঢাল, বকচর, শুষ্ক মৌসুমে পানি কতটা থাকে, পানি কমে গেলে বাইরে থেকে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা আছে কিনা এসব বিষয়ে সঠিক ধারণা নিয়ে শুরু করতে হবে। এজন্য প্রথমেই অভিজ্ঞ মৎস্য চাষি বা মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। মাছ চাষ শুরু করার আগে বা মাছের পোনা ছাড়ার আগে সঠিক নিয়মে পুকুর তৈরি করা অত্যাবশ্যক। পানিতে প্রাকৃতিক খাবার জন্মানো এবং পুকুরে পানি প্রবেশ এবং নিষ্কাশনের রাস্তা সঠিকভাবে রক্ষা করা অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে অবহেলা করা হলে পরবর্তীতে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। পোনা মাছ ছাড়ার আগে পুকুর তৈরি করে নিতে হবে। নতুন পুকুর কাটা কিংবা পুরনো পুকুরই তৈরি করে নেওয়া আবশ্যকীয় প্রাথমিক কাজ।
ধাপে ধাপে প্রস্তুতি
জলজ আগাছা কচুরিপানা, কলমিলতা হেলেঞ্চা, অন্যান্য গাছ শেকড়সহ তুলে ফেলতে হবে। শোল, গজার, বোয়াল, টাকি রাক্ষুসে মাছ এবং অবাঞ্ছিত মাছ মলা, ঢেলা, চান্দা, পুঁটি সরিয়ে ফেলতে হবে।
প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন পুকুরে পানি থাকলে ড্রামে বা বালতিতে গুলে ঠাণ্ডা করে পুরো পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। মাটি ও পানির গুণাগুণ বিবেচনায় রেখে চুন দেওয়ার এক সপ্তাহ পর জৈব সার বিশেষ করে পচা গোবর দিতে হবে। পুকুর শুকনা হলে সার, চুন/জিওলাইট, গোবর ছিটিয়ে দিয়ে লাঙল দিয়ে চাষ করে দুষণমুক্ত পানি ঢুকাতে হবে। পোনা মজুতের আগে পুকুরে ক্ষতিকর পোকামাকড় থাকলে তা মেরে ফেলতে হবে। পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মালে পোনা মজুত করতে হবে। মৃত্যুহার যেন কম থাকে সেজন্য পোনার আকার ৮-১২ সেন্টিমিটার হতে হবে। নিয়মমতো পুকুরে পোনা ছাড়তে হবে। দিনে দুই বার সকাল ১০টায় এবং বিকেল ৩টায় খৈল, কুঁড়া, ভুসিসহ সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
সতর্কতা ও পরিচর্যা
রোগ প্রতিরোধী মাছের চাষ করতে হবে। সঠিক সংখ্যায় পোনা মজুত করতে হবে। পোনা ছাড়ার আগে পোনা রোগে আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং যাতে আগাছা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতি ৩-৪ বছর পরপর পুকুর শুকিয়ে ফেলে নতুন করে পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হবে।
পোনা যত্নও মজুত
মাছ চাষি হ্যাচারি থেকে যেসব পোনা সংগ্রহ করেন তার অধিকাংশই সরাসরি চাষ পুকুরে ছাড়ার উপযোগী নয়। চাষ পুকুরে ছোট পোনা সরাসরি ছেড়ে অনেক সময় চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এতে ব্যাপক হারে পোনা মারা যায়। এ কারণে পোনা ভালোভাবে নার্সিং করতে হবে। নার্সিং করার পর পোনা বড় ও টেকসই হলে গণনার মাধ্যমে পোনা মজুত পুকুরে দেয়া যায়। পরবর্তীতে খাবার ব্যবস্থাপনার সাথে অন্যান্য ব্যবস্থাপনাও যথার্থ হতে হবে। বেশি পোনা নয় বরং পরিমিত পরিমাণে পোনা ছেড়ে অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ।
পোনা নির্বাচন পরিবহন ও অবমুক্তকরণ
চাষিকে মানসম্মত ব্রুড থেকে উৎপাদিত এবং অন্তঃপ্রজননমুক্ত পোনা, একই আকারের ও বয়সের রোগমুক্ত পোনা সংগ্রহ করতে হবে। মানসম্পন্ন পোনা সংগ্রহ করার পর তা সঠিক নিয়মে পরিবহন এবং পরিবহনের পর যথার্থভাবে পুকুরে অবমুক্ত করতে হবে। পরিবহনজনিত ক্রুটি থাকায় এবং পরিবহনের আগে পোনা সঠিক নিয়মে টেকসই করা হয় না বলে ব্যাপক হারে মারা যায়। অনেক সময় তাৎক্ষণিকভাবে মারা না গেলেও পোনা এতই দুর্বল থাকে যে দুই একদিনের মধ্যে অনেক পোনাই মারা যায়। এ কারণে পোনা পরিবহন ও পোনা ছাড়ার ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে।
পানির গুণাগুণ রক্ষা
মাছ পানিতে থাকে বলেই পানির গুণাগুণ ও পরিবেশ রক্ষা করাটা জরুরি। অথচ অনেক মাছ চাষি পানির গুণাগুণ রক্ষায় সচেষ্ট নন। মাছ চাষের জন্য পানির নির্ধারিত স্থিতিমাপ রয়েছে। এগুলো দক্ষতার সাথে রক্ষা করতে পারলে চাষকালে নানা সমস্যা এড়ানো সম্ভব। চাষিরা টেস্ট কিটের মাধ্যমে মাত্রা মেপে পানির গুণাগুণ জানতে এবং করণীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
নিয়মিত ওজন নেওয়া ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা
প্রতি ১০-১৫ দিন পর পর মাছের গড় ওজন নেওয়া আবশ্যক। তা না হলে খাবারের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করা যায় না। মাছের ওজন না নিলে চাষিও বুঝতে পারেন না যে মাছের বাড়বাড়তি সন্তোষজনক নাকি হতাশাব্যঞ্জক। পোনা ছেড়ে এবং খাবার সরবরাহ করেই চাষির দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। মাছের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণ একটি বড় কাজ। মাছের অস্বাভাবিক আচরণ বা দেহে অস্বাভাবিক কোনও কিছু দেখা গেলে বা ক্ষত হলে মৎস্য বিশেষজ্ঞ বা মৎস্য কর্মকর্তার শরণাপন্ন হতে হবে।
মাছ পরিবহন
মাছ ধরে সঠিকভাবে বাজারজাত করতে না পারলে চাষি চাষের শেষ দিকে এসে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। যেসব মাছ জীবিত পরিবহন করা হয় সেগুলো অনেক ক্ষেত্রে অধিক সময় পরিবহন বা অন্য কোনও ক্রটির কারণে মারা যায়। এক্ষেত্রে প্লাস্টিক ড্রামে পরিষ্কার পানিসহ পরিমিত মাছ পরিবহন করা উচিত। মাছ ধরার ৮-১০ ঘণ্টা আগে খাবার দেওয়া বন্ধ রাখলে মাছ অধিক সময় জীবিত থাকে।
প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ
শুকনো অথবা ভেজা অবস্থায় লবণ দিয়ে মাছ সংরক্ষণ করা যায়। মাছ কেটে নাড়িভুঁড়ি ও মাথা ফেলে দিয়ে চাক করে সেগুলো সিদ্ধ করতে হবে। এরপর লবণ, তেল, মসলা চাকের সাথে মেখে টিনের পাত্রে সুন্দর করে স্তরে স্তরে সাজিয়ে পাত্রটি বায়ুশূন্য করে মুখবন্ধ করতে হবে। একে ফিশকেনিং পদ্ধতি বলে।
মাছ অমূল্য প্রাণীজ জাতীয় সম্পদ। নিজেদের একান্ত প্রয়োজনে পরিকল্পিতভাবে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি পদ্ধতি অনুসরণ এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করলে মাছ চাষে কম খরচে বেশি লাভবান হওয়া যায়। মাছ দিয়ে আমরা আমাদের দেশকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারব।
মরিচ চাষের উন্নত পদ্ধতি ,মরিচ আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় মসলা জাতীয় ফসল। তরকারি সুস্বাদু করতে মরিচ ব্যবহার হয়ে থাকে। এ ছাড়া ঝাল হিসেবে নানান খাবারে এর ব্যবহার হয়। এর বাজারমূল্যও ভাল। তাই আজ আলোচনা করবো মরিচ চাষের উন্নত পদ্ধতি নিয়ে-
মরিচ চাষের উন্নত পদ্ধতি
মাটি ও জলবায়ু
পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত আলো বাতাসময় উর্বর দো-আঁশ মাটিতে মরিচ ভাল হয়। অতিরিক্ত অম্ল মাটি ছাড়া প্রায় সব ধরনের মাটিতেই মরিচ জন্মে। মরিচ গাছে ফুল ধরার সময় ৩৫ থেকে ৪৫ সে. তাপমাত্রা সর্বাপেক্ষা উপযোগী। অধিক বৃষ্টিপাত ও মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া ফুল ঝরে পড়ে।
জাত
মরিচকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। ঝাল ও মিষ্টি। বাংলাদেশে ঝাল মরিচের মধ্যে বগুড়া, চাঁদপুরী, ফরিদপুরী ইত্যাদি আঞ্চলিক মৌসুমি জাত আছে। এ ছাড়া আকালী, কামরাঙা, কালো ইত্যাদি মরিচও খুব ঝাল। আঞ্চলিকভাবে আরও বিভিন্ন নামের যেমন- ছোট মরিচ, বড় মরিচ, ধানী মরিচ, সাহেব মরিচ, বোম্বাই মরিচ, গোল মরিচ, মেজর মরিচ, সনিক মরিচ, যমুনা মরিচ, বালিঝুরা মরিচ, পাটনাই মরিচ, রাঁচি মরিচ, সূর্যমুখী ও বারি মরিচ চাষ হয়ে থাকে।
চারা উৎপাদন পদ্ধতি
ভাল চারার জন্য প্রথম বীজতলায় চারা গজিয়ে দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করতে হয়। প্রতিটি বীজতলা জমির দৈর্ঘ্য অনুযায়ী লম্বা, ১ মিটার বা সাড়ে তিন ফুট প্রস্থ এবং ৪০ সেমি. বা ১৬ ইঞ্চি উঁচু হতে হবে। বীজতলার ওপরের মাটিতে বালি ও কম্পোস্ট বা শুকনো পচা গোবর সার পরিমাণমত মিশিয়ে ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। একবিঘা জমির চারার জন্য ১২০ থেকে ১৩০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
বীজতলা জীবাণুমুক্তকরণ
সূর্যের আলোতে শুকিয়ে বীজতলা শোধন করা। এ পদ্ধতিতে বীজতলা ভালভাবে কোপানোর পর সমতল করে সাদা ও স্বচ্ছ পলিথিন সিট দিয়ে সম্পূর্ণ ঢেকে দিতে হবে। তারপর ২ থেকে ৩ সপ্তাহ ঢাকা অবস্থায় সরাসরি সূর্যরশ্মি স্বচ্ছ পলিথিন সিটের ওপর পড়বে। এতে করে বীজতলার মাটির ভেতর গরম হয়ে যে তাপ সৃষ্টি হবে তাতে ক্ষতিকারক জীবাণুগুলো মারা যাবে। এ ছাড়া তাপবৃদ্ধির ফলে বিষাক্ত এমোনিয়া গ্যাস নির্গত হবে। তাই এ পদ্ধতিতে জীবাণুমুক্ত করার সাথে সাথে বীজতলায় বীজবপন করা যাবে না। এই বিষাক্ত গ্যাস কোদাল কোপালে ধীরে ধীরে সরে যাবে। এ পদ্ধতিতে বীজতলায় বসবাসকারী পোকা-মাকড় মারা যাবে অন্যথায় তারা স্থান ত্যাগ করবে। তাপের মাধ্যমে বীজতলা জীবাণুমুক্ত করতে গেলে মাটিতে রক্ষিত নাইট্রোজেন সার বাতাসে উড়ে যায় ফলে মাটিতে নাইট্রোজেনের অভাব দেখা দেয়।
বীজ শোধন ও পানিতে ভেজানো
ভালভাবে বীজ গজানোর জন্য বপনের আগে ৪৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। নীরোগ চারা উৎপাদনের জন্য বপনের ৬ ঘণ্টা আগে প্রোভেক্স বা ক্যাপটান (১ গ্রাম/৫০০ গ্রাম বীজের) দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে।
বীজ বপন ও চারা রোপণ
বর্ষা মৌসুমের জন্য মার্চ-এপ্রিল মাসে এবং রবি মৌসুমের জন্য অক্টোবর-নভেম্বর মাস পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। ঝাল মরিচ বছরের প্রায় যেকোনো সময়ই জন্মে এবং মিষ্টি মরিচ রবি মৌসুমেই ভাল হয়। যখন চারা প্রায় ১০ সেমি বা ৪ ইঞ্চি উঁচু হয় তখন জমিতে ৬০ থেকে ৭০ সেমি বা ২৫ থেকে ৩০ ইঞ্চি দূরত্বে সারিতে চারা রোপণ করতে হয় এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ৩০ থেকে ৪০ সেমি বা ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি।
বীজ ফসলের জন্য নিরাপদ দূরত্ব
মরিচ স্বপরাগায়িত জাত। তবে কিছু কিছু জাতে প্রায় ৬৮ শতাংশ পর্যন্ত পরাগায়ণ হতে পারে। এ কারণে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করতে হলে বীজ ফসলের জমির চার পাশে অন্তত ৪০০ মিটারের মধ্যে অন্য কোনও জাতের মরিচ না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে অল্প পরিমাণ বীজের জন্য ক্ষেতের সুস্থ সবল নির্বাচিত গাছের ফুল স্বপরাগায়িত করে সেগুলো থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। স্বপরাগায়ণের জন্য সাদা পলিথিন ব্যাগ দিয়ে ফুল ফোটার আগেই ঢেকে দিতে হবে।
জমি চাষ ও সার প্রয়োগ
প্রকারভেদে জমিতে চাষ ও মই দিতে হয় ৪-৬টি । প্রথম চাষ গভীর হওয়া উচিত। জমি তৈরির সময় বিঘাপ্রতি ১২০০-১৩০০ কেজি জৈব সার, ৪০ কেজি টিএসপি, ৬ কেজি এমওপি এবং ১৫ কেজি জিপসাম সার মিশিয়ে দিতে হবে। আর চারা রোপণের প্রতি কিস্তিতে ২৫ দিন পর ইউরিয়া ৯ কেজি, ৫০ দিন ও ৭০ দিন পর এমওপি ৬ কেজি হারে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
পরবর্তী পরিচর্চা
সময়মত আগাছা দমন করতে হবে। অনাবৃষ্টির সময় সম্ভব হলে ক্ষেতে পানি সেচ দিতে হবে।
পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই দমন
মরিচের ক্ষেতে সাধারণত মাইট ও থ্রিপসের আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। ওমাইট/ম্যালাথিয়ন/ পারফেকথিয়ন/মেটাসিসটক্স ১ চা চামচ ৫ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করে এসব পোকা দমন করা যায়। রোগ-বালাইয়ের মধ্যে উইল্টিং, এ্যানথ্রাকনোজ/ডাইব্যাক ও ভাইরাস রোগ প্রধান। উইল্টিং রোগের জন্য রিডোমিল এমজেড ৭২, ২ গ্রাম/প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে বীজ তলায় ৭ দিন অন্তর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করে দমন রাখা যায়। এ্যানথ্রাকনোজ/ডাইব্যাক রোগের লক্ষণ দেখা গেলে টিল্ট নামক ছত্রাকনাশক ১ চা চামচ ১০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর অন্তর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
মরিচ সংগ্রহ ও বীজ সংরক্ষণ
গাছে মরিচ যখন পুরোপুরি পাকে সেই অবস্থায় উঠানো উচিত। পরিপক্ব, পুষ্ট এবং উজ্জ্বল লাল রঙের মরিচ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। পাকা মরিচ কেটে ভেতরের বীজ বের করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিয়ে বাতাস ঢুকতে পারে না এমন পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।
বরবটি চাষের সহজ পদ্ধতি,বরবটি আমিষ সমৃদ্ধ সবজি। প্রায় সারা বছরই এটি ফলানো যায়। তবে গ্রীষ্মকালে এটি ভালো হয়। খুব বেশি শীতে আবার ভালো হয় না। বরবটি ভর্তা, ভাজি, তরকারি সব কিছুতেই সমান উপযোগী। পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। খাবারে স্বাদ বাড়ানো পাশাপাশি চমৎকার কিছু পুষ্টির উৎস এটি। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও সি থাকে। এটি চর্বি কমাতে ও সাহায্য করে থাকে।
বরবটি চাষের সহজ পদ্ধতি
আজ আপনাদের সাথে বরবটি চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব-
বরবটির জাত
বরবটি চাষ করলে ভালো জাত দেখে চাষ করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের বরবটির জাত রয়েছে। যেমন- বিএইউ বরবটি ১, কেগর নাইটি, চীনা বরবটি, ফেলন, লাল বেনী, ঘৃত কুমারি, গ্রিন লং, তকি, বনলতা ইত্যাদি। তবে কেগর নাটকী নামে একটি উন্নত জাতের বরবটি অনেক চাষ হয়ে থাকে। কেগর নাটকী জাতটি পৌষ এবং মাঘ মাস ছাড়া সারা বছরই চাষ করা যায়। বরবটির উল্লেখযোগ্য জাতের মধ্যে কেগর নাটকী ও লাল বেণী জাতের ফলন সবচেয়ে বেশি হয়।
প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও মাটি নির্বাচন
অপেক্ষাকৃত উচ্চ তাপমাত্রায় বরবটি ভালো জন্মে। তবে খুব বেশি শীত পড়লে বরবটি চাষ ভালো হয় না। কারণ শীতকালে বরবটি গাছের বৃদ্ধি কম হয় ও ফল কম ধরে। বরবটি উষ্ণ ও অবউষ্ণ অঞ্চলের ফসল। কিন্তু বরবটি এখন সারা বছরই চাষ করা হয়। প্রায় সব ধরনের মাটিতে বরবটি সবসময় চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে বরবটির চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
চাষের সময়
বরবটির বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই মাস। শীতকালে বরবটির বীজ বোনা উচিত নয়।
বীজের পরিমাণ
প্রতি শতকে ১০০-১২৫ গ্রাম এবং প্রতি হেক্টর প্রতি ৮-১০ কেজি।
জমি তৈরি ও বীজ বপন
বরবটি চাষের জন্য জমি হতে হবে আগাছামুক্ত ও ঝুরঝুরে মাটি। এজন্য জমি ভালোভাবে কয়েকবার চাষ দিতে হবে। জমি পরিষ্কার করে ৪ থেকে ৫টি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে। তারপর মাটির ওপরে বেড ও মাদা তৈরি করে প্রত্যেক মাদায় ৪-৫টি বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২-৩ হাত এবং মাদা হতে মাদার দূরত্ব হতে হবে ১ থেকে ২ হাত। একই সময় পলিব্যাগে কিছু চারা তৈরি করে রাখলে যেসব জায়গায় বীজ গজাবে না সেসব ফাঁকা জায়গায় পলিব্যাগে চারা রোপণ করে পূরণ করা যাবে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১০ কেজি বা প্রতি শতকে ৪০ গ্রাম বীজ লাগে।
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
জৈব সার বরবটি গাছের জন্য খুবই ভালো। অল্প সময়ে অধিক ফলন পেতে হলে অন্যান্য সার ও দিতে হবে পরিমাণ মতো। যেমন টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া। এসব সার প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে বরবটি চাষে ইউরিয়া সার কম লাগে। এ ছাড়াও গোবর সার, জিপসাম সার, জিংক সালফেট সার ও বোরক্স সার দিতে হবে। ইউরিয়া সার বেশি দিলে গাছ ঝোপালো হয় ও ফলন কম হয়।
সেচ ব্যবস্থাপনা
জমিতে জলের যাতে অভাব না হয় সেজন্য প্রয়োজন অনুসারে শুকনার সময় জল সেচ দিতে হবে। নালার মধ্যে জল ঢুকিয়ে সেচ দিলে গাছের শিকড় সে জল টেনে নিতে পারে। এজন্য জমিতে নালা তৈরি করে দিতে হবে।
আগাছা ও নিড়ানি
বৃষ্টির জল যাতে আটকে না থাকে সেজন্য নালার আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। জমি সবসময় আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। বিশেষ করে গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। বরবটির গাছ বড় হলে মাচা তৈরি করে দিতে হবে। জমিতে মাটির অবস্থা বুঝে মাঝে মাঝে সেচ দিতে হবে। জমিতে জল জমে থাকতে দেওয়া যাবে না।
রোগ বালাই দমন
বরবটি গাছে বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ দেখা যায়। যেমন জাব পোকা, বিছা পোকা, মাজরা পোকা ইত্যাদি। এসকল পোকা বরবটি গাছের কচিপাতা, কাণ্ড, ফুল ও ফলের ক্ষতি করে থাকে। তাই এই সব পোকা কঠোরভাবে দমন করতে হবে। এসব পোকা দমনে বাজারে বিভিন্ন ধরনের উন্নত মানের কীটনাশক ওষুধ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও বরবটি গাছের বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। যেমন- এনথ্রাকনোজ রোগ, পাতায় দাগ রোগ, গাছের শিকড় ও গোড়া পচা রোগ ইত্যাদি। এসব রোগ দমন করার জন্য ও বাজারে বিভিন্ন ছত্রাকনাশক পাওয়া যায়।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন
বীজ বোনার ৫০-৬০ দিন পর থেকেই বরবটি সংগ্রহ করা যায়। কচি অবস্থাতেই বরবটি তোলা যায়। কারণ বেশি পুষ্ট হলে সবজি হিসেবে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায়। আর বীজের জন্য শুটি সম্পূর্ণ পেকে গেলে সংগ্রহ করতে হবে। তবে সব শুটি একসাথে পাকে না। কয়েক বারে সংগ্রহ করতে হয়ে থাকে। শতকপ্রতি ফলন ৩০-৬০ কেজি, প্রতি হেক্টরে ফলন ১০-১২ টন।
রসুনের উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য , রসুন হলো কন্দ জাতীয় মসলা ফসল। বৈজ্ঞানিক নাম Allium sativum। রসুন শুধু মসলা হিসেবে নয় হেকিমি শাস্ত্রে ওষুধ হিসাবেও ব্যবহার হয়ে থাকে। এটি রান্নার স্বাদ, গন্ধ ও রুচি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। রসুনে পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি-৬ রয়েছে।
রসুনের উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য
উপকারিতা
রসুন হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। কাঁচা রসুন সেবনে ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়। সর্দি-কাশিতেও রসুন বেশ উপকারী। রক্তে কোলেস্টেরল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়াও রসুনকে ন্যাচারাল পেইন কিলারও বলা হয়। কেননা শিশু বা বড়দের দাঁতে ব্যথা হলে এক কোষ রসুন চিবালে দাঁতের ব্যথা অনেকটা উপশম হয়। নিয়মিত রসুন খেলে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
দেশের দিনাজপুর, রংপুর, নাটোরের গুরুদাসপুর ও বরাইগ্রাম, পাবনা জেলার চাটমহর, শরিয়তপুর এবং সিরাজগঞ্জ জেলার তারাশ উপজেলায় রসুন বেশি উৎপাদিত হয়।
মাটি ও জলবায়ু
উর্বর দো-আঁশ মাটি, পলি দো-আঁশ মাটি অর্থাৎ যেখানে পানি জমে থাকে না মাটি সহজেই ঝুরঝুরা হয় এমন মাটি রসুন চাষের জন্য উপযোগী। শক্ত এঁটেল মাটি রসুন চাষের জন্য উপযোগী নয়। কেননা এঁটেল মাটিতে রসুনের কন্দ সুগঠিত হয় না। রসুন চাষের জমি থেকে পানি অপসারণ হওয়ার ব্যবস্থা না থাকলে কন্দ বড় হয় না এবং রং নষ্ট হয়ে যায়। রসুন সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে ভালো জন্মে।
জাত পরিচিতি
বারি রসুন-১: বারি রসুন ১ এর গড় উচ্চতা ৬০-৬২ সেমি এবং পাতার সংখ্যা (প্রতি গাছে) ৭-৮টি। প্রতি কন্দে কোয়ার সংখ্যা ২০-২২টি। এই জাতে রোগ ও পোকার আক্রমণ খুব কম। এর জীবনকাল ১৪০-১৫০ দিন। ফলন ৬-৭ টন/ হেক্টর।
বারি রসুন-২: গড় উচ্চতা ৫৬-৫৮ সেমি। প্রতি গাছে পাতার সংখ্যা ৯-১০টি। প্রতি কন্দে কোয়ার সংখ্যা ২৩-২৪ টি এবং কোয়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ১ ইঞ্চি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ও সংরক্ষণ ক্ষমতা ভালো। এর জীবনকাল ১৪৫-১৫৫ দিন এবং ফলন হেক্টর প্রতি ৭-৯ টন।
বারি রসুন-৩: এ জাতের রসুন গাছের গড় উচ্চতা ৭১-৭২ সেমি। পাতার সংখ্যা (প্রতি গাছে) ৯-১০টি। প্রতি কন্দে কোয়ার সংখ্যা ২৩-২৪টি। ভাইরাস রোগ ও পোকামাকড় সহনশীল হলেও মাঝে মাঝে পার্পল ব্লচ ও পাতা মোড়ানো রোগ দেখা দিতে পারে। জীবনকাল ১৩৫-১৪০ দিন। ফলন (হেক্টর প্রতি) ১০.৫-১১.৩১ টন।
বারি রসুন-৪: গাছের গড় উচ্চতা ৬৭-৬৮ সেমি এবং পাতার সংখ্যা প্রতি গাছে ৯-১০টি। প্রতি কন্দে কোয়ার সংখ্যা ১৭-১৮টি। ভাইরাস রোগ ও পোকামাকড় সহনশীল হলেও মাঝে মাঝে পার্পল ব্লচ ও পাতা মোড়ানো রোগ দেখা দিতে পারে। জীবনকাল ১৩০-১৪০ দিন। ফলন (হেক্টর প্রতি) ৮.০-৮.৭৮ টন।
বাউ রসুন-১: রসুনের এই জাতটি ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কিছু রোগ প্রতিরোধী। এছাড়াও এটি উচ্চ ফলনশীল এবং সংরক্ষণ গুণসম্পন্ন।
বাউ রসুন-২: এটি উচ্চ ফলনশীল ও ভাইরাস রোগ প্রতিরোধী জাত। রসুনের এ জাতের সংরক্ষণ গুণ অনেক ভালো এবং পোকা-মাকড়ের আক্রমণও কম হয়ে থাকে। একর প্রতি ফলন ৫ থেকে ৬ হাজার কেজি হয়ে থাকে।
ইটালি (দেশি জাত): রসুনের এই জাতের গাছগুলো শক্ত, চওড়া, পাতাগুলো উপরের দিকে থাকে এবং ফলন বেশি হয়।
আউশী (দেশি জাত): রসুনের এই জাতের পাতা অপেক্ষাকৃত ছোট ও চিকন। এর কন্দ আকারে ছোট এবং ঢলে পড়ে। এই জাতের ফলন কম হয়ে থাকে। এ ছাড়াও আকারে ছোট হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা ও মূল্য কম পাওয়া যায়। দেশি জাতের মধ্যে আমনী জাতের রসুনও রয়েছে।
রোপণের সময়
রসুন সাধারণত মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বরের মধ্যে রোপণ করা উত্তম।
বীজ বপনের হার
হেক্টর প্রতি ৩০০-৪০০ কেজি কোয়া বা বীজ রসুন লাগে। রসুনের কোয়ার আকার বড় হলে ফলনও বেশি হয়।
বীজ বপন
রসুনের কোয়াগুলো হাতের দু’আঙুল দিয়ে ধরে সারি থেকে সারির দূরত্ব ১৫ সেমি. রেখে প্রতি সারিতে ১০ সেমি. দূরে দূরে ৩-৪ সেমি. মাটির গভীরে লাগাতে হবে।
সার প্রয়োগ
রসুনের জমিতে হেক্টর/বিঘা প্রতি সারের পরিমাণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
সারের নাম
পরিমাণ (হেক্টর প্রতি)
পরিমাণ (বিঘা প্রতি)
গোবর
৮ টন
১ টন
ইউরিয়া
২০০ কেজি
২৫-২৬ কেজি
টিএসপি
১২৫ কেজি
১৫-১৬ কেজি
এমওপি
১০০ কেজি
১৩-১৪ কেজি
জিপসাম
১০০ কেজি
১৩-১৪ কেজি
জিংক সালফেট
২০ কেজি
২-৩ কেজি
বোরাক্স (বরিক এসিড)
১০ কেজি
১-১.৫ কেজি
সারের মাত্রা মাটির উর্বরতা বা প্রকৃতি ভেদে কম বেশি হতে পারে। এক কিস্তি ইউরিয়া এবং অন্যান্য সারের সবটুকু জমি তৈরির শেষ চাষের সময় ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া সার দুই কিস্তিতে চারা গজানোর যথাক্রমে ২৫ ও ৫০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়াও ছাই প্রয়োগ করা যাবে। কেননা ছাই দিলে মাটি আলগা থাকে এবং ফলন বেশি হয়।
আন্তঃপরিচর্যা
রসুনের চারা বৃদ্ধি পর্যায়ে জমিতে আগাছা থাকলে জমি আগাছামুক্ত করতে হবে। রসুন লাগানোর ১৫ দিন পর আগাছা বেশি হলে অর্থাৎ আগাছাগুলো নাড়ার ওপর দিয়ে উঠা শুরু করলে রনষ্টার ১ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
কন্দ গঠনের পূর্ব পর্যন্ত ২-৩ বার জমিতে নিড়ানি দিতে হবে। জমিতে ৪-৫ সেমি পুরু করে কচুরিপানা বা ধানের খড় দ্বারা মালচ প্রয়োগ করলে রসুনের ফলন ভালো হয়। এক্ষেত্রে বেশি সেচের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু মালচ ছাড়া করলে জমির প্রকারভেদে ১০-১৫ দিন পর সেচ প্রয়োগ করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ
রসুন লাগানোর ২ মাস পর থাকে কন্দ গঠন করতে শুরু করে। ৩-৩.৫ মাস পরে কন্দ পুষ্ট হতে আরম্ভ করে। এভাবে ৪-৫ মাস পরে রসুন উত্তোলন করা যাবে। রসুন গাছের পাতার অগ্রভাগ শুকিয়ে হলুদ বা বাদামি রং হয়ে গেলে রসুন তোলা যাবে। হাত দিয়ে টেনে গাছসহ রসুন তোলা হয়ে থাকে। এভাবে রসুনের কন্দগুলো ৪-৫ দিন ছায়াতে শুকানোর পর মরা পাতা কেটে সংরক্ষণ করা হয়।
ফলন
রসুনের হেক্টর প্রতি গড় ফলন ৮-১০ টন।
ফসল উত্তোলনের পর করণীয়
রসুনের কন্দগুলো ৪-৫ দিন ছায়াতে শুকিয়ে নিলে রসুনের গুণাগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে। রোদে শুকালে রসুন নরম হয়ে যেতে পারে। ফুতি পোকার লার্ভা থেকে রসুনকে রক্ষার জন্য সংরক্ষণের সময় সেভিন পাউডার ২ গ্রাম/ লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে করতে হবে। রসুন খুব ভালোভাবে পরিপক্ব করে নিয়ে জমি থেকে তুলতে হবে। কেননা অপরিপক্ব রসুন তুললে তা থেকে বীজ করা যাবে না।
বীজ হিসাবে রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি
রসুন সংগ্রহের পর ৫-৭ দিন ছায়াযুক্ত স্থানে ভালোভাবে শুকাতে হয়। একে রসুনের কিউরিং বলে। পরে পরিমাণ মতো (৪-৫ কেজি) রসুনের শুকনো গাছ দিয়ে বেনি তৈরি করে বাতাস চলাচল করে এমন ঘরে কয়েকটা বাঁশ দিয়ে তার মধ্যে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এক ঝোপা থেকে অন্য ঝোপা ফাঁকা ফাঁকা করে রাখতে হবে যাতে করে বাতাস চলাচল করতে পারে। এ ছাড়া রসুন উত্তোলনের পর পাতা ও শিকড় কেটে ব্যাগে, বাঁশের রেকে, মাচায় এবং চটের বস্তাতেও সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
সবজি চাষের সঠিক নিয়ম এবং উপায় , বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশে প্রতিনিয়ত চাষের জমি কমে যাচ্ছে। কিন্তু খাদ্যের চাহিদা বেড়েই যাচ্ছে। ফলে ফসলের সঠিক যোগান দিতে আমাদের সবজি চাষ হোক কিংবা সাধারণ ভেষজ উদ্ভিদ চাষ হোক; সঠিক উপায় মেনে চললে ভালো ফল আশা করতে পারবো।
আমরা যেসব ফলমূল রান্না করে খাই, তাদের সাধারণভাবে সবজি বলা হয়। যেমন—আলু, বেগুন, পটল, মুলা, ঝিঙে, কপি, লাউ, কুমড়া ইত্যাদি।
ঋতু বা বপনকাল অনুসারে সবজিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—গ্রীষ্মকালীন বা বর্ষাকালীন সবজি ও শীতকালীন সবজি।
সবজি চাষের সঠিক নিয়ম এবং উপায়
খারিফ সবজি
শসা, বেগুন, ঢেঁড়স, পটল, লাউ, কুমড়া, ঝিঙে, উচ্ছে প্রভৃতি সবজির চাষ গ্রীষ্মকাল বা বর্ষাকালে হয়। এদের খারিফ সবজি বলে।
রবি সবজি
ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, টম্যাটো, বীট, গাজর, শিম, মুলা প্রভৃতি সবজির চাষ শীতকালে হয়। এদের রবি সবজি বলে। হেমন্তকালে বীজ বুনে যে ফসল কৃষক বসন্তকালে ঘরে তোলে তা-ই রবিশস্য।
সবজি চাষের জন্য প্রধান উপকরণ হল জমি। সাধারণত সবজি চাষের জন্য দো-আঁশ মাটি সর্বাপেক্ষা উপযোগী। মাটিতে যেন রৌদ্র পড়ে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। সবজি চাষের জন্য যে সকল যন্ত্রপাতি প্রয়োজন সেগুলো হল—কোদাল, খুরপি, নিড়ানি, পানির ঝাঁঝরি ইত্যাদি।
সবজি চাষের জন্য কয়েক দফা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যেমন— বীজতলা কর্ষণ ও প্রস্তুত করা, বীজ বপন, চারা লাগানো, সেচ, সার প্রয়োগ, আগাছা তোলা, কীটনাশক প্রয়োগ, ফসল তোলা।
রবি সবজি -গাজর
বীজতলা ও মূল জমি প্রস্তুত করা
কিছু সবজি আছে যাদের চারা প্রস্তুত করে মূল জমিতে লাগানো হয়। সে কারণে সবজির বীজতলা প্রয়োজন। চারা উৎপাদনের উদ্দেশ্যে যে জমি নির্বাচন করা হয়, তাকে বীজতলা বলে। বীজতলার জমি পার্শ্ববর্তী জমি থেকে অন্তত ১৫ সেমি উঁচু হওয়া চাই। একটি আদর্শ বীজতলার আকৃতি হবে লম্বায় ৩০০ সেমি, এবং চওড়ায় ১২০ সেমি.। বীজতলায় যাতে অবাধ রোদ পাওয়া যায়, সেদিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। প্রতি বীজতলার চারিধারে গভীর জলনিকাশের নালা রাখা প্রয়োজন। বীজতলার মাটি বেশ নরম, উর্বর, ঝুরঝুরে হওয়া দরকার। বীজতলার মাটিকে কোদাল দিয়ে ভালোভাবে কুপিয়ে ঝুরাঝুরা করে নিতে হবে। সার হিসাবে গোবর, কম্পোস্ট সার, খৈল, অ্যামোনিয়াম সালফেট, সুপার ফসফেট ব্যবহার করা হয়। বীজতলা তৈরি হয়ে গেলে মাটি সামান্য আর্দ্র অবস্থায় থাকার সময় পাতলা করে বীজ বপন করতে হবে।
মূল জমি প্রস্তুত করা
যে জমিতে চারা লাগানো হবে সেখানকার জমি ভালোভাবে কর্ষণ করে এবং প্রয়োজনমতো সার প্রয়োগ করে জমি তৈরি করে রাখতে হবে।
বীজ বপন
ভালো পুষ্ট, রোগহীন বীজ সংগ্রহ করে বীজতলায় বপন করতে হবে। মাটি সামান্য ভিজে অবস্থায় থাকার সময় পাতলা করে বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের পর প্রত্যহ সকাল-বিকাল ঝাঁঝরি দিয়ে জল দিতে হবে। রোদের সময় বীজতলা খড়, চাটাই দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
চারা লাগানো
বীজ বপনের ১৫ দিন পর চারাগুলো এক ইঞ্চির মতন লম্বা হলে বীজতলা থেকে চারা তুলে মূল জমিতে রোপণ করতে হবে। চারা তুলবার আগে বীজতলাকে ভিজিয়ে রাখতে হবে। চারা তুলে লাগানোর উপযুক্ত সময় হল বিকেল। চারা বীজতলা থেকে ধীরে ধীরে তুলে নিয়ে নির্দিষ্ট সারি ও গাছের দূরত্ব রেখে রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের পর গোড়ার মাটি শক্ত করে চেপে দিতে হবে। পরে গোড়ায় সামান্য জল দিতে হবে।
সেচ
চারাগাছ লাগানোর ১০-১৫ দিন পর থেকে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। গাছের গোড়ায় যাতে অতিরিক্ত পানি না জমে তার জন্য নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
সার প্রয়োগ
চারা লাগানোর কিছুদিন পর থেকে গাছের গোড়ার চারপাশে ৩/৩ ইঞ্চি দূরত্বে সার প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে উপযুক্ত পরিমাণে গোবর বা পাতাপচা সার প্রয়োগ করলে মাটি খুব সরস ও সতেজ থাকে।
আগাছা দমন
সবজি গাছের চারপাশের মাটিকে হালকাভাবে কর্ষণ করে আগাছাগুলো বেছে গাছের গোড়ায় মাটি ধরিয়ে দিতে হবে। সবজি খেতে আগাছা থাকলে সবজির বৃদ্ধি কমে যায় এবং উদ্ভিদ দুর্বল হয়ে পড়ে। তার ফলে ফসল সহজেই কাঁটশত্র দ্বারা আক্রান্ত হয়। তাই জমি ও জমির আশপাশ আগাছামুক্ত রাখা একান্ত দরকার।
কীটনাশক প্রয়োগ
গাছে পোকামাকড়ের উপদ্রব হলে মাঝে মাঝে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। এতে ফলনের হার বৃদ্ধি পায়। এর পরেই নির্দিষ্ট সময়ে ফসল তোলার কাজ করতে হবে।
উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও পুষ্টি
উদ্ভিদ বৃদ্ধি ও পুষ্টির প্রয়োজনে মাটি, জল ও বাতাস থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে। উদ্ভিদের বৃদ্ধি, পুষ্টি ও দেহগঠনের জন্য মাটিতে ১৬টি খাদ্য উপাদান প্রয়োজন। এগুলোকে প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।
প্রধান বা মুখ্য খাদ্যোপাদান (Major nutrients): কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম প্রভৃতি উপাদানগুলো গাছ বেশি মাত্রায় গ্রহণ করে বলে এদের প্রধান বা মুখ্য খাদ্যোপাদান বলে। এদের মধ্যে কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, জল ও বাতাস থেকে এবং বাকিগুলো উদ্ভিদ মাটি থেকে গ্রহণ করে।
গৌণ খাদ্যোপাদান (Secondary nutrients): ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার— এই উপাদানগুলো উদ্ভিদ কিছুটা কম পরিমাণে গ্রহণ করে। এদের বলা হয় গৌণ খাদ্যোপাদান।
অণুখাদ্য উপাদান (Micro Trace elements): আয়রন, জিংক, বোরন, তামা, ম্যাঙ্গানিজ, মলিবডেনাম, ক্লোরিন- এই উপাদানগুলো অতি সামান্য পরিমাণ উদ্ভিদের প্রয়োজন হয়। এগুলোকে অণুখাদ্য উপাদান বলে।
উদ্ভিদদেহে প্রধান, গৌণ ও অণুখাদ্য সবই অপরিহার্য। কারণ এদের যেকোনও একটির অভাব ঘটলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও পুষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটে। সেজন্য এদের সকলকেই অপরিহার্য উপাদান বলে।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ অপেক্ষাকৃত নতুন একটি পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতিতে দেশে প্রচুর তরুণ উদ্যোক্তারা চাষ করছেন। তরুণ ও বেকার যুব-সমাজের কাছে এই পদ্ধতি খুবই আকর্ষণের বিষয়। কারণ, সীমিত জায়গা ও স্বল্প খরচে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায়। তাই পদ্ধতিটি বাজারে আসার পরেই তরুণ ও যুবকদের মধ্যেও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিলো। অনেকেই এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে লাভবান হয়েছেন। আবার অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন বলেও খবর বেরিয়েছে। অভিজ্ঞ জনদের মতে সঠিক দিকনির্দেশনা, আর্থিক অভাব, প্রতারণার শিকার ও মাছের পোনার সঠিক পরিচর্যা না করায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে উদ্যোক্তারা। তাই আপনাদের সবার সুবিধার্থে এই বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি একত্রে পরিবেশন করার চেষ্টা করা হল।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ
বায়োফ্লক প্রযুক্তির ইতিহাস
প্রথম বিএফটি ১৯৭০-এর দশকে ইফ্রেমার-সিওপি (ফ্রেঞ্চ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর এক্সপ্লয়টেশন অফ দ্য সি, ওশেনিক সেন্টার অফ প্যাসিফিক) পেনিয়াস মনোডন, ফেনারোপেনিয়াস মেরগুয়েনসিস, লিটোপেনিয়াস ভ্যানামেই এবং এল. স্টাইলিরোস্ট্রিসের মাছ নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ওয়াডেল মেরিকালচার সেন্টার) যথাক্রমে ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে তেলাপিয়া এবং এল. ভ্যানামেইয়ের নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন শুরু করে।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]
বায়োফ্লক প্রযুক্তি কী?
বায়োফ্লক প্রযুক্তি হলো সিস্টেমের মধ্যে কার্বন এবং নাইট্রোজেনের ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে মাছ চাষে চাষে পানির গুণমান বাড়ানোর একটি কৌশল। অন্যভাবে বলা যায় বায়োফ্লক প্রযুক্তি জল থেকে বর্জ্য অপসারণ করার একটি ব্যবস্থা।
বায়োফ্লক প্রযুক্তির অর্থ হল উপকারী ব্যাকটেরিয়া, অণুজীব ও শৈবালের সমন্বয়ে তৈরি করা পাতলা আস্তরণ, যা পানিকে শোধন করে। এই প্রযুক্তি পানি থেকে নাইট্রোজেন জাতীয় ক্ষতিকর উপাদানগুলি শোষণ করে নেয়। যার ফলে মাছ খাদ্য হিসেবে এর প্রোটিন সমৃদ্ধ উপাদান গ্রহণ করতে পারে। এই প্রযুক্তিতে যেহেতু উপকারী ব্যাকটেরিয়া (প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া) ব্যবহার করা হয়, যার ফলে এই পদ্ধতিতে পানির গুণাগুণ বৃদ্ধি ও রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চ বায়োসিকিউরিটি প্রদান করে। এই পদ্ধতিতে বিদ্যমান ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া ও বাইরে থেকে সরবরাহকৃত কার্বনকে ব্যবহার করে অণুজীব আমিষ তৈরি করে। এক্ষেত্রে বায়োফ্লক প্রযুক্তি উপকারী ব্যাকটেরিয়া মাছের অব্যবহৃত খাদ্য, মল-মূত্র থেকে নিঃসৃত অ্যামোনিয়াকে ব্যবহার করে অণুজীব প্রোটিন তৈরি করার ফলে বাহির থেকে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য কম সরবরাহ করলেও হয়।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে ছোট ছোট ট্যাংকে অনেক মাছ উৎপাদন সম্ভব হয় এবং ট্যাংকের পানি খুব কম পরিবর্তন করতে হয় তাই অল্প জমি ও অল্প পানি ব্যবহার করে অধিক মাছ উৎপাদন সম্ভব হয়। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন নেই বললেই চলে। তাই এটি একটি পরিবেশ-বান্ধব মাছ চাষ পদ্ধতি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হচ্ছে।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]
ফ্লক কি?
শৈবাল, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, বিভিন্ন ধরণের জৈব কণা যেমন মাছের মল ও অব্যবহৃত ফিড ইত্যাদির সমষ্টি। পানিতে ফ্লক একসাথে মিউকাসের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে যা ব্যাকটিরিয়া দ্বারা খাদ্যে রূপান্তরিত হয়।
বায়োফ্লক কী কাজ করে?
এই প্রযুক্ততে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয় যা উপকারী ব্যাকটেরিযা। এগুলি কেই আমরা প্রোবায়োটিক বলছি। এই প্রোবায়োটিকগুলি ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়াকে হত্যা করে।
সুতরাং পানির গুণাগুণ বজায় বজায় থাকে। জলের নাইট্রোজেনকে প্রোটিনে রূপান্তর করার ক্ষমতাও এই প্রোবায়োটিকগুলির রয়েছে।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]
বায়োফ্লক সিস্টেমের কাজ কি?
বায়োফ্লক দুটি আলোচনামূলক পরিষেবা সরবরাহ করে-
মাছকে খাওয়ানো, পুষ্টি সরবরাহ ও চিকিৎসা করা সহজ ও কম খরচ হয়।
সিস্টেমে পানি পরিবর্তন হার কম (প্রতিদিন 0.5 থেকে 1 শতাংশ)।
মাছগুলো ট্যাঙ্কে বর্জ্য উত্পাদন করে। প্রোবায়টিক/উপকারি অনুজীব এই বর্জ্যগুলিকে প্রোটিন/পুষ্টিতে রূপান্তর করে। যা মাছের জন্য উৎকৃষ্ট খাদ্য।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]
বায়োফ্লক সিস্টেম কীভাবে কাজ করে?
বায়োফ্লক প্রযুক্তি হলো একটি রিসাইকেলিং প্রক্রিয়া যেখানে পানিতে উৎপন্ন বর্জ্য খাদ্যে রুপান্তরিত হয়। পানিতে সামান্য কার্বন থাকে যা নাইট্রোজেন যুক্ত বর্জ্য পদার্থ রিসাইকেলিং করতে পারে না এজন্য কর্বনের সোর্স হিসাবে চিটাগুর ও প্রোবায়টিক ব্যবহার করা হয় যা পানিতে থাকা বর্জকে খাবারে রুপান্তরিত করে।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে কীভাবে ফ্লক বজায় রাখা যায়?
ফ্লকের পরিমাণ 30 থেকে 40 মিলি / 1000 মিলি বজায় রাখতে হবে। এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, যদি ফ্লক হ্রাস পায় তবে ট্যাঙ্কে অ্যামোনিয়া স্তর বৃদ্ধি পাবে, যদি ফ্লক বৃদ্ধি পায় তবে পানি সংবেদনশীল হয়ে উঠবে এবং মাছের শ্বাস নিতে অসুবিধা হবে। সুতরাং ফ্লক রক্ষণাবেক্ষণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
যদি ফ্লক বৃদ্ধি পায় তবে পানি পরিবর্তন করতে হবে।
যদি ফ্লক হ্রাস পায় তবে আপনার ট্যাঙ্কে সামান্য চিটাগুড়ের সাথে 25 মিলিগ্রাম প্রোবায়োটিক যুক্ত করুন।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]
বায়োফ্লোক মাছ চাষের জন্য জলে কী পরীক্ষা করা হয়?
লবনাক্ততা
টিডিএস (মোট দ্রবীভূত কঠিন)
পিএইচ (হাইড্রোজেনের শক্তি বা হাইড্রোজেনের সম্ভাব্য)
ট্যান (মোট অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন) / অ্যামোনিয়া, অ্যামোনিয়ার অধীনে আমরা এনএইচ 3 এবং এনএইচ 4 পরীক্ষা করি
তাপমাত্রা
সি: এন অনুপাত (কার্বন থেকে নাইট্রোজেন অনুপাত)
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]
টিডিএস (TDS)
টিডিএস (TDS) শব্দের পূর্ণ রূপ হলো টোটাল ডিসলভড সলিডস (Total dissolved solids (TDS)। অর্থাৎ সম্পূর্ণ দ্রভীবুত বস্তু কণা।
পানির টিডিএস (TDS) কী?
টোটাল ডিসলভড সলিডস (Total dissolved solids, TDS হলো পানিতে উপস্থিত আয়নযুক্ত বা ক্ষুদ্র কণা এবং পানিতে উপস্থিত সমস্ত অজৈব এবং জৈব পদার্থগুলির দ্রবীভূত পরিমাপ। টিডিএসকে মাঝে মাঝে প্রতি মিলিয়নে অংশ হিসাবে উল্লেখ করা হয়- parts per million (ppm)। ডিজিটাল টিডিএস মিটার দ্বারা পানির টিডিএস নির্ণয় করা যেতে পারে।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে টিডিএস কী?
পানি প্রাকৃতিক পুকুর থেকে নেওয়া উচিৎ (মিনারেল বা খনিজ পানি নয়), এরপর পানির টিডিএস পরীক্ষা করুন এটিতে সাধারণত টিডিএস স্তর 400-500 হযয়ে থাকে। পানিতে সমুদ্রের লবণ যুক্ত করুন (দ্রষ্টব্য: – আয়োডিনযুক্ত লবণ নয়) পানির টিডিএস স্তর বাড়ানোর জন্য। 1 কেজি লবণ / 1000 লিটার পানি, এই অনুপাতে। টিডিএস কিছু সময়ের পরে 1000 লিটার পানির জন্য 1000 বৃদ্ধি পাবে। 1800-1900 জলের টিডিএস নিয়ে আসা উচিত।
বায়োফ্লোক মাছ চাষের জন্য কত টিডিএস দরকার?
টিডিএস বায়োফ্লোকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, টিডিএস 1800 থেকে 2000 এর মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
টিডিএসটি যদি 1800 এর চেয়ে কম হয় তবে জলে প্রাকৃতিক কাঁচা লবণ যুক্ত করুন। কাঁচা নুন সমুদ্র থেকে প্রাপ্ত হবে এবং অপ্রসারণযোগ্য হবে।
যদি টিডিএস 2000 এর চেয়ে বেশি হয়, তবে এটিতে আরও টাটকা জল যুক্ত করুন।
বায়োফ্লোক ট্যাঙ্কে টিডিএস কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
টিডিএস যদি 1800 এর চেয়ে কম হয় তবে পানিতে প্রাকৃতিক কাঁচা লবণ যুক্ত করুন। কাঁচা নুন সমুদ্র থেকে প্রাপ্ত হবে এবং অপ্রসারণযোগ্য হবে। যদি টিডিএস 2000 এর চেয়ে বেশি হয়, তবে এটিতে আরও টাটকা জল যুক্ত করুন।
বায়োফ্লোকের জন্য টিডিএস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, টিডিএস 1800 থেকে 2000 এর মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
পিএইচ (pH)
রসায়নে, পিএইচ (pH) এর সম্পূর্ণ ফর্ম ( power of hydrogen or potential for hydrogen )। এটি একটি স্কেল বা পরিমাপের একক যা পানির অম্ল ও খারত্বের অনুপাতকে নির্দেশ করে। পানি যদি এসিটিক বা অম্লিয় হয় তাহলে পিএইচ এর মান কম হয় আর পানি খারীয় হলে পিএইচের মান বাড়ে।
পিএইচ (pH) কি?
পিএইচ হাইড্রোজেন আয়ন ঘনত্বের একটি পরিমাপ বা পানির অম্লতা বা ক্ষারত্বের একটি পরিমাপ। পিএইচ স্কেল সাধারণত 0 থেকে 14 এর মধ্যে থাকে। 25 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বা ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় পানির পিএইচ ৭ এর কম হলে এটি অম্লিয় আর ৭ এর বেশি হলে এটি ক্ষারীয় হয়।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে কত পিএইচ (pH) প্রয়োজন?
পিএইচ প্রায় 6 থেকে 8 প্রয়োজন।
দ্রষ্টব্য: – পিএইচ সমস্ত মাছের জন্য এক নয়, বিভিন্ন মাছের বিভিন্ন পিএইচ প্রয়োজন। বায়োফ্লক মাছ চাষের ক্ষেত্রে এর মান ৭ এর কম হলে তবে এটি নাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়াটিকে প্রভাবিত করতে পারে।
পানির পিএইচ কী?
মাছ চাষের জন্য pH খুবই গুরুত্বপূর্ণ। pH এর মান ৪ এর কম ও ১০ এর বশি হলে মাছ বাচতে পারে না। অপর দিকে ৬-৮ এর মধ্যে থাকলে মাছ ভালো থাকে এবং দ্রুত বাড়তে পারে।
কিভাবে বায়োফ্লকে পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়?
বায়োফ্লোকের জন্য পিএইচ মান 6 থেকে 8 এর মধ্যে বজায় রাখা উচিত। যদি পিএইচ 6 এর চেয়ে কম হয় তবে পানিতে চুন (CaCO3 বা চুনা) যুক্ত করুন। যদি পিএইচ 8 এর চেয়ে বেশি হয় তবে আরও মিঠা জল যুক্ত করুন।
আপনি কীভাবে পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করবেন?
পাতিত জল বা খাঁটি জলের একটি পিএইচ স্তর 7 থাকে যার অর্থ এটি নিরপেক্ষ।
আপনি যদি পানির পিএইচ বৃদ্ধি করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই এটিতে একটি ক্ষারযুক্ত উপাদান যেমন বেকিং পাউডার যুক্ত করতে হবে। আপনি যদি পানির পিএইচ হ্রাস করতে চান তবে আপনি এটিতে একটি অম্লীয় পদার্থ যেমন লেবুর রস যুক্ত করুন।
বায়োফ্লোক মাছ চাষে টিএএন এর পূর্ণরূপ কী?
ট্যান নামক মোট অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন, এটি মূলত অ্যামোনিয়া।
বায়োফ্লোক মাছ চাষে ট্যান কী?
ট্যান (মোট অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন) পানিতে এনএইচ 3 এবং এনএইচ 4 + আকারে মোট নাইট্রোজেনের পরিমাণ। জলে অ্যামোনিয়া (এনএইচ 3) দ্রবীভূত অ্যামোনিয়াম আয়নগুলি (এনএইচ 4 +) সহ ভারসাম্যের মধ্যে উপস্থিত থাকে। দ্রষ্টব্য: – জলজ চাষে, টিএএন ঘনত্ব অবশ্যই 0.5 মিলিগ্রাম / এল এর চেয়ে কম হওয়া উচিত।
অণুজীব দ্বারা জলে টিএন ব্যবহার করে কতটি প্রক্রিয়া?
মাইক্রো-অর্গানিজমের জলে ট্যান (মোট অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন) ব্যবহার করে বায়লফোক টু প্রসেসে। 1.সাম্যকরণ প্রক্রিয়া ২.অনুক্রমিককরণ প্রক্রিয়া
বায়োফ্লোকের মধ্যে আত্তীকরণ প্রক্রিয়াটি কী?
হিটারোট্রফিক ব্যাকটেরিয়া টিএএনকে মাইক্রোবায়াল প্রোটিনের সাথে মিলিত করে। এই প্রক্রিয়াতে উভয় নাইট্রোজেন এবং কার্বন উত্স থাকা উচিত। ভিয়েতনাম লিনহের কয়েকটি উল্লেখ অনুসারে, সি: এন> 15 অনুপাতটি হ্যাঁরোট্রফিক ব্যাকটেরিয়ার জন্য ট্যান গ্রহণের জন্য ভাল হার হিসাবে বিবেচিত হয় এবং নিম্ন স্তরে পানিতে টিএএন ঘনত্ব বজায় রাখে।
অ্যাকোয়াচারাল্ট মডেল বায়োফ্লোকে, বায়োফ্লোক কণাগুলিতে অন্যান্য জীব এবং জৈব কণাগুলির সাথে লেগে থাকা ব্যাকটিরিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
০.০ থেকে কয়েক মিমি অবধি বায়োফ্লোক কণা হ’ল খামারযুক্ত মাছ এবং চিংড়ির জন্য সরবরাহকারী প্রোটিনের উত্স।
বায়োফ্লোকের নাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়া কী?
নাইট্রিফিকেশন ট্যানকে (মোট অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন) নাইট্রেটে রূপান্তর করে। এই রূপান্তর প্রক্রিয়াতে, প্রথম ধাপে, টিএন নাইট্রাইটে রূপান্তরিত হয় (NO2-, বিষাক্ত)। এর পরে, নাইট্রাইট (NO2-) নাইট্রেটে রূপান্তরিত হয় (NO3-)। এই দুটি পদক্ষেপের জন্য ব্যাকটিরিয়া এবং অক্সিজেনের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
পানির লবণাক্ততা
লবণাক্ততা হ’ল নোনতা বা জলের শরীরে লবণের পরিমাণ। তার মানে মিঠা পানিতে কত লবণ? উদাহরণস্বরূপ, আপনার যদি 1 গ্রাম লবণ এবং এক হাজার গ্রাম জল থাকে তবে আপনার লবণাক্ততা 1 গ্রাম / কেজি বা 1 পিপিটি হয়।
পানির লবণাক্ততা কীভাবে পরিমাপ করা যায়?
পানির লবণাক্ততা বলতে পানিতে কতটা লবণের পরিমাণ রয়েছে? হাইড্রোমিটার ব্যবহার করে বা লবণাক্ততা মিটার নামে পানির লবণাক্ততা পরিমাপ করতে।
তাপমাত্রা
বায়োফ্লোক চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত তাপমাত্রা 22 থেকে 29 ডিগ্রির মধ্যে যে কোনও জায়গায়। যখন তাপমাত্রা 30 ডিগ্রির উপরে চলে যায় তখন আমার ফ্লুক নেমে আসে এবং সেখানে অ্যামোনিয়াতে বৃদ্ধি ঘটে। কিছু সময় মাছ মারা যায় তাই যখন তাপমাত্রা 31 ডিগ্রির উপরে চলে যায় তখন আমি শীতল পুকুরে মাছগুলি স্থানান্তর করতে পছন্দ করি।
অ্যামোনিয়া কি?
অ্যামোনিয়া হ’ল মৎস্য সংস্কৃতিতে উত্পন্ন বর্জ্য এবং বিষাক্ত যৌগ। অ্যামোনিয়া আপনার মাছের জন্য খুব বিপজ্জনক।
অ্যামোনিয়া কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
অ্যামোনিয়া আপনার মাছের জন্য খুব বিপজ্জনক। অ্যামোনিয়া 10: 1 কার্বন থেকে নাইট্রোজেন অনুপাত (যার অর্থ সি: এন অনুপাত) বজায় রেখে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
জেনে নিন পিএইচ হ্রাস করার পাশাপাশি জলের তাপমাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। সুতরাং আপনার কাছে নতুন জল দিয়ে জল মিশিয়ে দেওয়ার, জল ঠান্ডা করার বা পিএইচ কমিয়ে দেওয়ার পছন্দ রয়েছে।
বা ফিল্টারিং সিস্টেমের মাধ্যমে জলটি পাম্প করুন যা অ্যামোনিয়াকে ক্যাপচার করবে বা নাইট্রেটে রূপান্তর করতে জীবাণু ব্যবহার করবে (ভাল বায়ুচঞ্চলের প্রয়োজন)
বায়োফ্লোক মাছ চাষে এনএইচ 3 কী?
জলে অ্যামোনিয়াাকাল নাইট্রোজেন সর্বদা NH3 + NH4 আকারে থাকে। এনএইচ 3 (অ্যামোনিয়া) একটি গ্যাস এবং কখনও কখনও এটি বিষাক্ত বা ফ্রি অ্যামোনিয়া বলে। এই ধরণের অ্যামোনিয়া বিপজ্জনক অংশ। এটি ইউনিয়নযুক্ত অ্যামোনিয়া (এনএইচ 3) যা মাছকে মেরে ফেলে।
বায়োফ্লোক মাছ চাষে এনএইচ 4 কী?
জলে অ্যামোনিয়াাকাল নাইট্রোজেন সর্বদা NH3 + NH4 আকারে থাকে। এনএইচ 4 (অ্যামোনিয়াম) একটি নন-অ্যাটাক লবণ। এটি অ্যামোনিয়ার আয়নযুক্ত রূপ। আপনার মাছের জন্য এনএইচ 4 খুব ভাল।
কীভাবে অ্যামোনিয়া (এনএইচ 3) এবং নাইট্রাইট (এনও 2-) হ্রাস করবেন?
দ্রুততম পদ্ধতিটি হল জল পরিবর্তন করা। যখন জল পরিবর্তন করা যায় না, জলাশয়ে জলাশয় / ট্যাংকগুলিতে জৈব কার্বনের পরিপূরক প্রয়োজনীয় কারণ এটি হিটারোট্রফিক ব্যাকটিরিয়া “হজম” অ্যামোনিয়াকে সহায়তা করে। চিনি এবং গুড় জলাশয় / ট্যাঙ্কে জলের জৈব কার্বনের উত্স। এছাড়াও, অ্যানারোবিক ব্যাকটেরিয়া, স্থিতিশীল পিএইচ এবং ঘনত্বের অ্যালগাল-ব্যাকটেরিয়াগুলির পর্যাপ্ত অক্সিজেন সমর্থনকারী কার্যক্রমও নিশ্চিত করতে হবে।
প্রোবায়োটিক কী?
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে প্রোবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যাকটিরিয়া, পুষ্টি উপাদান, মাইক্রো এবং ম্যাক্রো মিনারেল এর সমষ্টি যা ফ্লক, ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মাছের উন্নত বিকাশের জন্য এটি একটি আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে, পানির গুণমান উন্নত করে এবং বজায় রাখে।
কোন ব্যাকটিরিয়া বায়োফ্লকে ব্যবহৃত হয়?
বায়োফ্লকে কিছু অণুবিক্ষণীক জীব ব্যবহার করা হয় যেমন- হেটেরোট্রফিক ব্যাকটেরিয়া (heterotrophic bacteria), শৈবাল বা শেওলা (algae), ছত্রাক (fungi), নেমাটোড (nematodes), মেটাযোয়া (metazoans), ডেট্রিটাস (detritus) ইত্যাদি। এগুলো সবই জলজ এক কোষি প্রাণি।
সি এন রেশিও
গ: এন অনুপাত বলতে সি: এন অনুপাত বলে কার্বন এবং নাইট্রোজেন অনুপাত। যদি আমরা বায়োফ্লোক ট্যাঙ্কে 1 মিলিগ্রাম অ্যামোনিয়া শেষ করি তবে আমাদের 10 মিলিগ্রাম কার্বন (10: 1) প্রয়োজন।
এফসিআর কী?
বায়োফ্লোক মাছ চাষে এফসিআর এর সম্পূর্ণ ফর্ম হ’ল ফিড রূপান্তর অনুপাত। এফসিআর (ফিড রূপান্তর অনুপাত) 1 কেজি মাছের ওজন বাড়ানোর জন্য মাছ খাওয়ার পরিমাণ।
বায়োফ্লোক মাছ চাষে এফসিআর কী?
এফসিআর (ফিড রূপান্তর অনুপাত) 1 কেজি মাছের ওজন বাড়ানোর জন্য মাছ খাওয়ার পরিমাণ। ফিড রূপান্তর অনুপাত একটি সূচক যা সাধারণত সব ধরণের কৃষিতে ব্যবহৃত হয়। এফসিআর হ’ল ফিডটি দেওয়া ফিডের ইনপুট এবং জনসংখ্যার ওজন বাড়ানোর মধ্যে গাণিতিক সম্পর্ক।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ কী?
বায়োফ্লোক ফিশ ফার্মিং, ফিশ ফার্মিংয়ের একটি লাভজনক পদ্ধতি। খোলা পুকুরের মাছ চাষের বিকল্প হিসাবে এটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি একটি স্বল্প ব্যয়যুক্ত উপায় যেখানে মাছের জন্য বিষাক্ত পদার্থ যেমন অ্যামোনিয়া, নাইট্রেট এবং নাইট্রাইটকে ফিডে রূপান্তর করা যায়। এই কৌশলটির মূলনীতি পুষ্টি পুনর্ব্যবহার করা।
বায়োফ্লোক ফিডের অতিরিক্ত উত্স দেওয়ার সময় মাছের সংস্কৃতি জল পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।
এটি একটি টেকসই এবং পরিবেশ বান্ধব প্রক্রিয়া। উচ্চ ঘনত্বে মাছ পালনের জন্য কিছু বর্জ্য পরিচালনার ব্যবস্থা প্রয়োজন। বায়োফ্লোক মূলত এটি একটি বর্জ্য চিকিত্সা সিস্টেম। একটি খামারে আগত জল থেকে রোগ প্রতিরোধের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছিল।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ কি লাভজনক?
অনেক লোক যারা বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করেছেন তারা উত্পাদন এবং লাভের উন্নতি হওয়ায় এটি থেকে প্রচুর আয় হয়েছে। এটি মাছ উত্থাপনে প্রয়োজনীয় সময়ও হ্রাস করেছে যার অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাছগুলি বহুবার বাড়ানো যায়। সুতরাং, বায়োফ্লোক প্রযুক্তি মাছ উৎপাদন এবং লালন পালনে লাভজনক।
কোন মাছ বায়োফ্লকের জন্য সবচেয়ে ভাল?
প্রায় সমস্ত বায়োফ্লক সিস্টেম চিংড়ি, তেলাপিয়া, শিং, কৈ ও কার্প মাছ বৃদ্ধি করতে ব্যবহৃত হয়।
প্রয়োজনীয় বায়োফ্লক সরঞ্জাম গুলো কি কি?
প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সমূহ-
চুন [ক্যালসিয়াম কার্বোনেট (চুনা)।] চিটাগুড় বা মোলাসেস। কাঁচা সল্ট, সমুদ্র থেকে প্রাপ্ত লবণ। প্রোবায়োটিক টাটকা পানি ফিশ ফার্মিংয়ের জন্য পিভিসি ট্যাঙ্ক / সিমেন্টের ট্যাঙ্ক বায়ুচালিত করার জন্য এরটর পাম্প
পানি প্রস্তুতি কিভাবে করতে হবে?
প্রথমে ট্যাঙ্কটি ধুয়ে নিন, ওয়াশিংয়ের পরে ট্যাঙ্কিতে জল ভরাট শুরু করুন। প্রায় 35-50% টাটকা জল দিয়ে ট্যাঙ্কটি পূরণ করুন। 50% এর বেশি পূরণ করবেন না কারণ ব্যাকটেরিয়ার বিকাশের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিবেশের প্রয়োজন। জল ভলিউমের উপর নির্ভর করে নীচে বর্ণিত অনুপাতের সাথে গ্রেডিয়েন্টগুলি যুক্ত করুন।
চুন 0.05g / লিটার, গুড় 0.1g / লিটার এবং প্রোবায়োটিক 0.03g / লিটার, যুক্ত করুন। বায়োফ্লোক ট্যাঙ্কে গ্রেডিয়েন্ট যুক্ত করা বায়োফ্লোক প্রযুক্তিটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, সুতরাং দয়া করে এই পদক্ষেপগুলি যথাযথভাবে এবং সাবধানে অনুসরণ করুন। উপরে উল্লিখিত গ্রেডিয়েন্টগুলি মিশ্রণের পরে 3-7 দিনের জন্য ট্যাঙ্কটিকে উচ্চ বায়ুতে লাগিয়ে দিন। এর মধ্যে, প্রোবায়োটিকগুলির কারণে, এটি পানিতে বর্তমান অ্যামোনিয়া ধ্বংস করতে শুরু করবে যা মাছের জন্য জলজ পরিবেশ তৈরি করতে শুরু করে। এর পরে পানির পিএইচ এবং টিডিএসের মান পরিমাপ করুন।
পিএইচ মান 6 থেকে 8 এর মধ্যে বজায় রাখতে হবে। টিডিএস 1800 থেকে 2000 এর মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। টিডিএস 1800 এর চেয়ে কম হলে পানিতে প্রাকৃতিক কাঁচা লবণ যুক্ত করুন। যদি টিডিএস 2000 এর চেয়ে বেশি হয়, তবে এটিতে আরও টাটকা পানি যুক্ত করুন। যদি পিএইচ 6 এর চেয়ে কম হয় তবে পানিতে চুন (CaCO3 বা চুনা) যুক্ত করুন। যদি পিএইচ 8 এর চেয়ে বেশি হয়, তবে আরও টাটকা জল যুক্ত করুন।
কিভাবে বায়োফ্লক মাছ চাষ শুরু করবেন?
আপনার সঠিক প্রশিক্ষণ বা দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। ট্যাঙ্ক সেটআপ / ট্যাঙ্ক নির্মাণ। ট্যাঙ্ক স্যানিটাইজ করুন বা আপনার ট্যাঙ্কটি সঠিকভাবে পরিষ্কার করুন। আপনার একটি উপাদান প্রয়োজন যা বায়োফ্লক ট্যাঙ্কে ব্যবহৃত হয়। আপনার ট্যাঙ্কে জল প্রস্তুতি। জলের প্যারামিটারগুলি যেমন- পিএইচ, টিডিএস, অ্যামোনিয়া, সি: এন রেশিও, তাপমাত্রা, লবণাক্ততা এবং আরও যে কোনও জিনিস পরীক্ষা করে দেখুন। স্টোক ফিশ বীজ। আপনার মাছ স্যানিটাইজ করুন। স্যানিটাইজ করার পরে আপনি ট্যাঙ্কে রাখতে পারেন। সমস্ত জলের পরামিতি যদি ঠিক থাকে। এরপরে আপনার মাছের আকার অনুযায়ী আপনার মাছকে পর্যায়ক্রমে খাওয়ান। সময়ে সময়ে সমস্ত প্যারামিটার জলের পরীক্ষা করুন এবং আপনার মাছের অবস্থাও পরীক্ষা করুন।
কৃষি, কৃষি শিক্ষা, কৃষি প্রশিক্ষণ, কৃষি শিল্প, কৃষি গবেষণা