Tag Archives: কৃষি ডিপ্লোমা

কৃষি ডিপ্লোমা

লেবু চাষ পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা

লেবু চাষ পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আজকের আলোচনা। লেবু চাষ করা হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। লেবু সাইট্রাস জাতীয় ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল। খাবার টেবিলে এবং সালাদে লেবু ছাড়া তো ভাবাই যায় না। এর স্বাদ বৃদ্ধির ভূমিকা যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে বিশেষ খাদ্যগুণ। বিশেষ করে পাতি লেবুকে ‘সি’ ভিটামিনের ডিপো বলা হয়ে থাকে। গরমে ঠাণ্ডা এক গ্লাস লেবুর সরবত মুহূর্তে ক্লান্তি দূর করে। ছোট-বড় সবার জন্য লেবু এক আশ্চর্য গুণসম্পন্ন সবজি এবং ভেষজ। আমাদের দেশে শতকরা ৯১ জন লোক ভিটামিন ‘সি’র অভাবে ভুগছেন। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের দৈনিক গড়ে ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ খাওয়া দরকার। ভিটামিন ’সি’ সমৃদ্ধ ফলের মধ্যে লেবুই একমাত্র ফল যা সারা বছর কম বেশি পাওয়া যায়।

লেবু চাষ পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা

পুষ্টি মূল্য:

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ।

ভেষজ গুণ:

লেবুর রস মধু বা আদা বা লবণের সাথে মিশিয়ে পান করলে ঠাণ্ডা ও সর্দি কাশি উপশম হয়।

উপযুক্ত জমি ও মাটি:

হালকা দোআঁশ ও নিকাশ সম্পন্ন মধ্যম অম্লীয় মাটিতে লেবু ভালো হয়।

লেবুর জাত পরিচিতি:

লেবুর অনেক জাত আছে। তন্মধ্যে পাতিলেবু, কাগজি লেবু, এলাচি লেবু, সিডলেস লেবু, সরবতি লেবু, বাতাবিলেবু, কমলালেবু ও মাল্টা লেবু উল্লেখযোগ্য। তবে কমলালেবু পাহাড়ি এলাকায় জন্মে। বাকিগুলো সমভূমিতেই জন্মে। এছাড়াও নিম্নে আরও কিছু জাতের কথা উল্লেখ করা হলো-

বারি লেবু-১ (এলাচি লেবু):

উচ্চ ফলনশীল লেবু বারি লেবু-১। ঘ্রাণ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। গাছ আকারে বড়।পাতা বড় ও প্রশস্ত। পরিচর্যা পেলে গাছ বছরে দু’বার ফল দেয়। জুলাই-আগস্ট মাসে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। পূর্ণবয়স্ক গাছ ১৫০টি পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। আকারে বড়, ডিম্বাকৃতি এবং প্রতিটি ফলের গড় ওজন ১৯৫ থেকে ২৬০ গ্রাম। বৃহত্তর সিলেট এবং আরও অনেক এলাকায় এলাচি লেবুর খোসা খাওয়া হয়।

বারি লেবু-২:

বারি লেবু-২ উচ্চ ফলনশীল জাত। মধ্যম আকৃতির ও ঝোপের মতো গাছ। সারা বছর প্রচুর ফল দেয়। ফল গোলাকার, মধ্যম ওজনের। ত্বক মসৃণ এবং বীজের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। এই লেবু সারা দেশেই চাষাবাদের উপযোগী।

বারি লেবু-৩:

একটি দেরীতে হওয়া (নাবি) জাত বারি লেবু-৩। গাছ ও পাতা ছোট আকৃতির। ফল গোলাকার ও ছোট। ত্বক খুবই মসৃণ, খোসা পাতলা এবং বীজের সংখ্যাও কম ১৮-২২টি। রসের পরিমাণ খুব বেশি (৩৭.৭%)। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। সার ও পানির ব্যবস্থা করলে বছরে দু’বার ফল পাওয়া যায়। সারা দেশেই চাষাবাদের জন্য উপযোগী।

লেবুর চারা রোপণ:

গুটি কলম ও কাটিং তৈরি করে মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য আশ্বিন মাসে ২.৫ মিটার দূরে দূরে রোপণ করা হয়। মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য আশ্বিন মাস চারা রোপণের জন্য উপযুক্ত।

সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গাছে টিএসপি সার ৪০০ গ্রাম, এমওপি সার ৪০০ গ্রাম, ইউরিয়া সার ৫০০ গ্রাম ও গোবর ১৫ কেজি প্রয়োগ করতে হয়। সার তিনভাগে যার প্রথম কিস্তি মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক মাসে, ২য় কিস্তি মধ্য মাঘ থেকে মধ্য ফাল্গুন মাসে এবং ৩য় কিস্তি মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য আষাঢ় মাসে প্রয়োগ করতে হয়।

অঙ্গ ছাঁটাই: প্রতি বছর মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক মাসে গাছের অবাঞ্ছিত শাখা ছাঁটাই করতে হয়।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: খরা মৌসুমে ২-৩ বার সেচ দেওয়া দরকার। পানি যাতে না জমে থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

লেবুর পোকা মাকড় দমন ব্যবস্থাপনা

লেবুর প্রজাপতি পোকা:

ক্ষতির ধরন:

এ পোকার কীড়া পাতার কিনারা থেকে খেতে শুরু করে এবং সম্পূর্ণ পাতা খেয়ে ফেলে।

প্রতিকার:

ডিম ও কীড়াযুক্ত পাতা সংগ্রহ করে মাটির নীচে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হয়। আক্রমণ বেশি হলে ডাইমেক্রন ১০০ ইসি ১ মিলি অথবা সেভিন ৮৫ এসপি ১ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর স্প্রে করতে হয়।

লেবুর লাল ক্ষুদ্র মাকড়:

লক্ষণ:

মাইট লেবু গাছের পাতা ও ফলের সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। ফলে পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং ফলের গায়ে সাদা আবরণ দেখা যায়। পাতার নীচের দিকে লক্ষ্য করলে ক্ষুদ্র মাইট চলাচল করতে দেখা যায়।

প্রতিকার:

মাকড়সহ আক্রান্ত পাতা তুলে ধ্বংস করা। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি ইথিয়ন ৪৬.৫ তরল বা নিউরন ৫০০ তরল মিশিয়ে লেবুর পাতা ভিজিয়ে স্প্রে করা।

লেবুর ফসল সংগ্রহ:

ফল পূর্ণতা প্রাপ্তি হলে সবুজ থাকা অবস্থায় সংগ্রহ করতে হবে।

লেবুর ব্যবহার:

লেবুর কদর সাধারণত তার রসের জন্য। এর শাঁস এবং খোসাও ব্যবহার হয় বিভিন্ন কাজে। কিন্তু প্রধানত সর্বত্র লেবুর রসই ব্যবহৃত হয়। লেবু পছন্দ করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

লেবুর অনেক আছে গুণ। ১০০ গ্রাম লেবুতে প্রায় ৫৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি বা এসকরিক এসিড পাওয়া যায়। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধকারী কোষের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। শরীরের কোনও অংশ কেটে গেলে বা ক্ষত হলে দ্রুতগতিতে কোলাজেন কোষ উপাদান তৈরি করে ক্ষত নিরাময়েও সাহায্য করে এই ভিটামিন সি।

লেবুর সাইট্রিক এসিড ক্যালসিয়াম নির্গমন হ্রাস করে পাথুরি রোগ প্রতিহত করতে পারে। জ্বরে কোনকিছুই যখন খেতে ভালো লাগে না তখন একমাত্র লেবুই ভরসা। লেবু হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। রূপচর্চায় লেবুর ব্যবহার অনেক আগে থেকেই।

কাপড়ে দাগ পড়লে লেবুর রস দিয়ে ঘষলে দাগ উঠে যায়। বয়সজনিত মুখের দাগ সারাতে লেবুর রস কার্যকরী। লেবুর রস ব্যবহারে মুখের ব্রণও সারে। লেবু দেহের ওজন কমায়। লেবুর মধ্যে এমন পদার্থ আছে যা কিনা শরীরের অতিরিক্ত মেদকে জ্বালিয়ে দেয়। ফলে রোগ সংক্রমণও কমে যায়।

বাড়ির ছাদ বা টবে লেবু চাষ:

বাড়ির ছাদ এমনকি বারান্দায় ছোট টবেও এর চাষ সম্ভব। দুইভাগ দোঁ-আশ বা বেলে দোঁ-আশ মাটির সাথে একভাগ গোবর মিশাতে হবে। একটি বার ইঞ্চি টবের জন্য ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৫০ গ্রাম পটাশ, ১০ গ্রাম চুন এবং ১৫০ গ্রাম হাড়ের গুড়া একত্রে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন রেখে দিতে হবে। তারপর একটি লেবুর কলমের চারা ঐ টবে রোপণ করতে হবে। লেবুতে সাধারণত ডাইব্যাক নামক এক ধরনের রোগ দেখা যায়। তাই কলমের চারাটি যাতে রোগাক্রান্ত না থাকে তা দেখে নিতে হবে। লেবু জাতীয় সকল গাছেই সাধারণত পানি খুব কম প্রয়োজন হয়। চারা লাগানোর প্রথমদিকে পানি আরও কম দিতে হয়।

লেবুর পরিচর্যা:

চারা লাগানোর পর প্রথম ২-৩ মাস পানি দেওয়া এবং আগাছা পরিষ্কার করা ছাড়া আর তেমন কিছুই করতে হবে না। গাছ একটু বড় হলে ২০ দিন অন্তর অন্তর সরিষার খৈল পচা পানি হালকা করে গাছের গোড়ায় দিতে হবে। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে লেবু গাছে ফল ধরবে। বর্ষা আসার পূর্বে সাতদিন অন্তর অন্তর কয়েকবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে ভাল হয়।

এ ছাড়াও বছরে তিন থেকে চার বার কোন ভাল কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। তবে লেবু গাছে ফুল থাকা অবস্থাতে কীটনাশক স্প্রে না করাই ভাল। গাছ লাগানোর দুই বছর পর থেকে প্রতি বছর বর্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে টবের গা ঘেঁষে দুই ইঞ্চি পরিমাণ প্রস্থে এবং ছয় থেকে আট ইঞ্চি গভীর করে মাটি ফেলে দিয়ে নতুন সার মিশ্রিত মাটি দিতে হবে। আমাদের দেশের আবহাওয়া লেবু চাষের উপযোগী। বিশেষ করে টবে লেবুর ফলন খুব ভাল হয় এবং অতি সহজেই।

লেবুতে কলম:

লেবুতে বিভিন্ন ধরনের কলম হলেও সাধারণত গুটি কলমই বেশি জনপ্রিয়। খুব সহজেই লেবুর গুটিকলম করা যায়। গুটিকলম করতে হয় বর্ষাকালে। গুটিকলমের জন্য একটি একবছর বয়সী পেন্সিলের মত মোটা ডাল নির্বাচন করতে হবে। ডালের ডগা থেকে এক ফুট নিচে একটা গাঁটের গোঁড়ায় এক ইঞ্চি পরিমাণ ছাল ডাল থেকে তুলতে হবে। কাঠের মধ্যে যে পিচ্ছিল পদার্থ বিদ্যমান তা একটি শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে।

পরবর্তীতে গোবর মিশ্রিত মাটি দিয়ে ঐ জায়গা ভালোভাবে ঢেকে দিতে হবে। তবে মাটি অবশ্যই কাদামাটির মত নরম করে নিতে হবে। একটি মোটা পলিথিন দিয়ে ঐ জায়গাটুকু ভালোভাবে ঢেকে দুই দিকের মাথা সুতলি দিয়ে শক্ত করে এমনভাবে বেঁধে দিতে হবে যেন ভেতরে আলো-বাতাস না ঢুকে। এক মাসের মধ্যেই শিকড় গজিয়ে যায়। কিন্তু কাটার উপযোগী হয় আরও এক মাস পর।

বায়োফ্লকে মাছ চাষে কম খরচে অধিক লাভ

বায়োফ্লকে মাছ চাষে কম খরচে অধিক লাভ , কমছে ভূমি, বাড়ছে মানুষ। ভূমি আর জনসংখ্যার এই ব্যাস্তানুপাতিক সম্পর্কের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে মানুষের ক্ষুধা, কমছে ভূমির সক্ষমতা।  ‘স্বল্প জমিতে অধিক উৎপাদন’ সফল করতে গিয়ে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞানকে। বাড়তি মানুষের বাস্তুভিটার চাপ সামলাতে গিয়ে বন-জঙ্গল তো বহু আগেই কাটা গেছে; আধুনিক পৃথিবীতে হারাতে বসেছে গ্রামের সংজ্ঞায়নও। ভরাট হয়ে যাচ্ছে ফসলী জমি, খেলার মাঠ, খাল-বিল-পুকুর! রূপকথায় ঠাঁই পেতেছে গোলায় ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছের সোনালী সময়টাও।

বায়োফ্লকে মাছ চাষে কম খরচে অধিক লাভ

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]

তবে, অধুনা যুগের কৃষি সংকটকে চ্যালেঞ্জ জানাতে কার্যকর একটি উপায় হতে পারে বায়োফ্লক। মাছ চাষের জন্য পুকুর লাগবেই এমন কোনও কথা নেই। তার জন্য চাই কেবল উপযুক্ত জলাধার। বায়োফ্লকের ব্যাতিক্রমী এই ধারণাকে খাটিয়েই মাছ চাষ এখন ঢুকে গেছে মানুষের ঘরে। নির্দিষ্ট কলাকৌশল আর প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে ঘরের ভিতর চৌবাচ্চাতে চাষ করা যাচ্ছে মাছ।

একদিকে খরচ কমে যাচ্ছে তিন ভাগের এক ভাগ, আরেকদিকে উৎপাদনও হচ্ছে ২০ গুণ বেশি। বাড়ির ভেতরে এ্যাকুরিয়ামে শখের বশে আমরা যে মাছ পালন করি, সেই এ্যাকুয়াকালচার পদ্ধতিরই উন্নত সংস্করণ হচ্ছে নতুন এই প্রযুক্তি। ‘বায়োফ্লক’ ব্যবহার করে অল্প জমিতে অধিক পরিমাণ মাছ উৎপাদন সম্ভব।

প্রযুক্তিটির জনক ইজরায়েলি বিজ্ঞানী ইয়ান এভনিমেলেচ। এবার বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক, কি এই বায়োফ্লক আর কিভাবেই বা এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে সম্ভব অধিক লাভবান হওয়া।

 

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]

বায়ো শব্দটি এসেছে গ্রীক বায়োস থেকে, যার অর্থ জীবন। আর ফ্লক অর্থ হচ্ছে আলতোভাবে লেগে থাকা কণার সমষ্টি। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে জৈব বর্জ্যের পুষ্টি থেকে পুনঃব্যবহারযোগ্য খাবার তৈরি করা হয়। তাই স্বাভাবিক ভাবেই বায়োফ্লক প্রযুক্তি মাছ চাষের একটি টেকসই এবং পরিবেশগত ভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ একটি  পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে চৌবাচ্চার পানিতে ব্যাকটেরিয়া, অণুজীব ও শৈবালের সমম্বয়ে পাতলা একটি আস্তরণ তৈরি হয়।

যা পানিকে ফিল্টার করে পানি থেকে নাইট্রোজেন জাতীয় ক্ষতিকর উপাদানগুলি শোষণ করে নেয় এবং এর প্রোটিন সমৃদ্ধ যে উপাদান গুলো থাকে সেগুলো মাছ খাবার হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে অনুজীব মুলত দুটি প্রধান ভূমিকা পালন করে-

  • অণুজীব পানিতে বিদ্যমান নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ যৌগ গুলোকে ব্যবহার করে অণুজীব প্রোটিনে রূপান্তর করার মাধ্যমে পানির গুণাগুণ সঠিক মাত্রায় বজায় রাখে।
  • এই প্রযুক্তি খাদ্য রূপান্তর হার এবং মাছ চাষে খাদ্য ব্যয় কমিয়ে চাষের সম্ভাব্যতা বৃদ্ধি করে।

 

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]

একইসঙ্গে পরিবেশবান্ধব ও লাভজনক এই ব্যাতিক্রমী প্রযুক্তিতে মাছ চাষ করতে গেলে অবশ্যই জানতে হবে কার্যকর উপায়ে ফ্লক তৈরির কলাকৌশল। আর এই ফ্লক তৈরিতে লাগবে চৌবাচ্চা বা ট্যাংক বা হাউজ, লোহার খাঁচা, ত্রিপল, আউটলেট, টিডিএস মিটার, পিএইচ মিটার, অ্যামোনিয়াম টেস্ট কিড, অক্সিজেনের জন্য মটর, বিদ্যুৎ, মাছের পোনা, খাদ্য ও প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি।

বায়োফ্লকের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী দুই ধরনের ট্যাংকই চাইলে তৈরি করা যায়। ইট সিমেন্ট দিয়ে কিংবা স্টিলের পাত দিয়ে কিভাবে স্থায়ী ট্যাংক তৈরি করতে হয় সেটা সবাই জানেন। এখানে আমরা জানবো কিভাবে অপেক্ষাকৃত স্বল্প খরচে ত্রিপল দিয়ে অস্থায়ী ট্যাংক তৈরি করতে হয়। এর জন্য প্রথমে গ্রেড রড দিয়ে ট্যাংকের বৃত্তাকার খাঁচাটি তৈরি করতে হবে। তারপর যে স্থানে ট্যাংকটি স্থাপন করা হবে সেই জায়গাতে খাঁচার পরিধির সমান করে সিসি ঢালাই দিতে হবে। বৃত্তের ঠিক কেন্দ্রে পানির একটি আউটলেট পাইপ স্থাপন করতে হবে।

এরপর খাঁচাটিকে ঢালাই মেঝের উপর স্থাপন করে মাটিতে গেঁথে দিতে হবে। মেঝের মাটি শক্ত ও সমান হলে ঢালাইয়ের পরিবর্তে পরিধির সমান করে পুরু পলিথিন বিছিয়েও মেঝে প্রস্তুত করা যায়। এরপর উন্নতমানের তারপুলিন বা ত্রিপল দিয়ে সম্পূর্ণ খাঁচাটি ঢেকে দিতে হবে। তার উপর পুরু পলিথিন দিয়ে আচ্ছাদিত করে তাতে পানি মজুদ করতে হবে।

জানা জরুরী ৩০০০ লিটার পানি ধারনের জন্য ট্যাংকের সাইজ হবে ৬ফিট ব্যাস এবং ৪.৫ ফিট উচ্চতা, ৫০০০ লিটারের জন্য ৮ফিট ব্যাস এবং ৪.৫ ফিট উচ্চতা, ৭৫০০ লিটারের জন্য ১০ফিট ব্যাস এবং ৪.৫ ফিট উচ্চতা, ১০০০০ লিটারের জন্য ১৩ ফিট ব্যাস এবং ৪.৫ ফিট উচ্চতা।

তারপর ট্যাংকের সঙ্গে এয়ার পাম্পের সংযোগ ঘটাতে হবে পানিতে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য। প্রতি ১০ হাজার লিটার পানির জন্য ৭০ থেকে ৮০ ওয়াটের এয়ার পাম্প লাগবে; সেইসঙ্গে ৮ থেকে ১০টি এয়ার স্টোন প্রয়োজন হবে।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]

স্থায়ী বা অস্থায়ী; যেমন ট্যাংকই হোক না কেন, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরবর্তী ধাপ শুরু হয় চাষের ট্যাংকে পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। প্রথমে ট্যাংক ব্লিচিং পাউডার দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। এর পর নির্বাচিত পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে পানি প্রবেশ করাতে হবে। এরপর পানিতে আয়রনের মাত্রা ০.২ পিপিএম এর বেশি হলে পানি থেকে আয়রন দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে। আয়রন দূর করার জন্য প্রতি টন পানিতে ২৫- ৩০ পিপিএম হারে ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগের পর ১০ – ১২ ঘন্টা একটানা বাতাস সরবরাহ করতে হবে।

তারপর ৫০ পিপিএম হারে ফিটকিরি প্রয়োগ করে আরও ১২ ঘন্টা পানিতে অনবরত বাতাস সরবরাহ করতে হবে। ২৪ ঘন্টা পর পানিতে ১০০  হারে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট ( CaCO3) চুন প্রয়োগ করে বাতাস সরবরাহ নিয়মিত করতে হবে। এরপর নির্বাচিত পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে পানি প্রবেশ করাতে হবে। এসময় পানির যে গুনাবলীর দিকে নজর রাখতে হবে সেগুলো হলো-

  • তাপমাত্রা থাকতে হবে ২৫ – ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে
  • পানির রং – সবুজ, হালকা সবুজ, বাদামী হলে চলবে
  • দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমান প্রতি লিটারে ৭- ৮ মিলিগ্রাম থাকতে হবে
  • পিএইচ হতে হবে ৭.৫ থেকে ৮.৫ এর মধ্যে
  • ক্ষারত্ব থাকতে হবে প্রতি লিটারে ৫০ – ১২০ মিলিগ্রাম
  • খরতা প্রতি লিটারে ৬০ – ১৫০ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম প্রতি লিটারে ৪ – ১৬০ মিলিগ্রাম
  • অ্যামোনিয়া প্রতি লিটারে ০.০১ মিলিগ্রাম
  • নাইট্রাইট প্রতি লিটারে ০.১ – ০.২ মিলিগ্রাম
  • নাইট্রেট প্রতি লিটারে ০ – ৩ মিলিগ্রাম
  • ফসফরাস প্রতি লিটারে ০.১ – ৩ মিলিগ্রাম
  • হাইড্রোজেন সালফাইড (H2S) প্রতি লিটারে ০.০১ মিলিগ্রাম
  • আয়রন প্রতি লিটারে০.১ – ০.২ মিলিগ্রাম
  • পানির স্বচ্ছতা ২৫ – ৩৫ সে.মি.
  • পানির গভীরতা – ৩ থেকে ৪ ফুট
  • ফলকের ঘনত্ব – ৩০০ গ্রাম / টন
  • টিডিএস প্রতি লিটারে ১৪০০০ – ১৮০০০ মিলিগ্রাম
  • লবণাক্ততা – ৩ – ৫ পিপিটি

এ তো গেল মাছের জন্য জলাধার নির্মাণের খেলা। এবার তার বাঁচা ও বেড়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত জলজ পরিবেশ, অর্থাৎ ফ্লক তৈরির পালা। পানিতে ফ্লক তৈরির জন্য প্রথমে চাষ ট্যাংকের ১২ ভাগের ১ ভাগ পানি নিয়ে সেই পানিতে ১০০০ পিপিএম হারে আয়োডিনবিহীন লবণ প্রয়োগ করতে হবে। লবণ প্রয়োগের পর টিডিএস পরীক্ষা করে নিতে হবে। বায়োফ্লকের জন্য ১৪০০ – ১৮০০ পিপিএম, টিডিএস থাকা ভাল।

যদি লবণ প্রয়োগের পর কাঙ্খিত টিডিএস পাওয়া না যায়, তা হলে কম পরিমাণ লবণ প্রয়োগ করে আদর্শ মাত্রায় টিডিএস রাখতে হবে। এরপর প্রথম ডোজে ৫ পিপিএম প্রেবায়োটিক, ৫০ পিপিএম চিটাগুড়, ৫ পিপিএম ইস্ট, পানি প্রতি টনের জন্য ১ লিটার, একটি প্লাস্টিকের বালতিতে অক্সিজেন সরবরাহ করে ৮- ১০ ঘন্টা কালচার করে প্রয়োগ করতে হবে। ২য় দিন থেকে ১ পিপিএম প্রোবায়োটিক, ৫ পিপিএম চিটাগুড়, ১ পিপিএম ইস্ট, প্রতি টনের জন্য ১ লিটার পানি দিয়ে কালচার করে প্রতি দিন প্রয়োগ করতে হবে।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]

পানিতে যথাযথ পরিমাণ ফ্লক তৈরি হলো কিনা সেটা বুঝতে কিছু ব্যাপার নজরে রাখতে হবে। যেমন-

  • পানির রং যেন সবুজ বা বাদামী দেখায়।
  • পানিতে যেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ কণা দেখা যায়।
  • পানির অ্যামোনিয়া পরীক্ষা করলে যেন পানি অ্যামোনিয়া মুক্ত দেখায়।
  • প্রতি লিটার পানিতে ফ্লকের ঘনত্ব যেন ০.৩ গ্রাম পাওয়া যায়।
  • ক্ষুদেপানা দেওয়ার পর তাদের যেন ঠিকঠাক বংশবিস্তার হয়।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]

এইভাবে বায়োফ্লক তৈরি করে চাষ করা যায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ । কিন্তু আমাদের দেশে সচরাচর যেসব মাছ চাষ করা হচ্ছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, তেলাপিয়া, রুই, শিং, মাগুর, পাবদা, গুলশা, চিংড়ি প্রভৃতি। তবে, যারা বায়োফ্লক প্রযুক্তিটি প্রথমবারের মত ব্যবহার করতে যাচ্ছেন তারা অবশ্যই প্রথমে তেলাপিয়া, শিং ও মাগুর মাছ দিয়ে চাষ শুরু করবেন। অন্যান্য দেশে অবশ্য তেলাপিয়া ও চিংড়িই মূলত বায়োফ্লক পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। বায়োফ্লকে চাষকৃত মাছের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাছটির নাম  চিংড়ি।

বায়োফ্লকে পুকুরের চেয়ে মাছের খাদ্য খরচ ৩০ শতাংশ কম লাগে। মাছ চাষে মুলত শতকরা ৬০ ভাগ খরচই খাবারের জন্য ব্যয় হয়। এই পদ্ধতিতে সিস্টেমের উপকারী ব্যাকটেরিয়া ট্যাংকেই অণুজীব প্রোটিন তৈরি করে, তাই এ পদ্ধতিতে অন্যান্য সিস্টেমের চেয়ে অনেক কম খাবার লাগে। ফলে চাষের খরচ কমে যায় এবং লাভ হয় বেশি। তাছাড়া পুকুরের সমপরিমাণ জায়গায় বায়োফ্লকে অন্তত ২০ গুণ বেশি মাছ চাষ করা যায়। অর্থাৎ কম জায়গা ব্যবহার করে অধিক পরিমাণে মাছ উৎপাদন সম্ভব এই পদ্ধতিতে।

 

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ [ Biofloc Technology Fish Farming ]

বায়োফ্লকে মাছের রোগবালাই হয় খুবই কম। এই পদ্ধতিতে প্রকৃতিতে বিদ্যমান উপকারি ব্যাকটেরিয়া (প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া) ব্যবহার করা হয় বলে পানির গুণাগুণ বৃদ্ধি ও রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে পুরো সিস্টেমকে প্রদান করা সম্ভব হয় উচ্চ বায়োসিকিউরিটি। ফ্লকে ব্যবহৃত এসব উপকারি ব্যাকটেরিয়া মাছের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলোকে বৃদ্ধি পেতে বাধা প্রদান করে

 

ফলে ঐসব ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ থেকে রক্ষা পায় মাছ। তাই উন্নত এই প্রযুক্তিতে মৎস্য খামারকে রক্ষা করা সম্ভব হয় রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে। শুধু কি তাই? এটি স্বীকৃতভাবে পরিবেশবান্ধব একটি মাছ চাষ পদ্ধতি। কারণ এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন নেই বললেই চলে।

মাশরুম চাষে হতে পারেন সফল

জমি না থাকলেও মাশরুম চাষে হতে পারেন সফল , প্রকৃতি আমাদের উদ্ভিদ আকারে অনেক ধরনের খাদ্য উপাদান দিয়েছে। মাশরুম তার মধ্যে অন্যতম। খাদ্যগুণে সমৃদ্ধ অত্যন্ত স্বাস্থ্যপ্রদ একটি খাবার ছত্রাক জাতীয় এই উদ্ভিদটি।

মাশরুম চাষে হতে পারেন সফল

মাশরুমের পুষ্টিমান তুলনামূলকভাবে অত্যধিক এবং এর প্রোটিন অতি উন্নতমানের ,যা মানব দেহের জন্য অতিশয় দরকারি। একটি পরিপূর্ণ  প্রোটিনের পূর্বশর্ত হলো মানব দেহের অত্যাবশ্যকীয় ৯টি অ্যাসিডের  উপস্থিতি। মাশরুমে অতীব প্রয়োজনীয় এই ৯টি অ্যামাইনো অ্যাসিডের সবকটিই বিদ্যমান মাশরুমের মধ্যে। পাশাপাশি এর আছে নানা ঔষধি গুণাগুণ। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের মতো জটিল বহু রোগের মহৌষধ প্রাচীন এই উদ্ভিদটি।

যে কারণে স্বাস্থ্যসচেতন লোকদের খাবারের তালিকায় একেবারে শীর্ষে থাকে মাশরুমের নাম। মাত্র বছর কয়েক আগেও একে বিদেশি একটি খাবার মনে করা হলেও স্বাদ, পুষ্টি ও ঔষধিগুণের জন্য আমাদের দেশেও দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বহু ভেষজ গুণসম্পন্ন খাবারটি। দেশেই এখন চাষ হচ্ছে কয়েক প্রজাতির উন্নত জাতের মাশরুম।

শুধু কি পুষ্টিগুণই মাশরুমের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির একমাত্র কারণ? বাংলাদেশে জমির অপ্রতুলতা, বেকারত্ব, পুষ্টিহীনতা, মাথাপিছু আয়ের স্বল্পতা, মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান, সর্বোপরি দারিদ্র্য বিমোচন ইত্যাদি বহুমুখী বিষয় বিবেচনায় সম্ভাবনাময় একটি ফসল এই মাশরুম । এদেশের আবহাওয়াও মাশরুম চাষের জন্য অত্যান্ত উপযোগী। ছাত্রাক জাতীয় এই উদ্ভিদটি চাষের জন্য কোনো উর্বর জমির প্রয়োজন হয় না বিধায় দেশে মাশরুম উৎপাদন যতই বাড়ানো হোক না কেন তাতে কোনো ফসলেরই উৎপাদন কমার সম্ভাবনা নেই।

এক প্রকারের ছত্রাক হওয়ায় অন্যান্য উদ্ভিদের মতো নিজের খাবার তৈরির জন্য সূর্যের আলোর প্র্যোজন পড়ে না মাশরুমের। ফলে ঘরের ভেতরেও এর চাষ করা যায়।  যার মোটেই চাষের জমি নেই তিনিও বসত ঘরের পাশের অব্যবহৃত জায়গায় অনেক পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করতে পারেন। এজন্য ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে  মাশরুমের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। সব শ্রেণি ও পেশার মানুষই চাষ করতে পারেন এটি। গ্রাম-গঞ্জে, শহরে এমনকি অতিমাত্রায় বিলাসিদের প্রাসাদেও সহজেই স্থান করে নিতে পারে খাবারটি।

মাশরুম চাষ করতে বেশি টাকা খরচ করতে হয়না। ছোট একটু জায়গাতেও এর চাষ করা সম্ভব। সঠিক ভাবে মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতি জানা থাকলে এই চাষ এবং ব্যবসা করে প্রচুর টাকা আয় করা সম্ভব। কেননা দেশের বাজারে মাশরুমের চাহিদা এখন অনেক বেশি।

তাই কেউ যদি একজন কৃষিপ্রেমী হয়ে থাকেন এবং কম টাকা বিনিয়োগ করে লাভজনক ব্যবসা শুরু করতে চায়, মাশরুম চাষ হতে পারে তার জন্য ভালো একটি অপশন।

 

 

মাশরুম প্রকৃত অর্থে কোন উদ্ভিদ বা বনস্পতি গাছ নয়। যদিও সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে একে উদ্ভিদজাতীয় প্রজাতি হিসাবেই ধরা হয়ে থাকে কিংবা ধরা যায়। অনেক সময় কিছু স্যাঁতসেঁতে ছায়াযুক্ত স্থানে ছাতার আকৃতির সাদা ও বাদামী রঙের এক ধরণের ছত্রাক জন্মাতে দেখা যায়। এগুলোকেই মাশরুম বলা হয়ে থাকে, যদিও এইগুলো খাওয়ার যোগ্য হয়না। খাওয়ার জন্য যে মাশরুম রয়েছে সেটা আলাদা এবং সেই খাওয়ার মাশরুম বিশেষভাবে চাষ করেই উৎপাদন করতে হয়।

বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে মাশরুমের অনেক চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে বিদেশি বাজারে এর চাহিদা প্রচুর। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, চাইনিজ-ইতালিয়ানসহ বিভিন্ন ডিসে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাদ্য তৈরি করার জন্য মাশরুমের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই গ্রাহকদের খাওয়ার উপযোগী করে তোলার জন্য এবং গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করার জন্য আলাদা রকমের মাশরুম উৎপাদন করা হয়।

পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির ছত্রাক দেখতে পাওয়া যায় । সেগুলোর মধ্যে যেসব ছত্রাক মানুষের খাওয়ার জন্য উপযোগী, বিষমুক্ত এবং পুষ্টিকর সেগুলোকেই মাশরুমের শ্রেণীতে ধরা হয়ে থাকে। সে হিসেবে ওয়েস্টার, মিল্কি, বাটন, শীতাকে, পেডিস্ট্রও নামক মাত্র পাঁচ প্রজাতির মাশরুম কৃত্রিমভাবে চাষের উপযোগী। আমাদের দেশের জলবায়ুতে তিনটি প্রজাতিকে অধিক উপযুক্ত মানা হয়ে থাকে এবং সেগুলো হলো ওয়েস্টার মাশরুম, মিল্কি মাশরুম এবং বাটন মাশরুম।

মাশরুম চাষে প্রয়োজনীয় জমির পরিমাণ

 এমনিতে চাইলে মাশরুমের চাষ যে কেউ চাইলে নিজের ঘর থেকেও শুরু করতে পারবেন। এটা একটি অনেক লাভজনক ঘোরোয়া ব্যবসার আইডিয়া। সাধারণত প্রতি বর্গ মিটারে ১০ কেজি মাশরুম চাষ করা যায়। ঘরের ছাদে বা ছায়াযুক্ত কোনো খালি ঘরে মাশরুম উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে।

এছাড়া বড় স্তরে এর চাষ শুরু করতে চাইলে জমিতে বা ঘরের বাইরে মাশরুমের চাষ হতে পারে। সেক্ষেত্রে সেখানে কাঠ এবং ছন বা বাঁশের চালা দিয়ে ঘর তৈরি করে নিতে হবে এবং হাওয়া বাতাস যাতে ঢুকতে না পারে তার ব্যবস্থা রাখতে হবে। কারণ সূর্য্যের আলো পড়লে কিংবা বাইরের হাওয়া বাতাস ঢুকলে মাশরুম খারাপ হয়ে যাবে।

মাশরুম চাষে খরচ

কেউ যদি ছোটস্তরে মাশরুমের চাষ শুরু করতে চান তাহলে তার ১৫-৩০ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে। আগ্রহী চাষি যদি ঘর থেকে শুরু করেন এবং সেই ঘর গ্রাম এলাকায় হয় তাহলে এক্ষেত্রে খরচ আরও কিছুটা কম হবে।

কারণ মাশরুম চাষ করার জন্য ব্যবহার হওয়া বাঁশ, ছন, গমের ভুসি, শুকনো খড়, কাঠ ইত্যাদি সামগ্রীগুলো গ্রাম এলাকায় সহজেই পাওয়া যায়। এছাড়াও বড়স্তরে মাশরুম উৎপাদন শুরু করতে চাইলে এক লাখ টাকা থেকে শুরু করে পরবর্তীতে সক্ষমতা অনুযায়ী বিনিয়োগ বাড়ানো যেতে পারে।

মাশরুম চাষের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়  সামগ্রী – 

১. গমের ভুসি

২. মাশরুম বীজ

৩. খড় ভেজানোর জন্য ড্রাম বা মাটির গামলা

৪. ধানের শুকনো খড়

৫. পলিথিন ব্যাগ

৬. মাশরুম কাটার ছুরি

৭. জলের স্প্রে

কম্পোস্ট তৈরির পদ্ধতি

 মাশরুম চাষ করার জন্য প্রথমে কম্পোস্ট খাদ তৈরি করে নেওয়া আবশ্যক।

কেননা এই চাষ সঠিক এবং সফল ভাবে করার জন্য কম্পোস্ট খাদ এর গুরুত্ব অনেক বেশি। কম্পোস্ট বানানোর জন্য ধানের শুকনো খৈল, গমের ভূসি, শস্যের খৈল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

কপোস্ট তৈরি করার জন্য  একটি বড় পাত্রে বা ড্রামে ১৫০০ লিটার পানিতে ১.৫ কেজি ফরমালিন এবং ১৫০ গ্রাম বেভিস্টিন মেশাতে হবে। এরপর এক কুইন্টাল এবং ৫০ কেজি গমের ভূষি ও ধানের ভূষি ভিজিয়ে দিয়ে ভালো করে মেশাতে হবে এই মিশ্রনে।

তারপর মিশ্রনটিকে কিছু সময় প্লাস্টিকের ত্রিপাল দিয়ে ভালো করে ঢেকে রাখতে হবে যাতে মিশ্রণটি জীবাণুমুক্ত হয়ে থাকে এবং বাইরের হাওয়া বাতাস ঢুকে রাসায়নের গুণাগুণ নষ্ট করতে না পারে।

মাশরুমের বীজ সংগ্রহ

 এমনিতে মাশরুমের বীজ গুলোকে Mushroom Spawnও বলা হয়। আজকাল অনলাইনে বিভিন্ন ই-কমার্স মার্কেটপ্লেসগুলোতে সহজেই মাশরুমের বীজ কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বীজের দোকান কিংবা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও মাশরুম বীজ কিনতে পাওয়া যায়। প্রতি কেজি মাশরুম বীজের দাম ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা হতে পারে।

মাশরুমের বীজ রোপণের প্রক্রিয়া

 ভূষির মিশ্রণ তৈরি করার পর বীজ লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। মাশরুম রোপন করার আগে ভেজানো ভূষি বাইরের বাতাসে কোনো খোলা জায়গায় ছড়িয়ে দিতে হয় যাতে ভুষিতে সিক্তভাব না থাকে। এরপর পলিথিন ব্যাগের ভিতরে প্রথমে ভূষি ভরতে হয়। তারপর মাশরুমের বীজ ভালো করে ছড়াতে হয়। এবার আবার ছড়ানো বীজের ওপরে কিছু ভূষি দিয়ে দিতে হবে এবং তার ওপরে মাশরুম এর বীজ  আবার ছড়াতে হবে।  এই প্রক্রিয়াটি অন্তত ৪ বার করতে হয়। মাশরুম উৎপাদনের জন্য প্রতি ৩ কেজি ভূষির মিশ্রনে ১০০ গ্রাম বীজ লাগানো যায়। এরপর পলিথিন ব্যাগে ১৫-২০টি ছিদ্র বানিয়ে দিতে হয় যাতে অতিরিক্ত জল ঝরে পড়ে যেতে পারে। যে জায়গায় মাশরুম উৎপাদন করতে চাচ্ছেন সে স্থানে পলিথিন ব্যাগ গুলো রেখে দিতে হয়।

মনে রাখতে হবে, পলিথিন ব্যাগগুলো এমন একটি জায়গায় রাখা দরকার যেখানে হাওয়া বাতাস লাগার সুযোগ অনেক কম। যতদিন এই ছত্রাক তৈরি হয়ে কাটার উপযোগী না হয় ভূষির সিক্তভাব বজায় রাখার জন্য পানি স্প্রে করে যেতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকারের মাশরুমের রোপন পদ্ধতিতে সামান্য পার্থক্য থাকে।

মাশরুমকে হাওয়া বাতাস থেকে বাঁচানোর উপায়  

 মাশরুম চাষের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ বিষয়ে সতর্কতা খুবই জরুরী। মাশরুম যেহেতু একধরনের ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদ তাই  চাষের স্থানটি ছায়াযুক্ত হওয়া দরকার। সে স্থানে যাতে বাইরের কোনো রকম হাওয়া বাতাস কিংবা সূর্য্যের আলো না ঢুকে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

তাই চাষের শুরুর দিকে হাওয়া বাতাস থেকে বাঁচানোর জন্য ভূষি ভরা পলিথিন ব্যাগগুলো ঘরে ১৫ -২০ দিনের জন্য রুদ্ধ অবস্থায় রাখতে হবে।

১৫ দিন পর হাওয়া লেগে থাকলেও কোনো ভয় নেই। তাই ১৫ দিন পরেই ঘরের দরজা খোলা যাবে।

১৫-২০ দিন যাওয়ার পর ঘরটি খুলে দিলে দেখা যাবে ভূষির উপর সাদা রঙের ছত্রাকের জাল ছড়িয়ে রয়েছে। এই সময় মাশরুম উৎপাদনের স্থানে যেন হাওয়া দেওয়া যায় তাই একটি ফ্যান এর ব্যবস্থা করে রাখা দরকার।

মাশরুম এর ফসল কাটার সময়

 এমনিতে মাশরুম এর ফসল সম্পূর্ণভাবে তৈরি হতে ৩০ থেকে ৪০ দিনের সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে ফসল কাটার জন্য তৈরি হয়ে যাবে।

মাশরুম চাষ করে কতটা লাভ করা যাবে

 এমনিতে ভালো করে মাশরুম উৎপাদন করতে পারলে এবং সঠিক সময়ে ফসল কেটে সেগুলোকে বিক্রি করতে পারলে দুই থেকে তিন গুণ লাভ করা সম্ভব।

এই ব্যবসাতে লাভের পরিমান অনেক বেশি। তবে এর জন্য সঠিকভাবে মাশরুমগুলোকে বিক্রি করার কৌশল জানতে হবে। যত অধিক পরিমানে মাশরুম এর উৎপাদন করতে পারবেন ততটাই অধিক মুনাফা আপনার হবে। তাই সবকিছুর আগে মাশরুম চাষ পদ্ধতি সঠিক ভাবে জেনে একটি ভালো এবং সঠিক জায়গাতে মাশরুম উৎপাদন করতে জানতে হবে।

তৈরি হওয়া মাশরুম গুলোর মার্কেটিং করুন

ভালো ফসল ফলিয়েও লাভ নেই যদি না যথোপযোক্ত মার্কেটিং করা না যায়।  তাই,  সঠিক মার্কেটিং পন্থা অবলম্বন করে উৎপাদিত মাশরুমগুলোকে বিক্রি করার চেষ্টা করতে হবে।

এমনিতে শহরে মাশরুম এর চাহিদা অনেক বেশি, তাই শহরে অনেক তাড়াতাড়ি এগুলোকে বিক্রি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে শহরে এসে মার্কেটিং অবশ্যই করতে হবে।

যদি তৈরি হওয়া মাশরুম গুলো ৭ দিনের অধিক সময় চাষির কাছেই থাকে তাহলে সেগুলো নষ্ট হওয়া শুরু হবে। তাই কম সময়ের মধ্যেই মাশরুমগুলো বিক্রি করতে হবে।

  • আসে পাশের শহর গুলোতে গিয়ে সেখানে থাকা বড় বড় দোকান গুলোর সাথে যোগাযোগ করুন।
  • খাবারের হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট ইত্যাদির সাথে যোগাযোগ করুন।
  • মার্কেটিং এর জন্য দু-চার জন ছেলে রেখে তাদের মাধ্যমে বিক্রি করাতে পারবেন।
  • কোনো বড় খাদ্যপণ্য ডিস্ট্রিবিউটারের সাথে যোগাযোগ করুন।
  • অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে প্রচার বা মার্কেটিং করুন।
  • মাশরুম বিক্রি করার নিজের ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন।

মাশরুম চাষের  জন্য প্রশিক্ষণ  জরুরি

মাশরুম এর চাষ করাটা একটি অনেক জটিল প্রক্রিয়া। কেবল অনলাইনে আর্টিকেল পড়ে সবটা বুঝা সম্ভব না। মাশরুম চাষে সফল হতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ জরুরি। তাই ব্যবসা শুরুর আগে দেশের মধ্যে থাকা বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বা কৃষির সাথে জড়িত সংগঠন গুলোর সাথে যোগাযোগ করে সঠিক ভাবে মাশরুম চাষ করার পদ্ধতি শিখে ও জেনে নেয়া উচিত।

এমন না যে, ভালো করে প্রশিক্ষণ না নিয়ে মাশরুম এর চাষ করা যাবে না। কিন্তু সফলতার সম্ভাবনা বেড়ে যায় উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নেয়া থাকলে।

 

পেঁপে চাষের পদ্ধতি ,যেভাবে পেঁপে চাষে মিলবে দ্বিগুণ ফলন

পেঁপে চাষের পদ্ধতি ,যেভাবে পেঁপে চাষে মিলবে দ্বিগুণ ফলন, গ্রামের বাড়ির উঠানে পেঁপে গাছ পরিচিত ছবি। পেঁপের রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ। এটি দারুণ জনপ্রিয় ফল হলেও সবজি হিসেবেও সর্বত্র সমাদৃত। লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন পেঁপে। আর আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করলে দ্বিগুণ ফলন পাওয়া সম্ভব।

পেঁপে চাষের পদ্ধতি ,যেভাবে পেঁপে চাষে মিলবে দ্বিগুণ ফলন

পেঁপে স্বল্পমেয়াদী ফল, চাষের জন্যও বেশি জায়গার প্রয়োজন পড়ে না। বাড়ির আঙিনায় কয়েকটি গাছ লাগালে সেটা থেকে সারাবছর সবজি-ফল পাওয়া যায়।

জেনে নেওয়া যাক পেঁপে চাষের পদ্ধতি-

পেঁপে গাছ মোটেও জলাবদ্ধতা সহনশীল নয়। পেঁপে চাষের জন্য জলাবদ্ধতামুক্ত এবং সেচ সুবিধাযুক্ত জমি নির্বাচিত করতে হবে। জমি একাধিকবার চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে তৈরি করতে হবে। দ্রুত পানি নিষ্কাষণে ‘বেডপদ্ধতি’ অবলম্বন করা ভালো। পাশাপাশি দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ২০ সেন্টিমিটার গভীর নালা থাকবে। নালাসহ প্রতিটি বেড ২মিটার চওড়া এবং জমি অনুযায়ী লম্বা হবে।

১৯৯২ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট শাহী নামের একটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করে। জাতের বৈশিষ্ট্য হলো- এটি একলিঙ্গী। গাছের উচ্চতা ১.৬ থেকে ২ মিটার। কাণ্ডের খুব নিচু থেকে ফল ধরে। ডিম্বাকৃতি ফলের ওজন হয় ৮০০-১০০০ গ্রাম। আর ফলপ্রতি বীজ হয় ৫০০-৫৫০টি। ফল বেশ মিষ্টি ও সুস্বাদু। রং গাঢ় কমলা থেকে লাল। গাছ প্রতি ফলের সংখ্যা ৪০-৬০টি। এ জাত দেশের সব জায়গায় চাষ উপযোগী।

পদ্ধতি

পেঁপের চারা বীজতলা ও পলিথিন ব্যাগে তৈরি করা যায়। চারা তৈরির ক্ষেত্রে ১০-১৫ সেন্টিমিটার সারি করে প্রতিটিতে ৩-৪ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে। বপনের ১৫-২০ দিন পর চারা বের হয়। আর ৪০-৫০ দিন পর তা রোপণের উপযোগী হয়।

২.২ মি দূরত্বে পেঁপের জন্য গর্ত তৈরি করতে হবে। প্রতি গর্তে ৩টি করে চারা রোপণ করলে হেক্টরপ্রতি চারা লাগবে ৭৫০০টি। এসব সুস্থ-সবল চারা পেতে ৪০০-৫০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন। তবে হাইব্রিড পেঁপের জন্য ১০০-১৫০ গ্রাম বীজ যথেষ্ট।

চারা রোপণের ১৫-২০ দিন আগে বেডের মাঝ বরাবর ২ মিটার দূরত্বে তৈরি করতে হবে গর্ত। এর সাথে গর্তপ্রতি ১৫ কেজি পচা গোবর, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম জিপসাম, ২০ গ্রাম বরিক এসিড এবং ২০ গ্রাম জিংক সালফেট সার প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মেশাতে হবে। সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে গর্ত পূরণ করে সেচ দিতে হবে।

আশ্বিন এবং পৌষ মাস উন্নত পদ্ধতিতে পেঁপে চাষে সফলতা পেতে বীজ বপন ও চারা রোপণের সময়। বপনের ৪০-৫০ দিন পর অর্থাৎ মাঘ-ফাল্গুন মাসে চারা রোপণের উপযোগী হয়।

 

 

চারা রোপণের আগে গর্তের মাটি ভালোভাবে ওলট-পালট করে নিতে হবে। প্রতি গর্তে ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্বে ত্রিভুজ আকারে ৩টি করে চারা রোপণ করতে হবে। বীজতলায় উৎপাদিত চারার উন্মুক্ত পাতাগুলো ফেলে দিলে রোপণ করা চারার মৃত্যুহার হ্রাস পায়। এ ছাড়া চারা দ্রুত বড় হয়।

পলিব্যাগে উৎপাদিত চারার ক্ষেত্রে খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। পলিব্যাগটি দেখেশুনে অপসারণ করতে হবে, যাতে মাটির বলটি ভেঙে না যায়। পড়ন্ত বিকেলে চারা রোপণের জন্য উত্তম সময়। লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে চারার গোড়া বীজতলা বা পলিব্যাগে মাটির যতটা গভীরে ছিল তার চেয়ে বেশি নিচে না যায়।

ভালো ফলন পেতে হলে পেঁপে গাছে সময়মতো সুষমমাত্রায় সার দিতে হবে। প্রতি গাছে ৪৫০-৫০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৪৫০-৫০০ গ্রাম এমওপি সার দিতে হবে। চারা রোপণের এক মাস পার হলে প্রতিমাসে গাছপ্রতি ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম এমওপি সার দিতে হয়। গাছে ফুল আসার পর এই মাত্রা দ্বিগুণ করতে হবে। মাটিতে রসের অভাব হলে পানির ব্যবস্থা করতে হবে।

উন্নত পদ্ধতিতে পেঁপে চাষে অবশ্যই পরিচর্যার দিকে শতভাগ খেয়াল রাখতে হবে। জমি সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। বর্ষা মৌসুমে আগাছা দমন করতে গিয়ে মাটি যাতে বেশি আলগা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজন অনুযায়ী পানি সেচ দিতে হবে। সেচের ও বৃষ্টির পানি যাতে জমিতে জমে না থাকে সে জন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

চারা লাগানোর ৩-৪ মাস পর গাছে ফুল আসলে প্রতি গর্তে একটি করে সুস্থ-সবল স্ত্রী গাছ রেখে বাকিগুলো কেটে ফেলতে হবে। তবে সুষ্ঠু পরাগায়ন ও ফল ধারণের জন্য বাগানের বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে শতকরা ৫টি পুরুষ গাছ থাকা দরকার।

পেঁপের অধিকাংশ জাতের ক্ষেত্রে একটি পত্রক থেকে একাধিক ফুল আসে। এর থেকে ফল ধরে। ফল কিছুটা বড় হওয়ার পর প্রতি পত্রকক্ষে সবচেয়ে ভালো ফলটি রেখে বাকিগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে। দ্বিতীয় বা তার পরবর্তী বছরে যে পেঁপে হয় সেগুলো ঠাসাঠাসি অবস্থায় থাকে। ফলে ঠিকমতো বাড়তে পারে না এবং এদের আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ছোট ফলগুলো ছাঁটাই করতে হবে।

 

 

পেঁপের ভাইরাসঘটিত পাতা মোড়ানো রোগ: এই রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো পাতা নিচের দিকে বা ভিতরের দিকে গুটিয়ে যায়। অন্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে- পত্রশিরা মোটা হয়ে যাওয়া, মাঝেমধ্যে বাইরের দিকে পত্রশিরার স্ফীতি প্রভৃতি দেখা যায়। পাতা চামড়ার মতো খসখসে ও ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং পত্রবৃন্ত বিকৃত হয়ে পাকিয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। গাছের ওপরের দিকের পাতাকেই বেশি আক্রমণ করে। রোগের পরবর্তী পর্যায়ে পত্রমোচন ঘটে। গাছের বৃদ্ধি রোধ হয় এবং গাছে ফুল ও ফল ধরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদি ফল ধরেও তবে তা ছোট, আকারে বিকৃত হয় এবং অকালেই ঝরে পড়ে।

এই রোগের ভাইরাসের প্রধান বাহক হলো বেসমিসিয়া ট্যাবাসি (Bemisia tabaci) নামক সাদা মাছি। এই মাছি এক গাছ থেকে অন্য গাছে উড়ে গিয়ে এই রোগের ভাইরাসের বিস্তারে সাহায্য করে। বাহকের শরীরে ভাইরাস সক্রিয় অবস্থায় থাকাকালে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ছড়িয়ে যায়।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: রোগ প্রতিরোধী উদ্ভিদের জাত রোপণ করার চেষ্টা করুন। পেঁপে গাছের আশেপাশে এই রোগের জীবাণুকে পরাশ্রয় প্রদান করে এমন ধরনের উদ্ভিদ বেড়ে উঠতে দেবেন না। উপকারী পোকামাকড় যাতে অত্যধিক কীটনাশকের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলে নষ্ট করে দিন। ফসল তোলার পরে উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ যাতে জমিতে পড়ে না থাকে সেদিকে নজর রাখুন।

 

করলা চাষে অধিক ফলন এবং ব্যবস্থাপনা কৌশল

করলা চাষে অধিক ফলন এবং ব্যবস্থাপনা কৌশল , করলা দেশের অন্যতম প্রধান সবজি। স্বাদে তিক্ত হলেও এটি প্রিয় সবজি হিসেবেই পরিচিত। আর সঠিক পদ্ধতিতে করলা চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। করলা চাষে অধিক ফলন পেতে সঠিক পদ্ধতি জানা জরুরি।

করলা চাষে অধিক ফলন এবং ব্যবস্থাপনা কৌশল

করলা চাষে মাটি:

যে জমিতে পানি জমে থাকে না, এ ধরনের প্রায় সব রকম মাটিতেই করলার চাষ সম্ভব। আর জৈব পদার্থযুক্ত দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিত করলা চাষে অধিক উপযোগী।

করলা চাষের জন্য জলবায়ু:

করলা চাষের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী। উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় এ সবজি ভালো জন্মে। তবে ফুল আসার সময় অধিক বৃষ্টিপাত ফল ধরাতে সমস্যার করে।

করলার জাত:

দেশে করলার বেশ কয়েকটি উচ্চ ফলনশীল জাত রয়েছে। এর মধ্যে বারি করলা-১ এবং বিএডিসির গজ করলা উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া আরও কয়েক রকমের হাইব্রিড জাত রয়েছে। কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট কৃর্তক উদ্ভাবিত বারি করলা-১ উচ্চফলনশীল জাত। এ জাতের একটি গাছে ২০-৩০টি করলা ধরে। হেক্টরপ্রতি ফলন ৩০ টনের কাছাকাছি।

আরেকটি উচ্চ ফলনশীল করলার জাত হলো বিএডিসির গজ করলা। এ জাতের একটি গাছে ১৫-২০টি ফল ধরে। হেক্টরপ্রতি ফলন ২৫ টনের কিছুটা কম।

করলার আরও যে কয়টি হাইব্রিড জাত আছে, তার মধ্যে বুলবুলি, টিয়া, প্যারট, কাকলি, তাজ-৮৮, গ্রিনস্টার, গৌরব, প্রাইড-১, প্রাইড-২, গ্রিন রকেট, হীরক, মানিক, জয়, রাজা, প্রাচী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

করলার জীবনকাল:

করলার মোট জীবনকাল প্রায় ৪ থেকে সাড়ে চার মাস। তবে জাত-আবহাওয়া ভেদে সময় কম বেশি হতে পারে।

করলার উৎপাদন মৌসুম:

ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের যে কোনও সময় করলার বীজ বোনা যেতে পারে। অনেকে জানুয়ারি মাসেও বপন করে থাকেন। কিন্তু এসময় তাপমাত্রা কম থাকায় গাছ দ্রুত বাড়তে পারে না। এ কারণে আগাম ফসল উৎপাদনে তেমন সুবিধা হয় না।

করলা চাষের জন্য জমি তৈরি ও বপন:

হেক্টরপ্রতি করলা ও উচ্ছের জন্য যথাক্রমে ৬-৭.৫ ও ৩-৩.৫ কেজি বীজ লাগবে। উচ্ছে ও করলার বীজ সরাসরি মাদায় (৪০x৪০x৪০ সে.মি) বোনা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতি মাদায় কমপক্ষে ২টি বীজ বপন অথবা পলিব্যাগে উৎপাদিত ১৫-২০ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হবে। উচ্ছের ক্ষেত্রে সারিতে ১.০ মিটার এবং করলার জন্য ১.৫ মিটার দূরত্বের মাদা তৈরি করতে হবে। মাদা বীজ বুনতে বা চারা রোপণ করতে হলে অন্তত ১০ দিন আগে নির্ধারিত সার প্রয়োগ করে তৈরি করে নিতে হবে।

 

 

করলা চাষের জন্য সেচ ও নিষ্কাশন:

ক্ষেতে খরা হলে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে হবে। পানির অভাবে গাছের বৃদ্ধির বিভিন্ন ধাপে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন প্রাথমিক অবস্থায় চারার বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাওয়া। পরবর্তীতে ফল ঝরে যাওয়া। জুন-জুলাই মাস থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর আর সেচের প্রয়োজন হয় না। জমির পানি নিষ্কাশনের জন্য বেড ও নিকাশ নালা সর্বদা পরিষ্কার করে রাখতে হবে। করলার বীজ উৎপাদনের সময় ফল পরিপক্ব হওয়া শুরু হলে সেচ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। বাউনির ব্যবস্থা করা করলার প্রধান পরিচর্যা। চারা ২০-২৫ সেমি উঁচু হতেই ১.০-১.৫ মি. উঁচু মাচা তৈরি করতে হবে।

 

করলার রোগ বালাই ও দমন:

করলার মাছি পোকা:

স্ত্রী মাছি কচি ফলের নিচের দিকে ওভিপজিটর ঢুকিয়ে ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার স্থান থেকে পানির মত তরল পদার্থ বেড়িয়ে আসে যা শুকিয়ে বাদামী রং ধারণ করে। ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফলের শাস খেতে শুরু করে। এরপর ফল হলুদ হয়ে পচে ঝরে যায়।

দমন ব্যবস্থা: আক্রান্ত ফল বা ফুল সংগ্রহ করে ধ্বংস করা বা পুড়ে ফেলা। ভালোভাবে জমি চাষ করে পোকার পুত্তলি পাখিদের খাবার সুযোগ করে দেওয়া। ক্ষেতের মাঝে মাঝে কাঁঠালের মোথা দেওয়া। এতে করলার পরিবর্তে স্ত্রী মাছি কাঁঠালের মোথায় ডিম পাড়বে। ফলে ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে। প্রথম ফুল আসামাত্র ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করা। প্রতি ১০ শতাংশের জন্য ৩টি। আম বা খেজুরের রসে সামান্য বিষ মিশিয়ে তা বোতলে রেখে জানালা কেটে দিয়ে ক্ষেতের মাঝে মাঝে স্থাপন করা।

 

করলার সাদা মাছি পোকা:

স্ত্রী মাছি কচি ফলে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে কীড়াগুলো ফলের শাস খায়। ফল পচে অকালে ঝরে পড়ে।

দমন ব্যবস্থা: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ। আক্রান্ত অংশ সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে। সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদের যৌথ ব্যবহার। বিষটোপের জন্য থেঁতলানো ১০০ গ্রাম পাকা মিষ্টি কুমড়ার সাথে ০.২৫ গ্রাম সেভিন ৮৫ পাউডার মিশিয়ে ব্যবহার করতে হয়। বিষটোপ ৩-৪ দিন পরপর পরিবর্তন করতে হয়।

করলা চাষের জন্য সার ব্যবস্থাপনা

 

সারের নাম মোট পরিমাণ
(হেক্টর প্রতি)
মোট পরিমাণ (শতাংশ প্রতি) জমি তৈরির সময় (শতাংশ প্রতি) চারা রোপণের ৭-১০
দিন পূর্বে
চারা রোপণের ১০-১৫
দিন পর
চারা রোপনের ৩০-৩৫
দিন পর
চারা রোপনের ৫০-৫৫ 
দিন পর
চারা রোপনের ৭০-৭৫ 
দিন পর
পচা গোবর ২০ টন ৮০ কেজি ২০ কেজি ৫ কেজি
টিএসপি ১৭৫ কেজি ৭০০ গ্রাম ৩৫০ গ্রাম ৩০ গ্রাম
ইউরিয়া ১৭৫  কেজি ৭০০ গ্রাম ১৫ গ্রাম ১৫ গ্রাম ১৫ গ্রাম ১৫ গ্রাম
এমপি ১৫০ কেজি ৬০০ গ্রাম ২০০ গ্রাম ২০ গ্রাম ১৫ গ্রাম
জিপসাম ১০০ কেজি ৪০০ গ্রাম ৪০০ গ্রাম
দস্তা সার ১২.৫ কেজি ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম
বোরাক্স ১০ কেজি ৪০ গ্রাম ৪০ গ্রাম
ম্যাগনেশিয়াম ১২.৫কেজি ৫০ গ্রাম ৫ গ্রাম

 

করলা ফসল সংগ্রহ:

চারা গজানোর ৪৫-৪৫ দিন পর উচ্ছের গাছ ফল দিতে থাকে। করলার বেলায় লেগে যায় প্রায় ২ মাস। স্ত্রীফুলের পরাগায়নের ১৫-২০ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। ফল আহরণ একবার শুরু হলে তা দুমাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে উচ্ছে ও করলার হেক্টর প্রতি ফলন যথাক্রমে ৭-১০ টন (৩০-৪০ কেজি/শতাংশ) এবং ২০-২৫ টন (৮০-১০০ কেজি/শতাংশ) পাওয়া যায়।

নিরাপদে বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য

নিরাপদে বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে আলাপ করবো আজ। বেগুন একটি সর্বাধিক জনপ্রিয় সবজি। বছরজুড়েই এটি চাষ করা যায়। নিরাপদ বেগুন চাষের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে। এসব হলো- জাত ও জাতের বৈশিষ্ট্য, বালাই দমন ও সার প্রয়োগ।

দেশে প্রায় শতাধিক জাতের বেগুন পাওয়া যায়। যেমন- পটলা, ঝুপি, তারাপুরী, কাজলা, ইসলামপুরী  নয়নতারা, খটখটিয়া, শিংনাথ। এসব স্থানীয়, স্থানীয় উন্নত, বারি ও হাইব্রিড জাত সারা দেশে বছরজুড়ে চাষ হয়।

 নিরাপদে বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য

 

চারা উৎপাদন ও সার প্রয়োগ

বেগুনের জমি তৈরি:

আগাছা বেছে মাটি তৈরি করতে হয়। শীতকালীন বেগুন আগস্ট-অক্টোবর ও বর্ষাকালীন জানুয়ারি-এপ্রিলে বীজতলায় বীজ বপন করতে হয়। ২৫ গ্রাম বীজ ৩ বর্গ মিটার বীজতলায় বুনতে হয়। বীজতলায় ৫০ মেস নাইলন নেট দিয়ে ঢেকে চারা উৎপাদন করলে চারা অবস্থায় ভাইরাস রোধ করা সম্ভব। গজানোর ১০-১২ দিন পর চারা দ্বিতীয় বীজতলায় লাগাতে হয়। চারার বয়স ৩০-৪০ দিন অথবা ৪-৬টি পাতা হলে রোপণ করতে হবে।

বেগুনের সার:

জাতের ফলন ক্ষমতা ও অপুষ্টি লক্ষণ দেখে সার দিতে হবে। গাছে অপুষ্টি লক্ষণ দেখে সার ও চুন প্রয়োগ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

 

 

বেগুনের রোগ দমন ব্যবস্থাপনা:

বেগুনের গোড়া পচা, ঢলেপড়া ও ক্ষুদে পাতা রোগ:

গোড়া পচা দমনের জন্য অটোস্টিন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। ঢলেপড়া রোগ ও খাটো আকৃতির পাতা রোগ দমনে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকনাশক এবং ভাইরাস বাহক সাদা মাছি (ইমিটাফ/নাইট্রো প্রয়োগ) দমন করতে হবে।

বেগুনের ফমপসিস রোগ (Phomopsis) :

ফমপসিস রোগ দমনে বীজ শোধন করার জন্য গরম পানিতে (৫১ ডি. সে.) ১৫ মিনিট রাখা, অটোস্টিন ০.১ গ্রাম/৫০ গ্রাম বীজ, মূল জমিতে অটোস্টিন ১০ গ্রাম/৫লিটার পানি স্প্রে করতে হবে।

বেগুনের ডেম্পিং অফ বা চারা ধসা/ঢলে পড়া রোগ:

বীজতলায় ‘ডেম্পিং অফ’ ছত্রাক রোগের আক্রমণ হয়। চারার কাণ্ড ও শিকড়ে রোগ ছড়িয়ে পড়লে চারা মারা যায়। রোভরাল (২ গ্রাম/লি) বা কম্প্যানিয়ন (২ গ্রাম/লি) ৮ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে। অটোস্টিন দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।

বেগুনের পোকা:

ফল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, মেলিবাগ, বিটল, সাদা মাছি ও জেসিড। এসব পোকা দেখা গেলে যথানিয়মে ট্রেসার ২টি স্প্রে তারপর মারশাল এই চক্র অনুসরণ করে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

বেগুনের ডগা ও ফলের মাজরা পোকা:

এই পোকার আক্রমণ অধিক হলে সর্বাধিক ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত ফলন ক্ষতি হতে দেখা গেছে। বেগুন ছাড়াও এ পোকা টমেটো, আলু, মটরশুঁটি ইত্যাদি সবজিকেও আক্রমণ করতে পারে। ফল বিস্বাদ, খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে যায়। পোকা দমন করতে ১-২টি ফসল মৌসুমে গড় দৈনিক হিসাবে শতাধিক বার অতি বিষাক্ত কীটনাশক স্প্রে করার উদাহরণ রয়েছে।

 

বেগুন ট্রেসার মার্শাল প্রয়োগ:

চারা রোপণের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে জমিতে মথ দেখার সাথে সাথে ট্রেসার ১০ লিটার পানিতে ৪ মিলি হারে স্প্রে করতে হবে। জমিতে লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত ডগা অপসারণ করে একই হারে পুনরায় ট্রেসার প্রয়োগ করতে হবে। এর ৭-১০ দিন পর মার্শাল ২০ ইসি ১০ লিটার পানিতে ৩০ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। রোপণের কয়েক দিন পর থেকেই এ পোকার আক্রমণ হয় এবং শেষ ফলটি সংগ্রহ করার আগ পর্যন্ত এর আক্রমণ চলতে থাকে। গ্রীষ্মকালে জীবনচক্র সম্পন্ন করতে ২০-৩০ দিন এবং শীতকালে ৩৪-৪৫ দিন লাগে।

বছরে এরা ৫ বা বেশি বংশবিস্তার করতে পারে। মে-অক্টোবর ৩টি বংশ এবং নভেম্বর-এপ্রিল মাসের মধ্যে ২টি বংশবিস্তার হয়। স্ত্রী মথ পাতার উল্টো দিকে, কুঁড়িতে, বোঁটায় ও ডগায় ডিম পাড়ে। গ্রীষ্মকালে ৩-৫ দিন এবং শীতকালে ৭-৮ দিনে ডিম ফুটে কীড়া বের হয়।

বেগুন ক্ষেতে সমন্বিত বালাই দমন :

বেগুন ক্ষেতে প্রতি সপ্তাহে পোকার উপস্থিতি যাচাই করতে হবে। আক্রান্ত ডগা ও  ফল কীড়াসহ ছিঁড়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। নিরাপদ বেগুন উৎপাদনে ব্যাগিং ও অর্গানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। বেগুনের জমি গভীরভাবে চাষ-মই দিয়ে সমান করে আগাছামুক্ত করতে হবে। জমি স্বল্প ব্যয়ে আগাছামুক্ত রাখতে চাইলে চারা রোপণের ২-৩ দিনের মধ্যে মাটিতে পানিডা ৩৩ ইসি বিঘাতে ৩০০ মিলি প্রয়োগ করতে হবে।

জমি তৈরির শেষ চাষে কার্বোটাফ ৫জি ১.৫ কেজি/বিঘা দিতে হবে। সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া অতিরিক্ত দেওয়া যাবে না। রোপণের ১৫ দিন থেকে সপ্তাহে একদিন ক্ষেতে জরিপ করতে হবে। ক্ষেত আগাছানাশক (পানিডা) দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ফুল আসার আগে ডগা বা পাতায় পোকা দেখলে পোকা ধ্বংস করাসহ বালাইনাশক দিতে হবে।

বেগুন বীজ উৎপাদনে করণীয়:

পরিপক্ব ফল হলদে হলে সংগ্রহ করা। সপ্তাহপর ফলের চামড়া ছিলে বীজসহ মাংসল অংশ কেটে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। রোদে শুকিয়ে আর্দ্রতা ৮ শতাংশ হবে।

বিটি বেগুন ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধ যা জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়েছে। বিটি (ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস) ব্যাকটেরিয়া থেকে জিনকে পৃথক করে বেগুনে স্থানান্তর করা হয়। এই জিন বেগুনে ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকাকে বাধা দেয়।

লাউ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য

লাউ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য, লাউ জনপ্রিয় সবজি, যা অনেকের কাছেই প্রিয় খাবার। এটি সাধারণত শীতকালে বসতবাড়ির আশপাশে চাষ হয়। বর্তমানে প্রায় সারা বছরই লাউ চাষ হয়। একইসঙ্গে সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর সবজি লাউ। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের শাকের মধ্যে সহজলভ্য লাউ শাক। ঘরের কোণে, উঠানে বা খেতখামারে, যেখানেই লাগান না কেন; লাউ গাছ বাড়তে থাকে। অন্যদিকে লাউয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান ও পানি থাকার পাশাপাশি এতে উপকারী ফাইবার। লাউ-মাছের তরকারি, লাবড়া, নিরামিষ, ভাজি, বড়া কিংবা সালাদ হিসেবেও বেশ সমাদৃত।

 

 

লাউয়ের পাতা সবুজ ও নরম। লাউ প্রধানত শীত মৌসুমের। এটি উচ্চতাপ ও অতিবৃষ্টি সহিষ্ণু হওয়ায় সারা বছরও ফলানো যায়। পুরুষ ফুল রোপণের ৪২-৪৫ এবং স্ত্রী ফুল ৫৭-৬০ দিনের মধ্যে ফুটে। হালকা সবুজ রঙয়ের ফলের আকৃতি লম্বা ৪০-৪৫ এবং বেড় প্রায় ৩০-৩৫ সেমি। লাউয়ের ওজন ১.৫-২ কেজি। প্রতি গাছে গড়ে ১০-১২টি লাউ ধরে। চারা রোপণের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে প্রথম ফল তোলা যায়। শীতকালে চাষের জন্য ভাদ্রের প্রথমে আগাম ফসল চাষ করা যাবে।

লাউ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য

জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ এঁটেল, দো-আঁশ মাটি লাউ চাষের জন্য উত্তম। লাউয়ের জীবনকাল গড়ে ১৬৫-১৮৫ দিন। আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। তবে বীজ উৎপাদনের জন্য অক্টোবরের শেষ দিকে বীজ বোনা উত্তম। বিঘাপ্রতি ৭০০-৮০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। বীজবাহিত রোগ প্রতিরোধ এবং সবল সতেজ চারা উৎপাদনে বীজ শোধন জরুরি। কেজিপ্রতি ২ ভিটাভেক্স/ক্যাপটান ব্যবহার করে বীজ শোধন করা যায়।

 

লাউয়ের চারা উৎপাদন ও বীজতলা তৈরি

লাউ চাষের জন্য নার্সারিতে পলিব্যাগে চারা উৎপাদন করে নিতে হবে। এজন্য আলো-বাতাস স্বাভাবিকভাবে পাওয়া যায় এমন জায়গায় ২০-২৫ সেমি উঁচু বেড করে নিতে হবে। বেড়ের ওপর ৪-৫.২ মিটার আকৃতির ঘর তৈরি করে নিতে হবে। ঘরের কিনারা বরাবর মাটি হতে ঘরের উচ্চতা হবে ০.৬ মিটার এবং মাটি হতে ঘরের মধ্যভাগের উচ্চতা হবে ১.৭ মিটার। ঘর তৈরির জন্য বাঁশ, বাঁশের কঞ্চি লাগেবে। এছাড়া ছাউনির জন্য প্লাস্টিক এবং বাঁধার জন্য দড়ি রাখতে হবে।

লাউয়ের বীজ বপন:

বীজ বপনের জন্য ৮x১০ সেমি বা তার থেকে কিছুটা বড় আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা যায়। প্রথমে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিতে হবে। মাটিতে বীজ গজানোর জন্য ‘জো’ নিশ্চিত করতে হবে। মাটি ‘জো’ না থাকলে পানি দিয়ে করে নিতে হবে। এরপর তা পলিব্যাগে ভরতে হবে। এরপর প্রতি ব্যাগে দুটি করে বীজ বুনতে হবে।

বীজতলায় লাউয়ের চারা পরিচর্যা:

নার্সারিতে চারার প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। বেশি শীতে বীজ গজানোর সমস্যা হয়। এজন্য শীতকালে চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বীজ গজানোর পূর্ব পর্যন্ত প্রতি রাতে প্লাস্টিক দিয়ে পলিব্যাগ ঢেকে রাখতে হবে এবং দিনে খোলা রাখতে হবে। চারায় প্রয়োজন অনুসারে পানি দিতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে চারার গায়ে পানি না পড়ে। পলিব্যাগের মাটি চটা বাঁধলে তা ভেঙে দিতে হবে।

লাউয়ের জমি নির্বাচন ও জমি তৈরি:

এসব ফসল চাষে সেচ ও নিষ্কাশনে উত্তম সুবিধাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। একই জমিতে বার বার একই ফসলের চাষ পরিহার করতে পারলে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কমানো যাবে। ব্যাপক শিকড় বৃদ্ধির জন্য জমি এবং গর্ত ভালোভাবে তৈরি করতে হবে।

লাউয়ের বেড তৈরি ও দূরত্ব:

বেডের উচ্চতা হবে ১৫-২০ সেমি, প্রস্থ ২.৫ মিটার এবং লম্বা জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে নিতে হবে। এভাবে পরপর বেড তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি ২টি বেডের মাঝখানে ৬০ সেমি ব্যাসের সেচ নালা থাকবে এবং প্রতি ২ বেড পর ৩০ সেমি প্রশস্ত শুধু নিষ্কাশন নালা থাকবে।

লাউয়ের মাদা তৈরি এবং দূরত্ব:

মাদার আকার হবে ব্যাস ৫০-৫৫ সেমি, গভীরতা ৫০-৫৫ এবং তলদেশ ৪৫-৫০ সেমি। বেডের যেদিকে ৬০ সেমি প্রশস্ত সেচ ও নিষ্কাশন নালা থাকবে সেদিকে বেডের কিনারা হতে ৬০ সেমি বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে ২ মিটার পর পর এক সারিতে মাদা তৈরি করতে হবে। একটি বেডের যে কিনারা হতে ৬০ সেমি বাদ দেওয়া হবে তার পার্শ্ববর্তী বেডের ঠিক একই কিনার থেকে ৬০ সেমি বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে একই নিয়মে মাদা করতে হবে

লাউয়ে সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি:

এসব ফসল দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে এবং অনেক লম্বা সময়ব্যাপী ফল দিয়ে থাকে। কাজেই এসব ফসলের সফল চাষ করতে হলে গাছের জন্য পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পর্যাপ্ত খাবার সংগ্রহের জন্য এর শিকড় অঞ্চল অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত করে।

লাউ ফসলে সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি:

জমি তৈরির সময় সারের যে মাত্রা বলা হয়েছে, তার মধ্যে গোবর চাষের পর এবং টিএসপি, এমপি, জিপসাম ও বোরক্স সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। মাদায় চারা রোপণের যে সারের মাত্রা সুপারিশ করা হয়েছে তা দেওয়ার পর পানি দিয়ে মাদার মাটি ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। তারপর ‘জো’ এলে ৭-১০ দিন পর চারা লাগাতে হবে।

 

 

লাউয়ের চারা রোপণ:

বীজ গজানোর পর ১৬-১৭ দিন বয়সের চারা মাঠে লাগানোর জন্য উত্তম। চারাগুলো রোপণের আগের দিন বিকালে পানি দিয়ে ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। পরের দিন বিকেলে রোপণ করতে হবে। চারাগুলো নার্সারি থেকে ট্রলি বা টুকরি করে মাঠে নিয়ে যেতে হবে। মাঠে প্রস্তুত মাদাগুলোর মাটি ভালোভাবে ওলটপালট করে, এক কোপ দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জায়গা করে নিতে হবে। এরপর পলিব্যাগের ভাঁজ বরাবর ব্লেড দিয়ে কেটে পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলাসহ চারাটি নির্দিষ্ট জায়গায় লাগিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর গর্তে পানি দিতে হবে। পলিব্যাগ সরানোর সময় এবং চারা রোপণের সময় সাবধান থাকতে হবে যাতে চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হলে গাছের বৃদ্ধি দেরিতে শুরু হবে।

লাউয়ের পরবর্তী পরিচর্যা:

লাউ ফসল পানির প্রতি খুবই সংবেদনশীল। প্রয়োজনীয় পানির বেশি হলে ফল ধারণ ব্যাহত হবে এবং ফল আস্তে আস্তে ঝরে যাবে। কাজেই সেচনালা দিয়ে প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। লাউয়ের জমিতে কখনো সব জমি ভিজিয়ে প্লাবন সেচ দেওয়া যাবে না। শুধুমাত্র সেচ নালায় পানি দিয়ে আটকে রাখলে গাছ পানি টেনে নেবে। শুষ্ক মৌসুমে লাউ ফসলে ৪-৫ দিন পর পর সেচ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

লাউয়ের আগাছা দমন:

কিছু নির্দিষ্ট প্রজাতির ঘাস লাউতে বোটল গোর্ড মোজাইক ভাইরাস নামে যে রোগ হয় তার হোস্ট। কাজেই চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত জমি সব সময়ই আগাছামুক্ত রাখতে হবে। এ ছাড়াও গাছের গোড়ায় আগাছা থাকলে তা খাদ্যোৎপাদন ও রস শোষণ করে নেয়।

 

 

লাউয়ে সার প্রয়োগ:

লাউ চাষের জন্য জমি তৈরির সময় হেক্টর প্রতি ৫০-৬০ টন গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে। হেক্টর প্রতি ৫০ কেজি নাইট্রোজেন ও ৬০ কেজি ফসফরাস দিতে হবে।

লাউয়ের বিশেষ পরিচর্যা:

গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট ডালপালা হয়। সেগুলোকে শোষক শাখা বলা হয়। এগুলো গাছের ফলনে এবং যথাযথ শারীরিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটায়। কাজেই গাছের গোড়ার দিকে ৪০-৪৫ সেমি পর্যন্ত ডালপালা কেটে অপসারণ করতে হবে।

লাউয়ের ফলন:

বারি লাউ-১ এবং বারি লাউ-২ চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৩৫-৪০ টন এবং বিঘাপ্রতি প্রায় ৪.৫-৫.০টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

লাউয়ের বীজ উৎপাদন:

বীজের জন্য অবশ্যই ভালোভাবে পরিপক্ব ফল সংগ্রহ করতে হবে। দুটি উপায়ে ফলের পরিপক্বতা বুঝা যাবে। ফল নাড়ালে ভেতরে বীজের শব্দ পাওয়া যাবে। ফলের খোসা শুকিয়ে যাবে এবং শক্ত হয়ে যাবে কিন্তু ভেতর শুকাবে না। এই অবস্থায় বীজের সংগ্রহের আগে পরিপক্বতার জন্য ফল ২-৩ সপ্তাহ রেখে দিতে হবে।

 

লাউয়ের রোগ বালাই ও দমন:

 

লাউয়ের মাছি পোকা রোগ:

এ পোকা লাউয়ের ফলের মধ্যে প্রথমে ডিম পাড়ে। পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফলের ভেতরে খেয়ে নষ্ট করে ফেলে।

দমন ব্যবস্থা:

মাছি পোকার কীড়া আক্রান্ত ফল দ্রুত পচে যায় এবং গাছ থেকে ঝরে পড়ে। পোকা আক্রান্ত ফল কোনোক্রমেই জমির আশেপাশে ফেলে রাখা উচিত নয়।

 

লাউয়ের ক্ষেতে সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদের যৌথ ব্যবহার:

কিউলিওর নামক সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণে মাছি পোকার পুরুষ পোকা আকৃষ্ট করা সম্ভব। পানি ফাঁদের মাধ্যমে ওই ফেরোমন ব্যবহার করে আকৃষ্ট মাছি পোকাগুলোকে মেরে ফেলা যায়। বিষটোপ ফাঁদে পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী ও পুরুষ মাছি পোকা আকৃষ্ট হয় এবং ফাঁদে পড়ে মারা যায়। ১০০ গ্রাম পাকা মিষ্টি কুমড়া কুচি কুচি করতে হবে।

সেক্স ফেরোমন ফাঁদ

সেটা থেঁতলিয়ে এতে ০.২৫ গ্রাম মিপসিন, ৭৫ পাউডারে এবং ১০০ মিলি পানি মিশিয়ে ছোট মাটির পাত্রে রেখে দিতে হবে। এরপর তিনটি খুঁটি দিয়ে এমনভাবে স্থাপন করতে হবে, যাতে বিষটোপের পাত্রটি মাটি থেকে ০.৫ মিটার উঁচুতে থাকে। বিষটোপ তৈরির পর ৩-৪ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করে তা ফেলে দিয়ে আবার নতুন করে তৈরি বিষটোপ ব্যবহার করতে হয়। সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদ কুমড়া জাতীয় ফসলের জমিতে ক্রমানুসারে ১২ মি. দূরে দূরে স্থাপন করতে হবে।

 

লাউয়ের পামকিন বিটল রোগ:

এই পোকা চারাগাছের পাতায় ফুটো করে। পাতার কিনারা থেকে শুরু করে সম্পূর্ণটা খেয়ে ফেলে। বয়স্ক গাছের পাতার শিরা-উপশিরা রেখে বাকি সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। এ পোকা ফুল ও কচি ফলে আক্রমণ করে। এটি শিকড় বা মাটির নিচে থাকা কাণ্ড ছিদ্র করে। ফলে গাছ ঢলে পড়ে। শেষে শুকিয়ে মারা যায়।

 

 

দমন ব্যবস্থা:

চারা অবস্থায় আক্রান্ত হলে হাত দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলতে হবে। ক্ষেত সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। চারা বের হওয়ার পর থেকে ২০-২৫ দিন পর্যন্ত মশারির জাল দিয়ে চারাগুলো ঢেকে রাখলে এ পোকার আক্রমণ থেকে চারাগুলো বেঁচে যায়। আক্রমণের হার বেশি হলে চারা গজানোর পর প্রতি মাদার চারদিকে মাটির সঙ্গে চারাপ্রতি ২-৫ গ্রাম অনুমোদিত দানাদার কীটনাশক (কার্বফুরান জাতীয় কীটনাশক) মিশিয়ে গোড়ায় পানি সেচ দেয়।

 

লাউয়ের মোজাইক রোগ:

চারা অবস্থায় বীজ গজানোর পর বীজপত্র হলুদ হয়ে যায় এবং পরে চারা নেতিয়ে পড়ে। বয়স্ক গাছের পাতায় হলুদ-সবুজ ছোপ ছোপ মোজাইকের মতো দাগ দেখা যায়। দাগগুলো অসম আকারের। দ্রুত বড় হয়। আক্রান্ত পাতা ছোট, বিকৃত ও নিচের দিকে কোঁকড়ানো, বিবর্ণ হয়ে যায়। শিরা-উপশিরাও হলুদ হয়ে যায়। ফুল কম আসে এবং অধিক আক্রমণে পাতা ও গাছ মরে যায়। আক্রান্ত ফল বেঁকে যায় ও গাছের কচি ডগা জটলার মতো দেখায়। ফলের উপরি অংশ এবড়ো থেবড়ো দেখা যায়।

প্রতিকার ব্যবস্থা: আক্রান্ত গাছ দেখলেই প্রাথমিকভাবে তা তুলে ধ্বংস করা। ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার রাখা। ক্ষেতে বাহক পোকা উপস্থিতি দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করে তা দমন করা। রোগাক্রান্ত গাছ থেকে কোনও বীজ সংগ্রহ ও ব্যবহার না করা।

 

লাভজনক পদ্ধতিতে মাছ চাষ এবং উৎপাদন কৌশল

লাভজনক পদ্ধতিতে মাছ চাষ এবং উৎপাদন কৌশল ,মাছ প্রাণীজ আমিষের অন্যতম অনুষঙ্গ। কর্মসংস্থান, বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন এবং পুষ্টি সরবরাহে মাছের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। একই পুকুরে নানা জাতের মাছ চাষ করা যায়। আবার খাল ও ডোবায়ও চাষ করা যায়। আবার চৌবাচ্চা, খাঁচায় করা সম্ভব। নির্দিষ্ট জলাশয়ে পরিকল্পিত উপায়ে স্বল্পপুঁজি, অল্পসময় ও লাগসই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন নিয়ম মেনে প্রাকৃতিক উৎপাদনের চেয়ে অধিক মাছ উৎপাদনই মাছ চাষ। মাছ চাষে লাভবান হতে হলে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত বিশেষ কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়।

লাভজনক পদ্ধতিতে মাছ চাষ এবং উৎপাদন কৌশল

গুণাগুণ ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা

দেশের স্বাদু পানিতে ২৬০টিরও বেশি প্রজাতির মাছ আছে। খাঁড়ি অঞ্চলে ও লোনা পানিতেও কয়েকশ প্রজাতির মাছ আছে। তবে চাষযোগ্য মাছ হলো রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস, সিলভার কার্প, মিরর কার্প, গ্রাস কার্প, কমন কার্প, বিগহেড, রাজপুঁটি, নাইলোটিকা, তেলাপিয়া, বিদেশি মাগুর, থাই পাঙ্গাশ। এসব মাছ খুব দ্রুত বাড়ে। মাছ চাষ শুরু করার আগে প্রয়োজন হচ্ছে সঠিক সুষ্ঠু এবং বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা।

উৎপাদন কৌশল

সনাতন পদ্ধতির মাছ চাষে পুকুরের কোনও ব্যবস্থাপনা ছাড়াই মাটি ও পানির উর্বরতায় পানিতে যে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয় মাছ সেটা খেয়ে জীবনধারণ করে। এক্ষেত্রে আলাদা কোনও পরিচর্যা নিতে হয় না।

আধানিবিড় পদ্ধতিতে নিয়মমতো পুকুর প্রস্তুত করে আংশিক সার ও খাদ্য সরবরাহ করে মাছের খাদ্য উৎপন্ন করতে হয়। পুকুরের বিভিন্ন স্তরে উৎপাদিত খাদ্যের সঠিক ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য রেখে মাছের পোনা ছাড়তে হয়।

নিবিড় পদ্ধতিতে অল্প জায়গা, অল্প সময়ে বেশি উৎপাদনের জন্য সুপরিকল্পিতভাবে সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে হয়।

পুকুর নির্বাচন

পুকুর খোলামেলা রৌদ্রজ্জ্বল জায়গায় এবং বাড়ির আশপাশে হতে হবে। মাটির গুণাগুণ পুকুরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত দো-আঁশ, এঁটেল দো-আঁশ ও এঁটেল মাটি পুকুরের জন্য ভালো। পুকুরের আয়তন কমপক্ষে ১০ শতাংশ হতে হবে। ৩০-৫০ শতাংশ আকারের পুকুর মাছ চাষের জন্য বেশি উপযোগী। পুকুরের গভীরতা ২-৩ মিটার রাখতে হবে। বছরের পুরো সময় পানি থাকতে হবে। পুকুর পাড়ে বড় গাছ বা ঝোপঝাড় থাকা যাবে না।

পুকুর খনন ও প্রাথমিক কাজ

যেখানে পুকুর খনন করা হবে সেখানকার অবকাঠামো, পরিবেশ, পানির গভীরতা, বর্ষায় বন্যার হুমকি, পুকুর পাড়ের ঢাল, বকচর, শুষ্ক মৌসুমে পানি কতটা থাকে, পানি কমে গেলে বাইরে থেকে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা আছে কিনা এসব বিষয়ে সঠিক ধারণা নিয়ে শুরু করতে হবে। এজন্য প্রথমেই অভিজ্ঞ মৎস্য চাষি বা মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। মাছ চাষ শুরু করার আগে বা মাছের পোনা ছাড়ার আগে সঠিক নিয়মে পুকুর তৈরি করা অত্যাবশ্যক। পানিতে প্রাকৃতিক খাবার জন্মানো এবং পুকুরে পানি প্রবেশ এবং নিষ্কাশনের রাস্তা সঠিকভাবে রক্ষা করা অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে অবহেলা করা হলে পরবর্তীতে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। পোনা মাছ ছাড়ার আগে পুকুর তৈরি করে নিতে হবে। নতুন পুকুর কাটা কিংবা পুরনো পুকুরই তৈরি করে নেওয়া আবশ্যকীয় প্রাথমিক কাজ।

ধাপে ধাপে প্রস্তুতি

জলজ আগাছা কচুরিপানা, কলমিলতা হেলেঞ্চা, অন্যান্য গাছ শেকড়সহ তুলে ফেলতে হবে। শোল, গজার, বোয়াল, টাকি রাক্ষুসে মাছ এবং অবাঞ্ছিত মাছ মলা, ঢেলা, চান্দা, পুঁটি সরিয়ে ফেলতে হবে।

প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন পুকুরে পানি থাকলে ড্রামে বা বালতিতে গুলে ঠাণ্ডা করে পুরো পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। মাটি ও পানির গুণাগুণ বিবেচনায় রেখে চুন দেওয়ার এক সপ্তাহ পর জৈব সার বিশেষ করে পচা গোবর দিতে হবে। পুকুর শুকনা হলে সার, চুন/জিওলাইট, গোবর ছিটিয়ে দিয়ে লাঙল দিয়ে চাষ করে দুষণমুক্ত পানি ঢুকাতে হবে। পোনা মজুতের আগে পুকুরে ক্ষতিকর পোকামাকড় থাকলে তা মেরে ফেলতে হবে। পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মালে পোনা মজুত করতে হবে। মৃত্যুহার যেন কম থাকে সেজন্য পোনার আকার ৮-১২ সেন্টিমিটার হতে হবে। নিয়মমতো পুকুরে পোনা ছাড়তে হবে। দিনে দুই বার সকাল ১০টায় এবং বিকেল ৩টায় খৈল, কুঁড়া, ভুসিসহ সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

সতর্কতা ও পরিচর্যা

রোগ প্রতিরোধী মাছের চাষ করতে হবে। সঠিক সংখ্যায় পোনা মজুত করতে হবে। পোনা ছাড়ার আগে পোনা রোগে আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং যাতে আগাছা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতি ৩-৪ বছর পরপর পুকুর শুকিয়ে ফেলে নতুন করে পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হবে।

পোনা যত্নও মজুত

মাছ চাষি হ্যাচারি থেকে যেসব পোনা সংগ্রহ করেন তার অধিকাংশই সরাসরি চাষ পুকুরে ছাড়ার উপযোগী নয়। চাষ পুকুরে ছোট পোনা সরাসরি ছেড়ে অনেক সময় চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এতে ব্যাপক হারে পোনা মারা যায়। এ কারণে পোনা ভালোভাবে নার্সিং করতে হবে। নার্সিং করার পর পোনা বড় ও টেকসই হলে গণনার মাধ্যমে পোনা মজুত পুকুরে দেয়া যায়। পরবর্তীতে খাবার ব্যবস্থাপনার সাথে অন্যান্য ব্যবস্থাপনাও যথার্থ হতে হবে। বেশি পোনা নয় বরং পরিমিত পরিমাণে পোনা ছেড়ে অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ।

পোনা নির্বাচন পরিবহন ও অবমুক্তকরণ

চাষিকে মানসম্মত ব্রুড থেকে উৎপাদিত এবং অন্তঃপ্রজননমুক্ত পোনা, একই আকারের ও বয়সের রোগমুক্ত পোনা সংগ্রহ করতে হবে। মানসম্পন্ন পোনা সংগ্রহ করার পর তা সঠিক নিয়মে পরিবহন এবং পরিবহনের পর যথার্থভাবে পুকুরে অবমুক্ত করতে হবে। পরিবহনজনিত ক্রুটি থাকায় এবং পরিবহনের আগে পোনা সঠিক নিয়মে টেকসই করা হয় না বলে ব্যাপক হারে মারা যায়। অনেক সময় তাৎক্ষণিকভাবে মারা না গেলেও পোনা এতই দুর্বল থাকে যে দুই একদিনের মধ্যে অনেক পোনাই মারা যায়। এ কারণে পোনা পরিবহন ও পোনা ছাড়ার ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে।

পানির গুণাগুণ রক্ষা

মাছ পানিতে থাকে বলেই পানির গুণাগুণ ও পরিবেশ রক্ষা করাটা জরুরি। অথচ অনেক মাছ চাষি পানির গুণাগুণ রক্ষায় সচেষ্ট নন। মাছ চাষের জন্য পানির নির্ধারিত স্থিতিমাপ রয়েছে। এগুলো দক্ষতার সাথে রক্ষা করতে পারলে চাষকালে নানা সমস্যা এড়ানো সম্ভব। চাষিরা টেস্ট কিটের মাধ্যমে মাত্রা  মেপে পানির গুণাগুণ জানতে এবং করণীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।

নিয়মিত ওজন নেওয়া ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা

প্রতি ১০-১৫ দিন পর পর মাছের গড় ওজন নেওয়া আবশ্যক। তা না হলে খাবারের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করা যায় না। মাছের ওজন না নিলে চাষিও বুঝতে পারেন না যে মাছের বাড়বাড়তি সন্তোষজনক নাকি হতাশাব্যঞ্জক। পোনা ছেড়ে এবং খাবার সরবরাহ করেই চাষির দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। মাছের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণ একটি বড় কাজ। মাছের অস্বাভাবিক আচরণ বা দেহে অস্বাভাবিক কোনও কিছু দেখা গেলে বা ক্ষত হলে মৎস্য বিশেষজ্ঞ বা মৎস্য কর্মকর্তার শরণাপন্ন হতে হবে।

 

মাছ পরিবহন

মাছ ধরে সঠিকভাবে বাজারজাত করতে না পারলে চাষি চাষের শেষ দিকে এসে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। যেসব মাছ জীবিত পরিবহন করা হয় সেগুলো অনেক ক্ষেত্রে অধিক সময় পরিবহন বা অন্য কোনও ক্রটির কারণে মারা যায়। এক্ষেত্রে প্লাস্টিক ড্রামে পরিষ্কার পানিসহ পরিমিত মাছ পরিবহন করা উচিত। মাছ ধরার ৮-১০ ঘণ্টা আগে খাবার দেওয়া বন্ধ রাখলে মাছ অধিক সময় জীবিত থাকে।

প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ

শুকনো অথবা ভেজা অবস্থায় লবণ দিয়ে মাছ সংরক্ষণ করা যায়। মাছ কেটে নাড়িভুঁড়ি ও মাথা ফেলে দিয়ে চাক করে সেগুলো সিদ্ধ করতে হবে। এরপর লবণ, তেল, মসলা চাকের সাথে মেখে টিনের পাত্রে সুন্দর করে স্তরে স্তরে সাজিয়ে পাত্রটি বায়ুশূন্য করে মুখবন্ধ করতে হবে। একে ফিশকেনিং পদ্ধতি বলে।

মাছ অমূল্য প্রাণীজ জাতীয় সম্পদ। নিজেদের একান্ত প্রয়োজনে পরিকল্পিতভাবে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি পদ্ধতি অনুসরণ এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করলে মাছ চাষে কম খরচে বেশি লাভবান হওয়া যায়। মাছ দিয়ে আমরা আমাদের দেশকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারব।

 

মরিচ চাষের উন্নত পদ্ধতি

মরিচ চাষের উন্নত পদ্ধতি ,মরিচ আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় মসলা জাতীয় ফসল। তরকারি সুস্বাদু করতে মরিচ ব্যবহার হয়ে থাকে। এ ছাড়া ঝাল হিসেবে নানান খাবারে এর ব্যবহার হয়। এর বাজারমূল্যও ভাল। তাই আজ আলোচনা করবো মরিচ চাষের উন্নত পদ্ধতি নিয়ে-

মরিচ চাষের উন্নত পদ্ধতি

 

মাটি ও জলবায়ু

পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত আলো বাতাসময় উর্বর দো-আঁশ মাটিতে মরিচ ভাল হয়। অতিরিক্ত অম্ল মাটি ছাড়া প্রায় সব ধরনের মাটিতেই মরিচ জন্মে। মরিচ গাছে ফুল ধরার সময় ৩৫ থেকে ৪৫ সে. তাপমাত্রা সর্বাপেক্ষা উপযোগী। অধিক বৃষ্টিপাত ও মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া ফুল ঝরে পড়ে।

জাত

মরিচকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। ঝাল ও মিষ্টি। বাংলাদেশে ঝাল মরিচের মধ্যে বগুড়া, চাঁদপুরী, ফরিদপুরী ইত্যাদি আঞ্চলিক মৌসুমি জাত আছে। এ ছাড়া আকালী, কামরাঙা, কালো ইত্যাদি মরিচও খুব ঝাল। আঞ্চলিকভাবে আরও বিভিন্ন নামের যেমন- ছোট মরিচ, বড় মরিচ, ধানী মরিচ, সাহেব মরিচ, বোম্বাই মরিচ, গোল মরিচ, মেজর মরিচ, সনিক মরিচ, যমুনা মরিচ, বালিঝুরা মরিচ, পাটনাই মরিচ, রাঁচি মরিচ, সূর্যমুখী ও বারি মরিচ চাষ হয়ে থাকে।

 

 

চারা উৎপাদন পদ্ধতি

ভাল চারার জন্য প্রথম বীজতলায় চারা গজিয়ে দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করতে হয়। প্রতিটি বীজতলা জমির দৈর্ঘ্য অনুযায়ী লম্বা, ১ মিটার বা সাড়ে তিন ফুট প্রস্থ এবং ৪০ সেমি. বা ১৬ ইঞ্চি উঁচু হতে হবে। বীজতলার ওপরের মাটিতে বালি ও কম্পোস্ট বা শুকনো পচা গোবর সার পরিমাণমত মিশিয়ে ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। একবিঘা জমির চারার জন্য ১২০ থেকে ১৩০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।

বীজতলা জীবাণুমুক্তকরণ

সূর্যের আলোতে শুকিয়ে বীজতলা শোধন করা। এ পদ্ধতিতে বীজতলা ভালভাবে কোপানোর পর সমতল করে সাদা ও স্বচ্ছ পলিথিন সিট দিয়ে সম্পূর্ণ ঢেকে দিতে হবে। তারপর ২ থেকে ৩ সপ্তাহ ঢাকা অবস্থায় সরাসরি সূর্যরশ্মি স্বচ্ছ পলিথিন সিটের ওপর পড়বে। এতে করে বীজতলার মাটির ভেতর গরম হয়ে যে তাপ সৃষ্টি হবে তাতে ক্ষতিকারক জীবাণুগুলো মারা যাবে। এ ছাড়া তাপবৃদ্ধির ফলে বিষাক্ত এমোনিয়া গ্যাস নির্গত হবে। তাই এ পদ্ধতিতে জীবাণুমুক্ত করার সাথে সাথে বীজতলায় বীজবপন করা যাবে না। এই বিষাক্ত গ্যাস কোদাল কোপালে ধীরে ধীরে সরে যাবে। এ পদ্ধতিতে বীজতলায় বসবাসকারী পোকা-মাকড় মারা যাবে অন্যথায় তারা স্থান ত্যাগ করবে। তাপের মাধ্যমে বীজতলা জীবাণুমুক্ত করতে গেলে মাটিতে রক্ষিত নাইট্রোজেন সার বাতাসে উড়ে যায় ফলে মাটিতে নাইট্রোজেনের অভাব দেখা দেয়।

বীজ শোধন ও পানিতে ভেজানো

ভালভাবে বীজ গজানোর জন্য বপনের আগে ৪৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। নীরোগ চারা উৎপাদনের জন্য বপনের ৬ ঘণ্টা আগে প্রোভেক্স বা ক্যাপটান (১ গ্রাম/৫০০ গ্রাম বীজের) দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে।

বীজ বপন ও চারা রোপণ

বর্ষা মৌসুমের জন্য মার্চ-এপ্রিল মাসে এবং রবি মৌসুমের জন্য অক্টোবর-নভেম্বর মাস পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। ঝাল মরিচ বছরের প্রায় যেকোনো সময়ই জন্মে এবং মিষ্টি মরিচ রবি মৌসুমেই ভাল হয়। যখন চারা প্রায় ১০ সেমি বা ৪ ইঞ্চি উঁচু হয় তখন জমিতে ৬০ থেকে ৭০ সেমি বা ২৫ থেকে ৩০ ইঞ্চি দূরত্বে সারিতে চারা রোপণ করতে হয় এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ৩০ থেকে ৪০ সেমি বা ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি।

 

 

বীজ ফসলের জন্য নিরাপদ দূরত্ব

মরিচ স্বপরাগায়িত জাত। তবে কিছু কিছু জাতে প্রায় ৬৮ শতাংশ পর্যন্ত পরাগায়ণ হতে পারে। এ কারণে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করতে হলে বীজ ফসলের জমির চার পাশে অন্তত ৪০০ মিটারের মধ্যে অন্য কোনও জাতের মরিচ না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে অল্প পরিমাণ বীজের জন্য ক্ষেতের সুস্থ সবল নির্বাচিত গাছের ফুল স্বপরাগায়িত করে সেগুলো থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। স্বপরাগায়ণের জন্য সাদা পলিথিন ব্যাগ দিয়ে ফুল ফোটার আগেই ঢেকে দিতে হবে।

জমি চাষ ও সার প্রয়োগ

প্রকারভেদে জমিতে চাষ ও মই দিতে হয় ৪-৬টি । প্রথম চাষ গভীর হওয়া উচিত। জমি তৈরির সময় বিঘাপ্রতি ১২০০-১৩০০ কেজি জৈব সার, ৪০ কেজি টিএসপি, ৬ কেজি এমওপি এবং ১৫ কেজি জিপসাম সার মিশিয়ে দিতে হবে। আর চারা রোপণের প্রতি কিস্তিতে ২৫ দিন পর ইউরিয়া ৯ কেজি, ৫০ দিন ও ৭০ দিন পর এমওপি ৬ কেজি হারে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

পরবর্তী পরিচর্চা

সময়মত আগাছা দমন করতে হবে। অনাবৃষ্টির সময় সম্ভব হলে ক্ষেতে পানি সেচ দিতে হবে।

 

পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই দমন

মরিচের ক্ষেতে সাধারণত মাইট ও থ্রিপসের আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। ওমাইট/ম্যালাথিয়ন/ পারফেকথিয়ন/মেটাসিসটক্স ১ চা চামচ ৫ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করে এসব পোকা দমন করা যায়। রোগ-বালাইয়ের মধ্যে উইল্টিং, এ্যানথ্রাকনোজ/ডাইব্যাক ও ভাইরাস রোগ প্রধান। উইল্টিং রোগের জন্য রিডোমিল এমজেড ৭২, ২ গ্রাম/প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে বীজ তলায় ৭ দিন অন্তর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করে দমন রাখা যায়। এ্যানথ্রাকনোজ/ডাইব্যাক রোগের লক্ষণ দেখা গেলে টিল্ট নামক ছত্রাকনাশক ১ চা চামচ ১০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর অন্তর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।

মরিচ সংগ্রহ ও বীজ সংরক্ষণ

গাছে মরিচ যখন পুরোপুরি পাকে সেই অবস্থায় উঠানো উচিত। পরিপক্ব, পুষ্ট এবং উজ্জ্বল লাল রঙের মরিচ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। পাকা মরিচ কেটে ভেতরের বীজ বের করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিয়ে বাতাস ঢুকতে পারে না এমন পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।

 

বরবটি চাষের সহজ পদ্ধতি

বরবটি চাষের সহজ পদ্ধতি,বরবটি আমিষ সমৃদ্ধ সবজি। প্রায় সারা বছরই এটি ফলানো যায়। তবে গ্রীষ্মকালে এটি ভালো হয়। খুব বেশি শীতে আবার ভালো হয় না। বরবটি ভর্তা, ভাজি, তরকারি সব কিছুতেই সমান উপযোগী। পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। খাবারে স্বাদ বাড়ানো পাশাপাশি চমৎকার কিছু পুষ্টির উৎস এটি। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও সি থাকে। এটি চর্বি কমাতে ও সাহায্য করে থাকে।

বরবটি চাষের সহজ পদ্ধতি

 

 

আজ আপনাদের সাথে বরবটি চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব-

বরবটির জাত

বরবটি চাষ করলে ভালো জাত দেখে চাষ করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের বরবটির জাত রয়েছে। যেমন- বিএইউ বরবটি ১, কেগর নাইটি, চীনা বরবটি, ফেলন, লাল বেনী, ঘৃত কুমারি, গ্রিন লং, তকি, বনলতা ইত্যাদি। তবে কেগর নাটকী নামে একটি উন্নত জাতের বরবটি অনেক চাষ হয়ে থাকে। কেগর নাটকী জাতটি পৌষ এবং মাঘ মাস ছাড়া সারা বছরই চাষ করা যায়। বরবটির উল্লেখযোগ্য জাতের মধ্যে কেগর নাটকী ও লাল বেণী জাতের ফলন সবচেয়ে বেশি হয়।

প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও মাটি নির্বাচন

অপেক্ষাকৃত উচ্চ তাপমাত্রায় বরবটি ভালো জন্মে। তবে খুব বেশি শীত পড়লে বরবটি চাষ ভালো হয় না। কারণ শীতকালে বরবটি গাছের বৃদ্ধি কম হয় ও ফল কম ধরে। বরবটি উষ্ণ ও অবউষ্ণ অঞ্চলের ফসল। কিন্তু বরবটি এখন সারা বছরই চাষ করা হয়। প্রায় সব ধরনের মাটিতে বরবটি সবসময় চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে বরবটির চাষের জন্য বেশি উপযোগী।

চাষের সময়

বরবটির বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই মাস। শীতকালে বরবটির বীজ বোনা উচিত নয়।

 

 

বীজের পরিমাণ

প্রতি শতকে ১০০-১২৫ গ্রাম এবং প্রতি হেক্টর প্রতি ৮-১০ কেজি।

জমি তৈরি ও বীজ বপন

বরবটি চাষের জন্য জমি হতে হবে আগাছামুক্ত ও ঝুরঝুরে মাটি। এজন্য জমি ভালোভাবে কয়েকবার চাষ দিতে হবে। জমি পরিষ্কার করে ৪ থেকে ৫টি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে। তারপর মাটির ওপরে বেড ও মাদা তৈরি করে প্রত্যেক মাদায় ৪-৫টি বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২-৩ হাত এবং মাদা হতে মাদার দূরত্ব হতে হবে ১ থেকে ২ হাত। একই সময় পলিব্যাগে কিছু চারা তৈরি করে রাখলে যেসব জায়গায় বীজ গজাবে না সেসব ফাঁকা জায়গায় পলিব্যাগে চারা রোপণ করে পূরণ করা যাবে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১০ কেজি বা প্রতি শতকে ৪০ গ্রাম বীজ লাগে।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি

জৈব সার বরবটি গাছের জন্য খুবই ভালো। অল্প সময়ে অধিক ফলন পেতে হলে অন্যান্য সার ও দিতে হবে পরিমাণ মতো। যেমন টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া। এসব সার প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে বরবটি চাষে ইউরিয়া সার কম লাগে। এ ছাড়াও গোবর সার, জিপসাম সার, জিংক সালফেট সার ও বোরক্স সার দিতে হবে। ইউরিয়া সার বেশি দিলে গাছ ঝোপালো হয় ও ফলন কম হয়।

সেচ ব্যবস্থাপনা

জমিতে জলের যাতে অভাব না হয় সেজন্য প্রয়োজন অনুসারে শুকনার সময় জল সেচ দিতে হবে। নালার মধ্যে জল ঢুকিয়ে সেচ দিলে গাছের শিকড় সে জল টেনে নিতে পারে। এজন্য জমিতে নালা তৈরি করে দিতে হবে।

 

আগাছা ও নিড়ানি

বৃষ্টির জল যাতে আটকে না থাকে সেজন্য নালার আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। জমি সবসময় আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। বিশেষ করে গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। বরবটির গাছ বড় হলে মাচা তৈরি করে দিতে হবে। জমিতে মাটির অবস্থা বুঝে মাঝে মাঝে সেচ দিতে হবে। জমিতে জল জমে থাকতে দেওয়া যাবে না।

রোগ বালাই দমন

বরবটি গাছে বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ দেখা যায়। যেমন জাব পোকা, বিছা পোকা, মাজরা পোকা ইত্যাদি। এসকল পোকা বরবটি গাছের কচিপাতা, কাণ্ড, ফুল ও ফলের ক্ষতি করে থাকে। তাই এই সব পোকা কঠোরভাবে দমন করতে হবে। এসব পোকা দমনে বাজারে বিভিন্ন ধরনের উন্নত মানের কীটনাশক ওষুধ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও বরবটি গাছের বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। যেমন- এনথ্রাকনোজ রোগ, পাতায় দাগ রোগ, গাছের শিকড় ও গোড়া পচা রোগ ইত্যাদি। এসব রোগ দমন করার জন্য ও বাজারে বিভিন্ন ছত্রাকনাশক পাওয়া যায়।

ফসল সংগ্রহ ও ফলন

বীজ বোনার ৫০-৬০ দিন পর থেকেই বরবটি সংগ্রহ করা যায়। কচি অবস্থাতেই বরবটি তোলা যায়। কারণ বেশি পুষ্ট হলে সবজি হিসেবে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায়। আর বীজের জন্য শুটি সম্পূর্ণ পেকে গেলে সংগ্রহ করতে হবে। তবে সব শুটি একসাথে পাকে না। কয়েক বারে সংগ্রহ করতে হয়ে থাকে। শতকপ্রতি ফলন ৩০-৬০ কেজি, প্রতি হেক্টরে ফলন ১০-১২ টন।