Category Archives: বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি)

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি)

শুকনা ও ভিজা মাটিতে কর্ষণ ও বীজতলা তৈরি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় শুকনা ও ভিজা মাটিতে কর্ষণ ও বীজতলা তৈরি

শুকনা ও ভিজা মাটিতে কর্ষণ ও বীজতলা তৈরি

 

 

শুকনো ও ভিজা মাটিতে কর্ষণ ও বীজতলা তৈরি

মাটির আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে জমিকে শুকনো অবস্থায় কিংবা ভিজা অবস্থায় কর্ষণ করা হয় । আমাদের দেশে বছরের বিভিন্ন সময় জমির আর্দ্রতা বিভিন্ন রকম থাকে। আবার জমির অবস্থানের উপর নির্ভর করেও মাটি শুকনো অথবা ভিজা হতে পারে। জমির অবস্থান উঁচু হলে মাটির আর্দ্রতা কম থাকা স্বাভাবিক। অপর দিকে জমির অবস্থান নিচু হলে বছরের অধিকাংশ সময় তা পানি দ্বারা সিক্ত থাকতে পারে।

ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য ফসল। এটি একটি অদ্বিতীয় ফসল যা শুকনো ও ভিজা উভয় জমিতে চাষ করা যায়। এজন্য আমাদের পরিবেশ পরিস্থিতিতে শুকনো ও ভিজা জমির প্রস্তুতি সম্পর্কে বেশি। করে জানার অবকাশ রয়েছে। অথচ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেখানে ধান চাষ করা হয় না – সেখানে ভিজা জমির প্রস্তুতি ও গুণাবলী সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় ।

এদেশে সাধারণত ধান চাষের জন্য দুটি পদ্ধতিতে জমি তৈরি করা হয়। এর একটি শুকনো জমি তৈরি আর অন্যটি ভিজা কাদাময় জমি তৈরি। পৃথকভাবে এ দুটি পদ্ধতি নিচে আলোচিত হলো:

শুকনো জমি তৈরি

আউশ ধান চাষের জন্য শুকনো জমি তৈরি করে বীজ সরাসরি মাঠে বুনে দেয়া হয়। রোপা আমন বা বোরো ধান কাটার পর সাধারণত মার্চ মাসের দিকে অথবা মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিপাতের পরপরই জমিতে প্রথম লাঙল চাষ দেয়া হয়। ঐ সময়ে জমিতে যখন ‘জো’ আসে তখনই এই চাষ দেবার উৎকৃষ্ট সময়। এ সম্পর্কে কৃষি জমি ও ভূমি কর্ষণ ইউনিটে বিস্তারিত বলা হয়েছে।

আউশ ধানের বীজ সরাসরি মাঠে বোনার জন্য ৫-৬ বার লাঙল ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হয়। সাধারনত প্রতি লাঙল চাষ ও আড়াআড়ি লাঙল চাষের পরপরই মই দিতে হয়। আগাছা ও পূর্ববর্তী ফসলের আবর্জনা মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয় অথবা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়। যদি প্রথম চাষ ও বীজ বোনার সময়ের দৈর্ঘ্য খুব সংকীর্ণ হয়, তবে এসব আবর্জনা জোগাড় করে পুড়িয়ে ফেলাই ভাল। তা না হলে আবর্জনা পচনের সময় অঙ্কুরিত চারার তি করতে পারে। বীজের সঙ্গে মাটির সংযুক্তি নিবিড় হওয়ার জন্য জমির কর্ষাবস্থা উত্তম হওয়া উচিত। যদি বীজ বোনার পরপরই বৃষ্টি হয় তাহলে বীজ ও মাটির সংযুক্তি সমস্যা দেয়া দেয় না ।

আউশ ধানের জন্য শুকনো কর্ষিত জমিতে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা উচিত:

১. ভালো হতে মাঝারি ধরনের কর্ষাবস্থা থাকতে হবে যার ফলে বীজ নিবিড়ভাবে মাটির সাথে সংযুক্ত থাকে এবং এর অংকুরোদগম সহজতর হয় ।

২. শিকড় মাটিতে ভালোভাবে বিস্তার লাভের জন্য কর্ষণের প্রয়োজনীয় গভীরতা বজায় থাকতে হবে।

৩. জমিকে আগাছা ও পূর্ববর্তী ফসলের আবর্জনা থেকে মুক্ত রাখতে হবে।

৪. মাঝারি নিচু জমিতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য ‘আইল’ থাকা উচিত।

৫. কর্ষণের পর জমিতে কোন অকর্ষিত ফালি থাকবে না

৬. বীজের অঙ্কুরোদগম ও চারা বৃদ্ধির জন্য মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকতে হবে।

ভিজা কাদাময় জমি তৈরি

রোপা আমন ও বোরো ধান চাষের জন্য ভিজা কাদাময় জমি তৈরি করা হয়। জমিতে ৪-৫ বার আড়াআড়ি লাঙ্গল চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করা হয়। প্রথম ২ বার লাঙল চাষ ও মই দেয়া হয় জমিতে জৈব পদার্থ, আগাছা ও অন্যান্য আবর্জনা মাটির সাথে মিশিয়ে দেবার জন্য। একে জাবর দেয়া বলা হয়। এরপর নরম কাদাময় জমি তৈরির জন্য পরবর্তী চাষগুলো দেয়া হয়।

রোপা আমন ধানের জন্য কমপ ে রোপণের ১৫ দিন পূর্বে চাষ শুরু করা উচিত। এই সময়ের মধ্যে জৈব পদার্থ পঁচে এমন একটা অবস্থায় আসে যখন পচনশীল জৈব পদার্থ হতে অ্যামোনিয়া নির্গত হয় যা রোপণকৃত চারার জন্য গ্রহন উপযোগী ।

আর যদি সময় ১৫ দিনের কম হয় তাহলে আংশিক পচনশীল জৈব পদার্থ হতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, জৈব এসিড এবং অন্যান্য অবায়বীয় পচনশীল দ্রব্য নির্গত হতে পারে যা রোপণকৃত চারার জন্য তিকর হতে পারে। বোরো মৌসুমে এ সময়ের দৈর্ঘ্য ১৫ দিনের বেশি হওয়া উচিত। কেননা এই সময় অর্থাৎ ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে তাপমাত্রা কম থাকায় জৈব পদার্থ পচনের হার কম হয়ে থাকে।

ভিজা কাদাময় মাটি তৈরির সময় জমিতে পানির উচ্চতা কম থাকা উচিত। এ ধরণের জমিতে লাঙল চাষ ও মই দিয়ে থকথকে কাদাময় জমি তৈরি করা যায়। আর যদি অধিক পানির জন্য জমি ডুবে থাকে তাহলে চাষী লাঙল ফালির সঠিক স্থান ঠিক দেখতে পারে না। ফলে অকর্ষিত জমির ফালি থেকে যেতে পারে এবং ভালোভাবে জমি তৈরি হয় না।

ভালোভাবে তৈরি ভিজা কাদাময় জমির নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা উচিত :

১. জৈব পদার্থ যেমন- আগাছা, পূর্ববর্তী ফসলের খড় ও আবর্জনা সম্পূর্ণভাবে পচে মাটির সাথে মিশে যায়।

২. জমি কর্দমাক্ত এবং সুষমভাবে জমিতে পানি বিরাজ করে।

৩. আইল শক্তভাবে বাঁধা থাকবে এবং স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ও সেচের পানির উপচে পড়া বাধাগ্রস্থ হবে।

৪. পানির গভীরতা এরকম থাকবে যাতে রোপণের পর চারা ডুবে না যায়।

৫. মাটি থকথকে কাদাযুক্ত হলে চারা রোপণ সহজতর হবে।

৬. জমিতে পানি ধরে রাখার জন্য শক্ত লাঙল স্তরে (Plough pan) কোন ভাঙ্গনের সৃষ্টি হবে না ।

ছক ১: শুকনো ও ভিজা মাটিতে জমি তৈরির তুলনামূলক চিত্র

 

 

জমিতে বীজ বপন ও চারা রোপণের জন্য জমি তৈরি ছাড়াও ধানের চারা তৈরিতে শুকনো ও ভিজা উভয় পদ্ধতিতেই বীজতলা তৈরি করা হয়। ধানের চারা তৈরির জন্য বীজতলা তৈরি সম্পর্কিত তত্ত্ব ও তথ্য ৩.৭ নং ব্যবহারিক পাঠে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।

মাটির প্রকৃতি অনুসারে ভূমিকর্ষণ ও জমি তৈরির নীতিমালা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় মাটির প্রকৃতি অনুসারে ভূমিকর্ষণ ও জমি তৈরির নীতিমালা

মাটির প্রকৃতি অনুসারে ভূমিকর্ষণ ও জমি তৈরির নীতিমালা

 

 

মাটির প্রকৃতি অনুসারে ভূমি কর্ষণ ও জমি তৈরির নীতিমালা

সব মাটিতে সব রকম ফসল ফলানো যায় না। ফসল ফলানোর উদ্দেশ্যেই ভূমি কর্ষণ করা হয়। তাই মাটির প্রকৃতি অনুসারে ভূমি কর্ষণ করা উচিত। ভূমি কর্ষণের জন্য নিম্নলিখিত নীতিমালা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়।

মাটির বুনট ও গঠন (Soil texture and Structure)

মাটির বুনট তথা মাটিতে বালি, পলি, কর্দম কণা ইত্যাদির উপস্থিতি কতটা আছে তা নির্ণয় করে ভূমি কর্ষণ করা উচিত। মাটির বুনট সম্পর্কে ধারণা থাকলে জমিতে কোন ধরণের ফসলের চাষ করা যাবে তা নির্বাচনে সাহায্য করে। কেননা, যে কোন মাটিতে যে কোন ফসল চাষ করা যায় না। বালি মাটির কণাগুলো বেশ বড়। বালি মাটির দলা গঠন মতা খুব কম ।

এ মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ খুব কম এবং মাটি ফসল উৎপাদনের জন্য উপযোগী নয়। পান্তরে এঁটেল মাটির কণাগুলো খুব ছোট, এর গঠন খুব শক্ত। এঁটেল মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে। এ রকম মাটির পানি ধারণ মতা অনেক বেশি। এ জন্য ফসলের চাষ করতে হলে এঁটেল মাটি থেকে পানি নিষ্কাশনের ভাল ব্যবস্থা থাকা দরকার।

ভিজে অবস্থায় এঁটেল মাটি মাখনের মত নরম হয় এবং কাদা সৃষ্টি করে। কাদা মাটিতে ভূমি কর্ষণ কষ্টকর। কাদা মাটি শুকিয়ে গেলে এমন শক্ত হয় যে লাগুল চালানো বেশ কষ্টকর হয়ে পরে। তবে ধান চাষের জন্য এঁটেল মাটি বেশ উপযোগী। কাদা মাটির উর্বরতা সংর ণ মতা বেশি এবং সেখানে সূJ জীবাণুর কার্যকলাপের হারও বেশি। তাই এ মাটিতে বিশেষ সার প্রয়োগ না করেও ফসল চাষ করা যায়।

যে মাটিতে বালি, পলি ও কাদার ভাগ প্রায় সমান অনুপাতে থাকে, সেই মাটিকে দো-আঁশ মাটি বলে। এ মাটির গঠন, পানি ও জৈব পদার্থের ধারণ মতা এবং বুনটের আকার মাঝারি ধরণের। দো-আঁশ মাটিতে ভূমি কর্ষণ বেশ সহজ। বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা যদি অনুকূল থাকে; রোগ-বালাই, আগাছা ইত্যাদি যদি সময়মত দমন বা প্রতিরোধ করা যায়, তবে দো-আঁশ মাটিতে যে কোন ফসল জন্মানো যেতে পারে।

মাটির বন্ধুরতা (Soil roughness )

যে মাটির উপরিভাগ যত সমতল, সে মাটিতে তত বেশি ফাঁক, ফাটল, চিড় ও গর্ত থাকার দরুন প্রবাহমান পানি (Run off water) কম গড়াবে। সাধারনত সমতল মাটির পানির পরিশোষণ মতা বেশী।

 

চিত্র – ১: ভূমি য়ে মাটির বন্ধুরতার প্রভাব (জনসন ও অন্যান্য, ১৯৭৯)

এ ধারণা থেকে সংর ণ ভূমি কর্ষণ ধারণার উদ্ভব হয়েছে। যদি ফসলের অবশিষ্টাংশ অথবা অন্যান্য জাবরা জাতীয় পদার্থ মাটির উপরে থাকে তাহলে বৃষ্টির পানির প্রবাহে সমতল জমির ভূমি য় কম হয়, ফলে মাটির সংর ণ সহজতর হয়।

ভূমি কর্ষণের দিক (Direction of tillage )

ঢালু জমিতে ফসল বপন ও রোপণ, ভূমি কর্ষণ ইত্যাদি কাজ উপর-নিচ (Up and Down) দিকে না করে আড়াআড়িভাবে (Across করলে ভূমি য় অনেকাংশে কমানো যায়। সংর ণ ভূমি কর্ষণের েত্রে বাটালি চাষ (Chisel ploughing)* উপর-নিচ দিকে না করে আড়াআড়িভাবে চাষ করলে মাটির য় কম হয় ।

 

চিত্র – ২ : ভূমি কর্ষণের দিকের জন্য প্রচলিত ও সংরণ ভূমি কর্ষণে মাটির য়।

বাটালি চাষ (Chisel ploughing): এ পদ্ধতিতে একটি বিশেষ ছুরি আকৃতির যন্ত্রের (বাটালি) সাহায্যে শক্ত মাটির স্তরকে ভেঙ্গে দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে, বাটালি চাষে সাধারণত বেশি গভীরতার (৩০-৬০ সে.মি) মাটির স্তর ভাঙ্গা হয় কিন্তু মাটিকে উল্টিয়ে দেয়া হয় না। ২ নং রেখাচিত্রে দেখানো হয়েছে যে প্রচলিত ভূমিকর্ষণে বাটালি চাষের চেয়ে অনেক বেশি মাটির য়
হয়। আড়াআড়ি চাষে মাটির য় প্রায় অর্ধেক। আড়াআড়ি বাটালি চাষে মাটির য় একেবারেই কম।

বালাই দমন

ভূমি কর্ষণের মাত্রার উপর (Degree of tillage) বালাই দমন অনেকাংশে নির্ভরশীল। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, সংর ণ ভূমি কর্ষণ পদ্ধতিতে আগাছা, পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই দমনের জন্য রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার (Chemical control) উপর সমধিক নির্ভরশীল হতে হয়। সংর ণ ভূমিকর্ষণ পদ্ধতিতে অধিক পরিমাণে ফসলের অবশিষ্টাংশ মাটিতে থাকায় আগাছানাশকের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।

এ রকম ভূমি কর্ষণে চাষের মাত্রা কম থাকায় বিভিন্ন প্রকার বালাই (Pest) ময়লা আবর্জনায় বেঁচে থাকতে পারে এবং পরবর্তী মৌসুমে বালাইয়ের উপদ্রব তীব্র হতে পারে। ধান চাষে মাজরা পোকা (Stem borer) দমনের েত্রে এ রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মাটির বুনট ও আর্দ্রতা অনুসারে মাটির চাষোপযোগিতা নির্ণয়

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় মাটির বুনট ও আর্দ্রতা অনুসারে মাটির চাষোপযোগিতা নির্ণয়

মাটির বুনট ও আর্দ্রতা অনুসারে মাটির চাষোপযোগিতা নির্ণয়

 

 

মাটির বুনট ও আর্দ্রতা অনুসারে মাটির চাষোপযোগিতা নির্ণয়

প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাটি প্রাকৃতিক বস্তু। মাটি হলো উদ্ভিদ জন্মানোর প্রধান মাধ্যম। এ মাটি খনিজ দ্রব্য, পানি, বায়ু ও জৈব পদার্থের সমন্বয়ে একটি যৌগিক পদার্থ। মাটির উর্বরতা নির্ভর করে মাটির গঠন, বুনট বা গ্রথন, রস ধারণ মতা ইত্যাদির উপর। মাটির বুনট, অম্লত্ব, রিত্ব, দানাবন্ধন এবং জৈব পদার্থের পরিমাণ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে মাটিতে কোন্ ফসল চাষ করা যাবে।

ফসল উৎপাদনের সঙ্গে মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন মতা নিবিড়ভাবে জড়িত। কৃষি উৎপাদনে সফলতা ও দ তা অর্জনের জন্য মাটির বুনট ও মাটির আর্দ্রতা বিশেষণের মাধ্যমে বুনট ও আর্দ্রতা নির্ধারণ ছাড়াও অভিজ্ঞতা নির্ভর পদ্ধতিতে এ সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব। হাতের অনুভূতির মাধ্যমে এ সম্পর্কে জানার জন্য মাটি পরী া পদ্ধতি নিচে আলোচনা করা হলো।

সংজ্ঞা:

কোন মৃত্তিকায় বর্তমান বালি, পলি ও কর্দম কণার আপে িক অনুপাতকে মাটির বুনট বলে।জমি চাষ করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ মাটির আর্দ্রতাকে মাটির ‘জো’ আসা বলে। কৃষি বিজ্ঞানে একে ‘মাঠ মতা’ (Field capacity) বলে ।

তত্ত্ব (Theory)

১. কোন মাটিতে কোন প্রকারের কণা কী পরিমাণ আছে তা জানতে পারলে এটি কোন শ্রেনীর মাটি তা বুঝা যায়। মাটির বিভিন্ন প্রকার কণা বিভিন্ন অনুপাতে মিশে পারস্পরিক সমন্বয়ে বিভিন্ন শ্রেণির মাটি সৃষ্টি করে। যেমন- দো-আঁশ মাটি, বেলে দো-আঁশ মাটি, এঁটেল দো-আঁশ মাটি ইত্যাদি।

2. মাটির আর্দ্রতা জেনে চাষোপযোগিতা নির্ণয় করা।

কাজের ধারা

মাটির বুনট নির্ণয়

মাঠ থেকে সংগৃহীত নমুনা সম হের প্রত্যেকটির ৫০ গ্রাম করে আলাদা আলাদাভাবে হাতের তালুতে নিয়ে পানি দ্বারা সিক্ত করুন। তারপর এই সিক্ত মাটি হাতের সাহায্যে বল, সোজা স্তম্ভক, চক্র প্রভৃতি আকৃতি দেয়ার চেষ্টা করুন ।

 

মন্তব্য :

মাটির বুনট নির্ধারণ করে সে অনুসারে ফসল চাষ করলে অধিক ফসল উৎপাদন নিশ্চিত হবে।

মাটির আর্দ্রতা অনুসারে মাটির চাষোপযোগিতা নির্ণয়

এক খন্ড চাষযোগ্য জমিতে গিয়ে এক মুঠি মাটি হাতে নিন। এ মাটি দুই হাতের তালুর সাহায্যে চাপ দিন। যদি এই চাপ দেয়া মাটি চাপ খাওয়া অবস্থায় না থাকে তবে সে মাটিতে ‘জো’ আসে নাই। আর যদি চাপ খাওয়া অবস্থায়ই থাকে তাহলে দুই হাতের তালুর সাহায্যে মাটির বল তৈরি করুন।

এখন মাটির তৈরি এই বলটিকে এক মিটার উঁচু থেকে সাধারণ শক্ত মাটির উপর আস্তে ছেড়ে দিন। ছেড়ে দেবার সময় কোন প্রকার বল প্রয়োগ কিংবা উচ্চতা এক মিটারের কম বা বেশি হওয়া উচিত নয় ।

 

 

সিদ্ধান্ত:

‘জো’ আসা অবস্থায় জমি চাষ করলে মাটি সহজে চাষ করা যাবে, মাটিতে বড় বড় টিলা তৈরি হবে না এবং কর্ষণের কাজে সময় কম লাগবে।

 

ভূমিকর্ষণ পদ্ধতি, মাটির আর্দ্রতা ও ভূমিকর্ষণের সময়

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ভূমিকর্ষণ পদ্ধতি, মাটির আর্দ্রতা ও ভূমিকর্ষণের সময়

ভূমিকর্ষণ পদ্ধতি, মাটির আর্দ্রতা ও ভূমিকর্ষণের সময়

 

 

ভূমি কর্ষণ পদ্ধতি, মাটির আর্দ্রতা ও ভূমি কর্ষণের সময়

সাফল্যজনকভাবে ফসল উৎপাদনের একটি অন্যতম পূর্ব শর্ত হলো ভূমি কর্ষণ। ভূমি কর্ষণ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। জমির ভৌত অবস্থা, আর্দ্রতার পরিমাণ, কর্ষণের সময়, শ্রমিকের পর্যপ্ততা, ভূমির বন্ধুরতা প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে ভূমি কর্ষণের ধরন নির্ধারণ করা হয়।
ভূমি কর্ষণকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা হয় যথা:

প্রাথমিক কর্ষণ (Primary tillage)

ফসল মাঠ থেকে সংগ্রহের পর ঐ মাঠে পরবর্তী ফসলের বীজ বোনা ও চারা রোপণের পূর্ব পর্যন্ত যে সমস্ত কর্ষণ কাজ করা হয় তাকে সাধারণ কর্ষণ/পূর্ব কর্ষণ বা প্রাথমিক কর্ষণ বলে। এ কর্ষণ কাজে মাটি বেশ ভালোভাবে তুলনামূলকভাবে বেশি গভীরতায় আলোড়িত হয়। এতে ব্যবহৃত লালসমূহ ভারি ও বড় আকারের হতে হয়। জমির আকার ছোট হওয়ার জন্য লাঙল ঘুরাতে অসুবিধা হলে বড় আকারের কোদাল দ্বারাও প্রাথমিক কর্ষণ কাজ করা যায়।

আন্ত:কর্ষণ/মাধ্যমিক কর্ষণ (Inter tillage)

এ কর্ষণ কাজ করা হয় বীজ বপন বা চারা রোপণের পর থেকে আরম্ভ করে ফসল সংগ্রহ করা পর্যন্ত। জমির ঢেলা গুঁড়ো করা, আগাছা পরিষ্কার করা, আঁচড়া দেয়া, গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দেয়া ইত্যাদি কাজকে আন্ত: কর্ষণ বলা হয়। ভূমি কর্ষণের পুরাতন ও নতুন ধারণার আলোকে দুটো কর্ষণ পদ্ধতির অবতারণা হয়েছে:

 প্রচলিত ভূমি কর্ষণ পদ্ধতি (Conventional tillage)

এ পদ্ধতিতে জমিকে বিভিন্ন রকম ভূমি কর্ষণ যন্ত্রপাতি দিয়ে চাষ করা হয়। আমাদের দেশে এ পদ্ধতিই প্রচলিত।

রণশীল ভূমি কর্ষণ পদ্ধতি (Conservation tillage)

এ পদ্ধতিতে কর্ষণ সম্পন্ন করতে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে ন্যূনতম লাঙল চাষ ও মই দেয়া হয়। এখানে রাসায়নিক উপায়ে বালাই দমনের উপর বিশেষ জোর দেয়া হয়। আমাদের দেশে এ পদ্ধতির ব্যবহার একেবারেই কম। বিদেশে এ পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন রকম যন্ত্রপাতির সাহায্যে মাটিকে যথাসম্ভব কম আলোড়িত করে মাটির গঠনকে অণ্ণ রেখে চাষ করা হয়।

রণশীল ভূমি কর্ষণের সুবিধা ও অসুবিধা

সুবিধা ( Advantages)

১. মাটির গঠন (Structure) উন্নত করে এবং জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ।

২. জ্বালানি, শ্রমিক ও যন্ত্রপাতির খরচ বাঁচে।

৩. মাটির য়রোধ করে এবং প্রবহমান পানির (Run off water) গুণাগুণ বৃদ্ধি করে।

৪. মাটির কর্ষাবস্থা এবং মাটি হতে গাছের পানি উত্তোলন মতা সঠিক রাখে বা উন্নত করে।

৫. ফসলের ফলন প্রচলিত ভূমি কর্ষণের মতই হয়।

৬. মাটিতে অনুজীবের বৃদ্ধি ঘটিয়ে মাটির জৈবিক অবস্থার উন্নতি ঘটায়।

অসুবিধা (Disadvantage)

১. বিভিন্ন প্রকার অথবা বিশেষ ধরণের ভূমি কর্ষণ যন্ত্রপাতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় ।

২. সাধারণত রাসায়নিকভাবে ফসলের বালাই দমনের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ে। রাসায়নিক আগাছা দমন পদ্ধতি অকার্যকর হলে আগাছার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যেতে পারে।

৩. প্রচলিত ভূমি কর্ষণের তুলনায় এ পদ্ধতিতে চুন, সার ও আগাছানাশক (Weedicide) মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যায় না।

৪. নাইট্রোজেন ও সালফার জাতীয় সারের সহজলভ্যতা কমে যাওয়ায় বেশি সার প্রয়োগ করতে হয়।

৫. মাটির pH কমে যায়। ফলে বেশি জৈব পদার্থ ও চুন প্রয়োগ করতে হয় ।

৬. অনেক সময় ফসলের বপন ও রোপণ সময় পিছিয়ে যায়।

 

মাটির আর্দ্রতা ও ভূমি কর্ষণের সময়

জমি চাষবিহীন অবস্থায় থাকলে এর উপরিভাগ শক্ত থাকে। ফলে বৃষ্টির পানি সহজে মাটির ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না এবং বৃষ্টির পানি প্রবাহমান হয়ে গড়িয়ে যায়। ভূমি কর্ষণের মাধ্যমে জমির উপরিভাগের মাটি আলগা করা হয়। ফলে বৃষ্টির পানি মাটিতে প্রবেশ করে এবং আস্তে আস্তে মাটি এই পানি শোষণ করে নেয়। যথাযথভাবে ভূমি কর্ষণের ফলে মাটির দানাগুলো সুসংগঠিত হয়ে মাটির গঠন তৈরি করে এবং মাটির পানি ধারণমতা বৃদ্ধি পায়।

এই সুসংগঠিত মাটি যেমন পানি শোষন করে ধরে রাখতে পারে তেমনি দানার ফাঁকে ফাঁকে বায়ুও অবস্থান করতে পারে। ফসলের বৃদ্ধির জন্য মাটির এই আর্দ্রতা ও বায়ু উভয়েরই প্রয়োজন। মাটির আর্দ্রতা ও ভূমি কর্ষণের সময়- এ দুটি বিষয় সম্পর্কে কৃষকের সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন । জমির আর্দ্রতা অনুসারে ভূমি কর্ষণ করতে হয়। জমির সঠিক আর্দ্রতায় ভূমি কর্ষণ না করলে ভাল কর্ষাবস্থার সৃষ্ট হয় না।

জমি চাষ করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ মাটির আর্দ্রতাকে ‘জো’ অবস্থা বলা হয়। মাটির ‘জো’ অবস্থা বুঝে প্রথম চাষ দিতে হয়। একেই কৃষিবিদগণ ‘মাঠ মতা’ (Field capacity) বলেন। এটি এমন একটি অবস্থা যখন মাটির সুJ ফাঁকগুলো (Micropores) পানি দ্বারা পূর্ণ থাকে এবং একটু বড় ফাঁকগুলো (Macropores) বাতাস দ্বারা পূর্ণ থাকে ।

সঠিকভাবে এক খন্ড জমির মাঠ মতা নির্ণয় করতে হলে মাঠটিকে পূর্ণ সেচ দিয়ে একটি ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। মাটির বাষ্পীভবন রোধ করার জন্য মাঠটিকে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। তাতে মাটির সঠিক আর্দ্রতার পরিমাণ জানা সম্ভব। মুক্ত নিষ্কাশনের মাধ্যমে এ মাটি থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশিত হয়ে যাবে। এই মুক্ত নিষ্কাশিত মাটিতে পানি ও বায়ু একটা সমতায় আসবে।

এ ছাড়াও কয়েক কেজি মাটিকে ভালভাবে ভিজিয়ে এক খন্ড কাপড় কিংবা বস্তায় ঝুলিয়ে রেখেও মাঠ মতা নির্ণয় করা সম্ভব। ভিজা মাটি এ রকম ঝুলিয়ে রাখলে অতিরিক্ত পানি ঝরে পরে যাবে এবং মাটির সুন ও বড় ফাঁকগুলো পানি ও বাতাস দ্বারা পূর্ণ হয়ে একটা সমতায় আসবে, যখন পানি আর ঝরে পরবে না। মাঠ পর্যায়ে চাষীরা হাতের অনুভূতির মাধ্যমে মাটির এই ‘মাঠ মতা’ বা ‘জো’ অবস্থা নির্ণয় করে থাকে।

এ পদ্ধতিতে এক মুঠি মাটি হাতে নিয়ে চাপ দেয়ার পর ছেড়ে দিলে যদি দেখা যায় তা চাপ খাওয়া আকৃতিতেই রয়েছে তাহলে এ মাটিকে ‘জো’ পরী ার পরবর্তী পদ েপে যেতে হবে। হাতের চাপে ঐ মাটি দিয়ে মাটির বল তৈরি করে ১ মিটার উঁচু থেকে সাধারণ শক্ত মাটির উপর আস্তে ছেড়ে দিতে হবে। ছেড়ে দেবার সময় বল প্রয়োগ কিংবা ১ মিটারের কম বা বেশি হওয়া উচিত নয়।

তৈরি বলটি মাটিতে পতনের পর যদি দেখা যায় যে তা চাপ খাওয়া অবস্থায় রয়েছে তাহলে বুঝতে হবে মাটিতে কর্ষণ উপযোগী ‘জো’ আসে নাই। এ অবস্থায় জমি চাষ করলে লাঙলে মাটি আটকে যাবে, ফালির মাটি উল্টাবে না এবং কর্ষণের কাজে সময় বেশি নেবে। এ রকম অবস্থায় ভূমি কর্ষণে মাটির গঠন নষ্ট হয়ে যায়। আর যদি পতিত বলটি ভেঙ্গে ছড়িয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে মাটিতে ‘জো’ এসেছে।

 

 

অভিজ্ঞ চাষীরা জমির মাটিকে এ রকম মুঠির মাধ্যমে বল তৈরির পরী । না করেও জমির উপর দিয়ে হেঁটে গিয়েই বুঝতে পারে জমিতে ‘জো’ এসেছে কিনা ? ভিজা জমিতে কাদা চাষের (Puddling) জন্য মাটিতে ‘জো’ আসার প্রয়োজন নেই। যে কোন সময় কাদা করার জন্য জমি চাষ করা যেতে পারে। তাই আউশ ধান ও পাট ফসল কর্তনের পর ভিজা জমি প্রথম বার কর্ষণ করলে ফসলের অবশিষ্টাংশ মাটিতে মিশে যায় এবং জৈব সারে পরিণত হয়।

কৃষি জমি ও ভূমিকর্ষণের ধারণা ও উদ্দেশ্য

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় কৃষি জমি ও ভূমিকর্ষণের ধারণা ও উদ্দেশ্য

কৃষি জমি ও ভূমিকর্ষণের ধারণা ও উদ্দেশ্য

 

কৃষি জমি ও ভূমি কর্ষণের ধারণা ও উদ্দেশ্য

বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এদেশে মোট জমির পরিমাণ ১,৪৭,০৩,০০০ হেক্টর। আবাদযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ ১,১৪,৯৭,০০০ হেক্টর এবং আবাদী জমির পরিমাণ ১,০৮,৩৩,০০০ হেক্টর। এ কৃষি জমি আবার উচ্চভূমি, মাঝারি উচ্চভূমি, মধ্যম জমি, মাঝারি নিচু এবং নিচু প্রভৃতি শ্রেণিতে বিভক্ত। উচ্চ ভূমিগুলো কোন সময়ই প্লাবন দ্বারা প্লাবিত হয় না।

আবার নিচু জমি বছরের কয়েক মাস পানির নিচে থাকে। কাজেই ভূমির উচ্চতার ওপর নির্ভর করে কৃষি জমি চাষাবাদ করা হয়। কৃষি জমিগুলোতে বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হয়। কোন ফসলের পানির চাহিদা বেশি আবার কোনটির কম। ভূমি কর্ষণ করে মাটিতে বিভিন্ন মাত্রায় পানি সংরণ করা সম্ভব। বিভিন্ন ফসলের বীজ আবার বিভিন্ন রকম। কোনটির বীজ খুবই ছোট আবার কোনটি বেশ বড়।

বীজের আকার অনুযায়ী ভূমি কর্ষণ প্রয়োজন। বাংলাদেশে বছরে গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ২০৩ সে.মি.। বৃষ্টিপাত বছরের সব সময় সমানভাবে হয়না। দেশের সব জায়গায়ও বৃষ্টিপাত সমানভাবে পতিত হয় না। কাজেই বছরের বিভিন্ন সময় ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম আর্দ্রতা জমিতে বিরাজ করে। সেজন্য বিভিন্ন রকম জমিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম ভূমি কর্ষণ প্রয়োজন।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাটি এক রকম নয়। কোন এলাকার মাটি বেলে, কোথাও এঁটেল আবার কোথাও বা দো-আঁশ মাটি। মাটির অম্লত্ব ও ারত্বও বিভিন্ন রকম। কাজেই ভূমি কর্ষণও বিভিন্ন রকম জমিতে বিভিন্ন রকম হওয়া যুক্তিযুক্ত। এসব বিচারে বাংলাদেশের কৃষি জমি সম্পর্কে ও তাদের ভূমিকর্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন প্রয়োজন। বিভিন্ন জমিতে মাটির বিভিন্ন বুনট ও গঠন পরিলতি হয়।

মাটির বুনট ও গঠনভেদে ভূমি কর্ষণ ফসলের ফলনকে অনেকাংশে প্রভাবিত করে। অনেক সময় অতিরিক্ত ভূমিকর্ষণ করে মাটির ভৌত গুণাবলী নষ্ট করা হয়। কাজেই কৃষি জমিতে মাটির গঠনকে সঠিক রেখে ভূমিকর্ষণ করা উচিত। এজন্য টেকসই ভূমি কর্ষণের ধারণা প্রবর্তিত হয়েছে। সচরাচর পদ্ধতির ভূমি কর্ষণের চেয়ে টেকসই ভূমি কর্ষণ ধারণার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

সঠিকভাবে ভূমি কর্ষণ করে কৃষি জমির বিভিন্ন ভৌত গুণাবলী উন্নত করা যায়। কিছু কিছু কৃষি জমিতে মাঝে মাঝে বিষাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মাটিতে জন্মে এ পরিবেশের সৃষ্টি করে। জমি গভীরভাবে চাষ করলে মাটি ওলট পালট হয়ে বিষাক্ত পদার্থ মাটির উপরে এসে সূর্যালোক, তাপ ও বায়ুর প্রভাবে এসব বিষক্রিয়া অনেকাংশে দুরীভূত হয়।

চাষের ফলে অনেক পোকা-মাকড়, ডিম ও কীড়া মাটির উপরে এসে মারা যায়। সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলে প্লাবনের ফলে লবণাক্ততা দেখা দিলে গভীর চাষ ও প্রচুর পানি সরবরাহ করলে লবণ মিশ্রিত পানি মাটির নিম্নস্তরে চুয়ে লবণাক্ততা হ্রাস পায় এবং এভাবে কৃষি জমির উন্নয়ন সাধন সম্ভব হয়।

জৈব পদার্থের পরিমাণের উপর মাটির গুণাগুণ অনেকাংশে নির্ভর করে। সবুজ সার প্রস্তুতের জন্য মাটিকে গভীরভাবে চাষ করলে সবুজ সার শস্য (Green manuring crop) মাটির সাথে ভালভাবে মিশে যায় এবং কৃষি জমির উন্নয়ন হয়। অনেক কৃষি জমি ক্রমাগত চাষের ফলে শক্ত লাঙল স্তরের (Plough pan) সৃষ্টি হয়। ফলে জমিতে পানি জমে থাকে। ভূমি কর্ষণের মাধ্যমে এ রকম লাঙল স্তর ভেঙ্গে দিয়ে কৃষি জমির উন্নয়ন ঘটানো যায়।

ভূমি কর্ষণকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। শস্যের বীজ মাটিতে সুষ্ঠুভাবে বপন ও তার অঙ্কুরোদগম, চারা রোপণ এবং গাছের বৃদ্ধি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য মাটিতে ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে অনুকূল অবস্থা তৈরি কল্পে কৃষি যন্ত্রপাতি দ্বারা মাটির আলোড়নকে ভূমি কর্ষণ বলে ।

অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে (১৭৩৯) জেথ্রোটাল নামে একজন ব্রিটিশ কৃষিবিদ পশুশক্তি দ্বারা লাঙল চালিয়ে কীভাবে উত্তমরূপে জমি চাষ করে ফসল উৎপাদন করা যায় তা দেখান। তার মতে জমি উত্তমরূপে কর্ষিত হলে গাছ শিকড়ের সাহায্যে কর্ষিত মাটির সু ] কণা খাদ্য হিসাবে সরাসরি গ্রহণ করে। কর্ষণই সার বলে তিনি উল্লেখ করেন।

পরবর্তীতে গাছপালার খাদ্যোপাদান সম্পর্কে বিজ্ঞনীরা সম্যক ধারণা লাভ করেন। মাটির সুJ কণা গাছ আদৌ খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে না। মাটিতে বিভিন্ন প্রকার মৌলিক উপাদানকে গাছ বিভিন্ন আকারে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। ভূমি কর্ষণের ফলে এই খাদ্যাপাদানগুলো মৃত্তিকাস্থিত পানির সাথে দ্রবীভূত হয়ে খাদ্য হিসাবে অভিস্রবণ (Osmosis) প্রক্রিয়ায় গাছে পৌঁছে। মাটি কর্ষিত হওয়ার ফলে মূল ও শিকড় মাটির গভীরে প্রবেশ করতে পারে।

 

 

ফলে মাটির পানি ধারণ মতা বৃদ্ধি পায় এবং অন্যদিকে আগাছা দমন হয় । অধুনা মাটিকে ন্যূনতম কর্ষণ করে র ণশীল কর্ষণ পদ্ধতির (Conservation tillage) ধারণা অবতারণা হয়েছে। উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য ভূমি কর্ষণ করার পর মাটি যে ভৌত অবস্থা প্রাপ্ত হয় তাকে কর্ষাবস্থা (Tilth) বলে। কর্ষাবস্থা মাটির গতিশীল (Dynamic) অবস্থার একটি রূপ।

যখন কোন মাটিকে বীজের অঙ্কুরোদগম ও ফসল বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত করে চাষ করা হয় তখন তাকে বীজতলা (Seed bed) বলা হয় এবং মাটির ঐ অবস্থাকে ভাল কর্ষাবস্থা বলে। কর্ষাবস্থা কথাটি একটি যথাযথ শব্দ না হলেও এর দ্বারা কৃষিবিদগণ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম অবস্থা বলে থাকেন। আবার বিভিন্ন প্রকার ফসলের বীজ বিভিন্ন রকম কর্ষাবস্থার উপযোগী।

বীজের আকার যত ছোট হয়, কর্ষাবস্থাও তত সু ] হওয়া বাঞ্ছনীয়। যেমন তামাক ও পিয়াজের বীজের জন্য খুব চিকন কর্ষাবস্থা প্রয়োজন। অপর প ে ভুট্টা ও ছোলার বীজ বড় আকারের বলে এদের বীজের জন্য মাঝারি রকমের কর্ষাবস্থা উপযোগী। কাজেই কর্ষাবস্থা বুঝাতে কৃষকদের নিকট ভাল, মাঝারি বা নিমানের কর্ষাবস্থা বলে বুঝানো হয়।

ভাল কর্ষাবস্থার গুণাবলী ( Qualities of good tilth)

ভাল কর্ষাবস্থায় জমির নিম্নলিখিত গুণাবলী থাকা বাঞ্ছনীয়

১. পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্দ্রতা

২. পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের অবস্থা

৩. বৃষ্টির পানির দ্রুত অনুপ্রবেশ মতা

৪. মাটির বন্ধুরতা

মাটি খুব সু এভাবে কর্ষাবস্থায় থাকলে (Fine tilth) বৃষ্টির পর শুকিয়ে পিঠার মত বেঁকে যায়। ফলে পরবর্তীতে ঐ মাটিতে পানি দিলে, সে মাটি আর পানি শোষণ করতে পারে না এবং ফসল চাষের জন্য অকেজো হয়ে পড়ে।

ভূমি কর্ষণের উদ্দেশ্য

ভূমি কর্ষণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি উত্তম বীজতলা তৈরি করা, আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা এবং উদ্ভিদ বৃদ্ধির অনুকূলে মাটির ভৌত গুণাবলীর উন্নয়ন সাধন করা। এগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

১. প্রাথমিকভাবে দৃঢ় জমাটবদ্ধ চাপা মাটি আলগা করা।

২. শুকনো জমিতে মাটির ঢিলা ভেঙ্গে ঝুরঝুরা করা যাতে বীজ মাটির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে যেতে পারে। বীজের আশপাশে বীজের আয়তনের সমান অসংখ্য বায়ুপূর্ণ ফাঁকা স্থান থাকলে বীজের অঙ্কুরোদগম ভাল হয়।

৩. আলগা করা মাটিকে একটা নির্দিষ্ট দৃঢ়তা দান করা যাতে মাটি, বায়ু ও আর্দ্রতা একটি বিশেষ অনুপাতে বিদ্যমান থাকে।

৪. জমির আগাছা ধ্বংস করা এবং পচনযোগ্য আগাছা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া।

৫. সার ও জৈব পদার্থ মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া।

৬. জমিতে সৃষ্ট তিকারক বিভিন্ন পদার্থ দূর করা এবং পোকা-মাকড় ধ্বংস করা।

৭. শুকনো জমিতে মাটির কৈশিকনালী (Capillary pore) ভেঙ্গে দিয়ে পানির বাষ্পায়ন কমানো ।

৮. মাটির উপকারী জীবাণুসমূহের বংশ বৃদ্ধি সহজতর করা।

৯. ভূমি য়রোধের জন্য জমির উপরিভাগ সমান করে তৈরি করা।

বিভিন্ন ফসলের ইংরেজি ও উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম

“ফসল” বলতে আমরা বুঝি সেই সব গাছপালা, যেগুলো মানুষ খাদ্য, পুষ্টি, অর্থনৈতিক মুনাফা বা বিভিন্ন উপযোগের জন্য চাষ করে থাকে। তবে সব গাছই ফসল নয়, আবার সব ফসলই মাঠ ফসল (Field Crops) নয়। মাঠ ফসল বলতে মূলত সেই সব উদ্ভিদকে বোঝায়, যেগুলো কৃষিজমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এক বা একাধিক মৌসুমে চাষাবাদ করা হয় এবং যেগুলো প্রধানত মানুষের খাদ্য, পশুখাদ্য, তেল, আঁশ বা কাঁচামাল সরবরাহ করে।

বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি ঘাটতি পূরণ এবং টেকসই কৃষির জন্য বিভিন্ন মাঠ ফসল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান অপরিহার্য। শুধুমাত্র ধান ও গমের ওপর নির্ভর না করে অন্যান্য খাদ্যশস্য যেমন—ভুট্টা, বাজরা, জোয়ার, দানাদার ও ডালজাতীয় ফসল, তৈলবীজ ও গো-খাদ্য ফসলের উৎপাদন ও প্রচলন বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন।

A Comprehensive List of Field Crops with English & Scientific Names

বিভিন্ন ফসলের ইংরেজি ও উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম

 

ফসলের বৈজ্ঞানিক নাম: পরিচিতি

ফসলের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম (Scientific Name) সাধারণত ল্যাটিন ভাষায় দ্বিপদ নামকরণ (Binomial nomenclature) অনুযায়ী লেখা হয়। এতে দুটি অংশ থাকে:

  1. গণ নাম (Generic name) – বড় বর্ণে শুরু হয়
  2. প্রজাতি নাম (Species name) – ছোট বর্ণে শুরু হয়

উদাহরণ:
ধানOryza sativa
এখানে Oryza হলো গণ নাম এবং sativa হলো প্রজাতি নাম।

 

বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মাঠ ফসলের বাংলা, ইংরেজি ও উদ্ভিদতাত্ত্বিক নামের তালিকা

ক্র. বাংলা নাম ইংরেজি নাম উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম
ধান Rice Oryza sativa
গম Wheat Triticum aestivum
ভুট্টা Maize/Corn Zea mays
জোয়ার Sorghum Sorghum bicolor
বাজরা Pearl millet Pennisetum glaucum
যব Barley Hordeum vulgare
কাওন Foxtail millet Setaria italica
চীনা Proso millet Panicum miliaceum
মসুর Lentil Lens culinaris
১০ মুগ Mung bean Vigna radiata
১১ মাষকলাই Black gram Vigna mungo
১২ ছোলা Chickpea Cicer arietinum
১৩ বরবটি Cowpea Vigna unguiculata
১৪ আলু Potato Solanum tuberosum
১৫ মিষ্টি আলু Sweet Potato Ipomoea batatas
১৬ সরিষা Mustard Brassica juncea
১৭ তিল Sesame Sesamum indicum
১৮ সূর্যমুখী Sunflower Helianthus annuus
১৯ চিনাবাদাম Groundnut/Peanut Arachis hypogaea
২০ তামাক Tobacco Nicotiana tabacum
২১ আখ Sugarcane Saccharum officinarum
২২ পাট Jute Corchorus capsularis / Corchorus olitorius
২৩ আলোক ফসল Forage crops বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস যেমন Pennisetum purpureum (Napier grass)
২৪ কাঁচা পেঁয়াজ Green Onion Allium fistulosum
২৫ রসুন Garlic Allium sativum

 

কেন এই জ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ?

  • ✅ কৃষি শিক্ষার্থী ও পেশাদারদের জন্য ফসল চিহ্নিতকরণে সহায়ক
  • ✅ গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনে সঠিক ফসলের নাম ব্যবহার নিশ্চিত করে
  • ✅ কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রমে ভুল ব্যাখ্যা এড়াতে সাহায্য করে
  • ✅ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফসলের বৈচিত্র্য ও পুষ্টিমূল্য বিশ্লেষণে সাহায্য করে

 

কৃষি বাস্তবতায় গুরুত্ব

বাংলাদেশে বর্তমানে ধান ও গম প্রধান খাদ্য হলেও, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্য ও পুষ্টির ঘাটতি মোকাবিলায় অন্যান্য ফসলের চাষ বাড়ানো জরুরি। অনেক অবহেলিত দানা ফসল যেমন বাজরা, জোয়ার, কাওন—উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন এবং জলবায়ু সহনশীল হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

 

অন্যদিকে তৈলবীজ ও ডাল জাতীয় ফসলগুলো আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হতে পারে। এজন্য এসব ফসলের বৈজ্ঞানিক পরিচিতি ও শ্রেণিকরণ জানা একান্ত প্রয়োজন।

ফসলের বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগ

বাংলাদেশের কৃষি-নির্ভর সমাজে মাঠ ফসল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ ফসলগুলোকে বৈজ্ঞানিক ও ব্যবহারিক দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। শ্রেণিবিভাগের মাধ্যমে ফসলের বৈশিষ্ট্য, ব্যবহার এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কৃষি পরিকল্পনা গ্রহণ সহজ হয়।

🧪 মাঠ ফসলের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Field Crops)

কৃষিতাত্ত্বিক ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ:

মাঠ ফসলকে কৃষিতাত্ত্বিক ভিত্তিতে সাধারণত নিম্নলিখিত শ্রেণিগুলোর মধ্যে ভাগ করা হয়:

. তণ্ডুলজাতীয় শস্য (Cereal Crops)

এই শস্যগুলো ঘাস (Gramineae) পরিবারের অন্তর্গত এবং প্রধান খাদ্যশস্য হিসেবে পরিচিত। এদের দানাগুলো আহারোপযোগী এবং কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ।

উদাহরণ:

  • ধান (Rice)
  • গম (Wheat)
  • যব (Barley)
  • ভুট্টা (Maize)
  • বাজরা (Pearl millet)
  • জোয়ার (Sorghum)
  • চীনা, কাওন, রাই ইত্যাদি।

 

. ডাল ফসল (Pulses or Grain Legumes)

এই শ্রেণির ফসলগুলো Leguminosae পরিবারের Papilionaceae উপপরিবারভুক্ত এবং প্রধানত আমিষ (Protein) সরবরাহের উৎস। এগুলো মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক।

উদাহরণ:

  • মসুর (Lentil)
  • ছোলা (Chickpea)
  • খেসারি (Grass pea)
  • মটর (Pea)
  • মাষ (Black gram)
  • মুগ (Green gram)
  • অড়হর (Pigeon pea)
  • বরবটি (Cowpea)

 

. তৈলবীজ ফসল (Oilseed Crops)

এই ফসলের বীজ থেকে তেল নিষ্কাশন করা হয় যা স্নেহ জাতীয় উপাদান সরবরাহ করে এবং খাদ্য, শিল্প ও জ্বালানি কাজে ব্যবহৃত হয়।

উদাহরণ:

  • সরিষা (Mustard)
  • চীনাবাদাম (Groundnut)
  • সয়াবিন (Soybean)
  • সূর্যমুখী (Sunflower)
  • তিল (Sesame)
  • তিসি (Linseed)
  • কুসুম (Safflower)
  • রেড়ি (Castor)
  • গর্জন তিল (Niger)

 

. চিনি ফসল (Sugar Crops)

এই ফসলগুলোর রস থেকে চিনি, গুড় ও মিছরি উৎপাদিত হয়। এগুলোতে উচ্চমাত্রার শর্করা থাকে।

উদাহরণ:

  • আখ (Sugarcane)
  • চিনি বীট (Sugar beet)
    অতিরিক্ত: খেজুর ও তাল থেকেও গুড় তৈরি হয়; যদিও এগুলো মাঠ ফসলের অন্তর্ভুক্ত নয়, তবুও চিনি ফসল হিসেবে বিবেচিত।

 

. আঁশ ফসল (Fibre Crops)

এই ফসলগুলো থেকে আঁশ সংগ্রহ করে কাপড়, দড়ি ও অন্যান্য শিল্পজাত পণ্য তৈরি করা হয়।

উদাহরণ:

  • পাট (Jute)
  • তুলা (Cotton)
  • শনপাট (Sunnhemp)
  • কেনাফ (Kenaf)
  • রামী (Ramie)

 

. নেশাজাতীয় ফসল (Narcotic Crops)

এই শ্রেণির ফসল থেকে বিভিন্ন উত্তেজক বা প্রশমক পদার্থ তৈরি হয়, যেগুলো ঔষধি ব্যবহার থাকলেও অতিরিক্ত সেবনে নেশা সৃষ্টি করে।

উদাহরণ:

  • তামাক (Tobacco)
  • আফিম (Opium poppy)
  • গাঁজা (Hemp)
  • হেনবেন (Henbane)
  • কুম্ভি (Kumbhi)

 

. পানীয় ফসল (Beverage Crops)

এই ফসলগুলো থেকে উদ্দীপক পানীয় তৈরি হয়। এগুলো পুষ্টি না দিলেও চেতনা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

উদাহরণ:

  • চা (Tea)
  • কফি (Coffee)
  • কোকো (Cocoa)
  • কোলা (Cola)

 

. পশুখাদ্য ফসল (Forage & Pasture Crops)

এই ফসলগুলো গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে চাষ করা হয়। চারণভূমিতে এসব ফসল পশুকে সরাসরি খাওয়ানো হয়।

উদাহরণ (Fodder crops):

  • খেসারী
  • ঘাস কালাই
  • ভুট্টা
  • জোয়ার
    চারণভূমির ঘাস:
  • দূর্বা ঘাস (Bermuda grass)
  • কার্পেট ঘাস
  • ক্লোভার (Clovers)

 

. সবুজ সার ফসল (Green Manuring Crops)

এই শ্রেণির ফসল জৈব সার তৈরির উদ্দেশ্যে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। এতে মাটির জৈব উপাদান ও উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।

উদাহরণ:

  • ধইঞ্চা (Dhaincha)
  • শনপাট (Sunnhemp)

 

 

গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিতে ফসলের শ্রেণিবিভাগ:

ফসল চাষের বৈজ্ঞানিক ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন ভিত্তিতে ফসলকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। এই শ্রেণিবিন্যাস কৃষকদের পরিকল্পিত চাষ, মাটির ব্যবহার, সেচের ব্যবস্থা, সময়নির্ধারণ ও বীজ নির্বাচন সহজ করে তোলে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিতে ফসলের শ্রেণিবিভাগ উপস্থাপন করা হলো:

🌾 . উৎপাদনের মৌসুম অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ

বাংলাদেশে ফসল সাধারণত তিনটি মৌসুমে উৎপাদিত হয়—রবি, খরিপ-১, খরিপ-২। এই শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তিতে ফসলগুলো নিচের মতোভাবে ভাগ করা যায়:

ক. রবি শস্য (শীতকালীন ফসল):

রবি মৌসুমে বপন করা হয় এবং সাধারণত শুষ্ক ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠে।
উদাহরণ:

  • বোরো ধান
  • গম
  • যব
  • সরিষা
  • ডাল শস্য (মসুর, ছোলা)
খ. খরিপ শস্য (গ্রীষ্মকালীন ও বর্ষাকালীন ফসল):

(১) খরিপ-শস্য:
প্রথম খরিপ মৌসুমে (এপ্রিল-জুন) বপন করা হয়।
উদাহরণ:

  • আউশ ধান
  • পাট
  • ভুট্টা

(২) খরিপ-শস্য:
দ্বিতীয় খরিপ মৌসুমে (জুলাই-অক্টোবর) বপন করা হয়।
উদাহরণ:

  • আমন ধান
  • সূর্যমুখী
  • সয়াবীন
গ. উভয় মৌসুম শস্য:

কিছু ফসল উভয় মৌসুমেই উৎপাদনযোগ্য।
উদাহরণ:

  • তিল
  • কাওন
  • ভুট্টা
  • চীনা বাদাম

 

🌼 ২. পরাগায়নের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ (Pollination)

ফসলের পরাগায়ন প্রক্রিয়া প্রজনন এবং ফলন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ক. স্ব-পরাগী (Self-pollinated) ফসল:

নিজের ফুলের পরাগেই নিষেক সম্পন্ন হয়।
উদাহরণ:

  • ধান
  • গম
  • তামাক
  • ডাল ফসল
খ. পর-পরাগী (Cross-pollinated) ফসল:

ভিন্ন ফুল থেকে পরাগ গ্রহণ করে নিষেক ঘটে।
উদাহরণ:

  • সরিষা
  • ভুট্টা
  • ফুলকপি
  • বাঁধাকপি
  • গাজর
গ. স্ব ও পর-পরাগী (Often cross-pollinated) ফসল:

স্ব-পরাগায়ন বেশি হলেও পর-পরাগায়নও ঘটে।
উদাহরণ:

  • তুলা
  • সূর্যমুখী

 

🌱 . জীবনকাল অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ (Life Cycle Based)
ক. একবর্ষী (Annual) ফসল:

একটি মৌসুমে জীবচক্র সম্পন্ন করে।
উদাহরণ:

  • ধান
  • পাট
  • তামাক
খ. দ্বি-বর্ষী (Biennial) ফসল:

প্রথম বর্ষে পাতা ও শিকড়, দ্বিতীয় বর্ষে ফুল ও ফল উৎপাদন করে।
উদাহরণ:

  • সুগার বীট
  • গাজর
গ. বহু বর্ষী (Perennial) ফসল:

দীর্ঘ সময়জুড়ে উৎপাদনক্ষম থাকে।
উদাহরণ:

  • চা
  • কফি
  • আম
  • জাম
  • কাঁঠাল

 

🌾 . বীজপত্রের সংখ্যার ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ (Based on Cotyledons)
ক. একবীজপত্রী (Monocot) ফসল:

বীজে একটি বীজপত্র থাকে।
উদাহরণ:

  • ধান
  • গম
  • ভুট্টা
  • চীনা
  • কাওন
খ. দ্বিবীজপত্রী (Dicot) ফসল:

বীজে দুটি বীজপত্র থাকে।
উদাহরণ:

  • পাট
  • সরিষা
  • তামাক
  • ডাল ফসল

 

🌞 . ফুল উৎপাদনে দিনের দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ (Photoperiodism Based)
ক. খাটো দিবস ফসল (Short Day Crops):

অল্প দিনের আলো পেলে ফুল ফোটে।
উদাহরণ:

  • পাট
  • আখ
  • মিষ্টি আলু
  • আমন ধান
খ. দীর্ঘ দিবস ফসল (Long Day Crops):

দীর্ঘ সময় আলোর সংস্পর্শে থাকলে ফুল ফোটে।
উদাহরণ:

  • সুগার বীট
  • বাঁধাকপি
  • পালং শাক
গ. দিন নিরপেক্ষ ফসল (Day Neutral Crops):

দিনের দৈর্ঘ্য ভেদে তাদের ফুল ফোটার উপর প্রভাব পড়ে না।
উদাহরণ:

  • সয়াবীন
  • ভুট্টা
  • আউশ ধান
  • বোরো ধান

 

বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থায় সফলতা নিশ্চিত করার জন্য ফসলের প্রকৃতি, চাষের পরিবেশ, মাটির ধরণ, জলবায়ু সহনশীলতা এবং ব্যবহারের বৈচিত্র্যের ভিত্তিতে শ্রেণিবিন্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অংশে আলোচনা করা হলো ফসলের আরও কিছু বিশেষ শ্রেণিবিভাগ, যা কৃষি পরিকল্পনায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

 

 

পরিবেশ, মাটির ধরণ, জলবায়ু সহনশীলতা এবং ব্যবহারের বৈচিত্র্যের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ:

🌍 . মাটির অম্লত্বের (pH) ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ

মাটির pH মানের ভিন্নতার ওপর নির্ভর করে ফসলের চাষাবাদে সাফল্য ভিন্ন হতে পারে। নিচে তিন ধরনের মাটির উপযোগী ফসলের শ্রেণি দেওয়া হলো:

ক. অম্ল সহনশীল ফসল:

অম্লীয় মাটিতে ভালো জন্মায়।
উদাহরণ:

  • চা
  • কফি
খ. ক্ষার সহনশীল ফসল:

ক্ষারযুক্ত বা এলকেলাইন মাটিতে ভালো জন্মায়।
উদাহরণ:

  • সুগার বীট
  • ধান
গ. নিরপেক্ষ মাটির ফসল:

যেসব ফসল নিরপেক্ষ বা মাঝারি pH (প্রায় ৬.৫–৭.৫) সহ্য করে।
উদাহরণ:

  • পাট
  • গম
  • আখ

 

🌡️ . অভিযোজন তাপমাত্রার ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ

তাপমাত্রা ফসলের বৃদ্ধিতে সরাসরি প্রভাব ফেলে। নিম্নরূপভাবে ফসলগুলিকে ভাগ করা যায়:

ক. উষ্ণ জলবায়ুর ফসল:

উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ায় চাষ উপযোগী।
উদাহরণ:

  • মসুর
  • ছোলা
  • অড়হর
খ. অবউষ্ণ জলবায়ুর ফসল:

উষ্ণ-আর্দ্র জলবায়ুতে জন্মায়।
উদাহরণ:

  • আখ
  • পাট
  • ধান
গ. শীতল জলবায়ুর ফসল:

ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ভালো জন্মায়।
উদাহরণ:

  • গম
  • যব
  • সুগারবীট

 

🧬 ৩. ফসলের বিশেষ শ্রেণিবিভাগ (Special Classification of Crops)
ক. অন্তর্বর্তী ফসল (Catch Crop):

বছরের প্রধান দুই ফসলের মধ্যবর্তী সময়কে কাজে লাগিয়ে স্বল্প মেয়াদি ফসল চাষ করা হয়।
উদাহরণ:

  • বোরো ও আমনের মাঝে চীনা বা কাওন
    বিশেষ বিবেচনা:
    যখন প্রধান ফসল প্রাকৃতিক কারণে ব্যর্থ হয়, তখন এই ধরণের ফসল বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
খ. অর্থকরী ফসল (Cash Crop):

যে ফসল চাষ করে কৃষক নগদ অর্থ বা অন্যান্য চাষ খরচ মেটাতে পারে।
উদাহরণ:

  • তামাক
  • পাট
  • আখ
গ. আচ্ছাদন ফসল (Cover Crop):

ভূমি ক্ষয় রোধ এবং আগাছা নিয়ন্ত্রণে ভূমি ঢেকে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ:

  • চীনা বাদাম
  • ক্লোভার
  • দূর্বাঘাস
ঘ. সংরতি গো-খাদ্য ফসল (Silage Crop):

সবুজ অবস্থায় সংগ্রহ করে বিশেষভাবে সংরক্ষণ করে গবাদিপশুকে খাওয়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ:

  • ভুট্টা
  • জোয়ার
  • নেপিয়ার ঘাস
ঙ. মিশ্র ফসল (Mixed Cropping):

একাধিক ফসলের বীজ একসাথে বপন করে একই জমিতে চাষ।
উদাহরণ:

  • গম ও মসুর একসাথে বপন
চ. আন্তঃফসল (Inter-Cropping):

প্রধান ফসলের সারির মাঝে অন্য ফসল চাষ।
উদাহরণ:

  • গমের সাথে মসুর চাষ
ছ. সাথি ফসল (Relay Crop):

একটি ফসল কাটার আগে, তার জমিতে পরবর্তী ফসল বপন।
উদাহরণ:

  • আমন ধানের মাঠে খেসারির চাষ
জ. বহুগুণ ফসল (Multiple Cropping):

একই জমিতে এক বছরে একাধিক ফসল চাষ।
উদাহরণ:

  • এক জমিতে আউশ → আমন → বোরো ধান চাষ

 

 

আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন

 

এই বিশেষ শ্রেণিবিভাগগুলো আমাদের কৃষিকে আরও বৈচিত্র্যময়, টেকসই ও উৎপাদনক্ষম করতে সাহায্য করে। সময়, জমি ও সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য এ ধরনের শ্রেণিবিন্যাসকে বিবেচনায় রাখা কৃষকদের জন্য অপরিহার্য।

ফসল পরিচিতি ও পুষ্টিগত গুরুত্ব

মানবসভ্যতার ইতিহাসে গাছপালা উদ্ভিদজাত দ্রব্যের গুরুত্ব অপরিসীম। আদিকাল থেকেই মানুষ বিভিন্ন গাছপালা ব্যবহার করে খাদ্য, ওষুধ আশ্রয়ের উপাদান সংগ্রহ করে এসেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বুঝতে পারে, নির্দিষ্ট কিছু উদ্ভিদ থেকে নির্দিষ্ট উৎপন্ন দ্রব্য যেমন দানা, আঁশ, চিনি, তেল ইত্যাদি পাওয়া যায়। এরপর থেকেই মানুষ এসব উপযোগী উদ্ভিদ সংগ্রহ করে চাষাবাদ শুরু করে এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনের জন্য যত্নসহকারে লালন করতে থাকে।

ফসল পরিচিতি ও পুষ্টিগত গুরুত্ব

 

 

ফসল কী?

যেসব উদ্ভিদ মানুষ সচেতনভাবে চাষ করে এবং তা থেকে অর্থনৈতিক ও পুষ্টিগত উপকার পায়—সেগুলোকে বলা হয় ফসল। তবে সব গাছই ফসল নয়। উদ্ভিদের যে অংশগুলো মানুষ খাদ্য, আশ্রয় বা অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহার করে এবং কৃষি জমিতে বিশেষ যত্নে উৎপাদন করে, কেবল সেগুলোকেই ফসল বলা হয়। এই ধরনের ফসল সাধারণত মাঠে চাষ করা হয় বলে এগুলোকে মাঠ ফসল (Field Crops) বলা হয়।

 

ফসল খাদ্যপুষ্টি

খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত উদ্ভিদজাত ফসল আমাদের দেহের বিভিন্ন চাহিদা মেটায়—যেমন শক্তি, বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। তবে সব উদ্ভিদজাত পদার্থ খাদ্য নয়। কেবল সেইসব দ্রব্যই খাদ্য হিসেবে গণ্য হয়, যা দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

 

মাঠ ফসলের বৈশিষ্ট্য

মাঠ ফসলগুলোর কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিচে তুলে ধরা হলো—

১. সমষ্টিগত চাষ: ধান, গম, পাট ইত্যাদি মাঠ ফসল একসাথে বিস্তৃত এলাকায় চাষ করা যায়, যেখানে ফল বা বৃক্ষ জাতীয় ফসল সাধারণত এককভাবে গাছ ভিত্তিক পরিচর্যা পায়।

২. বেড়া নির্মাণ প্রয়োজন হয় না: মাঠ ফসলের ক্ষেত সাধারণত খোলা থাকে, সেখানে সবজি বা ফলের ক্ষেত সুরক্ষার জন্য ঘের বা বেড়া দেওয়া আবশ্যক হয়ে থাকে।

৩. একসাথে পরিপক্বতা সংগ্রহ: মাঠ ফসল এক সময়ে পাকে এবং একসাথে সংগ্রহযোগ্য হয়। অন্যদিকে, সবজি বা ফল ফসল যেমন—বেগুন, টমেটো—ধাপে ধাপে পরিপক্ক হয় এবং পর্যায়ক্রমে সংগ্রহ করতে হয়।

৪. শুকনো অবস্থায় ব্যবহার: মাঠ ফসল যেমন ধান, পাট, তৈলবীজ প্রভৃতি সাধারণত শুকিয়ে ব্যবহারযোগ্য হয়, যেখানে সবজি ও ফল তাজা অবস্থায় খাওয়া হয়।

 

মাঠ ফসল বনাম বাগান ফসল

উল্লেখ্য, মাঠ ফসলকে সাধারণত কৃষিতাত্ত্বিক ফসল (Agronomic Crops) এবং ফল, সবজি, ফুল জাতীয় গাছপালাকে উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল (Horticultural Crops) বলা হয়ে থাকে।

 

তণ্ডুলজাতীয় ফসল (Cereal Crops)

মাঠ ফসলের মধ্যে ধান, গম, ভুট্টা, যব ইত্যাদি তণ্ডুলজাতীয় ফসল হিসেবে পরিচিত। এগুলো Gramineae বা Poaceae পরিবারভুক্ত এবং আমাদের খাদ্যতালিকার প্রধান অংশ।

✅ ধান – আমাদের প্রধান খাদ্য

বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ ধানজাত চালকে প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমির প্রায় ৮০% অংশে ধান চাষ হয়। ভারতে ধানের জমির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।

  • পুষ্টিগুণ:
    • প্রধানত শর্করা (Carbohydrate) সরবরাহ করে
    • শতকরা প্রায় ৮% আমিষ (Protein) বিদ্যমান
    • শিশুসহ সব বয়সের মানুষ নিরাপদে গ্রহণ করতে পারে
    • প্রথম শক্ত খাবার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়

এই খাদ্যশস্য শুধু আমাদের শক্তির চাহিদাই পূরণ করে না, বরং শিশুদের বৃদ্ধিতে ও পরিবারের প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

 

মানুষের খাদ্যচাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে মাঠ ফসলের অবদান অনস্বীকার্য। তণ্ডুলজাতীয় ফসল—বিশেষত ধান—শুধু আমাদের দেশের নয়, সারা বিশ্বের খাদ্যনিরাপত্তার অন্যতম ভিত্তি। এর পুষ্টিগত গুরুত্ব আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।

 

 

 

বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক সমাজে ডালজাতীয় ফসলের গুরুত্ব অপরিসীম। মাঠ ফসলের মধ্যে মসুর, ছোলা, মাষ, মুগ, অড়হর, খেসারি ও মটর অন্যতম ডালজাতীয় ফসল। এসব ফসলে প্রোটিন বা আমিষের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, যা মানবদেহের পুষ্টির অন্যতম প্রধান উপাদান। শুধু তাই নয়, ডালজাতীয় শস্য চাষের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বাড়ে। কারণ, এগুলো মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে বাতাসের নাইট্রোজেন মাটিতে যুক্ত করে, যা জমির জৈব উপাদান বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ডালজাতীয় ফসল মানুষের জন্য যেমন পুষ্টিকর, তেমনি গৃহপালিত পশুর জন্যও একটি চমৎকার খাদ্য উৎস। এই ফসলের ভুসি পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা উচ্চমানের প্রোটিন সরবরাহ করে। বাংলাদেশের পশুপালন ব্যবস্থায় চারণভূমির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত দেশগুলোতে চারণভূমিতে ঘাসের পাশাপাশি ‘লিগুম’ জাতীয় ফসল একসাথে চাষ করে পশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা হয়। এর ফলে পশুর খাদ্যচক্রের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং জমির উর্বরতাও রক্ষা পায়।

তৈলবীজ ফসল, যেমন: সরিষা, সয়াবিন, সূর্যমুখী ইত্যাদি, আমাদের দেহে স্নেহজাতীয় উপাদানের জোগান দেয়। সয়াবিন একটি বহুমুখী ফসল, যা ডাল ও তৈলবীজ—দুইভাবেই পুষ্টি সরবরাহ করে। এসব মাঠ ফসল আমাদের খাদ্যতালিকার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলোর বেশিরভাগই পূরণ করতে সক্ষম। তবে যদি খাবারে কোনো একটি পুষ্টি উপাদান দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকে, তাহলে দেহে সেই উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়, যার পরিণতিতে সৃষ্টি হয় পুষ্টিহীনতা।

বাংলাদেশে পুষ্টিহীনতা একটি মারাত্মক সমস্যা। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা ব্যাপক হারে দেখা যায় এবং অনেক সময় তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আনুমানিকভাবে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে পুষ্টির ঘাটতিতে ভুগছে, যার ফলে তারা কর্মক্ষমতা হারায় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।

মাঠ ফসলের বৈজ্ঞানিক চাষাবাদ শুধু খাদ্য নিরাপত্তাই নিশ্চিত করে না, বরং পুষ্টিহীনতা দূরীকরণেও তা ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। এসব ফসল পাকস্থলীতে গিয়ে ভেঙে সরল পুষ্টি উপাদানে পরিণত হয়, যা দেহের পুনর্গঠন, বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং তাপ উৎপাদন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। দেহের সুস্থতার জন্য খাদ্যে সুষম পুষ্টি উপাদানের উপস্থিতি আবশ্যক।

 

পুষ্টি উপাদান মূলত দুটি উৎস থেকে আসে: উদ্ভিদ ও প্রাণী। যদিও প্রাণিজ প্রোটিন স্বাভাবিকভাবে উচ্চমানের, তবে তা ব্যয়সাপেক্ষ এবং কখনও কখনও স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন: গরু বা খাসির মাংস পুষ্টিকর হলেও অতিরিক্ত গ্রহণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। এ ক্ষেত্রে উদ্ভিদজাত আমিষ, বিশেষ করে ডাল ও তৈলবীজ জাতীয় ফসল একটি নিরাপদ ও সাশ্রয়ী বিকল্প।

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ স্বল্প খরচে ডাল ও তৈলবীজ ব্যবহার করে আমিষের চাহিদা পূরণ করে থাকেন। তাই ডালকে অনেক সময় “গরীবের মাংস” বা Poor Man’s Meat বলা হয়। এই ফসলগুলো পুষ্টিগতভাবে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সহজলভ্য ও পরিবেশবান্ধবও বটে।

বাউবি বিএই ১৩০৬ মাছের চাষ ও ব্যবস্থাপনা

বাউবি বিএই ১৩০৬ মাছের চাষ ও ব্যবস্থাপনা: “মাছের চাষ ও ব্যবস্থাপনা” বইটি “বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়” এর “ব্যাচেলর অব এগ্রিকালচারাল এডুকেশন” এর একটি বিষয়। এই বিষয়ের বইটি লিখেছেন ড. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম ( অ্যাকুয়াকালচার বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়), ড. মোঃ সামছুল আলম ( ফিশারিজ বায়োলজি এন্ড জেনেটিক্স বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়)। এ কোর্সবইটি রেফারি কর্তৃক নিরীক্ষণের পর বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ও পল্লী উনড়বয়ন স্কুল এর ছাত্রদের জন্য মুদ্রিত হয়েছে।

পুরো বই ডাউনলোড করুন:

  • বাউবি বিএই ১৩০৬ মাছের চাষ ও ব্যবস্থাপনা (Full Book)

 

বাউবি বিএই ১৩০৬ মাছের চাষ ও ব্যবস্থাপনা

“মাছের চাষ ও ব্যবস্থাপনা” বিএজিএড প্রোগ্রামের একটি কোর্সবই। এ কোর্সবইটি দূরশিক্ষণের ছাত্রদের উপযোগী করে রচনা করা হয়েছে। কোর্সবইটির বিভিনড়ব ইউনিটে বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ, পুকুর প্রস্তুতকরণ, পুকুরে পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ, বিভিনড়ব প্রজাতির মাছ ও চিংড়ি চাষ, বিভিনড়ব প্রকারের জলজ উদ্ভিদ ও কীটপতঙ্গের পরিচিতি, মৎস্য খামার পরিকল্পনা, মৎস্য প্রজনন, মৎস্য আইন প্রভৃতি বিষয়গুলোর ওপর তাত্তি¡ক ও ব্যবহারিক পাঠগুলো অত্যন্ত সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

মাছের চাষ ও ব্যবস্থাপনা বইটি সম্পাদনা করেছেন – ড. মোঃ শাহ আলম সরকার ( কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুল, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়)। রচনাশৈলী সম্পাদক ও সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন ড. মোঃ তোফাজ্জল ইসলাম, কৃষি ও পল্লী উনড়বয়ন স্কুল, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। দ্বিতীয় সংস্করণ সম্পাদনা করেন ড. এ. কে. এম. আজাদ শাহ, কৃষি ও পল্লী উনড়বয়ন স্কুল, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

 

সূচিপত্র

 

ইউনিট ১ – মৎস্য সম্পদ

পাঠ ১.১ মাছ চাষের ইতিহাস এবং গুরুত্ব
পাঠ ১.২ মাছের শ্রেণীবিন্যাস, মিঠা পানি ও লোনা পানির মাছের তালিকা
পাঠ ১.৩ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পনড়ব মাছের তালিকা এবং চাষোপযোগী দেশী ও বিদেশী মাছের পরিচিতি

ব্যবহারিক
পাঠ ১.৪ রুই জাতীয় মাছ এবং চিংড়ির দেহের বিভিনড়ব অংশ শনাক্তকরণ ও চিহ্নিতকরণ

 

ইউনিট ২ – পুকুর প্রস্তুতকরণ:

পাঠ ২.১ মাছ চাষের জন্য পুকুরের স্থান নির্বাচন ও মাটির গুণাগুণ নির্ণয়
পাঠ ২.২ পানির উৎস চিহ্নিতকরণ, সরবরাহ ও নিষ্কাশন প্রক্রিয়া
পাঠ ২.৩ পুকুর সংস্কার ও ব্যবস্থাপনা, আদর্শ পুকুর বা জলাশয়ের বৈশিষ্ট্য, পুকুরে পাম্পের সাহায্যে বায়ু সরবরাহ প্রক্রিয়া
পাঠ ২.৪ গাঠনিক ভিত্তিতে পুকুরের শ্রেণীবিন্যাস ও গঠনের নিয়মাবলী

 

ইউনিট ৩ – পানির গুণাগুণ:

পাঠ ৩.১ জলাশয়ের পানির প্রাথমিক বর্ণ, গন্ধ ও পানির পরিমাণ নির্ণয়, পুকুরের তলদেশ ও কাদার গুণাগুণ পরিমাপ
পাঠ ৩.২ পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ এবং প্রাথমিক উৎপাদকের ওপর এর প্রভাব
পাঠ ৩.৩ প্রাথমিক উৎপাদকের শ্রেণীবিন্যাস ও গুরুত্ব
পাঠ ৩.৪ দ্রবীভূত কঠিন পদার্থ ও তার প্রকারভেদ, পরিমাণগত ও গুণগত প্রভাব

ব্যবহারিক
পাঠ ৩.৫ পানির অ¤øত্ব ও ক্ষারত্ব নির্ণয়
পাঠ ৩.৬ প্লাঙ্কটন সংগ্রহ ও শনাক্তকরণ

 

ইউনিট ৪ মাছ চাষ:

পাঠ ৪.১ পুকুরে মাছ চাষের প্রাথমিক নির্ণায়ক, প্রজাতি নির্বাচন এবং মাছ ছাড়ার আনুপাতিক হার
পাঠ ৪.২ মাছ ছাড়ার নিয়মাবলী, একক এবং মিশ্র চাষ
পাঠ ৪.৩ খাঁচায়, চৌবাচ্চায় এবং ধান ক্ষেতে মাছ চাষ, সমন্বিত মাছ চাষ
পাঠ ৪.৪ মুক্ত জলাশয় ব্যবস্থাপনা
পাঠ ৪.৫ অ্যাকুরিয়ামে মাছ পালন পদ্ধতি

ব্যবহারিক
পাঠ ৪.৬ চাষোপযোগী দেশী ও বিদেশী মাছ শনাক্তকরণ

 

ইউনিট ৫ চিংড়ি চাষ:

পাঠ ৫.১ চিংড়ি সম্পদের গুরুত্ব ও চাষের পটভূমি, স্বাদু ও লোনা পানির চিংড়ির প্রজাতি এবং বাংলাদেশে চাষযোগ্য প্রজাতি
পাঠ ৫.২ বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিনড়ব প্রকার চিংড়ি চাষ পদ্ধতি
পাঠ ৫.৩ চিংড়ি চাষের স্থান নির্বাচন, বাগদা ও গলদা চিংড়ি চাষ পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা
পাঠ ৫.৪ চিংড়ির আহরণ-সময়, আংশিক আহরণ, সম্পূর্ণ আহরণকালে লক্ষণীয় বিষয়

ব্যবহারিক
পাঠ ৫.৫ গলদা ও বাগদা চিংড়ি শনাক্তকরণ
পাঠ ৫.৬ গলদা ও বাগদা চিংড়ির রেণু শনাক্তকরণ

 

ইউনিট ৬ – জলজ উদ্ভিদ ও কীটপতঙ্গ:

পাঠ ৬.১ জলজ উদ্ভিদের প্রকারভেদ ও প্রয়োজনীয়তা
পাঠ ৬.২ জলজ আগাছা ও ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দমন ও নিয়ন্ত্রণ
পাঠ ৬.৩ পানিতে শেওলা ব- ুম এবং উহার নিয়ন্ত্রণ
পাঠ ৬.৪ আগাছার সাহায্যে কম্পোস্ট সার তৈরি ও ব্যবহার

ব্যবহারিক:

পাঠ ৬.৫ জলজ আগাছা ও ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ সংগ্রহ ও শনাক্তকরণ
পাঠ ৬.৬ কম্পোস্ট সার প্রস্তুতি

 

ইউনিট ৭ মৎস্য খামার পরিকল্পনা:

পাঠ ৭.১ পরিকল্পনার উদ্দেশ্য, আর্থিক সহযোগিতার উৎসসমূহ
পাঠ ৭.২ জনবল, যন্ত্রপাতি ও পরিকল্পনার অন্যান্য প্রভাবকসমূহের বিবরণ
পাঠ ৭.৩ আয় ও ব্যয়ের হিসাবরক্ষণ
পাঠ ৭.৪ মৎস্য পণ্যের বিপণন বা বাজারজাতকরণ

ব্যবহারিক

পাঠ ৭.৫ নিজ হাতে ছোট আকারের খামার নির্মাণ পরিকল্পনা

 

ইউনিট ৮ বিশেষ বিশেষ মাছ চাষ:

পাঠ ৮.১ পুকুরে থাই সরপুঁটি, আফ্রিকান মাগুর, তেলাপিয়া ও জিওল মাছের চাষ
পাঠ ৮.২ পেনে মাছ চাষ ও ব্যবস্থাপনা, ইলিশ মাছ উনড়বয়ন ও ব্যবস্থাপনা

ব্যবহারিক

পাঠ ৮.৩ পুকুরের আয়তন অনুযায়ী পোনার পরিমাণ ও আনুপাতিক হার নির্ধারণ

 

ইউনিট ৯ মৎস্য প্রজনন:

পাঠ ৯.১ মৎস্য প্রজনন কী? প্রজননের প্রকারভেদ এবং তার প্রয়োজনীয়তা
পাঠ ৯.২ প্রজননক্ষম মাছ মজুত করার নিয়মাবলী
পাঠ ৯.৩ পিটুইটারী গ্রন্থি সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং হরমোন ইনজেকশন তৈরি ও প্রয়োগ পদ্ধতি
পাঠ ৯.৪ ডিম ফুটানোর প্রক্রিয়া, ফুটানোর প্রভাবকসমূহ এবং ফুটানোর বিভিন্ন পাত্রের ব্যবহার
পাঠ ৯.৫ প্রাকৃতিক উৎস থেকে পোনা সংগ্রহ পদ্ধতি, পোনা টেকসইকরণ, প্যাকিং, পরিবহন এবং আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ

ব্যবহারিক
পাঠ ৯.৬ পিটুইটারী গ্রন্থি সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগ পদ্ধতি
পাঠ ৯.৭ পোনা/ রেণু টেকসইকরণ, প্যাকিং এবং পরিবহন পদ্ধতি শেখা

 

ইউনিট ১০ মৎস্য আইন:

পাঠ ১০.১ মৎস্য আইনের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা, বাংলাদেশে বর্তমান মৎস্য সংরক্ষণ আইন ও তার অবস্থা
পাঠ ১০.২ আন্তর্জাতিক আইন ও তার প্রয়োগ বিধি, আন্তর্জাতিক পানির সীমানা ও ব্যবহারের নীতিমালা

তথ্যসূত্র ২৩৫